টুলু বড় হয়ে যে কাজগুলো করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল, নীরা মামী তার সবগুলো করেছেন। পাহাড়ে গিয়েছেন, সমুদ্রে গিয়েছেন, প্লেন থেকে লাফ দিয়েছেন, কারাতে শিখেছেন, সিনেমায় অ্যাক্টিং করেছেন, আন্দোলন করেছেন, পুলিশের মার খেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন।সোজা কথায় বলা যায় এমন কোনো কাজ নাই যেটা নীরা মামী করেন নাই।আরও যে কয়েকটা বাকী ছিল এখন মনে হয় সেগুলোও করে ফেলেছেন। সেই ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা হয়েছে, ‘আমার ডেঞ্জারাস মামী’।
একবসায় মন ভাল করে দিলো। গত দু-তিনবছরে (২০১৮/১৯ থেকে) মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোরোপন্যাস লেখায় চোখে পড়ার মতো উন্নতি এসেছে, অন্তত তার আগের ১০-১৫ বছরের ওভারঅল গতানুগতিকতার তুলনায়। হ্যাঁ, কাহিনির ছক হয়তো এখনো ঘুরেফিরে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যেই রয়ে গেছে, কিন্তু গল্পকথন আর লেখনিতে যেন সেই পঁচিশ-তিরিশ বছর আগের যৌবনকালের ঝরঝরে আরামদায়ক সাবলীলতা, কী বলতে চান কেন বলতে চান সেটা যেন অনেকটা গুছিয়ে চিন্তাভাবনা করে ঠিক করা, কেবল লেখার জন্যই লেখা না। এই বইতেও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি।
বরং আমি বলব কাহিনির দিক থেকেও এবার বেশ খানিকটা নতুনত্ব আছে, বঙ্গোপসাগরে মেরিন সী লাইফ ও কোরাল রীফ রিসার্চ কেন্দ্র করে জাহাজে করে সমুদ্রের বুকে আর সমুদ্রতলদেশের রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার আগের কোন বইটাতেই বা এসেছিল? এমনকি বাংলা উপন্যাসেই আমি সম্ভবত বঙ্গোপসাগরে মেরিন অ্যাডভেঞ্চার টাইপ কাহিনি আগে পাইনি। আর কোরাল রীফ সংক্রান্ত রিসার্চ টপিকটাও যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক।
আরেকটা দিকে নতুনত্ব আছে তা হলো মুজাই'র অনেক কিশোরকাহিনিতেই মূল চরিত্রকে অ্যাডভেঞ্চারে টেনে নেয়ার জন্য একটা পাগলাটে বাউন্ডুলে মামা বা চাচা টাইপ ইন্টারেস্টিং চরিত্র থাকে, এবারে বর্তমানের উইমেন-এম্পাওয়ারমেন্ট জেন্ডার-ইকুয়ালিটি (তথা জেন্ডার-সোয়াপিং) যুগের সাথে তাল মিলিয়ে "মামা"র বদলে "মামী"। এই মামীটিও আর সকল মামা-চাচার মতো কেবল পাগলাটে বাউন্ডুলেই নয়, আরো কয়েক কাঠি উপরে দুর্ধর্ষ-দুর্দান্ত-দুর্দম্য-দুঃসাহসী ইত্যাদি ইত্যাদি সোজা বাংলায় "ডেঞ্জারাস"। বাংলা ফিকশনে আমরা ডজন ডজন cool 'মামা'/'চাচা'/'কাকু' পেয়ে থাকলে একটা cool 'মামী' তো পেতেই পারি।
মূল চরিত্র টুলু মুজাই-কিশোরোপন্যাসের টিপিক্যাল কেন্দ্রীয় চরিত্র। এতো বছরে এটুকু নিশ্চিত হয়েছি (বিশেষত তাঁর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ভার্সিটিজীবন-সময়কার আত্মরচনা "রঙিন চশমা" পড়ার পরে) এই কেন্দ্রীয় ছেলে চরিত্রগুলির ক্ষেত্রে লেখক অনেকটাই সেল্ফ-প্রোজেকশন করেন... অধিকাংশই হবে মধ্যম সন্তান যার একটা বাড়াবাড়ি রকমের ভাল ছাত্র/ছাত্রী বড়ভাই/আপু থাকবে, ছোট একটা ভাই/বোনও থাকবে যেটা অতিরিক্ত ন্যাকা বা কিছুটা বেকুব টাইপের, যাদের যন্ত্রণায় মাঝেরজনের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বড়জন-ছোটজনের তুলনায় মাঝের জন দুরন্ত ডানপিটে স্বভাবের, পড়াশুনায় মন নেই, খালি ঝামেলায় জড়ায় আর