এ-উপন্যাসের কেন্দ্রচরিত্র সাহসী, স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এক মেয়ে, দীপা - দীপাবলী, যার নামের মধ্যেই নিহিত অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আভাস। নিয়ত সংগ্রামরতা প্রতিমার মতো সেই মেয়ে দীপা, আর চালচিত্রে একের পর এক বর্ণাঢ্য ছবি। উত্তরবাংলার চা-বাগান, গাছগাছালি আর আঙরাভাসা নদী দিয়ে সে চালচিত্রের সূচনা। ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠেছে পঞ্চাশের কলকাতা ও শহরতলি, কো-এডুকেশন কলেজ, মেয়েদের হোস্টেল, কফি হাউস, সমকালীন ছাত্র-আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটভূমি, সর্বভারতীয় কর্মজীবনের পরিবেশ ও প্রতিকূলতার জীবন্ত চিত্রাবলি। স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি জীবনে স্বাধীকার অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রয়াসে মেয়েদের সাধ, সংকল্প ও সংগ্রামের এক জীবন্ত, ধারাবাহিক ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে সমরেশ মজুমদারের সুদীর্ঘ, সুকল্পিত, সুবিন্যস্ত এই উপন্যাস।
Samaresh Majumdar (Bangla: সমরেশ মজুমদার) was a well-known Bengali writer. He spent his childhood years in the tea gardens of Duars, Jalpaiguri, West Bengal, India. He was a student of the Jalpaiguri Zilla School, Jalpaiguri. He completed his bachelors in Bengali from Scottish Church College, Kolkata. His first story appeared in "Desh" in 1967. "Dour" was his first novel, which was published in "Desh" in 1976. Author of novels, short stories and travelogues, Samaresh received the Indian government's coveted Sahitya Akademi award for the second book of the Animesh series, 'Kalbela".
সমরেশ মজুমদার-এর জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ। প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম গল্প ‘দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’, ১৯৭৫-এ ‘দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, উনিশ বিশ, সওয়ার, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আরও অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া ‘দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
সাতকাহন এক বাঙালি নারীর জীবন সংগ্রামের সুদীর্ঘ উপাখ্যান। ১৯৪৭ এর দেশবিভাগ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে উপন্যাসের কাহিনীর শুরু। পশ্চিমবঙ্গের এক চা বাগানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা এক মেয়ে দীপাবলীকে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে শিশু বয়সেই হতে হয়েছিল বিধবা। জীবনের সকল যন্ত্রণাকে পেছনে ফেলে সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে শিখেছিল। পরিবার ও সমাজের সকল বাধা পেরিয়ে সে নিজেকে সাবলম্বী করার প্রয়াস পেয়েছিল। বৈধব্য জীবনের উপর সমাজের চাপিয়ে দেয়া সংস্কার সে ধীরে ধীরে ঝেড়ে ফেলেছিল। চারপাশে ভীড় করে থাকা স্বার্থান্বেষী মানুষ আর সমাজে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা অন্যায় সংস্কারের বিপরীতে সে তাঁর নীতি নৈতিকতাকে আঁকড়ে ধরেছিল। জীবনের পথে পথে অজস্র সমস্যার সাথে একা লড়াই করে করেই সে পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে। কিন্তু সেই দীপাবলী তবুও হার মানেনি তাঁর উপর চেপে বসা নীতিবিবর্জিত সমাজব্যবস্থার কাছে। সে লড়ে গেছে প্রতিনিয়ত।
উপন্যাসে উঠে এসেছে পঞ্চাশের দশকের পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে কলকাতা ও শহরতলীর মানুষের জীবনযাত্রা, আচরণ, সংস্কার ইত্যাদি। সে সময়কালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্থানান্তর হওয়া শরণার্থী বাঙালিদের সামাজিক অবস্থা, জীবন সংগ্রাম ও তাঁদের প্রতি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিরূপ মনোভাবও এতে প্রকাশ পেয়েছে। নারীদের সেকেলে মানসিকতা এবং নারীদের প্রতি তৎকালীন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে লেখকের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে। এছাড়াও এই উপন্যাসে পাত্র পাত্রীদের মাধ্যমে উঠে এসেছে দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসন, সমাজের ধূর্ত লোকদের অর্থবিত্ত -প্রতিপত্তি, প্রশাসনে দুষ্ট লোকেদের প্রভাব এবং সাধারণ মানুষ ও দীপাবলীর মতো সৎ কর্মকর্তার অসহায়ত্ব। তাইতো, অর্জুন নায়েকের মতো ধূর্তদের কাছে দীপাবলীকে হার মানতে হলেও নীতির কাছে সে হার মানেনি। আয়কর বিভাগের চাকরিতে এসে সে দেখে দুর্নীতি সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সেখানেও সে লড়ে যায় নিষ্ঠার সাথে অবিচল।
