নিজের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে এসে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান রেহনুমা আক্তার রানু। কেসটি প্রথমে বাড্ডা থানার অধীনে থাকলেও নানান মোড় ঘুরে চলে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। তদন্তভার ন্যস্ত হয় ডিবির সহকারী কমিশনার রায়হান সিদ্দিকীর ওপরে। তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক তথ্যের উন্মোচন হতে থাকে রায়হানের সামনে। কেসটা কি নেহাৎ-ই ঝোঁকের বশে গণপিটুনির একটা ঘটনার? নাকি এই ঘটনার পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো ঘটনা? পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে কি কেউ? তদন্ত করতে করতে রায়হান সিদ্দিকী মুখোমুখি হয় এক চরম সত্যের। বেরিয়ে আসে এক অপরাধের আড়ালে লুকোনো আরেক জঘন্য অপরাধ। সে এমনই এক অপরাধ, যার কোনো ক্ষমা নেই। ক্ষমা থাকা উচিৎ-ও নয়! কী সেই অপরাধ? উত্তর আছে "গল্প শুরুর আগে"-এর গল্পে...
This book is enjoyable but falls into the “not great, not terrible” category. The twists are minimal and fairly predictable, though the writing itself is good. However, compared to the author’s other works, this one didn’t meet the expectations I had. It’s a decent read but not as captivating as I’d hoped.
ভালোই একটা উপভোগ্য বই। কাল্পনিক সব ঘটনা হলেও ঘটনাগুলো বাস্তব জীবনের সাথে রিলেটেবল। তাই গল্পটা আমাকে টেনেছে। এক বসায় শেষ করেছি। যদিও কিছু জায়গায় অসংগতি লেগেছে। তবুও ভালোই ছিল সব মিলিয়ে।
ঢাকার বাড্ডায় সানফ্লাওয়ার গার্লস স্কুলে নিজের মেয়েকে ভর্তি করাতে গিয়ে যেন নরক ভেঙে পড়লো রেহনুমা আক্তার রানু নামের এক মহিলার ওপর। ছেলেধরা সন্দেহে একদল মানুষ নির্মম ভাবে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করলো তাকে। এই ঘটনায় উস্কানিদাতা হিসেবে উঠে এলো সবুজ নামের এক সবজি ব্যবসায়ীর নাম। ঝামেলাটা আরো গাঢ় হলো যখন এই সবুজেরই ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গেলো ধলেশ্বরী নদীর পাড় থেকে।
অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার অভ ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ রায়হান সিদ্দিকী বাড্ডা থাকার চৌকস সাব ইন্সপেক্টর বাপ্পাদিত্য ভট্টাচার্যের অনুরোধে গণপিটুনিতে রেহনুমা আক্তার রানু হত্যার কেসটা হাতে নিলো। পাশাপাশি এসি, ডিবি রায়হানকে তদন্ত করতে হবে সবুজের হত্যার কেসটাও। একজন সাধারণ নির্বিবাদী নারীকে ছেলেধরা ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার ব্যাপারটা কি নিছকই কোন ভুল বোঝাবুঝি? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কারো গভীর কোন ষড়যন্ত্র?