বাপ-মায়ের কাছে অভিযোগ যায়। তার নাম ইবুই হোক আর টুলু, সিচুয়েশন সেম। লেখকের সেল্ফ-প্রোজেকশনে আমার কোনো আপত্তি নেই, বরং রিয়েল লাইফের সাথে প্যারালালিজম ধরতে পারলে মজাই লাগে। দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় চরিত্রটি অবশ্য একেবারেই নন-টিপিক্যাল। মিতি নামের একটি মেয়ে যে কানে শোনে না, তাই কথাও বলতে পারে না। টুলু-মিতির ক্যারেক্টার ইন্টার্যাকশন ও রিলেশনশিপ ডায়নামিক বইয়ের অন্যতম শক্তিশালী ও হৃদয়গ্রাহী দিক।
পুরো বইতে আমি আশঙ্কা করছিলাম গৎবাঁধা মুজাই-অ্যাডভেঞ্চারের মতো এবারও শেষমুহূর্তে হুট করে দেখা যাবে জাহাজে জলদস্যুফস্যু আক্রমণ করে বসেছে, আর টুলু-মিতি তাদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দিয়ে সবাইকে বাঁচিয়ে দেবে... থ্যাঙ্ক গড এমন গতানুগতিক সিনেমাটিক কিছু ঘটেনি। তার বদলে যা ঘটেছে সেটাও যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি তাতে ছিল অভিনবত্ব আর অনানুমেয়তা। সমাপ্তির শেষ পৃষ্ঠাটা আপনা থেকেই মন ভারী করে দিল।
সবমিলিয়ে যতটুকু পেলাম, তিরিশ বছর পর জাফর ইকবালের একটা নতুন কিশোর উপন্যাস থেকে (লেটস ফেস ইট, আমি কিশোরবয়স ছেড়ে এসেছি পুরো বিশ বছর আগে) এসবের পরে আরো কীই আশা করতে পারি?
বিঃদ্রঃ বাড়তি পাওনা ভেতরের অপূর্ব সুন্দর সব ডিটেইলড স্কেচ করা ইলাস্ট্রেশনগুলি। প্রচ্ছদ সে তুলনায় একেবারেই সাদামাটা, জাহাজ-সমুদ্র-তলদেশ-কোরাল রীফ ইত্যাদি সমন্বয়ে আরো অনেক রঙচঙে আকর্ষণীয় করা সম্ভব ছিল।
বিঃবিঃদ্রঃ আফসোস মুজাই'র রিসেন্ট ফিউচারিস্টিক সায়েন্সফিকশনগুলির ক্ষেত্রে আর এই কামব্যাকটা ঘটল না।
১.মুহম্মদ জাফর ইকবাল ঠিক যে কারণে মুহম্মদ জাফর ইকবাল,তার প্রায় সবগুলো উপাদান এই বইতে আছে।সবচেয়ে বড় কথা,অভিযান থাকলেও উপন্যাসে কোনো খলনায়ক নেই। লেখক বেশ কিছুটা অপ্রচলিত পথে হেঁটেছেন এবার।শেষের অক্টোপাস অধ্যায়টা এতোটা নাটকীয় না হলেও পারতো। কিন্তু পুরোটা পড়েই বেশ আনন্দ পেয়েছি।ছোটরা যে আরো বেশি আনন্দ পাবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। (০৫.১১.২১)
২.দ্বিতীয়বার পড়ে আগের চাইতে বেশি ভালো লাগলো। চম্পা (অথবা শম্পা)-কে নিয়ে আলাদা একটা বই হতে পারে। (০৪.০৪.২২)
সেই পুরাতন মোহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার ^_^ এইরকম কিছুর জন্যই হাপিত্যেশ করে বসে থাকতাম ছোটবেলা... স্যারের সিগনেচার স্টাইল পুরোপুরি আছে সেই সাথে একটু ডিফরেন্ট কাহিনি। খুব ভাল্লাগসে, খুব ❤️
‘ডিসেম্বর মাসে লেপমুড়ি দিয়ে কি পড়া যায়?’ এরকম কোনকিছু এবছরের জন্য কেউ লিখলে এই বই সেই বইয়ের তালিকায় থাকা জরুরী। টুলু, মিতি, জহির, টুলুর মামী, টুলুর বোন মিলা, টুলুর বাবা, চম্পা — প্রতিটা চরিত্র মজার! স্যার তাঁর এই বইতেও চেষ্টা করেছেন গল্পে গল্পে বলার যে জীবন যেন আরো জিনিসপত্র ও আরো উপরে ওঠার গর্তে আটকে না যায়। পৃথিবীতে জহিরদের মতো পাজী লোক যেমন আছে, মিতির মতো বন্ধুও আছে। আর হ্যা, ভয়ানক কিছু মামী আছেন। তাদের সন্ধান পেলে জীবন আরো মজার হতে বাধ্য। এই বই পড়লে কারোরই জহির হতে মন চাইবে না, সবাই মামী বা মিলা হতে চাইবে। সমুদ্রাভিযানের পটভূমিতে লেখা উপন্যাসটি ত্রুটিহীন। আমি এখন আরো অপেক্ষা করব ওনার নতুন বইয়ের জন্য। আমি জানি তিনি হতাশ করবেন না।