প্রতিকূলতার বিরূদ্ধে দীপাবলীর সংগ্রাম যে কোন হতাশ তরুণ-তরুণীর মনে দারুণ উদ্দীপনা জাগাতে সক্ষম। উপন্যাসের সামাজিক চিত্র এখনো আমাদের সমাজের জন্য শিক্ষণীয়। সাধারণ নারীদের চিন্তাভাবনা এখনো খুব একটা পালটায়নি। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের জন্য এই উপন্যাস হতে পারে এক সুন্দর কাঠামো। প্রশাসন ও সরকারি সার্ভিসগুলোর অবস্থা এপাড় বাংলাতেও সমান প্রযোজ্য। তাই, যারা স্রোতে গা ভাসাতে রাজী নন, যারা স্রোতের প্রতিকূলে ন্যায়নিষ্ঠতাকে অবলম্বন করতে আগ্রহী তাঁদের কাছে সাতকাহন হতে পারে উৎসাহব্যঞ্জক।
❝ঈশ্বর যদি মানুষকে অন্তত একদিনের জন্যে অন্যের মনের কথা পড়ার ক্ষমতা দিতেন তাহলে নব্বইভাগ মানুষ কেউ কারো সঙ্গে থাকতে পারত না।❞ মনে মনে কত কিছুই তো আমরা ভাবি। বলতে পারি তার কয়টা? বলি না বলেই কি আশেপাশের সম্পর্কগুলো টিকে আছে? দীপাবলী। বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে প্রথম জীবনেই বৈধব্যের শিকল পড়া এক ছোট্ট মেয়ে। পরবর্তীতে যে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়। নানান টানাপোড়নের মাঝে যে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক সংগ্রামী নারী। দেশভাগ পরবর্তী ভারতের কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছে। প্রথমে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নেখালিতে জয়েন করে দীপাবলী। সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার আর টাকার কাছে সরকারি কর্মকর্তাদের বিকিয়ে যাওয়া দেখে হাল ছেড়ে দেয়। দেশের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এমন ব্যক্তিত্বহীন দশায় সে নিজেকে দেখতে চাইছিল না। কলকাতা ফিরে আবার আই আর এস পরীক্ষা দিয়ে ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয় দিল্লিতে। কলকাতার গন্ডি পেরিয়ে এ এক নতুন জীবন। জীবনসঙ্গী হিসেবে খুঁজে নেয় অলোক মুখোপাধ্যায়কে। দীপাবলী আবার হয়ে যায় দীপাবলী মুখোপাধ্যায়। জীবন আসলেই চক্রের মতো ঘূর্ণায়মান। জীবন সংসারে একলা দীপাবলী অলোককে নিয়ে টোনা-টুনির সংসার পাতে। চাকরি জীবনের সমস্যা এখানেও। সরকারি কর্মকর্তাদের যে নিয়ম শিখিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় বাস্তবে তার ষোলো আনাই মিছে। অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা দীপাবলী নিয়ম মেনেও যেনো এক অনিয়ম। ভালোবেসে যাকে জীবনসঙ্গী করেছিল দেখা যায় তার সাথে মতের অনেক বিরোধ। তীব্র আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দীপাবলী সব দেখেও নির্বিকার। সংসার করছে করতে হবে তাই। শুরু থেকেই সংগ্রাম করা এক নারী সংসার জীবনেও একাকীত্বে ভুগতে শুরু করে। বিয়ের আগের অলোক আর পরের অলোক কতটা তফাৎ? মানুষ বদলায়, কিন্তু কতখানি? জীবন দীপাবলীকে আবার ফিরিয়ে আনে কলকাতায়। শুরু হয় আবার একলা জীবন। চাকরি আর সংসার জীবনের টানাপোড়ন, পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সব নিয়েই চলে যাচ্ছিল দীপার জীবন। শেষে ঠাকুমা মনোরমাকে নিয়ে বাস শুরু করে দীপাবলী। এভাবেই চলবে? আত্মমর্যাদাবোধ কি ভালোবাসা থেকেও দামী? পাঠ প্রতিক্রিয়া: প্রথম খন্ড পড়ার পরে দীপার জীবনে কী হলো জানতে উদগ্রীব ছিলাম। দ্বিতীয় খণ্ড পড়ে মনে হচ্ছে না পড়াই ভালো ছিল। সত্তর আশির দশকের ভারতবর্ষ, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দুর্নীতি, অনিয়মকেই নিয়ম বানিয়ে দিব্যি বসবাস করা মানুষগুলোর মাঝে স্রোতের বিপরীতে এক অদম্য নারী দীপাবলী। প্রথম জীবনে সামাজিক অব্যবস্থার শিকার এবং পরবর্তীতে নিজের ভাগ্য বদলে বাবা এবং মাস্টারের স্বপ্ন পূরণ করে দীপাবলী এগিয়ে যায় জীবনে। লেখক তৎকালীন ভারতবর্ষের নানা সমস্যার কথা