নেলী খালার চিঠি পেয়ে বাবুকে নিয়ে নুলিয়াছড়িতে নেলী খালার নতুন কেনা বাড়িতে দু'মাসের গরমের ছুটি কাটাতে আসলো আবির আর বাবু। পাহাড়, সাগর, সোনার খনি, চোরাকারবারিদের উৎপাত আর রহস্য। সেই সাথে নদীর ওপারে পাহাড়ের ওপরে দেখা গেল ভূতের আনাগোনা। ললি আর টুনি কে সাথে নিয়ে রহস্যের সমাধানের জন্য উঠে পড়ে লাগলো দুই বন্ধু।
Shahriar Kabir (in Bengali: শাহরিয়ার কবির) is a Bangladeshi journalist, filmmaker, human rights activist and author. His books focuses on human rights, communism, fundamentalism, history, juvenile and the Bangladesh war of independence.
বাংলায় লেখা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কিশোর উপন্যাসগুলোর একটি । সেই ক্লাস ফোর-ফাইভে থাকতে প্রথমবার পড়া, এরপর যে কতো অসংখ্যবার পড়া হয়েছে কিন্তু এখনো একটুও পুরানো হয়নি, কখনো হবেও না । গল্পের মূল চরিত্র আবীর আর বাবুর জাহাজের কেবিনের মত চিলেকোঠায় বসে সারাদিন বইয়ের পাতায় আর কল্পনায় পৃথিবীময় অ্যাডভেঞ্চার করা, কোন এক অভিযানে বেরিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা, ছটফট করা... শেষে একদিন তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতেই যেন সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এলো নেলী খালার চিঠি, বয়ে আনলো নুলিয়াছড়ির দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে যাবার ডাক । সেখানে তারা পেল পাহাড়ের গায়ে পুরানো রহস্যময় এক ভুতূড়ে জমিদার বাড়ি, হার্মাদ জলদস্যুর গুপ্তধন আর পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যাওয়া সোনার খনির গুজব; আরো যুক্ত হল জলদস্যুর ভূত, আন্নাকালী পাহাড়ের চূড়ায় গা ছমছমে পোড়ো মন্দির, সন্ধ্যার আলোছায়ায় গাছের গায়ে মড়ার খুলির চিহ্ন আর আধুনিক সোনা চোরাচালানকারীদের আনাগোণা । আবীর-বাবুর একদম স্বপ্নের রঙ্গে রাঙ্গানো অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আর কি লাগে ? ও হ্যা, বন্ধুত্ব হল ঠিক তাদের বয়সীই দুই প্রাণবন্ত রোমাঞ্চপ্রিয় কিশোরী ললি-টুনির সাথে ! সবমিলিয়ে দেশী পটভূমিতে সম্পূর্ণ দেশী কাহিনীর একটি নিখুঁত অনিন্দ্যসুন্দর কিশোর রহস্য-অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসের সমস্ত উপাদানই উপস্থিত, সেই সাথে শাহরিয়ার কবিরের শ্রেষ্ঠ লেখনির নিদর্শন আর আবীর-বাবু-ললি-টুনির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের অবিষ্মরনীয় কিছু কেন্দ্রীয় কিশোরবয়সী চরিত্রের সৃষ্টি । ছোটবেলায় যখন পড়েছিলাম তখন থেকে শুরু করে এখনো বইটা পড়লে বা পড়ার স্মৃতি মনে এলে উদাস হয়ে যাই, চারপাশের এই ইট-পাথরের বিবর্ণ শহরটাকে ছেড়ে আবীর-বাবুদের মত ছুটে যেতে ইচ্ছা করে নির্জন কোন পাহাড়ি এলাকায়, শিহরিত হতে ইচ্ছা করে আধিভৌতিক পরিবেশে পাহাড়ি পথে হার্মাদ গুপ্তধন বা সোনার খনির সন্ধানে আর রহস্যময় স্মাগলারদের সাথে টক্করে । যেকোন বাংলাভাষী পাঠকের জীবনে অন্তত একবার এমন মনোমুগ্ধকর একটি বাংলাদেশি কিশোরোপন্যাস উপভোগ করা উচিত, শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে আমার মত তিরিশোর্ধ হয়ে মনের গহীনে হারিয়ে যাওয়া সেই দুরন্ত রহস্য-রোমাঞ্চপ্রিয় বালকটিকে নতুন করে খুঁজে পাবার জন্যে হলেও ।
তুমুল পাঠকপ্রিয়তার কারণে পরবর্তিতে উপন্যাসটির একটা সিকুয়েল কাহিনীও লিখেছিলেন লেখকঃ পাথারিয়ার খনি রহস্য, পুরোপুরি নুলিয়াছড়ির লেভেলের না হতে পারলেও নিঃসন্দেহে আরেক অতি অসাধারণ কিশোরোপন্যাস সেটিও, এবার সিলেট বিভাগের বড়লেখা-পাথারিয়ার দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আবীর-বাবু-ললি-টুনিদের দুর্ধর্ষ রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার ! আমার মতে নুলিয়াছড়ির পরে শাহরিয়ার কবিরের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ লেখা । আশির দশকের শেষ ও নব্বই দশকের শুরুতে লেখা বাংলা কিশোরসাহিত্যের এই অমূল্য রত্ন দুটো যদি বর্তমান প্রজন্মের পাঠকদের এখনো পড়া না থাকার দূর্ভাগ্য হয়ে থাকে, তাদের আমি সাদর আহ্বান জানাবো চেখে দেখতে, বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা তিন গোয়েন্দার বাইরেও যে একসময় আমাদের দেশে কী অপূর্ব সুখপাঠ্য বিশ্বমানের কিশোর রহস্য-অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লেখা হতো তার কিছুটা স্বাদ গ্রহণের জন্য । একজন আশৈশব-কৈশোর ভক্ত হিসেবে আমার খুবই দূঃখ লাগে যে শাহরিয়ার কবিরের মত একজন শক্তিমান কিশোর ঔপন্যাসিক সেই '৯৯তে লেখালেখি ছেড়ে দিলেন, আর পরবর্তী প্রজন্মরা বঞ্চিত হলো বছর বছর দারুণ সব থ্রিলিং শ্বাসরুদ্ধকর কিশোরোপন্যাস থেকে, গড়পড়তার শিশুতোষ ছেলেমানুষিতে পূর্ণ হাস্যকর কাহিনীর "কিশোরসাহিত্য" নামে পোলাপাইন্যা বইয়ের ভীড়ে যেগুলো ছিল যথার্থই কিশোর-তরুণদের উপযোগী পরিণতমনষ্কের সিরিয়াস সব টপিকের দুর্দান্ত সব কাহিনী !
