Jump to ratings and reviews
Rate this book

বরফ গলা নদী

Rate this book
A quintessential Bangladeshi middle class story with ups & downs, nuances and tragedies of life. Very poignantly written, this is arguably Zahir Raihan’s best novel and certainly one of the milestones of contemporary Bangla literature.

96 pages, Hardcover

First published January 1, 1969

67 people are currently reading
1807 people want to read

About the author

Zahir Raihan

28 books418 followers
Zahir Raihan (Bangla: জহির রায়হান) was a Bangladeshi novelist, writer and filmmaker. He is perhaps best known for his documentary Stop Genocide made during the Bangladesh Liberation War.

He was an active worker of the Language Movement of 1952. The effect of Language Movement was so high on him that he made his legendary film Jibon Theke Neya based on it. In 1971 he joined in the Liberation War of Bangladesh and created documentary films on this great event.

He disappeared on January 30, 1972 while trying to locate his brother, the famous writer Shahidullah Kaiser, who was captured and killed by the Pakistan army. Evidences have been found that he was killed by some armed Bihari collaborators and disguised soldiers of Pakistan Army.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1,346 (53%)
4 stars
900 (35%)
3 stars
215 (8%)
2 stars
35 (1%)
1 star
21 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 287 reviews
Profile Image for Nishat.
27 reviews537 followers
August 30, 2018
পৃথিবীর প্রত্যেক গলি কিছু কবর সাজিয়ে রাখে। শরীর নয়, হাড়-মাংস নয়, মরে যাওয়া স্মৃতি আর উপড়ে ফেলা হৃদয় স্থান পায় সেখানে। এ কবরে আলো নেই, প্রাণ থেকেও প্রাণ নেই। কিছু থাকলে আছে রাতভর বৃষ্টি, প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখার বিলাসিতা, পাঁজরের ব্যথা আর জীবনকেই চেপে ধরা অন্ধকার!

তবে মাঝে মাঝে, কেউ কেউ এই কবর থেকেও ফিরে আসে, অন্ধকার ছাপিয়ে আলোর গন্ধ নিতে পারে। এরা নতুন করে বাঁচে। এদের জন্যই মনে হয় জীবন প্রত্যয়ী, জীবন সুন্দর! বাকিরা ফিরতে পারে না, বাকিদের ফিরতে হয় না।

তাস দিয়ে ঘর বানানো কঠিন। সাবধানে গড়তে হয়, একটু এদিক সেদিক হলেই, সব শেষ! অনেক কষ্টের ফল এই ঘর! কিন্তু ভাঙ্গার জন্য একটা ফুঁ-ই যথেষ্ট, একটা মাত্র ফুঁ!

মানুষগুলো তাসের সমান, অবলীলায় ধ্বংস হয়, আর উঠে দাঁড়াতে চাইলে অতীত তাদের পিছু ছাড়ে না, যদিও কেউ কেউ পেরে যায় শেষ পর্যন্ত। ‘বরফ গলা নদী’ সেই সব তাসদের নিয়েই যারা কোন এক কালের এক ঘরের সাক্ষী!

এ বইয়ে নিম্ন মধ্যবিত্তের সংগ্রাম আছে, দশ টাকার জন্য হাত পাতা আছে, ন্যায় অন্যায় এর লড়াই আছে, আত্মমর্যাদার সীমাবদ্ধতা আছে। নতুন বালিকার প্রেম, ভাঙ্গা ছাদের আর্তনাদ, দৈন্যের মাঝে প্রেমের পলায়ন, সময়ের সাথে ভালবাসার অভাব সবই আছে। একটা পরিবার আছে, তাদের ভয়, আনন্দ, বেদনার গল্প স্বচ্ছন্দে বলা আছে। জহির রায়হান দেখেই হয়তো এত সাবলীল, এত মায়াময়, এত অসাধারণ!
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Sukanta Bhattacharjee .
52 reviews11 followers
August 10, 2021
এই গল্পটা একটা অস্বচ্ছল পরিবারের। এই গল্পটা ভাঙা-গড়ার। এখানে প্রেম যেমন আছে, তেমনি বিরহও আছে। আশা যেমন আছে, অনিশ্চয়তাও আছে। বৃষ্টিতে ছাদ দিয়ে জল পরে, সেই ছাদের নিচে যারা স্বপ্নে বিভোর থাকত এটা তাদের গল্প।
আজ তারা যেমন আছে কাল হয়তো তেমন থাকবে না। জীবন এগিয়ে যাবে। সময় এগিয়ে যাবে। পরিবর্তন আসবে। বুড়ো গাছ মুড়ো হবে৷ জন্মাবে নতুন কুঁড়ি।
দিন শেষে রাত আসবে। গল্প শেষ হবে। বরফ গলে সৃষ্টি হবে বরফ গলা নদী।
Profile Image for কিশোর ইমন.
Author 40 books737 followers
January 11, 2022
﷽ পাঠপ্রতিক্রিয়া - বরফ গলা নদী (জহির রায়হান)

নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেটদলকে দেখে মনে হচ্ছিলো, ব্যাটারা খাট-পালঙ্ক নিয়ে ক্রাইস্টচার্চে চলে এসেছে। আর যাবে না। আয়েশ করে ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওখানেই। ক্রিজে এমনটাই শক্ত করে দাঁড়ালো ওদের ব্যাটাররা, আউট হবার নাম গন্ধ নেই। ৩৪৯ করলো এক উইকেটের বিনিময়ে, টম লাথাম একাই একশ’। না, স্রেফ মনোহরী উপমা দিতে বলছি না, তিনি একাই করলেন ১৮৬ এবং রইলেন নট আউট। নিউজিল্যান্ড আমাদের একেবারে ‘ধরে দেবানি’ তা আমরা সবাই বুঝতে পারছিলাম। কারণ এর আগের ম্যাচে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই দেশের মাটিতে ৮ উইকেটে হারিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে, তাক লেগে গেছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে। নিজেদের সম্মান রক্ষার্থেই যে নিউজিল্যান্ড এমন ব্রুটাল পারফর্ম করছিলো এমন নয়। বরং ওদের আবেগ আরও বড় কিছু নিয়ে, আরও গুরুতর। কিংবদন্তী ক্রিকেটার রস টেইলরের জীবনের শেষ টেস্ট ম্যাচ এটি, অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আগেই। এই ম্যাচে ওরা বাংলাদেশকে সর্বশক্তি ও আবেগের ভীষণ তোড়ে দুরমুশ পেটাবে এবার।

ঘটনা বুঝতে পেরে তুলে নিলাম জহির রায়হানের “বরফ গলা নদী”। ভাইয়া এবার দেশ থেকে এনেছে, বইটা এখনো পড়া হয়নি আমার। খেলার অবস্থা যখন তথৈবচ – এই সুযোগে বইটা পড়ে ফেলা যাক। আমেরিকায় বসে বাংলা বই পড়ার সুযোগ খুব একটা হয় না আমাদের। যতখানি হয় ওটাকে রসিয়ে রসিয়ে পড়াই নিয়ম। এদিকে জহির রায়হান আমার আদর্শিক পূর্বপুরুষ। অল্পবয়সে তুমুল লেখালেখি করেছেন, চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, চলচ্চিত্রের মানুষদের সাথেই প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে, ৩৭ বছর বয়সে খুব দুঃখজনকভাবে মারা গেলেন বিহারীদের হাতে, ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি। উনাকে নিয়ে আমি একটি বইও লিখেছি, “আগুনের দিন শেষ হয়নি” তার নাম। কাজেই জহির রায়হান আমার জন্য ভিন্ন ধরনের একটি আবেগের নাম।

গল্পটা শুরু হলো মাহমুদের ভয়ানক ট্রমা দিয়ে, বোঝা গেল মূল চরিত্রদের একজনের নাম মাহমুদ। তার পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার আছে। এটি তিনি অল্পকথাতেই প্রকাশ করলেন। এবং একারণে এই গল্পে টুইস্টের কিছু রইলো না। ওই প্রথম দুটো পাতায় পাঠক অনায়াসে বুঝতে পারবে গল্পটা কী হয়েছে। এটি উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, পাঠক যেন না বলে বসেন, “আরে বাড়া, আমি তো আগেই জানতাম।”

