Zahir Raihan (Bangla: জহির রায়হান) was a Bangladeshi novelist, writer and filmmaker. He is perhaps best known for his documentary Stop Genocide made during the Bangladesh Liberation War.
He was an active worker of the Language Movement of 1952. The effect of Language Movement was so high on him that he made his legendary film Jibon Theke Neya based on it. In 1971 he joined in the Liberation War of Bangladesh and created documentary films on this great event.
He disappeared on January 30, 1972 while trying to locate his brother, the famous writer Shahidullah Kaiser, who was captured and killed by the Pakistan army. Evidences have been found that he was killed by some armed Bihari collaborators and disguised soldiers of Pakistan Army.
বিশেষ কিছুই নেই উপন্যাসটি তে। তবুও কেন জানি ভাল লেগে গেল। আসলে আমাদের চারপাশে আমাদের জন্যে যে ভালবাসা কিংবা অনুভূতি ছড়িয়ে আছে তা স্বভাবতই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় আর যা পাওয়া সম্ভব নাহ তার দিকেই হাত বাড়াতে চাই বারবার। এই জিনিসটাই একটি ত্রিভূজ(কিম্বা চতুর্ভূজ) প্রেমের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন জহির রায়হান। উপন্যাস এর শেষে কাসেদ এর অসহায়ত্ব খানিকটা সহমর্মিতা জাগায় ওর জন্যে। তবে একটা কথা আমিও বুঝতে পারলাম, যেই সময়ে লেখা উপন্যাসটি, তার তুলনায় এর প্লটটি অনেক আধুনিক।
রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ যত না প্রেমের উপন্যাস, আসলে এটি তার চেয়ে বেশী করে প্রেমহীনতার উপন্যাস! কাহিনীর মুখ্য চরিত্র কাসেদ আহমেদ একজন ক্লার্ক, অবশ্য তার সাথে সে কবিও! তবে তার প্রথম পরিচয় যতট না উচ্চকিত, দ্বিতীয় পরিচয় ততটাই অবদমিত! কবি সে আপন মনে, নিজের ভাবনার ঘোরে। কাসেদ স্বপ্ন দেখে জাহানারা কে বিয়ে করার, ঘর পাতার! কিন্তু জাহানারার নাগাল সে পায় না। জাহানারার প্রেম তার জীবনের মরুভুমি তে আলেয়ার মত, তাকে ছুটিয়ে মারে, ধোঁকা খাওয়ায় অথচ কাসেদ তৃষ্ণার্তের মত সেই মরুদ্যানের আশা ছাড়তে পারে না।
কাসেদের সহায় হতে পারত শিউলি যে কাসেদকে হয়তো চেয়েছিল। কিন্তু জাহানারার প্রতি কাসেদের অন্ধটান শিউলিকেও তার মৃদু সৌরভটুকু ছড়াতে দেয় না। শিউলি এগিয়ে এসেও ফিরে যেতে বাধ্য হয়, নিজেকে সম্মানের সাথে সরিয়ে নিতে সে তার চোখের জলের সাথে হাসির হররা টুকু মিশিয়ে নেয়! শিউলির প্রেম চিনতে না পারার দায়টুকুও একান্তভাবে কাসেদের। এমন বিভ্রান্ত কাসেদের সহায় হয়ে দাড়ায় শেষ পর্যন্ত নাহার, যে কিনা শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় কাসেদ কে পথ দেখাতে ছুটে আসে!
সুপাঠ্য এই উপন্যাসে পুরুষের ছেলেমানুষীর সাথে নারীর রহস্যময়তা মিশে গিয়েছে। পুরুষ শুধু তার আকাঙ্খিত নারীর প্রেমটুকুই চায় না, সে নারীর সোচ্চার উজ্জ্বল উপস্থিতির সাথে নারীর আলো-আবছায়া মাখা শ্যামলিমা টুকুও চায়। সে নারীর ভেতর ঘর দেখতে চায়, সে নারীর ভেতর বাহিরটুকুও দেখতে চায়। সে নারীর মধ্যে ঘরনী কে খোঁজে, সে প্রেমের অবসরে ঘরনীর মধ্যে জননীকেও খোঁজে! আসলে পুরুষের খোঁজ কোথাও শেষ হয় না, ছেলেমানুষের মতই সে বিভ্রান্ত। শেষ বিকেলের আলো-আধাঁরে তাকে পথ দেখানোর দায়িত্বটুকুও শেষ পর্যন্ত তাই কোনো নারীকেই নিতে হয়!
