এইসব দিনরাত্রি একটি একান্নবর্তী পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্প। আশা ও আনন্দের, ব্যর্থতা ও বঞ্চনার গল্প। কিছু সাধারণ মানুষের সাধারণ কিছু স্বপ্নের গল্প। ম্যাজিসিয়ান আনিস স্বপ্ন দেখে একটি কিশোরীর, রফিক স্বপ্ন দেখেন সুখী নীলগঞ্জের। টুনি নামের একটি ছোট মেয়ে সেও স্বপ্ন দেখে। এরা জোছনা রাতে ছাদে বসে গান গায়-আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে। কোনে বনের কথা তারা বলে? কোথায় সেই গভীর অরণ্য? ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ কি পেরেছেন সেই অরণ্যের সন্ধান দিতে?
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
কিছু কিছু বই আছে না যা শেষ মুহূর্তে মনকে উলটপালট করে দেয়? অবশ্যই এটা এরকম একটা বই। আমি আসলে বুঝাতে পারবো না, কিন্তু পড়ে শেষ করে একই সাথে মন ভালো এবং খারাপ হয়েছে। হুমায়ুন আহমেদের শ্রেষ্ঠ লেখাগুলির মধ্যে এটা থাকবে নিঃসন্দেহে। কত সাধারণ অথচ অসাধারণ। :')
হুমায়ূন আহমেদের লেখা এই ধাঁচের কাহিনী এর আগেও অনেক পড়েছি। তবে ৩১২ পৃষ্ঠা দেখে মনে হয় আমার অবচেতন মন কিছু আশা করে বসেছিল (বোকামি!)।
মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনী যেখানে আছে সর্বংসহা বৌমা নীলু, তার নবম মাত্রার রোবটিক বর শফিক, একটু পাগল পাগল রূপবতী ননদ শাহানা, ভবঘুরে বেকার দেবর রফিক, সর্বদা উৎফুল্ল শ্বশুর হোসেন সাহেব যিনি হোমিওপ্যাথি নিয়ে মশগুল এবং সর্বশেষে আছেন 'দ্য গ্রেট' ক্যাটক্যাট করা শ্বাশুড়ি মনোয়ারা ¬_¬"
এছাড়া আছে বাড়িওয়ালা পরিবার- বীণা, বীণার প্যারেন্টস; এই বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় থাকা আনিস নামের এক ভবঘুরে যুবক যার আগ্রহ ম্যাজিকের দিকে। আছেন কবির মামা যিনি সুখী নীলগঞ্জ প্রজেক্ট শুরু করার চেষ্টা করছেন
পাশাপাশি দেখা যায় বীণা-আনিস-শাহানা এবং রফিক-শারমিন-সাব্বির'র টানাপোড়ন।
বইটা পড়ে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেক সময় নিয়ে বইটা পড়েছি। পড়া আগাচ্ছিলই না, বার বার বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম চরিত্রগুলোর উপর। আবার একই অনুপাতে হাসাহাসিও করেছি ¬_¬"
এমন কাহিনী আগেও পড়েছি তবে ছোট হওয়ার কারণে বোধহয় এত বিরক্তবোধ করিনি। হুমায়ূন আহমেদের এই টাইপের প্লটের লেখায় ১০/১২ পৃষ্ঠার ছোটগল্পও যা, ৭০/৮০ কিংবা ২৫০/৩০০ পৃষ্ঠার বইও তাই!
হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা পড়লে কিছু কিছু সময় মনে হয় এতো আমাদেরই নিজেদের গল্প। উনার অন্যান্য বইগুলোর মতই এই বইটাও অনেক ভালো লাগলো। মধ্যবিত্ত পরিবার এবং তাদের জীবন নিয়ে যাদের লেখা সবথেকে ভালো লাগে তাদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ অন্যতম। উনার অন্যান্য বইগুলোর মত এই বইটাও মনে দাগ কেটে যায়।
সময়কে বেধে রাখার জন্য প্রতিটি মানুষের আপ্রাণ প্রচেষ্টা। কখনো স্বপ্ন দিয়ে, কখনো ভালোবাসা দিয়ে আবার কখনো অর্থ দিয়ে। কিন্তু সময় কখনো থেমে থাকে না। সময় তার অন্ধকার গহবরের একটার পর একটা প্রাণের আহুতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। যে মানুষগুলো রয়ে যায় তারা কখনো সেই অন্ধকার স্মৃতির পাতায় ফিরে ফিরে তাকায়। কিন্তু কেউ থেমে যেতে পারে না। তাদের চলতে হয় সেই সময়ের সাথে, সময়ের নিয়মে।
নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর বুকে একটি মধ্যবৃত্ত বাঙালী পরিবার। পরিবারটিকে কয়েকজন ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের মানুষ আর তাদের দিবারাত্রির গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে এই অসাধারণ উপন্যাসটি। এই পরিবারের মধ্যমণি হলো নীলু। নীলু বাংলার সেই নারীশ্রেণীর প্রতিনিধি যারা স্বামীর সংসারে এসে পরিবারের প্রতিটি মানুষকে মুখে শুধু হাসি দেখতে চেয়েই শুধু শান্ত হয় না, প্রতিটি মুখের হাসির জন্য রীতিমত লড়াই করে। নীলুর স্বামী সফিক, সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন একজন আত্নপ্রবণ মানুষ। সংসারে টাকা দিয়েই সে তার সমস্ত দায়িত্ব শেষ করে। নীলু শ্বাশুড়ী মনোয়ারার মধ্যে কোন বিশেষত্ব নেই। আর পাচটা শ্বাশুড়ী মতো তারও একমাত্র কাজ পুত্রবধূর ত্রুটি বের করা কিন্তু মনে মনে তিনি নীলুকে প্রচন্ড ভালোবাসেন, লোক দেখানো ভালোবাসা নয়, অন্তরের নির্যাস থেকে খাটি ভালোবাসা। নীলুর শ্বশুর হোসেন সাহেব সাদামাটা মানুষ। স্ত্রীর কাছে তিনি যেন অনুজীব। তারপরেও প্রতিটি কাজে তার ভীষণ উৎসাহ। বিয়ের সাত বছর পর নীলুর একটা কন্যাসন্তান জন্ম হয়। নীলু সংসারের প্রতিটি মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করলেও নিজের সন্তানের ব্যাপারে সে পুরোপুরি ব্যর্থ একজন মা। নীলুর চাকুরীর কারণে এই মেয়েটি কখনোই মায়ে ভালোবাসার পূর্ণতা পায়নি। এছাড়াও নীলুর সংসারে আর দুটি মানুষ আছে। । কিন্তু দেবর রফিক আর ননদ শাহানা। রফিক তার ভাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্র। পড়াশোনার পর বেকার এই ছেলেটা সব সময় কিছু কিছু না নিয়ে ব্যস্ত। তারপর হঠাৎ একদিন শারমিনের সাথে হয় বন্ধুত্ব। শারমিন বিশাল কোটিপতি পিতার একমাত্র সন্তান। তাদের বন্ধুত্ব দুর্ঘটনার মতো একদিন বিয়েতে পরিণতি পায়। আর শাহানা বড় আবেগী মেয়ে। তার এই আবেগ বাড়িওয়ালা আশ্রিত এক আত্নীয় আনিসে প্রতি দুর্বলতা হয়ে বুকে বিধতে শুরু ক।