দশ বছরে ষোলোটি সদ্যোজাত শিশু উধাও। সন্দেহের তির গ্রামেরই এক মহিলার দিকে। তার পূর্বপুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডাইনির ইতিহাস। মেসিহা? নাকি শয়তান? কী যেন আছে মৌলির মধ্যে, ওকে ভীষণ চেনা লাগে সায়নের ঘর খুঁজে পাওয়া, একই সঙ্গে হারিয়ে যেতে চাওয়ার মতো ভরসামাখা একটা হাত।….
কিন্তু মৌলিও কি স্বাভাবিক? ও কি কিছু গোপন করছে সায়নের থেকে? পাঁচশো বছর আগে পুড়ে মরা ডাইনির স্বীকারোক্তিতে কীসের ইঙ্গিত? কোন আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসছে গ্রামে? বীভৎস খুনগুলোর নেপথ্যে কি কোনও মানুষ না দানব? নাকি সমস্যার সমাধান আরো গভীরে ?….
সব প্রশ্ন হারিয়ে যায় ঘন কুয়াশায়। উত্তর হয়ে পড়ে থাকে কেবল কুয়াশার ফুল।
ডাইনি নামটা শুনলেই আপনার চোখের সামনে কি ভেসে ওঠে?? আমি বলছি। কোঁকড়ানো অবিন্যস্ত চুল উড়ছে কতগুলো, জ্বলজ্বলে হলুদ চোখ, বড়ো বড়ো দাঁত, বাঁকানো টুপি, আর ড্রাকুলার মতো দাঁত। এইতো?? পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ আজও ডাইনি বলতে এটাই প্রথম ছবি আঁকে। আচ্ছা কখনো কারও কেন মনে হয়নি যে ডায়নি তো ছেলেরাও হতে পারে... কেন মনে হয়নি বলুনতো?? কারণ চিরকাল আঙুল তোলা সহজ হয়েছে নির্দিষ্ট একটা জাতির প্রতি। ডাইনি নামটাই দেখছেন না কেমন স্ত্রীলিঙ্গ জাতীয় গোত্রের রাখা হয়েছে। যদি ডাইনি এত ভালোই কিছু হয়। তাহলে ডাইনি কে?? 🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂 ডাইনিপ্রথার শিকার মূলত নারীরাই । ডাইনি শব্দটির ব্যঞ্জনা অতীতে আজকের মতো নঞর্থক ছিলোনা । ইংরেজির "Witch" শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ "Wicca" থেকে , যার অর্থ বুদ্ধিমতী নারী । অতীতে ইওরোপিয়ান সমাজে এই উইক্কারা হেলাফেলা বা অসম্মানের পাত্র তো ছিলেনই না , বরং ছিলেন যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র । এই উইক্কারা ছিলেন মডার্ন পেগানিজম বা আধুনিক মূর্তিউপাসনার প্রবক্তা । সম্ভবত এখান থেকেই পিউরিটান প্রটেস্ট্যান্টদের চক্ষুশূল হন উইক্কারা । তাঁদের ধর্ম অবমাননাকারী , শয়তানের উপাসক তকমা দিয়ে অপরাধী সাব্যস্ত করে পুড়িয়ে বা ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা শুরু হয় । উইক্কানরা ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী , তাঁরা প্রকৃতিকে নিজেদের ধর্ম বলতে ভালবাসতেন । Nature religion এর একটি ধারা হিসেবে এঁরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন , যা ছিলো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক । এঁরা নানা ভেষজ ওষুধের গুণ জানতেন । ভিষগ হিসেবে কাজও করতেন , সাফল্যও পেতেন । এইজন্যেই ম্যাজিক্যাল প্র্যাকটিসের ধারণাটি এঁদের নামের সাথে জুড়ে যায় যা পরে এঁদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এঁরা সংস্কৃতিমনা ছিলেন , নাচ গান সহ নানা গুণে গুণান্বিত ছিলেন তাঁরা । প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতে চাইতেননা এবং সমান্তরাল একটি ধর্ম