ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে– কিন্তু এত শঙ্কা নিয়েও বা কোন সন্ধ্যা আসে? হয়তো আসে, আবার কখনও আসে না। এই শঙ্কিত সন্ধ্যার গল্প শুনতে শুনতেই আপনি দেখা পাবেন হাসি, কান্না, দুঃখ, বিষাদ, দেশপ্রেম, ইতিহাস কিংবা হাড় হিম করা লোমহর্ষক কিছু গল্পের। যেখানে জীবন চক্রাবর্তে পড়ে বদলে যায় কিংবা কবরফলক থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে। যেখানে আর ফিরে না আসার রাতের এক কালো অধ্যায়ের স্বাক্ষী হবেন। যেখানে স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ের রক্তবদন প্রভাতের দেখা পাবেন। যেখানে লাল-সবুজের প্রথম বিজয়গাঁথা কল্পনা আঁকা দেখবেন কিংবা সুদূর ওশেনিয়া মহাদেশের সত্য ঘটনা পড়ে কেঁপে উঠবেন অথবা অজপাড়াগায়ের আঁধার রাতের স্বপ্ন ফিকে হতে দেখবেন। সবশেষে প্রশ্ন থেকে যাবে, পুষ্পঞ্জলিতে কে ফেলল রক্তের ছাপ? স্বাগতম পাঠক, শঙ্কা নিয়ে শুরু হওয়া সেই সন্ধেবেলার গল্পে...
ভিন্ন ধাঁচের মোট ১০ টি গল্প নিয়ে নবলেখক'সমিয়াতুল সামি'র লেখা গল্পগ্রন্থ এই বইটি। একে একে সবগুলো গল্প নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. চক্রাবর্ত:এক ক্ষুদে লেখককে লেখা জমা দিতে হবে, কিন্তু কোনো প্লট মাথায় আসছেনা তার। একলা ঘরে অন্ধকার রাতে প্লট আইডিয়া পেতে প্রিয় মানুষকে কল করে সে, কিন্তু তার গল্পটাও পুরোটা শোনা হয়ে উঠে না। • নাম থেকেই মনে হয়েছিলো, একটা গল্পের চক্র হবে। তবে মূল অংশে সম্ভাবনা দেখিয়েও আলাদা করে বলার মত গল্প নেই, বরং সমাপ্তি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা। (২/৫)
২. কবরফলক:বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎই এলাকার কারো মৃত্যুসংবাদ শুনতে পায় সিয়াম। পথিমধ্যে হঠাৎ রফিক চাচাকে দেখতে পেয়ে চমকে যায় সে। আরও এক বছর আগেই রফিক চাচার মৃত্যু হয়েছে। • প্রেডিক্টবল গল্প। তবে লেখনী আগেরটার তুলনায় কিছুটা ভালো লেগেছে। (৩/৫)
৩. ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে:বৃষ্টিমুখর এক সন্ধ্যায় নীরবের বাসায় ছাতা চাইতে আসে আবির। ছাতা না নিয়েই চলে যায় সে। পরদিন সকালে নীরব জানতে পারে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আবিরের। • চরিত্রায়ন ও সংলাপ অতি নাটকীয়। যদিও শুরুতে মূল প্লট একটু ভিন্ন লাগছিলো, আর কৌতূহলও জাগছিলো। কিন্তু শেষটায় তার কিছুই নেই, হতাশাজনক। (৩/৫)
৪. আর না ফেরার রাত:মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা গল্প, কালরাতে এক গ্রামে ঘটে যাওয়া গল্প। • ২৫ শে মার্চ কালরাতের একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতোই মনে হবে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিপরীতে শিমুলের মতো যুবকের প্রতিবাদের ইচ্ছা আর দিয়ার মতো মেয়ের অসহায়ত্ব। লেখনীর খুব বেশি খুঁত নেই এই গল্পে। (৩.৫/৫)
৫. কল্পনায় আঁকা ম্যাচ:১৩ এপ্রিল, ১৯৯৭ সাল। কুয়ালালামপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও কেনিয়া। খেলার প্রতি আগ্রহে উত্তাল সারা দেশ, রেডিওতে কান সবার। • খেলা বুঝা, না বুঝা পরের বিষয়। এ দেশের মানুষের কাছে খেলা উপভোগ করাটা আগে। সেটা যদি হয় ক্রিকেট, তবে তো কথাই নেই। কিছু বছর আগেও এমন একটা পরিবেশ ছিলো, বাংলাদেশের খেলা হলে সবাই মুখিয়ে থাকতো যার যার কর্মস্থলে। এ গল্পটা তেমন একটা নস্টালজিক মুহূর্তকে স্মরণ করিয়েছে। লেখনীও উন্নত লেগেছে আগের গুলোর চেয়ে। (৪/৫)
