রূপকথা শুনবেন? বয়স নেই বলছেন? দাঁড়ান, একটু লোভ দেখাই। এক যে ছিলো রাজা- ঘোর রহস্য আড়াল করে রাজত্ব করেছেন পঞ্চাশটা বছর। এক যে ছিল রাণী- যার অতীত জানলে পিলে চমকে উঠবে যে কারো। এক যে ছিলো রাজপুত্র- জীবন যাকে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে, শেষমেষ খাঁটি সোনা না অঙ্গার হয়ে বেরোবে তা ওর নিজেরও জানা নেই। এক যে ছিলো রাজকন্যে- ক্ষমতার চূড়ায় পৌঁছতে করতে পারে যে কোনো কিছু। এক যে ছিলো রাখাল ছেলে- ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে নির্দোষ অভিযানে, জানে না, গোটা দেশটাই বদলে যাবে ওর প্রতিটা কদমে।
রূপকথার দেও-দানো-পঙ্খীরাজ চান? পাবেন। এমন এক টানটান গল্প চান যার আবেদন যে কোনো বয়সের পাঠকের কাছে সমান? পাবেন।
"ত্রাশন" রূপকথার গল্প। পুরো কাহিনি মেদহীন। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ না হলেও নাবিল মুহতাসিম শুরু থেকে শেষাবধি পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে পেরেছেন। কমল আর ছোটকুমারের আলাদা গল্প যেভাবে একবিন্দুতে মিলে গেলো সেজন্য লেখককে আলাদা ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলো না।তবে সব মিলিয়ে "ত্রাশন" বা ত্রাসের শাসন পড়তে ভালো লেগেছে।
দেশীয় রূপকথার উপাদান দিয়ে পুরোপুরি একটা ফ্যান্টাসি উপন্যাস লিখে ফেলবার জন্য লেখককে প্রথমেই একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়। আমাদের দেশে ইদানীং মৌলিক ফ্যান্টাসির জোয়ার শুরু হলেও সম্পূর্ণ দেশীয় মিথ আর দেশীয় মিথলজিক্যাল প্রানী নিয়ে আস্ত একটা কাহিনী লিখে ফেলা কম কথা নয়৷ যদিও লেখক একে বড়দের রূপকথা বলে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করছেন। কাহিনীর পরতে পরতে ঠাকুমার ঝুলি আর সব দেশীয় রূপকথার সংকলনের যথার্থ ব্যবহার করেছেন তিনি।
এবারে আসা যাক মূল বইয়ের কাহিনীতে। শুরুটা ভিতরগড় রাজ্যের ক্ষমতা বদলের পালা দিয়ে। বৃদ্ধ রাজা তার বড় ছেলেকে সিংহাসন ছেড়ে দিয়েছেন, আর সেখান থেকেই কাহিনীর শুরু। কিন্তু এই কাহিনীর নায়ক বড়কুমার নয়, আসল নায়ক হচ্ছে রাজ্যের ছোটকুমার। আরো আছে রাখাল ছেলে কমল আর পুন্ড্রনগরীর রাজকন্যা কংকাবতী। রূপকথার মাঝে হালকা ইতিহাসেত ছোয়াও লাগিয়েছেন লেখক। তাই বাংলার প্রাচীন ষোড়শ জনপদ- পুন্ড্র, গৌড় আর নিষাদদের দেখা পাওয়া যায়। ওয়ার্ল্ডবিল্ডিংয়ের ব্যাপারেরো লেখক বেশ যত্নশীল ছিলেন। বর্ণনার মাঝে জীবন্ত হয়ে উঠেছে ভিতরগড় আর তার আশেপাশের রাজ্যগুলি।
এবারে আসা যাক সমালোচনায়। প্রথমেই বলে রাখি, লেখক এখানে রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে টেনে আনতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। কংকাবতীর ছলনা আর ক্ষমতার পিপাসা ভালোই লাগছিলো, কিন্তু বাকিদেরকে বড় ম্যাড়ম্যাড়ে লেগেছে। যেন শুধু কাহিনীর প্রয়োজনেই আনা, সুদূরপ্রসারী কোন প্রভাব নেই এর। নায়ক হিসেবে ছোটকুমারের চরিত্র তেমন ফুটে উঠতে পারে নি। আর কমলের কাহিনীর শেষটা দারুণ হলেও তার যাত্রার মাঝখানটা একঘেয়ে লেগেছে। আর ভিলেন হিসেবে সুয়োরানী মোটেও তেমন কার্যকর ছিলো না। গল্পের মাঝেমাঝে ত্রিকালদর্শীদের উপস্থিতি কাহিনীর গতিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তবে সবচেয়ে যেটা চোখে লেগেছে, তা হলো লেখকের লেখনশৈলি। উনার লেখা আগেও পড়েছি, কিন্তু থ্রিলারের ভাষা আর ফ্যান্টাসির ভাষা ঠিক যেন মিশ খায় নি। দ্বিতীয় আর তৃতীয় পুরুষের মিশ্রনের কারনে আরো বেশি কষ্ট হয়েছে পড়তে। মূল ন্যারেটর যে কে, সেটা বুঝতে হিমশিম খেয়েছি। তাই পড়তে গিয়েও বেশ কিছু জায়গা অদ্ভুত লেগেছে ৷ অনেক জায়গাতেই অসম্পূর্ণ বাক্যগঠন ছিলো, আর ছিলো বানান ভুল। অবশ্য সেই দায় লেখকের চেয়ে সম্পাদকের ঘাড়েই বর্তায়। আর কাহিনীর ক্ল্যাইম্যাক্সটা বড্ড বেশি তাড়াহুড়া লেগেছে। আরেকটু সময় নিয়ে বর্ণনা করলে টেনশন বিল্ডআপ আর একশনটা আরো ভালো হতো, যেমনটা হয়েছে কংকাবতীর ক্ষেত্রে। তবে সর্বোপরি দেশীয় আবহে রাক্ষস-খোক্কস, সুয়োরানীদেরকে নিয়ে লেখা এই আড়াইশ পাতার ফ্যান্টাসি কাহিনী নিয়ে সময়টা মন্দ কাটে নি। দেশীয় অন্যান্য মৌলিক ফ্যান্টাসি লেখকদের কাছ থেকেও এমন দেশীয় উপাদান ব্যবহার করে লেখা কাহিনী আরো বেশি করে আশা করছি।
রূপকথা ছোটবেলায় কাকে আলোড়িত করে নি? সেই রূপকথার সাথে কোথায় গিয়ে জানি সম্পর্ক আছে পূরাণ, ইতিহাস, এবং সমসাময়িকতার।
একদম দেশিয় রূপকথাকে উপজীব্য করে লেখা 'ত্রাশন'। বড়কুমার, মেজকুমার, ছোটকুমার, কমলকুমার, সুয়োরাণী, রাক্ষস-খোক্কস, পক্ষীরাজ ঘোড়া, বাঘের উপর ঘোগ এ সকল উপাদান আছে এ বইয়ে।
