Anisul Hoque (Bangla: আনিসুল হক) is a Bangladeshi screenwriter, novelist, dramatist and journalist. He graduated from Bangladesh University of Engineering and Technology, trained as a civil engineer.
His inspiration in journalism and writing started during his student life. After his graduation he joined to serve as a government employee but resigned only after 15 days. Instead he started working as a journalist. He attended the International Writing Program at the University of Iowa in 2010. Currently, Hoque is working as an Associate Editor of a Bengali language daily, Prothom Alo.
His novel মা was translated in English as Freedom's Mother. It was published in Maithili too. He was honored with Bangla Academy Award in 2011.
বইটির শুরুতে যে কথাগুলো লেখা আছে, পড়ে বেশ উৎসাহিত হয়েছিলাম। এক ঔপন্যাসিক লিখছেন তাঁর প্রিয় কবির জীবনকে নিয়ে, ওদিকে উপন্যাসের পৃষ্ঠাসংখ্যাও ১৩৩, কাজেই মনের মধ্যে প্রত্যাশার পাগমার্ক বেশ গভীর হয়েই ফোটে। বইয়ের শেষে দুই পৃষ্ঠা জুড়ে বিবলিওগ্রাফি দেয়া, আশাবাদ আরো গাঢ় হয়।
কিন্তু বইটা যতই পড়ি, সেই আশার লণ্ঠনের চারপাশে কুয়াশা জমে।
বই শুরু হয়েছে জীবনানন্দের বালকবেলার বর্ণনা দিয়ে। ঔপন্যাসিক আগাগোড়া রচনা করেছেন জীবনানন্দকে "আপনি" সম্বোধন করে ... আপনি করলেন, আপনি বললেন, আপনি হেসে উঠলেন ... জীবনানন্দকে মুখোমুখি বসিয়ে যেন তাঁকে পড়ে শোনানো হচ্ছে তাঁর জীবনকাহিনী, কবিতা, তাঁর ডায়রির পাতা। ভঙ্গিটি অভিনব, কিন্তু ঠিক যেন পুরোপুরি ফোটেনি সবকিছু, চিনি-লিকার-দুধ মেশেনি ঠিকমতো। কেন এমন মনে হলো, সে প্রসঙ্গে আসছি।
এ কথা সত্য, প্রচুর তথ্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থ থেকে, কিন্তু সে তথ্য সন্নিবেশনের কাজটি যেন ঔপন্যাসিক পটু হাতে করে উঠতে পারেননি। উপন্যাসটি দাঁড়িয়েছে একটি ড়্যানসমনোটের মতো, এক এক ফন্টে এক একটি অক্ষর দিয়ে তৈরি করা বাক্যসমারোহের মতো, একটি তথ্যের পরিবেশন মসৃণভাবে মিশতে পারেনি পরবর্তী তথ্যের সাথে। কোথাও দেখতে পাচ্ছি সরাসরি উদ্ধৃত করা হচ্ছে ড, আলী আকবর খানের বই থেকে, কোথাও জীবনানন্দের উপন্যাস থেকে, কোথাও তাঁর ডায়রি থেকে, কোথাও অপর কোনো গবেষণাগ্রন্থ থেকে, উদ্ধৃতির ভিড়ে উপন্যাসটি লজ্জাবনতা কিশোরীর মতো মুখ লুকিয়েছে কোথাও, গোটা বইতে তাকে খুঁজে পাওয়া ভার।
জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কোনো বই পেলে বইটার দিকে তাকিয়ে আমি এই প্রশ্নটা প্রথমেই ছুড়ে দেবো। আনিসুল হকের লেখা ‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ বইটা পড়া শুরু করে প্রথমে এই প্রশ্নটা করেছিলাম।
লাবণ্য দাশের লেখা ‘মানুষ জীবনানন্দ’ বইটা পড়ে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। জীবনানন্দ দাশের প্রতি, লাবণ্য দাশের প্রতি। সেই রেশ আমি এখনো টেনে নিয়ে বেড়াই। কবিতা তেমন বুঝি না বলে জীবনানন্দের কবিতার কাছেও তেমন যাওয়া হয়নি। কিন্তু ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জানতে পেরে ভালো লেগেছিল, সেটাও ছিল তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে হওয়ার কারণে।
‘এতদিন কোথায় ছিলেন’ বইয়ে প্রচুর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অনেক খুশি লাগার কথা। কিন্তু তেমনটা হয়নি। জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে লেখার জন্য লেখককে অবশ্যই ধন্যবাদ দেবো। পাঠকের সামনে আনার জন্য শুধু। এর বেশি দেওয়ার কিছু পেলাম না। কারণ কিছুটা হতাশও হয়েছি।
বই পড়ছি আনিসুল হকের। কিন্তু যখন জীবনানন্দ দাশের কোনো লেখা উদ্ধৃতি হিসেবে পেয়েছি, আমি সেই লেখায় ডুবে গেছি। ‘কারুবাসনা’ উপন্যাসের একটা অংশ পড়ে তো তব্দা খেয়ে বসে ছিলাম। খুব দ্রুতই জীবনানন্দের লেখা পড়তে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
লেখক আনিসুল হক উপন্যাস লিখতে গিয়ে জীবনানন্দকে তার জীবন থেকে গল্প শোনাচ্ছেন। পুরো বইয়ে কবিকে তিনি ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করেছেন। এই ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। কিছুটা ব্যতিক্রম আঙ্গিকে লেখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লেখকের লেখায় ডুবতে না পারার কারণ হলো, লেখা বেশ খাপছাড়া লেগেছে।
প্রথমত, ‘মানুষ জীবনানন্দ’ বই পড়ে যে অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, তার সাথে এই বই সাংঘর্ষিক অনুভূতি তৈরি করেছে। লেখক অতিমাত্রায় আবেগ ব্যবহার করেছেন। সেই আবেগে কবি জীবনানন্দ দাশকে বিখ্যাত বানিয়েছেন ঠিক, কিন্তু সাংসারিক জীবনকে জঘন্য হিসেবে দেখিয়ে কবিকে ঘুরে ফিরে ‘শোভনা’র কাছে টেনে নিয়ে গিয়েছে। ব্যর্থ প্রেমিক কিংবা ব্যক্তি হিসেবে নেতিবাচক করাই উদ্দেশ্য মনে হয়েছে।
ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর হাসপাতালে সেবা করা নার্সকে যতটা বড় করে দেখিয়েছে, লাবণ্য দাশ কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যকে ততটা ফোকাস দেয়নি। নার্সের সেবায় তিনি শান্তি পেয়েছেন, এই শান্তি কোথাও পাননি। কবির কল্পনায় কত কিছু থাকে, সেটা হতে পারে লেখার সাপেক্ষে! কিন্তু সেটাকে ব্যক্তিজীবনের সাথে সাংঘর্ষিক করে দেওয়া সমীচীন মনে হয়নি।
শেষমেশ আনিসুল হককে আরেকটু ক্রেডিট দেবো, জীবনানন্দ দাশকে জানার ব্যাপারে আরো আগ্রহী তোলার জন্য।