৬. অ্যাডিডাস থ্রি স্ট্রাইপস:আউট নাকি নট আউট তার জের ধরে ঝগড়া বেঁধে গেলো খেলা দেখতে আসা এক দম্পত্তির। বিপরীত দলের প্রতিও তীব্র ক্ষোভ পুরুষ চরিত্রের। • ক্রিকেট নিয়ে পরপর দুটি গল্প দেয়া সঠিক মনে হয়নি। সত্য ঘটনার ভিত্তিতে লেখা গল্প হলেও, এতে আমোদ নেই। একটা ক্রিকেটারকে হুমকি দেয়ার মতো ঘটনা উল্লেখ থাকলেও, সেটার তদন্ত এখানে মুখ্য বিষয় না; তাই কোনো কৌতূহলও নেই। (২/৫)
৭. আধার রাতের স্বপ্ন:গল্পটা বিপলু নামে এক ক্রিকেট প্রেমী বালকের। • লেখক আরো একবার ক্রিকেট প্রেম প্রকাশের চেষ্টা করলেন এই গল্পে। আমার কাছে যা কারো কৈশোরের একটা দিনের একাংশ মনে হলো কেবল। (২.৫/৫)
৮. জন্মদিনের রাত:বন্ধুর জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে মাঝরাতে কেক কিনতে বের হয়েছে তিন কিশোর। এত রাতে কেকের দোকান কোথায় খোলা পাবে। এক জায়গায় সন্ধান পেলেও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে তাদের সাথে। • ভিন্নধর্মী প্লট। অন্তত বইয়ের বাকি গল্পের চেয়ে ভিন্ন এবং একইসাথে বাস্তবপন্থী। যদিও গল্পটা আরেকটু লম্বা হবে আশা ছিলো। যাইহোক, লেখনী এতক্ষণে যথাযথ মনে হয়েছে। (৪/৫)
৯. রক্তবদন প্রভাত:উর্দু বলতে হবে বলে, চাকরি ছেড়ে দিলো বাবুল। অভাবের তাড়না দেখা দিলো তার নতুন সংসারে। • ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা গল্প। বাস্তব চরিত্রের উল্লেখ আছে, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। লেখনীও ঠিকঠাক। (৪/৫)
১০. পুষ্পাঞ্জলিতে লেগে গেছে রক্তের ছোপ:দেশের নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয় হলে একের পর এক খুন হয়ে যাচ্ছে। গুম হয়ে গেছে আরো একজন। তদন্ত করতে নেমেছে দেশের গোয়েন্দা বিভাগ। • বইয়ের সবচেয়ে বড় আকারের গল্প। সমাপ্তি গল্প হিসেবে যথেষ্ট ভালো। লেখনশৈলীর বিচারে বইটার এই গল্প উপরে থাকবে। মূল টুইস্ট কী সেটা ধরতে পেরেছিলাম; শুধু সেটা কাকে নিয়ে এবং কেনো, তা বলতে পারিনি। খুনি কে বললেও, সমাপ্তিতে খুনের কারণ আরো বলা হয়নি। কে জানে লেখক কি পরবর্তী বইয়ের জন্য রেখে দিলেন কিনা! (৪/৫)
• সামগ্রিক অভিমত: লেখার মাধুর্যতা বজায় রাখতে হলে নিয়মিত লেখার পাশাপাশি, লেখা বেশ কয়দিন ফেলে রাখা উচিত। লেখক কোন গল্পটা কবে লিখেছেন কিংবা কোনটা কতোদিন ব্যবধানে বইয়ের জন্য নির্বাচন করেছেন, তা আমার জানা নেই। তবে এটা সত্য, গল্পগুলোর লেখার সময়কালে বিশাল ব্যবধান স্পষ্ট। লেখার দক্ষতার তারতম্য থেকেই বুঝা যায়। আমার মতে, লেখাগুলো আরো সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে, গল্পের শাখা প্রশাখা আরো বেশি বিস্তর করা যেতো। কিছু গল্পে এমনও মনে হয়েছে যেনো গল্পটা বিস্তর করার ক্ষেত্রে লেখক নিজেকে আটকে রাখছেন। তবে অস্বীকার করবো না, নতুন লেখক হিসেবে, চেষ্টা যথেষ্টই আছে। শুধু লেখক নিজের লেখক সত্তাকে মুক্তভাবে লিখার সুযোগ দিলেই হবে। লেখককে আগামীর সাহিত্যে পদচারণার জন্য শুভকামনা।