বেশ সাবলীলভাবে লিখেছেন। পুরো উপন্যাসের সিংহভাগই ছিল দীপার চাকরি জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে। সৎ থেকে হাজারো অসৎ ব্যক্তির মাঝে কাজ চালিয়ে যাওয়ার যে স্পৃহা তার মধ্যে ছিল লেখক সে বিষয়গুলোই মোটা দাগে দেখিয়েছেন। থিওরি আর প্রাকটিসের মধ্যে বিস্তর এক তফাৎ, যা দীপাবলী চাকরি জীবনে টের পেয়েছে। পরিবার জীবনেও দীপাবলীর ভাগ্যে সুখ বেশিদিন জোটেনি। এক হাতে যেমন তালি বাজেনা তেমনি দোষ ছাড়া মানুষ হয় না। কেউই ❝পারফেক্ট❞ নয়। পৃথিবীর সকল দুঃখ উপরওয়ালা দীপাবলীকে এমনি দিয়েছেন না সেজন্য সে নিজেও সিকি ভাগ হলেও দায়ী এমনটা কি না সেটা যারা পড়েছেন বইটি তারা ভালো বুঝেছেন। দীপাবলীর জীবনে সংগ্রাম, অন্যায়ে আপোষহীনতা, আত্মমর্যাদাবোধ যেমন আমাকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করেছে তেমনই তার চরিত্রের কিছু দিক আমাকে খুবই হতাশ করেছে। মাঝে মাঝে বিরক্ত ধরিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে উপন্যাসের সমাপ্তিটুক। ফেইরী টেলসের মতো ❝𝘏𝘢𝘱𝘱𝘪𝘭𝘺 𝘦𝘷𝘦𝘳 𝘢𝘧𝘵𝘦𝘳❞ টাইপ হবে আশা করিনি। তবে তার শেষ পর্যায়ের আত্মমর্যাদাবোধ আমার চোখে দীপাবলীকে অহংকারী এবং স্বার্থপর একজন নারী হিসেবে দেখিয়েছে। মনোরমার সাথে সে নিজের ছেড়ে আসা জীবনের যে তুলনা করেছে সেটা আমার কাছে অমূলদ লেগেছে। মনোরমার মতো দীপাবলীর জীবন থেকে বিনা কারণে পঞ্চাশ বছর নিশ্চয়ই হার���য়ে যায়নি। আর মনোরমার ঘটনাটা একেবারেই এক পাক্ষিক ছিল। যেখানে দীপাবলীর ক্ষেত্রে সে একদম তুলসী পাতা অবশ্যই ছিল না। জীবনের শুরুর দিকে মনোরমা দীপাবলীর সাথে যে অন্যায় করেছে সেটা ভুলে সে মনোরমা কে কাছে ঠেলার সময় আত্মমর্যাদার কথা ভাবেনি। এই ব্যাপারগুলো আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে খুব। প্রথম পর্বকে অসাধারণ বললে দ্বিতীয় পর্বকে সাধারণ মানের বলা যাবে। লেখক উপন্যাসের শুরুর দিকে লিখেছেন, ❝এক ফোঁটা ভালোবাসার জন্যে যদি কোন মানুষ লক্ষ মেইল হেঁটে যেতে পারে তাহলে একটা পুরো সমুদ্র পেলে সে কি করবে?❞ বই পড়া শেষে এই উক্তি নিয়ে আমার বক্তব্য হবে, ❝কিছুই করবে না। পা আছে না কি তাই ভুলে যাবে।❞ সবই আমার ব্যক্তিগত মতামত। লেখকের লেখনশৈলী নিয়ে কোনোভাবেই প্রশ্ন তুলছি না।
বাঙালী সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক "সমরেশ মজুমদার"-এর ব্যপক আলোচিত, দুটি খণ্ডে বিভক্ত, সাড়া জাগানো একটা উপন্যাস হলো 'সাতকাহন'।
সাতকাহন আমার কাছে কোন বই বা উপন্যাস না। এটা আমার কাছে একজন সাহসী ও তেজস্বী নারীর গল্প। বিংশ শতাব্দীতে একটা নারীকে যত রকম ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তার এক-একটি কানা-কড়ি লিপিবদ্ধ হয়েছে এ বইটিতে৷ এ গল্পের মূল নায়িকা দীপাবলি। তাকে নায়িকা না বলে একজন সংগ্রামী নারী বলাটাই বেশী শ্রেয়। দীপাবলির শৈশব কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগানে। শৈশব ছিল তার আনন্দ ও স্মৃতিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু তারপরই শুরু হয় প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলা, স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার অদম্য ইচ্ছা!
আংড়াভাসা নদীর তীরের চা বাগান থেকে উঠে এসে স্বাধীন ভারতের একজন রেভিনিউ কর্মকর্তা হয়ে উঠার পেছতে শত প্রতিকূলতা এবং যুদ্ধের গল্প এটি।
এ বইয়ে সুস্থ নারীবাদের কথা উঠে এসেছে। সুস্থ বলছি কারণ বর্তমানে নারীবাদ বিষয়টা সমালোচনামূলক শব্দ হয়ে যায় তাই।
১২ বছর বয়সেই বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয় দীপাকে। বিয়ের পরদিনই স্বামী মারা যায়;আর তারই কিছুদিন পর শ্বশুর। সেই সুবাদে দীপা মালিক হয়ে বসে অঢেল সম্পত্তির। কিন্তু তার তীব্র আত্মসম্মানবোধ তাকে বাধ্য করে সেই সম্পত্তি ত্যাগ করতে। সেই অঢেল টাকা-পয়সা সে এক সেবামূলক সংগঠনকে দান করে দেয়। বাল্যকালের মৃত বর 'অতুল', তারপর ধীরে ধীরে 'অমল', 'শমিত' ও 'অর্জুন' এর মতো বিভিন্ন পুরুষ কিছু-কিছু মুহূর্তের জন্য অংশ হয়েছিল দীপাবলির জীবনে। সকলকে পাশ-কাটিয়ে দীপা শেষমেশ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় 'অলোক' এর সাথে। কিন্তু তীব্র আত্মসম্মানবোধ আর ব্যক্তিত্ব তাকে বাধ্য করে এ সম্পর্ক থেকেও সরে আসতে!
