Jump to ratings and reviews
Rate this book

মির্জা গালিব

Rate this book
মান্টো যেন গালিবের পরিণতি। সাদত হাসান মান্টোর লেখা মির্জা গালিব এক অনন্যসাধারণ গল্পকারের কলমে উর্দু সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিকে নিয়ে চিত্রনাট্য। সঙ্গে আছে দুজনের জীবন ও জগত্ নিয়ে আলোচনা।

মোগল ভারতের শ্রেষ্ঠতম অর্জন উর্দু-ফারসি কবি মির্জা গালিব (১৭৯৭-১৮৬৯)। ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। আর ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে ইংরেজ শাসনের অবসানের সাক্ষী সাদত হাসান মান্টো। মির্জা গালিবের একান্ত অনুরক্ত ছিলেন মান্টো। নিজের সমাধিফলক লিখেছেন গালিবের কবিতা দিয়ে। মান্টো গালিবকে নিয়ে একটি সিনেমার কাহিনিও লিখেছিলেন। দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ বোম্বেতে সেই ছবি কেউ বানাতে রাজি হয়নি। অনেক পরে তৈরি সেই ছবি বক্স অফিস মাতায়। ঠিক যখন কিনা মান্টো মারা যান কপর্দকশূন্য অবস্থায়। মূল উর্দু থেকে সেই ছবির চিত্রনাট্যের অনুবাদ এই বই। সঙ্গে আছে চিত্রনাট্যের প্রসঙ্গ ধরে ব্যক্তি গালিব ও মান্টো আর তাঁদের সময়ের ভারতবর্ষের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা।

160 pages, Hardcover

First published February 1, 2023

4 people are currently reading
83 people want to read

About the author

Saadat Hasan Manto

550 books1,117 followers
Saadat Hasan Manto (Urdu: سعادت حسن منٹو, Hindi: सआदत हसन मंटो), the most widely read and the most controversial short-story writer in Urdu, was born on 11 May 1912 at Sambrala in Punjab's Ludhiana District. In a writing career spanning over two decades he produced twenty-two collections of short stories, one novel, five collections of radio plays, three collections of essays, two collections of reminiscences and many scripts for films. He was tried for obscenity half a dozen times, thrice before and thrice after independence. Not always was he acquitted. Some of Manto's greatest work was produced in the last seven years of his life, a time of great financial and emotional hardship for him. He died a few months short of his forty-third birthday, in January 1955, in Lahore.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
8 (20%)
4 stars
22 (56%)
3 stars
8 (20%)
2 stars
0 (0%)
1 star
1 (2%)
Displaying 1 - 10 of 10 reviews
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
February 27, 2023
বইয়ের টপিক যখন গালিব, সেটা পড়তে হবে। লেখক যখন মান্টো, তখন তো আরো পড়তে হবে। দুঃখের বিষয়, সোহরাব মোদির সিনেমাটা আমি এখনো দেখি নাই। দেখা দরকার। কবে দেখব জানি না।
সিনেমার স্ক্রিপ্টের অনুবাদ। বেশ ভালো একটা কাজ। তবে মনে রাখতে হবে 'সিনেমার চিত্রনাট্য'। গালিবের জীবন নিয়ে মূলানুগ কিছু বিষয় পাওয়া যাবে এমন না। তবে প্রেম বিষয়ক রুদ্ধশ্বাস কিছু আলামত পাওয়া যাবে। সেদিক থেকে বিষয়টা ভালো। গুডরিড।