এসি, ডিবি রায়হান সিদ্দিকীর সন্দেহের আওতার বাইরে কেউ-ই নেই। সানফ্লাওয়ার গার্লস স্কুল থেকে শুরু করে তার ও তার টিমের তদন্ত বিস্তৃত হলো অনেকদূর পর্যন্ত। সন্দেহের তালিকায় থাকলো ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে এক কুখ্যাত মাদক কারবারি পর্যন্ত। একটা একটা করে ছেঁড়া সুতা জোড়া দিতে শুরু করলেন এসি, ডিবি রায়হান। আর তাতেই যেন বেরিয়ে আসতে লাগলো অনেক কিছু।
কিছু অপরাধ থাকে, যেগুলোর কোন ক্ষমা হয় না। চাইলেও ক্ষমা করা যায় না৷ আর এমনই এক ভয়ঙ্কর অপরাধের গল্পই 'গল্প শুরুর আগে'।
আপনাদের মনে আছে তাসলিমা বেগম রেনু'র কথা? ২০১৯ সালের ২০ জুলাই মধ্য বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে এই নিরীহ মহিলাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। ২০২৪ সালে আদালত এই মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। লেখক তানভীর আহমেদ সৃজন তাঁর 'গল্প শুরুর আগে' বইয়ের থিমটা নিয়েছেন তাসলিমা বেগম রেনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা থেকে। নিজের কল্পনায় তিনি এখানে একজন নিরপরাধ মানুষের গণপিটুনিতে নিহত হওয়া ও তৎপরবর্তী তদন্ত প্রক্রিয়া তুলে এনেছেন পাঠকের সামনে।
তানভীর আহমেদ সৃজনের গল্প সিরিজের দ্বিতীয় বই 'একটা গল্প শুনবেন?' ও তৃতীয় বই 'যে গল্পের শেষ নেই' আমি আগে পড়েছি। তাঁর গল্প সিরিজের প্রথম বই 'গল্প শুরুর আগে' পরে পড়ার কারণ লেখক নিজেই এটা প্রকাশ করেছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বই প্রকাশের পর। সবগুলো বইয়ের কাহিনিই ট্রু ক্রাইম থেকে ইন্সপায়ার্ড। 'গল্প শুরুর আগে' একটা চমৎকার পুলিশ প্রোসিডিউরাল থ্রিলার উপন্যাস। লেখক এখানে পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পুলিশি তদন্ত প্রক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করেছেন। পুরো উপন্যাস জুড়ে লেখকের থ্রিল ও সাসপেন্স ধরে রাখার চেষ্টাটা অব্যাহত ছিলো। খুব ডিটেইলে গল্পটা বলার চেষ্টা ছিলো। তানভীর আহমেদ সৃজনের লেখার ধরণ আমার ভালোই লেগেছে। তবে কিছু জায়গায় অতি বর্ণনার দেখা পেয়েছি বলে মনে হয়েছে। তবে এই উপন্যাসের শেষটা বেশ ভালো লেগেছে আমার।
'গল্প শুরুর আগে' বইয়ে তানভীর আহমেদ সৃজন যে মেসেজগুলো পাঠককে দিতে চেয়েছেন সেগুলো বেশ সময়োপযোগী ও ভ্যালিড বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। এখনকার এই সময়ে যখন মব জাস্টিস নামের ভাইরাস চারিদিকে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বইটাকে রিলেটেবল লেগেছে৷ শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বা নির্দিষ্ট একটা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ম্যাস হিস্টিরিয়াকে অস্ত্র বানিয়ে মব ক্রিয়েট করে যে অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। এই উপন্যাসে আরো একটা ভয়ঙ্কর অপরাধের কথা তুলে ধরেছেন লেখক। সেটা নিয়ে কিছু লিখছি না। স্পয়লার হয়ে যেতে পারে।