জ্বি, কারণ, লেখক আগেই আপনাকে বলেছেন। নেহায়েত গবেট না হলে কেউ আগে-না-জেনে থাকবেন না এই গল্পের শেষটা। এখানটায় জহির রায়হানের অ্যাপ্রোচ আমার বেশ দারুণ লেগেছে। কারণ, প্রচলিত যে পথটি অনেকে বেছে নেন, টুইস্ট-একটা-মারবেন গিয়ে শেষে, তা স্রেফ একটি যন্ত্র। টুইস্ট ধরুন একটি গল্পকে ইন্টারেস্টিং করে তোলার জন্য সম্ভাব্য ব্যবহার্য ৩০ টি যন্ত্রাংশের একটি। আজকালকার অধিকাংশ লেখক ‘টুইস্ট’খানা জবর দিতে চান, এবং বাকি ২৯ টি যন্ত্রাংশ স্পর্শই করেন না। কাজেই তার টুইস্ট যদিও বইয়ের শেষ প্রান্তে আছে, অতদূর পড়ে যেতে বড় কষ্ট হয় পাঠকের। এর থেকে টুইস্ট-মুইস্ট বাদ দিয়ে বাকি ২৯ যন্ত্রাংশের সঠিক ব্যবহার করতে পারলেই গল্পটা বেশি উপভোগ্য হতো, আমি তা করে থাকি প্রায়শঃই, এই বইতে জহির রায়হানও করলেন।

শেষটায় কী ঘটবে তা এখানে মুখ্য রইলো না আর। বরং তিনি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা ছবির মতো তুলির একেক টানে একেক দৃশ্যপট আঁকলেন। প্রধান চরিত্রটির নাম হয়তো মাহমুদ, কিংবা মরিয়ম। নিশ্চিত করে বলবার উপায় নেই। মরিয়ম এখানে সবচেয়ে বেশি সময় ও মনোযোগ পেয়েছে শব্দসংখ্যায়, অথচ আদতে কাহিনীটা অনেকটা মাহমুদকে আবর্তন করেই ঘোরে বলে মনে হওয়া বিচিত্র কিছু হবে না।

মরিয়ম, মাহমুদ, হাসিনা, খোকন, দুলু – বিশাল ফুটবল বাহিনীর এক পরিবার ফেঁদে বসেছেন এই হাসমত আলী দম্পতি। সম্ভব ওই আমলে কনডমটা তেমন অ্যাভেইলেবল ছিলো না।। এর মধ্যে মরিয়মের পেছনে ঘোরে বড়লোক মনসুর, হাসিনার পেছনে ঘোরে ক্যামেরাম্যান তসলিম – সবারই সেক্সের ধান্দা। মাহমুদের পেছনে কেউ ঘোরে না, সে সারাদিন ঘরে শুয়ে শুয়ে বিড়ি টানে। এই মাহমুদ অবশ্যই জহির রায়হান স্বয়ং, যথারীতি লেফটিস্ট এক লোক, বড়লোকদের দেখতে পারে না, কাজেই বোনের পিছে ঘুরতে থাকা মনসুরকে তার সহ্য না হওয়াই স্বাভাবিক।

এখানে মূল কনফ্লিক্ট ওটাই, শ্রেণি। বড়লোক মনসুরের বা অন্যদের থেকে কীভাবে মাহমুদ সাহায্য না নিয়ে, উপেক্ষা করে টিকে থাকছে – কারণ তার মারদাঙ্গা আত্মসম্মানবোধ; সেটা আসলে পুরো বইটার মেরুদণ্ডটা দাঁড় করিয়ে দেয়। আদতে জহির রায়হান শ্রেনিবিভেদ দেখিয়েছেন পুরোটা বই জুড়েই, চেষ্টা করেছেন একটি কন্ট্রাস্ট আঁকার। মাহমুদের ফ্যামিলি ফকিরের ফকির। একেবারে শ্রমিক শ্রেণির কাছাকাছি তাদের জাত। ওদিকে মনসুররা বড়লোকের বড়লোক। ওদিকে স্কুলশিক্ষিকা লিলি হচ্ছে একটু হায়ার ক্লাস, তবে বড়লোকের বেটি হিসেবে নয় – কর্মীসমাজের একজন হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছে। শাহাদত আর তার স্ত্রী এখানে দারুণভাবে বিদ্রোহের গোড়াপত্তন করেছে, প্রকৃতপক্ষে আমেনা, মানে স্ত্রীটিই – তিনি বড়লোক বাবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং মৃত্যুর শেষতক পর্যন্ত লড়ে যান আত্মসম্মানের জন্য। শ্রেণিশত্রুদের সাথে আর হাত মেলাননি।

মাহমুদও শ্রেনিশত্রুদের ঘৃণা করে। মরলেও সহায়তা নেয় না। ওদিকে সে পুরোদস্তুর নাস্তিকও বটে, তবে তার বাবা-মা জানেনই না সৃষ্টিকর্তা-যে-নেই তার ক্ষীণ সম্ভাবনাও থাকতে পারে, তাই তারা মাহমুদের এই নাস্তিকতার দিকটা দেখেন না। মাহমুদ কিছুটা নিহিলিস্ট, কিছুটা স্টোয়িক, কিছুটা অ্যানার্কিস্টও হয়ে থাকবে। তার বাবা-মা, পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে যা ধারণা তা থেকে এটি স্পষ্ট হয় এবং বড়লোকদের দুষ্টচাল ভাঙতে নাস্তিকত্যবাদ-নিহিলিজম-স্টয়িসিজিম-অ্যানার্কিজম একত্র না হলে হবে না।

✏ ধর্ম-সমাজ-প্রতিষ্ঠান
এই যে শোষকের জায়গাটা – তা ধর্ম, সমাজ, এবং প্রতিষ্ঠানই নিয়েছে;
﷽ ধর্ম
কিছু কিউট মানুষ ধার্মিক থেকেও ন্যায়ের আলাপ করতে চান, অথচ তারা তো সবচেয়ে বড় শত্রু বৈষম্যের শিকার মানুষের, মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা নিজেরাও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন একই চক্রে পড়ে, তাও ধর্ম আঁকড়ে বসে আছেন। চার্চে, মসজিদে দান করে, নৈতিক সমর্থন দিয়ে সমাজের বৈষম্য ও অন্যায়কে একেবারে পরোক্ষ সাপোর্ট দিয়েই যাচ্ছেন। আয়রনিটা হচ্ছে, এরা মনে করেন ধর্মে আছেন বলেই নাকি উনারা ভালো। অর্থাৎ নাস্তিক হবেন না আবার নিজেকে ন্যায়ের পথে আছেন ভাববেন, কিন্তু এটি তো সম্ভব নয়। ধর্মভীরু মরিয়মের বাবা-মা কীভাবে ‘যেখানে সুবিধা সেখানে ঢুকে যাই’ মনোভাব রাখেন তাও দেখানো হয়েছে, এটি সব ধর্মবিশ্বাসীদেরই চিত্র। তাদের মধ্যে দৃঢ়তা বলতে কিছু নেই। ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞাটাও বোঝে না অধিকাংশ।

﷽ সমাজ
তারপর আছেন সামাজিক ভদ্রলোকেরা। ট্যাক্স দেন আর মিষ্টিভাষায় আলাপ করেন, কারও ক্ষতি করেন না দৃশ্যতঃ তাই ভাবেন তারা খুব ন্যায়ের পথে আছেন। আদতে তা তো নয়, গরিবের পুটকি তারাই মারছেন। কারণ তাদের এই “আমি তো কিছুই করিনি, স্রেফ সামাজিক নর্মস দাঁড় করিয়ে রাখছি দাদা, ক্ষতি কী করেছি” ভাবটি আছে, তা-ই যে সমাজের পাছাটা মেরে দিচ্ছে, শোষণ চালু রেখেছে – তা নিয়ে সন্দেহের কোনও জায়গা নেই। এরাই সমাজের নর্মের বাইরে গেলে চেহারাটা দেখিয়ে দেন, কীভাবে তিনি আদতে সবাইকে ম্যানুপুলেট করে ভোগই করছেন, ন্যায়বিচার নয় - মনসুরের চেহারাও সমাজের নর্মের কারণেই বেরিয়ে আসে। এরা কেবল খাবে, গরিবকে বা অধীনস্ত দুর্বলকে ভোগের সামগ্রীই মনে করবে। কাজেই সামাজিক ও ধার্মিক মানুষ মাত্রই যে বাইনচোদ ও সমস্যার মুল কারণ তা প্রতিষ্ঠা হলো। মাহমুদ এজন্য বলে, এই যে বাবা-মা, ছেলে-সন্তান এসব সম্পর্কের নাম যে মুখে মুখে আমরা বলি, তাকে এত গুরুত্ব কেন দেয়া – বা এমন কিছু। এটি এক সম্পর্কের নাম ছাড়া তো আর কিছু নয়।