জহির রায়হানের 'শেষ বিকেলের মেয়ে’ উপন্যাসের সাথে ‘বরফ গলা নদী’র কিছু সাদৃশ্য আছে। উভয় ক্ষেত্রেই নায়ক কাসেদ বা আহমদ কিছুটা বিপর্যস্ত, সে হৃদয়ের দিক থেকে হোক বা জীবনের আর পাচঁটি চাহিদার দিক থেকে হোক! তাছাড়া, লেখক লিলির মতই নাহার চরিত্রটি সম্মন্ধে বেশী কিছু বলেন না। একটি হঠাৎ অঘটনের পর তাদের কে চমকের মত হাজির করেন মসীহা রূপে। উভয় ক্ষেত্রের এই সাদৃশ্যগুলি বোধহয় লেখক জহির রায়হানের কুশলী কলমের পাশাপাশি পরিচালক জহির রায়হানের মেলোড্রামাটিক অবদান!
সমগ্র কেনা ছিল সে অনেকদিন হল। পড়ব পড়ব করে পড়া হয়নি। আজ অনেক বৃষ্টি। কোনটা পড়ব কোনটা পড়ব করতে করতেই চোখ গেল লাল বইটার উপর। হাজার বছর ধরে পড়েছিলাম সে আজ থেকে ১১-১২ বছর আগে। তারপর থেকে এই বই ওই বই করে আর জহির রায়হান পড়া হয়ে ওঠেনি। যদিও হাজার বছর ধরে প্রচন্ড ভালো লেগেছিলো। বইটা পড়তে দিছিলো এক বড় ভাই। তখন বই কিনতামনা বা তেমন পড়তামও না। মাসে ছ'মাসে দুই একটা করে পড়া হয়ে উঠত। সেসময়ই ভেবে ছিলাম সব কটা বই কিনব তারপর জহির পড়ব।
গ্রামীন প্রকৃতি বরাবরই আমার পছন্দের। প্যাস্টোরাল লেখা গুলো উপভোগ করি খুব। শরৎ, রবীন্দ্র, বিভূতি সেই জন্যই মনে হয় অন্যদের চেয়ে বেশি ভাল লাগে। একটা জিনিস খেয়াল করেছি যারা গ্রামীণ পরিবেশ দেখেনি বা সে পরিবেশে বড় হয়নি তারা এগুলা কল্পনা করতে পারেনা বলে হয়তো তাদের কাছে কিছুটা একঘেয়ে লাগে। তাদের কাছে পুরনো হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোর স্মৃতি ধরা দেয়না বলেই হয়তো এমন হয়।
না শেষ বিকেলের মেয়ে গ্রামীণ না। তবুও সে সময়কার শহর বা সে সময়কার আবেশ অনেকটাই গ্রামীণ। এ কয়দিন জহির নিয়েই থাকব বলে উপরের কথা গুলো এটাতেই বলা।
বৃষ্টির দিনে বইটা বের করেই প্রথমে দেখলাম বৃষ্টির মধ্য দিয়ে গল্প শুরু। ভাবলাম ভালোই হল। অন্তত নায়কও আমার মতো বৃষ্টির মধ্যেই। জহির রায়হান সমন্ধে ধারনা আমার আগে থেকেই ভাল। যেই বই পড়ে গ্রামীন সমাজের এত কথা বললাম সেটা পড়ার সময়ই অনুভব করেছিলাম জহির রায়হানের বই কথা বলে, সম্মুখে একটা পর্দা দাড় করায়ে রাখে যে পর্দায় উপস্থিত সব কিছু ঘটতে দেখা যায়। এটাতেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ছোট্ট করে কয়েক পৃষ্ঠার মাঝে এত সাবলিল করে অতগুলো জিবনের ঘটনা যেন চোখের সামনে কেউ অভিনয় করে দেখালো বলে মনো হলো। বিরক্ত হবার মতো ছোট্ট একটা বড়তি কথাও কোথাও নেই। গল্পের শুরু থেকে শেষ অবদি সংসার, চাকরি, প্রেম, দারিদ্রতা, মায়া, মমতা, গোপোনীয়তা সব কিছু উপভোগ করার মতো। এক কথায় অসাধারণ লেগেছে আমার।
এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। কাজ নাই তাই রচনা লিখে ফেললাম 😑😐
প্রেমের উপন্যাস কেন যেন বেশি পরিমানে প্রেমহীনের হয়ে যায়। মানুষের জীবনে সম্পর্কের ডাইনামিকস গুলো কখনো কি চেঞ্জ হয়? হোক সে ৬০ এর দশক কিংবা ২০২৪ সাল। মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার খুব কি অমিল এসেছে এই ৮০ বছরে? আমার মনে হয়না।
