Probably one of the most emotional, touchy and nostalgic reads of mine... It took a lot of courage to read the those letters Can you imagine being the receiver of these letters?
চিঠি গুলোর শেষে চিঠি লেখকের স্থানে যখনই শহীদ দেখছিলাম মনটা ভারী হয়ে উঠছিল আর যে নামের পাশে শহীদ লেখা ছিলো না সেগুলো দেখে আপনা আপনি আলহামদুলিল্লাহ বলে ফেলছিলাম
কি অসম্ভব সুন্দর লেখনী!
প্রত্যেকটা চিঠি কতটা আবেগ আশংকা নিয়ে লেখা তা ফুটে উঠেছে
আমরা যে কতোটা ভাগ্যবান এমন গুরুজনদের পেয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মায়ের প্রতি ছেলের ভালোবাসা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা
সব ভালোবাসার, স্নেহ, শ্রদ্ধার রং লাল, গভীর এবং অফুরন্ত
চিঠি আমার খুব পছন্দের। The perks of being a wallflower পড়ে আমি ৮৫টা চিঠি লিখেছিলাম। এ বছর বেশ কয়েকটা চিঠির কালেকশন রেখেছি রিডিং লিস্টে। এ বইটা পড়তে গিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর 'কত না অশ্রুজল' প্রবন্ধের বিশ্বযুদ্ধকালীন চিঠিগুলোর অনুবাদ মনে পড়ল। দেশ ভেদে কাল ভেদে এই যুদ্ধের সময়টার যেকোন খানের চিঠির ভাষা আবেগ উৎকণ্ঠা গুলো হুবহু এক।
বাংলা, বাংলাদেশ এবং বাঙালিজাতি এই তিনটি শব্দ উচ্চারিত হলে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ শব্দটিও আসবে। সেই সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে দেশের বীর যোদ্ধারা যে সমস্ত চিঠি লিখেছেন এবং তাদের পরিবারপরিজন তাদের কাছে যেসব চিঠি লিখেছেন সে সবের সংকলন হিসাবে "একাত্তরের চিঠি"। প্রতিটি চিঠি কত আবেগ, বেদনা এবং ভালোবাসায় পূর্ণ তার তাৎপর্য শুধুমাত্র চিঠির লেখক এবং প্রাপকই বলতে পারবেন। ঘর পালানো দামাল ছেলেরা চুরি করে যুদ্ধে যোগ দিয়ে পরিবারকে চিঠি লিখেছেন। আবার কোনো কোন স্থানে পিতা তার কন্যাকে ভবিষ্যতের জন্য লিখে যাচ্ছেন রণস্থল থেকেই। কত মা তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন তার সংখ্যা আজও অজানা। মা সজল চোখে স্বাধীন দেশ এনে দেওয়ার জন্য ছেলেকে আকুতি জানাচ্ছেন। তাঁর দামাল ছেলেও মায়ের আবদার রাখবে বলে বাংকারে বাংকারে দিন কাটাচ্ছে। স্বামী তার প্রিয়তমা বধুকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বাংকারে শুয়ে শুয়েই প্রিয়তমাকে স্বপ্নে দেখে লিখে ফেলছেন কালিদাসের মেঘদূতে যেমন আজ্ঞাবাহ মেঘকে প্রিয়ায় খবর নিতে পাঠানো হয় তেমনই করে চিঠি। অনেক চিঠি লেখার পর হয়তো পাঠানোও সম্ভবপর হয়নি। বুকের বা পাশের যে পকেটে চিঠি ছিলো সেই চিঠিসহ পকেটটি সফেন লাল রক্তে ভরে উঠেছে। প্রতীক্ষিত মা তা ছেলের সংবাদের আশায় বসে আছেন মিথ্যা! হয়তো আরো হাজার দামাল ছেলে যুদ্ধ শেষে তাকে মা বলে ডেকে বুকে টেনে নিবে। কিন্তু তারপরেও তার চোখ তো খুঁজে ফিরবে নাড়ি ছেঁড়া বাঁধনকেই। একটা বিশেষ মিল লক্ষ করে অবাক হতে হয়, তিন চারটা চিঠিতে দেখলাম সন্তান তার মায়ের শংকা (মায়েরা বলছেন, সেইদিন আর বেশি দেরি নেই যে-দিন ছেলেরা মায়েদের কাছ থেকে চকলেটের পরিবর্তে বন্দুক চাইবে) সত্যি হয়েছেন দেখে উৎসাহ প্রকাশ করছেন। আর এভাবেই পড়ে ফেললাম অনেকের ব্যক্তিগত চিঠি। যদিও কেন যেন ব্যক্তিগত চিঠি পড়ছি না বলেই মনে হলো। মনে হয়েছে যেন সেই সংগ্রামের অংশগ্রহণকারী মানুষগুলোর স্মৃতিকথা পড়ছি। নিঃসন্দেহে বইটি মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণকারী মানুষগুলোর অথবা যুদ্ধের সাথে যুক্ত মানুষদের দলিল।
বাঙ্গালী জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের যে রক্তাক্ত অধ্যায় আছে। সেই অধ্যায়ের রক্তাক্ত সব চিঠির সংকলন, নিঃসন্দেহে এমন সংকলন আরো আরো হওয়ার দাবী রাখে। এসব আমাদের ইতিহাসের সম্পদ আর এই বইকে আমাদের রক্তাক ইতিহাসের একটি দলিল বললে বাড়িয়ে বলা হবেনা মোটেও।