﷽ প্রতিষ্ঠান
প্রতিষ্ঠান কীভাবে ধ্বংস করছে অসহায়কে তাও দেখানো হয়েছে শাহাদতের উত্থান-পতনে, মাহমুদের চাকরি-কর্মে, টং দোকানের বেকারসঙ্ঘের আলাপনে। এই যে এই শ্রেণিসঙ্ঘাতের দিকটি, মাহমুদের নাস্তিক্যবাদ ও বামপন্থী মনোভাব – এটাই আসলে বইয়ের মেরুদণ্ড, জহির রায়হান এটাই বলতে ও দেখাতে চেয়েছেন তা নিয়ে আমি ৫০০% নিশ্চিত, উনাকে আবারও প্ল্যানচেট করে ডেকে আনলে তিনি একমত হবেন। এর বাইরে আর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয় এখানে, মূল্যহীন, স্রেফ পাঠককে এই শ্রেণিসঙ্ঘাতের সেন্সটা দেবার সময়ে তারা যেন ধৈর্য ধরে তাই বানানো মশলা হিসেবে একটি রসালো গল্প লিখতে হয়েছে, বইয়ের বাকি অংশ আরকি। ও মূল্যহীন।

✏ আজাইরা যত আলাপ
কাজেই বাকি বই নিয়ে আলোচনা করাটাও বা রিভিউ করাটাও মূল্যহীন, তবে বাঙালির রিভিউ যা দেখলাম, তারা ঐ অর্থহীন অংশটুকুকেই আসল গল্প ভেবেছে ও রিভিউয়ের পর রিভিউ ওই নিয়ে বকে গেছে। জহির রায়হান আজ গুডরিডস দেখলে ভাবতেন, “বইটা না লিখলেই পারতাম। বোঝালাম ‘তাল’, জনতা বুঝলো ‘বাল’।”

তো অগুরুত্বপূর্ণ ও স্রেফ মশলা হিসেবে জহির রায়হান লিখেছেন
(১) দুঃখ দুঃখ দুঃখ – গরিব গরিব গরিব – অভাব অভাব অভাব, চাকরি থাকে, চলে যায়, বেতন বাড়ে, বাড়ে না, ইত্যাদি অযথা আলাপ
(২) সেক্স সেক্স সেক্স – মনসুর চিপা দিয়ে প্রেমের চেষ্টা করে যাচ্ছে, হাসিনা সুযোগ পেলেই ফটোগ্রাফারকে হাতিয়ে দিচ্ছে, টং দোকানের রফিক পর্যন্ত এক মেয়েকে লাগিয়ে লাগিয়ে প্রেগনেন্ট করে ফেলেছে এবং এখন চেষ্টা করছে তাকে ঘাড় থেকে নামাবার ইত্যাদি
(৩) শেষ অংশের ট্র্যাজেডি – যা শুরুতেই জহির রায়হান বলেছেন বলে এখানে বলাই যেত – স্পয়লার হতো না। তবে অনেক মোটামাথার পাঠক হয়তো তা ধরতে পারবেন না, ফলে বললাম না।

ওপরের তিন পয়েন্টকে বাঙালিরা ভেবেছে আসল গল্প এবং যত্তো পিনিক তাদের ঐসব নিয়েই। তারা খুব দুঃখ-টুঃখ পেয়েছে, আবার প্রেমের অংশ দেখে গদ গদ হয়েছে। তবে আদতে গল্পটা ওটার নয়, গল্পটা যার তা যেন পাঠক গিলতে পারেন তাই জহির রায়হানকে ওসব মশলা দিতে হয়েছে।

গুডরিডসে রিভিউটি লিখতে এসেছিলাম ফ্রেশ মন নিয়ে, তবে জনগণের আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। তাদের অনেকে আবার লেখা শুরু করেছেন মরিয়মের স্ট্রেটফরোয়ার্ডনেস নাকি অবাস্তব। কারণ তাদের বাস্তবতায় এসব ঘটে না। নির্ঘাত এই প্রতিটি রিভিউয়ার নিজেরাই শ্রেণিশত্রু। এরা নারীকে অবদমিত রেখেছেন তাদের চারপাশের বলয়ে, তাই তাদের জানাই নেই নারীরাও সমান প্রগলভ। আমি অন্তত পরিচিত সব নারীকেই এমন প্রগলভ হতে দেখেছি। অর্থাৎ জহির রায়হানের সেটিংস বাস্তব। উনারা দেখেননি যেহেতু, উনারাও সেই ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন। নির্ঘাত ঘরে মা-বোনকে পর্দা করান ও রক্ষণশীল পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, নইলে মুক্তমনা পরিবেশে বড় হয়েও মনের মধ্যে অন্ধকার নিয়ে ঘুরেছেন, তাই চারপাশে সেসব মেয়েকেই দেখেছেন যারা আসলে তাদেরই হাতে বন্দিনী ও নির্যাতিতা। তারা নিজেরাই দানব। কাজেই ক্রুদ্ধ এক রিভিউ বেরিয়ে এলো।

জহির রায়হান দারুণ এই কাজটি করে আসলে পাঠকদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। দানব গোত্রের যে পাঠকরা আছেন তারা প্রেমের অংশ দেখে গদ গদ হয়ে যাবেন, দুর্দশা পড়ে আহা-উহু করবেন, এরাই তো শ্রেণিশত্রু। যদি আপনারা তা করে থাকেন, তাহলে নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হওয়ার দরকার আপনাদের আছে বলে আমি মনে করি। এখনই নেমে পড়ুন ও চারপাশটিকে পরিচ্ছন্ন করুন। শুরুটা করতে পারেন নিজের মনটিকে গোসল দিয়ে।

কিশোর পাশা ইমন ( Kishor Pasha Imon )
জানুয়ারি ১০, ২০২২
স্যান মার্কোস, টেক্সাস
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
April 27, 2024
"ছুরি দিয়ে কেটে-কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও, জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো, টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে, সফলতা আছে, হাসি আছে, অশ্রু আছে।"

জীবন বাস্তবিকই নদীর স্রোতের মতো। কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না। কিন্তু যারা চলে যায় তাদের ভোলাও যায় না। তাদের স্মৃতি বুকে নিয়ে নিজের মৃত্যুর অপেক্ষা করা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দের দুঃখের পসরা নিয়ে জীবনের সাথে জীবনের যোগ করে আমরা মৃত্যুরই প্রতীক্ষা করি। মৃত্যুর থেকে অনিবার্য আর কি আছে?তবুও মৃত্যুকে আমরা ভুলে যেতেই চাই, ভুলে থাকার মধ্যেই স্বস্তি।
জহির রায়হানকে নিয়ে কিছু আর নতুনকরে বলার নেই। ছোট ছোট সরল বাক্য, সিনেমার মতো কাহিনী বয়ে নিয়ে যান। জীবন থেকে যে শিল্প-সাহিত্যের জন্ম, তাঁর কাজগুলো এর ��্বলন্ত প্রমাণ। সবগুলো ক্যারেক্টার খুঁজতে গেলে হাজার হাজার পাবো। তবে এইভাবে তুলে ধরতে কে পারেন? একজন অতুলনীয় জহির রায়হান পারেন।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
June 19, 2020
চমৎকার!
'হাজার বছর ধরে'র পর এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস, জহির রায়হানের।
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
October 9, 2014
এটা কি পড়লাম!! উপন্যাসটির গতিবেগ ঠিক এরকম।
borof gola nodi
মধ্যবিত্ত জীবনের আর দশটা দিনের ঘটনা নিয়ে এগুতে থাকে উপন্যাস। লেখকের আঙ্গিক নিরীক্ষাও তেমন নাড়া দিতে পারছিলনা...শুধুমাত্র জহির রায়হানের গল্প বলার ঢংয়েই আটকে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কি ঘটে গেল! ... আমি বাক্যহীন ...
Profile Image for Alavi Nur - E Jannat.
35 reviews80 followers
April 24, 2021
এত্ত এত্ত এত্ত সুন্দর একটা বই! জহির রায়হানের লেখা আগেও পড়েছি। কিন্তু এই বইটার কথা সব সময় মনে থাকবে। একটা বই এত সুন্দর হয় কী করে? বেশি কিছু বলতে পারছি না। বইটা না পড়ে থাকলে পড়ে ফেলবেন। ছোট্ট একটা বই।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
April 23, 2023
বইটা যখন শেষ করেছি,বাইরে তখন জোলো হাওয়া বইছে। জানালার বাইরে লুটোপুটি খাচ্ছে আম,নারিকেল আর অলকানন্দার শাখাপ্রশাখা। কেউ যেন চট করে কমিয়ে ফেলেছে আকাশের ব্রাইটনেস। থেকে থেকে মেঘ ডাকছে। কেমন আনমনা করে দেওয়ার মতো পরিবেশ। কিন্তু তার ও আগে আনমনা করে দিয়েছেন জহির রায়হান। বাইরে ঝড় শুরু না হলেও,মনে তখন তুমুল ঝড় শুরু হয়ে গেছে। এভাবে কেন শেষ করতে হবে? কেন মরিয়ম,হাসিনাদের আরও ভালো পরিণতি হলো না? কেন ফুরিয়ে যাবে শাহাদাতদের স্বপ্ন? জহির রায়হান কেন এমন করলেন.. ...
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
January 2, 2022
সিনেম্যাটিক + রিয়েলিস্টিক = অনুভূতি কেমন হওয়া উচিৎ? ঠিক তেমনটাই। জহির মানেই অসাধারণ কিছু।
Profile Image for জাহিদ হোসেন.
Author 20 books476 followers
April 19, 2023
জহির রায়হানের বই ম্যাট্রিকে আমাদের পাঠ্য ছিল। হাজার বছর ধরে। গ্রামীণ পটভূমিকায় লেখা উপন্যাসটি অনেকেই পড়েছেন কিংবা বলা ভালো পড়তে বাধ্য হয়েছেন। হাজার বছর ধরে আমার সেরকম প্রিয় ছিল না। এরচেয়ে ইন্টারে পড়া পদ্মা নদীর মাঝি অনেক প্রিয় ছিল। প্রিয় না হলেও হাজার বছর ধরে’র কিছু কিছু চরিত্র মনে দাগ কেটে গেছে। বুড়ো মকবুল, টুনি, মন্তু, কিংবা বিয়ে পাগল আবুল-এদেরকে অনেক দিন ধরেই বয়ে বেড়াচ্ছি। নিজের বাপের নাম আবুল হওয়ায় অস্বস্তিও হতো খুব!