ইস যদি আরো ছোট থাকতে বইটা পড়তে পারতাম আরো ভাল লাগত। অসাধারণ একটা বই। যে বয়সের পাঠক পাঠিকাদের উদ্দেশ্য করে বইটা লেখা হয়েছে তাদের জন্যে একদম সঠিক। কোন কিছুরই বাড়াবাড়ি নেই(উত্তেজনা বাদে) :) গল্পের প্লট, লেখার ধরণ থেকে শুরু করে চরিত্রগুলো সবগুলোই সমান উপভোগ্য।
নব্বইয়ের দশকে আমরা যারা ছোটবেলা ফেলে এসেছি তারা বেড়ে উঠেছি গোয়েন্দা গল্প ভালবেসে। কৈশোরে কিশোর-রবিন-মুসার মতো গোয়েন্দা হতে চায়নি এমন কোনো ছেলেমেয়ে বাংলাদেশে পাওয়া যাবেনা। সত্যি বলতে কি শৈশব-কৈশোরের স্বপ্নগুলো পৃথিবীর সব দেশেই যে একই ধাচের তার প্রমাণ মেলে জার্মান কিশোর গোয়েন্দা এমিল টিশবাইনকে দেখে। ছোটবেলার এডভেঞ্চার প্রিয় বন্ধু হিসেবে আমরা আরও পেয়েছিলাম হাকার-বিনকে। টোপন আর রাজুর সাথে টি-রেক্সের সন্ধানে বান্দরবনের সাঙু নদীতে পিকনিক করার স্বপ্ন দেখেনি এমন কথা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেনা! বলতে গেলে ছোটবেলার এডভেঞ্চারের ঝুড়িটা কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। বাস্তবে যে অভিযান করার দুঃসাহস হয়ে উঠেনি কিংবা সুযোগ মেলেনি সেইসব অপূর্ণতা ষোল আনায় মিটিয়েছে গল্পের বন্ধুরা।
আজ নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় পড়ে মনে হচ্ছে, ফেলে আসা কৈশোরে কৃতজ্ঞতা জানানোর লিস্টিতে লেখক Shahriar Kabir নামটি যোগ হওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল। আবির-বাবুর সাথে যে এডভেঞ্চারের স্বাদ টিনেজ বয়েসে পেতে পারতাম সেই এডভেঞ্চার করে আসলাম লেইট টুয়েন্টিতে এসে। খুবই আনফেয়ার! আহা, কেউ কেন কৈশোর বয়সে রঙিন ঝকঝকে প্রচ্ছদের এই বইটি আমার হাতে তুলে দেয়নি?!
অনেকটা তিন গোয়েন্দার ফিল পেলাম বইটা পড়ে।চট্টগ্রামের হিল ট্র্যাক্টস আর স্মাগলিং - দুর্দান্ত কম্বিনেশন।আরও আগে পড়তে পারলে ভালো লাগতো তবুও এখনো না পড়ে থাকলে দেরি না করে পড়ে ফেলুন।
অসাধারন টিনএজ এডভেঞ্চার বই। ছোটদের তো ভালো লাগবেই, বড়দেরও ভালো লাগবে।বইটার ভাষার মাঝে একটা মার্জিত ভাব আছে। আমার খুব ভালো লেগেছে গল্পটি। আফসোস একটাই, ছোট কালে পড়ি নি, ছোট কালে পড়লে আরো মজা পেতাম।
আমার সবচেয়ে প্রিয় বাংলা কিশোর উপন্যাস। সেই ১৯৯৬ সালে হটাত 'পাথারিয়ার খনি রহস্য' বইটা বাসায় পাই। তখন নতুন নতুন একটু আধটু গল্পের বই পড়ি আরকি। বইটা পড়ে এত ভালো লাগলো; বুঝলাম ২য় পর্ব আগে পড়ে ফেলেছি। আবিরদের নিয়ে আরেকটা বই আছে ভেবেই আনন্দ লেগেছে। 'নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়' পড়তে বেশী দেরি করিনি। আবির-বাবু-ললি-টুনি-নেলীখালা-জাহেদমামা.... তাদের নিয়ে লেখা এদুটিমাত্র বই এরপর বহুবার পড়েছি। চরিত্রগুলো এত জীবন্ত, এত ভালোবাসাময়..আর এত আদুরে। নুলিয়াছড়ি আর পাথারিয়া এ জায়গাদুটো যেন আমার কৈশোরের স্বপ্নের রাজ্য। বেশী আবেগঘন রিভিউ হয়ে গেল। ২৯ বছর বয়সে এসে ৮ বছরের আমার হয়ে রিভিউ দেয়ার প্রচেষ্টা কিনা!
