‘বিকেলের মৃত্যু; সেই আশ্চর্য উপন্যাস, যা আনন্দবাজার রবিবাসরীয়তে প্রকাশকালেই, সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে, সর্বস্তরের পাঠককুলকে করে রেখেছিল উহ্মুখ, রুদ্ধশ্বাস ও সম্মোহিত। একাধারে প্রেমের ও রহস্যের, বিজ্ঞান-কল্পবিজ্ঞান ও অ্যাডভেঞ্চারের উপাদানে তৈরি এই তীব্রগতি উপন্যাসে আদ্যন্ত নেশা-ধরানো উত্তেজনা।
এ-কাহিনীর নায়ক ববি রায়। এক বিস্ময়কর প্রতিভা। কলকাতার এক মালটিন্যাশনাল কোম্পানির জাঁদরেল বস। ইলেকট্রনিক্সের জাদুকর, ক্যারাটে-কু্ংফুতে সুদক্ষ, সুরসিক, আত্মভোলা, বেঁটেখাটো, বিরলকেশ এই মানুষটির নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক সংগোপন কোড। ববি রায়েরই প্রাইভেট সেক্রেটারি লীনা।
লীনার সাথে বসের অদ্ভুত সম্পর্ক। বস তাকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এমন একটি গাড়ি দেন, যে-গাড়ি বুক কাঁপিয়ে কথা বলে ওঠে।
এই গাড়ির রহস্য, ববি রায়ের আচমকা অন্তর্ধান; নীল মঞ্জিল নামের এক দুর্ভেদ্য দুর্গ, ওত-পেতে-থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের মরণ-ফাঁদ, লীনা ও ববি রায়ের বিচিত্র সম্পর্কের টানাপোড়েন-এই সব নিয়েই অপ্রতিরোধ্য কৌতুহলকর এক আধুনিকতম উপন্যাস ‘বিকেলের মৃত্যু’।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।
তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
- জমলো না বস। - কি জমলো না? -বিকেলের মৃত্যু। -বেশ তো একটানা পড়ে গেলি তখন থেকে, এখন বলছিস জমলো না? -হ্যা, ওটুকুই কৃতিত্ব লেখক সাহেবের। আগাগোড়া গতিই আছে গল্পে, আর কিছু নেই। -মানে? - এই একটু হলিউডি একশন, কিছু হাস্যকর রকম ভিলেন, একটা জোকার মার্কা ক্যারেক্টার আর লীনা। -লীনা? লীনা কে? -গল্পের হিরোইন। ববি রায়ের সেক্রেটারি। -উফ! ববি রায়টা আবার কে? -এতক্ষণ কি বকছিলাম! যাকে নিয়ে বই! ইলেক্ট্রনিক জিনিয়াস, আবার কারাতের মাস্টার। ছোটখাট লোক, কিন্তু চার পাঁচজনকে একাই কাত করতে পারে। -এ দেখি জেমস বন্ড! -সে আর বলতে। -ভালো লাগলো না যখন, তখন আর কি করবি? অন্য কিছু পড়গে, যা। -তাই সই। :(
বাংলায় মৌলিক রহস্য উপন্যাসের শীর্ণকায় ধারাটিকে পুষ্ট করার ক্ষেত্রে আনন্দবাজার রবিবাসরীয়-তে ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস প্রকাশের ভূমিকা বিরাট। কিন্তু সেই ট্র্যাডিশনের সূচনা যে লেখার মাধ্যমে, সেটি পড়তে গিয়ে দস্তুরমতো হতাশ হলাম। এটিকে আর যাই বলা যাক, থ্রিলার বলা যায়না। কেন? ব্রেইন ও ব্রন-এর আদর্শ মিশেল একটি সুপারম্যান গোছের নায়ক, কয়েকটি হাস্যকর রকমের বলিউডি/হলিউডি ভিলেইন, কিছু প্রযুক্তি, কিছু ভাঁড়ামো, অকারণে জটিল করে তোলা প্লট, একটি ভালো-লাগা নারীঃ এই মেশালেই যদি থ্রিলার হয় তাহলে দক্ষিণে তৈরি হওয়া