Jump to ratings and reviews
Rate this book

গর্ভধারিণী

Rate this book
এক দুঃসাহসী ও অভিনব বিষয়বস্তু নিয়ে, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবােধ নিয়ে নতুন পরীক্ষার । ফলশ্রুতি এই গর্ভধারিণী উপন্যাস। অসম অর্থনৈতিক কাঠামােয় বড় হয়ে ওঠা চার বন্ধু, তাদের মধ্যে একজন নারী, এক সময়ে উপলব্ধি করল অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এসেছে এই দেশে। কারও যেন নিজস্ব কোন দায়। নেই, দেশটার ভালােমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দলগুলির ওপর দিয়ে। অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ। কোণ খুঁজছে। এই ক্লৈব্যের বিরুদ্ধে। রুখে দাঁড়াতে চেয়েছে ঐ চারজন । যুবক-যুবতী, পরিণামে তাদের আত্মগােপন করতে হলাে হিমালয়ের কোণে এক পাহাড়ী গ্রামে, যেখানে সভ্যতার নখ এখনাে আঁচড় কাটেনি। সেখানে শুরু হলাে তাদের একজনের। -যে একমাত্র নারী তাদের দলে, তার-বিচিত্র আত্মত্যাগ ও সাধনা। এই উপন্যাস তাদের সকলের সেই স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের কাহিনী।

384 pages, Hardcover

137 people are currently reading
1894 people want to read

About the author

Samaresh Majumdar

337 books700 followers
Samaresh Majumdar (Bangla: সমরেশ মজুমদার) was a well-known Bengali writer. He spent his childhood years in the tea gardens of Duars, Jalpaiguri, West Bengal, India. He was a student of the Jalpaiguri Zilla School, Jalpaiguri. He completed his bachelors in Bengali from Scottish Church College, Kolkata. His first story appeared in "Desh" in 1967. "Dour" was his first novel, which was published in "Desh" in 1976. Author of novels, short stories and travelogues, Samaresh received the Indian government's coveted Sahitya Akademi award for the second book of the Animesh series, 'Kalbela".

Some of his famous characters are:

1. Animesh & Madhabilata (Animesh Quartet)
2. Arjun - Fictional sleuth.
3. Dipaboli (Saatkahon)

সমরেশ মজুমদার-এর জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ। প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম গল্প ‘দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’, ১৯৭৫-এ ‘দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, উনিশ বিশ, সওয়ার, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আরও অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া ‘দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।

মৃত্যু : ৮ মে, ২০২৩

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
809 (39%)
4 stars
768 (37%)
3 stars
342 (16%)
2 stars
91 (4%)
1 star
26 (1%)
Displaying 1 - 30 of 132 reviews
Profile Image for Sadia Rahman.
9 reviews44 followers
March 18, 2019
কোনো বই পড়ে আপনার কখনও রিডার্স ব্লক হয়েছে? গর্ভধারিণী পড়ার পর একমাসেরও বেশি সময় আমি অন্য কোন বই পড়তে পারিনি, শুরু করলেও শেষ হয়নি। এরপর একটানা কয়েকটা বই পড়ে মনে হচ্ছে সাথে রাইটার্স ব্লকও হয়েছিল। গর্ভধারিণী পড়ার পর থেকে আর একটা রিভিউও লিখিনি, অথচ পড়ার পর এই লেখাটা আমি খুবই উপভোগ করি।

জয়িতা,আনন্দ,সুদীপ আর কল্যান। চারজন চার রকম পরিবেশে বড় হয়েছে, প্রেসিডেন্সীতে পড়ার সময় পরস্পরে বন্ধু হয়ে উঠে।মানবিক মূল্যবোধ থেকে সমাজ সচেতনতা উঁকি দেয় সদ্য যৌবনে পা রাখা এদের ভিতর স্বতন্ত্রভাবে। অসম অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে দিতে চায়।সব দায়-দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপিয়ে হাত-পা গুটিয়ে পুরনো মানুষের মতো বাঁচতে বিবেকে বাঁধে।অন্তত কিছুটা হলেও নাড়া দিতে চায় ওরা যাতে এই চুপসে পরা সংস্কারাগ্রস্ত বাঙালী অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলে;তবে ওরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয় এমনকি কোন বাম দলও নয়।
চারজনের ভিতর সুদীপ রগচটা, খানিকটা খেয়ালী; আনন্দ ঠাণ্ডা মাথার ছেলে, কথা দিয়ে সহজে অন্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। জয়িতা বিপদে বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নিঃসেন্দহে জয়ী এই উপন্যাসের সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র! জয়ীর ভূমিকাটুকু বললে গোটা উপন্যাসের কাহিনী বলা হয়ে যায় । কল্যাণ সবচেয়ে ভালো ছাত্র, তবু তার মধ্যে বহু মধ্যবিত্ত সংস্কার রয়ে গেছে। আনন্দটা ছাড়া বাকি সবারই চিন্তা ভাবনা পরিবারের সাথে অসমতল।
অল্প বয়সের কিছু উদ্দীপনা, পরিবর্তনের চেষ্টায় যে ব্যাকুলতা তার ছাপ চরিত্রগুলোর প্রতিটা কথায়, আলোচনায় টের পাওয়া যায়। হঠাৎ খুঁজে পাওয়া রেনেসাঁর স্পর্শে সব ভেদাভেদ দূর করার প্রচেষ্টায় মত্ত চার তরুণ-তরুণী। যে কোন ভেদাভেদ; হোক সেটা ধনী-গরীবের, হোক সেটা নারী-পুরুষের।

একে একে ওরা আক্রমণ করে ধনীদের অনৈতিক বিনোদনের স্বর্গ, 'প্যারাডাইস', একটি জাল ওষুধের কারখানা।
তারপর ঠাকুরপুকুরের এক পুরনো বাড়িতে আশ্রয় নেয় আর লক্ষ্য করতে থাকে মানুষের প্রতিক্রিয়া।সরকারি নেতা কর্মী বিদ্রোহী ডাকাত বললেও সাধারণ মানুষদের অনেকেই বাহবা দিতে থাকে তবে অবশ্যই জনসম্মুখে নয়। একসময় পুলিশের নজরে চলে আসে এরা,ছবিসহ পত্রিকায় ছাপা হয়। পালানোর আগে এক মন্ত্রীকে শেষ করে যায়, যে কিনা মুখে সাম্যবাদীর বুলি আওড়ায় আর ভিতরে ভিতরে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো,সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়দাতা ,ঘুষ আদান প্রদানের মূল।

এবার শুরু হয় নতুন সংগ্রাম, ফেরারি জীবন।চারজন দুভাগ হয়ে শিলিগুড়ি চলে যায়, কলকাতা ছাড়ার আগে বেশকিছু টাকা,জামা কাপড়,প্রচুর ওষুধসহ মাস দেড়েকের রসদ নিয়ে নেয়।শিলিগুড়ি থেকে জীপে করে দার্জিলিং; সর্বত্র পুলিশের ভয়। যেখানে সেখানে পুলিশ হানা দেয় তাই ওরা প্লান করে ভারতীয় পুলিশের আওতার বাইরে এমন এক জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।ম্যাপ দেখে নেপাল বর্ডারের চ্যাঙথাপু গ্রামকে টার্গেট করে। ভোর না হতেই দার্জিলিং হতে আসে সান্দাকফু, ট্রেকিং করে সান্দাকফুতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ক্লান্ত; কুয়াশা সরে গিয়ে যখন তাদের সামনে বুক চিতিয়ে দাড়ায় নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা, চোখ শীতল হয়ে আসে, সব অবসাদ মিলিয়ে যায় মনে হয় এক হাজার বছর কাটিয়ে দেয়া যাবে এই নৈসর্গের সামনে দাঁড়িয়ে। একদিকে পুলিশের ভয়, ধরতে পারলে বিচার ছাড়াই রাস্তায় মত মারবে ভালো করেই জানা। আরেকদিকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমরেশ মজুমদারেরর বর্ণনা। থ্রিলার হিসেবেই পড়েছি এতটুকু, বই এর অর্ধেকটা। কিন্তু জীবনটা থ্রিলার উপন্যাস না, বাস্তবতা অন্যরকম।

অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না অনেক দিন ধরে। মানুষের রুচি কত দ্রুত বদলায়, পছন্দ অপছন্দ বদলাতেই বা কত সময় লাগে! নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারগুলো কিভাবে শুরু হয়, অন্যের জন্য নিজের স্বার্থ কতটা ভুলে থাকা যায়। মানসিকতার পার্থক্যের পরও একসাথে কতটা পথ চলা সম্ভব!
এগুলো ছাড়াও অনেক খটকা এই এক বই পড়ে মিটে গেছে। তবুও কাহিনীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাবতে গেলে প্রত্যেক বার মাথা ফাঁকা হয়ে আসে। চিন্তাভাবনা উল্টো স্রোতে চলে।
আর কোনো বই সম্ভবত আমাকে গর্ভধারিণীর মত প্রভাবিত করেনি আগে।
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
December 24, 2014
উপন্যাসটা যখন পড়তে শুরু করলাম তখন অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল। ৪জন তরুণ-তরুণী সমাজ-রাষ্ট্র পরিবর্তনের ইচ্ছে যাদের বুকে। তারা একটা একটা করে মিশন সস্পন্ন করে আর ভাল লাগাটা কাজ করতে থাকে...থ্রিলিং টাইপ ব্যাপারটা কাজ করতেছিল। মনে হচ্ছিলো, তারা যে কাজটা করার সংকল্প করতেছে, তা যর্থাথ, ভাল! কিন্তু যতোই কাহিনী এগতে ছিলাম, ততোই তাদের পরিকল্পনার ফাঁক ফোঁকর বের হতে থাকে। কয়েকটা ব্যাপার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আসলেই কি আমাদের দেশের পেক্ষিতে , মধ্যবিত্ত মানসিকতার এই জীবনে বিপ্লব কার্যকরী? কিংবা সকলের অংশগ্রহণ বা সমর্থন থাকবে ? এটা স্পষ্টত দৃশ্যমান যে, লেখক সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট ধ্যান ধারণার ছিলেন। উনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কমই বিশ্বাস করেন, তা তাঁর 'কালবেলা-কালপুরুষ-উত্তরাধিকার' উপন্যাসত্রয়ের মধ্যেও লক্ষণীয়। গর্ভধারিণী উপন্যাসের শেষের দিকে লেখক পাঠকের ধৈর্য্যচুত্যির কারণ হয়েছিলেন, গ্রামের বর্ণনা এত্ত বেশি দেয়ার হেতু পাইনি!

সব মিলিয়ে উপন্যাসটিকে ৪/৫ দেয়া যেতে পারে!
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews238 followers
July 6, 2020
শেষটা পড়ে হতাশ 🐸
তবে বিপ্লব নিয়ে অন্যান্য বই পড়ে যেমন টগবগ করে ফুটতাম.. নাহ! এমনি এমনি দেশের সিস্টেম চেঞ্জ হবে না, একটা কঠিন বিপ্লব লাগবেই লাগবে। এই বইটা পড়ে অন্তত এতোটুকু বোধোদয় হয়েছে, ঝোঁকের মাথায় কিছুই হয় না। সবকিছুর জন্যই একটা সুস্পষ্ট এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজন।
Profile Image for Tasnima Oishee.
140 reviews26 followers
May 15, 2023
গর্ভধারিণী বইটা পড়ে আমার পরিচিত একজনের নাম তার মা রেখেছেন জয়ীতা। অনেক দিন বইটা শেল্ফে পড়ে থেকে ধূলো জমা ছিলো! মা-দিবসে একদিনেই এই চারশ পৃষ্ঠার বইটা শেষ করলাম। শেষ করে একদিন সময় নিলাম রিভিউ লিখতে।

আশেপাশের এতো অন্যায় অবিচার দেখে আমাদের অনেকের নিশ্চয়ই অনেকবার অনেকবার ইচ্ছে করেছে দেশটাকে ঢেলে সাজাতে, কারোর বা ইচ্ছে করেছে এসবের মূলে যে শোষক শ্রেণিটা আছে একটা মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে তার মুখোশটা ছিড়ে দিতে। স্বপ্নটা দেখেছি আমরা সবাই, কিন্তু সত্যি করতে মাঠে নেমেছিলো চার তরুণ- আনন্দ, জয়ীতা, সুদীপ আর কল্যাণ। জয়ীতা আর সুদীপ দুজনই বড়লোকের দুধ মাখন খাওয়া বাচ্চা- তাদের মনে এই বুর্জোয়াদের প্রতি বিদ্বেষটা অবাক করার মতোই। কল্যাণ একদম নিম্নবিত্ত সমাজ থেকে উঠে আসা, ওর আগমণটাও অবাক করা। কিন্তু আনন্দ মধ্যবিত্ত এক ছেলে- যুগে যুগে মধ্যবিত্তরাই এসব অনাচার নিয়ে ভাবে আসলে।

এই চারটি ছেলে মেয়ে মিলে ভাবলো কিছু একটা করে দেশের একদম দুর্নীতিবাজদের ভিত নাড়িয়ে দেয়া যাক। পরপর তিনটি অ্যাটাক করে পুলিশদের, রাজনীতিবিদদের সার্চলিস্টের এক��ম দোরগোড়ায় এসে পড়লো এরা। ছুটতে ছুটতে আত্মগোপন করে করে অনেক বাধা বিপত্তি ফেলে তারা এলো দার্জিলিং!

দার্জিলিং থেকে সোজা তোপল্যাঙ নাম���র এক গ্রামে, যেখানে সভ্যতার চিহ্ন লাগেনি আজো। সেই যে ছুটে চললো এরা, কোনো দিন থামতে পারলো না হয়তো... এরা তোপল্যাঙকে সাজালো নিজেদের আঁচে। কোনোদিন কেউ আলাদা করে নারী বলে না ভাবা জয়ীতা সাক্ষী থাকলো সবচেয়ে বড় নারীত্বের..

বইটা আরো আগে পড়া দরকার ছিলো। 🙃
দার্জিলিং এর এতো সুন্দর বর্ণনা!
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
August 31, 2023
ভালো লাগেনি। এটা নিয়ে বিস্তারিত লিখতেও মন চাচ্ছেনা। তবে বুঝতে পারলাম কিশোর বয়সে এই বইটা পড়তে পারলে বেশ উপভোগ্য মনে হতো।
January 2, 2021
ভিন্ন ভিন্ন পরিবার ও সামাজিক স্তর থেকে আসা চার বন্ধু— আনন্দ, সুদীপ, জয়িতা, কল্যাণ। নকশালবাড়ি আন্দোলনের ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতঃ নিজেরা আয়োজন করে এক বিপ্লবের, যার মধ্য দিয়ে ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে মুক্তির পথ খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা।

প্রত্যেকের চিন্তাভাবনার সীমাহীন বৈচিত্রতা থাকা সত্ত্বেও একটা 'ইন্টারসেকশন' পয়েন্ট ছিল, যেখানে তারা সবাই সাম্যবাদকে উপজীব্য করে সামনে আগাতে চেয়েছিল। কিছু বিচ্ছিন্ন(!) ঘটনা ঘটিয়ে জনসাধারণের টনক নাড়ানোর চেষ্টা করে চার বন্ধু। পরবর্তীতে পুলিশের ভয়ে আশ্রয় নিতে হয় বিদেশ-বিভুঁইয়ে। অস্তিত্ব রক্ষার্থে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক সমাজে যেয়ে ঠাঁই নিতে হয় তাদেরকে। সেখানে তারা তাদের লব্ধিত সব শিক্ষা প্রয়োগ করার দুঃসাহস করে ফেলে। এতে কতটুকু সফলতা অর্জন তারা করে... জানতে চাইলে দ্রুত পড়ে ফেলুন অসাধারণ এই বইটি।

সমরেশবাবু চরিত্রের পুরোপুরি প্রস্ফুটন নিয়ে এত দারুণ কাজ করেছেন, যা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রতিটি চরিত্র খুব যত্ন নিয়ে কাজ করা, আলাদা আলাদা সময়ে প্রতিটা চরিত্র, তাদের চিন্তাভাবনা, কাজের প্রতিফলন... সবকিছু নিয়ে প্রয়োজনমতো ভাবতে পারার জায়গাটা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই আনন্দিত।

গল্পে 'গর্ভধারিণী' নামটির বিপুল সার্থকতা পরিলক্ষিত হয়েছে আমার কাছে। একটি ছোটো বিষয়কে কেন্দ্র করে শব্দটার যে বিশালতা গল্পে তুলে ধরেছেন, তা একইসাথে আমাকে বিস্মিত করেছে এবং ভাবতে বাধ্য করেছে। উপন্যাসটি আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ঠিক, অথবা আমার কাছে উত্তর থাকা অনেক প্রশ্ন সামনে এনেছে, কিন্তু ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে ভাবিয়ে তৃপ্ত করেছে।

তবে কিছু জায়গায় তাদের অনায়াসে বাধা-বিপত্তি অতিক্রমের অস্পষ্ট কায়দা চোখে পড়ার পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় বয়সের তুলনায় কাজের বাড়াবাড়ি চোখে ঠেকেছে। সমস্যাগুলো এড়াতে পারলে 'পাঁচ তারা' ঠুকে দিতে এতটুকু বাঁধত না৷


প্রিয় উক্তি:

পুরুষ নতুন প্রজন্ম লালন করতে পারে, বীজ বপণ করতে পারে, কিন্তু নির্মাণ করতে পারে না।
Profile Image for Sahed Hossain Cyclone.
21 reviews35 followers
March 1, 2021
এত সুন্দর বই এর শেষটা এত বাজে কেন!!
Profile Image for Muzahidul Islam.
2 reviews
October 7, 2021
অনেক ছোটবেলায় আম্মুর কাছে গর্ভধারিণী আর জয়িতার কথা শোনা। এতোদিন কেন যে পড়া হয়ে ওঠেনি কে জানে!