• সামগ্রিকভাবে ব্যাক্তিগত রেটিং: ৩.২৫/৫
(বাইন্ডিং এর মান চলনসই। কাগজের মান ঠিকঠাক আছে। বানান ভুল অবশ্য চোখে পড়েনি।)
এক নজরে, • বই: ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে • লেখক: সামিয়াতুল সামি • ধরণ: গল্পগুচ্ছ • প্রকাশনী: সতীর্থ প্রকাশনা • প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৪ • প্রচ্ছদ: পরাগ ওয়াহিদ • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬ • মুদ্রিত মূল্য: ২২০ টাকা
পড়লাম সতীর্থ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সামিয়াতুল সামির গল্পগ্রন্থ ❝ ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে❞। বইয়ে রয়েছে মোট ১০ টা গল্প। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে কয়েকটা গল্পের প্লট খুবই নড়বড়ে এবং বইয়ে স্থান পাওয়ার অনুপযুক্ত।
আমি চেষ্টা করবো এই ১০ টা গল্পের নাম ধরে ধরে হালকা-পাতলা ধরণের রিভিউ দেয়ার জন্য। স্পয়লার না দেয়ার জোরদার চেষ্টা থাকবে, তবে যদি স্পয়লার পেয়ে যান তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
✅ চক্রাবর্ত
সত্যি কথা বলতে এই গল্পটির আগা মাথা আমার মগজে ঢোকেনি। ঢোকেনি বলতে কিছুই ঢোকেনি। এমন না যে গল্পটা খুবই জটিল প্লটের উপর লেখা। একজন ব্যাক্তি সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে ফোন হাতে নেয় ফেসবুক চালানোর জন্য। তারপর হঠাৎ তার মনে হয় কোনো এক প্রতিযোগিতার জন্য তার গল্প লিখতে হবে। তারপর কি গল্প লিখবে সেটা ভাবতে গিয়ে হাবিজাবি অনেক জিনিস লেখক লিখেছে। কিন্তু কেন লিখেছে সেটা আমার মাথায় ঢোকেনি। আর এই গল্পটাকে গল্প কম আউলা ঝাউলা মনের ভাবনা বেশি মনে হয়েছে।
✅ কবরফলক
একসময় ফেসবুকে গল্প লেখালেখির অনেক প্রচলন ছিল। সেই ১৫/১৬ সালের দিকে ফেসবুকে প্রচুর গল্প পড়তাম। সেসময় গল্পের একটা কমন প্লট ছিল গল্পের প্রধান চরিত্র নিজে মারা গিয়েও টের না পাওয়া। অর্থাৎ সে মরে গেছে কিন্তু নিজেই জানে না যে মরে গেছে। সে আশেপাশের মানুষদের সাথে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করে কিন্তু কেউ তাকে দেখতে বা শুনতে পায় না। পরে একসময় হঠাৎ করেই জানতে পারে সে মরে গেছে। কবরফলক গল্পট��র প্লটও তেমনই। এমন গল্প ফেসবুকেই শোভা পায়। ছাপা অক্ষরে এই গল্পটা বেমানান।
✅ ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে
নাম গল্প হিসেবে ভেবেছিলাম দারুন কিছু হবে। তবে এটাও দেখি পুরোনো মদ নতুন বোতলে। সেই ফেসবুকের আরেকটি অতি ব্যবহৃত প্লট। বন্ধু ১ মারা যাওয়ার পর বন্ধু ২ এর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা বলে। পরে বন্ধু ৩ ফোন দিয়ে বন্ধু ২ কে বলে বন্ধু ১ তো মারা গেছে। তখন বন্ধ ২ অবাক হয়ে গিয়ে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে থাকে যে তাহলে বন্ধু ১ যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে এতক্ষণ সে কার সাথে কথা বললো? কাকে দেখলো? এই নাম গল্পটার প্লটও তেমনই। তবে পার্থক্য হলো ফেসবুকের গল্পে বন্ধু ২ মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই গল্প শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এখানে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গল্পটাকে চুইংগামের মত টেনে লম্বা করা হয়েছে।