প্রায় প্রতিটি সিনেমাই থ্রিলার হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য। ফাউ হিসেবে সেগুলোতে দুর্দান্ত লোকেশন আর গান-বাজনাও পাওয়া যায়! তবে হ্যাঁ, উপন্যাসটি গতিশীল, এবং শুরু থেকে শেষ অবধি প্রেডিক্টেবল হলেও পড়ে ফেলা যায়। আমার মনে হয়, শীর্ষেন্দুর রহস্য উপন্যাস গ্রহণযোগ্য হয় অরিন্দম শীলের হাতে পড়লেই, কারণ তখন তাতে আসে কিছু অতিরিক্ত মোচড়, কিছু অপ্রত্যাশিত ঘনত্ব, এবং আধুনিক সিনেমাটোগ্রাফি, যা কেন্দ্রীয় চরিত্রদের কাছ থেকে অসামান্য অভিনয় নিংড়ে নিয়ে বাগাড়ম্বর-সর্বস্ব লেখাগুলোকে জীবন রহস্যে সিঞ্চিত করে। মোদ্দা কথা, এই উপন্যাসটা পড়তে বলার মতো কোনো বিশেষ কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।
পড়া শেষে মহা দুঃখে পড়েছি। বইটা ঠিক কোনভাবে বিচার করব তা নিয়ে! এই একই বই আমি যদি প্রকাশকালের সময়েই পড়তাম এবং আরও কম বয়সে পড়তাম, তবে বোধহয় অভিভূত হয়ে গল্পে আচ্ছন্ন হয়ে থাকতাম! শেষে যেমন রোমান্টিক সিন দেখানো হয়েছে–কল্পনা করতাম, আমিও লীনা হয়ে কোনো একদিন ববি রায়ের দেখা পাব!!
কিন্তু এই ২০২৪-এ বসে বইটা কেন জানি হাস্যকর; জোর করে চাপিয়ে দেওয়া মনে হলো। না, না .. শীর্ষেন্দুর লেখা নিয়ে কটাক্ষ করছি না। লেখা বরাবরই আকর্ষক। গতি, মোড়, বর্ণনা সাবলীল। শুধু একটু বেশিই নাটকীয়তা হয়ে গেল।
তেত্রিশ বছর আগে বাংলা ভাষায় লেখা টেকনো থ্রিলার ধাচের উপন্যাস। (ভাবা যায়!?!) মারদাঙ্গা অ্যাকশন, সায়েন্স, কন্সপিরেসি, রোমান্স, কমেডি, মেলোড্রামা- সবই আছে পুরোদস্তুর!
কিন্তু... ইয়ে মানে... ববি রায় একটু বেশিই সুপারম্যান টাইপ হয়ে গেলো না? :/
প্রথমে তিন কাপ সুপারম্যান লেভেলের ববি রায় ঢেলে দিন। তারপর, আধা কাপ বাঙালি নায়িকা ঢেলে দিন। যোগ করুন খানিকটা মেলোড্রামা, এক চামচ কমিক রিলিফ চরিত্র।
আপনি অলরেডি বুঝতে পারছেন বেশি ভাল কিছু হচ্ছেনা।
তাই, আপননি পাঁচ চামচ ঝাঁঝাঁলো হলিউডি একশন যোগ করে দিন।
ব্যস, বিকেলের মৃত্যু তৈরি।
বইটা বেশ বিরক্তিকর ছিল। ক্লিশে সব জিনিসপাতি দিয়ে ভর্তি। আমি বুঝলাম না, কিভাবে রোগা পটকা একজন লোক একসাথে মার্শাল আর্ট স্পেশালিস্ট, পৃথিবীর বেস্ট ইলেক্ট্রিশিয়ান, অসম্ভব পটু মার্কস্ম্যান ইত্যাদি ইত্যাদি হইতে পারে। আর আছে আরেক লীনা, হিন্দি সিনেমার হিরোইন থেকেও বিরক্তিকর।
কিন্তু বইয়ের একশন সিনগুলা বেশ ভাল। একটু সিনেম্যাটিক, বাট বেশ মজা পেয়েছি পড়ে। দ্যাট সেভড দা বুক, যা মনে হয়।
সবকিছুই যেন একটু অতিরিক্ত। প্রধান চরিত্রকে এমন ভাবে চিত্রন করা হয়েছে তাকে রীতিমতো হাইব্রিড সুপারহিউম্যান এর কাছাকাছি লেগেছে। তবে পড়ে শেষ করে উঠতে পেরেছি লেখকের গাথুনির জন্য।
My reaction can be biased, but in this case it's just my taste bud.