অনুবাদ ভালো। জাভেদ হুসেনের অনুবাদের সাথে সবাই পরিচিত। গালিব বা উর্দু অনুবাদে তিনি নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন। সেক্ষেত্রে তার সমালোচনা করাটা কঠিন তবে আমি দেখলাম বেশকিছু জায়গায় উর্দু শব্দের বাংলা হরফে লেখার ব্যপারটা জমল না। 'খুন'কে (রক্ত) খুন উচ্চারণ হতেই শুনেছি কিন্তু নুনের উচ্চারণ উহ্য হওয়ার যুক্তিতে 'খুঁ' লেখার মানে বুঝি না। 'উমর' (বয়স) সহজেই লেখা যায়, 'উম্র' লেখার দরকার হয় না। উর্দুর বাংলা হরফে লেখার ক্ষেত্রে বিহারী টোনে আমার কিছু অ্যালার্জি আছে, সেই সূত্রেই বলা। এগুলা হয়ত অতো বড় ইস্যুও না।
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews86 followers
Read
February 7, 2024
মান্টো, উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী গল্পকার চিত্রনাট্য লিখেছেন উর্দু ভাষার সবচেয়ে বিখ্যাত শায়ের মির্জা গালিব কে নিয়ে - এরচেয়ে চমৎকার আর কি ই বা হতে পারে! গালিব আর মান্টো দুজন দুসময়ের মানুষ যেনো একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ; জীবনের দুঃখ,বেদনা আর তিক্তসার যাপনে।

যেহেতু এটা বলিউড ফিল্ম তাই ন্যারাটিভ অতি চেনা মেলোড্রামাটিক। তবু গালিবের রিক্ততা, চৌদভি বেগমের বিধ্বংসী নিষ্পাপ প্রেম, তৎকালীন সমাজ-কালের চিত্র আর নিঃশেষে বিশুদ্ধ প্রেমের মর্মান্তিক চিত্র এই চিত্রনাট্যে স্ফুট হয়েছে।

জাভেদ হোসেনের গালিব ও মান্টো বিষয়ক আলোচনা দুর্দান্ত হয়েছে। উর্দু অনুবাদে তিনি যশস্বী, অনুবাদ চমৎকার অত্যুতকৃষ্ট বললে ভুল হবেনা।
Profile Image for Shojjoti Hossen.
30 reviews2 followers
March 26, 2023
গালিব সম্পর্কে আমার ধারণা সীমিত। আমি তো মাহমুদুর রহমান 'বান্দিশ' নামে ভিডিও করে সেখানেই শুধু গালিবের নাম শুনেছি৷ গালিব কে নিয়ে পড়বো পড়বো করে পড়া হয়নি৷ এই বইমেলায় রহমান সাহেবকে বই গিফট দিতে গিয়ে নিজেও সাদাত হাসান মন্টো'র "মির্জা গালিব" বইটা কিনলাম।
সাদাত হাসান মন্টোর নামও আমি গত বইমেলায় শুনেছিলাম। ইয়া মোটা আর বড়লোকী বই "মন্টো কী আফসানে" উল্টে পাল্টে দেখে চলে এসেছিলাম। তো এইবার সাদাত হাসান মন্টো নামটা শুনেও পড়ার আগ্রহ জাগছে কিন্তু সময় সুযোগে এই পিচ্চি একটা বই শেষ করতে এত সময় লাগলো।

বই'তে গালিবের কিছু শের ↓

১. তুম মেরে পাস হোতে হো গো য়ক
জাব কোয়ি দুসরা নেহিঁ হোতা

( তুমি আমার পাশে থাকো যেন
যখন দ্বিতীয় কেউ থাকে না)

২. আব তো ঘাবড়াকে য়ে ক্যাহতে হ্যায়ঁ কে মন জায়েঙ্গে
মরকে ভব চ্যায়েন না পায়া তো কিধার জায়েঙ্গে

( এখন তো অস্থির হয়ে বলি মরেই যাব
মরেও শান্তি না পেলে তবে কোথায় যাব)

৩. য়া রব ও না সামঝে হ্যাঁয় না সামঝেঙ্গে মেরি বাত
দে অওর দিল উনকো জো না দে মুঝকো যুবা অওর

( হে খোদক, ওরা বোঝেনি বুঝবোও না আমার কথা
তাদের দাও অন্য হৃদয় যদি আমায় না দেবে অন্য ভাষা)

