Jump to ratings and reviews
Rate this book

বাঙালনামা

Rate this book
আত্মকথা বা আত্মচরিত নয়, পাথুরে ইতিহাসও নয়। 'বাঙালনামা' অবিস্তৃত সমাজজীবনের কাহিনি। 'রোমান্থন'-খ্যাত লেখকের কলমে ভিন্ন স্বাদের স্মৃতিকথা। হারিয়ে যাওয়া ধুসর জগতের কিংবা হারাতে থাকা সময়ের নিবিড় আবরণ। এই স্মৃতিকথার শুরু ১৯২৬ সাল, অর্থাৎ লেখকের জন্মের বছর থেকে। তারপর বর্তমান কাল অবধি এর সময়সীমা। ফেলে আসা আশি বছরে অতি দ্রুত নিজেকে বদলাতে থাকা সময়, লেখকের শৈশব-কৈশোরের পূর্ববঙ্গ, সেখানকার বিস্মৃত মানুষজন এবং বিলুপ্ত জীবনযাত্রা, পঞ্চাশের দশকের অক্সফোর্ড আর এখনকার সেই পশ্চিমি নালন্দা, গতশতাব্দী জুড়ে মহাদেশ থেকে মহাদেশে লেখকের সফর ও সুদীর্ঘ প্রবাসজীবন ব্যপ্ত হয়ে আছে এই রচনায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞা আর রসমাধুর্যে ভরপুর এক পথিকজীবনের ইতিবৃত্ত 'বাঙালনামা'

'বাঙালনামা'য় তপন রায়চৌধুরী ঝালকাঠির কীর্তিপাশা জমিদারবাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এ জমিদারবাড়িতেই ১৯২৬ সালে তাঁর জন্ম। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল, কলকাতা বালিগঞ্জ জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউট, বালিগঞ্জ সরকারি হাই স্কুল, কলকাতা স্কটিশ কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। তাঁর চর্চার মূল বিষয় ছিল ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস, ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস ও বাংলার ইতিহাস। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক ছিলেন। দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিকসে বেশ কিছুকাল শিক্ষকতা করেছেন। তাঁকে ১৯৯৩ সালে ডক্টর অব লেটারস সম্মান দেয় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। ২০০৭ সালে তপন রায়চৌধুরীকে পদ্মভূষণ সম্মান প্রদান করে ভারত সরকার। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত বই 'বেঙ্গল আন্ডার আকবর অ্যান্ড জাহাঙ্গীর : অ্যান ইন্ট্রোডাক্টরি স্টাডি ইন সোশ্যাল হিস্ট্রি', 'দ্য ওয়ার্ল্ড ইন আওয়ার টাইম' প্রভৃতি।

478 pages, Hardcover

First published May 1, 2007

34 people are currently reading
583 people want to read

About the author

Tapan Raychaudhuri

21 books38 followers
Tapan Raychaudhuri (8 May 1926– 26 November 2014) was an Indian historian specialising in British Indian history, Indian economic history and the History of Bengal.

He was a student of Ballygunge Government High School, Calcutta and Barisal Zilla School, Scottish Church College, Calcutta, where he completed his I.A. and finally Presidency College, Calcutta, where he completed his B.A. (Hons.) in history with a high first class. He completed his first D.Phil. in history at Calcutta University under the supervision of Sir Jadunath Sarkar and his second D.Phil. at Balliol College, Oxford under the supervision of Dr. C.C. Davies.
He started his career as a lecturer at the Department of Islamic History and Culture, Calcutta University. After his return from Britain he became a deputy director of the National Archives of India. He was a reader and then professor of history and director of the Delhi School of Economics and also of the department of history of Delhi University.

He was first a reader in Modern South Asian History and then professor of Indian History and Civilization and fellow of St. Antony's College, Oxford from 1973-93. He was an emeritus fellow of St. Antony's College, Oxford after retirement. He became a national research professor in India in 2010

Awards:
1. Watumull Prize awarded by the American Historical Association, 1982. (jointly with Irfan Habib) for the Cambridge Economic History of India.
2. Doctor of Letters 1993, University of Oxford.
3. Doctor of Letters honoris causa by the University of Calcutta.
4. Doctor of Letters honoris causa by the University of Burdwan.
5. Padma Bhushan in 2007 in recognition to his contributions to history.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
123 (53%)
4 stars
95 (40%)
3 stars
11 (4%)
2 stars
2 (<1%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 43 reviews
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
August 20, 2017
দুর্দান্ত একটা বই। একবার শুরু করলে শেষ না করে রাখা যায় না। সত্যি কথা বলতে আমি লেখকের নাম কোনদিন শুনি নি। গতবছর গুডরিডসে রিভিউ পড়ে একটু আগ্রহ হল। ( গুডরিডসে আমি অনেক ভালো ভালো বইয়ের সন্ধান পেয়েছি এবং পাচ্ছি। এই একটা কারণ আমি দিনে কম করে ২০ বার এইখানে ঢুঁ মারি। ) তারপর ২ বার শুরু করেছি। কিন্তু প্রথম অধ্যায়ের ওই দাদা, মামা, ঠাকুরদার প্যাঁচ কিছুতেই ছাড়াতে পারছিলাম না। তাই ২ বারের কোনবারই প্রারম্ভিকা শেষ করে আগে যেতে পারিনি। আর কঠিনভাবে লিখা মনে হচ্ছিল। তবে ওই যে পরীক্ষার মধ্যে সব পড়তে ভালো লাগে। তাই এই বিশাল বইটা ওইসময়েই ধরতে ইচ্ছা করলো।

যাই হোক, বইয়ের কথায় আসি। বেশি ভালো বই নিয়ে বলার কিছু থাকে না। এটাও একটা বেশি ভালো বই। প্রথম শুরু হয় লেখকের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ দিয়ে। স্মৃতিচারণ পড়তে বরাবরই ভালো লাগে। বেশ মুগ্ধ হয়েই পড়ছিলাম। কিন্তু বইটা শুধুই স্মৃতিচারণ বা আত্মজীবনী না। বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলি উঠে এসেছে। সাথে আছে তাদের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ আর লেখকের নিজের মতামত। লেখকের রসবোধ মারাত্মক। হয়ত সিরিয়াস কোন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছেন, এর মধ্যে এমন একটা লাইন লিখেছেন না হেসে পারা যায় না। ওনার জীবনে উনি বিচিত্র আর গুণী অনেক মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাদের কথাও সাধ্যমত লিখেছেন। বইটা সত্যি বেশি ভালো। আমি আকাশপাতাল চিন্তা করতে ভালোবাসি। এই বই মানুষ, সমাজ, জীবন, শিক্ষাব্যবস্থা সহ অনেক কিছু নিয়ে চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। তাই আরও বেশি বেশি ভালো লেগেছে।

বিঃ দ্রঃ লেখকের হল্যান্ড বাসের বিবরণ পড়ে হল্যান্ড যাওয়ার শখ হয়েছে। আমি হল্যান্ড যাইতে চাই। ডাচদের থেকে জীবনের ছোট ছোট বিষয় থেকে কিভাবে তৃপ্তি পাওয়া যায় সেটা শিখে আসব।
"আধুনিক ইউরোপের সংস্কৃতিতে ডাচদের জায়গা প্রথম সারিতে নয়। ওদের বুদ্ধি বা বোধির জগত জীবনযন্ত্রণায় তিক্তবিচ্ছিন্ন নয়। ওদের জীবনের মূল সুর শান্তরসে বাধা। ... ঘরের ভিতর একচিলতে রোদ এসে পড়েছে- তার রূপের শেষ নেই। এক টুকরো রুটই আর চিজের স্বাদ-- সে বড় তৃপ্তিদায়ক। এক গ্লাস হিমশীতল লাগাড় যখন গলা দিয়ে নামে তখন কি জগতের কোন দুঃখ- কষ্টের কথা মনে থাকে? ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এই জগত অতীন্দ্রিয় আনন্দের সংবাদ বয়ে আনে। অসংখ্য অবারিত ছোট ছোট সুখের প্রবাহ এই জীবন- বড় তৃপ্তিকর, বড় খজেলিখ। বেঁচে থাকা বড় সুখের, বড় সৌভাগ্যের আকর। বেঁচে থাকতে ভালো লাগে। সমস্ত স্নায়ুপথে এই সৌভাগ্য সানন্দে স্বীকার করার শিক্ষা হল্যান্ডে থেকে পেয়েছিলাম।"
Profile Image for Meem Arafat Manab.
377 reviews256 followers
June 15, 2017
এক একটা বই চলে যাচ্ছে জীবন থেকে। এ কথাটা কী আর আজ এসে বলা যায়?
ধরুন প্লাতো আরিস্ততল বলতে পারত এ কথা। সে যুগে বই ছিলো কম, একেকটা বই ঘরে থাকা মানে আগের ষোলো জন্মে আমি দিনে দেড়শো করে ফকির খাওয়াইছি। এমন কী দেড়শো বছর আগেও ত, বই পড়তে হলে বই খুঁজতে হত।
এখন একুনে এসে ডিজিটাল বইয়ের যা হিড়িক। কিনে পড়লেও, ট্যাঁকে পয়সা থাকলে, দেদারসে কেনা যায়। বই চলে গেলেও ত আর দুঃখের কিছু নাই। আসবে আরো বই, আরো নতুন বই পড়া যাবে।
তাও, এই বইটা চলে গেলো। পড়া হয়ে গেলো। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিলো পড়বার। আর প্রথমবার পড়বার অভিজ্ঞতা হবে না।

