Jump to ratings and reviews
Rate this book

জীবনের জলছবি

Rate this book
Reminiscences of a 20th century Bengali woman author

388 pages, Hardcover

Published January 1, 1993

16 people are currently reading
192 people want to read

About the author

Protiva Bose

43 books18 followers
Protiva Bose (also spelled Pratibha Basu; Bangla: প্রতিভা বসু) was one of the most prolific and widely read Bengali writers of novels, short stories, and essays. She has written 200 books, all of which have been commercially successful. Several of her novels have been made into successful movies. She was known as Ranu Shome before she married the famous Bengali writer, Buddhadeva Bose.

She was born in Bikrampur, a village near Dhaka. She was awarded 'Bhubonmohini' gold medal from the University of Calcutta for her contribution in Bengali language and literature and Ananda Purashkar. Her granddaughter Kankabati Dutta is also a well-known writer in Bengali.

Bose was also famed as an singer of popular songs. The poet Kazi Nazrul Islam, singer Dilip Roy, and Rabindranath Tagore admired her voice and taught her their own songs. She made her first LP at the age of 12 and continued until the 1940s, when she gave up singing and started writing. She was soon a best seller and publishers fought against each other for her books.

She was a great lover of animals and was paralyzed from head to toe in 1972 because of an adverse reaction to an anti rabies shot, which was necessary as she was rescuing stray dogs who had rabies. She died in 2006.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
28 (45%)
4 stars
21 (34%)
3 stars
7 (11%)
2 stars
3 (4%)
1 star
2 (3%)
Displaying 1 - 16 of 16 reviews
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,357 followers
August 8, 2016
ইয়ে, শ্রীযুক্তা প্রতিভা সোমের প্রতি আমার একটু বাড়তি টান আছে।
তার কারণ সাধারণ, মহিলার লেখা পড়তে ভারি আরাম!
এ বইটা প্রথম পড়ি বোধহয় ক্লাস এইটে, খালার বাসার শেলফ থেকে নামিয়ে। পড়ে ভাল লেগেছিলো বলে পরে, নিজে কিনেছিলাম আবার। বইয়ের প্রথম পাতায় সিলমোহর দেখছি--
'উজালা বুক স্টল, বিপণি বিতান (উত্তরাংশ নিচ), চট্টগ্রাম।'

দুই ভাইয়ের দোকান ছিলো ওটা। এখন ওখানে ক্যাটস আইয়ের শোরুম, বোধহয়।
বইপোকাদের সেই বাড়ি ভেঙে গেছে কবে...
যাকগে।

ঢাকার বিক্রমপুরের রানু সোমের স্মৃতিকথার শুরুটা সেইসময় থেকে, যখন তিনি নিতান্তই খুকি। প্রতিভা পোশাকি নাম, ঘরের লোকে ডাকতো রাণু বলেই। বাবা-মা দু'জনেই গান অন্তপ্রাণ, কিন্নর কন্ঠী একমাত্র কন্যাটিও তাই। সরলা দেবী, রবীন্দ্রনাথের বোন স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা যার কন্ঠকে বলতেন কানাইবাঁশি গলা। একাধিক রেকর্ড-ও বেরিয়েছিলো। সেই গানের সুত্রেই আবাল্য পরিচয় এবং সখ্যতা বহু গুণীজনের সঙ্গে। সেই তালিকায় বলদার জমিদার নরেন্দ্রনাথ চৌধুরী থেকে শুরু করে, ছিলেন লীলা রায়, কাজি মোতাহার হোসেন,সত্যেন্দ্রনাথ বসু, দিলীপকুমার রায়, এবং খোদ কাজী নজরুল ইসলাম। এই রাণুকে গান শেখাতে গিয়েই নজরুল মার খেয়েছিলেন পাড়ার গুণ্ডাদের হাতে, ঘোর হিন্দুপাড়ায় 'যবন' শিক্ষক (যত বিখ্যাত-ই হোক) স্বাগত ছিলেন না, বলাই বাহুল্য।

বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে গানের সুত্রেই পরিচয় এবং পরিণয়। প্রতিভা সোম থেকে হলেন প্রতিভা বসু। সেই অনুসঙ্গ ধরে পরিচয়ের গন্ডি ছড়ালো আরো, বন্ধুসভায় এলেন সমর সেন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাপদ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে। জীবনে কবিরা এলো, এলো কবিতাভবন। শুধু হারিয়ে গেলো গান, যে গানের জন্য এতো খ্যাতি, এতো পরিচিতি, আমন্ত্রণ ও স্নেহাশিস স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে... স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলেন সেই গান-ই।
একই জলছবি দেখেছি সুগায়িকা এবং সত্যজিৎ পত্নী বিজয়া রায়ের জীবনেও। অতি প্রতিভাবান স্বামীর ছায়ায় নিজের স্বকীয় পরিচিতি হারিয়ে ফেলাই কি বঙ্গদেশীয় গুণবতীদের নিয়তি?

যদিও তখন প্রতিভার প্রতিভা বিকশিত হয়ে উঠেছে লেখার খাতায়। প্রথম উপন্যাসের প্রকাশক'ও কবিতাভবন, সাল ১৯৪০।
এই গাইয়ে- লিখিয়ে নানা সত্বা, জীবনের চড়াই-উৎরাই ও যাত্রাপথের অজস্র বাঁকের খুঁটিনাটি গল্পে মিলিয়েমিশিয়ে আছে ঢাকা, কলকাতা আর বিদেশের নানা শহর-বন্দরের কথা, দেশভাগের কারণে পিত্রালয়ের সদস্যদের নি:সম্বল হওয়ার বেদনার্ত বিবরণ। ভীষণ সংসারী ছিলেন স্বভাবে, সেই জীবনের ফাঁকফোকর ভরান অকালপ্রয়াত একমাত্র পুত্র, কবি শুদ্ধশীল বসু, জেষ্ঠ কন্যা মীনাক্ষী দত্ত এবং কনিষ্ঠা দময়ন্তী। মীনাক্ষী স্বীয় নামে সুপরিচিতা লেখক হিসেবে, দময়ন্তীর খ্যাতি অধ্যাপনায়।
শুধু পারিবারিক পরিমন্ডলের অকপট আত্মকথন নয়, উল্লেখ আছে আরো অসংখ্য গুনীজনের। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-- শিব্রাম চক্রবর্তী, আবু সয়ীদ আইয়ুব, প্রখ্যাত গায়িকা রাজেশ্বরী দত্ত এবং অতি প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ।
বুদ্ধদেব বসু যার নাম দিয়েছিলেন 'নির্জনতার কবি'।

উপকরণ এবং উপস্থাপন গুণে মূল্যবান এই জীবনছবি মনোযোগী পাঠকের জন্য অবশ্যপাঠ্য। :)

Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews238 followers
September 11, 2022
বর্ণাঢ্য একটা জীবনের গল্প কেমন তরতরিয়ে পড়ে গেলাম। যার জীবন সে জানে.. কতটা উত্থান-পতন, কতোটা হাসি-কান্না, আনন্দ, দু:খ-বেদনা মিশে আছে বইয়ের পাতায় পাতায়.. প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে।

শুরুটা আট-দশজন সাধারণ মেয়ের মতোই। পিতৃগৃহে থাকা, বাবা-মা আর অন্যান্য আত্মীয়ের আদরে আদরে বড় হতে থাকা। যেহেতু আমি একজনের স্মৃতিকথা পড়ছি তার মানে এই মানুষটা নেহায়েত এলেবেলে কেউ নন। বিশেষ কেউ। অবশ্য ছোটকাল থেকেই তিনি ছিলেন একদম পাদপ্রদীপের আলোয়, বিদ্রোহী কবি নজরুল-বিখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন বসু-দিলীপকুমার রায়-কবিগুরু রবিঠাকুরের মতো আরও অনেক হাই-প্রোফাইল মানুষজন ছিলেন এই কিশোরী বালিকার গুণমুগ্ধ ভক্ত। তিনি আর কেও নন, রাণু সোম এবং পরবর্তীতে প্রতিভা বসু। বিবাহের পূর্বে যেমন তিনি স্বনামে পরিচিত ছিলেন ঠিক তেমনি বিবাহ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন বিখ্যাত লেখক বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী হিসেবে পরিচিতি পাবার পাশাপাশি নিজেই নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলতে সক্ষম হোন।

