Jump to ratings and reviews
Rate this book

বিশ্বাসঘাতক

Rate this book
মার্কিন সরকারের অতন্দ্র-প্রহরা ভেদ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জনৈক বৈজ্ঞানিক একক প্রচেষ্টায় একটি গোপন তথ্য রাশিয়ায় পাচার করেন। মানব-সভ্যতার ইতিহাসে আর্থিক মূল্যমানের দিক থেকে এটাই নাকি সবচেয়ে বড় জাতের বিশ্বাসঘাতকতা। 'কী, কেন; কীভাবে ও কে?' সেটাই 'বিশ্বাসঘাতক'-এর মূল উপজীব্য।

256 pages, Hardcover

First published January 1, 1974

110 people are currently reading
1782 people want to read

About the author

Narayan Sanyal

153 books202 followers
Narayan Sanyal (bn: নারায়ণ সান্যাল) was a well-known & versatile writer of modern Bengali literature. He received several awards for literature including Rabindra Puraskar for Aporupa Ajanta (Bangla: অপরূপা অজন্তা) in 1969, Bankim Puraskar for Rupmonjori (Bangla: রূপমঞ্জরী) in 2000, and Narasingha Dutta Award. Many of his books were filmed and he won the Best Film Story Writer Award for Shotyokam (Bangla: সত্যকাম) by Bengal Film Journalists.

Sanyal wrote numerous books that dealt with many topics, such as children, science, art and architecture, travels, psychiatry, technology, refugee problems, history, biographical pieces, encyclopedia of animals, social novel and Devadasi-related. He also wrote a series of detective fiction called the Kanta (Thorn) series, the framework of which was borrowed from the Perry Mason series of novels by Erle Stanley Gardner. Some of the stories were inspired from popular Agatha Christie novels like Mousetrap, ABC Murders, etc.

Interestingly, this talented author also preferred writing books on deep shadow of many world famous works. One of the most popular Sci-Fictions Nakshatraloker Debatatma (Bangla: নক্ষত্রলোকের দেবাত্মা) is based on the transformation of human race from primitive creature to civilized intelligent species controlling the whole earth. Then it deals with Jupiter exploration and a super intelligent Computer HAL. The three parted book is a clear shadow of 2001: A Space Odyssey by Arthur C. Clarke. In his book, NS renamed HAL as 'Jantra-Na.' In his mother tongue Bangla, it means 'Not a Machine'.

His most popular work is Biswasghatak (Bangla: বিশ্বাসঘাতক) written about the Manhattan project that developed the first US Atom Bomb. This book is based on the shadow of Brighter than a Thousand Suns: A Personal History of the Atomic Scientists (1970), by Austrian Robert Jungk. Not a shadow, but almost translation in some parts. Few of the illustrations in this book have been taken from few Russian school level books.

Another book Timi Timingil (Bangla: তিমি তিমিঙ্গিল) is on Whales. This stands on an article published in Readers Digest. But while NS accepted this for Timi Timingil, he never mentioned or thanked authors of 2001 or Brighter.

Most of the "Kanta" series stories were copied or heavily inspired from Perry Mason novels. For example, "Ristedar-er Kanta" was copied from The case of the beautiful beggar, "Abhipurbak Ni-Dhatu Au-er Kanta" was inspired from The case of the restless redhead. Some of the stories were inspired from Agatha Christie stories. For example, "Dress Rehearsal-er Kanta" was inspired from Three Act Tragedy. NS acknowledged his inspirations in his first few "Kanta" series books, but forgot to do so for the latter ones.

Thousands of NS fans feel sorry of this as a man of his talent could have developed something even better instead of just 'Copying' and retouching others works while he had indeed produced some excellent works himself.

But it is undoubtedly accepted by all that NS was one of the finest authors in Bengali and he was a class apart from the flock of contemporary Bengali writers those who too dependent on sentiment and emotional overdose in their writings and too dependent on monopolist Bengali media/publication groups in commercial front.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,053 (69%)
4 stars
364 (24%)
3 stars
64 (4%)
2 stars
16 (1%)
1 star
8 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 142 reviews
Profile Image for Riju Ganguly.
Author 37 books1,862 followers
January 11, 2015
মাধ্যমিক শেষ। "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা": এই কথাটার অর্থ বোঝার জন্যে লাইব্রেরি প্রায় লুট করছি। এই সময়েই আমি এবং আমার তৎকালীন বন্ধুরা আবিষ্কার করি এক লেখককে (যার লেখালিখি চলছে কিন্তু তার প্রায় তিন দশক আগে থেকেই): নারায়ণ সান্যাল। যখন বেশির ভাগ বন্ধুই দাদা-দের সৎ পরামর্শ মেনে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে এগোনো উদযাপন করার জন্যে "অশ্লীলতার দায়ে", "লাল ত্রিকোণ", আর "অন্তর্লীণা" তুলে নিচ্ছে, তখন আমি এই বইটির প্রতি আকৃষ্ট হই মূলত খালেদ চৌধুরীর করা প্রচ্ছদের টানে। সেই বামপন্থী যুগে ওই বিশেষ ব্যাঙের ছাতার আকৃতিবিশিষ্ট ধোঁয়া আর E = mc*c সমীকরণের অর্থ সহজবোধ্য ছিল, কিন্তু পায়রাটা সবুজ রঙের কেন, তা জানার জন্যে বইটা পড়তে হল। আর সেই যে ভদ্রলোক তাঁর কাটা-কাটা সংলাপ, রুদ্ধ-শ্বাস গতিসম্পন্ন ন্যারেটিভ আর বুদ্ধিদীপ্ত-অথচ-সরস ভাষায় বিজ্ঞানের জটিলতম বিষয়কেও সহজ করার পদ্ধতি দিয়ে আমাকে বঁড়শিতে গাঁথলেন, আমি এখনও বেরোতে পারলাম না তার থেকে। বাংলায় লেখা শ্রেষ্ঠতম থ্রিলার একে বলা যাচ্ছেনা, কারণ বাস্তবের সঙ্গে কল্পনাকে বড্ড বেশি মাত্রায় মেশান হয়েছে এতে, বিশেষত মহিলাদের চরিত্রচিত্রণ করতে গিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞান তথা মানব-ইতিহাসের এক ভয়ংকর-সুন্দর সময় নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠ বাংলা বই এটিই। পড়ে ফেলুন!
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
December 24, 2023

❝Now I'm become death, the Destroyer of the Worlds...❞


ওপেনহাইমারের মুখে এই আক্ষেপ শুনতে শুনতে,দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন হয়তো। ক্রিস নোলানের সিনেমার কল্যাণে ওপেনহাইমার হয়ে গেছেন ট্র্যাজিক অ্যামেরিকান হিরো। এই সেনসেশনের ঝাপ্টা এসে লেগেছে বাঙালি মনেও। অনেকেই নিজেদের বইয়ের তাক থেকে একটা বই নামিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেন। বইটার নাম ‘বিশ্বাসঘাতক’,লেখক ‘নারায়ণ সান্যাল’। এই আখ্যানের সঙ্গে ওপেনহাইমারের যোগসূত্র অত্যন্ত গভীর এটা ঠিক। তবে বইয়ের মূল উপলক্ষ্য কিন্তু ওপেনহাইমার নন। ফেসবুকের হোমপেজে সিনেমা আর বইয়ের অজস্র কোলাবরেশনে মূল ফোকাসে ওপেনহাইমার চলে আসলেও বিশ্বাসঘাতক বইয়ে বড়জোর একটা খণ্ডকাব্যের নায়ক বলা যেতে পারে তাকে। তবে ‘বিশ্বাসঘাতক’-কে শুধু ‘পপুলার সায়েন্স’ বললে সেটা সত্যালাপ হবে না; বরং একটি রুদ্ধশ্বাস রহস্য কাহিনীর মোড়কে ‘পপ সায়েন্স’ (নাকি ‘পপ সায়েন্স’এর মোড়কে রহস্য কাহিনী ?) বললে হয়তো সঠিক বলা হবে |

বিশ্বাসঘাতকের প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর তার পরবর্তী সময়ে অ্যামেরিকায় ঘটে যাওয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে। পারমাণবিক বোমার একচ্ছত্র অধিপতি তখন অ্যামেরিকা। কিন্তু তার ম্যানহাটন প্রজেক্টের গবেষণাগার থেকে কোনো এক বিশ্বাসঘাতক বোমা তৈরির সূত্র সিগারেটের প্যাকেটে করে মাইক্রোফিল্ম আকারে পাচার করে রাশিয়ায়। এই ঘটনায় তৈরি হয় রাজনৈতিক সংকট। শুরু হয় তদন্ত, প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করা হল মোট বারো জন সন্দেহভাজন বিজ্ঞানীর নামের তালিকা, নাকি আসলে এই তালিকায় নাম আছে তেরো জনের! কে এই ত্রয়োদশ ব্যক্তি, যাকে এই তালিকায় যুক্ত করার কথা ভাবাটাও কঠিন ছিল অনেকের ক্ষেত্রে?

প্রথমত অবাক হতে হয় গুগল পূর্ববর্তী যুগে এত তথ্য সংগ্রহ করতে নারায়ণবাবুকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছিল সেই বিষয়টি ভেবে। একটি আখ্যানের মধ্যে এত ঐতিহাসিক চরিত্র, বৈজ্ঞানিক, রাষ্ট্রনেতার উপস্থিতি বাংলা সাহিত্যে বিরলতম। দ্বিতীয়ত, অবাক করে এর ফর্ম। কী, কেন ও কে? – এই তিনটা প্রশ্নের উপর দাঁড়িয়ে আছে এর ভিত। লেখক আর প্রকাশক নিজেরাই দ্বিধান্বিত ছিলেন এই গ্রন্থটাকে কী হিসাবে চিহ্নিত করা হবে সেই নিয়ে... ফ্ল্যাপ খেয়াল করলে দেখবেন,

❝উপন্যাসের কেমিস্ট্রির ফর্মুলা অপ্রত্যাশিত। বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ একে বলা চলে না, কারণ বিজ্ঞান গ্রন্থে রোমান্টিক প্রেম কাহিনি অপাংক্তেয়। গোয়েন্দা যেখানে অপরাধীকে চিহ্নিত করছে না, অপরাধী স্বয়ং এগিয়ে আসছে ধরা দিতে… সেখানে গোয়েন্দা কাহিনির প্রশ্নই ওঠে না।❞


বিজ্ঞানের প্রাথমিক জ্ঞান থাকলেই বইটিকে বোঝা সম্ভবপর।এইজন্য নারায়ণ সান্যালকে ক্রেডিট দিতেই হয়। নারায়ণ সান্যাল একদম প্রথম পর্যায়ে থেকে কীভাবে পরমাণু বিদীর্ণ করে তার থেকে চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে বোমা প্রস্তুত হল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেন। আখ্যানে চরিত্র হিসাবে এসেছেন রাদারফোর্ড, এসেছেন নীলস বোর, হান্স বেথে, অটো হান, চ্যাডউইক, এনরিকো ফের্মি, ক্লাউস ফুকস, ওপেনহাইমার, ৎজিলার্ড, কুরি দম্পতি, স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন-সহ আরও অনেক বিজ্ঞানী, তবে তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসেছেন নন-ফিকশন আকারে। এসেছেন রুজভেল্ট, ট্রুম্যান, চার্চিল, স্ট্যালিন, মুসোলিনি, হিটলার-সহ প্রচুর রাজনৈতিক চরিত্র। এসেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার গোয়েন্দাদের কথাও। আবার একসময় বিজ্ঞান থেকে প্রেমকাহিনির দিকে মোড় নেয় আখ্যান।

❝নভঃস্পৃশং দীপ্তমনেকবর্ণং
ব্যাত্তাননং দীপ্তবিশালনেত্রম্।
দৃষ্ট্বা হি ত্বাং প্রব্যথিতান্তরাত্মা
ধৃতিং ন বিন্দামি শমং চ বিষ্ণো..❞
(শ্রীমদভগবদগীতা, অধ্যায় ১১, শ্লোক ২৪)