তপন রায়চৌধুরী কোনো জায়গা রাখেন নাই ভালো না লাগার। বেশ চমৎকার রসবোধ, যেসব মন্তব্য বেফাঁস, আমিও তাদের অনেকগুলো সমর্থন করি বলে আমার সমস্যা হয় নাই সবিশেষ।
যেমন এই অঞ্চলের লোকদের ধরে ধরে দাঙ্গা বিষয়ে পড়াইতে হবে, এবং বলাইতে হবে, আর হবে না, আর এমন হবে না।
ঈর্ষণীয় শিক্ষাজীবী জীবন, আমাদের অনেকের স্বপ্ন থাকে ঐরকম জীবনের। বাংলাদেশ, মানে পূর্ববঙ্গ ভ্রমণ নিয়ে কিছু পাতা থাকবে আশা করেছিলাম। দেন নাই।
ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ, এই অঞ্চলের সঙ্খ্যালঘু নির্যাতন, উঠে এলো দেখলাম। আমাদের বরাবরের ইংরিজিপ্রীতি, শুরুতে যুক্তবঙ্গ, দাঙ্গার বিকটতা, আমাদের বরাহচরিত্র, তৎকালীন কলকাতা, তাঁর প্রেমের ইতিহাস, তাঁর সহকর্মীদের বাটপারি, অনেকের মুক্তকণ্ঠ প্রশংসা, চল্লিশের দশকের কলকাতা, ভেঙে ভেঙে বিলেত থেকে বাড়ি ফেরা - এটা একটা খাসা ঝাঁপি হয়েছে চকবাজারের। শামি কাবাব থেকে তিন কেজি জিলাপী, কত পদ যে ঠেসে রাখা যায় রে বাবা।

সুযোগই রাখেন নাই গাল দেবার। পড়েন, বেশ ভালো একটা সময় অনায়াসে চলে যাবে।
বাঙ্গালী তথা ভারতীয় - কথাটা দেখলে ধন্দ হয় একরকম। যত বয়স হচ্ছে, ব্যাপারটা গুরুত্ববহ মনে হচ্ছে আমার কাছে ক্রমশ।

৪৭-এর কথা, বাবরি মসজিদের কথা, এইখান থেকে হিন্দু পলায়ন, ঐখানে মুসলমান খেদানো, এইসব মনে পড়লে বলতে হয়, এই মৃত্যু উপত্যকা কোনো মাইনষের বাচ্চার দেশ না।
কিন্তু বাঙালের চেয়ে বেশি আমি আর কী! ভারতবর্ষীয় কী দ্বিতীয় পরিচয়? ধন্দে পড়ে যাই।

পুনশ্চঃ অনুবাদের নাম বাঙালনামা নয় দেখে আমি নাখোশ। এছাড়াও তপন রায়চৌধুরী মৃত, জেনে ভালো লাগে নাই।
ধন্যবাদ পাবেঃ প্রীতমদা। জন্মদিনে ধরায়ে দিছিলো। খাওয়ানো আশু প্রয়োজন। আমি পানীয়ের দলে।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
April 18, 2021
কিছু বই পড়ার আগে অনুশীলন দরকার হয়। পড়ার অভ্যাস না থাকলে সেই সব বই পড়া যায় না৷ 'বাঙালনামা' ঠিক সেই ধরনেরই বই। লেখকের 'রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা' পড়েই আবিষ্কার করেছিলাম লেখকের লেখার এক অত্যাশ্চর্য ঢং৷ সেই একই অভিনব শৈলী অনুভব করলাম বাঙালনামাতেও, যে বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে বুদ্ধিভিত্তিক হাস্যরসের ফোয়ারা এবং সম্পূর্ণ মৌলিক এবং অনাস্বাদিত এক লেখনরীতি।
বহু পদক-পুরস্কার এবং ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ প্রাপ্ত ড. তপন রায়চৌধুরী ভারতীয় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ইতিহাসের এক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। লেখক নিজে বইটিকে আত্মজীবনী বলতে রাজি না হলেও, আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি একই সঙ্গে আত্মজীবনী, ইতিহাসগ্রন্থ এবং ভ্রমণকাহিনী।
বরিশালের এক জমিদারপুত্র তাঁর বয়ানে শৈশবস্মৃতি এত মধুরভাবে বর্ণনা করেছেন যে নিজের চোখের সামনে সেই সব দিনগুলি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। নিজস্ব ঢঙ্গে পারিবারিক ভালোমন্দ সবকিছুই অকপটে বলে গেছেন তিনি। বেড়ে উঠা, পড়ালেখা, বাবা-মা-ভাই, সংগ্রাম, স্বদেশী আন্দোলনের জন্য জেলে যাওয়া এবং নানান স্বদেশী বিপ্লবীদের কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আলোকিত করেছে পাঠকহৃদয়।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন তাঁদের পারিবারিক বন্ধু। লেখকের সমগ্র সত্তা এক অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ দেশভাগের সময়কালীন দাঙ্গা এবং তার অযৌক্তিকতা, হিন্দু-মুসলিম উভয়েরই দোষ-গুণ এবং অংশগ্রহণ তিনি একই দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেছেন।
বাবরি মসজিদ ভাঙা কিংবা তার পরবর্তীকালীন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে তাঁর প্রবল আপত্তি অনেকবারই ব্যক্ত করেছেন তিনি৷ পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম একজন নাগরিকের রাজনৈতিক সচেতনতা কতটা জরুরি!
বরিশালী বাঙাল বলে ছিল তাঁর প্রবল শ্লাঘা। নানান সময় আঞ্চলিক প্রবাদে সেগুলো অত্যন্ত কৌতুকের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী-কন্যা-নাতনীর প্রতি অতি স্নেহময়তা উৎসর্গ থেকেই আন্দাজ করা যায়, পরেও আরো অনেকখানি জায়গা জুড়ে এদের কথা আলোচিত হয়েছে।
তাঁর বিয়েটাও ��িল বেশ বৈপ্লবিক। কারণ, তাঁর স্ত্রী হাসিদেবী ছিলেন বিধবা। বিধবা বিবাহ বৈধতা পাওয়ার প্রায় ১০০ বছর পর এই বিয়ে হলেও তৎকালীন সমাজ বিয়েটি মেনে নিতে অপ্রস্তুত ছিল।
নীরদ সি চৌধুরী সম্পর্কে রায়চৌধুরীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, প্রায় আলাদা একটি অনুচ্ছেদ এই অসাধারণ মানুষটিকে নিয়ে রচনা করেছেন তিনি।
নানান জায়গা ভ্রমণের বৃত্তান্ত আছে শেষ পরিচ্ছেদে, আর অনেক ছবি রয়েছে, যেগুলো বইটিকে করে তুলেছে আরো বেশি সম্মৃদ্ধ।
'বাঙালনামা' এক অতীব সুখপাঠ্য জীবনালেখ্য। যেসব বই পাঠে ইতিহাসের প্রত্যক্ষ দর্শন এর অভিজ্ঞতা লাভ হয়, একই সাথে মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয় আনন্দের তরঙ্গ, মনন হয় ঋদ্ধ। নতুন নতুন অনেক ভাবনার উন্মেষ ঘটাতেও বাধ্য করেছে ৪০৭ পৃষ্ঠার আনন্দ প্রকাশিত বইখানা। একটি অতীব মূল্যবান পাঠ এবং সংগ্রহ।
Profile Image for Mehedi  Hasan Mahfuz.
171 reviews27 followers
May 22, 2024
বাঙালনামা!
নাম শুনে এবং দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম "বাঙলার" ইতিহাস হবে বোধকরি।কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি এটা আত্মজীবনী। নাক সিটকানো মনোভাব নিয়ে আপন মনে বললাম "অই বেডার আত্মজীবনী পইড়া আমি কি করমু? এই বেডা-ই বা কেডা?" কিভাবে কিভাবে যেনো কয়েকটা রিভিউ চোখে পড়লো, ভাবলাম পড়েই দেখি না, ক্ষতি কি!
যেই ভাবা সেই কাজ। আটঘাট বেঁধে নেমে পড়লাম।
পড়া শুরু করার পর থেকে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিলাম আর বলছিলাম 'ডোন্ট জাজ অ্যা বুক বাই ইটস কাভার'!
লেখক তপন রায়চৌধুরী একজন পুরোদস্তুর ঐতিহাসিক। ভুল না করে থাকলে খুব সম্ভবত এপার বাঙলার বরিশালে জন্ম দেখেই বোধহয় বইয়ের নাম বাঙালনামা। জন্ম এক জমিদার পরিবারে,ব্রিটিশ শাসিত বাঙলায়। জন্ম থেকে নিজের কাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে উঠে এসেছে লেখকের শৈশব, জমিদারি, সেই সাথে জমিদারির সুলুক সন্ধান, ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ, দেশভাগের সময় সপরিবারে ওপার বাংলায় পাড়ি দেয়া সহ দাঙ্গা ও লেখকের পরবর্তী পেশা জীবন। পেশায় অধ্যাপক এই মানুষটির স্মৃতির উপর দখল দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। বইটা লেখা হয় উঁনার শেষ বয়েসে, তবুও এমন বর্ণাঢ্য জীবনের কাহিনী বর্ণনায় মনে হয়না কোনো অংশে ছেদ পড়েছে। লেখকের বলার ঢংটাও একটু আকর্ষণ জাগানিয়া। প্রচুর রসবোধ আর উচ্চ হিউমার সম্পন্ন লেখার ছাপ পাওয়া যায় প্রত্যেক পাতায় পাতায়। সাহসী আর নির্ভীক লেখার তালিকায়ও বইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কখনো মনে হয় সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্য রসের ছোঁয়া, কখনো বুদ্ধিজীবীদের মতন রসকসহীন প্রবন্ধ আবার কখনো বা ভ্রমণকাহিনী বলেও অনেকের ভ্রম হতে পারে -এমনই বহুনৌকায় পা রেখে সমান্তরালে লিখে গেছেন। বইটি পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিল একটা জার্নিতে আছি, লেখকের ট্রেন ছুটে চলছে সেই বিংশ শতকের ৩০ এর দশক থেকে একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল গ্লোবাল ভিলেজে।সে জার্নি উপভোগ করেছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্যপাঠ্য বই বললে কি বাঙালনামা নিয়ে অত্যুক্তি হয়ে যাবে? সে ভার অপঠিত পাঠকের উপর ছেড়ে দেয়াই বোধহয় ভালো....!
হ্যাপি রিডিং 💙
Profile Image for Harun Ahmed.
1,650 reviews418 followers
November 15, 2024
তপন রায়চৌধুরী এমন একটা সময়ের মানুষ, যখন ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ ঘটনা ঘটে গেছে একের পর এক। খুব নীরসভাবে বললেও দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, উচ্চশিক্ষার্থে অক্সফোর্ড গমন, কর্মক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক ও কূটনৈতিক জটিলতা, ইউরোপ ভ্রমণ ও জীবনদর্শনের গল্প আমরা আগ্রহ নিয়েই পড়তাম, সেখানে রায়চৌধুরীর ভাষা স্বাদু, মজলিশি, সূক্ষ্ম রসবোধে ঠাসা। লেখকের জীবন বরিশাল, কলকাতা, দিল্লী হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিটা ধাপেই তাঁর অভিজ্ঞতা প্রচুর। ব্রিটিশ আমলের ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়িতে জন্ম নেওয়া লেখক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, কলকাতায় স্বচক্ষে ১৯৪৩ এ দেখেছেন অনাহারী মানুষের মৃত্যুর মিছিল, ১৯৪৬ এ প্রত্যক্ষ করেছেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।রায়চৌধুরীর পেশাগত জীবন ছিলো নানান উত্থানপতন ও রোমাঞ্চে ভরা। তাঁর পড়াশোনা ও কাজের বিবরণের সুবাদে ইউরোপের  মানুষ, শিক্ষাব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানা হয়ে যায় পাঠকের। ইউরোপে ৯০ দিন ঘুরে লেখকের ১০০(!!!!) পাউন্ড খরচ হয়েছে মাত্র, এ তথ্য হজম করতে সময় লাগবে আমার।
নীরদচন্দ্র চৌধুরীকে নিয়ে লেখকের বিশ্লেষণও প্রণিধানযোগ্য। রায়চৌধুরীর আত্মজীবনী ব্যক্তিগত, কিন্তু নিজের সময়, এর বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা তিনি নির্মোহভাবে ধরে রেখেছেন, এটাই তাঁর সার্থকতা।
Profile Image for Sohan.
274 reviews74 followers
July 16, 2023
তপন রায়চৌধুরি ছিলেন একজন ইতিহাসবিদ। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন যুক্তরাজ্যের উক্ষতারণে (অক্সফোর্ডের সংস্কৃত নাম আর কি 😅) উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে তিনি জন্মেছেন বাংলাদেশের বরিশালের কীর্তিপাশায় কিন্তু তাঁর বইতে তিনি লিখেছেন তাঁর জন্ম হয়েছে কুমিল্লা শহরে তাঁর মাতুলালয়ে। তাঁর শৈশব কৈশোর কেটেছে কীর্তিপাশায়। পড়েছেন বরিশাল জিলা ইশকুলে।