জহির রায়হান আজ থেকে ৮০ বছর আগে যে বই লিখে গেছেন তা আমার কাছে সামান্যতম অতীত আশ্রীত বলে মনে হয়নি। লেখকের সাইকোলজিক্যাল বিশ্লেষন আর দারুন লেখনি প্রতি পৃষ্ঠাতে আমাকে আকড়ে ধরে রেখেছিল৷
কেমন সাধারণ...তবু অসাধারণ, অসামান্য।জহির রায়হানের লেখা তো আমার কাছে লাগে সিনেমার থেকে বেশি সিনেমা, চোখের সামনে বড় পর্দায় ঝকঝক করতে থাকে কি বলে যাচ্ছেন গল্প বলিয়ে। এই উপন্যাসটাও তার ব্যতিক্রম নয়। সুন্দর, গোছানো, সহজপাঠ.... যা যা জহির রায়হানের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট, সব উপস্থিত।
এই যে অনেক মানুষের একটা অদ্ভুদ আর সাধারণ স্বভাব- বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না; মনে মনে রচনা লেখা তো মুখ দিয়ে সারাংশও বের হয় না ফলে ব্যক্তিগত জীবনে ঝড়-বৃষ্টি লেগেই থাকে। বিশেষ করে এর উদাহরণ সিনেমা নাটকে বেশ দেখা যায়, তখন দর্শকেরা উচ্চস্বরে বলেই ফেলে- আরে বোকা মনে মনে না বলে সামনাসামনি বললেই তো হয়। নাহ! বলাবলি আর হয় না; ভুল বোঝাবোঝি আর অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে দেদারসে দিন চলে যায়।
এই ব্যাপারটাকে সুন্দর করে তুলে ধরার জন্যই দুইটি তারা। নচেৎ এই বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না মূলক বর্ণনার মধ্যে একটু পরপরই মৃদু হাসি, মিটিমিটি হাসি, সহসা শব্দ করে হাসি, মুখ টিপে হাসি, চোখ টিপে হাসি, ঠোঁট বাঁকানো হাসি প্রভৃতি হাসির ছটা এবং একটু পর পরই বদলে যাওয়া কাসেদের অস্থির মন দেখে বড়ই বিরক্ত হয়েছি।
উপন্যাসটা পড়া শুরু করতেই ভাল লেগে যায়। আকাশ-আকাশের রং-বৃষ্টি থেকে হাঁটু পানির বাস্তবতায় নেমে আসাটা বেশ ভাল লেগেছে। ছোট কলেবরের উপন্যাসটি শেষ করতে বেগ পেতে হয়নি কোথাও। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে আধুনিকতা লেখাটিতে প্রকাশ পেয়েছে তাকে যদি সে সময়ের বাস্তবতা হিসেবে ধরে নিই, তাহলে আমাকে বলতেই হবে যে বর্তমান মধ্যবিত্ত সমাজ এর চেয়ে কম আধুনিক। কাহিনীর ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হবে, কাহিনীর একেবারে শেষপ্রান্তে মাত্র দুটি সংলাপে লেখক যখন নাহারকে উপন্যাসের নায়িকার আসনে বসান, সেটা অনুমানযোগ্য হলেও নাড়া দেবার মত। তবে উপন্যাসের নায়ক কাসেদের আগাগোড়া নির্লিপ্ততা পীড়াদায়ক। সব মিলিয়ে এই উপন্যাসটি হাতে আমার বিকালটি সুন্দর ছিল... :)
আপনার জীবনে অনেক মেয়েই আসতে পারে যারা নিজেদের রঙে আপনার শেষ বিকেলকে তাদের মত রাঙিয়ে দেবে। তবে শেষ বিকেলের মেয়ে তাকেই বলতে হয় যে দিনশেষে আপনার আশ্রয় হয়।
জাহানারা, শিউলি, সালমা, মকবুল সাহেবের মেঝো মেয়েকে পরাজিত করে নাহার জয়ী হয়েছে। নাহার শুদ্ধ মানুষ পেয়েছে। নাহারের জীবন ধন্য।
নাহার, চল, ও-ঘরে চল। আমি কাসেদ, তুমি বড় ভাগ্যবতী নাহার।
"যার নাম জীবন থেকে মুছে গেছে, তাকে স্মৃতির পাতায় ঠাঁই দিয়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।"
"লড়াই শুধু রাজার সঙ্গে রাজার, একজাতের সঙ্গে অন্য জাতের আর এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশেরই হয় না। একটি মনের সঙ্গে অন্য একটি মনেরও লড়াই হয়।"