গুডরিডস,ইন্সটাগ্রাম,সোশাল মিডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি জায়গায় যে কোন কিশোর উপন্যাস বা শিশুতোষ বইয়ের তলায় দেখি,বড় মানুষেরা খুব হা-হুতাশ করে বলছে, "ইশশ,এই বই যদি আরো আগে পড়তাম!" "ঠিক বয়সে পড়লে বোধহয় বইটা আরো ভাল লাগতো" আমি কিন্তু এমন আফসোস করিনা,উল্টো খুশিই হয়ে যাই এই ভেবে যে,ছোটদের বইগুলো আমি বড় হয়ে আবিষ্কার করেছি,করছি! কেন হবো না? এই দম বন্ধ করা বড়বেলায় ছোটদের বইগুলো একেকটা ফাঁকা বড় বড় মাঠ।বাধাহীন ভাবে ছুটে বেড়ানো যায় তাতে!বুক ভরে দম নেয়া যায়! কি সুন্দর সহজ,চমৎকার নিপাট গোছানো গল্প থাকে।পড়া শেষ হলে মনটা ভাল হয়ে যায়।তাই আমি মনে করি,ছোটদের জন্য লেখা হলেও,বইগুলো আমার বড়বেলাতেই বেশি প্রয়োজন। এবার আসি,এই বইটির প্রসংগে। ছোট থাকতে এক্সক্লুসিভলি জাফর ইকবাল স্যারের কিশোর উপন্যাসে বুঁদ হয়ে থাকা আমি আবির ও বাবুর অস্তিত্ব বিষয়ে জানতাম না,শাহরিয়ার কবির নামের একজন লেখক যে অনেক অনেক আগে থেকে এইসব চমৎকার সব বই লিখে গেছেন সে ব্যাপারে আমি জানলাম এই তো সেদিন।আমার মনে হয় আমার মত অনেকেই হয়তো এই বইগুলোর ব্যাপারে জানেননা। আম-কাঁঠালের ছুটির দিনগুলোর কথা মনে আছে তো?প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর বড় একটা ছুটি পেতাম,আব্বা-আম্মার হাত ধরে ঘুরতে যেতাম দূরে কোথাও বা ছুটে চলে যেতাম নানা/দাদা বাড়ি,আদরে-আহ্লাদে-যত্নে-দুষ্টুমিতে ছুটি কেটে যেত সেখানে। আবির আর তার আমেরিকা ফেরত চাচাতো ভাই বাবুর ও এমনই গ্রীষ্মের ছুটি চলছিলো,গ্রীষ্মের অলস দুপুরগুলো ওরা চিলেকোঠায় গড়িমসি করে কাটিয়ে দিচ্ছিলো আর ভাবছিলো,"আহা যদি,এই ছুটির মধ্যে কোনো এডভেঞ্চার করা যেত!" ঠিক এমন সময় এল নেলী খালার চিঠি,তাতে আছে চট্টগ্রাম নুলিয়াছড়িতে তার নতুন বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার নিমন্ত্রণ! ব্যস হয়ে গেল,জমে গেল ছুটিটা! কক্সবাজার-নুলিয়াছড়ি-পাহাড়-সমুদ্র এইসব কিছুর যে সুন্দর দৃশ্যায়ন হয়েছে বইটিতে তা আর কি বলবো!ঝাউবন এর শনশন আওয়াজ যেন পাশের ঘর থেকেই পেলাম,করোনাবন্দী জীবনে বইখানা কি চমৎকার ঘুরিয়ে আনলো কক্সবাজার। নুলিয়াছড়ি যেয়ে আবিরদের নতুন বন্ধু,তাদের এডভেঞ্চার,ঘুড়ে বেড়ানো,সোনার পাহাড়,নেলী খালা,তাঁর বাড়ি,পোষা কুকুর স্ক্যাটরা সব কিছু মিলিয়ে এত wholesome একটা বই! পড়ে এত্ত ভাল লাগলো। :') I am so eager to read more books of this author!
বেশ দেরী করেই পড়া হল বইটা। আফসোস একটাই, যদি কৈশোরে এই চমৎকার বইটা পড়া হত তাহলে হয়তো আরো অনেক অনেক বেশি ভাল লাগত। আমাদের সাহিত্যে এমন অসাধারণ এডভেঞ্চার ধর্মী কিশোর উপন্যাস নেই বললেই চলে।
প্রতিটা বই পড়ারই একটা বয়স থাকে কেননা ঠিক বয়সে না পড়লে বইটার মজাই বোঝা যায় না। কম বয়সে কঠিন কোনো বই পড়লে হয়তো মনে হয় কোনো রূপকথার গল্প যেখানে জীবন ভীষণ কঠিন, দুঃখ-কষ্ট, ঘাত-প্রতিঘাতে ভরপুর আবার বড় বয়সে ছোটদের লেখা পড়লেও ঠিকমতো অনুভব করা যায় না কেননা জীবনকে খুবই সহজভাবে দেখানো হয় সেসব বইয়ে। এই বইটা পড়ে আমার ঠিক এমনটাই মনে হচ্ছে, বেশ দেরি হয়ে গিযেছে বইটা পড়তে। হাইস্কুলে পড়ার সময় যখন আমি তপু, দীপু নাম্বার টু, এমিল ও তার গোযেন্দা বাহিনী পড়েছিলাম সেই সময় বইটা পড়লে আরও অনেক উপভোগ করতে পারতাম। এখনও তো খুব বড় হয়ে যাই নি তাই পুরোপুরি না হলেও বেশ উপভোগ করেছি বইটা।
বইটা মূলত একটা অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিশোর উপন্যাস যেখানে আবির, বাবু, ললি ও টুনিরা দারুণ এক কান্ড করে ফেলে যা পত্রিকার প্রথম পাতায় তাদের ছবি ছাপানোর ব্যবস্থা করে ফেলে। আসলে হয়েছে কি, যখন ট্রেজার আইল্যান্ড জাতীয় অ্যাডভেঞ্চারের বই পড়ে বাবু আর আবিররা কল্পনায নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়াচ্ছিল তখনই তারা গিযে হাজির হয় নেলি খালার বাড়ি নুলিয়াছড়িতে। আর চাইতে না চাইতেই অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগও এসে যায় তাদের, ললি আর টুনিকে নিয়ে তদন্তে বেড়িয়ে পড়ে ওরা, পিছু নেয় ডাকাতদলের গুপ্তধনের, সোনা চোরাকারবারি আর নকল টাকার ব্যবসায়ীদের। আর এ কাজে তারা ছোটরাই ঝাপিয়ে পড়ে কেননা কে না জানে বড়দের কাজই হলো ছোটদের কাজে বাগড়া দেওয়া!
প্লটটা খুব সুন্দর। গুপ্তধন, সোনার খনি, চোরা কারবারি, ছদ্মবেশী সেনা অফিসার, বিপ্লবী সব মিলিযে জমজমাট এক ব্যাপার। আর আবির-বাবু দুই বন্ধু ও ললি-টুনি দুই বোনের সাথে বুদ্ধিমান কুকুর স্ক্যাটরা তো আছেই। মাথার খুলি আঁকা গাছ, সাদা পোশাকের ছদ্মবেশী ভূত, রন পাযে হাঁটা আক্রমণকারী এসব তো উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে বহুগুণ। এক উত্তেজনা ছাড়া আর কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি ছিল না বইটাতে! শেষদিকে একটু তাড়াহুড়ো আর আবির-ললি, বাবু-টুনির মধ্যে একটা রোমান্টিক আবহ আনার চেষ্টা ছাড়া পুরো বইটা ছিল খুবই উপভোগ্য। গুডরিডস সাহেবের বদৌলতে জানতে পারলাম আবির-বাবুরা আরেকটা অভিযানেও অংশ নিয়েছে যা পাথুরিয়ার খনি রহস্য নামে বেড়িয়েছে যেটা পড়ার লোভ সামলাতে পারছি না। শীঘ্রই আবার সাথী হব আবির-বাবুদের!