প্রথমত ন্যারেটিভ বেশ স্ট্রং। ঢাকায় বসে মে মাসের গরমে হিমালয়ের ঠান্ডা অনুভব করছিলাম পড়ার সময়। ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং আর ক্যারেক্টারাইজেশনে অনেক সময় দিয়েছেন লেখক। যার ফলে কোথাও কোথাও বোরিং লাগে, একটু স্লো মনে হয়।

মূলত নকশাল আন্দোলন এবং এর পরবর্তী সময়টা নিয়ে কিছুটা ধারণা থাকলে গল্পের পটভূমি ধরতে সুবিধা হবে। লেখকের অনিমেষ সিরিজটা আগে পড়া থাকলে ভালো হয়।

বেশ কয়েকটা অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। থার্ড অ্যাকশনে যাবার আগে সুদীপ যখন গাড়ি যোগাড় করতে তার বাবার পরিচিত গ্যারেজে গেল তখন হেডমিস্ত্রি আর সুদীপের কথোপকথনে মনে হয়নি হেডমিস্ত্রি সুদীপের ব্যাপারে কিছু জানে। অথচ ওই সময় পত্রিকায় ওদের চার জনের ছবি এবং পুলিশের নিয়মিত ওদের খুঁজতে আসায় সুদীপের বাবা অবনীবাবুসহ চেনা-অর্ধচেনা সকলেই ওদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন। হেডমিস্ত্রি কেন জানতো না সে ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট কারণও উল্লেখ করা হয়নি। যদি ধরেও নেই হেডমিস্ত্রি কোনো কারণে জানে না, তবে সুদীপ সেটা জানলো কীভাবে? তার তো এটা ধরে নেওয়াই স্বাভাবিক যে সবাই জানে। সেক্ষেত্রে তার ওখান থেকে গাড়ি যোগাড় করতে যাবার কথা না।

আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, এখানে লেখক একটা চরিত্রকে লীডার হিসেবে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে বসেছেন। সব প্ল্যানিং সে করে, অ্যাকশনের আগে বাকিদের জানায়। এটা ভীষণ মেইনস্ট্রিম বলে মনে হয়েছে। অথচ এতো সময় ধরে ক্যারেক্টারাইজেশনে প্রত্যেকটা চরিত্রকেই লেখক স্ট্রং ইন্ডিভিজুয়ালিটি দিয়েছিলেন। চাইলে প্রত্যেককে নিজের জায়গা থেকে প্ল্যানিং এ ইনভলভ করা, একজন ভুল দিকে এগোলে আরেকজনের তা শুধরে দেওয়া- এসব ব্যাপারগুলো ইনক্লুড করা যেতো। সেক্ষেত্রে লেখাটা আরেকটু প্রাণ পেতো বলে আমার ধারণা।
পরে অবশ্য ভেবে দেখলাম একজনকে লীডার হিসেবে ডিক্লেয়ার না করে দিলে পাঠককে বেশ অস্বস্তিতে পরতে হতো। খাপছাড়া লাগতো কিছু জায়গায় এবং প্রতিটা চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে এগোতে গিয়ে ফ্লো নষ্ট হতো।

শেষার্ধে অনেক জায়গায় মূল চরিত্রগুলো খুব র‍্যাপিডলি ডিসিশন চেঞ্জ করেছে। কখনো কখনো দেখা যায় যেই আদর্শের জন্য এতো লড়াই সেই আদর্শবিরোধী কাজ করে বসছে। নতুন পরিবেশ এবং ভীষণ প্রতিকূলতা মানুষকে প্রভাবিত করে সত্য। কিন্তু সেটা ওই ঘটনাপ্রবাহে প্রতিনিয়ত কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা দেখানো খুবই দরকার ছিলো বলে আমার মনে হয়।
তাপল্যাঙ থেকে পুলিশ ফেরত যাবার পর আনন্দদের সব প্রজেক্ট হুটহাট সাকসেসফুল হয়ে যাচ্ছে এই ব্যাপারটাও পাঠক হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হয়।

এই উপন্যাস এর ব্যাপারে সবচেয়ে প্রচলিত অভিযোগ এর এন্ডিং নিয়ে। মনে হয় যেন খুব তাড়াহুড়ো করে অপটু হাতে টেনে শেষ করা গল্প, যেখানে ক্লাইম্যাক্সে একটু টুইস্ট দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এই কাজে পাঠককে ধরে রেখে লেখক যে এইরকমভাবে গল্পটা শেষ করলেন- এটা পাঠককে বেশ খানিকক্ষণ ভোগাবে৷
একদম শেষের দিকে আনন্দ যখন বলে, "হ্যাঁ, বেসেছিলাম। কিন্তু পেতে চাইনি।"- এক্সাক্ট এই জায়গাটায় লেখক এতো ধৈর্য ধরে গুছিয়ে আনা লেখাটা নষ্ট করেন।
কেন যেন আমার মনে হয়, শেষ পর্যন্ত যাদের ঘিরে গল্প চলতে থাকে তারা ঘুরেফিরে আবার সেই সিস্টেমেই ঢুকে পরে যেটা ভাঙ্গতে তারা ঘর ছেড়েছিলো।

পড়ে শেষ করার পরও গল্পটা পাঠককে বেশ কিছুদিন ভাবাবে। সেদিক থেকে লেখক সফল।
Profile Image for Nusrat Jahan.
65 reviews33 followers
September 11, 2020
গর্ভধারিনীর রিভিউ কেন লিখিনি জানিনা। এর রিভিউ এত অল্প পরিসরে গুছিয়ে লেখা সম্ভব কিনা সেই সন্দেহের দোলাচলে ছিলাম সম্ভবত! সমরেশ মজুমদারকে সরাসরি দেখার ইচ্ছা, এই বই নিয়ে দু কথা শুনার আগ্রহ থেকে হুট করে এক কাকডাকা ভোরে একাকী আরেক শহরে পৌছানোর মাত্রাতিরিক্ত আবেগ সম��ভবত এই বই এর গভীরতার দিকেই নির্দেশ করে। ততোধিক নিরাশ ছিলাম, অডিয়েন্সের এই বই সম্পর্কে জানার অনাগ্রহ দেখে।
এই বই সম্পর্কে এই একটা প্রশ্নই মাথায় ঘাঁ দেয় বারেবারে, যেই অনাগত সন্তানের আগমনে তাপল্যাঙ এ সকল অনাচার এবং বৈষম্য দূর হবে, সেই সন্তানের আগমন কেন একজন "মানুষ" জয়িতার থেকেও "নারী" জয়িতার মাধ্যমে হতে হবে? মাতৃত্ব যতখানি আবেগময়, ততখানিই কি সম্ভাব্য উত্তর? একজন লেখক সমরেশ নারী-পুরুষ নির্বিবাদে যেই বৈষম্যহীন জগৎ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে ব্যাকুল, একজন নারীর হাতে অনাগত প্রজন্ম আগমনের দায়িত্ব অর্পণের মাঝে দিয়ে সেই বৈষম্য কতটুকু দূরীকরণ সম্ভব? পাওয়ার প্লে এক জেন্ডার থেকে কি আরেক জেন্ডারে ট্রান্সফার হচ্ছেনা? যেই জয়িতা নিজেকে মানুষ ভাবত, একজন পুরুষ থেকে নিজেকে ভিন্নতর ভাবে দেখেনি, শারীরিক এবং মানসিকতায়, সেই একই জয়িতা দ্রিমিত হবার মাধ্যমে বিসর্জন দেয় নিজের চিন্তাশীলতাকে, নিজের "নিউট্রাল" পজিশনকে। শুধুমাত্র নমনীয় এবং কমনীয় হবার মাধ্যমে, সন্তান ধারণের মাধ্যমে অদূরের আদিম সভ্যতার এক জাতির কাছাকাছি যেতে হবে- এই এন্ডিং বড্ড ক্লিশে। রোলেনকে সবচেয়ে যোগ্য, সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষের আখ্যা দিয়ে জয়িতা তাকে বেছে নিয়েছে, যদিও আনন্দ তাদের চার জনের মাঝে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে আমার মতামত। নকশালপন্থী বাবার রক্ত যে সন্তানের ধমনীতে বইছে- একটি দলকে পরিচালনার মাধ্যমে, সুচারুভাবে সব অপারেশন শেষ করে আদিম সভ্যতাকে সুস্থির দিন উপহার দেয়ার স্বপ্ন দেখা আনন্দকে ছাপিয়ে শেষ মুহূর্তে প্রোটাগনিস্ট হয়ে উঠে জয়িতা। কারন, সে নারী, সে সন্তান জন্মদানে সক্ষম। এমনকি বই এর নামকরণ এও ভূমিকা রাখে সন্তান জন্মদানের অক্ষমতা/সক্ষমতা, আনন্দকে তাপল্যাঙবাসী শ্রদ্ধা করে কিন্তু জয়িতা তাদের মনের কাছের মানুষ। যেখানে জয়িতা হয়ে উঠতে পারত একজন স্রোতের বিপরীতের মানুষ, তাকেও জৈবিক চাওয়া পাওয়ার ছকে ফেলার এন্ডিং এ তাই বড্ড অতৃপ্ত লাগে।
সন্তান জন্মদানের ব্যাপারে হয়ত পার্সোনাল ভিন্ন কিছু মতামতের জন্য বই এর এন্ডিং টা আমার মনমতো হয়নি। একজন নারীর সন্তান জন্মদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ ঈশ্বরপ্রদত্ত। তাই সন্তান জন্মদানে অক্ষম নারীকে দূরছাই করার টেন্ডেন্সি আছে এই সমাজের, প্যাটিয়ার্কির এমনকি নারীর ও। "মাতৃত্বই নারীর পরম সুখ" টাইপ কথাকে গ্লোরিফাই করে সমাজ পদানত করে রাখে তাদের যারা সুদীপের সঙ্গিনীর মত সন্তান জন্ম দিতে পারেনা। তাই এই বইয়ের টাইটেল এবং এন্ডিং নিয়ে আপত্তি হয়ত যুক্তিযুক্ত।
আফসোস, লেখককে এত কাছে পেয়েও আরেকটু কাছে না পাওয়ার হতাশায় এই প্রশ্ন এবং মতামত শেয়ারিং এর অতৃপ্তি মাথায় হয়ত ঘাঁই মেরে যাবে আজন্ম।
Profile Image for Ibrahim Ivan.
3 reviews16 followers
August 13, 2012
আমার কৈশোরে পড়া সবচাইতে ভালো বাংলা বই এটা। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বই পড়া যাকে বলে- এই বইয়ের ক্ষেত্রে আমার তাই হয়েছিলো। 'জয়িতা'র মত বান্ধবীর দরকার ছিলো একটা... পেলাম না। তবে আক্ষেপ নেই।
বইটা পড়ার সময় আমার চিন্তাভাবনার পরিপক্বতা না থাকলেও পরবর্তীতে পড়ে নিয়েছিলাম। তবে প্রথম বারের মত আনন্দ এবং উৎকণ্ঠা পাইনি।
অনেক ভালো বই।
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
374 reviews274 followers
December 27, 2024
ছাত্র থাকাকালীন সময়ে দার্জিলিং দেখার স্বপ্ন সবচাইতে বেশি ছিল যে আমাদের বন্ধু মাশরুফার, আর এই দার্জিলিং এর ভুত ওর মাথায় চাপিয়েছিলেন সমরেশ মজুমদার এবং অঞ্জন দত্ত। দার্জিলিং এর ভুত আমার মাথায় চাপানোর জন্য হোক, বা অন্য যে অজানা কারণেই হোক, ২০১৪ থেকে সে আমাকে বলে আসছে গর্ভধারিণী পড়ার জন্য। এমন কি ডাউনলোড করে এনে নিজেই আমার ফোনে লোডও করে দিয়েছিল। কিন্ডেলের মালিক হবার পর উৎসাহের সহিত আমার কিন্ডলেও আমি লোড করে রেখেছিলাম বইটি। কিন্তু আমার ছ্যাড়াব্যাড়া পাঠাভ্যাস, সেই সাথে কৈশোর পেড়িয়ে যাওয়ায় কিশোরদের জন্য সুখপাঠ্য বই বলে বিবেচিত বইটি আর পড়া হয়ে উঠেনি।

