Jump to ratings and reviews
Rate this book

চিলেকোঠার সেপাই

Rate this book
চিলেকোঠার সেপাই (The Soldier in an Attic) বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা একটি উপন্যাস। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বসময়কার গণজাগরণের প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ গড়ে ওঠেছে। উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ। উনসত্তুর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কিভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই।

গ্রন্থের প্রধান তিনটি চরিত্র ওসমান, আনোয়ার এবং হাড্ডি খিজির। চিলেকোঠার সেপাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে রোববার নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এর অভিনব কাঠামো এবং নতুন ভাষাভঙ্গিমা পরবর্তী প্রজন্মের নতুন লেখকদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবান্বিত করে যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ শহীদুল জহির।

এই উপন্যাসে একদিকে হাড্ডি খিজির যেমন মহাজনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে উঠতি আওয়ামী লীগের নেতা আলাউদ্দীন মিয়ার ধমক খায়, গ্রামে গ্রামে গরুচোরদের রক্ষাকর্তা জোতদারদের রক্ষায় রাষ্ট্র, সামরিক বাহিনী, আওয়ামী রাজনীতি একাকার হয়ে যায়। ঢাকা ক্লাব থেকে আইয়ুব-বিরোধী মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে উত্তেজিত জনতা ক্লাবটিতে আগুন ধরাতে যায়, আর বাঙালি-বাঙালি ভাই ভাই আওয়াজ তুলে তাদেরকে রক্ষা করা হয়। গ্রামে জোতদারদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের গণআদালতেও আইয়ুবের দালালরা রক্ষা পায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ছায়ায়। এই দালালদের বুদ্ধিমান অংশ অচিরেই যোগ দিয়ে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে আরও পুষ্ট করে। ওদিকে ওসমান তার মধ্যবিত্ত দোদুল্যমানতা আর জনগণের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় মাঝে দোল খায়, এ্‌ই দোলাচল তাকে পরিণত করে সিজোফ্রেনিয়ার রোগীতে। মধ্যবিত্ত বামপন্থী আনোয়ার গ্রামে যায় কৃষিবিপ্লব সাধন করতে, এবং নতুন কোন উপলদ্ধি ছাড়াই এই প্রক্রিয়ার ভেতর তার ভূমিকা পালন করে যায়।

304 pages, Hardcover

First published February 1, 1986

209 people are currently reading
2387 people want to read

About the author

Akhteruzzaman Elias

27 books240 followers
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। তিনি মাত্র দুটি উপন্যাস রচনা করলেও সমালোচকরা তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঔপন্যাসিক হিসেবেই বিবেচনা করেন। এই দুটি উপন্যাসের বাইরে ইলিয়াস মাত্র তেইশটি ছোটগল্প এবং বাইশটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ইলিয়াস সমাজ, রাষ্ট্র এবং জনগণের একজন একাগ্র পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি তাঁর লেখার চরিত্রগুলোকে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি এবং অবস্থানের প্রতীক হিসেবে সুদক্ষভাবে রূপায়ন করতেন। লেখার সময় তিনি চেষ্টা করতেন ঐতিহাসিকভাবে নির্ভুল থাকতে, ফলে তিনি পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে লেখার অন্তর্নিহিত গুরুত্বকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যুর ফলে তাঁর সৃজনশীল জীবন খুব দীর্ঘা‌য়িত হতে পারেনি, কিন্তু তাঁর লেখাগুলো বাংলা সাহিত্যে ধ্রুপদী সৃষ্টি হিসেবে স্থান পেয়েছে।

Akhteruzzaman Elias was a Bangladeshi novelist and short story writer. Despite the fact that he only wrote two novels, critics consider him to be one of the finest Bengali novelists. Besides these two books, Elias wrote only 23 short stories and 22 essays. Elias was a good observer of society, state, and people as he created his characters symbolising social classes and positions. He always strived to be historically accurate when writing, even if it meant pushing readers out of their comfort zones. His creative life was cut short by a premature death from cancer, but his writings are regarded as Bangla literature classics.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
764 (56%)
4 stars
432 (32%)
3 stars
116 (8%)
2 stars
17 (1%)
1 star
12 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 143 reviews
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
October 16, 2020
কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা বইয়ের গ্রুপে চিলেকোঠার সেপাই নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড। যিনি পোষ্ট দিয়েছিলেন তার কাছে বইটির গতি শ্লথ, গালাগালির ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত মনে হয়েছিল বলে ভালো লাগে নি। সেখানে একটি মন্তব্য করেছিলাম, আজকে-কালকে করে তো আর রিভিউ লেখা হলোই না, সেই মন্তব্যটিই রিভিউ হিসাবে তুলে রাখি।
------------
অস্বীকার করবো না, দাঁত ফোটাতে কষ্ট হয়েছিল। অনেকটা আপনার মত ভাবতেও শুরু করেছিলাম। কিন্তু এক তৃতীয়াংশের পর গিয়ে একটা অংশ পুরো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। নিচের অংশটা আমার পড়া বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী এবং সেরা কিছু লাইন।

"এরা কে? তার মানে, অনেক কাল আগেকার মানুষও কি মিছিলে যোগ দিয়েছে? ঐ তো, মিছিলের মাঝখানে ইসলাম খাঁর আমলের খাটো-ধুতি-পরা ঢাকাবাসী! এমনকি তারো আগে চালের বস্তা বোঝাই নৌকা বেয়ে যারা সোনারগাঁও যাতায়াত করতো তারাও এসেছে। বাঙলা বাজার, তাঁতীবাজারের মানুষ লুপ্ত-খালের হিম হৃদপিণ্ড থেকে উঠে এসেছে? ঐ তো ইব্রাহিম খাঁর আমলে শাহজাদা খসরুর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পাগড়ি-পরা সেপাইরা। শায়েস্তা খাঁর টাকায়-আট-মন-চালের আমলে না-খেয়ে-মরা মানুষ দেখে ওসমান আঁতকে ওঠে। ৩০০ বছর ধরে তাদের খাওয়া নাই- কালো চুলের তরঙ্গ উড়িয়ে তারা এগিয়ে চলে। মোগলের হাতে মার-খাওয়া, মগের হাতে মার-খাওয়া, কোম্পানীর বেনেদের হাতে মার-খাওয়া - সব মানুষ না এলে কি মিছিল এত বড়ো হয়? রেসকোর্সের কালীবাড়ির ইটের শুকনা পড়ত খুলে খাঁড়া হাতে নেমে এসেছে মারাঠা পুরোহিত, মজনু শাহের ফকিররা এসেছে, ঐ তো বুড়ো আঙুল-কাটা মুষ্ঠির ঘাই ছুঁড়তে ছুঁড়তে যাচ্ছে মসলিন তাঁতী, তাদের কালো কালো খালি গা রোদে ঝলসায়। ৪০০০ টাকা দামের জামদানী-বানানো তাঁতীদের না-খাওয়া হাডডিসার উদোম শরীর আজ সোজা হেঁটে চলেছে। সায়েবদের হাতে গুলিবিদ্ধ বাবুবাজার মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিন মুসল্লিরা চলেছে, বিড়বিড় করে আয়াত পড়ার বদলে তারা আজ হুঙ্কার দিচ্ছে, 'বৃথা যেতে দেবো না!' লালমুখো সাহেবদের লেলিয়ে-দেওয়া নবাব আবদুল গনি-রূপলাল মোহিনীমোহনের শ্বাদন্তের কামড়ে-ক্ষতবিক্ষত লালবাগ কেল্লার সেপাইরা আসে, ভিক্টোরিয়া পার্কের পামগাছ থেকে গলায় দড়ি ছিঁড়ে নেমে আসে মীরাটের সেপাই, বেরিলির সেপাই, স্বন্দীপ-সিরাজগঞ্জ-গোয়ালন্দের সেপাই। না হে, তাতেও কুলায় না। যুগান্তর অনুশীলনের বেনিয়ান ও ধুতি-পরা মাতৃভক্ত যুবকেরা আসে, তাদের মাঝখানে কলতাবাজারে নিহত ছেলে ২টিকে আলাদা করে চেনা যায়। নারিন্দার পুলের তলা থেকে ধোলাই খালের রক্তাক্ত ঢেউ মাথায় নিয়ে চলে আসে সোমেন চন্দ। ঐ তো বরকত! মাথার খুলি উড়ে গেছে, দেখে একটু ভয় পেলেও ওসমান সামলে ওঠে। এত মানুষ! নতুন পানির উজান স্রোতে ঢাকার অতীত বর্তমান সব উথলে উঠেছে আজ, ঢাকা আজ সকাল-দুপুর-বিকাল-রাত্রি বিস্মৃত, তার পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর দক্ষিন নাই, সপ্তদশ-অষ্টাদশ-উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর সকল ভেদচিহ্ন আজ লুপ্ত। সীমাহীন কাল সীমাহীন স্থান অধিকারে জন্য ঢাকা আজ একাগ্রচিত্ত। ওসমানের বুক কাঁপে; এই বিশাল প্রবাহের সঙ্গে সে কতোদূর যেতে পারবে? কতোদূর? গোলক পাল লেনের মুখে কলের নিচে কাঁপতে-থাকা কলসি যেমন পানিতে ভরে স্থির হয়, আমাদের ওসমান গনির বুকটাও দেখতে দেখতে পূর্ণ হলো, এই অবিচ্ছিল স্রোতধারার ক্ষুদ্রতম ১টি কণা হয়েও তো সেই এই হৃৎপিন্ডে তাপ বোধ করতে পারছে। তাই বা কম কিসে? ভরা-বুকে মুষ্টিবধ হাত তুলে সে হুঙ্কার দেয়, 'বৃথা যেতে দেবো না'।
Profile Image for Shuhan Rizwan.
Author 7 books1,107 followers
July 27, 2024
স্মৃতি থেকেঃ

" সামান্য কয়েকটা বই পোড়ালে আইয়ূব খান মরে না। এক আইয়ূব গেলে আরেক আইয়ূব আসবে। ওয়েস্ট পাকিস্তানের সব আইয়ূব খানকে শেষ করলে বাঙালিদের মধ্যে নকল আইয়ূব খান এমার্জ করবে। "

২৭ জুলাই, ২০২৪, বাংলাদেশ।
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
May 30, 2016
আপনি কি পাগল?

না?


ঠিক জানেন তো! আমাদের ঢাকার ওসমান গনি, মানে রঞ্জু ও কিন্তু পাগল ছিল না। ব্যাচেলর ছেলে, চাকরী করে, রহমতউল্লার মওকানের চিলেকোঠার বাসিন্দা ওসমানও কিন্তু বুঝতে পারেনি সে কখন পাগল হয়ে যেতে লাগল। তার বন্ধুরা শওকত, আলতাফ, ইফতিকার, আনোয়ার, কলিগ কামাল কেউই ঠিক টের পায় না ওসমান কখন পাগল হতে শুরু করেছিল। এমন কি, আশ্চর্য, রানুও টের পায় না যে অঙ্ক করাতে করাতে কখন ওসমান এর নিজের হিসেব একাকার হয়ে গেল! তাহলে?


তাহলে ওসমান কখন পাগল হল? পাগলামির বীজ কি আসলেই তার মধ্যে ছিল? না কি, সে স্বাধীনতা-মুক্তির স্বপ্নে বিভোর হয়ে, আইয়ুব খানের পাকিস্থানের বিরুদ্ধে, শেখ মুজিবের পক্ষে বাঙালি জাতির ১৯৬৯-৭০ এর বিপ্লবে-বিদ্রোহে সামিল হতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল? সে কি বিপ্লবের স্রোতে ভেসে আসলে কোন অতল সমুদ্দুরের মোহনায় এসে পড়েছিল! মোহনার ঘুর্নিপাকে কি তার বোধশক্তি যায় গুলিয়ে আর হাজারও ঢেঊ এর দোলায় সে ভেসে যায় অন্য জগতে! কারন নিশ্চিত ভাবে যদিও বলা শক্ত কিন্তু এটা ঠিক যে ভেসে যেতে যেতেও ওস্‌মান এক নিদারুন সত্যকে প্রত্যক্ষ করে গিয়েছিল। সে সত্য, মানব-সভ্যতার আবহমান কালের ইতিহাস-জাত সত্য, মানুষের চিরন্তন লড়াই এর সত্য। মানুষের যে লড়াই, চিরকাল ধরে সেই প্রলুব্ধ ক্ষমতাবানের বিরুদ্ধে, তাদের হিংসাশ্রয়ী তাবেদার দের বিরুদ্ধে, সে লড়াই আজও অবিরাম চলছে; ব্যক্তিগত অধিকার ও তার ফলশ্রুতিতে তৈরী হওয়া ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আদিম গুহাবাসী মানুষের লড়াই হোক, ব্যক্তিগত পূঁজির লোভের ভেসে আসা সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী শাসকের বিরুদ্ধে নেটিভ সেপাহী বা বিদ্রোহি ফকির-সন্নাসীর লড়াই হোক, ১৯৪৭ বা ১৯৭১ এ স্বাধীনতাকামী মানুষের লড়াই হোক, সে লড়াই কিন্তু থামে নি, লড়াই আজও একইভাবে চলছে! ওস্‌মান যদি আজ বেচে থাকত তবে দেখত আজও একই ভাবে বাংলাদেশের শাহবাগে, দিল্লীর যন্তর-মন্তরে, মিশরের তাহিরি স্কোয়ারে, ইরাক-আরবের এর মরুপ্রান্তরে মানুষ একই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে, পুঁজির বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই চলছে ও চলবে; আর তাই আজও হয়ত কোন ওস্‌মান আকাশে চোখ তুললে দেখতে পাবে যে মৃত শহিদের আত্মারা পৃথবীর বুকে ভিড় করে এসেছে উত্তর পুরুষের এই লড়াই দেখতে!