"ওরা পশু। পশুত্বের কাহিনী শুনবে, মা? তবে শোনো। শত্রুকবলিত কোনো এক এলাকায় আমার এক ধর্ষিতা বোনকে দেখেছিলাম নিজের চোখে। ডেকেছিলাম বোনকে। সাড়া দেয়নি। সে মৃত। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র দেহে পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে। বাংলার শিশু ছিল তার গর্ভে । কিন্তু তবু পাঞ্জাবি পশুর হায়না কামদৃষ্টি থেকে সে রেহাই পায়নি । সে মরেছে কিন্তু একটা পশুকেও হত্যা করেছে। গর্বিত, স্তব্ধ, মূঢ় ও কঠিন হয়েছিলাম। আজ অসংখ্য ভাই ও বোনের তাজা রক্তকে সামনে রেখে পথ চলছি আমরা। মাগো, বাংলাদেশে হানাদার বাহিনীর এমন অত্যাচারের কাহিনী শুনে ও দেখে কি কোনো জননী তার ছেলেকে প্রতিশোধের দীক্ষা না দিয়ে স্নেহের বন্ধনে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারে? পারে না । প্রতিটি জননীই আজ তাঁর ছেলেকে দেবে মুক্তিবাহিনীতে, যাতে রক্তের প্রতিশোধ, নারী নির্যাতনের প্রতিশোধ শুধু রক্তেই নেওয়া যায়৷ মা, আমার ছোট্ট ভাই তীতু ও বোন প্রীতিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। পারবে না আমাদের তিন ভাই-বোনকে ছেড়ে একা থাকতে? মা, মাগো। দুটি পায়ে পড়ি, মা। তোমার ছেলে ও মেয়েকে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে ঘরে আটকে রেখো না। ছেড়ে দাও স্বাধীনতার উত্তপ্ত রক্তপথে। শহীদ হবে, অমর হবে, গাজী হয়ে তোমারই কোলে ফিরে আসবে, মা। মাগো, জয়ী আমরা হবই। দোয়া রেখো । জয় বাংলা ॥ তোমারই ‘বিপ্লব’
"আশা শুধু আমি করিনি, আশা আপনিও করেছিলেন। স্বপ্ন আপনিও দেখেছেন। কিন্তু সব আশা, সব স্বপ্ন আজ এক ফুৎকারে নিভে গেল। বলতে পারেন, এর জন্য দায়ী কে? দায়ী যারা সেই সব নরঘাতকের কথা আপনিও জানেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ওদের কথা জানে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে—Mother and Motherland are superior to heaven. স্বর্গের চেয়েও উত্তম মা এবং মাতৃভূমি । আমি তো যাচ্ছি আমার স্বর্গাদপী গরীয়সী সেই মাতৃভূমিকে শত্রুর কবল থেকে উদ্ধার করতে। আমি যাচ্ছি শত্রুকে নির্মূল করে আমার দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে । বাবা, শেষবারের মতো আপনাকে একটা অনুরোধ করব। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট সব সময় দোয়া করবেন, আমি যেন গাজী হয়ে ফিরতে পারি।"
"মাগো, আমি শুনেছি, তুমি ঘরের দরজায় এসে সবাইকে ডেকে ডেকে বলছ__ওগো,তোমরা আমার 'ইসহাক' শুন্য রাজ্য দেখে যাও।"
চিঠি আমাকে বিমোহিত করে। একুশ শতকের এতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও আমি চিঠি লিখতে ভালোবাসি। কেউ যখন আমায় চিঠি দেয় আমি উৎফুল্ল হই। একবার দুইবার করে বহুবার পড়ি।
এই বইটা একাত্তরের চিঠির সংকলন। বেশিরভাগ চিঠিই বেশ সাদামাটা। তবে এই সাদামাটা চিঠির সঙ্গেই যখন "রণক্ষেত্র থেকে লিখা" শব্দমালা যুক্ত হয় তখন এসব চিঠি আর সাধারণ থাকেনা। এগুলো হয়ে ওঠে ইতিহাসের অংশ। একাত্তরের সেই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে "আমি বেচে আছি মা। বাড়ির কথা মনে পড়ে। আমার জন্য দোয়া করো।" এটুকু অংশের মহাত্মই বিশাল। কিছু কিছু চিঠিতে অবশ্য আশেপাশের কথা উঠে এসেছে। অবশ্য প্রায় প্রত্যেকটা চিঠিতেই দেশপ্রেমের ব্যাপারটা স্পষ্ট। পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও তাদের সেই তেজোদৃপ্ত চাহুনী আমি চিঠিগুলোর মধ্য দিয়ে দেখতে পেয়েছি।
কিছু চিঠির গল্প বলিঃ একটা চিঠিতে লে. কর্ণেল নবীকে একটা রেজিমেন্ট এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার বর্ণনা রয়েছে। মেজর শাফায়াত সেই চিঠি লিখেছিলেন গুলিবিদ্ধ অবস্থায়!