"মনও আমার। আমার নিজের। একজন চায় স্বার্থপরের মতো শুধু পেতে। অন্যজন পেতে জানে না, জানে শুধু দিতে। বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই তার আনন্দ।"
জহির রায়হানের লেখা মানেই পুরো বাস্তবতার প্লটে জীবন গল্প। এই উপন্যাসটিও ব্যতিক্রম নয়। মধ্যবিত্ত তরুণ সমাজের একদল ছেলে-মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের বিভিন্ন রুপ ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে।উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় নিজের সাথে মিল খুঁজে পেয়েছি বলে হয়তো সাধারণ লেখাটিও অনেক অসাধারণ হয়ে উঠেছে।
উপন্যাসটির মুখ্য চরিত্র কাসেদ। কাসেদ, জাহানারা, শিউলি, সালমা, শেষ বিকেলের মেয়ে ও নাহার এই কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমে উপন্যাসের কাহিনীটি এগিয়ে গিয়েছে। কাসেদ পুরোপুরি একতরফা ভালোবাসতো জাহানারাকে। কিন্তু তা একপাক্ষিকই ছিল।এই সম্পর্কে অভিমান, অনুযোগের সুর থাকলেও অধিকার বিশেষ ছিল না। আর শিউলির মনের কথা বোঝা মুশকিল ছিল। কাসেদ নিজের মনের সাথে লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে যখন শিউলির কাছে ধরা দিল তখনই প্রত্যাখ্যান করলো শিউলি। সালমা ভালোবাসতো কাসেদকে। কাসেদ কখনো বেসেছিলো কিনা জানিনা তবে একটা সময় কাসেদের আফসোস হয়েছিল সালমার অবাস্তব আবদার না রাখতে পারায়। শেষ বিকেলের সেই সহজ সরল মেয়েটিও কাসেদের হতে পারতো কিন্ত তা আর হয়নি। সবকিছুকে ছাপিয়ে নাটকীয় মোড় নিল উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠাটি। সেখানে দেখা গেল;একাকী কাসেদের কাছে নাহারের ফিরে আসা ;যার কখনোই কাসেদের কাছে ভালোবাসার কোনো দাবি ছিল না। এখানে অনেক পাঠকেরই নাহারের ফিরে আসা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ থাকতে পারে। তবে আমি এ ব্যাপারে বেশি পক্ষপাতি নই।
লেখক উপন্যাসের একটি জায়গায় লিখেছিলেন,
"চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে সাপে-নেউলের সম্পর্ক রয়েছে যে.."
এই লাইনটির ব্যাখ্যা করেই আমার মনে হলো আসলেই মানুষ যা চায় তা সে পায় না। তাই নাহারের ফিরে আসাটা এবং কাসেদের গ্রহণ করাটা স্বাভাবিক। যে জীবনভর নিষ্ঠার সাথে কাসেদের সেবা করেছে কিন্তু ভালোবাসার দাবি তুলেনি, আজ সে শেষ বিকেলে ফিরে এসেছে। তাকে আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।
কেন জানিনা ব্যক্তিগতভাবে মানিক বন্ধোপাধ্যায়ের 'চতুষ্কোন' উপন্যাসটির সাথে মিল লেগেছে। আমি 'চতুষ্কোন' এর রিভিউ লিখলেও বোধহয় এমন কিছুই লিখতাম।
পড়তে পড়তে কখন গল্পের ভিতরে চলে গেছি জানিনা, একটা সময় দেখলাম এখানেই ইতি! খুব সাধারণ একটা গল্প, বিশেষ কিছু নেই এতে কিন্তু শেষ হওয়ার পর মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করছে।
এতো ভালো লাগে নাই।মধ্যবিত্ত আবেগ,প্রেম,মায়া যেভাবে পাব ভাবছিলাম তার প্রায় কিছুই ছিল না,কেমন জানি।সাদামাটারও একটা আলাদা সৌন্দর্য্য থাকে,এখানে একদমই ছিল না।উপন্যাসের নামটা আমার অনেক ভালো লাগে।চমৎকার একটা নাম।গল্পটাও তেমন হলে খুব ভালো লাগতো।
