আমার নাম নীল—নীল চ্যাটার্জি। বয়েস ত্রিশের আশেপাশে। পেশা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার। আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী টেলিলেন্স লাগানো ক্যামেরা। বছরের বেশিরভাগ সময় ভারতবর্ষের নানা বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরেই আমার দিন কেটে যায়। আর এই পেশার কারণেই জড়িয়ে পড়ি আশ্চর্য সব অ্যাডভেঞ্চার আর রহস্যের গোলকধাঁধায়। রহস্য কখনও পাতার রূপ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় গভীর অরণ্যে, কখনও সে মুখ ঘোরায় বিজ্ঞানের জটিল কল্পনায়, কখনও থর মরুভূমির বুকে আবির্ভূত হয় রাক্ষুসে পোকা, কখনও আবার হিমালয়ের নন্দাদেবী ট্রেকিংয়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন এক পাহাড়ি গ্রামে মুখোমুখি হই এক চক্রের।…
এই বইয়ে রয়েছে এমনই হাড় হিম করা সাতটি কাহিনি। দীঘলবাড়ির দুরন্ত দিনগুলি, পিশাচ কারখানা, পাঁচ-নম্বর স্পেশিমেন, মরু পিরানহা, রক্তমণি রহস্য , প্রেতের দ্বীপ প্যারাকিট, সাত পুতুল।
আপনারা পড়তে শুরু করলে যে থামতে পারবেন না, এ আমি হলফ করে বলতে পারি।
তাঁর জন্ম এবং বড় হওয়া হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উপাধি অর্জনের পরে তিনি রাজ্য সরকারের অধীনে আধিকারিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ দুই-দশকের লেখক-জীবনে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোর-সাহিত্য, উভয় ধারাতেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য তিনি যখন গল্প-উপন্যাস লেখেন, তখন ঘটনার বিবরণের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন মানব-মনের আলোছায়াকে তুলে আনার বিষয়ে। লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। তাঁর বহু কাহিনি রেডিও-স্টোরি হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে সমাদর পেয়েছে। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন দীনেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার এবং নান্দনিক সাহিত্য সম্মান।
নীল চ্যাটার্জি আমার অত্যন্ত পছন্দের একটা চরিত্র।। প্রতি বছর শুকতারাতে তার প্রত্যেকটা অভিযান দারুণ উপভোগ করি। শারদীয়া শুকতারা ১৪২৩-১৪২৯ পর্যন্ত প্রকাশিত ৫টা উপন্যাসিকা এবং ২ টি বড় গল্প নিয়েই এই সংকলন। প্রত্যেকটা গল্প পুনরায় পড়ে আবারো অভিভূত হলাম। এবছর সম্ভবত নীল চ্যাটার্জির কোন উপন্যাসিকা বা বড় গল্প পাচ্ছি না। বড় দুঃখের ব্যাপার।
সৈকত মুখোপাধ্যায়ের লেখনীর টানে এই আপাদমস্তক অবিশ্বাস্য ও অসম্ভাব্য গল্পগুলো পড়তে শুরু করেছিলাম। এগুলোতে পরিবেশ ও প্রকৃতিবিজ্ঞান— বিশেষত পক্ষীজগত সম্বন্ধে প্রচুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। মুশকিল হল, সে-সব পরিবেশনের জন্য যে রোমাঞ্চকর কাঠামোগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর গুণমান একেবারে এক্সপোনেনশিয়ালি নেমেছে বছর-বছর। যেখানে ২০১৬-র শারদীয় শুকতারায় প্রকাশিত 'দীঘলবাড়ির দুরন্ত দিনগুলো' সত্যিই অতুলনীয়, সেখানে গতবছর প্রকাশিত 'সাত পুতুল' একেবারে অপাঠ্য। 'পিশাচ কারখানা' থেকেই গল্পগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা লোপ পেতে থাকে। 'পাঁচ নম্বর স্পেসিমেন' তো একেবারে জটায়ুর 'আণবিক দানব'-তুল্য। পরের লেখাগুলো নিয়ে কিছু না লেখাই ভালো। বইটির প্রকাশনা-মূল্য ভালো। ছাপা পরিষ্কার ও শুদ্ধ। রঞ্জন দত্তের প্রচ্ছদ ও প্রদীপ্ত মুখার্জির অলংকরণও যথাযথ। ব্যস।