৪. দিলে নাদাঁ তুঝে হুয়া কেয়া হ্যায়
আখির ইস দর্দ কা দাওয়া কেয়া হ্যায়

( অবুঝ হৃদয়, তোর হয়েছে কী
আসলে এই বেদনার ওষুধ কী)

৫. তুম সালামত রহো হাযার বরস
হর বরস কে দিন হো পাচস হাযার

( তুমি নিরাপদে থাকো হাজার বছর প্রতিবছরে দিন হোক পঞ্চাশ হাজার)

বইটা পড়লে শেরগুলো আরো বেশি রিলেট করা যাবে।
*** সোহরাব মোদির সিনেমা দেখতে হবে।
** বইটা পড়ার সময় আফসোস হচ্ছিলো - 'কেউ যদি পাশে বসে উর্দু শেরগুলো সুন্দর করে উচ্চারণ করে পড়তো কিংবা আমার উচ্চারণ আরো ফ্লুয়েন্ট হতো!
** অনুবাদ ঠিকঠাক ভালো। কিছু কিছু জায়গায় আমি যেহেতু উর্দু পড়ে বাংলা পড়তেছিলাম কয়েকটা শব্দ রিলেট করতে কষ্ট হচ্ছিলো। (হয়তো ঠিকঠাক উর্দু জানি না তাই কিংবা অন্য কিছু)
সে যাই হোক উর্দু থেকে বাংলা অনুবাদ হিসেবে সুন্দর <3

আচ্ছা ,আল্লাহ হাফেজ! এবার সেহেরি করতে যাই।
রমজান মোবারক <3
Profile Image for Arfaz Uddin.
91 reviews7 followers
November 6, 2024
আগার আপনা কাহা তুম আপ হি সামঝে
তো কেয়া সামঝে
মাযা ক্যাহনে কা জাব হ্যায় ইক কহে
অওর দুসরা সামঝে
কালামে মীর সামঝে অওর যুবানে মির্যা সামঝে
মাগার উন কা কাহা য়ে আপ সামঝে য়া খুদা সামঝে

গালিব ছিলেন ঋনে শারাব পান করা, খোদার প্রতি সামান্য ভীতিও না রাখা এবং গূঢ় শব্দযুগলে সাজান্য দূর্বোধ্য কবিতার কবি। মির্জা সাহেব কবিতার ছন্দে গাইতেন এমন সব অনুভূতির গান যা হয়ত সমসাময়িক কোনো কবির পক্ষে গাওয়া অসম্ভব ছিলো এক ভিন্ন জগতের লোক ছিলেন, যিনি হয়ত চাইলেই লিখে ফেলতে পারতেন এমন সব শায়ের যা মনে দাগ কাটতে পারে স্বয়ং সম্রাটের ও। তার নামের সুবাস আর কবিতার ছন্দের শক্তি আশেপাশের সব স্থানেই ছড়িয়ে গিয়েছিলো বেশ সহজেই। কিন্তু অনেকেই তাকে বলে গিয়েছেন দুর্বোধ্য, তার কবিতার গভীরতার মাঝে খুজে পায়নি আসল সত্য। সমসাময়িক কবিরা তাকে মোহমিল গো বা প্রলাপ বকিয়ে বলে ব্যঙ্গ করেছেন। কিন্তু গালিব তার প্রাপ্য তার জীবনকালে পেলেন না, তার খাটিয়া উঠবার পর যেনো পুরো দুনিয়া তার প্রেমে আরো বেশি মশগুল হয়ে গেলো। কিন্তু সেটি দেখবার জন্য মির্জা সাহেবের দুচোখে রোশনাই আর বাকি ছিলো না। তাহার ছন্দের ঝংকার তার মৃত্যুর এত বছর পরেও যেনো আরো বেশি রয়ে গেছে, অন্তত সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে দুনিয়া জাহানের মধ্যে।