অনেক দেরিতে হলেও অসাধারণ কিশোর উপন্যাসটি পড়তে পারলাম। বেটার লেট দ্যান নেভার। আমার মত কৈশোর পেরিয়ে এখন বইটা পড়ে অনেকেই যেভাবে হাহাকার করছিল কৈশোরে পড়তে না পারার কারণে বইটার মজা কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে, তাতে পড়ার সময় একটু আতংকেই ছিলাম, আমারও না জানি সেই অবস্থা হয়!
তবে শেষমেশ আর তা হলো না; বেঁচে গেলাম। পুরো মাত্রায় উপভোগ করেছি দুর্দান্ত এই কিশোর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসটা। লেখকের প্রাণবন্ত লেখনীর জাদুতে আবির-বাবু-ললি-টুনিদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারের বনে-বাদারে, পাহাড়ে। যতক্ষণ পড়েছি কৈশোরে ফিরে গিয়েছিলাম ওদের সাথে।
এত ভালো লাগার মাঝেও অল্প খারাপ লাগা যে ছিল না, তা না। প্রথমত, বাচ্চা-কাচ্চাদের জন্য লেখা কিশোর উপন্যাসে আবির-ললির লুতুপুতু প্রেম টাইপ ন্যাকা ন্যাকা কথ��বার্তাগুলো আমার পড়ায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে - ব্যক্তিগতভাবে বাচ্চাদের বইয়ে এমন লেখার পক্ষপাতী নই আমি। আর টুনির আবিরকে 'আপনি' সম্বোধনটা চোখে খুবই লেগেছে। বাংলাদেশে ক্লাশ এইট-নাইনে পড়ুয়া সমবয়সী ছেলে-মেয়ে একে অন্যকে 'আপনি' বলে সম্বোধন করে, এমন কোথাও আমার ২২ বছরের জীবনে দেখিনি।
তবে, ভালো লাগার পরিমাণ এত্ত বেশি যে, ছোটখাট এই অসংগতি দুটো (আমার ব্যক্তিগত অভিমত) পড়ার মজা ও আগ্রহ এক বিন্দু কমাতে পারেনি। সময় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি প্রত্যেকটি পাতা।
খুব পছন্দের লেখক শাহরিয়ার কবির। আমার কৈশোরের খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত কেটেছে লেখকের বইগুলো পড়ে। নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা আর মরু শয়তান বইদুটো আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তবে মাত্র পড়ে শেষ করা এই বইখানিও প্রিয় বইয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি প্রকাশিত এই বইখানি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, ইস! সে সময়ে যদি জন্মাতাম আর কক্সবাজারে ঘুরতে যেতে পারতাম! সে সময়ে কক্সবাজার বোধ হয় একটু বেশিই সুন্দর ছিল!
চমৎকার ভাষায় লেখা কিশোর উপন্যাস। শাহরিয়ার কবিরের কিশোর উপন্যাসগুলো কয়েক প্রজন্মকে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছিল। তার প্রথম দিকে উপন্যাসগুলোতে বাম রাজনীতির প্রভাব লক্ষণীয়। তবে সে প্রভাব বইয়ের পাঠ আর কাহিনীকে প্রভাবিত করেনি। আবির-বাবুর পাশাপাশি ললি-টুনির জুটি এই কাহিনীতে বেড়াতে যায় নুলিয়াছড়িতে নেলী খালার বাংলো বাড়িতে।সেখানে তাদের মোকাবিলা করতে হয় এক সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলের সাথে। এই কাহিনীর ধারাবাহিকতায় শাহরিয়ার কবির পরবর্তীতে রচনা করেন পাথারিয়া খনি রহস্য।
শুরুটা ছিলো চমৎকার। এতোই ভালো লাগছিলো পড়তে যে এই লেখকের আরো কয়েকটি বই পড়ার জন্য তোড়জোড় করছিলাম। শেষে কাহিনি একটু ঝিম মেরে গেছে, চরিত্রের বর্ণনা-আসা-যাওয়াতে একঘেয়েমি লেগেছে। মেজর জাহেদ এবং নেলীখালাকে অনেক ভালো লেগেছে। মজার বই, বাচ্চাদের জন্য বিশেষ করে❤️
রূপলাল লেনের পুরনো বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে আবির। ওর নিজের ঘরটি বাড়িটির চিলেকোঠায়। সে ঘরে বসে সবদিকে দেখা যায়, তাই এই ঘরটি আবিরের খুব প্রিয়। তাই বলে এমন না যে সে চিলেকোঠায় বসে চারিদিক দেখে দেখেই দিন কাটিয়ে দেয়। আবির পড়ালেখায় খুব ভালো। এই তো, ক’দিন আগে ষান্মাসিক পরীক্ষায় বরাবরের মতোই প্রথম হয়েছে ও। তবে পড়ার বইয়ের মধ্যেই সে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে না। পড়ার বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বইও ওর খুব পছন্দ। কখনও হাকলবেরি ফিনের সঙ্গে অভিযানে বেরোয় মনে মনে, কখনও ট্রেজার আইল্যান্ডের জিমের সঙ্গে সমুদ্রে গুপ্তধন শিকারে বেরিয়ে পড়ে। ওর মনে হয়, ইস, নিজের জীবনে যদি এমন একটা রক্ত-টগবগ করা এডভেঞ্চার এসে হাজির হতো! আবিরের কল্পনা এই ছুটিতে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে তা কে জানত! আবিরের চাচাত ভাই বাবু বেড়াতে এসেছে আমেরিকা থেকে। বাবু হলো আবিরের একমাত্র বন্ধু। দুজনের মধ্যে বেজায় মিল-- দুজনেই বই পড়তে ভালোবাসে, এডভেঞ্চারের স্বপ্ন দেখে। একদিন সকালে নাশতার টেবিলে মা বললেন, ‘নেলীর চিঠি এসেছে।’ আবিরের নেলী খালা খুব মজার মানুষ, সবকিছুতে তার খুব উৎসাহ। মা বলেন, নেলী খালা নাকি একের পর এক ‘উদ্ভুট্টি কান্ড’ করে চলেছেন। বিদেশে বড় হয়েছেন, এখন থাকেন কক্সবাজারে। নেলী খালা কখনও ডিম বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন, আবার কখনও সবজির কারবারে লেগে পড়েন! বাবা শুনে হাসেন। এইবার কিন্তু নেলী খালার চিঠি পড়ে বাবা-মা দুজনেই গম্ভীর হয়ে গেলেন। নেলী খালা বার্মা সীমান্তের কাছে নুলিয়াছড়ি নামের প্রত্যন্ত এলাকায় একটি পুরানো জমিদার বাড়ি কিনেছেন। এটাকে সারিয়ে নিয়ে গেস্ট হাউজ করার ইচ্ছে। বাবা-মা দুশ্চিন্তা করলেও আবির ও বাবু তো শুনেই চনমনে। সবচেয়ে দারুণ কথা হলো, নেলী খালা আবিরকে দাওয়াত করেছেন নুলিয়াছড়িতে কিছুদিন বেড়িয়ে যেতে। আবিরের মনে হল, নেলী খালার জলপাই-রঙের চিঠিটা যেন ওকে ভূমধ্যসাগরের কোনো দ্বীপে যাওয়ার ডাক দিয়েছে!