হাজার বছর ধরের এন্ডিংটা ছিল স্বপ্নের মতো। ‘রাত বাড়ছে। হাজার বছরের পুরনো সেই রাত।’ এই দুইটা লাইন যেন বক্সিংয়ের নকআউট পাঞ্চ। এক পাঞ্চেই কুপোকাত তাবত পাঠককুল।

হাজার বছর ধরের পর লম্বা গ্যাপ। লম্বা মানে অনেক লম্বা। সময়ের হিসেবে প্রায় বিশ বছর। বিশ বছর পর আমি জহির রায়হানের দ্বিতীয় বই পড়লাম। বরফ গলা নদী। অনেকের মতে যা জহির রায়হানের ‘শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’।

বরফ গলা নদী এক নিম্নবিত্ত পরিবারের কাহিনী। তাদের ট্র্যাজেডি, তাদের দুর্ভাগ্যের বয়ান। পরিবারের কর্তা এক ছাপোষা কেরানী। কেরানীর বিশাল সংসার। তার পাঁচ ছেলেমেয়ে। প্রচন্ড টানাটানির এক সংসার ভদ্রলোকের। নড়বড়ে বাড়িতে তাদের জীবনযাপন। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে, বৃষ্টি দিলে চুঁইয়ে পড়ে পানি। বড় ছেলে মাহমুদ, দিনদুনিয়ার প্রতি চরম বিতৃষ্ণ এক যুবক। লেফটিস্ট ভাবাপন্ন, ওপরতলার লোকেদের জন্য যার এক সমুদ্রপরিমাণ ঘৃণা ছিপি দিয়ে আটকানো থাকে সবসময়। কিছু হলেই ছিপি খুলে দেখিয়ে দেয় কতটুকু ঘৃণা সে জমিয়ে রেখেছে বয়ামে। মুখ খুললেই শুধু ধনী-গরিবের বৈষম্য, সমাজব্যবস্থার অসাম্য, দুঃখ, কষ্ট, বঞ্চনা।

সত্যি কথা বলতে কি বিরক্ত লেগেছে প্রায়ই। তবে রায়হানের সাবলীল লেখনী সেই বিরক্তিটুকু মুছে দিয়েছে। মসৃণ বর্ণনা। পড়তে সমস্যা হয় না।
রায়হান প্রথমেই গল্পের পরিণতি দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তাই পরের ধাক্কাটুকু আর প্রবল হয়ে দেখা দেয় না। তবে এন্ডিংটা যথাযথ। প্রশংসনীয়। কীভাবে গল্পে ইতি টানতে হয় তা তিনি ভালোমতোই জানতেন।

পুনশ্চঃ জহির রায়হান দেখলাম নামিয়েছে কে লিখেছেন নাবিয়েছে। অনেকটা কলকাতার লেখকরা যেভাবে লেখে। তখন বোধহয় ওটাই ন্যারেটিভ স্টাইল ছিল।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
September 27, 2021
কেরানীগিরী করে হাসমত আলী স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকেন এক ভাড়ার বাড়ীতে, যেখানে বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি পড়ে, ভেঙে পড়ার ভয়ে ছাদে উঠা থেকে বিরত থাকতে হয়। দূর্গন্ধযুক্ত যে সরু গলি দিয়ে বাসায় আসতে হয় সেখানে রিক্সা কি এটা হেঁটে আসাই কষ্ট এতোটা সরু। বড় ছেলে মাহমুদ নিজের চেষ্টায় পড়ালেখা করেছেন এখন এক পত্রিকা অফিসে চাকরি করেন, সারা রাত জেগে কাজ করে দিনে সে ঘুমায়, পরিবারের জন্যই তার এই কষ্ট। স্বপ্ন দেখার সাহসে কুলায় না আবার দেখতে গেলেও বেশীদূর আগাতে পারে না নিজেদের অবস্থানের জন্য।
মরিয়ম সে ছাত্রী পড়িয়ে কলেজের বেতন দেয়। নিজের খরচ নিজে চালায়। হাসিনা আর খোকন স্কুলে পড়ে। তাদের এখনও কোন কিছু বোঝার অবস্থায় আসেনি। দুলু এখনও ছোট।
নিজের দারিদ্রতা আর নান রকম অনৈতিক কাজ দেখে মাহমুদ বড়লোক শ্রেণির উপর তীব্র এক ঘৃনা পুষতে থাকে। পরিবারের নান চাহিদা পূরন করতে না পারার ফলে এখন কারো থেকে অনুগ্রহ নিতে তার পরিবারের লোকের কোন সংকোচ নাই। এটা মাহমুদ মানতে পারে না। নিজের পরিবারের সাথে আষ্টেপৃষ্টে থেকেও কেমন জানি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন দূরের এক মানুষ সে।

একটা পরিবার শত অভবা অনাটন এর মাঝে ও ভালবাসা দিয়ে আগলে আগলে রেখে একদিন হারিয়ে গেল অতলে টুপকরে একসাথে। নিজেরা কেউ কিছুই বুঝলো না জানলো না।
Profile Image for Urmy.
21 reviews16 followers
January 21, 2022
'বরফ গলা নদী' বইটি একটি দীর্ঘশ্বাসের বই। না, দুঃখভরা কাহিনী নয় এটি। তবে, অপ্রাপ্তির ছাপটা বেশ প্রকট। সেই অপ্রাপ্তি থেকেই কখনও এসেছে টাকার দীর্ঘশ্বাস, কখনও ভালোবাসার দীর্ঘশ্বাস, আবার কখনও অভাবের দীর্ঘশ্বাস।

মাহমুদ চরিত্রটির রয়েছে অর্থকষ্টের দীর্ঘশ্বাস। পরিবারের বড় ছেলে হয়েও শক্ত করে সংসারের হাল ধরতে না পারার ব্যর্থতা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। নিজের উপর আর সমাজের উপর ক্ষোভটা তাই বেশিরভাগ সময়ে রাগ আর আফসোস আকারেই বেরিয়ে আসে। পরিবারের প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ হয় ক্ষীণ; লুকিয়ে থাকে দীর্ঘশ্বাসের ভাঁজে।

মরিয়মের দীর্ঘশ্বাস ভালোবাসা নিয়ে। 'মানুষ কি দুবার প্রেমে পড়তে পারেনা?' এই এক প্রশ্নের হাহাকার তাকে গ্রাস করে।

হাসমত আলী পরিবারের কর্তা। পরিবারের প্রতি দায়িত্বগুলো ঠিকঠাক পালন করতে না পারায় তার মলিন মুখের আড়ালে উঁকি দেয় দীর্ঘশ্বাস।