প্রতিভা বসুর স্মৃতিকথা 'জীবনের জলছবি' বইয়ে চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে তার শৈশব, কৈশোর, তার গানের জগৎ। যেহেতু তিনি ঢাকার মেয়ে তার বইয়ের কিছু কিছু জায়গায় উঠে এসেছে ঢাকার আদি রূপ। 'রমনার কাছাকাছি শাহবাগ বলে একটা ধূ ধূ প্রান্তর' কিংবা 'আজিমপুরটা তখন বড্ড পাড়াগাঁ'- এরকম লাইন পড়লে বর্তমানের পাঠকদের চমকে উঠতে হয় সত্যি! বারো বছর বয়সে গ্রামোফোন রেকর্ড করে আত্মপ্রকাশ করেন এই কিন্নরকন্ঠী। ভক্তদের মুগ্ধদৃষ্টি ছাড়াও আরেকটা ব্যাপার ছিল তার নিত্যসঙ্গী... প্রতিবেশীর নিন্দা। ঢাকায় নজরুলের মার খাওয়ার ব্যাপারটা তো প্রায় কিংবদন্তিস্বরূপ। তখন অবশ্য ঢাকা-কলকাতা কাঁপাচ্ছেন আরেক যুবক। কল্লোল যুগের অন্যতম স্তম্ভ বুদ্ধদেব বসু। যদিও তিনিও তখন ঢাকার বাসিন্দা তাও রাণুর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয়টা ঢাকায় হয়ে উঠেনি। কলকাতায় আস্তে আস্তে মেলামেশা, খানিকটা পছন্দের শুরু হয় কি হয়নি তারমাঝে বিয়ের প্রস্তাব বুদ্ধদেবের পক্ষ থেকে। অত:পর রাণু সোম অনেকের হৃদয় গোপনে ভাঙচুর করে হয়ে গেলেন প্রতিভা বসু। বইয়ের অর্ধেকের বেশি অংশ ওদের মিষ্টি দাম্পত্য, সন্তান, বুদ্ধদেবের লেখালেখি, তাদের দেশ বিদেশ ভ্রমণ, আড্ডা, তাদের আত্মীয়-স্বজন, দেশভাগ, নানান দু:খ দুর্দশা, তাদের পোষ্য বা সংসারের হালচাল অথবা নানান আনন্দ দু:খের বর্ণনা থাকলেও পুরো বইটায় যা ছিল না তা হলো প্রতিভা বসুর সংসার নামক যাঁতাকল ঠেলে, অমন সাহেবের মতন মেজাজী স্বামীকে মানিয়ে-গুছিয়ে কিভাবে নিজের লেখা লিখবার সময় বের করতেন। প্রতিভা বসুর বইটা পড়লে মনে হবে তিনি বুঝিবা পুরোপুরি গৃহিণী.. অথচ বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে তার অমুক বইয়ের সিনেমার জন্য প্রডিউসার টাকা দিয়ে যাওয়ায় সংসারের এই কাজটুকু নিজেই করে ফেলতে পারলেন বুদ্ধদেবের সাহায্য ছাড়াই এমন কথাও বেশ কয়েকবার এসেছে বইয়ের পাতায়। বই পড়তে যেয়ে জানলাম উত্তম-সুচিত্রার বিখ্যাত মুভি 'পথে হল দেরী'র গল্প লেখিকা এই প্রতিভা বসু।
বইয়ের শুরুটা, মাঝামাঝিটা যতো সুন্দর বইয়ের শেষটাও ততোটাই দু:খের। বুঝিবা এইটাই দুনিয়ার নিয়ম। চিরকাল সক্কলকে সুখী থাকতে দেবেই বা কেন? আর তাই বুদ্ধদেব-প্রতিভার ভালোবাসায় টুবুটুবু হয়ে থাকা সংসারের মাঝে যখন একের পর এক আঘাত আসতে থাকে তখন পাঠক হয়েও বিচলিত না হয়ে পারা যায় না। লেখকদের স্মৃতিকথা কিংবা লেখকের স্ত্রীর স্মৃতিচারণ হিসেবে টুকটাক অনেক বই-ই পড়া হয়েছে। কিন্তু এই বইটা স্পেশাল কারণ স্মৃতির ঝাঁপি যিনি খুলে বসেছেন তিনি নিজেও একজন লেখিকা এবং একজন স্বনামধন্য লেখকের স্ত্রী। অসম্ভব সুন্দর কয়েকটা দিন কাটালাম বইটার সাথে। এই ঘরানার বই পড়তে যারা আগ্রহী অবশ্যই রেকমেন্ডেড।
Profile Image for Meem Arafat Manab.
377 reviews256 followers
April 26, 2017
এক জীবনে অনেকগুলো পরিচয় নিয়ে বেঁচে থা��া এই মানুষটা জীবনে উপন্যাস লিখেছেন যারে বলে দুই হাত খুলে, আর এর ভূত রয়ে গেছে তার এই স্মৃতি রোমন্থনের ফোকরে ফোকরেও।
এতে অবশ্য আমার আপত্তির কোনো কারণ নাই। এইসব মেময়ারও ত এক ধরনের বানানো কাহিনীই, প্রাক-ইন্টারনেট যুগে কে রাখতো কথাবার্তার স্ক্রীনশট!

শুরুতে ভালো লাগলেও, শুরুতে প্রচণ্ড ভালো লাগলেও, শেষদিকে ক্লান্ত করে মেরে ফেলেছেন একবারে। শেষদিক থেকেও না, মাঝ পথ থেকেই, যেনো বুবদার সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই - লেখার মান পড়ে গেছিলো নাকী এই পর্যায়ে এসে? না, লেখার মান ঐ যেই কে সেই, তেমন উঁচু তারেও বাঁধা না, দুপদাপ উড়ায়ে দেয়ার মত ত কখনোই ছিলো না ঐদিকে, কিন্তু ওনার জীবনটাই যেনো কেমন, বিয়ের পর থেকে, বাড়ি গড়ো রে, বাচ্চা হলো রে, মাঝে আবার বিদেশ ঘুরো রে - আমি ত ভুলেই যাচ্ছিলাম যে এই বইয়ের কোনো অংশ আমার ভালোও লেগেছিলো এককালে।