যেখানে গালিব ১৮৫৭ সালের সংগ্রামের পরাজয় দেখে নিজের চোখ বুজে ফেলেন অন্যদিকে সাদত হাসান মান্টো অন্যদিক থেকে ভারতবর্ষের দাঙ্গার নির্মম চিত্র। গল্পকার মান্টো যেনো গালিবের বলতে না পারার বেদনাকে ধারন করে গেছেন, লিখে গেছেন এত দিনের আড়াল করে রাখা বিষাদের গল্প। দুজনের মৃত্যুর পর দিনে দিনে বর্তমান ভারতবর্ষকে বোঝার জন্য তাদেরকে ধারন করা অপরিহার্য হয়ে উঠলো। আবার মান্টো কে বলা যায় গালিবের পরিণতি। কবিতা নিয়ে না ভাবা মান্টো পূজা করে গেছেন মির্জার কয়েক বাক্যে চমৎকার গল্প বলার ঢং কে। কম শব্দে লিখতে গিয়ে গালিবের দ্বারে ফিরে গিয়েছেন বারংবার। লিখলেন মির্জা গালিব কে নিয়ে সিনেমার গল্প। কিন্তু যখন সেই সিনেমা হিট হলো, সেই মান্টো কপর্দকশূণ অবস্থায় মৃত্যুবরন করলেন।

গল্পকার মান্টো তুলে ধরতে চেয়েছেন সমাজের গল্প, মানুষের বেদনার গল্প, মানুষের সম্পর্কের গল্প। তার নিখাদ বাস্তবতার ছবিকে অশ্লীলতার দায় দিয়ে বারংবার তার গল্পগুলোকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ছোটগল্প লিখে স্বাধীন পাকিস্তানে সেই ইংরেজ আদালতেই মামলার দায় টেনেছেন৷ কিন্তু সাদত হাসান মান্টোর কাছেই সাহিত্যকে ফিরে আসতে হয়েছে। তার চোখ দিয়ে দেখতে হয়েছে দুনিয়াকে, যেভাবে তিনি ভেবেছেন সেই সময় নিয়ে। যেভাবে তিনি বুঝতে চেয়েছেন মানুষদের কে। মান্টো ভারতবর্ষের জাতিরাষ্ট্রের জন্মপর্বের দগদগে ইতিহাসের অন্যতম গল্পকার।

এবার আসা যাক প্রথমা প্রকাশিত, জাভেদ হুসেন অনুদিত "মির্জা গালিব" বইটির প্রসঙ্গে। বইটি মূলত মান্ট��র লিখে যাওয়া মির্জা গালিব সিনেমার চিত্রনাট্য রূপ যা মূলত সোজা উর্দু থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। বইয়ের শুরুতেই তিনি মির্জা গালিব এবং মান্টোকে নিয়ে বেশ কিছু কথা লিখেছেন। ব্যক্তিগতভাবে উর্দু সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থাকলেও পড়ার মাত্রা কম ছিলো। মান্টো লেখা গল্পের অনূদিত রূপ পড়ার পর উর্দু লেখনির প্রতি আগ্রহ জন্মে। আর মির্জা গালিবের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায়। জন এলিয়া, ফায়েজ হোসেন, আল্লামা শাফীর উর্দু শায়ের শুনতে শুনতে মির্জা গালিবের শায়ের পড়ার পর তার প্রতিও আগ্রহের উদ্রেক ঘটলো। তাই মির্জা গালিব কে নিয়ে পড়া এই প্রথম বই।

মির্জা গালিব কিংবা তার জীবনী নিয়ে আমার কোনো জ্ঞান ছিলো না। তাই বইটি হাতে নেবার বেলায় দ্বিধা কাজ করছিলো বেশ। কিন্তু অনুবাদক পুরো গল্পটিকে বুঝতে পারার জন্য বেশ কিছু তথ্যবহুল লেখনি রেখেছেন যেগুলো পড়ে মির্জা গালিবের গল্পটিকে আরো বোধগম্য করে তোলা যায়। সেই লেখা গুলো যেনো আমাকে আরেক মির্জা গালিব কে আমার কাছে তুলে ধরেছে। সে লেখা গুলো পড়ে মির্জা গালিবের চিত্রনাট্য পড়তে বেশ সুবিধে হয়েছে।