এই জুনের ভরা বর্ষায় আমরা বন্ধুরা গিয়েছিলাম বাই রোডে সিকিম-দার্জিলিং। মাশরুকে ছাড়াই, কারণ সে এখন থাকে ক্যালেন্ডারের মত ঝকঝকে দেশ জাপানে। ঝুম বৃষ্টি আর লং জার্নিতে সঙ্গ দেবার জন্য হাতে নিই গর্ভধারিণীকে , মাশরুকে ছাড়া দার্জিলিং ভ্রমণের পাপ খণ্ডানো তো আর সম্ভব নয়, এরচে' এক দশক আগে ওর রেকমেন্ড করা বই না পড়ার পাপটাই খণ্ডানো যাক। তবে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ইদানীং আমার পড়ার গতি স্লথ নামক প্রাণীর চাইতেও শ্লথ হওয়াতে জয়িতা-আনন্দ-সুদীপ-কল্যাণ দার্জিলিং পৌঁছানোর বহু আগে সিকিম-দার্জিলিং ভ্রমণ শেষে আমরা ফিরে আসি মাতৃভূমিতে, তা না হলে কি আর সান্দাকফু না গিয়ে চলে আসি।🤦🏽‍♀️

description

বইটা পড়তে শুরু করার আগেই বারান্দায় গাছের যত্ন নিতে নিতে হাবিজাবি অনেক চিন্তার মতই একদিন মাথায় কাজ করছিল এই সমাজ এবং পরিবারে নারীরা কমবেশি গাছের শেকড়ের ভূমিকা পালন করে। গাছের শেকড়ের মত সবসময় দৃষ্টিগোচর না হলেও নারীরাই আঁকড়ে ধরেন, লালন করেন, পরিবেশ-প্রতিবেশে মিশে যান। সম্পর্কগুলো গভীরতা পায় নারীদের কারণেই। একজন নারীর শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের সুদূরপ্রসারী প্রতিফলন দেখা যায় একেকটা পরিবারে। এই চিন্তাটা হয়তো ধীরে ধীরে নিজের বয়স বাড়ার সাথে এবং অনেক পূর্ণবয়স্কা নারীদের কাছ থেকে দেখার ফলে মাথায় এসেছিল। এই বইয়ের শেষের দিকে এসে জয়িতার যে পরিবর্তন, যেটা অনেক পাঠকরাই পছন্দ করেন না, তার সাথেই এই চিন্তাটা বেশ প্রাসঙ্গিক। তবে লেখক এটাকে যদি আরেকটু গুছিয়ে, আরেকটু বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরতে পারতেন তাহলে হয়তো এত পাঠকের এতটা অনুযোগ থাকতো না।

যাক, বইটা পড়ছিলাম জুন/জুলাইতে। এর মাঝে আর কিছু লিখে উঠতে পারি নি। কিছুদিন আগে বাসা পাল্টানোর সময় বই হাতে এলো এই চিরকুট। সেই সাথে ক্লাসের মাঝে চিরকুট চালাচালির নস্টালজিয়া। যে বয়সে সমাজ বদলে দেবার বোকাবোকা স্বপ্ন-আশা ছিল, তার নস্টালজিয়া।

description
Profile Image for Sneha.
56 reviews96 followers
September 6, 2021
গর্ভধারিণীর প্রভাব আমার পক্ষে এতো সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। আর কোনো বই আমাকে এতোটা প্রভাবিত করেনি যতোটা গর্ভধারিণী করেছে।
গল্পটা শুরু হয় জয়িতা, কল্যান, সুদীপ এবং আনন্দর মধ্য দিয়ে। চার জন চার স্তরের সমাজ থেকে উঠে এসে যেন এক সাথে মিশে গেছে। চার জনের লক্ষ্য এক স্বপ্ন এক। সমরেশ মজুমদার বরাবরই তার গল্পে রাজনীতির অপ্রিয় দিক টি তুলে ধরেন। এবং সেটা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোঁজেন। এই গল্পের শুরুও এমন মনোভাব নিয়েই হয়েছে। গল্পের জয়িতা,সুদীপ, কল্যান, আনন্দ এই সমাজের একটা সুন্দর রূপ দেওয়ার জন্য নিজেরাই কাজে লেগে পড়ে। একের পর এক সমাজের কুরুচিপূর্ণ কাজ ধ্বংসের মাধ্যমে তারা সমাজ কে সুন্দর করে তুলতে চায়। কিন্তু সমাজের কড়া নিয়মের বাধা কাটিয়ে উঠতে পারে না। আইনের চোখে তারা হয়ে যায় অপরাধী। শেষমেষ পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ওরা পারি জমায় নেপালের তোপল্যাঙ গ্রামে। যেখানে কোনো সভ্যতার ছায়া নেই, আধুনিকা নেই, নেই রাজনীতির মতো জঘন্য বিষয়ও। লোকজন খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছে সেখানে। তবু কী সুন্দর! সেই হিমালয়, বরফ, ঝড়, ঠান্ডার এতো সুন্দর বর্ননা যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। বার বার যেন মনে হচ্ছিল আমি সেই তোপল্যাঙে আছি। দরজাটা খুললেই বাইরের বরফ বৃষ্টি আমাকে কাহিল করে দেবে। কতটা মগ্ধ হলে দিনের পর দিন চোখে না দেখেও চোখের সামনে হিমালয় ভেসে ওঠে সেটা গর্ভধারিণী ন�� পরলে আমি কখনোই বুঝতে পারতাম না।
সমরেশ মজুমদারের গল্পে একটা বিপ্লব থাকে, থাকে কোনো কিছু করার তীব্র সাহস,লক্ষ্যে স্থির থাকার মতো এক অদম্য শক্তি।এরকম টা ওদের মনেও ছিল। তাই তো তারা গ্রামটাকে পরম যত্নে, ভালোবাসায় তিল তিল করে গড়ে তুলছিল, জড়িয়ে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে গ্রামটার সাথে। তার থেকেও বেশি যেন গ্রামটাই আকড়ে ধরেছিল ওদের কে। সেই ভালোবাসা কল্যান তার জীবন দিয়েও প্রমান করে গেছ��। তারা নিজেদের স্বপ্ন কলকাতায় না প্রতিষ্ঠা করতেও পারলেও পেরেছিল তোপল্যাঙে এসে। মানুষে মানুষে ভালোবেসে এক হয়ে গিয়েছিল। সুন্দর জীবনের সন্ধান পেয়েছিল। তারা কলকাতাকে বিশুদ্ধ করতে না পারলেও ছোট্ট একটা গ্রাম কে প্রাণ দিতে পেরেছিল। যে জয়িতা নিজেকে নারী বলেই মানতে পারতো না, সেই নারীত্বের সব থেকে বড় প্রমান রেখেছিল।সারাজীবন জয়ী হয়ে এসে শেষে হার মেনে নিলো তবু সে জিতে গেলো। এক অদ্ভুত বিপ্লবের জয়ী হলো।
Profile Image for বিমুক্তি(Vimukti).
156 reviews88 followers
June 27, 2020
দেড়-দু'বছর আগে পড়া। বইটা মেয়েদের সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বিপ্লব নিয়েও প্রথম বার ঠিক করে ভেবেছিলাম এই বই পড়ে।
Profile Image for Israt Sharmin.
295 reviews1 follower
December 27, 2025
সমরেশ মজুমদারের সৃষ্টিশীল শক্তি এই বইয়ে অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর শব্দচয়ন, কাহিনির বুনন, চরিত্রের বাস্তবিক উপস্হাপন সবই এত গভীর যে, নিঃসন্দেহে বলা যায় গর্ভধারিণী কালের দাবিকে অতিক্রম করেছে।