ভিতরগরের মহারাজার রাজত্বের পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে ঘটে যায় অভাবনীয় এবং ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডী। আপনজন ও রাজ্য হারা ছোটকুমার ছিটকে যায় আরেক জীবনে, ভিন্ন রাজ্যে। তাঁর যাত্রা শুরু হয় প্রতিশোধের। হারানো রাজ্য আবার ফিরে পাওয়ার।
আরেকদিকে সামান্য গাঁও-গেরামের গরীবের সন্তান কমলের জার্নিও শুরু হয় রহস্য উদ্ধারের। নিজ কমফোর্ট জোন ছেড়ে মানবতার উপকারে বেরিয়ে পড়া হয় তাঁর বন্ধু ভুতো এবং পন্ডিত মশাইকে নিয়ে।
নাবিল মুহতাসিমের লেখনি আমার বরাবরের মতোই খুব পছন্দের। বিশেষ করে তাঁর বিভং এবং বাজিকর ত্রয়ীতে বারবার ফিরে যাওয়া যায়। লেখকের বর্ণনাভঙ্গির কারণে মনে হয় পাঠক যেন ঠিক গল্পের মাঝেই অবস্থান করছেন। থ্রিলার লেখক হয়ে রূপকথার গল্প লিখাকে নিজেই বলেছেন 'ধৃষ্টতা'।
ত্রাশনে লেখক তাঁর গল্পকথনের অন্যতম থাম্বরুল "শো, ডোন্ট টেল" এর যথারীতি প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এ কাজে তাঁর দক্ষতা দারুন। রুপকথায় কিন্তু থ্রিল থাকে, চমকে দেয়ার মতো উপাদান থাকে। লেখক থ্রিলারের লোক হওয়াতে ঐসব জায়গা মোটামুটি ধরতে পেরেছেন।
রূপকথার ভারিক্কি নাম আজকাল মনে হয় 'ফ্যান্টাসি'। নাবিল সেই ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং এর কাজটি করেছেন, একদম দেশিয় প্রেক্ষাপটে। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র-মজুমদারের 'ঠাকুরমা'র ঝুলি' আপনার সামনে এসে পড়বে তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে।
বর্ণনাভঙ্গির কারণে প্রথম থেকেই ত্রাশন রাজঘোড়া পবনের মতোই ছুটে গিয়েছিলো। তবে এ বইয়ের অপেক্ষাকৃত কম পছন্দের এবং প্রশ্ন থেকে যাওয়ারও জায়গা থাকায় এক ধরণের কাল্ট-ক্লাসিক হওয়ার সুযোগটা মিস হয়ে গেলো মনে হয়।
ডালিমকুমার এবং কমলকুমারের অনুসন্ধান এবং স্ট্রাগল পাশাপাশি চলেছে, ভালো কথা। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে-রাজ্যে যে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই ছিলো এবং সেসব রাজ্যের প্রজাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে অল্প। কমলকুমারের চরিত্রায়নের তুলনায় ডালিমকুমারেরটা কম পড়ে গেছে। কিছু জায়গায় কিছু বিষয়কে মনে হয় লেখক অগ্রাধিকার দিয়েছেন বেশি। এটি তাঁর বিষয়।
কিন্তু আরো এক্সপ্লোর করা যেতো রূপকথার জগতটাকে মনে হয়। সুয়োরাণীর মতো চরিত্র এবং পরবর্তিতে তাঁর সমমনাদের দুঃশাসন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যেতো যা মহারাজের মনের মাঝে সৃষ্টি করেছিলো তীব্র অনুশোচনার।
আমি ঠিক জানি না ত্রাশনের কোন সিক্যুয়েল বের হবে কি না। কারণ লেখকের জায়গা ছিলো এবং আছে আরো গভীরে ডুব দেয়ার। অথবা হয়তো নাবিল মুহতাসিম কমল এবং ডালিমের উপরই বেশী মনোযোগ দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে নাবিল মুহতাসিমের স্টোরিটেলিং এর কারণে পড়া যায় এ নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাস। তবে যেরকম দুর্দান্ত গল্পকথন লেখক সচরাচর করে থাকেন 'ত্রাশন' এর ক্ষেত্রে আমার মনে হয় খানিকটা কম পড়ে গেছে। অবশ্য বিষয়-আশয়ও খুব সহজ নয়। বাংলার চিরায়ত রূপকথা আবার বলা কিংবা অ্যাডাপ্টেশন।
তবে 'ত্রাশন' এর মাধ্যমে আমাদের সমসাময়িকতার অল্প কিছু সাবটেক্সট ভালোই।
লেখকের প্রতি অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
বই রিভি���
নাম : ত্রাশন লেখক : নাবিল মুহতাসিম প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২৩ প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী প্রচ্ছদ : লৌকিক পার্থ জনরা : রূপকথা রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
ত্রাসের শাসন - ত্রাশন। নাবিল মুহতাসিম লিখেছেন রূপকথার গল্প। অনেকদিন পর ছোটবেলার ঠাকুরমার ঝুলি কথা মনে পড়ল। কয়েকটা কাহিনী সমান্তরাল ধারায় বয়ে নিয়ে এক সূত্রে গেঁথেছেন। শুরুতে আমরা দেখি ভিতরগড় রাজ্যের অশীতিপর রাজা বড় রাজকুমারকে রাজ্যের ভার ছেড়ে দিচ্ছেন। হঠাৎই অশনিসংকেত। ছিলো রাজকুমার, হয়ে গেলো রাক্ষস। এরপর কাহিনীর নায়ক ছোট কুমারের যাত্রা শুরু। এদিকে রাজ্যের প্রান্তে নানা গুজব শুনে রাজধানীর দিকে হাঁটতে শুরু করে রাখাল কমল, তার তোতলা বন্ধু ভুতো আর টোলের পণ্ডিতমশাই (এই দুইটা কাহিনীর সন্ধিক্ষণের ব্যাপারটা গোঁজামিল করে ফেল লেখক, এই জন্যে বইয়ের সমাপ্তিতে অতৃপ্তি থেকে গেছে)। এদিকে এক রাজকন্যা স্বয়ংবর আয়োজন করে জিম্মি করছে একের পর এক রাজকুমারকে, সে আসলে কি চায়?