মির্জা গালিব চিত্রনাট্যের গল্প বেশ সাধাসিধে তার এবং এক তাওয়ায়েফ কন্যা চৌদভীর এক প্রেমের আখ্যান যার মাঝে আছে কবিতার প্রতি প্রেম আর মির্জার প্রতি আকর্ষন। মির্জার প্রতি থাকা অসম প্রেম এবং আকর্ষন এই গল্পের মূল কথা। আর মির্জাও যেনো নতুন করে তার কবিতাতে প্রাণ খুজে পায়। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা সমসাময়িক মির্জাকে এবং তার পরিবেশকে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবো। তবে পুরো গল্পেই কাল্পনিক ছোয়া রয়েছে তাই এটিকে ঐতিহাসিক হিসেবে গন্য করতে মানা করা হয়েছে। তবে জাভেদ সাহেবের অনুবাদ আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। তার প্রতিটি শায়েরের অনুবাদ ও উর্দু সংযোজন বেশ ভালো লেগেছে।

আপনার যদি উর্দু সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থাকে আর জানতে চান মির্জা গালিব কে তাহলে এই বইটি আপনার জন্য।
Profile Image for Salahuddin Sunny.
47 reviews5 followers
January 10, 2025
অন্তরের গহীনে ক্ষরিত রক্ত ছিলো গালিব সাবের লেখার কালি। অদ্ভুত এক সুবাস ছড়ায় তাঁর একেকটা শায়েরি। সেই খুশবু সবার ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য করতে পারেনি। ব্যথিত, বিক্ষিপ্ত অন্তর সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে গালিবের শব্দ বিন্যাস অনুভব করতে পারে। বাহ্যিক দিক বিবেচনায় বেখেয়ালি ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব। কিন্তু তার অভ্যন্তরীণ মনোযোগ ছাপিয়ে গিয়েছিল বাস্তবতার সকল মাত্রা। যেখানে তাঁর বিচরণ ছিল অবান্তর। এই খামখেয়ালি অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিল সাদত হাসান মান্টোকে।

ঐতিহাসিক আর গল্পলেখকের কাজের ধরনের মাঝে তো ফারাক আছেই। ঐতিহাসিক অনেক উপকরণ জড়ো করে একটা সাধারণ সত্যে পৌঁছাতে চান। আর গল্পকার সেখানে ইতিহাসের দু একটা বিশেষ সত্যকে অবলম্বন করে এর বিস্তার ঘটান। গালিবের ক্ষেত্রে মান্টো এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েছেন। তবে এই কাহিনী নিখুঁত করতে মান্টো পরিশ্রম আর সময় ব্যয় করেছেন অকাতরে। ইতিহাস থেকে কিছু শব্দ ধার করে মান্টোর বিস্তর কল্পনাশক্তির বহিঃপ্রকাশ 'মির্জা গালিব' সিনেমার চিত্রনাট্য। এ বই সেই সিনেমার স্ক্রিপ্টের সরাসরি উর্দু থেকে বাংলা অনুবাদ। বইটি দু অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে সিনেমা, গালিব আর মান্টো সম্পর্কে গভীর পর্যালোচনা করেছেন অনুবাদক জাভেদ হুসেন। দ্বিতীয় অংশে ১৯৫৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মির্জা গালিব' সিনেমার সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য। যখন সেই সিনেমা তৈরি হয়েছে তখন মান্টো জন্মভূমিতে বিদেশী হয়ে আরেক দেশের নাগরিক। অনেকগুলো ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়ে সেই সিনেমা ব্লকবাস্টার হিট। আর ঠিক সেই সময় তিনি মারা গেলেন কপর্দকশূন্য অবস্থায়।