আরেক চিঠিতে দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া মুক্তিযোদ্ধা ফারুক তার বাবাকে অঙ্গিকার করেছিলো যুদ্ধের ময়দান থেকে গাজী হয়ে ফিরবে। তার গাজী হয়ে ফেরা হয়নি। চিঠি লেখার কয়েকদিনের মাঝেই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন তিনি। এরকম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বেশকিছু চিঠি আছে বইটাতে। মুক্তিযোদ্ধা দুলাল নামে একজনের চিঠি তো ঠিকানাতে পৌছাতেই পারেনি। রণক্ষেত্রে তিনি যখন আহত হন(পরে শহীদ হন) তখন তার বুক পকেটে ছিলো সেই চিঠি। সেই চিঠি যখন পড়বেন কেমন লাগবে চিন্তা করুন!
একটা চিঠির প্রেরকের নামে হঠাৎ জহির রায়হানের নাম দেখে হঠাৎ থমকে গিয়েছিলাম। চিঠিগুলো পড়ার সময় বেশ আফসোস লাগছিলো এই ভেবে যে কি অসম্ভব ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল এই স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতার কতোটুকু মূল্য দিতে পারছি আমরা?
এতবছর এই ওই করে পড়া হয়নি জানিনা কেন.. খুব আগ্রহ করেই কেনা...যুদ্ধের সময় মানুষ কী ভাবত? কে ভেবেই তারা যুদ্ধে গিয়েছিল? তারা কী আমাদের মতোই ছিল? এইসব তখনকার চিন্তা আমার, মনে হয় স্কুলে পড়তাম
আজকে অনেকটা সময় নিয়ে বই শেষ করলাম, রেখে উঠতে পারিও না, অনেককিছু বুঝেও উঠতে পারিনি...
একটা চিঠিতে লেখা যে পরের মাসে হয়ত মার সাথে দেখা করতে যাবেন, উনিই সেইমাসের শেষের দিকে শহীদ হন.….পরের মাস আর আসেনি তার জীবনে....
আরেকটায় ছোট করে আঁকা মানচিত্রের ভিতরে মা লেখা...
এই মানুষগুলি যে আবেগ নিয়ে, যে চিন্তা নিয়ে দেশের জন্যে এগিয়েছেন তা হয়তো আজকে আমি চিন্তাও করতে পারব না...
পাঁচ ঘন্টা, ১২৭ পৃষ্ঠা - শুনলে মনে হয় খুব বেশি মনে হয় না কিন্তু এটার তুলনা আমি অন্য কোনকিছুর সাথে করতে পারব না...
This is a collection of letters written by freedom fighters of Bangladesh to their beloved ones in 1971.
অনেকগুলো চিঠি। যে চিঠি গুলো বার বার পড়া যায় না। আমাদের প্রজন্মের জন্য সেই সময়গুলো একটি ইতিহাস, পাঠ্য বইয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে একটি অধ্যায়। কখনও বই পড়ে কখনও বাবা মার কাছে শোনা কিছু মর্মস্পর্শী গল্প। কিন্তু, একাত্তরের চিঠি এমন একটি বই যা সেই সকল গল্পগুলোকে জীবন্ত করে তোলে।
সকল মুক্তিযোদ্ধাকে হাজার সালাম।
সুন্দর একটি উদ্যোগ নেত্তয়ার জন্য প্রথমা প্রকাশনকেও ধন্যবাদ ।
একটা দায়িত্ব শেষ হলো। প্রথম আলো ও গ্রামীণফোনের এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ। অনেকদিন ধরে পত্রিকায় ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল চিঠিগুলো সংগ্রহ করার জন্য। এমন একটা উদ্যোগ আসলেই অমূল্য। যদি সম্ভব হয় এমন উদ্যোগ আবারো নেওয়া হোক। তাতে হয়তোবা আরো কিছু রত্ন বের হয়ে আসতে পারে।
১. যুদ্ধের সময়ের চিঠিগুলো পড়তে পেরে আনন্দিত। চিঠি আর ডায়েরিটাই একমাত্র জিনিস যেখানে একজন ব্যক্তি কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা চিত্রিত হয়। ২. দুয়েকটা চিঠি পড়ে মনে হয়েছে সেগুলো জনসমাবেশের বক্তব্য। চিঠির ভাষা সাধারণত এমন হয় না। কারণ যিনি পাঠাচ্ছেন এবং যাকে পাঠানো হচ্ছে উভয়ই একই সময়ের এবং একই অবস্থার মধ্যে আছেন। রচনা লিখে, ব্যাখ্যা করে তা পরিস্কারের প্রয়োজন হয় না। ৩. একটা চিঠিকে চিঠি মনে হয়নি। মনে হয়েছে চিঠির ফ্রেমে লেখা যুদ্ধের গল্প (১৫ জুলাই '৭১ এর তারিখে লেখা বিপ্লবের চিঠি)। এমনকি চিঠির উপরেই শিরোনাম হিসেবে দেওয়া আছে "মুক্তিবাহিনীর শিবির থেকে মায়ের কাছে লেখা ছেলের চিঠি"। প্রেরকের পরিচয়ও জানা যায়নি, প্রাপকের পরিচয়ও জানা যায়নি। তার উপর এটি যুদ্ধকালে প্রকাশিতও হয়েছিল 'জাগ্রত বাংলা' পত্রিকায়। ৪. সম্পাদকদের কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্ট। ৫. চিঠিগুলো নিয়ে অনেক কিছু করা যেত, করার সুযোগ এখনো আছে। আশা করি কেউ ভালো কিছু করবে।
