Jump to ratings and reviews
Rate this book

পার্থিব

Rate this book
জীবন কেন, এই জীবনের অর্থ কী, কেনই বা তা শুধুমাত্র বেঁচে থাকা? নাকি এর গভীরে নিহিত আছে কোনও হিরন্ময় তাৎপর্য? — এমন নানা প্রশ্নে আকীর্ণ বস্তুগ্রাহ্য এই জগৎ ও জীবন। সাহিত্যে ধ্রুপদীয়ানার সনিষ্ঠ সেবক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এই বৃহদায়তন উপন্যাসে এইসব সমূহ সনাতন প্রশ্নেরই স্থির উত্তর-অন্বেষণ। আর দশটা উপন্যাসের মতোই এই উপন্যাসেরও উপকরণ কিছু চরিত্র আর কিছু ঘটনা, সেইসঙ্গে মানুষের অভ্যন্তরে প্রবহমান চৈতন্যের গূঢ়, গভীর স্রোত। তবু শাশ্বত সাহিত্যে যেমন, এখানেও তেমনই, এক গভীর দ্যোতনা এ-কাহিনির শুরু ও শেষকে তো বটেই, এমনকি পুরো কাহিনিকেও এক সময় অতিক্রম করে যায়। এখানেই এর সার্থকতা ও অনন্যতা। ‘দেশ’ পত্রিকায় দীর্ঘকাল ধরে প্রকাশিত হবার সময় থেকেই ‘পার্থিব’ সর্বস্তরের পাঠকের অভিনন্দনধন্য। এ-কাহিনির প্রবাহ শহর-গঞ্জ-গ্রামকে পরিব্যাপ্ত করে শহুরে ও গ্রামীণ জীবনে জড়িয়ে-থাকা অজস্র মানুষের আখ্যান-উপাখ্যানকে নিয়ে চলেছে এক অনিকেত পরিণতির আশ্চর্য মোহনায়। কাহিনির উন্মোচন ঘটেছে এক অজ পাড়াগাঁয়ে, যেখানে বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ তার ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে প্রত্যাশায় চেয়ে থাকে সামনে তার মেজো ছেলের অর্ধসমাপ্ত পাকা বাড়িটির দিকে। এই সামান্য দৃশ্য থেকে শুরু হয়ে এ-উপন্যাস ক্রমশ নানা প্রবাহে। জীবনের নানা দিকে ছড়িয়ে যেতে থাকে, উন্মোচিত হতে থাকে জীবনের দেখা ও অদেখা নানান রূপ-বর্ণ-ছন্দ। এক দিকে বিষ্ণুপদর তিন পুত্র কৃষ্ণজীবন, রামজীবন, বামাচরণ, কন্যা বীণাপাণি ও তার স্বামী নিমাই, অন্য দিকে হেমাঙ্গ, চারুশীলা, চয়ন, ঝুমাদি, অনু, মনীশ, অপর্ণা, অনীশ, আপা ও তাদের অনুষঙ্গে সম্পর্কিত আরও অনেক মানুষ। এইসব মানুষের টানাপোড়েনে তৈরি হয়েছে আরেক বিচিত্র বিশ্ব, যেখানে সনাতন ঐতিহ্যবাহী স্বাদেশিক প্রেক্ষিতে আধুনিক সভ্যতার দ্বন্দ্বদীর্ণ চিত্রণ।

714 pages, Hardcover

First published January 1, 1974

146 people are currently reading
2541 people want to read

About the author

Shirshendu Mukhopadhyay

415 books930 followers
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।

তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।

তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,093 (54%)
4 stars
672 (33%)
3 stars
204 (10%)
2 stars
34 (1%)
1 star
20 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 180 reviews
Profile Image for Aishu Rehman.
1,093 reviews1,079 followers
July 4, 2022
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর পার্থিব বইটা যখন হাতে নেই এবং পড়া শুরু করি ভাবিনি বইটা পড়ে নিজেকে নতুন করে একবার আবিষ্কার করবো ।

বিষ্ণুপদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন গ্রামের দরিদ্রতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন সাথে সাথে পরিবেশবিজ্ঞানী হিসাবে দেশ-বিদেশে তার নাম হয় , কিন্তু তারপরও তার সেই ছোট বিষ্ণুপুর গ্রামটি তাকে টানে । এই পৃথিবীর প্রতি তার অনেক মায়া কিন্তু পৃথিবী যে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা তিনি কাউকে বোঝাতে পারেন না তার স্ত্রীও তাকে বুঝতে পারে না। এই উপন্যাসে কৃষ্ণজীবন এর পরেই হেমাঙ্গ চরিত্র অনেক ভালো লেগেছে । শহরের যান্ত্রিক জীবনে একা থাকার ইচ্ছা এবং একঘেয়ে জীবন ভালো না লাগায় অচেনা নির্জন গ্রামে একা বসবাস এবং গ্রামের জীবনের সাথে খাপ খাওয়া, ভালোবাসার টানাপোড়েন, এইসব নিয়ে হেমাঙ্গর সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি !!

সকল পাঠকদের বলতে চাই যে এই লেখক এর কোন বই যদি নাও পড়ে থাকেন তাইলে এই বইটা অবশ্যই পড়বেন,এত বড় একটা বই কিন্তু পড়ে বিন্দুমাত্র হতাশ হবেন না এইতা বলে দিতে পারি ।
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews288 followers
July 13, 2025
উহ! ব‌ইটা শেষ হতেই বুকে কেমন ব্যথা-বোধ হচ্ছে।‌ মনে হচ্ছে, এতদিন আমি ওই একদঙ্গল লোকের সাথে‌ সাথেই বুঝি ছিলাম.. ‌ব‌ই শেষ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ চারপাশ বড় বান্ধবহীন ঠেকছে!

প্রকৃতি আর মানবমন এই দুইকে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাসটি আমাকে আবার প্রথম থেকে ভাবতে শেখাচ্ছে। 'দূরবীন' উপন্যাসে কৃষ্ণকান্তের প্রেমে পড়েছিলাম, 'পার্থিব'-এও সেই কৃষ্ণের প্রেমেই পড়েছি– তবে দুটো এক নয়।‌ এ হলো কৃষ্ণজীবন বিশ্বাস। বিষম দরিদ্রতা কাটিয়ে উঁচুতে ওঠা একজন প্রকৃত পৃথিবীপ্রেমী। গল্পের মোড়ে মোড়ে এই কৃষ্ণজীবনের ভাবনা, দর্শন আমাকে স্পর্শ করেছিল অনেক বেশি।

শুধু কৃষ্ণের কথা বললে বড় একপেশে হয়ে যায়।‌ আসলে বিষ্ণুপদ, হেমাঙ্গ, নিমাই আর চয়ন– এই চরিত্রগুলোও সুদূর-প্রভাব বিস্তারকারী। সেই তুলনায় নারীরা কিছুটা কম এগিয়ে! ঝুমকি, রশ্মি, চারুশীলা, বীণাপানি এরা ছিল অনেকটাই সাদামাটা। তবে একেবারেই দুর্বল দেখানো হয়েছে তাও না। নয়নতারা, আপা কিংবা অনুশীলা অনেকটাই পূরণ করেছে‌ নারীদের শক্তিমত্তাটা।

কলকাতা শহর কিংবা অজপাড়া গাঁ-এর মায়ার রূপ, ভালোবাসা এবং ভেতরের দলাদলি কীভাবে যে একসূত্রে গেঁথে লেখা যায় তার জন্য বোধহয় এই উপন্যাস‌ই যথেষ্ট। সত্যিই তো, পৃথিবীকে আমরা কীভাবে রেখে যাচ্ছি? বিষ্ণুপদ-নয়নতারা এমন জুটি কি আজকাল হারিয়েই যাচ্ছে না? বামাচরণরা কি সত্যিই লোভে অমানুষ হয়ে উঠছে না? হেমাঙ্গরা কি এখনও অনুভুতিকে বুঝতে ভুল করছে না? চয়নরা কি মার খাচ্ছে না? …

কেন এমন চারপাশটা?

'এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই।' … … …
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews136 followers
September 28, 2016
ঢাকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যখন বুড়িগঙ্গা দেখতে গিয়েছিলেন। দুঃখ করে বললেন, “চোখে জল এল। একেবারে মরে গেছে। এখনো হয়তো উদ্যোগ নিলে একে বাঁচানো সম্ভব। নদীর সাথে সভ্যতার সম্পর্ক। নদী সংস্কার না হলে সভ্যতা বাঁচে না”। প্রকৃতির প্রতি লেখকের এই যে মায়া, এই যে আদর তাঁর দালালিক প্রমাণ হলো পার্থিব উপন্যাসটি। যেখানে কয়েকটি চরিত্রের সমন্বয়ে পার্থিবতার আড়ালে লেখক সারা পৃথিবীকে নিজের ঘর ভাববার আবেগ তুলে ধরেছেন।

বিষ্ণুপদ, কৃষ্ণজীবন, হেমাঙ্গ, নিমাই এবং চয়ন। পার্থিব উপন্যাসের এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রের মষ্কিত্ব আলাদা হলেও হৃদপিণ্ড ছিল অভিন্ন। এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে আর অনেক চরিত্র আবতর্ন করেছে পুরো উপন্যাসটি জুড়ে।
সারাজীবন দারিদ্রতা সাথে যুজতে যুজতে ক্লান্ত বিরাশী বছরের অশীতিপর বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ জীবনের কালবেলাতে এসে মেজ ছেলে রামজীবনের অসম্পূর্ণ পাকা বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে। পেশায় ডাকাত রামজীবন অন্যায় আর দারিদ্রের শেষ সীমায় পৌছেও লড়াই করে শুধু নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে বলে। সত্যি মানুষ কত অদ্ভুত!

বিষ্ণুপদর জেষ্ঠ্য ছেলে কৃষ্ণজীবন তাঁর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে পরিবারকে। অধ্যাপক এবং দার্শনিক কৃষ্ণজীবনের কলকাতার সাততলার উপরে একটি সাজানো ফ্ল্যাটে, সুন্দরী স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে সুখের পরিবার। খিদের জ্বালা পেটে নিয়ে দশ-বিশ মাইল পায়ে হেটে পাড়ি দেয়া পুরনো কৃষ্ণজীবন তবু কখনো যেন এই সফল কৃষ্ণজীবনকে ছেড়ে যায়নি। মানুষ কি চাইলেই সবকিছু বদলাতে পারে? মানুষের ক্ষমতা কতটুকু?

বিষ্ণুপদর মেয়ে বীণাপাণির স্বামী নিমাই এর একমাত্র যোগ্যতা সততা। যার মূল্য দিতে গিয়ে অভাবগ্রস্ত স্ত্রী বীণাকে যাত্রা পালায় নাম লেখাতে। লোভের স্রোতে গা ভাসিয়ে বীণা সেই স্রোতে নিমাইকেও টানতে থাকে। কিন্তু নিমাই অবিচল। সততা যেন চামড়ার মত লেপটে আছে তাঁর অস্তিত্ব। সত্যি কি সততার কোন অন্য চেহারা আছে যা মানুষের রোদে পোড়া সাধারণ চেহারার মাঝে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে? পারে সেই মানুষকে নতুন করে জীবন দিতে?