ওপেনহাইমার ট্রিনিটি টেস্টের পর বিস্ফোরণের ব্যাপকতা দেখে উচ্চারণ করেন। তিনি এই বিস্ফোরণকে সহস্র সূর্য উদয়ের সঙ্গে তুলনা করেন, যা মূলত শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল গীতায়। চিন্তার দিক থেকে ওপেনহাইমার কমিউনিস্ট হওয়ার কারণে এখানে ধর্মের যোগ খুঁজতে যাওয়া বৃথা, ধরে নেওয়া যায় তিনি কেবল এটিকে একটি কবিতা হিসেবেই ব্যবহার করেছিলেন। আমরা যদি একটু মহাভারতের দিকে তাকাই, তাহলে সেখানে ধর্মযুদ্ধের যে তত্ত্ব পাওয়া যায়, তা আপাতভাবে খুব সহজ-সরল মনে হলেও, তা ঠিক ততটা সহজ নয়। মহাভারতে বলা হয়েছে, অহিংসা পরম ধর্ম, ধর্ম হিংসা তথ্যবচ। এবার এই ধর্মহিংসাটা কী সেটা খুব গোলমেলে বিষয়। কৌরবপক্ষে নারায়ণী সেনাকে পাঠিয়ে তাদের অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়াটাও কি ধর্মের জন্য ছিল? এর উত্তর আমাদের মহাভারত দেয় না। ঠিক তেমনভাবেই, কোন ধর্ম হিংসার জোরে জার্মানির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত করা আণবিক বোমাকে শক্তি আস্ফালনের জন্য আমেরিকা জাপানের উপর নিক্ষেপ করেছিল তার উত্তর ইতিহাসের কাছে আজও অধরা। এই আখ্যানের বিশ্বাসঘাতককে আপাতভাবে ট্রেইটর মনে হলেও, তিনি কোন দর্শন থেকে কোন পরিস্থিতিতে কাজ করেছিলেন, সেটা জানার পর হয়তো পাঠকের মন পাল্টাতেও পারে। আমাদের বিশ্বাসঘাতকের পিতা ছোটোবেলায় সন্তান যাতে জুয়াচুরি না শেখে, সেই কারণে এক বিশেষ ঘটনায় একটি কয়েনকে কেটে আর দুটি দিককেই ‘হেড’ বানিয়ে দিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তি বড়ো হয়ে যখন একটি ভুল সময়ে ভুল পক্ষে থেকে কিছু হেডলেস মনস্টারের মধ্যে থাকতে থাকতে যখন বুঝতে পারেন ব্যাপারটা ভুল হচ্ছে, তখন তিনি যে কাজটি করেন তা কেবল সাদায় কালোয় বিচার করা যায় না, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে মানব সভ্যতার ইতিহাস।

শুধু ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর দিলে হবে না। ধরুন,আপনি অন্ধকার ফাঁকা রাস্তায় একলা হাঁটছেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন পশ্চাৎ ধাবমান পদশব্দ। পেছনে ঘুরে তাকাতে যাবেন ঠিক সেসময় — এইরকম টানটান উত্তেজনার মাঝে যদি কাব্যিক লেখনী মিশে যায় তাহলে সেটাকে রাখতে হয় আরও কয়েক ধাপ উপরে। একটা
র‌্যানডম অনুচ্ছেদ তুলে দিচ্ছি—

❝রোদ ঝলমল সবুজ-প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে কুমারী মেয়ের সিঁথির মতো পড়ে আছে সড়কটা। মাঝে মাঝে খামারবাড়ি - যব আর বার্লির ক্ষেত। পাতা-ঝরার দিন শুরু হয়নি, রৌদ্রে ঝলমল করছে সবুজ সতেজ পপলার আর এল্ম গাছের সারি। বিসর্পিল পথে গাড়ি চলেছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। নীরবে উপভোগ করছে এই প্রথম আবির্ভাব মুহূর্তটি; আর নতুন যুগে, নতুন পৃথিবীতে নতুন করে বাঁচার প্রভাতী সুর।❞


এই আখ্যানে পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিজের চরিত্র বদলে বারবার ধ্রুবপদের মতো ফিরে এসেছে, যেন কার্লমার্ক্সের সেই বিখ্যাত উক্তির অংশ, “first as tragedy, second as farce”। ট্রিনিটি টেস্টে প্রথম পরীক্ষামূলক বোমা বিস্ফোরণের পর দেড় মিনিট কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বিজ্ঞানী কথা বলতে পারেননি, দেড় মিনিট পর কানে আসে বিস্ফোরণের শব্দ। এর বেশ অনেকগুলো দিন পর যখন এই আখ্যানের বিশ্বাসঘাতক তার প্রেয়সীর কাছ থেকে এক চরমতম সত্যি জানতে পারেন, তার ঠিক পরে তারাও অনুভব করেন ‘অস্বাভাবিক একটি নিস্তব্ধতা।’ পুরো দেড় মিনিট তারাও কেউ কোনো কথা বলেননি। এই ‘দেড় মিনিটে’-র রূপকটি নারায়ণবাবু যে চরম শৈল্পিক চেতনায় এই আখ্যানে ব্যবহার করেছেন তাতে বইয়ের সমাপ্তিতে গিয়ে অবাক হয়ে যেতে হয়।


—ফোর...থ্রি...টু...ওয়ান......... নাউ!

❝প্রকাণ্ড একটা ধোঁয়ার বলয় পাক খেতে খেতে ওপরে উঠে যাচ্ছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ওপর আর একটা আগুনের বলয়- তার কিনারাগুলো সিঁদুরে লাল। ওপরে ওপরে, আরও ওপরে উঠে গেল। অনাবিষ্কৃত একটা নগ্নসত্য আবির্ভূত হল ওর চোখের সামনে। পারমাণবিক বন্ধনমুক্ত মহামৃত্যু নেমে এল এবার পৃথিবীর বুকের ওপর।❞

❝���ারপর অস্বাভাবিক একটা নিস্তব্ধতা। পুরো দেড় মিনিট কেউ কোনো কথা বলেনি।❞


এই বইয়ের একটি অন্যতম দিক হচ্ছে, জার্মানরা কেন পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করতে পারে নি তার নেপথ্য অনুসন্ধান। যদিও অনেকের অভিযোগ বইটি অস্ট্রিয়ান লেখক Robert Jungk এর Brighter than a Thousand Suns: A Personal History of the Atomic Scientists বইয়ের ছায়া অবলম্বনে লেখা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় না এতোটা রিলেটেবল করে,এতোটা বাঙালি আমেজ আর নাটকীয়তা মিশিয়ে এই আখ্যান নারায়ণ সান্যাল বাদে আর দ্বিতীয় কেউ উপস্থাপন করতে পারতেন।
Profile Image for Tiyas.
449 reviews125 followers
December 25, 2023
"অ্যান্ড নাও আই অ্যাম বিকাম ডেথ। দা..."

আচ্ছা থাক। পুনরাবৃত্তি করবো না। ইনস্টাগ্রাম থেকে ইউটিউব। ফেসবুক থেকে টুইটার। সর্বত্র রবার্ট ওপেনহাইমার উচ্চারিত শ্রীমদ্ভগবদগীতা শুনতে শুনতে, ক্লান্ত হয়ে গেছেন হয়তো। দোষ কাউকেই দেওয়া যায় না। বিশ্ব-রাজনীতি তথা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়কে কেবল কটা শব্দে জাস্টিফাই করা চাট্টিখানি কথা না। ওপেনহাইমার বুঝি চেষ্টা করেছিলেন। কতকটা সংকীর্ণ ভাবেই আমিত্বের দাস হয়েছিলেন হয়তো, তবু চেষ্টা করেছিলেন।

আমি ভগবান! খেলার ছলে, ছোটবেলায়, এক দমকা সেলফ-কনফিডেন্সের আবেগে, নিজেকে ভগবান সম্ভাষণ করে উপরওয়ালার কটূক্তি কুড়িয়েছি অনেকেই। তবে তা নেহাৎই ছেলেখেলা। যেই রবার্ট ওপেনহাইমার সেদিন ট্রিনিটি সাইটে দাড়িয়ে সংস্কৃতের সহায় হতে বাধ্য হয়েছিলেন, তিনি খোদ 'অ্যাটম বোম্বের জনক'। এহেন পরিস্থিতিতে সেই মানুষ আর যাই হোক, ছেলেখেলার অনেক উর্দ্ধে বিরাজমান। তার চোখের সামনে, গগলস্ ভেদ করা আবহমান প্রলয়। মানবসভ্যতার পদে বিজ্ঞানের কটাক্ষ। যেন অর্পিত এক আণবিক মহাকাল!

ঠিক কি বলেছিলেন তিনি সেদিন?

নারায়ণ সান্যাল অনুযায়ী, "নভঃস্পৃশং দীপ্তমনেকবর্ণং ব্যাত্তাননং দীপ্তবিশালনেত্রম্। দৃষ্ট্বা হি ত্বাং প্রব্যথিতান্তরাত্মা ধৃতিং ন বিন্দামি শমং চ বিষ্ণো।"

অধ্যায় ১১-র, চব্বিশ নম্বর শ্লোক। শ্রীহরির অপার্থিব বিশ্বরূপ দর্শনে কাতর অর্জুন। বলছেন, "তোমার আকাশষ্পর্শী, তেজোময়, বিবিধ বর্ণযুক্ত, বিস্তৃত মুখমন্ডল ও উজ্জ্বল আয়ত চক্ষুবিশিষ্ট। তোমাকে দেখে আমার হৃদয় ব্যথিত হচ্ছে। আমি ধৈর্য ও শম অবলম্বন করতে পারছি না প্রভু।"

এ ঘটনার যথার্থ ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবুও, যদি ধরে নি লেখক ক্রিয়েটিভ লিবার্টির নামে ওপেনহাইমারের মুখে এই শ্লোকটি বসিয়েছেন, তাতে আর যাই হোক, আমি কোনো ক্ষতি দেখি না। এমনটাই তো হওয়া উচিত। অমন পারমাণবিক মারণাস্ত্রের সামনে, ভয়, সংকোচ, দ্বিধাই তো স্বাভাবিক অবস্থান। খোদ স্রষ্টারও। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন মানব তৈরি করেছিলেন বটে, তবে তার দানব হয়ে ওঠা আটকাতে পারেননি যে।

তাহলে, "...আই অ্যাম বিকাম ডেথ...?" সেই উক্তির কি হলো? সেটাই প্রশ্ন। এবং সেটায় পরে আসছি। তবে, আপনি পারলে চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ওপেনহাইমার-কে সরিয়ে দিন। এই বই পড়তে বসলে, এটাই সবচেয়ে আবশ্যিক। এ জিনিসের ব্যাপ্তি এবং একাধারে অ্যাটম বোমার ইতিহাসে যে অজস্র ছোট বড় খেলোয়াড়দের অবদান, তাদের অদেখা করলে চিত্র অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এখানেই নারায়ন সান্যালের দুঃসাহস। সেই সত্তরের দশকে বসে, কেবল খান পঁচিশেক বই পড়ে ও রিসার্চ করে, অজস্র চরিত্রের মাধ্যমে, তিনি বলেছিলেন অ্যাটম বোমার নন-লিনিয়ার ইতিহাস। তাও আবার উপন্যাসের ছলে।

কেবলমাত্র ম্যানহাটান প্রজেক্টের ঘটনাবলী বলেই ক্ষান্ত হননি। শুরু করেছেন সেই গোড়া থেকে। প্রোফেসর রাদারফোর্ডের প্রোটন আবিষ্কার থেকে এক্কেবারে ঠান্ডা যুদ্ধের প্রাক্কালে এসে থেমেছেন। মাত্র ২৫০ পৃষ্ঠায় মহাভারত নামিয়ে এনেছেন লেখক। পাঠক হিসেবে যদি নাম ও পরিচয়ের স্রোতে বা বিজ্ঞানের তত্ত্বে বিহ্বল লাগে, তাহলেও কাউকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। তবে হলফ করে বলছি, সায়েন্স না বুঝলেও এই বইয়ের আনন্দ ষোলো আনা মিলবে। কারণ কাউকে বঞ্চিত করেননি লেখক। বইয়ের মূলেই সাজিয়েছেন একখানা জমজমাট এসপিয়নাজ থ্রিলার!

বলেছেন দ্বিতীয়-বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর রাজনৈতিক মেরুকরণের ভিত্তিতে, এক বা একাধিক, বিশ্বাসঘাতকের গল্প। মন বলে, এই মানুষটা আরো সিরিয়াসলি স্পাই উপন্যাস লিখলেন না কেনো? আমিই বা এই বই তাক থেকে নামাবার জন্য, ক্রিস্টোফার নোলানের অপেক্ষায় বসে রইলাম কেনো? যেমন সহজ, গতিময় লেখনী, তেমনই সূক্ষ সরস সংলাপ। পড়তে পড়তে, রিচার্ড ফাইনম্যান যে আদতে বাঙালি ছিলেন না, আর তিনি যে মুদ্রাদোষের প্রকোপে কথায় কথায় "পাগলের মতন" বলে উঠতেন না, সেটাই যে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

নীলস্ বোহর কে নিয়ে লেখা ফাইনম্যানের মজাদার কবিতা - Professor Bohr / Knows no whore! / Drinks no liquor / Is no bore.

নারায়ন সান্যাল অশেষ সরসতায় সেটিকে তর্জমা করলেন - প্রফেসর বোহর / মোর মনচোর! / কামিনীকাঞ্চনত্যাগী / সন্ন্যাসী ঘোর!