আবির আর বাবু লটবহর গুছিয়ে ট্রেনে করে নুলিয়াছড়ি এসে পৌঁছালো। নেলী খালার কাছে ওদেরই বয়সী দুই বোন ললি আর টুনি বেড়াতে এসেছে। ললির চুলগুলো ববছাঁট করা, চোখে চশমা, মুখটা আদুরে রাশান পুতুলের মতো। আর টুনি মাথার দুদিকে দুটো খোঁপা করেছে, আরেকটু ওপরে হলেই শিং মনে হত!
নেলীখালার কেনা বাড়িটা যেন পাহাড়ের গায়ে একটা দুর্গ। সন্ধ্যার লাল-বেগুনী আলোতে বিশাল পুরানো বাড়িটাকে রহস্যময় মনে হয়। সামনে সারিবাঁধা রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া গাছ। বাড়িতে অনেকগুলো বড় বড় ঘর, জানালা দিয়ে পাহাড় আর সমুদ্র দেখা যায়।
এতো সুন্দর জায়গায় বেড়াতে এসে আবির-বাবু আর ললি-টুনি ভীষণ খুশি। আর নেলী খালা গোপনে আরেকটা কথা বললেন ওদের, এই নুলিয়াছড়িতে কোথাও নাকি সোনার খনি আছে। এখানকার পাহাড়ি নদীর বালিতে সোনার গুঁড়ো পাওয়া যায়। ওরা নেলীখালাকে ঘর ঠিকঠাক করা, বাগান পরিষ্কার করায় সাহায্য করলো। এর মাঝে বুঝতে পারলো, বাড়ির কাজের লোকেরা সবাই একে ভূতের বাড়ি মনে করে। বুড়ো মালী তো বলেই দিলো, এটা নাকি আগে হার্মাদ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল, কত মানুষ খুন করেছে ওরা, তাদের ভূত নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে আশেপাশে!
ওদের পরিচয় হলো বুড়ো নিকুঞ্জ পাকড়াশী, মেজর জাহেদ আর মুৎসুদ্দি সাহেবের সাথে। মুৎসুদ্দি কানে কিচ্ছু শোনেন না, সব কথা চেঁচিয়ে বলেন, তাই নেলী খালা নাম দিয়েছেন চিল্লানোসরাস।
ছেলেমেয়েরা কদিন পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াল, সঙ্গে রইল নেলী খালার গ্রেহাউন্ড কুকুর স্ক্যাটরা। চারপাশে ঝাউ আর সেগুনের বন। ছবির মত সুন্দর সোনাবালি নদী নেমে এসেছে পাহাড় থেকে।
এদিকে নেলী খানার গেস্টহাউজে দুই নতুন ভাড়াটে এসেছে, নাম ফতে আর গোবর্ধন। এই দুজনের কাজকর্ম বেশ সন্দেহজনক মনে হলো আবির ও ওর বন্ধুদের কাছে। নির্জন পাহাড়ে কী করছে ওরা? এই এলাকায় কি সত্যিই লুকানো আছে জলদস্যুর গুপ্তধন? আর আন্নাকালীর পাহাড়ের পোড়ো মন্দিরে কী ঘটছে? গেস্টহাউজে নানারকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। কে যেন নেলীখালাকে ভয় দেখিয়ে এই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে!
ওরা ঠিক করল, এই রহস্য সমাধান করেই ছাড়বে। হার্মাদের ভূত হোক, বা স্মাগলার হোক, কাউকে ভয় করে না ওরা।
আবির ও তার বন্ধুদের এই জমজমাট অভিযানের সঙ্গী হতে পারা কিশোর পাঠক-পাঠিকাদের জন্য অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। বইটি ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য পাঠকের ছেলেবেলাকে রঙিন করেছে।
কিশোর বয়সের নতুন কিছুর প্রতি আগ্রহ, ছুটিতে বেড়াতে গিয়ে রহস্যে জড়িয়ে পড়া, উত্তেজনা,এডভেঞ্চার আর সাথে প্রকৃতির অসাধারণ বর্ণনা। কি সুন্দর। কেন যে আগে পড়া হয়নি বইটা। আরো ছোট বয়সে পড়লে আরো অনেক বেশি ভাল হতো।
বছরের প্রথম পড়া বই হিসেবে একটা কিশোর উপন্যাস মন্দ কি! যত্র তত্র নেলী খালা আর নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় বইয়ের রেফারেন্স পেতে পেতে বছরের শেষ দুটো বইয়ের একটি হিসেবে বইটি উপহার স্বরূপ বাগিয়েছিলাম।
প্রথম প্রথম পড়তে মজাই লাগছিলো আর নেলী খালাকেও মানুষ হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছিল। এরপর কিশোর বয়সি কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর জ্যাঠামি মার্কা সংলাপ পড়তে গিয়ে বিরক্তিতে সেই যে ভ্রুকুঞ্চন হল, বইটা শেষ করেও ভ্রু সোজা হয়েছিল কিনা খেয়াল নেই, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিনা। তবে ঘুমুতে ঘুমুতে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় চিন্তা করছিলাম, নুলিয়াছড়ির মত সুন্দর জায়গায় হেটে হেটে পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত বিশালাকায় সেই চমৎকার বাড়িটিতে যদি চলে যাওয়া যেত!