রে বাইরে থেকে শান্ত, সুন্দর মেয়েটির ভেতরের চঞ্চলতা কখনো নীলুকে খুব ভয় পাইয়ে দেয়। এদের ছাড়াও আর একজন মানুষ আছে যাকে ছাড়া এই লেখা অসম্পূর্ণ । তিনি হলেন কবির মামা। মনোয়ার দূরের সম্পর্কের ভাই। নিজ কর্মভূমিকে নীলগঞ্জকে আদর্শ করে গড়ে তোলার জন্য এই মানুষটি তার শেষ নিঃশ্বাসটুকু বিলিয়ে দিয়ে যান। আসলে কিছু মানুষ থাকে যারা নিজের জন্য বাচতেই শিখে না । কবীর মামা তাদের মাঝেরএকজন।
এভাবে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে নীলুর দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো। কখনো টুকরো সুখ, কখনো উদ্বেগ আবার কখনো কিছু কান্না দিয়ে। কিন্তু হঠাৎ একদিন নীলুর মেয়েটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। শত ঝড় আর বাধার পরেও নীলুর একই সরলরেখায় জীবনে কালো আধার নেমে আসে। নীলু কি পারবে নিজের অভাগী মেয়েটিকে আবার বুকে টেনে নিতে? পারবে আধার থেকে আলোর গল্প লিখতে? পারবে দিবারাত্রির যুদ্ধে জয়ী হয়ে?
জানতে হলে পড়তে হবে হুমায়ূন আহমেদের এইসব দিনরাত্রি উপন্যাসটি।
ব্যাক্তিগত অভিমতঃ
হুয়ামূন স্যারের বড় উপন্যাস না লেখা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। অনেকে আবার ধারণা করেন স্যারের লেখা বড় উপন্যাসের ক্ষেত্রে ততোটা সাবলীল নয়। তাদের ভুল ধারণা এই উপন্যাসটি অনেকাংশ ভেঙ্গে নেবে। নীলকে মধ্যবিন্দুতে রেখে অনেকগুলো চরি ত্রের আবর্তন সত্যই অসাধারণ লেগেছে। আবার একটির প্রভাবে অন্য চরিত্র কখনোই ম্লান মনে হয়নি। ছোট ছোট চরিত্রগুলো আপন স্বীয় দ্যুতি উজ্জ্বল। প্রতিটি চরিত্র যেন বাস্তব, যেন অনেক আপন। প্রতিটি চরিত্রের আবেগের মাঝে পাঠক অজান্তেই নিজেকে খুজে পাবেন। তাদের স্বপ্নগুলিকে নিজের মনে করতে ইচ্ছা হবে। কল্পনাকে নৌকা বানিয়ে কখনো যে এই পরিবারের অদৃশ্য একজন সদস্য হয়ে যাবেন খেয়ালই থাকবে না।
প্রিয় উক্তিঃ
"যারা সুখী হয় তাদের মধ্যে সুখী হবার বীজ থাকে। জল, হাওয়া এবং ভালোবাসায় সেই বীজ থেকে গাছ হয়।"
এই গল্পের শেষ নেই। মধ্যবিত্তের জোড়াতালির সংসারে, সব সামলে চলেও পদেপদে উপে���্ষিত গৃহবধূর লুকিয়ে রাখা চোখের জলে, খুব সুন্দর চিন্তামুক্ত পৃথিবীর স্বপ্নে বিভোর বাবার সারল্যে, কিশোরী চাপল্যে ভরপুর কোন মেয়ের নির্দোষ হাসিতে, শহরের পথে পথে একটা চাকরির আশায় ঘুরে ফেরা এক যুবকের সিগারেটের ধোঁয়ায় কিংবা কোন প্রবীণের সুখী ন��লগঞ্জের স্বপ্নে গেঁথে থাকে এই গল্পগুলি।
কিছু কিছু গল্প আছে, যা কখনো শেষ হয় না। এই সব দিনরাত্রির গল্প তেমনি এক শেষ না-হওয়া গল্প। এই গল্প দিনের পর দিন, বৎসরের পর বৎসর চলতেই থাকে। ঘরের চার দেয়ালে সুখ-দুঃখের কত কাব্যই না রচিত হয়। কত গোপন আনন্দ, কত লুকানো অশ্রু। শিশুরা বড়ো হয়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাত্রা করে অনির্দিষ্টর পথে। আবার নতুন সব শিশুরা জন্মায়।
আমাদের একটি সত্তা বেড়ে উঠে মা বাবার ছায়ায়। একদিন সেই সত্তার মৃত্যু ঘটে। বন্ধ হয় অদ্ভুত আর লেইম সব বিষয় নিয়ে আড্ডা দেওয়া। আমাদের পুনরায় জন্ম হয় একজন বাবা বা মা হিসেবে। কাজে নামি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের পথ মসৃণ করতে। এটাই আমাদের নিত্যদিনের গল্প। আমাদের যাপিত এইসব দিনরাত্রির গল্প।
গল্প এগুবে, গল্পের ক্যারেক্টার গুলোর কার্যকলাপে হেসে উঠবো, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হবো, মাঝে মাঝে বিরক্তিতে হয়তো কপালও কুঁচকে উঠবে। পড়তে পড়তে একসময় ভুলে বসে থাকব এটা একটা উপন্যাস, এরা সবাই বইয়ের চরিত্র। মনে হবে সবাই তো আমাদের আশেপাশেই আছে, ওইতো মুখ গম্ভীর করে আছে ইন্ট্রোভার্ট মানুষটি, নর্দমার পাশ ঘেঁষে অপ্রকৃতিস্থের মতো হেঁটে যাচ্ছে পৃথিবীকে বদলে ফেলার - সুন্দর সমুজ্জ্বল একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা লোকটা,সারাদিন চাকরির খোঁজে হন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রাজুয়েশন শেষ করা বেকার যুবক, সারাদিন ক্যাচক্যাচ করা বাড়ির বৃদ্ধা, সবাইকে মাতিয়ে রাখা ছোট্ট টুনি কিংবা দ্বিধার জালে আটকে পড়া কোনো তরুণী - এরা সবাই তো আমাদের আশেপাশেই আছে। আমরা একসাথে খাই ঘুমাই, অন্যের হাসি,আনন্দ দুঃখে একসঙ্গে মেতে উঠি, পীড়িত বোধ করি। "এইসব দিনরাত্রি"র গল্পে এইসব অহরহ ঘটতে থাকে। শেষটায় এসে বুকটা খালি হয়ে যায়, আমরা বিষন্নতায় ডুব দেই। আর হুমায়ূন আহমেদ প্রতিবারের মতো আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেন, একজীবনে মানুষের এতো কষ্ট, এতো দুঃখ? তারপরও জীবন কত সুন্দর।
