Jump to ratings and reviews
Rate this book

العرب: تاريخ موجز

Rate this book
والدكتور فيليب حتي يقدم في هذا الكتاب تاريخاً للعرب موجزاً. وقد لاقى هذا الكتاب من النجاح ما لم يلاقيه كتاب آخر من نوعه حيث تناول المؤلف هذا التاريخ ابتداء من قبل فجر الإسلام ثم تحدث عن محمد صلى الله عليه وسلم ورسالته السماوية وتبعها بالحديث عن سير الإسلام والخلافة وفتح الأندلس، وبدء الحياة الثقافية والاجتماعية، ومن ثم تحدث عن بغداد في أوجّ مجدها يحدها ومناحي الحياة العامة. وانتقل بعدها للحديث عن العلوم والآداب والفنون الجميلة، وتحدث أيضاً عن قرطبة جوهرة العالم، ومن ثم تكلم عن فضل العرب على المدنية الغربية، وتناول بعدها أفول نجم العروبة في الشرق والغرب والحروب الصليبية ودولة المماليك واختتم كل ذلك بالحديث عن العصور المظلمة وفجر النهضة الحديثة.

300 pages

First published January 1, 1943

16 people are currently reading
501 people want to read

About the author

Philip K. Hitti

45 books51 followers
Philip K. Hitti (1886-1978) was a Lebanese historian who was instrumental in establishing the field of Near Eastern Studies in the United States.

Category: Great Scholars and Teachers
Year At AUB: 1908
Education: AUB, BA 1908; Columbia University, PhD

Philip Hitti was born in the village of Shemlan in 1886. He graduated from the American University of Beirut with first honors in 1908, teaching there for several years as the University’s first Lebanese professor. He departed for the US, where he studied at Columbia, becoming the first Lebanese, and the first native-born Arab speaker, to receive a PhD in the US in 1915. In 1926 he moved to Princeton, founding the first program of Middle Eastern Studies in the US, which he chaired until his retirement in 1954. Under Hitti’s leadership Princeton became the premier center for Islamic studies in the West and was one of the pioneers of the concept of area studies. He was also a prolific writer, and his seminal book, History of the Arabs, published in 1937, is in its 11th edition. He was a member of the Board of Trustees of AUB, the recipient of innumerable awards from the governments of the Arab countries, and received numerous heads of State in his home including the leaders of Saudi Arabia, Iraq, Iran and Lebanon.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
37 (20%)
4 stars
69 (38%)
3 stars
56 (31%)
2 stars
12 (6%)
1 star
5 (2%)
Displaying 1 - 30 of 32 reviews
Profile Image for Muhammad .
152 reviews11 followers
April 21, 2018
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে বাঙলাদেশ ও আরব দেশগুলোর মাঝে প্রায় আড়াই-তিন হাজার মাইলের একটি বিশাল দূরত্ব হাত পা মেলে শুয়ে আছে, তবে ধর্মীয় বিশ্বাসের টানে বাঙালি মুসলমানের কাছে এ দূরত্ব বিলীন হয়ে গিয়ে আরব অঞ্চলটি হয়ে পড়ে ‘বাড়ীর পাশে আরশীনগর’। এ দেশের সৈয়দ, কাজী, মির্জা, শাহ, শেখ ইত্যাদি বংশের অসংখ্য মানুষ নিজেদের আরবের উক্ত বংশগুলোর আদি ও অকৃত্রিম বংশধর দাবী করে নিজেদের আরব রক্তের শুদ্ধতা প্রমাণে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকেন; তাঁদের ইরাকী সৈয়দীপনার কাছে ম্লান হয়ে যায় তাঁদের বাঙালি পরিচয়টি। আরবের প্রতি বাঙালি মুসলমানের ভীষণ অন্ধ আবেগের কাঁধে সওয়ার হয়ে ‘পবিত্র’ বিশেষণটি বসে পড়ে আরবের খেজুর, পানি, জলবায়ু থেকে শুরু করে ধূলিকণার সামনে অব্দি। যে আবেগ থেকে ইসলামের নবী মুহম্মদের নাম উচ্চারণ করবার সাথে সাথে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেন বাঙালি মুসলমান, ‘আরব’ শব্দটির উচ্চারণের সাথে সাথে ‘পবিত্র’ বিশেষণটির প্রয়োগের পেছনে কাজ করা আবেগটি তার চেয়ে কোন অংশে খুব কম নয়; যেন আরবে অপবিত্র কিছু থাকতে নেই! সনাতন এবং বৌদ্ধিক বিশ্বাসের জন্মস্থান এ ভারতবর্ষে যখন সেই সুদূর আরবের একান্ত নিজস্ব বিশ্বাস ইসলাম এলো, তা পূর্বতন দুই বিশ্বাসের সাথে একরকম মেক্সিক্যান স্ট্যান্ডঅফ পজিশনে দাঁড়িয়ে গেলো, এবং এই ত্রিমুখী সংঘাতের ফলে এই উপমহাদেশের মানুষের মাঝে একটি অস্তিত্বের সংকট তৈরী হলো যার জের এই উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাবের প্রায় ১৩০০ বছর পর আজো আমাদের টেনে যেতে হচ্ছে। বস্তুত, গোটা ভারতবর্ষটাই তিনভাগে ভাগ হয়ে গেলো ধর্মজনিত কারণে উদ্ভূত এই সংকট থেকে। আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান কিংবা শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দেয়া ফুল কিংবা বাঙলা নববর্ষ উদযাপন, বাঙালির সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে থাকা এ আচারগুলো পালনে বাধা আসে ধর্মের দিক থেকে। ধর্মবাদীরা ফতোয়া দিয়ে দেন ‘হিন্দুয়ানী’ এই সংস্কৃতি ইসলামের সাথে যায় না, বিধর্মী কাউকে পূজার কি বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানো ইসলাম সমর্থন করেনা, মুসলিমপ্রধান দেশে মূর্তি-ভাস্কর্য এসব থাকতে পারেনা। সংস্কৃতি ও ধর্মের এ যাঁতাকলে পড়ে আজ বাঙলাদেশীরা দিশেহারা হয়ে খুঁজতে বসেন তাঁরা কি আগে বাঙালি নাকী আগে মুসলমান?

মুসলিমপ্রধান প্রায় প্রতিটি দেশই ইসলামী জঙ্গিবাদের দংশনে নীল হয়েছে; প্রতিনিয়ত বোমা হামলায় পাকিস্তানের গায়ে আজ সেঁটে গিয়েছে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা। আইসিস, আল-কায়েদা, মার্কিন ও সরকারী বাহিনীগুলোর সংঘর্ষে মাটির সাথে মিশে গেছে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান। সুদান, নাইজেরিয়া, মৌরিতানিয়া... এশিয়া থেকে আফ্রিকা, কোথায় নেই জঙ্গিবাদের কালো ছায়া? ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অন্যতম প্রধান অঞ্চল বাঙলাদেশের চিত্রও আজ খুব ব্যতিক্রম নয়। জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত বাঙলাদেশী তরুণদের সংবাদ আসাটা এখন নিত্যদিনের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে মাথা চুলকে ভাবতে বসে মাদ্রাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, ভিন্ন মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থার সব পর্যায়েরই অত বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে কেন ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের প্রতি এত প্রীতি? এ হিসেব কিছুতেই মেলেনা। ভারতের একজন গবেষক তাঁর গবেষণার অংশ হিসেবে ভারতের কারাগারে আটককৃত একশজন ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নিয়ে ধর্ষণের কারণগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তাঁর গবেষণা বলছে এই ধর্ষকদের কারোরই সেক্স এজুকেশন নেই, ধর্ষণ যে আরেকজন মানুষের একান্ত নিজস্ব বিচরণ ক্ষেত্রে অনধিকার চর্চা সে বিষয়টি সম্পর্কে এই ধর্ষকেরা কেউই আদৌ সচেতন নয়, ধর্ষণ শব্দটিরও কোন অস্তিত্ব বা ধারণা তাদের জীবনে নেই। ধর্মের নামে (এক্ষেত্রে ইসলামের নামে) জঙ্গিবাদের বিষয়টিও অনেকটাই একইরকম। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে শহীদ হতে চাওয়া এই জঙ্গিদের ইসলামের ব্যাপারে ভীষণ দুর্বল জ্ঞানই তাদের সহিংস এ পথে ঠেলে দেয়। আগেও প্রাসঙ্গিক ছিলো, তবে গেলো বছরের হলি আর্টিজানের হামলার পর এ মুহুর্তে বাঙলাদেশীদের জন্য ইসলাম ধর্মের ইতিহাস জানাটা আবশ্যক হয়ে পড়লো। যাঁরা ধর্মটিকে আলিঙ্গন করতে চান, তাঁদের জন্য যেমন, যাঁরা ধর্মটিকে আস্তাকুঁড়ে পাঠাতে চান, তাঁদের জন্যও আরবের ইতিহাসের সম্যক একটি জ্ঞান থাকা বাঞ্চনীয়।

