Jump to ratings and reviews
Rate this book

একুশে ফেব্রুয়ারী

Rate this book

40 pages, Hardcover

First published January 1, 1970

7 people are currently reading
203 people want to read

About the author

Zahir Raihan

28 books418 followers
Zahir Raihan (Bangla: জহির রায়হান) was a Bangladeshi novelist, writer and filmmaker. He is perhaps best known for his documentary Stop Genocide made during the Bangladesh Liberation War.

He was an active worker of the Language Movement of 1952. The effect of Language Movement was so high on him that he made his legendary film Jibon Theke Neya based on it. In 1971 he joined in the Liberation War of Bangladesh and created documentary films on this great event.

He disappeared on January 30, 1972 while trying to locate his brother, the famous writer Shahidullah Kaiser, who was captured and killed by the Pakistan army. Evidences have been found that he was killed by some armed Bihari collaborators and disguised soldiers of Pakistan Army.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
147 (37%)
4 stars
168 (43%)
3 stars
71 (18%)
2 stars
3 (<1%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 24 of 24 reviews
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
October 9, 2014
বইটা যদি জহির রায়হানের অন্য লেখাগুলোর আগে পড়তাম মনে হয় পাঁচতারা দিতাম, কিন্তু লেখক নিজের সাথে তুলনায় এখানে খানিকটা পিছিয়ে গেলেন। লেখকের সবগুলো উপন্যাসের মাঝে আমি 'আর কতদিন'কে প্রথমে রাখবো। আর ভাষা আন্দোলন নিয়ে উপন্যাসের মাঝেও 'আরেক ফাল্গুন'কেও 'একুশে ফেব্রুয়ারী'র চেয়ে সামনে রাখবো। এটাতো একটি তারা না দেবার ব্যাখ্যা...চারটি চারটি তারার তো ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। একুশে ফেব্রুয়ারী এবং সে সময়ের ঘটনাগুলো নানা ধরণের মানুষের জীবনে কিভাবে এসেছে তাকে খুব বেশী বাস্তব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এটা জরুরী না একটি আন্দোলনের পিছে সবাই পজিটিভ ভাবে যুক্ত হবে, কেউ নেগেটিভ ভাবে যুক্ত হবে কেউ বা অজ্ঞাতেই হয়ে উঠবে ইতিহাসের অংশ। সেখানেই বাস্তবতা। জাজ্বল্যমান একুশে ফেব্রুয়ারীর চেতনাকে কেন্দ্রে রেখে এই বৈচিত্র্যকে ভয়ানক সুন্দরভাবে একত্রিত করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারীর মাঝে যে শোষণের শেকল ভাঙ্গা স্পৃহা রয়েছে, তার চিরন্তনতা এবং বহমানতাকে যেভাবে জহির রায়হান মূর্তিত করেছেন সেটা হয়তো তিনি ভাষা সৈনিক বলেই সম্ভব হয়েছে...

"সুতোর মত সরু পানির লহরি বালির বালির উপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে যাচ্ছে।
ধলপহরের আগে রাস্তায় নেমে এলো এক জোড়া খালি পা।
সুতোর মত সরু পানি ঝড়না হয়ে বয়ে যাচ্ছে এখন।
কয়েকটি খালি পা কংক্রিটের পথ ধরে এগিয়ে আসছে সামনে।
ঝড়না এখন নদী হয়ে বয়ে চলেছে সাগরের দিকে।
সামনে বিশাল সমুদ্র।
সমুদ্রের মত জনতা।
নগ্নপায়ে এগিয়ে চলেছে শহীদ মিনারের দিকে।
অসংখ্য কালো পতাকা।
পতপত করে উড়ছে।
উড়ছে আকাশে।
মানুষগুলো সমুদ্রের ঢেউ এর মত অসংখ্য ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে সামনে। ইউক্যালিপ্টাসের পাতা বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে নিচে। মাটিতে।
ঝরে।
প্রতি বছর ঝড়ে।
তবু ফুরোয় না।"
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
January 21, 2022
একটা মহৎ কিছু শুরু করার সময়টাতে বাঁধা বিপত্তি অনেক আসে। অনেক অনেক আত্মত্যাগের পরে একটা কিছু সাফল্য পায়। আমার বাবা প্রায় বলেন, যখন আমি একটু কাজ করেই বলি এত কাজ করলাম তবুও শেষ হয়না কেন, যেকোন কাজ শুরু করার সময় একটা ঝোঁক নিয়ে করতে হবে এবং অন্তত দুই-তিন ঘন্টা টানা করতে হবে তাহলে কাজের গতি কিছুটা হলেও টের পাওয়া যাবে। এই বইয়ের গল্পটাও ঠিক তেমনটাই। ছোট গল্প বলে হয়তো সময়ের গ্যাপটা বড়। শুরু থেকে শেষের ঝাঁক ঝাঁক জনসমুদ্র হবার মধ্যভাগের সময়টা ছেটে দেওয়া তারপরও গল্পটা পড়ে এটাই মনে হচ্ছে বার বার যে শুরু তো করো একবার রীতিমত একটা ঝোঁক নিয়ে তারপর নাহয় দেখা যাবে পরে কী হবে।

এইযে বাংলাতে কথা বলি এটার পেছনে কী কম আত্মত্যাগ আছে? কেউ কেউ ইচ্ছে করে জড়িয়েছেন কেউবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কিন্তু ত্যাগ স্বীকার করেছেন বেশিরভাগই। এই সাদামাটা গল্পটা সবাইকে সুসম্বদ্ধ করেছে। যেকোন আন্দলনের শুরুর দিকটা সমন্ধে কিঞ্চিৎ ধারণা লাভের জন্য হলেও বইটা সবার পড়া উচিৎ।