রিভিউ -বিকেলের মৃত্যু লেখকঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বইয়ের মূল্যঃ ২৫০ প্রকাশনাঃ আনন্দ পাবলিশার্স
লিনা ভট্টাচার্য, একজন নিসঃঙ্গ বাবা মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকা একজন মেয়ে। আচ্ছা মানুষ কী একা থাকতে পারে? কিংবা সুন্দর ছিমছাম ছোট একটা পরিবার থেকেও কী কেউ এভাবে একাকীত্বের রাজ্যে বাস করতে পারে? হয়তো পারে! লিনা এই একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাকরি নেন একটি অফিসে যেখানে তার বস ববি রায়।
ববি রায় একজন কর্মঠ, কাজে প্রচণ্ড কেয়ারফুল হলেও আসলে সে লিনার কাছে একজন বিরক্তিকর মানুষ। ববি রায়ের পার্সোনাল সেক্রেটারি হিসেবেই লিনা তার অফিসে কাজ করেন।
একদিন ববি রায় লিনাকে তার রুমে ডেকে খুব জরুরী একটি কাজের জন্য ইঙ্গিত দেন। তার অফিসের কম্পিউটারের একটা কোড দেন যেটা লিনা প্রথমে ভেল্কিবাজি মনে করলেও পরবর্তীতে নিয়ে আসে চরম বিপদজনক জীবনের নিশ্চয়তা!
Bobby Roy কোডটি ব্যবহার করে এক্সেস করলেই বোঝা যাবে আসলে কাহিনী কী! কিন্তু এর আসল রহস্যই বা কী? লিনাকে এই রসহ্যের মধ্যে ফেলে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান ববি রায়। এরই মধ্যে অফিসের বিলাসবহুল একটি গাড়ি লিনাকে ব্যবহার করতে দেন লিনার নিষ্ঠুর বস ববি রায়। গাড়ির সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কাজ হচ্ছে পুরুষালি কণ্ঠে দিক নির্দেশনা দেয়া। আসলেই কী কোন কম্পিউটারাইজডের মাধ্যমে গাড়িটি কথা বলে নাকি অন্য কিছু?
এইসবের মূল রহস্যই হচ্ছে নীল মন্ঞ্জিল। ববি রায় একটি অনিশ্চিত জীবনের দিকে পাড়ি দিয়ে লিনার উপরে সব ছেড়ে ছুড়ে একপ্রকার প্রায় গা ঢাকা দেন। কিন্তু এর আসল মোটিভটা কী? লিনা এসবে ক্লান্ত হয়ে উঠলেও ততোক্ষণে খুব দেরী হয়ে গেছে। খুব সাধারণ একজন সেক্রেটারি হয়েও একদল মুখোশধারী লোক তার পিছু নেয়। কারা তারা? আর কেনই বা লিনার পিছু নিচ্ছে তারা? ববি রায়ের নীল মন্ঞ্জিলে কী এমন রহস্য আছে যা উদঘাটন করতে পিছু নিয়েছে একদল লোক?
