Jump to ratings and reviews
Rate this book

ইছামতী

Rate this book
১৯৫০-৫১ সালের রবীন্দ্র পুরষ্কার প্রাপ্ত রচনা।

ইছামতী একটি ছোট নদী। অন্তত যশোর জেলার মধ্য দিয়ে এর যে অংশ প্রবাহিত, সেটুকু। দক্ষিণে ইছামতী কুমির-কামট-হাঙ্গর-সংকুল বিরাট নোনা গাঙে পরিণত হয়ে কোথায় কোন সুন্দরবনে সুঁদ্‌রি-গরান গাছের জঙ্গলের আড়ালে বঙ্গোপসাগরে মিশে গিয়েচে, সে খবর যশোর জেলার গ্রাম্য অঞ্চলের কোনো লোকই রাখে না।

220 pages, Paperback

First published January 1, 1950

117 people are currently reading
1183 people want to read

About the author

Bibhutibhushan Bandyopadhyay

203 books1,089 followers
This author has secondary bangla profile-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.

Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.

The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
425 (44%)
4 stars
371 (39%)
3 stars
123 (13%)
2 stars
19 (2%)
1 star
7 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 113 reviews
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
March 8, 2020
পথের পাঁচালী আর অপরাজিত ছাড়া বিভূতিভূষণ আরও যে তিনটি উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা তার সাহিত্যিক জীবনের শুরুতেই নিয়েছিলেন তার একটি হচ্ছে ইছামতী। ১৯২৮ সালে লেখা তার ডায়েরীতেও এই উপন্যাস লেখার পরিকল্পনার কথা পাওয়া যায়। তবে উপন্যাসটি লিখতে লিখতে চলে গেছে বহু বছর। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস, বিভূতিভূষণ এর লেখা শেষ সম্পূর্ণ উপন্যাস। ইছামতী পারের মানুষ বিভূতিভূষণ নিজেও। এই নদী, এর পাশের জনপদের প্রতি ছিল তার গভীর আগ্রহ ও ভালোবাসা।তবে উপন্যাসের সময়কালকে তিনি নিয়ে গেছেন তার লেখার সময়েরও আরও ৮০/৯০ বছর আগে।

তখনও নীলচাষ বাংলায় পূর্ণ বিক্রমে চলছে। নীলচাষ ও নীলকুঠি, নীলবিদ্রোহ এই উপন্যাসের একটি প্রধান অংশ ঘিরে আছে। তবু সেটাই সবটা নয়, সেকালের কুলীন ব্রাহ্মণ সমাজ, কূপমুন্ডকতায় আচ্ছন্ন অলস গ্রামবাসী, ডাকাত, কবিরাজ, বিভূতিভূষণের প্রিয় বিষয় আধ্যাত্মিকতা, ইছামতী আর প্রকৃতির বর্ণনা কি নেই এই বইয়ে। গ্রামের চন্ডীমন্ডপের অলস আড্ডা যেমন আছে, আছে নালু পালের শূণ্য থেকে শুরু করে নিজের চেষ্টায় সফল ব্যবসায়ী হবার গল্পও। এমনকি অত্যাচারী দেওয়ান রাজারাম রায় কিংবা হলা ডাকাতকেও তিনি চিত্রিত করেছেন পরম মমতায়। কোন মানুষের সবকিছুই তো পুরোপুরি খারাপ হয় না, তাই তিনি ভালো মন্দের বিভেদ টানেন নি, উদাসীনভাবে বর্ণনা করে গেছেন মাত্র। গয়া মেম আর প্রসন্ন চক্রবর্তীর মধ্যেকার ভালোবাসাও তিনি বর্ণনা করেছেন এমনভাবে যে পাঠক তাদের ঘৃণা না করে বরং ভালোই বাসবে, একই কথা চলে নিস্তারিনী চরিত্র সম্পর্কেও। আর ভবানী বাড়ুজ্যে এবং রামকানাই কবিরাজ এমন মানুষও হয়তো ছিলেন সে সময় যারা শুধু বিষয় সম্পত্তির পেছনেই ছুটতেন না, ছিলেন নির্লোভ, সৎ, সুন্দর মনের মানুষ। ভবানী বাড়ুজ্যের চরিত্রটি সৃষ্টি করতে গিয়ে হয়তো বিভূতিভূষণ অজান্তে নিজের কথাই লিখে ফেলেছেন। তার উপনিষদ এর তত্ত্ব আলোচনা, প্রকৃতির মধ্যে, মানুষের মধ্যে, শিশুর মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়ানো তো বিভূতিভূষণের নিজের কথাই।

তিলু, বিলু, নীলু তিন বোন, বিশেষ করে তিলু তো সেই চিরন্তনী নারী যাকে বিভূতিভূষণের লেখায় বারবার খুঁজে পাওয়া যায়। কেবল রুপ নয়, তার আসল পরিচয় তার মনের সৌন্দর্যে, বুদ্ধি ও শক্তিতে। সেসময়ের ঐতিহাসিক অনেক ঘটনাও অল্প করে হলেও এসেছে এই লেখায়। প্রথম মোটর গাড়ি, লর্ড মেয়োর হত্যা, তীতুমীরের বিদ্রোহ, রেল লাইন স্থাপন, তীর্থযাত্রীদের নিয়ে জাহাজডুবি এসব সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নানাভাবে বিভূতিভূষণ নিয়ে এসেছেন এই উপন্যাসে। খল চরিত্রগুলোও এখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষই। শিপটন সাহেবও তাই লেখকের ভালোবাসা, মমতা পুরোটাই পেয়েছেন, তার মৃত্যুর বর্ণনাটি তো অসাধারণ। উপন্যাসটির কোন নির্দিষ্ট সমাপ্তি নেই। ভবানী বাড়ুজ্যে, তিলু, রামকানাই কবিরাজের জীবনের বাকি দিনগুলো কেমন কাটলো জানা হল না, খোকা কি সত্যিই বড় মানুষ হতে পেরেছিল কি না তাই বা কে জানে। এমন অনেক প্রশ্ন রেখে একটি যুগের কিছু সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনের সাধারণ কথাগুলো নিয়েই এই অসাধারণ উপন্যাস ইছামতী।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,759 reviews357 followers
November 1, 2025
বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতি, নিসর্গ, নান্দনিকতা এবং গ্রামীণ জীবনের মর্মস্পর্শী মূর্তায়ণে যদি একটিমাত্র নাম উচ্চারণ করতে হয়, তবে নিঃসন্দেহে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লেখনী যেন প্রকৃতিরই অন্তর থেকে জন্ম নেওয়া—যেখানে গাছের পাতা, নদীর ঢেউ, কিংবা শিশিরভেজা প্রভাতের গন্ধ নিঃশব্দে মিশে গেছে মানবজীবনের দুঃখসুখে। চরিত্র নির্মাণে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, জীবনের সহজ ও অনাড়ম্বর সত্যকে শিল্পের দিগন্তে উত্তীর্ণ করার ক্ষমতা, এবং ভাষার অন্তর্নিহিত সুরে যে কোমল অথচ অনমনীয় দখল—সব মিলিয়ে বিভূতিভূষণ বাংলা কথাসাহিত্যে সৃষ্টি করেছেন এক অনন্য উচ্চভূমি।

তিনি ছিলেন প্রকৃতির জীবনের এক মহাশিল্পী—যিনি জানতেন, মানুষ ও প্রকৃতি পরস্পরের পরিপূরক। তাঁর রচনায় এই দুই সত্তা একে অন্যের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে, যেন এক অবিচ্ছিন্ন প্রাণস্রোত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এমন সুষমা, এমন অন্তর্দৃষ্টি, এমন সৌন্দর্যবোধ খুব কম লেখকের কলমে ধরা পড়েছে।

তিনি লিখেছিলেন— “জগতের অসংখ্য আনন্দের ভাণ্ডার উন্মুক্ত। গাছপালা, ফুল, পাখি, বিস্তীর্ণ মাঠঘাট, সময়, নক্ষত্র, সন্ধ্যা, জ্যোৎস্নারাত্রি, অস্তসূর্যের আলোয় রাঙা নদীতীর, অন্ধকার নক্ষত্রময় উদার শূন্য—এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে এমন এক অনির্বচনীয় আনন্দ, এমন এক অসীমের মহিমা প্রাণে প্রবেশ করতে পারে, যা সহস্র বছর জাগতিক প্রাপ্তিতে মগ্ন থাকলেও বোঝা যায় না। সাহিত্যিকের কাজ, এই আনন্দের বার্তা সাধারণ মানুষের প্রাণে পৌঁছে দেওয়া—সেই বাণীই তাঁর সৃষ্টির প্রকৃত সার্থকতা।”

এই উপলব্ধি থেকেই বিভূতিভূষণ প্রকৃতিকে কল্পনা করেছিলেন মানুষের দুঃখের প্রতিষেধক হিসেবে। সংসার যদি দুঃখসাগর হয়, তবে তার মুক্তির দোর, সেই চাবিটি তাঁর বিশ্বাসে, প্রকৃতির হাতেই ন্যস্ত। সাহিত্যিকের ভূমিকা তখন রূপ নেয় একধরনের আধ্যাত্মিক যাজকত্বে—যিনি প্রকৃতির অসীম আনন্দ ও মানুষের ভগ্ন হৃদয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন, নিস্তব্ধতার ভেতর থেকে জাগিয়ে তোলেন নবজীবনের গান। স্বভাববিনীত বিভূতিভূষণ এই দায়িত্ব সম্পর্কে ছিলেন গভীরভাবে সচেতন; বিশ্বমানবতার পরিসরেও তিনি সাহিত্যিকের এই ভূমিকা নিয়ে ছিলেন নির্ভীক ও নিশ্চিত।

তবে তাঁর প্রকৃতিবোধ কখনও কেবল আনন্দোৎসব নয়; বরং দুঃখ, শোক, অপমান, ব্যর্থতা—সব কিছুর মধ্য দিয়েই তিনি দেখেছেন জীবনের প্রকৃত পরিপূর্ণতা। তাঁর *তৃণাঙ্কুর* দিনলিপির এক অমর অংশে তিনি লিখেছেন— “দুঃখ জীবনের বড় সম্পদ; দৈন্য বড় সম্পদ; শোক, দারিদ্র্য, ব্যর্থতা বড় সম্পদ... যে জীবন অশ্রু জানে না, অপমান জানে না, ব্যর্থতা জানে না, যে জীবনে জ্যোৎস্নারাতে হারিয়ে যাওয়া কারও মুখ ভাববার সৌভাগ্য নেই... সে জীবন মরুভূমি।”

এই কথাগুলির মধ্যেই নিহিত তাঁর মানবতাবাদের গভীর সত্য। বিভূতিভূষণ জানতেন, সুখ নয়—দুঃখই মানুষকে গভীর করে, আর প্রকৃতিই সেই দুঃখকে রূপান্তরিত করে এক আশ্চর্য প্রশান্তিতে। তাঁর সাহিত্য তাই কেবল সৌন্দর্যের অনুসন্ধান নয়; তা আত্মার মুক্তির এক ধ্যান, এক নীরব সাধনার পথ।

আজ তাঁর প্রয়াণদিবসে, তাঁকে স্মরণ করি ‘ইছামতি’ উপন্যাসের আলোচনার মাধ্যমে—যেখানে নদী, গ্রাম, মানুষ, ও প্রকৃতি এক হয়ে যায় এক অন্তহীন জীবনের সঙ্গীতে।

বিভূতিভূষণের ইছামতীর ধারে দাঁড়িয়ে বাঙালি সমাজ যেন নিজেকে পুনরায় আবিষ্কার করেছিল। ১৯৫০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত এই শেষ উপন্যাসটি, কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের কাহিনি নয়—এটি বাংলার অন্তর্লীন চেতনার এক অনন্ত স্রোত। এই নদী, এই গ্রাম, এই মানুষরা যেন একসাথে বহমান এক জাতির আত্মার রূপক।

