Jump to ratings and reviews
Rate this book

গোয়েন্দা কানাইচরণের কাহিনি #৪

অবান্তর কথার ভিড়ে আছে

Rate this book
বড়োবাজারের হোটেল 'রিবারা' থেকে উদ্ধার হয় নিরভানার সঙ্গী তনুময়ের দেহ!

পুলিশ বুঝতে পারে না আত্মহত্যা না খুন। সিসিটিভিতে দেখা যায় নিরভানা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই সিসিটিভি যেন গোটা শহর জুড়ে সহস্র চোখ ছড়িয়ে রেখেছে। নিরভানার হারিয়ে যাওয়ার পথটি অনুসরণ করে কানাই, সৌভিক ও করতোয়া চলে যাচ্ছেন কলকাতার পাতালে, মানিকতলার সাটার ঠেক থেকে এন্টালির ঘুপচি ভাড়া বাড়ি, ধর্মতলার বাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের গুমটিতে।

শীতকালের উচ্ছ্বাস ও উল্লাসের নীচে মলিন-বিবর্ণ-ধূসর শহর। কথার পিঠে কথা চাপছে এই কাহিনিতে; প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় ও অবান্তর কথার মধ্যে থেকে কানাইদের তুলে নিতে হবে জরুরি তথ্যটুকু, শীতের কুয়াশা সবকিছু গ্রাস করার আগেই।

240 pages, Hardcover

Published January 1, 2025

3 people are currently reading
27 people want to read

About the author

Rajarshi Das Bhowmik

9 books41 followers
রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের জন্ম ১৯৮৭ সালে কলকাতায়। সাত বছর বয়েসে যৌথপরিবার থেকে আলাদা হয়ে বাবামায়ের সঙ্গে মফস্বল শহর বারাসাতে চলে আসা। বাবা-মা সরকারী কর্মচারি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন বারাসাত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। কবিতা লেখার শুরু ক্লাস এইট থেকে, প্রথম কবিতার বই সতেরো বছর বয়েসে। এঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন শিবপুর বিই কলেজ থেকে, পরবর্তীতে আই আই টি কানপুরে। পিএইচডি নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে। গবেষণার বিষয় জলসম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন। বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরের ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থানে অধ্যাপনা করছেন। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সঙ্গে পাঁচ; একটি বাদে সব কবিতাবই স্বউদ্যোগে প্রকাশিত। গল্প-উপন্যাসের বই এযাবত আটটি; তিন প্রকাশক সৃষ্টিসুখ, বৈভাষিক এবং একতারা। গোয়েন্দা কানাইচরণ চরিত্রটির স্রষ্টা। কানাইচরণের উপন্যাসিকা 'চড়াই হত্যা রহস্য' অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ওয়েবসিরিজ 'ব্যাধ'। সম্প্রতি কয়েকটি বইয়ের ইংরিজি অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছে।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
6 (28%)
4 stars
10 (47%)
3 stars
2 (9%)
2 stars
3 (14%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 9 of 9 reviews
Profile Image for ORKO.
196 reviews197 followers
July 9, 2025
বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রগুলোর কিছু ট্রেডমার্ক বৈশিষ্ট্য আছে। ফেলুদা নিজের চিন্তায় ডুবে চারমিনারে টান দিয়ে গোল গোল ধোঁয়ার রিং ছাড়ে। ভায়োলেন্সের বদলে অবজার্ভেশন-ডিডাকশন করে মগজাস্ত্রের জোরে সলভ করে একেকটা ক্রাইম। প্রতিটা ফেলুদা কাহিনীই যেন একেকটা ট্রাভেলগ,মিস্ট্রি-মিথ আর মডার্নিটির এক আশ্চর্য মেলবন্ধন। আবার নিজেকে সত্যান্বেষী দাবি করা ব্যোমকেশের কাহিনীগুলোতে স্বাধীনতার আগের ও পরের একটা তুলনামূলক সামাজিক ছবি পাওয়া যায়। শরদিন্দুর ভীষণ নুয়ান্সড গল্প বলার ধরণে সেকালের সমাজে অপরাধীদের প্রবণতা, মনস্তত্ত্ব লুকিয়ে থাকে পেঁয়াজের খোসার মতো প্রত্যেকটা পরতে। এমন বাঘা বাঘা চরিত্রেরা যখন বাঙালীর অস্তিত্বের জিনে একরকম গেঁথে গেছে, তখন রাজর্ষি দাশ ভৌমিক লিখতে বসলেন এক অন্য ধরনের গোয়েন্দা চরিত্রের কাহিনী। তাকে এমন তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলা যায় না। গুড ওল্ড ইনভেস্টিগেশন ওয়ার্কের নির্জলা খাটুনির বদৌলতে উৎরে যায় একেকটা কেস। লেখকের মতে, কানাইচরণ হচ্ছেন ক্লাসের সেই ছেলেটা যে প্রতিদিন পড়ে পাশ করেছে। ফেলুদা-ব্যোমকেশের মতো তিনি গ্ল্যামারাস নন। লাল বাজারের বড়ো বাবুদের চাপে, একঘেয়ে সংসারে ক্লান্ত মধ্যবয়সী এক ডায়াবেটিক গোয়েন্দা কানাইচরণ। কানাইচরণ লালবাজারের কর্মকর্তা, পদবীতে সিনিয়র ইন্সপেক্টর। মাথায় কোঁকড়ানো চুল, সাথে ঝোঁপালো গোঁফ। তার সঙ্গী জুনিয়র ইন্সপেক্টর সৌভিক আর রেকর্ডস সেকশানের পৃথুলা দিদিমণি।দিদিমণির প্রতি তার কিঞ্চিৎ 'ইয়ে' আছে। এই 'ইয়ে' টা কী তা অবশ্য পুরোপুরি পরিষ্কার না। পুলিশ হয়েও কোনো কাজ সমাধা করতে গিয়ে পুলিশ পরিচয় দিতে ভীষণ দ্বিধা হয় তার। কানাই আসলে ‘রেবেল উইদাউট এ কজ’,কিন্তু ভীষণ স্যাভেজ। প্রটোকল,পলিটিক্স,ক্রাইমসিনে হলুদ আর ডিপার্টমেন্টের রেড টেপের ঘেরাটোপে কেস-ফাইল,চেকিং,ক্রসচেকিং,জবানবন্দির আড়ালে কানাইচরণের কাহিনীগুলো একটু ‘স্লো’। রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের এই কানাইচরণ সিরিজটার ইউএসপিই হচ্ছে এর খানিকটা লেইড ব্যাক অর্থাৎ এলিয়ে পড়া ভঙ্গি। বাস্তবে যেমনটা হয় আরকি। রেমন্ড চ্যান্ডলার,নিক পিজ্জোলাতো,জেমস ক্রামলির ভিন্টেজ থ্রিলারের মতো। একেকটা কেস হবার পর খুবই ধীরগতিতে ইনভেস্টিগেশন এগোতে থাকে। উপরমহলের চাপ থাকা সত্ত্বেও তেমন তাড়া থাকে না। তবে এই উপন্যাসটা অন্যগুলোর থেকে বেশ ফাস্ট পেসড।

