Manik Bandopadhyay (Bengali: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bengali novelist and is considered one of the leading lights of modern Bangla fiction. During a short lifespan of forty-eight years, plagued simultaneously by illness and financial crisis, he produced 36 novels and 177 short-stories. His important works include Padma Nadir Majhi (The Boatman on The River Padma, 1936) and Putul Nacher Itikatha (The Puppet's Tale, 1936), Shahartali (The Suburbia, 1941) and Chatushkone (The Quadrilateral, 1948).
এতো সুন্দর, নির্মেদ লেখনী! এ যে ঠিক সোজা সরল প্রেমের উপন্যাস নয়। নিজের কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো নিজেকে সবজান্তা মনে করা এক লোকের ধরা পড়ে যাওয়ার করুন কাহিনী। মানসিক সম্পর্কের এতো এতো স্তরে নিজেকে আবিষ্কার করার লোভ সামলাতে না পারা হেরম্বের উপর সময়ে সময়ে রাগ হয় না, তা বলতে পারব না। হেরম্বের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ চরিত্রগুলো দয়ায় ভাসাতে গিয়ে যেন আরো নিষ্ঠুর! এ সংসারে আনন্দর মতো একজনের ‘ভালোবাসা মরে যায়’ এই তথ্য উদঘাটন করে বেঁচে থাকা আসলেই দুষ্কর। শেষ করে মনে হল অবহেলাই যার নিয়তি, সেই সুপ্রিয়ার শেষমেশ কি হল? ২০। ৫। ২০২০
(আগের লেখাটা কাটলাম না। রাখলাম। খুব গা বাঁচিয়ে লিখেছিলাম, কোন দুঃখে কে জানে!)
দিবারাত্রির কাব্য পড়ে এখনো মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বাস করছি। বারবার মনে হচ্ছে, কিছু কি বুঝে উঠতে পারি নি? মানিকের খুব বেশি লেখা পড়া হয় নি। এটা তৃতীয় মানিক আমার এবং তাঁর প্রথম উপন্যাস। বইটি উপহার পেয়েছিলাম। শুনেছিলাম, এ নাকি অসাধারণ প্রেমের উপাখ্যান। কি জানি! প্রেম ছাড়া প্রেমের সম্পর্কের যতো অন্ধকার দিক, সব এই বইয়ে ডালপালা মেলেছে। মেয়েদেরকে মানুষ মনে না করা, তাদেরকে মোটামুটি কিছুতেই শান্তিকে থাকতে না দেওয়া এবং হ্যা, আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য করা, এসব কি করে প্রেম হয় জানি না। বিশেষ করে বেশিরভাগ ঘটনাই কেন্দ্রীয় বিষাক্ত চরিত্র হেরম্বর আচরণের ফল। বাকিটা বাকি সব পুরুষ চরিত্রের অবহেলাপ্রসূত কুকর্মের ফল।
মানিকের শব্দচয়ন অতুলনীয়। খুবই লক্ষীছাড়া উপন্যাসটির সংলাপ মোহনীয়। পড়তে পড়তে শব্দের মায়াজালে ডুবে যেতে হয়। তাও, অজস্র ‘কিন্তু’ রয়ে যায়। ‘ভালোবাসা এক সপ্তাহ বা এক মাসের বেশি টিকে না’ এরকম সস্তাগোছের ফিলসফিকে আশ্রয় করে এগিয়ে যাওয়া উপন্যাস লেখনীর জোরে কালোত্তীর্ণ, ভাবলে অস্বস্তি হয়। শব্দজাল বাদে আর কিছুই টানে নি। আর কখনোই এতে ফিরে যাব না। কারন, ইতিমধ্যেই এই উপন্যাস প্রেম নিয়ে আমাদের স্বেচ্ছাচারী ধারণাগুলোকে খুব উচ্চমার্গে তুলে জানিয়ে দিয়েছে যে এসব আচরণ একেবারেই ‘স্বাভাবিক’। যেমন: অর্থনৈতিক পরাধীনতা না মানলে নাকি মেয়েরা ভালোবাসা পায় না! তাও রক্ষা, এটা হেরম্বের সংলাপ!অন্যের উপর অর্থনৈতিক কারনে নির্ভরশীল থাকা কারো কাছে যাতনাদায়ক হতে পারে, নাও হতে পারে। সেটার উপর ভিত্তি করে তাঁকে ভালোবাসা এবং না বাসার বিষয়টা আসে কেমন করে জানি না। আর সেও তো এরকম চিন্তা করা একটা লোককে ভালবাসতেও পারে, নাও পারে! এতো রকম আজেবাজে শর্তজুড়ে আগেভাগে ভেবে রাখা নানা অর্বাচীন চিন্তা দিয়ে হেরম্বের সুপ্রিয়া, মালতী এবং আনন্দকে বিচার করার সিঁড়িগুলো বেশ মেজাজ খারাপ করায়।
জানি, তিনি অন্যযুগের লেখক ছিলেন। তাও এসব লিখেই এই বই টিকে গেছে, কারন, আমরা এখনো এরকম চিন্তাকে নরমাল মনে করি। মনস্তত্ত্বের নানা পরত আবিষ্কারের নামে সুন্দর ও সলজ্জ অনুভূতিগুলোর অপমান করা উপন্যাসটি মালমসলা এবং এক ধরণের প্রায় বাতিল দৃষ্টিকোণের প্রতি পক্ষপাতের কারনে ভালোবাসতে পারলাম না। তাও ভাল যে এটি তাঁর প্রথম উপন্যাস। এখনো আশা করছি, বাকিগুলো পড়ে হয়তো পাল্টে যাওয়া এক লেখকের ধ্যান ধারণার সন্ধান পাব।
৩১। ৫। ২০২০
পুনর্পাঠের কারন, বুকক্লাবের বাছাই ছিল বলে। না পড়লে ক্ষতি ছিল না। তাও মনে হল, আরেকবার হেরম্বের কাজকারবার ঝালাই করে নেই। কারন, ব্যাটার নাম বাদে ও তার মোটাদাগের কুকীর্তিগুলো বাদে সব ভুলে বসে ছিলাম। আলোচনার দিন দেখা যাবে পড়া বই নিয়েও বলার কিছু পাব না। কারন, অপছন্দের বই খুব। তাই, একাধারে হেরম্বের গুষ্টি উদ্ধার করে যা বলব, তাও আসলে শ্রুতিমধুর হবে না। এসব ভেবে যা করি না তা করলাম। পড়তে হবে এরকম ভেবে পড়লাম। অথচ, জীবনে আর কোনদিন পড়ব না এই বস্তু, এমনটাই আগেরবারের রিভিউতে লিখেছিলাম। একেই বলে কপাল।
এবারে অবশ্য নিজেকে অকারনেই দারুন কিছু ভাবা একটা লোকের চিন্তাভাবনা পড়ছি, তা জেনে পড়তে শুরু করায় মোটামুটি হেসে দিচ্ছিলাম জায়গায় জায়গায়। গতবার যেমন মেজাজ চরে যাচ্ছিল, এবারে যে তা একেবারেই হয় নি এমন না। হয়েছে সেটা, আর হতে বাধ্য। কারন, কারো সাথেই কারোর কোন স্বাভাবিক কথোপকথন পেলাম না। প্রতিটা চরিত্র সংলাপে ব্যস্ত! কে কতো চালাকের মতো উত্তর দিতে পারে, সেটারই যেন প্রতিযোগিতা পুরো বই জুড়ে!