এরই মধ্যে ববি রায় কলকাতা থেকে পালিয়ে গেলে একটা হোটেলে উঠেন। পুরো পৃথিবীর মধ্যে তার ব্রেইনের যে দক্ষতা আছে তা প্রশংসনীয় হলেও পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রই চাচ্ছেন তাকে হত্যা করার এবং পুরস্কার হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ ডলারের।
সমুদ্র তীরে এক কলগার্লের সাথে বারে ফুর্তি করতে গিয়েই বিপদে পড়েন ববি রায়। আসলেই কী কলগার্ল, যার নাম চিকা সে কি শুধুই কলগার্ল? নাকি দাঙ্গামা বাঁধার নতুন কেউ? সব বাধা পেরিয়ে এলেও বিপত্তি ঘটে লিনা ভট্টাচার্যের সাথে। পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার সাথে থাকা ববি রায়ের একটি পিস্তল তাদের আওতায় নিতে গিয়েই অপহরণ হয় লিনা। কিন্তু তাকেই কেন? এর ভেতরের আসল রহস্যটা কি? নীল মন্ঞ্জিল বলে কী আসলেই কোন জায়গা আছে? আর থাকলেই সে কেন নিজেকে জড়াচ্ছে এসবে?
ববি রায়, যে মানুষটা গার্ল হেটেড পার্সন, যে বিশ্বাস করে মেয়েরা মাথামোটা এন্ড নাথিং এলস দে আর, এবং মেয়ে মানুষ মানেই একেকটা ঝামেলা সেই কুৎসিত এবং অতি জঘন্য মানুষটারই কেন সাহায্য করছে নিলা?
সবকিছুরই হয়তো এক আসল মোটিভ থাকে নীল মন্ঞ্জিলেরও একটা মোটিভ থাকতে পারে কিন্তু সেটা কী? এই রহস্যের কী আদৌ কোন কুল কিনারা আছে? সরকার যে মানুষটাকে হত্যা করার জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন সেই ডলারের লোভে যে সিরিয়াল কিলারগুলোর রক্ত ক্রমশ গরম হয়ে যাচ্ছে তারা কী আসলেই সক্ষম হবেন ববি রায়কে হত্যা করতে?
নীল মন্ঞ্জিল রহস্য উদঘাটন করতে চাইলে অবশ্যই পড়তে হবে শীর্ষেন্দুর "বিকেলের মৃত্যু" বইটি। পাতায় পাতায় থ্রিল এবং শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন নিজেকে কোন দ্বিধা ছাড়াই বলা যায়।
শীর্ষেন্দু যে থ্রিলার লিখেন তা এই বই না পড়লে জানতামও না। অতিরিক্ত রকমের চমৎকার ছিলো। শেষ না করে শান্তি নেই। "কী হবে কী হবে" একটা ভাব পুরো বইয়ে। আমার মনে হয় লেখক এই বইটা লিখেছেন সবচেয়ে বেশী যত্ন করে। একটা বইয়ে এতোটাও থ্রিল রাখা পসিবল?
বইয়ের সবচেয়ে বেশী পছন্দের দিক ছিলো এন্ডিংটা। আমি জাস্ট মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়েছি। এতো সুন্দর হতে পারে একটা জীবন এতোটা থ্রিলের ভেতরেও?
যারা থ্রিলার, রহস্য পছন্দ করেন তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য!
ববি রায় এক বিশাল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির হর্তাকর্তা এবং বহুগুণে গুণান্বিত একজন লোক। ইলেক্ট্রনিক ব্যাপারে তার দক্ষতার কোনো তুলনা নেই, কাজ ছাড়া কিছু বুঝেন না, বাস্তববাদী, কঠোর, ঠোঁটকাটা মানুষ। তার সেক্রেটারী লীনা ভট্টাচার্য। লীনা টাকা উপার্জনের জন্য চাকরি করে না ববি রায়ের কোম্পানিতে। ছোটবেলা থেকে মা-বাবার উপেক্ষিত সন্তান হিসেবে একা জীবন-যাপন করে বড় হয়েছে সে। বিরক্তিকর নিস্তরঙ্গ জীবনে সময় কাটানোর জন্যই সে চাকরি নিয়েছিল। কিন্তু তখন তো আর জানতো না সেটা এমন বিপদে ফেলবে তাকে!