✅ আর না ফেরার রাত
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের অত্যাচারকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে গল্পটি। প্লটটা ইউনিক না হলেও এই গল্পের লেখনশৈলী বেশ দারুন। মনেই হচ্ছিল না আগের ৩ টা গল্পও একই লেখকের লেখা। গল্পটি পড়তে গিয়ে উৎকন্ঠা আতঙ্কে ভুগেছি। চোখের সামনে ভেসে উঠেছে গল্পের চরিত্রগুলো। মন কেঁদে উঠেছে ১৯৭১ সালে নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষগুলোর জন্য।
✅ কল্পনায় আঁকা ম্যাচ
বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতার সময়ের গল্প এটা। ফাইনাল যেদিন হয়েছিল সেদিন দেশের মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আবেগ দেখা গিয়েছিল সেসবের মিশেলে লেখা হয়েছে গল্পটি। ব্যক্তিগতভাবে এই বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় গল্প হচ্ছে ❝কল্পনায় আঁকা ম্যাচ❞ গল্পটি। আমি যদি ১৯৯৭ সালে ক্রিকেট বোঝার মত বড় থাকতাম তাহলে আমিও হয়তো গল্পের চরিত্রগুলোর মতই উন্মাদনার ভাসতাম।
✅ অ্যাডিডাস থ্রি স্ট্রাইপস
এই গল্পটাও ক্রিকেট নিয়ে। এক ভদ্রলোক নিজের প্রিয় দল হেরে যাওয়ার পর বিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড়কে হেনস্তা করতে চাওয়া নিয়েই গল্পটা। গল্পটা লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। কোন এক বিগ ব্যাশ ম্যাচ চলাকালীন কমেন্ট্রিবক্সে দুই ধারাভাষ্যকার গল্পটি বলেছিলেন। সেটাকেই নিজের মত করে লিখেছেন লেখক। এই গল্পটা আমার কাছে অ্যাভারেজ একটা গল্প মনে হয়েছে।
✅ আঁধার রাতের স্বপ্ন
এটাও ক্রিকেট নিয়ে। স্কুলে পড়ুয়া এক কিশোরের ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা নিয়ে লেখা গল্প। তবে গল্পটা মাত্র ২ পৃষ্ঠার। তাই পড়া শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যাওয়া এই গল্পটাকে নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। তবে এটাও আমার কাছে অ্যাভারেজ বলেই মনে হয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে যারা মাতামাতি করে তাদের কাছে হয়তো কিঞ্চিৎ ভাল লাগতে পারে, তবে যারা ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী না তাদের কাছে সেই কিঞ্চিৎ পরিমাণও লাগবে কিনা সন্দেহ। কারণ তারা এই উন্মাদনাটাই ধরতে পারবে না।
✅ জন্মদিনের রাত
বইয়ের দ্বিতীয় সেরা গল্প এটা। বন্ধুর জন্য রাতে কেক কিনতে গিয়ে কিভাবে অল্পের জন্য ছিনতাইকারীর খপ্পর থেকে বেঁচে ফেরে কয়েকজন কিশোর তারই গল্প এটা। গল্পটা সাধারণ মানের হলেও উপস্থাপনার জন্য গল্পটা আমার কাছে বেশ লেগেছে।
✅ রক্তবদন প্রভাত
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে লেখা ৩ পৃষ্ঠার গল্প। গল্পটাকে চাইলেও লেখক আরেকটু বড় করতে পারতো। এতে গল্পটা উপভোগ্য হতে পারতো। ভাষা আন্দোলনের সময়কার আরো কিছু বিষয় গল্পে সংযুক্ত করা যেত। কেউ গল্পটা পড়ে নিজেকে গল্পের সাথে যুক্ত করার সময়ই পাবে না, যেমনটা আমি পাইনি। তাই গল্পটা ভাল হয়েও ভাল লাগেনি আমার কাছে।