(কয়েকমাস আগে জেমস ক্যামেরনের ‘এলিয়েনস অফ দ্য ডিপ সি’ নামক তথ্যচিত্রটির কথা বইটি মনে করিয়ে দিল আবার। বইটা পড়ে কেউ আগ্রহী হলে সিনেমাটি দেখতে পারেন।)
যেভাবে আমরা লেখকের কিশোর উপন্যাস পেয়ে এসেছি, তার চেয়ে একটু আলাদা প্লটে এই অ্যডভেঞ্চারাস কিশোর উপন্যাসটি। ভরপুর মজা, হাসি, আনন্দ পেলাম বইটা পড়ে। বইটার অন্যতম সুন্দর ব্যাপার হলো, ভিতরে খুব সুন্দর সুন্দর ছবি দেয়া। মাঝে মাঝে সেই পুরাতন দিনগুলোয় ফিরে যেতে ইচ্ছা করে, যখন স্কুল থেকে ফিরেই জাফর ইকবাল স্যারের কিশোর উপন্যাস সমগ্র নিয়ে বসতাম।
সবকিছু সব বয়সে ভালো লাগেনা। সব কিছুরই নির্দিষ্ট একটা বয়স থাকে। যেটা আগে অনেক ভালো লাগতো সেটাও কয়েকদিন বা কয়েক বছর পর আর ভালো লাগেনা। বয়সের সাথে মানায়না আরকি। তাই বলে সেটা খারাপ এমনটা বলা যাবেনা। এই বইটা ঠিক তেমন। পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো বয়সটা এখন ১০-১২ হলে এই বই পড়ে খুব মজা পেতাম। জানি কিশোর উপন্যাস তবু কিনেছিলাম পড়ার জন্য। দেখতে চেয়েছিলাম নিজের ভেতর কতোটা কৈশরত্ব আছে। দেখলাম, নাহ, বড় হয়ে গেছি।
বইটা একজন অল্পবয়সী পড়লে অনেক আনন্দ পাবে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সাথে জাফর ইকবালের ইনফরমেটিভ প্লট তাদেরকে আরও উৎসাহী করে তুলবে এটাও বলার অপেক্ষা রাখেনা। শিখবেও অনেক কিছু। বইটা ছোট ভাই-বোনদের গিফ্ট করার জন্য পারফেক্ট। টুলু, মিতি, নীরা মামী, জহির, কোরাল দ্বীপ, সমুদ্র সাথে নিয়ে ভালো কাটবে তাদের সময়।
টুলু বড় হয়ে যে কাজ গুলো করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল, নীরা মামী তার সবগুলো করেছেন।পাহাড়ে গিয়েছেন, সমুদ্রে গিয়েছেন, প্লেন থেকে লাফ দিয়েছেন, কারাতে শিখেছেন, সিনেমায় এক্টিং করেছেন, আন্দোলন করেছেন, পুলিশের মার খেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন। সোজা কথায় বলা যায় এমন কোনো কাজ নাই যেটা নীরা মামী করেন নাই। আরও যে কয়েকটা বাকী ছিলো এখন মনে হয় সেগুলোও করে ফেলেছেন। সেই ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা হয়েছে, " আমার ডেঞ্জারাস মামী"। -প্রচ্ছদ থেকে।
বইঃ আমার ডেঞ্জারাস মামী লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল পৃষ্ঠাঃ ১৫৪
ছোট বেলায় জাফর ইকবালের কিশোর এডভেঞ্চার বই গুলো পড়ে যেমন মজা পেতাম, তেমন টাই অনেকটা এই বই৷ বেশ ভালো লিখেছেন 🙂 এই ধরনের লেখা পড়লে বাচ্চাকালের কথা মনে পড়ে।
সাধারন, কিন্তু ভীষণ মিষ্টি একটা গল্প! মন ভালো করে দেওয়ার মত। আমি জানি না, এখনো কেন এই বাচ্চাদের বই পড়ে ছোটবেলার মতই আনন্দ পাই! এই বইটা অনেক দিন পর প্রথম কৈশোরের ওই মিষ্টি সময়টা থেকে ট্রাভেল করিয়ে আনলো। বছরের শুরুটা মিষ্টি ভাবে শুরু হলো।
কী মনে হলো বইমেলা থেকে কিনেই ফেললাম। গুডরিডসে অবশ্য অনেক ভালো ভালো রিভিউ শুনেছিলাম এটা নিয়ে। তারপরও মুজাই এর উপর খুব একটা আশ্বাস রাখতে পারিনি। যাক, আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় আমি খুবই খুশি। একবারে যেন ছোটবেলার বই পড়ার দিনগুলোতে ফিরে গেলাম। অনেক ভালো লেগেছে।