এ গল্পটি তীব্র আত্নসম্মানবোধ এবং ব্যক্তিত্বের একটি গল্প। আত্মসম্মানবোধ-ব্যক্তিত্ব এবং অহংকারের মাঝে একটা ক্ষীণ দাগ আছে। কতটুকু দাগ পার করলে সেটা অহংকারের পর্যায়ে পরে তা অক্ষরে অক্ষরে প্রকাশ পেয়েছে এ গল্পে।
এই গল্পের শেষ দিকে গিয়ে লেখক পুরাতন প্রথাকে ভেঙে দিয়েছেন দীপার ঠাকুরমা চরিত্রের মাধ্যমে। সেই ঠাকুরমা; যিনি কি না আজীবন প্রথাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন! লেখক দেখিয়েছেন 'রমনা সেন'-এর মতো নারীদের জীবনের রূপ-রেখা কেমন করে পাল্টায়। সেই সাথে সরকারী চাকরিতে আমলাদের দূর্নীতির নগ্ন চেহারাটি লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রসাশনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া দূর্নীতির কাছে দীপাবলিরা কেমন অসহায় আর বলির পাঠা তার দাঁত ভাঙা বর্ণনা উঠে এসেছে এই গল্পে।
এবার, এতকিছুর পর এই বইটির অল্প একটু সমালোচনা করে ফেলি। সমালোচনা করার মত দুঃসাহস আমার নেই। তাই একে সমালোচনা না বলে আমি বলব আমার নিজের পয়েন্ট অব ভিউটি প্রকাশ করতে যাচ্ছি। এই বইয়ে, ইতিহাস ও রাজনীতির কথা একদমই কম উঠে এসেছে। তবে হ্যা, লেখক এই বইয়ে বিংশ শতাব্দীর একটি নারীর জীবন ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। আরেকটি বিষয় আমাকে একটু খোঁটা দিয়েছে। সেটি হলো, দীপা এই বইয়ে একটি আদর্শ নারী চরিত্র। সে তীব্র সংযমী, বুদ্ধিমান এবং আত্মসম্মানবোধ ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন নারী। কিন্তু অঢেল আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও সে পুরো উপন্যাসে জীবনসঙ্গী নির্বাচনে দ্বিধাদন্দের মাঝে ছিল এবং নিজের পছন্দ বা ভালোবাসার প্রতি সজাগ ছিলো না। এই ইতস্থতা বা দ্বিধাদন্দটি/ আমি কি পছন্দ করি সেটার স্পেসিফিকতার অভাব এই অঢেল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী চরিত্রটিকে কিছুটা ম্লান/বিবর্ণ করে ফেলেছে বলে আমার মনে হয়েছে!
পরিশেষে, দীপা বিংশ শতাব্দীর নারী হয়েও তার চিন্তাশক্তি ছিলো বর্তমান আধুনিক সমাজের মতো। একটি বিংশ শতাব্দীর নারীর জীবনের আদ্যোপান্ত যদি উল্টে পাল্টে দেখতে চান তবে এই বইটি আপনার জন্য সাজেস্ট করছি। নিজের আত্নসম্মানবোধ ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হবার জন্য সকল নারীর এই বইটি পড়া উচিত। পুরুষাশিত কুসংস্কার সম্পন্ন সমাজের মাঝে কিভাবে বিদ্রোহ করে একটি নারী উঠে এসেছে সামনের কাতারে; তা অবশ্যই সকল নারীর জন্য হবে একটি প্রেরণার উৎস। পাশাপাশি একটি পুরুষেরও উচিত এই বইটি পড়া, যাতে সে একটা নারীর পারিপার্শ্বিকতা বুঝতে পারে এবং নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে পারে।
উপন্যাসের শেষটুকু আমার পুরো মন জয় করে নিয়েছে। দীপাবলির যুদ্ধের শিখা প্রতিটা মানুষকে একটু হলেও ছুঁয়ে যাক। জীবন, সে তো আশা ভঙ্গ করবেই।তাই বলে নিজেকে ভাঙা যাবে না।
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। সাতকাহন প্রথম পর্ব ভালো লেগেছিলো আমার কাছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব খুব কষ্ট করে শেষ করেছি। সাতকাহন অনেকের পছন্দের বই। আমি তাদের পছন্দকে কোনোভাবেই ছোট করতে চাই না। কিন্তু এই দ্বিতীয় পর্বটা আসলেই সময় নষ্ট ছাড়া কিছু না। হ্যাঁ, এই পর্বের শুরুটা ভালোই ছিলো। অর্জুন নায়েক যতোক্ষণ ছিলেন গল্পে ততোক্ষণ পর্যন্ত ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু, তারপর থেকেই যেনো তাল কাটতে শুরু করে। আর, অলোকের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে তো এই দ্বিতীয় পর্ব নিরেট অখাদ্য হওয়া শুরু করলো। যাক, খুব কষ্টে টেনেহিঁচড়ে শেষ করে এখন যেনো একটা স্বস্তি পেলাম।