বাঙালনামা তাঁর একটি আত্মজীবনী। ‘বাঙালনামা’ বইটিকে আত্মজীবনী গ্রন্থ বলা হলেও একই সাথে ভ্রমণকাহিনী ও ইতিহাসও গ্রন্থ বলা যায়। লেখকের উচ্চমার্গীয় কৌতুকরসবোধসম্পন্ন লেখনির জোরে বইটাকে মনে হতে পারে একখানা হাস্যরসাত্মক নভেল। বরিশালে শৈশব কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান আর ঘটনাগুলোর বর্ণনা এতো চমৎকার করে তিনি লিখেছেন যেন চোখের সামনে ত্রিশের দশকের পূর্ববঙ্গ ভেসে ওঠে পুরনো বাংলা চলচ্চিত্রের মতো 🌿
শৈশব কিশোর পেড়িয়ে যৌবনে কলিকাতায় গমন, স্কটিশ চার্চ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন আর ঠিক সেই সময়ে দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষণ এই সব কিছু মিলিয়ে যৌবনপর্বের অভিজ্ঞতার ঝুলি তাঁর বেশ ভারি। দাঙ্গা বিষয়ক তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা একটা আলোচ্য বিষয় হতে পারে।

দাঙ্গা হাঙ্গামার পর আসে তাঁর চাকুরি ও বিলেতের উক্ষতাড়নে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যাওয়ার বিশদ বিবরণ। এরপর ন্যাশনাল আর্কাইভে তাঁর চাকুরিপ্রাপ্তি, দিল্লিবাস, সে সময়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বিষয়ে তাঁর করা কিছু ভবিষৎবাণী (এখন যা দেখছি অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে 😮 💨)
এরপর সব শেষে রয়েছে অক্সফোর্ডে শিক্ষকতা।
বইটির একদম শেষ অধ্যায়ে যত্ন করে একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তিকে নিয়ে আলাদা করে লিখেছেন। ইনি নিরদ সি চৌধুরী। এরকম ‘আত্মঘাতী’ লেখা তিনি লিখবেন আমি কল্পনাও করিনি। কতটা নির্ভেজাল আর অকপট হলে নিরদ সি চৌধুরীর ‘চারিত্রিক গুনাবলি’ নিয়ে লেখা যায় আমি তাই ভেবেছি!


Goodscript:
ভেবেছিলাম এই বই নিয়ে হয়তো আরও অনেক কিছু লিখব কিন্তু বিশেষ ব্যস্ততার কারনে বইটি শেষ করতে ও রিভিউ লিখতে দেরি হয়ে গেলো। আমার রিভিউ লেখায় যে মনোযোগ নেই সেটা অবশ্য লেখা পড়ে বোঝা যাচ্ছে।

আপনে ঘটি বাটি বাঙাল য্যাই হইয়া থাহেন, ইতিহাস আর রঙ্গরসাত্মক গইদ্য ভাল্লাগলে বুকসটা পইরতে ল্যাট করবেন না নইলে দেরি হইয়া যাইবো।
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
December 23, 2023
বাঙালনামা লেখক তপন রায়চৌধুরী রচিত বৃহৎ আত্মজীবনী। আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে বারবার অবাক করেছে লেখকের স্পষ্টবাদিতা, তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ। বাঙালনামা বইতে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত সব মানুষের কথা। যারা আদপে বাঙালির স্বর্ণযুগের কান্ডারি ছিলেন। লেখকের চারপাশে এত এত বিখ্যাত ব্যক্তি ঘোরাফেরা করছেন যে তা আপনাকে চমৎকৃত করবে। সেই সাথে সেসব মানুষগুলোকে লেখকের দেখার চোখ এবং তাদের নিয়ে বলা কথাও বেশ ভাবাবে। যেমন নীরদচন্দ্র চৌধুরী, ফজলুল হক, জীবনানন্দ দাশ,  অমর্ত্য সেন, নবনীতা দেবসন এবং গান্ধীকেও স্বচক্ষে দেখেছেন একবার। 

এসব ছেড়ে দিলেও প্রচন্ড প��রতিভাবান মানুষটির জীবনের নানা স্রোত তার জীবনের উপজীব্য। বরিশালের কীর্তিপাশা তার গ্রামের বাড়ি, পূর্বপুরুষ ছিলেন জমিদার কিন্তু তাঁর সময়ে দেখা যায় জমিদারদের দাপটের সূর্য অস্তগত। যদিও জমিদারির প্রতি তার একটা সুক্ষ্ম অনিহা দেখা যায়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও অংশ নিয়েছেন। জেল খেটেছেন তিনি এবং তাঁর পিতা দুজনেই। বাঙালনামাকে ক্ষুদ্রভাবে সেই সময়ের একটা ছোটখাটো দলিলও বলা যায়। লেখক জীবনের অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে কাটালেও শেকড়ের টান এবং বাঙালির যে গরিমা নিজের মাঝে ধারণ করছিলেন তার প্রেক্ষিতে বইয়ের নাম হয় বাঙালনামা।
Profile Image for Arnab Paul.
62 reviews119 followers
July 28, 2015