লেখক রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের বিশ্বাস, আমাদের অপরাধেরা আমাদের মতোই ছাপোষা। জমি-বাড়ির ঝামেলায় সহোদরেরা মাথায় কোদালের ঘা বসিয়ে দিচ্ছে, সস্তার হোটেলের ঘরে ঈর্ষাকাতর প্রেমিকা ঘুমন্ত প্রেমিকের গলার নলি কেটে ফেলছে, সন্দেহপ্রবণ স্বামী সন্তানের সামনে খুন করছে স্ত্রীকে-হোমিসাইড ডিটেকটিভ কানাইচরণ এসব থেকে কী করে দূরে থাকতে পারেন! আমাদের অপরাধের গা থেকে ঘেমো গন্ধ বেরোচ্ছে। থতমত মুখে অ্যালিবাই আর মোটিভ রোয়াকে বসে চা খাচ্ছে। এই মামুলিপনার খুব কাছাকাছি পৌঁছোনো পাতি কেস কানাইচরণ সলভ করুক বরাবর সেটাই চাইতেন লেখক। বাবা-মার চাকরিস্থল হওয়ার কারণে রাজর্ষি একেবারে বালক বয়স থেকে আদালত চত্বরে যাচ্ছেন। সাত-আট বছরের বালক ব্যস্ত মায়ের নজর এড়িয়ে, রং পেনসিল আর কার্বন পেপার ভুলে, এজলাসে ঢুকে পড়েছেন। এক্সজিবিট টেবিলে কাচের বয়ামের ভিতর ফর্মালিনে ডুবানো কর্তিত পুরুষাঙ্গ। সিঁড়ির ফাঁকফোকর থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুচরো বের করছেন বটতলার উকিল। দুপুর গড়ালে জিআর ফাইলের কেস উঠলো- এসব তার চোখের সামনে উঠতে বসতে ঘটতো। তাই প্রথম বই ‘কলকাতা নুয়া’-তে রহস্যের সৌন্দর্য থাকলেও পরের বই তিনটায় কম বেশি পাতি কেসেরও দেখা মেলে। সিরিজের ‘চড়াই হত্যা রহস্য’,‘পাইস হোটেলে হত্যা' আর ‘অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ উদ্ধার’ বই দুটো বাংলা নোয়া কাহিনীকে নিয়ে গেছে কয়েক ধাপ উপরে। উড়ো কথা শোনা যাচ্ছে ‘অবান্তর কথার ভিড়ে আছে’ উপন্যাসটাই কানাইচরণের শেষ কিস্তি। তল্পিতল্পা গুটিয়ে রিটায়ারমেন্টে চলে যাচ্ছেন এই বর্ষীয়ান গোয়েন্দা। বাট দ্যাট'স হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড এন্ডস, নট উইথ এ ব্যাং, বাট উইথ আ হুইমপার...

বিখ্যাত গায়ক পরীক্ষিৎ রক্ষিতের একমাত্র মেয়ে নিরভানা রক্ষিত নিখোঁজ হয়েছেন। লালবাজারে এসে অভিযোগ জানিয়েছেন গায়ক স্বয়ং নিরভানার ফোনের লোকেশন দেখাচ্ছে বর্ধমানের কোনো গ্রামে। স্ট্যাটিক লোকেশন। কানাইচরণ অনুমান করছেন ফোনের সঙ্গে নিরভানা নেই। নিরভানার সঙ্গে নিখোঁজ তার পুরুষ বন্ধু। এ কি শীতকালে নিছক দুই নারী-পুরুষের অনির্দেশ্যে হারিয়ে যাওয়া, নাকি অচিরে জটিল হয়ে উঠবে সবকিছু? শীতসন্ধ্যের সোডিয়াম ল্যাম্পের আলো আর কুয়াশায় মিশে থাকা কলকাতার অলিগলির মতো? বড়োবাজারের হোটেল 'রিবারা' থেকে উদ্ধার হয় নিরভানার সঙ্গী তনুময়ের দেহ! পুলিশ বুঝতে পারে না, আত্মহত্যা, না খুন? সিসিটিভিতে দেখা যায় নিরভানা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই সিসিটিভি যেন গোটা শহর জুড়ে সহস্র চোখ ছড়িয়ে রেখেছে। নিরভানার হারিয়ে যাওয়ার পথটি অনুসরণ করে কানাই, সৌভিক ও করতোয়া চলে যাচ্ছেন কলকাতার পাতালে, মানিকতলার সাট্টার ঠেক থেকে এন্টালির ঘুপচি ভাড়া বাড়ি, ধর্মতলার বাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের গুমটিতে। শীতকালের উচ্ছ্বাস ও উল্লাসের নীচে মলিন-বিবর্ণ-ধূসর শহর। কথার পিঠে কথা চাপছে এই কাহিনিতে; প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় ও অবান্তর কথার মধ্যে থেকে কানাইদের তুলে নিতে হবে জরুরি তথ্যটুকু, শীতের কুয়াশা সবকিছু গ্রাস করার আগেই।