ওস্‌মান এর এই নিদারুন উপলব্ধি যমন সত্য, তেমনি আনোয়ারের উপলব্ধি হয় আরেক সত্য, হয়ত কিছুটা বিপরীতার্থকই। আনোয়ার বোঝে যে এ লড়াই এ কোথাও ফাক থেকে যাচ্ছে, এ লড়াই একনিষ্ঠ নয়। লড়াই চলছে ঠিকই কিন্তু এই সর্বব্যাপী মহা-লড়াইয়ের মধ্যেও লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর রকম তার-তম্য। বৃহত্তর উদ্দেশ্য কে সামনে রেখে যে লড়াই, তাতেও কত দন্দ্ব-মূলক অবস্থান, ভিন্ন-ভিন্ন লড়াইকারী ভেদে, লড়াইএর কত ভিন্ন ভিন্ন রূপরেখা ও রূপায়ন পদ্ধতি! ফলে প্রশ্ন ওঠেই, এক জোট হয়ে লড়াই সত্ত্বেও মানুষ কি সত্যিই পরস্পরের প্রতি আস্থাবান? গ্রামের অশিক্ষিত কেরমালি, চেংটু, নওয়াজুদ্‌দীনরা শহুরে আনোয়ারকে পুরোপুরি নিজের লোক বলে ভাবতে পারে না কি এই আস্থার অভাবেই? একটা অবিশ্বাস যেন ভেসে বেড়ায় হাওয়ায়। শহুরে আনোয়ার বিশ্বাস করে, বিপ্লবের তত্ত্বে, পার্টির দলিলে লেখা নিয়মে কিন্তু গ্রামের আলিবক্স বিশ্বাস করে শুধু বিপ্লবের উদ্দেশ্য সাধনে, দলিল-নির্দেশিত রুপায়ন-পদ্ধতিতে নয়। বিপ্লব আর বিপ্লবীদের এই ভ��ন্ন মত-পথের অনায়াস সুযোগ নেয় খয়বার গাজী, আফসার গাজীর মত হীন লোকেরা। এমন কি এই পারস্পরিক অবিশ্বাসের সুযোগে মেজ-সেজো অসংখ্য নেতারা রাতারাতি ভোলও পালটে নেয় নিজেদের। এই বেনোজলে ধুয়ে যায় সংগ্রামের পথ আর এই ঘোলাজলে শেষপর্যন্ত ভেসে ওঠে যুবক চেঙটুর মৃত লাশ। শুধু সেদিন নয়, এদিনও যখন লাশ পড়ে অভিজিত-নিলয়ের-কালবুর্গির, নেতারা কিন্তু এই ঘোলা জলেই নৌকা ভাসায়! তাই বিভ্রম একটা থাকেই। দিনের শেষে কোথাও কোন বিপ্লব কি সম্পূর্নতায় পৌছায়, কিছু কি মৌলিক বদল হয় সমাজে? না কি কোথাও একটা আপোষ রয়েই যায় সিস্টেমের সাথে? আপোষহীন, একনিষ্ঠ বিপ্লব কি তবে একটি বিভ্রম, ইউটোপিয়া!


এই বিভ্রম যে শুধু বিপ্লবের পথে তা নয়, বিভ্রম ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও। রহমতউল্লা থেকে জুম্মনের মা, আলাউদ্দীন থেকে হাড্ডি খিজির, সিতারা থেকে রাণু, প্রায় সকল চরিত্রই জীবনে এই বিভ্রম দ্বারা জারিত। অথচ জীবনে শুধু বেচে থাকার তাগিদটা আমাদের এতটাই বেশী, এতটাই জান্তব যে এই বিভ্রম কাটিয়ে ওঠার, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, সেটা নির্নয় করবার মত ফুরসৎ প্রায় কাররই হয় না। ওস্‌মানের মতই আমরা প্রত্যেকে আসলে এক একটি চিলেকোঠার বাসিন্দে, আমাদের প্রত্যেকের অস্তিত্ব যেন একটি ক্ষীয়মান নড়বড়ে ভাঙাচোরা একঠেঙে সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে। আমাদের জীবন দর্শনও তাই ওই চিলেকোঠার ‘ছাত’ থেকে দুনিয়াকে দেখার মত; আংশিক, ধোঁয়া ধোঁয়া। সমগ্রটা শেষপর্যন্ত, দিনান্তে উপলব্ধির বাইরেই থেকে যায়। আর এই বিভ্রমের সমুদ্রে ডুবে থেকেই আমাদের গরিষ্ঠ অংশের জীবন কাটে; কখনো-সখনো ধাঁধায় পড়লে শুধু প্রয়োজনমত অ্যান্টাসিড-নোভালজিনে জীবন একটু সহনীয় করে নেওয়া, এই আর কি! পূর্ব পুরুষ থেকে উত্তর পুরুষেও এই জীবনের এই গতি ধারা মোটের উপর বদলায় না। এক্ষেত্রে কেরমালির সহজ স্বীকারোক্তি টাই কানে বাজে যে যেমন এই এই বিপ্লব, এই বিভ্রম সারাজীবন থাকবে, তেমনি মানুষের ‘হাওস’ ও থাকবে, কোন কিছুতেই জীবন প্রবাহ থেমে থাকবে না।


তো এমতাবস্থায় আমরা কি করব? আলাউদ্দিন, কেরমালি, নাদু প্রামানিক, বজলুর মত জীবন কাটিয়ে যাব? সব বিভ্রম, মায়া, বিপ্লব কে ঘরের চৌকাঠে দাড় করিয়ে, মন-মগজের দরজায় ভারি তালা লাগিয়ে যাপন করব এই চিলেকোঠার জীবন? না কি ওস্‌মানের মত ধাক্কা মেরে, দরজা-তালা ভেঙ্গে, এই বিভ্রম থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুজব? আমাদের কি সাহস আছে এই প্রচলিত আপোষকারী সমাজের মুখে, সকল গন্ডির মুখে ওস্‌মানের মত অবহেলে প্রস্রাব করে মুক্তির পথে পা বাড়ানোর? পা বাড়ালেও বা নিশ্চয়তা কি যে এক বিভ্রম থেকে বেরিয়ে এসে আমরা আরেক বিভ্রমের দুনিয়ায় পৌছাব না!


উওর কেই বা জানে? লেখক জানেন বা জানেন না, জানি না; তিনি কিছু বলেও যান নি। তিনি ‘চয়েস’ ছেড়ে দিয়েছেন আমাদের, পাঠকের হাতে। আর পাঠকেরা, আপনারা কি জানেন সেই পথের সন্ধান???


Profile Image for Salman Sakib Jishan.
272 reviews158 followers
September 20, 2024
জুলাই ২৪,
সরকার কারফ্যু জারি করেছে। ইন্টারনেট বন্ধ। আমি যে এলাকাটায় থাকি তার সামনেই পুলিশলাইন। সারাদিন রাত পুলিশের গাড়ি চক্কর দিচ্ছে। ঘরে টেলিভিশন নেই। পৃথিবীর সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি আমি। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যদয় মিলিয়ে যেতে দেখি ধোঁয়ার সাথে। আন্ডারকন্সট্রাকশন, প্রায় খালি এই বিশাল ভবণের তেতলার কুকুরটার মত ছুটে বের হয়ে যেতে মন চায় আমার। সে আমার চাইতে বেশি স্বাধীন। আপন মানুষেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের চিন্তায় দুঃস্বপ্ন দেখি। দুঃস্বপ্নে ধরমর করে উঠে বসি রাত ৩:৪৭ এ। ১ঘন্টার টিফিন ব্রেক দেয় সরকার, আমি দুইঘন্টা আগে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ি। মোড়ে মোড়ে খবর খুঁজি। মানুষ খুঁজি। শিরদাঁড়া খুঁজি। এক ঘন্টার স্বাধীনতায় মুদিদোকানে হুরমুর করে ছোটে মানুষ। সিগারেটের প্যাকেট বিকোয় সস্তা শাকের আঁটির চাইতেও দ্রুত গতিতে।

একদিন পুলিশ, একদিন রাজনৈতিক কোন ছাত্রসংগঠন ফোন চেক করে আমার। আমি নিজের নগ্নতা ঢাকতে চেষ্টা করিনা। ডুপ্লিকেট ফোন পকেটে নিয়ে ঘুরি আর ব্যাগের পেছনের চেইনে একটা ছুরি! বন্ধুদের সাথে ফোনালাপ করি অত্যন্ত সতর্কতায়। এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড চ্যানেলে চলে গোপন বৈঠক। বাসার নীচে পুলিশ যে রাতে এলো, আমি দ্রুত বন্ধুকে জানাই, 'এক ঘন্টার মাঝে তোকে কল না দিলে লেট মাই প্যারেন্টস নো। এন্ড ডু নট রিপ্লাই!' আমার মাঝেও ওসমান ভর করে ধীরে ধীরে। আমি চিলেকোঠার সেপাই পড়ি। ঘরের দরজায় বড় করে লাল কালি দিয়ে লিখি 'চিলেকোঠার সেপাই'। আমি ওসমান হয়ে যাই। ওসমান রঞ্জু হয়ে যায়। খুব সাধারনভাবে নেই মৃত্যু সংবাদ, মারের পরিমাণ দেখে হিসাব করি মার বেশি না কম, সেই অনুযায়ী আহা উহু হবে। আহত ব্যক্তিদের কথা ভুলে যেতে থাকি, বেঁচে তো আছে-বলে। ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেলতে শুরু করি। হঠাৎ খিজিরকে দেখি বাস্তবের রিকশাওয়ালা মামাদের আন্দোলনের মাঝে। নিজ চোখে খিজিরকে দেখে চোখে পানি আসে আমার। বুকে রক্তসঞ্চালন অনুভব করি। রাস্তায় নেমে পড়বার পথ খুঁজি।

'চিলেকোঠার সেপাই' বইতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস উনসত্তরের আন্দোলন দিয়ে অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে জনগণের মনস্তত্ত্বকে যেভাবে পড়েছেন সেভাবে আর কোনো সাহিত্যিক পড়তে পারেননি। শ্রমজীবী, মধ্যবিত্তরা যারা আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি তারা বারে বারে প্রতারিত, বঞ্চিত হয়েছে। এক আইয়ূব পতন হয়, আরেক আইয়ূব এমার্জ করে। এইযে আন্দোলনটা আমরা দেখেছি, এমন আন্দোলন আমাদের ছেলেমেয়ে জ্ঞাতিগুষ্টিও দেখবে। আমাদের পূর্বপুরুষরাও দেখেছিল। তাদের পীঠে ছিল লাল রক্তজবার মত ক্ষত। এমন বই আর কখনো পড়িনি। এমনভাবে আর কেউ বলেনি।
Profile Image for Ifsad Shadhin.
115 reviews24 followers
July 9, 2021
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কি কলম দিয়ে লিখতেন, নাকি ছুরি দিয়ে?
Profile Image for Farha Crystal.
46 reviews68 followers
July 17, 2017
নাহ, খিজিরের বিবেচনাবোধ কমই ছিল ।

তাই তো , হাড্ডি খিজিরের কি যায় আসে ?
খিজিরের ঘর নাই , বাড়ি নাই, দরজা নাই, তালা নাই, টেবিল নাই, ঘড়ি নাই, মিনিট নাই, ইচ্ছে হল আর সোজা বের হয়ে গেল বিপ্লবের নেশায় ।

কিন্তু , ‘ওসমান’ এবং ‘রঞ্জুকে’ একি দেহে আশ্রয় দিয়ে ওসমান কি খিজিরের মত পালক হয়ে বিপ্লবের স্রোতে গা ভাসিয়ে নদীর নতুন সীমানা এঁকে দিতে পারবে ইতিহাসের মানচিত্রে ?
উহু , সবাই খিজির হয়ে গেলে খিজির না হতে পারার অপরাধবোধ মাথায় নিয়ে খিজিরের পিছনে ছুটবে কে?