এইসব কিছু বই আছে যেগুলো ঘুরেফিরে বারবার পড়া অনেকটা দিনশেষে নিজের বাড়ি ফেরার মত; যতই অন্য বইয়ে বইয়ে ঘুরে বেড়াই না কেন, দিন শেষে এগুলিতে ফিরে আসলে শান্তি লাগে।
নিঃসন্দেহে আমার পড়া হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা সবচাইতে প্রিয় বই এটা। আমি বইটা যতবার পড়ি প্রতিবার নতুন করে ভাল লাগে প্রতিটা চরিত্রকে। মমতাময়ী নীলুকে অসাধারণ লাগে, রফিক আর শারমিনের প্রেম আর সম্পর্কের টানাপোড়ান, শাহানার বিচিত্র মনোভাব, মামার পাগলামো আর সব ছাপিয়ে ছোট্ট টুনী সবকিছুই যেন বইটাকে অসাধারণ করে তুলেছে।
কিছু কিছু গল্প কখনো পুরোনো হয় না, কিছু গল্প চোখের সামনেই নিয়ে আসে ভয়াবহ বিষণ্ণতা। সেই বিষণ্ণতা থেকে বারবার একটা জিনিসই উপলব্ধি করতে হয়, Life goes on..
গল্প শুরু হয়েছিল নীলু নামের এক মেয়েকে নিয়ে। যে মেয়েটি নিজের আবেগকে আড়ালে নিয়ে একটা পরিবার সামলায়। এক উদ্ভট মধ্যবিত্ত পরিবার, প্রতিটি চরিত্রই পাঠকের চেনা মনে হবে। হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো যারা নিয়মিত পড়েছেন তারা এই উপন্যাস পড়ার সময় সামনে কি ঘটবে তা নিমিষেই বলে দিতে পারবেন। সাধারণ প্লট, চিরচেনা চরিত্রদের নিয়ে লেখা এ উপন্যাসও পাঠকের মনে যদি দাগ কাটতে পারে, তাহলে সেটা হবে হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য বর্ণনার কারণে। এর বর্ণনা এতটাই সুনিপুণ যে পাঠক সহজেই উপন্যাসের ভেতর ডুবে যেতে পারবেন নিজের অজান্তেই।
তবে এই উপন্যাসের বর্ণনার মুগ্ধতাটা ছাড়া আর কিছুই নেই। লেখক লিখেছেন ঠিকই কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে যাওয়া। কখনো কোন চরিত্রকে হাইলাইট করছেন আর কখনো ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। "শারমিন" এটার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আবার কখনো শুধু লিখতে হবে জন্যই অপ্রয়োজনীয় রসদ জোগাচ্ছেন অন্যান্য উপন্যাস থেকে। এই ব্যাপারগুলো পীড়াদায়ক।
এই উপন্যাস আমাকে একই সাথে বিষণ্ণ করেছে, বিরক্ত করেছে আবার মুগ্ধও করেছে। বিশেষ করে শেষের দিকের তাড়াহুড়ো। ওরকম তাড়াহুড়োতেও লেখক খুব মেপে মেপে শব্দ ব্যবহার করেছেন যা ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়। আফসোস এটাই, এত টাচিং করে যদি শেষটা লেখা যায় পুরোটা লিখলে আমরা হয়ত অন্য কোন দিনরাত্রিই পেয়ে যেতাম!
এই উপন্যাসটা পড়ার অভিজ্ঞতাই আলাদা। গুয়াহাটির "শুভম" সংস্থার শো-রুমে বসে পুটুদার সঙ্গে গ্যাজানোর ফাঁকে এই বইটা চোখে পড়ে গেছিল। ওপার বাংলার সাহিত্য সম্বন্ধে আমি নিতান্তই অজ্ঞ, কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ-এর অদ্ভূত-রকম আকর্ষণীয় কলমের জোর সম্বন্ধে আমি ওয়াকিবহাল। অতঃপর আড্ডার সমাপ্তি এবং বই বগলদাবা করে কোয়ার্টার অভিমুখে যাত্রা। তারপর যা হয়, অফিসিয়াল জটিলতার ঠেলায় রাতে মনের যা অবস্থা হয় তাতে উষ্টুম-ধুষ্টুম থ্রিলার পড়তে ইচ্ছে করে, মায়ের ভাষার বই হাতে তুলতে ভয় হয়: যদি অনাদর করে ফেলি! কাল রাতে, সপ্তাহান্তের সুযোগ নিতে দু দণ্ড শান্তির খোঁজে বইটা হাতে তুললাম। আর তারপর......।
এককথায় বলে বা লিখে বোঝান অসম্ভব যে এই লেখাটা কেন আমাকে একরকম ঘেঁটি ধরে শেষ পাতা অবধি নিয়ে গেল। এই মানুষদের, বিশেষত এই সব নারী চরিত্রের প্রত্যেককে আমি দেখেছি। যখন তাদের দেখেছি, বা তাদের সান্নিধ্যে এসেছি, তখন কিন্তু তাদের কথা ভাবিনি। সেই সময়টায় মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয় তার নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া, আর তার হিসেব নিতে গিয়েই কেটে যায় দিন আর রাত। আজ, এই বইটা পড়তে গিয়ে আমি চোখের কোণে হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষদের মনে করতে পারলাম, কিছুটা হলেও অনুভব করলাম তাদের জীবনের প্রবাহ। ধন্যবাদ হে লেখক, কিছুটা হলেও আপনি আমায় দিয়ে পুনরাবিষ্কার করালেন সেইসব দিনরাত্রি।
'কিছু কিছু গল্প আছে যা কখনো শেষ হয় না। এইসব দিনরাত্রির গল্প তেমনি এক শেষ না হওয়া গল্প। এই গল্প দিনের পর দিন বৎসরের পর বৎসর চলতেই থাকে। ঘরের চার দেয়ালে সুখ-দুঃখের কত কাব্যই না রচিত হয়। কত গোপন আনন্দ, কত লুকানো অশ্রু। শিশুরা বড় হয়। বৃদ্ধ বৃদ্ধারা যাত্রা করে অনির্দিষ্টের পথে। আবার নতুন সব শিশুরা জন্মায়।'
কোনো বই পড়ে একইসাথে মন ভালো আর খারাপ হয়ে যেতে পারে? কি জানি... এইসব দিনরাত্রি একটি একান্নবর্তী পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্প। একেকজনের একেকরকম গল্প, একেকরকম স্বপ্ন। মনে হলো, আমাদের আশেপাশের কোনো সংসারের চিত্রই উঠে এসেছে এখানে। এরকম গল্প কখনো শেষ হয় না, এক অধ্যায় শেষ হলে আরেক অধ্যায় শুরু। কারো জন্য কিছু থমকে থাকে না, শুধু স্মৃতিগুলো মাঝেমধ্যে খুব কষ্ট দেয় এই আর কি।