এই সিরিজের আগের বইটিতে রাজর্ষি দাশ ভৌমিক আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন এমন এক বিস্মৃত দশকের গল্প। বর্ষণ অধিকে আমাদেরকে দেখিয়েছিলেন, আশির দশকের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। সেইসময়ের কলকাতা শহর এবং মফস্বলের চালচিত্র। সবটাই একটি অপরাধের চোখ দিয়ে। কানাইচরণের অন্য বইগুলোর মতো এই বইটিতেও কলকাতা শহর হয়ে ওঠে এক অদ্ভুত রহস্যময় চরিত্র। এই লেখা পড়লে বোঝা যায়, এক কলকাতার ভেতরে কত রকমের কলকাতা লুকিয়ে আছে। সেই উপাদানগুলো, এই দৃশ্যগুলো রোজ আমাদের চোখে ধরা পড়ে কিন্তু হয়তো কোনোভাবে আমাদের মস্তিষ্ক রেকর্ড করে না। এখানে লালবাজারের এক সিনিয়র ইন্সপেক্টর সকালবেলা সেসিল বারে মদ খেতে খেতে পরিচিত হোন এমন এক মানুষের সাথে যিনি রিটায়ারমেন্টের পরেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন, সারাদিন মানুষ দেখবেন বলে। অন্যের গ্লাস থেকে মদ টানতেও তার দ্বিধা হয় না। এখানে কাজের চাপে ক্লান্ত কানাইচরণ মদ খেয়ে শুয়ে পড়েন ক্রাইম সিনে। এই শহরে এক জনপ্রিয় বারে এক ওয়েটার কোনদিনও কৃতজ্ঞতাবশত কানাইয়ের থেকে খাবারের পয়সা নেন না। তবে হ্যাঁ, ড্রিংকের পয়সাটা দিতে হয়। মানিকতলা বাজারের ভেতরে চলে বিস্মৃতপ্রায় সাট্টার ঠেক। বাড়তি হিসেবে গোটা সিরিজ জুড়ে উপস্থিত থাকা রাজখোঁচড় ভানু সমাদ্দারের একটা পূর্ণাঙ্গ ক্যারেকটার আর্ক আমরা পাই। ভীষণ শক্তিশালী মনোবলের এক লোক মনের দুঃখে ঝাঁপ দেন গঙ্গার বুকে। গোটা উপন্যাস জুড়ে কলকাতার শীতের চাপ চাপ কুয়াশার মত রহস্য ফুটে ওঠে ঝাপসা ছবিতে। ছোট ছোট ছবি মিলিয়ে কিছু কোলাজ, যেখানে আমাদের প্রথাগত ধারণা অনুযায়ী পুলিশ মানেই পেশী সর্বস্ব গুন্ডা নয়, যেখানে করাপশনের অস্তিত্ব সবাই জানেন, এবং সিস্টেমের পার্ট হিসেবে নির্বিকারে মেনেও নেন। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহাবশেষ উদ্ধার উপন্যাসের মতো ইন্টারল্যুডের মতো দুটে চ্যাপ্টারও আছে। পাশ্চাত্য দর্শনের বইয়ের রেফারেন্স আর অনলাইনে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট অনুসরণ করার দিকটা খুবই চমকপ্রদ। অমিতাভ দাশগুপ্তর চেয়ার কবিতাটার যথাযথ ব্যবহারও ভীষণ প্রাসঙ্গিক।

এবার সিআইডি অফিসার করতোয়া নামের একটি স্ট্রং ইন্ডিপেন্ডেট নারী চরিত্রকেও ইন্ট্রোডিউস করেছেন লেখক। কাহিনির গল্প এগিয়েছে লালবাজার ও সিআইডি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে কিছু বিশেষ পুলিশ অফিসারের মিলিত টিমের তদন্ত প্রণালি দিয়ে, যে তদন্তের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে নিখোঁজ রহস্যের সন্দেহের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পুলিশি জেরা, ফরেনসিক তথ্য সংক্রান্ত অনুসন্ধান, পুলিশি খোঁচড়দের কর্মকাণ্ডের মতো বিষয়গুলো। নিরভানার চরিত্রটি ভীষণ কমপ্লেক্স। পরতে পরতে চমক লুকানো। নিখোঁজ রহস্যের তদন্ত কাহিনিটির মধ্যে দিয়ে লালবাজারেরর পুলিশ বিভাগের ভিতরকার চাপা রাজনীতির পাঞ্জা লড়াই, মিডিয়ার সাথে তদন্তের তথ্য নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি খেলা, পুলিশ কর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ কেস সংক্রান্ত প্রেস মিটিং সম্পর্কে ধারণার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে । লেখকের বর্ণনা এতো ডিটেইলড যে মনেই হয় না একটা নোয়া কাহিনী পড়ছি। মসজিদের ঝাঁঝরিতে ক্ষতবিক্ষত সন্ধ্যা রাতের আলো,মাথার উপর ঝুলতে থাকা কুয়াশার শামিয়ানা, কলকাতার জনজীবনের মরবিড ডিটেইলস, ২৫ তম অধ্যায়ের প্রায় পুরোটাতে আমতলা নামের এক অখ্যাত গ্রামের বর্ণনা পড়তে গেলে মনে হয় কোনো ধ্রুপদী সাহিত্যের বই পড়ছি। রাজর্ষির দক্ষতা এখানে অনেকটা পাতাললোক খ্যাত সুদীপ শর্মার মতো।