অথচ ভালো লাগার জায়গার অভাব কই! পুরানা পল্টনের এক কোণায় বুবদার এক বাসার এক চিলতে বর্ণনা, নজরুলের সাথে পরিচয়-অপরিচয়, ঘুরে ফিরে সব জীবনকথায় নোটন মৈত্রের সৌন্দর্য্যের ফিরিস্তি, একটা মানুষের বেড়ে ওঠার বিবরণ, তাও কই, সেযুগের ফার্মগেটে, তারপর রমনার পাশেই এক জঙ্গলমত জায়গা, নাম তার শাহবাগ, সেখানে আছে এক আশ্রম - হয়ত এসব কারণেই আরো বেশি ভালো লাগা কাজ করলো শুরুতে, আমার এই শহরটারে একজন দেখে গেছে তখন, সেই কবে, এই ঢাকা শহরটারে - আহ্‌, রাণু সোম যখন বলেন, ঢাকা সবসময় উন্মত্ত দুই বিষয়ে - রাজনীতি আর সঙ্গীত - আহ্‌, কী সাংঘাতিক!
তার উপর যখন দেখি বুবদার এই লেখা ঐ লেখার কুশীলব রীতিমত তার শ্বশ্রু-আলয়ের আত্মীয়, হে হে, চরিত্রের দরকারে নিজের মামাশ্বশুরটিকেও তিনি ছাড়েন নাই দেখা যাচ্ছে।
বইখানা তাই আর যাই বলি, পড়াই যায়। প্রতিভা বসুর গান খুঁজে পাই আর না পাই, তিনি লিখেন মোটের উপর দারুণ। যেইসব পুনরাবৃত্তি আছে, আরে ভাই, ঐ বয়সে গিয়ে আমি কলম ধরলে বিষ্ঠার গন্ধ ট্যানারী মোড়েরে হার মানাবে ত বটেই, এখনকার লেখারেও হার মানাবে। যত বয়স হয়, একটু ত কলমও ভোতা হয় - আর ঐ একঘেয়েমি যা আছে, উনি লিখতেছেন জীবনকথা, তা না হয় এর ওর মুখে বানায়ে ছড়ায়ে বাক্য বসাইলেনই, তাই বলে কি কাহিনী পাল্টাবেন নাকী।
মানুষের জীবন এক জন্মে এর চেয়ে বেশি কী আর হয়।

আমি অবশ্য শুরুর ভালো লাগা ভুলে গেছিলাম হয়ত অন্য কারণে। আর আষ্ট মাস বাকী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কিস্তির পাট চুকাতে, কীভাবে এই চল্লিশটা মাস গেলো জানি না, কিন্তু আরো আট মাস, সহ্য করা অসম্ভব ঠেকতেছে। ক্লান্ত হয়ত প্রতিভাদি করেন নাই, তার জীবনও করে নাই, করেছে এই জীবন। আর সহ্য করা যাচ্ছে না, সাহসও ত নাই, থাকলে সেই কবে ছেড়েছুড়ে দিতাম।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
March 28, 2021
পাতায় জমানো নিশির শিশির..

বিখ্যাত মানুষদের আত্মজীবনী পড়ার একটা মস্ত সুবিধে হল, অদ্ভুতভাবে তাঁদের আশেপাশের অনেক মানুষই থাকেন বিখ্যাত, আর সেই অনন্যসাধারণদের একটু সাধারণ চোখে দেখার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। প্রতিভা বসু, যিনি নিজে একজন স্বনামধন্য লেখিকা এবং সব্যসাচী লেখক বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী, তিনি যে বিবাহপূর্ব রানু সোম নামে অধিক পরিচিত ছিলেন, ছিলেন সুগায়িকা তা অনেকেরই জানা।
কিন্তু ব্যক্তি রানু সোম কিংবা বুদ্ধদেব বসু ঠিক কেমন ছিলেন? কতটা আটপৌরে জীবন ছিল তাঁদের, কে ছিলেন তাঁদের কাছের মানুষ এসব জানার একটা আগ্রহ কাজ করতো সবসময়ই। অন্যান্য পাঠকদের কাছেও এই বইটির প্রশংসা শুনেছি, এছাড়াও আত্মজীবনী আমার অত্যন্ত পছন্দের একটি সাহিত্যধরন।
'জীবনের জলছবি' তাই আমাকে হতাশ তো করেইনি, বরং প্রতিভা-বুদ্ধদেবের সাথে সাথে আরো অনেক বিখ্যাত জনদের অন্য চোখে দেখতে সাহায্য করেছে। সাহায্য করেছে সময়কে নতুনভাবে উপভোগ করতে। ইতিহাসকে আরেকটু কাছ থেকে দেখতে।
প্রতিভা বসুর ইস্পাতকঠিন অথচ কোমল অন্তরের সাথে তাঁর সুমিষ্ট লেখনশৈলী বইটিকে একটি সুপাঠ্য এবং অকপট আত্মজীবনীতে রূপান্তরিত করেছে।
চমৎকারভাবে বইটিতে এক উচ্ছল শিশুর বেড়ে উঠা, এক আকর্ষণীয় এবং গুণবতী কিশোরীতে পরিণত হওয়া, প্রেমে পড়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া, বিবাহিত এক অপূর্ব দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্না নারীতে পাল্টে যাওয়ার বিবরণ মুগ্ধ করার পাশাপাশি শিহরিত করেছে৷
কবি নজরুলসহ আরো অনেকে ছিলেন তাঁর গুণগ্রাহী। পাণিপ্রার্থীরও অভাব ছিল না। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বটাই ছিল অন্যরকম। কীভাবে স্বল্প আয়ে সংসার চালাবেন, তা অত বড় বাড়ির মেয়েটি অল্প দিনেই কেমন সুন্দর শিখে নিয়েছিলেন। একজন স্নেহময়ী স্ত্রী-মা-দিদা-ঠাম্মা ছাড়াও অন্যান্য সকল সম্পর্ককেই মূল্যায়নের গুণ ছিল তাঁর। পোষা প্রাণীর প্রতি মমতার দরুন দুর্ভাগ্যক্রমে অ্যান্টি-র‍্যাবিস ইঞ্জেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে হয়ে পড়েছিলেন পঙ্গু, তবুও মনোবল হারাননি। পুত্র-কন্যার সাংসারিক জীবনেও এসেছে কালো ছায়া। ঠাণ্ডা মাথায় সব সামলে নিজ কাজে অবিচল থেকেছেন তিনি। তাঁরই সহযোগিতায় বুদ্ধদেব লিখতে পারতেন একেবারে নিশ্চিন্তমনে, সংসারের জটিলতা নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো না তাঁকে। প্রতিভা নিজের লেখা, সন্তান, সংসার সবই প্রায় একা হাতে সামলাতেন৷
সুরুচিসম্পন্না এই মহিয়সী নারী ছিলেন অত্যন্ত তীক্ষ্ণ রসবোধসম্পন্ন৷ একই সাথে অভিমানীও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এরও স্নেহধন্যা ছিলেন তিনি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী প্রমুখ বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের সাথে সপ্রতিভ আড্ডাতেও কম যেতেন না৷
বিনয়-বাদল-দীনেশ কিংবা ক্লিনটন বি সিলি সকলেই উঁকি মেরে গেছেন গল্পের ফাঁকে। দেশভাগের ফলে পিত্রালয়ের দুরবস্থাতেও যেভাবে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন, হৃদয়ে পাথর বেঁধে পুত্রশোক সহ্য করেছেন একজন সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ না হলে তা সম্ভব হত না।
একজন অন্যরকম কিন্তু সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারী তাঁর আত্মকথাতে যথেষ্ট নিস্পৃহ থেকে আবেগগুলোকে স্পর্শ করেছেন। লেখিকার গল্পে তাই বুঁদ হয়ে যেতে হয়, তাঁর দুঃখে তাই আমাদেরও মন কেমন করে। জীবনের জলছবি তাই একটি সত্যিকারের সার্থক আত্মকথা।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
August 17, 2023
ফ্ল্যাপে লেখা আছে -

অস্তাচলের ধারে পৌঁছে পূর্বাচলের দিকে ফিরে তাকিয়েছেন প্রতিভা বসু। বিপুল ঘটনাকীর্ণ তাঁর জীবন। আয়ুর যে-পথ ধরে হেঁটে এসে জীবনের উপান্তে এসে পৌঁছেছেন তিনি, শুধু দীর্ঘই নয় সেই পথ, বহু চড়াই উতরাইতেও ভরা। পিছনের দিকে আজ যখন তাকিয়ে দেখছেন প্রতিভা বসু, তাঁর মনের পরদায় ফুটে উঠেছে সুদীর্ঘ যাত্রাপথের অসংখ্য বাঁক, একের পর এক উজ্জ্বল, রঙিন জলছবি।