[ শাহানাকে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছিল, নীলুর মতো করে। কিন্তু, পরে ভাবলাম এর মতো পাগলামো আমি নিজেও কম করি না। ]
কিছু কিছু বই পড়ার পরও মনে হয় আবার পড়ি, বারবার পড়ি,বইয়ের পাতাগুলোকে আদর করে পাল্টাই,বইয়ের মানুষ গুলো এমনভাবে জড়িয়ে যায় যেন মনে হয় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে কিন্তু কল্পনার আকাশের রামধনু বাস্তবতার করাঘাতে র্কপুরের মতো মিলিয়ে যেতেই মনে পড়ে ওহ্ এটা তবে কি সত্যি হলেও গল্প! ছিল
আমাদের অন্তরের তলানিতে তলিয়ে থাকা কিছু গভীর কষ্ট আছে। যে কষ্ট কাউকে বলা যায় না, পড়ানো যায় না। কিন্তু মাঝেমধ্যে তা নেড়েচেড়ে দেখতে আমরা ভালোবাসি। সেই কষ্টগুলো হৃদয় গহীন থেকে তুলে আনে 'এইসব দিনরাত্রি'র মতো উপন্যাস।
নীলু মধ্যবিত্ত পরিবারের বউ। শ্বশুর - শ্বাশুড়ি, স্বামী, দেবর, ননদের একান্নবর্তী পরিবারে নীলুই চালিকাশক্তি। শ্বাশুড়ি মনোয়ারা উঠতে বসতে যেমন খুঁত ধরেন, তেমনি গোপনে মন থেকে তার লক্ষী বৌমাকে আশীর্বাদও করেন। মনোয়ারার সারাদিনের কটুক্তিকে আড়াল করেন নীলুর ভালোমানুষ শ্বশুর, হোসেন সাহেব।
স্বামী সফিক স্বল্পভাষী - আত্মকেন্দ্রিক, মাসের শুরুতে সংসারের টাকাটা মনোয়ারার হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত যার কর্তব্য। ননদ শাহানার যা কিছু ছেলেমানুষী সমস্যা, দেবর রফিকের আবদার - সব কিছু নীলুর কাছেই। এদের নিয়ে নীলুর গোছানো সংসার। বিয়ের পাঁচ বছর পর, নীলুর কোল আলো করে আসে টুনি।
এদের জীবনে আরো এসে উঁকি দিয়ে যান কবির মামা, সুখী নীলগঞ্জের স্বপ্নে বিভোর একজন মানুষ। রয়েছে বাড়ির ছাদের ঘরে বাস করা আশ্রিত আনিস, তার ইচ্ছা বড় ম্যাজিশিয়ান হবে। মনের ভিতরে সে গোপন করে রেখেছে এক কিশোরীর তীব্র আবেগ। পড়ালেখা শেষ করা বেকার রফিক তার ভালোবাসার নীলপদ্মগুলো রেখে এসেছে কোটিপতির সন্তান শারমিনের কাছে, নিজেও সে জানে না কেন ফিরে ফিরে যায় মেয়েটির বসার ঘরে।
জীবন কি আর এতো সরলরেখায় চলে? হাসি-কান্নার সংসারে ঝড়ও আসে। সফিকের আয়ে বিশাল সংসার আর চলে না। আটপৌরে গৃহবধূ নীলু পা বাড়ায় বাইরের জগতে, একটু স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে।
কিন্তু সুখ নামের সোনার হরিণ কি সহজে ধরা দেয়?
সেই নব্বই দশকের গল্প 'এইসব দিনরাত্রি'। তখনকার কথা, যখন মেয়েদের তাস খেলতে, রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে দেখলে চোখ কপালে উঠতো। যখন সংসারের ভার হালকা করার জন্য চাকরি করতে যাওয়াটা নীলুর জন্য ছিল বিশাল বিপ্লব। কিন্তু সমাজ কি খুব বদলেছে? স্বামীর দেওয়া হাত খরচ থেকে মা'কে টাকা পাঠানোর গঞ্জনা, একবেলা শ্বাশুড়ির অনুমতি ছাড়া পোলাও রেঁধে ফেলার ধৃষ্টতা, কর্মস্থল থেকে একদিন ফিরতে দেরি হয়ে যাওয়ার অপরাধ বা অসাবধানতার জন্য সন্তানকে মশার কামড় খাওয়ানোর মতো অপবাদ নীলুরা আজ অবধি বয়ে বেড়াচ্ছে। তবু প্রতিটি অশ্রুকণা আর দীর্ঘনিশ্বাস গোপন করে প্রবল মমতায় এতোগুলো মানুষের মুখের হাসি আগলে রাখার যুদ্ধ করে যায় নীলু।
এই সমাজে এখনো অভাব রয়েছে একজন কবির মামার। গ্রামে সবাই যাঁকে জানে 'পাগলা মাস্টার'। নীলগঞ্জ গ্রামকে উন্নত করে তুলবেন, এই স্বপ্ন নিয়ে প্রাক্তন ছাত্রদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন। কেউ মূল্যায়ন করে, কেউ করে না। তবু কবির মামা তাঁর সবটুকু আয়ু নিঃস্বার্থে লিখে দিয়েছেন অন্যের জন্য। স্বপ্ন কতটা সফল হয়েছে, সে প্রশ্ন অবান্তর। একসময় যে গভীর আত্মতৃপ্তির সাথে বলতে পেরেছেন তিনি 'জীবনটা তাহলে একেবারে নষ্ট হয়নি।'
সংসারী জীবনটা কি নীলুর মতো হওয়া উচিত? যে সকলের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে দিনশেষে টুনিকে বুকে জড়িয়ে হিসেব কষে অদেখা সুখ-দুঃখের। অথবা বন্যার মতো, স্বাধীনতার খোঁজে চলেছিল, চলতে চলতে সব সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছে যে। নাকি রফিকের মতো নিজের জন্য, সাফল্যের পিছে ছুটে বাঁচা উচিত? কিন্তু রফিক যে হাসতে ভুলে যাচ্ছে! হয়তো বা শারমিনের মতো মেনে নেওয়াই কি ভালো 'সুখী হওয়ার ক্ষমতা সকলের থাকে না, যারা সুখী তাদের মধ্যে সুখের বীজ থাকে।'
'এইসব দিনরাত্রি' উপন্যাসটি খুব সহজ ভাষায় বলে যেতে থাকে আশা ও ব্যর্থতার গল্প। কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতেও হয়, জীবনের এই চিরন্তন পাঠ পড়িয়েছেন লেখক। আনন্দ-বেদনার সংসারে কেউ আসে, কেউ চলেও যায়। কিছুই থমকে থাকে না, শূন্যস্থান প্রকৃতি পূর্ণ করে দেয়। অমঙ্গলের ছোঁয়া কাটিয়ে মঙ্গলবার্তা আবারো আসে চক্রাকারে, কিন্তু শূণ্যস্থান কি একেবারে পূর্ণ হয়?