পাঁচ ফিট এগার ইঞ্চির হেমাঙ্গ যেন বৈভবের মাঝে দিশেহারা। আর সেখান থেকে পালাবার একটা আলাদা আস্তানা গড়ে নেয় হেমাঙ্গ। সুন্দরবনের কাছে নি শিপুরে নদীর পাড়ে এক চিলতে ঘরে হেমাঙ্গ খুঁজে নেয় নিজের ব্যক্তিগত স্বর্গ। নদী যখন প্রমত্তা হয়ে ওঠে, গগনদেব যখন আক্রোশে নির্মাণ করে প্রলয়ংকরী ঝড়ের যখন সেই তান্ডের এক সৌন্দর্য আছে। যা মুগ্ধ করে হেমাঙ্গকে। বলে দেয় পৃথিবী কারো জ্ঞানের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। সে অসীম।

এই উপন্যাসের আপাতদৃষ্টিতে সবথেকে দুর্বল চরিত্র হয়তো চয়ন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এপিলেপটিক চয়ন অপরাজেয়। যে বার বার ভাঙ্গে কিন্তু মচকায় না একটিবারও। বিষ্ণুপদ স্ত্রী নয়নতারাকে একবার একটি কথা বলেছিল, কোথায় পালিয়ে পার পাওয়া যায় না, নিজের মাঝেই ডুব দিতে হয়। হয়তো এই পাঁচ জন চরিত্রের মাঝে সেই ডুবটা চয়ন সবথেকে ভাল দিয়েছিলো। নিজের মাঝে নিজে ডুবে থাকার শিক্ষাটা না জানলে চারপাশের সস্তা ভাবনাগুলো ছিঁড়ে খেতে শুরু করে মনকে যার সবথেকে বড় উদাহরণ বিষ্ণুপদ নিজে।

ব্যক্তিগত মতামতঃ

সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই সময় আমার জীবনের পড়া শ্রেষ্ঠ দুটি উপন্যাস। প্রায় সাতশো ত্রিশ পৃষ্ঠ উপন্যাস দুটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছিলো এত অসাধারণ বই হয়তো আর পড়তে পাব না। পাইওনি। কিন্তু এইবইগুলো পড়ার সময় মনে হয়েছিলো কিছু অসাধারণ চরিত্রের সাথে দীর্ঘ এক পথচলার যাত্রী আমি। যখন শেষ হলো তৃপ্ত হলাম, ক্লান্তও হলাম। কিন্তু শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাতশত চৌদ্দ পৃষ্ঠার পার্থিব উপন্যাসটি শেষ করার পর মনের মাঝে শুধু যেন শব্দ এসেছে “ফুরিয়ে গেল?” পার্থিবতা মোহজাল সাতশো পৃষ্ঠা কেন, যেন সাত হাজার পৃষ্টাতেও কাটবে না।

জীবনের লৌকিকতা আর পার্থিবতার ছবিটা একদম জীবন্ত উপন্যাসটিতে। পড়ার সময় যেন চরিত্রগুলো নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ওদের হাসি যেন আমার হাসি, ওদের কষ্ট যেন আমার কষ্ট, ওদের বেঁচে থাকাটার মাঝেই যেন আমিও আছি। উপন্যাটির শেষ লাইন হলো, "এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁ��ো, এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই ।" আমিও যেন একাকার হয়ে গেছি কখনো কৃষ্ণজীবন, কখনো চয়ন আবার কখনো বা নিমাই এর সাথে। একাকার হয়ে গেছে কতগুলো অদৃশ্য পরিবারের সাথে যাদের বাস্তবে কোনদিন দেখা যাবে না কিন্তু কল্পনায় তাদের সুখ-দুঃখ, পার্থিবতা বেঁচে থাকবে শেষ সীমা পর্যন্ত।
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
June 24, 2023
আমার এই অবদি পড়া বইয়ের মধ্যে অন্যতম প্রিয় একটা বই। এই লেখাটির জন্য শীর্ষেন্দুর কাছে কতোদিক থেকে যে আমি ঋণী বলে শেষ করতে পারবো না। আমার চিন্তাচেতনার দশ দুয়ার উন্মোচন করতে এবং নতুনভাবে জীবন, প্রকৃতি ও সম্পর্ককে ভাবতে দেখতে সাহায্য করেছে এই বই। আমি হয়তো ভালোভাবে বোঝাতে পারছি না লেখার অক্ষর দিয়ে। কৃষ্ণজীবন আমাকে প্রকৃতিকে পৃথিবীকে আরো গভীরভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। প্রিয় কয়েকটা লাইন দিয়ে দিই এই বইয়ের যা নোট করে রেখেছি।

#
"বস্তুর পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম মাত্রাতেই থেমে থাকে না তার প্রকৃত পরিচয়। আমাদের অজ্ঞাত আরো বহু মাত্রা হয়তো রয়ে গেছে। আমরা কতটুকু জানি? অবিরত নানা মতবাদ, নানা দর্শন মানুষকে আবিল করে দেয়। মানুষের মন সবসময়েই জারিত হচ্ছে অন্যের ভাবনাচিন্তার প্রভাবে। সে যা দেখে, যা বোধ করে, যা বোঝে সবই ওই সব মতবাদ ও প্রভাবের দ্বারা চালিত হয়। যদি মানুষের মন রিক্ত থাকতো, যদি হাঁসের পালকের মতো ঝেড়ে ফেলতে পারতো সব প্রভাব তবে কি সে বস্তুর স্বরূপকে ধরতে পারতো? আমি তাই প্রথম মানবের কথা ভাবি৷ একমাত্র সে-ই অনাবিল চোখ ও মন নিয়ে দেখেছিলো এই বস্তুবিশ্বকে। আমি আজ ঠিক তার মতো মন আর চোখ চাই।"


#

একটা কথা বলো অপু। সাজগোজ করে যদি বেরোও তাহলে কি আজকাল পুরুষের এডমিরেশন পাওনা? দু-চার জোড়া মুগ্ধ চোখ কি তোমার দিকে চেয়ে থাকে না?

    অপর্ণা রাগ করার চেস্টা করলো।ভ্রুকুটি করেও হেসে ফেলে বলে, আমি আজকাল সাজি নাকি?পুরুষদের লক্ষ করতেও আমার বয়ে গেছে।


   একটু লক্ষ কোরো অপু। যদি দেখ যে, পুরুষের চোখ এখনো তোমাকে লক্ষ করছে তাহলে নিশ্চিতভাবে জেনো, তোমার যৌবন যায়নি।


   যে পুরুষটিকে নিয়ে আছি সে লক্ষ করলেই হল। আর আমার কাউকে চাই না।


    আমার চোখ তো ভুল চোখ। সেই যে ট্রামগাড়িতে ভয়ে আধমরা যুবতীটিকে দেখেছিলাম, চারদিকে টিয়ার গ্যাস,গুলি আর ট্রামের মধ্যে পড়ে থাকা লাশের ভয়ংকর অবস্থায়, দেখেই আমার ভেতরে যে একটা উথাল-পাথাল হয়েছিল, আজও তোমাকে দেখলে ঠিক সেরকমটি হয়। কই, পাল্টাওনি তো তুমি! আমার চোখে তোমার বয়স বাড়ে না, যৌবন যায় না। তাই বলছি আমার চোখ হল ভুল চোখ।




#
"আজ যদি স্মৃতিভ্রষ্ট হই, কি করে বুঝবো যে তুমি রিয়া? বস্তুর চতুর্থ মাত্রা হলো সময়। আইনস্টাইন বলেছিলেন। কিন্তু বস্তুর আরো কত মাত্রা আছে।পঞ্চম মাত্রা হলো স্মৃতি, নইলে বুঝবো কি করে কোনটা কী? ষষ্ঠ মাত্রা হলো ইমাজিনেশন, পারসোন্যাল ভিশন। চারদিকে এই যে এত বস্তুপুঞ্জ দেখছো, সে সবই আমাদের কল্পনার রঙে রঙিন। নইলে কিছুই নয়।"
Profile Image for Mahbuba Sinthia.
133 reviews97 followers
June 11, 2021
পাঠ্যবইয়ে উপন্যাস সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখেছিলাম, লেখকের জীবনদর্শন উপন্যাসের অন্যতম প্রধান একটি উপাদান, যা সমগ্র উপন্যাসকে পরিচালিত করে। আমার মতে,"পার্থিব" উপন্যাসে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মূল জীবনদর্শন ছিল পলায়নপ্রবণতা।

কৃষ্ণজীবন বন্ধ করে দিতে চান সব অতিরিক্ত কলকারখানা। তার মতে, আগের কালের পৃথিবীই ছিল ভালো তখন তার উপর আঘাত হানত না মানবসমাজ। অন্যদিকে হেমাঙ্গ পালিয়ে যায় শহর থেকে, নিশিপুরে, নদীর তীরে। সে গ্রামের লোকেদের সঙ্গে মিশতে শেখে, লাঙল চালাতে শেখে।

কিন্তু তারা কেউ ই নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে না। তাদের দুজনেরই স্থায়ী ঠিকানা কিন্তু সেই "কুম্ভীপাক" কলকাতাতেই।

এখানে মানুষের রিপুগুলোও উঠে এসেছে। বীণাপানির হাত ধরে এসেছে লোভ, ক্রোধ এসেছে রিয়ার মাধ্যমে, মোহ ছিল হেমাঙ্গের, রামজীবনের ছিল মদের নেশা আর পরশ্রীকাতরতা। কিন্তু এগুলোই তাদের সবটা নয়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অধিকাংশ চরিত্র ই সম্পূর্ণ ভালো নয় বা সম্পূর্ণ খারাপ নয়, মাঝামাঝি পর্যায়েই পড়ে তারা। এই জন্যেই চরিত্রগুলোকে আরও জীবন্ত মনে হয়, কারণ আমরাও কি সেরকমই নই?

দিনের শেষে কিছু সাদা, কিছু কালো আর অনেকগুলো ধূসর মানুষের জীবনের খণ্ডাংশ "পার্থিব "।

"তোমাকে কে বলে দেবে, একটি প্রস্ফুটিত শিউলি ফুলের সৌন্দর্যে কেন তোমার এত আনন্দ? দূরের নক্ষত্রের দিকে চেয়ে শুয়ে আছে ছাদে, চিৎপাত! তোমার সর্বস্ব হারিয়ে যাচ্ছে অনন্ত নক্ষত্রবীথির রহস্যময়তায় - তখন কে তুমি মনে পড়ে? ওই নক্ষত্ররা কি তোমার সাথে কথা বলে? বলতে চায়? বিজ্ঞান কি ব্যখ্যা করে এক মহৎ কবিতার অন্তলোককে?সুন্দর গানের মধ্যে কোথায় হারিয়ে যায় তোমার লজিক? হে মানুষ, কোন জড়বস্তু থেকে এল চৈতন্যের প্লাবন? ভালোবাসা? মুগ্ধতা? কে ব্যখ্যা করবে তা? বিজ্ঞান তো অন্ধের যষ্টি মাত্র। পথের ঠাহর দেয়, কিন্তু সে নয় তো চোখ!"
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
June 22, 2022
এ এক মহাকাব্যিক লেখা। প্রতিদিনের জীবনে প্রত্যেকটি পরিবারে টানাপোড়েন থাকে। যেমনটি আছে একদা স্কুল শিক্ষক ও পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু বিষ্ণুপদের পরিবারে৷ ভীষণ অভাবের সংসারে গাঁয়ের সবাইকে ছাপিয়ে স্রেফ মেধা ও পরিশ্রমের জোরে নিজ গণ্ডির বাইরে যেতে পেরেছিল কৃষ্ণজীবন। রূপবতী ও শিক্ষিত বউ পেয়েছে বটে। কিন্তু সম্পর্ক একপ্রকার চুকেবুকে গেছে দরিদ্র পিতা-মাতা ও ভাই-বোনদের সাথে। রক্তের সম্পর্কে এমন কাটাকাটি খুব ভোগায় প্রকৃতিপ্রেমী ড. কৃষ্ণজীবন বিশ্বাসকে।