প্রতিভা বসুর লেখা পড়তে ভারী আরাম। তাই তরতর করে পাতার পর পাতা উল্টে পড়ে ফেলা গেলো তার বর্ণময় জীবনের চিত্র নিয়ে লেখা আত্মজীবনী - জীবনের জলছবি। শিশুকাল থেকে শুরু করে সায়ংকাল অব্দি লেখিকার জীবন ছিল বিপুল ঘটনাবহুল। সেই ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে আরও বহু চেনা মানুষের জীবনের গল্প যাদেরকে আমরা বাংলা গানে, গল্পে, কবিতায় একটু একটু করে পাই।

প্রতিভা সোম ছিলেন কিন্নরকণ্ঠী নজরুল গানের শিল্পী। ডাকনাম রানু। ও নামেই সকলে ডাকতো তাকে। পরে বুদ্ধদেব বসুকে বিয়ে করে পদবি নিয়েছেন বসু। বাবা আশুতোষ সোম আর মা সরযূবালা সোম। ভীষণ আধুনিক আর উদার মনের মানুষ ছিলেন পিতা মাতা দুজনেই। তাই আদরের কন্যা রানুর কোনো বাসনা কখনও অপূর্ণ রাখেননি। ধার ধারেননি পারিপার্শ্বিক লাজলজ্জার কিংবা নিন্দা, সমালোচনার। আশুতোষবাবু নিজে মেয়েকে নিয়ে যেত���ন বিভিন্ন গানের আসরে৷ বালিকা রানু গানের তালিম নিত প্রখ্যাত গায়ক দিলীপ কুমার রায়ের কাছে। পরে এসে যুক্ত হন কাজী নজরুল ইসলাম। হিন্দুপাড়ায় গিয়ে তাকে গান শেখাতে গিয়ে যৌবন বয়সে নজরুল পাড়ার গুন্ডাদের হাতে মারও খেয়েছিলেন। যাদের স্নেহ পেয়ে রানু সোম পরিপূর্ণতা পেয়েছিলেন সে তালিকায় আছে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ও। আর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন লীলা রায়, কাজি মোতাহার হোসেন, সত্যেন্দ্র���াথ বসু, চারুদত্ত, হিমাংশু দত্ত সহ বহু গুণীজনের।



এই গান গেয়েই বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে আলাপ, প্রণয় ও পরিণয়। যেই গান ছিল ধ্যান জ্ঞান বিয়ের পরে তাঁর জীবন থেকে সেই সুর-শিল্পকে চিরতরে বিদায় দিয়েছিলেন। নূতন জীবনে ঢুকে মন দিলেন লেখালেখিতে। বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। সেকালে আর কোনো মেয়ে পাওয়া যেত না পুরুষদের আড্ডায়। অথচ প্রতিভা বসু হেসেখেলে জড়তাহীন ভাবে সেই গল্পে যোগ দিতেন। চেনাজানার গন্ডিটা তখন গান ছাড়িয়ে সাহিত্যে গিয়ে জুড়েছে। সেই সূত্রে আমরাও কাছে পেলাম সমর সেন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অমিয় চক্রবর্তী, তারাপদ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ দাসকে। জানলাম ব্যক্তি শিবরাম তাঁর লেখনীর মতই ভারী আমুদে আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভীষণ সরল মনের। সাহিত্যের রথী মহারথী এসব মানুষকে ওদের লেখায় যতোটা কাছে পাই তার চাইতেও আপনার করে ধরা দেয় প্রতিভা বসুর আত্মজীবনীতে উঠে আসা টুকরো ঘটনায়।

প্রতিভা বসু ছিলেন ভীষণভাবে একজন পারিবারিক মানুষ। সারা জীবন ধরে তিনি যেমন বহু মানুষের স্নেহ ভালবাসা পেয়েছেন, তেমনি বিলিয়েছেনও অকাতরে, বহু অনাত্মীয়কে পরম মমতায় কাছের করে নিয়েছেন জীবন ভর। অপূর্ব মনের জোর ছিল তাঁর হৃদয়ে। সেই শান্ত মনের ছবি পড়েছে তাঁর আচ্ছন্নকর লেখনিতে। সবমিলিয়ে জীবনের জলছবি হয়ে উঠেছে ভারী সুখপাঠ্য এক রচনা।
Profile Image for Sharmin Sultana  Shamoly.
89 reviews23 followers
April 30, 2025
সৈয়দ আবুল মকসুদের "ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু" নিয়ে দারুণ একটা বই পড়েছিলাম। দুর্দান্ত একটা বই। তারপর মনে হলো, প্রতিভা বসুর স্মৃতিকথাও পড়া প্রয়োজন। কারণ নজরুলকে নিয়ে বহু লেখায় পড়েছি 'রানু সোম' এর কথা।
সব মিলিয়ে চমৎকার।
Profile Image for Edward Rony.
90 reviews9 followers
September 14, 2024
‘জীবনের জলছবি’ প্রতিভা বসুর আত্মজীবনী।

প্রতিভা বসু নিজে ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী, একাধারে তিনি ছিলেন কিন্নরকণ্ঠী, লেখক, নাট্য ব্যক্তিত্ব, কবি। মাত্র এগারো বছর বয়সে তার গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। প্রতিভা বসুর আরেকটি পরিচয় উনি বুদ্ধদেব বসুর জীবনসঙ্গী।

প্রতিভা বসুকে আমি কেবল বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী বলেই চিনতাম, উনার বাকি প্রতিভা আমার কাছে অজানা ছিল। জেনেছি এই আত্মজীবনী পাড়ার সময়।
আত্মজীবনীর বিচারে পড়তে গিয়ে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগেনি ‘জীবনের জলছবি’, এর সব’চে বড় কারণ আমি প্রতিভা বসুকে ঠিকমতো চিনতাম না, তার লেখার সাথে অপরিচিত। তবে বই শুরু করার পরে তাকে নিয়ে জেনেও ঠিক সুবিধা করতে পারিনি পড়ার সময়। ৩৮৮ পৃষ্ঠার পিচ্চি পিচ্চি ফ্রন্টে লেখা বই শেষ করতে বেগ পেতে হয়েছে। আমি ব্রেক দিয়ে দিয়ে, সময় নিয়ে শেষ করেছি ‘জীবনের জলছবি’। সাদামাটা জীবনের গল্প বলেছেন প্রতিভা বসু, অসংখ্য চরিত্র আর তার জীবনের দৈনন্দিন কথা মাঝে মাঝে বিরক্ত সৃষ্টি করেছে।

তবে বইটার সব’চে ভালো দিক হচ্ছে বুদ্ধদেব বসুকে তিনি কেবল নিজের স্বামী, বন্ধু আর সহযাত্রী হিসেবে রেখেছেন। কোথাও প্রতিভা বসুর আত্মজীবনীতে প্রতিভা বসুকে ছাপিয়ে প্রকট হয়নি বুদ্ধদেব বসু। এই দিকটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।

হতাশার কথা বলতে গেলে, প্রতিভা বসুর সময়কালে (১৯১৫-২০০৬) এই উপমহাদেশে সব’চে বড় দু’টি ঘটনা দেশভাগ আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু তার লেখায় দেশভাগ বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু নেই বললেই চলে। অথচ তারা দেশভাগ হয়েছিলেন উদ্বাস্তু। হ্যাঁ, দেশভাগ নিয়ে সামান্য কিছু আছে, যা আমার কাছে মনে হয়েছে না লিখলেও ক্ষতি হত না ধরণের! ঢাকা বিক্রমপুর জেলার মেয়ে হয়েও মুক্তিযুদ্ধ অনুপস্থিত…