অবিভক্ত ভারতবর্ষের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দুই পর্বের সাক্ষী মির্জা গালিব ও সাদত হাসান মান্টো। দুজনের একজন কবি, অন্যজন গল্পকার। ১৮৫৭ এর লড়াই কে কার্ল মার্বক্স বলেছিলেন ‘ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম'। মির্জা গালিব সেই লড়াইয়ে শেষ হয়ে যাওয়া প্রাক্ আধুনিক ভারতবর্ষের বা মোঘল যুগের শ্রেষ্ঠ অর্জন গুলোর অন্যতম। ফয়েজ আহমদ ফয়েজ ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতাকে বলেছিলেন 'রাতের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত ভোর'। মান্টো ভারতবর্ষের সেই জাতিরাষ্ট্রের জন্মপর্বের দগদগে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম গল্পকার।


কবি মির্জা গালিব বলছেন কবিতার এই বহাল ধরনে আমার কথা যথাযথ বলতে পারছি না। গল্পকার সাদত হাসান মান্টো গালিবের বলতে না পারার বেদনাকে ধারণ করে লিখে গেলেন এতদিনের আড়াল করে রাখা বিষয়ের গল্প। মান্টো যেন গালিবের পরিণতি। সারা জীবন তিনি কবিতা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাননি। অথচ মির্জা গালিবের একান্ত অনুরক্ত ছিলেন মান্টো। মাত্র কয়েক বাক্যেও অসাধারণ গল্প বলায় তিনি দক্ষ। তিনিও আরো কম শব্দে অনেক কিছু বলতে গেলে বারবার গালিবের শরণাপন্ন হয়েছেন। দুজনই বেঁচে থাকতে ছিলেন কোণঠাসা। দুজনেই মৃত্যুর পর দিনে দিনে বর্তমান ভারতবর্ষকে বুঝতে চাওয়ার প্রয়োজনে হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য।


মির্জা গালিবকে নিয়ে মান্টো চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন অক্টোবর ১৯৪১ সালে। তিনি তখন অল ইন্ডিয়া রেডিও দিল্লি স্টেশনে কাজ শুরু করেছেন। গালিবের কালের সমাজ, সংস্কৃতি, প্রশাসন নিয়ে জানার জন্য তিনি বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন। কবিতা নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিলো না মান্টোর। কিন্তু গালিবের ব্যক্তিত্বের প্রতি মান্টোর ছিল প্রবল আকর্ষণ, এর সঙ্গে মেশানো ছিল বোধ হয় মমতা। মান্টো পৌঁছেছিলেন গালিবের কাছে গালিবের চিঠিপত্রের মাধ্যমে। মান্টোর মতো মেধাবী লেখকের জন্য ইতিহাসের বিপুল বয়ানের কোনো একটি লাইন বা কয়েকটি শব্দ সৃষ্টির দরজা খুলে দিতে পারে। মান্টো গালিবকে নিয়ে লেখা কাহিনী 'গালিব অওর চৌদভি'তে জানান দিচ্ছেন, “গল্পকারের জন্য সামান্য কিছু ইশারা যথেষ্ট। এই ইশারাই গালিবের কাল্পনিক জীবনীর নকশা তৈরির জন্য যথেষ্ট হতে পারে। 'নির্দয় তাওয়ায়েফ' আর 'কোতোয়াল দুশমন ছিল ' এই কয়েকটা সংক্ষিপ্ত শব্দকে কল্পনা সম্পূর্ণ করে দিতে পারে।”
এই কল্পনা মান্টোর 'মির্জা গালিব' চিত্রনাট্য লেখার রসদ ছিল।
Profile Image for Nawroz Zahan Preety.
66 reviews2 followers
March 2, 2023
অনুবাদে ত্রুটি নেই, গল্পেও না ।
সমস্যা হলো যখন সিনেমা বানানোর জন্য লেখা হয়েছে তখন সস্তা প্রেমই বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল। মান্টো এই সময়ে লিখলে আরও অনেক সুন্দর আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুন্দর করে তুলে ধরতেন ।
বইয়ের শুরুর "গালিব আর মান্টোর দুনিয়া" অংশটুকুই উপভোগ্য , বাকিটা শেষ করতে বেগ পেতে হয়।
মান্টোর চোখে গালিবকে দেখার ইচ্ছা থেকে বইটা পড়ার জন্য বেছে নেওয়া , যদিও দেখতে সক্ষম হওয়া গেলো না খুব একটা ।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Md Ali.
4 reviews
Read
July 22, 2023
বইঃ মির্জা গালিব
লেখকঃ সাদত হাসান মান্টো
বাংলা অনুবাদকঃ জাভেদ হুসেন
প্রকাশনীঃ প্রথমা প্রকাশন