একদিন অফিসের লাঞ্চটাইমে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো অপমানজনক কথাবার্তা বললেন ববি রায়। অতঃপর রাগে গনগনে লীনাকে অবাক করে দিয়ে তাকে একটি ঝাঁ-চকচকে গাড়ি এবং গোপন একটি ব্যাপার নিয়ে কিছু আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলেই উধাও হয়ে গেলেন কোথায়! কিন্তু এখন লীনা জড়িয়ে পড়লো অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায়। ববি রায় তাকে হঠাৎ কেন গাড়ি দিলো? আর কি গোপন বিষয় নিয়েই বা এতো হম্বিতম্বি? লোকটা বারবার বলছিল সে খুন হয়ে যাবে। কিন্তু কেন?
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
ইতিবাচক-নেতিবাচক দু'টো দিকই বলি -
একবসায় বইটা আগাগোড়া মনোযোগ দিয়ে পড়ে গেলাম, আর তার প্রধান কারণ হলো অসম্ভব ফাস্ট-পেইসড গল্প। মনে হচ্ছিল ঝড়ের বেগে এগোচ্ছিল কাহিনী। এই গতিটা ভালো লেগেছে বলে একটানা মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে গিয়েছি। তাছাড়া সমাপ্তিটা বেশ সুন্দর। আর একটি কারণে লেখককে বাহবা দিতেই হয়, এতো বছর আগে এরকম একটা বই লেখা আসলে চাট্টিখানি কথা নয়।
এবার নেতিবাচক দিকে আসি - কাহিনী একদমই বাস্তবঘেঁষা মনে হয় নি। অনেক বেশি রঙ চড়ানো বলে মনে হলো, কিছু জায়গায় বেশ বাড়াবাড়ি ছিল। ববি রায় উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র, এবং দুঃখজনক হলেও সত্য তাকেই সবচেয়ে বেশি অবাস্তব লেগেছে। সুপারহিউম্যান টাইপের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিছু বইতে দেখেছি, কিন্তু ববি রায় সুপারহিউম্যানের চেয়েও আরো বেশি কিছু বলে উপস্থাপন করাটা ভালো লাগে নি। প্রতি পাতাতেই মনে হচ্ছিল এই চরিত্র কল্পনা ছাড়া আর কোথাও মানায় না।
Bikeler Mrityu is not a great book. It's so full of of unreasonableness and illogicality that it's hardly even a good book. But, it was still extremely entertaining to my teenage self. Shirshendu's thrillers are best described in Jatayu's words: আমার গল্পের যা গুণ, এরও তাই। মনকে টানবার শক্তি আছে পুরোপুরি। অথচ তলিয়ে দেখুন, দেখবেন অনেক ফাঁক, অনেক ফাঁকি।
ববি রায় একজন 'ইলেক্ট্রনিক্স উইজার্ড'। তাঁর আবিষ্কার চুরি/ধ্বংসের জন্য বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো ভাড়াটে খুনি লেলিয়ে রেখেছে। এহেন সুপারজিনিয়াস তাঁর কম্পিউটারের সবচেয়ে গোপনীয় ফাইলগুলোর পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছেন নিজের নাম! ব্যাপারটা হজম হল না।