মুক্তিযুদ্ধ কে জানবার জন্য অনেক বই আছে কিন্তু তার মাঝে এই বই টি আলাদা স্থান দখল করে আছে।যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা,এমনকি যুদ্ধ স্থল থেকে সেখানকার বর্ণনা কিংবা সেই সময়কার নানা পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে অনেকেই তাদের পরিবার পরিজন দের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন।সেই চিঠি গুলোর মাঝে যেগুলো সংরক্ষণ করা গিয়েছে তেমন ই ৮৬ টি চিঠির সংকলন হলো এ বই।এতে রয়েছে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে রুমী,পটুয়া কামরুল হাসান,জহির রায়হান সহ অনেক বরেণ্য ব্যাক্তিদের চিঠি।
এ চিঠিগুলো সংগ্রহের অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহন করে দৈনিক প্রথম আলো ও গ্রামীণ ফোন, যা প্রশংসার দাবী রাখে।তাদের প্রচেষ্টায় আমরা দারুণ সব তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পেরেছি।
একাত্তরের চিঠি কোনো ব্যক্তিগত চিঠির সংকলন নয়,বরং এতে বাংলার নানা জাতি, ধর্ম,পেশার মানুষের অনুভূতি নিয়ে সাজানো এক অনন্য গ্রন্থ।। এ বই এর প্রথম চিঠির লেখক শহীদ কাজী নূরুন্নবী। এবং গ্রন্থটির সর্বশেষ চিঠিটি লেখক মুক্তিযোদ্ধা নিতাইলাল হোড়।এ বই এর দুটি চিঠি ইংরেজিতে লেখা এবং ১০ টি চিঠি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমির লিখা।
প্রত্যেক টি চিঠির ভাষা বা শব্দ গুলো পাঠকের মন কে ছুঁয়ে যাবে ।৭১ এর মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে সাথে তাদের পরিবার ও কাছের মানুষ দের আত্নত্যাগ গুলো ফুটে উঠেছে এসকল চিঠি গুলোতে। এছাড়া অনুধাবন করতে পারবো তাদের দেশপ্রেম কতটা গভীর ও নিস্বার্থ ছিলো।চিঠি গুলোতে প্রকাশিত হয়েছে দেশ ও দেশের মানুষ কে পাকিস্তানি শাসকদের থেকে মুক্ত করার আত্নপ্রত্যয়।তবে বেশিরভাগ চিঠি গুলোই তাদের মাকে উদ্দেশ্যে করে লিখা।এই গ্রন্থের আরেকটি দিক যেটা মন কেড়েছে তা হলো সব গুলো চিঠির ই মূল কপি বই এর সাথে ছাপা হয়েছে,অবিকৃত রেখে,যা পাঠক কে আলোড়িত করতে যথেষ্ট।
চিঠিগুলো থেকে কিছু উক্তি তুলে ধরা হলোঃ ★"আপনার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে যদি আপনার এই নগন্য ছেলের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়, সে রক্ত ইতিহাসের পাতায় সাক্ষ্য দেবে যে বাঙালি এখনো মাতৃভূমি রক্ষা করতে নিজের জীবন পর্যন্ত বুলেটের সামনে পেতে দিতে দ্বিধা বোধ করে না।" ★ "তবে যেদিন মা-বোনের ইজ্জতের প্রতিশোধ এবং এই মাতৃভূমি সোনার বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে পারবো, সেদিন তোমার ছেলে তোমার কোলে ফিরে আসবে।"
অন��কেই এই বই কে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকট্য দলিল হিসেবে পেশ করে থাকেন।
This book holds the emotions of those freedom fighters who sacrificed their lives for an independent country, and I respect and love this book. :) আমি এই বই সম্পর্কে ভুলব না । এই বইঠি গভীরে বুঝলে, অনেক জন-ই কান্না করতে পারে।
এগুলোকে কেবল চিঠি বললে কম হয়ে যাবে। এগুলো একেকটা মানুষের দুঃখ-বেদনা,আবেগ,ভালোবাসা।কেউ বা লিখেছেন মায়ের কাছে, কেউ বা বাবা,ভাই,স্ত্রী,সন্তান অথবা প্রিয়জনদের কাছে। কেমন ছিল যুদ্ধের সময়ে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো। কেমন ছিল যুদ্ধবিদ��ধস্ত এই দেশের মানুষগুলোর মানসিক অবস্থা। মৃত্যু আসন্ন জেনেও নিজ নিজ অবস্থানে থেকে লড়াই করে গেছেন বাংলার সেই বীর যোদ্ধারা। কেউ হারিয়েছে সন্তানকে,কেউ স্বামীকে। তবুও দমে যায়নি বাঙালি।
একেকটা চিঠি পড়ছিলাম আর সে সময়ের মানুষগুলোর সাথে মিশে যাচ্ছিলাম। প্রত্যেকটা চিত্র চোখের সামনে ভাসছিল। এই পাশবিক নির্যাতন সহ্য করেও কি করে পেরেছিল তারা নিজ মনোবলে অটুট থাকতে?