অর্থাৎ natute religion প্রচলনের স্বপক্ষে ছিলেন বলেই গীর্জার রোষের মুখে পড়তে হয়েছিলো উইক্কানদের । এই বিরোধ বা বিদ্রোহের কারণেই Witch বা ডাইনি তকমা পান তাঁরা , যার জের চলে বহুকাল অবধি এবং আজও তা বিলুপ্ত হয়নি । প্রচলিত প্রথা বা অন্যায়ের বিরোধ করলেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে ডাইনি আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য নারীকে । 🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂 ডাইনি আসলে মানুষের নোংরা বিকৃত পচাগলা মনের একটা সমার্থক শব্দ। যে পচাগলা মনটা থেকে একটা দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে, আর কোনো ভালো মানুষের কাছে গেলেই যখন মন হয়.. ইসস, এর গা থেকেই মনে হয় দুর্গন্ধ টা আসছে... এক্ষুনি দূরে সরিয়ে দাও ওকে.. ঠিক তখনই আপনার অন্যায় আবদারের প্রতি ওর যে একটা ঘেন্না জন্মালো আপনার প্রতি... ঐ ঘেন্নাটার নাম ডাইনি। আর খুন?? দিনের পর দিন যখন আপনি কাউকে নিংড়ে, ছেঁচড়ে, ছিবড়ে করে দেন। ঐ অর্ধমৃত বাহ্যিক দেহটায় তখন ধীরে ধীরে প্রতিহিংসা, জিঘাংসা, যেদ গজাতে শুরু করে। আর অদ্ভুত ব্যাপার আপনার সেটা চোখেই পড়বে না.. কেন বলুনতো?? আপনি কোনোদিন প্লাষ্টিকের গ্লাসে জল খেয়ে সেটা যখন দুমড়ে মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেন... আর পেছন ঘুরে দেখেন নাকি গ্লাসটা কেমন আছে?? কিন্তু আপনার ঐ অলক্ষ্যটাই ঐ নিংড়ানো শরীরটাকে সাহস জুগিয়ে দেয় ভবিষ্যতের জন্য একটা বীজ পুঁতে দিতে। 🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂 উপন্যাসের গল্প মতিপুর গ্রামে ঘটে চলা কিছু অস্বাভাবিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কয়েকমাস ধরে সেই গ্রামে অদ্ভুত ভাবে কিছু বাচ্চা চুরি হয়ে যাচ্ছে। রাতবিরেতে কোনও এক রহস্যময় মানুষ কিংবা অন্যকিছুর আক্রমণের শিকার হয় মানুষ, বিশেষ করে বাচ্চারা। গ্রামবাসীদের একাংশের সন্দেহ, এই কাজ গ্রামেরই একজন মহিলার, নাম গঙ্গা। সে নাকি ডাইনি। কিন্তু এলাকার অনেকের কাছেই সে ধন্বন্তরী। অন্যদিকে কি যেন খুঁজে পায় সায়ন মৌলির চোখে। ভীষণ চেনা লাগে ওকে সায়নের। পৃথিবীর বুকে প্রথমবারের জন্য নিজের একটা ঘর খুঁজে পাওয়া, একইসঙ্গে হারিয়ে যেতে চাওয়ার মতো ভরসামাখা একটা হাত।... কিন্তু মৌলিও কি স্বাভাবিক?? ও কি গোপন করছে সায়নের কাছে?? গ্রামের এই অপরাধগুলো ঘটাচ্ছে কে?? সত্যিই কোনো দানবীয় শক্তি নাকি মানুষ?? সব কেমন যেন হারিয়ে যায় ঘন কুয়াশায়। উত্তর হয়ে পড়ে থাকে কেবল কুয়াশার ফুল। 🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂 এই বই অনেকদিন পর্যন্ত মনে থেকে যাবে। সায়ক আমানের লেখা পড়লে মনে হয়, আমি ঠিক যেমন করে ভাবি, উনি কীভাবে জানতে পেরে যান সেটা?? অবাক লাগে। অনুভূতির এত মনকেমন করা লিখিত প্রকাশ বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে মেনে নেওয়া। বইয়ের একটা অংশ আজীবন মনে থাকবে।
"আচ্ছা বলো কি কারণে মন খারাপ করে তোমার? - মায়ের জন্য।... - মা নেই বলে??