এত কিছুর পরও, যখন শেষের দিক আসলাম কেমন যেন একাত্ম হয়ে গেলাম প্রতিভা বসুর সাথে। বুদ্ধদেব চলে গেলেন, তখন প্রতিভা বসুর মত আমিও শূন্যতা অনুভব করলাম। সেটা লেখক-কবি বুদ্ধদেব বসু বলে নয়, বরং জীবন সঙ্গী বুদ্ধদেব বসু হিসেবে। এরপর নিজের সন্তানদের বিবাহ বিচ্ছেদ এবং সর্বোপরি একমাত্র পুত্রের প্রস্থান, সবটা সহ্য করতে হয়েছে প্রতিভা বসুকে। এই বেদনার সঙ্গী প্রতিভা বসুর সাথে আমি কিছুটা হতে পেরেছি, নিজেকে কানেক্ট করতে পেরেছি এটাও একটা বড় প্রাপ্তি…
Profile Image for সায়কা শাহরিন.
152 reviews66 followers
December 29, 2018
খুব আশ্চর্য লেগেছিলো যে প্রতিভা বসুর কোন লেখা আমি আগে পড়িনি। ইনার লেখনী এতো সাবলীল আর লেখার প্রতিটা লাইনে এতোটা আপন ভাব আছে যে পড়তে কোনও কষ্ট হয় না। এতো শান্তি খুব কম বই পড়েই পাওয়া যায়! অপূর্ব লেগেছে আমার, শেষের দিকে এসে খালি আপসোস হচ্ছিলো, বইটা শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেবে! আত্মজৈবনিক লেখা যারা ভালোবাসেন, তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বই এটা। কখনও কোন এক সময় আরও বিস্তারিত লেখবো আশা করি।
Profile Image for Ayesha.
117 reviews36 followers
September 10, 2025
খুব বড় না হলেও একটু বেশি সময় নিয়ে পড়ে শেষ করলাম! প্রতিদিন একটু একটু করে পড়েছি, কারণ প্রতিভা বসু আমার খুব পছন্দের একজন লেখিকা আর স্মৃতি কথা পড়তেও আমি অনেক বেশি পছন্দ করি! তার চেয়েও বড় কারণ হলো লেখিকার লেখা পড়তে খুবই আরাম বোধ করি!
প্রিয় লেখিকার শৈশব, কৈশোর তারপর প্রতিভা সোম থেকে প্রতিভা বসু হয়ে ওঠার গল্প, কবি বুদ্ধদেব বসুর সাথে মিষ্টি-মধুর সংসার এবং পরিশেষে তিন সন্তানের জননী হয়ে ওঠার গল্প!
পোশাকি নাম প্রতিভা, ডাক নাম রানু-ছোটবেলা থেকেই সুন্দর গান গাইতেন, যে গানের ভক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম আরো অনেকে। লেখিকার স্মৃতি কথা পড়ে যে শুধু লেখিকার জীবন সম্পর্কে জানতে পারলাম তা কিন্তু নয়, লেখায় উঠে আসে মানিক বন্দোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, কাজী মোতাহার হোসেন, শিবরাম চক্রবর্তী, কবি জীবনানন্দ দাশ আরো কত কে যাদের নাম বলে শেষ করা যাবে না! পাশাপাশি তৎকালীন ঢাকা, কলকাতা এবং আমেরিকার চিত্র ও ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।

রানুর বাবা মা তার কিন্নরকণ্ঠি মেয়ের বড় গানের শিল্পী হওয়ার পিছনে নিন্দুকের শত নিন্দার পরেও যে অবদান রেখেছিলেন তা সত্যিই অতুলনীয়! স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম রানুকে গান শিখিয়েছেন। গানের কারণেই পরিচয় হয় বিখ্যাত কবি বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে এবং তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর গান গাওয়া একেবারেই ছেড়ে দিলেও
নিজেকে খুব ভালোভাবে লেখিকা হিসেবে প্রকাশ করতে পেরেছেন।
Profile Image for Farjana Rahman.
51 reviews4 followers
April 17, 2025
বই: জীবনের জলছবি
লেখক: প্রতিভা বসু
প্রকাশনী: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৩
পৃষ্ঠা: ৩৮৮
মূল্য: ৮০০ রূপী (১৪৪০ টাকা)


“স্বেচ্ছায় কে বেদনায় দু'হাত বাড়ায়?"


এক.

আপনি কখনো হাওয়াই মিঠাই পড়েছেন?

"পড়েছেন" শব্দটা ভুল টাইপ করলাম কিনা ভাবছেন? "খেয়েছেন" হবে? না - স্বজ্ঞানে এবং ইচ্ছে করেই লিখেছি। ��ারনটা পুরো পোষ্ট পড়লেই ক্লিয়ার হবে।

জীবনের জলছবি। "জীবন" আর "জলছবি" এর মধ্যে হাইফেনের মতো একটা প্রশ্ন ঝুলে থাকে। প্রশ্নটা জলছবি ঘীরে। আনমনা বা উন্মুখ হয়ে ঝুঁকে থাকা স্বচ্ছ জলের মাঝে প্রতিচ্ছবির মতো এই জলছবি? নাকি কোন শিল্পীর ওয়াটার কালারে আঁকা জলছবি? একটা হলেই হলো যেমন ঠিক, তেমিন কিছুটা পার্থক্য তো থাকেই দুটোর মধ্যে। পার্থক্যটা কালারে। প্রথমটা যতোটা না রঙিন হবে, দ্বিতীয়টা তার থেকে বেশি হবে। তবে "স্মৃতিকথা" কি অতোটা রঙিন হয়? নাকি কিছুটা বিবর্ন হয়ে ধরা দেয়? উত্তরটা তো যার যার দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

সাধারনত যে কোন স্মৃতিকথা একধরনের মেলানকোলিক মুড নিয়ে পড়া হয়। অথবা শুরুটা যেভাবেই হোক, প্র্রগ্রেসটা সেদিকেই টার্ন নেয়। পড়তে পড়তে আপনি যখন একদম ডুবে যাবেন বইয়ে উল্লেখিত নানা স্মৃতিতে তখন খেয়াল করে দেখবেন বইয়ের অনেক মানুষের ভীড়েও আপনি এতোটা নিবিষ্ট হয়ে আছেন যে আপনার হুট করে মনে হবে আপনি একা। আপনার নিজেকে মনে হবে লোনার। প্রতিভা বসুর "জীবনের জলছবি" এখানে কিছুটা ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা দেয়। প্রথমত, ওই মেলানকোলিক মুড টা আপনার আসবে না। তবে মেলানকলি বিউটি তো বটে। বিষন্ন সু্ন্দর। বিষন্নতা থাক। শুধু সুন্দর নিয়ে কথা বলি। আনন্দ নিয়ে কথা বলি।

দুই.

আনন্দ। জন্মই তো আনন্দ। ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগনার হাঁসাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রানু সোম। সাল ১৯১৫, ১৩ মার্চ। তখনও তিনি প্রতিভা বসু হয়ে ওঠেননি। ডাক নাম ছিল রানু এবং পিতার নামের পদবী ধারন করে রানু সোম। প্রতিভা বসুর "জীবনের জলছবি" বইয়ে উঠে এসেছে তার শৈশবের নানা কাহিনি। যে সময়টার কথা বলা হয়েছে সেই সময়ের নারী মানেই চিক পর্দার আড়ালে অথবা দরোজার ওপাশে ক্ষয়ে যাওয়া নারীদের সময়। তবে প্রতিভা বসুর ক্ষেত্রে ছিল আলাদা। এর সবচেয়ে বড় কারন ছিল তার পিতা আশুতোষ সোমের দেয়া অবাধ স্বাধীনতা এবং কন্যার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তাই সেই সময়ের ঠুনকো সামাজিকতা এবং খল-সামাজিক নখের আঁচড়কে পাত্তা না দিয়ে খোলা অকাশে ঘুড়ির মতোই উড়ে বেরিয়েছেন রানু সোম, মানে প্রতিভা বসু।