চার তরুণের মাধ্যমে তিনি যে কাহিনি গড়ে তুলেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে বিপ্লবী আয়োজন দেখিয়েছেন, যুক্তিবাদী মানুষ হয়তো অবাস্তব মনে করবেন। বাস্তবে তা সম্ভব নয় তবুও, আমাদের অন্তরের সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, অন্যায় ও অন্ধকারকে ধ্বংস করার আকাঙ্ক্ষা, অস্বীকার করার উপায় নেই।

হয়তো গল্পটি রূপক ছিলো কিন্তু এর বার্তাটি অসামান্য এবং যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে জ্বলজ্বল করবে। আজকের পৃথিবীতে গর্ভধারিণীর প্রাসঙ্গিকতা আগের মতোই অপরিসীম।
Profile Image for Ahadul Hassan  Bhuiyan Konok .
77 reviews3 followers
September 8, 2024
মাঝেমধ্যেই মনে হয় সব ছেড়ে ছুঁড়ে পাহাড়ে গিয়ে থাকা শুরু করি...
Profile Image for Tushar Paul.
4 reviews
August 24, 2021
রিভিউ লিখার যোগ্যতা বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই আমার। গর্ভধারিণী নাম টা পড়ার পর আসলে সাধারণ ভাবেই একটা কাহিনী মাথায় গেঁথে গিয়েছিলো। কিন্তু যে কাহিনী টা মাথায় নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম তার কিছুই যেনো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একেবারে শেষ মূহুর্তে যখন পড়া শেষ করলাম তখন থেকে গাঁয়ে কাটা দিয়ে যাচ্ছে। এতোটা গভীরে চলে যাবো নিজেও কল্পনা করতে পারি নি। পুরো বইটাতে যেনো আমি প্যারাডাইস ধ্বংস করছি, জাল ওষুধের কোম্পানি পুড়াচ্ছি, দার্জিলিং, ফালুট, তাপল্যাঙ, সেই বরফের মাঝেও যেনো আমিই ঘুরে বেড়াচ্ছি। অসম্ভব সুন্দর লেগেছে আমার নিজের কাছে।
Profile Image for Kona Reads.
108 reviews39 followers
August 22, 2022
প্রথমে ভীষণ ভালো লাগলেও শেষের দিকে যেয়ে মনে হলো লেখক নিজেই তার গল্পের খেই হারিয়ে ফেলেছেন। আর শেষের লেখার মধ্যে যে তাড়াহুড়ো উনি করেছেন সেটাও চোখে বাধার মতো। চরিত্র গুলোকেও উনি এক স্টিরিওটাইপের বাইরে আনতে যেয়ে আরেক স্টিরিওটাইপের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম বলে রাগও বেশি লাগছে।
Profile Image for Humaira Annur.
9 reviews2 followers
February 1, 2023
গর্ভধারিণী নামটা পরে আমার প্রথমে মনে হয়েছিল কোনো মায়ের সংগ্রাম নিয়ে হয়তো কাহিনী। বই খুলে দেখলাম নাহ এটাও ওনার বিপ্লবেরই কাহিনী। কালবেলা- কালপুরুষ পড়েছিলাম ক্লাস টেনে। তখনো বিপ্লব নিয়ে কিছুই এরকম বুঝতাম না। এই বই পড়তে তাই অতোটা অসুবিধা হয়নি কারণ আগে যেহেতু এগুলো নিয়ে পড়েছি।

৪ তরুণ-তরুণীর রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট বদলের লড়াই। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল সরকার নামের কোনো সুবিধাবাদী শোষক যেন সাধারণ মানুষকে সেবার নামে শোষণ না করে। তাদের চিন্তাধারা সাধারণ মানুষকে অনুপ্রেরণা করার মতোই। অনেকেই ভাবতে পারে তারা তো আসলে বিপ্লব ঘটায়নি। বরং ঝোঁকের মাথায় বাসা থেকে বের হয়েছে। আমার মতে একটা সুবিধাবঞ্চিত গ্রাম, যার প্রতিটা মানুষই জানে না জীবন আসলে কেমন এমন একটা জায়গায় এই ৪ তরুণ-তরুণী যেই সময়-শ্রম-ধৈর্য্য পরিচয় দেয় সেটাও বা কম কী!

কল্যাণের মধ্যে যেই মধ্যবিত্তের প্রভাব দেখা দেয় তা সমাজের প্রতিটা মধ্যবিত্তের মধ্যে বিদ্যমান। অস্বীকার করার কোনো কারণই নেই। কবি একটা সুন্দর ব্যাপার তুলে ধরেন মধ্যবিত্তরা কোনো কিছু করবে বলে ঠিক করলে সেটা না করে শান্ত হয় না। সত্যিই তাই। শহিদের মর্যাদা সে পাওয়ার যোগ্য।

আনন্দ, সুদীপ এই দুই চরিত্রের কথা বললে মনে হয় এরা খুবই রুচিশীল। অনেক সময় সুদীপের মধ্যে হার মানা একটা ভাব ফুটে উঠে যদিও সে এটা শেষ পর্যন্ত গমন করতে পারে। আনন্দের মতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ বাস্তবে থাকলে সমাজের চিত্র একটু অন্যরকমই হতো।

সবশেষে জয়িতার কথা বলতে গেলে বলবো খুব সুন্দরভাবে সে নিজের অতীতকে ঝেড়ে ফেলে। এমন মন-মানসিকতার মেয়ে এখন প্রতিটা ঘরে দরকার আসলে। তবে শেষ পর্যন্ত এমন কিছু হবে আমার মনে হচ্ছিল কিন্তু সে যে রোলেনের মতো একজন পুরুষকে চুজ করবে সেটা আমি ভাবি নাই। নিজের জীবনের নতুন শুরুর সাথে সে শক্ত একটা বন্ধনের গড়ে তোলার জন্য রোলেনকেই যোগ্য মনে করে।একটু আশ্চর্যজনকই লেগেছে আমার কাছে।

সবমিলিয়ে বলবো মিশ্র অনুভূতি। অনেক সময় দিয়েছি বইটা পেছনে কিন্তু এমন ভাবে শেষ হবে এটা মেনে নিতে একটু অবাক লাগতেছে।
Profile Image for Safwan  Mahmood.
113 reviews4 followers
April 28, 2024
বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে, কলকাতায় বসবাসরত চার তরুণ-তরুণী - জয়িতা, আনন্দ, সুদীপ আর কল্যাণ দেশের জন্য কিছু করতে চাই, তবে সেটা ব্যতিক্রমীভাবে। সেই সময়টাতে ঘুণে ধরা সমাজ যখন রাজনৈতিক শোষণ, অর্থনৈতিক শোষণে মত্ত, সাধারণ মানুষেরা কিছু করছে না, শুধুমাত্র নিজের জন্য নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা ছাড়া। আর দিনশেষে পাবলিক প্লেসের আড্ডায়, এর ওর উপর দোষ চাপিয়ে খালাস। তারা চারজন এই সিস্টেমটাকেই ভাঙতে চাইছিল।

