রাঘব চৌধুরী বড়লোক হলে কী হয়, ভারী খামখেয়ালি মানুষ। লাখো-লাখো টাকা কামান বটে, কিন্তু লোকটার বাস্তববুদ্ধির একটু অভাব আছে। বাড়ির লাগোয়া একটা ব্যারাকবাড়ি করে রেখেছেন রাঘববাবু, কম করেও পঁচিশ-ত্রিশখানা ঘরে নানারকম লোক থাকে। বেশিরভাগই নিষ্কর্মা, কারও কারও নানা বাই-বাতিক, কেউ কেউ ভণ্ডুলকর্মা। একদিন রাঘববাবুর আশ্রয়ে নতুন এক লোক এসে হাজির হলো। আকারে সে পেল্লায়, স্বভাবে গোঁয়ার ও অসভ্য। রাঘববাবু ছাড়া বাড়ির সবাই লোকটাকে নিয়ে বেশ তটস্থ, কিন্তু বাড়ির পুরুতমশাই নন্দলালকে লোকটা বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলল। একে তিনি কোথায় যেন দেখেছেন।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।
তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
৩.৫/৫ অদ্ভুতুড়ে ঠিক যেমন হওয়ার কথা বইটা ঠিক তেমন। অতি পুরনো ফর্মুলা দিয়েও শীর্ষেন্দু প্রায় প্রতিবার হা হা করে হাসাতে পারেন, মন ভালো করে দিতে পারেন। এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার।
এই সিরিজের বইগুলো পড়তে গিয়ে দেখা যায়, ভয়াবহ মন খারাপ অবস্থাতেও পাঠক মুচকি মুচকি হাসছেন। হ্যাঁ, আমিও হেসেছি 'রাঘববাবুর বাড়ি' পড়তে গিয়ে। হেসেছি তাও একবার না। একাধিক বার। পড়তে শুরু করার পর যতোই এগিয়েছি, ততোই হালকা হয়ে এসেছে ভেতরটা। বরাবরই অদ্ভুতুড়ে সিরিজ 'মন খারাপ' রোগের দারুন এক টনিক হিসেবে কাজ করে। 'রাঘববাবুর বাড়ি '-ও এর কিছুমাত্র ব্যতিক্রম না।
সম্ভবত অদ্ভুতুড়ে সিরিজের আমার প্রিয় বই এখন পর্যন্ত। হিউমার ভর্তি। একটা বড় রিভিউ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এখনো মনটা হাসির বুদবুদে ভর্তি। লিখতে পারছিনা।
শুরুটা ভালো ছিল। অসম্ভব ভালো একটা অদ্ভুতুড়ের আভাস পাচ্ছিলাম। শেষে এসে কেমন জানি ভাবে শেষ করে দিলেন গল্পটা। শেষের টা জমল না মোটেও। তবে মোটের উপর চিন্তা করলে অন্যান্য অদ্ভুতুরের মত এটাও বেশ মজার। রাঘব নামক একজন বড়লোক মানুষের বাড়িকে কেন্দ্র করে লেখা। যেখানে গন্ডায় গন্ডায় লোক পুষে রাখেন রাঘব বাবু,অথচ কোন টা ই কোন কাজের নয়। সেই অলস লোকেদের ভিড়ে নতুন আরেকজন এসে জুটল। তার নাম কদম। সেও অন্য লোকদের মতই রাঘব বাবুর বাড়িতে স্থায়ী হয়ে যেতেন। যদি না শুরু থেকে কোন ঝামেলা না পাকাতেন। এই কদম কে ঘিরেই জমে গল্পের বাকি অংশের রহস্য!
A typical of Shirshendu Mukhopadhyay. It is indeed a fun and nice read. Though meant originally for young readers but everyone can read it and fall in love with the book. I simply enjoyed the book. A really lighthearted comedy and mystery. You would like the characters and find some around you anyways ;)
নন্দলাল এসেছেন রাঘববাবুর বাড়িতে পূজোর কাজে। পূজো সেরে বাইরে এসে বাগানে অপরিচিত একজনকে দেখে নন্দলাল একটু দমে গেলেন। চেহারাখানা দেখে ষণ্ডাগুণ্ডা বলেই মনে হয়। ডা*কাত বা খু*ন খারাপির আ*সামি হওয়াও বিচিত্র নয়। কথা হল, রাঘব চৌধুরীর বাড়িতে এসে জুটলই বা কী করে! আর এক কথা, লোকটাকে তিনি কোথাও দেখেছেন, কিন্তু কোথায় তা মনে পড়ছে না।
রাঘব চৌধুরী বড়লোক হলে কী হবে, ভারী খামখেয়ালি মানুষ। পাট আর চটের পৈতৃক কারবারে লাখো-লাখো টাকা কামান বটে, কিন্তু লোকটার বাস্তববুদ্ধির একটু অভাব আছে। নইলে এ বাড়িতে যেসব লোক এসে জোটে, দূরদর্শী হলে কখনো তাদের আশ্রয় দিতেন না। বুঝতে পারলেন না তো আচ্ছা উদাহরণ দেই, পালোয়ান হাবু দাসের কথাই ধরা যাক। একসময়ে নাকি কুস্তি টুস্তি করত। রাঘববাবুর কাছে একদিন এসে ধরে পড়ল, “হুঁজুর, গতরখানা তো দেখেছেন। এই দেহের খোরাকটা একটু বেশিই। কিন্তু দিনকাল যা পড়েছে তাতে দু’বেলা ভরপেট জোটানোই মুশকিল, যদি একটু আশ্রয় দেন তা হলে যা করতে বলবেন, করব।”