✅ পুষ্পাঞ্জলিতে লেগে গেছে রক্তের ছোপ
বইয়ের সবচেয়ে বড় গল্প এটা। মার্ডার মিস্ট্রি জনরার। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রহলে পরপর দুই রাতে দুটো খুন হয়। খুনীকে ধরতে গিয়ে পুলিশেরা গলদঘর্ম হচ্ছেন। খুনী কে তারা বুঝতে পারছেন না। গল্প ভালই এগুচ্ছিল। তবে লেখক হয়তো গল্পটাকে একটু বড় করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ গল্পের এক পর্যায়ে দেখা যায় খুনীকে সিসিটিভিতে স্পষ্ট খুন করতে দেখার পরেও খুনীকে গ্রেপ্তার না করে পুলিশ খুনির পেছনে লোক লাগায় খুনের মোটিভ কি সেটা জানার জন্য। আমার মতে এখানে এসেই গল্পটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। গল্পটা লেখকের নিজের ভাষায় “কাঁচা হাতের লেখা বাংলা থ্রিলার গল্প”।
🔴🔴🔴
আমার ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে একটা গল্পগ্রন্থের কমপক্ষে ৭০% গল্প যদি ভাল হয় তাহলে সেই বইটাকে একটা দারুন গল্পগ্রন্থ বলা যায়। আর ৫০% ভাল হলে সেটাকে বলা যায় চলনসই। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় এই গল্পগ্রন্থের সর্বসাকুল্যে ৩ টা গল্প আমার ভাল লেগেছে। শতাংশের হিসেবে যেটা ৩০% হয়। আমি মোটামুটি অবাক হয়েছি এটা ভেবে যে কয়েকটি গল্প আছে যেগুলো বইয়ের চেয়ে ফেসবুকেই বেশি মানায় (আমার নিজস্ব মতামত এটা) সেসব গল্পও প্রকাশক অবলীলায় বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করে টাকা দিয়ে কিনে পড়তে বাধ্য করছে পাঠকদের। তাই সতীর্থ প্রকাশনীকে বলবো ভবিষ্যতে বই প্রকাশের পূর্বে গল্পের মান যেন আরো ভাল হয় সেদিকে যেন তারা নজর রাখে।
যাদের টুকটাক লেখা ফেসবুকে পড়া হয় তাদের লেখা দুই মলাটের মধ্যে হাতে পেয়ে বেশ লাগে। বইটা হুট করে পড়া শুরু করেছিলাম।
প্রথম গল্পটা কিছুদূর পড়ে আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম। সেই আদিম প্রেমের ক্যাচক্যাচানি,অতি পরিচিত ব্যাপার স্যাপার। কিন্ত শেষ পর্যন্ত পড়ে "আরেএএএ,এইতো এবার ক্রিয়েটিভিটি আইছে" টাইপের রিঅ্যাকশন ছিল আমার।
লেখক যে নিজের অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার সামলে নিজের প্যাশনটাকেও ধরে রেখেছেন এই ব্যাপার টা আমার দারুণ লাগে। কদিন আগেই সুহান রেজওয়ানের একটা বই পড়লাম। পড়ে মনে হলো যে সব ঠিকই আছে,কিন্ত একটা মানুষ এমন ব্রিশ্রীরকম নার্সিসিস্ট কেন হয়। নেহাত গাঁটের পয়সা খরচ করে কেনা,তাই ফেলে দিই নি। এইটা হাতে নিয়েও আমি এমন কিছু আশা করছিলাম। কিন্ত তেমন হয় নি।
ছোট্ট একটা বই, কিন্ত নানা ঢংয়ের গল্প। একটা সুন্দর কম্বিনেশন। আমার চক্রাবর্ত গল্প টা বেশ ইউনিক লেগেছে। বাকিগুলো মোটামুটি ছিল।
লেখক কে আমি সাজেস্ট করব যে চরিত্রগুলোর বর্ণনাতে একটু যত্নশীল হতে। আপনার চরিত্র যেকোনো কেউ হতে পারে,আমি, আপনি। ষোল বছরের যেকোনো কিশোর,সাত বছরের যেকোনো বাচ্চা। কিন্ত যখন লেখকের কলমে তার একটা কাল্পনিক চেহারা কারো মনে ফুটে ওঠে তখনই সে মনে দাগ কাটতে পারে। এটা আমি সবথেকে বেশি দেখেছি গোর্কির মধ্যে। কয়েক শব্দেও কাউকে বাস্তবরূপ দিয়ে দেন লোকটা।
এইতো, আরো একটা নতুন লেখকের বই পড়ে ফেললাম। হাহা...