ভীষণ ব্যস্ত বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা লীনা ভট্টাচার্য। টাকার জন্য নয়, অনেকটা সময় কাটাতেই সে চাকুরি নিল একটা কোম্পানিতে। কিন্তু শুরু থেকেই তার মেজাজ খারাপ ববি রায়ের উপর। আসলে ও যে ববি রায়েরই সেক্রেটারি। আর এই ববি রায় হল ভীষণই নারীবিদ্বেষী এক পুরুষ। এই যখন অবস্থা তখন ববি লীনাকে কিছু পাসওয়ার্ড আর একটা অত্যাধুনিক গাড়ি দিয়ে আচমকাই নিরুদ্দেশ হয়ে গেল, এটা বলে যে তার নাকি প্রাণনাশের সম্ভাবনা আছে।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না লীনা। দীর্ঘদিনের বন্ধু দোলনকে নিয়ে সে লেগে গেল সমস্যা সমাধানে। অচিরেই ববির কম্পিউটার থেকে সে আবিস্কার করল নীল মন্জিল নামক এক বাড়ির ঠিকানা যা ববির নির্দেশে ডিলিটও করল সে। এদবকে নিজেকে প্রাইভেট ডিটেকটিভ হিসেবে পরিচয় দেওয়া ইন্দ্রজিৎ ঢুকে পড়ল ববির অফিসে আর সেদিন বিকেলেই তার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। লীনা বুঝতে পারল এক জটিল জালে আটকা পড়েছে সে।
অন্যদিকে ববি যখন মুম্বাই হয়ে প্যারিসে চলে যেতে চাচ্ছিল তখনই সে বাঁধার সম্মুখীন হলো ভাড়াটে খুনিদের দ্বারা। কেন? কিসের এত পাসওয়ার্ড, এত গোপণীয়তা? কেন ববিকে ��ত্যা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র? কি আছে ঐ নীল মঞ্জিলে? তাহলে কি বিজ্ঞানী রবীশ ঘোষের দেওয়া গবেষণাই এর জন্য দায়ী?
পাঠ প্রতিক্রিয়া :
মোটামুটি বলা যেতে পারে বইটাকে। থ্রিলার হয়েও কেন যেন থ্রিলার হয়ে ওঠে নি বইটা। ভালো লাগার যে বিষয়টা তা হলো আজ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে যে বাংলা ভাষায় এমন মৌলিক একটা বই লেখা হয়েছে তা আবিষ্কার করা। বইটাতে একটা গতি আছে যাতে বইটা শুরু করলে আপনি শেষ করতে বাধ্য। প্রথমেই বিচিত্র স্বভাবের এক নায়ক, তারপর আজব কিছু সংকেত, গাড়ি আর মানুষ, তারপর হঠাৎ করে একটা রহস্যের জগতে হারিয়ে যাওয়া। আবার কি হবে কি হবে ভাবতে ভাবতে আপনি যখন ভাবতে শুরু করবেন এসবের কারণটা কি তখনই লেখক আপনাকে রহস্যের প্রেক্ষাপট বলে নিবেন যাতে আপনি আবার সামনে কি হয় সেটা জানতেই আগ্রহী হবেন। এভাবে বইটা গতির সাথে সাথে ধীরে ধীরে আপনার সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়ে একদম শেষে নিয়ে যাবে সেই অন্তিম প্রশ্নের উত্তরে বা নীল মঞ্জিলের রহস্য উদঘাটনে। আবার এই থ্রিলিং ব্যাপারটার সাথে সাথে বিভিন্ন হাস্যকৌতুকগুলো মাঝে মাঝে আপনাকে ভিন্ন একটা স্বাদও দেবে।
তবে বেশ কয়েকটা বিষয় আছে যা বইটিতে আমার ভালো লাগে নি। তার মধ্যে প্রথমেই আসবে নায়ককে সুপারম্যান করে তোলা। একে তো নায়ককে লেখক দেখিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে তার উপর নায়ক আবার জুডো ব্ল্যাকবেল্ট। তাইতো নায়ক খালিহাতেই দুই ভাড়াটে খুনিকে ঘায়েল করতে পারে, বন্দুক থাকাসত্ত্বেও কাবু করতে পারে আরেকদলকে বা আগেররাতে সারারাত নির্যাতনের শিকার হয়েও পরের দিনেই খালি হাতে ধরাশায়ী করতে পারে সাব মেশিনগান ওয়ালা বক্সিং চ্যাম্পিয়নকে। আবার অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েও এক মিনিটেই ফিরে পেতে পারে চেতনা যাতে লীনাকে বিশেষ নির্দেশ দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারে।