কালোয়াত গুণেন সাঁতরা, মস্ত নাকি গাইয়ে, কিন্তু গাঁ-গঞ্জে সমঝদার না পেয়ে একদিন সভাগায়ক হবে বলে রাঘববাবুর কাছে এসে হাজির। রাঘববাবু সব শুনে তটস্থ হয়ে বললেন, “আজ্ঞে, আমি তো রাজা জমিদার নই, আমার সভা-টভাও নেই, কাজেই সভাগায়ক রাখার কথাই ওঠে না। আমি রসকষহীন নিকষ্যি ব্যবসাদার।” গুণেন ভারী মুষড়ে পড়ে বলল, “তবে যে সবাই বলছিল আপনার কাছে এলেই নাকি একটা হিল্লে হবে?” রাঘববাবু কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, “আজ্ঞে, কালোয়াতি গানও আমি বুঝি না। বড়জোর কেত্তন বা শ্যামাসঙ্গীত অবধি আমার দৌড়, তবে গুণী মানুষের কদর আমি বুঝি। এসে যখন পড়েছেন তখন তো আর ফেলতে পারি না।”
লম্বা, সুড়ঙ্গের মতো সুটকো চেহারার ভূ*তনাথ হালদার, সে নাকি একজন ভূ*ত-বিশারদ। যত বুজরুক সব এসে এই রাঘবের ঘাড়ে ভর করে। ভূ*তনাথ নাকি ভূ*তবিদ্যা গুলে খেয়েছে। তার চারদিকে সর্বদাই ভূ*তের ভিড়! বছরটাক আগে এসে সেও জুটে গেল এ বাড়িতে। রাঘবকে বলল, “বাবুমশাই, ভূ*ত বড় ত্যাঁদড়। আপনার সুরক্ষার তো দরকার আছে।"
বৈজ্ঞানিক হলধর হালদার একসময়ে কালিকাপুর ইস্কুলে বিজ্ঞানের মাস্টার ছিলেন। মাথাপাগলা মানুষ। ইস্কুল কামাই করে বাড়িতে বসে নানারকম উদ্ভট বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতেন। শেষে ইস্কুলের কর্তৃপক্ষ বিরক্ত হয়ে তাঁকে চাকরি থেকে ছাড়িয়েই দিলো। বিপাকে পড়ে তিনিও এসে একদিন জুটে গেলেন রাঘবের বাড়িতে।
রাঘববাবুর এই যে অজ্ঞাতকুলশীল উটকো লোকদের আশ্রয় দেওয়া, এটা বাড়ির লোকেরা মোটেই ভাল চোখে দেখে না। কিন্তু তাকে বলে বিশেষ লাভ হয় না। বড়ই দয়ার শরীর। লোকে যা বলে তাই বিশ্বাস করে বসেন। কিছুদিন আগে পিছনের বাগানের আগাছার জঙ্গলে একজন লোককে পড়ে থাকতে দেখে বাগানের মালি চেঁচামেচি শুরু করে। লোকটাকে তুলে এনে মুখেচোখে জল থাবড়ানোর পর সে জ্ঞান ফিরে পেয়ে যা বলল তা আষাঢ়ে গল্প। সে নাকি এই পৃথিবীর লোক নয়। অনেক দূরে অন্য এক নীহারিকায় এক গ্রহে তার বাস। সেই গুলবাজ গোলাপ রায় ও থেকে গেল!
এই যে এত সব উদ্ভট লোক এসে জড় হচ্ছে বাড়িতে শেষমেশ রাঘববাবু কোনো বিপদে পড়বেন না তো? আর বিপদে পড়লে এই মুফতে খাওয়া লোকগুলোর ভূমিকাই বা কী হবে বলা মুশকিল। রাঘববাবুর বাড়িতে আসলেই উদ্ভট কর্মকাণ্ড চলছে!
🫒পাঠ প্রতিক্রিয়া🫒
অদ্ভুতুড়ে সিরিজের "রাঘববাবুর বাড়ি" পড়ে মোটামুটি মজা পেলাম। খুব ভালো নয় আবার খুব খারাপ নয়। এটাকে মধ্যম মানের বই বলা যায়। রাঘববাবুর বাড়িতে যেসব লোক থাকতে আসছে মূলত তারাই এই গল্পের প্রধান আকর্ষণ। তবে সবচেয়ে মজা লেগেছে ভূ*তেদের আগমন। তবে তারা কোথা থেকে আগমন করেছে সেটা বলবো না। তবে এই অংশটুকু বেশি ভালো লেগেছে।
অদ্ভুতুড়ে সিরিজের লেখাগুলো গতানুগতিক ধারার নয়। কিশোরদের জন্য লেখাগুলো সহজ সাবলীল এবং রঙিন। এখানে এডাল্ট মাইন্ড নিয়ে পড়লে ভালো লাগবে না। শীর্ষেন্দুর বড়দের বইগুলোর থেকে আমার কেন জানি না এই বইগুলো বেশি ভালো লাগে। একটি বাড়িকে ঘিরে সুন্দর লেখনীতে বইটি তৈরি। তবে এর চেয়েও সুন্দর এবং মজার বই অবশ্য এই সিরিজে আছে।
চরিত্রদের মধ্যে আমার নন্দলাল কে ভালো লেগেছে। এছাড়া ওই বিজ্ঞানী শুরুতে বেশি অবদান না রাখলেও শেষটায় কিন্তু সে চমক দেখাবে। সব মিলিয়ে ভালো লাগার সিরিজ এই অদ্ভুতুড়ে।