তাই তো , আনোয়ারদের সাথে আলতাফ- আলাউদ্দিনদের মতাদর্শের পার্থক্য অবলোকন করতে করতে ওসমানরা হারিয়ে যেতে থাকে উত্তাল সময়ের প্রতিবাদমুখর মিছিলে ।

“ কয়েকটা বই পোড়ালে আইয়ুব খান মরে না ।আইয়ুব খান গেলে , আরেক আইয়ুব খান আসবে ।ওয়েস্ট পাকিস্তানের সব আইয়ুব খানকে শেষ করলে করলে বাঙালিদের মধ্যে নতুন একটা আইয়ুব খান এমার্জ করবে”- শওকতের এই উক্তি যেন তাচ্ছিল্যের হাসি দিতে থাকে – বুক ফুলিয়ে বড় করে বিজয়ীর হাসি টানা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী আলাউদ্দিন , জালাল মাস্টার এবং আফসার গাজীদেরকে ।

বছর যায় , ইতিহাসের পাতা বাড়ে , মানুষের রঙ বদলায় কিন্তু মন বদলায় না । উলঙ্গ রাজাদের নতুন পোশাকের বিশ্বাসে মানুষে পোশাক বদল করে কিন্তু পোশাকের নিচে অন্তঃরূপে কি আর পরিবর্তন আসে ? দুদিন বাদে সাধারন মানুষটি রাজা হয়ে গেলে সে ও নতুন পোশাকের বিভ্রম দেখিয়ে রাজ্য শাসনের নামে পরিবর্তিত পোশাকের আড়ালে শোষণ চালাতে থাকে ।

কিন্তু, আপোষ না করলে জীবন কিভাবে টিকে থাকে ?

আপোষ না করলে একদল হয়ত বুড়িগঙ্গার আগুন মেশানো রক্ত স্রোতে হাড্ডি খিজিরের দেহ নিয়ে ভেসে চলে যায় অস্থিতিশীল অনিশ্চিত সময়ের দিনলিপির টুকটাক গুরুত্বহীন খুচরা ভুলে যাওয়া ঘটনা হিসেবে ;

অথবা , ওরা মিশে থাকে গাব গাছের পাশে ধানকাটা জমিতে নামবার ঢালে চ্যাংটাদের লাশের ভেতরে ;

আর��কদল হয়ত ওসমানদের মত বাস্তবতাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ইলেকট্রিক তারে ঝুলতে থাকা সেই হাড্ডি খিজিরদের খুঁজতে গিয়ে শ্যামবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গা ; পাকুরতলা , মিটফোর্ড , ইমামগঞ্জ পেরিয়ে চকবাজার , বড়ো কাটরার ভেতর দিয়ে হেঁটে সোয়ারি ঘাট কিংবা ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে জনসন রোড হয়ে নবাবপুর ধরে দৌঁড়িয়ে গুলিস্তান অথবা ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তরে পুরনো পানির ট্যাঙ্কের সামনে দিয়ে কলকাতাবাজার হয়ে দোলাইখালে যাওয়ার পথ খুঁজতে খুঁজতে মানচিত্রে হারিয়ে ফেলে ওসমানদের অস্তিত্বকে ;

ঐ ওসমানদের বিভ্রম ঠেকাতে আরেকল ব্যস্ত আনোয়ারেরা হয়ত ক্লান্তির ঘুম স্বপ্নে কোন এক অজ্ঞাত নেতার জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনতে শুনতে ঝিমাতে থাকে ।

খয়বার গাজী, রহমত উল্লাহের মত মানুষেরা ধর্ম ও কুলের ক্ষমতার জোরে করা শোষনের 'হিসেব খাতা'টাকে উড়িয়ে দিয়ে অন্য কোথাও পাড়ি জমায় হাওয়া বদলের মাঝ দিয়ে ।

১৯৬৯ , সে এক অনিশ্চিত সময় । প্রিয় নেতাকে মুক্ত করতে হবে , আইয়ুবকে তাড়াতে হবে, ছয় কিংবা এগার দফা মানতে হবে ... ... ... অনেকগুলো গল্প এক সাথে ডানা মেলে একে অন্যকে জড়িয়ে ছুটে চলেছে ‘চিলেকোঠার সেপাই’ উপন্যাসে ।

ইলিয়াসের যেই বৈশিষ্ট্য সব থেকে বেশী চোখে পড়ে ( আকর্ষন করে ) তা হল উনার গভীর অর্ন্তদৃষ্টি । প্রতিটা চরিত্রের সাথে ঘটনার বাস্তব , অবাস্তব স্বপ্ন ,চেতনা , লুকিয়ে রাখা অন্তঃ চেতনার প্রেক্ষাপট মাখিয়ে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রী কাভার করে বিশাল ক্যানভাসের কাহিনী নিয়ে এগিয়ে চলেন তিনি ।

লুকিয়ে রাখা কঠিন সত্যিগুলোকে অস্বীকার করলে হয়ত লোকদৃষ্টিতে তথাকথিত ভদ্রমানুষ হওয়া যায় । কিন্তু , তথাকথিত নিম্ন শ্রেনীর মানুষের ভেতরে ঢুকে তাদের চোখ দিয়ে জগতটাকে দেখার কাজটা কি ভদ্রমানুষের মধুমাখা ভাষায় অংকন করা যায় ? ঐ বিদ্রুপ , গালির ভাষা ব্যবহার না করলে কি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ওদের জগত ঘুরে দেখার লাইসেন্স পাওয়া যায় ? ওদের দৃষ্টিভঙ্গীর গায়ে সুগন্ধী লাগিয়ে কি নর্দমায় পাশে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটির গায়ের গন্ধ নেওয়া যায় ? ওদের গায়ের গন্ধ না নিলে কিভাবে বুঝবো ওরা কেমন পরিবেশে , কি রকম মানসিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছে ?

ইলিয়াস কোন রকম ঢাকাঢুকা ছাড়াই নগ্ন কালো সত্যগুলোকে এত বাস্তবমেখে আঁকতে থাকেন যে হয়ত অনেক ভদ্রমানুষ উনার লেখা পড়ে বিব্রত হতে পারে । কিন্তু , উনার এই জীবন্ত সাবলীল বাস্তব আঁকার পদ্ধতির জন্যই উনি অনন্য এবং ব্যক্তিগতভাবে বেশি প্রিয় :)

ইতিহাস এবং রাজনীতিকে শিল্পের প্রধান অনুষঙ্গ করতে গিয়ে উনাকে প্রচন্ড পরিশ্রমে গবেষনা করতে হয়েছিল । উপন্যাসের স্থান ও মানুষকে , সময় ও নিসর্গকে ইলিয়াস বহু বছর ধরে পাঠ করতেন, তাদের সম্পর্কে দৈহিক , মানসিক অভিজ্ঞতা লাভ করতেন । পুরোপুরি সৃজনশীল গবেষনামূলক প্রক্রিয়ায় তিনি উপন্যাস রচনার প্রস্ততি নিতেন ।

ইলিয়াসের দুই উপন্যাসে তাই পাওয়া যায় , দেশের দুই তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক –রাজনৈতিক ঘটনার প্রভাব প্রতিপত্তি, জড়িত ব্যক্তিদের শ্রেণী দ্বন্দ্ব ,ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক , ব্যক্তির অন্তর্নিহিত শক্তি এবং দূর্বলতা ।

স্থান কাল পাত্র লোপাট করে ঊনসত্তরের আন্দোলনের মিছিল, শবযাত্রায় গুলিতে নিহতের মৃতদেহের সঙ্গে শরিক হয়ে , প্রতিবাদে শূণ্যে বজ্রমুষ্ঠি তোলে , গ্রথিত হয়ে মৃতের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে ইতিহাসের বিভিন্ন সংগ্রামে নিহত সন্ন্যাসী , ফকির , মাওলানা ; মিরাটের , বেরিলির সেপাই ; ঘোড়াঘাট , লালবাগের মানুষ – এমনকি নিকট অতীতের সোমেন চন্দ পর্যন্ত ফুটে উঠতে থাকে ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ এ – যা ‘খোয়াবনামা’র পরে আরেক অনন্য শিল্পকর্ম হয়ে ইলিয়াস ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে ।
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
September 4, 2020
চমৎকার!
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ভক্ত হয়েছিলাম এটা পড়ার পর থেকেই। অবাক হয়েছি লেখকের লেখনশৈলীতে। কি ইউনিক স্টাইলে লেখা প্রত্যেকটা লাইন!
বিল্ডআপ স্লো, কিন্তু যতই সামনের দিকে এগিয়েছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি।
Profile Image for Biswajit Chakraborty.
25 reviews45 followers
March 27, 2016
সময়: ১৯৬৯ সাল ; স্থান: পূর্ব বাংলা । কি এক অত্যুচ্চ স্পর্ধায় জেগে উঠলো গোটা বাঙালি জাতি । ঢাকা শহর যেন উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ । গোটা শহরে জ্বলছে দাবানল । বুড়িগঙ্গা নদী যেন তার গতিপথ পাল্টে বইতে শুরু করে শহরের মাঝ দিয়ে ; উসকে দেয় সেই দাবানলকে । সর্বত্রই মানুষ, রায়ট-কারফিউ ভেঙে নেমে আসা মানুষ, মিলিটারি-পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসা মানুষ । কোথা থেকে এল এত মানুষ ? ঢাকা শহরে এত মানুষের আবাস হল কবে থেকে ? অবশ্য হবে নাই বা কেন; শত শত বছর ধরে মুক্তির আশায় , অধিকারের আশায় প্রাণ দেওয়া সকল শহীদ যে নেমে এসেছে জনতার এই জোয়ারে । কার সাধ্য তাকে রুখবে ? পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই উদিত নতুন সূর্য , বাংলার রক্তাক্ত সূর্য ।

এই রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটেই আমরা প্রদীপের নিচের গাঢ় অন্ধকারকেও প্রত্যক্ষ করি । পরিবর্তন আসে সর্বত্র; পরিবর্তন রাজনীতিতে, পরিবর্তন মানুষের চেতনায়, পরিবর্তন মানুষের ঐক্যে । পরিবর্তন আসে না শুধু ক্ষমতার বণ্টনে । সুবিধাবাদী স্বার্থপর এক শ্রেণীর হাতেই তা সীমাবদ্ধ থাকে । আর তাই পরিবর্তন আসে না সাধারণ মানুষের ভাগ্যেও । তলানির যারা ছিল তারা পড়ে থাকে ঐ তলানিতেই । মার খেয়ে যায় সারা জীবন ।

শক্তিশালী মনোবিশ্লেষণধর্মী লেখা ও ভাষার দুর্দান্ত ব্যবহারে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও রাজনীতির পালাবদলের চিত্র উঠে এসেছে এই বইতে ।
আখতারউজ্জামান ইলিয়াসের লেখনী বা ভাষার উপর তার দক্ষতা নিয়ে কোন মন্তব্য করার সাহস বা সাধ্য কোনটাই করি না । 'চিলেকোঠার সেপাই' দিয়েই ইলিয়াস পড়া শুরু করলাম । বাকিগুলোও এক এক করে পড়ে ফেলব আশা রাখি ।
Profile Image for Sumaiya Akhter  Lisa.
83 reviews
November 24, 2022
এতদিন  কেন আমি এই বইটা পড়লাম না!!!!
কেন!!!!!!
বইটা আমার মনের ভেতর যে ঝড় সৃষ্টি করেছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার যতটুকু বোধবুদ্ধি আছে তা থেকেই বলছি, বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী বই এটি। ওয়ার্ল্ড ক্লাস!
গণআন্দোলন নিয়ে এতদিন তো কেবল কবে, কখন, কি হয়েছিল এই তথ্য গুলো মুখস্থ করে এসেছি। তা-ও শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য। কিন্তু এইবারই প্রথম সাহিত্যের মধ্যে গণআন্দোলনকে পেলাম। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জাস্টিস করেছেন। গল্পের প্রত্যেকটা চরিত্রই ইউনিক। একটা থেকে অন্যটা ভিন্ন কিন্তু এদের একত্রে ব্লেন্ড করে ইলিয়াস সাহেব তৈরি করেছেন অমৃত।