মানুষগুলাে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতাে অসংখ্য ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে সামনে। ইউক্যালিপ্টাসের পাতা বৃষ্টির মতাে ঝরে পড়ছে নিচে। মাটিতে।
ঝরে ।
প্রতি বছর ঝরে।
তবু ফুরােয় না।
Profile Image for Zihad Saem.
123 reviews6 followers
October 29, 2024
বেশ বড়বেলায় এসে বইটা পড়া। আহা কী হৃদয়গ্রাহী লেখা। অসাধারণ ছিলো।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
November 20, 2021
ঊনিশ'শ বায়ান্ন সাল। অনেক গুলো মানুষ তাদের ছোট ছোট স্বপ্ন গুলোকে সাজাতে ব্যস্ত দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার মাঝেও। জীবনের গল্প ও অনাগত ভবিষ্যতের স্বপ্ন বীজ বুননের মধ্যে দিয়েই কাহিনি শুরু

চাষার ছেলে গফুর তারই গ্রামের মেয়ে আমেনাকে পুকুরঘাঁটে দেখেই মুগ্ধ হয়ে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, মেয়ের বাবা রাজি হয়ে যান। তাই শাড়ি, আলতা, চুরি, টিপ বেছে কিনতে শহরে যায় গফুর।

পেশায় পুলিশ আহমেদ হোসেনের ছেলে তসলিম রাজনীতি করে।ছেলে-বাবার মতাদর্শ আলাদা।যে আহমেদ হোসেন এর ভয়ে দাগি আসামিরা কাঁপে, তার ধমক-শাসনেও তসলিম রাজনীতি থেকে সরে আসলো না।
তসলিমের খালাতো বোন সালমা। তসলিম তাকে খুব ভালোবাসে।তবে সালমার আশ্চর্য ঠান্ডা চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারে না সে।

কেরানি আনোয়ার হোসেন এককালে কবিতা লিখতেন, এখন সরকারি চাকুরীজীবি। ঘরে অভাব অনটন। তার শান্তি নেই। সুখের মধ্যে একটাই অফিস শেষে কয়েকটা পান মুখে পুরে চিবাতে চিবাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটা । এভাবে কাটছে জীবন।

পানের-তেলের-পাটের-পারমিটের ব্যবসা, কয়েকখানা ইন্স্যুরেন্স, এমন হাজারটা ব্যবসা নিয়য়ে মহা ব্যস্ত মকবুল আহমদের। রাতের ক্লাবে বোতল-বোতল মদ খাওয়াটাতে তার সুখ। স্ত্রী বিলকিস বানুর সাথে দেখা হয় কদাচিৎ । বিলকিসবানুর এতে ক্ষোভ নেই, তার গল্প করার লোকের অভাব নেই।

রিকশাচালক সেলিম, তার স্বপ্ন রিকশা কেনার।

এই সব মানুষগুলোর সব স্বপ্ন গুলো এক হয়ে যায় একুশে ফেব্রুয়ারী উনিশ'শো বায়ান্ন সন এ এসে ।

সেই সময়ে বাঙালির প্রাণের দাবি ছিলো রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আর এই দাবির জন্য হাজারো প্রাণ হয়ে বিলীন।

"একুশে ফেব্রুয়ারী" বইটি
লেখক জহির রায়হান উৎসর্গ করেছেন একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের। ছোট ছোট কিছু চরিত্র বিক্ষিপ্ত ভাবে তাদের জীবনের ক্ষুদ্র একটু অংশ নিয়েই এই ছোট পুস্তিকা। তবে তার আবেদন অসামান্য। লেখকের লেখা, সেই সময়ের দাবি, পারিপার্শ্বিক অবস্থার, চরিত্র গুলোর মধ্যে কোন যোগ না থাকলেও চমৎকার এক মেলবন্ধন তৈরি করেছে।
Profile Image for Samsudduha Rifath.
425 reviews22 followers
August 14, 2024
বছরের ১৫০ তম বই পড়া হলো এবং সেটা একটা অসাধারণ বই দিয়েই হয়েছে।
Profile Image for Rafia Rahman.
416 reviews215 followers
July 24, 2024
ওরা বলছে বাংলাকে ওরা বাদ দিয়ে দেবে। উর্দু, শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করবে ওরা।
.
মানি না!
মানি না!!
মানি না!!!
.
অসংখ্য কন্ঠের চিৎকারে চমকে উঠলেন পুলিশের বড়কর্তারা।
পিস্তলে হাত রাখলেন।
ছোটকর্তারা ছুটে এসে দাঁড়ালেন কনস্টেবলগুলোর পাশে।
সেপাইদের চোখেমুখে কোনো ভাবান্তর নেই।
হুকুমের ক্রীতদাস ওরা।
.
পুলিশের বড়কর্তাদের চো���েমুখে উৎকন্ঠা।
কত ধরবো?
কত নেবো জেলখানায়?
ঢেউয়ের পর ঢেউয়ের মতো বাইরে বেরিয়ে আসছে ছাত্ররা।
.
সহসা শব্দ হলো।
গুলির শব্দ।
আ��ার!
আবার!!
.
এটা অন্যায়।
এই অন্যায় আমরা সহ্য করবো না।
মেডিক্যালের কাছাকাছি এসে জনতা এক বিশাল মিছিলে পরিণত হলো। ক্ষুদ্ধ আক্রোশ ফেটে পড়ছে মানুষগুলো।
এ হত্যার বিচার চাই আমরা।
যারা আমাদের ভাইদের খুন করেছে তাদের বিচার চাই আমরা।
.
সামনে বিশাল সমুদ্র।
সমুদ্রের মতো জনতা।
নগ্নপায়ে এগিয়ে চলেছে শহীদ মিনারের দিকে।
অসংখ্য কালো পতাকা।
পতপত করে উড়ছে।