নাকি সুখের বীণার ফাঁকে ফাঁকে বেজে যায় বিষাদের সুর?
দুইদিন মিলিয়ে বইটা পড়ে শেষ করলাম। হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন লেখক, যার বই একবার হাতে নিলে শেষ না করে রাখা যায় না। অনেকগুলো চরিত্র, অনেকগুলো পরিবার, অনেকগুলো গল্প। একদম শেষে গিয়ে টুনির জন্যই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগল। বইটি নিয়ে আলোচনা করার মতো অনেক কিছুই আছে। তবে কয়েকটা ব্যাপার নিয়েই দুটো কথা বলতে চাই। টানাপোড়েনের সংসারে কিছুটা সাহায্য করার জন্য কিংবা স্বাধীন হবার জন্য নীলু চাকরিতে প্রবেশ করে। যে বান্ধবী নিজে ছোটাছুটি করে তার জন্য চাকরিটা যোগাড় করে দিলো, সে বন্যার জন্যই নীলুর পরে সময় হলো না। বেচারির অবস্থা এতটাই খারাপ যে নীলুর অফিসে এসে তাকে পঞ্চাশ টাকা হাত পেতে নিতে হয়। অবশ্য নীলুর চরিত্রের এই দিকটিকে দোষ দেয়া যায় না। আজকালকার দিনগুলোই এমন। কারও জন্য কেউ কিছু করলে উপকার নেয়া মানুষটা সেটা আর মনে রাখে না। শাহানা, শারমিন, বীণা- চরিত্র তিনটিকে খুব বিরক্ত লেগেছে। বিশেষ করে আনিসকে নিয়ে শাহানা আর বীণার এহেন টানাহেঁচড়া একেবারেই ভালো লাগেনি। জহিরের দায়িত্বশীল আচরণ ভালো লেগেছে। স্ত্রীর পাগলামিকে আশকারা না দিয়ে তার যেটা করা উচিত ছিল, সেটাই করেছে। নীলুর শাশুড়ি মনোয়ারা কঠোর কিন্তু তার মনোলোগ পড়ার সময় মনে হয়েছে পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার মায়া ঠিকই আছে। কিন্তু তা প্রকাশ করার খুব সম্ভবত সময় বোধহয় সে পায়নি। হোসেন সাহেবের চরিত্রও ঠিকঠাক। রিটায়ার্ড একজন কর্মকর্তার চরিত্র যেমনভাবে আঁকা উচিত, তেমনভাবেই আঁকা হয়েছে। শফিক আর রফিক, এই দুইভাইকে নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু টাইপ দুটো চরিত্র। একজন কথা বলতেই থাকে, আরেকজনের মুখ দিয়ে কথাই বের হয় না। মাঝে মাঝে শফিকের আচরণ ভালো লাগে, আবার তার নির্লিপ্ত আচরণ দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আনিসের মতো একজন চরিত্র হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ বইতেই থাকে। পরের বাড়ির চিলেকোঠায় তার অবস্থান। বাড়িওয়ালার মেয়ে তার প্রতি আকর্ষিত, ভাড়াটিয়ার মেয়ে তার প্রতি আকর্ষিত। আনিসদের এদিকে দৃষ্টি থাকে না। তারা ব্যস্ত থাকে নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়ে ম্যাজিক শেখার বাসনায়। একটা সময় তাদেরকে গাট্টি বোঁচকা গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়। বইয়ের সবচেয়ে ভালো লাগার চরিত্র হচ্ছে কবীর মাস্টার। তার সুখী নীলগঞ্জ প্রজেক্ট নিয়ে আরও কয়েক পাতা থাকলে পড়তে বেশ ভালো লাগত। ইনি এমন একজন চরিত্র যে তাকে নিয়ে স্ট্যান্ড এলোন একটি বই লিখে ফেলা যায়। আর একদম শেষে এসে খুব খারাপ লাগল। ছোট্ট টুনির প্রতি বাবা-মায়ের এমন অবহেলা নিদারুণ কষ্ট দিয়েছে মনে। শুধু বাবা-মায়ের কথাই বলি কেন? পরিবারের সবারই কেমন যেন মেয়েটার প্রতি খাপছাড়া আচরণ দেখলাম।
"কিছু কিছু গল্প আছে যা কখনো শেষ হয় না। এইসব দিন-রাত্রির গল্প তেমনি এক শেষ না হওয়া গল্প। এই গল্প দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চলতেই থাকে। ঘরের চার দেয়ালে সুখ দুঃখের কত কাব্যই না রচিত হয়। কত গোপন আনন্দ, কত লুকানো অশ্রু। শিশুরা বড় হয়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাত্রা করে অনির্দিষ্টের পথে। আবার নতুন সব শিশুরা জন্মায়......"