বাঙালনামা; অখণ্ড ভারতের পূ্র্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এক ঐতিহাসিকের জীবনকথা।
তপন রায় চৌধুরী, জন্ম বরিশালে, শৈশব ওখানেই, দেশ বিভাগের প্রর কলকাতায় শিক্ষাজীবন।প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজ
তারপর অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী।লেখকের এক বন্ধু বইটির পান্ডুলিপি পড়ে এর নাম দিতে বলেন বিশ্বনামা, কারণ এখানে
পাঁচটি মহাদেশের ভ্রমণকথার পাশাপাশি লেখকের অক্সব্রিজ,হার্ভার্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা
আছে।কিন্তু একই সাথে তা পূর্ববাংলার বরিশালের প্রভাবশালী এক "বাঙাল" পরিবারের কাহিনিও বটে । রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ,
তৎকালীন উন্মত্ত রাজনৈতিক হাওয়া, স্বাধীনতা আন্দোলন ,দেশভাগ, কলকাতায় দুর্দশাময় বাঙালজীবন,
অক্সফোর্ডে পড়াশোনা, পরবর্তীতে অধ্যাপনা --ধূসরবর্ণাঢ্য জীবনের সরস লেখনী। বর্ণনা বাগ্‌চাতুর্যময়,রম্যস্টাইলে। তৎকালীন বরিশালের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার যে শুভ সংস্কৃতি ছিল, তার বর্ণনা আছে।বাংলা,ইংরেজি,ফারসিসহ একাধিক ভাষায় দক্ষ মানুষজনে রাস্তায় হোঁচট লাগত এমন অবস্থা!
অভব্য বাগচারিতাকেও যে শব্দের মোড়কে কোনরূপ বিব্রত না করে,মনের রাগ-ভাব না লুকিয়ে না করে পাঠক উপযোগী করে
প্রকাশ করা যায় তা এবই না পড়লে বুঝতামনা!ভারত (বাংলাদেশেরও জন্যেও সত্য) সিভিল সার্ভিস ও শিক্ষাব্যবস্থার রূপ বৈঠকী ভাষায় পেতে হলেও অবশ্যপাঠ্য এই বই।ব্যক্তিগতজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বাঙালির পরচর্চা, হিংসা, পরের ভাতে ছাই দেয়া প্রবৃত্তি নিয়ে কথা আছে,
অপ্রিয় হলেও--সত্য যে কঠিন।
একজীবনে এর চাইতে বেশি বিখ্যাত,পণ্ডিত মানুষদের সংস্পর্শে থাকা যায়, আমার কল্পনায় আসেনা। নীরদ সি চৌধুরী,শেরে বাংলা ,অমর্ত্য সেনসহ বহু জানা-নাম না জানা (আমার) বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে ওঠাবসা করা মানুষটি ব্যক্তি হিসেবে একেবারেই প্রচারবিমুখ ছিলেন।নিজের বৈবাহিক জীবন,কর্মযোগ ,অভিজ্ঞতার এক অনন্য স্পষ্টভাষী বর্ণনা বইটিতে।
প্রায় পাঁচশো পৃষ্ঠার বই, শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মন খারাপ লেগেছিল শেষে। অন্যরকম একটা ব্যাপার বলে শেষ করি, লেখ্য!বইয়ের প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই লেখক "পাঠিকা/পাঠক খেয়াল করুন" এভাবে লিখেছেন, উল্টোটা নয়!

Profile Image for পীয়্যান নবী.
52 reviews87 followers
July 3, 2016
খুব চমৎকার আর অসাধারণ একটা বই। লেখক বিরাট মাপের স্কলার। নিঃসন্দেহে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ইতিহাসবিদদের একজন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বোর্ডে প্রথম, প্রেসিডেন্সি হয়ে অক্সফোর্ডে ডক্টরেট... সেখান থেকে ভারতে ফিরে শিক্ষকতা এবং আবার অক্সফোর্ড! এবার শিক্ষকতা এবং অবসর নেবার আগে অক্সফোর্ডের সর্বোচ্চ সম্মান ডি লিট অর্জন! শুধু এখানেই শেষ না... ভদ্রলোকের প্রজ্ঞা আকাশের মতন। অসাধারণ এক একাডেমিসিয়ান। কোন একটা কিছু নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বলে গেলেন ব্যক্তিগত ঘৃণা অপছন্দ বা পছন্দটাকে সরিয়ে রেখে!

জন্ম এই বাংলার বরিশালে... নিজেকে আজীবন সেই বাঙাল মনে করেই গিয়েছেন। সেইথেকেই বইয়ের নাম। দেশবিভাগ নিয়ে খুবই তিক্ত স্মৃতি। একেবারে অন্য একটা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেই দেশভাগটাকে দেখিয়েছেন... সাহিত্যিকদের চেয়ে আলাদা আর স্বকীয় করে!

ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার সুক্ষ সব ঝামেলা বর্ণনা করেছেন, যেসব আবার আমাদের ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহভাবে সত্য। এই অঞ্চলের মানুষদের (বিশেষ করে বাঙালী) চিন্তাভাবনা আর মনস্তত্ত্বের একটা সহজ কিন্তু ভয়ের ছবিও দেখিয়েছেন। আমাদের দেশে আজকের দিনে এইসব আরও সত্য! লেখক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হলেও অযৌক্তিক কোন ঘৃণা এই বইয়ে অন্তত চোখে পড়ে নাই। অক্সফোর্ড এবং পারিপার্শ্বিকের অকৃপণ প্রশংসা করেছেন। যদিও তার ছাত্রাবস্থায় এবং শিক্ষকতার সময়ের মাঝেই যে পাশ্চাত্যে উচ্চশিক্ষার পদ্ধতির একটা বড় পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল সেইসব নিয়েও বিশদ কথা আছে। আছে তার নিজের গবেষণার গল্প...

বইজুড়েই বিভিন্ন রকমের ভ্রমণের বর্ণনা। পৃথিবীর এই মাথা থেকে সেই মাথা... ইয়োরোপ, মধ্য এশিয়া, ভারতের জীবনযাপনের একটা তুলনামূলক চিত্রও আছে! আর আছে পৃথিবীজুড়ে তার পরিচয় হওয়া সব স্কলার, কবি সাহিত্যিক আর অসাধারণ অনেক মানুষ। তাদের প্রশংসা সমালোচনা সবই এসেছে...

সব মিলিয়ে এটাকে সত্যি বলে কোন আত্মজীবনী বলতে আমি রাজি না। এটা তার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বই। প্রতিটা বাঙালীর (হোক বাঙাল, ঘটি, বাংলাদেশী বা ভারতীয়) অবশ্যপাঠ্য বই নিঃসন্দেহে! যদিও মাঝে খানিকটা ঝুলে গিয়েছিল তারপরেও পাঁচে পাঁচ! :)

প্রিতম, ধন্যবাদ...
Profile Image for Haroon Rashid.
13 reviews1 follower
September 27, 2015
ইচ্ছে ছিল 'বাঙালনামা' নিয়ে দুচার পাতার একটি আলোচনা লিখবো। কিন্তু হাতে সময় নেই। খানিক পরেই দুই সপ্তাহের যাযাবর হয়ে যাবার ডাক আছে। তবু বইটা শেষ করে চা খেতে খেতে দুচার লাইনের তাৎক্ষণিক অনুভুতি লিখে গেলাম, কেন বইটি পড়ে আনন্দ পেয়েছি। তো....এটা মোটেও কোন রিভিউ না।

বইটা পড়তে পড়তে প্রাসঙ্গিকভাবে মনে পড়ে যাবে মিহিরসেনগুপ্তের বিষাদবৃক্ষের কথা। কেননা দুজনই বরিশাল অঞ্চলে জন্মেছেন প্রায় কাছাকাছি এলাকায় এবং দুজন দুটো শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একজন জমিদার শ্রেনীর প্রতিনিধি, অন্যজন মধ্যসত্ত্বভোগী শ্রেণীর প্রতিভূ। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদে এই দুই শ্রেণীর আর্থসামাজিক অবস্থান কি হয়েছিল সেটাও দুজনের লেখায় পেয়ে যাই। দেশভাগ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইত্যাদি বিষয়ে গ্রামীণ চিত্র পাই মিহিরসেনের লেখায়, আর তপন রায়ের লেখায় পাই শহরের চিত্র। সামাজিক অবস্থানে তপন রায় যে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই এলিট সমাজের উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিত ব্যক্তির কিছু কুৎসিত সাম্প্রদায়িক চেহারা আমাদের চমকে দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি সেই লোকদের নাম প্রকাশ করেননি মানহানির দায় এড়াতে।

আর কি কি পড়েছি বইটিতে? দেশভাগ রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বাঙালী মানসিকতা ছাড়াও আমলা/রাজনীতিবিদ/উচ্চশিক্ষিত মানসিকতা, ভারত আমেরিকা ইংল্যাণ্ডের উচ্চশিক্ষিত সমাজের মন ও মানস। এরকম বহু বিচিত্র বিষয়ের সমাহার বইটিতে।

তিনি এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেছেন বলে কোলকাতার বাঙালী সমাজে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল তাতে অনেক প্রগতিশীল বলে পরিচিত মানুষের মুখোশ খসে পড়ে আমাদের চোখের সামনে। কিন্তু আবারো দুর্ভাগ্য তিনি অনেকের নাম প্রকাশে বিরত থেকেছেন।

তাঁর অক্সফোর্ড ডিগ্রী নেবার পরে ইণ্ডিয়ান আর্কাইভস, ইণ্ডিয়ান স্কুল অব ইকোনোমিকস এবং দিল্লী বিশ্ববিদ���যালয়ে চাকরী করা নিয়ে ঘটিত বিচিত্র সরস/বিরস ঘটনাবলী পড়ে আনন্দ, বেদনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শুধু তাই না বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান বিচিত্র রীতিনীতি যা আমার মতো অভাজনদের কোনকালেই জানা ছিল না, সেই তথ্যগুলোর বর্ননা আনন্দিত করেছে বিশেষভাবে।