শুরু থেকে টানটান নিখোঁজ রহস্যের কুয়াশা ঘেরা এই কাহিনিটির ক্লাইম্যাক্স পড়তে গিয়ে একদিকে থ্রবিং হেডেকের মতো রোমাঞ্চ আর উল্টোপিঠে খানিকটা হতাশা কাজ করে । ক্লাইম্যাক্স বেশ অন্যরকম। শেষে লালবাজারের ভেতরকার বাস্তব পুলিশি জেরা কীভাবে চলে তার একটা বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেরা চলাকালীন আসামীপক্ষের উকিলদের ভূমিকা ও রাজসাক্ষী হবার প্রসঙ্গ। মূল অপরাধীর পরিচয় ও তার অপরাধের প্রবণতা পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে যা পড়তে বেশ ফ্যান্সি লাগলেও, বড় অপরাধের বাস্তব কারণ তথা মোটিভের বিষয়টা নিয়ে একটা জিজ্ঞাসাচিহ্ন রয়ে যায়।শেষে প্রায় কয়েক লাইনে অপরাধের মোটিভের কথা বলা হলে ও তা খানিকটা দোলাচলে রাখে।‘অবান্তর কথার ভিড়ে আছে’ উপন্যাসে যেভাবে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অবান্তর কথার খড়ের গাদায় সূঁচের মধ্যে লেখক যেভাবে একটা অপরাধের আদ্যোপান্ত লুকিয়ে রেখেছেন, তা নিঃসন্দেহে ব্রিলিয়ান্ট। তবে শীতের কুয়াশার মাঝে ডিমলাইটের মতো খানিকটা ঝাপসা হয়ে থেকে গেল এই শেষ কিস্তি।
Profile Image for Arupratan.
235 reviews386 followers
August 4, 2025
গল্পটা এগোচ্ছিল দিব্যি। চমৎকার আটপৌরে বর্ণনা এবং ঝকঝকে সংলাপে দাঁড়িয়ে উঠছিল চরিত্রগুলো। কিন্তু টানটান একটা পরিস্থিতি থেকে কেমন অগোছালো এবং সাদামাটাভাবে শেষ হয়ে গ্যালো। অনেকগুলো সুতো আলগা হয়ে বিসদৃশ ঝুলে রইলো। গোয়েন্দা কানাইচরণের ঠিক আগের বইটিতেও দেখেছি, একটা জমিয়ে তোলা গল্পকে শেষমেশ ধরে রাখতে পারেন না লেখক, খেই হারিয়ে ফেলেন। অথচ এই কানাইচরণের বই যখন প্রথম পড়েছিলাম ("কলকাতা নুয়া"), বহু বছর পরে বাংলা রহস্য সাহিত্যের ব্যাপারে নতুন করে আশাবাদী হয়েছিলাম। বর্তমান বইটিতে লেখক ঘোষণা করেছেন, এটিই নাকি কানাইচরণ সিরিজের শেষ বই। সত্যি বলছি, খুব বেশি আফসোস হচ্ছে না। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
Profile Image for Pratik Gon.
216 reviews4 followers
October 26, 2025
গল্পটিকে যদি কেবলমাত্র একটি গোয়েন্দা উপন্যাস হিসেবে বিচার করা হয়, তাহলে হয়তো একে “অসাধারণ” বলা ঠিক হবে না। কারণ এখানে রহস্য উদঘাটনের রোমাঞ্চই গল্পের মূল আকর্ষণ নয়। বরং লেখক এমনভাবে গল্পের আবহ, চরিত্র, এবং ভাষার বুনন গেঁথেছেন যে, এটি গোয়েন্দা গল্পের প্রচলিত সীমা পেরিয়ে এক গভীর মানবিক অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে।

গোয়েন্দা কানাইচরণকে ঘিরে নির্মিত এই গল্পে রহস্যের উপাদান থাকলেও, পাঠক ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন—এই গল্পের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তার চরিত্রগুলোর মনের ভেতরের টানাপোড়েনে, তাদের আবেগে, এবং সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবিতে। পড়তে পড়তে এমন এক সময় আসে যখন কে অপরাধী, বা রহস্যের শেষ সূত্র কী—এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ মিলিয়ে যায়। বরং মনে হয়, গল্পটা যেন চলতে থাকে, কানাইচরণ যেন তার নিজস্ব ছন্দে আরও কিছু দিন বেঁচে থাকে।

লেখকের লেখনীর প্রশান্ত ভঙ্গি, সংলাপের স্বাভাবিকতা, আর ঘটনার সূক্ষ্ম বিন্যাস সত্যিই প্রশংসনীয়। শেষের দিকে এসে মন খারাপ হয়ে যায়—কারণ অনুভব করা যায়, কানাইচরণকে হয়তো আর কোনো নতুন কেসে দেখা যাবে না। এক অব্যক্ত শূন্যতা থেকে যায়, যেন এক প্রিয় চরিত্রকে বিদায় জানাতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, এটি কেবল একটি রহস্যকাহিনি নয়—এটি এক গভীর আবেগময় যাত্রা, যেখানে গোয়েন্দাগিরির আড়ালে লুকিয়ে আছে জীবন, একাকিত্ব আর মানবতার অনন্ত অনুসন্ধান।
Profile Image for Trinamoy Das.
100 reviews10 followers
June 14, 2025
কানাইচরণের সাথে সাক্ষাৎ এক বান্ধবীর কথা শোনার পর। আমাদের একখান ব্যর্থ বুকক্লাবে (ডিজিটাল) এই ডিটেকটিভের কথা তুলেছিল সে। বলেছিল "কলকাতা নুয়া" বইটা পড়ে দেখতে, তিনটে অদ্ভুত কেসের গল্প রয়েছে।

"কলকাতা নুয়া", নুয়া মানে সেই noir। ওই noir এর টানেই প্রথম বইটা কিনি, তারপর থেকে এই সিনিয়র ইন্সপেক্টরের গল্পে মজে রয়েছি।

"কলকাতা নুয়া" আর তার পরবর্তী উপন্যাস "অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহাবশেষ উদ্ধার" নিয়ে অনেক লাফালাফি করেছি। ফি বচ্ছর বইমেলা গেছি, বন্ধুদের বৈভাষিকের স্টলে টেনে নিয়ে গিয়ে বইগুলো কেনার জন্য রীতিমতো ব্যুলি করেছি। পাঠপ্রতিক্রিয়াও লিখেছিলাম বোধহয়, কিন্তু সেইসব কোথায় ভেসে গেছে।

তৃতীয় বই, "বর্ষণ অধিক" নিয়ে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। "অজ্ঞাতপরিচয়" পড়ার পর আমি হয়তো আরেকটা জম্পেশ পুলিশ প্রসেডিউরাল আশা করেছিলাম, কিন্তু "বর্ষণ অধিক" সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছিল, ওটা একদম অন্যরকমের বই। ভেজা বিষণ্ণতা ঘিরে ধরেছিল বইটা শেষ করার পর, তাই আলোচনা তেমন করি নি।