জীবনে শড়ি বুট পরা স্কুবা ড্রাইভিং জানা একটা আত্মীয়ের অভব বোধ করছি! জাফর ইকবালের বই সবসমই এক বসায় শেষ করি। মাঝে কিছু ইতিউতি টাইপ লেখা লিখলেও এই বইট কিন্তু বেশ।
একজন বৈজ্ঞানিক যখন মহা অবৈজ্ঞানিক জিনিসপত্র লিখেন তখন মেজাজ খারাপ লাগে। আজকালকার যুগে স্যাটেলাইট আর সোনার ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে যে কোরাল রীফ খুঁজে বের করা যাচ্ছে না (তা-ও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়!), সেইখানে নৌকার দড়ি ছিঁড়ে ভেসে গিয়ে ২টা পোলাপান সেই রীফে ঠেকে গেল! এমনিতে ২ দিতাম, এইটার জন্য ১ দিলাম।
আমি ৫ তারকা-ই দিলাম টুলু আর আমার হৃদ্যতা আমাদের গণিত বিতৃষ্ণায়,৫ তারকা না দিয়ে যাব কই? অনেক হেসেছি,অনেকদিন পর কোন বিদেশি বা রাজাকার ভিলেন,কিডন্যাপিং এর ক্লাইমেক্স ছাড়া জাফর ইকবাল এর বই পড়লাম। ভাল লেগেছে। শাড়ি আর গামছার যে কত ধরনের ব্যবহার,তা টুলুর মত ভেবে দেখিনাই।
স্কুলে জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়ে যে অনুভূতি টা হতো অনেক বছর পর মনে হচ্ছে সেই অনুভূতি টা আবার ফিরে এলো। একদম কোনোপ্রকার এক্সপেকটেশন ছাড়াই বই টা পড়া শুরু করেছিলাম এবং এক ডুবেই ছোট বেলায় চলে গেলাম।এই বছরের শুরু টা অনেক স্ট্রেসফুল ছিলো আমার জন্যে, বই টা পড়ে যেন হালকা রিফ্রেশ হয়ে গেলাম।
ভিন্টেজ জাফর ইকবাল স্টোরি। কিছু কিছু জায়গায় মারাত্মক মজা পেয়েছি। কিছু সহজ প্রতিশোধ। যে কয়টি বিষয় হাইলাইট করা হয়েছে গল্পের কোনো না কোনো সময় তা কাজে এসেছে। তবে, যে কাজটির জন্য টুলুকে মামী সঙ্গে করে নিয়ে গেল সেই কাজটির কথা লেখক বেমালুম ভুলে গিয়ে আর কিছুই লেখেনি। ফলে ধারাবাহিকতা আর যৌক্তিকতা কিঞ্চিৎ বিঘ্ন ঘটেছে। তাই এক তারা কমবে।
অসুস্থ শরীরে সোফায় শুয়ে বইটা শেষ করলাম। জাফর ইকবালের বই দেখেই পারলাম। এত সহজ করে লেখা একজন মানুষ শৈশব কৈশোর পেরিয়ে আজো যে অনবদ্য বিনোদন দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য তার প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। লেখকের লেখার ধার কমে, বাড়ে; মুহাম্মদ জাফর ইকবাল মোটামুটি কনস্ট্যান্ট।
যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আমাদের ছেলেবেলার স্বর্ণালী সময়টাকে আরো উজ্জ্বল করে তোলার পেছনে কোন কোন সাহিত্যিকদের অবদান রয়েছে, তবে সবাই একবাক্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নামটিই সবার আগে নেবে। আর সত্যিই, তার লেখনীর জাদুতে একবার মোহগ্রস্থ হলে সেই মোহের জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসা দুঃসাধ্যপ্রায়। আর সবচেয়ে বড় কথা, তার লেখা কিশোর উপন্যাসগুলো যে শুধু কিশোর বয়সের পাঠকদের গন্ডির মাঝেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। ধরুন আপনি ৯টা-৫টা অফিস করা একজন ক্লান্ত মানুষ, কিংবা ইউনিভার্সিটির ক্লাসের প্যারায় বিপর্যস্ত কেউ, কিংবা সংসারের চক্রবুহ্যে আবদ্ধ এক গৃহিণী,আবার হয়ত কর্মজীবনকে বিদায় জানিয়ে জীবন সায়াহ্নে পদার্পন করা কেউ একজন,,যার সঙ্গী বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে ভোরের খবরের কাগজ আর এক কাপ চা! মোটকথা, আট থেকে আশি সবার একঘেয়েমিপূর্ণ জীবনে একচিলতে অন্যরকম ভাললাগার রেশ এনে দিতে বাধ্য উনার লেখা।