কিছু বই পড়ে প্রতিক্রিয়া শব্দে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রবল আবেগ যখন কাজ করে তখন শব্দের শৃঙ্খলা কি ঠিক থাকে? "একুশে ফেব্রুয়ারী" এমনই এক অনবদ্য সৃষ্টি জহির রায়হানের। কিছু চরিত্র আছে, আছে কিছু গল্প। মনে করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়কার মানুষদের জীবনের কথা। দাবী আদায় হয়েছে। ন্যায় পেয়েছি। কিন্তু যে জীবনগুলো ঝড়ে গেছে তার বিচার কোথায়? পড়ার পর কেমন জানি দমবন্ধর মতো লাগছে। কষ্ট, অনেক অনেক কষ্ট...

একটা প্রশ্ন প্রায়ই মনে উঁকি দেয়। হুকুমের গোলামদের গুলি চালানোর সময় একবারও কি তাদের মনে হয় না বাকস্বাধীনতা জন্মগত অধিকার। তাহলে দাবী চাওয়া হলে গুলি কেন চালানো হবে? পড়ে যাওয়া লাশগুলোর মধ্যে যদি নিজের অতিপ্রিয় কেউ থাকে তখনও কি হুকুমের আগে বিবেক হেরে যায়?
Profile Image for Soaibuzzaman.
30 reviews
October 4, 2016
কিছু লেখা থাকে পড়লেই শরীরের সমস্ত রক্তবিন্দু টগবগ করে ফুটতে শুরু করে। 'একুশে ফেব্রুয়ারী' তেমনই একটা লেখা। একুশে ফেব্রুয়ারী সম্পর্কে আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু এ ধারণা যে কতটা ভুল তা জহির রায়হান তুলে ধরেছেন। ভাষা সংগ্রামে যেমন তসলিম-রা ছিলো তেমনি গফুর, আনোয়াররাও ছিলো।
লেখক একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে একটা ছবি বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এভাবে হারিয়ে না গেলে হয়ত একুশে ফেব্রুয়ারীর প্রামাণ্য অনেক ভিডিও ফুটেজ আমাওরা দেখতে পারতাম যেগুলো লেখক নিজ হাতে রেকর্ড করেছিলেন।
Profile Image for Fårzâñã Täzrē.
274 reviews19 followers
October 1, 2024
কচুপাতার উপরে টলটল করে ভাসছে কয়েক ফোঁটা শিশির। ভোরের কুয়াশার নিবিড়তার মধ্যে বসে একটা মাছরাঙা পাখি। ঝিমুচ্ছে শীতের ঠাণ্ডায় একটা ন্যাংটা ছেলে, বগলে একটা স্লেট। আর মাথায় একটা গোল টুপি। গায়ে চাদর, পায়ে চলা ভেজা পথ ধরে স্কুলে যাচ্ছে।

কতগুলো মেয়ে। ত্রিশ কি চল্লিশ কি পঞ্চাশ হবে।একটানা কথা বলছে। কেউ কারো কথা শুনছে না। শুধু বলে যাচ্ছে। কতগুলো মুখ। মিছিলের মুখ।রোদে পোড়া। ঘামে ভেজা। শপথের কঠিন উজ্জ্বল দীপ্তির ভাস্বর। এগিয়ে আসছে সামনে। জ্বলন্ত সূর্যের প্রখর দীপ্তিকে উপেক্ষা করে। সাহসী কতগুলো মুখ।শাসনের-শোষণের-ক্ষমতার-বর্বরতার কিছু মুখ আছে ওদিকে। এগিয়ে এলো মুখোমুখি। বন্দুকের আর রাইফেলের নলগুলো রোদে চিকচিক করে উঠলো।

সহসা আগুন ঠিকরে বেরুলো। প্রচণ্ড শব্দ হলো চারদিকে। গুলির শব্দ। কচুপাতার উপর থেকে শিশির ফোঁটাগুলো গড়িয়ে পড়লো মাটিতে।মাছরাঙা পাখিটা ছুটে পালিয়ে গেলো ডাল থেকে।ন্যাংটা ছেলেটার হাত থেকে পড়ে গিয়ে স্লেট ভেঙে গেলো। পাখিরা নীরব হলো। মেয়েগুলো সব স্তব্ধ নির্বাক দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে তাকালো। একরাশ কৃষ্ণচূড়া ঝরে পড়লো গাছের ডাল থেকে।

🍃রক্তেমাখা কৃষ্ণচূড়ার গল্প🍃

"ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!"

রক্তের স্রোতধারা বয়েছিল সেদিন। রাস্তায় নেমেছিল সেদিন ছাত্র থেকে সাধারণ জনতা সবাই। চারদিকে শুধু স্লোগান "রাষ্ট্রভাষা! রাষ্ট্রভাষা! বাংলা চাই! বাংলা চাই!"