বিভূতিভূষণ এই নদীর বুকে স্থাপন করেছিলেন ঔপনিবেশিক শোষণের কঙ্কাল, গ্রামীণ জীবনের নিরাবরণ সৌন্দর্য, মানবমনের প্রগাঢ় আধ্যাত্মিকতা, এবং মানুষের ভিতরের এক ধরনের নীরব প্রতিরোধ। এখানে ইতিহাস নদীর মতোই—নামহীন, অথচ সর্বব্যাপী। নীলকর সাহেব, জমিদার, রাজারাম, ভবানী বাড়ুয্যে, তুলু, বাণী, গয়া মেম—এইসব চরিত্রেরা ইতিহাসের মুখোশ পরে আসে, কিন্তু তাদের রক্তপ্রবাহে মিশে থাকে নৈতিক টানাপোড়েনের এক চিরন্তন সুর।

'ইছামতী' আসলে এক বিশেষ ধরনের উপন্যাস: এটি ইতিহাস নয়, কিন্তু ইতিহাসের প্রেতচিহ্নে গঠিত; এটি ধর্ম নয়, কিন্তু ধর্মের পরমাত্মার সঙ্গে সংলাপে বিধৃত; এটি প্রকৃতির বর্ণনা নয়, কিন্তু প্রকৃতির আত্মা। সেই আত্মার সঙ্গে মানুষের যে সম্বন্ধ—তা-ই এই উপন্যাসের আখ্যানশক্তি।

ঔপনিবেশিক শাসনকালীন যশোর-নদীয়ার এক বিস্মৃত ভূগোলের মধ্যে লেখক খুঁজে পান সভ্যতার সেই বৃহৎ প্রশ্ন: মানুষ কি সত্যিই স্বাধীন হতে পারে, যখন তার শ্রম, তার জমি, তার নদী, এমনকি তার শরীরও অন্যের মালিকানায় বন্দি? বিভূতিভূষণ এই প্রশ্নের উত্তর দেন সরাসরি নয়, বরং নদীর জলের মতো, ধীরে, ছায়া ও আলোর খেলার মধ্যে।

যখন জোসেফ কনরাড *Heart of Darkness* লিখেছিলেন, তখন তিনিও নদীকে সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতার প্রতীক করেছিলেন। কঙ্গো নদীর অন্ধকারে কার্টজের উন্মাদনা যেমন ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের নৈতিক ভাঙনের সাক্ষ্য, তেমনি ইছামতীর স্রোত বয়ে নিয়ে যায় বাংলার অন্তর্লীন পাপবোধ। তবে কনরাডের অন্ধকার নিঃশেষের, বিভূতিভূষণের অন্ধকার পুনর্জন্মের। একদিকে শোষণের ইতিহাস, অন্যদিকে আত্মার মুক্তি—দুটি বিপরীত স্রোত মিলেছে ইছামতীর বুকে।

ভবানী বাড়ুয্যের মুখ দিয়ে বিভূতিভূষণ বলেন, “ফুল, নদী, আকাশ, তারা—এইগুলিই ধর্মের শাস্ত্র।” এই বাক্য যেন কনরাডের নৈরাশ্যের বিরুদ্ধে এক নরম অথচ গভীর প্রতিবাদ। এখানে প্রকৃতি মানুষকে ধ্বংস করে না, বরং তাকে পরিশুদ্ধ করে; ইতিহাসের রক্তধারা মিশে যায় নদীর জলে, এবং জলের ধারা ধুয়ে দেয় পাপের ছায়া।

‘ইছামতী’-তে আমরা দেখতে পাই কিভাবে ঔপনিবেশিকতা কেবল রাজনৈতিক নয়, নৈতিক এক অন্ধত্বে পরিণত হয়েছিল। ইংরেজ নীলকররা এই উপন্যাসে এক অর্থে প্রেতাত্মা—তাদের উপস্থিতি সর্বত্র, কিন্তু তারা যেন ছায়ামাত্র , চেতনাহীন যন্ত্র। অথচ বিভূতিভূষণ তাঁদের একতরফাভাবে দানব হিসেবে গঠিত করেন না; তিনি দেখান কিভাবে দেশীয় সমাজও এই দাসত্বে একাধারে অংশগ্রহণ করেছিল। রাজারাম, সেই কুলীন ব্রাহ্মণ, যিনি ইংরেজদের দোসর হয়ে ওঠেন, আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিটি ঔপনিবেশিক শাসনের ভেতরেই কিছু দেশীয় ‘কার্টজ’ লুকিয়ে থাকে। বিভূতিভূষণ এখানে নৈতিক জটিলতা তৈরি করেন—শোষক ও শোষিতের সীমারেখা কুয়াশার মতো অস্পষ্ট হয়ে যায়। এই অস্পষ্টতাই তাঁর সাহিত্যকে ইতিহাসের চেয়ে গভীর করে তোলে।

যেভাবে মিখাইল শোলোখভের *And Quiet Flows the Don*-এ ডন নদী রুশ সমাজের যুদ্ধ, প্রেম, এবং আত্মবিভাজনের প্রতীক হয়ে ওঠে, তেমনি ইছামতীও বাঙালির অভ্যন্তরীণ ইতিহাসের আয়না। ডন নদীর মতো ইছামতীও মিশে যায় রক্তে, ঘামে, অশ্রুতে; যুদ্ধের বদলে এখানে মেলে নীলের অত্যাচার, বিপ্লবের বদলে অবস্থান করে নিঃশব্দ আত্মরক্ষা। শোলোখভের নদী যেমন মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্ধ বেগে, বিভূতিভূষণের নদী তেমনই ভাসিয়ে নিয়ে যায় কৃষিজীবনের পরিশ্রম ও ঈশ্বরবিশ্বাসের শান্ত প্রবাহে। দু’জন সাহিত্যিকই নদীকে বেছে নেন, কারণ নদীই একমাত্র প্রতীক যা ইতিহাসের চেয়ে বড়, যা রাজনীতি বা ধর্মের গণ্ডি অতিক্রম করে মানুষ ও প্রকৃতির অভিন্ন ছন্দে কথা বলে।

এই উপন্যাসে প্রকৃতি কেবল পটভূমি নয়; সে জীবিত চরিত্রের সমান শক্তিশালী সত্তা। বাংলার গাছ, পোকা, ফুল, নদী, জোছনা—সবই বিভূতিভূষণের কাছে জীবন্ত। তিনি প্রকৃতিকে দেবতা নয়, বরং সহচর হিসেবে দেখেন। যখন ভবানী বাড়ুয্যে প্রকৃতিকে ধর্মগ্রন্থ বলেন, তখন তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের *প্রকৃতিপূজা* ও Thoreau-র *Walden*–এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়। অথচ বিভূতিভূষণের প্রকৃতি পশ্চিমের রোমান্টিক ঐশ্বর্য নয়; সে এক কঠিন, বাস্তব, তবু পরম। তার কান্না, তার শোক, তার গন্ধ, তার শব্দ—সবই জীবনের অঙ্গ। এই প্রকৃতিবোধ তাঁকে একধরনের আধ্যাত্মিক বাস্তববাদী করে তোলে, যা ভারতীয় দার্শনিক ধারার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

তাঁর প্রকৃতির কাছে মানুষ পাপমোচনের আশ্রয় খোঁজে, যেমন খ্রিষ্টানরা ঈশ্বরের কাছে অনুশোচনার প্রার্থনা করে। কিন্তু বিভূতিভূষণের ঈশ্বর প্রকৃতির মধ্যে—জল, ধূলি, আলোয়। তাই তাঁর সাহিত্য ধর্মীয় নয়, ধর্মাতীত। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে পশ্চিমের দার্শনিকদের চেয়ে অনেক বড় মানবতাবাদী করে তোলে। তিনি জানেন, ইতিহাসের হিসাব কেউ রাখে না, কিন্তু নদী রাখে। তাই ইছামতীর জল তাঁর কাছে একধরনের নৈতিক স্মৃতি—যেখানে মানবসভ্যতার পাপ ও প্রেম একসঙ্গে দ্রবীভূত।

নারীচরিত্রগুলো এই উপন্যাসের অন্তরঙ্গ স্রোত। বাণী, তুলু, গয়া মেম—তাঁরা প্রত্যেকে এক একটি পৃথিবী। বিভূতিভূষণের নারীরা পশ্চিমের *Madame Bovary* বা *Anna Karenina*-র মতো আত্মবিধ্বংসী নয়; তাঁরা নিঃশব্দ, তবু প্রতিরোধী। তাঁদের জীবনে প্রেম আছে, কিন্তু তা কোনো বিদ্রোহ নয়, বরং অন্তর্গত মুক্তি।

তুলু যখন তার অপমানের পরও নিজের মর্যাদা ধরে রাখে, তখন সে হয়ে ওঠে বাংলার গ্রামীণ নারীর আদি রূপ—অসহায় কিন্তু অবিনত। গয়া মেম, যিনি সাহেবের গৃহদাসী হয়ে থেকেও এক মানবিক দীপ্তি বহন করেন, তাঁর মধ্যে লুকিয়ে আছে বিভূতিভূষণের গভীর সহানুভূতি। পশ্চিমে যেখানে নারীর মুক্তি আত্মবিনাশের পথে, বিভূতিভূষণের জগতে নারী মুক্ত হয় নিজের ধৈর্যের মধ্য দিয়ে। সেই বাঙময় নীরবতা এখানে প্রতিরোধের অন্য নাম।

এইভাবে *ইছামতী* কেবল রাজনৈতিক নয়, নৈতিক বিপ্লবের দলিলও। উপন্যাসের ভেতর দিয়ে আমরা দেখি এক সমাজ, যা একই সঙ্গে পুরোনো ও আধুনিক, অন্ধবিশ্বাসী ও আধ্যাত্মিক, নিষ্ঠুর ও প্রেমময়। ইংরেজ সাহেবদের নির্মমতা যেমন এই জগতকে ধ্বংস করে, তেমনি দেশীয় মানুষের দুর্বলতা ও স্বার্থও তাকে পচিয়ে দেয়। বিভূতিভূষণ এই ভাঙনের মধ্যে থেকে খোঁজেন এক নৈতিক পুনর্জন্ম। এই পুনর্জন্ম কোনো রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, বরং আত্মার মুক্তি—যা কেবল প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার মাধ্যমে সম্ভব। তিনি জানেন, ইতিহাসের প্রতিটি সাম্রাজ্যের শেষ গন্তব্য নদীর তলায়, কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা নদীর মতোই অনন্ত।

বিশ্বসাহিত্যে এমন আখ্যান কম নয়, যেখানে নদী সভ্যতার প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। কনরাডের কঙ্গো, শোলোখভের ডন, মার্কেসের মাকোন্দো—সবই এক ধরনের স্মৃতিস্রোত। মার্কেসের *One Hundred Years of Solitude*–এ যেমন বৃষ্টির দীর্ঘকাল সমাজের স্মৃতি ধুয়ে দেয়, তেমনি ইছামতীর জল ধুয়ে দেয় শোষণের ছায়া। দুই লেখকেরই লক্ষ্য এক—ইতিহাসকে পুনর্লিখন করা, মানবসম্ভাবনার পক্ষে এক বিকল্প বিশ্বগল্প রচনা করা। মার্কেসের বৃষ্টির শহর মাকোন্দো যেমন বাস্তব ও অলৌকিকের মেলবন্ধন, বিভূতিভূষণের ইছামতীও তেমনি বাস্তব ও আধ্যাত্মিকের সংলাপ। পার্থক্য এই যে, মার্কেসের মাকোন্দো লাতিন আমেরিকার উপনিবেশিক স্মৃতিকে জাদুবাস্তবতায় রূপ দেয়, বিভূতিভূষণ তার বিপরীতে নীরব বাস্তববাদে রূপ দেন। একদিকে বিস্ময়ের নাটক, অন্যদিকে নীরব দর্শন—দুজনেই একই সত্যের দুই রূপ।