আমি যখন মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা পড়া শুরু করি, তখন খুব সম্ভবত আমি প্রাইমারি লেভেল শেষ করে মাধ্যমিকের গন্ডিতে পা রেখেছি, এবং বলাই বাহুল্য, এই সময়টাই তার উপন্যাসগুলোর মূলভাবকে ধারণ করার ও গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করার বয়স। খুবই চিত্তাকর্ষক কাহিনীবিন্যাস ও প্লটের আঙ্গিকে তিনি আমাদেরকে প্রতিবারই কিছু জীবনঘনিষ্ঠ এবং অনস্বীকার্য কিছু মেসেজ দিয়েছেন,,যেগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে জীবনের সমস্ত নেতিবাচকতাকে না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেয়ে সকলের মধ্য থেকে ইতিবাচকতাকে বের করে আনা। এবং "আমার ডেঞ্জারাস মামী" উপন্যাসটির আনাচে কানাচেও ঠিক এরকমই চমৎকার মেসেজের প্রতিফলন পাবেন পাঠকেরা।
প্রথমেই উপন্যাসটির নামকরণ নিয়ে কিছু বলতে চাই। ডেঞ্জারাস শব্দটি দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে এমন কোন এক চরিত্র নিয়ে এই উপন্যাসের প্লট আবর্তিত, যার উৎপাতে সকলের জান জীবন অতিষ্ঠ প্রায়। আরো যদি সে ডেঞ্জারাস মামা না হয়ে মামী হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু আমার প্রাথমিক সকল ধারণাকে কাঁচকলা দেখিয়ে উপন্যাসে আবির্ভাব ঘটে নীরা মামী নামক এক মিষ্টি চরিত্রের, গল্পচ্ছলে যার সম্পর্কে ধীরে ধীরে জানতে পেরে আমার মত প্রত্যেকেই এই চরিত্রটির গুণমুগ্ধ হয়ে যেতে বাধ্য! কিন্তু কেন? সেটি নাহয় পাঠক পড়তে যেয়েই বুঝবেন!
নীরা মামী হচ্ছেন এমন একজন মানুষ, যিনি কখনোই কোন বাধা বিপত্তিতে হার মেনে বসে থাকেন না! তার চরিত্র ও ব্যক্তিত্বে রয়েছে শিশুসুলভতা এবং আত্মসম্মানবোধের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ, যা তাকে আর আট দশটা মানুষের কাছে অনন্য করে রাখতে বাধ্য। কিন্তু এমন একটি বড় মানুষের চরিত্রকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি আবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও এই উপন্যাসটিকে কিশোর উপন্যাসের তকমা কেন দেয়া হলো? কেননা এতে আছে আরো বেশকিছু কিশোর চরিত্রের আনাগোনা, যারা এই উপন্যাসের কাহিনীকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে। আর টুলু এবং মিতি হচ্ছে ঠিক তেমনি দুটো চরিত্র।
উপন্যাসে টুলুর পরিচয় নীরা মামীর ভাগ্নে হিসেবে হলেও কাহিনীবিন্যাসে তারও মূখ্য ও স্বতন্ত্র ভূমিকা আছে। প্রথমত, উপন্যাসটি আগাগোড়া উত্তম পুরুষে বর্ণিত, এবং গল্পকথকও আমাদের টুলুই। পড়াশোনায় অনাগ্রহী টুলুর ধ্যানজ্ঞান দুষ্টুমিতে, এবং সেগুলো গতানুগতিকতার চেয়ে বরাবরই ভিন্ন এবং মজারও বটে। পারিবারিক জীবন ও স্কুলজীবনে ঘটিয়ে আসা বেশকিছু চাঞ্চল্যকর অথচ হাস্যরসাত্মক ঘটনার পর টুলু বেড়িয়ে পড়ে সমুদ্রাভিযানে, এবং সেখানে তার সঙ্গী হন আমাদের নীরামামীই। কিংবা এটাই বলা শ্রেয়, ভাগ্যচক্রে নীরামামীর সঙ্গী হয় টুলুই।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাসে যেমন কিছু মিষ্টি ও প্রাণবন্ত চরিত্র থাকে, তেমনি থাকে কিছু হাড়জ্বালানো বিরক্তিকর চরিত্রও। এই উপন্যাসের এমনি এক চরিত্র জহির, যার উপস্থিতি উপন্যাসে টানটান উত্তেজনার পাশাপাশি হাস্যরসেরও উদ্রেক করে।