সেদিনের সেই সময়গুলোতে কী হয়েছিল পর পর? কারা সেদিন নেমেছিল রাস্তায়? কী চেতনা কাজ করেছিল তাঁদের মধ্যে? ভাষা আন্দোলন কি ছিল শুধু ছাত্রদের আন্দোলন? না! না! সেদিন শুধু ছাত্র নয় ছিল আরো অনেকে।

কিছু চরিত্র, কিছু জীবনের গল্প। যাঁরা এক হয়ে মিশেছে একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাসে। বাংলা ভাষার বদলে উর্দুকে তাঁরা মানতে পারেনি। প্রতিবাদ করতে তাঁদের শিখিয়ে দেয়া হয়নি। তাঁরা রাস্তায় নেমেছিল সেদিন ভাষার জন্য। একটা ভাষাকে অর্জন করতে কোনো জাতি কী এভাবে রক্ত দিয়েছে? চলুন একুশের গল্প শুনি।

🍃 গফুর 🍃

চাষার ছেলে গফুর। এক একটা ছোট্ট ক্ষেত তাঁর। একটা ছোট্ট কুঁড়ে। আর একটা ছোট্ট বউয়ের স্বপ্ন। ক্ষেতের মানুষ সে। লেখাপড়া করেনি। সারাদিন ক্ষেতের কাজ করতো। গলা ছেড়ে গান গাইতো। আর গভীর রাতে পুরো গ্রামটা যখন ঘুমে ঢলে পড়তো তখন ছোট মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে পুঁথি পড়তো সে, বসে বসে। সুর করে পড়তো ছহি বড় সোনাভানের পুঁথি। ছয়ফল মুলুকের পুঁথি। আমেনাকে দেখেছিলো একদিন পুকুরঘাটে। পরনে লাল সবুজ ডুরে শাড়ি।ঘোমটার আড়ালে ছোট্ট একটি মুখ।

কাঁচা হলুদের মতো রঙ। ভালো লেগেছিল। বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে মেয়ের বাবা রাজি হয়ে গেল। ফর্দ হলো। গফুরের মনে খুশি যেন আর ধরে না।ক্ষেতভরা পাকাধানের শীষগুলোকে আদরে আলিঙ্গন করলো সে। রসভরা কলসিটাকে খেজুরের গাছ থেকে নামিয়ে এনে এক নিঃশ্বাসে পুরো কলসিটা শূন্য করে দিলো সে। জোয়ালে বাঁধা জীর্ণ-শীর্ণ গরু দুটোকে দড়ির বাঁধন থেকে ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে বললো—যা আজ তোদের ছুটি।গফুর শহরে যাবে। বিয়ের ফর্দ নিয়ে। এ সবকিছু নিজের হাতে কিনবে সে। শাড়ি, চুড়ি, আলতা, হাঁসুলি।

🍃তসলিম 🍃

তসলিম রাজনীতি করে। ছাত্রদের সভায় বক্তৃতা দেয়। সরকারের সমালোচনা করে। ছেলেকে অনেক বুঝিয়েছেন বাবা। মেরেছেনও। যাঁর বাবার ধমকে দাগি চোর, ডাকাতি, খুনি আসামিরা ভয়ে থরথর করে কাঁপতো, সেই বাবার অনেক শাসন, তর্জন-গর্জনেও তসলিমের মন টললো না। মিছিলের মানুষ সে। মিছিলেই রয়ে গেল। মা কাঁদলেন। বোঝালেন, দিনের পর দিন। আত্মীয়-স্বজন সবাই অনুরোধ করলো। বলল বুড়ো বাপটার দিকে চেয়ে এসব এবার ক্ষান্ত দাও। দেখছ না ভাইবোনগুলো সব বড় হচ্ছে।

তসলিম তবুও কিন্তু নিষ্ঠুর-হৃদয়। তসলিম বাবার প্রমোশন, মায়ের কান্না, আত্মীয়দের অনুরোধ, সংসারের প্রয়োজন সবকিছুকে উপেক্ষা করে মিছিলের মানুষ মিছিলেই রয়ে গেলো। কিন্তু এই নিষ্ঠুর হৃদয়ে একটা কোমল ক্ষত ছিল। সালমাকে ভালোবাসতো সে। সালমা ওর খালাতো বোন।

🍃কবি আনোয়ার হোসেন 🍃

এককালে ভালো কবিতা লিখতেন তিনি। এখন সরকারের লেজারের টাকার অঙ্ক থরেথরে লিখে রাখা তাঁর কাজ। কবি আনোয়ার হোসেন। এখন কেরানি আনোয়ার হোসেন। তবু কবি-মনটা মাঝেমাঝে উঁকি দিয়ে যায়। যখন তিনি দিনের শেষে রাতে ঘরে ফিরে এসে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেন।ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

যখন এ দেহ মন জীবন আর পৃথিবীটাকে নোংরা একটা ছেড়া কাঁথার মতো মনে হয়, তখন একান্তে বসে কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে তাঁর। আনোয়ার হোসেনের জীবনে অনেক অনেক দুঃখ। ঘরে শান্তি নেই। স্ত্রীর দুঃখ।

🍃 মকবুল আহমেদ 🍃

অভাব বলতে কিছু নেই, মকবুল আহমদের জীবনে। বাড়ি আছে। গাড়ি আছে। ব্যাংকে টাকা আছে। ছেলেমেয়েদের নামে ইনসুরেন্স আছে কয়েকখানা। ব্যবসা একটা নয়। অনেক। অনেকগুলো। পানের ব্যবসা। তেলের ব্যবসা। পাটের ব্যবসা। পারমিটের ব্যবসা।সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে। কখনো মন্ত্রীর দফতরে। কখনো আমলাদের সভা-সমিতিতে।