গালিব সম্পর্কে আমার ধারণা সীমিত। আমি তো জাভেদ হুসেনের কিছু আলোচনা প্রতিনিয়ত ইউটিউবে দেখতাম আর সেখানেই শুধু গালিবের নাম শুনেছি৷ গালিব কে নিয়ে পড়বো পড়বো করে পড়া হয়নি৷ এই বইমেলায় সাদাত হাসান মন্টো'র "মির্জা গালিব" বইটা কিনে��িলাম।
সাদাত হাসান মন্টোর নামও আমি গত বইমেলায় শুনেছিলাম। ইয়া মোটা আর বড়লোকী বই "মন্টো কী আফসানে" উল্টে পাল্টে দেখে চলে এসেছিলাম। তো এইবার সাদাত হাসান মন্টো নামটা শুনেও পড়ার আগ্রহ গেগেছিলো বলেই বইটা কিনে ছিলাম।

বই'তে গালিবের কিছু শের ↓

১. তুম মেরে পাস হোতে হো গো য়ক
জাব কোয়ি দুসরা নেহিঁ হোতা

( তুমি আমার পাশে থাকো যেন
যখন দ্বিতীয় কেউ থাকে না)

২. আব তো ঘাবড়াকে য়ে ক্যাহতে হ্যায়ঁ কে মন জায়েঙ্গে
মরকে ভব চ্যায়েন না পায়া তো কিধার জায়েঙ্গে

( এখন তো অস্থির হয়ে বলি মরেই যাব
মরেও শান্তি না পেলে তবে কোথায় যাব)

৩. য়া রব ও না সামঝে হ্যাঁয় না সামঝেঙ্গে মেরি বাত
দে অওর দিল উনকো জো না দে মুঝকো যুবা অওর

( হে খোদক, ওরা বোঝেনি বুঝবোও না আমার কথা
তাদের দাও অন্য হৃদয় যদি আমায় না দেবে অন্য ভাষা)

৪. দিলে নাদাঁ তুঝে হুয়া কেয়া হ্যায়
আখির ইস দর্দ কা দাওয়া কেয়া হ্যায়

( অবুঝ হৃদয়, তোর হয়েছে কী
আসলে এই বেদনার ওষুধ কী)

৫. তুম সালামত রহো হাযার বরস
হর বরস কে দিন হো পাচস হাযার

( তুমি নিরাপদে থাকো হাজার বছর প্রতিবছরে দিন হোক পঞ্চাশ হাজার)

৬. ইশক মুঝকো নেহিঁ ওয়াহশত হি সহি

(প্রেম নয়, এ আমার পাগলামি)

৭. হামনে মানা কে তাগাফুল না করোগে লেকিন
খাক হো জায়েঙ্গ হাম তুমকো খবর হোনে তাক

(তুমি করবে না আর অবহেলা মানলাম না হয় আমি
তুমি জানবে যত দিনে আমি যে ধুলোয় মিশে যাব)