রামজীবন ও বামাচরণের সংঘাত অনেক পরিবারের স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ব্যতিক্রম হলো বিষ্ণুপদের মেয়ে বীণাপাণি ও তার স্বামী নিমাই। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিজের কিছু বিশ্বাস আছে। তিনি রক্ষণশীল। সেসব নিয়ে তার লুকোচুরি নেই। এই উপন্যাসেও দেখতে পাই, স্ত্রী হিসেবে বীণাপাণি যতই উজ্জ্বল হয়ে উঠুক না কেন তার নিয়তি শেষতক স্বামীর হাতেই বন্দি।

গৃহশিক্ষক চয়ন চরিত্রটি আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে। এমন মানুষ আমাদের সমাজে হরহামেশাই দেখা যায়। ভীতু, নিপীড়িত এবং অস্তিত্ব সংকটে ভোগা এই মানুষটির মধ্যে কোথায় যেন নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'অদ্ভুতুড়ে সিরিজ'-এর তুলনায় 'পার্থিব' পিছিয়ে থাকবে। যদিও দুটো ভিন্ন ধাঁচের লেখা। তবু শীর্ষেন্দু মুর্খার্জির আদি ও অকৃত্রিম সাক্ষাৎ যেন 'অদ্ভুতুড়ে সিরিজ'-এ পাই।

যাঁরা অসামান্য কোনো সামাজিক উপন্যাস পড়তে চান, তাঁদের জন্যই শীর্ষেন্দুবাবুর অনবদ্য লেখা 'পার্থিব'। ঢাউস কেতাবটি দেখে শঙ্কিত হবেন না। একবার পড়তে শুরু করলে কখন সময় কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না।
Profile Image for Nusrat Mahmood.
594 reviews737 followers
November 19, 2016
কারণ সম্পর্কের গল্পগুলো সবসময় সুন্দর!
Profile Image for সানি .
14 reviews17 followers
November 7, 2014
পড়তে বসলাম বড় অরুচি নিয়ে।
হাতে কোন বই ছিল না বলেই হাতে নেওয়া।
প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর ঠিক মনে ধরছিল না।
কিন্তু চয়ন,ঝুমকি, চারুশীলা, কৃষ্ণলাল সবাই যে লাফিয়ে উঠবে কিছু পরেই চোখের সামনে তা কে জানত?

এই বিশাল উপন্যাস আমারে কত শত জমিয়ে রাখা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে তা ভাবতে বসলে হিশেব মেলানো যাবে না। অসাধারণ, অসাধারণ !
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
December 27, 2021
আমার কাছে মনে হয়েছে, পার্থিব উপন্যাস টা একটা জীবনবোধ। এতো বৃহৎ উপন্যাস নিয়ে কিছু লিখা রীতিমতো ভয়ংকর! কূলকিনারা পাওয়া যায় না, সব চরিত্র নিয়েই লিখার মতো হাজারটা কথা আছে যা লিখে শেষ করার মতো নয়। উপন্যাসের কাহিনী তৈরি হয় কিছু চরিত্র কে আশ্রয় করে; যাদের মধ্যে দেখা যায় লেখকের বহুমুখী চিন্তাধারার প্রতিফলন। বইয়ের কলেবর যখন ছোট হয় তখন লেখকের বক্তব্য প্রকাশের জন্য গল্পের চরিত্র তৈরি করার তেমন প্রয়োজন পরে না। অন্যভাবে দেখতে গেলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে চরিত্র চিত্রণের মত সেই সুযোগও থাকে না। কিন্তু বইয়ের কলেবর যখন উল্লেখযোগ্য রকমের বড় হয় তখন লেখক ধীরে ধীরে, বিভিন্ন ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে চরিত্র তৈরি করার একটা সুযোগ পান। এখানে লেখকের মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। এইজন্যই বড় ক্যানভাসের উপন্যাস আমার বড্ড বেশি মায়া মায়া লাগে। 'পার্থিব' বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় উপন্যাসগুলোর একটা। এখানে লেখক তাঁর ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি, জীবন দর্শন ব্যক্ত করেছেন অনেকগুলি পরিবার আর অনেকগুলি মানুষের গল্পের মাধ্যমে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত বেশ কয়েকটি পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাধারা, ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবের চরিত্র লেখক তৈরি করেছেন অসাধারণ নৈপুণ্যে। আর এদের জীবনের আপাত সাদামাটা গল্পগুলো বর্ণনা করেছেন অতীব চমৎকারভাবে। যেখানে একই সাথে ফুটে উঠেছে মানুষের টিকে থাকা, বেঁচে থাকা, বিলাসী জীবন আর ভালোবাসার গল্প। যা দৃশ্যমান হয় চয়ন, বিষ্ণুপদ, নয়নতারা, অপর্ণা, চারুশীলা আর আপা'র চরিত্রে। গল্পের আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা। প্রকৃতির সাথে, পৃথিবীর সাথে মানুষের সম্পর্ক খুঁজে বের করার একটা চেষ্টা; যার প্রতিফলন দেখা যায় হেমাঙ্গ আর কৃষ্ণজীবনের চরিত্রে। যার জন্য এদের একেকজন একেক রকমের উপায় অবলম্বন করে।একজন বই লিখে,সভা, সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে দুনিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব,যন্ত্র সভ্যতা প্রসারের অপকারিতা। আরেকজন শহর ছেড়ে সন্ন্যাসীর আশ্রম কিংবা প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে গিয়ে চেষ্টা করে জীবনের স্বরূপ উপলব্ধি করার। তবে এদের উদ্দেশ্য থাকে একই--নিজের সাথে পৃথিবীর সম্পর্ক আবিষ্কার। সভ্যতার সাথে পৃথিবীর সম্পর্কের প্রকৃতি অনুধাবন করা।সভ্যতা কি পৃথিবীর কল্যাণ নাকি অকল্যাণ।কিংবা আমরা যাকে সভ্যতা বলি, সেটা আদৌ সভ্যতা কিনা, এসব প্রশ্নের দ্বন্দ্বে সব সময় জর্জরিত হয় এরা। সংসারে সততা, অসততা দুটো বিষয়ই রেললাইনের মত পাশাপাশি সমান্তরালে বিরাজ করে। নিখাঁদ সচ্চরিত্রের মানুষেরা এর পার্থক্য করতে পারে সর্বাবস্থায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা খুব নিরীহ হয়। ঠিক ব্যক্তিত্ব বা প্রতিবাদ করার যে ক্ষমতা, তা সব সময় থাকে না এদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা আর ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়ে সবকিছু মেনে নেয়। স্ত্রী মুখাপেক্ষী, আপাত স্ত্রৈণ নিমাই এই দলের মানুষ।

আপাত দৃষ্টিতে গল্পের কাহিনী এবং চরিত্রে বৈচিত্র্য থাকলেও সবার গল্প, সবগুলো চরিত্র যেন কোন এক বৃহৎ ঐকতান নির্দেশ করে। তাই চয়নের নির্মোহ টিকে থাকা, নিপাট সংসারী অপর্ণার পারিবারিক ভাবনা, সদ্য তরুণী আপার নীরব বিপ্লব-চেষ্টা, চারুশীলার বিলাসী, খেয়ালী জীবন যাপণ, আপাত মূর্খ বিষ্ণুপদের গভীর জীবন দর্শন আর পূর্ব বঙ্গের আদি নিবাসের প্রতি টান, পিতৃভক্ত রামজীবন কিংবা লোভী বামাচরণ সবার টুকরো গল্প আর লেখকের সূক্ষ্ম জীবনবোধ মিলে 'পার্থিব' হয়ে ওঠেছে মানব জীবনের এক অনন্য চিত্র।

চরিত্রগুলোকে এত যত্নসহকারে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয়েছে এবং গুরুত্বের সাথে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে সবগুলো চরিত্রই অত্যন্ত সাবলীল ও বাস্তব বলে মনে হয়। এছাড়া লেখক অত্যন্ত সফলভাবে চরিত্রগুলোর মাঝে সমন্বয় ঘটিয়েছেন। এত চরিত্রের সমাবেশের মধ্যেও উপন্যাসের বিশাল অংশ জুড়ে ছিল কৃষ্ণজীবনের আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন এবং তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে বেশিরভাগ ঘটনা।

‘পার্থিব’ উপন্যাসের অন্যতম দিক হচ্ছে, এখানে একইসাথে গ্রামীণ সহজ-সরল জীবন ও যান্ত্রিক শহুরে জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়। গ্রামের দারিদ্র্যপীড়িত জীবন ও প্রাকৃতিক নিসর্গ, কোলাহল-কোন্দল থেকে শুরু করে শহুরে বিলাসিত জীবন-যাপন, শহরের সাধারণ মানুষের জীবন-সংগ্রাম, শহুরে নানা সমস্যা, মানুষের মাঝে বিচিত্র সম্পর্কের সবকিছুই এখানে এক সূত্রে গাঁথা হয়েছে। প্রকৃতি ও মানবজীবনের মধ্যে যে নিবিড় যোগাযোগ, তা-ও এ রচনায় উঠে এসেছে অত্যন্ত চমৎকারভাবে। প্রকৃতি মানুষের মধ্যে কীভাবে ভাবান্তর ঘটাতে পারে, তা এ উপন্যাসে স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যায়।

এ উপন্যাসের আরেকটি দিকের কথা না বললেই নয়; তা হলো দৃশ্যের চিত্রায়ন। এত চমৎকারভাবে লেখক এখানে বিভিন্ন দৃশ্যের চিত্রাঙ্কন করেছেন, যা পাঠককে সহজেই মোহগ্রস্ত করে ফেলে।

সর্বোপরি এ উপন্যাসে জীবন-সংসারের নানা প্রবহমান ঘটনা ও বাস্তব বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এসে একত্র হয়েছে নানা বর্ণ-গন্ধ-ছন্দে। লেখকের সৃষ্টিশৈলীর গুণে অতি সাধারণ ঘটনাগুলোও যেন এখানে অসাধারণ ও মনোমুগ্ধকর রূপে ধরা দিয়েছে। উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে জীবনের অন্তর্নিহিত গুরুত্ব ও তাৎপর্য, মহাবিশ্বের সাথে মানবের সম্পর্ক প্রভৃতি পাঠককে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বারবার। সেইসাথে জীবন, জগৎ, প্রকৃতি, মহাবিশ্ব নিয়ে বহু ভাবনা ও বিস্ময় পাঠককে যে এক ভিন্ন আধ্যাত্মিক জগতে উদীয়মান করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এতো এতো চরিত্রের ছড়াছড়ি আর তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ভরপুর এ উপন্যাসে খুব উৎসাহী হয়ে উঠার মতো কোনো কাহিনী না থাকলেও সাদামাটা ব্যাপারগুলো হঠাৎ কেমন অসাধারণ হয়ে উঠে তা বুঝেছি। গ্রাম-শহরের মেলবন্ধন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত অসংখ্য চরিত্র। তবে কোনো চরিত্র নিয়ে না ভেবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, প্রত্যেকে স্ব স্ব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি চরিত্রের বিচিত্র রকমের কাহিনীর মারপ্যাঁচে কিছু সময় হাফ ধরে যায়, তবে লেখক আগ্রহ ধরে রেখেছেন তাদের মধ্যে অদ্ভুত সেতুবন্ধনের মাধ্যমে। বিশেষ ভালো লেগেছে নয়নতারা- বিষ্ণুপদের সরল মিষ্টি নির্ভেজাল দাম্পত্য জীবন, মনীশকে নিয়ে অপর্ণার উদ্বেগ।