সুদীপ, অসৎ উপায়ে সম্পদশালী হওয়া অবনী তালুকদারের একমাত্র সন্তান। পুঁজিবাদী সমাজের এই শোষণ নিজ থেকে দেখা। কিছুটা রগচটা, সাহসী। জয়িতা, সদ্য মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত হওয়া পরিবারের মেয়ে। তবে তার শ্রেণীর সেই কৃত্রিমতা, সমাজের মেকি সংস্কারকে অপছন্দ করে, নিজেকে মেয়ের চেয়ে মানুষ মনে করাই মেয়েলি ব্যাপার স্যাপার এড়িয়ে চলে। আনন্দ, মধ্যবিত্ত তবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান। ধীরস্থির, শান্ত, বুদ্ধিমান আনন্দই এই দলের নেতৃত্ব দেয় বলা চলে। কল্যাণ, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, গতানুগতিক সংস্কার থাকলেও দেশকে বদলানোর স্বপ্ন দেখে।

এই চারজনই প্রেসিডেন্সি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্ধী, এই ঘুণে ধরা সমাজকে বদলাতে চাই। ততোদিনে এমন মতবাদের কার্যক্রম নকশালবাদ বিফল হয়েছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য অন্য। তারা সমাজের কিছু অন্ধকার-খারাপ দিককে উপড়ে ফেলে বাঙালির বোধে আঘাত করে জাগাতে চাই। তাই তারা বেছে নিল উগ্রপন্থা। প্যারাডাইস নামে এক এসকর্ট রিসোর্টে আগুন ধরিয়ে, এক জাল ঔষধের গোডাউনে আগুন দিয়ে, এক দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী আর তার গুন্ডা সহচরকে খুন করে তারা। লোকদের মাঝে তাদের কাজ নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়।

তবে প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে তারা চারজন আশ্রয় নেই হিমালয়ের কোলে, ভারত নেপাল সীমান্তে এক পাহাড়ি গ্রাম তাপল্যাঙে। সেই গ্রামে আদিবা��ীদের আবাস, সভ্যতার আঁচড় লাগে নি তাতে। সেখানে শোষণ নেই, তবে অজ্ঞতার জন্য সেখানকার মানুষ কিছু করতে পারছেন না। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে পালটে যায়। ক্রমেই তারা শুরু করে সেই পাহাড়ি গ্রামকে সামর্থ্যবান করার সাধনা। পরিবর্তন যদি করতে হয় সেই ছোট জায়গা থেকে শুরু হোক। তাদের স্বপ্ন পূরণ করার আত্মত্যাগ, সংগ্রাম আর সাধনা নিয়েই এই 'গর্ভধারিণী' বই।

'গর্ভধারিণী', জনপ্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারের লেখা একটি উপন্যাস। এর আগে লেখকের 'আট কুঠুরি নয় দরজা' বইটা পড়া ছিল। ওই সময় শুধু থ্রিলার পড়তাম, তাই থ্রিলার হিসেবে বিপ্লব, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় দিয়ে ভর্তি একঘেয়ে বোরিং সেই বইটা পড়ে বেশ হতাশ হয়েছিলাম। তবে 'গর্ভধারিণী' থেকে থ্রিলার আশা করি নি, একটা সামাজিক উপন্যাস হিসেবে পড়তে শুরু করেছিলাম। আর শেষ করে বইটা ভালোই লাগলো।

সমরেশ মজুমদারের লেখা প্রাঞ্জল, তাই পড়তে আরাম। তবে তিনি ঘটনাপ্রবাহ এমন বিশদভাবে বর্ণনা করেন যে তা অনেক বড় হয়ে যায়। এইজন্য বইটার ব্যাপ্তি অনেক। বইটা শুরুই হয় মূল চারজন চরিত্রের গঠনের মাধ্যমে। প্রথম চার অধ্যায়ে এই চারটি চরিত্রকে লেখক বেশ ভালোভাবেই পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর গল্পের জন্য ঐ সময়কার সামাজিক পরিস্থিতি, মূল চরিত্রদের দর্শন বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

লেখকের ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং বেশ ভালো। খুব চমৎকারভাবে গল্পের সময়কার পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখিয়েছেন। গল্পের দ্বিতীয়ার্ধে সেই হিমালয়ের কোলঘেষা গ্রামের এমন বর্ণনা দিয়েছেন যে এই গরমেও হালকা হালকা শীত লাগছিল। বইয়ের চরিত্রায়নও বেশ ভালো। মূল চারটি চরিত্রকে লেখক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়ে গড়েছেন। সেইসাথে তাদের নিজস্ব ধরণ, মানসিক টানাপোড়েন লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে। চরিত্রগুলোকে তাদের দর্শনের ক্ষেত্রে লেখক সংশয়ে রেখেছেন। এইজন্য চরিত্রগুলোর চেতনা, মনোভাব গল্পের নানা জায়গায় বদলে যাচ্ছিল। এইক্ষেত্রে লেখক বেশ স্মার্টনেসের পরিচয় দিয়েছে।

বইয়ে লেখক সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। কিছু ভালো সোশ্যাল মেসেজ ছিল। তবে গতানুগতিক, জীবন বদলে দেওয়ার মতো কিছু না। আর কিছু ক্ষেত্রে চরিত্রগুলোর কিছু মনোভাবকে বাজে লেগেছিলো আমার। তবে যেহেতু চরিত্রগুলো ভুল করছিল, সেইসব বিষয়কেও চরিত্রগুলোর ভুল মনোভাব বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। এখানেই লেখকের চালাকি। গল্পের কিছু কিছু অংশে বেশ সাসপেন্স আছে। কিন্তু তাই বলে এটাকে থ্রিলার বলা যায় না।

বইয়ের প্রথমার্ধ আমার তুলনামূলক কম ভালো লেগেছে দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায়। প্রোটাগনিস্টদের মনোভাব গতানুগতিক রোমান্টিক বিপ্লব থেকে একটু আলাদা হলেও, অনেক ভুল ভ্রান্তি ছিল তাতে। সেই কথাগুলোর বারবার রিপিটেশন, আর সেইসাথে প্লট ডেভেলপমেন্টের জন্য লেখকের অনেক অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য আনা পড়ে বিরক্তি এসে যায়। প্রথম প্রায় ১৫০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এমনটা থাকে। এরপর থেকে গল্প আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। পাহাড়ের অংশটা ভালো ছিল বেশ। তাতে লেখকের বাম চেতনা ভালোমতোই প্রকাশ পাই। শেষ দিকে গল্পে হুট করে এক নাটকীয় মোড়ের মাধ্যমে এই বইটার সমাপ্তি হয়েছে, যা নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র।

এবার বইটার একটা বিশেষ অংশ নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। তা হলো জয়িতা চরিত্রটি। প্রোটাগনিস্ট চারজন হলেও লেখক ফেমিনিস্ট বিধায় স্পটলাইটে সবসময় জয়িতাকে রেখেছেন। সাধারণভাবে এই চরিত্রটিকে নারীবাদী দেখালেও খুবই টক্সিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে একটু আগে বললাম চরিত্রগুলোর রঙ ক্রমশ বদলে লেখক সেটা ঠিক না ভুল তা শুধু পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এজন্য জয়িতা চরিত্রটির একেক রুপ নিয়ে পাঠকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবে চরিত্রটাকে নিয়ে অতিরিক্ত আধিখ্যেতা আমার কাছে বিরক্তিকর লেগেছে।

জয়িতা নিজেকে মেয়েই মনে করে না, সে মেয়ে হলেও ছেলেদের মতো চলাফেরা করে, এই কথাগুলো বারবার পড়তে পড়তে তো একটা পর্যায়ে মাথাই ধরে গেছে আমার। আর শেষে তাকে ঘিরে যে নাটকীয় ব্যাপারটা সেটা অনেক অযৌক্তিক। গ্রামে তার অবদান যতোটা না ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাতে শেষে তাকে ঘিরে এতো বোলবোলা সত্যিই বিরক্তিকর লেগেছে। যাইহোক, সবশেষে লম্বা সময় নিয়ে একটু একটু করে বইটা পড়তে খারাপ লাগলো না। প্রথম দিকে গল্প একটু স্লো হলেও, ১৫০ পৃষ্ঠার পর থেকে বইটা উপভোগ্য। সমরেশের মজুমদারের প্রাঞ্জল লেখনীর জন্যও পড়তে ভালোই লেগেছে।

📚 বইয়ের নাম : গর্ভধারিণী

📚 লেখক : সমরেশ মজুমদার

📚 বইয়ের ধরণ : সামাজিক উপন্যাস, কন্টেমপোরারি ফিকশন

📚 ব্যক্তিগত রেটিং : ৩.৫/৫
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews137 followers
July 4, 2018
গর্ভধারিনী, উপন্যাসটি তিনজন মানব এবং একজন মানবীর বিপ্লবের উপখ্যান নয়, গল্পটি একটি উপলব্ধির, গল্পটি বিশ্বাসের, নির্মাণের।

আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা চার জন মৌলিক চরিত্রের চিন্তার বৈচিত্রতা অথচ চেতনার সম্পৃক্ততা নিয়ে এক সামন্তবাদী সমাজ থেকে সাম্যবাদী পৃথিবীর স্বপ্নের পুথিলিপি হলো গর্ভধারিনী।

যেখানে একটা সাম্যবাদী সত্ত্বাকে লালন করে এমন এক গর্ভধারিনীকে তুলে ধরা হয়েছে যার স্পন্দনে জন্ম নেবে অশিক্ষা, লিপ্সা, মিথ্যে সংস্কারমুক্ত একটি নব প্রজন্ম।