আবার ববি-লীনার প্রেমটাও বেশ খাপছাড়া মনে হয়েছে। শুরু থেকেই ববিকে লেখক কাজের প্রতি ভীষণ সিরিয়াস, আনমনা আর নারীবিদ্বেষী হিসেবে দেখালেও কোনো এক অজানা কারণে দেখা যায় শেষদিকে ববি লীনার প্রেমে পড়ে। অন্যদিকে লীনা দীর্ঘদিন দোলনের সাথে সম্পর্কে থাকলেও শেষে দেখা যায় লীনাও প্রেমে পড়ছে ববির আর দোলনের সাথে সম্পর্কটাকে লেখক এভাবে ‘একবছর যাবৎ প্রেমের চেষ্টা করেও হচ্ছে না' বলে ব্যাখ্যা করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে।
আবার কাহিনীও লেখক কিছুটা অযথাই পেঁচিয়েছেন বলে মনে হয়েছে আর শেষদিকে ভাড়াটে খুনি জন আর বক্সারের নিজেরা নিজেরা মারা পড়ার দৃশ্যটা তো কিছুটা হাস্যকর মনে হয়েছে।
অর্থাৎ আমার যেটা মনে হয়েছে যারা আমার মতো থ্রিলার তেমন একটা পড়ে নি তাদের ক্ষেত্রে কাহিনীটা বেশ ভালো বলে মনে হলেও যারা থ্রিলার ভক্ত তাদের কাছে বইটা তেমন আহামরি কিছু মনে হবে না।
সবই ছিল বলিউড, হলিউড কায়দায় একশন, কমেডি, মেলোড্রামা, রোমান্স। একবার নিয়ে বসলে এই বই ছেড়ে উঠাও মুসকিল হবে কারণ লেখক পাঠক ধরে রাখতে জানেন। কিন্তু থ্রিলার উপন্যাস হিসেবে একে তিন তারার বেশি দেয়া যাচ্ছে না।
শুরুতে যতোটা আগ্রহ ও উত্তেজনার সাথে গল্পের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলাম, সময়ের সাথে সাথে তা কেটে গেছে। গল্পের মাঝামাঝি পর্যন্ত যে টানটান উত্তেজনা বজায় ছিল শেষের দিকে তা মরেই গিয়েছে। শুধু শুরু করেছি বিধায় শেষ করা। প্রথম থেকেই ইংরেজি কথা বাংলা অক্ষরে লিখাটা চোখে লাগে। কেন যেন ব্যাপারটা ভালো লাগে না।
তবে হ্যাঁ কাহিনী মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলেছে। হয়তো গল্পের প্রধান চরিত্র ববি অতিমানবের ভূমিকায় না থেকে আরেকটু সাধারণ হলে বা গল্পের প্রধান নারী চরিত্র লীনা শেষে চিরাচরিত নারীরূপে উপস্থাপিত না হলে গল্পটা তার উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারতো।
This entire review has been hidden because of spoilers.
ববি রায় হতে চেয়েছিলো জেমস বন্ড আর ল্যাংডনের হাইব্রিড, কিন্তু হয়ে গেল অনন্ত জলিল (আর চেহারার যে বর্ণনা, তাতে এক চিমটি হিরো আলম)। এই বই শুরু করতে চান? এই বেলা একটা উপদেশ দিয়ে রাখি, এই বই না পড়ে RED মার্কা একটি হলিউডি গাঁজাখুরি মুভি দেখুন (বলিউড, ঢালিউড হলেও বিশেষ পার্থক্য করে না), সময়টা আরো ভালোভাবে ব্যবহার হবে। প্লট মারাত্মক ছোট, চেষ্টা করলে গোটা চারেক পৃষ্ঠায় পুরো বইয়ের কাহিনী শেষ করে দেওয়া যায়। ববি রায়ের ওয়ান পাঞ্চ ম্যান সাইতামাগিরি করে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি গুপ্তঘাতকদের কাটা কলাগাছের মত ফেলে দেওয়া (বাঃ! এদের গুপ্তঘাতক বানাইছে ক্যাডা?) আর তার গবেট