বাংলাদেশের নরপিশাচ সিরিয়াল কিলার এখনো কারাগারে বন্দী, জানেন? পাকিস্তানের কুখ্যাত এক সিরিয়াল কিলার খুনের সেঞ্চুরি করেছিলেন, জানতেন? মনস্টার অফ আন্দিজের গল্প শুনেছেন? কিংবা সেই জার্মান সিরিয়াল কিলার যে কিনা বাজারে মাংসের দাম বেশি থাকায় মানুষের মাংস কেটে খেত, তার কথা? চকলেট শুধু আনন্দের নয়, প্রাণ হরণের কারণও হতে পারে, সেই ক্যান্ডিম্যানের ঘটনা শুনেছেন কখনো? অথবা বাস্তবের কিলার ক্লাউন, যে কিনা দিনে সমাজসেবী রাতে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতো? জ্যাক দ্য রিপারের নাম সবাই শুনেছি, কিন্তু জ্যাক দ্য স্ট্রীপারের নাম কি শুনেছেন? সাংবাদিক একের পর এক খুন করে সেসব খুনের ঘটনা পত্রিকায় ছাপিয়ে নাম কামিয়েছে, সেই সাংঘাতিক থুড়ি সাংবাদিক সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে পড়েছেন কখনো? টাকার লোভে নিজের স্বামী, সন্তান, প্রেমিককে খুন করা সেই ব্ল্যাক উইডোকে চেনেন? রোস্তভ রিপার, মৃত্যুর ডাক্তার বা ব্রুকলিনের ভ্যাম্পায়ারদের সম্পর্কে জানেন? নায়কোচিত দেখতে অথচ কাজেকর্মে পিশাচও লজ্জা পেয়ে যাবে, আন্দাজ করতে পারেন কার কথা বলছি? সন অফ স্যাম, এডমুন্ড কেম্পার বা দক্ষিণ আফ্রিকার টেড বান্ডি ওরফে মোজেস সিথোলের সম্পর্কে জানতেন?
মুভির থেকে বাস্তব অনেক বেশি ভয়ংকর, তার প্রমাণ এসব ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারদের আখ্যান পড়লেই বোঝা যায়। ২১ জন সিরিয়াল কিলারের বাস্তব ঘটনা আপনার মনের শান্তি চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতে পারে। পাঠক, সাহস আছে চ্যালেঞ্জ নেয়ার?
নরম, কোমল এবং দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এই বই নয়।
এই ধরনের বই পড়ার আগ্রহ আমার নেই বললেই চলে।অন্বয় আকিব কেমন লেখেন এটা জানার আগ্রহ থেকেই মূলত পড়লাম। আশ্চর্যজনকভাবে বেশ ভালোও লাগলো। সিরিয়াল কিলাররা বিকৃত মস্তিষ্কের এবং এদের অনেক কর্মকাণ্ড পড়াটাও মুশকিলের ব্যাপার। রগরগে বর্ণনা দেওয়ার প্রচুর সুযোগ থাকলেও লেখক খুব সংবেদনশীলতার সাথে, পেশাদার নির্বিকারত্ব সহকারে ঘটনাগুলো উপস্থাপন করেছেন (এমনিতে সাধারণ বর্ণনায় শব্দচয়নে ও আবেগ প্রকাশে আরেকটু সতর্ক হওয়া যেতো।) সিরিয়াল কিলারদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে লেখা অধ্যায়টা দারুণ; লেখক কখনো এই বিষয়টা নিয়ে আস্ত একটা বই লিখে ফেলবেন, এ আশা রাখতেই পারি।
থ্রিলারের প্রতি পাঠকের ঝোঁকের কারণ যদি জিজ্ঞেস করা হয় তো আপনার জবাব কী হবে? আমি আমার ক্ষেত্রে বলি, সাইকোলজি। অধিকাংশ মানুষই স্ট্যাবল লাইফ চায় তাহলে যারা ব্যতিক্রম তাদের ভিন্ন হওয়ার কারণ কী?
ফিকশনাল কিলার, নন-ফিকশন থেকে ভয়াবহ হয় এমনটাই ধারণা ছিল। কিন্তু এবার ধারণা বদলাতে বাধ্য হলাম। বইয়ে ডকুমেন্ট আকারে একুশ জন সিরিয়াল কিলারের কাহিনী আছে। থ্রিলার, ক্রাইম, মিস্ট্রি যেহেতু অনেক ভালো লাগে ভেবেছিলাম পড়া শেষ করতে সময় লাগবে না কিন্তু কিছু কিলারের ঘটনা পড়ে ব্রেক নিতে হয়েছে। এতো বিভৎস!!! সবগুলোই কিলারই ভয়াবহ রকমের নির্মম কিন্তু কিছু যেন নির্মমের সংজ্ঞাও ছাড়িয়ে যায়। কয়েকজন কিলারের কথা বলি এতোজনের মধ্যে যারা কিছুটা ভিন্ন। ব্রুকলিনের ভ্যাম্পায়ার- বিকৃত মস্তিষ্কের সাইকো কিলারকে ভোলা সম্ভব নয়। বইয়ে সবচেয়ে মারাত্মক লেখা আমার কাছে। Monster of the Andes- হতভাগ্য খুনি। যার ইতি অজানায়। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেন বেমালুম হাওয়া। The Candyman- কিলারের সমাপ্তি ভোলার মতো না। সিরিয়াল কিলিং এর জন্য আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। কিন্তু যদি নিজের মতোই কারো হাতে খুন হতে হয় তখন? ক্যান্ডিম্যান সম্ভবত স্বপ্নেও ভাবে নায় যে নিজের নির্মমতা নিজের কাছেই ফিরে আসবে।
হাতে গোনা কয়েকজন বাদে সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠার কারণ প্রায় একই সবার। এতোবছর গোপনে এতো খুন করে গেছে! কারো কারো তো বুদ্ধি দেখে অবাক হয়েছি। আই-কিউ লেভেল তো একজনের প্রায় আইনস্টাইনের কাছাকাছি! চরম কষ্টদায়ক মৃত্যু সামনে দেখেও কেউ ভয় পায়নি, কোনো অপরাধবোধও নেই! এতো এতো থ্রিলার বই পড়ার পরও বাস্তবের ক্রাইমগুলো কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। মনের উপর কেমন জানি চাপ পড়ছিল। আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, প্রাপ্তবয়স্ক ও মন শক্ত না হলে বইটা পড়া পাঠকের উচিত না। ওহো আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। একুশজন সাইকো কিলারের মধ্যে একজন বাংলাদেশের চাঁদপুরের।
ডকুমেন্টস আকারে লেখা হলেও বিরক্ত লাগে নাই পড়তে। যথেষ্ট সহজভাবে লেখা হয়েছে সাথে কিছু হিউমারও আছে। তবে বইয়ের প্রোডাকশনে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ছোটোবড়ো ফ্রন্ট সাইজ। লেখার চারিদিকে অতিরিক্ত জায়গা ছাড়া হয়েছে। কয়েক লাইন ভেঙে নিচে চলে গেছে। পেজে অর্ধেক লেখা বাকিটা ফাঁকা আবার অন্য পেজে বাকি অংশ। খামখা পেজ সংখ্যা বেড়েছে। বেশ কিছু ছবি অস্পষ্ট। বানান ভুলও চোখে পড়েছে। প্রচ্ছদটা সুন্দর।
২১ জন সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে লেখা এই বইটা অন্বয় আকিবের লেখা ১ম বই। তবে ১ম লেখা হলেও অন্বয় আকিবের ভাষা, শব্দচয়ন বেশ ভালো ছিলো। যে কারণে পড়তে গিয়ে কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। একের পর এক একই টাইপের ঘটনা পড়তে গেলে বিরক্ত হয়ে যাবার একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়। কিন্তু অন্বয় আকিব পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মত শুধু তথ্যের ঝাঁঝই দেখাননি, মাঝে মধ্যে গল্পের মত করেও কাহিনী শুরু করেছেন, যে কারণে বিরক্তি আসেনি বললেই চলে।
তবে পাঠক হিসেবে আমার মনে হয়েছে লেখকের খেয়াল করার মত কিছু বিষয় আছে। অনেক সিরিয়াল কিলারের কাহিনীর শুরুটা খানিকটা একই রকম হয়ে গেছে যেটা খানিকটা একঘেয়েমির সৃষ্টি করতে পারে। আবার একটা জায়গায় লেখক লিখেছেন, 'ড. হ্যারল্ড শিপম্যান বাংলাদেশী হলে বেঁচে গেলেও যেতে পারতো। এই কথা বলার কারণ বাংলায় দুটো প্রবাদ আছে, 'চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন' এবং 'লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু'। সে ইংরেজ, তাই সে এ প্রবাদগুলো জানতো না'। এটা ভুল, এ দুটো প্রবাদেরই ইংরেজী আছে। ১ম এই মূহূর্তে মনে না পড়লেও পরেরটার ইংরেজী হচ্ছে, 'Sin by greed is death by sin'. লেখার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে ভালো।
তবে অন্বয় আকিব যতটা এফোর্ট দিয়েছেন তার অর্ধেক এফোর্টও সম্ভবত কুহক কমিক্স এন্ড পাবলিকেশন্স দেয়নি। সম্পাদনা প্যানেল থেকে কতটুকু কাজ করা হয়েছে সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান কারণ, বেশ কিছু জায়গায় বইয়ে খুনীর নাম আর সাথের ফটোর ক্যাপশনের নামের বানান আলাদা। শিপম্যান ফটোর ক্যাপশানে হয়ে গেছে শীপম্যান, সিরিয়াল কিলার হয়ে গেছে সিরিয়া কিয়ার, সিন্ডি পলসেন হয়ে গেছে সিন্ডি পাওসেন, কেম্পার হয়ে গেছে ক্যাম্পার ইত্যাদি। বইটা দুটো ভার্শনে প্রকাশিত হয়েছে৷ ৩৫৪ পেজের এই বইটার পেপারব্যাকের মুদ্রিত মূল্য ৫৭০ টাকা আর হার্ডকভার মনে হয় ৭৭০ টাকা। তো এত দাম দিয়ে বই কেনার পর যদি দেখি বইয়ে সম্পাদনা খুব ভালো ভাবে করা হয়নি তখন তো খারাপ লাগেই। টুকটাক বানান ভুলো তো ছিলোই, তবে এটা অগ্রাহ্য করার মত।
আমার মতে এই বইয়ের সেরা অংশ 'Making of a serial killer' নামের অধ্যায়টা। আমার বেশ ভালো লেগেছে এই অংশটুকু। যদিও আমি বই পড়তেই পড়তেই ভাবছিলাম একটা মানুষ কেন সিরিয়াল কিলার হয়ে যায়? হ্যাঁ, শৈশবের ট্রমা থেকে যে হয় এটা অলমোস্ট সবাই জানে। কিন্তু বাচ্চাদের মন বোঝা তো টাফ। আমরা হয়তো একটা কথা, একটা কাজ সাধারণভাবে করেছি, যেটা শিশুদের মনে সাধারণ হিসেবে গৃহীত হয়নি। সিরিয়াল কিলারদের কাহিনী পড়ে আর এই বইয়ের শেষ অধ্যায়টা পড়লে, ছোটবেলায় শিশুদের মানসিক ব্যাপারগুলো কীভাবে আন্দোলিত হয় সেটার একটা ধারণা পাওয়া যাবে। এ ধারণা আপনাদের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিচারে ভূমিকা রাখলেও রাখতে পারে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে তো রাখবে।
ও আরেকটা শেষ কথা, বইটা পড়া নিয়ে আমি একটা সাজেশান দিই। এই বইটা আপনারা এক বসায়, দুই বসায় কিংবা রেগুলার অ্যালোকেটেড টাইমে পড়বেন না। আমি পড়েছি এবং ভুল করেছি৷ এটা আসলে ১-২ জনের কাহিনী করে বেশ অনেকবারে পড়ে শেষ করার বই৷ এ ক্ষেত্রে পড়তে গিয়ে একঘেয়েমির কোন সুযোগ থাকবেনা প্লাস তথ্যর বেসিসে অন্যরকম একটা স্পৃহাও কাজ করবে।
মানুষ আসলেই খারাপ প্রাণী এই দুনিয়ার। বইটাতে খারাপ মানুষগুলো কে অনেক সুন্দর করে তুলে ধরেছে লেখক। একটা ব্যাপার বেখাপ্পা লাগছে ইংরেজিতে অনেক কিছু লেখা। লেখক বুঝা উচিৎ ছিলো এমন পাঠিক বইটা পড়তে পারে যে শুধু বাংলা পড়তে পারে। ইংরেজি গুলো বাংলাতে অনুবাদ করে দিলে ভালো লাগত অনেক।
নানা তথ্য উপাত্ত দিয়ে সিরিয়াল কিলারদের ঘটনা নিয়ে বর্ণিত দারুণ এক বই।তবে এই বইয়ে অসম্পূর্ণ একটা জিনিস হল দুই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জোডিয়াক এবং জ্যাক দ্য রিপার এর নাম নেই!!এছাড়া অনেক জায়গায় পড়তে গিয়ে হালকা বোরিং ও লেগেছে। আর বইয়ের বেস্ট পার্টটুকু হচ্ছে " making of serial killer" এই অংশটুকু।বুঝাই যাচ্ছে লেখক বেশ খেটেছেন বইয়ের পেছনে
[সতর্কীকরণ: অপ্রাপ্তবয়স্ক ও কোমল হৃদয়ের কেউ এই রিভিউটা পড়বেন না। বেশ কিছু ব্যাপার সম্পর্কে ডি'স্টা'র্বিং আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে এখানে। ডি'স্টা'র্বিং কন্টেন্ট সমৃদ্ধ বইয়ের ডি'স্টা'র্বিং রিভিউ। নিজ রি'স্কে পড়ুন।]
সিয়াটল, ইউনাইটেড স্টেটস। গ্যারি রিজওয়ে লোকটা দেখতে একদম সাদাসিধে। বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই গ্যারিই খু'ন করেছিলো ৪৯ জন নারীকে। তার শি'কা'র'দের সবাই ছিলো পতিতা। গ্যারি প্রথমে হতভাগ্য নারীদের সাথে যৌ'ন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তারপর খু'ন করে এদের লা'শ ফেলে এসেছে গ্রিন রিভার সংলগ্ন গভীর বনে। এই কারণে কুখ্যাত এই সি'রি'য়া'ল কি'লা'র'কে বলা হয় গ্রিন রিভার কি'লা'র। ধারণা করা হয়, তার মোট খু'নের সংখ্যা ৭১। হতেও পারে। কারণ, শুধু ১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যেই গ্রিন রিভার এলাকা থেকে ৪০ জন নারীর লা'শ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। আর এই খু'নি অধরা ছিলো দেড় যুগেরও বেশি সময়। আজও গ্যারি রিজওয়ে ওরফে গ্রিন রিভার কি'লা'রের নাম শুনলে কেঁপে ওঠে অনেকে।
সাধারণ মানুষ, পুলিশ আর কয়েদি সবাই লোকটাকে ঘৃ'ণা করতো সমানভাবে। সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। কিন্তু এই লোকটার ওপর সবার ঘৃ'ণা ছিলো প্রচণ্ড। লোকটার নাম পেদ্রো লোপেজ। ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সি'রি'য়া'ল কি'লা'র'দের একজন। পেদ্রো কলম্বিয়া, পেরু আর ইকুয়েডর মিলে প্রায় ৩০০ মেয়ে শিশুকে ধ'র্ষ'ণ করে খু'ন করেছিলো সে। সি'রি'য়া'ল রে'পি'স্ট আর সি'রি'য়া'ল কি'লা'র পেদ্রো লোপেজ তার শিকারদের খুন করার সময় তাদের চোখের আলো নিভে যাওয়াটা এতোটাই উপভোগ করতো যে তাদেরকে খুন করার জন্য সে বেছে নিয়েছিলো দিনের আলোর সময়টা। ৩০০ নিষ্পাপ প্রা'ণ বিনা দ্বিধায় নিয়েছিলো সে। আইন কি এই নিকৃষ্ট অপরাধীর জঘন্য অপরাধগুলোর বিচার করতে পেরেছিলো শেষমেষ?