আজকের যুগে দাড়িয়ে, গুগল নামক কামধেনু গাইয়ের ভরসায় একের পর এক ইনফোথ্রিলার বাজারে সজোরে আছড়ে পড়ছে ঠিকই। কিন্ত সেসবে কি আর এমন অনাবিল সাহিত্যবোধ পাওয়া যায়? পপুলার সায়েন্স ঘরানার থ্রিলার পড়তে গিয়ে যদি পড়েন,

"রোদ ঝলমল সবুজ-প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে কুমারী মেয়ের সিঁথির মতো পড়ে আছে সড়কটা। মাঝে মাঝে খামারবাড়ি–যব আর বার্লির ক্ষেত। পাতা-ঝরার দিন শুরু হয়নি, রৌদ্রে ঝলমল করছে সবুজ সতেজ পপলার আর এল্ম গাছের সারি। বিসর্পিল পথে গাড়ি চলেছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। নীরবে উপভোগ করছে এই প্রথম আবির্ভাব মুহূর্তটি; আর নতুন যুগে, নতুন পৃথিবীতে নতুন করে বাঁচার প্রভাতী সুর।"

মানুষমাত্রই বোঝে। লস আল্যামস প্রজেক্টের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল, নতুন কোনো অস্ত্র নয়, নতুন এক পৃথিবী। আ হোল নিউ ওয়ার্ল্ড।

এই নব্যলব্ধ পৃথিবীর অ্যালবাট্রস হয়েই যেই মানুষটি ১৯৬৭ সালে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন, সেই জে রবার্ট ওপেনহাইমার তার বিখ্যাত উক্তিটি বলেছিলেন ষাটের দশকের এক টেলিভিশন ইন্টারভিউয়ে। দেখতে গেলে, সকল বিজ্ঞানীদের হাতেই রক্তের ছিটে। তারা হুল্লোড় করে অস্ত্র তৈরি করলেন বটে, কিন্তু সেই অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো আধিপত্য রইল না আর। হ্যা-না-দেখা যাক। কিছুই না। সমরবাদের দাসত্বে নোবেল জয়ীরা হলেন ভীত-পরাজিত। খোদ আইনস্টাইনের চিঠি আমল পেলো না ট্রুমানের ক্যাবিনেটে। অস্ত্র ব্যবহার হওয়া চাই। জার্মানি না হোক, মিলিয়ে যাক জাপান। কোটি টাকার বোমার আগুনে ভস্মীভূত হোক বিশ্বযুদ্ধ!

ওপেনহাইমার নোবেল পাননি। তবে টাইমস ম্যাগাজিনের কভারে স্থান পেয়েছিলেন। 'ফাদার অফ্ দা অ্যাটম বোম্ব' হিসেবে জনপ্রিয় স্বীকৃতি। তার সেই অমোঘ উক্তিটি সরাসরি গীতায় পাওয়া যায় না বটে। তবে যা পাওয়া যায়, তা উপরোক্ত সেই বিশ্বরূপ অধ্যায়েরই (১১) বত্রিশতম শ্লোকের অনুরূপ।

কালোহস্মি লোকক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধো লোকান্ সমাহর্তুমিহ প্রবৃত্তঃ।

আমি লোকক্ষয়কারী প্রবৃদ্ধ কাল। এবং আমিই এক্ষণে এই সমস্ত লোক সংহার করতে প্রবৃত্ত হয়েছি।

অ্যান্ড নাও আই হ্যাভ বিকাম ডেথ। দা ডেস্ট্রয়ার অফ্ ওয়ার্ল্ডস।

বইটি পুঙ্খানুুঙ্খভাবে ইতিহাস অধ্যুষিত হলেও, লেখক অনেকাংশেই কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। অর্ধেক তারা সেখানেই রদ করছি। স্পাই থ্রিলারের ট্র্যাজিক প্রেম সর্বস্ব পরিণতি দিতে গিয়ে, মেলোড্রামার সাহায্য নিয়েছেন লেখক। যা সত্য হলে, পাসিং মার্কস পেত নির্দ্বিধায়। তবে এর অনেকটাই লেখকের কল্পনা। পরিশিষ্ট অংশে যা তিনি স্বীকার করেছেন। এর বেশি বলবো না, পাছে স্পয়লার হয়ে যায়। তবে স্বল্প কজন নারী চরিত্রের উপস্থিতি সত্বেও, তারা সবাই যেন আবেগী, খেয়ালী ও অস্থিরমতি। ব্যাপারটা মজার। কারণ ক্রিস্টোফার নোলানের ছবিটিও একই দোষে দুষ্ট। এছাড়াও অবশ্য আরো একটি ক্ষেত্রে ১৯৭৪-এর বই এবং ২০২৩-র চলচ্চিত্র মিলে যায়। তা হলো, শয্যাদৃশ্যের সমীকরণে পরমাণু বিস্ফোরনের রূপক। যেই জিনিস নিয়ে আজকে ইন্টারনেট সক্রিয় হয়ে ��রছে, সে জিনিস প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে এক অসামান্য প্রতিভাধর বাঙালি লেখক লিখে গিয়েছিলেন তার বইয়ের পাতায়।

সাবেকি হিন্দি ছবিতে যেমন চুম্বন দৃশ্যের প্রাক্কালে গোলাপ ফুলের অবতারণা করানো হতো। কতকটা সেভাবেই। তবে চিরাচরিত ফেড-টু-ব্ল্যাকের বদলে দর্শকের সামনে এক ভয়ংকর সুন্দর প্রতিচ্ছবি মেলে ধরেন নারায়ন সান্যাল। আ কল ব্যাক টু ট্রিনিটি।

—“ফোর...থ্রি...টু...ওয়ান………নাউ !

"প্রকাণ্ড একটা ধোঁয়ার বলয় পাক খেতে খেতে ওপরে উঠে যাচ্ছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ওপর আর একটা আগুনের বলয়—তার কিনারাগুলো সিঁদুরে লাল। ওপরে ওপরে, আরও ওপরে উঠে গেল। অনাবিষ্কৃত একটা নগ্নসত্য আবির্ভূত হল ওর চোখের সামনে। পারমাণবিক বন্ধনমুক্ত মহামৃত্যু নেমে এল এবার পৃথিবীর বুকের ওপর।

“তারপর অস্বাভাবিক একটা নিস্তব্ধতা। পুরো দেড় মিনিট কেউ কোনো কথা বলেনি।”

৪.৫/৫ (২৭ জুলাই, ২০২৩)
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
January 11, 2023
বিষয়বস্তুর জোরে নিরেট ইতিহাসও যে মনোমুগ্ধকর ও ফিকশনের চেয়ে বেশি ঘটনাবহুল হতে পারে, তার এক নমুনা পেয়েছিলাম শ্রীপান্থের "ঠগী" বইয়ে। সে বেশ অনেকদিন আগের পড়া বই।

সদ্য পড়লাম "বিশ্বাসঘাতক" লেখক নারায়ণ স্যানাল। পড়তে গিয়ে ঠগী বইটার কথা বারবার মনে হচ্ছিলো। দু'টো বই'ই পড়তে গিয়ে প্রায় একই রকমের অনুভূতি হয়েছে। একবার মনে হচ্ছে নন-ফিকশন পড়ছি। তো, আবার মনে হচ্ছে এ যে ফিকশনকেও হার মানায়। লেখক নারায়ণ স্যানালের বইয়ের বিষয়বস্তু বরাবরই আমাকে চমৎকৃত করে, এই বইটার ক্ষেত্রে তার মাত্রা একটু বেশিই ছিলো। ইতিহাস নির্ভর ফিকশন অথবা নন-ফিকশন প্রিয় পাঠকের জন্য এই বইটা একটা অবশ্যপাঠ্য বই। কাহিনির অভিনবত্ব আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
Profile Image for Safwan  Mahmood.
113 reviews4 followers
March 26, 2025
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার কিছুদিন পর, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা হঠাৎ জানতে পারে এমন এক খবর, যা শুনে উদগ্রীব হয়ে পড়ে স্বয়ং বিজয়ী আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান। কি সেই তথ্য? গোয়েন্দা সংস্থার খবর অনুযায়ী, আমেরিকার সবচেয়ে গোপনীয় এক অস্ত্রের তথ্য পাচার হয়ে গিয়েছে রাশিয়ানদের কাছে। যে অস্ত্রের সাহায্যে পুরো বিশ্বের উপর কর্তৃত্বের ছড়ি ঘোরানোর পরিকল্পনা করছিল আমেরিকা, তার ভাগীদার এখন কিনা তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে এই তথ্য চুরির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভেতরের একজন বড় বিশ্বাসঘাতক। কে সে?

যে অস্ত্র বানাতে প্রায় অর্ধযুগ ধরে বিশ্বের সেরা মস্তিষ্করা কাজ করে গিয়েছে, আমেরিকার সরকার খরচ করেছে কোটি কোটি ডলার, তার সব তথ্য কিনা একটা মাইক্রোফিল্মের মাধ্যমে সিগারেটের প্যাকেটে করে পাচার করে দিয়েছে সেই বিশ্বাসঘাতক। এইটা নিশ্চিত, ডেক্সটার কোডনেমের সেই বিশ্বাসঘাতক সেইসব বিজ্ঞানীদের একজন, স্বয়ং সেই অস্ত্র নির্মাতাদেরই একজন। তাকে খোঁজার জন্য গঠিত হলো বিশেষ গোয়েন্দা দল। কে সেই বিশ্বাসঘাতক?

তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে কি সেই অস্ত্র, কিসের মাধ্যমে তা গঠিত হয় এবং তা সৃষ্টির ইতিহাসই বা কি। জানতে হবে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের সময় থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আবিষ্কৃত পদার্থের একক পরমাণুর গঠন এবং তার উপাদানগুলির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। জানতে হবে কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থের সম্পর্কে যাদের ভরত্রুটিকে আইন্সটাইনের E=mc^2 ফর্মূলায় ফেললে পাওয়া যাবে বিশাল পরিমাণ শক্তি। কিভাবে বহু মেধাবী বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টায় একটু একটু করে উদঘাটিত করেছে এই পারমাণবিক শক্তির রহস্য।

কিন্তু বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদের প্রাচীন রুপের পতন ঘটতেই ধীরে ধীরে ক্ষমতা দখলের হিংস্র খেলায় মেতে উঠল শক্তিশালী দেশগুলো। ময়দানে প্রবেশ করে অ্যাডলফ হিটলার এবং তার নাৎসি বাহিনী। এই পরিস্থিতি অবশ্যই প্রভাব ফেলে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মহলে। অঞ্চল, মতাদর্শ, পরিস্থিতিভেদে আলাদা হয়ে পড়ে বিজ্ঞান মহল। কিন্তু সেই সময় সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত বিষয় ছিল সেই পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করে এক বিধ্বংসী অস্ত্র গড়ে তোলা যা কিনা যুদ্ধের মোড়ই ঘুরিয়ে দেবে। শুরু হয় দু'পক্ষের পারমাণবিক বোমা বানাবার চ্যালেঞ্জ। আমেরিকা গড়ে তোলে তার সেই বিখ্যাত 'প্রজেক্ট ম্যানহাটন'। সারা বিশ্বের সেরা সব মস্তিষ্কদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর অধীনে রেখে চালিয়ে যায় সেই প্রকল্প যা কয়েক বছর পর সফলতার মুখ দেখে।

হিটলারের পতন হলো, পারমাণবিক বোমাও তৈরি। কিন্তু জাপান তখনো নাছোড়বান্দা। তাই ইতিহাসের সবচেয়ে কদর্য ষড়যন্ত্রের আখ্যান রচিত হলো জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে। এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে শুরু হলো পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্ব শান্তির প্রকল্প। পারমাণবিক বোমার সৃষ্টির পর বহু বিজ্ঞানী সেটার ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেছেন সরকারদের, কিন্তু তারা হয়েছিলেন প্রত্যাখ্যিত। বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী নীলস বোহর চার্চিলের কাছে এ ব্যাপারে সুপারিশ করতে গিয়ে হয়েছিলেন অপমানিত। আইন্সটাইনের পাঠানো চিঠিকে গ্রাহ্যই করে নি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান।

বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো। কিন্তু বিজয়ী আমেরিকার জন্য বড় ঝামেলা হয়ে দাঁড়ালো সেই বিশ্বাসঘাতকটি। কেন এমন একটা অবিশ্বাস্য কাজ করল সেই বিজ্ঞানীটি? কি তার পরিচয়? আর তার পরিণতিই বা কি হবে? এই সব কিছুই নিয়ে ফিকশন-নন ফিকশন মিশিয়ে লেখা নারায়ণ স্যানালের উপভোগ্য উপন্যাস 'বিশ্বাসঘাতক', যাতে আধুনিক যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ও বিষয়ের ব্যাপারে জানা যাবে।

নারায়ণ স্যানালের নাম অনেক আগেই শোনা। তার 'বিশ্বাসঘাতক' বইটা পড়ার ইচ্ছাও অনেক দিনের। মাঝখানে ক্রিস্টোফার নোলানের 'ওপেনহাইমার' এর সাথে বিষয়গত সাদৃশ্যতার জন্য সে ইচ্ছা আরও বাড়লেও পড়া হয়ে ওঠে নি। যাইহোক, বইটা মূলত তিনটি পর্বে বিভক্ত - কে?, কী ও কেন। প্রথম পর্বটা ছোট, অনেকটা এসপিওনাজের সাথে ডিটেকটিভ মিস্ট্রির মিশ্রণে কোনো দূর্দান্ত থ্রিলারের বিল্ডআপের মতো যার মাধ্যমে লেখক পাঠককে আকর্ষীত করেন গল্পের প্রতি।

এরপরের অধ্যায় 'কী', তাতে লেখক পদার্থের গঠন থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ, পারমাণবিক শক্তির বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করেন। একদম সায়েন্সের বইয়ের মতো, কিন্তু তার সাথে বিজ্ঞানীরা কিভাবে তা ক্রমে আবিষ্কার করেন সেটার ইতিহাসও বর্ণিত হয়েছে। তাই এই বইয়ে চরিত্র হয়ে এসেছে রাদারফোর্ড, আইন্সটাইন, কুরি, অটো হান, জেমস ফ্রাঙ্ক, নীলস বোর, চ্যাডউইক, ৎজিলার্ড, ফার্মি, হাইজেনবার্গ, ওপেনহাইমারের মতোন বিজ্ঞান জগতের মানুষেরা। তারপর সেই সময়ের ইউরোপের টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিজ্ঞান জগতের পরিস্থিতি, ২য় বিশ্বযুদ্ধ, ম্যানহাটন প্রজেক্ট এবং শেষ ফলাফল হিসেবে হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে বোমা হামলার ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।