এতো এতো দীর্ঘশ্বাসের মাঝে একটাই ভিন্ন চরিত্র হাসিনার। মেয়েটা শাড়ি পরতে ভীষণ ভালোবাসে। যাকে সামনে পায় তার কাছেই শাড়ি চুড়ির বায়না করে বসে। এই রাগ, এই অভিমান আবার মুহুর্তেই হাসিভরা আবদার তার। বইয়ে মেয়েটার প্রস্থানটাও হয় ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে। কিশোর বয়সের সৌন্দর্য এটাই। কোন জটিলতাই খুব বেশিক্ষণ জমাট থাকেনা। কল্পনা আর স্বপ্ন খেলা করে চোখের চারপাশ জুড়ে!
Profile Image for Fahim.
35 reviews47 followers
July 21, 2014







কতগুলো নাম। মরিয়ম হাসিনা দুলু খোকন সালেহা বিবি হাসমত আলী। একটা পরিবার। কত আশা। ভাল থাকার, ভালোবাসার, ভালো বাসার। স্বপ্নে বিভোর চোখ।
কিশোরী প্রেমের সলজ্জ সাধ। আদর্শের লড়াই, সত্যের লড়াই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে খাওয়ানোর তৃপ্তি। সবকিছুু শেষ। একসাথে। একরাতে।

হতবাক হয়ে যাই পড়ে। দলা পাকিয়ে কান্না উঠে আসে গলা দিয়ে। বইয়ে মুখ লুকোই, চোখের জল আটকাতে পারিনা। ঊনসত্তরের লেখা, অথচ কী ভীষণভাবে বাস্তব এখনও। শাঁখারীবাজার আকবর শাহ কুসুমবাগ সবখানেই একই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। মাহমুদ নাহয় বেঁচে যায়, সবাই কি পারে?
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
August 18, 2021
৮০'র দশকের বই, সিনেমা থেকে মানুষের লাইফস্টাইল নিয়ে ধারণা থাকলেও ৬০ এর দশকের মানুষের লাইফস্টাইল, দর্শন, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো আমার খুব একটা ধারণা নেই। এই কারণেই কিনা জানিনা, তবে জহির রায়হানের 'বরফ গলা নদী' আমার খুবই আনরিয়েলিস্টিক একটা উপন্যাসিকা মনে হলো। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত আমার দাদা-দাদী, নানা-নানি বা ঐ বয়সী মানুষগুলোর মাঝে সারাজীবনই প্রখর আত্মসম্মান বোধ দেখেছি। কিন্তু এ বইতে মরিয়মের বাবা মায়ের আচরণে তা একদমই অনুপস্থিত বলে মনে হলো। তারপর আবার একটি মেয়ে, মরিয়মের ওরকম হ্যাংলাপনাও আমার খুব একটা বাস্তবতা সম্বলিত মনে হয়নি। আর জহির রায়হানের লেখার ব্যাপারে একটা জিনিস আমি খেয়াল করেছি৷ ওনার লেখায় কখনো কখনো দু প্যারার মাঝে টাইমলাইনে দুম করে বেশ বড় একটা গ্যাপ চলে আসে যেটা তৎক্ষনাৎ বোঝা তো দূরে থাক আরো দু'চার পৃষ্ঠা না পড়লে ধরাই যায় না। এটা পাঠকের কেমন লাগে জানি না, তবে আমার মোটেও ভালো লাগেনি৷

তবে একটা জিনিস না স্বীকার করলেই না৷ তা হলো, জহির রায়হানের লেখার সাবলীলতা। এটা রীতিমত এই ২০২১ সালে এসেও মুগ্ধ হবার মত। তাহলে আজ থেকে ৫০+ বছর আগে তা যুগের চেয়ে কতটা বেশি এগিয়ে ছিলো, ভাবুন?

তবে সবমিলিয়ে বইটা থেকে আমার প্রাপ্তির চাইতে অপ্রাপ্তিই বেশি। কে জানে, হয়তো 'জহির রায়হানের সেরা উপন্যাস' ট্যাগটাই আমার এক্সপেক্টেশন বাড়িয়ে রেখেছিলো এবং ফাইনালি সেটা মিট না করায় আমি হতাশ। আবার এমনও হতে পারে, আজ থেকে ৫০ বছর আগে পড়লে হয়তো আমি মুগ্ধই হতাম। কে জানে.... কেউ জানে না!
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
March 25, 2019
বিষণ্নতায় ভরপুর এক মধ্যবিত্তের নিত্যনৈমিত্তিক আখ্যান.....
Profile Image for Saima  Taher  Shovon.
521 reviews190 followers
April 11, 2020
4.5
প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৬৯ সালে-আর লেখক কি সুন্দর করে সে সময়ের গল্প বলেছেন।অনেকের জীবনের গল্প লিখেছেন ছোট এক বইয়ে।মধ্যবিত্ত পরিবার-তাদের জীবন-টিউশন-চাওয়া -পাওয়া -স্বপ্ন ভাঙা সব যেনো উঠে এসেছে।
আমি এটা পড়তে ভীষণ একসাইটেট ছিলাম।হাজার বছর ধরে,শেষ বিকেলের মেয়ে -এই উপন্যাস দুটিতে লেখক চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন-এই বইয়েও ঠিক তাই-ই।
মরিয়ম, মাহমুদ, হাসিনা,দুলু,খোকন,সালেহা বিবি,হাসমত আলি সবাই যেনো জীবন্ত-দেখতে পাবেন নাটকের মতো। সবাই নিগূঢ় সত্যের সুতোয় বাঁধা। আর টুইস্ট দেয়া লেখকের কাছে শেখা দরকার!কি নিষ্ঠুর!হঠাৎ সব কিছু শেষ-সবকিছু নাই হয়ে গেলো।
কিছু কিছু দৃশ্য খুব ভালো লেগেছে।মাহমুদ যে কিনা ভালোবাসা প্রকাশ করে রাগ দিয়ে তার হুটহাট করে বোনদের জন্য জিনিস কিনে আনা,মালা পেয়ে হাসিনার অনাবিল খুশি,ছবি তুলাকেও উৎসব করে তুলা এইসব(এটি ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়-মামা যেদিন ছবির ফিল্ম নিয়ে আসতো বাসায় উৎসব হয়ে যেতো-ছবি উঠানোর আনন্দ ছিলো তখন অন্যরকম-সেই ছবি প্রিন্ট হয়ে আসার অপেক্ষাও যেনো সুখকর ছিলো🖤)।
পড়ার পর মনের কোণায় শুণ্যতা তৈরী হবে❣
Profile Image for Abhishek Saha Joy.
191 reviews56 followers
February 27, 2021
হাসমত আলী আর আমেনা বিবির সংসারে রয়েছে তাদের পাঁচ ছেলেমেয়ে - মাহমুদ,মরিয়ম,হাসিনা,খোকন,দুলু।অর্থের অভাব আছে কিন্তু সুখের কোন অভাব নেই সংসারে।মাহমুদ স্বাধীনচেতা,একগুঁয়ে,ধনী-গরিবের বৈষম্য নিয়ে সবসময়ই উচ্চকিত।মরিয়ম শান্ত,নরম স্বভাবের,বাড়ি বাড়ি ছাত্রী পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালায় সে।তার জীবনে রয়েছে একটি বিষাক্ত অতীত।হাসিনা চঞ্চল,হাসিখুশি।শান্তিতে ভরপুর এই পরিবারে হুট করেই একদিন নেমে আসে দুর্যোগ।

জহির রায়হান - আমার কাছে এক আফসোসের নাম।কি হতো লোকটা আরও কয়েকটা বছর বেশি বাঁচলে?

পৃথিবীর চরমতম সত্য - মৃত্যু।আমাদের সবাইকেই একদিন মরতে হবে।আমাদের জীবন নদীর শেষ প্রান্তে রয়েছে মৃত্যু।জীবন কখনোই কারোর জন্য থেমে থাকে না,থাকবে না।জীবন চলবে নিজের নিয়মে,নিজের শক্তিতে।

একটা নদী যেমন অসংখ্য পথ ঘুরে শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে এসে মিশে যায়,তেমনি বাঁচতে বাঁচতেই একদিন মানুষও মরে যায়।আর এই মৃত্যু নিয়ে জহির রায়হানের চেয়ে ভালো আর কে লিখতে পারেন?

সময় খুব অদ্ভুত একটা জিনিস।সবাইকে পাল্টে ফেলে সময়।যে ছেলেটা/মেয়েটা আর বলছে আমি অমুককে ছাড়া থাকতে পারবো না,কিছুদিন পর সে-ই দিব্যি ভালো আছে আরেকজন সঙ্গী নিয়ে।অদ্ভুত মানবজীবনের রহস্য...