জীবনের প্রথম ২০ বছর ঢাকায় কেটেছে প্রতিভা বসুর। সে সময়ের ঢাকা এবং তার আদি রূপ উঠে এসেছে "জীবনের জলছবি" ঘীরে। ঢাকার স্মৃতিময় বর্ণনার পাশাপাশি উঠে এসেছ তৎকালীন সময়ের ঢাকা কেন্দ্রিক অজস্র গুণীজনের নাম। তাদের মধ্যে ওস্তাদ চারু দত্ত, মেহেদী হাসান, ভোলানাথ মহারাজ, গুল মোহাম্মদ খাঁ, প্যারীন্দ্র বসাক উল্লেখযোগ্য। জলছবিতে আঁকা হয়েছে পুরানা পল্টন, উয়ারী (ওয়ারী), শা'বাগ(শাহবাগ), নবাবপুর, বকশীবাজার, যুগীনগর এবং এমন আরো অনেক জায়গার বর্ণনা। ঢাকার নাট্যচর্চার ইতিহাসেরও একটা পোর্ট্রেট বলা যায় "জীবনের জলছবি" আত্মকথাকে।

প্রতিভা বসুর বর্ণনায় ঢাকার সেই আদি রূপ যেন স্মৃতি আর ঘোরের ভেতর দিয়ে একটা স্বপ্নময় যাত্রার মতো। একবারেই সরল, ঝরঝরে একটা বর্ণনাভঙ্গি পাঠককে স্বপ্ন আর রিয়ালিটি এর মধ্যবর্তী একটা জায়গায় ল্যান্ডিং করায়। বই বন্ধ করে একটা অসীম কৌতূহল ভরে এখনি রওয়ানা দেই সেই বুড়িগঙ্গার ছইওয়ালা নৌকায় অথবা নববপুরের পরাটা-গোস্তর ঘ্রানময় পরিবেশে। এই ঘোর যেন পাঠকের একটা পোয়েটিক ঘোরের মতো।

তিন.

"জীবনের জলছবি" আত্মকথায় উঠে এসেছ তার গানের কথা। লেখার কথা। প্রেমের কথা। বিরহরে কথা। জীবনযাপনের প্রতিটা নিঃশ্বাসের ফুটপ্রিন্ট যেন এই বই। যে কোন গান বা সুর নিজের কন্ঠে তুলে নেবার ঈর্ষনীয় প্রতিভার কারনে মাত্র ১১ বছর বয়সেই “হিজ মাস্টার্স ভয়েস” থেকে বের হয় প্রথম গানের রেকর্ড। পরবর্তী সময়ে সিনেমায় "লিপ মুভমেন্ট" এর অফার এবং আকর্ষনীয় সম্মানী এর প্রস্তাব পেলেও সেটা আর তার করার সম্ভব হয়নি "সামাজিক চোখ রাঙানিতে"। যদিও প্রতিভা বসু গানের প্রতি অতোটা যত্নশীল ছিল না।

অথচ এই গানের কারনেই কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরো অনেকের সংষ্পর্শে আসেন প্রতিভা বসু। স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম তার বাড়িতে এসে হাজির হন, এবং তাকে গান শেখান। প্রখ্যাত ডি.কে রায় ওরফে দিলীপ কুমার রায় এর মুখে শুনে আমন্ত্রিত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর দ্বার এবং সেখানেও একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের রেশ ধরেই উল্লেখ করে রাখি যে, প্রতিভা বসুর প্রথম কন্যার মীনাক্ষী এর নামটিও স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা প্রণিত।

এই গান নিয়েও কম পানি ঘোলা হয় নি। শৈশবে লেখিকার মঞ্চে অভিনয়ের কারনে বিখ্যাত (পড়া ভালো কুখ্যাত) "শনিবারের চিঠি" প্রত্রিকার রোষানলে পড়তে হয়। প্রচুর আজেবাজে কথা লেখা হয়। কলকাতায় যেমন "শানিবারের চিঠি", ঢাকায় তেমনি বের হতো "রবিবারের লাঠি"। সেই পত্রিকায় কাজী নজরুল ইসলাম এবং প্রতিভা বসু কে নিয়ে লেখা হয় নানা রকম কথা। এর জের ধরে কাজী নজরুল ইসলামের উপর হামলাও হয়। তবে এই যে গান নিয়ে এতো কাহিনি অথবা যে গান নিয়ে এতো স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিভা বসুর, সে গাল তিনি ছেড়ে দেন বিয়ের পর। যদিও সেটার কারন প্রতিভা বসুর অনিচ্ছা এবং সাংসারিক জীবনের ব্যস্ততা। কোন ভাবেই তার স্বামী বুদ্ধদেব বসু না।

"জীবনের জলছবি" তে আপনি খুঁজে পাবেন ‘ডাকাবুকো’সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসুর সাথে প্রতিভা বসুর প্রথম দেখার মুহূর্ত, তাদের বিয়ের প্রস্তাবনার মুহূর্ত এবং সাংসারিক জীবনের খুঁটিনাটি। প্রতিভা বসুর "পরিমিত বোধ" এক কথায় অনবদ্য। বুদ্ধদেব বসুর সাথে প্রথম দেখার মুহূর্ত তিনি যেভাবে খুব সামান্য কথায় লিখেছেন এবং অল্পতেই থেমেছেন সেটা তার ওই পরিমিতি বোধেরই প্রকাশ। একজন লেখক যখন জানেন তাকে ঠিক কতখানি টানতে হবে এবং কখন ছাড়তে হবে - এর থেকে সুখপাঠ্য কিছু নেই। "জীবনের জলছবির" প্রতিটা পাতায় সেই পরিমিতি বোধটা স্পষ্ট।

চার.

বৈচিত্র্যময়তার আরেক নাম প্রতিভা বসু। সেই বৈচিত্র্যময়তার নানা রঙের সমাহার "জীবনের জলছবি"। জীবনের জলছবি যদি হয় আত্মকথার একটা রাজপ্রাসাদ, তবে তার প্রতিটি ইট বা পাথরে রয়েছে ওই সময়ের নানা জ্ঞানী, গুনী এবং প্রতিভাবান ব্যক্তিদের নাম। এই আত্মকথা প্রতিভা বসুর সাহিত্যিক জীবনেরও মানচিত্র। তার প্রথম উপন্যাস "মনোলীনা" এর গল্প যেটা কিনা বুদ্ধদেব বসু এবং প্রতিভা বসুর যৌথ ভাবে লেখার কথা। আছে বাড়ির গল্প, বাড়ি বদলের গল্প, এবং বদল করতে করতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউর ২০২ নম্বরের দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির গল্প। যেটা পরবর্তীতে হয়ে ওঠে "কবিতাভবন"। এবং আছে "কবিতা" পত্রিকার গল্প।

আর "কবিতা" পত্রিকার কথা উঠে আসা মানেই তো গুটি গুটি পায়ে হেঁটে আসেন জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সমীর সেন, জ্যোতির্ময় দত্ত (ইনি পরবর্তীতে বিবহা করেন তাদের কন্যা মীনাক্ষী কে), প্রেমেন্দ্র মিত্র, নরেশ গুহ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত এবং এমন অজস্র কবি সাহিত্যক যাদের "প্রথম লেখা বা বই" বের হয় কবিতাভবন থেকে। কবিতাভবনে আড্ডার যে শৈলী তারও রূপরেখা ফঁটে উঠেছে প্রতিভা বসুর "জীবনের জলছবি" তে।

"জীবনের জলছবির" এইসব মহানায়কেরা পাঠককে তাড়া করবেন। মুরাকামির গল্পের চরিত্রগুলো যেমন নানা অন্ধকার অলিগলি ঘুরে আবার এসে হানা দেয় আমাদের চেনা পৃথিবীর বলয়ে, ঠিক তেমনি এই মহারথীরাও বইয়ের প্রতিটা পৃষ্টায় আপনাকে তাড়া করবে মেমরি লেনে এবং পরক্ষনেই এসে আপনাকে দাঁড় করাবে রিয়েলিটির সামনে। নস্টালজিয়াগুলো বারবার ফিরে আসে এদের হাত ধরে বইয়ের পাতায়। তবে প্রতিভা বসু কোন চরিত্রেই অযাচিত ভাবে কলম চেপে ধরেননি। মানে কোন মহারথীকেই আলাদাভাবে বোল্ড করে ফোকাস করেননি। ঠিক এই কারনেই প্রতিভা বুসর আঙ্গুল ধরে স্মৃতির বাগিচায় ঘুরে এসেও আপনি খুব মোলায়��ম ভাবেই আচ্ছন্ন হয়ে থাকবেন। মনে হবে, এরা তো আমাদর মতোই সাধারন মানুষ যাদের সাথে আমাদের প্রতিনিয়তই দেখা হয়। কুশল বিনিময় হয়।

পাঁচ.