তারপর আমিও ভেসেভুসে অনেকদিন লেখা আর পড়া থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। তাই, যখন ঘোর কাটলো আর আমি বইমেলায় এলাম, তখন জানতে পারলাম যে রাজর্ষিবাবু এর মধ্যে আরেকখান আস্ত উপন্যাস লিখে ফেলেছেন। চাঁদ হাতে পাওয়ার মত ব্যাপার, মশাই; ফেব্রুয়ারিতে ক্রিসমাস, ইত্যাদি।

চতুর্থ বইটার নাম বেশ গালভরা। "অবান্তর কথার ভিড়ে আছে।" বইটা না পড়েই বোঝা যায় জেরার কথা বলা হচ্ছে, যেখানে অবান্তর একগুচ্ছ কথার মধ্য থেকে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক তথ্যটুকু ছেঁকে তুলতে হয়। যেকোনো গোয়েন্দার বেসিক স্কিলের মধ্যে এটা থাকতেই হবে। টাইটেল নিয়ে এত কপচাচ্ছি, কারণ নামটা বেশ ভাল লেগেছে। পিনাকী দের কুয়াশা মাখা প্রচ্ছদে, আবছায়া কিছু মানুষের উপর গাঢ় হলুদ রঙের টাইটেলটা যেন সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্পের আলো।

উপন্যাসের শুরুতে, রাজর্ষিবাবু আর্থার কোনান ডয়েল সুলভ বিরক্তির সঙ্গে জানিয়েছেন "এই শেষ গোয়েন্দা কানাইচরণ," তাই শেষটুকু তে কী হয়েছে সেটা বললে, ওটা আর স্পয়েলার হয় না। হ্যাঁ, এই চতুর্থ বই কানাইচরণের শেষ উপন্যাস। রহস্য আর পুলিশি গল্প থেকে লেখক বোধহয় ছুটি চাইছেন; কষ্ট লাগলেও ওনার ইচ্ছেকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কীই বা করতে পারি আমরা পাঠকেরা?

শেষ উপন্যাস মানেই যে বহুৎ ধুমধাড়াক্কা হবে, কানাইচরণ হঠাৎ পুলিশি কার চেস করবেন কলকাতার রাস্তায়, চার পাঁচটা অ্যাকশন সিন থাকবে... এইসব আশা মোটেই করি নি; সেই ধাঁচের গল্প পড়তে হলে বাজারে শয়ে শয়ে থাকা যে কোনো "হট-কচুড়ি" বই কিনে ফেললেই পেয়ে যেতাম। আমার মত মাথামোটা পাঠক আগের মতই পুলিশ প্রোসিডিউরাল নিয়ে গল্প চেয়েছিল। সেটা তো পেয়েছিই, উপরিপাওনা হিসাবে উপন্যাসটা সাধারণ রহস্য গল্প ছাড়িয়ে অসংখ্য ডালপালা ছড়িয়ে ফেলে��ে।

এটারও শুরু কিন্তু একটা "পেটি" কেসকে নিয়েই। বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী পরিক্ষিৎ রক্ষিতের মেয়ে নিরভানা নিরুদ্দেশ। কানাইচরণ হোমিসাইডে থাকা সত্ত্বেও, ম্যানপাওয়ারের অভাবে এই কেসে জড়িয়ে গেলেন। আপাতদৃষ্টিতে একটা সহজ সরল কেস আস্তে আস্তে ক্রমশ জটিল হতে শুরু করল। নিরভানার সঙ্গী তনুময়ের মৃতদেহ, কলকাতা থেকে বহুদূরে বর্ধমান লাইনে নিরভানার মোবাইল উদ্ধার, ইত্যাদির কারণে জটের পর জট লেগে সবকিছু ঘেটে গেল তদন্ত শুরু হওয়ার দিনেই। তারপরের ঘটনাগুলো আর নাহয় নাই বললাম।

"অবান্তর" উপন্যাসের পেসিং কিন্তু আগের উপন্যাসগুলোর তুলনায় বেশ দ্রুত। অনেক সময় বাক্যগুলো পর্যন্ত ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে পাঠককে তাড়া দিতে থাকে, যেন তাড়াতাড়ি বইয়ের পাতা না উল্টালে কুয়াশা সবকিছু মুছে ফেলবে।

এই কুয়াশা রূপক হয়ে গেছে মূল রহস্যের প্রচ্ছন্নতার। পুরো কলকাতা শহরটাই শীতের দাপটে জবুথবু হয়ে রয়েছে-- হেঁদুয়া থেকে টালিগঞ্জ, বউবাজারের চশমার দোকান থেকে এসপ্ল্যানেডের চাইনিজ দোকান, সেসিল বার থেকে অলি পাব। তার মধ্যে কয়েকজন পুলিশকর্মী সেই কুয়াশাভেদ করে সত্যিটা খোঁজার চেষ্টা করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বারে বারে। আদিম কুয়াশার সামনে নতুন প্রযুক্তিও হার মেনে যায়। শুনতে হয়, "ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কিছু লাভ হবে না। বাইরে দেখুন, কুয়াশা জমতে শুরু করেছে।" এই প্রচ্ছন্নতার কথা বারবার ঘুরেফিরে আসে উপন্যাস জুড়ে-- ধন্দ জাগে কেসের প্রতিটা ঘটনা নিয়ে। অপহরণ না স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ? খুন না সুইসাইড?

এই প্রচ্ছন্নতা নিয়ে সিআইডি অফিসার করতোয়া একটা সুন্দর কথা বলেছেন, "প্রচ্ছন্ন তো আমাদের কাছে, মানে আমরা যারা দূর থেকে এই ঘটনাসমূহকে দেখছি। যে বা যারা এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বসে আছে, বা ঘটনার নিয়ন্তা, তাদের জন্য কিছুই প্রচ্ছন্ন নয়! যে ছাত্রী তার গৃহশিক্ষকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে গোটা পরিবারকে খুন করে, যে ছেলেটা তার বন্ধুর সঙ্গে প্ল্যান করে নিজেই নিজেকে অপহরণ করে, তার নিজের কাছে কি সবকিছু কাচের মত স্বচ্ছ নয়?"