আমরা পছন্দের বইগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় হয়ে থাকবে এই বই।
পাঁচটি নয়, বইটিকে আমি দিতে চাই  লক্ষ কোটি তারকা। যার প্রত্যেকটা তারকা এটি ডির্সাভ করে।
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
November 15, 2021
চিলেকোঠার সেপাই পড়বো কি পড়বো না সেই দিয়ে দোনামনা ছিলাম। পুরান ঢাকার পটভূমিতে লেখা উপন্যাস। যেখানে জীবনের একটা অংশ কাটিয়েছি। পুরান ঢাকার ব্যাপারে আমার বিতৃষ্ণা ���ছে; অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, জঘন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা - কী নেই সেখানে! শুধুমাত্র পুরান ঢাকা অবজার্ভ করলেই পরিবেশ দূষণ এবং জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কুপ্রভাব নিয়ে মাস্টারক্লাস আর্টিকেল লেখা সম্ভব।

যাইহোক, চিলেকোঠায় ফিরে আসি; আখতারুজ্জমান ইলিয়াসের লেখা খুব জীবন্ত, রীতিমতো হাই ডেফিনিশন বর্ণনাশৈলী বলা যায়। আর আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ রচনার দক্ষতায় ইলিয়াসের তুলনা তিনি নিজেই। অস্বীকার করবো না ইলিয়াসের গালিগালাজ পড়ে আমার পুরানো ভালোলাগার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিলেকোঠার সেপাই পড়তে বসলাম পূর্ব বাংলা/পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসকে ইলিয়াসের দৃষ্টিকোণ থেকে জানার জন্য।

চিলেকোঠার সেপাই বইটাকে তিনটা অংশে ভাগ করা যায়। একটা অংশে চিত্রিত হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতি, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। দ্বিতীয় অংশে আছে বগুড়ার গ্রামীণ অঞ্চলের অতিদরিদ্র নিপীড়িত কৃষিজীবী মানুষদের সংগ্রাম, এবং বংশপরম্পরায় তাদের শোষণ করে ধনী হওয়া মানুষদের কথা।

পুরান ঢাকার একটা বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকে ওসমান। তার নামেই নামকরণ হয়েছে চিলেকোঠার সেপাই।ওসমান প্রচণ্ড কল্পনাপ্রবণ মানুষ, মনে মনে সে রাজা উজির মারে; ওসমানকে তাই চিলেকোঠার সেপাই অভিহিত করাটা যথার্থ। ওসমানকেই লেখক উপন্যাসের এক নম্বর কেন্দ্রীয় চরিত্র করেছেন। খোস্তাখি মাফ করলে জানাই, আমার কাছে কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে দুইজন- আনোয়ার এবং খিজির; এই দুইজনের সাথে থাকলেই কাহিনীর সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়, ওসমানকে আমার তেমন তাৎপর্যপূর্ণ চরিত্র মনে হয়নি।

আনোয়ার উচ্চবিত্ত এবং শিক্ষিত ঘরের সন্তান,কোমল হৃদয়ের মানুষ। তিনি কলেজে শিক্ষকতা করেন। কমিউনিজমের আদর্শে বিশ্বাস করেন। একটা কথোপকথনে আওয়ামী লীগ সমর্থক বন্ধু আলতাফকে বলা আনোয়ারের কথাগুলিতে তার রাজনৈতিক দর্শনের কিয়দংশ চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হয়-

"শোষণ কি কেবল আঞ্চলিক?
তাহলে কোটি কোটি বাঙালি যে হাজার হাজার বছর ধরে এক্সপ্লয়েটেড হয়ে আসছে সে কার হাতে? দেশটার ভেতরেই এক্সপ্লয়েটার থাকে, বিদেশীর কলাবরেটর থাকে। গ্রামে গ্রামে থাকে। জমিতে থাকে, মিল ফ্যাক্টরি হলে সেখানেও থাকবে। ট্যাক্স বসাবার রাইট চাও? কে বসাবে? কার ওপর?... বাঙালি সেনাবাহিনী হলেই বাঙালির উদ্ধার হবে? বাঙালি আর্মি তখন চেপে বসবে বাঙালির ওপরেই, বাঙালি ছাড়া আর কার ওপর দাপট দেখাবার ক্ষমতা হবে তার?....

কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ভাত কাপড়ের কোন গ্যারান্টি তো তোমরা দিচ্ছ না। অটোনমি অটোনমি করে পাকিস্তান হয়েছে। তোমাদের অটোনমিতে বাঙালি সিএসপি প্রমোশন পাবে, বাঙালি মেজর সায়েব মেজর জেনারেল হবে, বাঙালি আদমজী ইস্পাহানি হবে। তাতে বাঙালি চাষার লাভ কি?"


বুঝতেই পারছেন আনোয়ারের কথায় ছয় দফার ইঙ্গিত আছে। সেখানে হতদরিদ্র শ্রেণীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট দফা দেখা যাচ্ছে না। এবং উপন্যাসে আমরা দেখেছি, দরিদ্র কৃষকরা জোতদারদের ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন, খুন হচ্ছেন; কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলটির কর্মসূচীতে সেসব অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের কাছে জোতদার-কৃষকদের মধ্যে বিরাজমান সংকট একটা সামান্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল; মূল সমস্যা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান শোষণ করছে পূর্ব পাকিস্তানকে।

গ্রামের বাড়িতে গিয়ে গ্রামের অত্যাচারী জোতদারদের বিরুদ্ধে প্রায় সফল একটা বিপ্লবী অপারেশনের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন আনোয়ার। কিন্তু কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রে যা হয়, কাগজের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপদান করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন, শেষমেশ চরম মূল্য দিতে হয়; এখানেও তেমনটাই হয়েছে।

খিজির আলি সহানুভূতিশীল মানুষ, গুণমুগ্ধ করার মত চরিত্র। অগ্নিকাণ্ডে আহত সোহরাবকে কাঁধে নিয়ে বাড়ি পৌছে দেওয়াটা উপন্যাসের সবচেয়ে সুন্দর মানবিক দৃশ্যের একটি। লেখক প্রায় সবজায়গাতেই তাকে 'খিজির' নামে বলেছেন। তিনশ পাতার বইয়ের মাত্র দু-একটা জায়গায় 'হাড্ডি খিজির' লেখা আছে, দু-চারটা জায়গায় খিজির আলিও লেখা আছে। কিন্তু বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে শুরু করে প্রায় সব সমালোচনায় খিজিরকে দেখি হাড্ডি খিজির লেখা! সে বেবিট্যাক্সি/রিকশা চালক বলেই কি এই হাড্ডি নামের জনপ্রিয়তা? রিকশাওয়ালারা শেষপর্যন্ত রিকশাওয়ালাই থাকে, শাসক স্বদেশি বা বিদেশি যেই হোক, রিকশাওয়ালারা সামাজিক মর্যাদায় উপরে ওঠেনা; তারপরও খিজির বিবেকের তাড়নায় গণঅভ্যত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। যাহোক, খিজিরের সাথে থাকলে আমরা রাজপথ থেকে দেখতে পাই উনসত্তরের উত্তাল গণঅভ্যুত্থান, পরিচয় পাই রাতের ঢাকার রাস্তায় আইয়ুব খানের পোষা গুণ্ডাবাহিনী এনএসএফের, শুনতে পারি পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের গালাগাল।

উপন্যাসের তৃতীয় ও শেষ অংশে ওসমান মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, তিনি খিজিরকে হ্যালুসিনেশনে দেখতে পান, তিনি মুঘল আমল থেকে ব্রিটিশ আমলের নিপীড়িত অসংখ্যা মানুষের মিছিল দেখতে পান; বিচিত্র সব কাণ্ড করতে শুরু করেন, অদ্ভুত সব কথা বলেন, যেমন- আর্মি আগুন নেভানোর জন্য বুড়িগঙ্গা নদীপ্রবাহের দিক পালটে নিয়েছে। এই অংশে ইলিয়াস ইচ্ছামতো গদ্যকাব্যের চর্চা করেছেন।আর পলিটিকাল হিস্টোরির মধ্যে ক্লিনিকাল সাইকোলজির কেস স্টাডি যোগ করে দেওয়াটা আমার উপভোগ্য লাগেনি, মনে হয়েছে তাৎপর্যবিহীন একটা বিষয় উপন্যাসের ফোকাসে চলে এসেছে। একথা বলছি কারণ এই অংশটা বহুল আলোচিত, অনেকেরই পছন্দের, বইয়ের ফ্ল্যাপেও গুরুত্বের সাথে জায়গা পেয়েছে। এই অংশটা উপন্যাসের দৈর্ঘ্য বাড়িয়েছে; এটা ছাড়াই চিলেকোঠার সেপাই ছিপছিপে, ঝরঝরে এবং মেদহীন হতে পারতো।

চিলেকোঠার সেপাই বামঘেষা দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা উপন্যাস। আওয়ামী লীগের ভূমিকা হয়তো আরও সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকেও উনসত্তরের রাজনীতি বোঝার ইচ্ছা ছিল, ইলিয়াসের জাদুকরী ভাষায়। হয়তো আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভটাই সবাই শুনতে শুনতে অভ্যস্ত বলে ইলিয়াস এখানে কম প্রচলিত কমিউনিস্ট ন্যারেটিভটা তাঁর লেখনশৈলী দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। কৃষক/শ্রমিকদের জীবনের গল্প এখানে পরম মমতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। উপসংহারে বলতেই হবে, চিলেকোঠার সেপাই বাংলাদেশের ইতিহাস-আশ্রিত সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসগুলির একটি।
Profile Image for Subrata Das.
164 reviews19 followers
July 27, 2024
৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান এর পটভূমিতে লেখা বইটির ঘটনাগুলোর সাথে ২৪ এর এই অন্ধকার সময়ের কি অদ্ভুত মিল
Profile Image for Meem Arafat Manab.
377 reviews256 followers
June 15, 2017
সম্ভবত তেরো সালের কোনো এক ফাঁকে ফোকরে পড়া হয়ে গেছিলো এই বই।

আমার কাছে মনে হইছিলো, এখনো মনে হয়, বাংলাদেশ নামের যে ভূখণ্ডটা আমাদের, সেইটার পরিচয় ওসমানের চে ভালো করে দেয়া যায় না।
ওসমান যেখানেই যায়, সেখানেই পূর্ববাংলা। আমগো পূর্ববাংলা।
Profile Image for Mim.
2 reviews2 followers
October 4, 2020
এত ভালো বই কতদিন পর পড়লাম! ❤
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
December 30, 2021
ক্যাডা কয় বাঙলাদেশে পারমাণবিক বোমা নাই?
এইডার মইদ্যে ব্যাকটি শব্দ যেন ইউরেনিয়াম ২৩৫ আইসোটোপের ঠাসাবুননি, যেইডা উনসত্তরের উত্তাল জনসমুদ্রের মিছিলে মোগলের হাতে মার-খাওয়া, মগের হাতে মার-খাওয়া, কোম্পানির বেনেদের হাতে মার-খাওয়া সব মানুষদের গগনবিদারী চিৎকারে স্লোগান আর ইলিয়াসের তেজস্ক্রিয় লেখনীর হাতুড়ি পেটায় ইউরেনিয়াম ফটফট কইর‍্যা ভাঙতেই থাকে আর পাতার পর পাতায় নিউক্লিয়ার ফিশনের উন্মাদনা ঘটে — ওইডার ঝাঁঝালো গন্ধ করোটির ছাদে ঢুইক্যা প্রচ্চন্ড বিস্ফোরণ ঘটায়, চিন্তাচেতনা সব ছ্যাইছাম্যাইছা অবশ কইর‍্যা দেয়৷

জয়তু ইলিয়াস সাব — কদমবুসি —
Profile Image for হাসান নাহিয়ান নোবেল.
105 reviews169 followers
June 5, 2018
আমি প্রস্তাব করছি, আখতারুজ্জামান এ দেশের স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের সবচেয়ে শক্তিমান কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম, যদি না শক্তিমানতম হন।

মানে, ভয়াবহ! গাম্ভীর্যের মুখোশটা খুলে ফেললে এভাবে বলতে হবে, সর্বনাশ, এইটা কী পড়লাম! আমার বুক ধড়ফড় করতেসে, আমি নিশ্বাস নিতে পারতেসি না, কী লিখসে এই লোক—ইত্যাদি।

কিন্তু আবেগটাকে সরিয়ে রেখে যখন যৌক্তিকভাবে বোঝার চেষ্টা করছি, তখন এ ধারণা আরও পোক্ত হচ্ছে যে, এ বইটা অসম্ভব শক্তিশালী একটা লেখার উদাহরণ।