মুসলিমপ্রধান দেশ বিধায় বাঙলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী প্রকাশনা সংস্থা থেকে আরব বা ইসলামের ইতিহাস সংক্রান্ত প্রকাশিত বইগুলোর বেশীরভাগটাই হয় ভীষণ একপেশে; এ বইগুলো একার্থে ইসলামের বিভিন্ন চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য বিশেষ। তাতে ইতিহাসটা থাকে কম, ফুলেল বর্ণনাটা বেশী। ইতিহাসের বই হতে হলে যে ধরণের নিরপেক্ষতা এবং নির্লিপ্তিতার প্রয়োজন পড়ে, তা এই কিসিমের বইতে বিশেষ থাকেনা। পাশ্চাত্য বিশ্ব থেকে প্রকাশিত অনেক বইয়েও ইসলামের সঠিক ইতিহাস উঠে আসেনা বলে একটি অভিযোগ আছে, যার কিছুটা সত্যিও বটে। তবে পাশ্চাত্যে জ্ঞানের চর্চাটা প্রাচ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে ঢের যুক্তিসঙ্গত উপায়ে হয়; কাঁটা বেছে নিতে জানলে ইলিশ মাছের স্বাদটা পাশ্চাত্যের বইতেই পাওয়া যায়, আমাদের পটকা মাছস্বরূপ বিষাক্ত বইগুলো পড়ে বিষক্রিয়ায় মরতে হয়না।

লেবানিজ ঐতিহাসিক ফিলিপ খুরি হিট্টি গোটা বিশ্বেই ভীষণ সম্মানিত তাঁর থান ইঁটস্বরূপ ‘হিস্ট্রী অফ দ্যা অ্যারাবস’ বইটির জন্য। প্রিন্সটন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা হিট্টি ১৯৩৭ সালে বইটি লেখা সম্পন্ন করেন। দশ বছর লাগিয়ে লেখা এই বইটি আরবের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বুঝবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে হিট্টি এই বইটির মাল মশলা নিয়েই ১৯৪৩ সালে সংক্ষিপ্ত পরিসরে লেখেন ‘দি অ্যারাবসঃ আ শর্ট হিস্ট্রী’। হিট্টি ইতিহাসের গল্প বলেছেন নিস্পৃহভাবে। ফালতু আবেগের ফুলঝুরিহীন এ বই বাঙালি মুসলমান সমাজে কেমনভাবে গৃহীত হবে তা বলা মুশকিল, কারণ, দেশ-কাল-জাত ভেদে মুসলমানেরা বরাবর নিজেদের ব্যর্থতাকে ইহুদী-নাসারাদের ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে আসার চেষ্টা করে এসেছেন। ভোগ বিলাসে মত্ত ইসলামী রাজবংশগুলোর একের পর এক পতনের পেছনেও সেই ষড়যন্ত্রটাই তাঁরা দেখেন। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নানা চরিত্রকে ফুলেল বর্ণনায় উপস্থাপন না করে রক্তমাংসের সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখায় (বিশেষত) বাঙালি মুসলমান সমাজ আরবের মুষ্টিমেয় খ্রীষ্টানপ্রধান দেশগুলোর অন্যতম লেবাননের নাগরিক হিট্টিকে বৃহৎ সেই ইহুদী-নাসারা চক্রের অংশ হিসেবে ঠাউরে বসলে তাতে অবাক হবার কিছু অবশ্য থাকবেনা।

হিট্টি তাঁর আরবের ইতিহাসের মূল আলোচনায় ঢোকার আগে প্রাক-ইসলামী যুগের আরব সমাজের চিত্র সংক্ষেপে এঁকেছেন। আরব জাতিটিকে আজ আমরা যেভাবে চিনি, সে অবস্থায় আসবার পেছনে ইসলামের প্রচুর অবদান রয়েছে। হিট্টির মতে, কার্যত, আরব ও ইসলামের ইতিহাস মোটামুটি এক ও অভিন্ন, একটিকে ছাড়া অন্যটির আলোচনা অর্থহীন। তাই প্রাসঙ্গিকভাবেই এসেছে ইসলামের আবির্ভাবের কথা, নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় আলোচনা। হিট্টি তাঁর এ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বেশ খোলাখুলিভাবে ইঙ্গিত করেছেন যে ইসলাম ধর্মটি গড়ে উঠেছে সে যুগের আরবের রূপ-রস-গন্ধকে পুঁজি করে। এর ব্যাখ্যায় তিনি সত্যিকার আরব যারা, সেই বেদুইনদের জীবনাচার বর্ণনা করেছেন। হিট্টির বিবরণীতে এসেছে বেদুইনদের ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে থাকবার ব্যাপারটি। প্রতিটি গোষ্ঠী মূলত এক একটি পরিবারের মতো, এবং প্রতিটি গোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্যই স্বীয় স্বীয় গোষ্ঠীপতির কাছে প্রশ্ন ব্যতিরেকে নিজেকে সমপর্ণ করতে বাধ্য। এছাড়াও, বেদুইনদের কথা দিয়ে কথা রাখবার এব�� নিজ গোষ্ঠীর প্রতি আমরণ বিশ্বস্ত থাকবার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। বিশদ পরিসরে বলেছেন এক গোষ্ঠীর শিবিরে আরেক গোষ্ঠীর ঝটিকা হামলার কথা; ধূ ধূ মরুভূমির বুকে এ হামলা বা রেইড (সোজা বাঙলায় ডাকাতি) ছিলো সে যুগের বেদুইনদের একমাত্র sport। এই ডাকাতি করাটাকে বেদুইনরা পুরুষত্বের অন্যতম প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখতো। Machismo বা প্রবল পৌরুষে ভোগা বেদুইনদের চোখে মূলত পুরুষের উপযুক্ত কাজ পৃথিবীতে একটিই ছিলোঃ বেদুইন যাযাবর হওয়া। মোটামুটি জাতীয়ভাবে খেলা এ খেলাটির ছিলো একটি অলিখিত এবং অলঙ্ঘ্যনীয় নিয়ম, ‘একান্ত বাধ্য না হলে’ রক্তপাতের ঝামেলায় কখনো যাওয়া চলবেনা। এই রেইড বিষয়টি বেদুইনদের জীবনাচারের সাথে এতটাই অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে ছিলো যে সে সময়ের এক কবি নাকী কাব্য করে বলেছিলেন,

“ডাকাইতির কারবার আমাগো; দোস্ত-দুষমনে এই লাইনে ফারাক নাই,
চাক্কু ভি ধরা পারুম গলায়, হইলেও হালায় মায়ের প্যাডের ভাই”।।

“Our business is to make raid on the enemy, on our neighbor, and on our own brother, in case we find none to raid but a brother”.