৫২ বছর ধরে বাঙালির গৌরবের সাক্ষ্য বহন করছে চিঠিগুলো। অনেক চিঠি হয়তো হারিয়ে গেছে বহু আগেই। তবে যেগুলো সংগ্রহ করা গেছে সেগুলো নিয়েই করা হয়েছে বইটি।
অতিরিক্ত ভালোবাসা আমার চোখ সহ্য করতে পারে না। কথাটার আবার প্রমাণ পেলাম।
ছোট ছোট চিঠিগুলা সম্পূর্ণ ভালোবাসায় পূর্ণ। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি জমে উঠে। কিছু বই আছে যা ২য় বার পড়ার সাহস হয় না। এই বইটি তার মধ্যে অন্যতম। আসলে আমার অনুভূতি টা বুঝাতে পারছি না
বইটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। উত্তাল সময়ের ভিতর দিয়ে চললাম ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী এই বই৷ অনেকের কাছে কিছু কিছু চিঠির ভাষা, বাক্য অতিরঞ্জিত মনে হলেও সেগুলোই ঘটেছে৷ সে সময়ে দেশ নিয়ে গণমানুষের আবেগের পারদ হিমালয়ের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বইয়ের কিছুই অতিরঞ্জিত নয়-বাস্তব।
কিছু কিছু বই রেটিং এর উর্ধ্বে। এই বইটাও ঠিক তেমনি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার লেখা চিঠিগুলো যতটুকু সম্ভব সংরক্ষণ করে এখানে সম্পাদনা করা হয়েছে। আমি শুধু একেকটা চিঠি পড়েছি আর অনুভব করেছি। কি অবস্থার মধ্যে তারা ছিল, কি অবস্থাতে তারা চিঠি লিখেছে তা আমাদের কারো বোঝার সাধ্য হয়তো নেই। চিঠিগুলো এত অনুভূতি দিয়ে লেখা যে কিছু কিছু চিঠি পড়ে ভিতরে মুচড়ে উঠছিল।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আসলে কে কি অবস্থা দিয়ে গেছে, কতটা ক্ষতি হয়েছে এদেশের মানুষের তা এই চিঠিগুলো পড়লে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়। কোন অবস্থাতে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে আর কোন অবস্থায় একেকজন রাজাকার হয়েছে তা চিঠিগুলো জানান দেয়৷ আমি আগে ভাবতাম সকলে রাজাকারই স্বেচ্ছায় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। চিঠিগুলো পড়ে বুঝলাম আসলে তা নয়। কেউ কেউ নিজের গ্রাম বাঁচাতে যোগ দিয়েছে। নাহলে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অনেক রাজাকারদের বাধ্য করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে লড়াই করতে, নাহলে তাদের আর তাদের পরিবারের উপর, তাদের গ্রামের মানুষের উপর অত্যাচারের হুমকি দেওয়া হত! এগুলো আসলে আমি কখনো ভাবিনি। সত্যিই ভাবিনি!
একজন যোদ্ধা তার মাকে চিঠি দিয়েছে, সেই চিঠি ভর্তি কত্ত আবেগ! এরকম কত্ত চিঠি যে এখানে পড়লাম! পড়েছি আর ভেবেছি, বুকের পাটা আছে তাদের। মায়ের আঁচল থেকে সরে গিয়ে দেশমাতৃকার জন্য জীবন দিতে গেছে তারা! তাদের ত্যাগের জন্যই আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। হয়তো আমরা আসলে এখনও স্বাধীন না। তবুও পাক বাহিনীর থেকে দেশ মুক্ত তারাই করেছে। মাঝে মাঝে ভাবি, তাদের এই আত্মত্যাগ কি আসলেই ফলপ্রসূ হয়েছে??স্বাধীন বাংলায় কি মানুষ স্বাধীন হতে পেরেছে??
আমি সত্যি সবাইকে বইটি পড়তে বলবো। পড়ুন, ইতিহাস জানুন।
'খোকা মোরে স্বাধীন দেশ আইন্যা দে' মায়ের এই আবদার রাখতে, দেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করতে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক। নিজের প্রাণ দিয়ে লড়েছিলেন মায়ের জন্য একটা স্বাধীন দেশ, ছোট ভাইবোনদের জন্য স্বাধীন দেশের পতাকা আনতে। এ শুধু একজন নয় লাখ লাখ নুরুল হকের বীরত্বের, দেশের জন্যে আত্মত্যাগের কাহিনী। তবে কেমন ছিল পরিবার ছেড়ে অনিশ্চিতের উদ্দেশ্য এই বীরদের যাত্রা, যুদ্ধক্ষেত্রের জীবন? এগুলো জানতে পারা যায় পরিবারের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা চিঠিগুলো থেকে। এমন বেশ কিছু চিঠি নিয়ে 'একাত্তরের চিঠি'। যেসব চিঠি লেখা হয়েছিল কোন বর্ষাস্নাত রাতে, কখনো শত্রুর ঘাঁটি মুক্ত করার আনন্দ নিয়ে আবার কখনো পরাজয়ের গ্লানি ও ক্লান্ত দেহে। প্রতিটি চিঠিতে ছিল আশার বাণী। দেশ স্বাধীন হবে। আবার দেখা হোক কিংবা না হোক, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিবারকে কথা দেয়, একটি স্বাধীন দেশ তারা উপহার দিবে, তাই যেন দুঃখ না করে। তবে তারা কি জানতো স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও এই চিঠিগুলো পরে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের চোখ ভিজে উঠবে? হয়তো জানতো আর জানতো বলেই বীরদর্পে রণাঙ্গনে শামিল হয়েছিল।
কিছু চিঠি যে এতটা বেদনাদায়ক হতে পারে 'একাত্তরের চিঠি' বইটি না পড়লে বুঝতে পারতাম না। প্রতিটি চিঠি শুরু করার সময় মন প্রাণ দিয়ে চাইতাম চিঠির শেষে যেন 'চিঠিটি পাঠিয়েছেন প্রেরক নিজেই' লাইনটি থাকে। কতগুলোতে পেয়েছিলাম। হয়তো তারা এখন বেঁচে নেই তবুও এই ভেবে শান্তি লেগেছিল যে যুদ্ধ শেষে খোকা তার মায়ের কাছে ফিরে গেছে কিংবা বাবা তার ছোট্ট খুকীর কাছে। আবার কারো জন্য ঐ চিঠিটায় ছিল জীবনের শেষ চিঠি কারণ তারা যুদ্ধ করতে করতেই মৃত্যুর কোমল স্পর্শে মিশে গিয়েছিল চিরদিনের মতো। বীর সন্তানেরা মাকে স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সে স্বাধীন দেশে তাদের কোনদিনও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বেশ সময় নিয়ে আস্তে ধীরে একাত্তরের চিঠি বইটি শেষ করেছি; প্রতিটা চিঠি আলাদা করে অনুভব করতে চাচ্ছিলাম তাই! আসলে এই বই নিয়ে আলাদা করে রিভিউ দেওয়ার কিছু নেই। একাত্তরের সময়ে লেখা এক একটা চিঠি যেন বারুদ!