বইটা পড়তে পড়তে এতো মিশে গিয়েছিলাম যে যখন শেষ করেছি তখন আফসোস হচ্ছিলো কেন বইটা মাত্র ৯৬ পৃষ্ঠা!কেন আরও বড় হলো না!
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
February 6, 2017
জহির রায়হান সাহেবের কথা মনে পড়ছিল খুব। তাই ভাবলাম কিছুটা সময় তাঁর সাথে কাটাই।

কি চমৎকার লিখে লোকটা! মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর নিত্যদিনের গল্পও উপন্যাস হয় যায়!
লিলির খুব সাদাসিধে স্বপ্ন আর ভালোবাসার গল্প, মরিয়মের সংগ্রামী একেকটা দিন, হাসমত আলীর অসহায়বোধের তীব্র যাতনা, মাতৃত্বের স্নেহে সালেহা বিবির বিকিয়ে দেওয়া আত্মসম্মানবোধ, চরম বিপদের দিনেও মানুষের প্রতি শাহাদাতের বিশ্বাস -এইসব অনুভূতি মিলিয়ে পরিপূর্ণ একটা উপন্যাস।
এবং মাহমুদ! যে দ্রারিদ্র‍্যের কাছে কখনও মাথা নত করেনি। ঈশ্বরের প্রতি তীব্র অভিমান আর কাছের মানুষগুলোর জন্য লুকিয়ে রাখা স্নেহ-ভালোবাসা - সবকিছু প্রকাশ করতো রাগ দিয়ে।
মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর পারিবারিক একটা গ্রুপ ছবি তোলাটাও রীতিমতো উৎসব! কত সংকোচ, লজ্জা আর গোপন চাওয়ার তোলা একটা ছবিও বছর শেষে স্মৃতি হয়ে যায়। শুধু অনুভূতিগুলো কখনও ফিকে হয়না!
Profile Image for NaYeeM.
229 reviews65 followers
March 30, 2019
"বরফ গলা নদী"
এই যেন এক হাহাকারের নাম,এই এক বিষন্নতায় ভরা

এত দুঃখ কেন এই গল্পটায়!! পড়তে পড়তে বুকের ভেতর কেমন যেন কান্না করে উঠে.....

জহির রায়হান নামের মানুষটাকে যদি পেতাম তাহলে তাকে বলতাম "কি শান্তি পেলেন মানুষকে এতটা দুখভরা কষ্টের গল্প শুনিয়ে"
Profile Image for Shariful Sadaf.
195 reviews108 followers
August 24, 2020
"অতীতের মতো বর্তমানও যেনো ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো উঠা আর পরার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কেউ বলতে পারে না।"

সাদামাটা প্লটটাকে দারুন লেখকশৈলী দ্বারা কি সুন্দর ভাবেই না ফুটিয়ে তুললো।

আমার পড়া জহির রায়হানের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
Profile Image for Maliha Tabassum Arna.
186 reviews49 followers
March 11, 2021
" তুমি জানতে আমি যাব না, তবু মিছে অভিমান করছো।ভাবছ, আমি বড় নির্দয়। সত্যিই আমি তাই। কারো জন্য আমার কোনো অনুভুতি নেই। বাবা, মা, ভাই, বোন - এই যে কতগুলো শব্দের সৃষ্টি করেছ তোমরা, এক্তা অর্থহীন সম্পর্ক ছাড়া এর কোনো মূল্য আছে? অন্তত আমার কাছে নেই। " :-|
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
February 1, 2017
॥ জহির রায়হানের ‘বরফ গলা নদী’ ॥
(রচনাকাল 1969)


জহির রায়হান (আসল নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ) একজন বহুপঠিত ও বহুচর্চিত লেখক। তবে, তার স্বল্পকৃত শিল্পকৃতি কেবল বইয়ের পাতাতেই আবদ্ধ নয়; বইয়ের ভাষ্য আর মনের কল্পনা কে তিনি দক্ষ ভাবে চলচিত্র ও ক্যামেরার পর্দাতেও উৎরে দিয়েছেন। বিভিন্ন আলোচনা দেখলে বোঝা যায় যে বাংলা সাহিত্যে তিনি আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। 1969 সালে রচিত তার এই উপন্যাসটি আজ প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে পড়লে নিশ্চিত ভাবে রচনাকালের সেই বিক্ষুব্ধ সময়টুকুকে ধরতে অসুবিধে হয়। স্বাধীন একটি দেশের জন্মের প্রাককালে, সেই সময়ে যে আবেগ হয়ত মনে দাবানল জ্বালিয়ে তুলেছিল, এখন সেই আবেগ কেবলই হয়ত মনে চৈত্রের দহনজ্বালা জাগিয়ে তুলবে! তাই, উপন্যাসের বর্তমান এই বিচার অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকছে!

‘বরফ গলা নদী’ উপন্যাসের কাহিনী বোধকরি অধিকাংশেরই জানা! এককথায় এটি একটি ক্ষয়িষ্ণু নিম্নবিত্ত পরিবারের বিপর্যয়ের কথাচিত্র। দরিদ্র কেরানী হাসমত আলী ও সালেহা বিবির পাঁচ সন্তান, মাহমুদ, মরিয়ম, হাসিনা, খোকন ও দুলু এই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রেরা। বছর তিরিশের মাহমুদ একটি সংবাদপত্রের অফিসে সাংবাদিকের কাজ করে, উনিশ-কুড়ির মরিয়ম কলেজে পড়তে পড়তে টিউশন করছে। হাসিনা স্কুলে পড়ে ও খোকন, দুলু নিতান্তই ছোটো। উপন্যাসে মুল চরিত্রের ভার প্রথমে মরিয়ম থেকে পরে মাহমুদের উপর ন্যস্ত হয়েছে। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে মনসুর ও লিলি নিশ্চিতভাবে উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন চরিত্রেরা। মরিয়মের সাথে মনসুরের প্রেমের বিয়ে ও পরে ঝগড়া, শেষে দুর্ঘটনায় পরিবারের সকলকে হারিয়ে মাহমুদের লিলির কাছে আসার মধ্যে দিয়ে এক নদী জল বয়ে গিয়েছে। তবে সেসব কথায় আসব ধীরে ধীরে।

বঙ্গদেশের খাদ্যাভাসে প্রথমে তেতো, পরে মিষ্টির স্থান। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও আমরা ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ এর আশাতেই থাকি! কিন্তু, সমালোচনা ও পরচর্চার ক্ষেত্রে, এর উল্টোটাই দস্তুর এবং এক্ষেত্রে প্রথমে প্রশস্তি আসে, পরে নিন্দা! আমিও তাই করব।

জহির রায়হানের উপন্যাস পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে, এতে নুতন কিছু নেই। বঙ্গদেশের সাধারন মানুষ চিরকালই দারিদ্রপীড়িত। দেশভাগ ও তার ফলশ্রুতিতে দাঙ্গা, অনাহার অগুনতি মানুষের সে ক্লেশভোগ কেবল বাড়িয়েছে বই, কমায় নি। জীবনের এমন ক্লিষ্ট চিত্র আমরা বহুবার পড়েছি; পথের পাঁচালী, শঙ্খনীল কারাগার, পদ্মানদীর মাঝি, সূর্য-দীঘল বাড়ি এবং আরো আরো অসংখ্য বই এর সাক্ষ্য বহন করছে। কিন্তু, এই নুতন কিছু না থাকাটাই অন্যভাবে যেন এই উপন্যাসের সম্পদ হয়ে দাড়িয়েছে! উপন্যাসের চরিত্রগুলিকে এত সাধারন মনে হয়, এত চেনা মনে হয় যে তাদের সাথে মিলেমিশে যেতে মুহুর্ত লাগে না। মনে হয় এটা শুধু মরিয়ম-মাহমুদ-লিলির একান্ত কাহিনী নয়, আসলে যেটা পড়ছি সেটা, মরিয়ম-মাহমুদ-লিলিদের কাহিনী! একটা সামগ্রিকতার আভাস ফুটে ওঠে স্বল্পায়তন এই উপন্যাসের কলেবরে!

