সিনেমার একটা দল এসেছে আখাউড়ায়। সারা দিন বৃষ্টি, ওপেন করা যাচ্ছে না ক্যামেরা। দলে কোনো নায়ক-নায়িকা নেই। আছে খাঁচায় বন্দী এক ট্রাক কাক। ছবির ডিরেক্টর সুমন। একগুঁয়ে লোক। তার নিজস্ব এক দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা দিপা। চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর তরুণ। বেঁটেখাটো মানুষটার জন্মগতভাবে বাঁ পায়ে সমস্যা। সঙ্গে জুটেছে স্থানীয় কিশোর বাবলু। রোগাপটকা বুকে সে স্বপ্ন পুষে রাখে। একপর্যায়ে এ দলে যুক্ত হয় সম্মোহনী শক্তির রহস্যময় এক মানুষ—সুলতান শেখ। আর আছে সুখপাখি, যার দেখা পেলে দুঃখ আর কখনো স্পর্শ করে না। সুমন, তরুণ আর বাবলু—প্রত্যেকের জীবনই আজব কিছু ঘটনার যোগফল। সেগুলো এতই অদ্ভুত যে বিভ্রম বলে ভুল হয়। তাদের জীবনের পুরোটাই কি স্বপ্ন, নাকি ওরা বাস করছে অন্য কারও স্বপ্নে? স্বপ্ন ও বাস্তবতার মায়াবী উপাখ্যানে আপনাকে আমন্ত্রণ।
"সুখ কী জিনিস, তা সে আমার সাথে থেকে বোঝে নাই, এক দিনের জন্যও না। হয়তো সে সুখের আশায় আমার কাছে আসেও নাই। তাহলে কেন আসছিল? সম্ভবত সুখের অনুপস্থিতি কী, এই ব্যাপারটা বোঝার জন্য ।"
গল্পটা একটা শুটিং ইউনিটের।গল্পটা তরুণ, সুমন আর বাবলুর।তিন নিঃসঙ্গ মানুষের। গভীর কোনো তত্ত্ব বা আখ্যানভাগ নেই "লোনলি অক্টোবর" এ। একটা কারণেই ভালো লাগলো। সেটা হচ্ছে, লেখক তার তীব্র বিষণ্ণতার বোধ পাঠকের মধ্যে অনায়াসে সঞ্চারিত করতে পারেন।তাই পাঠ শেষ হওয়ার পরও রেশ থেকে যায় বিষণ্ণতার।
"ফোর ইসটু ওয়ান" বইয়ের "সুখপাখির খোঁজে" ও "টি শার্ট" গল্পের খন্ডাংশ উঠে আসছে লোনলি অক্টোবরে। সুখপাখির খোঁজে গল্পটা আগে পড়া থাকায় উপন্যাসে কানেকশন টা ভাল লাগছে বেশি। আলভি আহমেদের গদ্য সুন্দর। একটানা পড়া যায়।
বইটা ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি ভাল লাগছে। কিছু বই আছে যেগুলো ভাল লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজতে গেলে খুঁজে আর পাওয়া যায় না, কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায়, বেশ তো! "লোনলি অক্টোবর" ও সেরকম একটা বই। রেকমেন্ডেড।
মন কেমন করা Ending... এরকমটা অবশ্য আমি বেশ উপভোগ-ই করি। লেখকের মৌলিক লেখা আগে পড়া হয় নাই। হারুকি মুরাকামির কয়েকটা অনুবাদ পড়েছি, বেশ ভালো লেগেছে। আর'লোনলি অক্টোবর' নামটাও যথেষ্ট আগ্রহ জাগানিয়া ছিলো। বইটা মাত্র ১৫০ পৃষ্ঠা হলেও, এক বসায় পড়ে শেষ করতে পারিনি। এমন না পড়তে খারাপ লাগছিলো, তবুও কেন যেন টানছিলো না। তবে, পড়ার সময় বেশ বিষণ্ণ বোধ করেছি, কিছু কথা খুব মনেও ধরেছে। লেখক সুমন আর তরুণ, এই ক্যারেক্টার দুটো বেশ ভালোভাবেই উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু বাবলু ক্যারেক্টারের রিপ্রেজেন্টেশনটা অনেকটা এলোমেলো মনে হয়েছে আমার কাছে, পড়তে যেয়ে হোঁচট খেয়েছি কিছু জায়গায়।