'এই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে' -সামিয়াতুল সামি'র লেখা প্রথম গল্পগ্রন্থ।দশটি ছোট গল্প নিয়ে এই গল্প সংকলন।
প্রথম গল্প 'চক্রাবর্ত' লেখক কীভাবে কাহিনী খুঁজে গল্প লিখবেন কিংবা বই লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার কথা বলেছেন এই গল্পে । যদিও গল্পটা পড়ে চরম বিরক্ত লেগেছে।
'কবরফলক' ও নাম গল্প 'এই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে' দুটোরই বিষয়বস্তু প্রায় একই। লেখক হয়তো জাদু বাস্তবতার নিরিখে লেখার চেষ্টা করেছেন।
'আর না ফেরার রাত' ও 'রক্তবদন প্রভাত' গল্পে যথাক্রমে ২৫ শে মার্চের কালরাতের গণহত্যা ও ২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে নিহত হওয়া ভাষা শহীদদের কথা উঠে এসেছে।
'কল্পনায় আঁকা ম্যাচ' বাংলাদেশের আইসিসি ট্রফি জয় এবং সেসময়ের পাঁচ বন্ধুর ক্রিকেট উন্মাদনা নিয়ে 'ফিল গুড' টাইপ একটা গল্প বলেছেন ।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচে এক ভক্তের করা উদ্ভট কান্ডের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা'অ্যাডিডাস থ্রি স্ট্রাইপস' এছাড়াও 'আঁধার রাতের স্বপ্ন' এক বালকের ক্রিকেট খেলা দেখার উন্মাদনার গল্প।
শেষের'পুষ্পাঞ্জলিতে লেগে আছে রক্তের ছোপ' কিছুটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার এই গল্প সংকলনের মান কিছুটা হলেও রেখেছে।
ব�� : এই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে লেখক: সামিয়াতুল সামি প্রকাশক: সতীর্থ প্রকাশনী প্রকাশকাল: বইমেলা'২৪ মূল্য: ২২০ টাকা
অনেক কাল হলো কোন বইয়ের রিভিউ লিখি না। আজ লেখা যাক একটা বইয়ের রিভিউ। বইয়ের নামটা রহস্যময় সুন্দর- 'ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শংকা সন্দেহে'। লেখক হলো সামিয়াতুল সামি। তার ভাল পরিচিতি আছে ক্রিকেট এনালিস্ট হিসেবে, ভাল ফ্যান বেইজ আছে তার ওই সূত্রে। তার এই বইটা একটা ছোট গল্পের বই। স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটও আছে তার গল্পে। কিন্তু ক্রিকেটকে ছাপিয়ে তার সাথে সামির লেখক সত্তার আরো কিছু বৈশিষ্ট্যও দেখা গেছে এই বইতে
সামির এটা প্রথম বই। বইয়ের নামটাকে রহস্যময় বলেছি কারণ তা শুনেই মনে হয় কি যেন রহস্য লুকিয়ে আছে এই বইয়ের গল্পগুলোতে। আমার কাছে বইয়ের নামটাকে এই বইটা বের করতে গিয়ে সামির মনের যে অবস্থা তার সাথেও মিল আছে মনে হয়। ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শংকা সন্দেহে- নতুন লেখক সামি। বই রিলিজ হওয়াটাকে যদি সন্ধ্যা ধরি তবে কেমন হলো বইটা, কেমন লিখেছে সামি,পাঠক কিভাবে গ্রহণ করবে এসব নিয়ে ওর নিজের মাঝে আছে শংকা সন্দেহ
বইতে মোট ১০টা গল্প আছে। প্রথম গল্প চক্রাবর্ত। এ যেন সামির এই বই লেখার অভিযান। গল্পের মূল চরিত্র একটা গল্প লিখছে। কি নিয়ে লিখবে ভাবছে। সেই গল্পটা খুজে পাওয়ার জন্য সে দ্বারস্থ হয় তার প্রেমিকা তমার। তমার সাথের অংশটুকু এই গল্পটার সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। বড় চমতকারভাবে এগিয়েছে এখানে গল্প। এরপরে গল্পের খোজ পাওয়ার চেষ্টা করতে আবারো আসে তমার প্রসংগ। শেষ পর্যন্ত গল্পের গরুর দেখা লেখক পায় কি না তা জানতে হলে বইটা পড়তে হবে। আমি প্রথম গল্পটা ভাল এঞ্জয় করেছি
পরের গল্পটা কবরফলক। সন্ধ্যাবেলায় নাস্তা কিনতে দোকানে যায় সিয়াম। হঠাত দুটো ছেলের কাছে শুনতে পায় যে কে যেন মারা গেছে। কে মারা গেল সেটা বোঝার চেষ্টা করে সিয়াম। বিচিত্র অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে যেতে হয় তাকে। গল্পে ভাষার বুনন ভাল, ক্লাইম্যাক্সের বিল্ড আপও মানসম্মত কিন্তু মূল কাহিনীটা পুরান ধাচের। এই ধরণের অনেক গল্প আমরা আসলে অনেকেই পড়েছি