যাকে এখানে ভালোবাসা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাকে লাভ বম্বিং বলা হয়। এর সম্ভবত বাংলা নেই এখনো! অবাক হবার কিছু নেই তাতে। আবারো সেই এক সপ্তাহ, এক মাসের সস্তা কথাটা পড়ে মনে হল কতো ম্যানিপুলেটার না জানি এতে ভ্যালিডেটেড ফিল করে মনে মনে সুখ পেয়েছে। এবারে এটাও খেয়াল করলাম, হেরম্ব ম্যানস্প্লেইনিং এর একজন ধারক বাহক হওয়া বাদেও শালা বিরাট কুটনা ছিল! এবারে নানা কারনে অন্যান্য চরিত্রের উপরও মন তিতা হয়ে গেছে। মানে, এতো কেন ঢং সবার, এই প্রশ্ন করতে করতে বই শেষ হয়ে গেল..
নিজস্ব উপলব্ধি হল, হেরম্বরা ডাইনোসরের মতো নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত আমার সবসময়ে মনে হবে যে আমি ভুল গ্রহে জন্মেছি। এই উপন্যাস পড়ে যা ভেবে সবচেয়ে বেশি দুঃখ হয়, তা হল ‘মানুষকে মানুষ ভাবার বেলায় পিছিয়ে যাওয়া লোকের পরিণতি বাস্তবে এরকম হয় না’ এটা বলতে না পারা। আর সেই বলতে না পারার জন্য আমি দায়ী না হলেও দেখা যায় খারাপ ঠিকই লাগে। আর আরেকবার পড়ে লেখনীর কল্যানেই পুরোটা পড়ে ফেলেছি, তা বুঝলাম। বুঝলাম, কাঁচাকলার চপ রাঁধুনীর গুনে কি করে মাটন চপ হয়ে যায়। কিন্তু, ঐ বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মতোই, কাঁচকলা এই বই।
২০২৩ এ এই বই ‘প্রেমের উপন্যাস’ হিসেবে টিকে আছে। থাকুক। যতোদিন থাকবে, এটা অন্তত একটা ‘পরিমাপক’ হিসেবে কাজে দিবে যে আসলে প্রেম কি কি না হলে সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে । জীবন উপন্যাসের মতো না হলেই উত্তম, আর হলেও সেটা আর যাই হোক, এই উপন্যাসের মতো না হওয়া জরুরী। এমনকি পাঠকের জীবনেও এরকম উপন্যাস একবারের বদলে দুইবার এসে হাজির হওয়া সুখকর নয়। কিন্তু, কপালকে আবার দুষে প্রার্থনা করছি এটাই যাতে শেষবারের মতো এই উপন্যাসে ফিরে যাওয়া হয়!
এমন কড়া মনস্তাত্ত্বিক আর বিশ্লেষণধর্মী বই আগে পড়েছি বলে মনে হয় না। বইটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। ১ম ভাগ: দিনের কবিতা; ২য় ভাগ: রাতের কবিতায় এবং ৩য় অর্থাৎ শেষ ভাগ এই দুইয়ের মিশ্রণ: দিবা রাত্রির কাব্য। প্রতিটি ভাগের শুরুতে বেশ কিছু লাইনের কবিতা আছে, সেগুলোও চরিত্র রূপকস্বরূপ।
বইয়ের চরিত্রগুলোকে সরাসরি মানুষ হিসেবে না ধরে যদি চরিত্রদের মন হিসেবে ধরি তাহলে আমার মতে ব্যাপারটা আরেকটু সহজ হয় (সুবিধার্থে মনকে আবার পাখির সাথে তুলনা করা হলো)। মন! বড্ড বেশি চঞ্চল। মন পাখি কি আর এক গাছে বাসা বাঁধতে চায়? বাসাটা পুরোনো হলে তো পাখি অন্য আরেকটা নির্ভরযোগ্য বাসার খোঁজে বেরোয়। আরেকটা পেলে তো ভালো না পেলে দীর্ঘ পথ চলতে হবে আর কি!
১ম ভাগঃ এই দিনের ভাগে দুটি অতৃপ্ত আর অশান্ত মনের বেখেয়ালি কর্মকান্ড দেখানো হয়েছে, যা নিতান্তই সব সময় সত্য। সুপ্রিয়া হেরম্ব'দার প্রেমে পড়েছিল। যোগ দিয়েছিল হেরম্ব নিজেও।কিন্তু ঐ যে মন পাখি,একটা বাসায় তো থাকলো অনেকদিন আর কত। নাহ! এখানে থাকা চলবে না। এতে করে মন পাখি নিজেও নিস্তেজ আর বাসাটাও হয়তো এই অবহেলার সুযোগে কবে ভেঙে পড়ে! কাজেই হেরম্ব নিজ দায়িত্বে বুঝিয়ে শুনিয়ে সুপ্রিয়াকে অশোক নামের এক দারোগার বউ করে পাঠিয়ে দিলেন। স্বামীর প্রতি অবহেলা না থাকা সত্ত্বেও সুপ্রিয়ার মন পড়ে রইল হেরম্বের জন্য, অতৃপ্ত হয়ে!