রাজ্যে রাজ্যে বিবাদ, গুপ্তচরবৃত্তি, জমিদারের দুঃশাসন, ক্ষমতার লোভ - এসব ক্লাসিক মধ্যযুগীয় আবহে লেখক নিয়ে এসেছেন রাক্ষস, খোক্কস, লালকমল আর নীলকমল, বেঙ্গমা-বেঙ্গমী, পঙ্খীরাজ ঘোড়া আরো হরেক রকম রূপকথার চরিত্র; দেখিয়েছেন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির কাছে হার মেনে নেয়া ভালো সত্ত্বার; আভাস দিয়েছেন সুখী আগামীর।
৪ পাওয়ার মতো বই, কিন্তু একটু গোঁজামিলের জন্যে ৩। তবে ভালো বই, পড়বেন এইটা।
"এক যে ছিল রাজা..." গল্পের শুরুটা হতো এমনভাবে। দাদী-নানীদের ঘিরে তখন কচিকাঁচাদের মেলা। গল্পের আসরে বয়োজ্যেষ্ঠরা থাকতেন মধ্যমণি। কখনো রাজা রানিদের গল্পে আসর জমত। কখনো সেই আসরে জায়গা করে নিত রাক্ষস-খোক্কস, দৈত্য-দানোরা। সেসব গল্পে ভয় লাগত, কেপে কেপে উঠত ছোট্ট অবয়বগুলো। তবুও গল্পের আকর্ষণ ছেড়ে যাওয়া হতো না।
এক সময় বয়স বাড়ে। কচিকাঁচাদের মিলনমেলায় ভাটা পড়ে। দেখতে দেখতে শিশুকিশোরদের সেই ঝাঁক সময়ের সাথে বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে। রূপকথায় সে আগ্রহ আর থাকে না। তারপরও, "এক যে ছিল রাজা..." শুনলেই যেন ছোটোবেলার দিনগুলোতে ফিরে যাওয়া হয়। আচ্ছা, শুনবেন না-কি একটা গল্প?
▪️কাহিনি সংক্ষেপ :
এক যে ছিল রাজা। ভিতরগড় রাজ্যের শাসন ভার তার হাতে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে রাজ্য শাসনে ক্লান্তি আসে। আর কত? একবার তো থামতেই হয়। যোগ্য কারো হাতে রাজ্যের ভার তুলে দিয়ে এবার বিশ্রাম। প্রস্তুত করা হয়েছে বড়কুমারকে। নিজ শাসনের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে তাই পালাবদল হতে চলেছে ক্ষমতার। কে জানত? সেই পালাবদল ল নামিয়ে আনবে এমন এক বিভীষিকার? কিংবা জানত বলেই হয়তো রাজা ভূপতির এমন কান্ড! কে জানে?
রাজধানী থেকে দূরের এক গ্রামের নিতান্তই রাখল বালক কমল। রাখাল হলেও বুদ্ধিতে অনেককেই ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে সে। সেই রাখালকে গ্রাম ছাড়তে হলো। রাজধানীর খবর নিয়ে আসার গুরু দায়িত্ব কাঁধে। সেই দায়িত্ব নিয়ে দুর্গম পথে ছুটে চলা। সঙ্গে বন্ধু ভুতো আর পণ্ডিত মশাই। জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছতে হবে ভিতরগড় নগরীতে। পথে কত বাঁধা! কত শত্রু! তবুও কি হার মানলে চলে? সঙ্গীদের নিয়ে কমল এগিয়ে চলেছে দৃঢ় পায়ে। কিন্তু সে কি জানত, এক গভীর ষড়যন্ত্রের মায়াজালে থমকে যাবে জীবন? জানলে হয়তো এ অভিযানে কখনোই পা বাড়াত না।
এই গল্পে আছে একজন রাজকুমারীও। পুণ্ডনগরের রাজকুমারী কঙ্কাবতীর সয়ম্বর সভা চলছে। দূর দূরান্ত থেকে রাজকুমারেরা আসছে বিবাহ সম্পন্ন করতে। কাকে বেছে নিবে রাজকুমারী? এ এক গভীর ষড়যন্ত্র। যেই ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো হয়েছে, সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী? এখানে শেষ সংযোজন ভিতরগড় রাজ্যের ছোটকুমার। এ জাল ছিন্ন করতে পারবে তো সে?
ভিতরগড় রাজ্যে হানা দিয়েছে এক রাক্ষস। যার থাবায় সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাকে পাচ্ছে, তাকে সাবাড় করে দিচ্ছে। রাজ্যের কেউ আর অবশিষ্ট নেই। সেই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ছোটকুমার। কোথায় যাচ্ছে? সে জানে না। জঙ্গলের গহীনে 'নিষাদ' নামের এক জাতির কাছে অবশেষে আশ্রয় মিলেছে। তাদের সেবা যত্নে সুস্থ ছোটকুমার। কিন্তু ভেতরে জ্বলছে প্রতিশোধের আ গু ন। যে তার পরিবার, রাজ্য যে ধ্বংস করেছে, তার শাস্তি নিশ্চিত না করলে তো এ জ্বালা মিটবে না।
এবার রানীর গল্প করা যাক। রানী সুয়োরানীর অতীত জানলে চমকে যেতে হয়। যেই অতীত ভয়ংকর, বিভৎস। সেই অতীতের মায়াজালে বন্দী সাধারণ এক বালক। দীর্ঘ সময় এই মায়ার জালে শেষ হলো। এক সময় মায়া কাটে। অতীতের সব কুকীর্তির স্মৃতিতে অনুতপ্ত হতে হয়। এরপর আসে... এক তছনছ করা সকাল!
▪️বই পর্যালোচনা ও পাঠ প্রতিক্রিয়া :
ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। ভয়ভীতি হয়তো সমীহ জাগাতে সাহায্য করে! ত্রাসের শাসন কায়েম করা নতুন কিছু না। ভয় দেখিয়ে মানুষকে অনুগত হতে বাধ্য করা যায়, কিন্তু কোন থেকে আশির্বাদ পাওয়া যায় না। এই ত্রাসের শাসনকে বলা যায় "ত্রাশন"।
ছোটো বেলা থেকে রূপকথার গল্প পড়ে বা শুনে বড়ো হওয়া প্রজন্মের জন্য বড়োবেলায় 'রূপকথা' শব্দকে ভারিক্কি 'ফ্যান্টাসি' শব্দে বদলে দিয়েছি। তবুও তো রূপকথা আমাদের ছেড়ে যায়নি। "ত্রাশন" আমাদের ছোটো রূপকথাকে ফিরিয়ে এনেছে যেন। এখানে রাজা আছে, রানী আছে। রাজকন্যার গল্পও করা হয়। কিংবা রাখল বালক, অথবা রাক্ষস-খোক্কস। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে এক থ্রিলারের জন্ম!
