ইতিহাস কারখানা গ্রন্থমালার তৃতীয় ভাগ প্রকাশ পেয়েছে স্বাধীনতা ব্যবসায় নামে। স্বাধীনতা ব্যবসায় বইটির সব লেখাই পূর্বপ্রকাশিত। এই ইতিহাস কারখানার প্রথম ভাগের চুম্বক অংশ ছিল এরাক যুদ্ধ। একই ধাঁচে বলতে ফিলিস্তিন আর আফগানিস্তানের প্রতিরোধ সংগ্রাম ছিল দ্বিতীয় ভাগের ভরকেন্দ্র। সে অনুসারে স্বাধীনতা ব্যবসায়ী বুলির আড়ালে জগৎজোড়া ন্যায় বিসর্জণের যে মহামারি, তাহাই স্বাধীনতা ব্যবসায় বৃত্তের পরিধি। এই বইয়ে সলিমুল্লাহ খান জাঁ-জাক রুশো থেকে মিশেল ফুকো দি ক্লদ লেবিস্ত্রোস অবধি কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। মাহাত্মা গান্ধী থেকে নাসির আলী মামুন প্রভৃতি মনীষীর চিন্তা আমলে নিয়ে দেখেছেন তাঁদের অনেকের চিন্তাই স্বাধীনতা ব্যবসায় অতিক্রম করেনি।
Salimullah Khan is a Bangladeshi writer, thinker, critic, and public intellectual. Regarded as an eminent thinker of Bangladesh, Khan explores national and international politics and culture using Marxist and Lacanian theories. Informed and influenced by Ahmed Sofa's thoughts, his exploration of Bangladesh's politics and culture has a significant following among the country's young generation of writers and thinkers.
Khan translated the works of Plato, James Rennell, Charles Baudelaire, Frantz Fanon, Dorothee Sölle into Bengali. In Bangladesh, he is a regular guest in talk shows on national and international political issues.
A proponent of anti-colonial movements, Khan has engagements in the global and regional political economy and culture from a Lacanian-Marxist perspective. A critic of Western interventionism, Salimullah Khan analyzes Western thought and discourse through critical scrutiny of the colonial and imperial legacy of the West. From this perspective, he has written on the works of Charles Baudelaire, Walter Benjamin, Michel Foucault, Frantz Fanon, Claude Lévi-Strauss, Edward Said, Aime Cesaire, Talal Asad and many others. Since 1997, his engagement with Freud and Lacan has made him use psychoanalysis to explore Bangladesh's politics and culture and also international issues. He also wrote two books on Freudo-Lacanian philosophy: Freud Porar Bhumika, and Ami Tumi She.
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের ইতিহাস কারখানা তৃতীয় ভাগের বই 'স্বাধীনতা ব্যবসায়।'
পুরো বইখানা এতই দুর্বোধ্য ছিল আমার জন্য রীতিমত কান্না পাচ্ছিলো শেষেরদিকে এসে। বারবার হতাশ হয়েছি নিজের জ্ঞানের এমন মহামন্দা অনুভব করতে পেরে। এই বইয়ে সলিমুল্লাহ খান জাঁ-জাক রুশো থেকে মিশেল ফুকো দি ক্লদ লেবিস্ত্রোস অবধি কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। প্রতিবারই যখন নামগুলো আসছিলো, আমার থামতে হচ্ছিলো। কারণ ভদ্রলোকরা আমরা কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত।
এই একটা বই শেষ করতে গিয়ে, আমার শেষ করতে হয়েছিল ছফা সাহেবের সবকটা গল্প এবং উল্লেখযোগ্য পরিমানের প্রবন্ধ। ছফা না পড়লে উক্ত বইয়ের অনেক কিছুই মাথার উপর দিয়ে যাবে। সবথেকে বড় কথা, প্রচুল 'স্পয়লার বিদ্ধমান।'