২য় ভাগঃ রাতের ভাগ এটা। সুপ্রিয়ার বিয়ের ৫ বছর পর যখন হেরম্ব জানতে পারে সুপ্রিয়া আজও আশায় আছে। সে সুপ্রিয়াকে পর্যুদস্ত করে চলে আসে পুরীর দিকে। চঞ্চলচিত্তের হেরম্ব দেখা পায় মালতী আর মাস্টারমশাই অনাথের। অনেক বছর আগে এরা ভালবেসে ঘর ছেড়েছিল তখন হেরম্ব কেবল ১২তে পা দিয়েছে। হেরম্বের মনে হয়েছিল প্রেম ভালোবাসা এমনও হয়!? কিন্তু স্বচক্ষে সে দেখলো অন্য রূপ। ভালোবাসা যে ফুরিয়ে যায়! নিঃশেষ হয়ে যায়! তাহলে এই যে পাখিরা নীড় বাধে? একসাথে থাকার কথা! - ভালোবাসা ফুরালে সে তো অভ্যস্ততা। এরই মাঝে মালতী-বৌদির মেয়ে আনন্দকে দেখে হেরম্বের মন কেমন যেন অজানা উত্তেজনা আর আবেগে দিশেহারা হয়ে যায়। দুজন দুজনার প্রেমে পড়ে যায় তারা।রাতের বেলায় আনন্দের চন্দ্রকলা নাচ যেন তাকে নতুন করে শেখায়।
৩য় ভাগঃ এবার দিন আর রাতের দুই প্রিয়ার সাক্ষাত। আনন্দ আর সুপ্রিয়া নিজেরা নিজেদের দেখেই সব বুঝতে পারে। তারপরও সুপ্রিয়া নিজের মনে নিজেই কাহিনী আটে যে হেরম্ব এখনও তারই আছে! আগের মতোন! ওদিকে আনন্দের মা বাবার ভালোবাসা সরে গিয়ে যে অভ্যস্ততা ছিল তারও পর্দা পড়ে যায়। শান্তির খোঁজেই হয়তো শেষটায় নিরুদ্দেশ হয়!!আর হেরম্ব! সে বড় অস্থির আর ব্যাকুল হয়ে পড়ে। সবকিছু ছেড়ে আসা সুপ্রিয়াকে ফিরিয়ে দিয়ে বিব্ধস্ত হয়ে আনন্দের কাছে আসার চেষ্টায় থাকে। কিন্তু ওদিকে আনন্দের মন যে বড্ড বেশি অশান্ত হয়ে আছে। এই হেরম্বই তাকে বুঝিয়েছিল ভালোবাসা চিরদিন থাকে না, মরে যায়।আর আনন্দ আর চিত্তকে শান্ত করতেই হেরম্বকে দেখিয়ে দেয় পরীনৃত্য রূপে মন আর প্রাণের নিশ্চল-স্থিরতা! মন পাখি আর কোথাও ছুটবে নাহ।
উপরোক্ত সকল চরিত্রের দেখা অতি সহজেই মেলে, আমাদেরই আশে-পাশে। এই মনের এত্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব ! মন নিজের খেয়াল খুশি মতো সব ভেবে নিয়ে আপন জগৎ বানিয়ে বসে থাকে, ভালো না লাগলে ভিন্ন জগৎ। ব্যাপারটা এমন যে, ধরুন সামনে ইন্দুর ক্রাশ ছেলেটি বসে আছে।ইন্দুর পাশেই বিন্দু বসে আছে ।ছেলেটি হাসলো বিন্দুকে দেখে আর ওদিকে ইন্দু ধরে নিলো ক্রাশ তাকে দেখেই হেসেছে; সুতরাং সে মজেছে :)
এই যে হেরম্ব এত ছুটলো, এত চেষ্টা করলো। আদৌ কি শান্তি পূর্ণ নীড় সে পেয়েছে। এত্ত বিশ্লেষণ! আগেই ভালোবাসাকে মৃত মনে করে দাফন করে, দার্শনিকের ভান ধরে কি মিলেছে শেষে?কি দরকার বাপু জীবনে এত দর্শনশাস্ত্র এনে? এই সুন্দর জীবনটা একটু ধৈর্য্য ধরে উপভোগ করলে হয় না? এত বিবাগী হওয়ার কারণ তো দেখি নাহ!
এই ব্যাটা হেরম্বের জ্বালায় আমি পুরাই অতিষ্ঠ ছিলাম। আহা, পজিটিভিটি তো লাগবে নাকি🙄 এমন কড়া মনস্তাত্ত্বিক বই!! সুন্দর ছিল, ভালো ছিল সবই। কিন্তু ঐ যে জীবন সুন্দর, এত ভেজালের কি আছে????বইটা পড়তে গিয়ে এজন্য অনেক বিরক্ত হইছি। মেলা কষ্ট হইছে শ্যাষ করতে :(
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ক্লান্তিহীন ছদ্ম-দার্শনিক বকবক, নাকি অপদার্থ নায়কের হাবভাব আর চালচলন— কোনটা বেশি বিরক্তিকর লাগলো জানি না। "শেষের কবিতা"-র কথা মনে পড়ে গেলো। সেই একইরকম অকর্মণ্য বুকনিবাজ "লাভার বয়" পুরুষ চরিত্র। সেই একইরকম প্রেমের মহিমা কীর্তন (সরি, কীর্তন নয়, হরিবোল সংকীর্তন!)। সেই একইরকম অসহ্য ন্যাকামি। পড়া শেষ হয়েছে, বাঁচা গেছে!
খুব বেশি মানিক পড়িনি। পাঠকজীবনে এ কলঙ্ক বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি বহুদিন হলো। ভাবলাম এবার সমাপ্তি টানি! মানুষ মানিক নিয়ে গল্প জুড়লে আমি ভাবি সত্যজিতের কথা বলছে বোধয়। তা ডাকনাম বিড়ম্বনা একদিন মহা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিলো যখন বিশেষ করে দেখা গেলো 'পুতুলনাচের ইতিকথা' টাই এখনো মাথার বাইরে অথচ বন্দ্যোপাধ্যায় সাহেব শেলফে বেশ মোটাসোটা জায়গা দখল করে বসে আছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। ৩ বছর আগে 'জননী' পরেছিলাম তা মনে বেশ দাগ কেটেছিল। সে ভরসায় প্রথমে 'দিবারাত্রির কাব্য' খুলে বসলাম (আসলে শুলাম)। কিন্তু নাহ, এ যেন অন্যরকম। সম্ভবত মানিকবাবুর এক্সপেরিমেন্টাল লেখার একটা এ উপন্যাস যার যোগ্য আমি এখনো আমার মনকে করতে পারিনি। আরও কিছু সময় যাক, আবার পড়তে হবে। মনকে প্রাপ্তবয়স্ক করে নেই!