টাইটেল গল্প ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শংকা সন্দেহে। ষোল বছরের এক কিশোর নীরব। এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় তার বাসায় এসে তার কাছে ছাতা চায় বন্ধু আবির। ছাতাটা খুজে নিয়ে এসে আবিরকে দিতে এসে দেখে আবির নেই,চলে গেছে। গল্পের বাকি অংশ যেন অনেকটাই আগের গল্প কবরফলকের কাহিনীর পুনরাবৃত্তি। অপ্রয়োজনীয়ভাবে গল্পটাকে শেষে অনেকখানি বড়ও করা হয়েছে
একই রকম দুটো গল্পের পরে আসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প আর না ফেরার রাত। কাহিনী গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের অতি চেনা কিছু ব্যাপার নিয়ে। কাহিনীতে বা চেতনায় নতুন কিছুর দেখা এ গল্পে পাওয়া গেছে এমনটা বলার উপায় আসলে নেই
পরের গল্পে আগমন ঘটে সামির পরিচিতি যা দিয়ে সেই ক্রিকেটের। গল্পের নাম কল্পনায় আকা ম্যাচ। কাহিনী আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের একটা ঐতিহাসিক ম্যাচ নিয়ে। সেই ম্যাচের সময়ে দেশের এক স্কুলে ঘটে যাওয়া এক সত্য কাহিনী নিয়ে গল্পটা। সেই ম্যাচটি হলো ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল আইসিসি ট্রফির ফাইনাল ম্যাচ। বাংলাদেশ বনাম কেনিয়া। ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে সেই ২৫ ওভারে ১৬৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে শেষে ১ বলে ১ রান করে বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক ফাইনাল জয়। আমার মত ক্রিকেটপ্রেমী যারা এই ম্যাচটা রেডিওতে শুনেছে প্রত্যেকে অবধারিত ভাবে কল্পনায় ফিরে যাবে সেই ম্যাচে এই গল্পটা পড়ে। আমার মনে পড়ে গেছে ম্যাচ জেতার পরে কিভাবে খুলনায় এলাকা থেকে বিশাল মিছিলের অংশ হয়ে সোনাডাংগা পার হয়ে শিববাড়ি মোড় গিয়েছিলাম সেই স্মৃতি। কিন্তু এই গল্পটার অসাধারণত্বটা কোথায় সেটা বলছি। এই ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালের সময় লেখক সামিয়াতুল সামির জন্মই হয়নি! কিন্তু আমরা যারা এই ম্যাচ রেডিওতে শুনেছি তারাও কোনভাবে এটা ধরতে পারবো না সামির বয়সটা না জানলে। এতোই দারুণভাবে গল্পটা বলেছে সামি। ওর কাছে এজন্যই ম্যাচটা ছিলো কল্পনায় আকা ম্যাচ। একেছে সে কল্পনায় একদম বাস্তবের মত প্রায় হুবহু
এর পরের গল্পেও আছে ক্রিকেট। নাম এডিডাস থ্রি স্ট্রাইপস। ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে ম্যাচে ঘটে যাওয়া একটা সত্য কাহিনী অবলম্বনে। কাহিনীটা ঘটেছিলো কিংবদন্তী ক্রিকেটার ম্যাথু হেইডেনের সাথে। লেখক গল্পের শেষে পাদটীকায় উল্লেখও করে দিয়েছেন যে তিনি বিগ ব্যাশের এক ম্যাচে প্রয়াত এন্ড্রু সাইমন্ডস আর এডাম গিলক্রিস্টের কমেন্ট্রিতে এই কাহিনীটা শুনেছিলেন। সেটা অবলম্বনে এই গল্পটা সাজিয়েছেন। যেভাবে সাজিয়েছেন তা পড়ে পাঠক উপভোগ করবেন
পরের গল্প আধার রাতের স্বপ্নেও আছে ক্রিকেট। তবে এই গল্পটা দুর্বল। মফস্বল শহরের এক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফ্যান কিশোরের রাত একটার সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচ দেখার জন্য কৌশলে গোপনে অন্যের বাসায় যাওয়া নিয়ে কাহিনী
জন্মদিনের রাত গল্পটা খুব পছন্দ হয়েছে। তিন জন কিশোর তাদের এক বন্ধুর জন্মদিনের জন্য অনেক রাতে কেক কিনতে বের হয় যশোর শহরে। লেখক সামির বাসা যশোরে। আমি নিজে যশোরে আত্মীয়র বাসায় অনেক বার গেছি বলে যশোর শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার যে বর্ণনা দেয়া আছে তার সাথে খুব ভালমত রিলেট করতে পেরেছি। গল্পের সাসপেন্সটা দারুণ। পাঠকের মাঝে আগ্রহ তৈরি করে শেষটাও হয়েছে সুন্দরভাবে