বইয়ে ডজন খানের প্রবন্ধ থাকলেও, মিশেল ফুকোর উপর দেওয়া খান সাহেবের 'মিশেল ফুকোর আশ্চর্য চেরাগ' এবং ২০১০ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধ 'সাম্রাজ্যবাদের যুগের মুক্তিযুদ্ধ' এবং '১৮৫৭ সালের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ' প্রবন্ধগুলো বেশ ভালো লেগেছে।
'সমাজ পত্তননামা। এস্তেহারে রুশো একাধিকবার বলেছিলেন, জন্মিলে মানুষকে স্বাধীন হতেই হবে। এরপর এই রুশোই আবার বলেছিলেন, "বর্তমান জগতে কোনোমানুষই আর স্বাধীন নাই। যাঁহারা মনে করেন তাহাঁরা অপর কাহারাও প্রভু, তাঁহারা দাসেরও অধম দাস।"
এরপর লেখক প্রশ্ন রাখেন, "এই পরাধীন জগতে তাহলে স্বাধীন হইবার পথ কি?" এর উত্তর খুঁজতে লেখক চলে যান জার্মান পন্ডিত এমানুয়েল কান্টের কাছে। কান্ট বলেন, "পরের আদেশ নয়, মাত্র নিজের আদেশে যখন মানুষ মানুষ কোনো কাজে নামে তখনি সে স্বাধীন।"
গরিব পাঠক হিসেবে বইটা পড়তে গিয়ে যতবার বিরক্ত হয়েছি ততবার মনে হয়েছিল বন্ধু স্বাধীনের সেই উক্তি।
সরাসরি তার রিভিউ থেকে সরাসরি ধার করে যদি বলি, "সমাজনীতি, রাজনীতি,অর্থনীতি,ধর্ম,দর্শন,ইতিহাস জ্ঞানের অপরাপর প্রায় সকল শাখায় খান সাহেবের দখল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তার সব উদ্ভাবিত শবদরীতি,বানানরীতি যেন পুরো বইকেই দুর্বোধ্ করে তুলেছিল। সহজ নাম আর বিষয়গুলোও যেন অচেনা-অজানা মনে হচ্ছিলো।"
বইটার কলেবর প্রায় ৪৫০ পৃষ্ঠার হলেও এটা পড়তে যতটুকু সময় আর ধৈর্যের প্রয়োজন, তা দিয়ে সম্ভবত ২০০০ পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস পড়ে ফেলা যাবে। উনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়, তিনি ইংলিশ লিটারেচার খুব বেশি পড়েন। তাই বাক্যগঠন করেছেন অনেকটা ইংলিশ রাইটারদের মতোই। যার কারণে খুব দীর্ঘ বাক্যের অবতারণা করেছেন যার অর্থ উদ্ধার করা খুব মনোযোগী পাঠক না হলে কঠিন হয়ে যাবে।
বইটিতে ইতিহাস নিয়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে বেশ অবাক করেছে। যেখানে দেশভাগ থেকে শুরু করে একাত্তর পর্যন্ত সবকিছুতেই এদেশের তথাকথিত প্রগতিশীলরা মুসলিমদের ওপর দায় চাপিয়ে ক্ষান্ত হন, সেখানে তিনি মুদ্রার অপর পিঠটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
'দর্শন'— বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে বইয়ের অনেককিছুই আমার মাথার ওপর দিয়ে গেছে। আবার কিছু মাথার ভেতর দিয়েও গেছে। যতোটুকু মাথার ভেতর দিয়ে গেছে, বেশ ভালোভাবেই গেছে।
কিছু কিছু জায়গায় আমার মনে হয়েছে, উনি অনর্থক সমালোচনায় খুব বেশি বাক্যব্যয় করে অসচেতনভাবেই পাঠকের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করছেন।
বইয়ের একদম শেষে তিনি ডেভিড মেক্কাচনের ভ্রমণবিষয়ক একটি লেখার অনুবাদ দিয়েছেন। নাম 'পূর্ব পাকিস্তানের অন্তরে'। ভিনদেশী একজন মানুষ কীভাবে আমার দেশকে ১৯৬৪ সালে দেখেছিলেন তা পড়ে বেশ অবাক হয়েছি। সাথে এটাও বুঝতে পেরেছি, ইতিহাস হিসেবে আমাদের যা জানানো হয় আর যা সত্যিই ঘটেছে— তার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
ব্যক্তিগত কোনো রেটিং দিতে পারলামনা কারণ বইটার অনেক বিষয় আমার কাছে দুর্বোধ্য ছিল। অনেক ব্যক্তির বিষয় তুলে ধরেছেন যাদেরকে আমি চিনিনা, নামই প্রথম শুনেছি। একই সাথে আহমেদ ছফার অনেক বই পড়া হয়নি তাই সেদিকটাও খুব একটা বুঝিনি।