এরপরের অধ্যায় 'কেন'। তাতে মূল বিশ্বাসঘাতকের রহস্য নিয়ে গল্পটা কিছুটা ফিকশনাল রুপ নেই। আসে একটা বিয়োগান্তক প্রেমের গল্প এবং শেষে বের হয় বিশ্বাসঘাতক ও তার উদ্দেশ্যের কাহিনী। এইবার বইয়ের সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্ট কি তা বলি - নারায়ণ স্যানালের ন্যারেটিভ। স্যানালের শক্তিশালী প্রাঞ্জল গদ্যের জন্য সম্পূর্ণ বইটাই অত্যন্ত সুখপাঠ্য। এজন্য বিজ্ঞান আর ইতিহাসের এতো এতো তথ্য সমৃদ্ধ বইটা পড়ার সময় একটুও বিরক্ত হয় নি। সেই সাথে লেখায়, চরিত্রদের সংলাপে বাঙালিয়ানা আর একটু হিউমার রাখায় তা আরও ভালো হয়েছে। আরও আছে অনেকগুলো অসাধারণ উপমা ও উদ্ধৃতি।

লেখকের উপস্থাপনা দারুণ, প্রাণবন্ত। এই কারণে আমার মনে হয় বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে লেখা অংশটা সাধারণ যে কেউ বুঝতে পারবে। সেইসাথে মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিস আর তার সৃষ্টির ইতিহাসটা সম্পর্কেও ভালোমতো জানতে পারবে পাঠক এই বইটা থেকে। এক্ষেত্রে লেখক প্রশংসার দাবীদার। কারণ আশির দশকে এই বিষয়ে এমন একটা বই লেখার জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এবং সেসব কিছুকে একসূত্রে গেঁথে উপভোগ্যভাবে উপস্থাপন করাও তো চাট্টিখানি কথা নয়।

বইয়ের শেষ পর্ব 'কেন', আমার কাছে এটা পড়তে ভালোই লেগেছে। কিন্তু এটা পড়তে গিয়ে এর আগে দারুণ যে কিছুটা ফিকশনের মোড়কে উপভোগ্যভাবে উপস্থাপিত হার্ডকোর নন ফিকশন ভাবটা ছিল তা কেটে যায়। মূলত সেই অংশের মেলোড্রা��াটিক রোমান্টিক গল্পটাই তার জন্য দায়ী। তাতে যে সত্যের চেয়ে লেখকের মনের মাধুরি মেশানো কল্পনা বেশী ছিল তা টের পাওয়া যায় বেশ। শেষে লেখক বলেছেন বইয়ের নারী চরিত্রটি এবং আরেকটি চরিত্রের নাম বদলানো, তাতে বোঝা যায় যে ঘটনাটি অনেকটা বানানো।

না আমার কাছে সেই অংশটি পড়তে খারাপ লাগে নি। কিন্তু এতো হার্ডকোর তথ্যসমৃদ্ধ উপভোগ্য এই বইয়ের সাথে এটি মানানসই নয়। তারচেয়ে যদি একদম বাস্তবিকভাবেই বিশ্বাসঘাতকের গল্পটা বলতেন লেখক তাহলে বইটির আগের মান কিছুটা ক্ষুণ্ণ হতো না। তারপরও বইটি যে অসাধারণ এবং দূর্দান্ত, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। সায়েন্স, ফিকশন, নন ফিকশন, থ্রিলার সর্বোপরি সাহিত্যের স্বাদগ্রহণকারী পাঠকদের জন্য এই বইটিকে হাইলি রেকমেন্ড করব।

📚 বইয়ের নাম : বিশ্বাসঘাতক

📚 লেখক : নারায়ণ স্যানাল

📚 বইয়ের ধরণ : হিস্টোরিকাল ফিকশন, পপ সায়েন্স, মিস্ট্রি থ্রিলার, ডকু ফিকশন

📚 ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৫/৫
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
January 8, 2021
গুডরিডস রেটিং এ সাড়ে সিস্টেম না থাকার কারণে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তা আমি এই বইটি পড়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ৪ দিলে নেহায়েতই কম হয়ে যায় ওদিকে ৫ দিলে কিঞ্চিৎ বেশি হয়ে যায়, এ এক অদ্ভূত বিড়ম্বনা! সে বিড়ম্বনা কাটিয়ে শেষমেষ ৫ দিয়েই দিলাম। নারায়ণ বাবু ডিজার্ভ করেন আসলে।

আল্লাহ চাইলে ২০২১ যে খুব একটা খারাপ কাটবে না, তার প্রমাণ বলা যায় বছরের শুরুতে এই বই পড়ার অভিজ্ঞতাটা। বইটাকে নন-ফিকশন বলে একশব্দে চালিয়ে দিলে আসলে ভুল হবে, বিরাট ভুল। নারায়ণ সান্যাল বাস্তব ঘটনার সাথে তার সুনিপুণ লিখনশৈলী আর কাহিনী ফেঁদে সহজপাচ্য যে খাবারটা তৈরী করেছেন তা খুব সহজেই যেকোন পাঠকের ক্ষুধা মেটাবে। শুধু ক্ষুধাই নয়, এ খাবার খেয়ে পাঠক তুলবে তৃপ্তির ঢেঁকুর।

বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় 'ম্যানহাটান প্রজেক্ট' এ আবিস্কৃত হওয়া পারমানবিক বোমার ফর্মুলা পাচার নিয়ে। নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই ফর্মুলা পাচারের বিভীষণই আমাদের মূল টার্গেট। এখানে বলে রাখি, ম্যানহাটান প্রজেক্টের দুই বিলিয়ন ডলারের আউটপুট পারমানবিক বোমার যে ফর্মুলা, তা নাকি পাচারের সময় এটে গিয়েছিলো একটা সিগারেটের প্যাকেটে! ভাবা যায়!

নারায়ণ বাবু শুরুতেই একটা জম্পেশ স্পাই থ্রিলারের জাল বিছিয়ে পাঠককে আটকে নিয়েছেন। ওখানে আমরা দেখতে পাই প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান যখন জানতে পারেন, বোমার ফর্মুলা লিক হয়ে গেছে তখন তিনি ওয়ার সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেন, 'দিস রিকোয়ার্স অ্যাকশন অলসো'৷ ব্যস শুরু হয়ে যায় বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে আলোচিত তথ্য পাচারকারীকে ধরার মিশন। গল্পের এ পর্যায়ে নারায়ণ বাবু গল্পের ঘোড়ার রাশ টেনে ধরলেন। ডিসিশান নিলেন, স্পাইগিরি পরে হবে, আগে পাঠককে জানাই তো কি জিনিস চুরি গেছে, এই জিনিস তৈরী হবার পেছনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে কার কার হাত আছে। আর সে উদ্দেশ্যেই তিনি একেবারে গোড়া থেকে শুরু করলেন পরমাণুর ইতিহাস। ওখানে স্থান পেয়েছে পরমাণু নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন পদার্থবিদ, রসায়নবিদদের প্রস্তাবনা, ব্যাখ্যা, থিওরী। গল্পের খাতিরে রাদারফোর্ড তার পরমাণু মডেল নিয়ে এসেছেন, এসেছেন নীলস বোর, চ্যাডউইক, এনরিকো ফের্মি, ওপেনহাইমার, ৎজিলার্ড, কুরি দম্পতি, সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনসহ আরো অনেক প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। ক্লাশ নাইন টেনে থাকতে পরমাণু নিয়ে যা যা পড়েছি নারায়ণ বাবু আবার সেইখান থেকে মানে একদম বেসিক থেকে শিখিয়েছেন। তিনি গল্পচ্ছলে এতটাই মজা করে শিখিয়েছেন যে এই বইটাকে আমার কখনো নন ফিকশন মনেই হয়নি, মনে হয়েছে রসায়ন জ্ঞানের সরল একটা নদী বয়ে চলেছে আমার মাথার মধ্য দিয়ে। আমার বিশ্বাস যারা মাধ্যমিকে সাইন্স নিয়ে পড়েননি তারা আমার চাইতে ব্যাপারটা বেশি ফিল করেছেন।

পরমাণুর বেসিক ফিরিস্তি দেয়া শেষ হলে তিনি পারমানবিক বোমা আবিস্কারের ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত দক্ষতায়। ধাপে ধাপে আমরা জানতে পেরেছি কে কিভাবে সজ্ঞানে-অজ্ঞানে জড়িয়ে গিয়েছে এই পারমানবিক বোমার সাথে। আমেরিকার ছলচাতুরী আর প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের আত্মঅহমিকার স্বরুপও দেখতে পেয়েছি আমরা। দেখতে পেয়েছি সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের প্রেসিডেন্টের প্রতি পারমানবিক বোমা নিয়ে গবেষণা করার অনুরোধের চিঠি। আবার সেই আইনস্টাইনকেই দেখেছি পারমানবিক বোমার ভয়াবহতা অনুধাবন করে সেই বোমা ব্যবহার না করার অনুরোধ নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রেরিত চিঠি। এই দলে ছিলো ৎজিলার্ডসহ আরো অনেক বিজ্ঞানী। কিন্তু যার পেছনে এত টাকা গেলো সেই পারমানবিক বোমার কাছে এই আইনস্টাইন, ৎজিলার্ড বড় তুচ্ছ। অন্তত তেমনটাই মনে হয়েছিলো হেনরি ট্রুম্যানের কাছে। আর তার ফলস্বরুপ হিরোশিমা আর নাগাসাকির ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছিলো তা দেখতে পেলো সারা বিশ্ববাসী।

যেদিন প্রথম পৃথিবীর বুকে পারমানবিক বোমা আঘাত হানলো, হিরোশিমা নামে একটি শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো তার ঠিক ৫ দিন পরেই লিক হয়ে গেলো পারমানবিক বোমার ফর্মুলা। এতে করে কি আদৌ ক্ষতি হলো নাকি ভালো হলো সেটা এই বইটা পড়তে পড়তে পাঠক নিজেই ধরতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি বরং বইয়ের ভালো লাগা নিয়ে দুটো লাইন বলে যাই। ওহ হো, একটা কথা তো বলাই হয়নি। আপনারা কিন্তু এই বইতে একটা রুদ্ধশ্বাস এবং সেই সাথে অত্যন্ত করুণ একটা 'প্রেম-কাহিনী' ও পাবেন। পারমানবিক বোমা, সাইন্সের কচকচানি, স্পাই স্টোরীর আড়ালেও এই বইতে যে প্রেম কাহিনী আছে তা পাঠকের চোখে জল আনলেও আমি বিশেষ অবাক হবো না।

পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নারায়ণ সান্যালের সেরা কাজের একটি হলো 'বিশ্বাসঘাতক'। যদিও এই বইটি অস্ট্রিয়ান লেখক Robert Jungk এর Brighter than a Thousand Suns: A Personal History of the Atomic Scientists বইয়ের ছায়া অবলম্বনে লেখা হয়েছে তবুও আমি বলবো ১৯৭৪ সালে নারায়ণ বাবু যে অ্যাটেম্পটটা নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। যদিও আমি রবার্ট সাহেবের বইটা পড়িনি তবুও হলফ করে বলতে পারি নারায়ণ বাবু যে হিউমার মিশিয়েছেন বইতে, তা রবার্ট সাহেবের বইতে নেই। কারণ এই হিউমার বাঙ্গালীর সিগনেচার মার্ক, সব কালচারে আসে না এই জিনিস। শুধু হিউমার না, নারায়ণ বাবু তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন কাহিনী বিন্যাসে। একের পর এক ঐতিহাসিক ঘটনা টপাটপ বলে গেছেন কিন্তু এইসব ঘটনা একবারও বিরক্তির উদ্রেক করেনি৷ অবাক হয়ে দেখেছি কিভাবে বর্ণনার জাদুতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়গুলোকে, বোরিং গল্পকে দিয়েছেন নাটকীয় মোড়। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো যে জিনিসটা আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে সেটা নিয়ে বলতে পারছি না, বললেই স্পয়লার হয়ে যাবে। যেটাতে আমি মুগ্ধ হয়েছি, আগে থেকে জেনে ফেললে পাঠক মুগ্ধ না হয়ে বিরক্তও হতে পারে। তাই ওটা তোলা থাক। তবে এতদূর যারা পড়ে এসেছেন তাদের বলছি, চোখ বন্ধ করে বইটা তুলে নিন। ৩-৪ ঘন্টা আপনি উপভোগ করবেন, তা আপনি যে জনরার সাহিত্যের ফ্যানই হোন না কেন।
Profile Image for Muhammad .
152 reviews11 followers
May 15, 2013
Have you read any such book that is simultaneously a breathtaking thriller novel, an elementary science book and a journal that tells you the history of mankind's nastiest conspiracy theory, The Manhattan Project (which produced the first atomic bomb in 1945) and can you think of a book where all the Nobel laureate scientists like Ernest Rutherford, Niels Bohr, Richard. P. Feynman, Werner Heisenberg, J R Oppenheimer play the roles of heroes and villains? Well, if you can't, you gotta read this book!