পরিশেষে বলবো, প্রথম পর্বের তুলনায় এই পর্ব কিছুই না।
কিছু বই আছে না পড়লে খুঁতখুঁত লাগতে থাকে, ইশ! না জানি কি কাহিনি আছে বইটায়। আবার পড়লেও দু:খ লাগে, ধুর! না পড়লেই বোধ ভালো হতো।
এই বইটা আমাকে ঠিক উপরের দুই ধরণের অভিজ্ঞতা দিয়েছে। বইটা যেহেতু বিখ্যাত দীপাবলির পরবর্তী জীবনের কথা সেখানে না পড়ে থাকি কি ���রে। ওই খুঁতখুঁতানি থেকে সাতকাহনের প্রথম পর্ব পড়া মাত্র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে ছুট দ্বিতীয় পর্ব আনার জন্য। আর দ্বিতীয় পর্ব পড়ে আফসোস! না পড়লেই বোধ হয় ভালো ছিল। নাকি লেখক না লিখলে ভাল করতেন-কোনটা ভালো হতো কে জানে! :3
অনেকটাই খাপছাড়া মনে হলো। ঠিক কোনো দিকেই যেন সঠিক এগলো না গল্পটা, আর হঠাৎ করেই শেষ। দীপাবলি চরিত্রটিকে প্রথম খন্ডে যতটা ভালো লেগেছিল, তার পরের খন্ডে অনেক জায়গায় খুব দাম্ভিক একজন মানুষ মনে হয়েছে। সেটা অবশ্য প্রধান সমস্যা নয়, প্রধান সমস্যা হচ্ছে যে গল্প-টা কোনো নির্ধারিত দিকে এগোয় না, তাই বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা হিসেবেই থেকে যায়৷
দ্বিতীয় পর্বটির সূচনা হয় দীপাবলির নতুন সরকারি চাকরি দিয়ে। নেখালি নামের একটি গ্ৰামে তার পোস্টিং হয়। একদিকে গ্ৰামবাসীর অবস্থা যেমন শোচনীয় আরেকদিকে গ্ৰামে বিরাজ করছে অর্জুন নায়েক নামের এক চরিত্রের একচেটিয়া আধিপত্য। অনেক চেষ্টার পরও যখন পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অবস্থার কোনোরকম পরিবর্তন করতে দীপা ব্যর্থ হয় উল্টো কিছু নোংরা নজরের শিকার হয় তখন দীপাবলি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কলকাতায় চলে যায়।
কলকাতায় নতুন করে সবকিছু শুরু করা দীপাবলির জন্য সহজ ছিল না। পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে চা বাগান থেকে উঠে আসা এক মেয়ের অনিশ্চিত জীবনের জন্য ধাবিত হওয়া বেশ কষ্টকর বটে কিন্তু দীপাবলির মতো মানুষদের ভেঙ্গে পড়ার কোনো সুযোগ নেই, তাদের চলতে হয়, বেঁচে থাকতে হয়। এর মধ্যে বেঁচে থাকাটা তার ক্ষণস্থায়ীর জন্য উপভোগ্য ছিল যখন অলোকের সাথে তার বিয়ে হয় কিন্তু সেটা বেশি দূর যেতে পারেনি।
সম্পর্ক টিকতে না পারার কারণটা হয়তো দীপারই দোষ কারণ বাকি দশটা মেয়ের মতো সেও চাইলে " মানিয়ে " নিতে পারতো কারণ মানিয়ে নেওয়াটাই তো মেয়েদের সহজাত প্রবৃত্তি আমাদের সমাজে কাছে। আমরা কেন যেন মানিয়ে নেওয়া আর জোর করে গলাধঃকরণ করাকে মিলিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। তবে লেখক অলোক আর দীপার সম্পর্কের বারোটা না বাজালেই পারতেন। আমি একটু ক্ষীণ আশায় ছিলাম এবার হয়তো মেয়েটা একটু শান্তি পাবে।
ছোট দীপাবলি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক দীপাবলির চা বাগান থেকে জলপাইগুড়ি , জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা, বিধবা থেকে সধবা হওয়া, সম্পর্কের তার জড়ো হওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত পুরো সময়ের অবিরাম পথচলা নিয়েই সাতকাহন বইটি। সত্যি বলতে প্রথম পর্বে দীপাকে যেমনটা আপন লেগেছে দ্বিতীয় পর্বে তাকে কেমন যেন পর লাগতে শুরু করে। লেখক তাকে একটু বেশিই রুঢ় প্রকৃতির দেখিয়েছে বলে এমনটা লাগতে পারে।হয়তো জীবনে এতোটা হোঁচট খাওয়ার পর দীপার প্রাণশক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বাস্তবে এমন কতো দীপাবলি খুঁজে পাওয়া যাবে তবে সব দীপাবলি নিজের আওয়াজ হতে পারে না বা হতে না হতেই তাদের আওয়াজ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়।