ডুইসবার্গ, পশ্চিম জার্মানি। লোকটার নাম ছিলো জোয়াকিম ক্রল। ভয়ঙ্কর এই সি'রি'য়া'ল কি'লা'র মেয়েদেরকে ধ'র্ষ'ণ করে খু'ন করতো। তারপর তাদের শরীর থেকে কে'টে নিতো মাংস। সেই মাংস রান্না করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খে'তো ক্রল। বি'কৃ'ত যৌ'ন'তা আর ক্যা'নি'বা'লি'জ'ম যেন জোয়াকিন ক্রল নামটার সমার্থক ছিলো। পশ্চিম জার্মানির অধিবাসীদের নিকট সে পরিচিত ছিলো ডুইসবার্গের মা'নু'ষ:খে'কো নামে। দেখতে আনস্মার্ট চেহারার এই সি'রি'য়া'ল কি'লা'র আদতে কি প্রচণ্ড স্মার্ট ছিলো তা ভাবলে এখনও অবাক হতে হয়।
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। একের পর এক নারী শিশু ও তরুণী খু'ন হয়ে যাচ্ছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে কোন সি'রি'য়া'ল কি'লা'র তাণ্ডব চালাচ্ছে৷ কিন্তু গোঁয়ারগোবিন্দ সোভিয়েত প্রশাসন তা মানতে নারাজ। নানারকম নাক উঁচু মন্তব্য আর কন্সপিরেসি থিওরি কপচানো ছাড়া তারা বিশেষ কিছু করলো না। যখন জানা গেলো না'র'কী'য় এই খু'ন'গুলোর পেছনে আন্দ্রে চিকাতিলোর হাত আছে, ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। প্রায় ৫৬ জন শিশু ও তরুণীকে ধ'র্ষ'ণ করে খু'ন করা এই সি'রি'য়া'ল কি'লা'র দীর্ঘদিন পর্যন্ত পুলিশ ও প্রশাসনকে ঘোল খাইয়ে গেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে এমন সি'রি'য়া'ল কি'লা'র আর একজনও এসেছে কি-না সন্দেহ।
দক্ষিণ সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া। ভয়ঙ্কর এক সি'রি'য়া'ল কি'লা'রের আবির্ভাব ঘটেছে। বেছে বেছে ধনীদের ওপর আ'ক্র'ম'ণ চালাচ্ছে সে। ধনী বৃদ্ধ ও নারীরাই এই ন'র'প'শু'র প্রধান টার্গেট৷ হতভাগ্য মানুষগুলোকে খু'ন করার সে বড়সড় একটা হাতুড়ি ব্যবহার করতো। দক্ষিণ কোরিয়ায় ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করা এই কুখ্যাত সি'রি'য়া'ল কিলার পরিচিত ছিলো রেইনকোট কিলার নামে। যার আসল নাম ইয়ো ইয়ং-চুল। প্রায় ২০ জন নিরীহ মানুষকে খু'ন করা এই সি'রি'য়া'ল কি'লা'রের নাম শুনলে আজও চমকে ওঠে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষজন।
উপরে এতোক্ষণ যা যা পড়লেন, ডি'স্টা'র্ব'ড আর ডি'জ'গা'স্টে'ড দুটোই হওয়া খুব স্বাভাবিক। উপরের এরা ছাড়াও 'দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম'-এ স্থান পেয়েছে টেড বান্ডি, এডমুন্ড কেম্পার, জন ওয়েন গেসি আর সান অভ স্যামের মতো আরো বেশ কয়েকজন সি'রি'য়া'ল কি'লা'রের কীর্তিকাহিনি। আছে বাংলাদেশি সি'রি'য়া'ল কি'লা'র রসু খাঁ-কে নিয়ে আস্ত একটা ফিচার। এগুলোর কোনটা যে কোনটার চেয়ে বেশি ডি'স্টা'র্বিং, কে কার চেয়ে বেশি নৃ'শং'স, কে কার চেয়ে বেশি ই'ভি'ল তা আসলে বোঝা কঠিন। বইটা শুরু করার পর আমি একটানা বেশিক্ষণ পড়তে পারিনি। নার্ভের ওপর রীতিমতো চাপ ফেলছিলো বইয়ে উল্লিখিত ন'র'প'শু'দের বী'ভৎ'স কর্মকাণ্ডগুলো। অনেক জায়গাতেই মনের ভেতরে প্রবল রাগের ঝড় টের পেয়েছি। ভি'ক'টি'ম'দের ওপর সহানুভূতি ও করুণায় মন ভারী হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় না'র'কী'য় সব বর্ণনায় ঘে'ন্না'য় নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসার যোগাড় হয়েছে। সত্যি বলতে, 'দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম' বইটা শেষ করে একরকম রিলিফ অনুভব করেছি। আগামী অন্তত কয়েক সপ্তাহ আমার সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ও ক্রাইম ফিকশন থেকে দূরে থেকে হালকা কিছু পড়তে হবে। তা না হলে এই বইয়ের প্রভাব কাটবে না।
একদল বি'কৃ'ত'ম'স্তি'ষ্ক মানুষরূপী অ'মা'নু'ষ'দের নিয়ে পড়া বেশ মানসিক ঝক্কির কাজ। আর তাদের নিয়ে লেখা? সেটা তো আরো কঠিন কাজ। কারণ, এদেরকে নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গিয়েও লেখককে নিশ্চয়ই প্রচুর স্টাডি করতে হয়েছে। এই কঠিন কাজটাই করে দেখিয়েছেন 'দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম'-এর লেখক অন্বয় আকিব। সহজ ভাষায় অথচ তথ্যসমৃদ্ধ ভাবে ২১ জন সি'রি'য়া'ল কি'লা'র'কে নিয়ে লিখেছেন তিনি। কেস স্টাডির ধাঁচে ও ফিচার আকারে লেখা এই ২১টা ট্রু ক্রাইম জার্নালে প্রচুর ছবি ও পেপার কাটিং ব্যবহার করা হয়েছে। এই জিনিসগুলো বইটা পড়তে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অন্বয় আকিবের লেখার ধরণ সহজ-সরল, সেই সাথে কিছু জায়গায় হিউমারের ছোঁয়াও ছিলো। ভালো লেগেছে পড়তে। কঠিন কোন টার্ম ব্যবহার না করার কারণে দুর্বোধ্য লাগেনি কোথাও।
'দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম' পড়তে গিয়ে খেয়াল করলাম, প্রত্যেক সি'রি'য়া'ল কি'লা'রে'রই সি'রি'য়া'ল কি'লা'র হয়ে ওঠার পেছনে বেসিক একটা প্যাটার্ন আছে। এদের বেশিরভাগেরই সি'রি'য়া'ল কি'লা'র হয়ে ওঠার পেছনে দায়ী চা'ই'ন্ড'হু'ড ট্র'মা, স্কি'জো'ফ্রে'নি'য়া, ল্যাক অভ এ'ম্প্যা'থি পরবর্তীতে ভেতরে জেগে ওঠা মানুষ শি'কা'রের নেশা। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে অন্বয় আকিব বইয়ের শেষে একটা জায়গায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। বইটা শেষ করার পর একটা কথাই মাথায় এসেছে সবকিছু ছাপিয়ে। সেটা হলো, মানুষ যেমন আসলেই সৃষ্টির সেরা জীব, একইসাথে এই মানুষই সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীবও বটে। মানবমনের অন্ধকারের থৈ পাওয়া আসলেই প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।
এই বইয়ে উল্লিখিত ২১ জন সি'রি'য়া'ল কি'লা'রের অনেকের ব্যাপারেই আগে কোথাও পড়েছি বা কোন ডকুমেন্টারি দেখেছি তাদেরকে নিয়ে। তারপরও এই বইয়ে স্থান পাওয়া ফিচারগুলো আবার পড়লাম। বেশ কিছু নতুন তথ্য জানা হলো৷ ট্রু ক্রাইমের ভক্তদের জন্য 'দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম' অবশ্যপাঠ্য একটা বই। তবে আবারও মনে করিয়ে দেই, এই বইটা অবশ্যই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও কোমল হৃদয়ের পাঠকদের জন্য ন���। সবকিছু সামলে পড়তে চাইলে বইটা আপনার জন্য রিকমেন্ড করছি।
"I always had a desire to inflict pain on others and to have others inflict pain on me. I always seemed to enjoy everything that hurt " - Albert Fish
পাঠ-প্রতিক্রিয়া : ফেসবুকে আমি ৪ জন মানুষের গল্প,ফিচার পড়ি। তার মধ্যে অন্বয় আকিব ভাই একজন। উনার সিরিয়াল কিলার নিয়ে ফিচার গুলো আমার অনেক ভালো লাগতো। সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আগ্রহ আমার সবসময়ই। সেজন্য উনার যখন এই বইটার ঘোষনা আসে তখন থেকেই বইটা লিস্টে ছিলো। তো শেষ করলাম কুখ্যাত ২১ জন সিরিয়াল কিলারের আখ্যান। নন ফিকশন বই আমি কম পড়েছি। সেজন্য এটাও মনে করেছিলাম একটানা পড়ে যেতে পারব না। সাথে অন্য একটা বই রেখেছিলাম যাতে এটা কোনো জায়গায় বিরক্তি লাগলে অন্য বই পড়ব। কিন্তু প্রথম দুই কিলারের ঘটনা পড়েই আর বইটা হাত থেকে রাখতে পারি নি। এক টানা পড়ে গিয়েছি বইটা। আগে সিরিয়াল কিলারদের সম্পর্কে একটু আধটু জানলেও বইটায় বিস্তারিত পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। ব্যাক্তিগতভাবে অনেক ব্রুটাল সিনেমা -সিরিজ দেখার পরেও ব্রুকলিনের ভ্যাম্পায়ার ওরফে অ্যালবার্ট ফিসের চিঠি পড়ে গা গুলিয়ে উঠেছিলো। প্রতিটি সিরিয়াল কিলারদের সম্পর্কে তথ্য সাজানোর ধরণ, লেখনীতে বইটা চমৎকার লেগেছে। বইটা সবার জন্য না। বইটা লিখতে যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন লেখক তা বইয়ে স্পষ্ট। নন ফিকশন জনরার সেরা বইয়ের তালিকায় এটা আমার কাছে প্রথম দিকে থাকবে। ফিকশনের জগতে এমন চমৎকার নন-ফিকশন লিখার জন্য লেখকে ধন্যবাদ। আশা করি সামনেও অন্য কোনো বিষয়ে এরকম নন ফিকশন বই পাবো।
প্রোডাকশন : বইটা যেহেতু অনেক তথ্যবহুল ও অনেক পাঠক কিংবা লেখক এটা সংগ্রহে রাখবে সেক্ষেত্রে প্রোডাকশন আশানুরূপ হয় নি। আমার কাছে পেপারব্যাক এডিশন। তার প্রথমেই সূচিপত্রে পৃষ্ঠা উল্লেখ করা নেই। বইটার ফন্ট একেক জায়গায় একেক রকম। কোনো জায়গায় ছোট, কোনো জায়গায় মিডিয়াম, কোনো জায়গায় অনেক বড় ছিলো। আবার কোনো জায়গায় দুই তিন শব্দ প্রিন্টই হয় নি। তাছাড়া ফন্ট একেক জায়গায় ঝাপসা ছিলো। অন্যদিক বইয়ের সাথে যেসব ছবি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে অনেক গুলো অস্পষ্ট। এটায় একটু হতাশ করেছে বইটা। কন্টেন্ট ভালো হওয়ার সাথে প্রোডাকশনটাও ভালো করার চেষ্টা করা উচিত পরের এডিশনে।
সিরিয়াল কিলার! সবার পরিচিত এক নাম। পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকের পছন্দের টপিক এটি। প্রায় সব সিলিয়ার কিলারের গল্পই অনেকটা একই হয়ে থাকে। পার্থক্য থাকে শুধু নৃশংসতায় কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে সে বিষয়ে।
গত শতাব্দীটি মানব ইতিহাসে যে ছাপ রেখে গেছে তা অনন্য৷ বিশ্বযুদ্ধ, বিশ্ব মন্দা, বিজ্ঞানসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই সমকালটি। কুখ্যাত সব সিরিয়াল কিলারদের জন্যও এই সময়টা ছিলো খুবই অনুকূলে। একেক দেশে একেকজন সিরিয়াল কিলার যেনো প্রতিযোগিতায় নেমেছিলো কে কার থেকে বেশি নিজেকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখবে।
কেউ শুধু হ/ত্যা করে মজা পেতো, কেউ হ/ত্যার আগে নির্যাতন করে। কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে লা/শ কেটে খেতো মাংসও৷ এমনই ২১ জন সিরিয়াল কিলারের গল্প আছে এই বইটিতে৷ নাম দেখে অনুবাদ বা গল্প মনে হলেও লেখক পরিশ্রম করেছে তার মৌলকতা ধরে রাখতে।
সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে অনেক মিল থাকাতে লেখার মাঝেও চলে এসেছে বেশ কিছু রিপিটেশন। বিশেষ করে উপমার ক্ষেত্রে। প্রথম লেখার ক্ষেত্রে এটি সামান্য বিষয়। তবে বইটির প্রথম প্রোডাকশনে আমি হতাশ। শুনেছি পরের মুদ্রণ সুন্দর করা হয়েছে। তাই আর নেগেটিভ দিকে গেলাম না।