এই অল্প কয়েকটা কথাই আসলে যথেষ্ট 'এইসব দিনরাত্রি'র গল্প বোঝাতে গেলে। আমাদের সেই চিরচেনা পরিবারের গল্প, কিন্তু পড়তে গেলে প্রতিবার বইটা শেষ করে চোখের পাতা অল্প করে হলেও ভিজে ওঠে।
তৃতীয়বারের মতো পড়লাম হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমার অতিপ্রিয় উপন্যাস এইসব দিনরাত্রি। তৃতীয়বার হঠাৎ করেই পড়তে বসার কারণ আছে। কিছুদিন আগে একটা বইয়ে জানলাম, হুমায়ূন আহমেদ নাকি নীলু চরিত্রটা গুলতেকিনকে ভেবে বা অনেকটা তার আদলে তৈরি করেছিলেন। যেটা তিনি নিজেই বলেছেন একটা সাক্ষাৎকারে। সেটা ঠিক কতটা তা ধরতেই আবার পড়া।
যদিও এই উপন্যাসের একটা মূখ্য চরিত্র বা বলা যায় পাঠকদের আচ্ছন্ন করে রাখা চরিত্র টুনি। কিন্তু আজ আমি টুনির ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে রিভিউ লিখবো। এর কারণ,টুনিকে নিয়ে অলরেডি অনেক অনেক আলাপ অতীতে হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। টুনির মৃত্যু নিয়ে শেষ তিন পাতায় লেখক পাঠকের মনে যে একটা আবেগী চিত্র এঁকেছেন তার কারণে আমার মনে হয় শুরুর বা উপন্যাসের অন্য অনেকটা অংশ জুড়ে আরো অনেককিছুই ছিলো যা মুগ্ধ হবার মতো যেটা টুনির কারণে চাপা পড়ে গেছে।
যেমন একটা ব্যাপার এই উপন্যাসে কয়েকভাবে দেখানো হয়েছে। সেটা হচ্ছে নিতান্ত সাধারণ দরিদ্র বেকার ছেলের জন্য মেয়েদের ভালোবাসা। এই ভালোবাসা কিন্তু মিথ্যা না। এমনটা হরহামেশাই হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যেটা সেটা এই ভালোবাসার সাথে বয়সের সংমিশ্রণ এবং অন্যান্য।
উদাহরণ দিয়ে বলি,শারমিনও রফিককে ভালোবেসে বিলেত ফেরত একটা সুদর্শন,সুযোগ্য ছেলেকে ছেড়ে হুট করেই চলে এসেছিলো। কিন্তু শারমিন সেটা করেছিলো এমবিএ পরীক্ষার পরে। টিনএজে না। তাই শারমিনকে বাস্তবতা বেশ ভালোভাবেই আঘাত করেছিলো। সে আফসোস করতে শুরু করেছিলো,নতুন করে শুরু করতে চাইছিলো জীবন,মানিয়ে নিতে পারছিলো না। যদিও শেষ পাতাম লেখক আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা চিত্র এঁকেছেন যেখানে শারমিন আবার ফিরে আসতে চায় রফিকের কাছে তবে আমার মতে এটা না থাকলেই ভালো হতো বেশী।
আবার বীনা এবং শাহানা দুজনেই ভালোবেসেছিলো ম্যাজিশিয়ান আনিসকে। যে পড়াশোনায় তেমন জুত করতে পারেনি,ছাদের ঘরে থাকে আর ম্যাজিক দেখায়। কিন্তু শাহানা আনিসকে পায় নি,বীনা পেয়েছে। শাহানার এই না পাওয়া ভালোবাসা আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রুপ নিয়েছে। সে আনিসকে ভুলতে পারে নি। এবং ইহজীবনেও কখনো পারবে না। না পাওয়া ভালোবাসার ঐ আফসোস ই তার মনে সারাজীবন আনিসের জন্য জায়গা রেখে দিবে যদিও এটা টিনেজ ভালোবাসা ছিলো।
এরপর কবির মাস্টারের কথা না বললেই নয়। একজন মানুষ যার জীবনের একটা অধ্যায় সম্পূর্ণ ভ্যানিশ। কেউ জানে না মাঝের ঐ সময়টায় সে কোথায় ছিলো কি করছিলো। কিন্তু একদিন হঠাৎ সে নীলগঞ্জ নামের একটা গ্রামে ভেসে ওঠে এবং প্রাণপনে আঁকড়ে ধরে গ্রামটাকে। গ্রামের মানুষ তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তিনি বৃদ্ধ বয়সে ছোটাছুটি করেন অদ্ভুত এক শখ নিয়ে, নীলগঞ্জকে তিনি সুখী নীলগঞ্জ বানাবেন। কবির মাস্টার মারা গেলেন কিন্তু তিনি একগ্রাম মানুষের ভালোবাসা পেয়ে গেলেন। এও কি কম পাওয়া?
তেমনই আরেকজন বিলুর স্বামী সোবহান। উপন্যাসের শুরুর দিকে তাকে বেখেয়ালী স্বামী আর কান্ডজ্ঞানহীন পিতা মনে হলেও পরে গিয়ে তার চরিত্রটা খুব ই ইন্টারেস্টিং হয়ে ওঠে। দেখা যায় সে আসলে কান্ডজ্ঞানহীন না। একটু পাগলাটে। যে কবির মাস্টারের রেখে যাওয়া কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। মাঝেমধ্যে মনে হয়,এই সমাজে এমন দুই একটা পাগলাটে লোক না থাকলে আমরা কিভাবে টিকে থাকতাম। সবাই যদি নিজের কথা ভাবা রোবট হয়ে উঠতাম!