তারমানে বইটি জায়গার বর্ণনা হিসেবে নিয়ে যাবে স্বপ্ন স্বপ্ন মত পাহাড়ি এলাকায়। নেলি খালার চরিত্রায়ণ সুন্দর। কিশোর উপন্যাস হিসেবে আমার অনেক কেন আছে বইটি নিয়ে। কিশোর চরিত্রগুলোর ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট যেভাবে হয়েছে তার সাথে তাদের চিন্তাভাবনা এবং সংলাপ অসংলগ্ন লেগেছে। কিশোর বয়সী চিন্তাভাবনার বর্ণনা দিয়েও বইটা একইরকম বা তার চেয়ে বেশি সুন্দর করা যেত। কিশোরী দুজন মেয়ে বলেই তাদের ভুতের ভয়ে কাবু থাকতে হবে, পেটে কথা রয় না ধরনের ভাব দেখাতে হবে বা ন্যাকামিতে পরিপূর্ণ হতে হবে - এগুলোকি সেট নর্ম কিনা জানিনা তবে যথেষ্ট বিরক্তির উদ্রেগ করেছে, বইটা ১৯৭৬ সালে লেখা চিন্তা করে বিরক্তি কমাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি, হয়তো এটি আমার পরিণত মানষিকতার দুর্বলতা হবে।
গুডরিডসে বইয়ের পাশে আবির-বাবু#১ দেখে মনে হচ্ছে এটি কোন সিরিজ হবে কিন্তু পরের বইগুলো পড়তে আমি আর আগ্রহী না। ওহ আরেকটা কথা, নেলী খালার পাশাপাশি আমার আবিরের বড় ভাইয়ের চরিত্রটিও বেশ লেগেছে, একটু রহস্য রহস্য ভাব ছিল। তার ব্যাপারে আরো জানতে পারলে কিংবা বইটে তার ভূমিকা আরো বেশি থাকলে কাহিনীটা হয়তো আরেকটু বিশ্বাসযোগ্য হত।
সব মিলে বইটা না চমৎকার, না ফেলনা জায়গায় এসে আটকেছে। আমার প্রকৃত রেটিং ২.৫। গুডরিডসে তা দেয়া যায়না বলে এবং ওইযে স্বপ্ন স্বপ্ন প্রকৃতির কোলে বিছানো কাহিনীর জন্য ৩ দিলাম।
This is the story of how I fell in love with Shahriar Kabir's books. My journey with his work began with "নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়/ Nuliachorir Sonar Pahar (roughly translated to Golden Hill of Nuliachari)—not as a book, but as a captivating BTV miniseries in 1999. Faces like Dolly Johur (Shanu Apa), Sabrin Saka Meem (Lolly), and Tania Ahmed (Neeli Khala) remain vivid in my memory, and of course, Scatra, the lovable woofer! Fast forward to 2001: a 7th grader in Bogra's Satmatha stumbles upon the book version. After a quick trip home and some pleading, I held my first Kabir novella: নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়.
মাঝে মাঝে জীবনটা একঘেয়েমি লাগে। রোজ সেই স্কুলে যাওয়া, বাসায় আসা, ঘরবন্দি জীবনে অভ্যস্ততা। আসলেই কিন্তু বেশ বোরিং ব্যাপার। তার উপর যদি সমবয়সী কেউ না থাকে বিষয়টা আরো কষ্টকর। সময় কাটতেই চায় না আর।
আবিরের সম্পর্কে উপরের কথাগুলো সবগুলো একদম সত্যি। আবিরের কোনো বন্ধু নেই চাচাতো ভাই বাবু ছাড়া। বাবুও আবার এ দেশে থাকে না। পড়াশোনার জন্য বিদেশে থাকে। বাবুকে আবির সবসময় চিঠি লেখে লম্বা সাইজের। সেই তুলনায় বাবু ছোট সাইজের চিঠি লিখে বলে আবিরের অভিমান হয়। কারণ আবিরের দিনগুলো সত্যি বলতে বেশ একঘেয়েমিতেই কাটে।
তবে যেবার নেলী খালা এসেছিলেন বেড়াতে আবিরের দিনগুলো বেশ মজা করে কেটেছিল। নেলী খালারা বিদেশে কাটিয়ে এসেছেন বহু বছর। সম্পর্কে আবিরের মায়ের মামাতো বোন। বেশ আধুনিক এবং স্বাধীনতাচেতা নেলী খালা। আবিরের মা অবশ্য বোনের কাজকর্মে বেশ বিরক্ত। বারবার বলেন খালা যেন বিয়ে করে সংসারী হয়ে যান। নেলী খালার সেদিকে চিন্তা নেই বরং কক্সবাজারে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়ে নেলী খালা একের পর এক ব্যবসা শুরু করলেন।
আবিরের মা বোনের কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তিত। আবিরের বাবা অবশ্য এত চিন্তিত নন। তিনি জানেন নেলী খালা বুদ্ধিমতী। নেলী খালা যা যা করেন সবকিছুই অবশ্য চিঠি লিখে জানান আবিরের মাকে। সাথে চিঠিতে আবিরের জন্যও স্নেহাশিস থাকে। এ বাসায় চিঠি আসে মাঝে মাঝে দুইজনের। ভাইয়া আর নেলী খালার। ভাইয়া হুট করে কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেল। মাঝে মাঝে চিঠিতে লিখে জানাতো সে ভালো আছে। আবিরের মাঝে মাঝে মনে হয় ভাইয়ার সাথে সেও ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সেটা কী আর হয়!