- না মা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারলো বলে। ছোট থেকে এত বড়ো হয়েছি, কখনো কারও মা কাউকে ছেড়ে চলে গেছে বলে শুনিনি। - কই।?? আমি তো দেখতে পাচ্ছি তোমার মাকে। মায়ের রক্ত বইছে তোমার শরীরে। - মা ভালো হোক বা খারাপ, বাড়িতে থাক বা ছেড়ে চলে যাক। তোমার শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, ততক্ষণ তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা তোমাকে দিয়ে গেছেন তিনি।
- কি জিনিস? - তার অস্তিত্ব। " 🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂 ধন্যবাদ ❤
📑🕊️সদ্য পড়ে শেষ করলাম সাহিত্যিক সায়ক আমান এর লেখা “কুয়াশার ফুল”! লেখকের লেখা ভাসানবাড়ি,তার চোখের তারায়, জোনাকির রং- এই বই গুলো আগেই পড়েছি। এই বই টি পড়তে আমার দারুন লেগেছে। অনেক দিন পর আবারো রোমাঞ্চ অনুভব করলাম এই উপন্যাস পড়ে।এই বইয়ের Page Quality বইয়ের বাধাই বেশ ভালো, আর প্রচ্ছদটি তো অপূর্ব। ভাসানবাড়ি এখনো আমার কাছে ভীষন পছন্দের। লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা বই পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য। এই ভাবেই লিখতে থাকুন, পরবর্তী বই এর অপেক্ষায় রইলাম। 📑এই বার আসি উপন্যাসের কথায় - সায়ন মজুমদার এই উপন্যাস এ মুখ্য চরিত্র। বছরদুয়েক হল সায়ন আইন পাশ করে বেরিয়েছে। বিস্তর পড়াশুনার খুব একটা ইচ্ছা নেই। ছোট থেকেই ও একটু কল্পনাপ্রবণ। ভাবের জগতে থাকতে ভালোবাসে। একসময় একটা গানের দলে যোগ দিয়েছিল।শেষে বাপের ধাতানি খেয়ে ল'টা পাশ করে। তবে পাশ করলেও কালো কোর্ট আর সাদা স্ট্যাম্প পেপারের ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট জীবন যে তার জন্য নয়, সেটা বুঝতে সময় লাগেনি সায়ন মজুমদারের। একদিন সকালে দিলীপ দস্তিদার সায়ন এর কাছে আসে - বেশ কিছু দিন হল আমাদের গ্রামে একটা সমস্যা উপস্থিত হয়েছে। ‘সমস্যাটা কী?’ প্রায় প্রতিবছরই, বুঝলে? দু-একখানা করে সদ্যোজাত বাচ্চা আমাদের গ্রাম থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। ইদানীং আমাদের আশপাশের গ্রাম থেকেও কয়েকটা খবর এসেছে আমার কানে।' ‘সদ্যোজাত বলতে?' ‘মানে, এই ধরো এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। এ অবধি আমরা যা দেখেছি, তাতে গত দশ বছরে অন্তত ষোলটা বাচ্চা এইভাবে গায়েব হয়েছে... “আমার যদ্দুর মনে হয়, গঙ্গা...যাকে বলে...একটা ডাইনি....' উপন্যাসের নায়ক সায়ন মজুমদার গ্রামের কুসংস্কারের সাথে জড়িয়ে যায়। গ্রামের সবাই গঙ্গাকে ডাইনি বলে মনে করলেও শুধুমাত্র পুরোহিত মাধব ভট্টাচার্য গঙ্গাকে ডাইনি বলে মানেন না, এর পিছনে কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে? গঙ্গা কি সত্যিই ডাইনি? নাকি আরও কোনও ভয়ানক সত্য চাপা পড়ে আছে এই রটনার আড়ালে? গঙ্গার সহকারী মেয়েটি কি সত্যিই স্বাভাবিক? কোথা থেকে এসেছে সে? সায়ন কি পাবে শেষ অবধি সব প্রশ্নের উত্তর ? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে অবশ্যই উপন্যাসটি পড়তে হবে। উপন্যাস টি পড়ে আমার অসাধারণ লেগেছে!
