ছড়ায় মোড়া রহস্য। একটা রহস্যের সমাধান করতেই পাওয়া যায় আরেকটি ছড়া। অয়ন, জিমি ও রিয়া তিনজন মিলে একের পর এক সেসব ছড়ার সমাধান করতে থাকে। এভাবে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছায় তারা! তারই রুদ্ধশ্বাস গল্প এ বই।
নিজের জন্য একটি কম্পিউটার কিনবে বলে অয়ন কাজ নেয় একটা দোকানে। যেখানে পুরোনো অ্যান্টিক জিনিসপত্রও বিক্রি করা হয়। একদিন এক মহিলা দোকানে এসে ইঙ্গলউড কোম্পানির পুরোনো খেলনা চায়। কিন্তু অয়ন তাকে সাহায্য করতে পারে না। পরে আরেকজন লোক এসেও সেই একই কোম্পানির কোনো বিশেষ খেলনার চাবি খোঁজে। যাওয়ার সময় লোকটা একটি কাগজ ফেলে যায় দোকানে। তাতে একটি ছড়া লেখা। গোয়েন্দা অয়ন ছড়াটি পড়েই কী রকম রহস্যের গন্ধ পায়। জিমিকে নিয়ে সেই রহস্য উদ্ধারের কাজে লেগে পড়ে সে। রিয়াও থাকে তাদের সঙ্গে। অয়ন ও তার সাথিদের সে রুদ্ধশ্বাস অভিযানের গল্প নিয়েই এ বই।
রহস্যময় কারিগর, অদ্ভুত খেলনা, হারানো মাস্টারপিস, একের পর এক ধাঁধা... একজন গোয়েন্দার জন্য আর কী চাই!
একজন রহস্যকাহিনী-পাঠকের জন্যও বোধহয় এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না! খুবই ভালো একটা রহস্যকাহিনী। শেষটাও অনবদ্য আর সম্পর্কের বিষয়টা আনায় পেয়ে গেছে অন্য মাত্রা।
কেবল ইঙ্গানিয়ার মানেটা রিয়ার মতো আমিও খুঁজে পাচ্ছি না। ☹️☹️☹️
সম্পূর্ণ রহস্যটা অ্যাতো দুর্দান্ত-অ্যাতো আকর্ষণীয়-অ্যাতো উত্তেজনাকর, একটার পর একটা জটিল থেকে মহাজটিল সব ছন্দমেলানো ধাঁধাঁর ছড়া (লেখক ইসমাইল আরমান কেবল এই বাংলা কাব্যিক ধাঁধাঁগুলোর জন্যই পাঁচ তারা ডিজার্ভ করেন), একটার পর একটা জটিল থেকে মহাজটিল সব সূত্র টেনে নিচ্ছে পরের সূত্রতে (বার বার তিনগোয়েন্দার ক্লাসিক বুদ্ধির ঝিলিক মনে করিয়ে দিচ্ছিল!)..... যে শেষ রহস্যভেদ, শেষ প্রকৃত উত্তর, শেষ "মাস্টারপীস"টা একেবারে সব থ্রিলে বরফ ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিয়ে জমজমাট রহস্যের আমেজটা, পড়ার মেজাজটা পুরোপুরি নষ্ট করে দিলো। সিরিয়াসলি, এইডা কিসু হইলো??!! বাংলা নাটক প্লাস বাংলা সিনেমার ডবল স্যাকারিন সুইট মেলোড্রামা ওভারলোডেড। 😑
শেষের দিকে গিয়ে খানিকটা আন্দাজ পেতে শুরু করেছিলাম, তবুও আশা হচ্ছিল অয়ন-জিমি সিরিজের অতীত ইতিহাস বলে শেষ মুহূর্তেও ঘটনাক্রমের হঠাৎ বেমক্কা টার্নে রহস্যময়/কিংবদন্তীর/বহুকালের হারানো কিছু একটা ঠিকই উন্মোচিত হয়ে যায়... কিসের কি। কাহিনিটা এহেন ভিন্টেজ জটিল ধাঁধাঁ সমাধানের মাধ্যমে গুপ্তধন উদ্ধারের মতো টানটান রোমাঞ্চকর আর আগ্রহোদ্দীপক না হলে এভাবে মেজাজ গরম হতো না।
সত্যি বলতে, বইয়ের অন্তিম মেসেজটা যাদের টার্গেট করে লেখা সেই শিশু-কিশোরদের জন্যই উপযুক্ত, বাস্তবজীবনের জটিলতার ঊর্ধ্বে সহজসরল পজিটিভিটির শিক্ষা, পজিটিভ চিন্তা করতে শেখানোর এই সিনিক্যাল যুগে প্রয়োজন আছে। সমস্যা হচ্ছে আমি সিনিক্যাল সময়ের এক সিনিক্যাল বুড়োপাঠক, চাইলেও জীবনকে আর অতোটা সরল ভাবে দেখতে পারি না। তাই কেবল আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে: শেষাংশ টুকু বাদ দিলে অনায়াসে ৫/৫, এন্ডিং-এর জন্য ১.৫/৫, গড় করে ৩-৩.৫/৫।
ছড়ায় ছড়ায় ধাঁধা! একটি সংকেত উদ্ধার করলেই, সামনে আবার বাঁধা!!