পাঠক জীবনে এই আমার প্রথম মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। উপন্যাস হিসেবে দিবারাত্রির কাব্যের সার্থকতা খন্ডানোর সাহস আমার নেই। সেই স্পর্ধা নিজগুণে কালের দরিয়ায় নিমজ্জিত রইল। তবে কিনা মাত্র একুশ বছর বয়সে কেবল ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে এমন উপন্যাস লেখার চেষ্টাকে আমি কুর্নিশ জানাই। মানিক বাবুর লেখনী অসম্ভব সুন্দর, তার গদ্য ততোধিক স্বচ্ছ। তবে কিনা, মাঝে মধ্যেই দর্শন আর অতীব অলংকারের বহরে প্রাণ হাপিয়ে ওঠে।
হেরম্বের সকল কিছু নিয়ে বারংবার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, এবং জীবনের সরল গতিবিধির পথে দার্শনিক ভাবনার কাঁটাতার জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা একাধারে ভীষণ আধুনিক। কিন্তু তার মূল চিন্তাধারার শোচনীয় অসূয়া নায়ক হিসেবে তাকে করে তোলে ভীষন ভাবে ত্রুটিপূর্ণ। এবং এহেন হেরম্বচরিত্রের সাহিত্যিক গুন একপাশে সরিয়ে রাখলে, পাঠকের কাছে পড়ে থাকে একরাশ বিরক্তি। হয়তো এখানেই উপন্যাসের সার্থকতা। আদতে দেখা গেলে, হেরম্ব, সুপ্রিয়া, আনন্দ প্রভৃতি সকলেই ভালোবাসার এক অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রবৃত্তির রূপক মাত্র। এরা চরিত্র হিসেবে লোপ পায় প্রতি পাতায়। পরতে পরতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এদের প্রেম, ঈর্ষা এবং করুন হেরে যাওয়া।
উপন্যাস জুড়ে কিছু বাক্য ও অনুচ্ছেদ, পুরোনোপন্থী এবং আজকের যুগের নিরিখে নারীবিদ্বেষী। নারী চরিত্রদের চারিত্রিক ও বাহ্যিক গুণাগুণের প্রতি একটা সমালোচনারুপি আতশ কাঁচ ধরার প্রবণতা পড়তে বসলে চোখে লাগে। সেখানে হেরম্বর চিন্তাধারার প্রতি বিরক্তি বাড়ে বই কমে না। উপন্যাসের পুরোটা জুড়েই কাব্যিক সংলাপ। শব্দচয়নে প্রচ্ছন্ন মুন্সিয়ানার পরিচয়। এই যা বাঁচোয়া। এই গল্প তাই দিনের শেষে এক কাপুরুষ, একরোখা, নিজেকে 'holier than thou' ভাবা মানুষের পরাজয়ের কাহিনী। বিয়োগান্তক এক পরিণতি আকড়ে ধরে লেখা এক উপন্যাসরুপি দীর্ঘশ্বাস।
বনফুল কেবল পাঠকের মৃত্যু কল্পনা করেছিলেন। তবে কখনো কখনো পাঠকের পুনর্জন্মও হয়। দিবারাত্রির কাব্য একসময় আলস্যে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। ১২ বছর পর এখন মনে হচ্ছে, ‘পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম’। মানুষের মনের আগাপাশতলা কাটাছেঁড়া মানিক তাঁর অনেক বইতেই করেছেন, কিন্তু দিবারাত্রির কাব্যের মতো কোথাও নয়। যা কিছু অপ্রকাশ্য, যা কিছু অবর্ণনীয়, তার সবই যেন বইয়ের প্রতিটি শব্দে শব্দে বিমূর্ত। বইটার নির্মোহ বিশ্ল��ষণ করা আমার সাধ্যে নেই, সেটা করা উচিত বলেও মনে হয় না। এটা তো আসলে বিশ্লেষণের নয়, শুধুই উপলব্ধির। আরেকটু খোলাসা করে বললে আত্মজিজ্ঞাসার, মনের কষ্টিপাথরে অনুভূতিগুলো যাচাই করে দেখার।
কাব্য পড়ার শখ মিইট্যা গেছে। এত বিখ্যাত বই। অথচ পড়ে আনন্দ তো দূরে থাকুক উল্টো বিরক্তির শেষ সীমায় ছিলাম ।পাঠক হিসেবে আমার রুচিবোধ সম্ভবত দিনকে দিন বিনষ্ট হওয়ার পথে!
"আর্থিক পরাধীনতা স্বীকার করার সাহস যে মেয়ের নেই তাকে কেউ ভালবাসে না।" "মেয়েরা কখনো কবি হয়না।পৌরুষ ও কবিত্ব একধর্মী।নিখিল মানবতার মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে স্তব্ধ হৃদয়ের একদা রণিত প্রতিধ্বনিকে সে কখনো খুঁজে বেরাতে পারবে না।জগতে তার দ্বিতীয় প্রতিরূপ নেই,সে বৃহতের অংশ নয়;সম্পূর্ণ এবং ক্ষুদ্র।যে বংশপ্রবাহ মানবতার রূপ,সে তা বোঝে না।অতীত ভবিষ্যতের ভারে তার জীবন পীড়িত নয়,সার্থক ও নয়।" ফালতু!!!
বাংলায় অনেক রোমান্টিক গল্প আছে তবে এমন মনস্তাত্বিক লেখা পড়িনি।মাথা ঘুরে গেছে তবে উপভোগ্য। এটি তিনভাগে বিভক্ত – প্রথম ভাগ: দিনের কবিতা, দ্বিতীয় ভাগ: রাতের কবিতা এবং তৃতীয় ভাগ: দিবা-রাত্রির কাব্য। প্রথম ভাগে আছে হেরম্ব আর সুপ্রিয়ার কথিত অবাধ প্রেমের ইশারা, দ্বিতীয় ভাগে আছে মনোজটিলতার আরেক নির্যাস – হেরম্বের বত্রিশ বছর বয়সপ্রাপ্তির পর মালতীর সাথে দেখা হয়, তখন মালতীর ঘরে আছে আনন্দ – সে তো ভালোবাসার এক অবাধ জমিন বিছিয়ে রেখেছে। তৃতীয় ভাগে হেরম্বের সাথে সুপ্রিয়া, মালতী, সর্বোপরি আনন্দ’র অদ্ভুত প্রেম। এখানেই মানসিক দ্বন্দ্বের এক চমৎকার আবহ তৈরি হয়।শেষের নাটকীয়তা আসলে চমক দেয়ার মতো। হেরম্বকে এক রহস্যময় চরিত্র হিসেবেই রেখে দেয়া হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
সেই ২০১৭ সালে বইটা পড়ে বেশ ভালো লেগেছিল, কিন্তু এখন বইটা পড়ে বইটাকে ২ তারার বেশি দিতে পারলাম না, তাও দিলাম শুধুমাত্র মানিকবাবুর রাইটিং এর জন্য। হেরম্বের মতো বিরক্তিকর কারেক্টার আর একটাও নাই।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম উপন্যাস দিবারাত্রির কাব্য। সেই ১৯৩৯ সালে লেখা উপন্যাসখানায় তিনটি অংশ রয়েছে - রাতের কবিতা, দিনের কবিতা এবং দিবা রাত্রির কাব্য।
বত্রিশ বছর বয়সী হেরম্বকে নিয়ে কাহিনির আবির্ভাব যে কিনা পেশায় ইংরেজির শিক্ষক। স্ত্রীর নাম উমা যে কিনা সুইসাইড করে গলায় দড়ি দিয়ে; যদিও সুইসাইডের কারণ পুরো বইয়ের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি৷ এমন কি তাদের একমাত্র কন্যার কথাও উল্লেখ করা স্বত্তেও মেয়ের প্রতিও অবহেলা লক্ষনীয় হয়েছে গল্পের শুরুতেই।