সবমিলিয়ে বইটা পড়েছি আর নিজের জানাশোনা আর জ্ঞানের ঘাটতি উপলব্ধি করেছি। একটা বই কিভাবে জ্ঞানের দুয়ার বা জানার দুয়ার খুলে দিতে পারে, মানুষের সীমাবদ্ধতা স্মরণ করিয়ে তাকে আরও জানতে আগ্রহী করে তুলতে পারে- তার স্পষ্ট নিদর্শন সলিমুল্লাহ স্যারের এই ‘স্বাধীনতা ব্যবসা’।
সলিমুল্লাহ খানের ১৯৭৯-২০১১ সাল পর্যন্ত লেখা বহুবিধ বিষয়ের প্রবন্ধসংকলন।এতে একত্রিশটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।
সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি,ধর্ম,দর্শন,ইতিহাস জ্ঞানের অপরাপর প্রায় সকল শাখায় খান সাহেবের দখল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তার স্বউদ্ভাবিত শব্দরীতি,বানানরীতি যেন পুরো বইকেই দুর্বোধ্য করে তুলেছিল।সহজ নাম আর বিষয়গুলোও যেন অচেনা-অজানা মনে হচ্ছিল।
বহুবিধ স্বাদের প্রবন্ধগুলো বেশ রসালো হতে পারতো যদি পন্ডিতপ্রবর খান সাহেব তার জানা তথ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে দিতেন এবং সচেতনভাবে তার উৎকট বানানরীতি পরিহার করতেন।
তিন ই বেশি হয়ে যাচ্ছে। খান সাহেব পন্ডিত মানুষ তাকে তো তিনের কম দিয়ে অশ্রদ্ধা করতে পারিনা।
'স্বাধীনতা' শব্দটির মূল্য কতখানি তা পরাধীন মানুষ মাত্রই জানে। স্বাধীনতা মানে অন্যের অধীন হতে বেরিয়ে আসা। বেরিয়ে কোথায় আসবেন? নিশ্চয়ই ভিন্ন কোনো জগতে। দেখা গেল সেখানে পূর্বের ন্যায় পরাধীনতার শেকল না থাকলেও স্বাধীনতা ভিন্ন অর্থে ধরা দিচ্ছে। তাই বলা যায়, স্বাধীনতা কোনো চূড়ান্ত বস্তু না। বাপেরও যেমন বাপ থাকে, তেমনি স্বাধীনতার পরেও স্বাধীনতা থাকে। আবার স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনতা বিসর্জনের শক্তিকেও বোঝানো হয়ে থাকে। যারা নিজের জীবনের চাইতে স্বাধীনতাকে বড় করে দেখেন কিংবা যে ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য ন্যায়বিচার বিসর্জন দিয়ে থাকেন, তাকে স্বাধীনতা ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছেন লেখক। তদুপরি মানুষ 'মানুষ' হিসেবে স্বাধীনতা ব্যবসায়ের কারণেই পরিচিতি পেয়েছে।
১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর 'বিপ্লব বেহাত' হয়ে গিয়েছিল বলা হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের যে প্রক্রিয়া সেখানে স্বাধীনতা লাভটাই জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো এই ঘটনাতে প্রকট আকার ধারণ করেছিল। একইসাথে স্বাধীনতা লাভের পর আমলাতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইরানি বিপ্লবের সময়ে মিশেল ফুকো তাদের সমর্থন করলেও যখন দেখলেন ক্ষমতায় ধর্মীয় নেতারা বসেছেন তখন আর সমর্থন রাখতে পারলেন না। এটাই কি তাদের পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি? সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের সবক্ষেত্রেই সমর্থন দেওয়া যায়, যদিওবা তারা নিজ দেশে অন্যায় শাসন চালাচ্ছেন। মূলত পশ্চিমা সাম��রাজ্যবাদীদের মুখে বাইবেল ও হাতে রাইফেলের জবাব পাওয়া যায় লেখাটিতে।