আজব কারিগরের সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে এরচেয়ে ভালোভাবে বলা সম্ভব নয়। বইটা পড়ে চমৎকৃত হয়েছি। সেই আদি তিন গোয়েন্দা আমলের ক্লাসিক বুদ্ধির ঝিলিক/কাকাতুয়া রহস্য বা ঘড়ির গোলমাল গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়।
লম্বা বিরতির পরে অয়ন জিমির সাথে রিয়ার দেখা পেয়ে খুবই ভালো লেগেছে। আর রিয়ার গুরুত্বও ছিল কাহিনিতে বেশ। বিরক্ত লাগছিলো জিমিকে, সব কিছুতেই হায় হুতাশ৷ এ হবে না, তা হবে না, এভাবে সম্ভব না... এসব একেবারেই গোয়েন্দা সুলভ আচরণ না। লাস্টের দিকের ভূমিকাটুকু রেখে নিজের মুখ রেখেছে বেচারা। আর অয়ন তো অয়নই।
বইয়ের মেসেজটা খুবই স্ট্রং, অন্তত যে বয়সের পাঠকদের মাথায় নিয়ে লেখা, তাদের জন্য খুবই চমৎকার শিক্ষামূলক একটা গল্প। পাশাপাশি, পুরো কেস সমাধান করে আবার তা আগের মত করে রেখে দেওয়া, এ ধরনের ব্যাপার বোধহয় আজব কারিগরেই প্রথম পড়লাম। প্রথমে খুবই অবাক হলেও পরে বেশ সন্তুষ্টই হয়েছি।
আজব কারিগর সব অয়ন-জিমি কিংবা তিন গোয়েন্দা পাঠকদের ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে।
এক বসায় পড়ার মতো একটা বই, কিন্তু পড়লাম বহু বসায়। দোষটা বোধহয় বইয়ের কাগজ কিংবা বাঁধাইয়ের! এই রহস্যটা এখনও সমাধান করে উঠতে পারিনি। যতই মেলে ধরি দুই হাতের চাপে, আঙুলের বাঁধন একটু আগলা হলেই পাতা বন্ধ হয়ে আসতে চায়! কি যে বিপদ! সে যাই হোক, গল্পটার রহস্য বেশ অন্যরকম, যদিও কাহিনীর ৬০-৬৫ শতাংশে এসে আমি বুঝে গেছি আসল কাহিনী কি, আর সবকিছু কেন ঘটছে। তবুও শেষটায় গিয়ে ভালোই লেগেছে। গল্পে বেশ কিছু ধাঁধা ছিল, সেগুলো গোয়েন্দারা সমাধান করেছে, আমি সেইগুলো নিয়ে বিশেষ ভাবিনি- কারণ এতো ভেবে হবেই বা কি! রিয়া থাকলে গল্প এমনিতেই জমে যায়। জিমির সঙ্গে রিয়ার ঝগড়াগুলোই বিশেষ ভালো লাগা। এছাড়া অয়নকে ধস্তাধস্তি করতে দেখা গেল কিছুক্ষণের জন্য, কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছি তাতে। সব মিলে চমৎকার একটা কিশোর উপন্যাস।
ইসমাইল আরমান এর লেখা "অয়ন জিমি" কখনোই হতাশ করে না,এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।রহস্য,ধাঁধা, তিনজনের খুনসুটি,কাহিনির চমকে দেওয়া মোড়(অয়ন এর আঘাতকারীর পরিচয় পেয়ে সত্যি কয়েক সেকেন্ড থমকে গিয়েছিলাম) আর সবশেষে চমৎকার ending. তবে হাসি মজার ছলে জিমি যেনো কখনো কখনো একটু বেশি-ই অপ্রাসংগিক হয়ে যায়।অন্য দুজনের চেয়ে মাথা কম খাটালেও মাঝে মাঝে যেন একেবারেই বোকার পরিচয় দিচ্ছে,কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই comment করছে,কখনোই কোনো সূত্র পেলে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না বরং প্রত্যেকবার-ই বাকিদের ধরিয়ে দিতে হচ্ছে,কোনো বিষয়েই যেন ওর knowledge নেই অথচ শারিরীক ভাবে দক্ষ হয়ার পাশাপাশি ও তো class এর second boy ও ছিল। কিন্তু শেষ অংশে জিমির portion টুকু পুরা বই পড়ে যে হতাশ হতাশ লাগছিল, তা কিছুটা হলেও কমিয়েছে।
অয়ন-জিমি সিরিজ সবসময়-ই খুব পছন্দের,প্রত্যেকবার একটা পড়া শেষ করে অধৈর্য্য হয়ে যাই আরেকটা কিনার জন্য।এবারের গল্প টা তে অন্যরকম সুন্দর একটা message ছিল।