হেমাঙ্গের মধ্য দিয়ে লেখক যেভাবে এক সাগর দ্বিধাদ্বন্দ্বের পরও নিজের ভালোবাসাকে দিশেহারা হয়ে খুঁজে পাওয়া দেখিয়েছেন তা সত্যিই মজার ছিলো! ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের নিষ্পাপ ভালোবাসা ফুটে উঠেছে বোবা গোপালের প্রতি বড় ভাই পটলের গভীর ভালোবাসার প্রকাশে। বীণাপাণি আর নিমাইয়ের শেষ পরিণতিও মনে তৃপ্তির সঞ্চার করেছে।

তবে উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো কৃষ্ণজীবন, যার সাথে প্রতিটি চরিত্রই জড়িত। উপন্যাস জুড়ে চরিত্রগুলো নিজের সাথেই কথা বলে, নিজের সাথে বোঝাপড়ার এক দৃষ্টান্ত ছিলো এতে। প্রতিটি চরিত্র আর তাদের বিচিত্র রকমের ভাবনার মধ্যে যেনো কিছু জায়গায় নিজেরই প্রতিচ্ছবি পাচ্ছিলাম। উপন্যাসটি মনে অসংখ্য প্রশ্নের উদ্রেক করবে, আবার উপন্যাসের মধ্যেই উত্তর খুঁজে পাবেন।

শীর্ষেন্দুবাবু আপাদমস্তক মনস্তাত্ত্বিক এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে মোটামুটি একটি পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়ে তবেই ইতি ঘটিয়েছেন। আর এ কারণেই হয়তো বইটি শেষ করে মন কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়ে থাকলেও অন্যরকম পরিপূর্ণতায় ভরে আছে।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
December 14, 2022
" জীবনের এই একটা সময় কেটে যাবে, শেষ হবে বুকের দুরুদুরু । তারপর শুরু হবে পুরনো হওয়া, বহুবহু পুরনো, ব্যবহৃত। জীর্ণ হয়ে যাওয়া। এর কি কোনও মানে আছে?
আমার কেন পুরনো হয়ে যাওয়াকে এত ভয়?
কেবলই কেন মনে হয় আপনি একদিন পুরনো হয়ে যাবেন, আমিও যাবো। আমরা পুরনো হয়ে যাবো বলে এতো ভয় পাই কেন?
জীবন এতো অনিশ্চিত বলেই না এত ভাল এই জীবনযাপন।"

লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখনীর প্রধান ধরন হলো মানুষ। বিশেষত যৌথ পরিবার এবং সেই পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষ গুলোর জীবন, তাদের ভেতরের আত্মিক দ্বন্দ্ব এবং তাদের জীবনের নানা জটিলতা নিয়ে বিশ্লেষনমূলক গবেষনা যা ফুটে উঠেছে তাঁর কলমের আঁচড়ে পাতায পাতায়।
এই পৃথিবী কি পান্থশালা? কিংবা রঙ্গশালা? লেখক এই বৃহত উপন্যাসে দেখাতে চেয়েছেন তার কোনটাই সম্পূর্ন সত্য নয়। চিরকালের মানুষের মানসভূমি নিয়ে গড়ে উঠেছে "পার্থিব " উপন্যাসের উপাদান।

শহর কলকাতা, কলকাতার নিকট - প্রতিবেশী শহরতলী এবং এই বাংলার একটি গ্রামের বিভিন্ন চরিত্রের বাস্তব ভূমিকা, তাদের মানসিক গঠন, অনেক পুরনো দিনের পরিচিত রূপ-বর্ণ-ছন্দ সৃষ্টি করেছে।

এর কাহিনীর প্রবাহ শহর- গঞ্জ-গ্রামকে পরিব্যপ্ত করে শহুরে ওগ্রামীন জীবনে জড়িয়ে থাকা অজস্র মানুষের আখ্যান- উপাখ্যানকে নিয়ে চলেছে এক অনিকেত পরিনতির আশ্চর্য মোহনায়।

এক অজ পাড়া গাঁয়ে, যেখানে বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ তার ভাঙ্গা ঘরের দাওয়ায় বসে প্রত্যাশায় চেয়ে থাকে সামনে তার মেজো ছেলের অর্ধসমাপ্ত পাকা বাড়িটির দিকে। এই সামান্য দৃশ্য থেকে শুরু হয়ে এ- উপন্যাস ক্রমশ নানা প্রবাহে জীবনের নানা দিকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। উন্মোচিত হতে থাকে জীবনের দেখা ও অদেখা নানান রুপ-বর্ণ-ছন্দ।
একদিকে বিষ্ণুপদর তিন পুত্র কৃষ্ণজীবন, রামজীবন,বামাচরন, কন্যা বীনাপাণী ও তার স্বামী নিমাই, প্রতিটা চরিত্রই নিজেদের গন্ডিতে আবদ্ধ।শৃঙ্খললীত সমাজের নানা অনুশাসনে তাছাড়া সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ হয়েও এক এক জন যেন এক এক জনের কাছে থেকেও লক্ষ যোজন দূরে।
অন্যদিকে হেমাঙ্গ, চারুশীলা, চয়ন, ঝুমকি, অনু, মনীষ, অর্পনা, অনীশ, আপা ও তাদের অনুষঙ্গে আরও অনেক মানুষ।

অসংখ্য চরিত্রের সন্নিবেশে গড়া উপন্যাসটির কাহিনী অবাক করার মত। লেখকের বর্ননা চমৎকার, পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখার ক্ষমতা যেন একটি মোহময় মাদকতার মত। উপন্যাসিক সমাজকে কেন্দ্রে রেখে একঘেয়েমি সৃষ্টি না করে বৃহৎ পরিসরে ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের সমাজের বিবেক, মূল্যবোধ এবং অনুশাসনের সংজ্ঞা।।
Profile Image for Smrity Taiyeba.
19 reviews5 followers
August 16, 2024
জুলাই ২১,২০২৪।
গোটা দেশে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন। ঘরে নেই টেলিভিশন। বাইরে চলমান কারফিউ। মাথার উপর হেলিকপ্টারের লাগাতার টহল। জানলার বাইরে কিছুক্ষণ পরপর গুলির শব্দ। বুকের মধ্যে অস্থিরতা অশেষ। মনের মধ্যে দুরাশা। এরকম এক যোগাযোগহীনতা আর অসহায়ত্বের সময়ে যখন কোনোকিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না তখন আশ্রয় খুঁজলাম পার্থিব-এ। দুঃস্বপ্নের মতো বাস্তবতা থেকে পালিয়ে মুখ গুজলাম অপার্থিব দুনিয়ায়। অশান্ত মন আশ্রয় পেয়ে কিছুটা শান্ত হলো। বুঁদ হয়ে কাটলো ততক্ষণ, যতক্ষণ বইয়ের পাতায় ডুব।

জুলাই ২৮, ২০২৪।
পার্থিব ফুরোলো। ফুরোবার মাত্রই ঝরঝর ঝরঝর করে চোখের জল গড়াতে লাগলো। মনটা অশান্ত হয়ে উঠলো আবারও। বহু কায়দা করে নড়বড়ে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেল। একের পর এক জানতে পারলাম ঘরের বাইরে নৃশংসতার যত ভয়ংকর বাড়াবাড়ি।

মনে পড়লো পার্থিব-এ লেখা-
"জীবনে খুন-হওয়া মানুষ কখনও দেখেনি পটল। মানুষকে যে এভাবে অনাদরে ফেলে রাখা যায়, মারা যায় তা তার কল্পনাতেও ছিল না কখনও।"
Profile Image for Ratika Khandoker.
300 reviews33 followers
May 17, 2022
বইয়ের নাম পার্থিব,পড়ার এক্সপিরিয়েন্স টা অপার্থিব মানে আউট অফ দি ওয়ার্ল্ড।
বইটা ভাবালো,কাঁদালো,হাসালো,নস্টালজিয়ায় ডুবালো।বইয়ের কলেবর বিশাল,চরিত্র অনেক,গল্প অনেক,বিষয় কিন্তু একটাই,সৃষ্টি ও সম্পর্ক।
সম্পর্ক মানুষের সাথে মানুষের,মানুষের সাথে জমির,মানুষের সাথে ঘরবাড়ির,প্রকৃতির সাথে সৃষ্টির,পৃথিবী র সাথে এর বাসিন্দার।জন্ম মৃত্যুর বেঁচে থাকার সাথেই বা আমাদের সম্পর্ক কী?
নানা সময়ে নানা চরিত্ররা এইসব নিয়ে ভাবে।
আরেক্টা ব্যাপার বেশ খেয়াল করলাম।চরিত্রগুলোর নিজ নিজ বাড়ি বানানো,কারো বাড়ি হয় আলিশান দালান কোঠা,কারো ছিমছাম মধ্যবিত্ত গোছের,কারো বাড়িতে টিনের ছাদ,পাকা মেঝে,কেউ কেউ বাড়ি বানাতেই পারেনা।বাড়িগুলো যেন তাদের নিজ সত্ত্বার ই ইট-সিমেন্ট-বালির এক রূপ।
বইটা শেষ করে এই বাস্তব জীবনে আছড়ে পড়ে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
Profile Image for Anirban Dutta.
11 reviews10 followers
November 27, 2014
আমরা কেউ আসলে পরিপূর্ণ না। সবার ভেতরে সবাই বাস করি। আমার একটু অংশ বাউল হতে চায় , আরেকটু অংশ নতুন প্রযুক্তি পেলে লুফে নিতে চায় কারণছাড়াই , আরো একটু আরো অন্যরকম , বাকিটুকুর ভেতরে আবার খন্ড খণ্ড… এমন করে আমরা সবাই হাজার টুকরো হয়ে সবাইকে ধারণ করেছি , করছি প্রতিনিয়ত। প্রতিদিনই আমরা কেউ না কেউ হতে ছুটে বেড়াচ্ছি…আবার কেউ হয়তো জনতার মাঝে থেকেও প্রচন্ড নির্জনতাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মহাযোগী হয়ে আছি.. আমরা সবাই মানুষদের এনালাইসিস করে ছটফট করি, কেউ মনমতো হতে পেরে , কেউ চারপাশের বাঁধন ছিঁড়তে না পেরে। শুধুমাত্র লেখকই এই হাজারো টুকরাকে এক মালায় গাঁথতে পারে , আপনাকে ধন্যবাদ শীর্ষেন্দু। :-)
Profile Image for Rashed.
127 reviews26 followers
June 23, 2021
‘মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হল তার মন। মন ভাল থাকলে দুনিয়াটা ভারী ভালো, আর মন বিগড়োলে পরমান্নও তেতো।’

‘দুনিয়াতে পালিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। মানুষের পালানোর সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো তার মন। যদি সেখানে ঢুকে কপাট বন্ধ করে দিতে পারি তবে কেউ আর নাগাল পাবে না।’

‘যে কখনো কাউকে শাসন করতে পারে না, তর্ক বা ঝগড়া কখনো করেই না তার কি রাগ হয় না! হয়৷ কিন্তু সেই রাগ যেনো এক অন্ধ হাতির মতো দাপাদাপি করে তারই ভিতরে। তার হৃদযন্ত্রে, পাকস্থলীতে, ফুসফুসে, মস্তিষ্কে সর্বত্র সেই অন্ধ রাগের ধাক্কা গিয়ে লাগে। তাকে ক্লান্ত করে দেয়, বিধ্বস্ত করে ফেলে, নিঃঝুম করে দেয়।’

গ্রামীণ জীবন একদিকে আর শহুরে যান্ত্রিক জীবন অন্যদিকে,সহজ সরল জীবনের পাশে টানাপোড়নের জীবনের টুকরো সুখ,অশ্রু,বেদনাগাথা।গতির দাপটে অশ্রু গন্ডকোষ বেয়ে নামার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া।
লেখক কী সুন্দর চিত্রপট অঙ্কন করেছেন যা মোহগ্রস্ত করে তোলে।