এই বইটা আমার জন্য একটা মাইলফলক! কারণ এটা আমার জীবনে প্রথম কোনো নন-ফিকশন বই যা আমি সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করতে পেরেছি। লেখক অন্বয় আকিবকে সত্যিই অনেক ধন্যবাদ এমন একটা বই লিখার জন্য, যেখানে ২১ জন বাস্তব সিরিয়াল কিলারের গল্প খুব সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সবচেয়ে ভালো লাগলো যে লেখক শুধু ঘটনাগুলো তুলে ধরেননি, সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়াল কিলারদের মনস্তত্ত্ব, তাদের চিন্তার গহীন বিষয়গুলোও তুলে ধরেছেন, যা বইটাকে আরও শক্তিশালী করেছে। মনে হয়েছে, এই বইয়ের মাধ্যমে আমরা অপরাধের পেছনের বাস্তবতা আর মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করছি।
তবে এখানে একটা বিষয় খেলার মতন - আমার প্রথম সম্পূর্ণ শেষ করা ফিকশন বইটা ছিল Sherlock Holmes এর Study in Scarlet বইয়ের বঙ্গানুবাদ, আর সেটা ছিল অপরাধের রহস্যে ভরা। একইভাবে, আমার প্রথম সম্পূর্ণ শেষ করা নন-ফিকশন বইটাও ছিল একদম আলাদা রকমের, ২১ জন বাস্তব সিরিয়াল কিলারের জীবনী নিয়ে লেখা। অর্থাৎ, আমার ফিকশন এবং নন-ফিকশন উভয় যাত্রা শুরু হয়েছে ক্রাইম বা অপরাধ বিষয়ক বই দিয়ে! এটা দিয়ে কি আমার সম্পর্কে কোনো ধারণা করা সম্ভব? সেটা নাহয় ভবিষ্যতের 'আমি' এর জন্য তোলা থাক।
ফ্ল্যাপ থেকেঃ বাংলাদেশের নরপিশাচ সিরিয়াল কিলার এখনো কারাগারে বন্দী, জানেন? পাকিস্তানের কুখ্যাত এক সিরিয়াল কিলার খুনের সেঞ্চুরি করেছিলেন, জানতেন? মনস্টার অফ আন্দিজের গল্প শুনেছেন? কিংবা সেই জার্মান সিরিয়াল কিলার যে কি না বাজারে মাংসের দাম বেশি থাকায় মানুষের মাংস কেটে খেত, তার কথা? চকলেট শুধু আনন্দের নয়, প্রাণ হরণের কারণও হতে পারে, সেই ক্যান্ডিম্যানের ঘটনা শুনেছেন কখনো? অথবা বাস্তবের কিলার ক্লাউন, যে কিনা দিনে সমাজসেবী রাতে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতো? জ্যাক দ্য রিপারের নাম সবাই শুনেছি, কিন্তু জ্যাক দ্য স্ট্রীপারের নাম কি শুনেছেন? সাংবাদিক একের পর এক খুন করে সেসব খুনের ঘটনা পত্রিকায় ছাপিয়ে নাম কামিয়েছে, সেই সাংঘাতিক থুড়ি সাংবাদিক সিরিয়াল কিলার সম্পর্কে পড়েছেন কখনো? টাকার লোভে নিজের স্বামী, সন্তান, প্রেমিককে খুন করা সেই ব্ল্যাক উইডোকে চেনেন? রোস্তভ রিপার, মৃত্যুর ডাক্তার বা ব্রুকলিনের ভ্যাম্পায়ারদের সম্পর্কে জানেন? নায়কোচিত দেখতে অথচ কাজেকর্মে পিশাচও লজ্জা পেয়ে যাবে, আন্দাজ করতে পারেন কার কথা বলছি? সন অফ স্যাম, এডমুন্ড কেম্পার বা দক্ষিণ আফ্রিকার টেড বান্ডি ওরফে মোজেস সিথোলের সম্পর্কে জানতেন?
মুভির থেকে বাস্তব অনেক বেশি ভয়ংকর তার প্রমাণ এসব ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারদের আখ্যান পড়লেই বোঝা যায়। ২১ জন সিরিয়াল কিলারের বাস্তব ঘটনা আপনার মনের শান্তি চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতে পারে। পাঠক, সাহস আছে চ্যালেঞ্জ নেয়ার? নরম, কোমল এবং দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এই বই নয়।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
We serial killers are your sons, we are your husbands, we are everywhere. And there will be more of your children dead tomorrow. ~ Ted Bundy
সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি লেগেই আসছে। কিন্তু এসব খুনের ভেতর কিছু হত্যাকাণ্ড সত্যিই ভয়াবহ ও নৃশংস। পৃথিবীর বুকে এ রকম নৃশংস খুনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেসব খুনের বর্ণনা দেওয়া লোমহর্ষক ব্যাপার। পাঠকরাও থরথর করে কাঁপবে সেইসব খুনের বর্ণনা শুনে। শুধু একটা নয়, খুনিরা একের পর এক খুন করে নিজেদের নাম লিখিয়েছে সিরিয়াল কিলার হিসেবে। এসব সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে বিস্ময়ের ���েষ হবে না কখনওই। এদের নৃশংসতা যতবার প্রকাশ পেয়েছে, পৃথিবী কেঁপে উঠেছে। রক্ত, মৃতদেহ এসব যেন সিরিয়াল কিলারদের জন্য একেবারে খেলার সামগ্রী। মৃতদেহ কেটে টুকরো টুকরো করা থেকে তাদের কেটে খাওয়া- সিরিয়াল কিলারদের কর্মকাণ্ড সবসময়ই গা শিউরে ওঠার মতো ।
সিরিয়াল কিলিং বা সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। সিরিয়াল কিলারদের।নিয়ে যুগে যুগে বহু সিনেমা, গল্প, কাহিনীর জন্ম হয়েছে। বড়পর্দায় সাজানো জগতের খুনি কিংবা বইয়ের আদলে সৃষ্টি হওয়া খুনিরা ভয়ংকর হলেও বাস্তবের সিরিয়াল কিলাররা আরো নৃশংস, আরো ভয়ানক।
সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আগ্রহ আমার অনেক আগ থেকেই। নিজেও মাঝেমধ্যে কিছু ডকুমেন্টারি পড়তাম বিষয়গুলো নিয়ে, সেজন্য যখন এই বইটার ঘোষনা আসে তখন থেকেই বইটা লিস্টে ছিলো। মোট ২১ জন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের আখ্যান বইটিতে উঠে এসেছে। নন ফিকশন ঘরানার বই আমি সাধারণত পড়তে চাই না, যতোটা সম্ভব এভয়েড করি। সেজন্য প্রথমদিকে এটাও মনে করেছিলাম টিপিক্যাল ডকুমেন্টারি টাইপ হবে। কিন্তু আমাকে আশ্চর্য করে যখন প্রথম দুই কিলারের ঘটনা পড়লাম ব্যাস, আর থামায় কে? আর বইটা হাত থেকে রাখতে পারি নি। এক টানা পড়ে গিয়েছি।
আগে থেকে আমার সিরিয়াল কিলিং বা কিলারদের নিয়ে ধারণা থাকলেও বইটাতে নতুনভাবে অনেক অজানা বিষয় জানা গেছে। প্রচুর ডিটেইলসে লেখা।
প্রতিটি সিরিয়াল কিলারদের সম্পর্কে তথ্য সাজানো, তাদের অতীত, বর্তমান, দুর্দশার নানান ইতিহাস এবং শেষ পরিণতি পর্যন্ত যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। লেখকের লিখনশৈলী, প্রতিটা ঘটনার বর্ণনা বইটাকে জীবন্ত করে তুলেছে। হ্যাঁ বইটা সবার জন্য না, বিশেষ করে দূর্বল হৃদয়ের মানুষ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তো না-ই।
বইটা লিখতে গিয়ে লেখক কি পরিমাণ শ্রম দিয়েছেন তা বইয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। নন ফিকশন বইয়ের মাঝে এ বইটা আমার সেরা বইয়ের তালিকায় থাকবে।
সিরিয়াল কিলিং নিয়ে এ যাবত কালের সেরা একটা কাজ দিয়েছেন অন্বয় আকিব ভাই। লিখা পড়েই বোঝা যায় যে কতোটা কঠোর পরিশ্রম ও যত্নের সাথে উনি ইনফরমেশন কালেক্ট করে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন।আর বইটা পেজ টার্নার টাইপ, লাস্ট ইনফরমেশন জানা অব্দি আপনাকে আটকে রাখবে।আরেকটা ব্যাপার যেটা না বললেই নয় ভাইয়া বেশিরভাগ চ্যাপ্টারের শেষে কিছু বই সাজেস্ট করেছেন কিলারদের নিয়ে।এই তথ্য টা আসলেই অনেক জরুরি। মানে ওয়ার্ক স্মার্ট এন্ড হার্ড এট দ্যা সেম টাইম।আর বইয়ের কিছু স্পেসিফিক পার্টে আগেই বলা ছিল দুর্বল হার্টের হলে যেনো ওই জায়গা টুকু না পড়া হয়।ব্যাপারগুলি আসলেই খুবই প্রশংসনীয়।এত সুন্দর করে খুনের ডিটেইল মেনটেইন করে দিয়েছে যে মনে হবে প্রতিটা ঘটনা চোখের সামনে ঘটছে।সবগুলি কিলারের জীবন ও খুনের ধাচ আলাদা।টান টান উত্তেজনা ও থ্রিল ভাইবের পাশাপাশি মাঝে মাঝে রোলার কোস্টার রাইড ফীল পেয়েছি বইটাতে।প্রতিটা ছোট থেকে বড় ব্যাপারে খেয়াল রাখা হয়েছে।
সবগুলো সিরিয়াল কিলার এর কাহিনীই একই রকম হয়ে গেছে। Unique সিরিয়াল কিলার, Unique কাহিনী, Unique Investigation হলে জমে যেতো একদম। গুটিকয়েক কাহিনির পর আর তেমন পড়ার মন বসছিলো না।
কাহিনি মোটামুটি সব সেইম
১. ছোটবেলায় পারিবারিক সমস্যা ২. ধর্ষণ করে হত্যা, ৩. বিকৃত যৌনাচার ৪. ধরা না পড়ায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ৫. শেষ হত্যার সময় ভুল করে, ফলে ধরা খায়।
তবে কয়েক্টা কাহিনী আসলেই ভাল ১ম ৪-৫ টা রসু খাঁ স্টোনম্যান
লেখনীতে আনারি ভাব আছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েকবার পরে বোঝা লাগসে আসলে কি বলতে চাইসে কাকে বলতে চাইসে এসব!!
আর Overall ঠিক আছে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
"দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম" এর লেখক অন্বয় আকিব ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ভাই ব্রাদার-এর। যেহেতু দুইজনই পাঠক শ্রেণীর, সেহেতু বই নিয়ে আলোচনা করতে করতেই সক্ষতা গড়ে উঠেছে। লেখকের প্রথম বই আসার খবরে বেশ খুশি হয়েছিলাম। যদিও বইটির নাম দেখে ভ্রু কুঁচকে উঠেছিল। সম্ভবত কোনো সিনেমা বা অনেক পুরনো বইয়ের এমন নামকরণ ছিল বিধায় এই নামটি ঠিক পছন্দ হয়নি।
তবে বইটি শেষ করার পর মনে হচ্ছে, বইটির ক্ষেত্রে এরচেয়ে যোগ্য নাম আর হয় না। এই খেলা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকরতম খেলা। এই খেলা একবার শুরু হলে শেষ হওয়ার পূর্বে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। যদি দুর্বল চিত্তের মানুষ হোন, এই বইটি থেকে দূরে থাকা-ই শ্রেয়। এই বই মানসিকভাবে আঘাত করে, সেই আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা সবার নেই।
"এই দুনিয়ায় মানুষের চেয়ে হিংস্র, অসুস্থ আর নিষ্ঠুর প্রাণী দ্বিতীয়টি নেই। ধর্মগ্রন্থসহ প্রচুর বইয়ে উল্লেখ থাকে আমরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ প্রাণী। কিন্তু অধিকাংশ স্থানে এটা উল্লেখ করতে ভুলে যায় যে আমরা দুনিয়ার নিকৃষ্টতম প্রাণীও বটে।"
উপরের উক্তিটির সবচেয়ে যথাযথ উদাহরণ যেন "দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম" বইটি। মানুষ যে কতটা হতে পারে, বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন তার-ই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নাহলে দশ বছরের ফুটফুটে বাচ্চাকে দেখলে যেখানে সবার আদর করে দিতে ইচ্ছা করে, সেখানে সেই শিশুটিকে খাদ্যের উপকরণ হিসেবে ভাবা যায়? শিক্ষক হয়েও বিকৃত মানসিকতার উদাহরণ টেনে একের পর খুন! আবার যেই ডাক্তারের কাছে আমরা সুস্থ হওয়ার আশায় স্মরণাপন্ন হই, সেই ডাক্তার আপনার মৃত্যু তাড়িয়ে উপভোগ করছে! কেমন হবে বিষয়টা? কিংবা বলা যায় সেই সাংবাদিকের কথা, যায় একটি সংবাদে ছোট্ট শহর নড়ে যায়। সে-ই যখন খুনির ভূমিকায়, তখন কি বিশ্বাসের অস্তিত্ব থাকে?