উপন্যাসিকার মূল চরিত্র কাসেদ বয়সে যুবক, চাকুরী করে কেরাণীর। পুরোটা সময় জুড়েই কাসেদ আশ্রয় খোঁজে বেড়িয়েছে, ভালোবাসার আশ্রয়। জাহানারা, যাকে কাসেদ ভালোবাসে সেই নারীর কাছে সে পেয়েছে অবজ্ঞা। অপরদিকে অন্য এক নারী যে কিনা কাসেদকে ভালোবাসে তার প্রতি কখনোই অনুভূতি খোঁজে পায়নি কাসেদ।
দ্বিধান্বিত চরিত্র এই কাসেদকে জহির রায়হান উপস্থাপন করেছেন যুবক সমাজের প্রতিভূ হিসেবে। পছন্দের মানুষের কাছে বারবার অবজ্ঞা পেয়ে হতাশ কাসেদ অন্য নারীর সঙ্গে সংসারের কথাও ভেবেছে। সেসব ভাবনা ক্ষণিকের, জাহানারার প্রসঙ্গ এলেই তোলপাড় হয়ে যেত দুনিয়া। সেই অস্থির ভুবনে এমন কাউকেই দরকার ছিলো যে কাসেদকে বুঝতে পারে, সে হিসেবে সমাপ্তিটা আচমকা কিন্তু সুন্দর।
জহির রায়হানের লিখায় ভালোবাসা হচ্ছে তীক্ষ্ম ফলার মতো যা ক্রমাগত যন্ত্রণা দিয়ে যায়। এটাও সে ধাচেরই। তবে যুবক বয়সের প্রেমও পুরোপুরি যৌনতাহীন মানে সংলাপেও সেই ছিটেফোঁটা না থাকাটা একটু অদ্ভুত ঠেকেছে। ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেলেন কি?
জহির রায়হানের প্রথম উপন্যাস - মূল গল্পের প্রেক্ষিতে আমি রেটিং দিব ২, কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক এস্পেক্ট থেকে দিব ৩ । এজরা পাউন্ডের cino কবিতা টা মনে পড়ছে , "Bah! I have sung women in three cities, But it is all the same; মূল চরিত্র কাসেদ এর ব্যাপার টা যা মনে হয় , তার জীবনে সমসাময়িক বিভিন্ন নারীর প্রভাব , তার আকাঙ্ক্ষা টা মূলত জীবনে কেউ একজন থাকুক , সেই কেউ একজন কে যখন সে সচেতনভাবে ভালোবাসার নাম দিচ্ছে তখন সে জাহানারা - উপন্যাসে দেখা যায় তার মাইন্ডের একটা অংশ সবসময়ই জাহানারার সাথে যে কোন পরিস্থিতিতে কথোপকথনে রত ; জীবনে শান্তিময় উপস্থিতির কথা যখন সে ভাবে তখন তার মনে হয় সেও তো পারত মকবুল সাহেবের মেঝো মেয়েকে বিয়ে করতে ; আবার যখন তার মনে হয় সে জাহানারার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত , তখন তার নিগৃহীত আবেগের আশ্রয় হিসেবে সে শিউলি কে দেখে ; কাসেদ চরিত্র কে তার আবেগের জায়গা থেকে মোটেও স্ট্যাবল মনে হয় না - তার চিন্তাগুলো অনেক তাড়াতাড়ি রিভলভ করে , সুইচ করে । জাহানারার প্রতি তার যে আবেগ সেটাও বিভিন্ন ছোট ছোট কথায় রদ হয়ে অন্য কোথাও নিজেকে accommodate করতে চায় । একদম শেষে যেখানে পুরো উপন্যাসে নাহারের প্রতি তার কোন সচেতনতা বা এটাচমেন্ট দেখা যায় না , সেখানে নাহার কে গ্রহণ , এ ধরণের মানসিকতা এমন মনে হয় যে সে চায় তার সাথে কেউ একজন থাকুক কিন্তু তার নিজের আবেগ জনিত চাহিদা যদি তার আকাঙ্ক্ষিত মানুষের থেকে পূর্ণ হয় তাহলে যে থেকেছিল সেই মানুষ টাকে সুইচ করে সে নতুন আবেগের মানুষটার কাছে যাবে ~
যতটা আশা নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম সেটা পূরণ হয়নি আসলে। তবে শেষ বিকেলের মেয়েকে হয়তো প্রেমের উপন্যাস বললে ভুল হবে। কারণ আমার মতে সত্যিকারের প্রেম উপন্যাসটিতে প্রকাশ পায়নি। কাসেদ চরিত্রটি এক পর্যায়ে যেয়ে ভালোবাসার কাঙাল মনে হয়েছে। মনে হয়েছিল সে তার নিজের অনুভূতি নিয়ে নিজেই বড্ড দ্বিধাদ্বন্দে ছিল।