"ত্রাশন" গল্পের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক, গল্পটি উপমহাদেশের। এই বিশাল উপমহাদেশকে উপজীব্য করে এমন ফ্যান্টাসি, কিংবা রূপকথা আগে পড়া হয়নি। লেখককে এ কারণে ধন্যবাদ জানানো যায়।
এই গল্পে সব আছে। রাজ্য আছে, রাজত্ব আছে। ষড়যন্ত্র, মায়া জাদু, ক্ষোভ, মানুষের ভালো করার চেষ্টা। প্লট বিল্ডিং থেকে শুরু করে ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং ছিল মনোমুগ্ধকর। লেখকের বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছিল সেই সময়ের উপাখ্যান। লেখক একটু বেশি বর্ণনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নিয়ে যেন নিজের তৈরি দুনিয়া জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করেছেন। খারাপ লাগেনি, তবে গল্পের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছিল। তবে এক অন্যরকম যাত্রা ছিল। বেশ উপভোগ্য এ যাত্রা।
লেখকের লেখনশৈলী নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। অনেক ক্ষেত্রে লেখক বাক্য অসম্পূর্ণ রেখে অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিছু কিছু অংশে ভালো লাগলেও সব জায়গায় ভালো লাগেনি। ব্যতিক্রম এক লেখায় সাক্ষী এই "ত্রাশন"।
তারপরও কিছু কথা থাকে। কিছু বিষয় আলোচনা করা প্রয়োজন। লেখক মূল বিষয় নিয়ে যেভাবে বর্ণনার আশ্রয় নিয়েছিলেন, আনুসঙ্গিক অনেক বিষয় নিয়ে সেই চেষ্টা করেছেন বলে মনে হলো না। রাজ্যে রাজ্যে কোন্দলের আভাস দিলেও তা ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিংবা সে চেষ্টা করেননি। আরো বিশদভাবে গল্পের মূল অংশে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা যেত।
আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সমাপ্তির অংশ। একটু যেন দ্রুততার সাথে শেষ হয়ে গেল। তারপরও গল্পের এই অংশে লেখক যেভাবে দুই ভিন্ন অংশ মিলিত করেছেন, তা অনবদ্য। এমনভাবে সমাপ্তির প্রত্যাশা হয়তো কোনো পাঠকই করতে পারবে না।
একটা খটকা অবশ্য কিছুতেই মিটল না। রাজকুমারীকে ��িয়ে করতে আসা রাজকুমারীর পরিণতি কী হয়েছিল? কেনই বা ছোটকুমারের জন্য এত অপেক্ষা?
▪️চরিত্রায়ন :
আমার মনে হয়েছে এই চরিত্র অংশ নিয়ে লেখক আরেকটু কাজ করতে পারতেন। বিশেষ করে প্রধান চরিত্র ছোটকুমারকে নিয়ে লেখক তেমন মাথা ঘামাননি। রাখাল বালক কমলকে যেভাবে লেখক গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিলেন, তেমনভাবে ছোটকুমারও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত।
একইভাবে রাজকুমারী কঙ্কাবতীকে লেখক যেভাবে সময় দিয়েছিলেন, সেভাবে প্রধান চরিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। রানী সুয়োরানীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। শুধু শেষে কেন? এই ষড়যন্ত্রের বীজ শুরু ��েকে দেখানো যেত। আরও গভীরভাবে গল্পে প্রবেশ করানো যেত। হয়তো লেখক শেষ মুহূর্তে চমকে দেওয়ার জন্য এই কাজ করেছেন। হতেও পারে।
এছাড়া কিছু চরিত্র ছিল, যাদের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। শুধু আনার জন্য কেবল আনা। গল্পের মাঝে এক রাজার কথা বলা হয়েছে, যায় ইচ্ছে সব রাজ্য জয় করা। কিন্তু তার ভূমিকা ছিল না বললেই চলে। ছোটখাট এ সমস্যাগুলোর জন্য দারুন বই হতে হতেও হয়নি।
▪️সম্পাদনা ও প্রোডাকশন :
বর্তমান সময়ে বাতিঘরের প্রোডাকশন কোয়ালিটি আগের তুলনায় অনেক ভালো। তবে এই বইয়ে বানান ভুল কিংবা ছাপার ভুলের আধিক্য ছিল। সবচেয়ে চোখে লেগেছে কীভাবে বানানটি। একই বানান দুই জায়গায় ভিন্নভাবে দেওয়া। একবার ই-কার দিয়ে, আবার ঈ-কার দিয়ে।
প্রচ্ছদটা আমার ভীষন পছন্দের। রূপকথা রূপকথা ভাব এনে দেয়। যেন প্রাচীন কোনো রূপকথার জগতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
▪️পরিশেষে, "ত্রাশন" রূপকথা, না ফ্যান্টাসি? আমার কাছে রূপকথা ভিন্ন কিছু না। দেশীয় রূপকথায় মজতে চাইলে বইটি উপভোগ্য। কিন্তু বেশি প্রত্যাশা থাকলে, সে দায় আমি নিতে আমি অপারগ। শেষে একটি কথা, আমাদের আশেপাশের দেশ/শহরের রূপকথার জগতে স্বাগত জানতে প্রস্তুত "ত্রাশন"।