স্ত্রী বিলকিস বানুর সঙ্গে তাঁর কদাচিৎ দেখা হয়। একই বাড়িতে থাকেন। এক বিছানায় শোয়া হয়। কিন্তু কাজের চাপে, টেলিফোনের অহরহ যন্ত্রণায় স্ত্রীর সঙ্গে বসে দু-দণ্ড আলাপ করার সময় পান না তিনি। অথচ স্ত্রীকে তিনি ভীষণ ভালোবাসেন। তাঁর সুখশান্তির উপর লক্ষ রাখেন। এবং যখন যা প্রয়োজন, মেটাতে বিলম্ব ক��েন না। স্বামীর সঙ্গ পান না, সেজন্যে বিলকিস বানুর মনে কোনো ক্ষোভ নেই।

কিছু ছেলে ছোকরা আর গুণ্ডা জাতীয় লোক পথে-ঘাটে মাঠে-ময়দানে মিছিল বের করে। সভা বসিয়ে সরকারের সমালোচনা করে। যাঁদের টাকা আছে তাঁদের সব টাকা গরিবদের বিলিয়ে দিতে বলে। দুঃখ! দেশের দুঃখ। মকবুল আহমেদ ভাবেন।

🍃 রিকশাওয়ালা সেলিম🍃

সেলিমও স্বপ্ন দেখে। একটা রিকশা কেনার স্বপ্ন।
বারো বছর ধরে মালিকের রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে তিনটি টাকা রোজগার হলে দুটো টাকা মালিককে দিয়ে দিতে হয়। একটা টাকা থাকে ওর। সেই টাকায় বউ আর বাচ্চাটাকে নিয়ে দিনের খাওয়া হয়। মাসের বাড়ি ভাড়া! বিড়ি কেনা। আর সিনেমা দেখা। পোষায় না তাঁর। দেশ কী সে জানে না।

সভা-সমিতি-মিছিলে লোকগুলো কেন এত মাতামাতি করে তার অর্থ সে বোঝে না। পুলিশেরা যখন ছাত্রদের ধরে ধরে পেটায় তখন সে অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে। কোনো মন্তব্য করে না। তাঁর ভাবনা একটাই। একটা রিকশা কিনতে হবে।আরো একটা ভাবনা আছে তাঁর। মাঝে মাঝে ভাবে।
ছেলেটা আর একটু বড় হলে তাঁকেও রিকশা চালানো শেখাতে হবে।

সব চরিত্রগুলো মিশে যায় মিছিলে নাকি কেউ কেউ সরে যাবে আবার? কৃষ্ণচূড়া সেদিন রক্তে রঞ্জিত হয়ে লিখে গেছে যে ইতিহাস, কালের আবর্তে সেই ইতিহাস মনে পড়বেই বাঙালির।

🍃পাঠ প্রতিক্রিয়া 🍃

"একুশে ফেব্রুয়ারি" জহির রায়হানের লেখা এই ছোট্ট উপন্যাসিকা মূলত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত। ভাষার জন্য একটি জাতির আত্মত্যাগ কিংবা স্বৈরাচারী শাসকদের বিচার ব্যবস্থা। এই ছোট্ট বইটি ইতিহাসের সাক্ষী দেয় যেন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে দেশপ্রেম মানে কী। কেন সেদিন ভাষার দাবিতে এত এত প্রাণ ঝরে পড়েছিল।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মেধাবী সাহিত্যিক মনে করি আমি জহির রায়হানকে। কী অসাধারণ কলমের জোর ছিল মানুষটির। নিজের স্বল্প জীবনে যতটুকু সাহিত্যচর্চা করেছেন একেকটা যেন ঠিক জ্বলন্ত নক্ষত্র। জ্বলজ্বল করবে যা আজীবন সাহিত্যাঙ্গনে।

মানে কী অসাধারণ গভীর চেতনাবোধ দিয়ে তিনি লিখেছেন এই বইটি ভাবতে অবাক হতে হবে পাঠককে। ছোট একটা বই কিন্তু এই বইয়ের ভাষা গভীর। এঁকে অনুধাবন করতে হবে। বুঝতে হবে হৃদয় দিয়ে। যদি হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারেন শ্রদ্ধা জাগবে ভাষার জন্য জীবন দেয়া সেইসব মানুষদের জন্য।

আফসোস হয় আমাদের একজন জহির রায়হান ছিলেন, বড় অকালে চলে গেছেন। সাহিত্যে তাঁর আরো কিছু দেবার ছিল। আরো কিছু অসাধারণ কীর্তি উপহার পেতাম আমরা পাঠকেরা। জোরালো সাজেশন দিচ্ছি সবার এই বইটি পড়া উচিত।

🍃 বইয়ের নাম: "একুশে ফেব্রুয়ারি"
🍃লেখক: জহির রায়হান
🍃 ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫
Profile Image for Hibatun Nur.
159 reviews
May 14, 2023
২১ এ ফেব্রুয়ারির পটভূমিতে লেখা হলেও গল্পটা যেন ৫২ তে থেমে নেই। সময়, কাল সবকিছুর বাধা পেরিয়ে যেন প্রতি যুগের প্রতি আন্দোলনের প্রতিনিধিতে রূপ নিয়েছে বই। তথাকথিত গল্প উপন্যাসের ঘেরে আবদ্ধ করা যায় না একে। ছোট আকারের হয়েও ৫২-র ইতিহাসকে, বাঙালী জাতীয়তাবাদকে, ভাষা শহীদদেরকে, রাজাকারদেরকে এবং ভাবাবেগকে যেন শব্দের আন্দোলনের এক প্রতিবাদী বিদ্রোহী মুষ্টিতে নিয়ে এসেছে।
Profile Image for Mahmuda Monika.
14 reviews2 followers
May 27, 2021
একুশে ফেব্রুয়ারী (১৯৭০)
জহির রায়হান