বইটা পড়লে শেরগুলো আরো বেশি রিলেট করা যাবে।
* বইটা পড়ার সময় আফসোস হচ্ছিলো - 'কেউ যদি পাশে বসে উর্দু শেরগুলো সুন্দর করে উচ্চারণ করে পড়তো কিংবা আমার উচ্চারণ আরো ফ্লুয়েন্ট হতো!
**অনুবাদ ঠিকঠাক ভালো। কিছু কিছু জায়গায় আমি যেহেতু উর্দু পড়ে বাংলা পড়তেছিলাম কয়েকটা শব্দ রিলেট করতে কষ্ট হচ্ছিলো। (হয়তো উর্দু জানি না তাই কিংবা অন্য কিছু)
সে যাই হোক উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদ করা বইখানা পড়ে বেশ প্রশান্তি পেয়েছি।
Profile Image for Pathok Bolchi.
97 reviews5 followers
May 27, 2023
সিরাজুদ্দৌলা নাটকটি ছিল আমার পড়া শেষ নাটক। নাটক আমার তেমন টানে না। নাটক দেখার জিনিস। পড়তে গেলে বরং বিরক্ত হয়ে যায়। স্কুল কলেজের পাঠ্যবই ছাড়া আমি নাটক পড়ি নাই কখনো আলাদা করে। বরং অনেক উপন্যাস নাটক হয়েছে, সিনেমা হয়েছে সেসব পড়েছি।স্ক্রিপ্ট হিসেবে পড়া হয় নি। আবার অনেক সিনেমা উপন্যাস হয়েছে সেসব পড়েছি তবে এক্কেবারে স্কিন প্লে আকারে কিছু পড়া হয় নি।

তেইশের বইমেলায় জাভেদ হুসেন নতুন কোনো বই আনছে এটিই ছিল আমার কাছে সবথেকে ভালো খরব। মনের মধ্যে তীব্র বাসনা ছিল হয়তোবা কোনো কবিতার বই-ই আনবে কিন্তু কবিতা বাদ দিয়ে বরং এবার জাভেদ হুসেন সাদাত হাসান মান্টোর 'মির্জা গালিব' সিনেমার চিত্রনাট্য অনুবাদ করলেন। বিষয়টা আমার মন খারাপ করে দিয়েছিল কিন্তু চিত্রনাট্য ব্যাপারটা আমার ভাল্লাগছে।

সিনেমাটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। চরিত্রগুলো শক্তিশালী। বাদশাহ জাফরের সময়কার কাহিনী। মির্জার প্রণয়ীপ্রার্থী চৌদভি বেগমকে নিয়েই মূলত কাহিনী। মির্জা গালিব চৌদভি বেগমের কাছে তার ঈশ্বর প্রেমিক। তার কবিতা যেন মোতি যথা চৌদভি বেগমের কাছে দৈববাণী। তার ধ্যানজ্ঞানই মির্জা গালিব।

একজন কবি যখন সবার কাছে উপেক্ষিত হচ্ছে তখন কেউ যদি তার কবিতার সমঝদার হয় তাহলে একজন কবির জীবন সার্থক। আর এই সার্থক গল্পটি লিখেছেন সাদাত হাসান মান্টো। লিখেছেন চিত্রনাট্য হিসেবে। সাদাত হাসান মান্টো মাধ্যমে আমরা আরও বেশি করে দিল্লি চিনেছি।জেনেছি মির্জা গালিবকে।
এই কাজ সহজ করেছে বাঙালিদের জন্য জাভেদ হুসেন ও প্রথমা প্রকাশনী।
Profile Image for Imtiaz Muhammad.
93 reviews
July 23, 2025
হামনে মানা কে তাগাফুল না কারোগে লেকিন
খাক হো জায়েঙ্গে হাম তুমকো খবর হোনে তাক
Profile Image for Minhazur Rahman.
10 reviews
January 9, 2025
গজল গুলো ভালো লেগেছে । ঘটনাপ্রবাহের অনুবাদ খুব একটা হৃদয়াঙ্গম হয় নি । কিছুটা খাপছাড়া খাপছাড়া লেগেছে ।
Displaying 1 - 10 of 10 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.