প্রচ্ছন্নতা উন্মোচন হয়েছে সেই ক্লাইম্যাক্সে, অসাধারণ এক স্লো-বার্ন জেরার মাধ্যমে। অবান্তর একগুচ্ছ কথার মধ্যে সত্যিটা খুঁজে পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেছি। অদ্ভুত অপরাধ আর কানাইচরণের যুগল নতুন ব্যাপার নয়। "পাইস হোটেলে হত্যা" আর "চড়ুই-হত্যা রহস্য" দুটো গল্পতেই অত্যন্ত অদ্ভুত মোটিভ ছিল "হত্যাকারী" দের। শেষ উপন্যাসেও সেটার ব্যতিক্রম হয় নি (সাইড নোট - কোনওদিন ভাবি নি ইংরেজি মাস্টার্স শেষ করার পর এই নিৎচা, সিঁমন আর সার্ত্রে কে নিয়ে ভাবতে হবে, কিন্তু এই তো জীবন, কালীদা; আর কিছু বললুম না)।

বিষণ্ণতা আর কানাইচরণের যুগলও অনেকটা পুরনো, সেই প্রথম গল্প থেকেই। পুরো চিমটিকাটা হাস্যরসের মধ্যেও সেই বিষণ্ণতা চাপ-চাপ হয়ে জমে রয়েছে। পুরো পুলিশ ফোর্স হোটেলে তদন্ত করতে গিয়ে খেয়াল করে না, সিসিটিভি ক্যামেরা চলছিল বটে, শুধু মনিটরের কেবলটা খোলা। শেষে কমবয়সী পল্টু এসে সমস্যার সমাধান করে। আবার অন্যদিকে গম্ভীর সিআইডি অফিসার করতোয়া রাহা তদন্তের রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারাদের খোঁজে।

বিষণ্ণতা গ্রাস করে কানাইচরণের জগৎ। এই যে রাজখোঁচড় ভানু সমাদ্দার, যাকে আমরা দেখেছি অটল, অজেয় পর্বতের মত, তাঁকেও যেন কুয়াশা গ্রাস করে ভক্ষণ করে ফেলে। তাঁর বার্ধ্যকের একাকীত্ব বোঝানো হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে,

"এমনি উঠে এলাম। ছেলে-বউমার সঙ্গে মনোমালিন্য কিছু নেই। তবু এই বয়েসটাই একা থাকা ভালো। বলে ভানু ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে লম্বা টানা বারান্দায় পড়ে রইল শুধু গাছের পাতা আর রেলিংয়ের ফাঁক গলে আসা সোডিয়াম ভেপারের আলো-আঁধারি।"

এই আলো আর আঁধারের কথা উঠে এসেছে উপন্যাসের শেষপ্রান্তে, যখন সৌভিক কানাইচরণের ফাঁকা আবাসনে আসে তার মেন্টরের খোঁজে।

"...সৌভিক... পুরো অন্ধকার সিঁড়িঘর থেকে সোডিয়াম ভেপারের হলদে আলোয় উদ্ভাসিত পুলিশ আবাসনের রাস্তায় ফিরে আসে।"

জীবনের শেষে, এই একাকীত্ব আর একঘেয়েমি যেন মৃত মহাদেশের মত কানাইচরণ আর ভানু সমাদ্দারের পায়ের কাছে এসে উপস্থিত হয়। সেই মহাদেশের বিস্তৃতির সামনে দুই ঝানু লোকই মাথানত করতে বাধ্য হয়।

"অবান্তর" ইন্সট্যান্ট ক্লাসিক বলে লাফাতে চাই না। আজকাল সবাই "মাস্টারপিস" কথাটাকে খেলো করে দিয়েছে, সেই উপমাও লাগাতে চাই না৷ উপন্যাসের পেসিং-এর জন্য মনে হয়েছে বেশ কিছু ঘটনা খোলতাই করে আর বলা হয় নি। ডিটেকটিভ স্কোয়াডের কিছু কিছু চরিত্র ভাল লেগেছে কিন্তু তাদের উপস্থিতি এত কম যে, একটু হতাশ হয়েছি। মাঝে দুটো ইন্টারল্যুডের মত অধ্যায় রয়েছে, সেই "অজ্ঞাতপরিচয়"-এ যেমন ছিল, কিন্তু এই উপন্যাসে সেগুলোর উপস্থিতি তেমন কাম্য ছিল না মনে হল। তবু এত অভিযোগ পেরিয়ে বলতে পারি, কানাইচরণ সিরিজের সমাপ্তি এর থেকে সুন্দর হওয়া হয়তো আর সম্ভব নয়। সেসিল বারে বসে সৌভিক আর দিদিমণি হয়তো কানাইকে মিস করবে প্রচুর। আমরা পাঠকেরাও করবো।
Profile Image for Bornik C.
108 reviews
August 1, 2025
একটি টানটান গল্প , তবে গোয়েন্দা কানাই চরণের উপস্থিতি একটু কম। কীভাবে পুলিশ একজন অপরাধী সনাক্ত করে তার বিশ্বাসযোগ্য বিবরণ আছে।
তবে শেষে খুনের মূল কারণ টা না জানা যাওয়াতে মনটা খচ খচ করছে। এছাড়া এটাই গোয়েন্দা কানাই চরণের শেষ উপন্যাস ঘোষিত হওয়ায় দুঃখ পেয়েছি। গল্পের মাঝে জানা গেলো এখনো আড়াই বছর বাকি অবসর নেওয়ার আগে কিন্তু দুদিনের মধ্যেই অবসর নিয়ে ফেললেন দেখে খারাপ লাগলো।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,780 reviews357 followers
July 10, 2025
রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের অবান্তর কথার ভিড়ে আছে— বইটা শেষ করলাম আজ সকালে। শেষ পাতাটা উলটে আবার প্রথম পাতায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করল, তবুও যেন বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো না, বরং আরও এক অদৃশ্য পথ খুলে গেল।