অমন যুদ্ধাংদেহী বেদুইনের অতিথিবাৎসল্যের কিন্তু তারিফ করতে হয়। হিট্টি সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁর এ বইয়ে যে সে আমলের কবিরা-যাঁরা মূলত তাঁদের সময়ের সাংবাদিক-নাকি বেদুইনের অতিথিবাৎসল্যের প্রশস্তি গাইতে কখনো ক্লান্তি বোধ করতেন না। এখানে লক্ষণীয় যে বেদুইন সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান যে দিকগুলো-সত্যবাদিতা, ওপর মহলে প্রশ্নাতীত বিশ্বাস রাখা, নিজের গোত্রের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, বিনা প্রয়োজনে রক্তপাত না ঘটানো, অতিথিবাৎসল্য-এগুলোর প্রতিটির ওপরই ইসলামে পৃথকভাবে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে বারবার; আদর্শ মুসলমান নিজের মাঝে এই গুণগুলোর বিকাশই দেখতে চান। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিগুলো স্থাপনের পেছনে বেদুইন সংস্কৃতির প্রভাবের কথা বিচার করতে বসলে ইসলাম যতটা না বৈশ্বিক, তার চেয়ে হয়তো ঢের বেশী আরবীয়ই হয়ে ওঠে।

ইসলামের ব্যাপক প্রসারের পেছনে আরবী ভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রাক-ইসলামী যুগ থেকেই আরবেরা কাব্যের ভক্ত। কোরানের ভাষার যে আভিজাত্য ও ভাবগাম্ভীর্য, তার পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে প্রাচীন আরববাসীর কাব্যপ্রীতি। হিট্টি বলছেন সেমাইট বা আরবরা নিজস্ব কোন শিল্পের উদ্ভাবন ঘটায়নি। তাঁদের শিল্পের প্রকাশ ঘটেছে একটি মাত্র মাধ্যমেই, বাচনভঙ্গি। গ্রীকদের কাছে ভাস্কর্য ও স্থাপনা যা, আরবদের কাছে তা-ই গীতি কবিতা হিসেবে দেখেছেন হিট্টি। কার্যতই, প্রাচীন একটি আরবী প্রবচন মতে, ‘মানবের সৌন্দর্য নিহিত তার বাগ্মীতায়’। হিট্টি উল্লেখ করেছেন পরবর্তী সময়ে প্রচলিত আরেকটি আরবী প্রবচনের, ‘জ্ঞান অবতীর্ণ হয়েছে তিনটি জিনিষের ওপরঃ ফ্র্যাঙ্কদের মগজে (আধুনিক ফরাসী, জার্মান, ডাচ, অস্ট্রিয় প্রভৃতি জাতির আদিপুরুষ), চীনেদের হাতে এবং আরবীয়দের জিভে”। আরবী ভাষার এই কারুকার্যময় মারপ্যাঁচই ছিলো ইসলামের প্রাথমিক সময়ের প্রধান পুঁজি যার ফল আজো বিদ্যমান। কোরানের ঐশ্বরিক আবেদনটির ন্যায্যতা প্রতিপাদনে আজও ধর্মপ্রাণ মুসলমান মূল হাতিয়ার হিসেবে আরবী ভাষার সেই মারপ্যাঁচের কথাই সামনে আনেন। আরবী ভাষায় কথা বলা বর্তমান আরব দেশগুলোর কারো আরবীই কারো সাথে মেলেনা, এবং কার আরবীটি শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে আরব জাতিগুলোর মাঝে যথেষ্ঠই মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু আরব শিশু আরবী লিখতে পড়তে শেখে কোরানের সেই প্রমিত আরবী দিয়েই। ইসলামের বিজয় একার্থে আরবী ভাষাটির বিজয়, আরো নির্দিষ্ট করে বললে একটি নির্দিষ্ট গ্রন্থের ভাষার বিজয় বলে হিট্টি মন্তব্য করেছেন।

ইসলামের সাথে ইহুদী এবং খ্রিষ্টধর্মের মিলগুলোর কথা আমাদের সবারই জানা। বস্তুত, ঐশ্বরিক কিতাব হাতে পাওয়া পূর্বতন মানবগোষ্ঠীগুলো নিজ নিজ ধর্মশিক্ষা ভুলে গিয়ে অনাচারে লিপ্ত হওয়াতেই ইসলামের আবির্ভাব বলে মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন। মুসলিম বিশ্বাস মতে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, কোরান এই গ্রন্থগুলোর উৎস যেহেতু এক ও অভিন্ন তাই এ মিলটি থাকবারই কথা। ইহুদীদের ওল্ড টেস্টামেন্ট ও খ্রিষ্টানদের নিউ টেস্টামেন্টের শীর্ষ চরিত্রগুলো সবাইই কোরানে ঠাঁই পেয়েছেন। আকর্ষণ করবার মতো ব্যাপারটি হলো ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং কোরান, উভয় গ্রন্থেই বহু প্রাচীন সেমিটিয় প্রবচন ব্যবহৃত হয়েছে যা তৎকালীন হিব্রু এবং আরবীভাষীদের মাঝে প্রচলিত ছিলো, যেমন, ‘চোখের বদলে চোখ’, ‘বালুর ওপর বানানো বাড়ী’, ‘সকল প্রাণীর জন্যই আছে মৃত্যুর স্বাদ’ ইত্যাদি। হিট্টি ধারণা করেছেন ইসলামের প্রাথমিক যুগে খুব সম্ভবত ইসলামকে খ্রিষ্টধর্মের একটি অপভ্রংশ রূপ হিসেবে দেখা হতো। দান্তে তাঁর মহাকাব্য দ্যা ডিভাইন কমেডিতে ইসলামের নবী মুহম্মদকে কেন নরকের অন্যতম নিম্ন একটি স্তরে ‘বিভাজনের বীজ বপনকারী’দের সাথে স্থান দিয়েছেন তার উত্তর সম্ভবত এই দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে নিহিত।

বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে ইসলামের বিজয়ের অন্যতম দুই সেনাপতি খালিদ ইবনে-আল ওয়ালিদ এবং আমর ইবনে আল-আস, রণকৌশলের দিক দিয়ে যাঁদের প্রায়ই নেপোলিয়ন, হ্যানিব্যাল কিংবা আলেক্সান্ডারের সাথে তুলনা করা হয়। প্রচুর মুসলিম সাহিত্যে, গীতিকবিতায় এঁদের বীরত্বগাথার কথা এসেছে, গাওয়া হয়েছে এঁদের বিজয়ের পেছনে আল্লাহ’র প্রচ্ছন্ন ভূমিকার প্রশস্তি। হিট্টি আলোচনা করতে চেয়েছেন যুদ্ধ জয়ের পেছনে বাস্তব কারণগুলো। মুসলমান বাহিনীর বুহ্যরীতি এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও, মুসলিম সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেতন ভাতা পার্শিয়ান বা বিজেন্টাইন সেনাবাহিনীর তুলনায় ঢের বেশী ছিলো; মুসলমান যোদ্ধারা লুটের ভাগও পেতো। হিট্টি মন্তব্য করেছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি, ধর্মীয় প্রণোদনা ইত্যাদির ভূমিকা নিশ্চয়ই ছিলো, তবে জাগতিক লাভের দিকটিও দলে দলে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার ব্যাপারে সমান ভূমিকা রেখেছে, বিশাল একটি সংখ্যার জন্যই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রাক-ইসলামী যুগে যখন আরবরা তখনও সংঘবদ্ধ একটি জাতির বৃহৎ উদ্দেশ্যের দিকে হাঁটা শুরু করেনি, যখন বেদুইনেরা ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে, মরুভূমির বুকে প্রচণ্ড দাবদাহে উট নিয়ে চলে ফিরছে, তখন তার খুব তেষ্টা পেলে এবং পানির সন্ধান একান্তই না পেলে তার উটটির গলায় বিশেষ কায়দায় কাঠি ঢুকিয়ে বমি করিয়ে সেই বমির পানি খেয়ে বেদুইনকে প্রাণ রক্ষা করতে হতো। অস্ট্রিয়ান দার্শনিক রবার্ট মুসিলের রুওয়ালাহ বেদুইনদের নিয়ে লেখাতেও এই কথা উঠে এসেছে। হিট্টি শুনিয়েছেন বাস্তবতার আরেক গল্প। আরব কোন শিবিরে যদি তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিতো, এমনকী শিশুদের মর্মস্পর্শী কান্না অগ্রাহ্য করে দলনেতা পানির শেষ বিন্দুটি তুলে দিতেন তাঁর ঘোড়ার মুখে, কারণ ঘোড়া বাঁচলে বাঁচার আশা তবু থাকে। মরুর অমন কঠিন জীবন যাপন করা আরববাসীর জাগতিক সুখের প্রতি ভীষণ একটি কামনা থাকবে এটিই স্বাভাবিক।

ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়টি হলো জিজিয়া করঃ মুসলমানদের সাথে থাকতে হলে বিধর্মীদের কর পরিশোধ করতে হতো। এই কর পরিশোধ করতে না চাইবার কারণেই বহু অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এছাড়া, শাসক যেহেতু ইসলামধর্মী, তাঁদের সাথে একাত্ম হবার জন্য এবং ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা হাসিল করবার জন্যও ধর্মান্তরিত হবার প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে। কর এড়াবার জন্য ইসলাম গ্রহণ করায় সামগ্রিকভাবে মুসলমানের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যায়, কিন্তু রাষ্ট্রের আয়ে বেশ টান পড়ে। এ প্রসঙ্গে আরেক বিখ্যাত লেবানিজ ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড আতিয়াহ তাঁর ‘দি অ্যারাবস’-এ উল্লেখ করেছেন মুসলমান শাসকদের তখন এই ‘গল্প’ বানাতে হয় যে আরোপিত কর পুরোটাই জমির ওপর, জমির মালিকের ওপর নয় (অর্থাৎ, জমির মালিক নিজে মুসলমান হলেন, কিন্তু তাঁর জমিটি খ্রিষ্টান কি ইহুদীই রয়ে গেলো!)। ধর্মান্তরিত মুসলমানদের শেষ রক্ষা আর হয় না, নি���্দিষ্ট একটি সময়ের পর তাদের ওপর ফের কর আরোপ করা হয়।

ইসলামের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সম্ভবত এর খিলাফত। প্রথম খলিফা আবু বকরের সময় থেকে আজকের আইসিস-খিলাফত সংক্রান্ত নানামুখী দ্বন্দ্বে গত ১৪০০ বছরে ইসলাম বারবার নানাভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ইসলামের শান্তির প্রকৃতি। নবীর মৃত্যুর পর খিলাফতের দায়িত্ব কার হাতে যাবে এই নিয়ে চারটি পরস্পরবিরোধী দল দাঁড়িয়ে যায়। প্রথম দাবীটি আসে মক্কার সেই সকল মুহাজিরের কাছ থেকে যাঁরা নবীর প্রচলিত ধর্মের ওপর বিশ্বাস এনে তাঁর সাথে মদিনায় হিজরত করেন, আবু বকর ছিলেন এই দলে। তাঁদের দাবী, যেহেতু তাঁরাই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন, খিলাফত তাঁদের হাতেই যাওয়া বেশী যৌক্তিক। এছাড়াও, সে সময়ের আরবের গোত্রগুলোর নেতা ঠিক বংশানুক্রমিক ধারায় নির্বাচিত হতো না, হতো বয়েসের বিবেচনায়, সেদিক দিয়েও বয়োবৃদ্ধ আবু বকরের অধিকার ছিলো বেশী। দ্বিতীয় দলটি মদীনার, তাঁদের দাবী দুর্দিনে তাঁরা নবী ও তাঁর উম্মতদের আশ্রয় দিয়েছেন, অতএব, খিলাফত তাঁদেরই পাওনা। তৃতীয় দলটি দাবী করে বসে ইসলামের খিলাফতের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আল্লাহপাক ভোটাভুটির মতো অমন খেলো একটি পদ্ধতিতে সম্পন্ন করবেন এটি কিছুতেই হতে পারেনা; খিলাফতের যোগ্য দাবীদার নবীর আপন চাচাতো ভাই ও জামাতা আলী (এই তৃতীয় দলটিই পরবর্তীতেত শিয়া মতবাদের জন্ম দেয়)। খিলাফতের চতুর্থ ও সর্বশেষ দাবীটি ওঠে নবীর কুরাইশ বংশেরই উমাইয়াদ গোত্র থেকে। উমাইয়াদ গোত্রটি প্রাক-ইসলামী যুগে অত্যন্ত ধনী ও অভিজাত ছিলো। শাসনক্ষমতাও ছিলো এঁদের হাতে। সেই ধারাবাহিকতায়ই খিলাফতের এই দাবী, যদিও এঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন সবার শেষে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান এই উমাইয়াদ গোত্রের।

খিলাফতের ইতিহাসে সব মিলিয়ে দশজন খলিফা খুন হয়েছেন, এঁদের তিনজনই রাশিদুন খিলাফতের (ওমর, ওসমান এবং আলী)। ক্ষমতার রাজনীতিটি আর যেকোন দশটি সাধারণ নোংরা রাজনীতির মতোই সমানভাবে বিদ্যমান ছিলো ইসলামের ইতিহাসেও। এছাড়াও, ইসলামের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির একটি অভিযোগও অনেক পণ্ডিত তুলেছেন। খলিফার আসনে কে বসবেন সেটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত হয়েছে রক্ত এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক দিয়ে। প্রথম খিলাফত ‘খিলাফতে রাশিদুন’-এর চারজনই নবীর সাথে আত্নীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। আবু বকর নবীর শ্বশুর, আয়শার পিতা; দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে আল খাত্তাব নবীর অপর স্ত্রী হাফসা’র পিতা, তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফান নবীর জামাতা (উসমান রুকাইয়া এবং উম্মে কুলসুম, নবীর এ দুই কন্যাকে বিয়ে করেন), চতুর্থ খলিফা আলী নবীর চাচাতো ভাই, জামাতা ও নাতজামাই (আলী বিয়ে করেন নবীর কনিষ্ঠ কন্যা ফাতিমাকে; ফাতিমার মৃত্যুর পর বিয়ে করেন নবীর জেষ্ঠ্য কন্যা জয়নাবের কন্যা উমামাহ বিনতে জয়নাবকে; সম্পর্কে আলী উমামাহ-এর খালু ও নানা)। রাশিদুন খিলাফতের পর আসা অন্য খিলাফতগুলোতে পরিবারতান্ত্রিক ক্ষমতায়নটাই বেশী ছিলো। ইসলামের আরবীয় ডাইন্যাস্টি বা রাজবংশগুলোর দিকে একবার দেখা যাকঃ

রাশিদুন খিলাফত (৬৩২-৬৬১): এ সময়ে ইসলাম আরব ছাড়িয়ে ইরান, ইরাক, মিশর, সিরিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। এ খিলাফতের অন্যতম প্রধান অর্জন পারস্য জয়। ইসলামী বিরাট বহর দেখে পারস্যের সাসানিদ বাহিনী একরকম বিনা যুদ্ধে আত্নসমর্পণ করে। অপরদিকে ইরাক ও সিরিয়ার সাধারণ জনগণ তাদের গ্রীক শাসকদের সাথে কখনো মিশতে পারেনি, ফলে নতুন শাসক দলের আগমনে তারা খুশীই হয়, এবং ইসলামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার দিক দিয়ে ভীষণ এগিয়ে থাকা পারস্য ও মিশর ইসলামের দখলে আসায় পৃথিবীর বহু হিসেব নিকেশ রাতারাতি পাল্টে যায়। আলেক্সান্দ্রিয়ার অসাধারণ গ্রন্থাগার ও পারস্যের শিল্প, দুটোই মুসলমানদের হাতে আসে। ব্যাপক হারে আরবী ভাষায় অনূদিত হতে থাকে প্রাচীন গ্রীক গ্রন্থ ও নথিমালা। যে বর্বর আরবদের শিক্ষা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় কোন অবদান ছিলোনা, তারা এবার গোগ্রাসে গিলতে শুরু করে দর্শন, সাহিত্য, সঙ্গীত, বিজ্ঞান, চিকিৎসা প্রভৃতি শাস্ত্রের ওপর লেখা বইগুলো। হিট্টি মন্তব্য করেছেন আরবীয় মুসলিম সভ্যতার গোড়ায় পানি ঢেলেছে মূলত পারসিক ও হেলেনীয় আরামায়িক সভ্যতা। এ দুটো সভ্যতার আরবীকরণ করে বহু প্রাচীন জ্ঞানকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়াটা মুসলমানদের একার কৃতিত্ব।

উমাইয়াদ খিলাফত (৬৬১-৭৫০): আলীর মৃত্যুর পর খিলাফতের দায়িত্ব আসে তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র হাসান ইবনে আলী’র হাতে। হিট্টি মন্তব্য করেছেন নবীর দৌহিত্র হাসান রাজকার্যের চেয়ে বেশী মনোযোগী ছিলেন নারীর অন্দরমহলে। প্রায় একশ’টির মতো বিয়ে করা হাসান ইতিহাসের পাতায় খ্যাত ‘the great divorcer’ নামে। তবে হাসান ইসলামের নিয়ম মেনে চলেছিলেন, এক সাথে চারজনের বেশী স্ত্রী তাঁর ছিলোনা। হিট্টি ইঙ্গিত করেছেন মুয়া’বিয়া হাসানের সাথে ‘খিলাফতের বদলে ভোগবিলাস’ এমন একটি চুক্তি করে খলিফার আসনে বসে পড়েন। মুয়া’বিয়ার হাত ধরে উমাইয়াদ ডাইন্যাস্টির গোড়াপত্তন হয় এবং ইসলামী সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হয় দামাস্কাস। উমাইয়াদ খিলাফতের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্যের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। আলীর দুই পুত্র হাসান ও হোসেনের মৃত্যুর পেছনে কলকাঠি নাড়ানো মুয়া’বিয়ার গড়া ডাইন্যাস্টির প্রতি শিয়াদের প্রবল ঘৃণা এমনিতেই ছিলো, মুসলিম-অমুসলিম এবং শিয়া-সুন্নী বৈষম্য তাতে নতুন করে ঘি ঢালে। উমাইয়াদদের বিরুদ্ধে বেশ ক’টি বড় বিদ্রোহ ঘটে এবং অবশেষে শেষ উমাইয়াদ খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানকে হত্যার মাধ্যমে আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসে।