সেক্রেটারি লীনা ভট্টাচার্যকে ইভটিজিং করা- এই করে বইয়ের কলেবর ১০০ পাতা বাড়ানো হয়েছে। তাও কিছু পজিটিভ জিনিস খুঁজে বের করা দরকার। যেমন, এই বই থেকে আমরা কি শিখলাম? আমরা শিখলাম যে একচুয়ালি ভদ্র, নিরীহ হলে আপনার গার্লফ্রেন্ড টিকবে না। ববি রায়ের মত মিসোজিনিস্ট, কথায় কথায় হ্যারাস করা আর সেক্সুয়াল স্টেরেওটাইপিং করলেও- যদি আপনার টাকা থাকে আর ভালো কারাতে দেখিয়ে দুই একটা শ্ত্রু শোয়ায়ে দিতে পারেন, তবে মেয়েরা "জয় গুরু" বলে আপনার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিংবা আপনি তাদের কোলে- একই কথা। মোরালঃ দিন শেষে ববি রায় রাই সব মেয়ে পায়। সে অঞ্জনের ববি রায় হোক, কিংবা শীর্ষেন্দুর।
ববি রয়ের ক্যারেক্টারটা বারবার আয়রন ম্যানকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলো। থ্রিলার হিসেবে সাসপেন্স-চেস ভালো ছিল। প্লট আহামরি কিছু নয়। গল্পকথন বাই কল্লোল চ্যানেলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। একাজ-সেকাজের মধ্যেই বেশ ভালো গল্প শোনা হয়ে যাচ্ছে।
ধুন্দুমার টাইপের উড়াধুরা একটা থ্রিলার টাইপের বই পড়ে ফেললাম মনে হলো 😒 পড়া ধরেছিলাম পার্থিব-দূরবীন-মানবজমিন এর লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই। কিন্তু পড়ে ফেললাম এসপিওনাজ থ্রিলার টাইপের কোনো মুভির স্ক্রিপ্ট 😒
ফাস্ট ছিল বইটা। এককালে মুভি সিলেক্ট করতাম মুভিতে কেমন ফাইটিং সিন আছে তা দেখে, সেকালে যদি রয়ে যেতাম তাহলে এ বইয়ের রেটিং দিতাম পাঁচে সোয়া পাঁচ বোধহয় 😂 তবে এখন অতটা ভাল্লাগল না। আর কি! পড়ে সময় কাটে ভালো, তাই পড়েই ফেললাম।
আমার পড়ার সময় নির্ধারণটা মনে হয় দেরিতে হয়ে গেলো। খুব বেশি সাপ্রাইজিং কিছু ছিলো না আবার হয়তো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নামটা দেখে প্রত্যাশা বেশি ছিলো.... ওভার অল মোটামুটি লেগেছে।।
মাধ্যমিক শেষ করার পর ২০১২ সালের দিকে সেই অফুরন্ত সময়ে এই বইটা প্রথম পড়েছিলাম। যতোটা আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম, শেষ করে অতোটা ভাল লাগে নি। উপন্যাসের কাহিনীর পুরোটা জুড়েই কেমন জানি "বাংলা সিনেমা"-"বাংলা সিনেমা" টাইপ গন্ধ! শীর্ষেন্দু কাকু নির্ঘাৎ কোন সাউথ-ইন্ডিয়ান ফিল্ম দেখা শেষ করে এই উপন্যাস লিখতে বসেছিলেন। না হলে এই একজন 'ববি রায়' এতো কিছুতে পারদর্শী হয় কি করে? :-D অবাক হবো না, ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশের অনন্ত জলিল এই কাহিনীর উপর সিনেমা বানিয়ে ববি রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। :-P
আর অনেকেই দেখছি এই উপন্যাসটাকে 'রহস্য'-'রহস্য' বলে হুমড়ি খেয়ে পরছে! আরে বাবা.. যে গল্পে শুরু করার পর থেকেই বলে দেওয়া যায়, এর শেষ কাহিনীটা কি হতে পারে, সেখানে এরা রহস্য পেলো কোথায় সেটাই বুঝতে পারছি না! :-D