"জীবনের জলছবি" তে উঠে এসেছে নিবিড় ভাবে প্রতিভা বসুর পরিবারের কথা, অন্দরমহলের কথা, তার সন্তানদের কথা। একমাত্র পুত্র শুদ্ধশীল বসু এবং স্বামী বুদ্ধদেব বসুর মৃ/ত্যুর কথা। প্রতিভা বসুর পরিমিতি বোধের দৃষ্টান্ত এখানেও বেশ সবল। অথবা এই অকাল মৃ/ত্যুগুলো লেখিকা হয়তো অতোটা বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করতে চান নি। সেটা একদিক দিয়ে বেশ ভালোই হয়েছে। সব অনুভূতি যে শব্দের রঙে ফোঁটাতেই হবে এমন তো না। প্রতিভা বসুর ভাষায়:-

"আমাদের জীবনটা যে আয়ুর তুলনায় খুব দীর্ঘ তা নয় কিন্তু ঘটনাপঞ্জী সে তুলনায় অতিমাত্রায় দীর্ঘ।"

অনেক অনেক বছর পূর্বে পড়া একটা কবিতার কথা মনে পড়ছে "জীবনের জলছবি" এর শেষের বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে। কবির নাম স্মৃতির পাতা হতে পুরোটই হারিয়ে গেছে যদিও।

"বালিকারা বাস করে ভুবনের স্বর্গে
পৃথিবী নরকসম, ভীড় বাড়ে মর্গে;
বালিকারা বড় হলে কোথায় হারায়?
স্বেচ্ছায় কে বেদনায় দু'হাত বাড়ায়?"

স্বেচ্ছায় কে বেদনায় দু'হাত বাড়ায়?
স্বেচ্ছায় কে বেদনায় দু'হাত বাড়ায়? ….. …… ……. ……. …… …… মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু এই লাইনগুলো! আত্মকথা বা স্মৃতিচারন কি অনেকটা এই "স্বেচ্ছায় কে বেদনায় দু'হাত বাড়ানোর" মতো একটা বিষয়? পিছন ফিরে দেখাটা হয়তো তাই। একজন লেখকের জন্যে এবং একজন পাঠকের জন্যেও। "জীবনের জলছবি" ও তো "স্বেচ্ছায় বেদনায় দু'হাত বাড়ানোর মতোই" শক্ত দুটো মলাটে বন্দী একটা অসীম সময়।

প্রতিভা বসুর বয়ানেই সেই বিষন্নতার সুরটাকে শোনা যাক:-

"সবই তো সত্য তবু কেন রাতের অন্ধকারে, দিনের স্তব্ধ প্রহরে, কালো হয়ে আসা সন্ধ্যায় বিমর্ষ বেলায় যে নেই সে এসে দাঁড়ায়, আমার কাছে, বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এ থেকে মৃ/ত্যু ছাড়া মুক্তি নেই জানি, শুধু জানি না সেই মৃ/ত্যু কবে আমাকে দয়া করবে।"

ছয়.

রানু সোম যেমন ছড়িয়েছেন স্মৃতির রেণু, তেমিন প্রতিভা বসু ছড়িয়েছেন সাহিত্যের প্রভা। একটা জীবন তার, শুধু অনেকগুলো পরিচয়। প্রতিভা বসুর "জীবনের জলছবি" সেই সব পরিচয় বহন করে বর্ণাঢ্য একটা জীবনের গল্প হয়ে ওঠে। এই গল্প খুব সাধারন ভাবে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা বারান্দার মানিপ্লান্টের মতো। পিছনে তাকিয়ে দেখা সেই হাওয়াই মিটাইয়ের মতো গোলাপি মেঘ যেন,যা আপনার মুখে গলে যাবে হালকা মিষ্টি একটা স্বাদ নিয়ে। "জীবনের জলছবি" একজন রানু সোম এর গল্প না, একজন প্রতিভা বসুর গল্প না, একজন লেখিকার গল্প না, না বুদ্ধদেব বসুর সহধর্মিণীর গল্প।

"জীবনের জলছবি" একজন খুব মেয়ের গল্প। একজন সাধারন নারীর গল্প। একজন অসম্ভব সুন্দর মনের মানুষের গল্প। যার নাম - প্রতিভা বসু।

Profile Image for Imran Ruhul.
43 reviews14 followers
July 11, 2019
‘জীবনের জলছবি’ প্রতিভা বসুর আত্মজীবনী। জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁর সারা জীবনের জমে থাকা সব গল্প বর্ণনা করেছেন লেখিকা এই বইয়ে। লেখিকার জীবনের কাহিনীগুলো ছবির মতোই ফুটে উঠেছে এতে। ফলে বইটি হয়ে উঠেছে তাঁর জীবনের জলছবির এক রঙ্গিন এ্যালবাম। এপাড় বাংলার মেয়ে প্রতিভা বসু ঢাকা শহরে বেড়ে উঠলেও পরবর্তীতে বুদ্ধদেব বসুর সাথে কলকাতাতেই স্থায়ী নিবাস গড়েন। ফলে তাঁর আত্মজীবনীতে অবিভক্ত বাংলা, দেশবিভাগ ও পরবর্তী সময়ের জীবনযাত্রার কিছুটা ছাপ পাওয়া যায়। প্রসঙ্গতই তাঁর জীবনের গল্পে স্থান পেয়েছে দেশবিভাগ ও ঢাকা শহরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কলকাতায় শরণার্থী সমস্যা ও তাঁদের ভয়াবহ দুর্দশার ঐতিহাসিক চিত্র। দেশবিভাগের পর পূর্ববঙ্গে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, জমিজমা-সম্পত্তি ফেলে রেখে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ওপাড় বাংলায় পাড়ি জমান। সেটি তখন অন্য দেশ- ভারত।
কলকাতায় শরণার্থীদের সম্পর্কে লেখিকার বক্তব্য, “ফুটপাত ভর্তি থিক থিক করছে লোক, সেখানেই তারা খাচ্ছে, শুচ্ছে, বাচ্চা জন্মাচ্ছে, কেউ আবার গাছের ডালে দড়ি ঝুলিয়ে মরে শক্ত হয়ে ঝুলেই আছে। আমি একদিন গড়িয়াহাটের মোড়ে এই দৃশ্যটি দেখতে পেলাম। একটি মরা ঝুলছে, একটি মরা পাশে শোয়ানো। তাতে কারো বিশেষ বিকার নেই, সেখানে কেউ কারো উকুন বাছছে, কেউ ঝগড়া করছে, কেউ রান্না করছে, মরা দুটোকে কেন এতোক্ষণেও কর্পোরেশনের লোক এসে নিয়ে যায়নি, তা নিয়ে বচসাও করছে।” সময়ের দুষ্টচক্রে একসময় লেখিকার বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা দেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যেতে বাধ্য হন। ঐতিহাসিক এসব প্রেক্ষাপট প্রতিভা বসুর আত্মজীবনীকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