সত্তরের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি আন্দোলন মুখ থুবড়ে পরলেও ঠিক তার পরবর্তী প্রজন্মের এক দল তরূণ-তরূণী এই আন্দোলনের চেতনা দ্বারা তখনো দেশটাকে শোষণমুক্ত করার স্বপ্ন দেখে। আর আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা ছিলো সেই দলের সদস্য যারা শুধু স্বপ্ন দেখে থেকে থাকেনি, হাতে তুলে নিয়েছিলো অস্ত্র। বারুদের চিৎকারে কাপিয়ে দিয়েছিলো সমস্ত বুর্জোয়া শক্তির তোষকদের।

সুদীপ বৃত্তবান পরিবারের সন্তান হওয়াই পুজিবাজী মানুষগুলো ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে যে নোংরা আর নির্দয় মূর্তি ধারণ করে রাখে সেটা তার বাবা অবনী তালুকদারের মাঝেই খুজে পেয়েছিলো। তাই বিদ্রোহের আগুন শৈশব থেকেই ওকে তাড়া করেছে।

কল্যাণ বাংলার ঘরের নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবারের প্রতিনিধি, যারা নিজেদের দরিদ্র না বলে মধ্যব্রত্ত বলার মাঝে একটু স্বস্তি খুজে নেয়। তাই বিপ্লবের পথে সে তার পরিবারের মুক্তির পথ খুজতে চেয়েছিলো।

আনন্দর গল্পটা একটু আলাদা। বাবা নকশাল আন্দোলোনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো শিকড় থেকে। আর নিজের অজান্তেই করা ভুল এবং শাসক গোষ্ঠীর শিকড় উপড়ানোর বিষ তাকে আত্নহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করে। নেতৃত্ব আনন্দকে রক্ত থেকে টানে।

জয়িতা সদ্য নিম্ন মধ্যবৃত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান। আর অর্থের সাথে তার বাব-মায়ের চিন্তার অদ্ভুত এবং অশালীন পরিবর্তন জয়িতাকে বাল্যকাল থেকে একাকীত্বের শিকলে আষ্ঠেপৃষ্ঠে রেখেছে। এই একাকীত্ব ওর ভেতরে মুক্তধারা প্রবাহিত করেছে অজান্তেই। আর একাকীত্বের মা কলেজে ওদের প্রাথমিক পরিচয় হয় আর তারপর একটু একটু করে চেতনার সাদৃশ্য ওদের বিপ্লবের পথে ডাক দেয়।

প্রথম অভিযান টা হয় প্যাড়াডাইস নামে পতিতালয়ে যেখানে আশপাশের হাজারো মানুষকে আধারে নিমজ্জিত করে আলোর রোশনাইতে চলে সভ্য মানুষের বর্বর আর যৌন ক্ষুধার তান্ডব নৃত্য। সেখানে সফলতা ওদের আত্নবিশ্বাসী করে তোলে।

এর পরেই ওরা ভেজাল ঔষধের কারখানা বোমা মেরে পুড়িয়ে দেয় যেগুলো নীরব ঘাতক হয়ে সাধারণ মানুষকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। শেষ অভিযানটি ওরা এক মন্ত্রী আর তার ক্ষমতার ভিত্তি একটি বিশেষ এলাকার শীর্ষ অপরাধী নানুভাইকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু ওদের এই সশস্ত্র বিপ্লব জনমনে ওদের প্রত্যাশিত আলোড়ন করতে ব্যর্থ হয়।

পুলিশের তৎপরতা ওদের বাধ্য করে কলকাতা ছেড়ে দূরে আশ্রয় নিতে। আনন্দর সিন্ধান্ত অনুযায়ী ওরা নেপালের উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়। পথে মৃত্যুহিম ওদের চলার পথ রুদ্ধ করে কিন্তু পাহড়ী রূপের স্রোত কাঞ্চনজংগার বিহব্বল ���ূপ ওদের এগিয়ে নিয়ে চলে অভীষ্ট লক্ষ্যে। অবশেষে ওরা পাহাড় ঘেরা এক সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম তাপল্যাঙে এসে পৌছায়।

তাপল্যাঙের অশিক্ষা, সংকীর্ণ জীবনধারা, সেবার অনুপস্থিতি, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা এ গ্রামের মানুষগুলোকে জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। কিন্তু তারপরেও এখানে শাসনের নামে শোষণ নেই, বিত্ত আর দারিদ্রতার গন্ডি নেই আর এই ব্যপারগুলোকে আনন্দকে নাড়া দেয়।

আনন্দ স্বপ্ন দেখলো নির্মাণের, এক শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার? আনন্দের নেতৃত্বে ওরা ঠিক করে ওরা এই অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য করবে। জরাগ্রস্থ এই মানুষগুলোর জন্য ঔষধ আনতে নিজেকে এগিয়ে দেয় কল্যাণ। কল্যাণ কি ফিরে এসেছিলো? দিতে পেরেছিলো কি তাপল্যাঙের এই সরল মানুষের আরোগ্যের জন্য ঔষধের নামের মুক্তি? ওরা কি পেরেছিলো তাপল্যাঙে মানুষের একটা নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতে যেখানে কেউ না খেয়ে থাকবে না, জরায় ভুগে মরবে না, সবাই ভাবনার সাথে জীবনধারা একই সাথে প্রবাহিত হবে? জন্ম দেবে এক নতুন প্রজন্মের যার রক্তধারা এই মানুষগুলোকে সুখের পৃথিবীতে বয়ে নিয়ে যাবে যুগ থেকে যুগান্তর।

ব্যক্তিগত অভিমতঃ

কবি নির্মলেন্দু গুণ উনার স্ববিরোধী কবিতায় একটা ধ্রুব সত্য কথা বলেছিলেন,

আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম,
এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি ।

কিন্তু কিছু মানুষ কখনো কখনো তার কর্ম দিয়ে মৃত্যুকেও ছাড়িয়ে যায়। আনন্দ, কল্যান, সুদীপ এবং জয়িতা সেই চারজন সেই অচেনা পৃথিবীর প্রতিনিধি যারা তাদের আয়ু দিয়ে বাচে না, বাচে কর্ম দিয়ে। কখনো বিপ্লবী হয়ে, কখনো মানবতার উষ্ণ স্পর্শ হয়ে আবার কখনো গর্ভধারিনী রূপে নতুন নির্মাণের শিল্পকার হয়ে।

প্রিয় উক্তি

- পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না চাইলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদিপ বলেছিল, বাঙ্গালী মল মুত্র এবং বীর্য ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে জানে না।

- পুরুষ নতুন প্রজন্ম লালন করতে পারে, বীজ বপণ করতে পারে কিন্তু নির্মাণ করতে পারে না।
Profile Image for Tanjeena Toki.
15 reviews42 followers
October 15, 2019
একটা দীর্ঘ গল্প শুরু হয়েছিল কলকাতার বড়, বড়, ক্ষমতাবান অপরাধীদের চারপাশ ঘিরে, আর শেষ হল পাহাড়ে, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলোর মাঝে। সময় কিভাবে মানুষের জীবনকে আগাগোড়া পাল্টে দিতে পারে, তা কিছুটা দেখতে পাই এ বইটায়। অনেক প্রশ্ন, অনেক অভিযোগ থেকে যায় তারপরেও। সত্যি বলতে, শুরুটা যেমন জমজমাট, অনেক কৌতূহল জাগিয়েছিল, শেষটা সেভাবে তৃপ্তি এনে দেয় নি। হুট করে খুব তাড়াহুড়োয় ইনকমপ্লিটভাবে বইটা শেষ হল যেন।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Khulud Binte Harun.
20 reviews22 followers
August 27, 2016
বইটি পড়ে আমি তো কিছুক্ষণ নিরবাক ছিলাম।বইটিতে জয়িতার
চরিত্র অনেক ভালো লাগলেও শেষে সে
প্রমাণ করেছিলো সে ঘুরে ফিরে মে....একটা typical
বাঙালি মেয়ে...আনন্দ শেষ পর্যন্ত ঠিকে ছিল। কিন্তু হঠাৎ ই গল্পটির মঠিভ বদলে দেন লেখক। যা আমার মনে খটকা রয়ে গেছে।





Profile Image for Nayem.
4 reviews1 follower
January 30, 2022
জয়িতারা বেঁচে থাকে তাদের কর্মের মাঝেই। শেষ অংশটুকু বাদে পুরো বইটিই আমাকে অন্য ভুবনে নিয়ে গিয়েছিলো। লেখকের সাথে সাথে নেপালের সেই পাহাড়ি গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
Profile Image for Shashoto Islam Avay.
4 reviews1 follower
May 12, 2021
প্রায় দুমাসের চেষ্টায় শেষ করলাম।

মন্দ বলবো না। তবে যত প্রশংসা শুনেছি, মোটেও ততটা ভালো লাগেনি। সত্যি বলতে এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, "ধুর ***! শেষ হয়না কেন?"