কথায় আছে, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। এই লোভ বড়োই ভয়ংকর। যে লোভের বশবর্তী হয়ে নিজে পেটের সন্তানকেও ছাড় দেয় না, তাকে ভয়ংকর না বলে কি উপায় আছে? কেউ খুন করে অর্ধশত বা তার বেশি, কেউ তিনশ'র অধিক কেউ বা মোটে তিন। সংখ্যার ব্যবধান যতই হোক, প্রতিটি খুন-ই ভয়ংকর। এই ভয়ংকর গল্পগুলো, মানুষের বিকৃত মস্তিষ্কের ইতিহাস কিংবা লোভে অন্ধ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা শুনলে কেমন যেন শিউরে উঠতে হয়।
যেই চকলেট আমাদের প্রিয়, সেই চকলেটের লোভে কারো মৃত্যু হতে পারে। ভাবা যায়? আবার মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে যে ব্যক্তি মানুষের মাংস রান্না করে খায়, তাকে কি স্বাভাবিক বলা যায়? ভয়ংকর লাগছে না শুনতে? কেউ কেউ একে খেলা মনে করত। এই খেলার নিয়ন্ত্রণ তার হাতে, কারো মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হলে নিজেকে ঈশ্বর ভেবে নিত কেউ কেউ।
শুধু কি ইউরোপ, আমেরিকার গল্প শুনলেই হবে? এই উপমহাদেশের গল্প জানতে হবে না? নিজ দেশ, মানে এই বাংলাদেশেও এক সিরিয়াল কিলারের উত্থান হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল ১০১ জন নারীকে হত্যা করা। কয়টি পেরেছিল সে? অপরাধী ভুল করে। আর সেই ভুলেই তার অপকর্ম ধরা পড়ে। পাকিস্তানের সিরিয়াল কিলার জাভেদ ইকবাল একশ'রও অধিক শিশুকে হত্যা করেছিল বলে জানা গেছে। কী হয়েছিল তাদের? কিংবা ভারতের স্টোনম্যান? কেন তার ক্ষোভ গিয়ে পড়েছিল পথের ধারে বাড়িঘর বানিয়ে ফেলা অসহায় মানুষদের প্রতি? স্টোনম্যান কি একজন? বোম্��ে, কলকাতা, আসাম... ভিন্নভিন্ন জায়গায় একই ধরনের খুনের পুনরাবৃত্তি যে রহস্যের জন্ম দেয়!
একজন সিরিয়াল কিলারের জন্ম হয় কীভাবে? খুব সহজ যে বিষয়টি জানা যায়, তা হলো পরিবেশ পরিস্থিতি। ছোটোবেলা থেকে যার জীবন কেটেছে বিভীষিকায়, তার মানসিক অবস্থা যে সহজ হবে না তা অনুমেয়। আর সে কারণেই অপরাধ জগতে প্রবেশ। সেখানে নিজেকে ঈশ্বর মনে করা, সমাজকে শিক্ষা দেওয়া বা যে কারণে নিজের শৈশব আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো হলো না; তার উপর প্রতিশোধ নেওয়া! গল্পগুলো একই। হোক সেই গল্পকার আমেরিকান বা ইউরোপিয়ান, কিংবা ল্যাটিন দেশের কেউ অথবা কোরিয়ান বা আফ্রিকান।
এর যে ব্যতিক্রম নেই তা নয়, তবে ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না। একজন সিরিয়াল কিলারের মানসিক স্থিতিশীলতা ধীরে ধীরে লোপ পেতে তাহলে। নানান মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নতুন নতুন খেলায় মেতে ওঠে। তাদের গভীরে থাকা সাইকোপ্যাথ জেগে ওঠে। অসুস্থতার লক্ষণ কখনো প্রকাশ পায়, কখনোবা না; তবে কিছু মানুষের জীবন ঠিকই হারিয়ে যায় পাগলাটে কিছু মানুষের সুখের অসুখে।
"দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম" বইটিতে লেখক অন্বয় আকিব তুলে এনেছেন সমাজের এমন সব নিকৃষ্ট, নিষ্ঠুর মানুষদের কথা। যাদের কর্মকাণ্ড শুনলে শিউরে উঠতে হয়। পড়তে গিয়ে যেন তাড়িয়ে বেড়ায় দুঃস্বপ্ন। এমন গল্পগুলো লেখক কীভাবে লিখলেন, ভেবে অবাক লাগে। সহমর্মিতা জেগে ওঠে।
পুলিশের নাকের ডগায় বসে একের পর খুন হচ্ছে, পুলিশ কিছু করতে পারছে না। কেন? লেখকের লেখায় যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হচ্ছে পুলিশের উদাসীনতা। এছাড়া সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো ছিল না। তাছাড়া সিরিয়াল কিলারদের লক্ষ্য বেশিরভাগ সময় সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ বলে হয়তো পুলিশের মধ্যে ঢিলেমি কাজ করত। বর্তমান সময়ের মোট যোগাযোগ মাধ্যম, প্রযুক্তি কিংবা পুলিশের তৎপরতা ঠিক মতো থাকলে হয়তো এত এত মানুষকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হতো না
লেখকের লেখনশৈলী ভালো লেগেছে। শব্দচয়ন আর গল্পের গতি ভালো ছিল। কিছু ক্ষেত্রে থ্রিলার গল্পের অনুভূতি হচ্ছিল। অনেক জায়গায় অবশ্য ফেসবুকীয় ছাপ স্পষ্ট। লেখকের লেখার সাথে যাদের পরিচয়, তাদের সমস্যা না হলেও নতুন পাঠকদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। লেখক কিছু জায়গায় নিজস্ব বর্ণনা ব্যবহার করতে পারতেন। যেমন এক জায়গায় পলিগ্রাফ টেস্টের কথা বলা হয়েছে। সেই টেস্ট কীভাবে করে, এর প্রক্রিয়া ইত্যাদির বর্ণনা দিতে পারতেন। পাঠকের উপহার হতো। এছাড়া বিভিন্ন অংশে লেখকে বেশ কিছু বই, সিনেমার রেফারেন্স টেনেছেন এভাবে; অমুক সিনেমা বা বইয়ের অমুক চরিত্রের কথা মনে আছে? যদি লেখাটা এমন হতো, অমুক বই বা সিনেমায় অমুক চরিত্র ছিল; তাহলে মনে হয় যুক্তিসঙ্গত হতো।
"দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম" বইতে লেখক অনেক উক্তি তুলে ধরেছেন। যার প্রায় সবটা ইংরেজিতে। আমি বুঝতে পেরেছে, লেখক সব উক্তি হুবহু তুলে ধরেছেন। কিন্তু ইংরেজির পরবর্তী অনুবাদ হলে বোধহয় ভালো হতো। এই বই হয়তো এমন কারো কাছে যাবে, ভালো ইংরেজি হয়তো বুঝতে পারে না। তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে না? পড়তে গিয়ে গল্পের গতিতে আমিই বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলাম। এমনকি কিছু অধ্যায়ের নাম ইংরেজিতে ছিল। সেগুলো বাংলা অক্ষরে লিখলে বোধহয় ভালো হতো।
তবে লেখকের গল্প বলার ধরন ভালো লেগেছে। কিছু জায়গায় মনে হচ্ছিল, কেউ আসরের মধ্যমণি হয়ে গল্প বলে যাচ্ছে। আর চারিপাশে গোল হয়ে গল্প শুনছি। এই অনুভূতি দারুণ লাগছিল। শুধু তথ্য তুলে ধরার দিকেও লেখক মনোযোগ দেননি, সেই সাথে নিজে কিছু সংযুক্ত করে গল্পগুলোকে আরও প্রানবন্ত করে তুলেছিল। নাহলে বিভৎস এসব বর্ণনা সহ্য করার পর্যায়ে থাকত কি না সন্দেহ। শেষ অধ্যায় একজন সিরিয়াল কিলার কীভাবে জন্ম নেয়, সে বিষয়ে লেখকের বর্ণনা ভালো লেগেছে।
বইটির অনেকাংশ জুড়ে সমালোচনার জায়গা রয়েছে। বিশেষ করে প্রকাশনীর উদাসীনতা ই দায়িত্বজ্ঞানের অভাবে বইটির প্রোডাকশন নিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে।
বইয়ের ফন্ট ছিল বিভিন্ন আকারের। কোথাও বড়ো, কোথাও ছোটো। কোথাও চ্যাপ্টা, কোথাও বিশাল হয়ে গিয়েছিল। কোথাও আবার ঝাপসা, আবার অনেক জায়গায় কালির পরিমাণ বেশি। একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। তাছাড়া কোনো কোনো পৃষ্ঠায় লেখা সমাপ্ত না করে পরের পৃষ্ঠায় লেখা চলে গিয়েছে, আবার বাক্য সমাপ্ত না করে পরের অনুচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এগুলো প্রকাশনীর উদাসীনতা ছাড়া কিছু না। লেখক বইটি লিখতে যে পরিশ্রম করেছেন, সেই পরিশ্রম অনেকটাই নষ্ট হয়েছে প্রকাশনীর খামখেয়ালিপনার কারণে।
বানান ভুলের আধিক্য ছিল অনেক। ঠিক মতো সম্পাদনা করা হয়নি। বইয়ের ডাস্ট কভারটাও পছন্দ হয়নি। কাগজের দেওয়া ডাস্ট কভার যেকোনো আঁচড়ে ছিঁড়ে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেন এ উদাসীনতা? একটি বই প্রকাশের দায়িত্ব যখন প্রকাশনীর, তখন আরেকটু দায়িত্ববান হওয়ার প্রয়োজন ছিল না?
পরিশেষে, সিরিয়াল কিলারের গল্পে সিনেমা বা উপন্যাস তৈরি হয়। সেসব গল্পে থ্রিলের অভাব হয় না। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে যারা সত্যি খুনে মেজাজে জীবন কাটিয়েছে, তাদের গল্প আরও ভয়ংকর। উপন্যাস বা সিনেমার সাথে এর মিল নেই। এখানে বিভৎসতা আরও বেশি। এমন সব সাইকোপ্যাথদের গল্পে শিউরে না উঠে উপায় থাকে না। মানুষ এত নির্মম হতে পারে! কীভাবে? সৃষ্টির সেরা জীব যেন হয়ে ওঠে নিকৃষ্টতার উজ্জ্বলতম নিদর্শন।
বই : দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম লেখক : অন্বয় আকিব প্রকাশনী : কুহক কমিক্স এন্ড পাবলিকেশন পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৩৫০ মুদ্রিত মূল্য : ৭৭০ টাকা ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.২/৫
শিশুরা হলো কাদামাটির মতো। তাদের আপনি যে আকার দিবেন, সেই আকারেই বড় হবে। তারা অনুকরণ করে আশেপাশের মানুষকে। ভালো পরিবেশে থাকলে ভালো কিছু শিখবে; আর যদি খারাপ পরিবেশে বড় হয় তাহলে তার পরবর্তী জীবনে এর প্রভাব বয়ে বেড়াতে হবে। উক্ত বিষয়াবলীর উপরেই দাঁড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের একটি শাখা, মনোবিজ্ঞান। যেখানে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যাবলী ও অস্বাভাবিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আমাদের দেশে খুব একটা না হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সিরিয়াল কিলারদের দৌরাত্ব্য ব্যাপক। অধিকাংশ সিরিয়াল কিলারদের অতীত ঘাটলে দেখা যায় শৈশবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তাদের মানসিকতা একেবারেই আলাদা হিসেবে বিকশিত হয়েছে। অপরাধের প্রতি আকর্ষণের কারণে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করেনি তারা।
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত অন্বয় আকিবের প্রথম বই ' দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম'। বইটিতে মোট ২১ জন অজনপ্রিয় অথচ নৃশংস সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ে উঠে এসেছে তাদের সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠা থেকে শুরু করে জীবনের শেষ পরিণতি। লেখক কারণ অনুসন্ধান করেছেন, কেন তারা এই ঘৃন্য পথ বেছে নিয়েছিল! একইসাথে উক্ত সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে জানার জন্য বোনাস হিসেবে কিছু বইয়ের নাম অধ্যায় শেষে দিয়েছেন, যা আগ্রহী পাঠককে আরো বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে।
পড়াশোনা কিংবা সাধারণ বুদ্ধিমত্তায় সিরিয়াল কিলাররা পিছিয়ে থাকলেও মানুষ হত্যার সময়ে তাদের অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে খুন করেছে। অথচ আশেপাশের মানুষ ত দূরে থাক, শয্যাসঙ্গিনী পর্যন্ত টের পায়নি কার সাথে সে সংসার করছে!