আমার অতীত, যা কিছু কষ্টের না আনন্দের, সবকিছুই আজকের আমাকে গড়ে তুলেছে। দীপাবলী তার জীবনে আসা প্রতিটি মানুষকে, যারা তাকে প্রতিদিন প্রতিরাত কষ্টে রেখেছে, কতটা ধন্যবাদ দিবে জানি না, হয়তো দিবেই না, কিন্তু আমি দিয়ে চাই। তাদের আঘাত ছাড়া শেষ পাতার দীপাবলীকে পেতাম না, এটা আমার বিশ্বাস।
প্রথম পর্বের অপ্রস্তুত দীপা দ্বিতীয় পর্বে যেসব খারাপ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, সেসবই তাকে পুরোপুরি প্রস্তুত করেছে তার নিজেকে খুঁজে পেতে।
আবারো, দীপাবলীর সব সিদ্ধান্তকে হয়তো আমি সমর্থন করবো না, কতটা স্মার্টলি পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করেছে সেই বিচারেও যাব না, কিন্তু সব ছাপিয়ে দীপাবলীর সেই স্বভাবজাত জেদ আর লেগে থাকার মানসিকতা মুগ্ধ করেছে। প্রতিটা ধাপে দীপার ক্রমাগত লড়ে যাওয়া, অনুপ্রেরণা যোগায়।
সবশেষে লেখককে ধন্যবাদ জানাতেই হয়, মনোরমাকে আরো কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখার জন্য। হয়তো লেখক নিজেও জানতেন না একদম এক দীপা আর কতকাল একা চলতে পারতো। শেষটা তাই তিনি দীপাবলীকে কিছুটা স্বস্তি দিতে চেয়েছিলেন।
সাতকাহনের দ্বিতীয় খণ্ডের একটা বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে দীপার কর্মজীবন। চিরকাল ধরে সংযমী, নিয়ম-নীতি মেনে চলা দীপা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না তার কর্মজীবনের অসংগতির সাথে। তবুও সে এগিয়ে চলতে চেষ্টা করে সকল দুর্নীতিকে পিছে ফেলে, আপোষহীনভাবে। ততদিনে তার নিজের জীবন অনেক অদলবদল হয়েছে, পরিবার এবং বন্ধুদের মাঝেও দেখেছে অনেক উত্থানপতন। জীবনে কয়েকজন ভালো বন্ধু পেলেও শেষ পর্যন্ত চিরদিনের সঙ্গী করে নিতে পারেনি কাউকে। তারপর হঠাৎ করেই পর পর ঘটে যায় বেশ কয়েকটি ঘটনা। কিন্তু তবুও কোথায় যেন শেষরক্ষা হয় না !
সাতকাহন প্রথম পর্বের দীপাবলিকে যতটা ভাল লেগেছিল দ্বিতীয় পর্বে তা লাগে নি। শমিতের মতো চমৎকার একটা ক্যারবকটারকে দুমরে দেয়া হয়েছে। আর অমলকে করে দেয়া হয়েছে নিশ্চিহ্ন। সবচেয়ে বড় কথা দীপাকে আমি বুঝতে পারি নি দ্বিতীয়পর্বে। নিয়ম ভাঙার কিংবা নীতিবান হবার চক্করে মানুষ হিসেবে দীপাবলি কেমন যেন নিভে গেছে।
পড়ে শেষ করলাম সাতকাহন–দ্বিতীয় পর্ব। কেমন যেন একটা মন খারাপ কাজ করছে। দীপাবলীর ডিসিশনটা নিয়ে অবশ্য আমার কোনো সন্দেহ নেই, ও যা করেছে, ঠিক করেছে। এমন একটা সম্পর্ককে এভাবে টিকিয়ে রাখার কোনো মানে নেই, সেটা শুধুমাত্র তিক্ততা বাড়াবে, আর কিছু না। মন খারাপ হচ্ছে বোধহয় এই কারণে যে, দীপার মধ্যে আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। ওর মধ্��ে একাকিত্বকে বরণ করে নেয়ার মত সাহস হয়েছে, সে কি মনোরমা পাশে থাকার কারণে? আমারও মনে হয় এমন জীবন বেছে নিতে হবে একদিন, তখন আমার পাশে কি মনোরমার মত কেউ থাকবেন? এমন কাউকে দেখি না যে! তাই সম্ভবত নিজের কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে। বইয়ের শুরুতে দীপাকে আগের মতই বিরক্ত লাগছিলো। সব প্রশ্নের উত্তরেই ওর আরেকটা প্রশ্ন করা, তিরির পুরো কাহিনী না শুনেই ওকে judge করে ফেলা, অলোকের সাথে দেখা করার সময় সেই কোওয়ার্কার ছেলেটিকে ব্যবহার করা, বেশ খানিকটা দম্ভ, এ সব মিলিয়ে ওকে আমার ভালো লাগছিলো না। কিন্তু এই দ্বিতীয় পর্বে ওর আসলেই অনেকখানি পরিবর্তন এসেছে। ও আরেকটু স্থির হয়েছে, খানিকটা মাটিতে নেমে এসেছে, অন্যের প্রেক্ষাপটগুলোও বুঝতে চেয়েছে। যেমন ধরা যাক ওর অফিসের মহিলা কর্মচারীদের কথা। আগের