রক্তবদন প্রভাত গল্পটা ঐতিহাসিক এক দিনের প্রেক্ষাপটে সাজানো। মাত্র তিন পাতার গল্প। প্রথম পাতা পড়লে বোঝা যায় যে ঘটনা ১৯৫২ সালের একুশে ফ্রেবুয়ারীর আগের সময়ের। বাবুলের সুতা কারখানার মালিক বলেছে যে কারখানার সব কথাবার্তা, লেনদেন এখন থেকে উর্দুতে হবে। বাংলা আর বলা যাবে না। এজন্য চাকরি ছেড়ে দেয় বাবুল। অভাবে পড়ে প্রতিবেশী প্রিন্টিং প্রেসের মালিক লতিফ সাহেবের কাছে সাহায্য চাইতে যায় বাবুল। এই লতিফ সাহেবের কাছের মানুষ কে সেটা আমরা শেষ পাতায় জানতে পাই যেটা একটা সারপ্রাইজ
শেষ গল্পটা এই বইয়ের সবচেয়ে বড় গল্প, একটা থ্রিলার গল্প। নাম হলো পুষ্পাঞ্জলিতে লেগে গেছে রক্তের ছোপ। সামির এই বইয়ের সেরা গল্প এটা নি:সন্দেহে। থ্রিলার লেখায় সামির ভাল দক্ষতা আছে দেখতে পেলাম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরো পরিণত হতে পারে তার থ্রিলার গল্প লেখার হাত। এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক ছাত্র খুন হতে থাকে। ধরে নেয়া হয় যেন কোন সিরিয়াল কিলারের কাজ। শেষে খুনীর যে বৈশিষ্ট্য দেখানো হয় সেটা বিশ্ব থ্রিলার গল্পের জগতে বিরল কিছু না হলেও থ্রিলার জাতীয় গল্পে সামির মুন্সীয়ানা দেখা গেছে। ক্রিকেট এনালাইসিসের পাশাপাশি থ্রিলার লেখক হওয়ার চিন্তা সে করতেই পারে
সামিয়াতুল সামির এই বইটি বইমেলায় পাওয়া যাবে সতীর্থ প্রকাশনাতে। সামির সাথে পরিচয় ফেইসবুকে, ভাল লাগতো ওর অনেক ক্রিকেট বিষয়ক এনালাইসিস। পরে দেখলাম যে সে আমারই ভার্সিটির ছোট ভাই। তার অনেক সাধনায় গড়া এই প্রথম বইটি পড়ে তাকে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। ওর বয়স মাত্র ২২-২৩। এত অল্প বয়সেও গল্পের কাহিনীতে তার যে চিন্তাগুলো দেখা গেছে সেগুলো ভাল। সবচেয়ে পজিটিভ দিক বলবো যে সস্তা আবেগী, রোমান্টিক কিছু লিখে জনপ্রিয় হওয়ার যে ধান্দা অনেক লেখকের থাকে তা সামির একদমই ছিলো না। যেহেতু সস্তা কোন চিন্তা সামির নেই তাই সে যদি নিজের পড়াশোনা আরো বাড়ায়, লেখা নিয়ে আরো সাধনা করে তাহলে আজ থেকে দশ বছর পরে একজন গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার হিসেবে আমরা সামিয়াতুল সামিকে পেতেই পারি
বইঃ ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে লেখকঃ সামিয়াতুল সামি প্রকাশনীঃ সতীর্থ প্রকাশনা প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬ মুদ্রিত মূল্যঃ ২২০
◾ বইটা এই নিয়ে দু'বার পড়লাম। এই বইয়ের কিছু গল্প আমার ভীষণ পছন্দের। বারবার পড়বার মতোন গল্প। ◾পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
ছোটগল্প বা গল্পগুচ্ছ আমার তেমন একটা পড়া হয়না তবে বইখানা এক বসাতেই পড়ে উঠেছি। বইটায় মোট ১০ টা গল্প তবে আমাকে বেছে নিতে বললে আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় চারখানা গল্প বেছে নেবো। এখন নাম গুলো বলছি না, আশা করছি আপনারা পড়ে জানাবেন কোন গল্প গুলো আপনাদের কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
"ওই সন্ধ্যা আসে, যেন কি শঙ্কা সন্দেহে" ~সামিয়াতুল সামি
প্রথমে যদি বলতে হয় তাহলে বলবো বইটার নাম নিয়ে,বেশ রহস্যময় একটা ভাব আছে । নামটা দেখলেই মনে হবে হয়তো বেশ রহস্যেঘেরা বই কিন্তু তেমন রহস্যময়ও ছিলো না । বইটি তে মোট ১০টি গল্প রয়েছে, এরমধ্যে কিছু গল্প আমার ভীষণ পছন্দের। খুব সুন্দর ও সহজ ভাষায় গুছিয়ে লিখা হয়েছে। পড়া শেষ হওয়ার পরেও মনে হচ্ছিল আরও কিছুক্ষণ পড়তে পারলে ভালো হতো।