📑💐উপন্যাসের কিছু লাইন -
🌠বিষণ্ণতার প্রথম ধাপ কী জানেন? “কী? ’ ‘মুগ্ধতা...’ 🌠সবার জীবনেই একটা লক্ষ্য থাকা উচিত, সঠিক লক্ষ্যই এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের স্বাদ। 🌠"ঘন কুয়াশায় হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাব আমরা। খুঁজে পাব কেবল গন্ধহীন, বিবর্ণ এক কুয়াশার ফুল..."
উপন্যাসটির সূচনা হয় একটি ছোট গ্রাম মতিপুর কে কেন্দ্র করে। বিগত কিছু বছর ধরে মতিপুরে সদ্যোজাত কিছু সন্তান চুরি হয়ে যাচ্ছে , সেই বাচ্চাগুলির বাবা-মা এক অদ্ভুত দর্শনের নারী মূর্তিকে দেখছে বাচ্চাগুলিকে চুরি করার সময় এই অদ্ভুত দর্শনে নারী কে ডাইনি বলে চিহ্নিত করেছে মতিপুরের বাসিন্দারা। সেই গ্রামেরই এক রহস্যময় মহিলা গঙ্গা। গঙ্গা কে রহস্যময় বলার কারণ তাকে গ্রামে খুব অল্প মানুষ তার দেখা পেয়েছে মানুষজনের সঙ্গে বরাবরই দূরত্ব বজায় রেখেছে সে। এই গঙ্গার বাড়ির সামনে প্রতিদিন নিম্ন মধ্যবিত্ত কিছু মানুষের ভিড় জমে চিকিৎসার জন্য , একদল খেটে খাওয়া মানুষ ভগবান মনে করে অন্যদিকে একদল মানুষ তাকে ডাইনি মনে করে। এবং সব থেকে হাস্যকর ব্যাপার গঙ্গাকে ডাইনি বলে মনে করার পেছনে তেমন কোনো কারণ নেই তাদের শুধু কারণ বলতে তার ডাক্তারি ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও সঠিকভাবে রোগ নিরাময় করা। হঠাৎ করে একদিন মতিপুরের এক রাজনৈতিক নেতার সাথে সায়ন এসে উপস্থিত হয় গ্রামে। আরো ভালো করে বলতে গেলে এই ডাইনি সম্পর্কে আরো জানার জন্য সে আসে। এবং আসার পর থেকে প্রতিরাতে সে অনুভব করে তাকে কেউ দূর থেকে দেখছে। এরই মধ্যে একদিন গঙ্গার মেয়ে মৌলির সাথে দেখা হয় তার এবং তারা এক অদ্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং মতিপুরে এরপরে এক বীভৎস হত্যা লীলা শুরু হয় তার সাথে আরো বিভিন্ন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সন্দেহের বসে গঙ্গাকে ও তার মেয়ে মৌলিকে হত্যা করতে উদ্ধত হয় , তারা কি শেষ পর্যন্ত গঙ্গা বা মৌলিকের হত্যা করতে পারবে?? গঙ্গা যদি ডাইনি না হয় তবে বাচ্চা চুরি গুলো কারা করছে?? বা এই নৃশংস খুন গুলোই বা কারা করছে সেটা জানতে হলে উপন্যাসটি পড়তে হবে। এই গেল উপন্যাসের কথা এবার আসা যাক উপন্যাসটি পড়ে আমার কেমন লাগলো, এর ডাইনি শব্দটি সূচনা হয়েছিল পুরুষদের শারীরিক ও বৌদ্ধিক অক্ষমতা ও হিংসা থেকে। নারীদের শারীরিক চাহিদার রূপকে পুরুষেরা ভয়াবহক ভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেন এবং যে নারীর শারীরিক চাহিদা যত বেশি তাকে ডাইনি বলে অভিহিত করা হয় অন্যদিকে অনেক নারীরা পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে তারা জানতেন তারাও শিখেছিলেন তাদের মার দিদিমার কাছ থেকে সেই সময় এটা প্রচলন করা হলো যে যারা ডাইনি তারা অতি চমৎকার কিছু জিনিসও জানে যেগুলিকে ম্যাজিক বলে চালানো হতো। এমন অনেক ঘটনার বিবরণ আছে বইটিতে সত্যি কথা বলতে আমার বইটি পড়তে ভালো লেগেছে অনেকগুলো জায়গা গা কাঁপিয়ে দেওয়ার মতন, তার সাথে লেখকের লেখনি উপন্যাসটিকে এক অন্য মাত্র দিয়েছে।