সম্ভবতঃ এটা জহির রায়হানের প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসের মুল পুরুষ চরিত্রটিকে বোঝার চেষ্টা করলাম, সে এরকম কেন তার ভালো কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলাম না। সে কি চায় সেটা মনে হয় নিজেও জানে না, সব সময়ই একটা কাল্পনিক জগতে তার বাস। নারী চরিত্রগুলো উপন্যাসটির প্রাণ। তবে প্রথম থেকেই যেরকম সমাপ্তি মনে মনে চাচ্ছিলাম, সেরকম ভাবেই শেষ হয়েছে দেখে ভালো লেগেছে। এক বিকালের মধ্যে পড়ে ফেলার মত বই।
একজন সাধারণ ক্লার্ক কাসেদ। কেরানি জীবন-যাপনের মাঝে ভাবুক হিসেবেই সে বেশি স্বছন্দ। আর এই ভাবুক মনেরই পরিণতি জাহানারার প্রতি তার একপাক্ষিক ভালোবাসা। কিন্ত, তারপরেও তার মনের মধ্যে দানা বাঁধে, কখনো শিউলি, কখনো মকবুল সাহেবের মেজো মেয়ে কখনোবা ছোটোবেলার সাথী সালমা। তবু, নিজের কল্পনার তোড়ে সাজানো সংসারের মতো কিছুতেই বাস্তব না মেলায়, কাসেদ হয়ে ওঠে ভগ্ন-প্রায়। এবং এই অবস্থা থেকে তাকে মুক্তি দেয়, নাহার। নাহার কে বা কেন তার এই কাজ, সেই বিস্তৃতি টুকু বইয়ের জন্য তোলা থাক। পাওয়া-না পাওয়ার এক অদ্ভুত দোলাচলে এ কাহিনীর প্রেক্ষাপট। শেষ বিকেলের মতোই নরম, মনখারাপে ঘেরা আগাগোড়া প্রতিটা পাতা। ঠিক ভালোবাসার জোড়ালো কোনো ভূমিকা নেই এখানে। টুকরো টুকরো অনুভূতির কোলাজ তৈরী হয়েছে যেন, তা ভালো-মন্দ মিশিয়েই।
নিজেকে জহির রায়হানের নিবিড় পাঠক বলতে দ্বিধা নেই। কারণ এখনো অব্দি উনার যত লেখা ছাপা আছে বা বাজারে পাওয়া যায়, সব কয়টি একবারের জন্য হলেও পড়া আছে। খুঁজে পেতে পড়ে নিয়েছি। খুঁজে খুঁজে পড়েছি,কারণ জহির রায়হান পাঠ করে আমি অভিভূত হই। চমৎকার অভিজ্ঞতা।
❝ শেষ বিকেলের মেয়ে ❞ দীর্ঘ দিন আগে পড়েছি,সম্ভবত ইন্টারে থাকতে। বলা ভালো, উপন্যাসের কথকতা সব ভুলে মেরে দিয়েছি! তাই আবার পড়তে নিলাম।
এবার পড়তে নিয়ে একটা বড়সড় হোঁচট লাগলো! ❝ শেষ বিকেলের মেয়ে ❞ আমার কাছে জহির রায়হানের সবচে দূর্বল লেখা মনে হয়েছে। যে জহির রায়হান কে আমি নিবিড় ভাবে পাঠ করেছি, তাঁকে এখানে পাই নি! বড় অভাব বোধ করেছি! বড্ড বেশি!
কাসেদ একজন মধ্যবয়স্ক যুবক। কেরানির চাকরি। জীবনে একমাত্র প্রেম জাহানারা। সে নিয়মিত জাহানারার কাছে যায়,জাহানারা আসে। তবুও কেউ কারো অব্যক্ত কথা আর জানাতে পারে না! সেখানে আসে শিউলি। আসে সালমা। সালমার হৃদয় উজার করা ভালোবাসা বুঝে না কাসেদ। অথচ সে উপেক্ষা নিয়ে ও ভালোবেসে যায় জাহানারাকে। সেই জাহানারার আবার প্রেম সেতারমাষ্টারের সাথে! এতটুকু পর্যন্ত তাও মানলাম।
নাহার কাসেদের বোন,যদিও সেটা দূরসম্পর্কের । কিন্তু এক ঘরে,ছোট থেকে তারা ভাই বোন হয়ে বড় হয়েছে। আবার সেই নাহারের গোপন প্রেম কাসেদের সঙ্গে! কিন্তু কাসেদ সেটা জানত না। হঠাৎ একদিন রঙিন বিকেলে,পাখা মেলে হাজির হয় নাহার,কাসেদের বউ হতে! কেমন জানি না ব্যাপারটা? এখানেই আমি বেশি হতাশ হয়েছি! অন্য ভাবে কি শেষ করা যেত না উপন্যাস টা?