ইছামতীর জগতে শোষণ কেবল বাহ্যিক নয়, অন্তর্লীন। জমিদার, ব্রাহ্মণ, কুলীন সমাজ—সবাই কোনো না কোনোভাবে দাসত্বের সঙ্গী। বিভূতিভূষণ এই সামাজিক কাঠামোকে ইতিহাসের চোখে দেখেন না; তিনি দেখেন জীবনের দৃষ্টিতে। ফলে তাঁর বয়ান রাজনৈতিক নয়, নৈতিক। এ এক ধরনের ভারতীয় উত্তর-আধুনিকতা—যা পশ্চিমের rational modernity-র বিপরীতে দাঁড়িয়ে বলে, মানুষকে মুক্তি দিতে হলে তাকে প্রকৃতির সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে হবে। এই ভাবনা রবীন্দ্রনাথের, টলস্টয়ের, এমনকি কামুর দর্শনের সঙ্গে মিল রেখে চলে। *The Stranger*–এর মেরসো যেভাবে আলোর মধ্যে তার অস্তিত্ব খুঁজে পায়, ভবানী বাড়ুয্যে তেমনি আকাশ ও নদীর মধ্যে আত্মার আভাস খোঁজেন। দুই লেখকের মধ্যে এক অদ্ভুত সাদৃশ্য—মানুষের একাকীত্বের মাঝেই মুক্তির সম্ভাবনা।

ইছামতীর শেষ দৃশ্যে নদী যখন মোহনার দিকে এগিয়ে যায়, তখন মনে হয়, এই নদী কেবল বঙ্গদেশের নয়, মানবসভ্যতার। তার জলে মিশে আছে পাপ ও প্রার্থনা, মৃত্যু ও জন্ম, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ। বিভূতিভূষণ জানতেন, মানুষ বারবার ভাঙে, কিন্তু প্রকৃতি কখনো থামে না। সেই অনন্ত গতির মধ্যে দিয়েই তিনি মানবতার প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস প্রকাশ করেন।

ইছামতীর স্রোত তাই শেষ পর্যন্ত এক metaphysical flow—যেখানে ইতিহাস, ধর্ম, সমাজ, প্রেম—সব একাকার হয়ে যায়।

যদি কনরাডের কঙ্গো হয় সভ্যতার অন্ধকার, বিভূতিভূষণের ইছামতী তেমনি সেই অন্ধকারের পরের ভোর। এই ভোরের আলো নরম, কিন্তু তা-ই মানুষকে টিকিয়ে রাখে। তাঁর নদী মানুষকে শিক্ষা দেয়, কিভাবে ধ্বংসের মধ্যেও সৌন্দর্য থাকে, আর অন্যায়ের মধ্যেও ন্যায়ের সম্ভাবনা।

*ইছামতী* তাই কেবল এক উপন্যাস নয়—এটি এক মানবদর্শন। এর প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি স্রোত, প্রতিটি নীলগাছ আমাদের শেখায়, সভ্যতা যতই শোষণ ও অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাক, প্রকৃতি ও প্রেমের মধ্যেই মানুষের মুক্তি নিহিত।

এটি বাঙালির উপন্যাস, কিন্তু এর বার্তা সার্বজনীন। এই নদী বয়ে যায় কঙ্গোর পাশ দিয়ে, ডনের কূলে, মাকোন্দোর বৃষ্টিতে, টলস্টয়ের সমভূমিতে। আর সেই নদী প্রতিবারই ফিসফিস করে বলে— জীবন নিঃশেষ হয়না, নদীর বহমানতায় ছেদ পড়ে না, কেবল নাম বদলায়, স্রোত থেকে যায় অনন্তকাল।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
August 10, 2023
নীলচাষ ও নীলকুঠির পটভূমিকে কেন্দ্র করে লেখা মায়ামাখা জীবনের গল্প কেবল বিভূতিবাবুর লেখাতেই পাওয়া সম্ভব!
Profile Image for Shafaet Ashraf.
Author 1 book119 followers
January 31, 2015
প্রকৃতির মায়ার জড়ানো কি চমৎকার একটা বই! শহুরে আমাদের কাছে উত্তাল ইছামতী নদী, "তিত্তিরাজ গাছের ঘন জঙ্গল", "ঝিনুক রাশির উপর ঝরে পড়া রাধালতার হলুদ রঙের ফুল" এর থেকে হয়ত ধূমকেতুতে আকাশযানের অবতরণ কল্পনা করা সহজ, কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমী যে কারো কাছেই বিভুতিভূষণের বইয়ের আবেদন কমার কথা না একটুও। নীলকুঠির অত্যাচারে দিশেহারা একটি গ্রামের গল্প এই ইছামতী। নীলকুঠির গল্প বলতে গিয়ে লেখক প্রকৃতির কথা আর স্বপ্ন দেখার কথা বলতে ভুলেননি।

বিভুতিভূষণের সব লেখাতেই ঘুরেফিরে আসে পৃথিবীটাকে চষে দেখার অদম্য ইচ্ছার কথা। এ উপন্যাসেও কয়েকবার করে ঘুরেফিরে আসে সংসারী মানুষের কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকার কথা, "পাহাড় কাকে বলে তাই দ্যাখলাম না জীবনে বাবাজি, তায় আবার ঝরণা!", "পড়ে আছি গু-গোবরের গর্তে, আর দেখিচি কিছু"। সেইসাথে নিস্তারিণী আর গয়া দুইজন প্রথাবিরোধী সাহসী মেয়ে অনেকদিন মনে রাখার মত চরিত্র।

বিভূতিভূষণের বই স্বপ্ন দেখাতে শেখায়, তাই মনে হয় পড়তে এত ভালো লাগে।
October 10, 2022
ইছামতী,পড়া শুরু করেছিলাম অনেক আগে, খুব সম্ভবত গত বছর। নানা কাজে উপন্যাসটি পড়ে শেষ করা হয় নি,অবশেষে পড়ে শেষ করলাম।
উপন্যাসের সময়কাল ইংরেজ আমল।যখন ইংরেজরা, চাষীদের বাধ্য করত নীল চাষ করতে এবং সেসময় দেওয়ানদের প্রভাব ছিল অনেক।
তারা ইংরেজদের অধীনস্থ কিন্তু ঠাঁটবাট এমন ছিল যেন তারা রুই-কাতলা। দেওয়ানরা সাধারণ মানুষদের নিজ হাতে নাচাতে ভালোবাসতো।
রাজারাম একজন দেওয়ান,গ্রামে তার নাম ঢাক ভালোই রয়েছে তার কুকর্মের জন্য।তার তিন অবিবাহিত ভগ্নি রয়েছে- তিলু,বিলু, নীলু বয়স যথাক্রমে- ৩০,২৭,২৫ ;মোটকথা বিয়ের বয়স পেরিয়েছে অনেক আগে তখনকার সমাজের রীতি অনুযায়ী।
তখনকার আর এখন কার বলে কথা না, বয়স হলে বিয়ে নিয়ে কথা মেয়েদের কম বেশি শুনতে হয়।
রাজারাম অবশেষে, ভগ্নিদের বিয়ে দেন ভবানী নামক এক পঞ্চাশ বছরের লোকের সাথে।হয়তো তখন কুলীন হিন্দু সমাজের রীতি ছিল,এক লোক চাইলে একাধিক বোন কে বিয়ে করতে পারে।তিলু,বিলু আর নিলু এই বিয়ের মাধ্যমে এক নতুন জীবন পেল আর সমাজের মানুষের কটু কথা থেকে মুক্তি লাভ করলো।
উপন্যাসটির শুরুতে ইংরেজ লাটদের আধিপত্য দেখানো হয় এবং শেষে দেখানো হয়ছে কীভাবে ইংরেজ শাসনের অবসান হয়েছে।
সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, তাদের ধর্মীয় চিন্তা ভাবনা এবং কীভাবে দিনেদিনে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে তার এক সুন্দর ছবি তুলে ধরেছেন লেখক তার লেখনির মাধ্যমে।
মোট কথা,উপন্যাসটি অনবদ্য।এক উপন্যাসের ভিতরে অনেক রকমের গল্পের স্বাদ পাবে পাঠক।তাই যারা ক্লাসিক কিছু পড়তে চান,তারা বিভূতিভূষণের, ইছামতী পড়তে পারেন।আশা করি,খারাপ লাগবে না।👍👍
Profile Image for Shadin Pranto.
1,470 reviews560 followers
September 3, 2020
অনেক বিখ্যাত বই। পড়তে ভালো লাগছিল। তবে যতটা লাগার কথা, ততটা লাগেনি। নীলচাষ ও তৎকালীন গ্রামীন সমাজের ক্ষমতাকাঠামো নিয়ে চমৎকার একটা ধারণা পাওয়া যায়। বিভূতিবাবুর লেখায় সবসময় একধরনের মোহনীয়তা মাখা থাকে। এবারেও তার ব্যত্যয় হয়নি। তবু মন শতভাগ টানলো না।

উপন্যাস থেকে ইতিহাস শেখা যায় না। তবু বলব, বিভূতিবাবুর পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের বড়ো অভাব ছিল। বাঙালি মুসলমানকে তিনি বিশেষ পছন্দ করতেন বলে মনে হয় না। একটা উদাহরণ দিই- তিনি লিখেছেন বিদ্রোহ দমনের পর তিতুমীরকে বেঁধে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে বাঁশের কেল্লায় শহিদ কে হলো?
Profile Image for Swati.
476 reviews68 followers
November 1, 2020
The Restless Waters of the Ichhamati is Bibhutibhushan Bandhopadhyay’s last book before he passed away in 1950. Set in 19th century Bengal, in Mollahatti, Jessore, the book is superbly translated by Rimli Bhattacharya and is about the little known practice and aspects of indigo cultivation in Bengal. The British forced villagers to cultivate indigo, which ruined their arable land, pushing them into poverty. Set along the river Ichhamati, the book speaks of one such neelkuthi or indigo plantation and – “the indigo plantation sahebs, the occasional memsaheb, the never-quite mem, and the multitude of people whose lives are bound visibly and invisibly with the plantation economy make for a localized yet expansive canvas…”

We are given sharp snapshots of the societal strata comprising everyone from the Burra sahebs to Brahmans to the peasants, and the different dynamics among them. Bhattacharya showcases this very uniquely using dialectical English to distinguish between the upper and lower classes. Satish Kolu, a vendor says, “What’s one to do! We’re po’r folks… And what was the saheb a-tellin’ you?”

We learn a lot about the social mores of the time when Bhabani agrees to marry three women from the same household to ‘save them’ from spinsterhood, Tilu is mortified at being seen with Bhabani during the day because “they’ll say, such and such’s wife was walking along quite brazenly with her husband in public”, and Gaya-mem is treated like an outcaste because she dares to voice her opinions and consorts with the Burra saheb. Slowly, though, we see change taking place through seasons, revolutions, attitudes, and economic status. Pastoral scenes, a specialty in Bandhopadhyay’s novels, abound. I was transported by descriptions like these - “Autumn was in the air – the season of Sharat. The harvesting was over and the fields of aush-paddy lay fallow. Yellow titpalla flowers had blossomed all over the shrubs in the jungle.”

I adore Bandhopadhyay’s richly textured canvases. His stories are not meant to be bound into the confines of a review because no matter how elaborate, I am always at risk of leaving something out. Flow along with this novel, as gently as the Ichhamati.

Profile Image for Surabhi Sharma.
Author 5 books105 followers
April 15, 2018
It is a privilege to read a book so well written and acquaint with the time we have left behind. A time more than one-fifty years before. I do not know many Bengali writers and thankful to Rupa publications and Rimli Bhattacharya for bringing this translation of Bibhutibhushan Bandyopadhyay to us. This is my first book by the author and I absolutely loved it. This is a great read. One you will love to fall in love with. This book is a gem.