❛সে অনেক দিন আগের কথা। রাজা-রাণীর ছিল এক ফুটফুটে রাজকন্যা। সুখেই যাচ্ছিল তাদের জীবন। একদিন হলো কি................................. এরপর তারা মহাসুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো।❜ কি, একটু ছোটোবেলার স্মৃতি ফিরে আসলো? শৈশবের আনন্দের অন্যতম মাধ্যম ছিল রূপকথার গল্প। রাজা-রাণী, রাজকন্যা-রাজকুমার, রাক্ষস-খোক্কসের গল্প শুনে ঘুমোতে গেছি এক কালে। টিভিতে ঠাকুরমার ঝুলি দেখতে জুড়ি ছিল না। বড়ো হয়ে গেছি বলে কি এখন আর ভালো লাগে না সেসব গল্প? বাকিদের জানি না, তবে আমার তো এখনো ভালো লাগে। কল্পিত এক পৃথিবী, স্বপ্নের মতো পরিবেশের গল্প শুনতে তো খুব ভালো লাগে। খাবার খেতে বসে সামনে ঠাকুরমার ঝুলি (কিংবা গোপাল ভাড়) ছেড়ে দেখতে থাকি। এমনই এক রূপকথার দেশের গল্প আছে। আছে এক রাজার গল্প। ভিতরগড় রাজ্যের রাজা ভূপতি। পঞ্চাশ বছর রাজত্ব করে এখন জীবনের শেষদিকে এসে এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিবেন বড়োকুমারের কাছে। এর আগে তাকে জানিয়েছেন এক সত্য, যার ভার বহন করে আসছেন তিনি বিগত অর্ধশত বছর যাবত। আসছে রাজার রাজত্বের পঞ্চাশ বছর পূর্তি এবার হবে ভিন্নভাবে। কীভাবে হবে দেখাই যাক। এক যে ছিল রাজকন্যা। নাম কঙ্কাবতী। রূপে-গুণে অতুলনীয়া। এক রহস্যের মেঘ ঘিরে রেখেছে রাজকন্যাকে। পুন্ড্রের রাজপ্রাসাদে আগমন ঘটেছে বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্রের। অংশ নিতে এসেছে স্বয়োম্বরে রাজকন্যার যোগ্য সঙ্গী হবার জন্য। কঙ্কাবতীর যোগ্য কে হবে? রাজকন্যাকে ঘিরে থাকা এই রহস্যের মূল কোথায়? এক ছিল রাজকুমার। সবাই তাকে ছোটোকুমার নামে চিনতো। সুখেই যাচ্ছিল তার দিন। একদিন সব ওলটপালট হয়ে গেল। ভিতরগড়ে আ ক্রমণ করলো এক রাক্ষস। সবাইকে হ ত্যা করে রাজ্য দখল করে নিল। কোনমতে বেঁচে যায় সে। নানা পথ পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছায় ❛নিষাদ❜ নামের এক জাতের কাছে। আহত, অসুস্থ ছোটোকুমারকে বদ্যিবুড়ি সারিয়ে তোলে। জীবনের আরাম-আয়েশ ভুলে নিজেকে সে গড়ে নিতে থাকে এক অন্য মানুষে। কুমার একদিন জানতে পারে চোয়াল ঝুলিয়ে দেয়া সব তথ্য। সেই তথ্য দিয়েই তাকে ছুটতে হবে এক নতুন যাত্রায়। কমল। গ্রামের দরিদ্র এক রাখাল বালক। একদিন সে ঘর ছেড়ে বের হলো গ্রামের মোড়লের দেয়া সরকারি এক কাজে। সঙ্গে বন্ধু ভুতো আর পন্ডিতমশাই ভটচাজ। সঙ্গে মোড়ল দুইজন পাইককে দিয়েছেন পথ দেখিয়ে নিতে। এক নিঃস্বার্থ যাত্রা শুরু হলো তাদের। ভিতরগড়ের খবর আনতে এই যাত্রা তাদের কোথায় নিয়ে যাবে? কমল কি কোন ষড়যন্ত্রের শিকার হবে? কমলদের প্রতি পদক্ষেপে কোথায় থেকে যেন এক অজানা শক্তি কাজ করছে। সে শক্তির উৎস অজানা। কমলের প্রতি পদক্ষেপে তৈরি হচ্ছে ইতিহাস। বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। ভিতরগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরিণতি কী হবে? এক যে ছিল সুয়োরাণী। যার আসল পরিচয় বা অতীত পিলে চমকে দেবার মতো। বলা যায় রূপকথার শুরু তার থেকেই। ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করা এই রূপকথার গল্পে সুয়োরাণীর ভূমিকা কি? রাজকন্যা কি পাবে রাজপুত্রের দেখা? রাজপুত্র কি হারানো রাজ্য ফিরে পাবে? কমলের ভিতরগড় যাত্রার কী হবে? রূপকথার গল্পের নটে গাছটি মুড়তে আর কতক্ষণ? ত্রাশনের বিনাশ হবে কি? পাঠ প্রতিক্রিয়া: ❛গা ছমছম কি হয় কি হয়! কখনও মজার কখনও বা ভয়।। পশু পাখি রাজা রানী ভূত পেত্নী চোখের সামনে সব হাঁটবে চলবে কথা বলবে ঠাকুমা ঝুলি খুলবে মজার গল্প বলবে।।❜ এই গানের সাথে পরিচয় নেই এমন লোক থাকলেও হয়তো কম আছে। ছোটোবেলার সেই ঠাকুমার ঝুলির গল্প, দৈত্য-দানোর গল্পের স্বাদ বড়োবেলায় এসে পেতে কেমন নস্টালজিয়া লাগে না? ❛ত্রাশন❜ নাবিল মুহতাসিমের রূপকথার এক গল্প। এখানে আছে রাজা-রাণী-রাজকন্যা-রাজকুমার, রাক্ষস-খোক্কস-পক্ষীরাজ, আছে ভালো-মন্দের মিশেল। আবার আছে রহস্য। রহস্যে মোড়া রূপকথার উপন্যাস বলা যায় ত্রাশনকে। পুরনো আবেগকে নতুন মোড়কে দেখানোর কাজটা সুন্দর ভাবে করেছেন লেখক। পড়ার সময় আগের সেই কী হয় কী হয় অনুভূতি হচ্ছিল। রহস্যের জাল কোথায় বোনা হয়েছে চিন্তা করছিলাম। প্রতিটা ঘটনার সুন্দর বর্ণনা করা হয়েছে। উপন্যাসর শুরুতেই চিন্তার খোরাক জুগিয়ে দিয়েছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত ছিল। বর্ণনার আধিক্য কিছুটা বেশি ছিল, যা মাঝেমধ্যে একটু একঘেয়ে লেগে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষের দিকে লেখক পাঠককে বেশ ভালো-ই ধাক্কা দিতে পেরেছেন। পড়তে পড়তে একঘেয়ে লাগার এক পর্যায়ে এসে শুধু একটা শব্দেই হাত পা ঝেড়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে পড়তে হয়েছে। পুরো উপন্যাসের সেই ক্লাইম্যাক্সটুকু বলাই বাহুল্য দারুণ লেগেছে। লেখকের বর্ণনার ধরন এবং ভাষার ব্যবহার ভালো লেগেছিল। তবে কিছু ব্যাপার ছিল যেসবের জন্য উপন্যাসটা শতভাগ উপভোগ্য হয়ে উঠেনি। যেমন বর্ণনার আধিক্য। কিছু