জহির রায়হান আমার ভীষণ, ভীষণ প্রিয় লেখক। প্রিয় ব্যক্তিত্ব। উনার সব লেখা, আমি আবার পড়ব। কিন্তু ❝ শেষ বিকেলের মেয়ে ❞ দিকে আর হয়ত হাত যাবে না।
কাসেদ কর্মসূত্রে একজন কেরানি এবং মননে একজন কবি।তার ছোট্ট সংসারে রয়েছে ধর্মপরায়ণ মা আর দূরসম্পর্কের বোন নাহার।উপন্যাসের নামের সাথে মিল রেখেই উপন্যাসের গল্প কাসেদের জীবনে আসা মেয়েদের নিয়ে।আধুনিক ভাষায় কাসেদের ক্রাশ জাহানারা,তার ছোটবেলার রোমান্টিসিজমের সাথী সালমা,ব্যবহারে দারুণ স্বাভাবিক মেয়ে শিউলি আর নাম না জানা অফিসের হেড ক্লার্কের মেয়ে - এদেরকে নিয়েই কাসেদের জগৎ।এদেরকে নিয়েই উপন্যাস।
উপন্যাসের বিষয়বস্তু শুনতে অনেকটা স্থূল মনে হলেও উপন্যাসটি মোটেও স্থূল বা সস্তা নয়।যার শতভাগ ক্রেডিট সুলেখক জহির রায়হানের লেখনীর।জহির রায়হান সবসময়ই নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের গল্প বলতে ভালোবাসতেন,এখানেও সে ধরনেরই কয়েকটি পরিবারের দেখা মিলে।ধনী পরিবারের প্রতি কিছুটা বিদ্বেষ তার লেখনীতে স্পষ্ট।বইটির আরেকটি বিষয় ভালো লেগেছে তার সহজ স্বাভাবিক গতি।কোন চরিত্রকেই আরোপিত মনে হয়নি।চরিত্রগুলোর মধ্যেকার কথোপকথন,কাসেদের কাব্যিক মনের কর্মকান্ডও উপভোগ্য।
শেষপর্যন্ত কাসেদ তার জীবনসূত্র কার সাথে বাঁধলো সেটা আগে থেকে অনুমান করা গেলেও বইটি পড়ার আগ্রহ একটুও কমেনি।বলবো না যে এটা জহির রায়হানের অন্যান্য উপন্যাসের মতো ভালো তবে এটাও খারাপ নয়।
বইয়ের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়ই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে কার সাথে কাসেদের বিয়ে হবে শেষমেষ। যাই হোক, তারপরও পুরোটা পড়লাম। খুবই বিরক্ত হয়েছি। কাসেদ চরিত্রটার মত বিরক্তিকর চরিত্র আমি অনেকদিন পড়ি নি। এই ছেলে নিজেকে প্রব্যাবলি প্রিন্স চার্লস বা তার সমতুল্য মনে করে। এমন self-absorbed ছেলে যদি এভারেজ ছেলেদের প্রতিচ্ছবি হয়, তাহলে I'd never wanna be a guy, lol. So glad about what Shiuly did to him. He deserved that. ২ তারা দিয়েছি দুটো চরিত্রের জন্য, কাসেদের মা আর নাহার।
This entire review has been hidden because of spoilers.