উমাইয়াদ ডাইন্যাস্টির একটি অংশ আব্বাসীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং স্পেনে উমাইয়াদ শাসন শুরু করে। এর গোড়াপত্তন হয় প্রথম আবদুল রহমানের হাতে ৯২৯ সালে, যার স্থায়ীত্বকাল ছিলো ১০২ বছর। স্পেনে উমাইয়াদদের রাজধানী ছিলো কর্ডোভাতে।

আব্বাসীয় খিলাফত (৭৫০-১২৫৮): রাশিদুন খিলাফতের পর মুসলমান সমাজে সবচেয়ে জনপ্রিয় সম্ভবত আব্বাসীয় খিলাফত। আরব্য রজনীর বদৌলতে এ খিলাফতের অন্যতম নায়ক খলিফা হারুন-উর-রশীদের নাম মুসলমান বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। নবীর এক চাচা আল-আব্বাস-এর বংশধরদের হাতে এ খিলাফতের গোড়াপত্তন। এ খিলাফতের প্রথম খলিফা আবুল আব্বাস পঁচন ধরে যাওয়া উমাইয়াদ ডাইন্যাস্টির ৮০ জন শীর্ষ সদস্যকে এক ভোজে আহবান করে হত্যা করেন এবং নিজের নাম দেন আস-সাফফাহ, the blood-shedder। আব্বাসীয়দের শাসনকাল পুরোটাই ভীষণ ভোগ-বিলাসের। বাগদাদের ঐশ্বর্যের যে বর্ণনা ইতিহাসের পাতায় আছে তার তুলনা মেলা ভার। খলিফা হারুনের পুত্র খলিফা আল-আমিন তাঁর গাইয়ে চাচা ইব্রাহিমকে সে আমলের বিখ্যাত কবি আবু নুয়াসের অল্প ক’টি চরণ গাইবার জন্য তিন লক্ষ দিনার উপহার দেন। ইব্রাহিম সব মিলিয়ে দু’কোটি দিরহাম আয় করেন খলিফার দরবারে গান গেয়ে। যে বিবাহবহির্ভূত যৌনতার ব্যাপারে ইসলামের অত চোখরাঙ্গানি, আব্বাসীয় আমলে তা অনেকটাই খেলো হয়ে যায়। হারেমে বেড়ে চলে রক্ষিতা ও গেলমানের সংখ্যা। তবে হারেমে ঠাঁই পেতে হলে শুধু মৈথুনক্রিয়ায় পরিপক্ক হলেই চলতোনা, দক্ষতা লাগতো গণিতে, বিজ্ঞানে, দর্শনে, কাব্যে, সঙ্গীতে, নাচে ও কোরান তিলাওয়াতে; এ যেন হাইপেশিয়া ও মাতাহারির এক অনবদ্য শঙ্কর!

ফাতিমিদ খিলাফত (৯০৯-১১৭১): ইসলামের ইতিহাসে একমাত্র শিয়া খিলাফত, এঁদের রাজধানী ছিলো কায়রোতে। নিজেদের এঁরা নবীকন্যা ফাতিমার বংশধর বলে বিশ্বাস করতেন। হিট্টি এঁদের ব্যাপারে বেশী আলোকপাত করেননি।

এই চারটি ছাড়াও আরো তিনটি ডাইন্যাস্টি এসেছে ইসলামে (আলমোহাদ, মামলুক ও অটোমান), তবে তারা আরবীয় নয়। এদের মাঝে মামলুকরা বিশেষ খ্যাত তাদের বর্বরতার জন্য। মামলুক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাইবার্স মুসলমান সমাজে সম্মানিত অদম্য মোঙ্গলদের কোমর চিরতরে ভেঙ্গে দেবার জন্য। আইন জালুতের যুদ্ধে বাইবার্স প্রথমবারের মতো মোঙ্গলদের পরাজিত করে এক আশ্চর্য নজির স্থাপন করেন। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকটা জয় করে নেয়া প্রবল প্রতাপী রক্তপিপাসু বন্য মোঙ্গলদের হারাবার জন্য প্রয়োজন ছিলো একই রকম হিংস্রতার, যার দখল মামলুকদের ভালোই ছিলো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হলি আর্টিজানের হামলার পর থেকে ফেইসবুকে বেশ কিছু ভুয়া একাউন্ট থেকে ওয়াহাবী মতবাদ ছড়িয়ে ইসলামের নামে হত্যাকাণ্ডগুলোকে বৈধতা দেবার একটি প্রচেষ্টা চলে আসছে; অনলাইন এ��� জঙ্গিদের অনেকেই বাইবার্স ছদ্মনামটি নিয়েছেন, নিজেদের মাঝে রক্তপিপাসু চরিত্রগুলোর সন্নিবেশ দেখতে চেয়েছেন। এখানে বড় দায় ফুলেল বর্ণনার সেই একপেশে ইতিহাস বইগুলোরই। ধর্মের নামে সব মিথ্যে আর অতিরঞ্জন বোধহয় পাশ হয়ে যায়। তাতে ভর করেই না নরেন্দ্র মোদী দাবী করে বসেন হাজার বছর আগেই ভারতে প্লাস্টিক সার্জারী হতো, তা নইলে গনেশের ধড়ে হাতির মাথাটি এলো কি করে! মোদী আর হালের বাইবার্সরা এখানেই মিশে এক হয়ে যান।

হিট্টির এ বইতে তাঁর পরিশ্রম ও সততার ব্যাপারটি বেশ পরিষ্কারভাবেই ফুটে উঠেছে। ইসলামের বৈশ্বিক অবদানগুলো নিয়ে যেমন অধ্যায়ের পর অধ্যায় লিখেছেন, আলপটকা মন্তব্যে খুঁচিয়ে চোখ টিপেছেন প্রশ্ন তোলা যায় এমন অনেক বিষয় নিয়েও। এই বইটির বড় সীমাবদ্ধতা তথ্যসূত্র বা রেফারেন্সের অভাব। যে আমলে বইটি লিখেছেন, সে আমলে রেফারেন্স বিষয়টি অত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি সম্ভবত। কাছাকাছি সময়ের আরো কয়েকটি ইতিহাস বই সংগ্রহে আছে আমার, সেগুলোতেও রেফারেন্স পাইনি। যে কর্তৃত্বপূর্ণ স্বরে ওপর তলা থেকে বিবৃতি দিয়ে বইটি লিখেছেন হিট্টি, রেফারেন্সের অভাব মাঝে মাঝেই তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়, এই যা। তবে দিনশেষে পাঠক যে হিট্টির সততাতে মুগ্ধ হবেন সেটি বোধহয় বলাই যায়।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
July 31, 2024
আরবদের নিয়ে আমাদের কৌতূহলের মুখ্য কারণ সম্ভবত ধর্মীয় মিল। যদিও আরব বলতে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকে নির্দিষ্ট করা যায় না ; অন্তত পণ্ডিত ফিলিপ কে হিট্টি তা করেননি। তিনি আরব জাতিকে দেখেছেন ভাষাগত ঐক্যের জায়গা থেকে। যাদের মাদারি জবান আরবি, তাদের সবাইকে তিনি মহান আরব জাতির অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেন খানিকটা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সুবাস পাই! যদিও কেবল মাদারি জবানের গণ্ডিতে আরব জাতিকে কয়েদ করা যায়নি। তাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, সমাজনীতি, রাজনীতি ও লোকাচার - এসব কিছু নিয়েই ফিলিপ কে হিট্টির দেখতে চেয়েছেন আরব জাতিকে। তিনি নিজে আরব অঞ্চল লেবাননের আদমি। দিনশেষে, হিট্টি সাহেব আরবজাতের বাইরে নন। তবুও লিখতে গিয়ে তিনি নিজের আরব পরিচয়ের মোহে পড়েননি ; অত্যন্ত তাজিমের সঙ্গে বিলকুল উদাস থেকেছেন যে কোনো পক্ষাবলম্বনের ক্ষেত্রে। পশ্চিম এশিয়া থেকে সুদূর আফ্রিকা আবার একসময়ের আন্দালুসিয়া - এই পুরোটাই ছিল আরবজাতির ভূমি। প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাস লিখেছেন ফিলিপ কে হিট্টি। পড়তে গিয়ে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি আসেনি। দারুণ উপভোগ করেছি। আবার বেদনার্ত হয়েছি। কেন তা বলি-