উপন্যাসের প্রথম অংশ শুরু হয় হেরম্ব আর সুপ্রিয়ার আখ্যান দিয়ে। যুবক বয়সে হেরম্বের প্রণয়ীনি ছিলো সুপ্রিয়া৷ কিন্তু সুপ্রিয়ার সাথে সে ঘর বাধেনি; বরং নিজেই বুঝিয়ে শুনিয়ে সুপ্রিয়াকে পুলিশ দারোগা অশোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। পাঁচ বছর পর রুপাইপুরা গ্রামে সুপ্রিয়া ও তার স্বামীর সাথে দেখা করতে আসে সে। তখনই তার জন্য পুষে রাখা ভালোবাসায় আবার সিক্ত হয়ে হেরম্বকে নিয়ে পালিয়ে যাবার প্রস্তাব দেয় সুপ্রিয়া। কিন্তু এবারও সুপ্রিয়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে হেরম্ব চলে যায় পুরীতে৷
উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশে দেখা যায় পুরীর সমুদ্র পারে দীর্ঘ বারো বছর পর হুট করে দেখা হয় মাস্টারমশাই অনাথের সাথে৷ এই অনাথই ছিলো প্রতিবেশী মালতীর স্বামী। ষোল বছর বয়সে মালতী অনাথের হাত ধরে পালিয়ে এসেছিলো৷ অনাথ হেরম্বকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়; দেখা হয় মালতীর সাথে৷ সেখানে গিয়ে হেরম্ব বুঝতে পারে প্রেম করে বিয়ে করলেও তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিলো না৷ সেখানেই দেখা হয় অনাথের তেরো বছরের কিশোরী কন্যা আনন্দের সাথে যাকে দেখে হেরম্বর মনে রোমান্টিকতা জাগে৷
উপন্যাসের শেষ অংশে হেরম্বকে দ্বিধা দ্বন্দে ভোগা এক মানুষ হিসেবে পাই। সুপ্রিয়া নাকি আনন্দ কাকে নিয়ে বাকি জীবন কাটাবে তা নিয়ে এক মনস্ত্বাত্তিক দ্বন্দ। আর এই দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে যখন এক সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ঠিক তখনি কাহিনী এক ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
পুরোই অসুখী আর বিষাদে ভরা সব চরিত্র নিয়ে এক সূত্রে মালা গেঁথেছেন মানিক বাবু এই উপন্যাসে। লেখনশৈলী, চরিত্রের গঠন, কাহিনী সব মিলিয়ে বেশ ভালো একটা উপন্যাস। তবে হেরম্বের এই খামখেয়ালীপনা, নারীদের মন নিয়ে খেলা, সাংসারিক অশান্তির দরুন স্ত্রীর আত্মহনন এই ব্যাপারগুলি দেখে বিরক্তির উদ্রেক হয়েছে পুরো উপন্যাসে। হয়তো মানিক বাবু অমন করেই পুরো কাহিনীতে হেরম্বকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
এমন পরিনৃত্য দেখতে চাইনি। কিন্তু প্রেমিক যদি হয় হেরম্ব, তবে নৃত্য এমনই হবে বটে।
কিছু গল্প লেখাই হয় অপ্রধান চরিত্রগুলোর জন্য। তারা নামে অপ্রধান, কিন্তু প্রধান চরিত্রকে ছাপিয়ে তারাই হয়ে ওঠে প্রধান। এমন গল্প ভালো লাগানো কষ্ট, লেখা আরো বেশি কষ্ট।
সবচেয়ে উপভোগ করেছি হেরম্ব আর সুপ্রীয়ার কথোপকথন। ডায়ালগে সাবটেক্সটের ব্যবহারের আদর্শ উদাহরণ এই বই। সরাসরি প্রসঙ্গ উল্লেখ না করেও যে সাবটেক্সটে মূল টপিকের প্রতি এমন জোরালো আবেদন রাখা যায় তা মানিকের কাছ থেকে শেখা যায়। আবার কোনো কথা না বলেও যে অনেক কথাই বলা যায়, তাও বেশ ভালোই দেখিয়েছেন তিনি।
নীরবতার মাঝে যে গভীর শব্দ আছে, তার জোর যে কখনো কখনো সরবতার চেয়েও জোরালো হয়, তা কয়জন জানে? আর মানেই না কয়জন?
'শেষের কবিতা'র প্রভাব অনেকটা সুস্পষ্ট। অমিত যেখানে প্রাণোচ্ছল, ভাবপূর্ণ। হেরম্ব সেখানে জীবনবোধে ততোধিক ন্যুব্জ, গুরুগম্ভীর। তাদের প্রকাশ ভিন্নমাত্রিক হলেও উচ্ছ্বাসে এতটুকু কমতি নেই। একুশ বছর বয়সী মানিক-এর জীবনদর্শন, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ভাবনার উদ্রেক জাগায় বইকি।
মানিকের male lead গুলোর প্রত্যেকে একেকটা massive d*ckhead. কুবের, শশি, রাজকুমার, সদানন্দ, হেরম্ব ー প্রত্যেকের জন্য এই একটা বিশেষণ ー গালি হলে হোক, খাটে বেশ। D*ckhead. মাথার বদলে ওরা ওটা দিয়েই নিজেদের পরিচালনা করে বেশি। তবে যা-ই হোক, এদের আর্ক বা জার্নি এক্সপিরিয়েন্স করতে মন্দ লাগে না। চরিত্র যেমন খুশি হতে পারে, লুচ্চা কুত্তা কামিনা হারামি ー যতোটা নিচ ভাবা যায়, তাতে লেখকের সৃজন কদর্য হয়ে যায় না অবশ্যই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেখকের ইন্টেনশনই থাকে অমন একটা হারামিকে কেন্দ্র করে কাহিনী রচনার।
হেরম্বের জীবনে দুটি নারী চরিত্রের টানটানি নিয়ে কাহিনী, দিন আর রাত হিসেবে যাদের কনট্রাস্ট। সুপ্রিয়া তাকে অপরিণত বয়সে ভালোবাসতো, পাঁচ বছর পেরিয়েও সেই ভালোবাসার তীব্রতা, বা হেরম্বের দৃষ্টিতে 'আদিখ্যেতা' কমতে দেখা যায় না। হেরম্ব সুপ্রিয়াকে এখনো অপরিণীতা হিসেবে দেখে অগ্ৰাহ্য করে এবং তার বালসুলভ আচরণে নারাজ হয়। সুপ্রিয়া এতে আঘাত পায়, কিন্তু হাল ছাড়ে না।
আনন্দ অন্যদিকে নিজেই অল্পবয়েসী, হেরম্বের প্রায় মেয়ের বয়েসী (ব্যাপারটা creepy নয় কি খানিকটা?)। সে মালতীর মেয়ে। সেই মালতীর যার প্রেমে কিশোর হেরম্ব একদিন হাবুডুবু খেতো। কিন্তু মালতী বিচ্ছিরিভাবে বদলে গেছে, এতে হেরম্ব নিরাশ হলেও ー আনন্দের মধ্যে সে পুরনো প্রেম আর পুরনো যৌবনের নবজাগরণ খুঁজে পায়। এমনকি আনন্দের বালসুলভ আচরণে সে মুগ্ধ হয় ー যে বাচ্চামো সুপ্রিয়ার মধ্যে দেখে সে বিরক্ত হয়েছিল। তৃতীয় পর্বে সুপ্রিয়া আর আনন্দ প্রতিযোগীতায় জড়ায়। দিন আর রাতের প্রতিযোগীতা।