This amazing book starts with the atomic model of elements showing how electrons and protons are organized around the nucleus inside an atom, explains the discovery of neutron and gives you a rough idea of producing an atom bomb!(Quite far away from a thriller novel eh?) It then quickly goes back to the original story, how the team members for Manhattan project were chosen and how the colors in the international political fields were quickly changing giving all the necessary details. The novel often takes the narrative style of a documentary journal. The true story, based upon which this book is written, is no less twisted than any of the James Bond or other fancy Hollywood spy movies! Reality sometimes indeed is stranger than fiction.
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
September 15, 2023
নারায়ণ সান্যালের "বিশ্বাসঘাতক"- গ্রন্থে পারমাণবিক বোমার গোপন তথ্য পাচার হবার কাহিনীটাই একমাত্র বিষয়বস্তু নয়। পরমাণুর গঠন আবিষ্কার থেকে শুরু করে, গবেষণার ধাপে ধাপে সময়ের পরিক্রমায় কীভাবে বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বোমার আইডিয়ার কাছাকাছি পৌঁছালেন, সেই মজার গল্পটাও লেখক বলেছেন: একেবারে রাদারফোর্ড থেকে অটো হান পর্যন্ত। কিশোর বয়সে এই ইতিহাসটুকু যারা পড়ে, তাদের অনেকের মনে একটা ইচ্ছার জন্ম হয়- বড় হয়ে ফিজিক্স পড়ার ইচ্ছা। বলতে পারি, এ বইটা মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করবে।

বিজ্ঞান গবেষকদের কাজের সাথে যদি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষার কোন সম্পর্ক থাকে; তাহলে নিজ আবিষ্কারেও বিজ্ঞানীদের কোন অধিকার থাকে না। যেমন পারমাণবিক বোমা বানানোর মত একটা ব্যাপারে কতশত বিজ্ঞানী, গবেষক, কর্মী নিযুক্ত ছিলেন; যখন বোমা বানানো শেষ হলো, তখন বোমাটা হয়ে গেল প্রেসিডেন্ট আর জেনারেলদের। বিজ্ঞানীরা যতই অনুরোধ করুক বোমা ফাটানোর কোন দরকার নেই, যুদ্ধবিজয় প্রায় সম্পন্ন, এখন কেন অকারণে লক্ষ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো? এমন তো কথা ছিল না?
কিন্তু প্রেসিডেন্টের কীসের দায় বিজ্ঞানীদের পাত্তা দেবার?

তাই বিজ্ঞানীদেরও অহমে লাগে। যুদ্ধনেতারা তাদের গুটি বানিয়ে খেলবেন; তাদের মেধা, পরিশ্রমের ফসল কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী ত্রাস সঞ্চার করবেন; তারাই বা কেন অন্ধের মত বিশ্বস্ত থাকবেন? সোভিয়েতের চর হবার উস্কানি কি তারা ভেতর থেকেই অনুভব করবেন না?
যুক্তরাষ্ট্র যতই তাদের বিশ্বাসঘাতক বলুক, পারমাণবিক বোমার ব্যবহার বন্ধের প্রচেষ্টায় সেই বিশ্বাসঘাতকরা জীবনবাজি রেখেছিলেন বলতে হবে।

বহু আগে থেকেই "বিশ্বাসঘাতক" পড়বো ঠিক করে রেখেছিলাম। ক্রিস্টোফার নোলানের "ওপেনহাইমার" মুক্তি পাবার পর শুরু করতেই হলো। তবে এ বইটা কিন্তু ওপেনহাইমার-কেন্দ্রীক না, এখানে তিনি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের একজন।

পাঠকদের অনেকে নন-ফিকশন শেলফে বইটা রেখেছেন বলে গুডরিডসও বইটাকে নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে দেখাচ্ছে। সেটা দেখে আমি বইটাকে খাঁটি সত্য কাহিনী ভেবেছিলাম। কিন্তু এটা হিস্টরিকাল ফিকশন। পরিশিষ্ট অংশ পড়লে কিছু সত্য-মিথ্যার সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব মিলবে। ফিকশনাল অংশের মজাটা তেমন জমেনি। সেকারণেই চার তারা।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
October 5, 2019
মার্ক টোয়েন মতে, "Truth is stranger than fiction "। নারায়ণ স্যানালের "বিশ্বাসঘাতক " পড়তে কথাটা মাথায় চক্কর দিচ্ছিল এবং একইসাথে মাথাও চক্কর দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক বোমা পুরো তথ্য সোভিয়েট ইউনিয়নের হাতে আসে পুরোপুরি নিখরচায়! আর এই তথ্য পাচার করেছিল "প্রজেক্ট ম্যানহাটন "(পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্পের নাম)।এর সাথে জড়িত বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদেরই কেউ!এতো নিরাপত্তা, এতো ফন্দিফিকিরের পরেও কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রহ্মাস্ত্র আণবিক বোমার তত্ত্ব হাতছাড়া হল? যাঁদের উপর সন্দেহ তাঁদের অন্যতম প্রধান ওপেনহাইমার। যিনি স্বয়ং পারমাণবিক বোমার উদ্ভাবক বলে খ্যাত! আর যিনি এই 'মহৎ' কর্মটি বিবেকের দায়ে করেছিলেন তিনি তো প্রথম থেকে শেষঅবধি ছিলেন নিষ্পাপ, সন্দেহের এক্কেবারে বাইরে। ভাবুন তো বিষয়টা।

টানটান উত্তেজনায় ভরপুর জনপ্রিয় যেকোনো থ্রিলারকে হার মানিয়ে দিতে প্রস্তুত এই বই।মূলত,এটি শুধু পারমাণবিক বোমার তথ্য পাচার নিয়ে নয়। মোটাদাগে বললেও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধককালীন এবং যুদ্ধত্তোর আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ইতিহাস আর ধ্বংসপ্রলয়ের উল্লাসে মেতে ওঠাদের কাহিনী শুনিয়েছেন লেখক।এতো বৈজ্ঞানিক প্রস্তরতুল্য সব টার্মের কথা আছে বইতে।লেখক অনেকটাই মেদহীনভাবে লিখেছেন।জটিল বিষয়আশয় নিয়ে জানাতে বসলে অনেক লেখক ভজঘট পাকিয়ে ফেলেন।তখন কাহিনী হয়ে যায় ধীর।নারায়ণ স্যানাল এইখানেই টেক্কা মেরেছেন।পাঠককে বিরক্ত করেন নাই। তবুও বিজ্ঞানের টার্মগুলো নিয়ে আধাজ্ঞান থাকায় ভালো করে বুঝি নাই। মাথায় গেছে, মগজে প্রবেশ করেনি।

তবুও বলবো নারায়ণ স্যানাল ঘটনার নাটকীয় বর্ণনা দিতে যতটা আগ্রহী ছিলেন,বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোকে সহজভাবে উপস্থাপনে ততটা জোর দেন নি বলেই মনে হয়েছে।তাতে বইটির পুরো রস আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমি নাদান পাঠক।

ইয়ে, মানে বলতে ভুলে গেছি এটি কিন্তু উপন্যাস!
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
September 22, 2024
এসব কোহিনূরসদৃশ বই বারবার পড়ার জন্য, একবারের জন্য না। তাই আমি বারবার পড়ি। আর বারবার মুগ্ধ হই। এবছর যখন ওপেনহাইমার মুভিটা দেখছিলাম তখন সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছিল এই বইটার কথা। নারায়ণ স্যানাল কি দুর্দান্তভাবেই না পুরো গল্পটাকে আমাদের শুনিয়েছিলেন।
Profile Image for Nusrat Faizah.
98 reviews38 followers
July 24, 2023
Who hid this book from me all this time!!??
History,Physics,Life stories of world renowned Physicists,Politics,Mystery,Thriller,Romance- this book has everything to offer!

আমেরিকার ম্যানহাটন প্রজেক্টের গোপন তথ্যাবলি রাশিয়ার কাছে ফাঁস করে দেয় এক বিশ্বাসঘাতক।কী,কেন,কিভাবে,কে?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও বিশদ বিবরণ এই বই।বাস্তব যেন কল্পনাকেও হার মানায়।

পারমাণবিক বোমা কিভাবে এল?লেখক নারায়ণ স্যানাল যেভাবে একেবারে ডেমোক্রিটাস থেকে শুরু করে ম্যানহাটন প্রজেক্ট অবধি পরমাণু বিজ্ঞানের প্রতিটি ব্যাপার ব্যখ্যা করেছেন-অবাক না হয়ে উপায় নেই।লেখার বুনন এত ভালো যে মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি এবং ফলস্বরূপ দুইদিনেই পড়ার সমাপ্তি।

N.B. - 1 পরিশিষ্ট গুলোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ লেখক কে।

N.B. - 2 অপেনহাইমার দেখতে থিয়েটারে যাওয়ার আগে ভালো একটা হোমওয়ার্ক হলো।
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
February 28, 2022
"নটা বেজে পনেরো। বিমান তখন ৯৬৩২ মিটার উঁচুতে, গতিবেগ ঘন্টায় ৫২৫ কিমি। পিছনে পিছনে আসছে দুটি ফাইটার প্লেন।
দূরে দেখা গেল হিরোশিমা। ইতিপূর্বে বোমাবর্ষণ হয়নি সেখানে। শহরবাসী নিশ্চিন্ত।"

এরপরের কাহিনী সবারই জানা "লিটল বয় আর ফ্যাট ম্যান! আর হিরোশিমা-নাগাসাকি বলে কোনোকিছুই যেন ছিল না কোনোদিনও!"

পারমাণবিক বোমা কে বা কারা তৈরি করে দিল যুক্তরাষ্ট্রকে কিংবা কী আছে এই বোমাতে যে এত বিধ্বংসী কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি রাশিয়া কী করে পেল এই বোমা? প্রভৃতি প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে এই বইকে বলা যায় টানটান উত্তেজনাপূর্ণ স্পাই থ্রিলার, ঐতিহাসিক ঘটনার নন-ফিকশন এবং বিজ্ঞান শেখানোর বই (কাজেই বোমা তৈরি ব্যাপারগুলো বুঝতে কারোরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়) এই টানটান উত্তেজনাপূর্ণ থ্রিলারে নায়ক কিংবা ভিলেন হিসেবে দেখা যাবে অতি এবং সুপরিচিত বিজ্ঞানীদের (পাঠ্যবইতে যাদের নাম হরহামেশাই দেখা যায়। দেখা যায় আইনস্টাইনের মেধার মূল্য, শুধু এঁই যুবকের একটি মাত্র সিগনেচার কী করে পৃথিবীর মানুষের ভাগ্য বদলে দিল ঐ সময়ে!) উঁনাদের বাদ দিয়ে দেখা যাবে কিছু অতিবিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের, রাজ করার নীতি যাদের ভাল করেই জানা :)

বইটা পড়াকালীন একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরবে- হু'স দ্যাট ওয়ান? হু ইজ দ্য ট্রেইটর!? কে সেই বিশ্বাসঘাতক!?

নারায়ণ সান্যালের লেখা এই প্রথমবার পড়লাম, নন ফিকশনকে তুলে ধরেছেন টানটান উত্তেজনাপূর্ণ থ্রিলাররূপে। কাজেই সুখপাঠ্য! শেষে অবশ্য তিনি কিছু কল্পনামিশ্রিত দৃশ্য তৈরি করেছেন ( সম্ভবত না করলেই ভাল হতো :/ একতারা মাইনাস!) অনেক কিছু জানলাম।

বই পড়া শেষ, তবুও মনে হচ্ছে হু ইজ দ্য ট্রেইটর!?
চিরউন্নত বিদ্রোহী শির লোটাবে না কারও পায়ে
তোমারেই শুধু করিব প্রণাম, অন্তরতম প্রভু!
জীবনের শেষ শোণিতবিন্দু দিয়ে যাব দেশ-ভাইয়ে
রহিবে বিবেক! সে শুধু আমার! বিকাবো না তারে কভু!