সফিক চরিত্রটাও খুব ইন্টারেস্টিং। সে অফিসে একজন অত্যন্ত কর্মঠ কর্মী। কিন্তু স্ত্রীর ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। সন্তানের ব্যাপারেও উদাসীন। অথচ বাইরের এক বাচ্চা ছেলের সাথে আগ্রহ নিয়ে গল্প করে,তার খোঁজখবর করে। হঠাৎ হঠাৎ অত্যন্ত নরম হয়ে স্ত্রীর পক্ষ নিতে কঠোর হয়ে মায়ের বিপক্ষেও যায়। তাকে ঠিক কোনো নির্দিষ্ট দলে ফেলা যায় না তাই।
মনোয়ারা চরিত্রটাকে একদম প্রথম দিকে খুব দজ্জাল শ্বাশুড়ি মনে হলেও পরে দেখা যায় বৌ বাপের বাড়ি গেলে তার মন কাঁদে,বৌয়ের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যেন এই লক্ষী মেয়েটা কষ্ট না পায়। হোসেন সাহেবের ভালোবাসা দেখা যায়। তারটা তিনি দেখাতে চান না।
নীলু চরিত্রটা চমৎকার। এমন একজন নারী যে ঘর সামলাচ্ছে,বাইরে সামলাচ্ছে। কোনোকিছু যখন সে সিদ্ধান্ত নেয় করতে হবে তখন তা সে করে,দ্বিতীয়বার ভাবে না। বাড়িতে একটা ঝগড়া হয়েছে,নীলুর ক্লান্ত লাগলেও এক এক করে সবার রাগ ভাঙাতে হয়। দেবর ফিরতে রাত করলে ঘুম ঘুম চোখে বসে থাকতে হয় না খেয়ে। সংসারে কার কি শখ,সবদিকে তার কড়া নজর। এতকিছুর মধ্যেও চাকরির একবছরের মধ্যে তাকে ট্রেনিংয়ের জন্য সুইডেন পাঠাতে চাওয়া হয়,আর কয়বছরের মধ্যে তার প্রমোশন হয়। সময়ে সময়ে নীলু কঠোর হয়েও উঠতে পারতো। নীলুর ভেতর তীব্র আত্নসম্মানবোধ ছিলো যা তাকে অন্যের সাহায্য করা টাকায় ���েষ সময়ে মেয়ের পাশেও থাকতে দেয় নি।
হুমায়ূন আহমেদ যদিও বলেছেন নীলুকে তিনি গুলতেকিনের আদলে গড়েছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে এই পুরো উপন্যাসেই গুলতেকিনকে তিনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছেন। যেমন শারমিন,উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হঠাৎ সাধারণ এক পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে উঠলো। এরমধ্যেও কি গুলতেকিন নেই? আবার শাহানা যে হঠাৎ গিয়ে আনিসকে বলে,"চলেন কাজী অফিসে বিয়ে করে নিই।" এরমধ্যেও গুলতেকিন আছে। আর নীলুর মধ্যে তো আছেই মমতাময়ী স্ত্রীর রুপে, স্নেহময়ী ভাবির রুপে,মায়ের রুপে,বৌমার রুপে। সবখানেই।
এই উপন্যাসের একটা ইন্টারেস্টিং দিক আমি আগে খেয়াল করিনি এখন করছি। হুমায়ূন আহমেদ নিজের কিছু কিছু ব্যক্তিগত অনুভূতিও এই উপন্যাসে ঢুকিয়ে দিয়েছেন যা পড়তে পড়তে টের পেয়েছি। এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশী মনে আসছে,নীলু একটা টেলিভিশন কেনার জন্যই চাকরি শুরু করার অনুপ্রেরণা পায়,আর হুমায়ূন আহমেদও একটা টেলিভিশন কেনার জন্য এইসব দিনরাত্রি লেখাটা শুরু করেন। আবার দরিদ্র ঘরের ছেলে সাব্বির ভালো ছাত্র হবার কারণে হঠাৎই বিদেশে পিএইচডি আর টিচিং এসিস্টেন্টশীপ অফার পেয়ে যায় যেমনটা হুমায়ূন আহমেদের সাথেও হয়েছিলো।
এইসব দিনরাত্রি নাটক নিয়েও একটা ইন্টারেস্টিং তথ্য আছে,খোদ বিটিভি কর্তৃপক্ষ হুমায়ূন আহমেদকে অনুরোধ করেন টুনির মৃত্যু না দেখাতে,হুমায়ূন শোনেননি। যদিও ঐ সময় এইসব দিনরাত্রি,কোথাও কেউ নেই তুমুল জনপ্রিয় নাটক ছিলো কিন্তু এই দুটারই শেষ দৃশ্যের জন্য লেখককে অনেক গালাগাল হজম করতে হয়েছে। কিন্তু হুমায়ূন জানতেন,এই দৃশ্যগুলি না দেখালে সাময়িকভাবে জনপ্রিয় নাটকগুলি একসময় হারিয়েই যেতো। কিন্তু এইসব দিনরাত্রি,কোথাও কেউ নেই শুধুমাত্র টুনি বা বাকের ভাইয়ের মৃত্যুর জন্যই মনে দাগ কেটে থাকে। তাই জনপ্রিয়তা বা প্রশংসা পাবার থেকেও হুমায়ূন আহমেদ এইদিকে জোর দিয়েছিলেন যেন এটা টিকে থাকে। যেটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।
এইসব দিনরাত্রির সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে এটা আমাদেরই রোজকার গল্প। যা চারদেয়ালের মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে রচিত হচ্ছে। আমরা খেয়াল করে দেখি না যে এসবের মধ্যেও একটা ছন্দ আছে,কাব্য আছে,গল্প আছে। খেয়াল করলে তো এমন কতশত এইসব দিনরাত্রি তৈরি হয়! কিন্তু সবাই কি আর লিখতে পারে! হুমায়ূন তার এই তিনশ পাতার বইয়ে তার খুব সামান্য একটা অংশ তুলে এনেছেন যাতে আনন্দ আছে,দুঃখ আছে,চাপা কষ্ট আছে,না পাওয়া ভালোবাসা আছে, পেয়ে হারানো ভালোবাসা আছে। শোক যেমন আছে তেমন পাবার গল্পও কম নেই। এইজন্য আমাদের হাজারবার জানা এই গল্পগুলোও বারবার পড়তে বিরক্তি আসে না।
This entire review has been hidden because of spoilers.