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্প উপন্যাস মানেই যেমন প্রাণবন্ততা, তেমনি রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারের হাতছানিও। এই উপন্যাসেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সমুদ্রাভিমুখে অভিযান আর সফরকে কেন্দ্র করেই ঘটতে থাকে বেশকিছু রোমাঞ্চকর এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা,,যা কাহিনীতে ভিন্ন ভিন্ন মোড় ও আবহ নিয়ে আসে। পুরোটা সময় জুড়ে আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি টুলুর স্বভাব সুলভ দুরন্তপনায়, আবার নীরা মামীর অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বের মাঝে খুঁজে পেয়েছি মুগ্ধতার একান্ত মায়াময় অনুভব। এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি উপন্যাসটি, এবং আমার সময়টা নিঃসন্দেহেই বৃথা যায়নি।
উপন্যাসটি আগাগোড়া কিশোর উপন্যাস হলেও এর অভ্যন্তরে জীবনঘনিষ্ঠতার ঠাঁইও কম নয় বৈকি। এছাড়াও উপন্যাসের বিষয়বস্তুতে উঠে এসেছে রোমাঞ্চকর সামুদ্রিক জীবন ও ইকোসিস্টেমের একাংশ, যা পাঠকের মনে আগ্রহ জাগানিয়া আবহ তৈরি করতে বাধ্য।
সবমিলিয়ে এটুকুই বলতে পারি, উপন্যাসটি সব বয়সী পাঠকের জন্যেই সুখপাঠ্য হবে নিশ্চিত।
পাঠ প্রতিক্রিয়া আমার ডেঞ্জারাস মামী মুহম্মদ জাফর ইকবাল ধরন: কিশোর উপন্যাস প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০২১ প্রকাশনী: জ্ঞানকোষ প্রকাশনী মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৫২
মামার সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরেও মামীর সাথে এত ভালো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি খুবই ভালো লেগেছে। এই যুগে ডিভোর্স এর বিষয়টি এভাবে বাচ্চাদের সামনে তুলে আনার দরকার ছিল। দুজন মানুষের মাঝে মিল না হলে তাদের ছাড়াছাড়ি হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে পরিবারের অন্য সব ভালো লাগার মানুষের সাথেও সম্পর্ক শেষ করে দিতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
শাড়ির সাথে বুট জুতা পরার বর্ণনাও খুব ভালো লেগেছে। পোশাকের আধুনিকায়নের সাথে মানসিকতার আধুনিকতার সম্পর্ক নেই। শাড়ি পরেও চাইলে সমুদ্র জয় করা যায়।
গল্পের অন্যতম মূল চরিত্র একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোরী, যে অন্য মূল চরিত্রের সাথে পাল্লা দিয়ে সব কাজে অংশগ্রহণ করছে।
গল্পের দুই মূল চরিত্র টুলু আর মিতির মধ্যে সুন্দর একটা বন্ধুত্ব দেখানো হয়েছে। মিতির হাত ছুঁতে চাওয়ার স্বাভাবিক ইচ্ছেটাও খুব সুন্দরভাবে এসেছে। এখন মনে হয় যেন অনেক বেশি ছোট বয়স থেকেই সবাই সব সম্পর্ককে বেশিই বাঁকা চোখে দেখে।
এক স্টার কম দিলাম কারণ-
টুলুর বড় বোন খুব ভালো সেই বর্ণনার এক অংশে বলা হয়েছে - 'তার চেহারা পরীর মতন ���িন্তু সে ভুলেও সেজেগুজে নায়িকার মতো হয়ে থাকে না।' একটা কম বয়সী মেয়ে সাজসজ্জা নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে থাকলে সমস্যা, সে অন্যদিকে মন দিতে পারবে না। কিন্তু তারমানে এই না যে, সাজগোজ করা মানেই খারাপ। সাজগোজ করলে বিজ্ঞানী হওয়া যাবে না কিংবা বিজ্ঞানীরা সাজগোজ করেন না৷ বিষয়টি কিন্তু এমন না! এই বাক্যটি না থাকলেও মিলা যে ভালো মেয়ে তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হত না!