ছোট বড় কোনো অসুখ হলেই আমরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। ত��রা আমা��ের রোগ মুক্তির মাধ্যম হিসেবে চিকিৎসা করেন এবং ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু সেই ডাক্তারই যদি রোগমুক্তি বাদ দিয়ে রোগীদের হত্যা শুরু করে তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়? স্টিভেনসনের ড. জেকিল ও মি. হাইড যারা পড়েছেন, তারা একই ব্যক্তির দ্বৈত সত্ত্বা সম্পর্কে জানেন। তেমনই এক ডাক্তার ছিল হ্যারল্ড ফ্রেডরিক শীপম্যান। নিজের চেম্বারে আগত রোগীদের মরফিনের ওভারডোজের মাধ্যমে হত্যা করে সে। তবে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন একসময় তার ভুল হয় এবং প্রশাসনের হাতে ধরা পড়তে হয়। এই মুখোশধারী ডাক্তারও পার পায়নি ।
বুদ্ধিমত্তার সাথে নিষ্ঠুরতার মিশেল ঘটলে সেই মানুষের চেয়ে ভয়ংকর কিছু হয়না। একজন সিরিয়াল কিলার যেন আরেকজনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। একজন সাংবাদিক যে কিনা নিজেই হত্যা করে, আবার সে সবার আগে পত্রিকায় এই ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করে পত্রিকাকে জনপ্রিয় করে তোলে ;তখন তার বুদ্ধিমত্তা নি���়ে আপনার কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। টেড বান্ডি কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার টেন্ড বান্ডির ইতিহাস পড়লে পাঠকের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হতেই পারে। ফিশ অর্থাৎ মাছ আমাদের আমিষের একটি বিরাট চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু ফিশ নামের একজন সিরিয়াল কিলার ছিল, যে কিনা মানুষের মাংস দিয়ে নিজের বিকৃতমস্তিষ্কের চিন্তাকে প্রকাশিত করতো। সিরিয়াল কিলারদের সবচেয়ে সহজ শিকার শিশু ও নারীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা কিংবা মৃতদেহকেও ধর্ষণের মতো বীভৎস ঘটনার জন্ম দিয়েছে তারা। কোনো একটি বইতে পড়েছিলাম বাঙালি অপরাধীরা তেমন বুদ্ধিমান না, তারা 'ধর তক্তা মার পেরেক' প্রবাদের মতো অপরাধ করে । যার ফলে তারা সহজেই ধরা পড়ে। তবে বইটিতে বাংলাদেশের একজন সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ-র ব্যাপারা জানা যায়।
বইয়ের শেষ অধ্যায়টি বেশ ভালো লেগেছে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কীভাবে সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক। আমার মনে হয় বাংলাদেশে সিরিয়াল কিলার তৈরি না হওয়ার আরেকটা কারণ হতে পারে শৈশবের ট্রমাগুলো স্বাভাবিক হিসেবে নেওয়া। বাচ্চাদের মারধোর করা আমাদের দেশে খুব স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। এছাড়া আমাদের সামাজিক অবস্থানটাও প্রভাব রাখে। ইউরোপ-আমেরিকার শিশুদের চাইতে অনেক বেশি ভায়োলেন্সের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের শিশুরা যায়। তবে কিনা এদেশে যৌথ পরিবার থাকায় একাকীত্ব কম অনুভব করে তারা। এজন্য আর মানসিক বিকৃতি ততটা প্রকট আকার ধারণ করতে পারেনা।
অপরাধমূলক সিনেমা কিংবা বইয়ের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে আগে থেকেই। তবে সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে বিস্তারিত কোনো বই কখনো পড়া হয়নি, তাও আবার নন-ফিকশন। যখন এই বইটা প্রকাশিত হবে এমন পোস্ট দেখলাম তখন নতুন লেখক হওয়া সত্ত্বেও একটা আশা রেখেছিলাম বইটা পড়বো। লেখক একেবারেই প্রথম বইতে এমন একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন যা আমার মতে দুরূহ কাজ। কারণ অপরাধীদের নিয়ে লেখা বইগুলো পাঠকের কাছে আকর্ষণী করে তোলা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করি।
একটা নন-ফিকশন বই লেখার জন্য লেখকদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তথ্যগুলো সাজানো, পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা থেকে শুরু করে একটি নিখুঁত সমাপ্তি দেওয়ার কাজগুলো প্রথম বই হিসেবে লেখক প্রশংসার যোগ্য। তবে মুদ্রার ওপিঠও থাকে। প্রতিটি সিরিয়াল কিলারদের জীবনের প্রথম বর্ননাগুলোর ধাঁচ আমার কাছে একইরকম মনে হয়েছে। এখানে কিছুটা ভিন্নতা আনলে পাঠকের কাছে আরেকটু বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারতো। বইয়ের কিছু কিছু জায়গায় পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি ফেসবুকের লেখা পড়ছি মানে ফেসবুকীয় ঢঙে লেখা বর্ননা। ইউরোপ-আমেরিকার সিরিয়াল কিলারদের ঘটনাগুলো বর্ননার সময় আমাদের দেশের তুলনামূলক প্রসঙ্গ এনেছেন লেখক। এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কিছু জায়গায় বিদেশিদের নিয়ে লেখকের একটু বেশি আগ্রহ দেখা গিয়েছে। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ করেছি, তা হলো একটা তাড়াহুড়ো করে লেখার প্রকৃতি। লেখকের আরেকটু সময় নিয়ে বাক্যগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্যতা রাখা দরকার ছিল বলে মনে করি। সময় নিয়ে লিখলে হয় কি, নিজের লেখার ভুলগুলো আপনা হতেই চোখে পড়ে। লেখক তাঁর প্রথম লেখা হিসেবে যে বিষয়টি নির্বাচন করেছেন, তাতে বলা যায় লেখকের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। ভবিষ্যতেও আরো ভালো কিছু পাওয়ার আশা ত রাখতেই পারি।
পুরনো লেখকদের বইয়ের ব্যাপারে প্রকাশনী নিয়ে তেমন একটা কথা বলিনা। তবে নতুন লেখকদের বইয়ের ব্যাপারে না বললেই নয়। এই বইটির জন্য লেখক যতটা পরিশ্রম করেছেন, প্রকাশনী তার ছিটেফোঁটা করেনি। তাছাড়া বইটার সম্পাদনা পরিষদও তেমন ভালোভাবে কাজ করেনি। একটা ব্যাপার অনেকের কাছে বিদঘুটে লাগতে পারে, তবে আমি গুণে দেখেছি বইটাতে মোট ৪৪৪ টি ভুল আছে। ভুলগুলোর মধ্যে বানান, বাক্য, অনুচ্ছেদ বিন্যাস, সাল, নাম ইত্যাদি ভুল রয়েছে। বইটিতে প্রবাদ বাক্যগুলোও হুবহু দেওয়া হয়নি; পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছে। ছবিতে নাম দেওয়া হয়নি। ইংরেজি লেখার পাশাপাশি বাংলা অনুবাদ দেওয়া উচিত ছিল, এতে করে ইংরেজিতে অনভ্যস্ত পাঠকের সুবিধা হতো। ফন্টের ভিন্নতা রয়েছে। সূচিপত্রের পুরোটা বাংলায় হলে আদর্শ হতো। সর্বনাম পদের সাথে ক্রিয়াপদের অসামঞ্জস্য রয়েছে অনেক জায়গায়। আমার বইটিতে চারটি পৃষ্ঠা একেবারে সাদা রয়েছে। ছাপা হয়নি। কুহক কমিক্সের বদনাম আগেও অনেককে করতে দেখেছি, এবার তার চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়া গেল।
তো সর্বশেষ কথা হলো এত সব ভুল ভ্রান্তি এড়িয়ে বইটা পড়তে পারেন, যাদের অপরাধবিজ্ঞানে আগ্রহ আছে। দূর্বল চিত্তের পাঠকদের না পড়াই উচিৎ। অনেক বীভৎস ঘটনার বর্ননা আছে। কোন মানুষের ভেতরে কী আছে সেটা আমরা বাইরে থেকে কেউই জানতে পারিনা। এই বইটি তাদের নিয়েই লেখা যাদের 'মুখে মধু, অন্তরে বিষ'। হ্যাপি রিডিং।
একটি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি, আপনি যদি দূর্বল চিত্তের মানুষ হোন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে নৃশংস, নিকৃষ্ট আর বিকৃত মানসিক বিকারগস্ত মানুষ সম্পর্কে জানার মতো মানসিক দৃঢ় না হোন তবে লেখাটি বর্জন করুন এবং কী বইটিও।
উপরের এই কয়টা লাইন দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এই বইয়ে কী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে! পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণীর কথা উঠলে কার কথা অধিকাংশের মাথায় আসবে বলুন দেখি!! বাঘ, সিংহ, হায়েনা, কুমির এমন অসংখ্য উদাহরণ নিশ্চয়ই! আর যদি বলা হয় পৃথিবীর সর্বোত্তম প্রাণী কী? তবে অনেকেই বলে বসবেন মানুষের কথা। কিন্তু এই বইয়ে এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে জানবেন যাদের সম্পর্কে জানার পর আপনি একই সাথে স্বীকার করবেন মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণীও।
ইংল্যান্ডের ড. হ্যারল্ড ফ্রেডরিক শিপম্যান এর কথাই প্রথমে বলা যাক। লোকটা তার এলাকায় বেশ ভালো ডাক্তার হিসেবেই পরিচিত। প্রয়োজনে রোগীর বাড়িতে গিয়ে পর্যন্ত চিকিৎসা দিয়ে আসেন। অবশ্য খুব অল্প বয়সে মাকে হারিয়ে শৈশবে যে আঘাতটা পেয়েছিলো তা তাকে আজীবনই বয়ে যেতে হয়েছে সেটা অবশ্য লোকটা কাউকে বুঝতে দেয়নি। আর কে বলবে এই ভালো ডাক্তার নামে খ্যাতি অর্জন করা লোকটা তার ভালো মানুষের আড়ালে ২৩ বছর ধরে মানুষ হ*ত্যায় মেতে ছিলো, করেছে ২৫০+ খু*ন।
শুধু কে সে, রাশিয়ার মতো কড়া শৃঙ্খলা আর কঠোর নিরাপত্তা বেস্টনিতে থাকা দেশের মানুষ হয়েও সেখানকার আন্দ্রে রোমানোভিচ চিকাতিলো নামক এক লোকটা প্রায় ৫৬জন নারীকে খু*ন করে গেছে একের পর এক। তাঁর নৃশংসতার তীব্রতা আর তাকে খুঁজে বে��� করার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি তো গল্প, সিনেমাকেও হার মানাবে।
বইটির মধ্যে পড়া আমার কাছে সবচেয়ে বেশি যাকে নৃশংস আর বিকৃত মানসিকতার সর্বোচ্চ অতিক্রম করা সিরিয়াল কি*লার মনে হয়েছে তার নাম আলবার্ট ফিশার। তাকে কেন নিকৃষ্ট বলছি জানেন সে এক বাচ্চাকে রান্না করে খে*য়ে ফেলেছিলো, তা নিয়ে আবার রসিয়ে রসিয়ে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলো সেই বাচ্চার পরিবারকে। চিন্তা করে দেখুন সে কী পরিমাণ বিকৃত মনস্তাত্ত্বিক অবস্থায় চলে গিয়েছিলো।
সাংবাদিক ভ্লাদো তানেস্লিও নামক আরেক সিরিয়াল কি*লারও খুব ইন্টারেস্টিং ছিলো, সে নিজেই খু*ন করে তার বর্ণনা আবার পত্রিকায় দিত। মানুষ মনে করতো সে তো সত্যকে তুলে ধরছে। আবার সব সিরিয়াল কি*লারই যে ছেলে ছিলো এমন কিন্তু না। জুডি বুয়েনোয়ানো নামক এক মহিলা টাকার লোভে খু*ন করেছিলো স্বামী, সন্তান আর প্রেমিককে। তাও আবার এমন ভাবে যা ধরা পড়ার কথাও ছিলো না তার।
এদিকে মোজেস সিথোল দক্ষিণ আফ্রিকায় মেয়েদের বিভৎস রকমভাবে ধ*র্ষণ ও খু*ন করেছে। এদিকে ফ্লোরিডায় টেড বান্ডিও একই কাজ চালিয়েছে। দুইজনই সুদর্শন ছিলো। তাদের চেহারা দেখলেই মেয়েরা প্রেমে পড়ে যেত আর তার পরিণতিটা জীবন দিয়ে ভোগ করতো।
এসব সিরিয়াল কি*লারদের নিয়ে পড়তে গিয়ে খেয়াল করেছি এদের প্রায় সবারই একটা বিভৎস রকম শৈশব ছিলো, যেখানে তারা নানা নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সেই নিপিড়ন কখনো পরিবার থেকে এসেছে তো কখনো সমাজই তাদের বানিয়ে দিয়েছে সিরিয়াল কি*লার। আর দিন শেষে তাদের মানসিক অবস্থাটা এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যেখানে তারা খু*ন, ধ*র্ষণের মাঝেই আত্মতৃপ্তি খোঁজে পেয়েছে তা নিয়ে তাদের এবং কী অনুশোচনাও নেই।
একটা কথা আছে না, শিশুদের মন কাঁদার মতো, তা যেমন আকৃতি দিবেন তেমনই ধারণ করবে। এদের শিশু কালই পরবর্তীতে তেমনই অনেকের জন্য অকাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। আর এখানে সবচেয়ে বেশি স্বীকার হতে দেখা গেছে শিশু, যুবতী আর বৃদ্ধদের। বছরের পর বছর হ*ত্যাকান্ড চালানোর পরও অনেকের তাদের কাছের মানুষও জানতে পারেনি তাদের আসল রূপ। কী দারুণ অভিনেতা বলতে হয় এই সিরিয়াল কি*লারদের। যাদের এক একজনের ইতিহাস, নৃশংসতা থ্রিলার গল্পকেও হার মানায়।
বইটি লেখকের প্রথম বই, অথচ পড়তে গেলেই লেখার ধরণ, কাহিনির উপস্থাপন সবকিছু এতটাই পরিপক্ব মনে হবে যেন অনেকদিন ধরেই তিনি বই লিখছেন। প্রতিটি সিরাল কি*লারের ক্ষেত্রেই লেখক তাদের খু*নের প্যাটার্ন, খু*নি হয়ে উঠার কারণ হিসেবে তাদের শৈশবের গল্প সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আদাজল খেয়ে ঘোড়া দৌড় করানোর বর্ণনা বেশ আকর্ষণিয় ভাবেই উপস্থাপন করেছেন যা আপনাকে শেষ অব্দি টেনে নিয়ে যাবেন।