জহির রায়হানের এই লেখাটা পড়া বাকি ছিল।পরপর কয়েকটা উপন্যাস পড়লেও এটা পড়া হচ্ছিলো না।তিনি "একুশে ফেব্রুয়ারী" এর এই কাহিনিটা দিয়ে এই নামেই একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু পর পর তিনটা বাণিজ্যিকভাবে অসফল সিনেমার পর এই চলচ্চিত্র প্রযোজনা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি।তিনি নিজে যখন এটি প্রযোজনা করার মতো অবস্থায় গেলেন তখন সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।এরপর '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং '৭২ এ তাঁর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া।এসব লিখতে গেলেও কেমন মন খারাপ লাগে।
জহির রায়হান ছিলেন ভাষা আন্দোলনের ১৪৪ধারা ভঙ্গ করে বের হওয়া মিছিলের প্রথম সারির ১০ জনের একজন।একুশে ফেব্রুয়ারি তাঁর চেতনার গভীরে প্রোথিত ছিল।
"একুশে ফেব্রুয়ারী", "আর কতদিন" এর প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও নির্মাণ একই রকম ছিল।ছোট ছোট বাক্য। দুই,তিন শব্দে লেখা।অনুভূতির গভীরে আঘাত করে দেয়।তিনি আসলে এই দুটোই চলচ্চিত্রের জন্য রেখেছিলেন।জহির রায়হান তাঁর চলচ্চিত্রে স্ক্রিপ্ট এমন ছোট ছোট বাক্যে সংক্ষেপে লিখতেন। Let there be light চলচ্চিত্রটিও অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল.....যেটার কাহিনিটি "আর কতদিন" উপন্যাস হিসেবে পরবর্তীতে প্রকাশ হয়।আর "একুশে ফেব্রুয়ারী" থেকে এই "একুশে ফেব্রুয়ারী"।যেখানে তিনি অল্প ভাষায়,স্বল্প পরিসরে দেখিয়ে গেলেন ভাষা আন্দোলনে শুধু ছাত্রদের আন্দোলন ছিল না...এখানে ছিল সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন এবং অংশগ্রহণ।
ছোট ছোট চিত্রকল্প তৈরি করে জহির রায়হান একেকটা শ্রেণি তুলে এনে ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাদের চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
একেকটা চরিত্রের মধ্য দিয়ে তখনকার জনগণের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক চিন্তাচেতনার প্রকৃত অবস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।রাজনীতিকে অবলম্বন করে, একটি আন্দোলনকে অবলম্বন করে ছোট ছোট বাক্যের মধ্য দিয়ে তিনি প্রকৃত একুশে ফেব্রুয়ারির একটি চিত্রকল্প রেখে গেলেন " একুশে ফেব্রুয়ারী'র মধ্য দিয়ে।যেটি পড়া শেষ করে কানে বাজতে থাকে......
"সূর্য উঠছে।
সূর্য ডুবছে।
সূর্য উঠছে।
সূর্য ডুবছে।
........................
...............................
ইউক্যালিপটাসের পাতা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে নিচে। মাটিতে।
ঝরে।
প্রতিবছর ঝরে।
তবু ফুরোয় না।"
Profile Image for Jesan.
141 reviews5 followers
June 17, 2021
পাঁচজন লোক ও তাদের জীবন আর একটা দিন।এইদিনে এই পাচ জীবনে কি হয় তাকে কেন্দ্র করে গল্পের মোড়।দিনটা ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২।সেদিন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ছাত্রদের পক্ষ থেকে হরতাল ডাকা হয়।কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে।ছাত্ররা চাই ১৪৪ ধারা ভাঙতে। তসলিম তার একজন।বাবা সরকারি অফিসার হওয়া সত্ত্বেও ছেলের রয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধ এ কথা বলার শক্তি।তাই নানা বারণ সত্ত্বেও সে যায় মিছিলে।গফুর শহরে যায় তার নিজের বিয়ের কেনাকাটার জন্য।রিকশাওয়ালা সেলিম হরতালকারীদের উপর বিরক্ত হয় একদিনের আয় হবে না ভেবে।কেরানী আনোয়ার চাপিয়ে দেয়াকে অন্যায় মনে করে, হরতালকারীদের সাথে একাত্ন হয়ে প্রতিবাদ করতে চাই। আর আছে একজন কারখানার মালিক মকবুল আহমেদ যে চাইনা হরতাল হোক,রাষ্ট্র টিকে থাকুক,তার শোষন অব্যাহত থাকুক।এটা মূলত একটি স্প্রিপ্ট বায়ান্ন এর ভাষা আন্দোলন এর উপর।এটাতে কাজ করতে পারলে হয়তো বাংলায় "ব্যাটলশিপ পোটেমকিন" এর মত সিনেমা পেতাম।কিন্তু আফসোস!! তিনি হারিয়ে গেলেন চিরতরের জন্য।
Profile Image for Mosharaf Hossain.
128 reviews99 followers
November 28, 2016
একুশের সেই কাঁপুনি ধরাতে চেয়েছিলেন লেখক, একুশকে নতুন ভাবে সামনে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তবুও জহির রায়হানের এক���ু কেন জানি মিস করেছি এখানে।
Profile Image for Yeasin Reza.
508 reviews85 followers
July 12, 2018
অপূর্ব অপূর্ব অপূর্ব!!

রিভিউ শেষ!