জহিরের পরিচয়ের শুরুতেই লেখা -
'হাত দিয়ে তার চুল ঠিক করল, তারপর স্মার্টফোন দিয়ে নিজের একটা সেলফি তুলে ফেলল। কী আজব!' 'ছেলেটা কি বোকা নাকি পাজী? নাকি দুইটাই?' সেলফি তোলা কেন আজিব বা বোকামির লক্ষণ আমার বোধগম্য না! কেউ তার আশেপাশের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সারাক্ষণ ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সমস্যা কিন্তু স্মৃতি স্বরূপ দু-চারটা ছবি তোলা তো খারাপ কিছু না!
এই দুই ক্ষেত্রে মনে হয়েছে স্যার উনার মাস্টার রূপ ভুলতে পারেন নাই! বাকি সব মিলিয়ে বইটা বেশ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতি বইমেলায় মনে হয়, একজন তো গেল, এখন জাফর ইকবাল স্যারও চলে গেলে কি হবে! এবারের মেলাতেই টুনটুনি সিরিজ ছাড়া উনার মাত্র একটা বই দেখে মন খারাপ হয়েছে।
আরেকটা বিষয় - স্যারের আত্মজীবনী লেখা উচিত! টুকরো টুকরো ঘটনা না! উনার পড়াশোনা, বিদেশ গবেষণা, দেশে শিক্ষকতা, লেখক হিসেবে এত বছরের যাত্রা, দুই ছেলে মেয়েকে এত সুন্দর করে বড় করা, সব কিছু নিয়ে! যত বড় হচ্ছি, তত এসব আরও বেশি করে জানতে মনে চায়!
গতানুগতিক ধরাবাঁধা একটা স্টাইলে জাফর ইকবাল লেখেন তাই রেগুলার পড়লেও তার বইগুলার রিভিউ খুব একটা দিই না। যেগুলো সেই গতানুগতিক ধারা থেকে আলাদা লাগে সেগুলোরই শুধু রিভিউ দিই। কারণ পাঠক হয়তো জানবে না,ভাববে তার অন্য লেখাগুলোর মতোই সেই কারণেই আলাদা গুলোর রিভিউ দেবার প্রয়োজন পড়ে।
স্টাইলের দিক থেকে দেখলে বইটা আলাদা না। কিশোর একটা ছেলে তার কয়েকজন বন্ধু,তার দস্যু দুয়েকজন ভাই-বোন আর একজন মামী(যদিও বেশীরভাগ বইয়ে মামা থাকে) এই ব্যাপারগুলো বলতে গেলে সেম। তবে কাহিনী আলাদা। কাহিনী অনেক সুন্দর।
ইদানিংকালে জাফর ইকবালের বইয়ের নামগুলো দেখলে মনে হয় তিনি নামসংকটে ভুগছেন। এত ভালো ভালো বই অথচ নামগুলো রীতিমত হাস্যকর লাগে আমার কাছে। 'আমার ডেঞ্জারাস মামী' বইটাও নাম দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরটা এত সুন্দর। টুলুর মামী মোটেই ডেঞ্জারাস নন তিনি এমন একজন মহিলা যিনি শাড়ির সাথে বুট জুতো পরেন এবং জীবনে যা কিছু করা সম্ভব সব করেছেন, অন্তত টুলুর তাই ধারনা। এইবার তার মামী সমুদ্রের নিচের প্রাণীদের নিয়ে কিছু গবেষণার জন্য জাহাজে যাবার আগে টুলুকে সঙ্গে নেন। আর সেখানেই শুরু হয় আসল কাহিনী।
টুলুর সেখানে মাত্র একজন বন্ধু। সে মিতি। মিতি কথা বলতে পারে না, শুনতেও পারে না। তবে খুব বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে সে। মিতির সাথে অনেক আনন্দে জাহাজে সময় কাটতে থাকে তার। এই বইয়ে সমুদ্রের নিচের জীবন নিয়ে অনেক তথ্য আছে। স্কুবা ডাইভিং এবং স্নর্কেল করার চমৎকার অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। পানির নিচের কোরাল রীফ আবিষ্কারের গল্প আছে। আছে টুলুদের দুই বন্ধুর সমুদ্রে হারিয়ে যাবার গল্প,আছে অক্টোপাসের কবলে পড়ার থ্রিল। সবমিলিয়ে দারুন একটা বই। জাফর ইকবালের ইদানিং কালের অল্প কিছু আলাদা লেখার একটা। যদিও স্টাইলের কোন হেরফের হয়নি। তারপরেও আশা করি যেসব পাঠক ভ্রমন বা সমুদ্রের গল্প ভালোবাসেন তাদের পড়তে ভালো লাগবে।
নীরা মামী সম্ভবত একমাত্র মহিলা যে শাড়ির সাথে বুট জুতা পরেন।