বইটির এক চমৎকার বৈশিষ্ট্য হলো তপন রায় চৌধুরীর আপাতঃ নির্লিপ্ত সরস গদ্য। এই গদ্য পাঠককে টেনে রাখে, পড়তে পড়তে কোথাও মনে ���য় না থেমে যাই।

একটি তথ্য জেনে চমৎকৃত হয়েছি। তপন রায় চৌধুরীর বাবা অমিয়কুমার রায় চৌধুরীকে পুলিশ রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহনের কারণে তাঁর বরিশালস্থ গ্রামের বাড়ি (কীর্তিপাশা) থেকে গ্রেফতার করেছিল ১৯৪২ সালে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বৃটিশ সরকারের যে অভিযোগ সেটাকে দুঃসাহসীভাবে নাকচ করে দিয়েছিলেন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত এক বিচারক। সেই বিচারক হলেন চট্টগ্রামের শিল্পপতি এ কে খান। অনেকেই জানেন একে খান চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি লিখেছিলেন। নিজের শহরের মানুষ বলেই আনন্দটা বাড়তি লেগেছে। আরেকটি জিনিস পড়েও খুব ভালো লেগেছে। কক্সবাজার নিয়ে তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতি। সেই স্মৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন যদি স্বর্গ বলে কিছু থাকে, তার পরে পৃথিবীতে একটিই স্থান আছে সেটি কক্সবাজার। এই পৃথিবীতে পাহাড় সমুদ্র অরণবেষ্টিত সৌন্দর্যের এত অপূর্ব সম্মিলন তিনি নাকি আর কোথাও পাননি। কথাটা আমি আগে সলজ্জভাবে ভাবতাম, এখন তাঁর সমর্থন পেয়ে আরেকটু উচ্চকিত হতে পারি। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!!

[তবু এমন দেশ ছেড়েও আমরা বিদেশ বিভুঁইয়ে বের হই। যেখন আমি যাচ্ছি খানিক পর। আপাততঃ এখানেই বইপাঠপ্রতিক্রিয়া সমাপ্তি।]
Profile Image for Anupam.
3 reviews4 followers
August 21, 2016
বেশ কিছুক্ষণ ধরে আপনি চেষ্টা করছেন একটা লেখা দাঁড় করাতে, কিন্তু পারছেন না। একটা বই পড়তে গিয়ে কিংবা পড়া শেষে যে তৃপ্তি আর আনন্দের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, আপনি চান না আপনারই লেখা অকিঞ্চিতকর রিভিউর কারণে তা বরবাদ হয়ে যাক।
এই হল ‘বাঙ্গালনামা’ পড়ে আমার দশা। দু-একজনের আলোচনা দেখলাম, তারা আমার মনের কথাগুলোই যেন বলেছেন।
তাও দুটো কথা বলি...

কীর্তিপাশার শৈশব থেকে শুরু করে অবসর-পরবর্তী ভ্রমণের দিনগুলো পর্যন্ত ছোটবড় ঘটনাপঞ্জী যে কৌশলে আত্মজীবনীতে লিপিবদ্ধ করেছেন, তাতে মনে হয় তপনবাবু যেন আশৈশব একজন ইতিহাসবিদ। পাণ্ডিত্য আর রসবোধের সেতুবন্ধন লেখকের শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা, আমলাতন্ত্র, বাঙ্গালিসমাজে পরচর্চা ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও সমালোচনাকে সুখপাঠ্য করে তুলেছে। তপনবাবুর শিক্ষাজীবন আর কর্মজীবন ঈর্ষণীয়; তবে তার চাইতে বেশি আচ্ছন্ন করেছে তার যাপিত জীবন। জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার পেছনে যেখানে যুক্তির আশ্রয় নিয়েছেন, সেগুলো যেমন পুরোপুরি যৌক্তিক মনে হয়, আবেগতাড়িত সিদ্ধান্তগুলোও যেন একেবারেই নির্ভুল। এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি যা জিজ্ঞাসা করে এযুগে কারো কাছ থেকে পাওয়ার আশা রাখি না।
হালিখানেক ভাষা রপ্ত করে হরেকরকম জাতের মানুষের সাথে নিমেষে সখ্যতা পাতানো আপাতদৃষ্টে কসমোপলিটন ভদ্রলোক মনেপ্রাণে সারাজীবন একজন ‘বাঙ্গাল’ ছিলেন; একবারের জন্যেও উল্টোটা সন্দেহ করার সুযোগ দেননি।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,759 reviews357 followers
July 23, 2025
তপন রায়চৌধুরীর বাঙালনামা এক নিখুঁতভাবে গাঁথা আত্মজৈবনিক জুঁইফুলের মালা — যেখানে স্মৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি আর রসবোধ মিলেমিশে এক অদ্ভুত জীবনচিত্র হয়ে ওঠে।

বইটি শুধু একজন বাঙালির বেড়ে ওঠার গল্প নয়, বরং একটি গোটা জাতিসত্তার মনস্তত্ত্বের আত্মদর্শন। ইংরেজি সাহিত্যের প্রফেসর হিসেবে লেখকের ন্যারেটিভ ভঙ্গিমা মিশেছে আত্মনিরীক্ষণমূলক ভঙ্গিতে, কিন্তু একটুও ভারী হয়ে ওঠে না—বরং পাঠক একপ্রকার খিলখিল হাসি আর হালকা বিষণ্ণতার মিশ্র আবেশে নিমজ্জিত হয়।

এই বই পড়তে গিয়ে আমার নিজের শৈশবের সঙ্গে অসংখ্য সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছিল। ডায়মন্ডহারবার রোডের ধারে কাঁচা আমের মতো ছেলেবেলা, পাশের বাড়ির কাকিমার সাদামাটা চা-তেলেভাজার ঘ্রাণ, কিংবা ক্লাস ফাইভে 'বইমেলাকে' প্রথম দেখা—সব যেন বইটির পাতায় পাতায় ফিসফিস করে কথা বলে ওঠে।

তপনবাবুর লেখায় এক দারুণ আত্মপরিহাস আছে, কিন্তু কখনোই ঠাট্টায় আত্মপরিচয় হারিয়ে যায় না। বাঙালনামা নিছক স্মৃতিকথা নয়—এ এক জাতিস্মর। ইতিহাসের রোদচশমা পরে দেখা সংস্কৃতি, ভাষা ও শ্রেণিচেতনার চলমান বিবর্তন।

শেষ করতে গিয়ে মনে হয়, এই বই বাঙালির ঘরে ঘরে থাকা উচিত। ঠিক যেমন পুরোনো ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখা দাদুর চিঠি—যেগুলো মাঝে মাঝে বের করে পড়লেই হৃদয়টা নরম হয়ে যায়।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
September 7, 2017
* প্রথম ২০০পাতা অসাধারণ, পরের ১৫০পাতা চলে চলে , শেষের ৫০পাতা মোটামুটি।

* লেখকের লেখার ধরণ পছন্দ হয়েছে, অনেক সুন্দর বর্ণনা। দেশভাগ নিয়ে কষ্টের কথাগুলো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে তাঁর অবস্থান, নিজের শিক্ষাজীবন, কর্মজীবনের কষ্টের বা সুখের বর্ণনা।

* ব্যক্তিগতভাবে বা পারিবারিক জীবন আর ভ্রমণের বর্ণনা মনঃপুত হয় নি ...
Profile Image for Sujan.
106 reviews42 followers
November 3, 2015
১. শেষ কবে আত্মকথন পড়েছি মনে পড়ে না। কথাসাহিত্যের বাইরে সাধারণত আমার কিছু পড়া হয় না, কদাচিৎ নন-ফিকশন পড়লেও দর্শন-বিজ্ঞান বা সাহিত্য সমালোচনার ভিড়ে আত্মকথন সেই পড়ার তালিকায় অগ্রাধিকার পায় না বললেই চলে। কোন ব্যক্তিবিশেষের জীবনের কাহিনী জানার কৌতূহল থেকে কোন নতুন বিষয়ে কিছু জানার আগ্রহ বেশি হওয়ায় আত্মকথন আমাকে এমনিতেই খুব একটা আকর্ষণ করে না। আত্মকথনের প্রতি স্বভাবজাত এমন বৈরী ভাব থাকার পরেও কোন দৈবের অনুগ্রহে আমাদের বরিশালের বাঙাল শ্রীযুক্ত তপন রায়চৌধুরীর আত্মকথন ’বাঙালনামা’ পড়া হয়ে গেল।

২. মূল আত্মকাহিনী শুরু করার আগে অনেকটা কৈফিয়তের ভঙ্গিতে কথক বইয়ের নামকরণের পেছনের কাহিনী শুনান। তার এক বন্ধু তাকে বইটির নাম রাখতে বলেছিলেন ’বিশ্বনামা’; রায়চৌধুরীর সমগ্র বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়ানোর কথা মাথায় রাখলে এহেন নামকরণকে ঠিক অযৌক্তিক বলা যায় না। কিন্তু লেখকের দাবি সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ালেও ভেতরের দস্যি বাঙালটাকে তিনি কখনোই ছাড়াতে পারেননি, তাই তার আত্মকথন শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় এক বাঙালের জীবন ও বিশ্ব অভিজ্ঞতা রোমন্থনে। তার এই প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্বেরই এক এক্সটেনশান। তার পূর্বে অনেক বাঙালের নিজের বাঙাল পরিচয়কে অস্বীকার করা এবং এর বিপরীতে সংখ্যায় অত্যল্প বাঙালের নিজের বাঙাল পরিচয়ে গর্ববোধ করা এবং তা সরবে প্রচার করার ইতিহাস স্মরণে রাখলে বুঝতে পারি কেন রায়চৌধুরীকে তার বইয়ের বাঙাল নামের কৈফিয়ত দিতে হয়।