শুধু একটি দেশের অধীন হতে নিজেদের হাতে শাসনদণ্ড চলে আসলেই প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব না। একই সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি না হলে অপশাসনের পাকচক্রে পড়তে হবে। একজন মনিব ও শ্রমিকের জ্ঞান সমান নয় বলেই তাদের মাঝে শ্রেনিবিভাজন হয়েছে। মার্কসবাদী শাসনে শ্রেণি বৈষম্য দূর করার কথা থাকলেও সম্পদের অসম বন্টন এবং শাসকশ্রেণির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখাটা তাদের সামাজিক বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা মার্কসবাদী শাসনকে নাক সিঁটকায়। কিন্তু ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ঔপনিবেশিক যুগে ভারতবাসীর চাইতে দ্বিগুণ মাথাপিছু আয় ছিল ইংল্যান্ডের নাগরিকদের। অথচ সোভিয়েত রাশিয়ার মানুষদের আয়ও বেশি ছিল। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়ে ভারতের কারাগারগুলোতেও কয়েদির বাৎসরিক খরচ একজন ভারতবাসীর আয়ের চাইতে বেশি। দাসপ্রথার ভিন্ন সংস্করণ ছিল ভারতে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের নিকট সাহিত্যিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি একজন রাষ্ট্রচিন্তক ছিলেন। ভারতবর্ষের পরাধীনতার যুগে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত রাষ্ট্রটির চরিত্র কেমন হবে এই নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। আনন্দমঠ উপন্যাসটি ব্যাপক আলোচিত তার সাম্প্রদায়িকতার জন্য। বঙ্কিমবাবু এবং পরবর্তীতে তার অনুসারী যদুনাথ সরকার প্রমুখেরা মুসলিম শাসনের চাইতে ইংরেজ শাসনকেই গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের তারা খ্রিস্টান শাসন বলতে নারাজ। মুসলিমদের বহিরাগত আখ্যা দিয়ে ইংরেজদের তোষামোদে তাদের কি বিদ্বেষ প্রকাশ পায় না? পূর্ব বাংলায় মুসলিমদের জন্মহার বৃদ্ধিতে যেভাবে শংকা প্রকাশ করেছেন; আবার এই অঞ্চলের অধিকাংশ জমিদার ছিল হিন্দু তাতে তাঁরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন।
আলোচনায় এসেছে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব। লেখকের ভাষায় যা প্রথম জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তবে এই সময়ের ঘটনাকে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন। তবে সবটাই নিজেদের স্বার্থকে বাঁচিয়ে। সিপাহি বিপ্লবের মূল কারণ হিসেবে শুকরের চর্বির কার্তুজের উল্লেখ থাকলেও আরো অনেক বিষয় প্রভাব রেখেছিল; যেখানে গৌণ কারনটাই বেশি প্রকাশ পেয়েছিল। না হলে যে কার্তুজের বাহানায় বিদ্রোহ করলো সিপাহিরা, সেই কার্তুজ দিয়েই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেন করলো তারা? সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধানেও সচেষ্ট হয়েছেন লেখক। আলোচনায় এসেছে ভারতের স্বাধীনতা ও তার রাজনৈতিক হালচাল, গান্ধীর প্রথমে দেশভাগে অনীহা প্রকাশ এবং মত পরিবর্তন, গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, রুশোসহ ইউরোপীয় দর্শনের সাপেক্ষে আধুনিক পৃথিবী। মানুষ, রাষ্ট্র, ভাষা, সমাজের আনুসঙ্গিক সম্পর্ককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সলিমুল্লাহ খান।
গ্রন্থটির অন্যতম সেরা একটি প্রবন্ধ 'ওসমান সেম্বেনের নতুন পুরাণ'। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পাওয়া উলুফ ভাষার চলচ্চিত্র মানদাবি তথা মানি অর্ডার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে প্রবন্ধটিতে। মুভিটিতে দেখা যায় ইব্রাহিম নামের এক সেনেগালীয় নাগরিক রাজধানী ডাকারে দুই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করে। চাচাতো ভাইয়েরা ধনী এবং তারা ইব্রাহিমের বউদের সাথে খুব সখ্যতা রাখে। ইব্রাহিমের এক আত্মীয় প্যারিস থেকে ইব্রাহিমের নামে মানি অর্ডার পাঠায়। তখনই ইব্রাহিমের কদর বেড়ে যায় এলাকায়। দোকানদারেরা তাকে বাকিতে জিনিসপত্র দেয়, মসজিদের ইমাম চাঁদা চায় এবং ঋণদাতারা আসে পাওনা নিতে। এদিকে ইব্রাহিমের ভোটার কার্ড কিংবা ট্যাক্সের রশিদ থাকলেও পরিচয়পত্র নেই; তাই সে মানি অর্ডার ভাঙাতে পারেনা। তখনই তার আশেপাশের মানুষের চেহারা পালটে যেতে থাকে। আত্মীয় এম্বায়ে মানি অর্ডার ভাঙানোর নাম করে ঠকায় তাকে। চলচ্চিত্রটিতে শ্রেণি বৈষম্য, দারিদ্র, সংস্কৃতি এবং আফ্রিকার আর্থ-সামাজিক চিত্র তুলে ধরে হয়েছে। গ্রন্থটির আরেকটি অসাধারণ লেখা সলিমুল্লাহ খান অনূদিত ডেবিড মেক্কাচ্চনের 'পূর্ব পাকিস্তানের অন্তরে'। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মসজিদ মন্দির সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন। তখন দেখেছিলেন যে খবরের কাগজে পূর্ব পাকিস্তানের হালচাল যা জেনেছিলেন ভারত থেকে, কার্যক্ষেত্রে তা সঠিক নয়; বরং সত্যের অবলোপ। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অতিথিপরায়ণতা স্বভাব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাকে অবাক করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যের বয়ানও পেয়েছিলেন স্থানীয় মানুষজনের কাছে হতে।
সলিমুল্লাহ খানের এই গ্রন্থটিতে বিষয়ের ভিন্নতা পাঠকের পছন্দের জায়গা হবে বলে মনে করি। নানাবিধ বিষয় নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করেছেন লেখক। সলিমুল্লাহ খানের লেখা ও বক্তব্যের সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটা হলো, প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বাইরের বস্তু আলোচনায় নিয়ে আসা এবং অদ্ভুত বানানরীতি। যে কারণে তাঁর লেখা পড়তে অনেক মনোযোগ দিতে হয়। এই গ্রন্থটিতে ১৯৭৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের লেখা প্রবন্ধ ও বক্তব্য সংকলিত করা হয়েছে। কিছু কিছু লেখা অনেক ভালো লেগেছে। সলিমুল্লাহ খানের লেখার সাথে পরিচয় থাকলে এটা পড়তে পারেন। নতুন পাঠকের জন্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। হ্যাপি রিডিং।
অনেক প্রবন্ধে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুদিত বিভিন্ন মনীষির ভাষ্য এত কঠিন শোনায় যে তা বাংলায় পড়া যায় বটে তবে তার মর্মোদ্ধার করা যায় না। শ্রদ্ধেয় সলিমুল্লাহ খান অনেক শব্দের বাংলা নিজে নিজে তৈরি করেছেন যা তিনি ছাড়া অন্যের পক্ষে বোঝা কঠিন। এমনকি বই এর নামে "ব্যবসায়" কে উনি যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা প্রচলিত বাংলার চেয়ে ভিন্ন।এসব কারণে এই বইয়ের অনেক কিছুই শুধু পড়া যায়, ভালো বোঝা যায় না। এই বই পড়ে আরেকটি অনুধাবন হলো বাংলা ভাষায় বিদেশী শব্দের প্রতিশব্দের কোন কমন বা সাধারণ অভিধান কেউ মানেন না। যার কারণে বাংলা ভাষায় অন্য ভাষায় লিখিত বা ইংরেজি থেকে অনুদিত তত্ত্ব বুঝতে পারা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সলিমুল্লাহ খানের বক্তৃতা ও বক্তব্য অনেক আনন্দ দেয় এবং বক্তৃতা বলেই সেসব বুঝতে পারা অনেক সহজ হয়।কিন্তু বইয়ে যখন কোন কিছু উপস্থাপিত হয় তখন পাঠকের দ্রুত কমিউনিকেইট করার জন্য রেফারেন্স এর প্রয়োজন পড়ে। এই বইয়ের অনেক লেখাতেই তা অনুপস্থিত থাকায় পড়া সুখকর হয় না।