আবিরের এবার অবশ্য খুশির দিন। বাবু এসেছে বাংলাদেশে ছুটি কাটাতে। বাবুকে আবিরের মা নানান লোভনীয় খাবার বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন। এরমধ্যেই এলো নেলী খালার নতুন চিঠি। তিনি নাকি কক্সবাজারের বাড়ি বেঁচে দিয়ে কোন নুলিয়াছড়িতে একটা বহু পুরোনো বাড়ি কিনেছেন মোটেল বানাবেন বলে। এবং বাবাকে নিয়ে সেখানে উঠেছেন। সাথে চিঠিতে আছে আবিরকে সেখানে যাবার নিমন্ত্রন। আবির বাবুকে নিয়ে যাবার প্রস্তাব করতেই বাবা রাজি হলেন। মা কিছুটা গাইগুই করলেন অবশ্য তবে পরে একগাদা খাবার দিলেন নেলী খালার জন্য।
স্টেশনে নামতেই নেলী খালার সাথে দেখা, ওদের নিতে এসেছেন। নেলী খালা নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং পথে তুলে নিলেন আরো দুইজনকে। ওঁরা হলো ললি আর টুনি দুই বোন। আবির বাবু অবশ্য খুশি হলো নতুন সঙ্গী পেয়ে। নেলী খালার বাড়িটা একদম প্রায় সীমান্তের কাছাকাছি। অনেক পুরনো দিনের বাড়ি এবং এখানে নাকি হার্মাদ ডাকাতদের ঘাঁটি ছিলো পুরনো দিনে। তবে বাড়ির ভেতরটা বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন নেলী খালা। পথে দেখা হয়েছিল মি. মুসুদ্দির সাথে।
তবে এই নুলিয়াছড়িকে নিয়ে আছে অনেক গুজব। এখানে নাকি আছে ভূতের উপদ্রব। পাশের পাহাড়ে দেখা যায় অনেক রাতে আলো। এখানে নাকি ঘটে অনেক অপরাধ। গোপনে বসেছে তাই সীমান্তের অপরাধ রোধে আর্মি ক্যাম্প। মেজর জাহেদের সাথে পরিচয় হলো আবির ললিদের। নেলী খালার ভালো বন্ধু তিনি। নেলী খালার প্রথম অতিথি হিসেবে আসেন দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তি ফতেহ এবং গোবর্ধন। এদের কাজকর্মে আবিরদের হয় বেশ সন্দেহ। ওরা চারজন মিলে শুরু করে অভিযান।
আবার নেলী খালা বলেছিলেন এখানকার নদীতে তিনি পানিতে সোনার অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। আসলেই কী এখানে সোনার খনি আছে? বলা যাচ্ছে না। যদি সত্যি সত্যি সোনার খনি থাকে সেটার উপরেও তো নজর আছে দুষ্টু লোকের।
আবিররা গোপনে গোপনে নজর রাখতে শুরু করলো সন্দেহভাজনদের উপরে। ওঁরা অনেক সূত্র খুঁজে পেলো। আসলেই কী কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? ওঁরা মনে মনে উত্তেজিত। শেষমেশ দেখা যাক কী ঘটে। নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়ে রহস্য উন্মোচন জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে অবশ্যই।
//পাঠ প্রতিক্রিয়া:
শাহরিয়ার কবিরের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় "হানাবাড়ির রহস্য" বইয়ের মাধ্যমে। এবং আমার বেশ ভালো লেগেছিল লেখকের লেখনী। এবং কিশোর উপন্যাস হিসেবে বেশ ভালোভাবেই উপস্থাপন করতে পেরেছেন। সে হিসেবে "নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়" লেখকের পড়া দ্বিতীয় বই। এবং এটাও কিশোর উপন্যাস।
কিশোর উপন্যাস হিসেবে মোটামুটি ভালো লেগেছে। লেখনী আগের মতো অতটা আকর্ষন করেনি তবে খুব খারাপও লাগেনি। কিশোর এডভেঞ্চার হিসেবে ভালোই। তবে মূল কিশোর চরিত্রগুলোকে আরেকটু সমন্বয় করলে বোধহয় ভালো হতো। এদিক থেকে একটু কমতি লেগেছে। তবে গল্পের প্লট ভালোই এবং পরিবেশের বর্ননা করেছেন দারুন চমৎকার ভাবেই। এবং পড়তে ভালো লেগেছে এই অংশে।
আজকাল কিশোরদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা কমছে। এরা আসক্ত হয়ে পড়ছে ফোনে। তবে যারা এখনো নিজেদের মাঝে সাহিত্যকে ��ালন করে বইয়ের সাথে আছে অবশ্যই চমৎকার এসব কিশোর উপন্যাস পড়া উচিত। এবং এইসব বই আমার কাছে অন্তত ভালোবাসার। আমি পড়ে বেশ আনন্দ পাই এসবে।
বইয়ের নাম: "নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়" লেখক: শাহরিয়ার কবির ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৪/৫
কিশোর উপন্যাস পড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। যদিও আফসোস হচ্ছে আগে কেন জানতাম না এই বইটার ব্যাপারে। কিন্তু তারপরে মনে হলো পজিটিভ দিক হচ্ছে এমন মজার কিছু বই তাহলে এখনও রয়ে গেছে পড়ার জন্যে। ভালো লেগেছে।
আর সব বাচ্চাদের মত করেই আমার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল ঠাকুরমার ঝুলি এবং হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের রূপকথার গল্পগুলো দিয়ে। এরপর বেশ কিছু রাশান অনুবাদের বই পড়ার পর একদিন হাতে পেলাম অদ্ভুত নামের একটা বই। বইয়ের নাম 'নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়'।