৩. আজকের এই অসহিষ্ণুতার যুগে তপন রায়চৌধুরীদের মত সহিষ্ণুদের জীবনকাহিনী বোধ করি পড়া উচিত সকলের। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার আচরণ ও সিদ্ধান্তে পরিণত যুক্তিবোধ, এবং বিভিন্ন মানুষ সম্পর্কে তার নিজস্ব পরিশুদ্ধ বিচারবিবেচনা- এসবকিছুই আমাদের কালে এবং স্থানে বেশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। দীপনের বাবার চরম হতাশবোধ থেকে বিচার চাওয়ার পরিবর্তে সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার প্রার্থনা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা এক সন্তানহারা পিতার আকূল মিনতি হিশেবেই থেকে যাবে যদি না আমরা রায়চৌধুরীর মত সহিষ��ণু, উদার এবং সংস্কৃতিমনা হয়ে উঠতে পারি।

৪. পূর্ব বাঙলার নদী-খাল-বিল এর কিনার ধরেবেড়ে উঠা বাঙালদের জীবনে চলার পথে তপন রায়চৌধুরীর এই আত্মজীবনী এক আলোকবর্তিকার মত কাজ করতে পারে। শেকড়ের সাথে তীব্র সম্পর্কের পাশাপাশি বিশ্ব মানবতার সাথে গভীর সম্পৃক্ততাবোধ- এই দুইয়ের মণিকাঞ্চণ যোগ ব্যতীত বর্তমানের অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব; বলা বাহুল্য, রায়চৌধুরীর মধ্যে এই দুইয়ের অস্তিত্বই অবলীলায় আবিষ্কার করা যায়। এই দুইয়ের সাথে তীক্ষ মার্জিত রসবোধ যুক্ত হয়ে তাকে এমন এক উচ্চতায় নিয়েছে যে তাকে ‌‌'আদর্শ বাঙাল’ বলে গড় হয়ে প্রণাম ঠুকে দেওয়ার ইচ্ছে হয় প্রায়!
Profile Image for Rajat Suvra Partha.
10 reviews11 followers
December 12, 2017
ঘুমঘুম চোখে দৌড়ে-লাফিয়ে সিড়ি ভেঙে পৌছলাম ঠিকই তবে মিটিং-ফিটিং ততক্ষণে প্রায় শেষ, এর ওর অহেতুক চাহুনি আমি বরাবরই অগ্রাহ্য করি, আমি লাস্টবেঞ্চ। হঠাত শুনি অতীব শুদ্ধতায় বিশ্বাসী জনৈক মধ্যবয়সী সদ্য পড়া কোন বইয়ের পাতা উল্টে খাঁটি বরিশাইল্যায় কিছু আউড়ে গেলেন। ঘুম টুম আর অফিস ডেকোরাম ভেঙে ততক্ষণে আমি হো হো হো করায় ফার্স্টবেঞ্চ। এরপর দীর্ঘ বিরতি, আমার সংকটাকীর্ণ স্মৃতিশক্তি বরাবরের মতই বিশ্বাসঘাতক। তাই বাধ্য হয়ে পড়ুয়া বন্ধুই কোন বিকেলে দোকানে নিয়ে চিনিয়ে দিলেন এই বরিশাইল্যা ভদ্রলোককে। এরকম লেখা পড়ার অভ্যাস তেমন নেই, তাই বেশ সাহস নিয়েই আত্মকথা পড়তে শুরু করলাম। তবে এই ভদ্রলোকের অসাধারণ রসবোধ জীবনস্মৃতিকেও একরকম সুখপাঠ্য উপাখ্যান বানিয়ে দিলো। শুরুর দিকটা আমি একটু বেশিই গোগ্রাসে গিলেছি, হয়ত ৪৬ এর দাঙা আর ৪৭ এর সময়টা নিয়ে কী লেখা সেটা দেখবার জন্যই তবে সেই শুরুর অংশটাই মনে দাগ কেটেছে অত্যন্ত তীব্রভাবে। ওইদিকে এই ভ্রমনবিলাসী বাঙালের দেশে বিদেশের স্মৃতি তার লেখার গুণে মনে করিয়েছে মুজতবা আলীর ভ্রমণকাহিনী। এই স্মৃতিকথা ধার্মিক-প্রগতিশীল-আমি-তুমি-বাম-ডান-রাজা-উজির-নেতা-সঙ কার্যত আমাদের বাঙালী মানসকে এত্ত দুর্দান্তভাবে চিনিয়ে দিয়েছে যে এইক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকেই যথাযথ (১০০ তে ১০০) বললেও কম বলা হবে। সবমিলিয়ে এই স্মৃতিকথাকে শুধু লেখকের রসবোধ আর লেখনীর মিশেলে বেশ সুখপাঠ্য কয়েকশ পাতা ভাবাটাও বিরাট রকম ভুলই হবে। অপ্রয়োজনীয় স্বার্থপর রাজনীতি থেকে আমেরিকান আর ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়, বাদ যায়নি কোন কিছুই লেখকের যুতসই সমালোচনা থেকে। ইতিহাস সচেতন লেখকের চমতকার জীবনদর্শন আর অসাধারণ ধীশক্তির প্রকাশও এ স্মৃতিকথা জুড়ে। উপরি পাওনা হিসেবে আছে অসংখ্য বিখ্যাত ব্যাক্তিদের স্মৃতি আর বিখ্যাত সব জায়গায় কত বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার বিবরণ। সব মিলিয়ে এ লেখা আমার মত নিরীহ কুয়োর ব্যাঙের জন্য একরকম বিনে টিকেটে আকাশ দেখার ব্যবস্থা। সেজন্য লেখক এবং তার স্মৃতিশক্তিকে ধন্যবাদ।
Profile Image for Masud Khan.
87 reviews17 followers
February 24, 2017
একই সাথে ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী এবং আত্মজীবনী পড়লাম। সুখপাঠ্য বই।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
November 28, 2025
দুর্দান্ত!

আত্মজীবনী যারা পড়েন বা পড়তে চান তাদের সকলের জন্যই অবশ্যপাঠ্য।
Profile Image for Suranjana.
73 reviews16 followers
June 3, 2017
বইটা পড়তে শুরু করে যে ভাল লাগা দিয়ে মন ভরে উঠেছিল, সেই ভাল লাগা নিয়েই পড়া শেষ হোল। সাথে বাড়তি পাওনা আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত এক বিচিত্র অনুভূতি, আর লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা।
বইটার ভাষা বাংলা, দীর্ঘদিন বিদেশে বাস করে বিভিন্ন ভাষায় গবেষণা-শিক্ষকতা করে লেখক কেমন করে বাংলাভাষার এমন মিষ্টি, ছিমছাম সুন্দর, স্বাদু রূপটা ধরে রেখেছেন, ভেবে একটু অবাক হতে হয়। কিন্তু ভাগ্যিস!

খুব প্রিয় বইয়ের তালিকায় আরেকটি বই যোগ হোল। :)
Profile Image for Nishat.
60 reviews6 followers
October 2, 2021
A long read in the history lane, I must say. The tale of the daily lives from the last years of the British Empire to the very recent era of liberalization, all are covered in a brief autobiography of Prof. Chowdhury. A very personal perspective on the independence of India can be found through the description. His time in Oxford and an interesting travel monologue take the reader on a journey with Mr. Chowdhury.
Profile Image for Anirban.
301 reviews21 followers
January 13, 2022
এমন একটি বইএর পাঠ প্রতিক্রিয়া লেখা খুব সহজ। এক লাইনেই হয়ে যায়।
"যারা পড়েননি তারা পড়ে ফেলুন সময় নষ্ট না করে, আর যারা পড়েছেন তারা আবার পড়ুন"
আমিও আবার পড়ব, বছর ৫এক বাদে আবার ডুব দেবো এই বাঙালের জীবনে।
Profile Image for Ariful Hoque.
30 reviews3 followers
December 8, 2021
শুরুটা ছিল দারুণ। মনে হচ্ছিল এক নিশ্বাসে পড়ার মত বই। মাঝে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলল, কেটে গেল তাল। শেষের কয়েক অধ্যায়ে পুরনো চালে ফেরত আসলেও কেন যেন সেই আগের মত জমল না।
যা হোক, পড়বার মত একটা বই।
2 reviews1 follower
Read
June 18, 2017
অসাধারণ একটা আত্মজীবনী ! অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরীর " বাঙালনামা " ।
পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত ডঃ রায় চৌধুরী ভারতীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম খ্যাতিমান পন্ডিত !

বরিশালের কীর্তিপাশার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের সন্তান রায় চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষকতা দিয়ে , শেষ করেন অক্সফোর্ড অধ্যাপক হিসেবে । মাঝ খানে চাকুরী করেন দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্স , দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় , পেনসেভানিয়া, উইসকন্সি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যাল , অস্ট্রেলীয়া প্যারিস মেক্সিকোর খ্যাতনামা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন ।

বইয়ের শুরুতে আমাদের প্রিয় বরিশালকে আখ্যায়িত করেছেন ভদ্রজনের বাসা হিসেবে । বরিশালে যে একটা পাঠক সমাজ গড়ে উঠেছিলো যাদের সংগ্রহে ছিলো পৃথিবীর সকল নামি দামি লেখকের বই তার বিবরণ পাওয়া যায় শুরুতেই । কোথায় গেলো আজ সেই বইয়ের পাঠক ?