The translation is simply brilliant. I have read translated versions of the books before and this one stands out and one of the best. Rimli has done a great job without killing the soul that is the Bengali connection of the story. The style remained the same.

If you are someone like to read a good book and not in a hurry to complete a goal of a certain number of books in a limited period, then take my words, and pick this book. You will not regret. Read it on a comforting pace, do not haste. This book will be best when read at a comfortable pace.

Have a happy reading!

https://thereviewauthor.com/
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
August 16, 2021
# মৃত্যুকে কে চিনতে পারে, গরীয়সী মৃত্যুমাতাকে? পথপ্রদর্শক মায়ামৃগের মতো জীবনের পথে পথে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে সে, অপূর্ব রহস্যভরা তার অবগুণ্ঠন কখনো খোলে শিশুর কাছে, কখনো বৃদ্ধের কাছে…তেলাকুচো ফুলের দুলুনিতে অনন্তের সে সুর কানে আসে…কানে আসে বনৌষধির কটুতিক্ত সুঘ্রাণে, প্রথম হেমন্তে বা শেষ শরতে। বর্ষার দিনে এই ইছামতীর কূলে কূলে ভরা ঢলঢল রূপে সেই অজানা মহাসমুদ্রের তীরহীন অসীমতার স্বপ্ন দেখতে পায় কেউ কেউ, কত যাওয়া-আসার অতীত ইতিহাস মাখানো ঐ সব মাঠ, ঐ সব নির্জন ভিটের ঢিপি–কত লুপ্ত হয়ে যাওয়া মায়ের হাসি ওতে অদৃশ্য রেখায় আঁকা। আকাশের প্রথম তারাটি তার খবর রাখে হয়তো…

# দুঃখকে বাদ দিয়ে জগতে সুখ নেই–প্রকৃত সুখের অবস্থা গভীর দুঃখের পরে… দুঃখের পূর্বের সুখ অগভীর, তরল, খেলো হয়ে পড়ে। দুঃখের পরে যে সুখ–তার নির্মল ধারায় আত্মার স্নানযাত্রা নিষ্পন্ন হয়, জীবনের প্রকৃত আস্বাদ মিলিয়ে দেয়। জীবনকে যারা দুঃখময় বলেছে, তারা জীবনের কিছুই জানে না, জগৎটাকে দুঃখের মনে করা নাস্তিকতা। জগৎ হোলো সেই আনন্দময়ের বিলাস-বিভূতি। তবে দেখার মতো মন ও চোখ দরকার।

# আনন্দ আত্মার ধর্ম, মন যত আত্মার কাছে যাবে, তত সে বেশি আনন্দ পাবে–আত্মার থেকে দূরে যত যাবে, বিষয়ের দিকে যাবে, তত দুঃখ পাবে। বাইরে কোথাও আনন্দ নেই, আনন্দ শান্তির উৎস রয়েছে মানুষের নিজের মধ্যে। মানুষ চেনে না, বাইরে ছোটে। নাভিগন্ধে মত্ত মৃগ ছুটে ফেরে গন্ধ অন্বেষণে। তারা সুখ পায় না।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
July 3, 2020
বিভূতিভূষণের প্রাকৃতিক বর্ণনার আসলেই কোন তুলনা হয়না। এত মুগ্ধতা, এত শান্তি, সত্যি সত্যি প্রকৃতির সান্নিধ্য অনুভব করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমি কম পেয়েছি।
তাঁর আরণ্যক আমার সর্বকালীন প্রিয় একটা উপন্যাস। ইছামতিও স্থানে স্থানে তেমন শান্তির আভাস দিলো। একই সাথে খোকার আচরণ, আধো আধো কথা খুব মিষ্টি ছিল।
শান্ত, নিস্তরঙ্গ উপন্যাসটাতে সমকালীন সমাজ এবং রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছে আলতোভাবে। নদী জড়িয়ে আছে সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে।
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
March 2, 2019
অসম্ভব ভাল একটা বই শেষ করলাম
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
September 8, 2024
আবার জন্মানো সম্ভব? ইছামতীর তীরে, ভবানী চাটুয্যের মতো একটা জীবন নিয়ে?
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
December 21, 2023
প্রচুর চরিত্র নিয়ে একটা সময়কালের আবহ বলার প্রয়াস ছিল লেখকের এই বইয়ে। কিছু চরিত্র এমন ভাবে বিল্ড আপ করেছেন যা পাঠকের ভিতরে গেধে যেতে বাধ্য। ভবানীর জীবন কে এক অদ্ভুত ভাবে দেখা,তিলোত্তমার ভালবাসা, নালুর স্ট্রাগল করে চূড়া তে উঠা, গয়া - প্রশন্নর অপ্রকাশিত ভালবাসা নাড়া দিবে।

ক্লাসিক উপন্যাস টি পথের পাচালীর মতোই মাস্টারপিস 🤍

ক্লাসিক উপন্যাস গুলো অনেক দিন পর পর একটা পড়ি ইচ্ছে করেই যেন সব একবারে শেষ না হয়ে যায়!

ক্লাসিক যারা ভালবাসেন তাদের জন্য রেটিং ৫/৫ হবে 😁


"ইচ্ছে আছে এবার একটা বইয়ে হাত দেবো — নাম দেবো তার ইছামতী। বড় উপন্যাস। তাতে থাকবে ইছামতীর ধারের গ্রামগুলির অপূর্ব জীবন প্রবাহের ইতিহাস — বন নিকুঞ্জের মরা-বাঁচার ইতিহাস।কত সূর্যোদয়, কত সূর্যাস্তের নিষ্কিঞ্চন, শান্ত ইতিহাস।

বিভূতিভূষণ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে সাধারণ জনগণ, যুদ্ধ এবং নীলকুঠির সাহেবদের কথা বলে গিয়েছেন। তাই এ উপন্যাসে ভালো-খারাপ পক্ষ এবং প্রধান চরিত্র নির্ণয় করা অসম্ভব। তাছাড়া এ উপন্যাসে অনেক চরিত্র। তারপরও মূল চরিত্রগুলোর কথা লিখলাম।
রাজারাম রায়: মোল্লাহাটি নীলকুঠির দেওয়ান। ভীষণ ঘুঘু লোক। ভালো-খারাপের মিশেলে এমন চরিত্র বিরল। কথিত আছে সাহেবদের থেকেও দেওয়ানরা বেশি ভয়ংকর।
ভবানী বাড়ুয্যে: খুবই সহজ-সরল এবং নিখাদ ভালোমানুষ। তার সন্ন্যাসীজীবনের নানাঘটনা আপনি মুগ্ধ হয়ে শুনবেন। মুক্তজ্ঞানী ধার্মিক। তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরোধী। তার একটাই আক্ষেপ, তিনি তার তিন স্ত্রীকে সমানভাবে ভালোবাসতে পারেননি। তবে সন্তান পালনে তার দর্শন আদর্শস্থানীয়। ১৮৬৪ সালে প্রকাশিত কোলসওয়ার্দি গ্র্যান্টের 'অ্যাংলো ইন্ডিয়ান লাইফ ইন রুর্যাল বেঙ্গল' নামক বইয়ের সাতান্ন পৃষ্ঠায় 'অ্যান ইন্ডিয়ান ইয়োগী ইন্ দি উডস' নামে ছবিটি ভবানী বাড়ু্য্যের রেখাচিত্র।
তিলোত্তমা: তিলু, নিলু এবং বিলু তিন বোন। তিলোত্তমার ছোট দু'বোন তার সতীন হলেও তারা বোনের মতই ছিল। প্রচলিত কলহ তাদের মাঝে ছিল না। যদিও ভবানী বাড়ুয্যে তিলোত্তমাকে বেশি ভালোবাসতেন। শিক্ষাপিপাসু। ঐ একই বইয়ের চুয়ান্ন পৃষ্ঠায় 'এ বেঙ্গলী উম্যান' ছবিটি তিলোত্তমার রেখাচিত্র।
রামকানাই কবিরাজ: উপন্যাসে সবচেয়ে ভালোলাগার চরিত্র এটা। ইনার সততা পাঠককে মুগ্ধ করবে। চরম দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও ইনি রোগী থেকে পয়সা খুঁজতেন না। সাহেব টাকার লোভ এবং অত্যাচার করেও মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজী করাতে পারে নি। পরমব্রহ্ম সম্পর্কে উনার জিজ্ঞাসা প্রতিটি সৎ মানবমনেরই জিজ্ঞাসা। ভীষণ সরলমনা এবং বিষয়বিমুখ হলেও ইনার চারিত্রিক দৃঢ়তা পাঠককে মুগ্ধ করবেই।
হলা পেকে: দুর্ধর্ষ ডাকাত। এর ডাকাতির বর্ণনায় অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ আছে। ভাবনীর সংস্পর্শে এসে কাজের কারণে অনুশোচনায় ভোগে। খুবই কঠিন চরিত্র।
নালু: আরেকটা সুন্দর চরিত্র। আত্মসচেতন। হাটে পান-সুপুরি বিক্রি করার মাঝেই ভীষণ বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এর ব্যবসায়িক বুদ্ধি পাঠককে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এমনকী নীলকুঠি কেনার সামর্থ্য হওয়ার পরেও নালুর চরিত্রে এতটুকু অহংকার ঢুকে নি।

প্রেম:
না, ইছামতী লুতুপুতু প্রেম কাহিনি নয়। কিন্তু বিভূতিভূষণ খুব সুন্দর ভাষায় এ উপন্যাসে কিছু প্রেম এনেছেন। ভবানী বাড়ুয্যে আর তিলোত্তমার সম্পর্ক এবং তাদের মাঝে ভবিষ্যৎ-ধর্ম নিয়ে কথোপকথন আপনার মন জয় করে নিবে। এটা একটা সফল প্রেম। তবে প্রসন্ন চক্রবর্তী আর গয়ামেমের প্রেমটা আপনাকে মুগ্ধ করবে। এদের প্রেমের শেষটা মনভার করেছে। রাজা-রাজড়াদের প্রেমে এরকম মুগ্ধতা থাকে না।

লেখনী:
ইছামতী চলিত ভাষায় লেখা। বিভূতিভূষণের লেখনীর পুরো ফিলটাই পাবেন। শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে।

বিতর্কিত দিক:
এটাকে ঠিক বিতর্কিত দিক বলা যায় না। তবে অনেককে আমি বলতে শুনেছি ভবানী বাড়ুয্যে একসাথে তিনবোনকে বিয়ে করার কারণে তারা এ বইটি পড়তে আগ্রহবোধ করেননি। এটা যারা মনে করেন তাদের বলছি: ইছামতী এমন এক সময়ের পটভূমিতে লেখা যখন ভারতবর্ষ শোষিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘৃণ্য প্রথায় ভরা। জাতভেদটা তখন প্রবল। এরকমই এক ঘৃণ্য প্রথার কারণে দেওয়ান রাজারাম রায়ের তিন বোন তিলু, বিলু এবং নিলুর বিয়ে হচ্ছিল না। তাই সন্ন্যাস জীবন বেছে নেয়া ভবানী এ তিনবোনকে সমাজের খোঁটা খাওয়া থেকে বাঁচাতে বিয়ে করে। বইটি পড়ুন, এ বিষয়টা বুঝতে পারবেন। অশ্লীলতার ছিটেফোঁটাও নেই। বরং এ ঘটনাটা পুরো উপন্যাসকেই আরো সুন্দর করে তুলেছে।

ইছামতীতে নীলচাষের দুঃখময় ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এ নীলচাষ করার জন্য সাধারণ কৃষকদের শস্যজমি বেছে নেয়া হত। ফলে মানুষ অনাহারে মারা যেত। কেউ নীলকুঠির বিরোধিতা করলে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হত। এসব করুণ কাহিনিই বিভূতিভূষণ ফুটিয়ে তুলেছেন।