লেখকের গল্প সিরিজের চতুর্থ বই 'গল্পটা অসুর বধের' পড়ার আগ্রহ আছে। কোন এক সময় পড়ার সুযোগ হবে হয়তো। 'গল্প শুরুর আগে'-এর পেজের কোয়ালিটি ভালো লাগেনি। পাতলা পেজের অপরপাশের হরফগুলোর ছাপও চোখে লাগছিলো৷ এদিকে ডাস্ট কভারের কোয়ালিটি আবার বেশ ভালো। অদ্ভুত ব্যাপারস্যাপার আর কি। যাই হোক, পরাগ ওয়াহিদের করা প্রচ্ছদটা ভালো লেগেছে। চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'গল্প শুরুর আগে'।
পড়া শুরু করার পর যখন দেখি যে "গল্প শুরুর আগে" বইটা পুলিশ প্রসিডিউর জনরার, তখন আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে যায়। যদিও এটা লেখকের তৃতীয় বই, তারপরেও বলবো কাহিনী শুরুর দিকে লেখকের হালকা আনাড়ি ভাব চোখে লেগেছে। গল্প যত এগিয়েছে, লেখকের এই আনাড়ি ভাব উবে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী লেখনশৈলী ফুটে উঠেছে। কাহিনী জমাতে লেখক বেশ দক্ষ। কোথাও গল্প টেনে দীর্ঘ করার চেষ্টা করেননি। চরিত্র কিংবা স্থানের বর্ণনা যেখানে যেটুকু প্রয়োজন সেখানে ততটুকুই দিয়েছেন। এই বিষয়টা বেশী ভালো লেগেছে। পুলিশ প্রসিডিউর জনরার বইগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্টেপ বাই স্টেপ তদন্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া। এই বইয়ে তদন্ত প্রক্রিয়ার ধাপগুলো প্রায় একদম সঠিক ছিলো। মূল চরিত্র একজন চৌকস তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে রায়হান সিদ্দিকির উপস্থাপন ভালো লেগেছে। তার পাশাপাশি এসআই বাপ্পাদিত্য, এসআই বাদল, এএসআই রাহাত, কনস্টেবল সাজ্জাদ সহ আরো অনেককে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। যে কোনো কেস যে সব সদস্যের সম্মিলিত চেষ্টায় আলোর মুখ দেখে, সেটাই বোঝানো হয়েছে এই গল্পে।(বেশীরভাগ সময় তো লেখকরা এটা ভুলেই যান, তারা দেখান নায়ক একাই একশো.!)
যা ভালো লাগেনি তা হলো শুরুর দিকে একই দৃশ্য "story showing" করার পরেও কারো মাধ্যমে "Story telling" করা হয়েছে বারবার, যেটা বিরক্তির উদ্রেক করছিলো। কাহিনীর চরিত্রগুলোর নাম বলার সময় বারবার পুরো নাম বলাটা অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। এসি, ডিবি রায়হান সিদ্দিকি, সাব ইন্সপেক্টর বাপ্পাদিত্য ভট্টাচার্য বারংবার ডাকা হয়েছে।
কাহিনী বেশী প্যাঁচানো মনে হয়নি, সহজ এবং সাবলীল ভাষায় লেখা সুন্দর একটা গল্প। পুরানো ঝানু পাঠক কিংবা নব্য থ্রিলার পড়তে শুরু করা পাঠক, যে কারো ভালো লাগবে বইটা।
খুব সাধারণ লেগেছে হতে পারে লেখকের অভিজ্ঞতা কম এরজন্য। ২টা ঘটনা ঢাকাতে ঘটেছিলো সে ২টা কে নিয়ে ১টা বই দাঁড়া করানো হইছে। পড়তে গিয়ে বিরক্ত লেগেছে একটু পরে পরে এসি, ডিবি, রায়হান সিদ্দিকী এই ভাবে রায়হান সিদ্দিকী এর নাম বলাতে, একবার বলা হইছে উনি কি এর পরে সব জায়গাতে এই ভাবে নাম বলার অর্থ কি বুঝুনি নাই বরং আমার পড়ার সময় বিরক্ত লেগেছে।