পুরো বইটাই একটা ইতিহাস .. 1943 সালের দূর্ভিক্ষ, ও তার রাজনৈতিক কারণ , 46 এর দাঙ্গায় কলকাতার পঞ্চাশ হাজার লোকের মৃত্যু, নোয়াখালী দাঙ্গা , দেশ বিভাগের সময়কার অনেক তথ্য রয়েছে বইতে ।

অক্সফোর্ড গবেষণার বছর , প্রখ্যাত মানুষের বর্ণনা রয়েছে এখানে ,এসেছে আমাদের কামাল হোসেন এর নাম ।

সহকর্মী হিসেবে পেয়েছেন অমর্ত্য সেন, মনমোহন সিংহ সহ ভারতের প্রখ্যাত ব্যাক্তিদের । রয়েছে তাদের বর্ণনা ।

স্থল পথে লন্ডন থেকে মুম্বই আসার চমৎকার বর্ণনা ... 91 দিনে 1100 টাকার খরচ করে বিভিন্ন শহর এর উপর দিয়ে আসা এবং শহর গুলোর বর্ণনা পড়ার সময় মনে হয় আমিও ঘুরে আসতেছি তার সাথে । সাথে জানতেছি অনেক অজানা তথ্য । পাশাদের ইস্তাম্বুলের বর্ণনা ছিলো দূর্দান্ত । ইতালি , সুইজারল্যান্ড , গ্রীক , সাইপ্রাস , ইস্তাম্বুল , বাগদাদ, বসরা..... কি চমৎকার বর্ণনা ।

বিয়ে করেছিলেন , তার থেকে সিনিয়র একজন বিধবা সুন্দরী মহিলাকে নয় বছরের একজন কন্যাসহ । সেই বিয়ে নিয়ে সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দুঃখজনক ঘটনা ভারতীয় সামাজিক ইতিহাসের দলীল হয়ে থাকবে ...
Profile Image for Aminul Haque.
122 reviews2 followers
October 16, 2025
A beautiful book. In the end, one is left with a profound regret about what could have been if Bangladesh had not been divided and the two religions could have co-existed. How far would it have gone if the two tribes could live with respect and understanding of each other, and not through constant mistrust and put-downs? That process is underway now, but at what a cost!
Dr. Roychowdhury started his young life with the pain of separation. He has tried to make some sense of it through his scholastic pursuit of history. The social, religious, and political realities of partition are so intertwined and layered that no amount of scholarly work seems to completely explain it. Instead, he narrated his own experience and came to the end with not a resolution but a detached acceptance and a profound love for the land and the people he lost.
On a personal note, this book reinforced my confidence as Creation's greatest product as a bona fide Barisali.
Profile Image for সায়েদ আশরাফ.
5 reviews3 followers
July 17, 2016
বছরের কোন এক সময়ে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া হচ্ছে। এমন সময় তপন রায় চৌধুরীর নাম উঠে। কে এই লোক? হার্ভাড়ের প্রফেসর। আর সুনীল, সন্দীপনদের গুরু। অ্যা! মনে মনে নিজের অজ্ঞতার জন্য নিজেকে আহাম্মক বলে শান্তনা দেই। কিন্তু তাতে তো আর সমস্যার কোন সমাধান হয় না। পড়তে হবে।
বইয়ের পেছনের ফ্ল্যাপে লেখা আছে ‘আত্নকথা বা আত্নচরিত নয়, পাথুরে ইতিহাস নয়। বাঙালনামা আবিস্তৃত সমাজজীবনের কাহিনি’।
ইতিহাস রচনায় একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর বক্তব্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কিন্তু তার গুরুত্বকে তো আর অস্বীকার করতে পারি না। তপন রায় চৌধুরী এখানে প্রতক্ষ্যদর্শী হয়ে ফুটিয়ে তুলেন লুপ্তপ্রায় জমিদারত্বের অন্দরকাহিনি থেকে দেশভাগের উপহাস, দাঙ্গার বীরত্ব (!) ফুটিয়ে তোলেন বন্ধুত্বের, শ্রদ্ধার, বিদ্রুপের আর প্রিয় আমায়িক খচ্চরদের গল্প।
পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে, তবে নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বলি বাঙালের সাথের এই পথচলায় পাথকে পথে হোঁচট খেতে হবে না। স্বাচ্ছন্দ্যেই চলতে পারবেন।
Profile Image for Hasnat Sujon.
36 reviews16 followers
June 23, 2020
বইয়ের গল্পে যাওয়ার আগে লেখক তপন রায়চৌধুরী সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। পিএইচডিওয়ালাদের আমি মহামানবের চোখে দেখি। ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের উপর এ লোকের শুধু পিএইচডি ছিলো তা নয়, বরং তিনি ছিলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘প্রফেসর অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি এন্ড সিভিলাইজেশন’। যারা সরস্বতীর কৃপা পেয়েছেন বেশি, তাদের লেখায় কামড় দেয়া যায় না সহজে, এটাই নিপাতনে সিদ্ধ (ব্যতিক্রম উদাহরণ নয়)। মা দুগগা বলে পড়া শুরু করলাম।

পড়া শুরু করার পর আমার নিজের ছোটবেলার গল্প মনে পড়ে গেলো। আমরা থাকতাম অজ পাড়াগাঁয়ে। ‘বিদ্যুৎ’ নামে কোন কিছুর অস্তিত্ব এই ধরণীতে আছে সে সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না। সন্ধ্যা বেলা আমার পিতাশ্রী পিদিমের আলোয় পুঁথি পড়তেন- সোনাভান, ইউসুফ জুলেখা, জঙ্গনামা। গ্রামের মানুষ তাকে ঘিরে বসে গুরুক গুরুক হুক্কা টানতেন আর পুঁথি শুনতেন। ‘বাঙালনামা’ পড়ার সময় আমার মনে হলো, পিদিমের আলোয় রায়চৌধুরী পুঁথি পড়ছেন আর আমি তন্ময় হয়ে শুনছি। যে পুঁথিতে উত্থান আছে, পতন আছে, মোড় আছে, নায়ক আছে, খলনায়ক আছে, আন্দোলন, ঘৃণা, ভালোবাসা সবই আছে। ‘বাঙালনামা’ লেখক তপন রায় চৌধুরীর আত্মকাহিনী, বরিশালের এক ভেতো বাঙালীর জীবনের ইতিহাস। লেখকের ভাষায় যদি বলি, ‘বাঙালের শ্রমের অন্নে আমার দেহ পুষ্ট, বাঙালের ভাষা আমার ভাষা, বাঙালের পবিত্র ক্রোধ আমার দুর্দিনের সহায়- আমি বাঙাল না হলে কে বাঙাল? বাঙালের দেহ বাঙালের চরিত্র নিয়ে দুনিয়ার ঘাটে ঘাটে নৌকা বেঁধেছি, অন্নের সংস্থান করেছি। আমার বাঙালের চাপরাস কেড়ে নেয় এমন ক্ষমতা কার আছে?’

বইটি শুরু হয়েছে ১৯২৬ সালে। শেষ হয়েছে ২০০০ সালের দিকে। বইটি যতটা না আত্মচরিত তার চেয়ে বেশি স্মৃতিচারণ। এবং তা একজন সংগ্রামী বাঙালীর জীবনেরই প্রতিরূপ। আর কে না জানে ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে। তপন রায় চৌধুরী একজন শিক্ষক, তার উপর ঐতিহাসিক। সুতরাং তার লেখার মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আছে ঐ সময়কার ভারত ও বাংলার ইতিহাসের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ। একে একে এসেছে বেয়াল্লিশের আন্দোলন, তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশ বিভাগ। একই সাথে উঠে এসেছে এ অঞ্চলের কিছু অসাধারণ মানুষের কথা- মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (লেখক তাঁকে ‘সোরাবার্দী’ নামে বর্ণনা করেছেন), যদুনাথ সরকার, অমর্ত্য সেন, নীহাররঞ্জন রায়, নীরদ সি চৌধুরীসহ আরো অনেকে। যাদের পছন্দ করেননা, তাদেরও রায়চৌধুরী এড়িয়ে যাননি। মার্গারেট থ্যাচার বা বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (পুরো বইয়ে ‘মোদি’ শব্দটা এসেছে ৪ বার। প্রতিবারই ‘নরাধম’ বিশেষণযুক্ত হয়ে)- এরাও এসেছেন তাঁর বর্ণনায়।