প্রকৃতি আর এই জীবন একসাথে একসুরে এগিয়ে চলে। জীবনের লৌকিকতার ভিড়ে অলৌকিকতার আশায় কাটিয়ে দেওয়া জীবনগুলো।
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
November 6, 2024
আবার পড়লাম, আবার ভালো লাগলো। অনেক দিন পর যখন ক্লান্ত হয়ে যাব, প্রকৃতি আর মানুষের দোটানা নিয়ে ল��খা বিশালাকার বইটা আবার পড়ব। আমি জানি, বিষ্ণবাবু, কৃষ্ণজীবন বাবু কিংবা হেমাঙ্গ আমাকে হতাশ করবেন না।
Profile Image for Shuvongkar Shitu.
44 reviews17 followers
October 15, 2020
আমি কিছুদিন আগে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের "খোয়াবনামা" উপন্যাসটা পড়েছি। তারও কিছুদিন আগে পড়েছি "চিলেকোঠার সেপাই"। এই দুটো উপন্যাস পড়ার পরে থেকে আমি এটা ভাবছি যে সব বাংলা উপন্যাসগুলো কেন এগুলোর মত হয় না। আগে যেকোন বইয়ে গড়পড়তা খুব ভাল রেটিং দিয়ে দিতাম, কোন লেখাকে বিচার করার জন্য কোন আদর্শ বা মানদন্ড ছিলো না, যে কিসের ভিত্তিতে কোন লেখাকে বিচার করব। এখন কোন উপন্যাস পড়লে সেটাকে ইলিয়াসের লেখার সাথে মিলিয়ে ইলিয়াসের লেখাকে আদর্শ ধরে রেটিং দেই। যাতে দেখা যায় বেশিরভাগ লেখাই পাশ নাম্বার পাওয়া�� যোগ্য থাকে না। এই উপন্যাসটাও তার ব্যতিক্রম নয়। হয়ত ইলিয়াসের লেখা পড়ার আগে এই বইটা পড়লে অসাধারণ মনে হত। সুন্দর রোমান্টিক আবেগে ভেসে যেতাম। আমার একটা অভ্যাস হল কোন বই পড়তে শুরু করলে শেষ না করে ছাড়তে পারি না। এই একটা বদভ্যাসের কারনেই প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার বই অরুচি নিয়ে শেষ করতে হল। যদি এই অভ্যাসটা না থাকতো তাহলে অনেক আগেই এই বই পড়া ছেড়ে দিতাম।

এই উপন্যাসের রিভিউ লিখতে হলে এরকম লিখতে হয়ঃ
অহেতুক ইংরেজি শব্দের অপপ্রয়োগ, গড়পড়তা গল্প, মাধুর্যহীন ভাষা, ঘটনাগুলোর প্রলম্বিত বিবরন, কিছু কিছু জায়গায় অতিরিক্ত বাঙাল প্রেমের রোমান্টিকতা এবং কিছু অদ্ভুত চরিত্র। তবে এটা নিয়ে দারুণ বাংলা সিনেমা বানানো যেত। এমনকি হিন্দি সিনেমাতেও ভাল চলত। শেষে সবকিছু ঠিক হয়েই যায়। তাছাড়া কলকাতার বাংলা মেগা ধারাবাহিকে গল্পটা চালিয়ে দিতে পারলে বেশ হত। তবে উপন্যাস হিসেবে না, একরকম সময় নষ্টই বলা যায়। মোটামুটি লাগার থেকে খারাপ লাগার ভাগটাই বেশি। আমার রিভিউ পড়ে কেউ মনঃক্ষুণ্ন হলে আমি খুবই দুঃখিত। অতিরঞ্জিত বই। যতটা মানুষের মুখে শুনেছি ততটা ভাল মোটেই নয়।
Profile Image for Shofi Choudhury.
28 reviews39 followers
February 11, 2013
I enjoyed every page of this book.With a simple writing the author discussed about the random story about life and how it varies from people to people,society to society,maybe at some point all the story is same.He tried to find the meaning of life in philosophical perspective with those character. But Amazing experience and worth reading many times.
Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
November 9, 2022
সুবিখ্যাত, পাঠকপ্রিয় মহা কলেবরের এই উপন্যাসে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যে দর্শনগুলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন:
১/নারী কোনো স্বাধীন সত্তা নয়, পুরুষের মুখাপেক্ষী হয়ে থেকে ঘরকন্যা করাই তার জন্য গর্বের ও প্রাপ্তির।
২/স্বাধীনতা মানেই যা ইচ্ছে করে বেড়ানো, মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দেয়া।
৩/নারী অধিকার মানেই নষ্টামি। অন্যের কাছে শরীর বিকিয়ে দেয়া। সেক্স ছাড়া কিছু না বুঝা। ছিঁ (:3
৪/ অধিকাংশ নারীই লোভী, স্বার্থপর, গায়ে পড়া (মানে, মেয়েরা শুধু ছেলেদের দেহই চায় না, তাদের ঘাড়ে বসে রক্ত কিডনি ফুসফুস যকৃৎ সবই ছিঁড়ে ছিঁবড়ে খায়।)
৫/অধিকাংশ পুরুষই কোমল হৃদয়ের। পাপ বলে কোন শব্দ তাদের ডিকশনারিতে নাই।
৬/ ধার্মিক মানেই ভালো মানুষ। আর যারা ধর্ম মানেনা তারা অমানুষ।
৭/ সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন বলতে শুধু হেটারোসেক্সুয়ালই ঠিক। বাকিসব মনোবিকার।


এই বই নিয়ে এরচেয়ে বেশি কথা বলা সময়ের অপচয়। এমনিতে পড়ে অনেক সময় নষ্ট করসি৷ এতো এতো মানুষের এই বই ভালোলাগলো কেন বুঝতেসিনা। হয়তো সেটা ডিফেন্স মেকানিজমের কারণেই। এতো বড় একটা বই শেষ করে সেটাকে ভালো না লাগালে ইগোতে লাগে, নিজের উপর রাগও হয়। সে কারণে যে করেই হোক ভালো লাগতেই হবে! আর নয়তো রুচির ভিন্নতা। যাইহোক, শীর্ষেন্দু পড়া আপাতত স্থগিত। ক্ষ্যামা চাই এবারের মতো।
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
July 24, 2024
আমার জীবনে পড়া অন্যতম সেরা একটা বই এটি। ৪দিন টানা পড়ে বাকি ৪০০ পৃষ্ঠা শেষ করে পুরো একটা দিন আমি ঝিম ধরে বসে ছিলাম। এই বইয়ের কিছু চরিত্র এত বেশি অসাধারণ ভাবে তৈরি করা। এই বইয়ের যত কথা আছে তার শতকরা ৭০ ভাগই বোধহয় আমাকে ভাবিয়েছে। আমার চিন্তাচেতনাকে উন্মুক্ত করেছে, বিস্তৃত করেছে। কৃষ্ণজীবন চরিত্রটিকে আমি নিজের মধ্যে মিশিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম বইটা পড়তে পড়তে। হেমাঙ্গের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ছিল খুবই সুন্দর। আপা একটা অসম্ভব উচুমানের চরিত্র যেমন হয়তো প্রতিটা মানুষের হওয়া উচিত। চয়নের কথা বার্তা, অবস্থা, পরিস্থিতি দেখে বারবার মনে হয়েছে যাই ওর পাশে চুপ করে বসে থাকি। এরকম আরো অনেক চরিত্র, অনেক গল্প,ঘটনা নিয়ে এই বই।
আমার বন্ধুর কথায়- পার্থিব একটা দর্শন। সত্যিই তাই।
Profile Image for Marzia Tabassum.
34 reviews2 followers
May 18, 2025
ইশ! কী অদ্ভুত রহস্যময় আমাদের এই 'পার্থিব' জীবন...এতো প্রশ্ন, এতো চরিত্র, এতো ঘটনার আবহ- কী তার অর্থ? কেনো এই জীবন!

নয়নতারা,বিষ্ণুপদ,কৃষ্ণজীবন,চারুশীলা, হেমাঙ্গ,রশ্মি, ঝুমকি,অনু,বুবকা, অপর্ণা,আপা, চয়ন, অনিন্দিতা,নিমাই,বীণা- এতো এতো চরিত্র এতোদিন আমাকে ঘিরে রেখেছিলো; এমনভাবে, যে বইটা শেষ করে রীতিমতো অসহায় লাগছে! :)

"আমিও আজ ওই মূকবধির বালকটির মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি এ-ঘর ও- ঘর। খুঁজতেই হবে৷ খোঁজাই যে আমার কাজ। খোঁজাই যে জীবন...
...এসো আমার সঙ্গে তুমিও কাঁদো, এসো কান্নায় একাকার হয়ে যাই। একাকার হয়ে যাই।"
~ পার্থিব
Profile Image for Tushi.
59 reviews42 followers
October 6, 2018
কই খুব তো বেশি থ্রিলিং গল্প ছিল না। সম্পর্কের শুধু উঠাপড়ার গল্প ছিল । একেকজন মানুষের মনের ভিতরকার গল্প ছিল। ছিল তাদের চিন্তাভাবনার গল্প, তাদের চোখ দিয়ে পুরো পৃথিবী দেখার গল্প ।
একটা ঘোরলাগা কাজ করছিল। হতে পারে জ্বরের কারণেও। কিন্তু একটা ছাপ রেখে গেল। কত সাধারণ মানুষের জীবন কিন্তু সুন্দর করে সাজালে, শব্দগুলো ঠিকঠাক মত রাখলে সাধারণ চরিত্র আর সাদামাটা তাদের গল্পও কেমন অসাধারণ হয়ে যায়!
Profile Image for Samidhya Sarker Torsho.
36 reviews17 followers
July 28, 2014
আজকালকার বাঙ্গালি লেখকদের একটা সমস্যা যে, তারা লেখার সময় হয়ত শহরকেন্দ্রিক অথবা গ্রামকেন্দ্রিক জীবনধারাকে পুজি করে লেখেন। কিন্তু এই বইটিতে দুটো বিপরীতমুখী লাইফস্টাইলের ফিউশনের মাধ্যমে জীবনের নানা সংঘাতকে শীর্ষেন্দু ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার মায়ের রিকোমেন্ডেশনে পড়লাম। অসাধারন একটা বই।
Profile Image for Chitrolekha.
8 reviews5 followers
September 26, 2024
'দূরবীন'-এর পর তাঁর সাথে আবার দেখা দিন দশেক পরে। কথা নেই বার্তা নেই, আমাকে নাকি তাঁর সাথে যেতে হবে পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর আর কোলকাতায়; অনেকগুলো মানুষ নাকি অপেক্ষায় আছে আমার! শুনে হেসে বাঁচি না। পাগলামি আর কাকে বলে! কিন্তু, উপেক্ষাও কি পেরেছি দিতে?
তাঁর গল্প শুনবার মোহে, একদল নতুন মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার লোভে 'না' করতে পারি নি আর। বর্ষার এক ছিমছাম দুপুরে ভাতঘুমের বদলে রওনা হলাম আমি, শীর্ষেন্দুর সাথে, 'পার্থিব'-এ!
বাংলাদেশ থেকে সোজা চলে গেলাম বিষ্ণুপুরে, কৃষ্ণজীবনের গ্রামের বাড়িতে। কৃষ্ণজীবন মস্ত বড় বিজ্ঞানী, পৃথিবী জুড়ে তার নামডাক। তবে মানুষ হিসেবে তিনি আরও বড়! বিজ্ঞান নিয়ে যার কারবার, সে নাকি পৃথিবী সুদ্ধ লোকের কাছে বলে বেড়াচ্ছে- "এতকাল পৃথিবীতে বাস করেও, পৃথিবীর ধনসম্পদ লুটপাট তছনছ করেও মানুষ– বোকা মানুষ ধরতেই পারেনি, পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্কটা কী!"
কৃষ্ণের সাথে বিষ্ণুপুরের যোগাযোগ কমে গেছে নানা বাস্তবতায়। তবে দেখা হল তাঁর বাবা বিষ্ণুপদ এবং মা নয়নতারার সাথে। অপূর্ব এক জুটি। এই র���ষারেষির জুগেও কী চমৎকার দাম্পত্যের চাদর বুনেছেন এই ভীষন 'গেঁয়ো' দুজনে মিলে। তবে বাকি ছেলে মেয়েগুলো মানুষ হয়নি ঠিকঠাক। কেউ নিজ দোষে, কেউ কপালের ফেরে। তাঁদের মুখেই শুনলাম ছেলে বামাচরণ আর রামজীবনের বৈপরীত্য, শুনলাম লোভের বশে হীন-দরিদ্র বীণাপানি-নিতাই এর অদ্ভূত জোড়ের গল্প। শুনলাম কৃষ্ণজীবনের অত বড় মানুষ হওয়ার পটভূমি। শুনলাম এক নিতান্ত অজপাঁড়াগাঁ থেকে নিদারুণ কষ্টে, অসীম অভাবেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো কৃষ্ণজীবনের আত্মার কথা। যে একদিন ফিরে আসতে চায় নিজ গ্রামে, ছুড়ে ফেলতে চায় 'সভ্যতা' নামের মরীচিকার মুখোশকে।
কৌতুহল হল খুব। 'কৃষ্ণজীবন'– এ কেমন মানুষ? এত মস্ত হয়েও খুব অদ্ভূতভাবে আমার এলোমেলো চিন্তার সাথে এক হয়ে যাচ্ছে তাঁর অত পান্ডিত্যের রুচিবোধ, মিশে যাচ্ছে আমার হতাশার সাথে তাঁর দুঃখবোধ, একাকার হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনদর্শন! নাহ, এঁর সাথে দেখা না করে ফেরা যাবে না!