নিঃসন্দেহে এর একটা বড় কারণ উপন্যাসের চিত্র নির্মাণে আখতারুজ্জামানের দক্ষতা। শহুরে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে গ্রামের দরিদ্র বর্গাচাষীর ছবি এক উপন্যাসে এঁকে ফেলা চাট্টিখানি কথা না। এটা প্রমাণ করে, সমাজের কী বিশাল একটা পরিসর লেখকের আয়ত্তে ছিল! কিন্তু তার চেয়েও কঠিন কাজ এত বিশদভাবে (in detail) সেই পরিসরটাকে তুলে আনা। হাড্ডি খিজিরের মত শহুরে নিম্নবিত্তের একটা সার্থক চরিত্রের জন্যই লেখককে অসাধারণ বলে ফেলা যেত, কিন্তু তিনি কেবল এই এক চরিত্রে এসেই থামেননি, বিস্তারিত বলেছেন ওসমানের মত শহুরে মধ্যবিত্তের কথা, গ্রামের ইউনিয়ন-পরিষদের-কী-জানি খয়বার গাজীর কথা, দরিদ্র গ্রাম্যচাষী চেংটুর কথা, দেখিয়েছেন তাদের আন্তঃসম্পর্কের চিত্র।

উপন্যাসের চরিত্র এবং তাদের আন্তঃসম্পর্ককে সার্থক করেছে সংলাপগুলো। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ শামসুল হক বলেছিলেন, কেবল গ্রাম্যভাষা লিখলেই সেটা গ্রামের মানুষের সংলাপ হয় না। সংলাপকে সার্থক করতে আরও কিছু লাগে—যেমন, গ্রামের মানুষ কথার ফাঁকে প্রচুর উপমা ব্যবহার করে—সুতরাং তাদের ভাষা লেখার সময় সেটাও মাথায় রাখতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, গ্রাম্য শব্দগুলো কেবল ভাষার কাঠামো, আর উপমা, বাগ্‌ধারা, চিন্তাভাবনা—এসব হল ভাষার প্রাণ। গ্রামের শব্দ আমরা চাইলেই লিখতে পারি, কিন্তু সেই ভাষার প্রাণের সঞ্চারণ ঘটাতে পারেন কেবল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসেরা।

আবারও সেই একই কথায় ফিরে আসতে হচ্ছে—কী পরিমাণ দক্ষতা থাকলে একজন লেখক দরিদ্র বর্গাচাষী, শহুরে বস্তিবাসী থেকে শুরু করে ভার্সিটির ছাত্র কিংবা খাঁটি ঢাকাইয়া মহাজন পর্যন্ত সবার ভাষায় প্রাণ নিয়ে আসতে পারেন!

সুতরাং এতে আশ্চর্যান্বিত হবার কিছুই নেই যে, সংলাপের বাইরের ভাষাটুকু আশ্চর্য রকমের সুন্দর! কিন্তু এই সৌন্দর্যের প্রসঙ্গে যে ব্যাপারটা যোগ করতে হবে সেটা হল এই যে, কেন্দ্রীয় চরিত্র ওসমানের বিভ্রমের মধ্য দিয়ে এ উপন্যাসে খানিকটা জাদুবাস্তবতার স্পর্শ পাওয়া গেছে। নাকি একে পরাবাস্তবতাই বলবো? আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে মিছিলের যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন—ঐ এক অনুচ্ছেদেই তো রীতিমত হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে আমার। কী ভয়াবহ!

শহীদুলের সাথে কি তুলনা করা যায়? ম্যাজিক রিয়েলিজমের জন্য এখনো শহীদুলকেই প্রিয়তর লেখক বলবো, কিন্তু এরপরেও লেখক হিসেবে আখতারুজ্জামানকে ওপরে রাখবো—এবং সেটা লেখার ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণক্ষমতার কারণে। শহীদুল এতখানি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছেন বলে মনে হয়নি।

অর্থাৎ ভাষার ব্যবহার, সংলাপ নির্মাণে সার্থকতা, ঘটনাবলির ওপর নিয়ন্ত্রণ—সব দৃষ্টিকোণ থেকেই উপন্যাসটা অসম্ভব সুন্দর, কিন্তু…

কিন্তু তবু, এটা আশ্চর্যের না যে, বড় মুদ্দাসসেরের মত মানুষও এ বই কয়েকবার শুরু করে মাঝপথে থেমে গেছে। কারণ বইয়ের শুরু থেকেই একের পর এক চরিত্র এসেছে, এবং লেখক তাদেরকে এক এক করে পরিচিত করানোর চেষ্টা করেননি। ব্যাপারটা যেন এমন, আমি অদৃশ্য অবস্থায় হঠাৎ ধরাধামে নেমে এলাম, এবং দেখতে শুরু করলাম মানুষগুলো কী করে। যেহেতু কেউ এগিয়ে এসে আমার সাথে পরিচিত হচ্ছে না—সবাইকে চিনতে বেশ খানিকটা সময়ের প্রয়োজন হবে। এবং অবধারিতভাবেই, তার পূর্ব পর্যন্ত তাদের কাজকর্ম আমার কাছে যথেষ্টই ধোঁয়াটে মনে হবে। এই ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে কেউ যদি হতাশ হয়ে বইটা রেখে দেয়—তবে তাকে ঠিক দোষ দেয়া যায় না। বলাই বাহুল্য, একবার ধোঁয়াটা কেটে গেলে খুব সহজে উপন্যাসের ভেতর ডুব দেয়া যায়।

প্রসঙ্গত, আখতারুজ্জামানের লেখা প্রাঞ্জল, তবু লাইনের ওপর দিয়ে ঠিক পিছলে যাওয়া যায় না। কখনো একটা বাক্য দু-তিনবার করে পড়ে দেখতে হয়, কখনো ঝিম ধরে বসে থাকতে হয়। অর্থাৎ লেখাটা খেতে হয় ভালো চায়ের মত চুমুক দিয়ে, বেশ রসিয়ে রসিয়ে।

উল্লেখ্য, শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আখতারুজ্জামান পুরোপুরিই মুক্ত চিন্তাধারা অনুসরণ করেছেন। কেবল ট্যাবু ভাঙলে সেটা আলাদা করে উল্লেখ করার মত কিছু হত না, কিন্তু সচরাচর যেসব শব্দ অস্বস্তিজনিত কারণে ব্যবহার করা হয় না—সেসবও তিনি লিখে গেছেন অবাধে। অবাধে লিখেছেন ঘটনাবলিও।

শাহাদুজ্জামানের লেখায় পড়েছি, এ ব্যাপারে আখতারুজ্জামানের মন্তব্য হল, জীবনকে তিনি ‘ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট’ হিসেবে দেখতে চান, কোনো ঔচিত্যবোধ থেকে দেখতে চান না। তিনি শ্রমিককে কেবল একজন মহান চরিত্র হিসেবে দেখতে চান না, শ্রমিকের সংগ্রামের পাশাপাশি তার মধ্যে যে নানারকম বদমাইশি রয়েছে সেটাও তিনি দেখাতে চান।

অপ্রসঙ্গত, বইয়ের প্রেক্ষাপটের একটা বড় অংশ হিসেবে এসেছে পুরান ঢাকা। ব্যক্তিগতভাবে ঢাকার ইতিহাসের ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে—সুতরাং অবধারিতভাবেই ভিক্টোরিয়া পার্ক কিংবা লক্ষ্মীবাজার, দোলাই খাল কিংবা চকবাজারের রাস্তায় ঘুরোঘুরি আমার চমৎকার লেগেছে। তাছাড়া, ক্ষেত্রবিশেষে গুলিও কি লেখক করেননি? সেই যে,

কিন্তু যে ব্যাপারটা বুঝলাম না, লেখক সংখ্যাগুলোকে সব অংকে লিখেছেন কেন। সেদিনও আমি সেঁজুতিকে বোঝাচ্ছিলাম, সংখ্যা কথায় লেখার সাথে সৌন্দর্যবোধের একটা ব্যাপার আছে—সেখানে আখতারুজ্জামানের লেখাতেই যদি ওসমান ১টু বিশ্রাম নেবার জন্য ২টো খেয়ে এসে গায়ে ১টি কাঁথা দিয়ে শুয়ে পড়ে—তাহলে কীভাবে হয়!

কে জানে। হয়তো ওনার কোনো দর্শন ছিল। ঘেঁটে দেখতে হবে এ ব্যাপারে।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 12, 2023
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়, তখন চারিদিকে জীবনের অনিশ্চয়তা ।ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে ওঠে ঢাকা নগর। একই সাথে শহর, বন্দর, গঞ্জ, নিভৃত গ্রাম, এমনকি যমুনার দুর্গম চর এলাকা। চারিদিকে ত্রাস ও মৃত্যুর ছড়াছড়ি। মিটিং, মিছিল, গুলিবর্ষণ আর কারফ্যু--ভাঙা আর গনআদালত, সব জায়গায় ফেটে পড়ে ক্ষোভ ও বিদ্রোহ। সব মানুষের হৃদয়ে একটি অবিচল চাওয়া----মুক্তি।

একটু একটু করে উত্তাল হয় ঢাকা। সেই ঢাকার ঘিঞ্জি একটি গলির মধ্যে একটি বাড়ি। সেই বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে থাকে একটি ছেলে। যার নাম মোহাম্মদ ওসমান গনি ওরফে রঞ্জু। সে একা থাকে ঢাকায়। ভারতের কোন একটা গ্রামে থাকে তার পরিবারের সবাই। রঞ্জুর মা নাই বাবা ঢাকাতে আসতে চায় না , সেও গ্রামে যায় না।

নিদারুন সেই সময়ে রঞ্জু সব দেখে, শোনে, মিটিংএ যায়, মিছিলে যায়, পুলিশের গুলিতে শহীদের জানাযায় যায়। তবু যেন কোন কিছুর মাঝে থেকেও সে থাকে না। ক্ষনে ক্ষনে চলে যায় দূর অতীতে। ছিটকে পড়ে বর্তমান সময় থেকে। অতীতের কোন ঘটনা তাকে আকড়ে রাখে কিছু সময়ের জন্য।

তারই প্রতিবেশী তার নামে নাম কিশোর রঞ্জুর বোন রানুর প্রতি মনে মনে আসক্তি অনুভব করে রঞ্জু। অনেক চেষ্টা করেও সে বেরিয়া আসতে পারে না এই আসক্তি থেকে।

গণঅভ্যুত্থানে সস্ত্রস্ত শাসকদের নতুন করে আরোপ করা সমরিক শাসনের নির্যাতন শুরু হয়। এতে রঞ্জুর বন্ধুরা যোগ দেয়। চারিদিকের পরিস্থিতিতে সকলে বিহব্বল, কিন্তু ওসমানকে ওরফে রঞ্জুকে এ সবের কোন কিছুই স্পর্শ করে না। নিজের ভিতরের খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। বেরিয়ে আসাটা কি এতোটাই সহজ?