আরবজাতির দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে ইসলামরবির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বিচিত্র এক ভূখণ্ডে আখেরি নবি হজরত মুহাম্মদ (স.) আবির্ভূত হয়েছিলেন। বেদুইনের কাছে বেঁচে থাকা সবচেয়ে দামি। তাই মরুর বুকে পথের দিশা দেখানো উটকে সে বড়ো ভালোবাসে। আবার, পিপাসায় সেই উট জবাই করে তার পেটে জমা হওয়া পানি পান করতে দ্বিধা করে না। বাঁচতে হলে দ্রুতগামী ঘোড়া অমূল্য সম্পদ। এ কারণেই হয়তো পিপাসায় কাতর বেদুইন এক মশক পানি নিজের পুত্রকে দেবে না ; বরং ঘোড়ার জন্য রেখে দেওয়াকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এমন কঠোর জীবনযাপনে অভ্যস্ত যুদ্ধবাজ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি আদর্শ। ইসলামের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হয় বেদুইনরা। যারা বিশ্বাস করে যুদ্ধ ছাড়া টিকে থাকার কোনো আনন্দ নেই। তাই অন্য কওমের সাথে লড়াই করতে না পারলে নিজ কওমের সাথেই তারা লড়াই শুরু করে দেয়। বেদুইন আরবের ধর্মবিশ্বাস সারা জাহানে ছড়িয়ে পড়েছে। একইসাথে অন্যের সাথে লড়াই না করতে পারলে মুসলমানরা নিজেরাই ভ্রাতৃদ্বন্দে কতশতবার জড়িয়ে গেছে, তার সাবুদ হিট্টির বইয়ের পাতায় পাতায় আছে৷

পারস্য জয় করার পর সেখানকার প্রাসাদসংস্কৃতি ও বিলাসবহুল জীবনের প্রতি মহব্বত জন্মে আরবদের। তারা আরব কম ; প্রাচীন পারস্য সভ্যতার ধারক ও বাহক হয়ে ওঠেন ঢের বেশি।

আমর ইবনুস আস মিসর জয়ের পর হতভম্ব হয়ে যান। তিনি খলিফা ওমরকে মিসরের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন, এই নগর সম্পর্কে বেশি কিছু লিখবো না। এটুকু জানাই, এখানে হাম্মামখানার সংখ্যা চার হাজার! পানির জন্য হাহাকার করা আরবদের চোখে সভ্যতার ও বিলাসের বড়ো অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে হাম্মামখানা। তাই পরবর্তীতে যেখানেই আরবজাতির পদচিহ্ন পড়েছে, সেখানেই তারা পারসিকদের অনুসরণে বড়ো প্রাসাদ নির্মাণ করেছে এবং মিসরবাসীদের মতো প্রত্যেকটি আরবপ্রধান নগরে হাম্মামখানাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুসলমানের সমর্থক হয়ে ওঠে হাম্মামখানা। তাই পঞ্চদশ শতকে স্পেনে উজবুকি ও আন্তঃকোন্দলের কারণে মুসলিম শাসনের পতন ঘটার পর মুসলিম ঠেকাতে স্পেনের পাদরি নির্দেশ দেন, যাদের বাসায় গোসলখানা থাকবে তাদের সবাইকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে!

ইলমের প্রতি তীব্র মহব্বত ও জীবনকে উপভোগ করার প্রবল তৃষ্ণা - এই দুইটি বিপরীতমুখী ধারা প্রাচীন ও মধ্যযুগের আরবশাসিত রাজ্যগুলোতে দেখি। উমাইয়া বংশের আশিজনকে দাওয়াত দেন আব্বাসীয় একজন খলিফা। খাবার টেবিলেই বিষ দিয়ে উমাইয়া বংশকে নির্বংশ করে গদিতে বসেন হজরত আব্বাসের উত্তরসূরিরা। এদিকে কোনোমতে আবদুর রহমান পালিয়ে গিয়ে স্পেন জয় কর রাজ্যপাট বিস্তার করেন।

এলমের প্রতি আব্বাসীয়দের উৎসাহের কথা পাতার পর পাতা লিখেছেন ফিলিপ কে হিট্টি। গ্রিক ও ভারতীয়সহ তখনকার সভ্য জগতের এলমের দুনিয়ার ধ্রুপদী কেতাবগুলো রীতিমতো তরজমা হতো। তরজমাকারী জ্ঞানের জাদুতে অনূদিত গ্রন্থটি মৌলিক কেতাবের চাইতে কম হতো না।

হাসপাতাল তথা দাওয়াখানার ধারণা আরবজাতির উদ্ভাবন। একবার হাকিম আর রাজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দাওয়াখানার জন্য মোক্ষম জায়গা বাছাই করতে। তিনি নগরের দশটি স্থানে এক টুকরো করে গোস্ত ঝুলিয়ে রাখেন। যেখানে গোস্ত সবচেয়ে দেরিতে পতন ধরে সেখানেই তিনি দাওয়াখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ এখানকার হাওয়া সবচাইতে বিশুদ্ধ!

হিট্টির আরব জাতির ইতিহাস কেবল আরবদের জাতি হিসেবে গুণকীর্তন নয় ; চরম ভোগ-বিলাসী আরব জাতির পতনের কাহিনি তিনি লিখেছেন। প্রত্যেকটি আরবপ্রধান রাজ্যের ধ্বংসের প্রধান কারণ বিলাসে ব্যস্ত হয়ে পড়া, নিজেদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব, লোভ ও আরব জাতির বিকাশের প্রধান অনুঘটক ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া।

'আরব জাতির ইতিহাস' নামে প্রায় আট শ পাতার একটি ঢাউস কেতাব আছে। সেই বইটির ছোটো সংস্করণ এই বইটি। হিট্টির ইংরেজি বড়ো সহজ নয়। তবুও লেখার আলাদা গুণ আছে। তাতেই তরতরিয়ে পড়া যায়।

বিচিত্র জাতি এই আরবেরা। জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা, লড়াইয়ে আগ্রহী আবার বিলাসী জীবনযাপনের বাসনা তাদের ইতিহাসকে প্রাচীন ও মধ্যযুগে প্রভাবিত করেছিল। আজ একটি বাদে কোনোটিই অবশিষ্ট নেই। তারা কেবলই ভোগ-বিলাসিতার প্রতি মোহ হতে মুক্তি পায়নি। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্পবোধ, সাহিত্যবোধ - এসব কিছুকেই তারা মধ্যযুগেই তিন তালাক দিয়েছে। হিট্টির লেখা মূল বইটা পড়ার বাসনা রইল।
Profile Image for Baher Soliman.
494 reviews475 followers
March 10, 2019
" فليب حتى" هو نموذج للمفكر الذي جمع كل ترهات المستشرقين في التاريخ ليُقدِّمها للمستهلك الغربي ، هذا الكتاب هو مختصر لكتابه الضخم " تاريخ العرب المطول " ، المشكلة الحقيقية التي ستواجهك عند قراءة مثل هذه الكتب المكتوبة بنفس غربي ، أننا لا نكتب تاريخنا من وجهة نظرنا ، والحقيقة أنه لا يوجد مؤرخ يكتب تاريخ بلاده أو أمته بموضوعية من وجهة نظر الأمم الأخرى ، والشيء المؤكد أنه صعب أن يكتب مؤرخ أو مفكر عن فترة تاريخية طو��لة زمنيًا وتجده متماسكًا طوال صفحات كتابه بنفس القوة أو الموضوعية إن وجدت .