উপন্যাসটা এভাবে বিভিন্ন প্যারালাল টানে চরিত্রদের মধ্যে। সুপ্রিয়া আর আনন্দের প্যারালাল, হেরম্ব আর মাস্টারমশায়ের, আনন্দ আর তার মা মালতীর, হেরম্ব আর অশোকের। মনস্তাত্তিক বিচার করতে আমি পারি না, কিন্তু স্ট্রাকচার, কাহিনী এগোনোর কলাকৌশল আর চরিত্রদের কন্ট্রাস্টের মধ্যে দিয়ে এই উপন্যাস বিশ্লেষণের নানান আঙ্গিক খুঁজে পাওয়া যাবে।
বইয়ের যে অংশটা আমার স্মরণীয় হয়ে থাকবে (এ বইয়ে মনে রাখার মতো ঢের উপাদান আছে), সেটা হলো এক আসামির সাথে হেরম্বের বার্তালাপ। আসামি নিজের বৌকে অবৈধ প্রণয়ীর সাথে আবিষ্কার করে রাগের মাথায় সে বৌকে কুপিয়ে খুন করে। হেরম্ব ঘটানাটা বিশ্লেষণ করে বলে, লোকটি বৌকে আদৌ ভালোবাসতো না। কারণ বৌকে পরকিয়ারত অবস্থায় মৃত্যু দিয়ে সে নিজের বৌকে প্রতারক হিসেবে চিরস্থায়ী করে দিল। পরিবর্তনের কোনো অবসর নেই কারণ মানুষটা মারা গেছে, চিরকালের জন্য প্রতারকের পরিচয় নিয়ে।
মানিকের ঐ চরিত্রগুলোর মধ্যে হেরম্বকে সরদার বানানো যায় অনায়াসে। তার বৌ গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে, এবং স্পষ্টতই হেরম্বেরই দোষে, এবং এটা সে জানে ー তবু হারামজাদাটার ভেতর সূচাগ্ৰ অনুতাপ জ্বলে না। মনে হয় না এন্ডিংয়ের ঘটনাটার পরেও হারামজাদা কিছুমাত্র অনুতপ্ত হবে।
কিন্তু কোনো চরিত্র ওরকম d*ckhead হলেই যে গল্পসমেত সমগ্র বইয়ের কৃতিত্ব কমে যায় না ー তা গুডরিডসের ভাই-বোনেদের কে বোঝাবে? আমি বোঝাবো না। আমার ঠেকা পড়েনি।
এটা খেয়াল হলো ー মানিক বাবুর উপন্যাসগুলো কিন্তু একেকটা potential red flag indicator. কেউ যদি বলে তাঁর লেখনির জন্য বা মার্ক্সিজম টার্ক্সিজমের জন্য এসব উপন্যাস ভাল্লাগে, that's okay... কিন্তু কেউ কস্মিনকালেও বলতে পারবে না মানিকের চরিত্রগুলো বিভূতিভূষণ বা তারাশঙ্করের মতো তার "ভালো লাগে"। খবরদার না🚩। ওটা নির্ঘাত একটা waving red flag🚩🚩🚩
এক কথায় জাস্ট মেজাজ খারাপ হয়েছে। খুবই মেজাজ খারাপ হয়েছে এটা পড়ে। বাস্তবিক পক্ষে এমন হলেও হতে পারে। বাট কিচ্ছু করার নাই। প্রচন্ড মাথা গরম হয়েছে এটা পড়ার পর।
You can't approach any of Manik Bandhopadhyay's novels without intrigue, let alone if it was one of the more acclaimed ones, like this.
However, the wafer-thinness of the plot makes it painstakingly obvious that it's his first venture. The storytelling saves some of the grace, a generic plot involving lust triangles (yep) rarely gets more introspective, and while you're unsure if it is a critique of patriarchy because of the rather unapologetic temperaments of our male protagonist, the female characters have their own flesh and blood. I found some of the instances where the male insecurities kicked in, rather humorous, but it's kept rather subtle than the overall tonality of the novel.
The way the story ends, however, caught me off guard. That was the kind of substance I was looking for since the beginning, perhaps not as provocative, but one that leaves some leftovers for thought.
Got me out of my reading slump, so brownie points for that. But it is not a love story, please.
"দিবারাত্রির কাব্য" একটা মনস্তাত্ত্বিক, বিশ্লেষণধর্মী উপন্যাস। লেখাটা ভাষায়, শব্দবিন্যাসে একটু জটিল। মাঝে মাঝে কিছু অংশ এমন যে দু-তিনবার পড়ে বুঝতে হয়।
এর আগে হাইস্কুলে পাঠ্যভুক্ত ছোটগল্পগুলি, আর "অতসীমামী" বইটি ছাড়া মানিকের কোনো লেখা পড়ি নি। "পদ্মা নদীর মাঝি" want to read লিস্টে আছে দশ বছর বয়স থেকে। "একটু বড় হয়ে পড়ব" বলে রেখে দিয়েছিলাম। এখনও পড়ি নি। পড়ব।
"দিবারাত্রির কাব্য" পড়তে পড়তে অবাক হয়েছি, বিরক্ত হয়েছি। অবাক হয়েছি কারণ: এ যেন মনকে কাটাছেঁড়া করে ভেতরের কিছু অনুভূতি, কিছু উপলব্ধিকে ফুটিয়ে দেখানো, ভাষায় তার বর্ণনা করা। বিরক্ত হয়েছি এই জাতীয় কিছু কথা দেখে: "...মেয়েরা কখনো কবি হয়না। পৌরুষ ও কবিত্ব একধর্মী। নিখিল মানবতার মধ্যে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে স্তব্ধ হৃদয়ের একদা রণিত প্রতিধ্বনিকে সে কখনো খুঁজে বেড়াতে পারবে না। জগতে তার দ্বিতীয় প্রতিরূপ নেই, সে বৃহতের অংশ নয়; সম্পূর্ণ এবং ক্ষুদ্র। যে বংশপ্রবাহ মানবতার রূপ, সে তা বোঝে না। অতীত ভবিষ্যতের ভারে তার জীবন পীড়িত নয়, সার্থকও নয়....."
এমনিতে এর গল্পও যে খুব ভালো লেগেছিল তা নয়, তবে সেসব নিয়ে অভিযোগ করব না। কারণ, লেখক নিজেই বলেছেন: “দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি। দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,—তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয়, উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নতুন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতকগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের projection—মানুষের এক-এক টুকরো মানসিক অংশ।”
লেখকের কথার পর গল্প ভালোলাগা মন্দলাগার বিচারে যাওয়া আর সাজে না।
ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে যাচ্ছিলাম। তিনভাগে বিভক্ত উপন্যাসটির ভাগগুলির শুরুতে থাকা কবিতা তিনটিকে বুঝতে পারি নি। আরও একটু বড় হলে বুঝব বোধহয়!