স্বাধীনতা বিহীন একটি প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারবে না। সেখানে যদি একটি জাতিকে তাঁর ভাষা, ঐতিহ্য, স্বকীয়তা সবকিছুর জন্য অন্যের কাছে পরাধীন থাকতে হয়, তাহলে কি তা কোন অর্থে মেনে নেয়া যায়? অসম্ভব, তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না, প্রাণে সইবেও না। “কে ভাবতে পেরেছিল ভেতো বাঙালি নামে অভিহিত, পাকিস্তান নামের অবাস্তব একটি রাষ্ট্রের জন্মের ছয় মাস যেতে না যেতেই আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠায়, মাতৃভাষার অধিকার অর্জনে সোচ্চার হয়ে উঠবে?” সেই ভাষার জন্য আত্মত্যাগ, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য হাজারো প্রাণের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ।
একাত্তরের চিঠি পত্রসংকলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন পত্র তুলে ধরা হয়েছে। বেশকিছু পত্রের বিভিন্ন অংশই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কতটা সংকটাপন্ন হয়ে এই যোদ্ধারা তাদের পরিবারকে এই পত্র প্রেরণ করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। তারা যুদ্ধ করেছে নিজের প্রাণ বাজি রেখে, কিন্তু পর��বারের প্রতি চরম মায়াকে বিসর্জন দেয়াটা যে কতটা কষ্টের তা চিঠিগুলোতে ফুটে উঠেছে। তাদের সকলের আত্মত্যাগের কাছে আমাদের হাজার শ্রদ্ধা এবং দোয়া। আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক।
আমাদের সকলের করনীয় যেন এই মহৎ আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা না যায়। আমরা স্বাধীন হয়ে যেন পাশ্চাত্য রীতির অনুসারে নিজের ভাষা, স্বকীয়তা না হারাই। বাংলা আমার মায়ের ভাষা, আমার ভাষা, এই ভাষার সাথে হিন্দি ইংরেজির সংমিশ্রণ কখনোই কাম্য নয়। আসুন এই মাতৃভাষা দিবসকে শুধু একটি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দিবস না বানিয়ে, আজীবন স্বরণ রাখি এবং কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করি সত্যিকারের শ্রদ্ধা।
This book contains a collection of letters from our liberation war period.
From the start of the book till the end, it's me either trying to hold my tears or being a sobbing mess. I felt a series of emotions. Sadness, pain, sympathy, and empathy were at their center. I was so heartbroken whenever I read the word 'শহীদ' before a মুক্তিযোদ্ধা's name. What they went through, what they did, the way they felt, the struggle, the bravery they had shown, I just want to salute them. I'm so proud of them. I feel shame and guilt for feeling relieved that I was not born at that time and grateful that because of our মুক্তিযোদ্ধা, my family was safe throughout the war. After our independence, our situation was horrible because of food deprivation and all that.
I have some complaints. I would've liked to see the letter fully not just the ⅓ of it. The publishers could've done a lot better job with this. I'm rating this book solely based on my sentiment towards the freedom fighters and the liberation war.
this book is very emotional and its able to bring tears from your eyes.After reading this book you can realise that how much people love their country more then their life and family.