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই বছর আগে বিপুল গণ-অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই অসন্তোষ লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন উপন্যাসটিতে। তবে বাইরের এই সব ঘটনা বা চরিত্রের চেয়ে উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ।

ঊনসত্তর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কীভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই। যা সুক্ষ ভাবে লেখক এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন।
Profile Image for Muhammad Kamruzzaman.
33 reviews9 followers
May 15, 2013
সমসাময়িক বাংলা উপন্যাস সমূহের মধ্যে “চিলেকোঠার সেপাই” অবশ্য পাঠ্য বলে আমি মনে করি । ঘটনার সময় ১৯৬৯ , আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়কাল । একটা বিষয় এই বই পড়ে আপনার উপলব্ধি হবে , ক্ষমতা সব সময় ই একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর হাতে থাকে , আর যারা তলানিতে থাকে তারা তলানিতেই থাকে । তারা দাবি আদায়ের জন্য জীবন দেয় এবং হারিয়ে যায় । কিন্তু , যারা ক্ষমতাবান তারা শুধুমাত্র দল পরিবর্তন করেন , সামাজিক অর্থনৈতিক সব প্রতিপত্তি থাকে অপরিবর্তিত ।
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
August 29, 2024
ইতিহাসের সাথে জাদুবাস্তবতার এক দুর্দান্ত মিশ্রণের সাক্ষী হতে চাইলে, এই বই মাস্ট রিড। তবে কাহিনির ভাবার্থ বোঝার জন্য মন ও মস্তিষ্ক, উভয় জায়গা থেকে বিচক্ষণ হওয়াটা জরুরি। হুট করে এ বই পড়তে বসলে, রিডিং নামক এক অদৃশ্য ব্লকের সমূহ সম্ভবনা থাকবে। তার পূর্বে ইতিহাস ও জাদুবাস্তবতা সম্পর্কে জেনে নিয়ে উক্ত বইখানা পড়তে বসবেন। উপন্যাসের কাহিনি সরল হলেও, লেখকের বর্ণনাভঙ্গি অনেক বিস্তারিত এবং ইঙ্গিতপূর্ণ। বিপ্লবের সময় নিয়ে চরিত্রদের লেখক যে ধাঁচে তৈরি করেছেন, তা পাঠক হিসেবে আপনাকে বাস্তবতা অনুভব করিয়ে দিবে। এতই বাস্তব যে আপনি একটা সময় আর সহ্য করতে চাইবেন না। অতএব, সর্বগ্রাসী পাঠক ব্যতীত ঝোঁকের বশে অন্য কেউ বইটি না পড়াটা উত্তম।
Profile Image for Rashid.
25 reviews5 followers
June 22, 2020
এই বই নিজে না পড়লে কখনো এই বই সম্পর্কে বুঝা/বুঝানো সম্ভব নয়।

এই বই এর পটভূমি ১৯৬৯ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্রমামলা কেন্দ্রিক গণঅভ্যুত্থান দ্বারা রচিত হলেও আলোচনায় শুধুমাত্র এটির উত্থাপন করা হবে শ্বরনিন্দাপাপতুল্য। এই বই এর প্রেক্ষাপট আকাশের ন্যায় বিশাল আবার বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় ক্ষুদ্র। ছয়-সাত সন্তানের জননী যেভাবে সব সন্তানকেই দায়সারা অথচ অকৃত্রিম স্নেহ ও প্রতিপালনের টানাপোড়েন ভাগ দিতে চায় তেমনি এই বইও ঢাকার উত্তাল রাজপথ থেকে শুরু করে 'ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' গ্রামবাংলা, গ্রামের যমুনা নদীর মাঝের বেওয়ারিশ চর সবকেই তার স্বল্প-বিশাল কলেবরে ঠাঁই দিতে চেয়েছে। সে যেমন ঢাকার বুড়িগঙ্গা সদরঘাট এর চাঞ্চল্যকে ছুঁয়েছে, তেমনিভাবে একইসাথে পুরান ঢাকা, শাঁখারিবাজার এর পুরনো নোনাধরা দেওয়ালের শ্যাওলাকে (এবং তৎরূপ বাল্যস্মৃতিকেও) ছুঁয়েছে। এই বই একদিকে যেমন শান্ত সিলিংফ্যান হয়ে মধ্যবিত্তের ছিমছাম দুপুরবেলার অফিসপাড়ায় হানা দেয়, যেমন ছাত্র কিংবা অছাত্রদের মিছিল-মিটিং এর ভিড়ে মন্ত্রের মতো শ্লোগান হয়ে উদ্বেলিত হয়, দিয়াশলাই এর কাঠি হয়ে আইয়ুব খানের লেখা বইকে পোড়ায়; তেমনি রিক্সাওয়ালার বস্তিকেও টোকাইয়ের ময়লা হাতে ছুঁতে ভুল করে না। রমজান মাসে মিষ্টির দোকানে ঝুলানো নোংরা পর্দা হয়ে যেমন এই বই ঝুলে থাকে, তেমনি ঢাকার সস্তা বার এ বাংলামদ ও গাঁজার ধোঁয়ায় মিশে থাকে, আলসারের ব্যাথায় টকতেতো লালা সমেত রাস্তার পাশে উপুড় হয়ে বমি করে। এই বই যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমরেড মার্কা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে, তেমন ঢাকার কুট্টিতে গালি দেয়; বড় সাহেবের ইংরেজিতে যেমন কপচানো বুলি হয়ে ঝরে পড়ে তেমনি বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় অনুযোগ জানায়। এই বই একই সাথে ঈদের সকালের ধোঁয়াওঠা মোরগপোলাও, একই সাথে নর্দমার বিষ্ঠা। কালের সীমানা পেরিয়ে এই বই বিচরণ করে ফকির আন্দোলন-সিপাহী বিদ্রোহ থেকে আইয়ুব খান-ভাসানী-শেখ মুজিব পর্যন্ত; বিচরণ করে অবিভক্ত বাংলা থেকে গঠনোন্মুখ বাংলাদেশ পর্যন্ত, উঁকি দিয়ে যায় সীমানা পেরিয়ে প্রত��বেশী দেশের ছিটমহলের রেললাইন। এই বই আসাদের শার্ট-শামসুজ্জোহা-সার্জেন্ট জহরুল হয়ে যেমন বিপ্লবে ফেটে পড়ে, আবার নিম্নবেতনের কর্মচারীর লাশ হয়েও চুপচাপ পুলিশের গাড়িতে ওঠে, ঈদের দিনে সিএনজি থামিয়ে ভদ্রলোকের বউকে পাঁজাকোলা করে পাশের পার্কে নিয়ে যায়। হোটেলে পায়া-নেহারি খেতে খেতে যেমন মধ্যবিত্তের আন্দোলন নাকি গণ আন্দোলন এই বিতর্কে শামিল হয়, তেমনি বটগাছের মাথা থেকে 'কি জানি আগুনের' হয়ে মাঝরাতে উড়াল মারে, গরু হয়ে শিকলসমেত চুরি হয়।

সবচেয়ে বড় বিষয়ঃ- এই বই একদিকে যেমন সামন্ততান্ত্রিকতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, মব জাস্টিস, বামপন্থা, ছাত্ররাজনীতি, সংস্কার-কুসংস্কার এর মত জটিল সব বিষয়কে নিপুণ হাতে এবং অস্বাভাবিক ভাষাশৈলী ও রুপমামুখর অথচ দ্বিধায় ছারখার ভাষার কারুকাজে মুদ্রিত করেছে, তেমনি নগ্নতা ও ভদ্রতার ঘেরাটোপে তথৈবচ বিশাল সাহসিকতায় স্বকাম, আত্মমৈথুন, কিশোরকাম, পরকীয়া, ধর্ম-অধর্ম এর মত আশির দশক এর সাপেক্ষে চূড়ান্ত সংবেদনশীল সব বিষয়কে পাঠকের অনুশীলন হিসেবে রেখে যেতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেনি। কোন মৃত্যু বা আন্দোলনই এই বই এর সুতীক্ষ্ণ তত্ত্বাবধানে বড়/ছোট হতে পারে না। রাজধানীর পিচের রাজপথে কার্ফিউ এ গুলিখাওয়া রিক্সাওয়ালার গরম বেওয়ারিশ লাশ আর সবুজ শ্যামলিমায় কুড়ালের কোপে মস্তকবিহীন সুঠাম যুবকের ঠান্ডা দেহ একে অপরকে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকে। পুলিশের বুলেটবিদ্ধ শহীদের পবিত্র লহু আর কাজের মেয়ের গর্ভপাতের কালো রক্ত একসাথে তালগোল পাকিয়ে গড়িয়ে ঝাঁপ দেয় অসহায় কালের নর্দমায়। 'মহান' আন্দোলনে শহীদের মায়ের কান্নার নোনা স্বাদ আর খুনহওয়া অশিক্ষিত ছেলের বৃদ্ধ বাপের গ্রাম্য পিঠার ঘ্রাণ একসাথে ইন্দ্রিয়কে তাড়িত করে। মোষের দুধের আমাশা থেকে সীৎজোফ্রেনিয়া সব অসুখের রোগী এই বই। এই বই সব মাজারের সিন্নি নেয়, কিন্তু কোনো 'পীর' এর মুরিদ হয় না।

এক কথায় বলতে গেলে, আমার কাছে এই বই ১৯৬৯ সালের বাংলাদেশ এর একটি ধর্মগ্রন্থ মনে হয়েছে। শুধু বলা যায় একটাই পার্থক্য। প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে যেমন মহাপুরুষ থাকে, থাকে অপদেবতা- থাকে স্বর্গ, নরক; এই বই এ কোন মহাপুরুষ/অপদেবতা এইরূপ কোন দ্বিমিক শ্রেণিবিভাগ নেই। এই বই এর সবাই নিখাদ রক্তমাংসের মানুষ। এই জীবনবিধানের আয়াতে আয়াতে কনফ্লিক্ট এর দামামা। এখানকার কেউ প্রোটাগনিস্ট নয়, সবাই এন্টাগনিস্ট; যাদের দ্বারা রচিত হয় নরক এবং সেখানে তারা নিজেরাই পুড়ে, পুড়তে থাকে।
আর এই বই এর ঈশ্বর হচ্ছেঃ- এক, অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ও অমোঘ- 'সময়'।
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
August 16, 2022
উপন্যাসটির কেন্দ্রিয় চরিত্র একাধিক বর্ণিত দেখলেও আমার কাছে মনে হয়েছে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাতৃভূমি ❝বাংলাদেশ❞ কিংবা ❝বাঙালি জাতি❞। মাতৃভূমি নিয়ে এতো নিবিড় ও সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ এ যাবত আমি পড়ি নি।

উপন্যাসে ঢুকবার জন্য আমাকে প্রচুর স্ট্রাগল করতে হইসে। প্রথম এক দেড়শো পাতা অবধি স্ট্রাগল অব্যাহত ছিলো। মূলত এক অস্থির সময়ে, ক্রান্তিলগ্নে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জটিল মনঃবিশ্লেষণ উপস্থাপন এর চেষ্টা করেছেন লেখক। সব কিছু ছাপিয়ে মনঃবিশ্লেষিত হয়েছে একটা গোটা জাতির। কন্টেন্ট এখানে খুব ই বিস্তৃত। হয়তোবা সেজন্য কিছুটা সময় এলোমেলো জটপাকানো অবস্থা হয়েছে আমার। সেটা হয়তো স্বাভাবিক। এর দায় আমি মোটেও লেখককে দেবোনা।

ব্রিটিশ আমলে ❝যমুনা নদী❞ ছিলো একটা খাল। ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্রের গতি পরিবর্তনে ধীরে ধীরে নদীতে রূপ নেয় যমুনা। এই রূপ নেওয়ার পেছনে শত শত, হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হওয়া, নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার যে কথন আছে, সেই খবর আমরা ক'জন ই উপলব্ধি করবার সময় পাই!

মোটের উপর, ইতিহাস থেকে অনেক অধ্যায় অজানা ছিলো আমার কাছে যা উন্মোচিত হয়েছে। কিছু দর্শন পেয়েছি। নতুন করে উপলব্ধি করেছি বাঙ্গালি জাতির মতভেদ, বিভক্ততা। সুবিধাবাদী নীতি, ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের রাজনীতি। জিনিসটা এমন, একদল পশ্চিম পাকিস্তানের দালাল হয়ে শোষণ করতো, তারা গনজাগরণ, গনআন্দোলন এর এক পর্যায়ে কৌশলে দল পরিবর্তন করে গনমানুষের দলে যোগ দেয়, কৌশলে আবার শুরু হয় শোষণ! মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার যে বহিঃপ্রকাশ আমি দেখেছি উপন্যাসে সেটা আমাকে ভেতর থেকে আমূল নাড়িয়ে দিয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন কিছু উপলব্ধি তৈরির ভেতর দিয়ে উপন্যাসের রেশ আমার মাঝে থাকবে অনেকদিন!
Profile Image for Soumik.
83 reviews17 followers
August 15, 2020
পুরো দুই পাতা জুড়ে বর্ণনা দিয়ে ঢাকার কোনো রাস্তায় পড়ে থাকে হাড্ডি খিজিরের গুলিবিদ্ধ লাশ, আর ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে আনোয়ার পরপর দুটো চিঠি পায়, গ্রামের রাজনীতি পাশে রেখে এবার ফিরতে হবে ঢাকায় - প্রিয় বন্ধু ও এই এলাকারই রাজনীতি সচেতন চিলেকোঠার সেপাই ওসমানের 'মাথার সমস্যা' সমাধান করা জরুরী।

উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান আর প্রচন্ড বিশৃঙ্খল সময়ের কিছু প্রতিবাদী শিক্ষিত যুবক, একজন অশিক্ষিত রিকশাচালক, একটি ভাড়া বাড়ির চিলেকোঠার নায়ককে নিয়ে এগোয় এই চিলেকোঠার সেপাই। বইটই পড়ে, এমন কোনো মানুষ নেই যে এই বইয়ের নাম বা প্রশংসা শুনেনি। এই অস্বস্তিকর সময়ে তারা কখনও চায়ের কাপে, কখনো রাজপথে বা বাড়িওয়ালার সামনে আইয়ুব খান ও পাকিস্তানবিরোধী ঝড় তুলে আর সেই ঝড়গুলো বড় হতে হতে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয় ঢাকা শহরের সবচেয়ে সাহসী রিকশাচালকটির বুক আর অন্যদিকে ওসমানের পাগলপ্রায় আচরণ ও প্রতিদিন খিজিরকে চোখের সামনে দেখা যেনো এক অদ্ভুত সমাপ্তি টানে গল্পের। আমি শেষদিকে বুঝতে চেষ্টা করি, আনোয়ার ঘুম ভেঙে ওসমানকে না দেখলে কি করবে? জুম্মনের মা কি সত্যিই খিজিরের কথা মনে করে কেঁদেছিলো? রানু ও তার পরিবার বাড়ি ছেড়ে গেলো কিন্তু ওসমান কি একবারও ভাবলো না রানুর চিরকুটটার কথা : 'বাড়িওয়ালা আজও এসেছিল। আব্বাকে দেখা করতে বলিয়াছে। আমার ভয় লাগে। কাহারও ইচ্ছা হইলে দায়িত্ব পালন করুক'।?