লোনলি অক্টোবরে উদাসভাব আছে, আলতো নরম ভালোবাসা, গভীর অথবা ঝড়ের মতো প্রেম আর দূরে সরে গিয়েও তীব্রভাবে কাছে থাকা। কাহিনিতে স্বপ্নময়তা আর বাস্তবতার মিশেলে অদ্ভুত বিভ্রম তৈরি হয়।
এই বিভ্রম মায়াবী। উপন্যাসের চরিত্রের আচরণে যেমন মায়া আছে, সেরকম আছে ড্যামকেয়ার ভাব। তারা যে বয়সেরই হোক, তুখোড় তারুণ্যের জীবনযাপন করে। আছে পরাবাস্তবতা, ম্যাজিক রিয়েলিজম। নিতল সরলতা। আর বিষণ্ণতা, বুকের গভীর থেকে উঠে আসা হাহাকার।
ভালো লাগলো। রিকমেন্ডেড। আলভী আহমেদের লেখা এই প্রথম পড়লাম। হারুকি মুরাকামি'র বেশ কয়েকটা বই উনি অনুবাদ করেছেন বলে জানি, কিন্তু পড়ার সুযোগ হয়নি। তিন চরিত্রের বয়ানে পুরো বই। চরিত্র অনুযায়ী ন্যারেটিভ যার যার ভাষায় বর্ণিত, এই ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে।
ফেসবুকের যেমন শতেক দোষ আছে তেমনি এর শতাধিক গুণও রয়েছে। ফেসবুক সূত্রেই আলভী আহমেদের বইয়ের প্রথম খােঁজ পাই। সাহিত্যবোদ্ধারা এই বই নিয়ে কে কী বলবে জানি না। স্বপ্ন, ঘোর, বাস্তবতা, বিভ্রমে রচিত এক চমৎকার উপন্যাস এই ‘লোনলি অক্টোবর’। একটু একটু পড়া শুরু করেছিলাম। ক্রমশ আগাতেই চরিত্রের মাঝে ঘ্যাঁচ করে ঢুকে যেতে হল যেটা আমি চাইনি। নিজের জীবনেই এত এত প্যাঁচ তার উপরে বইয়ের ক্যারেক্টারে ঢুকে যাবার কোন মানে হয় না। সুমন আর তরুনের জীবনের এক পয়েন্টে নিজের সাথে ভীষন রিলেটেবল লাগল। সমস্যা হল বাবলুকে নিয়ে। আখাউড়ার ভাষাটা এত সুন্দর করে লেখক ব্লেন্ড করছেন যে আমি দিব্যি এটাকে আমার রেগুলার ভাষাতেই পড়ে যেতে পেরেছি মানে কোথাও আটকায় নি, আরোপিত মনে হয় নাই।
বাবলুর স্তরে নামায়ে এনে এটুকু বাচ্চার মনস্তত্ত্ব দেখানো অবশ্যই সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু আলভী আহমেদ মনে হয় কাজটা গড়গড় করে করে গেছেন।
উনার আগের একটা বইতে এইখানের দুইটা ঘটনা ছোট গল্প আকারে বের করেছেন। সেটা টেনে এনে এই বইতে কানেক্ট করাটাও বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। প্রতিটা বই পড়ার একটা আলাদা অনুভূতি থাকে, এই বই পড়ার অনুভূতি হল ট্রেনের হালকা দুলুনিতে তির তির করে বই পড়া হচ্ছে, জানালার কাঁচের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির ছাঁটে বইয়ের পাতা ভিজে যায়। উনার আগের বইটা পড়েও মনে হয়েছে আরেকবার পড়া লাগবে, এই বইটা পড়েও মনে হয়েছে কিছুদিন পরে আবার পড়ব। সেইমতে এটা অবশ্যই কালেকশনে রাখার মত একটা বই।