এই জাস্ট পড়া শেষ করলাম। এখনও গল্পটার আবেশে আটকে আছি মনে হচ্ছে। একদম কেমন অনুভূতিগুলোকে ঘেঁটে দিয়েছে এই ফ্যান্টাসি থ্রিলার টা। সায়ক আমান as usual মহাকাব্য লিখে দিয়েছেন।
গল্পে কি কি পাবেন --- ⭐ একটা গ্রামের মধ্যে চলা তদন্ত, অনেক গোয়েন্দাগিরি, রহস্য, খুন, পুলিশি কাজকর্ম আছে। 🌟 কিছু supernatural কাজ কম্ম যার ব্যাখ্যা আপনি শেষ অব্দি নিজের মত করে কিছু একটা দাঁড় করানোর চেষ্টায় লেগে থাকবেন। পাগল হয়ে যাবেন। ✨ আর পাবেন ঘেন্না করার মত কিছু "সামাজিক" চরিত্র, যাদের ছাড়া সমাজ অচল। 💖 আর পাবেন এই সব কিছুর সাথেই চলতে থাকা একটা lovestory 💕।
🍁 গল্পের অনেক ফ্যান্টাসি এলিমেন্ট আপনাকে শেষ অব্দি একদম নেশায় ডুবিয়ে দেওয়ার মত করে আলাদা জগতে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে। নিজেকে খুব দৃঢ়চিত্তের ভাবলেও এই বিষয়টা আমাকে একদম কাৎ করে দিয়েছে।
🎀 সব মিলিয়ে বলব এই গল্পটা এমন একটা দুনিয়া তৈরি করেছে যেটা পড়া একটা রীতিমত experience। এর মন কেমন করা ফ্যাক্টরটা বলে বোঝানো সম্ভবই না। অবশ্যই পড়ুন, নাহলে কি করলেন জীবনে!
কুয়াশার ফুল পড়তে পড়তে আমি দূর দুরান্তে ভেসে বেড়িয়েছি— মৌলি আর সায়নের সাথে। দুই সময়কে এক সুতোর বাঁধনে বেঁধে লেখক আমাদের নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন দূর কোনো এক অজানা গন্তব্যে। তার সাথে এসে মিশেছে পুরোনো শাপ, মায়ের ভালোবাসা আর সময়ের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া সেই সব মানুষ— যাদের সমাজ ডাইনি বলে দাগিয়ে চিরতরে সরিয়ে দিতো শুধুমাত্র স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাওয়ার অপরাধে! অবশ্য ডাইনি অপবাদে আজও কত মানুষ মরছে তার ইয়ত্তা নেই। গল্পের শুরু থেকে সায়ন, মৌলির সাথে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার শেষটা একটু হলেও কষ্ট দিয়েছে। গঙ্গার চরিত্র আমার খুব পছন্দের, গল্পের মধ্যে তার ফিজিক্যাল প্রেজেন্স কম হলেও, তার চরিত্রের আর্ক মনে দাগ কেটেছে। আমি কাকতাড়ুয়াতেও লক্ষ্য করেছি, এখানেও দেখলাম, সায়ক আমান গল্পের সূতো ছড়িয়ে রেখেও শেষে নিপুণ কায়দায় গুটিয়ে নিতে পারেন। তাঁর কলমের মুন্সিয়ানাকে কুর্নিশ।
'Thoughts are different from everyone'. ~ L (Death note).