চিলেকোঠার সেপাই বা মোহাম্মদ ওসমান গনি দরজার তালা ভেঙে বেরিয়ে পড়ে ঢাকার মহাদেশের-মতো-খোলা রাস্তায়। আর এই দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকে আগামী দুবছরের মধ্যেই স্বাধীনতা অর্জন করতে যাওয়া আমার দেশ, যার আগামী প্রজন্ম হয়তো অনেক অনেক বড়লোকের ছেলেমেয়ের যুগ্ধ জয়ের গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে বা বলে বেড়াবে কিন্তু সেখানে থাকবে না প্রচন্ড খারাপ ভাষায় গালাগাল করা এই ময়লা শহরের কোনো রিকশাচালকের কথা।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কেনো তর্কসাপেক্ষে এই দেশে জন্মানো শ্রেষ্ঠ ঔপনাসিক, সেটা বুঝতে আমার বেগ পেতে হয় না, বরং এই তিনশো পৃষ্ঠার গল্পের নায়কেরাই যেনো এটা জানিয়ে দিয়ে যায় আমাকে।
Profile Image for Nahid Hasan.
132 reviews20 followers
July 16, 2018
ওহ খোদা!!! আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। মাত্র দুটি উপন্যাস আর ২৮টি ছোটগল্প দিয়েই নিজের পোক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের মতো বাঙলা সাহিত্যের মহারথীদের পাশে। “চিলেকোঠার সেপাই” এক অসাধারণ সৃষ্টি। এটা থৃলার বই নয়, কিন্তু কোন অংশে কমও নয়। বাংলাদেশের গণজাগরণে অংশ নিয়েছিলো শহর-গ্রামের আপামর ���নতা। তাদের মধ্যে ছিল খেটে খাওয়া মানুষ, বর্গাচাষী কৃষক, রিকশাচালক সহ আরও অনেক। কিন্তু যখন লক্ষ্য অর্জিত হল তখন সেই মনেপ্রাণে বাঙালীগুলিই পিছিয়ে পরে। তারা যে এদেশে থাকে তাদেরকে ভুলে যাওয়া হয়। রিকশাচালকও প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু নতুন দিনের সাথে নেতারা ভুলে যায়। যারা পাকিস্তানের আইয়ুব খানের দালাল হয়ে শহর থেকে গ্রাম, জ্বালিয়ে মারলো মানুষ। দিনশেষে তারাই এসে আবার ভিড়লো নতুন পালতোলা নৌকায়। প্রতারক আর আওয়ামী রাজনীতি মিশে একাকার হয়ে যায়। বইটা পড়ে অনেক কথা মনে হয়েছে। তবে একটা কথা মনে খুব করে বিঁধেছে, রহমতুল্লাহ, খয়বার গাজীরা এখনো এদেশে দাপিয়ে বেড়ায়। হয়তো আইয়ুব খানের দালালের বেশে নয়, কিন্তু ভোল পালটে তাদের অপকর্ম যুগ যুগ ধরে ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণকে বশ মানানোর অস্ত্র তাদের হাতে একটাই, “ধর্ম”। খয়বার গাজী কিংবা রহমতুল্লারা বারবার পার পেয়ে যায় ধর্মের দোহাই দিয়ে, কিন্তু, খিজির, জুম্মনের মা, চেংটু, করমালি এঁদের নিপীড়নের কোনো বিচার হয়না। হবেও না। বাঙলাকে চেনার জন্য, ইতিহাস জানার জন্য, বাঙলীকে ভালো করে বোঝার জন্যই পড়া উচিৎ এ বই।
This entire review has been hidden because of spoilers.
Profile Image for Himel Rahman.
Author 7 books46 followers
November 8, 2018
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নিঃসন্দেহে একজন শক্তিশালী লেখক। এই বইটা শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মন্তব্য এটাই যে, আমার জন্য একটু বেশিই উঁচুমানের লেখা হয়ে গেছে। যাই হোক, অনেকের ভালো লাগা বা প্রশংসিত বই হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে ভালো লাগেনি বা কম ভালো লেগেছে, এরকম কয়েকটা বই আমি দ্বিতীয়বার পড়ার জন্য রেখেছি। তার মধ্যে এটাও আছে। তখন না হয় নিজের মন্তব্য ও রেটিং দুটোই পরিবর্তন করবো।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,736 reviews355 followers
February 17, 2025
#Binge Reviewing all my earlier Reads:

ইলিয়াস সাহেবের প্রথম উপন্যাস এটি। অভ্যুদয়ের সাথে সাথেই জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। এই ঐতিহাসিক উপাখ্যানে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু এই বই স্রেফ রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিল নয়, বরং এক ব্যক্তির ভেতর-বাহিরের দ্বন্দ্ব, সমাজের অসামঞ্জস্য ও বৈষম্যের নিখুঁত প্রতিফলন। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মারুফ, একজন হতাশাগ্রস্ত তরুণ, যিনি রাজনীতি, ব্যক্তিগত সংকট ও সামাজিক বাস্তবতার জটিল বন্ধনে আবদ্ধ। ঢাকা শহরের এক পুরনো বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকা এই যুবক একদিকে রাজনৈতিক আন্দোলনের স্রোতে গা ভাসাতে চায়, আবার নিজের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। তাঁর চারপাশে বিদ্যমান শ্রেণিবৈষম্য, মধ্যবিত্ত সমাজের মানসিক সংকীর্ণতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন ক্রমাগত তাকে অস্থির করে তোলে। মারুফের দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা দেখি আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের স্বপ্ন, ভীতি, দমন-পীড়ন এবং শোষণের বাস্তব চিত্র। গণ-অভ্যুত্থান, সেনাবাহিনীর দমননীতি ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সবই লেখক নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে তোলে। ইলিয়াস ছাত্র আন্দোলন, রাষ্ট্রের দমননীতির ভয়াবহতা এবং একটি শোষিত সমাজের ক্ষোভকে বাস্তবসম্মতভাবে চিত্রিত করেছেন। মারুফ চরিত্রের মাধ্যমে ইলিয়াস মধ্যবিত্ত যুবকদের দোটানা, ভবিষ্যৎহীনতা এবং অবদমিত স্বপ্নের করুণ চিত্র এঁকেছেন। একদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতা, অন্যদিকে বিপ্লবী চেতনার টানাপোড়েন তাকে এক মানসিক সংকটে ফেলে দেয়। এই উপন্যাসে 'চিলেকোঠা' একটি প্রতীক — যা বঞ্চিত, নিপীড়িত ও শোষিত জনগোষ্ঠীর অবস্থা বোঝায়। এই উপন্যাসে ঢাকা শহরের পুরনো বাড়ির পরিবেশ, রাস্তাঘাট, অলিগলি, আন্দোলনরত জনতা—সবকিছুই একটি বৃহত্তর বাস্তবতার প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। উপন্যাসে সেনাবাহিনীর দমননীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদের করুণ পরিণতি বারবার উঠে এসেছে। এক ধরনের নৈরাশ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও লেখক সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের শক্তির প্রতি আস্থাশীল থেকেছেন। ইলিয়াসের ভাষা নির্মেদ, বাস্তবধর্মী এবং রাজনৈতিক তৎপরতায় ঋদ্ধ। সংলাপ ও বর্ণনার মধ্যে ব্যঙ্গ, রূপক এবং প্রতীকী ভাষার ব্যবহার উপন্যাসটিকে আরও প্রভাবশালী করেছে। পরিশেষে বলতেই হয় যে ‘চিলেকোঠার সেপাই’ শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়, এটি এক মধ্যবিত্ত তরুণের আত্মসংকট, রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ এবং একটি সময়ের দলিল। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উপন্যাস, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগের রাজনৈতিক পটভূমিকে তুলে ধরে। এই উপন্যাস শুধু ইতিহাস বোঝার জন্যই নয়, বরং সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতির প্রেক্ষাপট বুঝতে এখনো প্রাসঙ্গিক। তাই বাংলা সাহিত্যে ‘চিলেকোঠার সেপাই’ এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। পড়ে দেখুন আমাদের সাহিত্যের এই উজ্জ্বল রত্নটিকে।







Profile Image for Tusar Abdullah  Rezbi.
Author 11 books55 followers
June 28, 2022
যেভাবে লেখক লিখেছেন, কপাল ভালো দাঁত ভাঙে নাই। শরীরের প্রতিটা লোম জাগ্রত হয়ে গিয়েছিল পড়ার সময়।
Profile Image for Prottorthy Zaman Diya.
19 reviews12 followers
June 17, 2025
১০০ বছরেরও আগে বিদ্রোহী সিপাহিদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য নবাব আব্দুল গনিকে দিয়ে পোঁতানো পামগাছ বা সেইসব পামগাছের বাচ্চারা মানুষের স্লোগানে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি বলে আস্তে আস্তে হাই তোলে।


খুব সম্ভবত ৪-৫ বছর আগে কোনো এক দূরবর্তী শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে বাবা উপহার পেয়েছিলেন ঘোলাটে সবুজ মলাটের এই বইটা । সবে বেল জার পড়ে শেষ করার পর স্যাডিস্টিক হয়ে যখন দুঃখ বিলাসের ঘোরতর ইচ্ছা নিয়ে বুকশেলফ ঘাঁটছি, তখন হঠাৎ চোখ পড়লো। কী কারণে যেন বইটা বগলদাবা করে শরণাপন্ন হলাম বন্ধু চ্যাটজিপিটির। ব্যাটা আমার অর্ধেক কথা না শুনেই নার্সিসিস্টের মতো বলে গেলো, "চিলেকোঠার সেপাই ইস পসিবলি দ্য বেস্ট প্যরালাল টু দ্য ইমোশনাল ক্যাওস অফ দ্য বেল জার"। বাড়তি চিন্তা না করে তাই ডুবে গেলাম বইয়ের ভেতর।

কিছু বই মাঝে মাঝে প্রশ্ন রেখে যায়, দেখার ভেতরেও যা দেখা যায়, তা কি শুধুই বিভ্রম? যদি তাই হবে, তাহলে কেন শত বছর আগের বিদ্রোহীরা বার বার ফিরে আসে খিজির হয়ে? কেন ওসমানেরা চায় রঞ্জুদের হত্যা করে নিজেদের মানসিক বিচ্ছিন্নতার দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসতে?

এসব প্রশ্নের উত্তর অসম্পূর্ণ রেখে দিয়েই লেখক পুরো বইয়ের প্রতিটি চরিত্রকে সম্পূর্ণ করেছেন। পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি বস্তির রিকশাচালক বজলু থেকে আবেগিক দ্বন্দ্বে ভোগা জুম্মনের মা, বামপন্থী আনোয়ার থেকে কথায় কথায় ইংরেজি বলে নিজের পলিটিক্যাল আইডিওলজি জাহির করা শওকত, কিংবা ভাগ্যান্বেশনের ফেরে নিঃস্ব গ্রাম্য অশিক্ষিত নাদু পরামাণিক থেকে আইয়ুব খানের দালাল রহমতউল্লা প্রত্যেকেই হয়ে উঠছিল যেন গণ-অভ্যত্থানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

একের পর এক চরিত্রের সাথে পরিচয়, অকথ্য ভাষায় গালাগালি, ঘটনার অগ্রসরতার শ্লথগতি সবকিছু চাপা পড়ে যায় যখন খিজিরের স্ক্রু ড্রাইভার আর প্লায়ারের অনিবার্য পরিণতি নিশ��চিত জেনে চারিদিকে সমস্ত কিছু হাহাকার করে ওঠে । যখন দানবাকৃতির থাম, কাণ্ড, ডালপালা আর ঝুলন্ত ঝুড়ি নিয়ে রুগ্নমূর্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছ গ্রাস করে নেয় অবাধ্য চেংটুকে। যখন করমালির দগ্ধ পায়ের গলিত ঘায়ের যন্ত্রণায় মুছে যায় বিপ্লবের সমস্ত চেতনা। তাই বোধ হয় তখন "স্বৈরাচারমুক্ত" পূর্ব বাংলার চিলেকোঠার চার দেয়ালে তালাবদ্ধ কর্পোরেট চাকরিজীবী ছাপোষা ব্যাচেলর ওসমানের জীবনে এসব মিটিং-মিছিলের ভূমিকা স্মরণ রাখার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে আসে!