মাঝে মাঝে খু*নির বক্তব্য লেখক ইংরেজি উপস্থাপন করেছেন, প্রথম দিকে মনে হয়েছিলো এসব বাংলা দিলেই ভালো হতো। কিন্তু কিছু কিছু বক্তব্য পড়ে মনে হয়েছে ইংরেজিই ঠিক আছে, বাংলাতে এসব বর্ণনা আরো বিভৎস হয়েই ধরা দিতো যা সহ্য করা কঠিন হতো।
সত্যিকারের সিরিয়াল কি*লারদের জীবন নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তারা চাইলে বইটি পড়তে পারেন। তবে এখানে এমন অনেক বর্ণনা আছে তা খুবই নৃশংস যা সহ্য করা কঠিনই হবে। তারপরও বইটি পড়া যখন শেষ করবেন তখন ভাবতে বাধ্য হবেন। প্রতিনিয়ত আমাদের আশেপাশেও না সিরিয়াল কি*লার ঘুরে বেড়াচ্ছে কি না আমরা জানি না। যারা তাদের অভিনয়, সুন্দর সুদর্শন চেহারার আড়ালে কী ভয়ানক পশু শয়তানের মতো চেহারা লুকিয়ে রেখেছে।
কোনো এক লেখক বলেছিলেন মানুষের ভিতর দুটো স্বত্বা থাকে জীবস্বত্বা আর মনুষ্যত্ব। জীবস্বত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণের উপায় হলো শিক্ষা। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন রয়ে যায়, কোন শিক্ষার কথা বলছেন লেখক? এই বইটির অনেক সিরিয়াল কি*লারই কিন্তু বেশ উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন।
বইটি আমি বেশ উপভোগ করেছি, প্রোডাকশন, সম্পাদনা আর প্রচ্ছদ পাঠকদের অবশ্যই ভালো লাগার মতো। যারা ট্রু ক্রাইম নন-ফিকশন বই পছন্দ করেন তাদের জন্য বইটি ভালো চয়েস হবে। যদি পছন্দ করেন আরকি।
দুনিয়ার ইতিহাসে জঘন্যতম যত সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব হয়েছে, তাদের মধ্যে নিকৃষ্টতার দিক থেকে তালিকা করা হলে …… এর নাম উপরের দিকে থাকবে।
উপরোক্ত বাক্যের শূন্যস্থানে কি বসবে ভেবে পাচ্ছেন না? দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম বইটি পড়ে থাকলে অনায়াসে ২১ টি নাম সেই শূন্যস্থানে বসাতে সক্ষম হবেন। বাহ্যিক ভদ্রতা এবং সৌন্দর্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সব নরপিশাচদের গল্প উঠে এসেছে এই বইয়ে।
দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম বইটিকে একটি প্রবন্ধ বলা যেতে পারে। আবার গল্পও বলা যায়। লেখক সহজ সাবলীল ঘল্পের ভঙ্গিতেই বাস্তব জীবনের ২১ জন সিরিয়াল কিলারের জীবনী তুলে এনেছেন এক মলাটে।
রাতে চতুরতার সাথে খুন করার পরদিনই সাংবাদিক নিখুঁতভাবে সেই খুনের রিপোর্ট লেখেন। পুলিশ যা ভাবতে বা দেখতে পায়নি, সেসব কথাও উঠে আসে তার নিউজ রিপোর্টে। অল্প দিনের মধ্যেই পরিচিতি লাভ করেন সেই সাংবাদিক। সবাই তার নিখুঁত কাজের প্রশংসা করতো। কিন্তু কেউ জানতো না যে রিপোর্ট তৈরিকারী সাংবাদিকই সব খুন সংগঠিত করে।
ধরুন, মাংসের দাম অনেক বেশি। কিনে খাবার মতো সামর্থ্য আপনার নেই। যার ফলস্বরূপ দীর্ঘদিন যাবত আপনি মাংস খাননি। এমতাবস্থায় মাংস ভক্ষণ করার নিমিত্তে আপনি কতটা নিকৃষ্ট হতে পারবেন? সর্বোচ্চ যতটুকু পারবেন, তা হলো মানুষের মুরগি বা কোনো পশু চুরি কিংবা শিকারের চেষ্টা। তবে এই সিরিয়াল কিলার একটু ব্যতিক্রমী। শিকার হিসেবে বেছে নিত মানুষকে। অর্থাৎ মাংস খেতে না পারায় মানুষ শিকার করতো। মানুষের মাংস রান্না করে খেত।
পশ্চিম জার্মানির ডুইসবার্গ ম্যান ইটার নামে খ্যাত সিরিয়াল কিলার জোয়াকিম ক্রল গ্ৰেফতার হবার পর ঠান্ডা মাথায় বলেছিল, “আমি মানুষ খুন করে মাংস কেটে রান্না করে খাই। কারণ পশ্চিম জার্মানিতে মাংসের দাম অত্যাধিক হওয়ায় আমার পক্ষে মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব ছিল না।”
ছোট্ট ছয় বছরের একটা ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাকে দেখলে যেকোন মানুষের মুখেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু এমন এক মানুষ ছিল, যার পেটে ক্ষুধার জন্ম হয়েছিল এই বাচ্চাকে দেখে। সে বাচ্চাটাকে নিয়ে গিয়ে রান্না করে খেয়েছে। শুধু তাই নয়, রান্নার পুরো প্রসেসটা চিঠিতে লিখে পাঠিয়েছে সেই ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চার মায়ের কাছে। যেখানে কি নিষ্ঠুর সব বর্ণনা। গা শিউরে উঠবে পড়তে গেলে।
কল্পনা করতে পারছেন কিছু? থাক কল্পনার জগতে প্রবেশ করার প্রয়োজন নেই। নাহলে পেট উল্টে বমিও করে ফেলতে পারেন।
আমি এখানেই কাহিনী সংক্ষেপের ইতি টানছি। এর বেশি বলার ইচ্ছে করছে না। তবে এতটুকু মাথায় রাখবেন, উপরের অংশটা কেবল ট্রেলার ছিল, পুরো মুভি এখনো বাকি আছে। আর সেটা বই খুললেই পেয়ে যাবেন।
“নরম, কোমল এবং দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এই বই নয়!” ফ্ল্যাপ এবং বিভিন্ন রিভিউয়ে থাকা এই লাইনের উপর ভিত্তি করেই বইটা সংগ্ৰহ করা। নিজেকে খুব সাহসী ভাবতাম আমি। তবে মেডিকেল কাটাছেঁড়া দেখতে পারি না, এটা আমি জানি। তবুও সাহসী দাবী করতে এক চুলও ছাড় দিই না। আর সেই জেদের ঘাড়ে চেপেই বইটা পড়তে শুরু করি। শুরুতে মনে হচ্ছিল—এ আর আহামড়ি কি জিনিস, খুব স্বাভাবিক সব ব্যাখা। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন ভিতরে ঢুকে যাই, তখন খাবার রুচি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে। তাই বইটা সময় নিয়ে প্রায় মাসখানেক ধরে পড়লাম। একটা একটা করে অধ্যায় পড়তাম আর রেখে দিতাম। একবারে নেবার মতো সাহস করে উঠতে পারিনি। বইটা শেষ করার পর একটু স্বস্তি পাচ্ছি। আর এসব বইয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায় কিনা জানি না। তবে লেখক বেশ চালাকির সাথেই গল্পের মাধ্যমে সিরিয়াল কিলারদের জীবনকথা তুলে ধরেছেন।
সবশেষে বলব, আপনি নিকৃষ্ট সব দৃশ্যপট কল্পনা করতে এবং সিরিয়াল কিলিংয়ের স্বাদ আচ্ছাদন করতে চাইলে বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫
বই পরিচিতি: বইয়ের নাম: দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম লেখক: অন্বয় আকিব প্রকাশনী: শিরোনাম পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২৮টি মূদ্রিত মূল্য: ৬০০৳
💠ফ্লপ:- বাংলাদেশের নরপিশাচ সিরিয়াল কি-লা-র এখনো কারাগারে বন্দী, জানেন? পাকিস্তানের কুখ্যাত এক সিরিয়াল কি-লা-র খুনের সেঞ্চুরি করেছিলেন, জানতেন? মনস্টার অফ আন্দিজের গল্প শুনেছেন? কিংবা সেই জার্মান সিরিয়াল কি-লা-র যে কি না বাজারে মাংসের দাম বেশি থাকায় মানুষের মাংস কেটে খেত, তার কথা? চকলেট শুধু আনন্দের নয়, প্রাণ হরণের কারণও হতে পারে, সেই ক্যান্ডিম্যানের ঘটনা শুনেছেন কখনো? অথবা বাস্তবের কিলার ক্লাউন, যে কিনা দিনে সমাজসেবী রাতে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতো? জ্যাক দ্য রিপারের নাম সবাই শুনেছি, কিন্তু জ্যাক দ্য স্ট্রীপারের নাম কি শুনেছেন? সাংবাদিক একের পর এক খুন করে সেসব খুনের ঘটনা পত্রিকায় ছাপিয়ে নাম কামিয়েছে, সেই সাংঘাতিক থুড়ি সাংবাদিক সিরিয়াল কি-লা-র সম্পর্কে পড়েছেন কখনো? টাকার লোভে নিজের স্বামী, সন্তান, প্রেমিককে খুন করা সেই ব্ল্যাক উইডোকে চেনেন? নায়কোচিত দেখতে অথচ কাজেকর্মে পিশাচও লজ্জা পেয়ে যাবে, আন্দাজ করতে পারেন কার কথা বলছি? সন অফ স্যাম, এডমুন্ড কেম্পার বা দক্ষিণ আফ্রিকার টেড বান্ডি ওরফে মোজেস সিথোলের সম্পর্কে জানতেন?
💠পাঠ প্রতিক্রিয়া:- সিরিয়াল কি-লা-রদের আমরা বহু কল্পকাহিনি শুনছি, বিভিন্ন ফিকশনাল বই কিংবা সিনেমাতে আমাদের সচক্ষে অবলোকন করেছি নরপিশাচময় রূপকে। কিন্তু সত্যিকারের সিরিয়াল কি-লি-ং অথবা কি-লা-রদের কাহিনী কাল্পনিক সিরিয়াল কি-লা-রদের থেকে লোমহর্ষক এবং ভীতিকর। শৈশব কৈশোরের শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন জটিলতা, অত্যাচার, অপমান এবং ট্রমাই একজন গোবেচারা মানুষকে সিরিয়াল কি-লা-র রূপে পরবর্তী জীবণে খু-ন ও ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। তাদের কাছে মানুষ হ-ত্যা যেনো নিছকই কোনো একটা ছেলেখেলার মতো স্বাভাবিক কোনো বিষয়। শিকারের মৃত্যু যন্ত্রণা তাদের মনে রীতিমতো আনন্দের সঞ্চার করতো। তাদের আত্মা কাঁপিয়ে দেওয়া একেকটা আখ্যান জানতে হলে ‘মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম’ একেবারে আর্দশ একটা বই।
বইয়ে সর্বমোট ২১ সিরিয়াল কি-লা-রের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকটা সত্যি ঘটনার শুরুর আগে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা রেখে গল্প বলার মতো করে লেখক যেভাবে মূল ঘটনার সূত্রপাত ঘটান, তা বাহবার দাবি রাখে। লেখক যে বইয়ের পিছনে পরিশ্রম করেছেন বইটি পড়লেই পাঠকরা তা বুঝতে পারবে। প্রত্যেকটা সত্যি ঘটনা নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। সিরিয়াল কি-লা-রদের সিরিয়াল কি-লা-র হয়ে উঠার পেছনে কাহিনী, তার হত্যাযজ্ঞ চালানোর কৌশল, সিরিয়াল কি-লি-ং ঘটানোর বিপরীতে পুলিশের সীমাবদ্ধতা এবং সমাপ্তি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে এই বইতে। প্রতিটি গল্পতে লেখক এমন কিছু পাঞ্চ লাইন ব্যবহার করেছে, যা পাঠককে বইয়ের সাথে আটকে রাখবে।
আমার মানসিক দৃঢ়তা ততটাও প্রখর নয়। ফলে বইটা পড়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে বইটা বন্ধ করে দিতে হয়েছে, কারণ সিরিয়াল কি-লা-ররা তার শিকারকে এতো পাশবিকভাবে নির্যাতন করেছে যে যা প্রকাশ করার ভাষা নেই। তাদের পাশবিক নির্যাতনগুলো বর্ণনা শুনলে আপনার গা গুলিয়ে উঠার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। কিছুক্ষেত্রে হতে পারে আপনার রাতের ঘুমের বিঘ্নও ঘটাতে পারে। এছাড়া ধরা পড়ার পর সেসব নরপিশাচদের সহজ স্বীকারোক্তিগুলো পড়ে মনে হতে পারে মানুষ শিকার যেনো গৃহপালিত পশু পাখি শিকারের মতো স্বাভাবিক কোনো কাজ। তাই অবশ্যই অবশ্যই লোমহর্ষক কাহিনী গুলো পড়ার ক্ষেত্রে পাঠককে অবশ্যই প্রখর মানসিক শক্তির অধিকারী হতে হবে। অতএব যদি নিজের মানসিক শক্তির প্রবল বিশ্বাস থাকে তাহলে দেরী না করে পাড়ি দিয়ে দিন ২১ জন সিরিয়াল কি-লা-রের ভীতিকর রাজ্যে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:- নরম, কোমল এবং দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এই বই নয়।
“Serial killers are not born serial killers, but develop as a result of deep ingrained pain and unbearable rejection.” অর্থাৎ, সিরিয়াল কিলার তারা জন্ম থেকেই হন না, অনেক সময় ছেলেবেলায় গভীর মানসিক আঘাত এবং ত্যাগ-বিরোধিতার অভিজ্ঞতা তাদের এই অবস্থায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। [ Micki Pistorius ]
' দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম ' কু*খ্যাত সিরিয়াল কি*লারদের লো*মহ*র্ষক আখ্যান। বাস্তবিক অর্থে 'লো*মহ*র্ষক' শব্দটাই এখানে খাপে খাপ খায়। সিরিয়াল কি*লারদের ভ*য়ঙ্কর সব কর্মকাণ্ডের কথা পড়ে শি*উরে উঠতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় এগুলো কোন কাল্পনিক সত্তার কর্মকাণ্ড। এরকম হিং*স্রতা, বিভ*ৎসতা, নি*ষ্ঠুরতা হয়তো সিনেমার কোন অংশ বলে পাঠক সহজেই ভুল করে বসতে পারেন। অথচ তা বাস্তবেই ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিরিয়াল কি*লার দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সকলের সামনেই ছিল অথচ ভ*য়ঙ্কর ধূ*র্ত হওয়ায় তা বুঝবার জো নেই। একের পর এক খু*ন করে অবলীলায় ঘুরে বেড়িয়েছে। সময় গড়িয়েছে, মানুষের মনে ত্রা*সের সৃষ্টি করেছে। এরপর আমি নইতো? এই মনোভাব সর্বদা ভ*য়ে রেখেছে সাধারণ মানুষদের।
একুশ শতাব্দীতে এসে মনে হতেই পারে এখন কোন সিরিয়াল কি*লারের অস্তিত্ব নেই? কে জানে? হয়তো আমাদের এই সমাজের অলি গলিতেই ঘাপটি মেরে আছে। হয়তো আমাদের বন্ধু মহলের কেউ কিংবা কোন প্রতিবেশী। এমনও হতে পারে নিজের পরিবারেই লুকিয়ে আছে চেনা মুখের আড়ালে অচেনা কেউ!