দশ বছরে ষোলোটি সদ্যোজাত শিশু উধাও। সন্দেহের তীর গ্রামেরই এক মহিলার দিকে। তার পূর্বপুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডাইনির ইতিহাস। মেসিহা? নাকি শয়তান? কী যেন আছে মৌলির মধ্যে, ওকে ভীষণ চেনা লাগে সায়নের ঘর খুঁজে পাওয়া, একই সঙ্গে হারিয়ে যেতে চাওয়ার মতো ভরসামাখা একটা হাত।….
কিন্তু মৌলিও কি স্বাভাবিক? ও কি কিছু গোপন করছে সায়নের থেকে? পাঁচশো বছর আগে পুড়ে মরা ডাইনির স্বীকারোক্তিতে কীসের ইঙ্গিত? কোন আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসছে গ্রামে? বীভৎস খুনগুলোর নেপথ্যে কি কোনও মানুষ না দানব? নাকি সমস্যার সমাধান আরো গভীরে ?….
সব প্রশ্ন হারিয়ে যায় ঘন কুয়াশায়। উত্তর হয়ে পড়ে থাকে কেবল কুয়াশার ফুল।
লেখক সায়ক আমানের বইয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো উনার রচনাগুলির জনরা ফিকশনাল হলেও এতে প্রচুর তথ্য থাকে। সেটা হোক 'আরিন ও আদিম দেবতার উত্থান', হোক 'তার চোখের তারায়' কিংবা 'কুয়াশার ফুল'! থ্রিলার, হরর আর ভালোবাসার সমন্বয়ে রচিত এই বইটিতে 'উইচ হিস্টরি, উইচক্রাফট ' নিয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে এবং মজার ব্যাপার হলো এই বিষয়গুলি নিয়ে এতো এতো তথ্য পড়তে একটুও বিরক্ত লাগবে না কারণ গল্পের কাহিনী তার নিজস্ব ধারায় চলতে থাকবে আর ফাঁকে ফাঁকে ইতিহাস ও জানা হয়ে যাবে; বইয়ের রহস্যের সমাধানের পাশাপাশি কিছু জ্ঞানও অর্জনের খাতায় সংযুক্ত হয়ে যাবে। এবার আসি গল্পে... প্লটটা সুন্দর এবং ইউনিক কিন্তু তারপরেও পুরো বইটা এভারেজ মনে হয়েছে কারণ কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভায়োলেন্স ছিলো। মৌলি আর সায়নের প্রেমের কিছু অংশে 'ন্যাকামি' ফুঁটে ওঠেছিল, সবচেয়ে অবাক লেগেছিলো নামের সম্বোধনে হঠাৎ করেই 'আপনি' থেকে 'তুই'তে চলে আসা। এছাড়া প্লট টুইস্টগুলি ও অসাধারণ ছিলো। কিছু সময়ের জন্য এডভেঞ্চারের স্বাদ গ্রহণ করতে বইটির মধ্যে হারিয়ে যেতে পারেন...
কেন্দ্রীয় চরিত্র সায়ন ও তার মা হলেও মৌলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আরো একটা মুখ্য চরিত্র রয়েছে...
বইয়ের কিছু পছন্দনীয় উক্তি:
🌸" এই পৃথিবীর কোন মা রহস্যময় নয় বলুন তো? পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যে নিজের থেকে অন্য একজনকে বেশি ভালোবাসে। নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকলেও তার সন্তানকে বাঁচায়। বলুন এটা রহস্য নয়?"
🌸 "আমার কি মনে হয় জানেন? মা ব্যাপারটা না, অনেকটা সূর্যের মতো। আপনাকে সৃষ্টি করে, সারাদিন আলো দেয়। কিন্তু সারা জীবন তাকে দেখতে পাবেন না আপনি। চাইলেও তার কাছ থেকে সাহায্য পাবেন না। শক্তি আপনাকে নিজের ভেতর থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু সব সময় জানবেন আপনার ভেতরে যে শক্তি সেটাও তারই দেওয়া।"