দীপা হলে ওদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতো না। কিন্তু এখনকার দীপা ওদেরকে বেশ সমীহ করেছে। অলোকের সাথে ওর আচরণেও তেমন বাড়াবাড়ি ছিলো না, ও যা করেছে ধীরে-সুস্থে, চিন্তাভাবনা করে করেছে। ওর বিয়ের সময় যে মহিলা ওকে সাজিয়েছিলো, তাকেও ও মনে মনে সম্মান করেছে, যদিও মহিলা সাজগোজ নিয়েই থাকেন (যেটা আগের দীপার পছন্দ না)। দীপাও মেনে নিতে রাজি হয়েছে যে নিজের জন্যও সাজা যায়। ওর চরিত্রের এসব গ্রোথ আমার বেশ ভালো লেগেছে। আমিও টিনএজ বয়সে ভাবতাম, সাজগোজ যারা করে তারা "মেয়েলি", তারা সায়েন্স-ভিডিও গেমস এসব বোঝে না, আমি হয়তো তাদের থেকে বেটার। এখন আমি বুঝতে পারি, কাউকেই ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমার মনে হয়েছে, দীপা একজন পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠেছে এই পর্বে। নারী এবং মানুষ। ওকে দেখে আমারও খানিকটা ইচ্ছে হয়েছে, যদি আসলেই ওর মতন নীতিবান সরকারি অফিসার হতে পারতাম! দেশের জন্য কিছু করার আমার খুব ইচ্ছে! দীপা আমাকে inspire করেছে এভাবে। হ্যাঁ, প্রথম পর্বে বিরক্ত হলেও এখনকার দীপাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। মনোরমার ব্যাপারে লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। শেষটায় তিনি যখন মাছ খেলেন... definitely one of the best moments of this entire story. অসাধারণ একটা চরিত্র। খুব মায়াময়! ইশ, আমার অমন কেউ থাকতো! অলোকের ব্যাপারে কিছু লেখা উচিত, কিন্তু আসলে ওর মত স্বেচ্ছাচারীকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। সব ছেলেরাই কি খানিকটা স্বেচ্ছাচারী, দাম্ভিক হয়? নাকি যাদেরকে আমি দেখি, তারাই শুধু এমন? বুঝতে পারি না। যদি আসলেই ৯০ শতাংশও অমন হয়ে থাকে, তাহলে ওদের এই দাম্ভিকতা, entitlement কোত্থেকে আসে? Patriarchal system থেকে? দীপা ভেঙে ফেলতে চেয়েছে সেই সিস্টেম। এবং এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষমও হয়েছে সম্ভবত। কোনো একদিন হয়তো আমিও পারবো, সেই স্বপ্ন দেখি। যেদিন পারবো, সেদিন একাকীত্ব আমাকে গ্রাস করতে চাইলেও যেন আমি হাসিমুখে মেনে নিতে পারি। Thank you Deepa, for inspiring me.
This entire review has been hidden because of spoilers.
🍁🍂বইয়ের নাম - সাতকাহন🍂🍁 ✍️লেখক - সমরেশ মজুমদার 🖨️প্রকাশক - আনন্দ পাবলিশার্স 📖পৃষ্ঠা সংখ্যা -৭২৮ 💰মূল্য - ৬০০₹
🍁🍂এ উপন্যাসের কেন্দ্রচরিত্র সাহসী, এ স্বাল্যচিহ্নিত এক মেয়ে, দীপা- দীপাবলী, যার নামের মধ্যেই নিহিত অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আভাস। নিয়ত সংগ্রামরতা প্রতিমার মতো সেই মেয়ে দীপা, আর চালচিত্রে একের-পর-এক বর্ণাঢ্য ছবি। উত্তরবাংলার চা-বাগান, গাছগাছালি আর আাভাসা নদী দিয়ে সে-চালচিত্রের সূচনা। ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠেছে পঞ্চাশের কলকাতা ও শহরতলি, কো-এডুকেশন কলেজ, মেয়েদের হস্টেল, কফি হাউস, সমকালীন ছাত্র-আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটভূমি, সর্বভারতীয় কর্মজীবনের পরিবেশ ও প্রতিকূলতার জীবন্ত চিত্রাবলি। স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি জীবনে স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রয়াসে মেয়েদের সাধ, সংকল্প ও সংগ্রামের এক জীবন্ত, ধারাবাহিক ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে সমরেশ মজুমদারের সুদীর্ঘ, সুকল্পিত, সুবিন্যস্ত এই উপন্যাস, ‘সাতকাহন'।🍂🍁