নিরভানা রক্ষিত নিখোঁজ হয়েছেন। কে তিনি, তা প্রথমদিকে অজানা থাকলেও, তাঁর চারপাশ গড়ে ওঠা ধোঁয়াশা এক সময় পাঠককে চেপে ধরে। তাঁর বাবা, সেলেব্রিটি গায়ক পরীক্ষিৎ রক্ষিত, লালবাজারে অভিযোগ জানান। ফোনের লোকেশন বর্ধমানের এক গ্রামে, অথচ সেখানে নিরভানা নেই—আছে শুধুই সন্দেহ আর স্ট্যাটিক সিগন্যাল। এরপর পাওয়া যায় তাঁর পুরুষসঙ্গী তনুময়ের মৃতদেহ। আত্মহত্যা না খুন—পুলিশ দ্বিধায় পড়ে যায়। সিসিটিভিতে দেখা যায় নিরভানা হোটেল ‘রিবারা’ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, আর তারপর... কুয়াশা।

এই উপন্যাস পড়ে বুঝলাম, গল্পটা নিখোঁজ এক তরুণীর নয়—এটা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া শহরের গল্প। কোলাহলের নিচে ঢাকা পড়ে থাকা অব্যক্ত কলকাতার গল্প। শীতের সোডিয়াম আলোয় ভিজে থাকা ফুটপাথ, মানিকতলার সাট্টার ঠেক, এন্টালির ঘুপচি ভাড়া বাড়ি, ধর্মতলার বাস গুমটি—এই সব এলাকা বইতে শুধু পটভূমি নয়, চরিত্র হয়ে ওঠে।

কানাইচরণ এই উপন্যাসে তার চিরাচরিত স্বভাবে রয়ে গেলেও, এবার যেন তাঁর ছায়া আরও দীর্ঘ, আরও ক্লান্ত, আরও গভীর। করতোয়া আর সৌভিককে নিয়ে কানাই শুধু তদন্ত চালান না, তিনি খোঁজেন ভাষার ভেতরে লুকিয়ে থাকা অর্থ, অবান্তর কথার ভেতর লুকানো চিহ্ন। উপন্যাসের গদ্য একেবারে নির্ভুল। কাঁচা, চিমটি কাটা, অথচ নিটোল। প্রতিটি দৃশ্য সিনেমাটিক, কিন্তু কোনও বাড়াবাড়ি নেই। গল্প চলতে থাকে নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়েখুঁড়ে নয়, বরং চোখের আড়ালে জমে থাকা অভিজ্ঞতাগুলোর ম��দু চাপে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে দিকটা আমার মনে হয়েছে, তা হল এই কাহিনির রেসোলিউশন—অথবা বলা ভালো, রেসোলিউশনের অভাব। উপন্যাস শেষে যেমন নিরভানা পাওয়া যায় না, তেমনি পাঠকের মনে একরাশ অস্বস্তিও রয়ে যায়। সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না, কারণ বাস্তবে সব উত্তর পাওয়া যায় না। একজন মানুষ কেন হারিয়ে যায়—এই প্রশ্নের উত্তর একটা লাইনে ধরা যায় না।

এখানে লেখকের অলঙ্কারবোধ অনবদ্য, কিন্তু ক���নওই ভারিক্কি নয়। চুমুক দিয়ে খাওয়ার মতো ছোট ছোট লাইন, যেন রোদ পোহানো চা। বারবার ভাবতে হয়—এই তো সেই কলোনির দোকান, যেখানে কর্পূর দাস টাক লুকিয়ে রাখেন টুপি দিয়ে, যেখানে সিসিল বারে ওয়েটার আজও কানাইয়ের পয়সা নেয় না খাবারের জন্য, কেবল ড্রিঙ্কসের জন্য নেয়। শহরের টুকরো স্মৃতি, পুলিশের হাবভাব, কেস ফাইলের পাতায় জমে থাকা নিঃশব্দ হাহাকার—সব মিশে যায় এক গাঢ় কুয়াশায়।

এবারের কাহিনিতে লেখকের হিউমার আগের চেয়েও ধারালো। পল্টু চরিত্রটি অনেক ছোট জায়গা পেলেও দারুণভাবে জায়গা করে নেয়। আর করতোয়ার উপস্থিতি ভবিষ্যতের কোনো নতুন গল্পের ইঙ্গিত দেয় কি না, কে জানে। লেখক নিজেই বলছেন, এটা হতে পারে কানাইচরণের শেষ কাহিনি। যদি তাই হয়, তবে বেশ এক ধাক্কা লাগে বুকের ভেতর। তবে সেই শেষটাও ঠিক “শেষ” নয়, বরং একটি দীর্ঘ প্রতিধ্বনি—যেটা পাঠকের সঙ্গে থেকে যায়।

এই উপন্যাসটিকে সহজভাবে থ্রিলার বলা যায় না। এখানে খুন আছে, নিখোঁজ রহস্য আছে, কিন্তু সেই সবের থেকেও বেশি কিছু আছে—একটা অন্তর্নিহিত সমাজচিত্র, এক অদ্ভুত বিষণ্ণ কলকাতা, আর এক ধরনের ক্লান্তিপূর্ণ প্রেম, যা ভাষা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় পাঠকের মনের গভীরে। যেন একটা এলোমেলো কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে সত্যের লুকিয়ে থাকা রূপরেখা।

শেষে এসে মনে হয়, নামটা যথার্থ—অবান্তর কথার ভিড়ে আছে। সত্যিই, সেই অবান্তরের ভিড়ের মধ্যেই যে কতখানি ব্যথা, বেঁচে থাকা, ভুলে যাওয়া আর হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়া, তা খুঁজে পাওয়া যায় একমাত্র এই উপন্যাসের পাতায়।

পাঠ শেষ। কিন্তু কানাই রয়ে যায়। আর রয়ে যায় এই গাঢ় ধূসর অনুভূতি: কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু যে হারিয়ে যেতে চায়—তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

এই উপন্যাস শুধু পড়া নয়, অনুভব করার মতো। আর কানাই? তাঁকে বিদায় জানানো যায় না। তাঁকে শুধু বলা যায়, “আসবেন তো আবার, ইন্সপেক্টর?”