এই চমৎকার বইখানা সময় করে সবারই পড়ে ফেলা উচিত।

~২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
Profile Image for Subrata Das.
164 reviews19 followers
January 7, 2023
ইতিহাস আর কল্পনার এমন দারুণ ককটেল বইপ্রেমী মাত্রই চেখে দেখা কর্তব্য।

মূলত ক্রিস্টোফার নোলানের নতুন মুভির সাথে প্লটের মিল থাকাতে বইটি পড়া (শোনা বলাই যথার্থ কারন অডিওবুকেই প্রায় পুরোটা শুনেছি) শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম লেখক হয়ত ইতিহাসকে সামান্য কল্পনার মেক আপ দিয়ে পরিবেশন করবেন।
কিন্তু একি!! এর মধ্যে একে একে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান,দর্শন এর তত্ত্ব তো ঢুকলই , সাথে এলো গোয়েন্দা গল্পের টান টান উত্তেজনা। সবচেয়ে অবাক হয়েছি যখন এখানে প্রবেশ করল রোমান্টিক ট্রেজেডি!! এই বইয়ের সবচেয়ে আশাতীত এবং সবচেয়ে হৃদয় ছুয়ে দেয়া অংশটাই হল ঐ ট্রেজেডি। সাধারণত ঐতিহাসিক উপন্যাসে টুইস্ট খুব কমই থাকে, কিন্তু লেখক দক্ষ লেখনীর জাদুতে বেশ কয়েকটি জায়গায় চমকে দিয়েছেন।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, বিষয়টি প্রবঞ্চকেও লক্ষ করেছি। গতানুগতিক ইতিহাস ও সাহিত্যে বিজয়ী বা হিরোর দিকটাই তুলে ধরা হয়। ভিলেন এখানে চির অবহেলিত ও ঘৃণিত। কিন্তু ভিলেনেরও নিজের কাজের বা অপরাধের একটা যৌক্তিক ব্যাখা আছে যা তাকে বলে- এটাই ঠিক, এটাই করা উচিত।
মাঝে মাঝে নিরেপেক্ষ মনের কাছে এই ব্যাখাটা বিজয়ী বীরদের বীরত্বগাথার চেয়েও বেশি যৌক্তিক মনে হয়। নারায়ণ সান্যাল বিশ্বাসঘাতকের আত্মপক্ষ সমর্থনটাকে নিরেপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে যেভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন, তাতে পাঠক ভিলেনের প্রতি নির্জলা ঘৃণা বর্ষণ করতে দ্বিধানিত হয়ে পড়বে। যেমনটা প্রবঞ্চকেও হয়েছিল।
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
November 17, 2018
৫ই দিলাম। পরমাণু বোমার ইতিহাস এর চেয়ে সহজ ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞনীদের অবদান এবং তাঁদের মানবিকতায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। বিশ্বাসঘাতকের প্রতি রইল সমবেদনা। যদিও এই ইতিহাসে কোন বিজ্ঞানীই অপরাধী নন। সমগ্র অপরাধই কতিপয় ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদের, যাদের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির লক্ষাধিক নিরপরাধ মানুষকে।
Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
January 9, 2023
এটা ফিকশন নাকি নন-ফিকশন? ইতিহাস, বিজ্ঞান, নাকি স্পাই থ্রিলার? নাকি সবকিছুই!! এতসব না বলে ব্যাক কভারের লেখাটাই বরং তুলে দিই:
বিষয়বস্তুর ব্যাপকতায় নারায়ণ সান্যাল বর্তমানে বাঙলা সাহিত্যে অদ্বিতীয়। মার্কিন সরকারের অতন্দ্র প্রহরা ভেদ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জনৈক বৈজ্ঞানিক একক প্রচেষ্টায় একটি গোপন তথ্য রাশিয়ায় পাচার করেন। মানব-সভ্যতার ইতিহাসে আর্থিক মূল্যমানের দিক থেকে
এটাই নাকি সবচেয়ে বড় জাতের বিশ্বাসঘাতকতা। ‘কী, কেন ; কীভাবে ও কে?’ সেটাই ‘বিশ্বাসঘাতক'-এর মূল
উপজীব্য। গ্রন্থটিকে উপন্যাস বলতে বাধে, কারণ উপন্যাসে কেমিস্ট্রির ফর্মুলা অপ্রত্যাশিত। বিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থ একে বলা চলে না, কারণ বিজ্ঞান-গ্রন্থে রোমান্টিক প্রেম-কাহিনি অপাংক্তেয়। গোয়েন্দা যেখানে অপরাধীকে চিহ্নিত করছে না, অপরাধী স্বয়ং এগিয়ে আসছে ধরা দিতে—ডস্টয়েভস্কির 'ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এর নায়কের মতো—সেখানে গোয়েন্দা কাহিনির প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে প্রকাশক হিসাবে এর জাতনির্ণয় করি কীভাবে ? প্রশ্নটা আমরা
লেখকের কাছে পেশ করেছিলাম। শুনলাম, তিনি নিজেই নাকি কৌতূহলী: গ্রন্থগারিক একে কোন্ আলমারিতে স্থান দেন।"

পারমাণবিক বোমা। কে না শুনেছে এই নাম! কিন্তু কি আছে এই বোমাতে? কেনই বা এটা এতটা বিধ্বংসী? যুক্তরাষ্ট্র এটার জন্য এতটা মরিয়া কেন, যুক্তরাষ্ট্র যদিও বা এই বিধ্বংসী বোমা বানাতে সক্ষম হলো কিন্তু রাশিয়া কিভাবে পেল এই বোমা; বোমা বানানোর ফর্মুলা? হু ইজ দ্য ট্রেইটর!? বিশ্বাসঘাতকটা কে?

পুরো বই জুড়েই ওই একটা প্রশ্ন। 'হু ইজ দ্য ট্রেইটর? বিশ্বাসঘাতকটা কে?' এবং ওই বিশ্বাসঘাতককে খুঁজতে, বিশ্বাসঘাতকের প্রকৃতি বুঝতে লেখক আমাদের পরিচয় করান বিশ্ববিশ্রুত সব বৈজ্ঞানিকদের। তাঁদের কর্মকাণ্ড, গবেষণার সাথে। পারমাণবিক বোমা কী? কিভাবে বানিয়েছে এটা। সূচনালগ্ন থেকে পরিণতি পর্যন্ত বিশদ বর্ণনা করেছেন সহজভাবে ( সহজভাবে বলছি কারণ আমার মতো স্টুডেন্টেরও; যে কখনো সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিল না, একাডেমিকভাবে সায়েন্স জিনিসটা পড়েনি তারও বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি, দ্বিতীয়বার পড়া লাগেনি। সেই হিসেবে এটা একটা সহজ বিজ্ঞানশিক্ষার বই)। আর কিছুক্ষণ পর পরই মস্তিষ্কের ভেতরটায় টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন-'বিশ্বাসঘাতকটা কে?' প্রসঙ্গান্তের আনেন অতিবিখ্যাত কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বদের। দেখান তাদের রাজ করার নীতি। আবারও বলে রাখছি এসব প্রসঙ্গান্তারে, মুল লক্ষ্য বিশ্বাসঘাতক। হু ইজ দ্য ট্রেইটর।

এই ট্রেইটরটারে খুঁজতে খুঁজতেই পুরো বই শ্যাষ! শেষে পাবেন একখানা চমক। যেটা ইতিহাস, বিজ্ঞান বা ফিকশনাল ইতিহাসে পান না। পেয়ে থাকেন থ্রিলার বা স্পাই থ্রিলারে। নারায়ণ স্যানালের লেখা এই প্রথম পড়লাম। লিখেছেন নন-ফিকশন কিন্তু যেভাবে লিখেছেন তা টানটান উত্তেজনাপূর্ন থ্রিলারের চেয়ে কম কিছু নয়। এই বইটা এক বসাতেই শেষ করেছি। যেটা নন-ফিকশন বা আধা নন-ফিকশন বইয়ের ক্ষেত্রে খুব কমই হয়ে থাকে, তাও আবার আড়াইশোর অধিক পৃষ্ঠা। চমৎকার এই বইখানা সময় সুযোগ মতো সবারই অন্তত একবার চেখে দেখা উচিত।
৪.৫/৫
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
January 21, 2015
এতগুলো চরিত্র এবং ঘটনা নিয়ে বইটি লিখতে গিয়ে লেখক নিজেই যে তাল-গোল পাকিয়ে ফেলেননি এজন্য লেখককে ধন্যবাদ এবং শুধু এই কারণেই লেখকে পাঁচতারা দেয়া যায়। যদিও এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে এই তারার ছড়াছড়ির যার বেশীরভাগ-ই বলা হয়ে গেছে, বলা হয়ে গেছে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, থ্রিলার, রাজনীতি, ষড়যন্ত্র এসব কিছুর অপূর্ব এক মিশ্রণের কথা, তাই আর পুনরায় কিছু বললাম না।

কিন্তু তবুও পাঁচ তারা নয় কেন? বন্ধু তালিকার সব রেটিং-ই পাঁচ তারা হওয়াতে মনে হচ্ছে একটি মাত্র তারা কম দি��ে হলেও সেটার পরিষ্কার ব্যাখ্যা প্রয়োজন মনে হয়।

আমার কাছে কাল্পনিক নারী চরিত্র রোনাটা কার্ল(একমাত্র প্রধান কাল্পনিক চরিত্র) এবং তাকে ঘিরে ঘটা ঘটনাগুলো এক্সট্রা অ্যাপিল তৈরি করে নি বরং ঘটনাগুলো পুরো কাহিনীতে অপ্রয়োজনীয় এবং আরোপিত মনে হয়েছে। "শেষ কথা" নামক পরিশিষ্ট -"ক"-তে লেখক যেখানে আবার উল্লেখ করেছেন রোনাটা এবং রোনাটা সম্বন্ধীয় অংশটুকুই কাল্পনিক এবং আসল সত্যটি কী ছিল। সেখানে মুল কাহিনীতে এই অংশটুকু জুড়ে দেবার প্রয়োজন কেন হলো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। ও আচ্ছা, কভারটাও এলোমেলো, আনাড়ি হাতের কাজ মনে হয়েছে।
Profile Image for Rafisa Moni.
17 reviews10 followers
April 21, 2025
Can’t remember the last time I read a book with such eagerness and impatience past midnight! Worth staying up till 4. Loved it!
Profile Image for Farhana Lüba.
216 reviews16 followers
August 13, 2024
আজ বিকেলেই বইটা পড়ে শেষ করেছি। এক নিঃশ্বাসে পড়েছি বললেও ভুল বলা হবে না! এত অসাধারণ একটা বই! মনে হচ্ছে পুরো বইটা ভুলে গিয়ে আরেকবার নতুন করে পড়ি!
যেহেতু আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী, পারমাণবিক বোমা নিয়ে সবসময়ই আমার ভেতরে এক ধরণের অমোঘ আকর্ষণ কাজ করে। এর হিস্ট্রি নিয়ে আমি বেশ কিছু জানতাম, আবার জানতামও না। এই বইয়ে ফিকশনের আড়ালে যেভাবে সত্যটাকে তুলে ধরা হয়েছে...তা সত্যিই বর্ণনাতীত! আমি সত্যিই জানি না কোন বিশেষণের প্রয়োগ করলে আমি ঠিকভাবে নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে পারবো!
বইটা শুরু হয় সাসপেন্স দিয়ে। সাধারণত নতুন কোনো লেখা পড়তে গেলে সেটাতে পুরোপুরি ডুবে যেতে আমার খানিকটা সময় লাগে, কিন্তু এই বইয়ের ক্ষেত্রে মাত্র ৩ পৃষ্ঠা পড়ার পরেই আমি একেবারে hooked! এরপর বইয়ে এসেছে ইতিহাস, পরমাণুবিজ্ঞান, রাজনীতি, আর বিশ্বাসঘাতকতা! পুরোটা সময় জুড়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে গেছি। ফেলুদার একটা গল্পে একটা বিশেষণ পড়েছিলাম, "Unputdownable". এই বইয়ের ক্ষেত্রে সেই বিশেষণটা খাটে।
যেসব বিজ্ঞানীদের কথা খটোমটো পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে পড়েছি, তারাই যেন রক্ত-মাংসের মানুষ হয়ে ধরা দিয়েছেন বইটিতে! কিছু কিছু চরিত্রের জন্য এত খারাপ লেগেছে! যেমন ধরা যাক, অটো হান... তিনি যখন বুঝতে পারলেন, তার হাতে ১ লক্ষ মানুষের রক্ত! আবার ৎজিলার্ড...তিনি যে কতটা চেষ্টা করেছেন বোমার প্রয়োগের বিরুদ্ধে! সবার কথা লিখতে গেলে হয়তো লিখে শেষ করতে পারবো না।
যে চ্যাপ্টারটাতে ৬ আগস্টের কথা লেখা... পড়ার সময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছে, আমিও যেন দেড় মিনিটের নিস্তব্ধতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম! এখন ভাবতে গেলেও চোখে পানি চলে আসছে।
নাৎসিদের ভয়াবহতার কথাও এখানে কিছুটা উঠে এসেছে। গাউডসমিট যখন তার বাবা-মায়ের বাড়িটা খুঁজতে যায়, আর আবিষ্কার করে যে তার বাবার ৭০ তম জন্মবার্ষিকীতেই তাদেরকে গ্যাস চেম্বারে ঢোকানো হয়েছিলো...আমি জানি না এই তথ্যটি নিয়ে তিনি চিরকাল কীভাবে বেঁচে ছিলেন। আমার মনে হয়, কারো বাবা-মায়ের যেকোনো একজন যখন মারা যায়, তার মধ্যে কোনো না কোনো ব্যাপারে অপরাধবোধ কাজ করে যায়। সে আমার মত সাধারণ কেউ হোক, অথবা গাউডসমিটের মত বিজ্ঞানী।
একটা বাংলা সায়োন্টিফিক-হিস্টোরিক্যাল-ফিকশন যে এত ভালো হতে পারে, আমার জানা ছিলো না। আফসোস হচ্ছে, কেন নারায়ণ স্যানালের আরো বই পড়া হয় নি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমি কি বিশ্বাসঘাতকের ডিসিশনকে সাপোর্ট করি?
হ্যাঁ। হয়তো উনার জায়গায় আমি থাকলে আমিও ঠিক এটাই করতাম। উনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, তিনি পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। আসলেই কি তা করেছেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।
কিন্তু আমি আবারও বলবো, হয়তো তার জায়গায় থাকলে আমিও এমন বিশ্বাসঘাতকতা করে বসতাম।
লেখক শেষটুকুতে যে ফিকশন এনেছেন... সেটা এত হৃদয়বিদারক! আমি জানি ব্যাপারটা শুধুই ফিকশন, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, লেখকের কল্পনাশক্তি তার লেখনীকে নতুন মাত্রা দিয়েছে! ক্রিস্টোফার নোলানের উচিত ছিলো এই বইকে স্ক্রিপ্ট হিসেবে ব্যবহার করা! তাহলে সম্ভবত অপেনহাইমার সিনেমাটা এত lengthy মনে হতো না।
বইয়ের শেষে বেশ গোছানো পরিশিষ্ট অনুচ্ছেদগুলো আমার বেশ ভালো লেগেছে! মনে হচ্ছিলো, আমি যেন ইতিহাসের সাক্ষী! লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর গুছিয়ে সবকিছু প্রেজেন্ট করার জন্য।
পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা যেন আমাদের কাউকে প্রত্যক্ষ করতে না হয়, এমন আগস্ট যেন কোনোদিন না আসে, "Grave of the Fireflies" এর সেটসুকো আর সেইতার মতো আর কোনো জোনাকিকে যেন কখনো নিভে যেতে না হয়, সেই পৃথিবীর প্রত্যাশায় রইলাম।
লেখক বলেছিলেন, তিনিও দেখতে চান পাঠক বইটিকে কোন শেলফে স্থান দেন। সত্যি বলতে কি, আমিও জানি না এটাকে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলবো। কিন্তু অবশ্যই এটা আমার পড়া সেরা বইগুলোর একটি হয়ে থাকবে।
ধন্যবাদ দেবা, আমাকে এই অসাধারণ বইটি উপহার দেয়ার জন্য!