ইটি মূলত একটি ডিটেকটিভ উপন্যাস এবং মার্ডার মিস্ট্রি। মার্ডার মিস্ট্রি বর্তমানে খুব একটা অনন্য কিছু নয়। "বিকৃত অবস্থায়,/লাওয়ারিশ অবস্থায়/দুর্গম কোনো জায়গায় পাওয়া গেছে লাশ। ক্ষুরধার গোয়েন্দা সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টির মাধ্যমে বের করে আনল আসল সত্য।" এরকম মার্ডার মিস্ট্রি অন্তত ডজনখানেক মিলবে আজকালকার বাজারে। "গল্প শুরুর আগে" সেরকম কিছু নয়। প্রকাশ্য দিবালকে, একটি স্কুলের কম্পাউন্ডে নির্মম গণপিটুনির শিকার হয়ে একজন নারীকে হত্যা করা হয় এখানে। ২০১৯ এ তসলিমা বেগম রেনু নামের এক মা-কে ছেলেধরা সন্দেহে এরকম ঘৃণ্যভাবেই হত্যা করা হয়। সেই বাস্তব ঘটনাটুকু লেখককে নাড়া দিয়েছে। তাই তিনি সেই ঘটনাটিকে তুলে এনেছেন বইয়ে। স্থান-কাল-পাত্রে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন এসেছে। খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন এক দুনিয়ার ঠিকানা পাবে পাঠক এই বইয়ে। বইটাক পুলিশ প্রসিডিউরাল, মার্ডার মিস্ট্রি, কন্সপিরেসি-সহ বেশ কয়টা জনরায় ফেলা যায়। খুবই উপভোগ্য একটি যাত্রা ছিল "গল্প শুরুর আগে"। আশা করি এরকম থ্রিলার আরো পাব লেখকের কাছ থেকে।
"যে গল্পের শেষ নেই" পড়ে আফসোস লাগছিল ১ম বইটা যত ভালো লেগেছিল সেই বইটা লাগেনি। কিন্তু 'গল্প শুরুর আগে " পড়ে সেই আফসোস ঘুচল। যদি প্রথমেই এই বইটা পড়তাম তাহলে বেশি ভালো হতো! যারা এই সিরিজ একেবারে নতুন শুরু করবে তারা সেই সৌভাগ্য অর্জন করবে।
লেখকের কাছে ছোট্ট অনুরোধ। তদন্ত চলাকালীন সময়ে প্রেম বা সংসারের কথা না দেয়ার চেষ্টা করবেন কারণ এতে ফ্লো থাকে না রহস্যের উল্টো মাঝখানের অপ্রয়োজনীয় তথ্যের কারণে পুরো অনুচ্ছেদ আবার পড়া লাগে!
বেনজিন প্রকাশনের এবারের বইমেলার দুইটা বই নিয়ে আমি বেশ হাইপড ছিলাম। তার মধ্যে একটা হল সৃজন ভাইয়ের "গল্প শুরুর আগে" বইটি। সৃজন ভাইয়ের লেখার সাথে আমার পরিচয় 'রু' বইটির মাধ্যমে। উনার লেখনীর যে সাবলীলতা, সেটা কেন জানিনা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। সো বুঝতেই পারছেন কেন অপেক্ষায় ছিলাম।
এক কথায় বলতে গেলে এই বইটি এক বসায় শেষ করার মত বই। বইয়ের ঘটনাগুলো এতটাই ফ্লুয়েন্ট যে পাতার সাথে আপনাকে আটকে রাখবে। এবং বইটা যখন শেষ হবে, আপনার মাথায় এটা আসবে পরের পার্ট কবে পাব?? বইটা পড়লে মিলিয়ে নেবেন আমার কথাটা।
এই রিভিউর ৩ টা পার্ট থাকবে - প্রোডাকশন, মূল গল্পের রিভিউ এবং ব্যাক্তিগত অনুভূতি। সো শুরু করি।
🔰 প্রোডাকশনঃ ব্যাক্তিগতভাবে বেনজিনের প্রোডাকশন আমার কাছে এই সময়ের টপ নচ প্রোডাকশন মনে হয়। বইয়ের দামের সাথে আমি যদি হিসাব মেলাতে যাই, তাহলে দেখা যায় তাদের প্রোডাকশনই বেস্ট।
বরাবরের মতই বইটি এসেছে বেনজিনের সিগনেচার প্রোডাকশনে। সাথে চমৎকার বাঁধাই, ঝকঝকে ছাপা। প্রচ্ছদে নামলিপি ছিল এম্বোজ করা। প্রচ্ছদে ব্যবহৃত হয়েছে গুটি এম্বোজ কাগজ। ছবিতে যেমন দেখেছিলাম প্রচ্ছদের কালারও সেইমই এসেছে। সো ভেরি মাচ এসথেটিক লাগছিল।