একুশে ফেব্রুয়ারি এর অনবদ্য কাহিনী। জহির রায়হান এর লেখা মর্মভেদী।
Profile Image for হেরা  আলীশা.
25 reviews1 follower
August 15, 2021
গাছের নীচে ছড়িয়ে পড়ে থাকা এক একটি ফুল কুঁড়িয়ে যেমন একটি মালা গাঁথা হয়,তেমনি ছিল এই উপন্যাসটিতে লেখকের বর্ণনাশৈলী।তিনি উপন্যাসটি শুরু করেছেন ঢাকা শহরেরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের জীবনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে।যারা একত্রিত হতে চলেছিল একটি কেন্দ্রবিন্দুতে।যে কেন্দ্রবিন্দুকে কেন্দ্র করেই ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ হওয়ার বৃত্তটি সফলভাবে অংকিত হয়েছিল।

প্রেক্ষাপট ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলোন, তবে তৎকালীন সময়টিতে উর্দু ভাষাকে প্রাধান্য না দিয়ে "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" স্লোগানটি তার যথাযথ রুপরেখা পেয়েছিল, সেই রুপরেখার পেছনের নাড়ী-নক্ষত্র যে সাধারণ ছাত্রসমাজ ও শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিল সেটি খুব সুন্দর ভাবে দুটে উঠেছে।

পাঠক দেখতে পাবে এই উপন্যাসে রয়েছে এক সরকারি চাকরিজীবীকে, যার চাকরী পছন্দ না। সে বাংলা ভাষায় কবিতা লিখে বাকীটা জীবন পার করে দিতে চায়।আছে একজন পুলিশ অফিসার, যার সন্তান ভাবার্থে একজন বাংলা মায়ের গর্ভে ক্ষণজন্মা।যে শুধু ভাষার জন্য জীবন দিতেই জন্মেছিল।যে সরকার বিরোধী হয়ে ভাষার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত।
আছে এক রিকশাওয়ালা, এক গ্রাম্য ছেলে গফুর।যার স্বপ্ন ছিল বিয়ে করে সংসার করবার।আর কত শত শিক্ষার্থী যাদের অবদান এই দিনটির জন্য অনস্বীকার্য!

সেদিন সকলের জীবনের চাকা যেন একদিকেই মোর নিল।রাজপথে গুলিবর্ষণ ও বাতাসে কাদানি গ্যাসের বিস্ফোরণ! মিলিয়ে গেল আবহমান বাংলার আকাশে শত শত নবীন ও তাজা স্বপ্ন।পুলিশ বাবাটি টর্চের আলোতে তার সন্তানের রক্তমাখা মুখ দেখে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল।

চারপাশে নিস্তব্ধতা-
আকাশে কিছু কাক উড়ে গেল!
সামনে বিশাল সমুদ্র।
সমুদ্রের মতো জনতা।
নগ্নপায়ে এগিয়ে চলেছে শহীদ মিনারের দিকে।
অসংখ্য কালো পতাকা।
পতপত করে উড়ছে।
উড়ছে আকাশে।
Profile Image for Nahim Sadeque.
25 reviews1 follower
August 15, 2024
কতগুলো স্বপ্ন মুহূর্তে ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। না বলা কথাগুলো হলোনা বলা। নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে শহরে পাড়ি দেয়া গফুরের আর বাড়ি ফেরা হলো না। হলো না নতুন জীবনের সূচনা। সেই সাহসী, প্রতিবাদী তসলিমের জানা হলো না রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে কিনা! নিজের চাকরী এবং পরিবার বিসর্জন দিয়ে সে-দিন ছাত্রদের সঙ্গ দিয়েছিলেন কবি আনোয়ার হোসেন। নিজের মুখের ভাষাকে বাঁচাবেন বলে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

আমি ৫২ দেখিনি, ৬৯ দেখিনি,
দেখিনি ৭১ এর সংগ্রাম।
আমি দেখেছি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান।
Profile Image for Juthi.
36 reviews
April 21, 2025
আমার ভাইয়ের র*ক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি!