জায়গায় অধিক কিন্তু আমার মনে হয়েছে অদরকারি বর্ণনার জন্য কিছুটা ধীর গতির লেগেছে। এরপর, কিছু রহস্য আমার কাছে রহস্য-ই রয়ে গেছে। একটা চরিত্রের বেশ রহস্যময় বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। তবে পরবর্তীতে তাকে নিয়ে আর কোথাও কোন আলোচনা নেই। যেন এক পর্বের জন্য উপস্থিতি ছিল তার। কিন্তু তাকে নিয়ে ভালো রকমের সাসপেন্স জাতীয় ভাব ছিল এক অধ্যায়ে। ভেবেছিলাম পরবর্তীতে তার আগমন ঘটবে। ছোটোকুমারের সেই গুহায় কার সাথে দেখা হয়েছিল সে বিষয়টাও কেমন ধোঁয়াশা রয়ে গেছিল। সব মিলিয়ে ❛ত্রাশন❜ রুপকথা আর রহস্যের সুন্দর এক মিশ্রণ। কিছু ব্যাপার বাদ দিলে পাঠকের কাছে উপভোগ্য এক উপন্যাস। প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন: বাতিঘর আগের তুলনায় এখন অনেক উন্নত হয়েছে বইয়ের প্রোডাকশনে। পিংক কালারের বইয়ের প্রচ্ছদটা আমার খুব দারুণ লেগেছে। প্রচ্ছদের মাঝেই রূপকথা রূপকথা একটা ভাব আছে।
এতোটা আহামরি হয়নি। নতুন ধরনের লেখা,কিন্তু সব মিথ আনতে গিয়ে একটু যেনো এলোমেলো করে ফেলেছে৷ গল্পের চেয়ে ওসব দিকেই নজর বেশি ছিলো মনে হলো।
তবে Cocomelon এর যুগে এখনকার বাচ্চারা বোধহয় রাক্ষস-খোক্ষসদের জানার সুযোগ পায়না।আমার জন্য,এ যেনো একটুকরো ছোটবেলা আর অনেকখানি কিশোরবেলার নস্টালজিয়া ছিলো।
রাক্ষস খোক্কসের গল্পের বই সাজেস্ট করে যান তো। ছোটবেলার গুলো হলেও চলবে। এদের হারিয়ে যেতে দেয়া যাবেনা। গল্প বলা আবার চালু করতে হবে, চাঁদের আলোতে বসে বা এমনিই কোনো টিমটিমে আলোতে বসে, নানিদের,খালাদের কাছে গল্প শোনার আসর জমাতে হবে।
এই বই আমাকে সব মনে করিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য উপন্যাসের চেয়ে যে আলাদা,সে নিশ্চিত। সব রূপকথার গল্প মিলিয়ে খুব একটা গল্প হয়ে গেলো,যদিও খুব যে সুন্দর বা কাহিনী যে টানবে সেটা নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা । তবে বইয়ে যে বানান ভুল, ও বড্ড বাজে দেখা যায়।
বড়দের রূপকথা! রূপকথা বলতে একদম রূপকথাই। সুয়োরাণী, ডালিমকুমার, পঙ্খীরাখ ঘোড়া, রাক্ষস খোক্কশ, বাঘের পিঠে ঘোগ, লালকমল নীলকমল - কী নেই এই বইতে! একেবারে আমাদের দেশীয় রূপকথার উপকরণগুলো, যেগুলোর গল্প ছোট থেকে শুনে বড় হয়েছি সেগুলো নিয়ে লেখক কাজ করেছেন এখানে। পড়ার সময় নস্টালজিয়া কাজ করছিলো বেশ।
তবে ভালোলাগাটা আসলে ঐ পর্যন্তই। কাহিনীর বিচারে খুব এগিয়ে রাখবো না বইটাকে। রূপকথার ভাষায় থ্রিলারটা তেমন জমেনি আমার জন্য। গল্পের শুরুটা দূর্দান্ত হলেও কাহিনী বা চরিত্র কোনোটাই মনে দাগ কাটেনি তেমন। লেখক যেন ওয়ার্ল্ডবিল্ডিং এ বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে কাহিনীর খেই হারিয়ে ফেলেছেন কিছুটা।
আমার মতে ত্রাশণ বেশ এক্সপেরিমেন্টাল একটা কাজ ছিলো। যেখানে উপন্যাসের সেটিং, রূপকথার উপকরণগুলোর ব্যবহার চমৎকারভাবে হলেও মূল গল্পের বা চরিত্রগুলোর ডেভলপমেন্ট আরেকটু ভালো হলে পড়ে আরাম পেতাম।
চলুন ফিরে যাই সেই ছোট্রবেলাটায়। ফিরে যাই সেই রাজা রানীর রূপকথার রাজ্যে। যথারীতি যেখানে রয়েছে রাজপুত্তুর, রাজকন্যা, রাক্ষস, খোক্কস, দেও দানো। কিভাবে ভিতরগড় রাজ্যে এতোবড় এক মহা প্রলয়ংকরী কান্ড ঘটে গেলো? কারা জড়িত এই ষড়যন্ত্রে? গৌড় নাকী পুন্ড্র রাজ্য? এতো রাজাধিরাজদের মাঝে এক রাখাল বালকের ভূমিকাই বা কি?
কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে খুব আগ্রহ জাগানিয়া গল্প মনে হচ্ছে না? ছোটবেলাড় সেই নস্টালজিক সময়টায় ফিরে যেতে সবারই ভালো লাগার কথা। তা বইটা এর চমৎকার প্লট আর সেটিং এর উপর নির্ভর করে আমার মন কতোটা ভরাতে পারলো তা একটু বলি:
যা কিছু ভালো লেগেছে:
শুরুতেই বলতে হয় গল্পের পরিবেশ এবং প্লটের কথা। যেভাবে গল্পটা শুরু হয়েছে বুঝা যাচ্ছিলো বেশ গ্রান্ড একটা কিছু পাওয়া যাবে গল্পে। এরপর একের পর এক চরিত্রের আগমনে গল্পে নিত্য নতুন মশলা যোগ হয়েছে। গল্পের আবহ অনুসারে লেখকের ভারিক্কি শব্দের ব্যবহার আর বর্তমানে অপ্রচলিত কিন্তু চমৎকার শব্দচয়নে মুগ্ধ হয়েছি। এছাড়াও গ্রাম্য চরিত্রদের সংলাপে একদম আলাদা একটা আঞ্চলিক ভাষারীতির ব্যবহারও ভালো লেগেছে। কমল নামের চরিত্রের নিজ গ্রাম থেকে বের হয়ে ভিতরগড়ের দিকে যাত্রার অভিযানের অংশটুকু পুরোটাই উপভোগ্য লেগেছে। বইয়ের শেষের দিকে এসে একটা চমৎকার প্লট টুইস্ট দিয়েছেন লেখক। আমি ভেবেছিলাম লেখক সম্ভবত টাইমলাইনে কিছুটা গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলেছেন, পরে দেখলাম সেটাই বইয়ের মূল চমক। এই তো!! ভালো লাগার অংশ এতোটুকুই।