'ইছামতী' পড়ে যেকোনো বয়সেরই পাঠক মুগ্ধ হবেন। তবে ইছামতীর আসল গল্পটা বোঝার জন্য সূক্ষ্ম হৃদয়পেল্লবের প্রয়োজন।

প্রত্যেক স্থানে যদি বিভূতিভূষণের মতো কিছু লেখকের জন্ম হত যারা নিজের জন্মভূমির সাধারণ মানুষের ইতিহাস বলতে ভালোবাসবে তাহলে হয়তো আমরা আরো কিছু ইছামতী পেতাম।

আজকের দিনেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তার আকাঙ্কিত__ তার সাহিত্যে বারংবার বর্ণিত সেই জগতে। পৃথিবীতে রেখে গিয়েছেন বইয়ে বন্দি মানুষদের জন্যে কিছু মুগ্ধতা। উনার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
Profile Image for Ifsad Shadhin.
115 reviews24 followers
May 8, 2021
উপন্যাস ছিল আমার ছোটবেলার একমাত্র এস্কেইপ। Growing up, always thought I had a tough childhood. Well, who doesn't? Of course, the older I grew, the more I met people who've had it thougher. But, at that time, being just 10, of course I didn't know that. Hell, I'm not even sure if, at that age, I even had any idea of what one's life should be, let alone compare that with what I had. So, I was reading this book and something happened that I didn't know was possible. Unexpectedly, quite magically even, I saw an image inside of my head. I saw myself standing in a dense forest, birds chirping all around me in a distance, unlight falling in small beads of ray. অনেক উপর থেকে প্রচন্ড গতিতে ঝরণা বয়ে আসছে নিচে, পানি সজোরে আছড়ে পড়ছে পাথরের ওপর। গাছের ফাঁক দিয়ে আসা কিঞ্চিত রোদের আলোয় পানির বিক্ষিপ্ত ফোঁটাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ছিটকে পড়া হিরকখন্ড। আর আমি উপন্যাসের প্রেমে পড়ে গেলাম। C'est aussi simple que cela. ইছামতির কাছ থেকে আমি একটা অমূল্য উপহার পাই। বাস্তবতা থেকে হারিয়ে যাবার একটা পথ। And it has kept me sane. C'est ce qui m'a gardé en vie, plus d'une fois.

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বইটা কখনো হয়তো পড়াই হতো না! আম্মুর সাথে ব্যাংকে গেছিলাম। ম্যানেজার আঙ্কেলকে কে যেন একটা ডিস্ক পাঠিয়েছিল, বইটার মধ্যে করে‌। আঙ্কেল আমাকে বইটা দিয়ে কিছু একটা বলেছিল হয়তো, কিংবা হয়তো বইটা আমাকে দেয়নি, আম্মুকে দিয়েছিল। মনে নেই এখন। তবে, উনি কি কখনো জানতে পারবেন, ওই সামান্য একটা জেসচার আমার জীবনটাকে এইভাবে সেইপড করবে?

ভাবতেই অবাক লাগে, র‌্যানডম একটা দৃশ্য ছাড়া যে বইয়ের কোনো কিছুই মনে নেই, সেই বই কি-না আমার এতো আবেগের স্থান হয়ে উঠবে! ওয়াদা করেছিলাম যে এই বই জীবনে দ্বিতীয়বার আর পড়বো না। তবে মোটামুটি নিশ্চিত নিজেকে করা এই প্রতিঙ্গা রাখতে পারবো না। আমি আবার ‘মাচ ঠু কিউরিয়াস ফর মাই ওউন গুড’ টাইপ লোক। 😂

এই বইয়ের কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। মাঝে মাঝে অবাক লাগে, লেখকরা কি জানে?—তারা একজনের পুরো জীবন গড়তে যাচ্ছে সামান্য একটা উপন্যাসের মাধ্যমে!
Profile Image for Anindya Baidya.
11 reviews
April 17, 2013
‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’।
এই নামটার ওপর আগে থেকেই একটা অদ্ভুত শ্রদ্ধা ছিল।ইছামতি পড়ার পর আমি নিশ্চিত যে ইনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক। ঠিক যেমন কবিতায় জীবনানন্দ। ভাষার ওপর কি অসাধারণ দখল! লেখার আগাপশতলা মাটির গন্ধে ভরা। অনেকগুলো Dimensionএ একসাথে খেলা করেছেন লেখক। উনি যেন Jimmy Hendrix. যিনি সবই বাজিয়ে গেছেন। পরে অন্যেরা তার ছোটো ছোটো অংশ ধার করে বিখ্যাত হয়েছেন। নারীর অধিকার, কুয়োয় ভরা গ্রামের মানুষের সহনশীলতা, দর্শন, জাতিভেদ, আদর্শ, ভগবান, একটা গোটা সময়। প্রণাম আপনাকে গুরুদেব।এই বই হাজারবার পরা যায়।
Profile Image for Sohinee Reads & Reviews (Bookarlo).
351 reviews274 followers
April 11, 2018
Read the full review on my blog : https://poesyinchrysalis.wordpress.co...



The book is set in the backdrop of a village situated near the Ichamati river. The caste system was much more prevalent in the early days than now and this reflects in the narrative of the prose. The characters are mainly involved in indigo plantation who fears their ‘saheb’ and are living a peasant’s life. The lives of these indigo planters are much more highlighted than incidences regarding the river Ichhamati. The flow of Ichamati is used as a simile to compare the lives of the people in the village to that of the river.

The natural flora and fauna is shown in abundance in this book and also how the indigo plantation was affecting the overall environment has been talked about. Also these indigo planters were often mistreated and were underpaid than the actual wages by the British people. While the tone of the book isn’t accusatory, the narrative doesn’t leave any chance but to mention the sufferings of these people and how the flora and fauna was being destroyed.

The book is written in a long prose narrative and it is quite a thick book so, it might get a bit boring after a few pages as one scene takes up a lot of time. Since, I haven’t read the original book, I can’t comment on whether the translated work is exactly the same as the original one.

Restless Waters of The Ichhamati focuses on showcasing the culture and society of Bengal and also has a story of the lives of the people working in the Molhati Indigo Plantation running parallelly. The book covers the regular lives of these families and also shows their working in the Indigo field.

I would definitely recommend this book to readers who like to read translated books and enjoys literatures of different languages other than English.

Overall Rating: ⭐⭐⭐.8
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
April 19, 2024
শেষ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত শেষ প্রকাশিত উপন্যাস। দেখা হলো সময়ের পরিবর্তনকে। উপন্যাসটা পড়ার সময়, আমাদের সময়ের পরিবর্তন নিয়েও কল্পনা হচ্ছিলো, মনে পড়ছিলো বুঝতে শেখার পরের সময়গুলোর কথা আর মনে মনেই বর্তমানের সাথে একটা তুলনা চলে আসছিলো। গত ২০-২২ বছরে কত কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। কী এক করুণ বেদনাদায়ক সুখের স্মৃতি।
শেলির ভাষায় বললে,
O world! O life! O time!
On whose last steps I climb,
Trembling at that where I had stood before;
When will return the glory of your prime?
No more—Oh, never more!
Profile Image for Imran Shorif Shuvo.
86 reviews30 followers
January 27, 2023
বিভূতিভূষণ-এর লেখার মাঝে একটা জাদু আছে। সম্মোহন করে ধরে রাখার একটা বিষয় আছে।

ইংরেজ আমলের গ্রামীণ বাংলা সুন্দর করে চিত্রিত হয়েছে ইছামতী উপন্যাসে। যদিও ইছামতী নদীর প্রভাব ততটা সক্রিয় নয়, গল্পের প্লটে; তবুও শেষাংশে জনজীবনের সাথে সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।

ইছামতীতে ক্যারেক্টারগুলো বেশ স্বতন্ত্র এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তিলুর মত আবহমান গ্রামীণ বাঙালি বধূ যেমন আছে, গয়া, নিস্তারিনীর মত ব্যতিক্রমী নারীও আছে। নালুকে দিয়ে লেখক বাস্তবতা এবং কর্মঠ হিসেবে লেগে থাকা শিখিয়েছেন। আর প্রটাগনিস্ট ভবানীকে দিয়ে আদর্শ জীবনে ন্যায় নীতির প্রয়োগ দেখিয়েছেন।

তৎকালীন সমাজের জাত পাত প্রথা উঠে এসেছে, নীল নিয়ে চাষীদের উপর হওয়া অত্যাচার ও এর প্রতিরোধও লেখক দেখিয়েছেন।

তবে বইয়ে সামান্য যে নেতিবাচক দিকটা পেয়েছি, তা হল ঘটনা আগানোর গতি একটু কম মনে হয়েছে (পার্সোনাল অপিনিয়ন)।

গল্পের বাঁকে বাঁকে বিভূতি তার হিতোপদেশ দিয়ে গেছেন পাঠককে। কখনো খোকনের মাঝে ভবানীর দেখা স্বপ্ন দিয়ে, কখনো বা ডাকাতের সর্দারের কাহিনী থেকে।

মোটকথা, ক্ল্যাসিক উপন্যাসের কোনো উপাদানই বাদ পড়েনি এতে।
Profile Image for Md Saiful Islam.
18 reviews37 followers
August 17, 2018
বিভূতিভূষণ এর বই। High Expectation নিয়ে শুরু করে একটা সময় বেশ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। প্রকৃতি বন্দনা আগের মতই, ইছামতির রুপ বর্ননাতে এতটুকু ফাঁক নেই। কিন্তু আগে পড়া চাঁদের পাহাড়, পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরন্যক এর তুলনায় কাহিনী বেশ সাদামাটা এবং একঘেয়ে রকমের।

বেশ আস্তে ধীরে পড়া শুরু করার পর অনেক কষ্টে মাঝখান পর্যন্ত পৌঁছানোর পর ইন্টারেস্ট বাড়া শুরু হল আবার। আর যাই থাকুক, বিভূতির বই এ বেশ কটি খাটি চরিত্র থাকে। তাদের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নার সাথে মিশে যাওয়া যায়। নিজেকে আরেকটু ভালভাবে তৈরি করে নেবার মোটিভেশন পাওয়া যায় চরিত্রগুলো থেকে।

ভবানী বাড়ুয্যে আর রামকানাই কবিরাজ এর আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণা ভাল লাগসে। অন্যান্য বইগুলোর মতই এই বইটাও শেষ হল এক ধরণের অপুর্নতা দিয়ে, কিছুটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে।