একুশের ভাষা আন্দোলন বাঙালির জীবনে একটি র*ক্তাক্ত অধ্যায়। ভাষার জন্য যু*দ্ধ করতে গিয়ে বাঙালিরা নিজেদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালিরাই নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষা করতে জীবন দিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের প্রাণের বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে নিজেদের প্রাণ ত্যাগ করতে পিছ পা হয়নি। এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হতে এসেছিল আপনার আমার মতোই কিছু মানুষ যাদেরকে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়নি। তাদের প্রাণ ত্যাগের কথা কেউ কোন দিন জানেনি। ভাষার জন্য শুধু ছাত্ররাই জীবন দেয়নি, সেই সাথে জীবন দিয়েছিলো চাকরিজীবি, দিনমুজুর, কৃষক, শ্রমিক সহ অনেক মানুষ। যাদের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই, লেখক তাদেরকেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই উপন্যাসে মাধ্যমে । একুশে ফেব্রুয়ারি উপন্যাসে তাদের জীবন দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপন্যাস শুরু হয় একুশে ফেব্রুয়ারির কিছুদিন আগে থেকে। ঢাকা শহরের চারদিকে তখন মিছিল মিটিং চলছে কীভাবে পাকিস্তানের হাত থেকে নিজেদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করা যায়। গমগমে পরিবেশ,রাজপথ উত্তাল। শাসক আর শোষিতদের মধ্যে সাময়িক স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। ছাত্র সমাজ পরিকল্পনা করছে যু*দ্ধে নামার, যে করেই হোক নিজেদের মুখের ভাষা রক্ষা করতেই হবে। অন্যদিকে দিনমজুর রিকশা চালক নিজের সংসার চালানোর চিন্তায় অস্থির দেশের এমন অবস্থায় তার পেটে ভাত যাবে কীভাবে? সে চায় না কোনো যুদ্ধ - হরতাল। হরতাল হলে সে রিকশা চালাবে কীভাবে? কীভাবেই বা সে বউ বাচ্চার মুখে ভাত তুলে দিবে? সব চিন্তার পরেও নিজের ভাষার প্রতি একটা টান থেকেই যায়, এক দিকে জীবিকা অন্যদিকে ভাষা। কিন্তু প্রশ্নটা যখন মুখের ভাষার তখন সমাজের কেউ থেমে থাকেনি। পরিবার,চাকরি,ভবিষ্যতের তোয়াক্কা না করেই প্রতিবাদে নেমেছিল সেদিন। সেদিন মাতৃভাষা ছিনিয়ে আনার যু*দ্ধে শামিল ছিলেন কবি আনোয়ার হোসেন,তসলিমের মতো সাধারণ যুবক, ছিলো গফুরের মতো দিনমুজুর মানুষ। এই উপন্যাস সেই মানুষদের‌ই অসীম বীরত্বগাঁথা।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপন্যাস পড়ে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি কত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা ফিরে পেয়েছি। কত মানুষের স্বপ্ন লা*শ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল শুধু মাত্র প্রাণের ভাষাকে রক্ষার জন্য। সেইসব মানুষদের আমরা জানি না চিনি না, তাদেরকে আমরা কখনোই স্মরণ করি না। ছোট একটা বইয়ের প্রতিটি লাইন যেন চিৎকার করে বলছিলো আমরা প্রাণের বিনিময়ে রক্ষা করেছি আমাদের মাতৃভাষা তোমরা যত্ন করে রেখো। বাংলার বুক থেকে বাংলা ভাষাকে মুছে যেতে দিও না , আমাদের র*ক্ত বৃথা যেতে দিও না। একুশে ফেব্রুয়ারি উপন্যাসের মাধ্যমে লেখক জহির রায়হান বলতে চেয়েছেন আমাদের ভাষা আন্দোলন শুধু ছাত্রসমাজের‌ই আন্দোলন ছিল না। এই আন্দোলন ছাত্রসমাজ,পেশাজীবী,দিন মজুর,কবি,কৃষক সকলের আন্দোলন হয়ে উঠেছিল।উপন্যাসে সেই সময়কার বিভিন্ন মুহুর্তের বর্ণনা লেখক চমৎকার ভাবে বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। বইটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে সবকিছু আমার চোখের সামনেই ঘটছে। আমি নিজেই যেন সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী।

বই : একুশে ফেব্রুয়ারি
লেখক: জহির রায়হান
প্রকাশনী : অনুপম
পৃষ্ঠা : ৪৩
মুদ্রিত মূল্য : ১২০

রেটিং : ৫/৫
Profile Image for Detroit.
119 reviews3 followers
October 19, 2025
Absolutely phenomenal. Zahir Raihan writes in a concise way yet so poignantly. He uses very few words to describe a setting and yet I can see the picture so clearly. And the emotions, OMG the emotions were too much. I don't really want to emulate any writer's writing but this is one of those rare cases where I'd say, if only i could write like him. If only.

Bilkis Banu is such a horrible hag. But sadly people like her exist in real world.

It would've nice if I could know what happened to Selim. I mean it's pretty obvious what might have happened to him but I still wanted some concrete ending for him.
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Adnan Chowdhury.
47 reviews2 followers
April 28, 2023
খুব ই সুন্দর, খুব ই সুন্দর। জহির রায়হান এর চিরচেনা স্টাইল, অল্প কথা, সামান্য ঘটনা, কিন্তু মনে দাগ কেটে যাওয়া তীরবিদ্ধ হওয়ার মত লাইন।
৫ স্টার দিতাম কিন্তু উনার মাস্টারপিস এর সাথে তুলনা করে , আর যেহেতু এটি এক না হওয়া অসমাপ্ত ফিল্ম স্ক্রিপ্ট, সেই কষ্টে এক তারা বাধ্য হয়ে কমিয়ে দিলাম।
Profile Image for Nur Mohammad Khan.
46 reviews6 followers
October 23, 2021
প্রতিটা বাক্য যেন বুলেটের মত; আঘাত করার সাথে সাথে ফেটে চৌচির হয়ে শব্দগুলো ক্ষতবিক্ষত করে হৃদয়কে।
Profile Image for Ahnaf.
24 reviews
August 14, 2024
রক্ততে লাল রাস্তাঘাট। নিজের আপন কে হত্যা। কার জন্যে অপেক্ষা। একজন স্ত্রী দিয়েহারা।
এক কবি.........।
Profile Image for Sehemi Akhi.
65 reviews2 followers
January 17, 2025
সবচেয়ে খারাপ লাগে তখনই, যখন দেখেই একটা ছোট্ট বই পড়তে আমার এত্তগুলো দিন যায়। 🙁
Profile Image for Santanu Dutta.
175 reviews4 followers
March 16, 2024
A nice chronicle of the bloodshed day, when the people stood for the rights of our mother tongue without fear...
The book took me to my school days. In our village schools we used to celebrate the day with care and paid tributes to the martyrs. We used the sing the legendary song, "Aamar bhaier rokte rangano ekushey February..... "
Lastly I must admit I am awefully sorry to share this post in English. I am very imperfect in typing in Bangla.
Displaying 1 - 24 of 24 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.