"And now I am become Death, the Destroyer of Worlds."
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
May 10, 2025
এই বইটি পড়ার সময় মাঝে মধ্যেই ভুলেই গেছি বইটা ফিকশন নাকি নন ফিকশন ।কিন্তু পড়ার সময় সেটা গুরুত্বপূর্ণও মনে হয়নি—কারণ এর গল্প বলার ধরণ, উপস্হাপন এবং লেখার গভীরতা এককথায় দুর্দান্ত ছিলো। বইটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে—যা যথাক্রমে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা হয়েছিল এবং যার মাধ্যমে পারমাণবিক এসব ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের আবিষ্কার । বইটিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এই মারাত্মক আবিষ্কার পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছেও পৌঁছে যায়।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে, লেখক এত জটিল এবং ভারী একটি বিষয় এত সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, সবাই বুঝতে পারবে এবং আগ্রহ নিয়ে পড়তে পারবে ।


তবে সব তথ্য ও ইতিহাস ছাপিয়ে, আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হলো—অস্ত্র যতই প্রযুক্তিগত বা কৌশলগত অর্জন হোক না কেন, একটি অস্ত্র কখনও প্রকৃত সুখ বা শান্তি এনে দিতে পারে না। প্রাণঘাতী অস্ত্র কোনো জাতির কাছে গর্বের বিষয় হলেও, কিন্তু তা অন্য অনেকের m জন্য ভয়ের কারণ।


প্রকৃত অগ্রগতি আসে ধ্বংসের মাধ্যমে নয়, আসে শান্তির পথে হাঁটার মাধ্যমে। মানবতা আর সহানুভূতিই হোক আমাদের প্রকৃত শক্তি।ইতিহাস নয়, মানবতাই হোক আমাদের শক্তি।
January 8, 2021
সাল ১৯৪৫।
৬ ও ৯ই আগস্ট যথাক্রমে ইওরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম বোমার আঘাতে জাপানের দুইটি শহর হিরোসিমা ও নাগাসাকি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ১১ই আগস্ট জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। এদিনই ঘটে আরেকটি ঘটনা। মার্কিন মুলুকের কড়া নজরদারির ভেতরেও বিশ্বাস ঘাতক(!) 'ডেক্সটার' অন্য এক শক্তিধর রাষ্ট্রের কাছে 'মানহাটান প্রজেক্ট' এর গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পাচার করে।

বইটিতে 'কী', 'কেন' এর সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে 'কখন' ও 'কে'। উপন্যাস বলে অভিহিত হলেও বইটি ঠিক ক��ন জনরার, সেটা আবিষ্কার করতে যেয়ে আমার ছোট্টো মাথা গোলকধাঁধায় পড়েছে। আমার কাছে বইটি খানিকটা এরকম: দু-মুঠো ইতিহাসের সাথে এক চিমটি কল্পনা আর খানিকটা রস—বিজ্ঞানের সাথে রাজনীতির মিশেল, সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
বইটিতে ইতিহাসের টাইমফ্রেইম ধরে ধরে আগানো হয়েছে। পরমাণুর আবিষ্কার থেকে শুরু করে অ্যাটম-বোমা তৈরি পর্যন্ত সময়কালকে প্রয়োজনানুসারে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঘটনার নিজস্ব প্রয়োজনে বর্ণনার ক্ষেত্রে আগে-পিছে চলে যেতে হয়েছে ঔপন্যাসিক স্যানালকে। এতদসত্ত্বেও বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি, পড়তে এতটুকু বিরক্তি আসেনি। বইটিতে রুজভেল্ট, ট্রুম্যান, চার্চিল, লেনিন, স্তালিন, হিটলার, মুসোলিনিসহ আরও... জনা বিশ-ত্রিশের মতো রাজনীতিবিদের নাম এসেছে। আরও এসেছে বিংশ শতাব্দীর বিস্ময় আলবার্ট আইনস্টাইন থেকে শুরু করে অর্ধ-শতাধিকের বেশি বিজ্ঞানীর নাম। বিজ্ঞানীদের অবহেলা, বিজ্ঞানীদের কদর, বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার, সরলতা, বিদ্রোহ... এসব ছাড়াও নানারকম বাস্তব গল্প উঠে এসেছে তাদের জীবনের। পড়তে খুব আনন্দ লেগেছে।
রিভিউ পড়তে এতটুকু একঘেঁয়ে লাগলেও একথা আমি গ্যারান্টি দিতে বলতে পারি—বইটি পড়তে এতটুকু একঘেয়েমি আসবে না। লেখকের হাস্যরস বোধ প্রশংসনীয়। ইনফরমেটিভ বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে গোটা সায়েন্সকে বর্ণনা করেছেন লেখক রসালো বর্ণনার মাধ্যমে, অতিসহজে। যারা সায়েন্সের ছাত্র নন, কিছু ব্যাসিক ধারণা পেলে তাদের জন্যও বইটি সুপাঠ্য হবে, নিঃসন্দেহে।

পরিতৃপ্ত হয়ে পাঁচতারা ঠুকে দিলুম কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই...
ধন্যবাদ প্রাপ্য বড়ভাই শাহলুল তানজিমের, দারুণ এই বইটা রেকমেন্ড করার জন্য।
Profile Image for Farha Crystal.
46 reviews68 followers
April 22, 2017
This is a story about how the nations rise to power in the atomic age.
It reminds me the code between USA and USSR that "The enemy of my enemy is my friend"

The writer narrated the story so fluently that you can swallow the book in just one bite :D
I didn't know in details about the Manhattan Project. I didn't even know about the betrayal. But I enjoyed a thrilling experience to make a journey through this book.
https://en.wikipedia.org/wiki/Manhatt...

It also works as an elementary level nuclear physics teacher. The writing is so precise that I can visualize the humorous Mr. Feynman, Big Daddy Einstein, Grand dada Neils Bohr, Uncle Heisenberg, the cunning Oppenheimer, the wonderful guy Leo Szilard, Mama curie, the global guy Klaus Fuchs ... and the others science persons in the story line.

The following quote is one of my favorites.:

" ... আমি অনেক আগেই বলেছি – এ বিশ্বাসঘাতকতার মুল্যায়ন করতে বসে একটা সমীকরণ কষে দুটি ফল
পেয়েছি । একটা বিলিয়ন ডলারের অঙ্কে এবং দ্বিতীয়টা শূন্য ।
আশা করি হিসেবের কড়ি বাঘে খায়নি ।
X(X-10^9)=0
ইকোয়েশানের দুইটি ‘রূট’ ই নির্ভূল । এ বিশাসঘতকার মূল্যমান বিলিয়ন ডলারে ও প্রকাশ করা যায় ; আবার বলা যায় সেটা স্রেফ শূণ্য। "

Well, I read a scanned copy. You can download it from this link.
https://www.pdf-archive.com/2014/02/0...
Profile Image for Rehan Farhad.
242 reviews12 followers
January 4, 2025
লেখকের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা পাঠকের জন্য এই ঐতিহাসিক-বৈজ্ঞানিক ঘটনা সুস্বাদু গদ্যে রুপান্তর করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে এত বিস্তৃত কলেবরে লেখার জন্য ইন্টারনেটবিহীন যুগে প্রচুর বই,পত্রিকা ঘেঁটেছেন অবশ্যই। এই কষ্টসাধ্য ব্যাপারটার সাথে সবচেয়ে অবাক লেগেছে উনার কল্পনা শক্তির প্রয়োগ। অটো কার্ল, রোনাটা ও ক্লাউসের ঘটনাগুলা না থাকলে এই বইটা তার চরিত্রগুলোর বিশ্বাসঘাতকতার আবেদন হারাতো।
Profile Image for লোচন.
207 reviews56 followers
December 25, 2020
নাম শুনে ভেবেছিলাম গরম গরম থ্রিলার হয়তো। কিন্তু ভেতরে ঢুকে অবাক হলাম, মুগ্ধ হলাম, পরিপূর্ণভাবে পরিতৃপ্ত হলাম। নন ফিকশন এত অমায়িকভাবে লেখা যায়!

প্রিয় লেখক বিল ব্রাইসন যেমন করে লেখেন - জলবৎ তরলং করে কাহিনি বলে যাওয়া আর মাঝে মাঝে কাচ্চির আলুর মতন দুয়েকটা রসিকতা মাখা anecdote, ছোট্ট খোশগল্পের মিশেল; এই বইয়ে ঠিক সেটাই পেয়েছি। ফাইনম্যানের কমিক ব্রিলিয়ান্স। মিত্রপক্ষের "বোমা বানিয়েছি যখন, ফাটাব না কেন" ধরণের মরবিড পণ্যতান্ত্রিক মনোভাব। এলেক-ডগলাস-ডেক্সটারের ত্রিমূর্তি। ক্লাউসের নাটকীয়, প্রায় অসম্ভব নাটকীয় জীবন।

এই বইতে উপন্যাসের ছায়া আছে। বিষাদ আছে। আর পুরো ব্যাপারটা বাস্তব, এই তথ্য এক অনন্য ধাক্কা দেয় পাঠককে। রেশ রয়ে যায় মাথার ভেতর। আমি তৃপ্ত।

(বইটা রেকমেন্ড করার জন্য তানজীম আহমেদ ভাইকে কৃতজ্ঞতা)
Profile Image for Klinton Saha.
357 reviews6 followers
January 29, 2025
"নভঃস্পৃশং দীপ্তনেকবর্ণং ব্যাত্তাননং দীপ্তবিশালনেত্রম।
দৃষ্ট্বা হি ত্বাং প্রবথিতান্তরাত্মা ধৃতিং ন বিন্দামি শমং চ বিষ্ণো।"
-- হে পরমপিতা ! আপনার আকাশস্পর্শী তেজময় নানাবর্ণযুক্ত ওই বিস্ফোরিত মুখমন্ডল এবং উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে আমার হৃদয় আজ ব্যথিত। আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি ,আমি শম অর্থাৎ শান্তি হারিয়ে ফেলেছি।



তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম-২৩৫ বা প্লটোনিয়াম-২৩৯ এর নিউক্লিয়াস কে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করে ভেঙে শৃঙ্খল বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করা হয় যা ১৫-২১ কিলোটন TNT টির সমতুল্য। এ হলো পারমাণবিক বোমা তৈরির মূল প্রক্রিয়া।
জার্মান ঘাঁটিতে আবির্ভূত হয়েছে সাক্ষাৎ যমদূত হিটলার।"আর্য-দৌড়ের" লক্ষ্যে ইহুদি শূন্য করে ফেলেছে গোটা জার্মানি। তৎকালীন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত দেশছাড়া। সেই সময় বিজ্ঞানীরা কাজ করছিলেন পরমাণু ক্ষুদ্র জগত নিয়ে।তাঁরা পরমাণু থেকে বিপুল শক্তি বের করার হিসাব কষে ফেলেছিলেন। হিটলারের হাতে এই বিজ্ঞানের অপব্যবহার হতে পারে অনুধাবন করে বিজ্ঞানীরা দলে দলে আমেরিকায় পৌঁছায় ও প্রেসিডেন্টকে অবহিত করে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরে তিনি গোপনীয় ম্যানহাটন প্রজেক্টে বিজ্ঞানীদের পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ সময় , জটিল গবেষণা ও মেধাবী বিজ্ঞানীদের নিরলস শ্রমে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তৈরি হয় পারমাণবিক বোমা।এই বোমা যে কতটা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে তা জানিয়ে বিজ্ঞানীদের পক্ষে আইনস্টাইন রুজভেল্ট কে সতর্ক বার্তা লিখেন। দুঃখজনক, সেই চিঠি তার কাছে পৌঁছানোর আগে তিনি মারা যান; ক্ষমতায় বসে ট্রুম্যান। এদিকে জাপানও বেশ বাড় বেড়েছে, আমেরিকার পার্ল হারবারে হামলা করে বসলো।কি করা যায় তাই নিয়ে একত্রিত হয় তিনমাথা - চার্চিল , ট্রুম্যান ও স্তালিন। এদিকে বোমা তৈরির খবর ট্রুমান কিছুতেই রাশিয়কে জানাবে না। কিন্তু এই খবর কি চাপা থাকে! খবর রাশিয়ায় পৌঁছে যায় অনেক আগেই! কিন্তু কে সেই বিশ্বাসঘাতক??