''টুলু বড় হয়ে যে কাজগুলো করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল, নীরা মামী তার সবগুলোই করেছেন। পাহাড়ে গিয়েছেন, সমুদ্রে গিয়েছেন, প্লেন থেকে লাফ দিয়েছেন, কারাতে শিখেছেন, সিনেমায় অ্যাক্টিং করেছেন, আন্দোলন করেছেন, পুলিশের মার খেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন।''
ক্ল্যাস সেভেনের টুলু তার মামীর সাথে দশ বারো দিনের জন্য জাহাজে করে সমুদ্রে যায়। সেখানে তার সাথে আরো দুইজনের পরিচয় হয়- একজন তারই সমবয়সী মিতি আরেক জন হলো মোটামুটি বখাটে ধরনের ছেলে জহির।
বইটা মূলত সমুদ্র অভিযান নিয়েই। রহস্যময় সমুদ্রতল, কোরাল রিফ, সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণী, ভয়ানক অক্টোপাসই গল্পের আলোচ্য বিষয়। এছাড়া স্কুবা ডাইভিং, স্নোর্কেলিংসহ আরো বেশ কিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করে টুলু ও মিতি।
প্রিয় লেখক জাফর ইকবাল স্যারের অন্যান্য কিশোর উপন্যাসের মতোই এটি একটি। ১২-১৭ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য বইটা বেশ ভালো ও মজার।
অনেকদিন পর খুব ভালো লাগার মতো একটু ভিন্ন ধাঁচের কিশোর উপন্যাস। গল্পের শুরু টা main protagonist টুলুর badass মামী কে নিয়ে এবং তারপর research এর কাজে সমুদ্র যাত্রার adventure দিয়ে শেষ।
5 star দিতাম কিন্তু কিছু জিনিস ভালো লাগলো না, যেমন শেষের দিকে অক্টোপাস টা কে ভয়ঙ্কর হিংস্র একটা প্রাণী দেখিয়ে harm করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া গেলো না। গল্পের মধ্যে দিয়ে অহেতুক কোনো প্রাণী ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার মারাত্মক effects থাকে। সেটা আমাদের দেশের মানুষের পশু-পাখির উপর অমানুষিক আচরণ দেখলেই বোঝা যায়। আরেকটা আপত্তিকর description ছিল জহিরের গেটাপ এবং ফোন এর ব্যবহার। এখানে লেখকের কিছু bias খুব ভালোভাবে reflected। তবে উনার কিছু গৎবাঁধা গল্পের মতো কোনো রাজাকার, বিদেশী ভিলেইন না থাকা এবং চরিত্র দের মধ্যে inclusivity ব্যাপার গুলো ভালো লেগেছে। মজার, মন ভালো করে দেওয়ার মতো একটা বই
This entire review has been hidden because of spoilers.
পানি ব্যাপারটা আমি খুব ভয় পাই। পানি নিয়ে যেকোনো বই আমি মোটামুটি আতঙ্ক নিয়ে পড়ি। নিতান্ত বই না পড়ে পারবো না বলেই ভয় নিয়েও বই পড়ে ফেলি। পড়ার সময় খুব ভয় লাগে কিন্তু ভালো ও লাগে। এই বইটা পড়ার সময়ও একই অভিজ্ঞতা।
সমুদ্রযাত্রা নিয়ে এমনভাবে লেখা যে আমার খুব ইচ্ছা করছিলো টুলুর সাথে আমিও লাফ দিয়ে জাহাজে উঠে পড়ি। এমন খুব কম হয় যেখানে পানির নিচে ঘাপটি মেরে থাকা একটা কিছু আমাকে খপ করে ধরে ফেলবে এই ভয়ের বাইরে গিয়ে আমারও বইয়ের সবার মতো পানির প্রতি ভালোবাসা কাজ করে। বইটা পড়ার সময় পানির প্রতি বিশেষ ভালোবাসা কাজ করছিলো।
নীরা মামীর জন্য গভীর ভালোবাসা। আর বাচ্চাদের জন্যও। পানির প্রতি আগ্রহ আবার গায়েব হয়ে গিয়েছে আমার, কিন্তু বইটা আবার কোনো একটা মন খারাপের দিনে পড়ে ফেলবো।
একটু ভিন্ন প্লটে চিরচেনা মুহম্মদ জাফর ইকবালীয় একটি উপন্যাস। তবে উপভোগ করেছি। ছোটরা আরও উপভোগ করবে আশা করি। শেষ এডভেঞ্চারটি একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ভালই, পড়তে খারাপ লাগে নাই তেমন।