সিরিয়াল কি*লারদের বিভ*ৎসভাবে খু*ন, তাদের নি*ষ্ঠুরতা, হিং*স্রতা সব ছাপিয়ে মনে প্রশ্ন আসবে কেন সিরিয়াল কি*লারে পরিণত হলো একটা মানুষ? এতে কি একান্তই তার দায়? পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কোনভাবেই দায়ী নয়? আমার কাছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকেই বেশি দায়ী করতে ইচ্ছা করে এবং তারা সত্যিই দায়ী! নিজের পরিবারে যখন কোন শিশু নিরাপদ থাকে না, নিজের সমাজের ঘৃ*ণ্য মানুষদের কাছে অবহেলিত, লা*ঞ্ছিত বা সে*ক্সুয়াল এবি*উজের শিকার হয় তখন শিশুমনে তা দাগ কাটে এবং তা সময়ের সাথে বেড়ে নিষ্ঠুরতায় রূপ নেয়। তৈরি হয় নতুন এক সিরিয়াল কি*লার। সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। শাসনের নামে নি*র্যাতন কোনভাবেই কাম্য নয়। এই আধুনিক সময়ে এসেও এধরনের ঘটনা অহরহই দেখা যায়।
লেখক দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম বইয়ে ২১ জন সিরিয়াল কি*লারদের ঘটনাবলী তুলে ধরেছেন দক্ষতার সাথেই। 'জন' না বলে ২১ 'টি' বলাই হয়তো বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। সাবলীল লেখায় তা সহজেই পড়ার মতো এবং অনুধাবনের মতো। বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন ধরনের কি*লারদের কথা ফুটে উঠেছে বইয়ে। ডাক্তার, শিক্ষকের মতো সম্মানীয় পেশাও বাদ যায়নি এই তালিকা থেকে। এবং তা আফসোসের বিষয়ও বটে। বইটি বুঝে পড়লে, অনুধাবন করতে পারলে তা সত্যিই ভ*য়ঙ্কর। গা গোলানো ভাব না চাইতেও চলে আসবে বি*ভৎস বর্ণনাগুলো পড়তে গিয়ে। দু*র্ব��� হৃদয়ের মানুষের অবস্থাও খারাপ হতে পারে।
বইটি লিখতে লেখক যথেষ্ট পরিশ্রম, সময় দিয়েছেন তা বইটি পড়লে সহজেই অনুমান করা যায়। সেজন্য লেখকের প্রতি পাঠক হিসাবে স্বভাবতই কৃতজ্ঞ। বইয়ে প্রচুর রেফারেন্স দিয়েছেন লেখক। সেখান থেকেও অনেক আর্টিকেল, বই নিজেদের উইশলিস্টে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
সিরিয়াল কি*লাররা কিভাবে খু*ন করেছে, কোন টুলস ব্যবহার করেছে, কতগুলো খু*ন করেছে এগুলো সুক্ষ্মভাবে এড়িয়ে একজন ব্যক্তি কেন সিরিয়াল কি*লারে পরিণত হয়েছে সেটাই মুখ্য হওয়া উচিত। আর তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কাউকে আঘাত করার আগে, ধো*কা দেওয়ার আগে শতবার ভাবুন অপরপক্ষের মানুষের কি ধরনের পরিণতি হতে পারে। সন্তানকে শাসন করুন সহনশীল পর্যায়ে। কেননা, লেবু বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়!
সম্প্রতি শেষ করলাম একুশজন সিরিয়াল কিলারের জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে লেখা বই ‘দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম’। নন ফিকশন বই পড়তে স্বভাবতই বিরক্ত লাগে খানিক। দু চার পাতা পেরোতেই ভাষা কিংবা বর্ণনার কঠিন ধাঁচের জন্যেই মূলত এই বিরক্তির উদ্রেক। আর সেক্ষেত্রে যদি আরো পড়া হয় বাস্তব জীবনের নরপিশাচদের কর্মকাণ্ড নিয়ে! তাহলে তো বিরক্তি আর সেই সাথে ভয়, ঘৃনা কিংবা গা গুলোনো ভাব সবকিছুই চলে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে, আশ্চর্য্য হলেও সত্য ‘দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস’ গেম পড়তে গিয়ে এসবের কিছুই হয়নি আমার সাথে। উল্টো অনেকটা উৎসাহ নিয়েই পুরো বইটা পড়ে শেষ করেছি। আর প্রতিটা পাতা ওল্টানোর সাথে সাথে সেই উৎসাহ বেড়েছেও দ্বিগুণভাবে।
একটা নন ফিকশন বইয়ের রিভিউ কিভাবে দিতে হয় তা আমার জানা নেই। তবে আমি মনে করি, এই জনরার বইয়ের ক্ষেত্রে তথ্যের সত্যতা এবং উপস্থিতি কেমন রয়েছে এবং লেখকের লেখার ধাঁচ কেমন সেটাই মুখ্য। সেক্ষেত্রে এই বইটাকে অনায়াসে টেন আউট অফ টেন দেওয়াই যায়। কারণ, খুব সাবলীল ভাবেই পুরো বইটাকে শেষ অব্দি টেনে নিয়ে যেতে সফল হয়েছেন লেখক। যেহেতু, সিরিয়াল কিলিং এবং কিলারদের নিয়ে এই বই। সেহেতু, এতে খুবই জঘন্য এবং বিভীষিকাময় জিনিস গুলো উঠে আসা স্বাভাবিক। তবে এসবও লেখক বর্ণনা করেছেন গল্পচ্ছলে। যার ফলে পড়তে অসুবিধা তো হয়ই এমনকি নার্ভেও কোনরকম চাপ সৃষ্টি হয়নি। এই যেমন ধরুন, বেশিরভাগ কিলাররা হত্যাকাণ্ডের পূর্বে ভিক্টিমদের কিভাবে অত্যাচার করতো সেই বর্ণনার ব্যাপারেই ধরা যাক। কিংবা কোনো কোনো কিলার যে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে হত্যার পরে ভিক্টিমদের কেটেকুটে মসলা সহযোগে রান্না করে খেয়ে আত্মতৃপ্তি পেত সেই বর্ণনা অথবা কেউ কেউ আবার অপরাধটা ঠিক জমছে না এই ভেবে এসকল নৃশংসতার ব্যাপারে পাই টু পাই লিখে দিয়ে ভিক্টিমদের পরিবারের কাছে চিঠি হিসেবে পাঠিয়ে দিত সেসব বর্ণনাও লেখক করেছেন একদম সাবলীল ভাবেই।
সবচাইতে ইন্টারেস্টিং যে বিষয়টা তা হলো, প্রতিটা চ্যাপ্টারই একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে এগিয়েছে যার কারণে পড়তে আরো সুবিধা হয়েছে। কিলারদের পরিচয়, শৈশব, সাইকোলজিক্যাল অবস্থান, কিলিং এর কারণ এবং সবশেষে পুলিশের কাছে ধরা পড়া। স্বল্প পরিসরে এসব আলোচনা তুলে আনা খুব কঠিন একটা কাজ যেটা লেখক করে দেখিয়েছেন। পাশাপাশি বইয়ের কিংবা সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রের সাথে কম্পেয়ার করে বোঝানোর ব্যাপারটা ছিলো দারুন! দারুন ছিলো শেষ অধ্যায়, “Making of a serial killer” এর আলোচনাটাও।
❝ এখন আলাপ করবো এই বইয়ের একটা ত্রুটি নিয়ে। এই অংশ বিশেষভাবে লেখক এবং প্রকাশকের উদ্দেশ্যে। বইটায় ১১৭ পেজে এবং ১৯৩ পেজে একটা ছবি দুবার রিপিট হয়ে গিয়েছে। তাও দুজন আলাদা কিলারের শিকার হিসেব। কিলার ক্লাউন এবং ক্যান্ডিম্যানের চ্যাপ্টারে। ছবি যুক্ত করে দিয়েছি আমি। আমার কাছে এই বইয়ের একদম প্রথম মুদ্রণ রয়েছে যার ফলে আমি জানিনা এটা পরবর্তী মুদ্রণ গুলোতে ঠিক করা হয়েছে কিনা। যদি না হয়ে থাকে ঠিক করার অনুরোধ রইলো। ❞
সবশেষে বলবো, যারা ক্রাইম থ্রিলার পছন্দ করেন তারা মাত্র তিনশো টাকার মধ্যে এমন পারফেক্ট একটা বই হাতছাড়া করবেন না কিছুতেই। আর আরেকটা ব্যাপার হলো, যেহেতু সমস্ত সিরিয়াল কিলারের সাইকোলজি, কিলিং প্যাটার্ন একরকমের হয়ে থাকে, আর প্রতিযোগিতা মূলত কে কাকে কতটুক ছাড়িয়ে যেতে পারছে সেই বিষয়ে তাই এই বই এক বসাতে না পড়াই ভালো। সেক্ষেত্রে একই প্যাটার্নের কারণে বিরক্তি চলে আসতে পারে। প্রতিদিন একটা করে পড়লে বইটা এবং তথ্যগুলো বেশি এনজয় করা যাবে।
স্ল্যাশার সিনেমা, টিভি শো, বই এসবের বড়সড় ভক্ত হিসাবেই কি না জানি না, সিরিয়াল কিলারদের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ কাজ করে আমার। কিছুদিন আগে রিলিজ হওয়া মন্সটারঃ দ্যজেফ্রি ডাহমার স্টোরি আমার অন্যতম প্রিয় টিভি সিরিজের একটা😷 এবং ইদানীংকালেই কনভারসেশনস উইথ আ কিলারঃ দ্য টেড বান্ডি টেপস দেখছিলাম। টেড বান্ডি, জন ওয়েইন গেসি, জ্যাক দ্য রিপার, দ্য বস্টন স্ট্র্যাংগলার, সন অফ স্যাম এদের ব্যাপারে সময়ে-অসময়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়তে পড়তে এখন মনে হয় এরা পরিচিত মুখ।
"দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম" এর নাম দেখে আমি প্রথমে মনে করি এটা অনুবাদ উপন্যাস। অতঃপর অরিজিনাল বই শুনে এবং তারপর বিষয়বস্তু দেখে মুগ্ধ হয়ে বন্ধুর থেকে ধার করে ফেললাম। পড়তে গিয়ে আরো বেশি মুগ্ধ। প্রথমত, নন-ফিকশন বইতে আমার মনোযোগ তুলনামূলক কম থাকে বিধায় পড়িই কম। কিন্তু এই বইতে তথ্য সাজানোর ধরণ, উপস্থাপনা, সবমিলিয়ে লেখার ধরণটা ভীষণ চমৎকার ছিলো। গল্পের মতো করেই একটানা পড়ে চলছিলাম। একঘেয়ে লাগার কোনো সুযোগ ছিলো না।
বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে আগে যাদের সম্পর্কে জানা ছিলো তাদের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে পারলাম আর নতুন অনেকগুলো নামের সাথে পরিচয় ঘটলো। অনেক পরিশ্রম এবং পড়াশোনার ফল যে এই বই সেটা পড়তে গিয়েই বেশ বোঝা গিয়েছে। এতো স্বতঃস্ফূর্ত লেখা যে মনে হচ্ছিলো বইটার দৈর্ঘ্য হাজারখানেক পৃষ্ঠা হলে ভালো হতো। সাথে অতিরিক্ত অনেকগুলো বইয়ের রেফারেন্স দেওয়ার বিষয়টা ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে পড়ার জন্যে সেগুলোও সব টুকে রেখেছি। সিরিয়াল কিলারদের আখ্যান বলে কথা!