টিপিক্যাল হুমায়ূন আহমেদীয় মধ্যবিত্ত জীবনসংসার কেন্দ্রীক উপন্যাস। খুব আহামরি প্লট না, এমন প্লট উনার অনেক গল্প উপন্যাসেই আছে। বলা যায় অনেকগুলো ছোটছোট গল্প বেধে একটা উপন্যাস লেখা। বরাবরই মতোই লেখনী অসাধারণ, চরিত্রগুলো যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তবে কিছু চরিত্রে এতো বেশি মনোযোগ যে বাকি চরিত্রগুলোর ডেপথ নাই, আরো গভীরভাবে লেখা যেতো হয়তো। শেষটা বড্ড তাড়াহুড়ো, আর মোটামুটি পুরা বই অপ্রাসঙ্কিক ঘটনায় ভরা। শুরু করে শেষটা কোথাও দেয়া নাই, কোথাও বিষয়টা এড়িয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো মজাটা নষ্ট হইলো।
বই - এইসব দিনরাত্রি। লেখক - হুমায়ূন আহমেদ। প্রকাশনা - অনন্যা।
🍁 🍁 🍁 🍁 🍁 🍁 শহরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। পরিবারটির কর্ত্রী 'মনোয়ারা' সারাক্ষণ সবার উপর কর্তৃত্ব ফলান এবং অকারণে বকাঝকা করেন।গৃহকর্তা গোবেচারা 'হোসেন সাহেব' স্ত্রীকে ভয় পান বলেই স্ত্রীর হ্যা তে হ্যা মিলিয়ে যান।বড়ছেলে 'সফিক' চুপচাপ ধরনের,ব্যস্ত থাকে অফিসের কাজ নিয়ে।ফলে পরিবারকে সময় দিতে পারে না।তার স্ত্রী 'নীলু' একা হাতেই পুরো পরিবারটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং পরিবারের প্রয়োজনে চাকরি নেন।ফলে পরিবারের সদস্যদের সাথে তার দূরত্ব বেড়ে যায়।ছোট ভাই 'রফিক' ভবঘুরে ও বেকার। হুট করে বিয়ে করে বসে ধনীর দুলারি শারমিনকে।ছোট বোন 'শাহানা' পছন্দ করে আনিস নামের বেকারকে কিন্তু ভালোবাসি কথাটা তাকে বলতেই পারেনি।পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য 'টুনি' যার মহাপ্রস্থান পাঠককে গল্প শেষে কাঁদিয়ে ছাড়ে। পাশাপাশি চলতে থাকে আরেকটি গল্প।যেখানে 'কবির মাস্টার' স্বপ্ন দেখেন সুখী নীলগঞ্জের।মাঝে মাঝে তিনি উপস্থিত হন মনোয়ারাদের বাড়িতে।সুখী নীলগঞ্জের স্বপ্ন পূরণ করতে পুরনো ছাত্রদের বাড়ি খুঁজতে থাকেন। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসে সোবাহান। এভাবেই এগিয়ে যায় এইসব দিনরাত্রির গল্প। 🍁 🍁 🍁 🍁
★মনোয়ারা - সারাক্ষণ খিটমিট করলেও পরিবারের সদস্যদের প্রতি তার রয়েছে প্রবল টান। ★হোসেন সাহেব - স্ত্রীকে ভয় পান কিন্তু তিনি শিশুর মতোই সুখী।মাঝেমধ্যে দেখা যায় হোমিওপ্যাথি নিয়ে স্বপ্ন দেখতে। ★সফিক - তাকে কখনো হাসতে দেখা যায় না।পরিবারের সদস্যদের কখনো সময় দিতে পারে না। ★নীলু - শত দুঃখ-কষ্ট নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে একা হাতে সংসার সামলান এবং চাকরি করে যান।প্রয়োজনে প্রতিটি সদস্যের আবদার পূরণ করেন। ★রফিক - বেকার ও ভবঘুরে। কিন্তু তাকে সবসময় হাসি-খুশি দেখা যায়। ★কবির সাহেব - আদর্শবান মানুষ যিনি নিজের স্বপ্ন সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে জানেন। 🍁🍁 কিছু গল্প কখনো শেষ হয় না,সদা চলমান।এটি এমনই একটি গল্প। এ গল্প আমাদের সবার জীবনেরই গল্প।কান্না-হাসি,দুঃখ-কষ্টের মেলবন্ধনই "এইসব দিনরাত্রি "।
★★১৯৮৫ সালে গল্প অবলম্বনে নির্মিত নাটক দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে।
🍁ভালোবাসার জবাব ভালোবাসা দিয়েই দিতে হয়। 🍁দুঃসংবাদ তাড়াতাড়ি শোনা ভালো কিন্তু সুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করাতে আনন্দ। 🍁বাবার কাছে কোনো মেয়ের বিয়ে আনন্দের ব্যাপার নয়।বিয়ের দিনটি হচ্ছে বাবা-মা'র জীবনের গভীরতম বিষাদের দিন।এই বিষাদ ভুলবার জন্যেই আনন্দ ও উল্লাসের একটা ভান করা হয়। 🍁মাঝে মাঝে জীবন ভিন্ন খাতে বইতে থাকে।সব কেমন জটপাকিয়ে যায় তখন একজন প্রিয়জনকে কাছে থাকতে হয়।
বইটি পড়া শেষ করার কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি। খারাপ ও ভালো লাগা মিশে আছে।কিছুক্ষণ থম মেরে বসেছিলাম বইটা শেষ করার পর।মন চাচ্ছিল না গল্প থেকে বের হয়ে যাই। কবির মাষ্টার এর মৃত্যু এর সময় এত আবেগঘন মনে হচ্ছি। আহারে মানুষ মরে যায় রয়ে যায় স্মৃতি! যারা আমাদের প্রকৃত ভালোবাসেন তাদের জন্যই আমাদের সময় হয় না। অবহেলা করি তাদেরকে🙂। আনিস চরিত্র টাও কি সুন্দর আর সাধারণ। এরকম সুন্দর মানুষগুলো ই থাকুক আমাদের চারিধারে😊। পরিশেষে বলা যায় আমাদের জীবন অনেক বৈচিত্র্যময়, রহস্যময়, অদ্ভুত, বিষন্ন আবার সুন্দরও 💚
ছোটবেলায় এইসব দিনরাত্রি নাটকটির কথা বড়দের মুখে শুনতাম। পরবর্তীতে সম্ভবত পুণঃপ্রচারের কল্যাণে নাটক্টির দু'এক্টি পর্ব ছাড়া ছাড়া ভাবে দেখা হয়েছে। যাই হোক, শারমিনের মতো মুডি আর অহংকারী মেয়ের উচিৎ হয়নি রফিকের মতন ভ্যগাবন্ড কোনো ছেলেকে বিয়ে করা। পুরো বইতে শাহানা মেয়েটির ছ্যাবলামি অসহ্য লেগেছে। তারচাইতে বীণা মেয়েটি অনেক ভালো, সমঝদার। নীলু, রফিক, শফিক, টুনি এদের কারো জন্যই আমার খারাপ লাগেনি, যতটা খারাপ লেগেছে আনিস নামের ছেলেটির জন্য। যাই হোক, এত বৃহৎ কলেবরের উপন্যাস পড়তে গেলে চরিত্রগুলো মনে গেঁথে যায়, বের হতে সময় লাগে। এইসব দিনরাত্রির রেশ বেশ কয়েকদিন থাকবে।
হুমায়ূন আহমেদের যে কয়টা উপন্যাস আমার ভালো লাগেছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হয��ে থাকবে এইসব দিন রাত্রি। শুনেছি এটা নিয়ে নাটক হয়েছিল। খুব আলোড়ন তৈরি হয়েছিল একে ঘিরে। সম্ভবত আমার জন্মর আগে। অথবা আমি অতি মাত্রায় ছোট তখনকার কথা ওটা। কিন্তু সে যাই হোক, উপন্যাসটি থেকে সঞ্চারিত অনুভূতি শেষ হবার মতো নয়। সুপ্ত হয়ে মধ্যবিত্তর কল্পনায় আটকে থাকবে, সব সময়।