শীর্ষেন্দুকে সে কথা জানাতেই হাসলেন খুউব... সে ব্যবস্থা নাকি করাই আছে! এক বুক কৌতুহল নিয়ে রওনা হলাম কোলকাতায়। চারুশীলা, মানে চারুমাসির বাড়ি।
চারুশীলার স্বামী মস্ত আর্কিটেক্ট, বিশ্বজোড়া নাম, টাকার ছড়াছড়ি। বাড়িতে ঢুকেই টের পেলাম সত্যতা। কিন্তু এ কী? এ তো দক্ষযজ্ঞ একেবারে! বিরাট বাড়ি গমগম করছে লোকে। দারুণ ভাবে সাজানো পুরো বাড়ি, ডাইনিং টেবিলে শতেক পদ। তবে ভ্যাবাচ্যাকা খেলার চারুমাসির কথায় -"আসুন! আজকে আপনি আসার উপলক্ষ্যেই পার্টি দিয়ে দিলাম একটা! লজ্জা করবেন না, 'পার্থিব'-এর সকলের সাথে পরিচিত হতেই এই ছোট্ট আয়োজন।" বলে কি এই মেয়ে! পাগল নাকি? শীর্ষেন্দু হাসলেন। বুঝিয়ে দিলেন অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই, চারুশীলা একটু অমনই– খুউউব ভালো, প্রচন্ড ফুর্তিবাজ, একটউ অফ-বিটের, তবে সকলকেই কী যে ভালোবাসেন! তার প্রমাণও পেয়ে গেলাম বাকি সময়টুকুতে। ঘুরে ঘুরে পরিচিত হলাম সকলের সঙ্গে।

চারুশীলার সঙ্গে ঘুরঘুর করছে যেই মেয়েটি, ও ঝুমকি। হঠাৎ দেখাতে সাদামাটা চেহারাই মনে হয়, তবে ভালো করে তাকালে হুট করেই তীক্ষ্ণ লাবণ্যতা টের পাওয়া যায়। এছাড়াও হাব ভাবে সহজ-সরল জড়তা থাকলেও, ব্যক্তিত্ব খুব স্পষ্ট।ও ই পরিচয় করিয়ে দিল ওর বাড়ির আর সবার সাথে। বাবা-মা অপর্ণা-মনীষ। খুব পরিচ্ছন্ন দম্পতি, যদিও দুজনের বাস্তবতাবোধ ভিন্ন,তবুও ভীষণ ভালো বোঝাপড়া ওদের। পাশের বাড়িতেই থাকে। বোন অনু আর ভাই বুবকা। অনু মেয়েটাকে কেন জানি ভালো লাগেনি, বাচ্চা মেয়ে, কিন্তু চাহুনীতে বড্ড পাকামি!

সোফার এক কোণে চুপচাপ বসে আছে রোগামতন একটা যুবক। চোখ তুলে চাইছে না কারুর দিকে, চাহুনীতে একটা দিশেহারা ভাব, বসবার মধ্যে কেমন যেন আত্মবিশ্বাসের অভাব! জানলাম ওর নাম চয়ন, চারুমাসির মেয়ের প্রাইভেট টিউটর। সে কৃষ্ণজীবনের মেয়েকেও পড়ায়। ভীষণ দুঃখী ছেলে, মৃগীরোগ আর অন্যান্য অসুখের ভয় বড্ড ভোগাচ্ছে ওকে। তার উপর পরগাছার মতো ভাইয়ের বাড়িতে থাকা আর অসুস্থ মা যেন ছিবড়ে নিয়েছে ওর সমস্ত যৌবন। মায়া লাগলো খুউব। করুণাও কি নয়?

সোফার আরেকপাশে এক সুদর্শন যুবক সিল্কের পাঞ্জাবি পড়া, মুখোমুখি বসা একটি মেয়ে। দুটিতে গল্প হচ্ছে খুব। বোঝাই যাচ্ছে নিজেদের সঙ্গ উপভোগ করছে ওরা, আমি আর গেলাম না সামনে। চারুমাসি বললেন, একজন হেমাঙ্গ-তাঁর পিসতুতো ভাই, আরেকজন রশ্মি। ওদের বিয়ে হচ্ছে শিগগিরি, যদিও হেমাঙ্গ কিছু বলে নি এখনো, তবে চারুমাসি এবার বিয়ে যেন দিয়েই ছাড়বে হেমাঙ্গের। ছেলেটাকে বেশ লাগছে। প্রাণোচ্ছল, একটু শিশুসুলভ ভাব চোখে মুখে, সে তুলনাম রশ্মি যেন একটু বেশিই স্মার্ট। খাপছাড়া লাগছে নাকি একটু? আরেকটু খেয়াল করতেই দেখলাম, না, ভুল দেখিনি, কিছুক্ষণ পরপর হেমাঙ্গ আর ঝুমকির দু'জোড়া চোখ যেন দুজনের দিকে স্থির হচ্ছে হঠাৎ হঠাৎ। কিছু একটা বলতে চাইছে দুজনেই, পরিস্থতি তাদের সেই সুযোগটা দিচ্ছে না! কিন্তু কেন? কী বলতে চায় ওরা?

এবারে খাবার পালা। ডাইনিং টেবিলে বসেছি সবাই। ডাইনিং রুমের দরজা দিয়ে তাড়াহুড়োয় ঢুকলেন মধ্যবয়সী এক জোড়। পুরুষটি বেশ লম্বা, চওড়া কাঁধ, ভাবেসাবে গাম্ভীর্য প্রকট, তবে চোখদুটিতে কেমন যেন সরলতা ভর করেছে। পাশের মহিলাটিও বেশ পরিপাটি, ক্লাসিক। শীর্ষেন্দু পরিচয় করিয়ে দিলেন। কৃষ্ণজীবন আর রিয়া।
ওহ! এ-ই তাহলে সে! কৃষ্ণজীবন! এক অভিমানী, ব্যথিত বিজ্ঞানী! পৃথিবীকে যে ভালোবাসে নিজের গাঁয়েরই মতোন! পরিচয় একটু এগুতেই শুরু হল কৃষ্ণজীবনের জীবনদর্শন।অনেক অনেক কথার শেষে ওঁ বললো, "জীবনের গভীর গভীরতর মর্মস্থল থেকে মাঝেমাঝে উঠে আসে হলাহল। মাঝেমাঝে উঠে আসে অমৃত। মন্থন কর, জীবনের গভীরে দাও ডুব। নইলে ওপরসা ওপরসা ভেসে বেড়ানো হবে, লাগবে হাজার উপকরণ, বোঝাই যাবে না কেন জন্ম, কেন এই জীবন যাপন।"
সহধর্মিণী রিয়া কি স্পর্ষ করতে পারে কৃষ্ণর এই ব্যকুলতা, এই উদ্বেগ? সে কি প্রগাঢ় মমতায়, সুবিশাল ভালোবাসায় দিতে পারে কৃষ্ণকে একটুখানি ভরসা, একটুখানে স্বস্তি?
কৃষ্ণ কি বোঝাতে পারে রিয়াকে সব? নাকি কাজের ব্যস্ততায় এড়াতে পারে না দুজনের অবশ্যম্ভাবী দূরত্ব?
কে জানে! চোখ দেখে কি আর অতটা বোঝা যায়? আমি কি অতটাই অতলস্পর্শী?

এরপরের কাহিনীগুলো এগুতে থাকে ধীরলয়ে, চলতে থাকে নিজের গতিতে। কাহিনীর গলিঘুপচি, চরিত্রের বিশাল সম্ভার— কোনোকিছুই জট পাকাতে পারে না এর বুননে, কাটতে পারে না কোনো সুর। সমস্তটা মিলে এক মস্ত জীবন দর্শন, এক বিরাট রঙিন ক্যানভাস।
গল্পের যখন শেষ, তখনো আমি ডুবে আছি সবটাতে। নিজের ব্যক্তিসত্তার তিনটি দিক স্পষ্ট খুঁজে পেলাম কৃষ্ণকান্তে, হেমাঙ্গে, ঝুমকিতে। তাই বুঝি এত অল্পেই এতটা আপন লাগছে ওদের?
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কোলকাতার ব্যস্ত রাস্তায়। চাপা গলায় শীর্ষেন্দু বলে উঠলো, "জীবন ও মৃত্যুর অর্থহীনতার মাঝখানে কী মহান এই পার্থিব জীবন! ক্ষণস্থায়ী, অথচ কত বর্ণময়!"