উপন্যাসে মূলত তিনজন চরিত্র গল্পকথক। সুমন মাঝবয়েসী পুরুষ, তরুণ নামক চরিত্রটি যুবক এবং বাবলু নামক কিশোরের ভাষ্যে গল্পের বর্ণনা। মানুষের জীবনের তিনটি স্তর এবং এই স্তরের সাথে জড়িত স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ, স্বপ্নবিহীন দিক তার পাশাপাশি একাকিত্বের ও বিষন্নতার তিনটি ভিন্ন ভিন্ন চেহারাও দেখা যায় গল্পে। সরল, সাবলীল ভাষায়। আখাউড়ার স্থানীয় ভাষা ব্যবহারের দিক দিয়ে স্থানীয় আর চলতি ভাষার মিশ্রণের গুরুচন্ডালী দোষ চোখে পড়েছে। কাহিনীতে আজব ঘটনার জাল পাতা হলেও সেই জালের বিস্তার বা সমাধান কোনোটাই দেখা যায় নি। উপন্যাসটি দৈনন্দিন জীবনের আমাদের বিষন্নতা, বিষাদ, একাকিত্বকে স্পর্শ করে যায় খুব সহজেই।
ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে গল্প এগিয়েছে। মোট তিন চরিত্রের জীবনের টুকরো অংশ যেন জোড়া লেগেছে কোনো এক জায়গায়। খুব আহামরি কোনো গল্প অবশ্য না৷ মনে দাগ কাটার মতো ব্যাপারও ছিল না। পড়ে যেতে ভালো লেগেছে। গল্পের বর্ণনাভঙ্গিই বরং লেখার মূল আকর্ষণ হিসেবে কাজ করেছে। পড়তে পড়তে কখনো সুমন-দীপার জীবন সংকটের মুখোমুখি হয়েছি, কখনোবা ব��বলুর সাথে পালাতে চেয়েছি রঙহীন, ম্যাড়মেড়ে জীবন থেকে। একটি উপন্যাস হলেও এখানে আসলে বলার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো গল্প ছিল না। বরং টুকরো টুকরো কিছু গল্প বিক্ষিপ্তভাবে উঠে এসেছে আর লেখকের চমৎকার স্টোরি টেলিংয়ের মাধ্যমে সেটা পড়ে যেতে ভালো লেগেছে। পড়তে পড়তে অনেক সময় মনে হতে পারে জীবনও হয়তো এমনই, টুকরো টুকরো কতগুলো এলোমেলো ঘটনার সমষ্টি। আপাত সম্পর্কহীন সেসব ঘটনাই হয়তো ভালো স্টোরি টেলারের সুবাদে ভালো গল্প হয়ে যায়!
প্রথমেই বলি, এটা একটা মন খারাপ করানো বই। এই বইয়ের প্রতি পাতায় বিষন্নতা মেশানো আছে, আছে উদাসীনতা। বইটা ছোট হলেও গল্প স্লো। যদিও পড়তে খারাপ লাগছিল না, তবু এক বসাতে বেশি টানতে পারিনি। অনায়াসে এক-দুবার পড়ার মতো বই, যদি না আমার মতো বিষন্নতা প্রিয় হোন। এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এই বিষন্নতা আপনার মধ্যে ঢুকে যাবে, যা বই শেষ হবার পরও অনুভব করতে পারবেন।
প্রিয় উক্তি - "সুখ কী জিনিস, তা সে আমার সাথে থেকে বোঝে নাই, এক দিনের জন্যও না। হয়তো সে সুখের আশায় আমার কাছে আসেও নাই। তাহলে কেন আসছিল? সম্ভবত সুখের অনুপস্থিতি কী, এই ব্যাপারটা বোঝার জন্য।"