هذا الكتاب يتناول تاريخ العرب من قبل الإسلام إلى بعثة النبي – صل الله عليه وسلم- إلى سير الفتوحات الإسلامية الأولى وفتح الأندلس إلى الحروب الصليبية ودولة المماليك ، فمن المستحيل أن نقول في مراجعة تفصيلات المؤاخذات على هذه الحقب الزمنية المختلفة ، لكن الأهم هو بيان مدى موضوعية "فليب حتى" التي غابت تمامًا حتى أنه نسب نصوص القرآن الكريم إلى النبي محمد – صل الله عيه سلم - وقام بتصوير عملية مبايعة أبي بكر –رضي الله عنه- بأنها عملية تأمرية بينه وبين عمر بن الخطاب رضي الله عنه، وهو يصف الفتوحات الإسلامية كلها بأن محركها هو العوامل المادية وليس للجوانب الروحية نصيب ويلتقي مع التفسير الماركسي في هذا الجانب ، وهكذا دواليك أراد تاريخًا مشوهًا ، فليس ثمة فتح عنده إلا للمؤن والغنائم .

وتجد " فليب حتي" في تفسيره لنكبة البرامكة يتكلم عن تلك القصة التي لا تثبت عن علاقة جعفر بالعباسة أخت الرشيد ، وهي تلك القصة التي أوردها صاحب الأغاني على ما في كتابه من سخافات لا تثبت ، ثم تطاول على هارون الرشيد ولم يعجبه دفاع ابن خلدون عنه ، ومعلوم لكل منصف رفض الثقات لتلك الأقاويل ، فقصة العباسة هذه رفضها الخطيب البغدادي في " تاريخ بغداد " وابن تغري بردي في " النجوم الزاهرة " ، لكن موضوعية " فليب حتى " الزائفة عن رؤية هذه الأشياء كليلة .

والأمر ليس غياب موضوعية وفقط ، بل وغياب الدقة التاريخية أيضًا ، وهذا أمر متكرر في كتابه ، مثلًا ينسب انتصار عين جالوت إلى بيبرس لا السلطان المظفر قطز ، وكذلك انسياقه وراء الروايات التي تصور الحسد والتباغض بين موسى بن نصير وطارق بن زياد ، ويعتبر استعانة المعتمد بن عباد بالمرابطين لمواجهة ألفونسو على حد قوله أكبر خطيئة ! .

والمشكلة أن " فليب حتى " لا يخفي صليبيته وهو يتغزل في سقوط " باري " ويقول بأنه فاتحة عهد جديد زال فيه الخطر الإسلامي ، بل يتنفس الصعداء بعد سقوط غرناطة ويقول بذلك انتهت المشكلة الإسلامية ! الحقيقة أن الفرق بين " غستاف لوبون " وبين " فليب حتى " هو الفرق بين مؤرخ استحى من الالتفاف حول الموضوعية وبين مؤرخ وضعها تحت حذائه ويحاول أن يقنعك أن هذا أكرم لها ! .

هذا الكتاب من أسوأ الكتب التي يمكن أن تقرأها ، وقد رد على "فليب حتى " بعض المفكرين مثل الدكتور إبراهيم عوض بما يكشف عوار هذا الرجل وحقده على الإسلام والمسلمين .
Profile Image for Skallagrimsen  .
398 reviews104 followers
Read
July 4, 2023
Despite being published in the 1940s, this book remains a substantially accurate history of the world-transforming epic of the Arab peoples. I found it a quick, captivating, and informative read. It whetted my curiosity to learn more about this important subject.

I also bear a special debt of gratitude to this book for introducing me to Antar, or Antarah ibn Shaddad, the Arab warrior poet, who became a special interest of mine.
Profile Image for Manahil Algarni.
60 reviews11 followers
Read
March 1, 2014
من أروع الكتب التي قرأت , أنصح بقراءته .
Profile Image for Hamza.
18 reviews20 followers
August 8, 2025
A good overall introduction to the subject and free from the contempt authors of the time had for Arab/Muslims cultures probably given Hittis own Arab background. A bit dated especially on matters of racial anthropology.
Profile Image for أحمد.
Author 5 books65 followers
December 26, 2019
كتاب مختصر لكتاب تاريخ العرب لمؤلفه اللبناني الأمريكي فيليب حِتِي، الكتاب أسلوبه ليس تاريخيًا تمامًا، يعرج أحيانًا لإن يكون الكلام أنثروبولوجيًا بشكل لطيف، خصوصًا في أجزاءه الأولى في كلامه عن العرب الأصليون - حسب تعبيره - في شبه الجزيرة.
يبدأ الكتاب بالحديث عن الحياة العربية قبل الإسلام، ثم مرحلة البعثة، ثم الخلافة، حتى الأندلس، ثم يتحدث عن تاريخ الحضارة الثقافية والإجتماعية مستعرضًا تاريخ مدن هامة كبغداد وقرطبة، ثم يتحدث عن وصول المنحنى للقاع بدءا من الحروب الصليبية والمماليك وما تلا ذلك من عصور مظلمة حسب وصفه.
الكتاب كُتب بالإنجليزية أساسًا ليدرس في الجيش الأمريكي وترجمته للعربية لا بأس بها على الإطلاق.
يعيب الكتاب أنه لا يبدو تمامًا أن كاتبه عربيًا، هو كتاب من مستشرق بحت، نمط استشراقي لا يخطئه شخص لا يجيد القراءة حتى، يتبدى ذلك في سرده الخاص بفترة البعثة وفترة الخلافة.
الحقيقة لا يمكن اعتباره مصدر منصف للتاريخ الإسلامي، ولكنه مسلي رغم كل شيء، ولكن لا أنصح به مطلقًا لشخص يبدأ في قراءة كتب التاريخ الإسلامي أو العربي القديم.
2/5
Profile Image for Khaled Abdel dayem.
1,227 reviews2 followers
January 20, 2025
من اشهر الكتب المعتمده في تاريخ العرب في المناهج الدراسيه
الكاتب اللبناني الماروني مجدّ امراء دروز بفصول كامله بينما لم يكن من نصيب صلاح الدين الايوبي وغيره من ابطال التاريخ الاسلامي العربي الارباع سطور
96 reviews8 followers
October 9, 2022
كتاب ممتاز لمؤرخ عظيم، الدكتور فيليب حتّي شيخ المؤرخين العرب في العصر الحديث !
Profile Image for وسام عبده.
Author 13 books200 followers
March 28, 2014
مقارنة بالسمعة التي يحظى بها يعتبر الكتاب شديد التواضع. لفت نظري اختيار المؤلف للعنوان "موجز تاريخ العرب" وكان أحرى به أن يسميه موجز تاريخ المسلمين فهو يعترف في أكثر من موضع في كتابه بأن الإسلام كان هو العامل الوحيد الذي جعل من العرب أمة ودفع بها دفعاً للتاريخ، كما يصرح مراراً وتكراراً أن هذا التاريخ الذي يتناوله وهذه الحضارة التي يكتب عنها اشترك فيها شعوب مختلفة إلى جانب العرب. فإذا كانت حجته أن اللغة العربية هيمنت على الشخصية الثقافية وهذا حق، فإنه لا يزال رابط الإسلام الأقوى والأبعد أثراً. ولكنني قد ألتمس للمؤلف العذر وانا اعرف أنه قد ولد ونشأ في لبنان في زمن كان أفكار القومية العربية تمور في عقول المثقفين اللبنانيين والسوريين وتهيمن على توجهاتهم الفكرية والثقافية، فهذا الكتاب وسلفه المسمى "تاريخ العرب المطول" -والذي لم أطلع عليه – وإن كانا كتبا في فترة كهولة المؤلف وفي المهجر الأمريكي، إلا أنه لا يمكن الزعم بأن الرجل كان في معزل عن مؤثرات القومية العربية القادمة من الوطن.
لا أستطيع أن أتجاهل هذا الكم من المرويات الضعيفة التي ذكرها الكاتب التي ينقلها عن أغاني الأصفهاني والف ليلة وليلة ويصرح بذلك وكأن مثل هذه الكتب من المصادر التاريخية التي يعتمد عليها، لذلك نراه يصور الأمين العباسي بين جواريه الراقصات المغنيات يركض بينهن كغر ساذج (ص119) ويتخذ الغلمان محاكياً طواغيت الفرس (ص 135) بينما كتب التاريخ تصف الرجل الذي أمضى نحو خمس سنوات فوق دست الخلافة بأنه صاحب علم وأدب ومرؤة اهتم بثغور الشام وشحنها بالمجاهدين ولما أشار عليه أحدهم بأن يتخذ ولدي المأمون رهينتين يبتز بهما أخيه رد عليه "أتدعوني إلى قتل أبنائي وسفك دم أهلي" ثم طرده من مجلسه. ومثال ذلك تجده مع هارون الرشيد وبيبرس وعبد الرحمن الناصر وغيرهم ينقل عن الكتب الروايات الضعيفة والساقطة بغير توضيع أو تبيان. كما أنى لا أزال المح ظل المستشرقين فوق كل صفحة من صفحات الكتاب، فالمؤلف ينحاز إلى أطروحاتهم وأفكارهم حتى وكأنه يكتب هذا التاريخ ليوافقوه عليه.
وعلى الرغم من الفصول التي خصصها الكاتب لوصف حضارة العرب في المأكل والمشرب والملبس والشعر والغناء والعمارة فإن تناوله لهذه الموضوعات سطحياً، حتى أنك لا تكاد تعرف عن الشعر العربي وهو أهم فنون العرب إلا النذر اليسير ولا تعرف من شعراء العرب إلا أبو نواس الذي ذكره في معرض حديثه عن شعر الخمريات (ص 131) وعمر بن أبي ربيعة عند حديثه عن الغزل بالنساء (ص 109) وأبن زيدون الذي قدمه كسياسي أكثر من شاعر (ص 184)، أما عن الفلاسفة والفقهاء والعلماء فقس عليه ما ورد. ولك أن تتصور كتاب عن تاريخ العرب العام ولا يذكر فيه جعفر الصادق ولا أبي حنيفة ولا المتنبي!!!
على الرغم من تقريظ العديد من الكتاب لهذا الكتاب، إلا أني أراه ضعيف المنهج والمادة العلمية في آن واحد، ولا يمكن الركون عليه لتكوين رؤية سليمة ومتكاملة عن الحضارة الإسلامية أو تاريخ العرب سمه ما شئت.
Profile Image for Shalan al shammary.
114 reviews24 followers
August 17, 2013
بمجرد ما قرأت في المقدمة أن هذا الكتاب تمت ترجمته ترجمة خاصة للجيش الامريكي