[এটা কোনো বুক রিভিউ নয়। ভেবে দেখলাম, ওভাবে আমি পারি না লিখতে। তাই লিখে গেলাম ৭১৪ পৃষ্ঠার এই বই পড়ার সময়টুকুতে আমার ভ্রমণ। যা বলতে চেয়েছি, বোঝাতে পারি নি তার কিছুই, হয়তো ! 'পার্থিব' - যে কোনো কিছুর চেয়েও একটু বেশি কিছু...! ]
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,740 reviews355 followers
July 13, 2025
স্মৃতির বালুকাবেলায় বসে যখন আমি 'পার্থিব'র কথা ভাবি, মনে পড়ে আমাদের মফঃস্বলের বাড়ির সেই পুরনো উঠোনটার কথা, যেখানে সন্ধ্যেবেলা মা ফুল তুলতেন, আর রাঙা কাকিমা ঘুঁটে শুকোতেন। বাড়ির পাঁচিল পেরিয়ে শব্দ আসত, হাসির, কান্নার, ঝগড়ার, কুমড়োফুলের বড়া ভাজার গন্ধ মাখা জীবনগানের। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পার্থিব যেন সেই সব পুরনো উঠোনে বসেই লেখা।

‘আমরা কেউই পরিপূর্ণ নই’ — এ কথাটিই তো শুরুর মুহূর্তে বলে দেন বিষ্ণুপদ। সেই অজ পাড়াগাঁয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষক, যার হৃদয়ের ঘরে এখনও ঝুলছে এক অস্থিরতা, “এবার সবটুকু আমি জড়ো করি, সময় কম”—এরকম একটা হাহাকার। তাঁর অর্ধসমাপ্ত পাকা বাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি যেন আমাদের বলে যান, “তোমার জীবনও অসম্পূর্ণ, বন্ধুরা… সাহস করে তাকাও নিজের দিকে।”

শুরুটা সেই ভাঙাচোরা বাড়ির দাওয়ায় বসে থাকা বিষ্ণুপদ দিয়ে, যাঁর মুখের দিকে তাকালেই মনে পড়ে যায় টলস্টয়ের ইভান ইলিচের মুখ—মৃত্যুচিন্তায় বিধ্বস্ত, অথচ জীবনের নৈসর্গিকতার প্রতি আকুল। বিষ্ণুপদ যখন বলেন, “এবার আমিটুকু জড়ো করার সময় এসেছে,” তখন যেন টলস্টয়ের ইভান চিৎকার করে বলেন, "What if my whole life has been wrong?" এ যেন এক অন্তর্দর্শনের প্রান্তবিন্দুতে দাঁড়িয়ে নিজ��কে মেপে নেওয়া।

উপন্যাসের রত্নভান্ডারে আছে কৃষ্ণজীবন—মাটির সন্তান হয়েও সাফল্যের চূড়ায় বসা এক ভাবুক, যাঁর জীবনদর্শন তাঁকে করে তোলে বিদগ্ধ, কিন্তু নিঃসঙ্গ। এই চরিত্রের সঙ্গে স্বচ্ছ মিল পাওয়া যায় সাঁত্রের Antoine Roquentin বা Steppenwolf-এর হ্যারির—যেখানে চিন্তার ভার আর অস্তিত্বের দুর্বহতা মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক প্রান্তিক বিষণ্নতায়। কৃষ্ণজীবনের বক্তৃতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা একান্ত নিঃসঙ্গতা, আর বারবার নিজের গ্রাম, নিজের শিকড়ের দিকে ফিরে চাওয়াটা এক অদ্ভুত ফাঁদ তৈরি করে—সে যেন শহরের ‘ওভারড্রাফটেড’ মনুষ্যত্ব থেকে পালাতে চায়, কিন্তু পালাতে পারে না। তাঁর স্বগতোক্তি হয়তো এই রকমই হতে পারত: “আমি সভ্যতা গড়ি, কিন্তু নিজের ভেতরের জঙ্গলটা খালি হয় না।”

চারুশীলা—আহা, চারুশীলা। আমি যখন প্রথম তাঁকে দেখি, মনে হয় যেন ভিক্টর হুগোর Fantine-এর উল্টো মুদ্রা। তাঁর বেহিসেবী প্রাণপ্রাচুর্য, রোদ্দুরের মতো অনুপ্রবেশ, যেন মানসিক রোগাক্রান্ত চয়ন, হেমাঙ্গ, এমনকি অনুর মধ্যেও আলো ঢেলে দেয়। হেমাঙ্গর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, অনেকটা রোমান্টিসিজম বনাম স্টোয়িসিজমের দ্বন্দ্ব—যেখানে চারুশীলা জীবনকে জ্যাজ বলে বাজান, হেমাঙ্গ হয়তো ধ্রুপদী এক পিয়ানো সুর। এই দাম্পত্যপূর্ব খুনসুটি কোনো সস্তা রোমান্স নয়, বরং যেন দোস্তয়েভস্কির Nastasya Filippovna ও Prince Myshkin-এর মিটিং পয়েন্ট, যেখানে কেউ একজন নিজের ধ্বংস জানলেও ভালোবাসে।

চয়ন—এই চরিত্রকে নিয়ে ভাবলে কেবল সাহিত্যের সীমায় আটকে থাকা যায় না। তাঁর শারীরিক অক্ষমতা, মানসিক ক্ষত, এবং চারপাশের কুহেলিকা এমন এক স্পেস তৈরি করে, যেখানে আমাদের চোখ আটকে যায়। চয়নের অব্যক্ততা ও ক্রমশ গুটিয়ে যাওয়ার মধ্যে যেন Kafka-র Gregor Samsa-র ছায়া। পার্থিবে যদিও তার রূপান্তর শারীরিক নয়, তবু সমাজ ও আত্মীয়তার দৃষ্টিতে চয়ন ‘অন্য’ হয়ে উঠেছে। এমন এক আত্মপরিচয়ের যন্ত্রণা যা সময়ের গায়ে চুলকানি রেখে যায়।

বীণাপাণি ও নিমাই—এই দম্পতিকে কখনও কখনও মনে হয় Anna Karenina ও Karenin-এর চিত্রনাট্যের বিবর্ণ কপি। কিন্তু পার্থিব তাঁদের অগ্রসর করে নিজের স্বাদে। বীণাপাণির উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও পতনের গল্পকে লেখক শাস্তির চোখে দেখিয়েছেন কি? নাকি সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন? এখানে আমার প্রশ্ন থেকেই যায়। এই জায়গায় উপন্যাস যেন Madame Bovary-র ছায়া ধরে হাঁটে—যেখানে নারীচরিত্রের আকাঙ্ক্ষা সর্বদাই সমাজের চোখে অপরাধ।

রশ্মি চরিত্রটি একেবারেই অন্যরকম। আমার চোখে, রশ্মি পার্থিবের Elizabeth Bennet—বাস্তববাদী, স্পষ্ট, অনুভূতিহীন নয় কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ। বাকি মেয়েরা যেখানে আবেগে ভেসে যান, রশ্মি এক নিজস্ব স্কেপটিসিজম নিয়ে দাঁড়ায়।

আপার লড়াই—একলা, নির্বাক, কিন্তু প্রতিবাদী—মনে পড়ে দেয় টেনেসি উইলিয়ামসের Blanche DuBois নয়, বরং আর্তুর মিলারের Linda Loman-কে। একটা যুগ ও সমাজের গলার কাছে ধরে রাখা এক নারীকণ্ঠ, যাকে অনেকেই শুনতে চায় না, কিন্তু শুনলে বোঝা যায়—চোখ খুলে দিয়েছে।

বিষ্ণুপদর তিন ছেলের মধ্যেও এক অনুপম প্রতিচ্ছবি গড়ে তুলেছেন লেখক—রামজীবনের ভীরু অথচ যুক্তিনিষ্ঠ অবস্থান আর বামাচরণের অহঙ্কারী, বিক্ষিপ্ত জীবনের টানাপোড়েন যেন ‘রাজা লিয়র’-এর সেই তিন কন্যার অন্যরকম প্রতিরূপ। তারা হয়তো গার্নেরিল, রেগান, কর্ডেলিয়া নয়, তবু পিতার প্রতি কর্তব্য, অবহেলা ও প্রেম—সবই নিজের মতো করে আকার নেয়।

শহর ও গ্রাম—এই দ্বৈত বাস্তবতা উপন্যাসের চরম সফলতা। শহর মানে উন্নয়ন, গ্রাম মানে শিকড়—এই জোড়া টানাপড়েন অনেকটা Marquez-এর One Hundred Years of Solitude বা Faulkner-এর Yoknapatawpha County-র মতো এক সাংস্কৃতিক মিথ সৃষ্টি করে। বিষ্টুপুর হয়ে ওঠে এক mythical space—যেখানে প্রত্যেকে ফিরে যেতে চায়, যেমন Odysseus তাঁর Ithaca-য়।

অন্তিমে বিষ্ণুপদর চিরনিদ্রা, হেমকান্তের দূরবীন, কৃষ্ণজীবনের দ্বিধা—সব মিলে এই উপন্যাস এক existential treatise। জীবন শুধুই পার্থিব নয়, কিন্তু পার্থিবতা ছাড়া জীবনকেও ধরা যায় না। এই উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে শীর্ষেন্দু যেন বলছেন: “জীবনের মানে হয়তো কোনও fixed coordinate-এ বাঁধা নয়, সে এক চলমান অভিজ্ঞতা—যার মানে তুমি নিজেই খুঁজে নিতে বাধ্য।”

এটা এমন এক গ্রন্থ, যা শুধুই পড়া যায় না—জীবনের মতো করে, ধীরে ধীরে, অনেকটা হাঁটার মতো করে বুঝে নিতে হয়। কখনও হাঁপিয়ে ওঠা, কখনও গলায় হোঁচট খাওয়া, আবার কখনও দাঁড়িয়ে থাকা… পার্থিব এই পাঠককে দিয়ে নেয় এক যাত্রায়, যার গন্তব্য কোথাও নেই—তবু ফেরা হয় অনেকখানি পূর্ণ হয়ে।

জীবনের পরতে পরতে লেখা এই উপন্যাস নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এক ‘contemporary classic’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সবচেয়ে রাজনৈতিক না হোক, সবচেয়ে ধ্যানী উপন্যাস এটি। পাঠকের কাছ থেকে সময় দাবি করে, মন দাবি করে, কিন্তু বিনিময়ে সে দেয় এক বিস্মৃত শ্রুতিধ্বনি—“জীবন হয়তো অপার্থিব না, কিন্তু তা এক গভীর সুর, যাকে ধরতে পারলে পৃথিবীকে একটু ভালোবাসা যায়।”