জহির রায়হান তার কলমে অত্যন্ত নিপুণ ভাবে ধরেছেন মরিয়মদের বাড়ির গলির দুর্গন্ধটুকুকে, তাদের অন্ধকারাছন্ন দরিদ্র পাড়ার অশিষ্টাতাকে; তাদের ভাঙা বাড়ি ও ভাঙা জীবনকে। এখানে বর্ণিত মেয়ে-স্কুলের অদুরে, খোদাবক্সের চায়ের দোকানে গুলতানিতে ব্যাস্ত, ধারে প্রেম ও চা-প্রত্যাশী বেকার যুবকের দল আজও একইভাবে বঙ্গদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। বড়লোকের বাড়িতে টিউশনি করতে যাওয়ার কুন্ঠা আজও আমাদের কাটেনি এবং অপরদিকে, বড়লোকের সবকিছুকে কিনে নেওয়ার অফুরন্ত ইচ্ছে আজও আমাদের একই ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। ফলে, সময়ের ও পটভুমির সামান্য হেরফের করলে এ উপন্যাস আজও অনায়াসে এপার-ওপার নির্বিশেষে বঙ্গদেশের যে কোন মফস্বলের অন্তরঙ্গ চিত্র হয়ে দাড়াবে। জহির রায়হানের কলমের এর বেশী সার্থক হওয়ার প্রয়োজন আর ছিল না।

এমনধারা সার্থক হয়েও কয়েকটি জায়গায় মনে হয়েছে লেখকের কলম সমান জোর দিতে পারেন নি। (আমি পেটরোগা বাঙালী, খুত আমি ধরবই!) উপন্যাসে মরিয়মের সাধাসিধে চরিত্র আমাদের মন টানে। মনসুরের সাথে বিয়ের আগে তাই, সরল মনেই সে তার জাহেদের সাথে তার বাল্যপ্রেমের কথা বলেনি! বঙ্কিমচন্দ্রের কথা ধার করলে বাল্যপ্রেমে অভিশাপ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে তাতে প্রেমিক-প্রেমিকার উপর কোন দোষ বর্তায় না। কিন্তু আশ্চর্য লাগে যে মরিয়ম জাহেদের সাথে পালিয়ে, দু মাস হোটেল বাস করার পরও, মরিয়েমের পরিবারের কেউ তাকে কখনো গন্জনা দেয় না, বক্র কথায় বিদ্ধ করে না! এমনকি হাসিনা তার সিবলিং রাইভালরি বশেও কখনো এই কথা ছুড়ে দেয় না! মনসুরের সাথে বিয়ের আগে হাসমত আলী ও সালেহা বিবিও এই নিয়ে কখনো উদ্বিগ্ন হন না! এটা কি সম্ভব? বিশেষত, মারিয়মের অশিষ্ট পড়ায়, যেখানে সুখবরের চেয়ে কুখবর আগে রটে, সেখানেও কোন কূটকাচালি হয় না! ফলে, প্রাথমিক ভাবে জাহেদের কয়েকবার নামোল্লেখ ছাড়া, মরিয়মের এই প্রণয় কাহিনী যে লেখক অনুক্ত রাখেন, তা কি শুধু কাহিনীতে চমক আনতে? উপরন্তু এক বার কেন, দশবার মানুষের জীবনে প্রেম আসতে পারে। কিন্তু মরিয়ম তো সেভাবে মনসুরের প্রেমে পড়েনি! ওদিকে ছাত্রী সেলিনার মা যে মনসুরের সাথে সেলিনার বিয়ে দিতে চান, এটা তো মারিয়ম জানত। তাই, সরলতা বশে জাহেদের কথা উল্লেখ না করলেও, কেন সে মনসুর কে সেলিনার কথা একবারও জিজ্ঞেস করে না, এটা আশ্চর্য লাগে!

উপন্যাসে মনসুরের চরিত্র একরকম নিখুত। গড়পড়তা পুরুষ এমনই হয়। মারিয়মের বাল্যপ্রেমের কাহিনী জেনে, হোটেলবাসের কথা জেনে সে শিউরে ওঠে, কিন্তু মরিয়ম মরলে, দু-দিন আগের গভীর, ঘনিষ্ট দাম্পত্যের কথা ভুলে সে সেলিনা কে বিয়ে করতে দ্বিধা করেনা! সত্যি, পুরুষ দের সম্মান এরাই ডোবালে! মনসুরের তুলনায়, মাহমুদের চরিত্র বরং কিছু অপরিষ্কার। উপন্যাসের গোড়ায় মাহমুদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় সে অক্ষমতার ঔদ্ধত্যে ভুগছে। পরে বোঝা যায় তার রাগ আসলে বড়লোকেদের প্রতি। তার নিজের অক্ষমতা দুর করার যথাসাধ্য চেষ্টায় তার প্রতি আমাদের মন কিছু আর্দ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু, তবুও বড়লোকের প্রতি তার রাগ যতটা না আবেগ নির্ভর, তাতে যুক্তির পরিমান কিছু কমই।, তা সংসারে অনেক মানুষই এমন থাকে, যারা কেবল আবেগের জোরেই পথ চলে, তাতে ক্ষতি কিছু নেই। কিন্তু তবুও, মাহমুদ যখন লিলিকে জিজ্ঞেস করে যে সে মরে গেলে লিলি কি করত, তখন সেটা আবেগের কিছু বাড়াবাড়িই মনে হয়। লিলির সাথে মাহমুদের এমন কিছু আদান-প্রদান হয় নি যে অকস্মাৎ এমন কথা বলা চলে!

এই উপন্যাসের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা যেটা, সেটাই এর দুর্বলতা হয়ে দাড়িয়েছে। হ্যাঁ, সেটা হল লিলির চরিত্র। লিলি সবার ভরসা, সব সমস্যায় মসীহা হয়ে উদয় হয়েছে, কিন্তু তার সম্মন্ধে সবচেয়ে কম বিবরন দিয়েছেন লেখক। এমনকি, লিলির চেয়ে রফিক আর শাহাদাত-আমেনার বিবরনও এখানে অনেক বেশী। লিলি মরিয়ম এর দু:খের সাথী, হাসিনার ছবি তোলার সাধ পুরনের উপায়, স্বজন হা��ানো-বিপর্যস্ত মাহমুদের সান্ত্বনা ও সহায় কিন্তু লিলির জীবন, পরিবার, ভাবনা-চিন্তা সম্মন্ধে কিছুই জানা যায় না। উল্টে বরং লিলির ভাবনার অভাবটাই যেন প্রকট হয় যখন দেখি, মনসুর-সেলিনা কে নিমন্তন্ন করা হয়েছে মিতার জন্মদিনে! লিলিই তো সব জানত, মরিয়মের প্রতি মনসুরের দুর্ব্যাবহারের কথা, বকলমে মরিয়ম ও তার পরিবারের সবার মৃত্যুর কারন হওয়ার কথা! তবু কেন লিলি সে কথা জানাল না মাহমুদকে? এটা লিলির দোষ না লেখকের দোষ? লেখক লিলি কে যেন কেবলই ভরসার দেবীসুলভ নিষ্কলুষ রূপে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন, তার মধ্যে তাই অসূয়া, রাগ, ঘৃণা ইত্যাদি মানবিক দোষ কিছুই দেননি! আর তাই বোধহয় তার সম্মন্ধে সবচেয়ে কম কথাও বলেছেন। আমার মতে, এটি অবশ্যই এই উপন্যাসের দুর্বলতা।

এই সব ছোটোখাটো খামতি সত্ত্বেও, জহির রায়হানের এই উপন্যাস মোটের উপর পড়তে ভাল লাগে। এই উপন্যাসে যে ক্ষয়াটে সমাজের ছবি আঁকা আছে, সেই সমাজের বৈষম্যের ছবি অর্ধশতাব্দী বাদেও খুব একটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠেনি। পুরুষের স্বার্থানুসারে মেয়েদের একই সাথে দেবী ও সর্বনাশী রূপে দেখারও কোন তফাৎ ঘটেনি। এখনো, আমরা পুরুষেরা, নারীর হৃদয় ও প্রেমের একক মালিকানা চাই কিন্তু নারীর মনের বৈচিত্রকে স্বীকার করার মত যথেষ্ট সাহস উপার্জন করে উঠতে পারিনি! রায়হানের এই উপন্যাস তাই নিশ্চিত ভাবে আগামী দিনেও আমাদের মনে হানা দিয়ে যাবে।

পুনশ্চ: সশেষে, আরেকটি কথা। এই উপন্যাসের নামকরনের সার্থকতা আমি বুঝতে পারিনি। আশা করি, বন্ধুরা কেউ কেউ নিশ্চই এবিষয়ে আলোকপাত করতে পারবেন!