মনে রাখার মত ছোট্ট একটি উপন্যাস। গল্প বলে যাওয়ার দারুণ ভঙ্গি। কিন্তু কাসেদের 'মেয়ে দেখলেই প্রেমে পরে যাওয়া' ভাবভঙ্গি খুব বেশি অবাস্তব মনে হল, বৃহদার্থে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেরা কি আসলেই এমন? কিছুটা মেলোড্রামা মনে হল। তবে উপন্যাসের মাঝে মাঝে সারা জীবন মনে রাখার মত কিছু কথা আছে, যেমন-'শিউলির ঠোঁটের একটি কোণে একসুতো হাসি জেগে উঠলো সহসা। সে হাসি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লো তার পুরো ঠোঁটে। চিবুকে। চোয়ালে, চোখে সারা মুখে' বা'একটু আগে এখানে তিনটি প্রাণী ছিল। এখন দুটো। একটি হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে'। দারুণ :)
ভালো লেগেছে, তবে প্রথম যেটা পড়েছিলাম ওনার, আমার কাছে সেটা এর চেয়ে ভালো লেগেছিল। অনেক আলসেমি করে পড়েছি। এক বসায় পড়ে শেষ করার মত বই। Next target, আরেক ফাল্গুন। :D
একজন সাধারণ কেরানী। সাধারণ মানুষ। একটা সাধারণ গল্প। তারপরও অসাধারণ। অসাধারণ লেখনী। সুখপাঠ্য ছোট একটা বই। শেষ বিকেলের মেয়েটা কে? জাহানারা? শিউলি? না অন্য কেউ?
“হাজার বছর ধরে” উপন্যাস পড়ে ভক্ত বনে গিয়েছিলাম জহির রায়হানের। কিন্তু এরপর আর কোনো লেখা পড়া হয়নি। এত বছর বাদে এই উপন্যাস ধরেছিলাম। এক নিঃশ্বাসে পারিনি বটে, তবে টানা তিনদিনে পড়ে শেষ করলাম লেখাটা। বেশ তৃপ্তি পেলাম। “কবি”, “পুতুল নাচের ইতিকথা” পড়ার পর প্রেমের উপন্যাসের মানদণ্ডই বদলে গেছে আমার কাছে। সেই মানদণ্ডে যাচাই করলে “শেষ বিকেলের মেয়ে” আমাকে ভালোই তৃপ্তি দিয়েছে।
উপন্যাসের নায়ক কাসেদের মনের ব্যবচ্ছেদ যেভাবে করেছেন লেখক, আমি মুগ্ধ। তবে উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলো তেমন খোলাসা মনে হয়নি আমার কাছে। বারবার মনে হয়েছে, কাসেদের চরিত্রের মত আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা দরকার ছিল নারীদেরকে। এই উপন্যাসের নাম "শেষ বিকেলের মেয়ে" দেখে ভেবেছিলাম, কোনো মেয়ের জীবন কাহিনি নিয়ে রচিত প্রেমোপাখ্যান। কিন্তু না, পুরো কাহিনি জুড়ে ছেলে-মেয়ের সম্পর্কের জটিলতা, মান-অভিমান, একতরফা প্রেম, বন্ধুত্বের খোলসে ফ্লার্টিং ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। আর সব কাহিনির মূলে বসে রয়েছে কাসেদ।
ভালো লেগেছে মানুষের জীবনের বিভিন্ন সম্পর্কের টানাপোড়েন আর প্যাঁচগোছ নিয়ে লেখকের চিন্তাভাবনা। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, নিজের জীবনে না ঘটলে এভাবে মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে লেখা সম্ভব না। তাহলে কি জহির রায়হানের জীবনে এতো ধরনের কাহিনি ঘটেছিলো? তারপরই মনে হল, ঘটেছে তো আমার জীবনেও! ঘটেছে কম বেশি সবার জীবনেই। শুধু কেউ পারে অভিজ্ঞতাগুলোকে চমৎকারভাবে উপন্যাস হিসেবে ফুটিয়ে তুলতে, আর বাকিরা পারে সেই উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হতে। ক্ষেত্রবিশেষে নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে।
উপন্যাসের শেষ পরিণতি দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছি, একটু অসন্তুষ্টও হয়েছি বটে। এভাবে না দেখালেও লেখক পারতেন। একটু বেশি নাটকীয় হয়ে গিয়েছে। অথবা লেখক হয়তো (স্পয়লার এলার্ট) বিয়োগান্তক কোনো পরিণতি পছন্দ করতে পারছিলেন না!
জহির রায়হানের গল্প পড়া মানেই জনজীবনের প্রতিচ্ছবি বাস্তব হয়ে ধরা দেয়া, সাথে উপহারস্বরূপ অনবদ্য লেখনশৈলী তো আছেই। এতটা ঝরঝরে বাক্যবুনন খুব কমই দেখেছি। রোমান্টিক উপন্যাসের অন্ধভক্ত না হলেও বেশ উপভোগ করেছি, প্রেম এবং নারীবিষয়ক প্রচ্ছন্ন মনস্তত্ত্ব লেখক দারুণভাবে প্রকাশ করেছেন। শেষের টুইস্টটা অবশ্য আগেই অনুধাবন করেছিলাম। মজাই পেলাম :3