3* কিছুটা অবিচার হতে পারে। আগেরগুলোর প্রভাব কাজ করেছে রেটিং দেয়াতে। 3.5 দিতে পারলে খারাপ হত না!
Profile Image for Ashek Shaahid.
18 reviews2 followers
October 11, 2016
পুরনো দিনের সমাজচিত্র।অভাব অনটন আর হাজারো সমস্যার মাঝেও জীবন ছিলো সহজ ও শান্তিময়। ইংরেজি সাহিত্যে চসার ও ডিকেন্স কে তাঁদের পর্যবেক্ষণের নিবিড়তার জন্যে অতুলনীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ তেমনি একজন লেখক। এতো চমৎকারভাবে ক্ষুদ্র খুঁটিনাটি ব্যাপার গুল��ও তুলে আনেন যে পড়তে গিয়ে অবাক হয়ে যাই। "উই হ্যাভ মোর ইমোশনস দ্যান আওয়ার ল্যাঙ্গুয়েজ ক্যান এ্যাকোমোডেইট"এই কথাটা ভুল মনে হয় যখন বিভূতিভূষণ পড়ি। প্যারা ল্যাঙ্গুয়েজ থিওরিটা ভুল প্রমাণিত হয়ে যায় বিভূতিভূষণের লেখায়। তাঁর বই পড়লে বরং মনে হয়..our language can express more than what we experience in our everyday life..
Profile Image for MAHFUJUR RAHMAN.
11 reviews3 followers
January 4, 2025
"জোর যার মুল্লুক তার " এই বুলির উত্তম দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল নিলকুঠির সায়েব–সুবেররা। দরিদ্র চাষীদের ধানী জমিতে জোরপূর্বক নীল চাষ করানো হতো।বিদ্রোহ করলে তাদের দমনেরও ছিল শোচনীয় ব্যবস্থা,আগুনে ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া কখনও আবার মাথায় লাঠির বাড়ি বসিয়ে দেওয়া।
তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার নদীয়া ও যশোর জেলার মাঝামাঝি বয়ে চলা ইছামতি নদীর ধারের গ্রাম পাঁচপোতা,মোল্লাহাটি।বিভূতিভূষণ এইসব এলাকার নিষ্পেষিত মানুষ ও শাসকবর্গের দৈনিন্দন প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন ইছামতি উপন্যাসে ।
মোল্লাহাটিতেই ইংরেজ সরকারের দোসর জেন বিলস্ শিপটন সাহেবের নীলকুঠি—আর রাজারাম রায় সেই নীলকুঠির দেওয়ান।তার কাজ নীল চাষের যোগ্য জমিতে ক্ষমতার জোরে ভয় ভীতি দেখিয়ে দাগ লাগানো (চিহ্ন করা)।একসময় গ্রামের চাষীরা একজোট হয়ে বিদ্রোহ করে তারা আর নীল বুনবে না।শুরু হয় নীলকুঠি ঘেরাও।একসময় নীলকরদের দাপোট ঝিমিয়ে আসে।নীল কুঠির সায়েব আমলাদের স্বর্ণযুগের সমাপ্তি ঘটে।
❝ষষ্ঠীর চাঁদ জুনিপার গাছের আড়াল থেকে হেলে পড়েছে মড়িঘাটার বাঁওড়ের দিকে। ঝিঁঝি পোকারা ডাকচে পুরোনো নীলকুঠির পুরোনো বিস্মৃত সাহেব-সুবোদের ভগ্ন সমাধিক্ষেত্রের বনেজঙ্গলে ঝোপঝাড়ের অন্ধকারে।...❞

প্রসন্ন চক্কত্তি মোল্লাহাটি নীলকুঠির আমিন।গয়ামেম ও প্রসন্ন আমিনের অসামঞ্জস্য প্রণয়খন্ডটি উপন্যাসের এমন একটি প্লট যেটাকে বেশ গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নীলকুঠিতে তাদের আয়েশী অধ্যায়ের ব্যবচ্ছেদ হলে, জীবনের সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়লে, সমস্ত যশ প্রতিপত্তি হারিয়ে দুজন আর কূল কিনারা খুঁজে পাইনা,শুরু হয় করুন উপসংহার। তার মত লোকের দিকে বড়োসাহেবের আদরিণী আয়া গয়ামেম ভালো চোখে তাকিয়েছিল এই সন্তোষ বোধটুকু প্রসন্ন আমিনের অনন্ত একাকী জীবনে ছাপ ফেলে রাখে।
তিলু নিলু বিলু তিন পল্লীবালার এক মাত্র স্বামী পঞ্চাশ বছরের ভবানী বাড়ুজ্যে। যিনি দীর্ঘ সন্ন্যাস জীবন শেষে তিন বোনকে বিয়ে করে সংসারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। তিলু,নিলু,বিলুর বয়স যথাক্রমে ত্রিশ,সাতাশ,পঁচিশ—কিন্তু তাদের আচার ব্যবহার ষোড়শী বালিকার মত,নিলু আর বিলু বাসরঘরে স্বামীর কান মলে দিতে চাই।ক্রমেই বড় বোন তিলু স্বামীর অনুগত সংসারী হয়ে ওঠে।পল্লীর চঞ্চল রমণী এবং সদা তটস্থ গ্রামীণ সংসারী স্ত্রী এই দুটো সত্তা একইসাথে লালন করে তিলু এবং পুরো উপন্যাসে তার উপস্থিতি এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।
❝মেয়েরাই সেই দেবী, যারা জন্মের দ্বারপথের
অধিষ্ঠাত্রী( নিয়ন্ত্রক)—অনন্তের রাজ্য থেকে সসীমতার মধ্যেকার লীলাখেলার জগতে অহরহ আত্মাকে নিয়ে আসচে, তাদের নবজাত ক্ষুদ্র দেহটিকে কত যত্নে পরিপোষণ করচে, কত বিনিদ্র উদ্বিগ্ন রাত্রির ইতিহাস রচনা করে জীবনে জীবনে, কত নিঃস্বার্থ সেবার আকুল অশ্রুরাশিতে ভেজা সেই ইতিহাসের অপটিতে অবজ্ঞাত পাতাগুলো।❞
তৎকালীন নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত (চুয়াডাঙ্গা) অঞ্চল আমার জন্মভুমি হওয়ায় উপন্যাসের চিত্র কাহিনী,স্থান ,আঞ্চলিক ভাষা ,গ্রামীণ সংস্কৃতি এসবের সাথে আমি অনেকটাই পরিচিত। নীল বিদ্রোহ সংবলিত ঐতিহাসিক পটভূমি ও গ্রামীণ জনজীবনের কাব্যিক বর্ণনায় আমি বার বার আপ্লুত হয়েছি ।

রামকানাই কবিরাজ চরিত্রটি এমন যে – ধরাবাঁধা বিশ টাকা মাইনের কুঠীর কবিরাজী চাকরির পরিবর্তেও মাত্র একটি মিথ্যা কথা বলতে নাছোড়বান্দা।সাথে সাহেব–মেমদের রোগ সারাতে পারলে বখশিস তো আছেই।কবিরাজ বলেন ❝জীবন নিয়ে যেখানে কারবার,সেখানে শঠতা, প্রবঞ্চনা যারা করে, তারা তেনার (সৃষ্টিকর্তা) কাছে জবাবদিহি দেবে একদিন কি করে?❞ তার সহজ সরল চরিত্রটি বেশ লেগেছে।
Profile Image for Jannatul Firdous.
89 reviews178 followers
August 21, 2023
Colesworthey Grant সমগ্র ভারতবর্ষের নানান দর্শনীয় স্থান ঘুরে ঘুরে ছবি এঁকে বেড়াতেন। ১৮৬০ সালে তিনি তার এসব ছবি একত্র করে একটি ব‌ই বের করেন 'Rural life in Bengal' নামে। সেই ব‌ইয়ের দুইটা ছবি থেকে দুইজন মানুষের মূল চরিত্র গঠন করে বিভূভিভূষন রচনা করেন তার উপন্যাস ইছামতী।

ইছামতী গল্পটা শুরু হয়েছে নীল চাষের সময়টাকে কেন্দ্র করে। যে চরিত্র দুইটা বিভূতি নিয়েছিলেন তাদের একজনের নাম তিলু আরেকজনের নাম ভবানী।

তিলু,বিলু,নীলু এই তিন বোনের বিয়ে হয় একজনের সাথেই,ভবানী। এখনকার সময়ে এটা অতি আশ্চর্য একটা বিষয় হলেও তখন কুলীন ব্রাহ্মণের ঘরে ঘরে এমন‌ই হতো। নিজ জাতের ছেলে না পাওয়া গেলে মেয়ে সারাজীবন আইবুড়ো রাখতে হবে। সুতরাং একজনকেও যদি পাওয়া যায় যে কয়টা মেয়ে আছে দিয়ে দেয়া ভালো। এরকম একটা মতামত তখন চলতো।

এই ব‌ইয়ে তিন বোনের একজনের সাথে সংসার,বড়জনের প্রতি স্বামীর দুর্বলতা, নির্ভরশীলতা ইত্যাদি এত সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে যে ন্যূনতম অশ্লীলতার ছোঁয়াও পাবে না পাঠক।

ভবানী একসময় সন্ন্যাসী ছিলেন। সংসারী হলেও মন থেকে ভগবানের কথা তিনি ভুলে যেতে পারেন নি। হতে পারেন নি বৈষয়িক‌ও। সবচেয়ে বড় কথা ভবানী অতি আধুনিকমনস্ক। স্ত্রীদের পড়াতেন লেখাতেন। যুগের বদল কবে হবে,
ছেলেমেয়েরা কবে জনসম্মুখে হাত ধরে বের হতে পারবে এসবের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিছু সন্নাসী থাকে বিয়ের পরে স্ত্রী পুত্র ফেলে সন্ন্যাস জীবন বেছে নেয়,ভবানীর সন্নাসজীবনের প্রতি পূর্ণ টান থাকা সত্ত্বেও তিনি তা করেন নি। বরং সংসারের মধ্যেই তিনি ভগবানকে খুঁজে নিতেন।

তিলুর দাদা দেওয়ান রাজারাম রায় সুচতুর এবং দুর্দান্ত লোক। প্রজাদের ওপর অত্যা'চার, তাদের ভালো ভালো জমিতে নীলের দাগ মেরে পয়সা আদায় এসবের পাশাপাশি খু'ন,জখ'মেও তার জুড়ি মেলা ছিলো ভার। সূর্যের চেয়ে বালি গরম তেমনি সাহেব শিপটন থেকে ভয়ংকর ছোটসাহেব ডেভিড, তারচেয়ে বেশী ভয়ংকর রাজারাম রায়।

এই উপন্যাসের এত এত সুন্দর দিক। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়কে এই উপন্যাসে ধরা হয়েছে যে কোনোভাবেই বাংলা সাহিত্যে এই উপন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। নীল চাষের সময়টা সম্পর্কে যারা জানতে চান তাদের জন্য এটা মাস্টরিড। এই উপন্যাস লিখতে নিঃসন্দেহে বিভূভিভূষনকে যথেষ্ট পড়াশোনা করতে হয়েছে রেফারেন্সের জন্য।

সত্যি অনেক অনেক সুন্দর দিক আছে এই উপন্যাসের। কয়টা বলবো? উপন্যাসের শুরুর দিকটাই ধরি। শুরু হয়েছে নালু পাল নামক এক দরিদ্র পান সুপারি বিক্রেতাকে দিয়ে। যে মোট মাথায় গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলো। সাহেবের টমটম আসতে দেখে দৌড়ে পালালো। সাহেব দেখতে পেয়ে একটা সিকি ছুঁড়ে ফেললেন তার উদ্দেশ্যে। এই নালু পালকে উপন্যাসের শেষদিকে পাঠক দেখবেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র হিসেবে। ফুলেফেঁপে একাকার একটা মানুষ। তাকে কি অনাড়ম্বরভাবেই না এন্ট্রি দিয়েছেন লেখক!