ব্যক্তিগতভাবে ডিস্টার্বিং, গোরি জিনিস-পত্র সিনেমা-টিভি শোতে দেখে দেখে বা বইতে পড়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি বিধায় এগুলো এখন পড়লে গা গোলায় না। কিন্তু যারা এগুলো পড়তে অভ্যস্ত নন, বেশি অস্বস্তিবোধ করেন কিংবা পছন্দ করেন না তারা পড়বার আগে চিন্তাভাবনা করে নেবেন।
বইয়ের প্রুফরিডিং-এ আরেকটু মনোযোগ দেয়া যেতো বলবো। বেশ কিছু বানান ভুল এবং গ্রামাটিক্যাল ভুল চোখে পড়েছে। তবে বইতে বুঁদ হয়ে যাওয়ায় এগুলোও প্রায় চোখ এড়িয়ে যাচ্ছিলো। বইয়ের নামকরণ সুন্দর হয়েছে। এবং প্রচ্ছদটাও দারুণ লেগেছে।
অনেকদিন পর কোনো বই শেষ করে মনে হলো এটা চটজলদি কিনে নিজের সংগ্রহে রাখতেই হবে
ভাবলাম বাসা চেঞ্জ হচ্ছে কিছুদিন ব�� পড়া থেকে বিরত থাকবো কিন���তু আকিব ভাইয়ের বই দেখে আর লোভ সামলাইতে পারলাম না।বইটার জন্য অনেকদিন অপেক্ষারত পাঠকদের একজন ছিলাম।
সিরিয়াল কিলিং নিয়ে এ যাবত কালের সেরা একটা কাজ দিয়েছেন অন্বয় আকিব ভাই। লিখা পড়েই বোঝা যায় যে কতোটা কঠোর পরিশ্রম ও যত্নের সাথে উনি ইনফরমেশন কালেক্ট করে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন।আর বইটা পেজ টার্নার টাইপ, লাস্ট ইনফরমেশন জানা অব্দি আপনাকে আটকে রাখবে।আরেকটা ব্যাপার যেটা না বললেই নয় ভাইয়া বেশিরভাগ চ্যাপ্টারের শেষে কিছু বই সাজেস্ট করেছেন কিলারদের নিয়ে।এই তথ্য টা আসলেই অনেক জরুরি। মানে ওয়ার্ক স্মার্ট এন্ড হার্ড এট দ্যা সেম টাইম।আর বইয়ের কিছু স্পেসিফিক পার্টে আগেই বলা ছিল দুর্বল হার্টের হলে যেনো ওই জায়গা টুকু না পড়া হয়।ব্যাপারগুলি আসলেই খুবই প্রশংসনীয়।এত সুন্দর করে খুনের ডিটেইল মেনটেইন করে দিয়েছে যে মনে হবে প্রতিটা ঘটনা চোখের সামনে ঘটছে।সবগুলি কিলারের জীবন ও খুনের ধাচ আলাদা।টান টান উত্তেজনা ও থ্রিল ভাইবের পাশাপাশি মাঝে মাঝে রোলার কোস্টার রাইড ফীল পেয়েছি বইটাতে।প্রতিটা ছোট থেকে বড় ব্যাপারে খেয়াল রাখা হয়েছে।
তবে বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটি নিয়ে একটু মনে খচখচ করেছে।ফন্ট স্টাইলের কিছু ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া উচিত ছিল প্রকাশনীর।আর কিছু জায়গায় শব্দের মিসিং বা বাক্যের লাইনচ্যুত হওয়া ব্যাপারগুলি আহামরি না হলেও চোখে লেগেছে।আশা করি কুহক ভবিষ্যতে এসব ব্যাপারে খেয়াল রাখবে।তবে প্রকাশনীর একটা ব্যাপার ভালো ও ছিল যে পেপারব্যাক ও হার্ডকাভার দুটোই এনেছে।আমার পার্সোনালি পেপারব্যাক পছন্দ তাই এটা নিতে পেরে ভালোই লাগছে।ক্যারি করতে ইজি আর প্রিমিয়াম একটা ভাইব আছে।
বি:দ্র:বইনগরে অর্ডার দিয়েছিলাম কিন্তু আশা করিনাই তারা অটোগ্রাফ কপি পাঠিয়ে দিবে তাই অসীম কৃতজ্ঞতা তাদের ও আকিব ভাইয়ার প্রতি।
নরম, কোমল এবং দুর্বল হৃদয়ের মানুষের জন্য এই বই নয়। না,এই কথাটা অবশ্য আমার না। এটা বলেছেন স্বয়ং বইয়ের লেখক অন্বয় আকিব ভাই।
শেষ করলাম অন্বয় আকিবের লেখা "দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস গেম"। একুশ জন সিরিয়াল কিলারের নির্মম বীভৎসতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই বই। না, কোনো কল্পকাহিনী থেকে এদের উঠিয়ে আনা হয়নি। প্রত্যেকটা সত্য ঘটনা। প্রত্যেকটা সিরিয়াল কিলারের অস্তিত্ব ছিলো। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তুলে আনা হয়েছে এইসব কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের কুকীর্তি। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার চকচকে বর্ণনা দেয়া হয়েছে এই ৩২৮ পৃষ্ঠার বইয়ে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও যে কতোটা নির্মম হতে পারে তা এই বই পড়ে যে কেউ খুব সহজেই ধারণা করতে পারবে।
হ্যাঁ। কিছু কিছু সিরিয়াল কিলারদের ঘটনা আগে থেকেই জানতাম। তবে, অধিকাংশই ছিলো অজানা। যাদের বিষয়ে জানতাম তাদেরও অনেক অজানা তথ্য পেলাম বইটা পড়ে। লেখককে যে কি লেভেলের পরিশ্রম করতে হয়েছে তা বইটা পড়ে যে কেউ অনুমান করতে পারবে। লেখকের লেখনশৈলী বেশ ভালো লেগেছে। লেখক নতুন হলেও বেশ পরিপাটি তার লেখা। তার সহজ গল্প বলার ধরণটাও আকর্ষণীয়। ব্রুটালিটি, স্ল্যাং যতোটা সম্ভব সুন্দর ভাষায় বর্ণনা করেছেন। রেফারেন্সের বিষয়টা আমার অনেক ভালো লেগেছে। বলা যায়, সবচাইতে ভাল লেগেছে। এই বইয়ের সুবাদে আরো অনেক বইয়ের রেফারেন্স পেয়েছি। টুকে রেখেছি। ভবিষ্যতে পড়বো।
সবমিলিয়ে, আমি আইনের ছাত্র ছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই, অপরাধবিজ্ঞানে প্রবল আকর্ষণ। অনেক কিছুই জানতে পারলাম বইটার মাধ্যম দিয়ে। শুধু সিরিয়াল কিলারদের খুনই নয়, তার পাশাপাশি তদন্তপ্রক্রিয়া, সিরিয়াল কিলারদের চিন্তাভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কেও অনেক কিছু জানলাম। আমার বেশ ভালো লেগেছে। যাদের সিরিয়াল কিলারদের প্রতি আগ্রহ আছে নি:সন্দেহে এই বই নিয়ে বসে যান। হতাশ হবার কোনো আশঙ্কায় নাই।
কেন পড়বেন? আপনার সিরিয়াল কিলারস এবং তাদের জীবন নিয়ে আগ্রহ থাকলে এটা উৎকৃষ্টতম একটা বই। নন-ফিকশনাল ট্রু ইভেন্ট বেজড বই। বুঝতে পারবেন কেন মানসিক স্বাস্থ্যে খেয়াল রাখা অতীব প্রয়োজন। বইটাতে পৃথিবীর কুখ্যাত সব সিরিয়াল কিলার্সদের শৈশব থেকে শুরু করে ট্রমা, তাদের করা খুনের নিখুঁত বর্ণনা এবং তাদের মানসিক অসুস্থতা নিয়ে সহজ এবং সাবলীল ভাষাতে লেখক তুলে ধরেছেন।
এলার্ট⛔ কেউ সেন্সিটিভ বা আবেগপ্রবণ হলে এই বইটা পড়বেন না। বইয়ে এমনভাবে কিলার্সদের কর্মকান্ড বলা আছে আপনার একবেলা খাবার বাদ যেতে পারে।
কি শিখলাম? ১. একজন বাচ্চা শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা ১০ গুন বেশি পরিমানে প্রয়োজন
২.প্রতিটা বাচ্চার সাথে কথা বলার সময় খুবই সতর্ক থাকবেন। আপনার ইয়ার্কি বা মজা করে বলা একটা কথা তার আগামীর জন্যে ভালো সময় বয়ে নাও আনতে পারে।
৩.বাচ্চা মানেই দুষ্টামি করবে, তাদেরকে শাসনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা
৪. কেউ নিরাপদ না। এক দেখাতে, অল্প পরিচয়ে "জেন্টলম্যান " উপাধি দিবেন না। সময় নিন। বিশ্বাস, ভরসা পরে করুন। বিবেককে কাজে লাগান
৫.আপনি কখনো ভিক্টিম হলে বা কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজে গড়ুন। কিন্তু কখনোই ক্ষোভ মনে পুষে রেখে অন্যদের ক্ষতি করবেন না। মুভ অন করতে শিখুন যেকোনো নেগেটিভ টার্ম থেকে।
একুশ জন সিরিয়াল কিলার। একুশটা গা হিম করা কাহিনী। তারমধ্যে একজন আবার আমাদের বাংলাদেশের। এই বইটা একটা রিয়েলিটি চেক যে বাস্তব কল্পনাকে শুধু হার মানায় না, সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে ভয়ংকর ভাবে মনুষ্যত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সিরিয়াল কিলার এবং তাদের সাইকোলজি ব্যাপারটা আসলে যতটা আকর্ষণীয় মনে হয় বাস্তবে ততোটা না। বরং খুবই অসস্তিকর। এজন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলেও প্রায়ই থেমে যেতে হচ্ছিলো। আর আমার মতো দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য ৩২৩ পৃষ্ঠার বইটি শেষ করা তো বিশাল ব্যাপার। এটার ক্রেডিট অবশ্য পুরোটাই লেখকের প্রাপ্য। সুন্দর , সাবলীল শব্দচয়নের পাশাপাশি সংবেদনশীল অংশগুলো বর্ণনায় লেখক বেশ সতর্ক ছিলেন।
বইয়ে প্রতিটা চ্যাপ্টার একজন করে সিরিয়াল কিলারের ওপর ফোকাস করা হয়েছে। তার সিরিয়াল কিলিংয়ের টাইম লাইন, ছেলেবেলা, সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠার পিছনের দুর্ভাগ্য আর দুর্দশা এবং পরিশেষে তার পরিণতি। সবমিলিয়ে পুরো বইটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। আফসোসের সুযোগ রাখেনি। আমার মতে পুরো বইয়ের সেরা অংশ ছিল "Making of a Serial Killer" নামের অংশটা।
সবশেষে শুধু এটাই বলবো,
Human beings are the most inhuman creatures in the universe!
সাক্ষাৎ শয়তান না হলে এমন নৃশংসতা কারোর পক্ষে করা সম্ভব না।
NB: নৃশংসতা সহ্য করতে পারবেন কিনা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকলেও, আমি বলবো বইটি পড়বেন না। আমি নিজেই শেষ করার একমাস পর রিভিউ লিখছি।
"দুনিয়ায় মানুষের চেয়ে বিপদজনক শিকার কি আর কিছু হতে পারে?" ..এইখানে আরেকটা লাগোয়া প্রশ্ন...যদি শিকার আর শিকারী দুটোই হয়...মানুষ? I've been a fan of crime documentaries and case stories of YouTube for...quite a while. Seeing someone from my country actually going on writing a book itself was a pleasant surprise...so I started it with no scepticism whatsoever. লেখক এর লেখার স্টাইল বেশ.বিভিন্ন দেশের ২১ জন সিরিয়াল কিলার এর কাহিনী..যদিও এদের মধ্যে অনেকের কথা আগে থেকেই জানি, কিন্তু ইংরেজি ভিডিও দেখা এক জিনিস, আর নিজের ভাষায় পড়া আরেক। ব্যাপারটাই আলাদা...সুন্দর ভাবে গল্পের ছলে কাহিনী গুলি লেখা। শেষ পর্যন্ত কি হলো জানতে ধৈর্য চলে যায় না...এইতো অনেক এখনকার দিনে। But yes, these stories do have vivid details of crimes (even photos here and there)...so if you are weak minded or not interested in crime stories... I'd advise you avoid this book. Happy reading 😊
ভালোই। অনেকটা গবেষণাধর্মী বই হলেও ফিকশনের মতই ভালো লাগসে। কারণটা হয়তোবা আমার সিরিয়াল কিলারদের প্রতি আগ্রহই হবে। যদিও বইটার বর্তমান সংস্করণ অন্য রকম তাও এই প্রথম সংস্করণের অন্য রকম ফন্টে লেখা,আবছা ছবিগুলো বেশ প্রিয়। গতবছর বইটা শুরু করেছিলাম। মাঝে অনেকদিন ধরেও দেখি নাই। প্রায় ২০০ পাতাই পড়া শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আজ পুরাটা শেষ করলাম। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াল কিলারদের আতুড়ঘর হলেও খোদ বাংলাদেশ এও যে রসু খার মত সিরিয়াল কিলার আছে তা আগে জানতাম না।(জানতাম,লেখকের এফবি পোস্ট থিকাই,তবে এফবি পোস্ট এত মনোযোগ দিয়া পড়া হয় না)
এই বইটার প্রতিটা কাহিনী কে কেন্দ্র কইরা হাজার হাজার ফিকশনাল বই লেখা যাবে। উঠতি লেখকদের গল্প পাওয়ার একটা সম্ভার বলা যায় এটাকে।
একটা ব্যাপার বড়ই দৃষ্টি কটু লেগেছে,ওই যে একই কাহিনীতে একবার কিলারকে আপনি বলে সম্ভোধন করা আর অন্য বার তুমি বলে সম্ভোধন করাটা। এটা কি নয়া সংস্করণে চেঞ্জ করা হইসে? নাকি?....
শুরুতে ড. ডেথ এর কাহিনী পড়ে ভালই লাগছিল। কিন্তু যত এগোতে লাগলাম, ততই মনের ভেতরটা তিক্ত হতে শুরু করল। মাত্র ৯ বছর বয়সী ছোট্ট একটি শিশুকে কেটে কুটে রান্না করে খাবার ব্যাপারটা একদমই নিতে পারছিলাম না। কাছাকাছি ধরণের বীভৎস গল্প আমি নিজেও লিখেছি, কিন্তু সেসব ছিল মনগড়া, কাল্পনিক। এবারে বাস্তবে এসব ঘটনা ঘটবার কথা পড়ে নিজেকে অসুস্থ লাগছিল। অনেক সময় লেগেছে বইটা শেষ করতে। অনেক জায়গা সহ্য করতে না পারায় স্কিপ করে গেছি।
সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের কল্পনার জগতটাই অনেক ভাল। কল্পনার জগতে এতটা বীভৎস কেউ হয় না।
ভালোই বলতে হয়। ২১ জন সিরিয়াল কিলারের আখ্যান। অনেক কিছুই ডিস্টার্ভিং কিন্তু ভায়োলেন্স সম্পর্কে অস্কার বিজয়ী ফিল্ম ডিরেক্টর Quentin Tarantino এমনই বলেছিল- "because it is so much fun, jan, get it!" অনেকটা এরকমই। বইটাতে কিছু তথ্য মিসিং যেমন উদাহরণ দিলে Edmund Kemper এরই দেয়া যায়। কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলার নিজের মাকে মেরে decapitated মাথার সাথে fellatio perform করেছিল। যাইহোক এ তথ্য দিলে খুব একটা যে উপকার হত তা না, এদের জন্য ঘৃণা ছাড়া মনে আর কিছুই থাকা উচিত না।ক্রিমিনাল প্রোফাইলের Pat Brown এর সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করে বলছি -- "THEY ARE EVIL ".
২১ জন সিরিয়াল কিলারের কুখ্যাত কাহিনীসমূহকে পুঁজিবদ্ধ করে রচিত হয়েছে বইটি। লেখক অন্বয় আকিব প্রতিটা কিলারের কাহিনী বর্ণনা করেছেন প্রায়ই একই ধাঁচে; প্রখমে হুক, পরে কিলারের শৈশব-কৈশোর ও সংক্ষিপ্ত জীবনী, তার পরে অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা করে সবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার কাহিনী। লেখকের স্টোরিটেলিং একদম ঝরঝরে, একনাগাড়ে পড়ে ফেলার মতো। তবে একই ধাচেঁ হওয়ায় কিছু শব্দ-বাক্যের বারংবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে, পাঠক পড়া মাত্রই অনুধাবন করতে পারবে, যদিও আহামরি কোনো বিষয় না। সর্বোপরি রিয়েল লাইফ ট্রু-ক্রাইম ট্রিলার হিসেবে বইটি বেশ উপভোগ্য এবং চোখ বুজেই যে কাউকে সাজেস্ট করার মতো।
বইয়ে সংযুক্ত ছবিগুলো রঙিন হলে আরো সুখপাঠ্য হতো। এছাড়াও কখনো কখনো বর্ণনার খাতিরে অতিরিক্ত চরিত্রের উপস্থিতি, পড়ার ফ্লো মাঝে মাঝে কিছুটা স্লো করে দিয়েছে ;কারণ কিছু সময়ে ক্রম বুঝতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
বইটি বেশ সহজ ভাষায় এবং সিরিয়াল কিলারদের উপাখ্যান নিয়ে রচিত যা সিরিয়াল কিলারদের অন্ধকার জগৎ এবং তাদের সাইকোলজি নিয়ে যথেষ্ঠ ভাববার সুযোগ করে দেবে। এর বাহিরে আর কিছু মাথায় আসছে না। রেটিং দিলাম ৪/৫।