রেটিং? এই বইয়ের কোনো মূল্য হয় নাকি>

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Tawheeda Rufah Nilima.
294 reviews58 followers
October 15, 2019
আমার একটা বই খুব পড়তে ইচ্ছে করছে।
বইটির নাম "ডার্লিং আর্থ
লেখক-কৃষ্ণজীবন
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর লিখা পার্থিব পড়ে শেষ করার পর মনে হচ্ছে কৃষ্ণজীবনের লিখা "ডার্লিং আর্থ" বইটা যদি পড়তে পারতাম।
কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব?
সম্ভব না।কারণ কৃষ্ণজীবন একটি বইয়ের চরিত্র।তাই তার লিখা বইটা পড়া সম্ভব নয়।
পার্থিব উপন্যাসে কৃষ্ণজীবনের লিখা চারটি বই এর কথা আছে।দুইটি প্রকাশিত হয়েছে-"ডার্লিং আর্থ এবং "দি বলডিং হেড".
আরো দুইটি লিখা শুরু করেছে,একটি প্রবন্ধ আকারে।নাম "ব্যাক টু ফিউচার,অ্যাডভান্স টু পাস্ট". আরেকটা লিখা শুরু করেছে।সেই বইটির নাম " হোয়েন আই মিট মাইসেলফ".এই বইগুলো সবসময়ের জন্যই টিবিআরে(TBR-to be read)থেকে যাবে,কখনোই পড়া হবেনা।
একটা বইয়ের চরিত্র কিভাবে একজন মানুষের চিন্তা ভাবনাকে এতোটা প্রভাবিত করতে পারে।
আশ্চর্য।
কৃষ্ণজীবনের মতো যদি কেউ হতে পারতো?
অন্য মানুষের কথা কেন বলছি?
আমিই যদি তার মতো হতে পারতাম,তার মতো ভাবতে পারতাম,আমার চিন্তা ভাবনাও যদি তার মতো হতো।
কারণ কৃষ্ণজীবনের চিন্তাভাবনাগুলো আমার চিন্তাভাবনাকে খুব ভালো ভাবেই প্রভাবিত করেছে।
এই বইটা পড়ার সময় আমার কেমন যেনো একটু শান্তি শান্তি লাগছে।একটু না,অনেক বেশি শান্তি শান্তি ই লাগছে।এতো ভালো একটা বই।
শুধু ভালো বললেও কম বলা হবে.
এই বইটা আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।এই বইটা পড়ে কত কি যে শিখলাম।যা শিখলাম তা কি নিজের মধ্যে ধারন করতে পারবো কোনোদিন?
কারন কৃষ্ণজীবন নিজেই বলেছে-"অনেকে বই পড়ে,কিন্তু বইয়ের কথাকে ভিতরে নেয়না।"
কিন্তু আমি অন্তত একটা চেষ্টা কি করতে পারিনা?
আমি যদি পাড়তাম তাহলে সবাইকে মেসেজ দিয়ে দিয়ে বলতাম,প্লিজ তোমরা এই বইটা একটা বার পড়ো।তোমাদের কাছে এইটা আমার অনুরোধ।
আজ বইটা পড়ে শেষ করলাম।^_^
এই বইটা নিয়ে আমার অনুভূতি অনেক বেশি,আর সেই অনুভূতি একটা পোস্টে লিখে শেষ করা যাবেনা।😭
আরো লিখবো বইটা নিয়ে,আরো লিখবো।
এই বইটার কথা আমি কখনো ভুলতে পারবোনা।আর ভুলতে চাই ও না।আমি চাই এই বইটার রেশ আমার সাথে সবসময় থাকুক।💚
এখন পর্যন্ত খুব বেশি বই না পড়লেও খুব কম যে পড়েছি তাও নয়।বেচে থাকলে হয়তো আরো পড়বো।কিন্তু যত বই ই পড়িনা কেনো,এই বইটার প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা থেকেই যাবে।💚
বইকে ৫ তারা দিয়ে রেট করা যায়।কিন্তু আমি যদি পারতাম আকাশের সব তারা ন���মিয়ে এনে এই বইটিকে রেট করতাম।💙
Profile Image for Subrata Das.
164 reviews19 followers
December 31, 2023
2021 এ পড়া শুরু করেছিলাম, আজ ২০২৩ এ এসে শেষ হল, যখন শুরু করেছিলাম তখনকার চিন্তাভাবনা , দর্শন , রুচি অনেক কিছুই পালটে গেছে।
২০২১ এ যা অমৃত মনে হত, তা হয়ত এখন বিষাক্ত লাগে।
আবার অনেক অপছন্দের বিষয়ও পছন্দের তালিকায় চলে এসেছে। এটাই হয়ত পার্থিব মানুষের ধর্ম। পাল্টাতে থাকা।

এটা কেমন বই তা মোটাদাগে বলা কঠিন। এক জীবনকে বেশ কয়েকটা দৃষ্টিকোন থেকে দেখার একটা প্রচেষ্টা হয়েছে।
উপন্যাসটা যেন অনেক যাপিত জীবনের ধারাভাষ্য। গল্পের চরিত্রগুলোর আলাদা আলাদা জীবন, আলাদা উদ্দেশ্য। কিন্তু সবাই যেন একান্ত নির্জনে জীবনকে বুঝতে চেষ্টা করছে। নানা ঘাত প্রতিঘাতে জীবন এর কারন, বেচে থাকার কারনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, উত্তর খুজছে।
আমরা সবাই মনে হয় এই দিক দিকে একরকম। যতই বস্তুবাদী হই, লোভী হয়, কিংবা পরকাল নিয়ে পড়ে থাকি, জীবনকে বুঝতে চেষ্টা করে যাওয়া এক দার্শনিক আমাদের সবার মধ্যেই বাস করে।
Profile Image for Emtiaj.
237 reviews86 followers
October 29, 2014
কিছু কিছু চরিত্র এতো বিরক্তিকর, সাদামাটা সাধারণ গল্প, খালাখালি ৭০০+ পৃষ্ঠার অপচয়।
আপা চরিত্রটা সবচেয়ে অবহেলিত, কিন্তু ওইটাই আমার সবচেয়ে ভালোলাগার।
Profile Image for Tahjiba Adrita.
103 reviews34 followers
June 8, 2020
"পার্থিব" শব্দের অর্থ জাগতিক, লেখক তাঁর উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতা বহাল রেখেছেন। জাগতিক জীবনের ভাংগা গড়া,সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে উপন্যাসটি।উপন্যাসের প্রতিটি পাতা উপভোগ্য।উপন্যাসের আড়ালে বাস্তব জগতটাকে দেখা। সাবলীল ভাষায় লেখক গড়পড়তা জীবনের গল্পই করেছেন,যেখানে সকলের গল্পই কোন না কোন ভাবে এক, পার্থক্য শুধু তাদের চারপাশের সমাজে।কেউ কলকাতার আলিশান ফ্ল্যাটে বসে জীবনের অংক কষছে কেউ হয়ত কোন এক গ্রামে ঘরের দাওয়ায় বসে জীবনের এই ভাঙ্গা গড়া নিয়ে ভাবছে। প্রতিটা চরিত্র খুবই সাধারণ কিন্তু লেখক তাঁর দুর্দান্ত লেখনীতে আশে পাশে চরিত্রগুলো হয়ে উঠেছে জীবন্ত। চরিত্রগুলো যে চোখের সামনে এভাবে নেচে উঠবে কে জানত? চরিত্রগুলো নিজের সাথেই কথা বলে, নিজের সাথে বোঝাপড়ার,নিজের সাথে সারাক্ষণ যেন এক মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। বিষ্ণুপদ,নয়নতারা, কৃষ্ণজীবন,রিয়া, রামজীবন, বামাচরণ,বীণাপানি,নিমাই,কাকা,হেমাংগ,চারুশীলা,ঝুমকি বা চয়ন সকলকে মনে হচ্ছিল খুব কাছের।তাদের যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি,হাত বাঁড়ালে ছোঁয়াও যাবে।তাদের নানা কষ্টে একাকার হয়ে গিয়েছি,হাসিতে হেসেছি,বোকামি তে আফসোস করেছি।তারা যেন খুব কাছের।বাস্তব না হয়েও যেন বাস্তব।এতবড় উপন্যাস,এত গুলা চরিত্র অথচ একটুও এলোমেলো লাগে না।লেখক যেন অনেক গুলো টুকরো কে এক মালায় গেঁথেছেন।পড়তে পড়তে পাঠকও সেই মালায় গেঁথে যায় হয়ে যায় বইটির একটি অংশ।
উপন্যাসে আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র কৃষ্ণজীবন।অদ্ভুত এক মায়া,ভালোবাসা জন্মেছে এই চরিত্রের উপর।বাইরে হাজারো চাকচিক্য,অনেক অনেক খ্যাতির ভীড়েও মানুষ যে কতখানি একাকীত্বে ভোগেন তার একপ্রকৃষ্ট উদাহরণ কৃষ্ণজীবনের জীবন।তার যেন সব থেকেও নেই।এই কারণেই হয়ত সবকিছুর প্রতি তার এত মায়া।পৃথিবীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা।কৃষ্ণজীবনের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে হচ্ছে, তাঁর "ডার্লিং আর্থ" বইটি পড়তে ইচ্ছে করছে খুব।আসলেই কী পৃথিবী কে এভাবে ভালোবাসা যায়?এতটা ভালোবাসা যায়? উপন্যাসটি মনে অসংখ্য প্রশ্নের উদ্রেক করবে, আবার উপন্যাসের মধ্যেই উত্তর খুঁজে পাবেন।
চরিত্রগুলোর সুন্দর গোছানো পরিণতির মধ্য দিয়ে বইটি শেষ কিন্তু এক অদ্ভুত ঘোর রয়ে যায়,এই ঘোর কাটতে সময় লাগবে...  
Profile Image for Abdul Ahad.
58 reviews
December 10, 2025
প্রেমিকার সাথে পাল্লা দিয়ে বইটা পড়লাম। চ্যালেঞ্জ ছিল কে আগে শেষ করতে পারে। এমনে আগে পাল্লা দিয়ে কখনো পড়ি নাই, এবারই প্রথম। কিন্তু পড়াটা খুবই এনজয়েবল ছিল। এত মজায় মজায় আর কোন বই কখনো পড়েছি কিনা মনে করতে পারি না। যাহোক, শেষ পর্যন্ত সামিয়া, আমার প্রেমিকার কাছে হেরে গেছি। আমাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে টানা পড়ে শেষ করেছে।

এখন ‘পার্থিব’ নিয়ে কিছু বলা যাক। এ বছরেই ‘দূরবীন’ আর ‘মানবজমিন’ পড়েছিলাম। শীর্ষেন্দু মশাইয়ের চমৎকার লেখনীর তারিফ না করলেই নয়। তবে ‘দূরবীন’ আর ‘মানবজমিন’-এ কিছু বিরক্তিকর আর ফালতু চরিত্রের কারণে বই দুটোকে কাউকে পড়ার সাজেশন দিতে পারি না। কিন্তু ‘পার্থিব’-এ এমনটা হয়নি। কিছু অপ্রয়োজনীয় চরিত্র ছিল বটে, তবে কোনটাই বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়নি। ‘পার্থিব’-কে একটা উপভোগ্য উপন্যাস বলা যেতে পারে।

‘পার্থিব’-এর বর্ণনাভঙ্গি নন-লিনিয়ার ধরনের। বিভিন্ন দিক থেকে গড়িয়ে গেছে গল্পের গতিপথ। বিষ্ণুপদের ছেলেদের মধ্যে বিবাদ-কলহ, কৃষ্ণজীবনের প্রকৃতি আর পৃথিবী-ভাবনা, বীণাপানি আর নিমাইয়ের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন যেমন নিজস্ব গতিতে এগিয়ে গেছে, তেমনি অন্যদিকে হেমাঙ্গ আর চয়নের যাপিত জীবনের চালচিত্র চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ভাসতে থাকে।

ডজনখানেক চরিত্রের মধ্যে কৃষ্ণজীবন, নিমাই এবং হেমাঙ্গ—এই তিনটা চরিত্রকে আমার সবচেয়ে বেশি গভীর মনে হয়েছে।

কিছু চরিত্রকে একদম জোর করে ঢোকানো হয়েছে, যেমন আপা। আবার কিছু চরিত্রকে লেখক স্পেস দিতে পারেননি, অথবা দিতে চাইলেও দিয়ে উঠতে পারেননি—যেমন আশিস বর্ধন। নিজেকে খুব বেশি মনোযোগী পাঠক দাবি না করলেও এই বিষয়গুলো আমার চোখে পড়েছে। এসব সত্ত্বেও বইটির কোন অংশ বিরক্তিকর মনে হয়নি।

ইট ওয়াজ এ গুড রিড।
2 reviews2 followers
May 3, 2020
কলকাতার কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের সুনিবিড় জাল বুনেছেন লেখক এই উপন্যাসে।দেখিয়েছেন প্রকৃতিকে বাঁচানোর আকুতি,
প্রকৃতির সাথে মানুষের অনিবার্য সম্পর্কের কথা বার বার উঠে এসেছে।মানব মনের অনেক অজানা কুঠুরির দরজা খুলে দিয়েছেন লেখক এখানে।মানব সম্পর্কগুলো কিভাবে তৈরি হয়, পাল্টে যায়, হয় আরও গভীর তা দেখা যায় বীণা-নিমাইয়ের টানাপোড়ন, বুবকা-অনীশ, কিংবা অনীশ-অপর্ণার সম্পর্ক থেকে।কিছু সত্যকে শীর্ষেন্দু গাঢ়ভাবে তুলে ধরেছেন তার এ বিশাল লেখায় বারবার বিভিন্নভাবে দেখিয়ে।তাই বলে পড়তে গিয়ে বিরক্তির লেশ পাওয়া যাবে না।
Displaying 1 - 30 of 180 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.