লেখককে শুভেচ্ছা।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Journal  Of A Bookworm .
134 reviews9 followers
August 28, 2025
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া- ৪৫/২০২৫

অবান্তর কথার ভিড়ে আছে
লেখক - রাজর্ষি দাশ ভৌমিক
প্রকাশক - বৈভাষিক
মূল্য - ৫০০/- টাকা।।

বছরের ৪৫ নম্বর বই গোয়েন্দা কানাইচরণ এর কাহিনী অবান্তর কথার ভিড়ে আছে।। বইটি এই বছর কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার পর যখন জানতে পারি এইটাই লেখক অনুসারে শেষ কানাইচরণ কাহিনী তখন মনটা বেশ খারাপ হয়েছিল।। লালবাজারের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ইন্সপেক্টর কানাইচরণ এবং তার সাগরেদ সৌভিক কে নিয়ে এই নিয়ে ৪ নম্বর রহস্য উপন্যাস।। পাঠক যদি চূড়ান্ত থ্রিলার এর খোঁজে এই সিরিজ পড়েন তাহলে কিন্তু নিরাশ হতে বাধ্য।।

বড়োবাজারের হোটেল 'রিবারা' থেকে উদ্ধার হয় নিরভানার সঙ্গী তনুময়ের দেহ!
পুলিশ বুঝতে পারে না আত্মহত্যা না খুন।। সিসিটিভিতে দেখা যায় নিরভানা হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।। এই সিসিটিভি যেন গোটা শহর জুড়ে সহস্র চোখ ছড়িয়ে রেখেছে।। নিরভানার হারিয়ে যাওয়ার পথটি অনুসরণ করে কানাই, সৌভিক ও করতোয়া চলে যাচ্ছেন কলকাতার পাতালে, মানিকতলার সাট্টার ঠেক থেকে এন্টালির ঘুপচি ভাড়া বাড়ি, ধর্মতলার বাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের গুমটিতে।।
শীতকালের উচ্ছ্বাস ও উল্লাসের নীচে মলিন-বিবর্ণ-ধূসর শহর।। কথার পিঠে কথা চাপছে এই কাহিনিতে; প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় ও অবান্তর কথার মধ্যে থেকে কানাইদের তুলে নিতে হবে জরুরি তথ্যটুকু, শীতের কুয়াশা সবকিছু গ্রাস করার আগেই।।
একটি নিখোঁজ মেয়ে এবং একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু, শুনে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে না?? মনে হচ্ছে না গল্পের শেষে অপেক্ষা করছে কোন একটা বিশাল বড় এক টুইস্ট।। গল্পের শেষে চমক তো আছেই, কিন্তু সেই চমক পাঠক হিসেবে কতটা স্বস্তিকর তার বিচার আপনারাই করবেন।। লেখক এখানে পাঠকের মনের সাথে খেলছেন বারবার।।

পাঠ প্রতিক্রিয়া -
আমার যেটা মনে হয় লেখক বারবার এই সিরিজের গল্প গুলোর মাধ্যমে পাঠককে তাদের কমফোর্ট জোন থেকে ইচ্ছে করে বাইরে নিয়ে এসে ফেলছেন এবং নিজস্ব একটা স্পেস তৈরি করেছেন।। পাঠক এই গোত্রের লেখাগুলিকে পুলিশ ইনভেস্টটিগেটিভ থ্রিলারের গোত্রভুক্ত করতে পারেন, যেখানে অপরাধী হয়তো গোটা বইতে পাঠকের সামনে আসেই নি।। ওল্ড স্কুল তদন্ত প্রক্রিয়া, প্রত্যেকটা সূত্র খুঁটিয়ে দেখা, সেখান থেকে শুধুমাত্র দরকারি তথ্য টুকু নিয়ে কেস সাজানো এই সকল কিছুই কানাইচরণ সিরিজের মূলপাঠ্য।। উপন্যাসে ঘটে যাওয়া একটি বা একাধিক অপরাধের মাধ্যমে লেখক তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বর্তমান এবং তৎকালীন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি।। এই বইয়ের প্রত্যেকটি বিষয় লেখক অত্যন্ত সুচতুর ভাবে সাজিয়েছেন, পাঠকের সামনে একদম সাজিয়ে দেননি, ছেড়েছেন পাঠকের মননের উপর, যেমন ধরুন জে সি সাহেবের সাথে কানাই এর ক্লাবে যে মিটিং টি হয়, তার বিবরণ থেকে অনেক কিছুই মনে করা সম্ভব, কিন্তু লেখক নিজে থেকে কিছু বোঝাননি।। আর এই ব্রিলিয়ান্ট লেখনীর ব্রিলিয়ান্ট মুহূর্তগুলোই উপন্যাস এবং কানাই সিরিজটিকে আলাদা করেছে।। কিছু জিনিস এতটা ঝাপসা না ছাড়লেই হত।। গল্পের শেষের দিকে কানাই বাবুর হঠাৎ অনুপস্থিতি মনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে।।
আর এই উপন্যাসের আরেকটা ভালো দিক হলো রেজোলিউশন এর অভাব, ক্রাইম এর মোটিভ যেমন পাওয়া যায় না, তেমনি একটি অস্বস্তি কিন্তু পাঠকের মনে থেকেই যায়।। সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না কারণ বাস্তবে সব প্রশ্নের উত্তর হয় না।। কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু যে হারিয়ে যেতে চায় তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।।
এটুকু অনুরোধ করবো এই বইটিকে একবার অন্তত পড়ুন।।
45 reviews2 followers
June 15, 2025
এই সিরিজের শেষ গল্প তবে শেষ টা ঠিক জমলো না
Profile Image for Joydeep Chatterjee.
54 reviews7 followers
August 24, 2025
পাঠক হিসেবে কানাইচরণ সিরিজের ভক্ত হলেও শেষ খণ্ডটি পড়ে যে প্রতিক্রিয়া:

মন্থর, মেধাহীন এবং 'অবান্তর'!
Displaying 1 - 9 of 9 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.