আমার অর্থোপেডিকসের অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর চৌধুরী স্যার বলেছিলেন, ‘একজন ছেলে যে কখনো প্রেম করেনি, একজন ছেলে যে কখনো কবিতা লিখেনি, একজন ছেলে যে কখনো গ্রুপিং করেনি, সে আর যাই হোক বাঙ্গালী হতে পারে না’। বাঙ্গালী প্রেমিক, বাঙ্গালী সাহিত্যিক, বাঙ্গালী খেটে খায়, কিন্তু বাঙ্গালী সময় ও সুযোগ পেলে অন্যের ক্ষতি করার সুযোগ ছাড়ে না। এবং শিক্ষিত বাঙ্গালী এই পুরো কাজটিই করে ‘জনস্বার্থে’। ২০০ বছর ব্রিটিশদের গোলামী করে ভারতীয় উপমহাদেশের লোকদের সাদা চামড়ার প্রতি যে মোহ জন্মেছে, তা আজও বিদ্যমান, কোন কোন ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের এই যুগে এর পরিমাণ বেড়েছে অনেকগুণে। সাদা চামড়াওয়ালারা কংশ রাজার বংশধর, তাদের অনুকরণ করতে পারলে কংশ রাজা না হোক, অন্তত কংশ রাজার খানসামারতো বংশধর হওয়া যাবে। ‘বাঙালনামা’ পড়ার সময় বাঙ্গালীর এই চরিত্র বিশ্লেষণের কথা আরেকবার মনে পড়বে। রায়চৌধুরী খুব স্পষ্ট ভাষায় তাঁর জীবনের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর ভালো ও মন্দের, আন্দোলন ও সংগ্রামের, ভালোবাসা ও ঘৃণার উপাখ্যান তুলে ধরেছেন।
Profile Image for Farjana Rahman.
51 reviews4 followers
June 24, 2025
বই: বাঙালনামা
লেখক: তপন রায়চৌধুরী
প্রকাশনী: আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
মূল্য: ৮০০ রূপী (বর্তমানে হয়তো ১০০০ রূপী মূল্য বৃদ্ধি করে)
ধরন: আত্মজীবনী

আত্মজীবনী বইগুলো বেশ সুখপাঠ্য এবং সারবান বলেই বিবেচিত। একধরনের অতীব আগ্রহ নিয়ে তরতর করে পড়ে যাওয়া যায়। তপন রায়চৌধুরীর "বাঙালনামা" এর থেকে খানিকটা ভিন্ন অবশ্যই। সুখপাঠ্য, সারস, সারবান অথবা পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা - এর কোনটারই ঘাটতি নেই, পার্থক্�� লেখকের লেখার স্বচ্ছল ভঙ্গিতে। আলাদা ঢংয়ে।

বাঙালনামা এমন জীবনালেখ্য যেখানে কখনো ইতিহাসের প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতার বয়ান, আবার কখনো মনে হবে ভ্রমণ কাহিনির এক আকর। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ দিয়ে এই লেখার শুরু। শেষ লেখকের অবসর জীবনের আরও পরে। তার মধ্যেই সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলি যেমন উঠে এসেছে, সাথে তুলে ধরা হয়েছে জীবন, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সেই ব্যবস্থার নানা অনিয়ম এবং ফাঁক-ফোকরের ভয়াবহ সত্য।

তপন রায়চৌধুরী একজন ঐতিহাসিক। বাঙালনামাও যে ঐতিহাসিক গুণে সমৃদ্ধ সেটা না পড়লে বোঝা যাবে না। বরং বইয়র প্রচ্ছদ, নাম এবং ঢাউস সাইজ দেখে "এটা নেহায়াতই নিরস ইতিহাসের বই" বলে ভুল ধারনা হতেই পারে। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল এক ব্যক্তি স্বত্তা তপন রায়চৌধুরী - এবং তার সেই স্বত্তাটাকে ধরতে, বুঝতে বাঙালনামা পড়ার বিকল্প কিছু নেই। পড়লেই বরং উপরের ধারনাটা বদলে যাবে বা সেই চিরায়ত বাক্যেই সহমত পোষন করা হবে, "don't judge a book by its cover".

স্পষ্টবাদিতা এবং তপন রায়চৌধুরীর লেখার নিজস্ব ভঙ্গিমা ও তার নিজস্ব দৃষ্টিকোন আত্মজীবনী ঘরনার বইটিকে যে অনন্য মাত্রা দিয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে এটাও বলা প্রয়োজন যে, বই পড়ার অভ্যেস ভালোভাবে না থাকলে বইটার যথাযথ ট্রিটমেন্ট দেয়া সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। প্রচুর গুণীজনের সংস্পর্শে যেমন তিনি ছিলেন, তাদের অনেকেরেই কথা তুলে ধরা হয়েছে বাঙালনামায়। কিছুটা কৌতুহল এবং আফসোসও এই কারনে যে, প্রগতিশীলতার মুখোশ পড়া অনেক গুণীজনের মুখোশের উন্মোচনের কাজও তিনি করেছেন যেটা নাম অনুল্ল্যেখ করে।

কিছু বই কয়েকবার পড়লেও পুরাতন লাগে না। বাঙালনামা সেরকম একটি বই। হয়তো জীবন যদি অনুমোদন দেয় - ভবিষ্যতে বৃদ্ধকালে আবারও এই বইটা পড়ব আরও সময় নিয়ে। এবারও বেশ সময় নিয়েই পড়েছি। গেল ১ মাস ছিলাম ৪০৭ পৃষ্ঠার বইটি নিয়ে। বেশ ঘীরে ঘীরেই উপভোগ করেছি এমন রত্ন। আলাপ বড় করার ধের্য্যটুকু তাই কমতি পড়লো। যে কোন পাঠকের অবশ্যই সংগ্রহের বই তপন রায়চৌধুরীর "বাঙালনামা"।
Profile Image for Huesofwords (Bandita).
65 reviews3 followers
January 16, 2020
‌ঐতিহাসিক তপন রায়চৌধুরীর বাঙাল নামা ওনার আত্মজীবনী না হলেও উনি ব‌ইটিকে নিজের জীবনের নানা ঘটনা দিয়ে সাজিয়েছেন।
লেখকের জন্ম পূর্ববঙ্গে, অবিভক্ত ভারতবর্ষে। তিনি বরিশালের একটি জমিদার বংশের সন্তান ছিলেন। তাঁর শৈশবকাল থেকেই তিনি জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। জমিদার ঘরের ছেলে হ‌ওয়ায় সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও তিনি জমিদারি প্রথার বিপক্ষে ছিলেন।
দেশভাগ ও দেশভাগের পীড়া লেখক ও তার পরিবারকে সর্বদা তাড়া করে বেড়িয়েছে। তার ছাত্র জীবনের ঘটনাগুলি সত্যিই চমকপ্রদ যা পাঠকদের আকৃষ্ট করে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার ছাত্রাবাসের গন্ডি ছিল বৃহৎ।
তার চাকুরি জীবন ছিল রোমাঞ্চকর ও বাধা বিপত্তিতে ভরা। দিল্লির অভিলেখাগারে তিনি তার চাকুরি জীবন শুরু করেন এবং শেষ করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে। তিনি এই ব‌ইটির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা, জাতিভেদ প্রথা, শিক্ষায় রাজনীতিকরণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গভীর মতপ্রকাশ করেছেন। যেটি উল্লেখ না করলেই নয় সেটি হল লেখকের জীবন সম্পর্কে রসবোধ।

ব‌ইয়ের নাম : বাঙাল নামা।
লেখকের নাম : তপন রায়চৌধুরী।
প্রকাশনা : আনন্দ পাবলিশার্স।

পৃষ্ঠাসমূহ : ৪০৭




The information contained in this blog is for general information and or for advertising purposes only. The information is provided by BB Dairies, a property of Huesofwords. While we endeavour to keep the information up to date and correct. The admin reserves the right to change, copy or any use of the given content in this blog. Any unauthorised use of such content is prohibited and will be subject to strict legal proceedings and action.

#huesofwords #review #bookblogger #banglaboi #reading2020 #readingmymothertongue #bangaliana #bookphotography #mobilephotography #book #booklover #bibliophile #bookworm #bookstagramindia #booknerd
Profile Image for Asif Khan Ullash.
144 reviews8 followers
July 3, 2023
তপন রায়চৌধুরী পেশায় একজন ঐতিহাসিক। তিনি মূলত পরিচিত ইংরেজ শাসনামলে ভারতবর্ষের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য। গুণী এই ব্যক্তি ২০০৭ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ লাভ করেন।

বরিশালের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং দেশভাগের পরে ১৯৪৮ সালে ভারতে চলে আসেন। নিজের আত্নজীবিনীতেও ভদ্রলোক বারবার নিজের “বরিশাইল্ল্যা” আইডেন্টিটিকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছেন যা বইয়ের নামকরণ থেকেও সুস্পষ্ট।

জনরা হিসেবে এটা আত্নজৈবনিক রচনার অন্তর্ভুক্ত হলেও লেখক নিজের জীবনের সাথে সাথে তার সময়ের পারিপার্শ্বিকতা, সমাজ, ব্যাক্তিবর্গ সব সম্পর্কেই আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত ঘটনাবলী। তাই বইটিকে আমি শুধু আত্মজীবনী বলতে নারাজ। এখানে তপন রায়চৌধুরীর সময়ের, তার সমাজের একটা প্রতিফলন ও কার্যকরণ আমরা দেখি তার নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে। এই বই পড়ার সময় অমর্ত্য সেনের আত্মজীবিনী “Home in The World” এর কথা মনে পরে যাচ্ছিল, সেখানেও লেখক তার জীবনের সাথে সাথে গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের চিন্তাদর্শের সাথে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

বইটার সবথেকে আকর্ষণীয় দিক হলো তপনবাবুর স্বাদু গদ্য ও অসাধারণ সেন্স অফ হিউমার। বইটি পড়ার সময় কখনোই বিরক্ত হবার বা একঘেয়েমি আসার সুযোগ নেই লেখনীর গুণে। খুবই চমৎকার এবং উপভোগ্য একটা বই। মাস্টরিড তো অব্যশই লেখনীর গুণে মাস্টারপিসও বটে।
Displaying 1 - 30 of 43 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.