Profile Image for Pritha.
96 reviews20 followers
November 21, 2019
দৈনন্দিনের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা দিয়ে সাজানো একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। গল্পের সবাই যেন চোখের সামনে ছুটাছুটি করছিল; মাহমুদ, মরিয়ম, হাসিনা, খোকন, দুলু, হাসমত আলী, সালেহা বিবি! দারিদ্রতা যাদের জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে খুব ছোট কোনো ঘটনাও তাদের অনাবিল আনন্দ দিয়ে যায়। আবার অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে না চাওয়ায় অনেক দুঃখও সহ্য করতে হয়। তারপর হঠাৎ ....
জীবন কাউকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়, কে বলতে পারে?
Profile Image for Tushi.
59 reviews42 followers
November 21, 2014
কিছুই বলার নাই । আমি বাকরুদ্ধ । কয়েকশো ভোল্টের শক খেয়েছি । এই বইয়ের রেশ কাটতে সময় লাগবে । শুধু বলব এই বইয়ের জন্য 'অসাধারণ ' শব্দ খুব কম মনে হয় । আমার পড়া জহির রায়হানের সবচেয়ে বেস্ট বই এইটা ।
Profile Image for Tarik Mahtab.
167 reviews3 followers
May 10, 2021
রেটিং দিতে মন চাচ্ছিলো না তবুও.....
Profile Image for Tanshit Mona.
46 reviews3 followers
November 29, 2023
অনুবাদ পড়তে পড়তে নিজের ভাষার সাহিত্যের স্বাদ ভুলতে বসেছি প্রায়। এমন আরামদায়ক বই কতদিন পড়া হয় না...
এই বইটা একটা রিমাইন্ডার: তানশীত, তোমার বাংলা সাহিত্য পড়া অনেক অনেক অনেক বাকি।
Profile Image for Jannatul Firdous.
89 reviews178 followers
April 1, 2023
খুব কম উপন্যাস এমন হয় যা মানুষের চিন্তা চেতনাকে নাড়িয়ে দিতে পারে,সারাটাজীবন ভুলতে দেয় না। সেরকম উপন্যাসের তালিকা করলে প্রথমদিকেই আসবে জহির রায়হানের 'বরফ গলা নদী'র নাম। ব‌ইটা দ্বিতীয়বার পড়তে এতখানি মনের জোর জোটাতে হয়েছে যেন এর মুখোমুখি আবার হবার সাধ্য আমার নেই। এতটাও শক্তিশালী কোনো উপন্যাস হতে পারে!

গল্পটা একটা পরিবারের। বিলো এভারেজ পরিবার যাদের পরনের কাপড় হয় শতচ্ছিন্ন,যাদের উপার্জনক্ষম একটিই ছেলে এবং সে এত পরিমাণ সৎ যে অন্যায় পথে একটা কাজ‌ও করতে রাজি নয়। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন পরিবারে এই সততার কদর হয় না,মাহমুদ‌ও তাই পরিবারের দিক থেকে এসবের জন্য প্রশংসা পায় না।

মাহমুদ তার পরিবারকে ফর গ্রান্টেট ধরে নিয়েছিলো। সে ধরে নিয়েছিলো,এরা তো আছেই! যাবে কোথায়? তাই এই পরিবারের প্রতি সে ক্ষেত্রবিশেষে বিরক্ত,এদের দায় টানতে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেক চাকরি করতে হয়েছে তাকে। তাই সে দুইটা সম্পর্কে শুধু বিশ্বাসী। বড়লোকের ক্ষমতার অপব্যবহার আর গরীবের যোগাযোগের অভাবে যোগ্যতার অবমূল্যায়ন। বড়লোক তাই দুচোখে দেখতে পারে না সে।

ছোট এই পরিবার সামান্য সামান্য জিনিসেই খুশী। হাসিনা খুশী হয় একটা মালা বা চুলের কাঁটা পেলে,দুলু খুশী হয় একটা সন্দেশ বা রসগোল্লা পেলেই,খোকন খুশী হয় সামান্য একটা ফুটবলেই।

মরিয়ম নামের বাড়ির বড় মেয়েটা টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়। তার একটা অতীত আছে যা সে মনেপ্রাণে ভুলে যেতে চায়। কাউকে বিশ্বাস করে চরমভাবে ঠকার পর মনসুরের ভালোবাসাকে সে ঠিক ভালোবাসা বলে বিশ্বাস করতে চায় না। কিন্তু তবুও মনসুর বারবার আসে। সেঁধে এই পরিবারটির সাথে মিশে যেতে চায় মাহমুদ যা পছন্দ করে না।
মরিয়ম‌ও মনসুরকে পছন্দ করে। তবুও একটা প্রশ্ন বারবার এই দুজনের সামনে এসে দাঁড়ায়, মানুষ কি দুইবার প্রেমে পড়তে পারে?

চায়ের দোকানে রফিক,ন‌ঈম,খোদাবক্সরা বসে থাকে সামনের লাল দালানের মেয়েদের স্কুল থেকে মেয়েরা কখন ছুটি পেয়ে বের হবে তার আশায়। শাহাদাত অপেক্ষায় থাকে কবে তার স্ত্রী রাজি হবে ভাইদের থেকে কটা টাকা ধার করে আনতে। লিলি নামক চমৎকার সুন্দরী একটি মেয়ে কখন অজান্তেই মাহমুদ নামক জেদী,বিষন্ন,প্রচন্ড একা এই ছেলেটিকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো কে বলবে?

গল্পটা দারিদ্র্যের। আগাগোড়া অভাবের। এর কোথাও প্রাচুর্য নেই,পূর্ণতা নেই। কিন্তু গল্পটা শুধু দারিদ্র্যের‌ও না। গল্পটা একটা ছেলের তার পরিবারকে ফর গ্রান্ডেট ধরে বসে থাকার,কখনো তাদের প্রতি বিরক্ত কখনো তাদের অসহ্য বোধ হ‌ওয়া ছেলেটা জানেও না জীবনে কোন কিছুই যে চিরদিন একরকম থাকে না! মা আজ বাজারে যাবার জন্য বারবার অনুনয় করছে, চিরদিন করবে না। ছোটবোন একটা টাকার জন্য বারবার তার ব‌ইপত্র হাতড়াচ্ছে চিরদিন হাতড়াবে না,বুড়ো বাবা যে তার সন্তানদের তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু দিতে না পারার আফসোসে ভেতরে ভেতরে পুড়ছে,সেসবের তার একদিন অবসান হবে। মায়ের শতচ্ছিন্ন শাড়িতে নতুন করে জোড়াতালি দেবার আর কখনোই প্রয়োজন হবে না,বোন আর কখনোই মাথা নিচু করে ভাইয়ের সব অভিযোগ,রাগ চোখের জল চেপে গলাধঃকরণ করবে না।

বলতে দ্বিধা নেই,জহির রায়হান তার সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক। এই পুরো উপন্যাসটা অতি সাধারণ মনে হলেও এর ভেতরে লেখক গল্পের ছলে সুকৌশলে ধর্ম ও শ্রেনীসংগ্রাম নামক দুইটা জিনিস খুব ভালোভাবেই ঢুকিয়ে দিয়েছেন তা লক্ষ্য করেছি। সেই শ্রেণিসংগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেছে আমেনা এবং মাহমুদ। আমেনা বড়লোক ভাইদের বাড়ি ছেড়ে একদম সাধারণ একজনের হাত ধরে চলে আসে এবং আর কখনো তাদের কাছে হাত পাততে যায় না। হাত পাতলে বড়লোকেরা কি করে? সেটাও একসময�� দেখিয়ে দিয়েছে মনসুর তার সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছে।

এই ব‌ইয়ের শেষটা পাঠককে শুধু স্তম্ভিত‌ই করে দিবে না, সারাজীবন ভোগাবে। মৃত্যুকে ভাবাবে। জহির রায়হানের মতো করে বারবার মৃত্যুকে এত গভীরভাবে খুব কম লেখক‌ই আমাকে ভাবাতে পেরেছে। পূর্বে পড়া তার 'কয়েকটি মৃত্যু' ব‌ইটার ব্যাপারেও এই কথাটা সত্যি। বরফ গলা নদী একটা সাধারণ পরিবারের গল্প হলেও এর প্রতিটা লাইনে অসাধারণত্ব লুকিয়ে আছে। প্রতিটা লাইনের জীবনবোধ পাঠককে গভীর চিন্তায় ডোবাবে। ঠিক যেমন জীবন নামক ঘড়ির কাঁটা চলতে চলতে হুট করেই থেমে যায় সেভাবেই সবশেষ ধাক্কাটা হুট করেই সবকিছু থামিয়ে দেবে। এরপর অসীম এক শূন্যতা নিয়ে পাঠক স্বীকার করে নিতে বাধ্য হবেন এই উপন্যাসটা নিঃসন্দেহে একটা মাস্টারপিস।
Displaying 1 - 30 of 287 reviews

Join the discussion

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.