সেইম গুটি এম্বোজের বুকমার্ক ছিল সাথে। তাদের এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে। সব বইয়েই কাস্টোমাইজড বুকমার্ক থাকে। হাতে নিয়েই বুঝবেন কতটা প্রিমিয়াম তাদের কাজ।
🔰 মূল গল্পঃ গল্পের প্রটাগনিস্ট রায়হান সিদ্দিকী। চৌকস একজন পুলিশ অফিসার। প্রধান হাতিয়ার মগজাস্ত্র। এই হাতিয়ারের সুবাদেই তার ব্যার্থ কেস নেই বললেই চলে। অন্যতম চরিত্র রেহনুমা আক্তার রানু। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার এক্স-ওয়াইফ। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় তাঁর। আর এই গুজবটা ছড়ায় সবুজ নামে এক নেশাগ্রস্ত যুবক। ঘটনাক্রমে কেস আসে রায়হান সিদ্দিকীর হাতে। এক অদৃশ্য সুতো বেঁধে ফেলে এই গল্পের কলাকুশলীদের।
ধরুন অনেক উঁচু থেকে আমি ছোট একটা পাথরকে নিচের দিকে গড়িয়ে দিলাম। এখন দু'টো ঘটনা এখানে ঘটতে পারে - হয় ঐ পাথর নিচে আসতে আসতে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো টুকরো হয়ে যাবে অথবা সেই ছোট পাথর একটা বিশাল ধ্বস তৈরি করবে।
এই গল্পের ক্ষেত্রে আমরা একই ঘটনা দেখতে পাই। আপাতদৃষ্টিতে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা জন্ম দেয় আরও অনেক কিছুর। এই 'অনেক কিছু' জানার ইচ্ছাটাই আপনাকে আটকে রাখবে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। শেষ করেও রেশটা রয়ে যাবে। এটাই সৃজন ভাইয়ের ম্যাজিক।
🔰 ব্যাক্তিগত অনুভূতিঃ আগেই বলেছি সৃজন ভাইয়ের লেখার ধাঁচটা আমার ভালো লাগে। উনি প্যাঁচান না। অজাযিত টুইস্ট আনেন না। ওনার লেখার ধাঁচ "এক কাপ পারফেক্ট চা বানাতে যতটুকু দুধ-চিনি লাগে ঠিক ততটাই দেওয়া" এর মত। রু তেও তেমনই ছিল। এই বইয়েও তার অন্যথা ঘটেনি।
খুব সুন্দর করে তিনি চরিত্রায়ন করেছেন। পুলিশ রায়হান সিদ্দিকীকে, ব্যাক্তি রায়হান সিদ্দিকীতে খুব সুন্দর করে তিনি চরিত্রায়ন করেছেন। লুতুপুতু প্রেম কাহিনী বর্ণনা না করেও সম্পর্কের জটিলতা বা প্রেম জিনিসটা খুব অল্প কথায় বুঝিয়েছেন।
বইয়ের অন্যান্য সব চরিত্রও প্রপার বিল্ডাপ পেয়েছে। কোথাওবাহুল্যতা ফিল হয়নি। গল্পের প্লট খুবই সুন্দরভাবে সাজানো। যথেষ্ট সময় এবং এফোর্ট দেওয়া হয়েছে এই ক্ষেত্রে। যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার এটা। রাবেয়া বসরীর ক্যামিওটা ভালো লেগেছে। এই ক্রসওভার এর কনসেপ্টা দারুন। যদি সত্যি জানতে চান, তাহলে বলব এই গল্প সিরিজ নিয়ে যদি একটা ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ বানানো হয় আমি মোটেও অবাক হব না। কাজটা সেই লেভেলের হয়েছে।
অনেকদিন আগে লুৎফুল ভাই এবং রাফাত ভাই আমাকে বলেছিলেন একটা প্রপার থ্রিলার পড়তে হলে গল্প সিরিজ পড়েন। এই বইটা পড়ার পর বুঝলাম কেন। পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম। আশা করব বেনজিন আবারও আমাদের এই দারুন সিরিজ উপহার দেবে।
তো এই আর কী..
বরাবরের মতই চেষ্টা করেছি পাঠকের জিজ্ঞাস্য ব্যাপারগুলো তুলে ধরতে। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।
নিজের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে এসে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান রেহনুমা আক্তার রানু। কেসটি প্রথমে বাড্ডা থানার অধীনে থাকলেও নানান মোড় ঘুরে চলে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। তদন্তভার ন্যস্ত হয় ডিবির সহকারী কমিশনার রায়হান সিদ্দিকীর ওপরে। তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক তথ্যের উন্মোচন হতে থাকে রায়হানের সামনে। কেসটা কি নেহাৎ-ই ঝোঁকের বশে গণপিটুনির একটা ঘটনার? নাকি এই ঘটনার পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো ঘটনা? পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে কি কেউ? তদন্ত করতে করতে রায়হান সিদ্দিকী মুখোমুখি হয় এক চরম সত্যের। বেরিয়ে আসে এক অপরাধের আড়ালে লুকোনো আরেক জঘন্য অপরাধ।
কী সেই অপরাধ???......
ওপার বাংলার তরুণ লেখক তাহভীর আহমেদ সৃজন অদ্ভুত এক কাণ্ড করে বসেছেন... বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বেশকিছু সত্য ঘটনাকে তিনি নিজের মতো করে ফিকশনালাইজড করে একটি আখ্যান নির্মাণ করেছেন। যার নাম ❝গল্প সিরিজ❞। আমাদের এই রঙচঙে সমাজের এক বিকৃত প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন এই সিরিজে। বিভিন্ন সময়ে যখন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর আঘাত নেমে এসেছে এবং যারা ন্যায় বিচার কখনো পাইনি, নষ্টদের উল্লাস নৃত্য দেখতে দেখতে যারা হয়তো ইহলোক ত্যাগ করেছেন, আবার কেউ কেউ আজও দাঁতে দাঁত চেপে বেঁচে আছেন এই ভেবে যে এটাই হয়তো তাদের নিয়তি; তাদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে সোচ্চার হয়ে উঠেন লেখক। নবারুণ ভট্টাচার্যের সেই লাইনগুলো যেন কানে ভেসে আসে... ❝লক-আপের পাথর হিম কক্ষে ময়না তদন্তের হ্যাজাক আলোক কাঁপিয়ে দিয়ে হত্যাকারীর পরিচালিত বিচারালয়ে মিথ্যা অশিক্ষার বিদ্যায়তনে শোষণ ও ত্রাসের রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে সামরিক-অসামরিক কর্তৃপক্ষের বুকে কবিতার প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হোক বাংলাদেশের কবিরাও লোরকার মতো প্রস্তুত থাকুক হত্যার শ্বাসরোধের লাশ নিখোঁজ হওয়ার স্টেনগানের গুলিতে সেলাই হয়ে যাবার জন্য প্রস্তত থাকুক তবু, কবিতার গ্রামাঞ্চল দিয়ে কবিতার শহরকে ঘিরে ফেলবার একান্ত দরকার
এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না।❞
এই “গল্প সিরিজের” মাধ্যমে লেখক সেই সমস্ত নিপীড়িত মানুষদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একপ্রকার বলা যায় তাঁর প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ এই সমস্ত ছাপার অক্ষরে ফুটে উঠেছে।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই ঢাকার বাড্ডায় নিজের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য খোঁজ নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেনু। সেই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লেখক লিখেছেন তাঁর “গল্প সিরিজের” প্রথম বই - গল্প শুরুর আগে। এবং আরেকটি ঘটনাও তিনি এই কাহিনির সঙ্গে জুড়ে গল্পের বাঁধুনির এক সুন্দর সামঞ্জস্য তৈরি করেছেন। দুটি পৃথক ঘটনাকে তিনি একই সুতোয় বেঁধে দিয়েছেন তার একটি ঘটনা এই গল্পের মূল ট্রিগার পয়েন্টও বলা যায় আর বইয়ের সবচাইতে চমকপ্রদ অংশ। খুব সাবলীলভাবেই লেখক গল্প বলেছেন যা পড়তে খুবই ভালো লাগে। থ্রিলের আকর্ষণ বাড়াতে গল্পকে অতিরঞ্জিত করে তোলেননি বরং একটি ক্রাইম থ্রিলারকে এক সামাজিক পরিকাঠামোর রূপ দিয়েছেন। একদল মানুষের শুধুমাত্র সন্দেহের বশে হানা আঘাত যে কতটা নির্মম হয়ে উঠতে পারে আর শত শত পরিবার সেই গুজবের মাশুল গোনে তার একটি করুণ চিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন এই গল্পে। তবে এখনও অবধি আমার ব্যক্তিগতভাবে এই সিরিজের দ্বিতীয় বই অর্থাৎ “একটা গল্প শুনবেন” বেশি ভালো লেগেছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু আমার ক্ষেত্রে নয় যে বা যারা গল্প সিরিজ পড়েছেন তাদের প্রত্যেকেই এই বিষয়ে সহমত হবেন। সেই বইয়ে যেন একটা আলাদা ভাইব ছিল যা সিরিজের অন্য বইগুলিতে সেই অর্থে খুঁজে পাইনি। যদিও সিরিজের শেষ বই “গল্পটা অসুর বধের” এখনো পড়া হয়ে ওঠেনি, সেই বইটি নিয়ে যথেষ্ট হাই এক্সসেপটেশন রয়েছে। তবুও প্রতিটি বই-ই প্রতিবাদের স্পৃহা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে পাঠকের হৃদয়ে। ……………………………………………………………………………………… ❝গল্প শুরুর আগে❞ - তানভীর আহমেদ সৃজন প্রকাশনীঃ বেনজিন প্রকাশন মূল্যঃ ৩৫০/- (বইমেলা, ২০২৩) পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮৪
গল্পের মূল চরিত্র রায়হান সিদ্দিকী যিনি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একজন চৌকস অফিসার। যার চরিত্রে একজন দায়িত্বশীল নৈতিক কর্মকর্তার ব্যাক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তার ব্যর্থ কেস প্রায় নেই বললেই চলে।
গল্পটা রেহনুমা আক্তার রানু নামের একজনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। একদিন মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান। কেসটা প্রথম পুলিশের কাছে থাকলেও পরবর্তীতে এসআই বাপ্পাদিত্যের কল্যাণে গোয়েন্দা বিভাগের অধীনে চলে যায়। তদন্তের ভার এসে পড়ে সহকারী কমিশনার রায়হান সিদ্দিকীর কাছে। তদন্ত করতে গিয়ে রায়হান জানতে পারে সম্পূর্ণ ঘটনাটাই সাজানো, ঝোঁকের মাথায় করে বসা কোন গণপিটুনি নয়। জানতে পারে এই ষড়যন্ত্রের পিছনে লুকিয়ে আছে জঘন্য এক অপরাধ।
পুলিশ প্রসিডিউর জনরার বই বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটা পড়া হয়েছে। কিন্তু এই বইতে লেখক যেভাবে সুন্দর করে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে বর্ণনা করেছেন তা আগে পড়েছি বলে মনে হয় না। কোন ধাপ কম বেশি না একদম সঠিক মাপে বর্ণনা করা হয়েছে, মনে হচ্ছিলো ক্রাইম পেট্রোলের কোনো এপিসোড পড়ছি। আমার পছন্দের চরিত্র রায়হান সিদ্দিকী বললে মন্দ হয় না। একজন চৌকস দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কিন্তু কোন অহংকারের ধারধারি নন। তার ব্যক্তিগত জীবনও লেখক খুব সুন্দর ভাবে বলেছেন। লুতুপুতু প্রেম কাহিনীতে পরিণত করেননি। এছাড়াও বাপ্পাদীত্ত, বাদল, সাজ্জাদ এদের চরিত্রগুলো সুন্দর করে সাজিয়েছেন লেখক। টিম ওয়ির্কের কনসেপ্টটা গল্পে নতুনত্ব এনেছে। সব মিলিয়ে উপভোগ করার মতো একটা বই। কাহিনী বেশি পেঁচানো না,পৃষ্ঠা বাড়াতে গৎবাঁধা কিছু গল্প বলে দেওয়া হয়নি। আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে যখন সবকিছুতেই ভেজাল, অনৈতিকতার ছড়াছড়ি সেখান এটা একটা শিক্ষামূলক আর ইন্সপায়ারিং বই, যেটা থ্রিলিং একটা অনুভুতি ও দিবে।
তবে বইয়ের কিছু অভিযোগ ও আছে যেমন "স্টোরি রিপিট করা, চরিত্রগুলোর সম্পূর্ণ নাম এবং তাদের পদবি বারবার উল্লেখ করা" এগুলো একটু বিরক্তি সৃষ্টি করেছে,আশা করি পরের বার লেখক বিষয়টা খেয়াল রাখবেন। কিন্তু এটা বলবো গল্প জমাতে লেখকের ঝুড়ি মেলা ভারি। আমার মতে বইটা একটু আন্ডার-রেটেড। এটার আরো হাইপ থাকা দরকার ছিল।
"গল্প শুরুর আগে* বইটা দিয়ে "গল্প" সিরিজের শুরু। এটা আমার পড়া লেখকের প্রথম বই, সিরিজের বাকি বইগুলোতে আর কি চমক আছে জানার লোভে দ্বিতীয় বই ধরে ফেলেছি-,-
"গল্প শুরুর আগে" লেখকের মৌলিক উপন্যাস হলেও মূলত এটা দুইটা বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাজানো! কোনো এক দুপুরে এক স্কুলে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা গেলো এক মহিলা! এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব তথ্য! কি হয়েছিলো সেদিন স্কুলে? এটা কি শুধুই একটা গণপিটুনির ঘটনা, নাকি এর পেছনে আরো বড় কোনো রহস্যময় গল্প আছে?
গল্প শুরুর আগে, "একটা গল্প শুনবেন" এর আগের ঘটনার সাথে জরিত! যেখানে জাঁদরেল পুলিশ অফিসার রায়হান সিদ্দিকির আগমন ঘটে! তবে গল্প শুরুর আগে'র প্লটের সাথে একটা গল্প শুনবেন বা এর পরের বই "যে গল্পের শেষ নেই" এর কোনো সংযোগ না থাকলেও মূলত গল্প শুরু এই "গল্প শুরুর আগে" থেকেই!
বইটা রেগুলার থ্রিলার পাঠকদের জন্য না। প্রথম অধ্যায় পড়েই বুঝা যায় শেষে কি হবে। সত্য ঘটনার অবলম্বনে লিখলেও থ্রিল মিসিং ছিলো। তদন্তের প্রক্রিয়া মোটামুটি লেগেছে। বইটা এক জায়গায় মনে হয়েছে টেনে লম্বা করা। যারা থ্রিলার জনরার ঢুকতে চান তাদের জন্য ভালো লাগতেও পারে। তাছাড়া যারা থ্রিলারের পাড় ভক্ত, তাদের বইটা ভালো লাগবে না। বইটার প্রথমে ৫★ করে সব রিভিউ দেখে নেওয়া। হতাশ হতে হলো। আবারো বুঝলাম হাইপে আর তেল রিভিউতে নাচতে নেই।