যা ভালো লাগেনি:
একটা বিষয় হলো গল্প বলা, আরেকটা বিষয় হলো গল্পটা দেখানো। পাঠক হিসাবে আমি গল্প দেখতে পছন্দ করি৷ কিন্তু লেখক এখানে দেখানোর চেয়ে শোনানোর দিকেই বেশী নজর দিয়েছেন। গল্পে সেই ছোটবেলার রূপকথাগুলোর মতোই সংলাপ কম রেখেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আরেকটু বেশী সংলাপ থাকলে পড়ে আরাম হতো। তবে যে ব্যাপারটা বেশী ভুগিয়েছে সেটা হলো অযথা অতিরিক্ত বর্ণনায়ন। বলেছিলাম শুরুর দিকে মনে হয়েছে গ্রান্ড কিছু হতে যাচ্ছে। সেই গ্রান্ড কিছু গল্পে আনতে লেখক পুরো ৪০টা পাতা খরচ করে ফেলেছেন। এই ৪০ পাতা জুড়ে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় অনেক বর্ণনা, যেগুলা গল্পের কোনো জায়গাতেই আর কোনো ইমপ্যাক্ট রাখে না। বইয়ের প্রথম বড় কোনো ঘটনার পর, এরপর পাঠক আশা করবে এবার বোধহয় কিছুক্ষণ এই গতিতেই গল্প এগুবে। কিন্তু কোথায় কি! আবারও গল্পের রাশ টেনে ধরেছেন লেখক। কমল চরিত্রের ইন্ট্রোর পিছনে প্রায় ৪টা পাতা খরচ করেছেন লেখক। এই ৪ পাতা জুড়ে সে একটাই কাজ করে তা হলো ঘুম থেকে উঠে খালের পাড়ে মুখ ধুতে যায়! এই এতোটুকু ঘটনা জানানোর জন্য পাঠককে ৪টা পাতা ধরে পড়তে বাধ্য করা কি খুব বেশী দরকার ছিলো? যেসব বর্ণনা দেয়া হয়েছে সেগুলাও তো গল্পে আর কোনো মানে রাখে না। হওয়া উচিত ছিলো কাহিনী বা ঘটনাবলীর ফাঁকে ফাঁকে বর্ণনা, হয়ে গিয়েছে বিশাল সব বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে অল্প একটু কাহিনী! আর যথারীতি শেষে এসে অনেক ফেলে রাখা সুতোকেও সঠিকভাবে মেলাতে পারেননি লেখক। যতোটুকু দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হওয়া যেতো, যদি পুরো বইটা ১৫০ পাতার মধ্যে নিয়ে আসতেন লেখক। আর তাই চমৎকার প্লট, চমৎকার সেটিং এর পরেও সঠিক এক্সিকিউশানের অভাবে নিতান্তই এভারেজ একটা বই হয়ে থেকে গেলো ত্রাশন। যেটা হতে পারতো বাংলা সাহিত্যের রূপকথায় চমৎকার এক সংযোজন। সেটাই হয়ে গেলো এমন একটা বই যেটা পড়লেও ক্ষতি নাই, না পড়লেও ক্ষতি নাই।
ব্যক্তিগত রেটিং: ০৬/১০ ( অপ্রয়োজনীয় বর্ণনায়নে গল্পের গতি ব্যাহত না হলে, আরো কিছু সংলাপ থাকলে, কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে কে জানে হয়তো ঠাকুরমার ঝুলির অভাব এই বইটা দিয়ে পূরণ করানো যেত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষেত্রে )
প্রোডাকশন: বাতিঘরের টিপিক্যাল প্রোডাকশন। যদিও দামটা বাতিঘরের অন্যান্য সময়ের বইগুলোর চেয়ে বেশী ছিলো। বইমেলার সময়ে কাগজের দামের কথা মনে রাখলে অবশ্য এই দাম রাখাটাই স্বাভাবিক। এছাড়া বইটায় প্রচুর বানান ভুল আর বাক্যে শব্দের মিসিং চোখে পড়েছে। তবে বাতিঘরের গতানুগতিক প্রচ্ছদের বাইরে, ব্যতিক্রম হিসাবে এই বইটার প্রচ্ছদ আমার খুবই ভালো লেগেছে। অত্যন্ত চোখ জুড়ানো একটা প্রচ্ছদ।
ছোটবেলায় ঠাকুরমার ঝুলি কিংবা চাঁদের বুড়ি ম্যাজিক ম্যান দেখেছিলেন কিনা? আমাদের দেশীয় লোককথা আর ঐতিহ্য সংস্কৃতি কে উপজীব্য করে কত সুন্দর সুন্দর রূপকথার গল্প লিখে গেছেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। রঙিন বাক্স টিভিতে ডিভিডি কানেক্ট করে ক্যাসেট দিয়ে টু ডাইমেনশনালি ভিজুয়াল এক্সপেরিয়েন্স করেছি এগুলো সেই কতকাল আগে! সেই শৈশব কোথায় যেন চাঁপা পরে ছিল। লেখক নাবিল মুহতাসিম আমার চাঁপা পরা সেই শৈশবটাকেই যেন আবার টেনে তুললেন।
একটা আসন পেতে বসলেন আর শুরু হলো, সে অনেককাল আগের কথা... অমুক জায়গার প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল একটা প্রাসাদ। যে প্রাসাদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব চালাচ্ছেন তমুক রাজা... এরপর কতোরকমের যে গল্প হয় তা আমাদের নিশ্চয়ই জান�� না থাকার কথা নয়! শুধু রাজা রাণী দের কথা ছাড়াও সাধারণ মানুষ, মানুষের ভাগ্য, সুপারন্যাচারাল সহ আরো অনেক উপাদান নিয়ে তৈরি হতে পারে রূপকথার গল্প (Fairy Tale). ত্রাশণ এর পেছন দিকে বলাই আছে এটা একটা রূপকথার গল্পের বই। গল্পে অনেক উপাদান নিয়ে এসেছেন লেখক। শুরুর দিকে ভালোই লেগেছে আমার কাছে। মাঝে একটু স্লো লাগছিলো। শেষটাতে আবার পুষিয়ে দিয়েছেন লেখক মহাশয়। ছোটকুমার আর কমল-ভুতু-পন্ডিতমশাইয়ের অ্যাডভেঞ্চারেই গল্পটা একটু স্লো এগিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হলো। কিন্তু তাদের এই অ্যাডভেঞ্চারই বেশ এনজয় করেছি। সবমিলিয়ে মোটামুটি ভালোই লেগেছে ত্রাশন (ত্রাসের শাসন: বইয়ের নামটার একটু বিশ্লেষণ/সন্ধি বিচ্ছেদ করার চেষ্টা করলাম আরকি...)