সাতচল্লিশে উপমহাদেশ ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায়। পাকিস্তানের ছিল আবার দুটো অংশ। দুটো অংশের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান ছিলো অনেক। একটা অংশের অবস্থান পশ্চিমে হওয়ায় সেটা পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে আর অন্য অংশ পূর্বে অবস্থিত বলে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে স্বীকৃতি (বা পরিচিতি যেটাই বলি না কেন) পায়। এক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েও পূর্ব দিকের জনগণের বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়। তাদেরকে বঞ্চিত করা হতে থাকে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে। অকাতরে শোষণ, নিপীড়ন, অত্যাচার চালানো হয় এ অংশের মানুষদের উপর। পশ্চিম অংশের এই ব্যাভিচার জনজীবন, সাধারণ মানবাধিকার, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ছাড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মুখের বাংলা ভাষাকেও গ্রাস করে! এর প্রতিবাদে বাংলার দামাল সন্তানেরা তাদের প্রথম অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তারপর কেটে যায় দুই যুগেরও বেশি সময়। মাঝে ঘটে যায় অনেক ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিক ঘটনা সমূহ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের প্রতিটা পাতা সাক্ষী হয়ে আছে এসব ইনসিডেন্টের। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগন হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন বড় ধরনের একটা যুদ্ধ আসতে চলেছে তাদের সম্মুখে। তারপর সময়ের কাটা ঘুরে নিয়ে এলো বাংলাদেশের ইতিহাসের রক্তাত্ব আর গৌরবের সেই অধ্যায়। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সালটা উনিশশো একাত্তর। বংলা ক্যালেন্ডারে ১৩৭৭ শেষ হয়ে ১৩৭৮ এ পা রেখেছে সময়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে এলো মার্চ মাস। সাতই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এবং পঁচিশে মার্চের কালরাত্রির অতর্কিত হামলার পর পুরো পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে শুরু হয়ে গেল বিপ্লবী সংগ্রাম আর রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ। এ যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের নরপশুদের শোষণ থেকে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য, মুক্তিযুদ্ধ! এ লড়াই আমাদের খর্ব করা স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার লড়াই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম! প্রতিটা মুহূর্ত তখন কীভাবে কাটাতে হয়েছে কিংবা কীভাবে কেটেছে তা কেবল সে সময়ের মানুষেরাই জানেন! লড়াই করতে গিয়ে বাংলাদেশের একটা বিশাল অংশের জনগণকে ছাড়তে হয়েছে ভিটেমাটি। সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। নৃশংসভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন এ অঞ্চলের মা বোনেরা। পরিবার পরিজন সহ কাছের মানুষের মায়া ত্যাগ করে রণক্ষেত্রে বীরের মতো যুদ্ধ করেছেন বাংলার দাপুটে সন্তানেরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ গাজী হয়ে বেঁচে ফিরেছেন আপন ঠিকানায়, আপন মানুষদের কাছে।আবার কেউ কেউ যুদ্ধের ময়দানে গৌরবের মৃত্যু বরণ করে হয়েছেন শহীদ। কেউ কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মাতৃভূমির সাথে। এভাবে কাঠ খড় পুড়িয়ে নয় মাসের ব্যবধানে অর্জিত হয় আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জায়গা করে নেয় আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশ বাংলাদেশ!
সে সময়ে পরিবারের বা কাছের মানুষের সাথে প্রয়োজনে যোগাযোগ করার একটা শক্তিশালী মাধ্যম ছিল চিঠি। খোঁজ খবর নিতে, নিজেদের অবস্থা, অবস্থান ও হালচাল, যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থে যুদ্ধে অবস্থানরত যোদ্ধা এবং ভারতে আশ্রিত অনেককেই পরিবার, নিকটাত্মীয় কিংবা কাছের মানুষদের সাথে চিঠি আদান প্রদান করতে হয়েছে। এসব চিঠিতে উঠে এসেছে শ্রদ্ধা, স্নেহ, ত্যাগ, আবেগ, মায়া, ভালোবাসা, যুদ্ধের ভয়াবহতা, নৃশংসতা, অত্যাচার, স্বাধীনতার আশা, আকাঙ্ক্ষা, যুদ্ধের সময়ের বিবরণ... আরো কত কিছু! সবকটা লেখা পড়ে গৌরবময় একইসাথে বেদনাময় সে বছরটিতে ঘুরে আসলাম মনে হলো। বইয়ের কিছু কিছু চিঠি একেবারে মন ছুঁয়ে গেছে আমার। কয়েকবার পড়েছি এ চিঠিগুলো। বিভিন্ন সোর্স, পত্র পত্রিকা, চিঠির প্রেরক, প্রাপক আর নাহয় এদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে সংগ্রহ করে প্রথম আলো-গ্রামীণফোন এর উদ্যোগে বাছাইকৃত কতগুলো চিঠি নিয়ে এ বই প্রকাশ করা হয়েছে ‘একাত্তরের চিঠি’ শিরোনামে। মুক্তিযুদ্ধকালে লিখিত চিঠিগুলো শুধু লেখক-প্রাপকের সম্পর্কে সীমাবদ্ধ নয়; যেন রক্ত দিয়ে রচিত এই কথামালা যেমন সবার সম্পদ�� পরিণত হয়, তেমনি পরিগণিত হবে ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদরূপে। আমরা অনেকেই ইতোমধ্যে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ আর সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরি’ এর সাথে পরিচিত। এ বইগুলোতে একজনের POV থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল চিত্রিত হয়েছে। স্পেসিফিকলি বললে সে সময়ে তাদের এবং তাদের সাথে ও চারপাশে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার স্মৃতিচারণা গ্রন্থ এগুলো। আগেভাগেই বলে রাখি তুলনামূল�� আলোচনা করছি বলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে আমি এগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করছি। বইগুলোর অবশ্যই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে! তবে ‘একাত্তরের চিঠি’ তে সর্বস্তরের মানুষের POV উঠে এসেছে এক খন্ড চিঠির আদলে। এর মধ্যে জহির রায়হান, রুমি-র মতো জানা শোনাদের লেখা চিঠিও আছে। সব স্তরের মানুষদের চিঠিপত্র কালেক্ট করে বইটা প্রকাশের উদ্যোগ সত্যিই অনেক প্রশংসার দাবিদার!