একটা কথা সারাক্ষণই মনে হচ্ছে: আমার একুশে আমি কি এমন লিখতে পারব? মনকে এমন কাটাছেঁড়া করে দেখানো লেখা?
একটি উপন্যাস আমার ভালো না লাগার পরেও আমি সেটাকে রেকমেন্ড করছি। কেনো?
আসেন, হিরো থেকে আলাপ শুরু করি। এরিস্টটল বহু বছর আগে হিরোইজমের কিছু সংজ্ঞা দিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। কালের পরিক্রমায় সবকিছুর পরিবর্তন হলেও সেই নায়কের বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে কোন দ্বিমত তৈরি হয় নি। শক্তিশালী, বিচক্ষণ, নৈতিক গুণাবলিতে একেবারে সেরা,আদর্শ মানবসন্তানই আমাদের চোখে হিরো।ব্যক্তিগত অথবা সামাজিক সমস্যা নিয়ে তারা লড়াই করে সব মিটিয়ে ফেলবে। এই ধারণাই যে কেবল হিরো হিরো একটা ভাব দেয়, সেটা থেকে কি আমরা বের হইনি? হয়েছি,বার্নার্ড শ এর নাটকে এমন হিরো আমরা দেখেছি, বর্তমানে "এনিমেল" সিনেমা বলুন বা বাংলাদে���ী সমসাময়িক কিছু সিনেমা বলুন, খলনায়কের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা, "আলফা মেল" দের নায়ক হিসেবে আমরা মেনে নিয়েছি।
তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস "দিবারাত্রির কাব্যে" আমাদের নায়ক মহাশয় গতানুগতিক হিরো কিংবা ভিলেন -কোনো ধরণের বৈশিষ্ট্যই নিজের মধ্যে ধারণ করে না। তাকে আপনি সহজে বলতে পারেন, গতানুগতিক ধারার সাইড ক্যারেক্টার,আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে উপন্যাসটি একজন প্লেবয় বা এবসার্ড চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে এগিয়ে চলে। যেহেতু একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্র তাই আমাদের তাকেই হিরো হিসেবে মেনে নিতে হয়।এই জায়গায় মানিকবাবু, দ্বিতীয় কোনো হিরোও আপনার সামনে প্রকাশ না করে, হেরম্বকেই উপন্যাসের হিরো ভাবতে আপনাকে বাধ্য করেছেন।আপনার মধ্যে হিরো সম্পর্কে চরম বিরক্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন।উপন্যাসের অন্য চরিত্র যেমন সুপ্রয়ার স্বামী বা অনাথকে তিনি সময় দেন নি সম্ভবত এই কারণেই।
তো যেটা বলছিলাম, এবসার্ড ক্যারেক্টার! বাংলা সাহিত্যে এবসার্ডিসম বা অস্তিত্ববাদ নিয়ে আর কোনো ক্লাসিকাল উপন্যাস আছে কিনা আমার জানা নেই।এবসার্ডিসম নিয়ে যারা হালকা পাতলা ধারণা রাখেন, তারা যানেন এইসব চরিত্রের মাঝে থাকা ধোয়াশাপূর্ণ জায়গা গুলো কেমন। এবসার্ডিজম বা অস্তিত্ত্ববাদের মূল কনসেপ্টটাই হচ্ছে জীবন এবং জগতের অর্থহীনতা,আমাদের হেরম্ব এই অর্থহীনতা নিয়েই বার বার নানা উক্তি করে, সুখকে শুটকিমাছের সাথে সে তুলনা করে। প্রেম ভালোবাসা যে আসলে দুই দিনের জিনিস, এটাও সে বলে, আর আমরা পড়তে গিয়ে রেগে যাই।তবে এটার যে তত্ত্ব আছে, সেটাকে কিন্তু তাই বলে আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করে এড়িয়ে যেতে পারি না। আবার ফ্রয়েডীয় ধারার যে প্রেম, সেটা নিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগ্রহ ছিলো বলেই বোঝা যায়। ওনার "পদ্মানদীর মাঝি" উপন্যাসে কুবের -কপিলার প্রেম আমার মোটেও ভালো লাগেনি।এই নিয়ে একবার লিখেছিলাম,
তখন কে যেনো আমাকে তখন বলেছিলো, ভাই এটা ফ্রয়েডীয় প্রেম। আপনার মনে হয় ধারণা নেই সে বিষয়ে। আসলেই ছিলো না, এখন আছে। তারপরেও বলবো,কুবের-কপিলা বলেন বা হেরম্ব-আনন্দ বলেন কারো প্রেমই আমার ভালো লাগে নাই।তবে তাতে করে এই তত্ত্বকে আমি অস্বীকার করতে পারি না। যে কোন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতিই যে স্বাভাবিকভাবে প্রাণীজগতের সকল প্রাণীরই একটা আকর্ষণ থাকে, সেই তত্ত্বটা এখন আমি জানি। বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত এ জিনিস মেটানো যাবে না। এইজন্যই এই উপন্যাস আমি রেকমেন্ড করছি সবাইকে,এখানে সবকিছু বাস্তব!
উপন্যাসের শুরুর অংশ পড়ে আপনার অনেক ভালো লাগবে, হেরম্বকেই মনে হবে সেই অধরা প্রেমিক যাকে সুপ্রিয়ারা পায় না।আপনি দু একবার দীর্ঘশ্বাসও ফেলবেন তবে দ্বিতীয় অংশে আপনি বুঝতে পারবেন হেরম্বের মন!বড়ই বাস্তব ব্যাপার স্যাপার। এরপর আপনার আর হিরোকে ভালো লাগবে না। আবার ভালো লাগতেও পারে।
এবারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক, উপন্যাসটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একেবারে শুরুর দিকের লেখা, ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, এই উপন্যাস নাকি রূপক অর্থে লেখা। আপনি সাদা চোখে সেই রূপক খুঁজে পাবেন না, আমিও পড়তে গিয়ে অনেক করে ভাবছিলাম, রূপক টা কোথায়! পরে জানলাম, খোদ সুপ্রিয়া এবং আনন্দই রূপক। যারা পড়েছেন, তারা ভাবতে পারেন, দিনের ঘটনা, রাতের ঘটনা -ঐটাই বোধয়! না,সেটা না।সুপ্রিয়া হেরম্বের কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, সে কি চায়, তার অতীত, বর্তমান সব হেরম্ব জানে। দিনের আলোর মতোই হেরম্বের জন্য সুপ্রিয়াকে পাওয়া সহজ। কিন্তু আনন্দ? আনন্দ রাতের আঁধারের মতোই রহস্যময়। আমাদের যেমন থ্রিলার পড়তে ভালো লাগে, তেমনি ভাবে রহস্যময় মানুষকেও আমাদের কাছে ভালো লাগে। হেরম্বেরও তাই আনন্দকে ভালো লাগে এবং আমাদের হেরম্বের সম্ভবত সব মেয়েকেই ভালো লাগে!
কথা হচ্ছে, এতো অতৃপ্তি এনে দেবার পরেও এই উপন্যাস কিভাবে চিরায়র সাহিত্য হিসেবে আজও টিকে আছে? এতোক্ষণ তত্ত্বালাপ তো করলাম,সেসকল কারণের পাশাপাশি,এই যে উপন্যাস পড়ার পর আমাদের মধ্যে আলাপ ওঠে যে "হেরম্ব কি আসলেই হিরো হবার দাবিদার?"-এই আলোচনাটাই উপন্যাসকে অনেক উর্ধ্বে নিয়ে যায়। আবার কালের যতই বিবর্তন হোক, হেরম্ব আমার আপনার আশেপাশেরই চরিত্র, এরা নিজেও জানে না এরা আসলে কি করছে, কাকে তাদের ভালো লাগছে বা কেনো লাগছে। এরা কেউই হিরো না তবে এদেরকে ঘিরেই দুনিয়া জুড়ে কাহিনি ক্রমাগত ঘটে চলেছে।তাই "দিবারাত্রির কাব্য" আমাদের মধ্যে চিরায়ত সাহিত্য হয়েই দু'হাজার পঁচিশে এসেও টিকে রয়েছে। আরো বহুকাল থাকবে। হেরম্বের মতো এমন সাধারণ একজন হিরোর জন্ম দেয়া লেখকের আজ জন্মদিন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাই তাকে আরেকবার স্মরণ করছি এবং আপনাদের রেকমেন্ড করছি,"দিবারাত্রির কাব্য"।
মানিক বন্দোপাধ্যায় ধ্রুপদী লেখনশৈলীতে বাংলার চিরাচরিত সেটাপে, গ্রামবাংলা এবং শহরে এত সাবলীলভাবে মানুষের কথা লিখেছেন, বাংলা ক্ল্যাসিক পড়ার সুখ এখানেও বিদ্যমান। কিন্তু যে ব্যাপারটা বরাবর অবাক করে আমাকে তাঁর লেখা পড়তে গিয়ে—মানুষে মানুষে সম্পর্কের এমন সব অনালোকিত, অনালোচিত দিক প্রকাশ পায় তাঁর কাহিনীতে, তা হয়তো পুরনোদের মাঝে কেবল তিনিই পারেন।
'দিবারাত্রির কাব্য'-তে অসম বয়সী মানুষের মাঝে একটা ত্রিভুজ প্রেম কল্পনা করেছেন তিনি। মূল চরিত্র হেরম্ব, আর তাঁর সাথে সম্পৃক্ত দুজন নারী। হেরম্ব কারো প্রতি স্বত্বাধীন নন, বলার মতো সম্পর্ক নেই, তবু বিপরীত স্বভাবের দুই স্রোতের মাঝে হেরম্বের কিছুকাল বয়ে যাবার ছবি এই উপন্যাসে দেখা যায়। সুপ্রিয়া, যার সাথে সংসার হতে পারতো, তার সাথে উপন্যাসের দিবাগাদ, আর স্বাধীনচেতা আনন্দ, সংজ্ঞার বাইরে একটা জীবন গড়ার ইচ্ছে যার, উপন্যাসের তার 'রাতের কবিতা'। দুই অধ্যায়ে, দুই আলোতে হেরম্বের প্রায় ভিন্ন প্রতিফলন দেখার পর, সম্মিলিত তৃতীয় ভাগ 'দিবারাত্রির কাব্য'-তে দুজনের চাওয়ার মাঝে নিজের দ্বন্দ্বাকীর্ণ অবস্থান, এক সিদ্ধান্তহীন সমাপ্তিতে টেনে নিয়ে যায় গল্পকে।
মানিককে যতদূর পড়া হচ্ছে, মনে হচ্ছে কেবল পড়ে এঁকে বোঝা মুশকিল। তাঁর সাথে চুপচাপ বসে সময় পার করতে হবে, ভাবতে হবে, আরো পড়ার মাঝে ফিরতে হবে কখনো-সখনো। তবে এইটুক বলা চলে, মানিক পড়ার অভিজ্ঞতা আগ্রহজনক।
দিবারাত্রির কাব্য দিয়ে আমার মানিক পাঠ শুরু। শুরুতেই যেন চমক,গতানুগতিক ধারার প্রেম কাহিনী থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা গল্প পড়লাম। মানুষের সম্পর্কের কত রকমফের হয় তা মানিক বুঝিয়েছেন এই বইয়ে। "সুখ হচ্ছে শুটকি , আমাদের জিব হচ্ছে ছোটলোক"। কত গভীর মর্ম ধারণা করে এ বাক্য,সেটা খুব কম মানুষ বুঝবে।
অসম্ভব ভালো লেখনী,অভিনব প্লট উপন্যাসকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। আমি এর আগে এত গম্ভীর লেখা খুব একটা পড়েনি,যা একটু পড়েছি তাও দীর্ঘ সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে। কিন্তু এই উপন্যাসের বেলায় সব যেন উল্টো,বইটা আমি হাত থেকে রাখতেই ইচ্ছে হচ্ছিল না। প্রায় টানা পড়ে এটা শেষ করেছি,দুর্দান্ত একটা উপন্যাস। ছোট থেকে বইয়ে লেখক পরিচিতি পড়ে আসছিলাম,মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন।আজকে দিবারাত্রির কাব্য পড়ে সেটার প্রমাণ পেলাম।
এত কম বয়সে এরকম প্রেমের উপন্যাস লেখার সাহস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ই করতে পারেন। এই বই বোঝা অনেক কঠিন, বা হয়তো একটা নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন এর পুরোটা বুঝতে। হেরম্ভের আত্ন বিশ্লেষন গুলো কিরকম যেন মনকে দ্বিধায় ফেলে দেয় । একটা সময়ে এসে হেরম্ভ আসলে কি চায় প্রশ্ন জাগে মনে!! বিশেষ করে সুপ্রিয়ার সাথে সমুদ্রের ধারে বেড়াতে যাওয়ার দিনে।
চিন্তা করা যায় যে এটা লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস! শুধু মাত্র নর-নারীর প্রেমকে উপজীব্য করে এক মাস্টারপিস রচনা করে গেছে লেখক। উপন্যাসের স্টার্টিং একটু স্লো হয় সাধারনত ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের জন্য। কিন্তু দিবারাত্রির কাব্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এইসব গতানুগতিক ফরম্যাটকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। একদম প্রথম প্যারাগ্রাফ থেকেই পাঠক ঘটনাপ্রবাহে বুঁদ হয়ে থাকতে বাধ্য।
ভালো ভালো ইংরেজ কবির বাছা বাছা খারাপ কবিতা পড়ানো জটিল স্বভাবের কলেজ শিক্ষক হেরম্বকে আমার একটুও সহ্য হলোনা। একবার সুপ্রিয়া, একবার মালতী, আবার আনন্দ! সে যে কি চায় আর তার সুখ, দুঃখ যে কিসে তাও আমার বোধগম্য হলোনা! এতো বিখ্যাত বইয়ের এই হাল!