গুডরিডস এ 3.1 রেটিং হওয়ার কারন দেখতে পাচ্ছি না। আমি ইদানিং বই মাপি যে বইয়ের সাথে কাটানো সময়টা কতোটুকু ওয়র্থ ইট ছিলো, সেই হিসাবে সোজা ৪/৫ দিবো।
বইয়ের সেলিং পয়েন্টটাই ছিলো যে গ্রোওন-আপদের জন্যে দেশিয় রুপকথার এলিমেন্টস, ক্যারেক্টারস নিয়ে কাহিনী। রাক্ষস থাকবে, পক্ষীরাজ ঘোড়া থাকবে, থাকবে রাজকন্যা, পলিটিক্স অল দ্যাট গুড স্টাফ :v সাবলীল গতিতে আগানো গল্প। বইতে যেমনটা লেখার স্টাইল, আমার বেশ ভালোই লাগে এভাবে লেখা জিনিস পড়তে।
যে কারনে পুরো ৫/৫ হয়নি -- বইয়ের অনেক ইভেন্টের মধ্যে দুয়েকটা জিনিসের ব্যখ্যা খাপছাড়া, দুয়েকটা ব্যখ্যা দূর্বল, আর একটু জায়গায় খুব একটা শক্তভাবে দৃশ্যটার বর্ণনাটা গোটা গপ্পের সাথে ফিট করে বসানো হয়নাই মনে হলো। ডিটেইল বলতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে তবে অংশগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, এটুকু যে মনে করে ব্যখ্যা করা হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কাহিনীর ডান-বাম-আগে-পিছের কথা ভালোমতো চিন্তা করেই করেছেন লেখক।
এটুকু বাদে, পুরোটা স্ট্রেইট আপ এনজয়াবল। দেশীয় রূপকথার অনেক ছোটোখাটো এলিমেন্টও নিয়ে গল্পে জুড়ে দিয়েছেন সুন্দরভাবেই। ইস্টার এগ এর মতো একেকটা এলিমেন্ট ধরতে পেরে- ১২-১৫ বছর পরে মনে করতে পেরে মুচকি হেসে উঠেছি কয়েকবারই। বলছি না কী কী আছে, নাহলে ওইযে, মাইনর স্পয়লার হয়ে যাবে।
বইয়ের ৭৫-৮০% হওয়ার পরে মনে হয়েছে এটা কি সেকেন্ড পার্টের জন্যে ঝুলায়ে রাখা হবে নাকি? পৃষ্ঠা তো বাকি নাই খুব বেশি, কিন্তু কাহিনী তো মিললো না। বাট শেষে গিয়ে মিলে গেছে ভালোমতোই।
ওভারঅল, বইটার সাথে সময়টুকু ওয়র্থ ইট। লেখকের এমন কোয়ালিটি ধরে রেখে ফ্যান্টাসি ধাঁচেরই আরো বই আসবে আশা করি। ওনার ইউজুয়াল থ্রিলার একটা পড়বো এখন এইটার পরে :3
রূপকথার রাজ্যে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে ছিলাম যেনো। রাক্ষস, খোক্ষস, পঙ্খীরাজ ঘোড়া, ডালিম কুমার- যেনো সব ঠাকুরমার ঝুলি। Nostalgic হয়ে গেলাম। Light একটা বই আর শেষের টুইস্ট! ভাই রে ভাই! আমার কিছুক্ষণ চিন্তা করা লাগলো যে কই থেকে কি হলো? আমি তো টাইম ট্রাভেল এর কথা ভাবছিলাম 🤣 লেখককে ধন্যবাদ এরকম একটা ছোট্ট বেলার ছোঁয়া দিয়ে বড়দের বই লেখার জন্য। তবে বানান ভুল এবং শব্দের ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ করার মত। একটু বাঁধা পাচ্ছিলাম এর জন্য।
সেই পুরোনো ঠাকুরমার ঝুলির মত লেখা একটা বই । ভিন্ন ধাঁচের গল্প আর লেখনীতে বেশ ভাল একটা বই । তবে চরিত্রগুলোকে আরও কিছু সময় দিয়ে পুরো ইউনিভার্সটা আরও ভাল বিল্ড করা যেত । বইটা কেমন যেন সুন্দর করে শুরু হয়ে একটু তাড়াহুড়ো করে শেষ হয়ে গেল ।
রাজাধিরাজ রাজ্যে চলছে খুশির আমেজ, সফল মৃগয়া শেষে বড় রাজকুমার ফিরে এসেছেন রাজ্যে। ভূপতি রাজার রাজ্যাভিষেকের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশাল আয়োজন চলছে। রাজা ভূপতি এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার বড় ছেলেকে রাজ্যের দায়িত্ব হস্তান্তর করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চারিদিকে শত্রুর অভাব না থাকলেও রাজা ভূপতি তার প্রজাদের সর্বদা ভালো রেখেছেন যার কারণে রাজ্যে অপরাধের চিহ্ন শুন্যের কোঠায়। অবশেষে আসলো সেই দিন যেদিন এই রাজ্য তাদের নতুন রাজা পাবে কিন্তু সর্বনাশ ঘটে গেল, মঞ্চে উঠে বক্তব্য পেশ করতে না করতেই বড় রাজকুমার পরিণত হয়ে গেল রাক্ষসে। শুরু হলো তান্ডব, ছোট রাজকুমার বাদে পুরো রাজপরিবারকে হত্যা করে রাক্ষস। শত্রুসেনারা দখল করে নেয় পুরো রাজ্য।
রাক্ষসের আক্রমণের কাহিনী আশেপাশের গ্ৰামগুলোতে ছড়াতে লাগলো। রাজ্যের কাছাকাছি এক গ্ৰামে রাখাল কমল তার পিসিমাকে নিয়ে থাকে। কমলদের গ্ৰামের মোড়লমশাই সিদ্ধান্ত নিল ভিতরে কি হচ্ছে তা দেখবার জন্য কমলকে পাঠানো হবে। প্রথমবারের মতো গ্ৰামের বাহিরে যাত্রা শুরু করে কমল, সাথে আছে তার বন্ধু ভুতো ও পন্ডিতমশাই। সামান্য রাখাল থেকে ভিতরগড়ের রাজা হয়ে গেল কমল। অন্যদিকে রাজ্য থেকে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসে ছোট রাজকুমার দিশেহারা, বিধাতা যেন নিজ চোখে তাকে দেখাতে চায় তার রাজ্যের পুরো ইতিহাস।
লেখার ধরণ, প্লট এক কথায় চমৎকার। লেখক যে গল্পে দুইটা আলাদা টাইমলাইনের বর্ণনা করছিলেন শেষ অবধি তা বুঝতেই পারিনি আর এই টুইস্টাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। রাজা ও রাক্ষসের গল্প বেশ উপভোগ করেছি তবে আরেকটু বড় হলে ভালো হতো।
আমার পড়া সবচেয়ে বাজে বইগুলোর একটা! শেষ করবো নিয়ত করেছিলাম বলে শেষ করলাম কিন্তু সময় নষ্ট, মাথা নষ্ট! ইশ! বাজে গল্প,গল্পের ধরন! অথচ বইয়ের সারসংক্ষেপ আর কভারটা দেখে কি আগ্রহই না জেগেছিল মনে!