فكرت في رميه حانباً
لأني اعرف ان ذوق العسكر في الكتب لا يسر
فما بالك لو كان هؤلاء العسكر امريكان يريدون ان يقرأوا عن العرب !

الا اني اتممت الكتاب على كل حال
Profile Image for James.
66 reviews5 followers
July 24, 2020
This book provides a pretty good overview of the history of the Arab and Islamic world up until the beginning of modern times, though it focuses mostly on the medieval period. Necessarily leaving out quite a lot of details, the author still includes various anecdotes that help flesh out the history and make it feel more alive.

There were a few portions where I felt like he should have supported his topics with a better background introduction (instead of throwing out names and assuming the ready was already familiar with them). The information in this volume would dovetail nicely with a study of medieval Europe, and some knowledge of ancient Greece, Rome and the Near East would be helpful.

Hitti does well, however, in drawing connections between the Arabs and various other civilizations and cultures that it encounters throughout history. In fact, some of the best insights in the book relate to just how messy the cultural and intellectual history of the world is, with constant absorptions and borrowings and transmissions from group to group, often back and forth, so that any particular discovery, practice or piece of knowledge can rarely be said to be the unique product of any one of them.

Overall this was an interesting, pleasant, and easy read. For those looking for more insight into the modern issues and problems of the Arab world, you will need to look to other sources, but this will provide a lot of useful background context for those modern topics.
Profile Image for Patrick Peterson.
520 reviews318 followers
March 17, 2021
2021-03-17 This was the 3rd book we read in my honors history "Non Western Cultures" class my HS sophomore year. I liked it better than the China history book, partly because there were vastly fewer details and no dynasties to remember the ins and out of. But it was also tough to really get into such a foreign culture. At least I was exposed to it early and was able to learn more as I went along.
Profile Image for Nanny SA.
342 reviews41 followers
October 29, 2020
Menceritakan sejarah peradaban banhsa Arab mulai dari masa nomaden dan sebelum masuk Islam sampai zaman modern.
Awalnya saya pikir akan rumit membacanya tapi ternyata bahasanya sederhana dan jelas, dengan gaya seperti short story sehingga tidak membosannkan.
Menarik buat penyuka sejarah.
This entire review has been hidden because of spoilers.
5 reviews
September 16, 2018
Its contents resemble "history of the arabs", like the concise version. I prefer "History of The Arabs".
Profile Image for solana.
109 reviews
March 28, 2020
found a hidden treasures of Arabs here. i'll make its review later.
Profile Image for Rachel.
83 reviews
February 25, 2024
The introduction states it well that he took the liberty of a historian to mention the parts of history that show the Arabs’ glory. While definitely biased, it was still an interesting read.
Profile Image for عبد الله القصير.
435 reviews89 followers
December 1, 2016
مع أن الكتاب ليس موجه للكاتب العربي إلا أنه ممتع للغاية. تاريخ موجز وسهل للغاية، يعطيك خلاصة التاريخ العربي بإسلوب أدبي بديع. تكلم فيه عن الرسول عليه السلام ثم الخلفاء والدولة الأموية، ثم أسهب بالأندلس وصقلية لتأثيرهما على أوروبا. ثم تكلم عن ابداعات العرب العلمية والأدبي، وطرقهم التجارية. ثم ينتهي بالحروب الصليبية ودولة المماليك، إلى تاريخهم المعاصر.
على كلٍ المؤلف يأخذ عن المستشرقين والغربيين عمومًا الفصل بين الغرب والشرق، ويكثر من الكلام عن الشخصية السامية والشخصية الغربية( يمثلهما اليهود والمسلمين والإغريق ) واعتقد ان هذا التقسيم لم يعد له أي معنى بالكتابات التاريخية
1 review
December 14, 2018
كان من الجيد قراءة هذا الكتاب الذي استثار فضولي لقراءة المزيد من الكتب التاريخية وفتح شهيتي للبحث عن الحقائق..حيث وبالرغم من أن الكتاب يذكر العديد من الحقائق عن تاريخ العرب والمسلمين إلا أنه يدسُّ السم في الدسم ..فالكتاب مليء بالأكاذيب والخرافات التي لا أساس لها ..المفروض من مثل هذا الكتاب الذي ترجم للكثير من اللغات والذي يعتبر أداة لتعريف العالم بالمسلمين أن يتحرى الصدق و أن يلجأ فيه الكاتب للمصادر الصحيحة والموثوقة للأخذ عنها ..في كثير من مناطق الكتاب تشعر أنك تقرأ في كتاب ألف ليلة وليلة الخيالي والذي ينافي الكثير من الحقائق..
Profile Image for David Corleto-Bales.
1,074 reviews70 followers
February 21, 2012
A classic history of the Arabs, first published in 1943, and updated in my edition in 1956, a pivotal year for the Arabs when they thwarted the British-French effort to retake the Suez Canal; this book, however, deals with the classic age of the Arabs after the rise of Islam, the entry into Europe via Spain and Portugal, the "glory" of medieval Baghdad and the Crusades. Somewhat antiquated, but a good history.
Profile Image for Sharon.
116 reviews5 followers
October 9, 2013
I wanted to know more about the history of the Arab people and was lucky enough to find this book at Books At A Steal. It was chock full of facts, difficult names to pronounce, and some oddly worded sentences. The book included several maps which were really helpful. I think a timeline, although it would have needed to be a long one, would have kept me from getting confused at times. Overall I found this book quite interesting.
Profile Image for Khalid Abdel Dayem.
552 reviews26 followers
January 14, 2023
كان هاذا الكتاب احد المراجع لمادة تاريخ الاردن المتطلب الجامعي

فيليب حتي مؤرخ ماروني لبناني وله قيمه في الغرب الا ان الكاتب لم يستطع ان يخفي كرهه للحضاره الاسلاميه العربيه فكتاب مرجعي يسهب فيه ببطولات امير درزي لم تتجاوز سلطته بضع كيلومترات ويكتب عنه فصل كامل بينما بطل مثل صلاح الدين الايوبي الذي غير مسري التاريخ واخرج الصليبين لم يناله الا بضع سطور
Profile Image for Helvy.
Author 71 books949 followers
March 17, 2008

Baca buku ini waktu kuliah S1 di Jurusan sastra arab FSUI tahun 1989. Dipakai sebagai buku kuliah. Lumayan...
Profile Image for Alek.
18 reviews1 follower
October 19, 2014
I think this was a really good general overview, but obviously not very thorough. Great for a beginner like me.
Displaying 1 - 30 of 32 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.