গয়ামেম। সাহেবের রক্ষিতা। রক্ষিতা শুনলেই আমাদের মাথায় একটা খারাপ মেয়ের চিন্তা আসবে যে অনেক ছলাকলা জানে। কিন্তু গয়ামেম তেমন না। সে ছিলো বাগদী ঘরের সুন্দরী মেয়ে। সাহেব তাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। সাধারণের প্রতি গয়ার সবসময় একটা টান। সাহেব কারো জমি দখল করেছেন, দরিদ্র ব্যক্তিটি গয়াকে ধরে পড়বে। গয়াও না করতে পারবে না সাহেবকে বলে জমি আদায় করে দিবে। এবং আশ্চর্য এটাই যে তারপরেও নিজ স্বার্থ আদায় শেষে উক্ত ব্যক্তি গয়াকে সাহেবের রক্ষিতা হবার অপরাধে একঘরে করে রেখে দেবে। সমাজের বিচারে গয়া খারাপ,নিচ কিন্তু মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধের বিচারে গয়া অনেক উপরে।

নিস্তারিনী। যা মন চায় তাই করে এমন এক বৌ। শ্বাশুড়ির কথা মানে না। কিছুদিন পরকীয়াও করেছে। অথচ ভবানী এই নিস্তারিনীর মধ্যে দেখতে পেয়েছে ভবিষ্যত। সাহসিকা নির্ভীক নারীদের প্রতিচ্ছবি হয়ে এসেছে গয়া,নিস্তারিনীর মতো চরিত্ররা।

হলা পেকে। দুর্ধর্ষ ডাকাত। অথচ তিলু,ভবানীর সামনে যেন শিশুর মতো হয়ে যায় কোন জাদুমন্ত্রে।

রামকানাই কবিরাজ। ম'রতে রাজি তাও অন্যায় করতে রাজি না। একটা ক্ষুদ্র মিথ্যার বিনিময়ে তাকে বিশ টাকা(তৎকালীন) অব্দি বেতন দিতে চাওয়া হয় সাহেবদের পক্ষ থেকে। তারপরেও হাজার আঘাতেও তাকে দিয়ে একটা মিথ্যা বলানো সম্ভব হয় না। হতদরিদ্র অথচ সত্যের প্রতিমূর্তি এই চরিত্রটি।

প্রসন্ন আমিন। নীলকুঠির চালু আমিন ভালোবেসে ফেলে গয়াকে। উপন্যাসের শেষ পাতা অব্দি তাদের ভালোবাসায় হালকা করে মাখিয়ে দেয়া হয়েছে বয়স,সামাজিক ব্যবধানের বিষাদ।

এই উপন্যাসে গল্পে গল্পে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিক তুলে আনা হয়েছে। যেমন,তিতুমীরের বিদ্রোহ,লর্ড মেয়োর হ'ত্যা,তীর্থযাত্রীদের জাহাজডুবি। এই উপন্যাস চলাকালীন রেললাইন তৈরি হয়ে রেল চলতে শুরু করলো আবার কলকাতায় মোটরগাড়ি চলবার কথাও শোনা গেলো।

বাংলা সাহিত্যে নিঃসন্দেহে ইছামতী একটা অক্ষয় জায়গা নিয়ে বিরাজ করবে। ইংরেজ শাসন,নীলচাষ, তৎকালীন সমাজের অন্ধত্বের মাঝে দুই একটা সাহসী মেয়ে,দুই একটা বিচক্ষণ পুরুষ,পরিশ্রম দিয়ে অনেক দূর পৌঁছে যাওয়া নালু পালদের মতো চরিত্র, তৎকালীন ডাকাতির গল্প হলা পেকের মুখে,ব্রহ্মকথা,ভগবানের কথা,গভীর জীবনবোধ এক এক রাতে আসমানের দিকে চেয়ে আর সেই সাথে অনেকখানি প্রকৃতি,পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী। এ এক অন্যরকম সুন্দর উপন্যাস যার পরিপূর্ণ মাধুর্য লিখে বোঝাতে যে যোগ্যতা লাগে,তা আমার নেই।
Profile Image for Sruthy Pisharady.
86 reviews4 followers
June 6, 2018
The final novel to be published in the author's lifetime, Ichhamati revolves around life in the Mollahati Indigo plantation - one of the numerous neelkuthis or indigo factories that dotted Lower Bengal under Company rule. Bibhutibhushan Bandyopadhyay did not wish to write an ethnographic treatise, but there is enough in the novel about the coercion that went into indigo cultivation, the intricate nexus between the English manager and the brahman dewan, the peasant subjects, Musalman and Hindu, including episodes from the Indigo revolt, sometimes called the 'Indigo disturbances ' of 1859-1862. Restless Waters Of The Ichhamati is a brilliant translation that evocatively reflects the myriad moods of the original as well as its variations in style. Bibhutibhushan Bandyopadhyay was posthumously awarded the Rabindra Puruskar in 1951 for Ichhamati, his last published novel. The subject of cast plays an important role in this book. Brahmans come in for the sharpest critique. At least thrice in the novel the narrator comments directly on the idle group of landowning brahmans who while away their lives in the chandimandap, smoking and playing board games, gossiping and passing judgement on the hapless in their midst. Alongside this critique, the novelist seems simultaneously to seek redemption from the violence of indigo cultivation and the enmeshed oppression of caste and gender in the figure of the exceptional brahman. Ramkanai Kobiraj traverses the ravages of physical intimidation and social ostracism before he surfaces as an exemplar of dispassionate service in his capacity as the ideal kaviraj - as indigenous heater and passionate lover of god, capable of forgiving even those who would have murdered him. The woman who is 'cast out', Gaya-mem, and Ramkanai establish a special kinship that breaks through taboos of caste and gender. Similarly, (though less dramatically), Bibhutibhushan has Bhabani initiating eldest wife Tilu and their son (and subsequently, Nistarini) into a conscious awareness of Brahman, the Supreme Being. With his intense awareness of the broken dreams and aspirations of most village women, it must have been difficult for Bibhutibhushan to represent with equilibrium both the oppression and the spaces of freedom available to Hindu women in ​nineteenth century Bengal. It is significant that while several of the male muslim peasants are delineated in rough but powerful sketches, no Muslim woman even makes a fleeting appearance in Ichhamati. The women's world in the novel is essentially of upper and lower caste Hindu communities - brahman and bagdi. Bibhutibhushan shies away from a representation of sati, ubiquitous in colonial accounts, though he alludes to it in passing, when the murdered dewan's wife desires to immolate herself in her husband's pyre but is dissuaded by her sister-in-law. Cutting across caste and class, the women in Ichhamati appear stronger (physically and mentally) than their men, more protective and caring. A few are singled out for their frankness and integrity, as with Tilu, Nistarini and Gaya-mem. Others like Setho Kumudini Jeley (from the fisher-woman's caste) feature anecdotally : Kumudini is sketched almost in mythic proportions for the fierce affection with which she looks after her flock of pilgrims. Iconic figures like the Rani of Jhansi (with whom Kumudini is compared) become part of popular lore through the tales of pilgrim-travelers. More persuasive than these flashes of the archetypal Bengali female as the mother goddess is the casual way in which Bibhutibhushan weaves into the narrative a range of expressive forms - songs devotional/erotic, poems, riddles and proverbs - marking their transactional spaces as peculiarly feminine. The book takes into account the bilingual/multilingual reader who might not know Bangla but would be familiar with the nuances of kinship terms prevalent in much of the Indian subcontinent. Ichhamati is packed with terminology from the revenue system, derived from Persian and Arabic. Sanskrit slokas - both popular couplets as well as well as passages from the upanishads - are embedded in long conversations between Bhabani, Chaitanyabharati and Ramkanai Kobiraj. Like all of Bibhutibhushan's writing, Ichhamati is a celebation of flora and fauna, particularly of the profusion of commonly found plant life that flourishes in most regions of Bengal.

The plot is slow but profound. I was initially reluctant to start this book but once I started reading, I was totally engrossed in the book. The writing style is such that we are able to visualize everything like a movie. The book contains the interpretation of a lot of texts like the Bhagavad Gita in the form of discussions between various characters. The interpretations are spiritual rather than religious. The essence of the story was not lost in translation. We learn a lot about the life during that era. It is not a completely historical novel but facts and fiction have been combined to form a beautiful piece of literature. It is not the story but rather the experience of this book that makes it exceptional. The everyday life has been explained beautifully but without making it feel mundane. The characters have a lot of depth and we will be able to relate to many of their character traits. A lot of research has been done by the translator and glossary at the end provide a detailed explanation of the Bengali words. The history about Bibhutibhushan Bandyopadyay and his life and works is insightful. The book is a must read for all those who are looking for an authentic Indian novel which will make the them fall in love with Indian history and culture.
Profile Image for Sneha Dey.
148 reviews3 followers
July 29, 2025
বিভূতিভূষণের শেষ লেখা উপন্যাস শেষ হয়েও যেন শেষ হলো না। সব চরিত্র গুলোর বাকি জীবন কেমন কাটলো জানা হলো না, তবে এই টুকুই জানি যে ইছামতী আজও বয়ে চলেছে এবং তার ধারে মানুষ আজও জীবন যাপন করে যাচ্ছে।
এই উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলো আমার সেরা লেগেছে - তিলু, বিলু, নিস্তারিণী, গয়া মেম - সবাই এক একজন অন্যতমা নারী, অথচ কতো সাধারণ, কতো বাস্তবিক!
গল্পে লেখক সব চরিত্রকেই নিপুণ হাতে তাদের নিজেদের বিশেষ বিশেষ জায়গা করে দিয়েছে। সবাইকেই কখনো খুব ভালো লাগবে, খুব আদর্শ ব্যাক্তিত্বের অধিকারী মনে হবে, আবার পরক্ষনেই তাদের নিন্দা করতে মন চাইবে।
এইরকম সাধারণ গ্রাম্য জীবনের সাধারণ গল্প আমার খুব খুব প্রিয়।
93 reviews18 followers
January 30, 2017
ইছামতী-বুক মিভিউঃ
উপন্যাস নয়, যেন নদীর বুকে ঢেউ। ঢেউ বইতেই থাকে। নৌকার দুলুনি, ঝড়ের বেগে মাঝে মাঝে জীবন কেপে উঠে, কেউবা ছইয়ের উপরে আকাশে মেঘ দেখে পুলকিত হয়। পুরো উপন্যাসে কোন কাহিনী নেই, কোন নায়ক নেই নায়িকা নেই। নায়ক নায়িকা খলনায়ক সবই যেন সময়, সময়ের তালে বয়ে চলা নদীর ঢেউ।
প্রথমে মনে হয়েছিল যে হয়তোবা পদ্মানদীর মাঝির মত জেলেদের জীবনী পড়ব। বিশাল সৌভাগ্য লেখক পুরো জীবনটাই ঘুরিয়ে এনেছেন। কখনো মনটা বিষিয়ে উঠেনি, কখনো খুব আনন্দ হয়নি। এ যেন নদীর মত জীবন-জোয়ার আসে ভাটা আসে-নদী বইতেই থাকে। কিছু লাইন তুলে না দিলে মনে শান্তি পাচ্ছিনা তাই তুলে দিলামঃ
“ভগবানের একটি অপূর্ব শিল্প এর দুই তীর, বনবনানীতে সবুজ, পক্ষী-কাকলিতে মুখর”
“কত সুখদুঃখের অলিখিত ইতিহাস বর্ষাকালে জলধারাঙ্কিত ক্ষীণ রেখার মতো আকা হয় শতাব্দীতে শতাব্দীতে এদের বুকে। সূর্য আলো দেয়, হেমন্তের আকাশ শিশির বর্ষণ করে, জ্যোৎস্না-পক্ষের চাঁদ জ্যোৎস্না ঢালে এদের বুকে”
ভবানী বাড়ুয্যে, রাজারাম, বড়সাহেব, নালু পাল, নিলু তিলু, নিস্তা���িনী-সবই সেই ইছামতী নদীর অংশ। “যে কত আশা করে কলাবাগান করেছিল উত্তর মাঠে, দোয়াড়ি পেতেছিল বাশের কঞ্চি চিড়ে বুনে ঘোলডুবির বাঁকে, আজ হয়তো তার দেহের অস্থি রোদবৃষ্টিতে সাদা হয়ে পড়ে রইল ইছামতীর ডাঙ্গায়”
নাহ আর কিছু বলার নেই। হাজার বছর বার বার পড়ে-সেই রাতের আধারে পিদিমের আলোর যে ছবি চোখে ভেসে উঠত, সেই রকম ভেসে উঠছে কাশফুলের সেই মাঠ দিয়ে কেউ আমাদের বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মৃত্যু চিরসত্য, নদী ইছামতী চিরবহমান।
[[[বিঃদ্রঃ একটা কথা বলেই রাখি, লেখক তো আমাদের চিনতেন না। বাবা আজ ইছামতীও মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। কবে জানি নাকি নতুন বউ তার বরের ঘরে সবাই ঘুমুলে যেত, তার আগে দেখাও করতে পারত না। আজ যান দেইখা আসেন-চটপটি খাইতেছে, আর গল্প করতেছে।অফটপিক অফটপিক]]]
বাংলা বই আপাতত পড়া বন্ধ। রিভিউ লেখা নেশা পেয়ে বসেছে। ইছামতি মাঝখানে টেক্সট বই মনে হচ্ছিল। 
Profile Image for Ashraful Islam.
31 reviews3 followers
March 20, 2019
নীল চাষীদের অবর্ণনীয় দুঃখ আর কষ্টে নীলকুঠির ইংরেজদের যতটুকু ভূমিকা ছিলো তা যেন কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছিলো এদেশের রাজারামের মতো দেওয়ানজিরা।
নিজেদের ধানের ক্ষেতে বাধ্যতামূলক নীল চাষ, নীলকুঠির লোকজনদের অত্যাচারের বাইরেও ইছামতীর তীরের পল্লি সন্তানদের আলাদা জীবন ছিলো। ছিলো জীবনদর্শন, পাপ-পুন্যের বিচার, পারষ্পরিক সৌহার্দ্য।
জিঘাংসা, ঝগড়া প্রতিনিয়ত হলেও তা ছিলো গৌন।