নিজের জীবনের বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে প্রতিভা বসু তৎকালীন সাহিত্যিক, গায়ক ও ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমর সেন, বৈজ্ঞানিক সত্যেন্দ্রনাথ বসু, তারাপদ রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দিলীপকুমার রায়, হিমাংশু দত্ত, লীলা নাগ, সাগরময় ঘোষ, সন্তোষকুমার ঘোষ, দিব্যেন্দু পালিত প্রমুখ। তাঁদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায় বই থেকে। যেমন- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে লেখিকা বলেন, ‘মানুষটি ক্ষ্যাপা, ঋজু, সৎ এবং অত্যন্ত সরল। স্পষ্টবাদিতায় তিনি দ্বিতীয়রহিত, কূটকাপট্যের ধার ধারেন না, এমনকি মনের গোপন কথা অনায়াসে উচ্চারণ করতেও দ্বিধাহীন। পোশাক নিয়ে ছিলেন উদাসীন।’ কোনো একটি পত্রিকায় প্রতিভা বসুর নামে অশালীন বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় তিনি ক্ষেপে উত্তেজিত হয়ে ঐ পত্রিকার সম্পাদককে পেটাতে চেয়েছিলেন। লেখিকা বলেন, ‘এরকম একটি ঝাঁঝালো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এমন মধুর সারল্যের সমাবেশ বড় একটা দেখা যায় না।’ জীবনানন্দ সম্পর্কে লেখিকার বক্তব্য, ‘জীবনানন্দ মানুষটি অদ্ভুত ছিলেন। কখনো চোখের দিকে চেয়ে কথা বলতেন না। তাঁতেও তাঁর লজ্জা। আর সব সময়েই একটা অস্থির ভাব। রাস্তায় বিশেষ কোনো পরিচিত মানুষ দেখলেও তাড়াতাড়ি ফুটপাত বদল করে ফেলতেন।’

লেখিকার আত্মজীবনীর একটা অংশ বুদ্ধদেব বসুর সাথে তাঁর সংসার জীবন। ফলে বুদ্ধদেবের আধুনিক মননের পরিচয় পাওয়া যায় লেখিকার ভাষ্যে। কিন্তু স্বামী হিসেবে তিনি ততোটা সংসারী ছিলেন না। লেখিকা স্বীকার করেছেন, ‘সাংসারিক কারণে কোনো গরমিল ঘটলে মানসিক অবসাদে ভেঙে পড়াই তাঁর চরিত্র ।’ ঘরে ঝামেলা এড়ানোর জন্য প্রতিভা বসু বুদ্ধদেবের কথায় মাথা নাড়লেও পরে যা ভালো মনে হতো তাই করতেন। “সংসার বিষয়ে বুদ্ধদেব এতোটাই অনভিজ্ঞ যে তাঁর কথায় চললে সন্তান-সন্ততি আত্মীয়-পরিজন এসব নিয়ে ঘর করা সম্ভব ছিল না।” প্রতিভা বসু নিয়মিত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করতেন। সেই তিনিই কখনো কখনো হয়ে উঠতেন সংশয়বাদী। তাঁর নারীবাদী মানসিকতারও প্রকাশ ঘটেছে কথার ফাঁকে। তাঁর ভাষায়, “গান গেয়ে যতো ‘আহা’ ‘উহু’ শুনেছি, যতো তাড়াতাড়ি বিখ্যাত হতে পেরেছি, পুরুষশাসিত সমাজে লেখক হিসেবে অদ্যাবধি সেই সম্মান আমি পাইনি। না পাবার একটাই কারণ আমি মেয়ে।” তবে, জীবনের অতি খুঁটিনাটি ও অনেক বেশি চরিত্রের সমাবেশের ফলে কখনো কখনো লেখা হয়ে উঠেছে ক্লান্তিকর। তাছাড়া নিজের জীবনের ভাল-খারাপ সব দিক খোলামেলা প্রকাশ পায়নি বলেই মনে হয়। তাই, আত্মজীবনী হিসেবে একে সম্পূর্ণ সফল দাবী করা যায় না। তবু, এটি ভাল বই হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
Profile Image for Keya Debnath.
2 reviews1 follower
September 21, 2018
খুব সুন্দর একটা আত্মজীবনী.. অনেক দিন পর বিপুল আগ্রহ নিয়ে শেষ করলাম..জীবনের শুরুটা খুব জৌলুষ পূর্ন হলেও পরের অংশটা অনেকটাই আটপৌরে জীবন...
Profile Image for Rashik Reza Nahiyen.
106 reviews14 followers
September 25, 2017
A great autobiography of a wonderful woman who witnessed & participated in the Bengali cultural atmosphere of the early 20th century.

Mrs. Bose was married to Buddhadev Bose, the man I wanted to read about. In this book, I've found information not only about him but also the literary giants of Bengali Literature. The list is quite large. Rabindranath Tagore, Kazi Nazrul Islam, Jibananda Das, Prendra Mitra, Achintakumar Sengupta, Samar Sen, Subhash Mukhopadhyay, Sukanta Bhattacharya, Satyen Bose, Manik Bandyopadhyay, Shibram Chakrabarti, Sagormoy Ghosh & others.

A well-written book. It would have been great if there were more photographs of that time.
Profile Image for S M Shahrukh.
127 reviews67 followers
March 23, 2019
বাঙালি নারীদের বিংশ শতকের অন্যতম পথিকৃত প্রতিভা সোম, বুদ্ধদেব বসুকে বিয়ের পর, প্রতিভা বসু। অনেক আগ্রহ নিয়ে ওনার আত্মজীবনী প'ড়তে শুরু ক'রেছিলাম বটে কিন্তু সোয়া শ' পৃষ্ঠার পর আক্ষরিক অর্থেই হাই উঠতে শুরু ক'রেছে যেন। এতো খুঁটিনাটি, এতো মাইক্রোস্কপিক বিষয়, একটা ঘটনা লিখতে যেয়ে এতো কিছুর অবতারণা, প'ড়তে প'ড়তে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। বইটাকে এডিট ক'রে শ' দুয়েক পৃষ্ঠায় আনার চেষ্টা করলে নতুন পাঠকরা উপকৃত হবে। তা ছাড়া উনি প্রায় কোনো ব্যাপারেই নিজের কোনো দোষ দেখেননি (যতদূর পড়েছি)। ওনার স্মৃতিচারণে কিছু কথা চেপে যাওয়ারও সম্ভাবনা লক্ষ করেছি, বিশেষত বিনয় নামক এক যুবকের সংগে তার কতোটা মেলামেশা তা ওনার কথায় যেনো কিছু লুকোছাপা আছে।
Profile Image for Rinku Rahi.
1 review
October 30, 2017
অসম্ভব সুন্দর একটা বই। বেশ সুখপাঠ্য। জীবন যে কতো বৈচিত্রময়! সেটা অবশ্য যাপনের সময় বোঝা যায় না। একটা মানুষকে ঘিরে কতো ঘটনাই না ঘটে। সব ঘটনা তো আর স্মৃতিরা এঁকে রাখে না, কিছুকিছু যাপিত সময় স্মৃতির পাতায় ঠাঁই পায়। তবে এই অনেক। বইটা পাঠ করতে করতে একটা আপসোস তো হয়- রানু সোম কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো...
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
November 5, 2018
সম্পূর্ণ পড়তে পারলাম না । আত্মজীবনী পড়া হয়ত আমার কর্ম নয়, আমারই অপারগতা । তবে যেটুকু পড়েছি, বলতে হয়, প্রতিভা বসুর লেখার হাত সুখপাঠ্য ধরণের, অত্যন্ত সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন তিনি । থাকুক না, আবার বছর কুড়ি পরে যদি পড়তে ইচ্ছা করে ।
এটা কোন রিভিউ নয় বলে দুঃখিত ।
Displaying 1 - 16 of 16 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.