যুদ্ধোত্তর সময়ে
তদন্ত শুরু হলো, কে সেই বিশ্বাসঘাতক, যে খবর রাশিয়ায় বিক্রি করেছে। সন্দেহের তালিকায় ওপেনহেইমার সহ বেশ কয়েকজন। অতীতে সমাজতন্ত্র চর্চা করায় আমেরিকার জাতীয় বীর ওপেনহেইমারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। অবশেষে 'ডেক্সটার' নামের সেই বিশ্বাসঘাতক বিজ্ঞানী যে খবর রাশিয়ায় চালান করেছিল নিজ থেকে আইনের কাছে ধরা দেয়।ডেক্সটার অতীতে সমাজতন্ত্র চর্চা করতো ,সে চেয়েছিল আমেরিকা যাতে কোনোভাবেই পারমাণবিক বোমার একচ্ছত্র অধিপতি না হয়। কেননা এতে জাপানের মতো দুর্ভাগ��য যেকোনো দেশের হতে পারে। রাশিয়ার কাছেও বোমা থাকলে অন্তত একচেটিয়া অধিকার কারো থাকবে না।এই ডেক্সটার তার অল্প বয়সে রোনাটা নামের এক ধার্মিক মেয়ের প্রেমে পড়েছিল কিন্তু ক্যারিয়ার তৈরির লক্ষ্যে ডেক্সটার সম্পর্কে না জড়িয়ে সড়ে পরে । পরবর্তীতে রোনাটাকে ডেক্সটার তার সহকর্মী বিজ্ঞানীর স্ত্রী হিসেবে আবিষ্কার করে। তখন তাদের মধ্যে আবারও প্রেম জেগে ওঠে।
কিন্তু রোনাটার হঠাৎ মৃত্যু ও বিবেকের দংশন ডেক্সটারকে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে।



পারমাণবিক বোমা কোনো একক বিজ্ঞানীর অর্জন ছিল না, সমন্বিত মেধার নিরলস চেষ্টায় ধাপে ধাপে আবিষ্কৃত হয় এটি।আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে বোমা নিক্ষেপের জন্য বিজ্ঞানীরা দায়ী কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরী বোমা নিক্ষেপনের সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশপ্রধানের হাতেই থাকে।ম্যানহাটন প্রজেক্টের শেষ ধাপ কি হতে পারে সেটা অজানা ছিল বিজ্ঞানীদের। এই বইতে কি নেই - প্রেম , ভয়াবহতা, তদন্ত কিংবা বিজ্ঞান।পপ-সাইন্সের এই বই সাহিত্য জগতে এক পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে তাদের জন্য যারা ইতিহাস ও বিজ্ঞান নিয়ে জানতে , পড়তে ও লিখতে চায়।
বরাবরের মতো লেখককে 'সেলাম'।
Profile Image for Dhiman.
177 reviews14 followers
December 17, 2024
দুঃখ একটাই এতদিন কেন পড়লাম না এটা। এটাই আমার অনুভুতি। কী পাগল করা বই পড়লাম রে ভাই। বেশ কয়েকদিন যাবৎ নারায়ণ সান্যাল গোগ্রাসে গিলছি। এবং যত পড়ছি ততই বুঝতে পারছি যে উনি বাংলা সাহিত্যের একজন রত্ন। ওপেনহাইমার ছবিটা বের হয়েছে গতবছর। অথচ এই বিষয় নিয়ে ৫০ বছর আগে বাংলা সাহিত্যে এরকম একটি অনবদ্য কাজ করে গিয়েছেন নারায়ণ সান্যাল সেটা ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে ওঠে। কিন্তু ওইজে বললাম দুঃখ একটাই - এতদিন পরে বইটা পড়লাম।

এখন আসি আসল কথায়। বইটা কী পুরোপুরি সত্যতা নিরূপণ করে অর্থাৎ বইটিতে যা করবেন পুরোটাই সত্যি? না তবে ৯০ ভাগ সত্যি। আসল যে বিশ্বাসঘাতক kalus fuchs (ক্লাউস ফুকস্) সে যেভাবে তার দোষ স্বীকার করে সেটা মোটেই নাটকীয় নয়। নিতান্তই স্বাভাবিক। বিবেকের কাছে পরাজিত হয়ে তিনি ধর্না দেন এবং সব দোষ স্বীকার করেন। কিন্তু এটা যেহেতু সাহিত্য তাই কিছু রস সংযোগ প্রয়োজন। সেই জন্য লেখক এই বিজ্ঞানীটির জীবনের একটি বিশেষ অংশে একটু প্রেম রস সংযোগ করে অতিরঞ্জিত করেছেন মাত্র। দেখিয়েছেন যে একজন জ্ঞানী বৈজ্ঞানিক যে জীবনে একটি মাত্র নারীকে ভালোবেসে ছিল কিন্তু জ্ঞানপিপাসার কারণে ডিটিকে প্রত্যাখ্যান করে জ্ঞানের স্বার্থে এগিয়ে চলে। কিন্তু জীবনের এক পর্যায়ে ওই নারীটি তার জীবনে আবার চলে আসে। প্রেম ভাব দুজনের মধ্যেই এখনো বিরাজমান। কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বা নিয়তির পরিহাসে কেউই কারো হবার নয়। এবং একপর্যায়ে ভালোবাসার জন্য নারীটির আত্মবলিদান এবং বিজ্ঞানীটির হতাশায় চলে যাওয়া এবং অতঃপর নিজের দোষ স্বীকার করা। এইভাবে ঘটনাচক্র দেখিয়েছেন লেখক। যাতে করে লেখকের যে উদ্দেশ্য, পাঠকের মধ্যে আবেগের সঞ্চার করা সেইটা ভালোভাবেই হয়। এখন বইটি কি আসলেই পুরোপুরি ভালো। না তা ঠিক বলা যাবে না কারন এমন অনেক ঘটনা বর্ণনা করা আছে যেগুলো আসল কোনভাবেই সম্পর্কিত না। এবং সেগুলো পড়তে মাঝে মধ্যে আসলেই বিরক্তি আসে। কিন্তু এই সমস্যাটা অনায়াসেই উপেক্ষা করা যায়। আসলে এত ঘটনার ঘনঘটা লেখক চান না তার পাঠককে কোন ঘটনা জানা থেকে বঞ্চিত করতে।

সান্যাল বাংলা সাহিত্যের একটি দুর্লভ নক্ষত্র। রিসেন্টলি আমি লেখক এর ম্যাগনাম ওপাস - রূপমঞ্জুরী (৩ খন্ড) সংগ্রহ করেছি। পড়ব অবশ্যই। এবং আপনাদেরও বলবো উনাকে অবশ্যই পড়া উচিত যেন উনি হারিয়ে না যান। তবে একটা কথা আমাকে বলতে হয় - সুনীল, শীর্ষেন্দু, সত্যজিৎ, শরদিন্দু প্রমুখদের নিয়ে যতটা আলোচনা হয় নারায়ণ সান্যালকে নিয়ে অতটা আলোচনা দেখিনি। উনি আসলেই আন্ডারটেটেড। কিন্তু কিন্তু ওনাকে নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। না হলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

এই বইটা থেকে আর একটা জিনিস জানতে পারলাম পারমাণবিক বোমা তৈরিতে যতজন বিজ্ঞানী কাজ করেছে তার মধ্যে শতকরা ১০ ভাগও আমেরিকান নয়। আমেরিকার যেটা কৃতিত্ব অঢেল ক্যাপিটাল।
Profile Image for Rashedul Riyad.
58 reviews33 followers
February 19, 2022
হিস্টোরিক্যাল ফিকশন আমার পছন্দের জনরা- এই ব্যাপারটা প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'প্রথম আলো' উপন্যাস পড়ার পর।

বেশ কয়েকমাস ধরে রিডার্স ব্লকে থাকার পর খুঁজে পেয়েছিলাম এই বইটা। আরো অনেক না পড়া বইয়ের ভেতর আড়াই বছর আগে বাতিঘর থেকে কিনে আনা বইটা চুপ করে বসেছিলো। পড়া শুরু করে কিছুদূর যাওয়ার পরেই বুঝলাম এরকম হিস্টোরিক্যাল ফিকশানই এখন দরকার ছিলো আমার।

পরমাণুর আবিষ্কার,পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার,জাপানের দুটো শহরে সেই বোমার ব্যবহার এবং তথাকথিত বিশ্বাসঘাতক 'ডেক্সটার'এর মাধ্যমে সেই আবিষ্কারের ফর্মুলা তৎকালীন সোভিওয়েত ইউনিয়নে পাচারের রোমাঞ্চকর বর্ণনায় এক অনন্যসাধারণ মাস্টারপিস তৈরি করেছেন নারায়ন সান্যাল। 

বাস্তব ঘটনা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়- এই বইটি তা নতুন করে উপলদ্ধি করাবে।
 
আইনস্টাইন, রাদারফোর্ড, নীলস বোহর, অটো হান, কুরি দম্পতি, রিচার্ড ফাইনম্যান, ফার্মি, জিলার্ড, হাইজেনবার্গ, ওপেনহাইমার, রুজভেল্ট, চার্চিল, হিটলার, স্তালিন- কে নেই এই বইতে?

বইয়ের শুরুর দিকেই পরমাণু মডেল নিয়ে কিছু কথা আছে, যে কারওরই সেখানে এসে মনে হতে পারে "উপন্যাস পড়তে এসে পরমাণুর মডেল পড়তে হচ্ছে কেনো!"- কিন্তু ধৈর্য ধরে এই অংশটুকু পড়লে পাঠকেরই লাভ হবে, বোঝা যাবে কেন এবং কিভাবে পরমাণুর শক্তিকে উন্মুক্ত করা হয়েছিলো। 

উপরের শেষ বাক্যটা আজ এই ২০২২ সালে এসে আমরা হয়তো খুব সহজে লিখতে পারবো। কিন্তু পারমাণবিক শক্তিকে উন্মুক্ত করতে মানুষকে পার হয়েছে অত্যন্ত কঠিন কিছু জায়গা, এতোটাই কঠিন যে সে সময় রাদারফোর্ড, নীলস বোহর, অটো হান আর আইনস্টাইনদের মতো বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন এই শক্তিকে কখনোই জয় করা যাবে না- অন্তত তাদের জীবদ্দশায় নয়। 

কিন্তু মানুষের উচ্চাকাঙ্খার কাছে অসম্ভব কাজ সম্ভব হয়েছে, ইতিহাসের এই ঘটনার নজির একটা নয়। পরমাণুর শক্তির ক্ষমতার উন্মোচন নতুন করে আবারও তা প্রমানিত হয়েছিলো। 

অসম্ভব রকমের গোপনীয়তা সত্ত্বেও আমেরিকা এই বোমা বানানোর ফর্মূলা গোপন রাখতে ব্যর্থ হয়, পাচার হয়ে যায় কমিউনিস্ট রাশিয়াতে। 

কিভাবে পাচার হয়েছিলো সেই ফর্মুলা, কিভাবে এফ বি আই নজর রাখা শুরু করেছিলো বিজ্ঞানীদের উপর এবং সবশেষে কে এই 'বিশ্বাসঘাতক',যে কিনা নিজ থেকেই ধরা দিয়েছিলো আমেরিকানদের কাছে- জানতে হলে বইটি অবশ্যপাঠ্য।
Profile Image for Krishnendu.
25 reviews13 followers
January 9, 2023
just loved the way the whole story is narrated. with so many information and so many characters, this is a very well written, informative story of nuclear power. how it was discovered and ultimately, how it was used to make the atom bombs and finally why (n how) someone supplied the top classified scientific information to the Russians.
This entire review has been hidden because of spoilers.
April 7, 2020
একটা মাস্টারপীস! আজ থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে বাংলায় এই সায়েন্টিফিক থ্রিলার লেখা হয়েছ��� ভাবতেই গা কাঁটা দিয়ে উঠছে। বইটা পড়ে মাথা ঝিমঝিম করছে।

সায়েন্স ফিকশন ভেবে পড়া শুরু করেছিলাম। প্রথম অধ্যায় পড়ে মনে হলো, থ্রিলার পড়ছি। তারপর ভাবছি "কী পড়ালাম! আমি এটা কী পড়লাম!"
আশ্চর্যের বিষয় এই বইটা নিয়ে বাংলায় তেমন আলোচনা চোখে পড়েনি। এখনও বিদেশি থ্রিলারের অনুবাদের বাংলার লেখকরা কোনঠাসা। এ যে দেশি ঠাকুর পায়ে ঠেলার মতো ব্যাপার।
Displaying 1 - 30 of 142 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.