ইতিহাসের অন্যতম এক অভ্যুত্থানের মনস্তাত্ত্বিক পোস্টমর্টেমস্বরুপ লেখা ভয়ানক সাহসী এই রচনাকে কেবল ঐতিহাসিক উপন্যাসের সংকীর্ণ গন্ডিতে ফেলে রাখলে লেখককে অপমান করা হয় বৈকি! শেষের দিকে প্রতিটি পৃষ্ঠা ওল্টাতে যে ভয় কাজ করছিলো, তা চিরায়ত থ্রিলারগুলোকেও হার মানায়। আবার পারিবারিক অজস্র ঘটনা কিংবা চরিত্রগুলোর মানসিক বিশ্লেষনে কখনো একে ফ্যামিলি ড্রামা বা সাইকোলজিক্যাল হরর বলে চিহ্নিত করাও অস্বাভাবিক নয়। সব কিছুকে কেন্দ্রীভূত করা এ ত্রিকালদর্শী উপন্যাসের রিভিউ লেখার ক্ষমতা বা ধৃষ্টতা-কোনোটিই আমার নেই। তাই বুকশেলফের "ক্লাসিক" স্ট্যাকে খুব সাবধানে বইটা রেখে নিজের অনুভূতিগুলোও চাপা দিয়ে ফিরে এলাম সিজোফ্রেনিয়াগ্রস্ত রোগীর মতো পরীক্ষার খাতায় 'রেইনকোট' গল্পের উদ্দীপকের অপরিসীম গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রঞ্জু ওরফে ওসমান গনির সহনামী হওয়াই যে কিশোর রঞ্জুর অন্যতম অপরাধ ছিল সে বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাসের বর্ণনা করে না ফেলার ইচ্ছা পোষণ করতে করতে...
Profile Image for পীয়্যান নবী.
52 reviews87 followers
January 11, 2017
ঐ প্রচন্ড একটা অস্থির অস্থিতিশীল সময়। সর্বাত্মকভাবে বোধয় ঐ প্রথমই এই বাংলার মানুষ কোন একটা কিছুর প্রতিবাদ করছিল। আইয়ুবকে তাড়াতে হবে, নেতাকে মুক্ত করতে হবে, অধিকার আদায় করতে হবে, ছয়টা কিংবা এগারটা দফা। সময়টায় বোধয় দিশা হারায়া ফেলে সবাই। বাদ যায় না পুরান ঢাকার ঐ মানুষগুলাও। চাকরিজীবী ওসমান, অশিক্ষিত রিকশাচালক খিজির কিংবা উচ্চশিক্ষিত ওসমান, কেউই ঐ অস্থিরতার বাইরে ছিল না। একটার পর একটা মিছিল যখন আছড়ে পড়ত শহীদ মিনারে, রেসকোর্সে, পল্টনে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে... তখন আমরা দেখেছি ওসমান, আনোয়ার কিংবা খিজিরকে। স্ক্রুড্রাইভার প্লায়ার্স হাতে হাড্ডি খিজির... কয়টা হোটেল, কাচ্চি তেহারীর দোকান, পার্ক, পল্টনের এই অফিস সেই অফিস, অনেক দূরের ধানমন্ডি, মুড়ির টিন, স্টেডিয়াম... আর কেবলই রিকশা...
৬৯ এর ঢাকা, গণঅভ্যুথানের ঢাকা। কেবলই কি ঢাকা? আনোয়ার যখন গ্রামে গেল, সেই সময় গ্রামের নিপীড়িত শ্রেণী মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রচেষ্টার কথাও আমরা জেনেছিলাম। কিন্তু যা হবার...
ওসমান পাগল হয়ে গেল, সে রঞ্জুরে কিংবা নিজেরেই ভালোবাসত। তারে নার্সিসিস্ট বইলা রায় দিয়ে দিয়েছে কেউ কেউ। আবার সে রানুরেও ভালোবাসত। সে কী খিজিরকেও অনেকটা ভালোবাসত না?
খিজিরটাও কি জুম্মনের মায়েরে ভালোবাসত না? জুম্মনরেও কি না? লোকটা শেষে এইভাবে উড়ে উড়ে বেড়াইল!

রুদ্ধশ্বাস, ঘোরলাগা একটা মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে গেলাম। কী প্রচন্ড অসাধারণ লেখনী। শক্তিশালী একটা রাজনৈতিক উপন্যাস! পাঁচে পাঁচ!
Profile Image for Rizal Kabir.
Author 2 books45 followers
May 6, 2020
সবার প্রথমে যে কথাটা বলা দরকার, তা হলোঃ অসম্ভব শক্তিশালী লেখা।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায় হাতেখড়ি হলো আমার এই উপন্যাসের মাধ্যমে, এবং সত্যিকার অর্থেই মুগ্ধ হলাম। এরকম কিছু আমি এর আগে কখনো পড়ি নি, পড়বো বলেও মনে হচ্ছে না। তাই শেষ করেও বারবার মনে হচ্ছে, কি অসাধারণ মেধাবী এবং নিপুণ গদ্যশিল্পী হলেই এমনটা লেখা সম্ভব!!
উপন্যাস সম্পর্কে চিরাচরিত ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দেয়ার মত উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাই।

প্রতিটা চরিত্রকে লেখক সময় নিয়ে, চিন্তা করে তৈরি করেছেন, কঙ্কাল থেকে রক্তমাংস দিয়ে গড়ে তুলেছেন। গল্প যত এগিয়েছে, চরিত্রগুলোও তত সুগঠিত হয়েছে। সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হলো, প্রতিটা চরিত্রের চিত্রায়ন ভীষণ নগ্নভাবে উঠে এসেছে। বামপন্থী চেতনার এক যুবকের চিন্তা-ভাবনা, ভাষা, চালচলন যেমনটা হওয়া উচিত; আনোয়ার ঠিক তাই। আবার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ একটা সময়ে দরিদ্র, উদ্বাস্তু, প্রান্তিক চরিত্র হিসেবে খিজিরের পারিপার্শ্বিকতা, ভাষা, পটভূমিরও সুনিপুণ চিত্রায়ন রয়েছে। প্রচুর খিস্তি-খেউড় রয়েছে, Raw বর্ণনা আছে, কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি কখনোই। বরং মনে হয়েছে, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল।

বাংলা উপন্যাসে, গল্পে আমরা বোধহয় নিজেদের কমফোর্ট জোনে থেকে অভ্যস্ত। তাই চিলেকোঠার সেপাই পড়তে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি আমি। এক বসায় খুব বেশি একসাথে হজম করতে পারি নি। লেখনীর গভীরতায়, তীব্রতায় আমি সময় নিয়ে গলঃধকরণ করেছি পুরোটা। শেষের দিকে খিজিরের মৃত্যুকালীন বর্ণনা পড়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি। স্বগতোক্তির মত, নিজের কথ্য ভাবে প্রথমদিকে শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক অস্থিরতা, পরবর্তিতে অগ্নিকুণ্ডের মত সহসাই দৈহিক যন্ত্রণার আবির্ভাব, জীবনের পরিসমাপ্তি। এই বর্ণনা লেখক কিভাবে দিলেন? কোথায় পেলেন?
ক্লাসিক সাহিত্যে সন্ধ্যার শুরু হয় পশ্চিম আকাশে, গোধূলীর সঙ্গমে। কিন্তু লেখক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন, সবসময় এমনটা আদিখ্যেতা। সন্ধ্যা বস্তির পাশের নর্দমা থেকেও উঠে আসে।
স্পষ্ট ভাষায় সাম্প্রদায়িকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, বলেছেন - নামাজ পড়ার সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ হওয়ার সম্পর্ক কি?

গণুঅভ্যুত্থানের বিক্ষুব্ধ ঢাকা যেমন দৃশ্যপটে এসেছে, তেমনি শ্রেণীশত্রুদের কবলে শোষিত যমুনা-পাড়ের দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর গল্পও বলেছেন, হুবহু তাদের স্তরে নেমে এসেছেন। বিপ্লব এবং সংঘাতের শহুরে ও গ্রাম্য - দুটি ভিন্ন ধারাকে এক করেছেন।
তবে চিলেকোঠার সেপাই ওসমান গনির মানসিক টানাপোড়েন থেকে শুরু হওয়া ভারসাম্যহীনতার পরিণতি দেখতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিপ্লবী হাড্ডিসার খিজিরের চরিত্রটি ওসমানের সাথে যুক্ত হয়ে লাভ করেছে এক অনন্য মাত্রা। ঘুরেফিরে তাকেই আমার মনে হয়েছে এই উপন্যাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী চরিত্র।।
উপন্যাসজুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য রূপক, প্রহেলিকাময় ইঙ্গিত। মানসিক বৈকল্যের ফলে ওসমানের কণ্ঠে ঢাকার পথে পথে বুড়িগঙ্গার স্রোতে ছড়িয়ে পড়া আগুনের কথার সাথে যেন মিশে আছে আরো অনেক কিছু।।

বাংলা সাহিত্যের অন্যরকমের একটা মাস্টারপিস চিলেকোঠার সেপাই। অবশ্য-পাঠ্য উপন্যাস।
Profile Image for Akash Saha.
156 reviews25 followers
July 16, 2022
❝চিলেকোঠার সেপাই❞ নিয়ে আমার বিশেষ একটা স্মৃতি আছে। ক্লাস নাইনে থাকতে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম। বহুকস্টে ৩৫ পৃষ্ঠা পড়ে আর পারলাম না। পরে বেশ লম্বা সময়ের জন্য রিডার্স ব্লকে পড়ে গিয়েছিলাম।

অনেক দিন তাই বইটা পড়ার সাহস হয়নি। হাতের কাছেই ছিল।কিন্তু পড়ব পড়ব করে পড়াই হচ্ছিল না। অবশ্য মাঝে বছর দুই এর মতো বন্ধু অনিক সিংহ বইটি মেরে দিয়েছিল।

এই ঈদের ছুটির শেষদিকে শুরু করলাম বইটি। এবার রীতিমতো আফসোস হলো। এত অসাধারণ বই কেন পড়ি নি এতদিন!!! ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে বইটি লেখা হয়েছে। লেখক তার স্বভাবচিত ভংগিতে লিখেছেন। ওসমান, হাড্ডি খিজির, রানু, রঞ্জু, আনোয়ার সহ অনেকগুলো ক্যারেক্টার ও তাদের মনোবিশ্লেষন করেছেন। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদ ও শ্রেনিসংগ্রামের মধ্যে বৈপরীত্যের চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার সাথে আছে জাদুবস্তবতা, আছে সাধারণ মানুষের বিপ্লবের স্বপ্ন, বিপ্লবের ফসল প্রভাবশালিদের ঘরে তোলার চাপা আর্তনাদ।

এতগুলো কথা কিন্তু কোনো রিভিউ নয়, শুধু বইটি নিয়ে অনুভুতির প্রকাশ - আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বই এর রিভিউ লেখার মতো সামর্থ্য কোনো জীবনেই হবে বলে মনে হয় না।
Profile Image for Minhaj Abedin.
28 reviews20 followers
December 16, 2020
হাড্ডি খিজির মরে গেলো, ওসমান কি পাগল হয়ে গেলো। আনোয়ার সাথে ঘুমে গুম হয়ে আছে ঢাকার অলি গলি আর রাস্তাগুলো। সেই ঘুমের ওপর নতুন করে পরত পরে, সেই ঘুম কখন ও ভাঙবে কি?
..
ইচ্ছা করে ঘুমিয়ে থাকলে হাড্ডি খিজিরদের কি সাধ্য আমাদের ঘুম ভাঙানোর?
...

["আইয়ুব খানকে পোড়ানো হলেই আইয়ুব খান মরে না, পাকিস্তানের সব আইয়ুব খানকে শেষ করলে বাঙালিদের মধ্যে নতুন একটা আইয়ুব খান এমার্জ করবে।"
- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস]
..
চিলোকাঠা আছে, সেপাইগুলোতে সব জং ধরে গেছে।
Displaying 1 - 30 of 143 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.