খুবই কম এমনটা হয়েছে যে, আমি কোনো বই শেষ না করেই অন্য বই শুরু করেছি। তাই বলতে গেলে জাস্ট ফরমালিটির কারনেই বইটা শেষ করেছি। নয়তো, যেখানে আমি মাসে ৪-৫টা বই শেষ করি, সেখানে দুই মাস ধরে এক বই নিয়ে পরে থাকতাম না।

যদিও, আমার ভালোলাগার অনেক এলিমেন্ট আছে এখানে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বইটা আমাকে একদমই টানতে পারেনি। সাধারণত কোনো বই শেষ হলে খারাপ লাগে। কিন্তু এটা শেষ হওয়ায় যেন, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।
Profile Image for Soorma Das.
13 reviews6 followers
February 18, 2013
An awesome book for people of all ages,its most signifcant for people on the brink of being adult.perfectly brings out the emotions,indecisions of life,the hastiness of marking someone as wrong one moment,and right the other...A must read for people who know bengali...
Profile Image for Shuk Pakhi.
512 reviews306 followers
July 15, 2015
অসাধারন একটা বই। চারজন বন্ধু, যারা স্বপ্ন দেখে সমাজ ব্যবস্থাটাকে বদলে দেবার, আর সে অনুযায়ী তারা কাজও শুরু করে। তারা কি পারবে শেষ পর্যন্ত সমাজ ব্যবস্থাটাকে বদলাতে নাকি সমাজের রীতির-নীতির কাছে নত হয়ে নিজেরাই বদলে যাবে?!
Profile Image for Sudipta.
227 reviews
July 23, 2013
এই উপন্যাসটি কৈশোরে যে কেউ পড়লেই তার কাছে খুব অ্যাডভেঞ্চার মনে হবে। [ it's exciting book ]
Profile Image for Nusrat Disha.
5 reviews
August 2, 2024
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তারপর পুলিশের হাতে ধরা পড়ার থেকে বাঁচতে চিলেকোঠার মতো বন্দি ঘরে আশ্রয় নেওয়া তারপর হিমালয়ে কাছে এক গ্রামে গিয়ে সেখানেই বাকি জীবনটা থেকে যাওয়া। কি বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এই উপন্যাসটার শুরু থেকে শেষের অংশে। এই উপন্যাসের প্রধান চার চরিত্র আনন্দ, সুদীপ, জয়িতা এবং কল্যাণ। সুদীপ ছিল অসম সাহসী, আনন্দ ছিল স্থিরচিত্ত বিচক্ষণ, জয়িতা তথাকথিত নারীবাদী আর কল্যাণ মধ্যবিত্ত সংস্কারে আচ্ছন্ন মেধাবী ছাত্র। এই চারজন ভিন্ন রকম মানুষের মধ্যে একটা বিষয় কমন ছিল সেটা হলো ওদের তৎকালীন সমাজব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সেচছাচারিতা পাল্টে ফেলতে চাওয়া, এই বোধ টাই ওদেরকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের উপর তীব্র ক্ষোভ থেকে ওরা ঠিক করেছিল নিজ নিজ অবস্থান থেকে ওরা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। তারপর আইন অনেকটা নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মত সাহস দেখিয়ে ওরা পর পর ধ্বংস করে দিল প্যারাডাইস, অবৈধ ওষুধ কারখানা এবং অবশেষে হত্যা করে প্রভাব বিস্তারকারী মন্ত্রী ও নানুভাই কে। সবাই তাদেরকে উগ্রপন্থী নাম দেয���। পুলিশের হাতে ধরা না দিতে ওরা কিছুদিন আশ্রয় নেয় ঠাকুরপুকুরের এক চিলেকোঠার ন্যায় ঘরে পরে সেখান থেকে পাড়ি জমায় অনেক দূরে হিমালয়ের কাছে নেপালের এক গ্রামে। যে গ্রামে সভ্যতার আলো ঠিক মতো পৌঁছায়নি, ক্ষুধা, রোগ যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী আর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন অবশ্য একটা জিনিস ওখানে সবকিছুকে ছাপিয়ে ছিল সেটা হলো হিমালয়ের সৌন্দর্য। সেখানে গিয়ে আস্তে আস্তে ওরা গ্রামের মানুষের বন্ধু হয়ে ওঠে, অসুস্থ মানুষগুলোকে চিকিৎসার ব্যবস্থা, খাবারের ব্যবস্থা করে। ওরা বুঝতে পারে বিপ্লব নয়, নয়া সমাজ ব্যবস্থায় আসল লক্ষ্য। ওরা সেখানে সেই সমাজ ব্যবস্থা তৈরী করে যেটা তারা নিজেদের দেশে করতে পারেনি। এর মধ্যেই কল্যাণ একদিন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়। এই উপন্যাসে যে চরিত্রটা আপনাকে সবথেকে বেশি বিস্মিত করবে সে হলো জয়িতা। জয়িতা, জয়, জয়ী, জো, দ্রিমিত পরিশেষে এত গুলো নাম থেকে একটা পরিচয়ই সে ধারণ করে সেটা হলো গর্ভধারীনি মা।
Profile Image for Propa Zaman.
66 reviews10 followers
July 11, 2021
গর্ভধারিণী একটি বিপ্লবের গল্প। সমাজ পরিবর্তন করতে চাওয়া চার তরুণ-তরুণীর গল্প।
সিস্টেমের ভূত তাড়ানো সহজ নয় সে আমরা সকলেই বুঝি। আনন্দ, কল্যাণ, জয়ীতা আর সুদীপ এই সহজ সত্যটা বুঝতে পেরেই বোধহয় চেয়েছিল সিস্টেমে একটা আঘাত হানতে, কিছু পরিবর্তন হোক বা না হোক, একটা বোধ মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতে।
পর পর তিনটে অপারেশন করে ওরা কলকাতার বুকে একটা ঝড় তুলে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে চলে যায় ইন্ডিয়া-নেপালের সীমান্তে।

পরিবর্তন দরকার এই বোধ টা মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তুলার জন্য নিজেদের জীবন বাজি রাখাটা হয় বড় ধরণের বোকামি নাহলে বড় ধরণের মহত্ব। ওরা বোকামি করেছে না মহত্ব এটা আদতে তর্কের বিষয় নয়। সম্ভবত যেভাবে জীবন কাটিয়ে স্বস্তি পাওয়া যায় সেভাবে কাটিয়ে যাওয়াতেই জীবনের সফলতা।

দিনশেষে দেখা যায়, ওদের চার বন্ধুর মধ্যে আনন্দ এবং জয়ীতা এই জীবন বেছে নিয়ে স্বস্তি পেলেও, স্বস্তি পায়নি সুদীপ এবং কল্যাণ। তাই একে মহত্ব এবং বোকামি দুই ই বলা চলে, যে যেভাবে দেখতে চায়।

তবে শেষটা খুবই অস্পষ্ট ঠেকল আমার কাছে, সারা উপন্যাস জুড়ে যে মেসেজ লেখক দিতে চেয়েছেন, এন্ডিং এ মনে হলো ওটারই কনফ্লিক্ট হয়ে যাচ্ছে।

কিংবা আরেকটা ব্যাপার হতে পারে, লেখক বুঝাতে চেয়েছেন, সভ্য সমাজে বসে থেকে মানুষের গড়ে উঠা এথিক্স এবং মোরালিটি, অন্য সমাজে কিংবা সভ্যতায় কাজ নাও করতে পারে। এবং এইটাই হয়তো স্বাভাবিক।
Profile Image for Pritha.
96 reviews20 followers
September 10, 2020
গল্পটা কেমন যেন অদ্ভুত! ৪টা ছেলেমেয়ে সমাজকে বদলাতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে দুঃসাহসিক, কিন্তু সমাজের দৃষ্টিতে অনৈতিক, ভংয়কর কাজে।
তারপর নিজের বাঁচানোর তাগিদেই পালিয়ে বেড়াতে থাকে এখানে ওখানে। শেষ পর্যন্ত ওরা গিয়ে পৌঁছায় দুর্গম এক আদিবাসীদের এলাকায়। আর তাদের জীবনের নতুন লক্ষ্য খুঁজে দেয়ার মাঝেই ওরা নিজের পরিবর্তন দেখতে পায়, নিজেদের চিন্তাভাবনায় যে ফাঁক ছিল তা তারা বুঝতে পারে। তবে সেখানে করা কোনো কাজ যেন ওদের আদর্শের বিরুদ্ধেও চলে যায়।
মূলত কাহিনীটি আমার আনন্দ, সুদীপ, কল্যাণ আর জয়ীতার মানসিক টানপোড়নের কাহিনীই মনে হয়েছে; যেখানে ওরা প্রাণপণে যুদ্ধ করে যায় যে সমাজে তারা বড় হয়েছে তার মত না হবার জন্যে।
তবে এত বড় একটা উপন্যাসের শেষটা যেন রবীন্দ্রনাথের কোনো ছোট গল্পের মত... শেষ করার পরে মনে হয়েছে 'শেষ হয়েও হইল না শেষ!' তার জন্যে ৫টা তারা দিতে পারলাম না।
Displaying 1 - 30 of 132 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.