নিজের ভাগ্যকে নিজ হাতের গড়ে নেয়ার অদম্য ইচ্ছা বুকে জাগিয়ে রেখেছিলো নালু পাল, শ্রেনী বৈষম্যের দৌরাত্ম্য আর উঁচুশ্রেনীর ঔদ্ধ্যত্ন নিজের পরিশ্রমে ভেঙ্গে দেয়ায় নালু পাল সফল।
ভবানী আর তিলোত্তমার(তিলু) প্রেমময় জীবন যথার্থই জীবন।
নিস্তারিণী আর গয়ামেম যেন ভবিষ্যতের মেয়ে, ভুল করে বছর পঞ্চাশ আগেই উপন্যাসে চলে এসেছে।

সূর্য অস্ত যায়। নীলকুঠির ইংরেজ সায়েবদেরও চলে যেতে হলো। ভাগ্য বদলায় নি শুধু সাধারন গরীব মানুষগুলার।
ধর্ম, বর্ণ, সমাজ, আইনের যত শাসন সব ঐ মানুষগুলার।

ইছমতীর কোনো এক ছায়াবিথীতলে আনমনে ভবানী বাড়ুয্যের মনে হয় ফুল, নদী, আকাশ, তারা, শিশু এরাই বড় ধর্মগ্রন্থ।
ইছামতীর অদূরে সত্যের প্রতিকৃতি রামকানাই কবিরাজ নিজ কুটিরে গান শুনছে,

জনকরূপেতে জন্মাই সন্তান
জননী হইয়া করি স্তনদান
শিশুরুপে পুনঃ করি স্তনপান
এ সব নিমিত্ত কারণ আমার-

সাথে রয়ে যায় ইছামতীর কুলকুল ধ্বনি।
Profile Image for Uday Jaman.
49 reviews6 followers
September 21, 2020
খুবই চমৎকার একটি বই। ব্রিটিশদের সাথে বাঙ্গালির সম্পর্ক উঠে এসেছে নানাভাবে। ভালোবাসা, ঘৃণা, সৌহার্দ্য, অত্যাচার প্রকৃতি সবকিছুর সমাহার এই ইছামতী।
Profile Image for Santanu Maity.
4 reviews
February 7, 2024
বিভূতিভূষণের "ইছামতী" উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য ও উৎকৃষ্টতম সম্পদ। লেখক খুব সযত্নে এই উপন্যাসটিকে লালন পালন করে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের ভেতরে ঢুকলে বুঝবেন যে, এ শুধু পাঠকের জন্য নয় অনেকখানি নিজের জন্য লেখা। ইছামতীর স্বরূপ দিয়ে প্রত্যেকটি গ্রাম্য জীবনের প্রবাহমান জীবন, ইতিহাস ও তার জীবনদর্শন তুলে ধরেছেন। এখানে প্রত্যেকটি চরিত্রই "ইছামতী"র মত আপন খেয়ালে গতিয়মান। গ্রাম্য জীবনের অলস জীবনযাত্রা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নালু পালের মত একজন কর্মঠ , বুদ্ধিমান মানুষের জমিদারি হওয়ার বিবরণ। প্রজা নিপীড়নকারী দেওয়ান রাজারাম যেমন রয়েছেন, তেমনি সম্পূর্ন বিপরীত মেরুতে অবস্থিত তারই তিনবোন তিলু, নিলু আর বিলু যাদের ভালোবাসার দ্বার ছিল মুক্ত ও অবারিত। আর ভবানী বাডুজ্যে এর চরিত্রটি এমন ভাবে রুপায়ন করেছেন যে , লেখক তার সবসময়ের অবচেতন মনে থাকা এমনি এক জীবন যা তিনি আজীবন অতিবাহিত করতে চেয়েছেন। সন্ন্যাসী ভবানী বাডুজ্যে এর আত্মোপলব্ধি , সংসারের যাবতীয় সুখ, রহস্য সংসারের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এবং তা প্রত্যক্ষ করার জন্য সংসার বর্জন নয়, বরং তার মধ্যে থেকেই লাভ করতে হয় আর ইছামতী সেই দৃষ্টি লাভ করার মন্ত্রণা দিয়েছেন যেন। মা, ছোট্ট ছেলেকে আদর করছে, এই সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বমঙ্গলকার অনুভুতির কাছে তার সমস্ত সাধনা, যোগাসন অর্থহীন।
রামকানাই কবিরাজের মত একজন সৎ, লোভহীন, গরীব ব্রাহ্মণ যে অগাধ ভালোবাসার বীজ তৈরি করেছেন তার ভাগীদারি স্বয়ং অত্যাচারী নীলকর সাহেবও পেয়েছিলেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন শুধু চরিত্র গুলোর কথা বার বার কেনো বলছি, গল্পের কি আর কোনো বিষয় বস্তু নেই ? অবশ্যই গল্পের বিষয়বস্তু আছে, কিন্তু এই উপন্যাসে , সব কিছুর উর্ধ্বে, সমস্ত ধরনের মানুষকে গ্রহণ করার যে বাতাবরণ তৈরি করছেন তা সত্যিই বিষয়বস্তুকে ছাপিয়ে গেছে। প্রকৃতির সৃষ্টি করা সমস্ত জিনিষ সুন্দর, আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য, আর আমরা, সেই প্রকৃতির ফসল হয়েও কিভাবে আর এক ফসলকে অবজ্ঞা করতে পারি। তাই ইছামতীর বুকে গড়ে ওঠা এই গ্রাম্য প্রবাহমান জীবনের প্রত্যেকটি চরিত্রই হয়ে উঠেছে জীবনমুখী ও গ্রহণযোগ্য।
নীলকর সাহেব ও দেওয়ান দের প্রজা উৎপীড়ন পাঠকদের একটু আঘাত দিলেও কখনো রাগ ঈর্ষা তৈরি করবে না, কারণ প্রত্যেকটি মানুষকে তিনি ভালোবেসেছিলেন আর তার বিবরণ ও ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। যে বৃদ্ধ আমিন , গয়া মেমের মত সমাজ বর্জিত, যুবতী, সুন্দরীর প্রেমাস্পর্শ পেতে চেয়েছিল তা আপাতভাবে দৃষ্টিকটু হলেও, তা সর্বাগ্রে গ্রহণীয় । কারণ মানুষের নিঃসঙ্গতা সত্যিই জীবনের বেঁচে থাকার ক্ষেতে দুর্বিষহ।
আর নিস্তারিনির মত সাহসী , লজ্জাহীন নারী যেনো প্রত্যেক প্রজন্মের কাছে মহীয়সী ও নবজাগরেনর অগ্রদূত ।
দেখুন, এই উপন্যাসে কোনো টান টান উত্তেজনা বা রাজ রাজাদের ঐতিহাসিক বিবরণ পাবেন না, তবুও আপনার পড়তে ভালো লাগবে , কল্পনা করতে ভালো লাগবে। আর লেখাটি অনেকদিন ধরে পড়ছিলাম বলে আরো একটু বেশি ভালো লেগেছে। সর্বোপরি এক দারুন অনুভুতি।
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
November 14, 2024
ইছামতি 


একটা নদী। আয়তনে ছোট। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক লোকালয়। সেখানে আছে " নীলকুঠি "।  " ইছামতি" গল্পের চরিত্ররা অধিকাংশ লোকালয়ের সাধারণ মানুষ আর নীলকুঠির সাহেব। 



  নীলচাষ


সাধারণ মানুষের একটা আতঙ্কের নাম। ধানের জমিতে হতো নীলের চাষ। সাধারণ কৃষক ধান ফলাতে পারত না,ফলে তাদের দিন কাটত অনাহারে,কষ্টে। আর সাধারণ প্রজার উপর জুলুম করে ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছিলো " ইংরেজ সাহেবরা "। তাদের অত্যাচার ছিল ভয়ংকর। কেউ যদি নীল চাষে বাধ্য না হতো,তার উপর নেমে আসতো ভয়ংকর কালো হাত।  ❝ "চুনের গুদামে" -এর সঙ্গে চুনের সম্পর্ক তত থাকে না,যত থাকে বিদ্রোহী প্রজা ও কৃষকের। বড় সাহেবের ও নীলকুঠির স্বার্থ নিয়ে যার সঙ্গে বিরোধ বা মতভেদ, সে চুনের গুদামের যাত্রী। ❞


নীল কুঠি


এখানে থেকেই ব্রিটিশরা নীল চাষের তদারকি করতেন। সব কিছু সামলাতেন। খাজনা আদায় করতেন। সাহেবদের ডেরা বলা যায়। নীলকুঠি একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম।


দেওয়ান 


 দেওয়ান হচ্ছে আসল শত্রু। ব্রিটিশদের চেয���ে এক কাঠি সরেস। যতকুট বুদ্ধি আসে এর থেকেই। প্রজাদের জমি কেড়ে নেয়া। ধানের জমিতে নীলের দাগ মারা। নীল চাষে রাজি না হলে ঘর জ্বালিয়ে দেয়া। ব্রিটিশরা  এই দেওয়ানের সাহায্যেই যত খারাপ কাজ করে।



বিভূতি বাবুর লেখা মানেই অনন্য। "ইছামতি" উপন্যাসের "ভবানী" চরিত্র টা আমার সব সময় মনে থাকবে। এই চরিত্রের জন্য আমি ঘুরে ফিরে আবার আসব, এই বইয়ের কাছে। এত সুন্দর, এত সুন্দর। পড়তে পড়তে মনে হয়,কোথায় জানি হারিয়ে যাচ্ছি। বিভূতিভূষণ মানেই মনের সুখে দূর কোন আজানায় হারিয়ে যাওয়া... 


ঈশ্বর নিয়ে ভবানীর এই উক্তিটা, কখনো ভোলার মত নয় ❝ এখন মনে হয় তিনি আমার বাবা। তাঁর বংশে আমাদের জন্ম। সেই রক্ত গায়ে আছে আমাদের। কখনো কোন কারণে তিনি আমাদের অকল্যাণের পথে ঠেলে দেবেন না,দিতে পারেন না। তিনি বিজ্ঞ বাবার মতো আমাদের হাত ধরে নিয়ে যাবেন। তিনি যে আমাদের বহু বিজ্ঞ,বহু প্রাচীন,বহু অভিজ্ঞ,বহু জ্ঞানী, বহু শক্তিময় বাবা। আমরা তাঁর নিতান্ত অবোধ,কুসংস্কারগ্রস্ত ভীরু,অসহায় ছেলে।
Displaying 1 - 30 of 113 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.