🍁🍂অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো এই উপন্যাসটি পড়ার অবশেষে পড়ে আমি মুগ্ধ, জীবনের জটিলতা বোঝার জন্যে প্রতিটি নারীকে একবার হলেও এই উপন্যাসটি পড়ে দেখা প্রয়োজন!! সাতকাহন উপন্যাসটি একজন সাহসী ও তেজস্বী নারীর গল্প। বিংশ শতাব্দীতে একটা নারীকে যত রকম ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তার এক-একটি কানা-কড়ি লিপিবদ্ধ হয়েছে এ বইটিতে। এ গল্পের মূল নায়িকা দীপাবলি। তাকে নায়িকা না বলে একজন সংগ্রামী নারী বলাটাই বেশী শ্রেয়। দীপাবলির শৈশব কেটেছে জলপাইগুড়ির চা বাগানে। শৈশব ছিল তার আনন্দ ও স্মৃতিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু তারপরই শুরু হয় প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলা, স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার অদম্য ইচ্ছা! ১২ বছর বয়সেই বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয় দীপাকে। বিয়ের পরদিনই স্বামী মারা যায়,আর তারই কিছুদিন পর শ্বশুর। সেই সুবাদে দীপা মালিক হয়ে বসে অঢেল সম্পত্তির। কিন্তু তার তীব্র আত্মসম্মানবোধ তাকে বাধ্য করে সেই সম্পত্তি ত্যাগ করতে। সেই অঢেল টাকা-পয়সা সে এক সেবামূলক সংগঠনকে দান করে দেয়। বাল্যকালের মৃত বর 'অতুল', তারপর ধীরে ধীরে 'অমল', 'শমিত' ও 'অর্জুন' এর মতো বিভিন্ন পুরুষ কিছু-কিছু মুহূর্তের জন্য অংশ হয়েছিল দীপাবলির জীবনে। সকলকে পাশ কাটিয়ে দীপা শেষমেশ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় 'অলোক' এর সাথে। কিন্তু তীব্র আত্মসম্মানবোধ আর ব্যক্তিত্ব তাকে বাধ্য করে এ সম্পর্ক থেকেও সরে আসতে!🍂🍁
🌟প্রেম অতি পবিত্র । তবে অপার্থিব জগতেই মানায় ভাল ৷ পার্থিব জগতে নিখাদ প্রেম যেন বেমানান । প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও ভাবে নিঃস্বার্থতাকে অতিক্রম করে ক্ষুদ্র অথবা অতিক্ষুদ্র স্বার্থ জড়িয়েই পড়ে । শ্রেষ্ঠ জীবকে সহজে দেবতার আসনে অভিষিক্ত করতে যেন কুণ্ঠা বোধ করে নিয়তি!
🌟কারা সুখী? কারা ভাল আছে? যারা ভালবেসে বিয়ে করে তাদের ক'জন শেষ পর্যন্ত ভালবাসা ধরে রাখতে পারে? দাম্পত্যজীবনে শুধু ভালবাসা নয় আরও কিছু চাই। একটা শেকড়ের ওপর গাছ দাঁড়িয়ে থাকে না, তাকে আরও শেকড়ের বাঁধন ছড়াতে হয়!
ওই পার্টির রাতের পর আলোকের সঙ্গে তার কোন শারীরিক সম্পর্ক নেই একথা শ্বশুরমশাইকে বলা যায় না। এই মানসিকতা নিয়ে সে যে কোন সন্তানের মা হতে চাইবে না তাও অলোক জানে। কিন্তু বৃদ্ধ সেটা ভাবতে পারছেন না। [তাঁদের কালে বাক্যালাপ বন্ধ হলেও মাঝরাত্রে স্বামীস্ত্রী এক বিছানায় শুলে শরীরের আলাপ স্বচ্ছন্দে করে যেতে পারতেন। কারণ মান অপমান প্রেম বা প্রেমহীনতা ছাপিয়ে সম্পর্কটা জন্মজন্মান্তরের বলে মনে করায় আর কোনও অসুবিধে হত না।]
এই বইটা শেষ করছি প্রায় ১০ দিন হলো। কি লিখবো চিন্তা করে ডিসিশন নিলাম না এই বইটার রিভিউ লেখার শক্তি আমার নেই।এরকমটা হয়েছিল "নরওয়েজিয়ান উড" পড়ে ওটার রিভিউ আমি ৩ মাস বসে লিখেছিলাম।আমার জীবনে লেখা শেরা রিভিউ ওটা। "সাতকাহন" আমার এতটাই ভালো লেগেছে যে রিভিউ লেখেও আমার ভালো লাগা এক্সপ্রেস করতে পারবো না তাই সর্বোচ্চ ২ লাইনে ভালো লাগা জানাবো। কিন্তু তাও কতগুলো লাইন হয়ে গেলো!!
১ম খন্ড বেশ ভালোই লেগেছে। দ্বিতীয় খন্ড টা অনেকটা জোর করে বড় করার মতোন। দীপার আত্মসম্মান বোধ ১ম খন্ডে সুন্দর এবং যুক্তিযুক্ত ছিলো অবশ্যই কিন্তু ২য় তে অনেকটা বিরক্তিকর লেগেছে। ইগো বেশি মনে হয়েছে এবং গল্পটার অনেকটা বড় করতে হবে তাই লিখা এমন মনে হয়েছে। আর পাঁচটা বইয়ের ক্ষেত্রে হয়তোবা এমন লাগতো না। সাতকাহন ওভাররেটেড হওয়ায় ছোটখাটো জিনিসগুলোই বেশ চোখে পড়েছে।