বইটা আমি পেয়েছিলাম উত্তরাধিকার সূত্রে। আমার বড় দুই বোন ছিল লেখাপড়া এবং সৃজনশীল নানা গুণে বেশ সমৃদ্ধ। আর প্রতিবার যখনই তারা কোন কিছুতে ভালো ফলাফল করতো। তখনই আম্মু, আব্বুর কাছ থেকে পেতো নিত্য নতুন বই। আমাদের বাড়ির পুরানো বইয়ের শেলফে হাত দিলেই অনেক বই পাওয়া যাবে যার প্রথম পাতা খুললেই দেখা যাবে তাতে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা,
'লাকি কে আম্মু' কিংবা 'সুমি কে আব্বু'
বড় আপু প্রথম আমার হাতে এই বই তুলে দিয়ে বলেছিলো, এটা না পড়লে নাকি ছেলেবেলাই বৃথা। আর আমিও তাই তৎক্ষণাৎ পড়তে শুরু করেছিলাম বইটি।
রূপলাল লেনে বাবামায়ের সাথে থাকা ভাবুক এবং পড়ুয়া কিশোর আবির। চিলেকোঠায় বসে বসে যে হালকবেরি ফিন কিংবা ট্রেজার আইল্যান্ডের স্বপ্নে বিভোর থাকে। তার বাসায় আমেরিকা থেকে বেড়াতে আসে তারই চাচাতো ভাই বাবু। ওরা দুজনেই বই পাগল, এডভেঞ্চার পাগল। ছুটির দিনগুলো কিভাবে কাটাবে ভাবতে ভাবতে যখন দুজনেই মশগুল ঠিক তখনই আসে জলপাই রঙের একটা চিঠি। আবিরের পাগলাটে খালা নেলী খালার পাঠানো সেই চিঠি। নানা রকম কাজের ও ব্যবসার জন্য আবিরের কাছে তাকে খুব মজার মানুষ বলে মনে হলেও ওর মায়ের মতে নেলী খালার সব কাজই মূলত 'উদ্ভুট্টি কান্ড'। সেই নেলী খালা এবার আবিরকে ডেকে পাঠান বার্মা সীমান্তের কাছের এক প্রত্যন্ত এলাকা 'নুলিয়াছড়ি' তে। সেখানে তিনি একটা পুরানো জমিদার বাড়ি কিনেছেন। এবারের উদ্ভুটি কান্ড হল সেটাকে তিনি রেস্ট হাউজ বানাবেন।
আবিরের সাথে সঙ্গী হয় বাবু। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় ললি, টুনি নামের দুই বোনের সাথে। ললি খুব শান্ত, দেখতে রাশান পুতুলের মত। আর টুনি ছটফটে। তার মাথায় দুই পাশে উঁচু করে বাঁধা দুটা খোঁপা। যে কেউ দেখলেই শিং মনে করবে।
আরও কিছু দারুণ চরিত্র এসে জুড়ে যায় সেই নুলিয়াছড়িতেই। যেমন, ফতে আর গোবর্ধন।
এরপর দেখা যায়, বেড়াতে গিয়ে রহস্যে জড়িয়ে গিয়েছে চারজনেই। সোনার খনি, হার্মাদের জলদস্যু, আন্নাকালীর পাহাড়ের পোড়ো মন্দির, হার্মাদের ভূত কোন কিছুর ভয়ই দমাতে পারে না ওদেরকে। পড়তে পড়তে ওদের সাথে এমন জমজমাট এডভেঞ্চারের সঙ্গী হয়ে যাই সেই ছোট্ট আমি। এমনকি নেলী খালার গ্রে হাউন্ডের সাথে মিল রেখে আমাদের বাসার পোষা কুকুরের নাম পর্যন্ত দেওয়া হয় 'স্ক্যাটরা'। এই বইয়ের মলাট দেখলেই আমি চলে যাই আজ থেকে অনেক বছর আগে। যখন আমার বাড়িয়ে দেওয়া সরু সরু হাতে বড় আপু তুলে দিয়েছিলো বইটি। যা রঙিন করে তুলেছিলো আমার ছেলেবেলা। শাহরিয়ার কবির কি আদৌ জানেন তার এই বই কী পরিমাণে স্থান করে নিয়েছে পাঠক মনে? অজস্র কিশোর-কিশোরী জগতকে আজও হাতছানি দিয়ে বেড়ায় সেই নুলিয়াছড়ির পাহাড়।
‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’ শাহরিয়ার কবির প্রথম প্রকাশ- ১৯৭৬
যেটা অনেকের সাথেই ঘটেছে। যদ্দিনে এই কিশোর-উপন্যাসের পরিচয় পাই তদ্দিনে বয়স গেছে, এখন বইটাও আর তেমন পাওয়া যায় না। পুরোন বইদোকান থেকে কিনে আনা বোনের বইয়ের গাট্টির ওপর তার দেখা পেয়ে গুপ্তধন পাওয়ার আনন্দে এক বসায় শেষ করে ফেললাম ১২০ পেইজের বইটি। শুরুতেই যেটা মাথায় এসেছে, বইটার নাম আমরা তেমন জানি না কেন? দীপু নাম্বার টু'র মতো এটা নিয়ে মুভি হতে পারতো। পরিবেশের চমৎকার বর্ণনা আছে, এডভেঞ্চার আছে। ছোট রহস্য ঘাঁটতে গিয়ে বড়সড় কিছুতে জড়িয়ে যাওয়া, তারপর ছোটদের মতো করেই তার সমাধান বের হওয়া। দারুণ প্লট, জমজমাট শিশুতোষ সিনেমা হওয়ার দাবী রাখে বইটা। শাহরিয়ারের কবিরের এই প্রথম কোনো বই পড়লাম। কিশোরদের জন্য আরো লিখেছেন জানতাম। তবে এডভেঞ্চার গোছের উপন্যাস লেখায় এহেন স্বাদ আমরা তিন গোয়েন্দায় বেশ পেয়ে এসেছি। কিশোর উপন্যাসে তো আর একশান সিকোয়েন্সের প্র্যাকটিকালিটি আশা করা যায় না, তবু সুড়ঙ্গ যে সৈকতে গিয়ে শেষ হয় না, সুড়ঙ্গমুখে কিছু একটা স্ট্রাকচার থাকা লাগে, আর আস্তে আস্তে সাগরের দিকে আগানোর ব্যাপারটা থাকে- এসব খুঁটিনাটি তি.গো.-তে মিস হতো না সাধারণত।
বাচ্চাদের জন্য রিকমেন্ডেড। অবশ্য এক জায়গায় "হারমজাদা কুত্তো!" গাল শুনে ক্লাস ওয়ানের ভাগ্নীকে এক্সপ্লেইন করতে বিপাকে পড়ে গেছিলাম 'হারাজাদা' মানে কি।
অনেকদিন পর একটা বই পড়ে নির্মল আনন্দ পেলাম।জাফর ইকবালের টি রেক্সের সন্ধানে, হাত কাটা রবিন পড়ে এরকম আনন্দ পেয়েছিলাম।উপন্যাসটিতে জাফর ইকবালের লেখার একটা ছায়া পেলাম, নাকি উল্টোটা, জাফর ইকবালের লেখাতেই শাহরিয়ার কবিরের লেখার প্রভাব রয়েছে হয়তো!উপন্যাসটির ফিনিশিং আরেকটু নাটকীয় আশা করেছিলাম।তবে মনে হলো, ছোটবেলায় পড়লে আনন্দটা আরেকটু বেশি পেতাম ^_^ ।
কিশোর উপন্যাস হিসেবে ভালো। তবে, জাফর ইকবালের মতো একই দোষে শাহরিয়ার কবিরের লেখাও দূষিত। নারীর ঘরে কাজকে ছোট করা, টুপির সমালোচনা, কিশোর উপন্যাস হলেই সেখানে একটু প্রেম-পিরিতি দেখানোর চেষ্টা করা।