এটা আমার পড়া অন্যতম সেরা একটা বই! একাত্তরের সময়টাকে আরেকটু বুঝতে চাইলে কিংবা জানতে ইচ্ছে করলে অবশ্যই বইটা পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি খুব ভালো একটা এক্সপেরিয়েন্স হবে বইটা! Happy Reading 💛
"First let me tell you I am writing to you from a liberated area of Bangladesh. The Indian Border is almost 18 miles from here. I am breathing the free air of a liberated place and by God it feels good." শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আশফাকুস সামাদ লিখেছিলেন তার ভাই তৌহিদকে দেশের কোন এক মুক্ত প্রাঙ্গন থেকে।
কিছু লেখাকে আপনি কথায় বর্ণনা করতে পারবেন না, না পারবেন স্টার দিয়ে এর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে। কারণ শব্দের চাইতে আবেগের ক্ষমতা বরাবরই বেশি। বাঙালিদের আবেগের মহাবিষ্ফোরণ তো একাত্তরেই। সেসময়কার চিঠির সংকলনকে কি আর রিভিউয়ের ফ্রেমে আটকানো যায়??
"ওকে আমার একান্ত কাছে পাই যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। নিকষ কালো অন্ধকারের একাকিত্ব তখন আর থাকে না। মনের আলোয় আমি সবকিছু দেখতে পাই। দূরকে দূর মনে হয় না।.." মুক্তিযোদ্ধা পাটোয়ারি নেসারউদ্দিন তার ভালোবাসার বার্তা স্ত্রী ফাতেমা বেগম অনুকে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন আশি উর্ধ্ব চিঠির সংকলন এই বই। বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের আর কিছু তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতাদের। তখনকার চিঠিপত্রের স্বর্ণযুগ বিবেচনায় সংখ্যাটা কমই মনে হতে পারে। তবে সেসময়কার শিক্ষার হার, চিঠি লেখার সরঞ্জামের অভাব, সর্বোপরি নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে চিঠি নষ্ট করে ফেলাও অসম্ভব না। বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন পেশার মুক্তিযোদ্ধা। লেখনীর ধরণ একেকজনের একেক রকম। তবে যা মিল তা হলো দেশ একদিন স্বাধীন হবেই এই প্রত্যয়।
"আমরা ১৭ জন। তার মধ্যে ৬ জন মারা গেছে, তবু যুদ্ধ চালাচ্ছি। শুধু তোমার কথা মনে হয়, তুমি বলেছিলে 'খোকা মোরে দেশটা স্বাধীন আইনা দে'..." যুদ্ধখানা হইতে নুরুল হকের চিঠি তাঁর মাকে।
বইয়ের একটা লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য বেশিরভাগ চিঠির প্রাপকই নারী। আরো নির্দিষ্ট করে বললে। বোধ করি সেই সময় মা আর মাতৃভূমি পরস্পরের সমর্থক হয়ে উঠেছিল। প্রায় প্রতিটি চিঠিতে উঠে এসেছে পরিবারের সদস্যদের জন্য উৎকন্ঠা, মৃত্যুভয় আর সব ছাপিয়ে প্রতিশোধের স্পৃহা। একেকজনের চিঠির একেক রকম বার্তায় ফুটে উঠেছে যুদ্ধের ত্রিমাত্রিক ছবি।
এমন একটা বই হওয়া উচিত ছিল যুদ্ধের দুই-এক বছরের মধ্যেই। কিন্তু আমরা সময় নিয়েছি ৩৮টা বছর। হয়তো আমাদের ইতিহাস বিমুখতার এও আরেক নমুনা। তাও বলি কখনো না হওয়ার চাইতে এই ভালো। এমন উদ্যোগের জন্য গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ৷ বইটা আরো বর্ধিত কলেবরে আসলে ভালো হতো।৷ এই বই শুধু পড়ার জন্য না। এটা অনুভব করার বই। পড়ুন, তারচাইতে বেশি অনুভব করুন।। এ গুড ওয়ে টু এন্ড দিজ ইয়ার!
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চিঠির সংকলন। বইটি পড়লে বুঝা যায় যুদ্ধ চলাকালীন বাঙালি জাতি কতটা শোষিত নির্যাতিত হয়েছে পাকবাহিনী দ্বারা। বেশিরভাগ চিঠিই মা কে লেখা। বিদায় দেয়ার সময় মা এর মুখ, মা এর শাড়ি এসকল বর্ণিত আছে চিঠিতে। সকল চিঠিতেই দেখা যায় বাবা মা বারণ করা সত্ত্বেও দেশের জন্য জীবন দিতে পিছপা হয়নি দেশের দামাল ছেলেরা। মা বোনদের ইজ্জত রক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে উদ্যত হয় আমাদের বাঙালি ছেলেরা। আমার সবচেয়ে প্রিয় চিঠি মেয়ে ওয়াসেকা খানের জন্য লিখে যাওয়া তার বাবার ভবিষ্যৎ চিঠি। সত্যিই চিঠিটি পড়লে বুঝা যায় দেশকে কতটা ভালবাসলে মানুষ নিজের সব বাদ দিয়ে দেশের জন্য লড়তে যায়। বাঙালি জাতি যে কতটা সাহসী এই চিঠিগুলো যেন তার প্রমাণ, তার সাক্ষী। এই চিঠিগুলো প্রমাণ যে দেশ স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র নয় প্রয়োজন অটুট মনোবল এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা।