বসন্তের এক নিষ্ঠুর ভোরে মুখ ভেঙে রাশেদ দেখতে পায় ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল জুড়ে নেমে এসেছে অন্ধকার-ঘোষিত হয়েছে সামরিক শাসন; তার পাঁচ বছরের মেয়ে মৃদু ইস্কুলে গিয়েছিল, কিন্তু তাকে যেতে দেয়া হয়নি, মিলিটারিরা রাইফেল উঁচিয়ে তাকে বাধা দেয়, সে এই অদ্ভুত মানুষদের দেখে রাস্তা থেকে চোখ আর বুক ভ’রে দুঃস্বপ্ন নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। রাশেদের হৃদয়ের মতো ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল আর মৃদুর কাজলাদিদি লুপ্ত হয়ে যায় কর্কশ অশ্লীল সামরিক অন্ধকারে। তবে এই প্রথম সামরিক গ্রাসে পড়েনি তার নষ্টভ্রষ্ট দেশটি, রাশেদের বাল্যকাল আর যৌবন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক গ্রাসে, এখন তার উত্তরাধিকারীর জীবনও পড়ে সামরিক গ্রাসে। রাশেদ জেগে ওঠে এক দূষিত বাস্তবতার মধ্যে, দিকে দিকে সে বুটের শব্দ শুনতে পায়, সে শুনতে পায় একনায়কের চাবুকের শব্দে নাচছে তার মাতৃভূমি, দেখতে পায় তার আত্মার মতো প্রিয় দেশটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে একনায়কের গ্রাসে প’ড়ে; তবে রাশেদ শুধু এ দৃশ্যই দেখে না-দেখে ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের সবুজ দাবাগ্নিদগ্ধ দেশটিকে কেউ ভালোবাসে না, যদিও সম্ভোগ করতে চায় সবাই। রাশেদ দেখতে পায় তার দেশটিকে নষ্ট ক’রে চলছে সামরিক একনায়করা, ভ্রষ্ট ক’রে চলছে রাজনীতিকেরা; এবং প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠছে বিপন্ন, একদিন রাশেদও বিপন্ন হয়ে ওঠে ভয়ংকরভাবে, নিজের চোখের সামনে দেখে পুড়ছে ছাই হচ্ছে ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল-পুড়ছে গাছের পাতা, নদী, মেঘ, ধানখেত, লাঙল, সড়ক, গ্রাম, শহর, পুড়ে যাচ্ছে ছাই হয়ে একটি জাতি, পুড়ে যাচ্ছে ছাই হয়ে যাচ্ছে বর্তমান, পুড়ে যাচ্ছে ছাই হয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ। হুমায়ুন আজাদ ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল-এ কোনো ব্যক্তির কথা বলেননি, বলেছেন একটি দেশ ও জাতির কথা, বলেছেন অভিনব রীতিতে, অসামান্য গদ্যে; তিনি উপস্থাপন করেছেন এক মর্মস্পর
Humayun Azad (Bangla: হুমায়ূন আজাদ) was a Bangladeshi author and scholar. He earned BA degree in Bengali language and literature from University of Dhaka. He obtained his PhD in linguistics from the University of Edinburgh in 1976. He later served as a faculty member of the department of Bengali language and literature at the University of Dhaka. His early career produced works on Bengali linguistics, notably syntax. He was regarded as a leading linguist of the Bangla language.
Towards the end of 1980s, he started to write newspaper column focusing on contemporary socio-political issues. Through his writings of 1990s, he established himself as a freethinker and appeared to be an agnostic. In his works, he openly criticized religious extremism, as well as Islam. In 1992 Professor Azad published the first comprehensive feminist book in Bangla titled Naari (Woman), largely akin to The Second Sex by Simone de Beauvoir in contents and ideas.
The literary career of Humayun Azad started with poetry. However, his poems did not show any notable poetic fervour. On the other hand his literary essays, particularly those based on original research, carried significant value.
He earned a formidable reputation as a newspaper columnist towards the end of 1980s. His articles were merciless attacks on social and political injustice, hypocrisy and corruption. He was uncowed in protesting military rule. He started to write novels in 1990s. His novel Chappanno Hazar Borgomile is a powerful novel written against military dictatorship. Azad's writings indicate his distaste for corrupt politicians, abusive military rulers and fundamentalist Islam. Nevertheless, his prose shows a well-knit and compact style of his own. His formation of a sentence, choice of words and syntax are very characteristic of him. Although he often fell victim to the temptation of using fiction as a vehicle of conspicuous political and philosophical message, he distinguished himself with his unique style and diction.
On August 11, 2004, Professor Azad was found dead in his apartment in Munich, Germany, where he had arrived a week earlier to conduct research on the nineteenth century German romantic poet Heinrich Heine. He was buried in Rarhikhal, his village home in Bangladesh.
In 2012, the Government of Bangladesh honored him with Ekushey Padak posthumously. Besides this, he was honored with Bangla Academy Award in 1986.
হুমায়ূন আজাদ আসলেই সব লিখতে পারেন। পড়া শেষ করে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে একই লোক 'লাল-নীল দীপাবলি' লিখেছেন। হাই স্কুলে থাকতে তাঁর 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' পড়তে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিলাম। ছোট্ট আমি 'চাঁদ তারা গলে পড়ে' মার্কা কথা নিতে পারি নি। আর কখনোই তাঁর গম্ভীর কোন বই পড়ার চেষ্টা করি নি। এটি হুমায়ূন আজাদের লেখা আমার পড়া দ্বিতীয় বই এবং দুটো বইকে আমার সম্পূর্ণ দুই মেরুর মনে হল। খুব পাকা লেখক না হলে নিজেকে এভাবে ভেঙে চুরে ফেলা মুশকিল। আর শুধুমাত্র আগের পড়া বইটি এতো ভালোবাসি বলে এই বই শেষ করা জরুরী মনে করেছিলাম।
'সব কিছু ভেঙে পড়ে' পড়ে শেষ করতে চেষ্টা করি নি। কিন্তু, 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' শেষ করেছি এবং বুঝতে পেরেছি যে মন শক্ত হয়ে গেছে। মনে নেই, 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' তে এতো কুৎসিত ভাষা তিনি ব্যবহার করেছিলেন কিনা সত্য বলার নামে, পড়তে পড়তে শুধু ভেবেছি রোড রেজের কথা। মনে হচ্ছিল, খুবই ক্ষ্যাপা এক ট্রাক ড্রাইভার যিনি উদয়াস্ত গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত, তাঁর ভাষা পড়ছি। হ্যা, চরম গালাগালি করেছেন, এই কথাটা এর চেয়ে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারছি না। সামরিক শাসনামল নিয়ে তাঁর মেজাজ ভালো ছিল না, সেই রাগে দুঃখে বইটিকে তিনি মনে হল ইউরিনাল বা পাবলিক টয়লেটের দেয়ালের মতো ব্যবহার করেছেন। অথবা এখন বলা যায় ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনের কথা, ওখানে অবশ্য বাংলা শব্দের বেশ বেহাল দশা হয়, সেটা এখানে নেই।
প্রধান চরিত্র রাশেদের প্রতি আমি কিছুতেই প্রথম কয়েক পৃষ্ঠায় তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেবার পর সহানুভূতি অনুভব করতে পারি নি। একবারও আমার মনে হয় নি যে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পড়ে মৃদুর বাবা বিপন্ন একজন মানুষ। আমি পড়ে অবাক হয়ে গেলাম যে লেখক একজন বাবার মন খারাপের গল্প দিয়ে শুরু করলেন যে তাঁর মেয়ের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে সামরিক শাসক আসায়, এরপর চলে গেলেন কি করে এই বাবা অর্থাৎ রাশেদ নিজের রাগ প্রকাশ করছেন মনে মনে স্কুল বন্ধের জন্য দায়ী সব সামরিক শাসকদের কতো কায়দায় ধর্ষন করবেন সেসব বিতিকিচ্ছিরি ভাবনার বর্ণনায়! এরপর রাশেদের পৃথিবীর সবাইকে সব কিছুর জন্য দোষ দেওয়া, বিশেষ করে তাবৎ নারীজাতির গুষ্টি উদ্ধারের স্কিপ করতে ইচ্ছা করা অংশ পেরোলেও উপন্যাসের কোন মূল জায়গা খুঁজে পেলাম না। বুঝলাম, যে রাশেদ যাই করুক, যাকেই গালি দেক, যার সাথেই ঘুরুক, পান করুক, সে বাদে সবাই নষ্ট হয়ে গেছে। বেশ।
সবচেয়ে যেটা হাস্যকর ঠেকল, সেটা হল, শেষে এসে খুব আলতো করে লেখকের বলতে চাওয়া যে তিনি বড় লেখক এবং তাঁর ভালো বই বিদ্বেষীরা পছন্দ করেন না। নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো, কিন্তু পরোক্ষভাবে নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবি করা কারো প্রতি শ্রদ্ধা আসা একটু মুশকিল। এই কথার আগে অবশ্য মানুষ কতো ক্ষুদ্র সেই বিষয়েও তিনি বেশ কিছুটা জায়গায় বলেছেন। ধর্ম নিয়ে তাঁর ভাবনার জায়গাগুলো পরিষ্কার, সেই অংশের বর্ণনা মনোযোগ ফিরিয়ে আনে, বিশেষ করে গালিগালাজ ছিল না বলে।
মোট কথা, বুঝেছি যে হুমায়ূন আজাদ প্রিয় লেখক হলেই তাঁর সব বই আমার ভালো লাগবে না, বিশেষ করে এরকম তুলোধুনো মনোভাব নিয়ে 'সত্য' প্রকাশ করার জন্য তিনি যা লিখেছেন তা। সত্য পড়তে কষ্ট হয় না, কিন্তু, পড়তে গিয়ে কখন এসব শেষ হয়ে লেখক মূল গল্পে যাবেন, এই চিন্তা মাথায় নিয়ে আর কিছু পড়তে আগ্রহী না। পড়া শেষ করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার পাশাপাশি আফসোস হয়েছে যে 'কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী' পড়তে নিয়েও কেন তা রেখে এই বই তুলে নিয়েছিলাম...
যাই হোক, পরের মুখে ঝাল খাওয়ার চেয়ে নিজে চেখে দেখে নিলাম এবং সিদ্ধান্তে আসলাম যে এই লেখনী আমাকে টানে না।
রেটিং : ★★★★/৫ বাংলাদেশের এক নিকৃষ্টতম অধ্যায় সামরিক শাসন। সামরিক শাসনের বর্বরতা,দেশ চালানোর নীতি, কালোবাজারি মোট কথা সামরিক শাসনের সামগ্রিক কার্যকলাপের উপর লেখক থুথু ছিটিয়েছে ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন আঙ্গিকে। ঐ সময়কার সামরিক শাসকদের পা চাটা দালাল তথাকথিত মন্ত্রী /নেতাদের কুপোকাত করতেও লেখক ভুলে যায়নি।
তবে উপন্যাসটি বেশ খাপছাড়া লেগেছে। গোছানো হয়নি। কখন কোনদিকে লাফিয়ে গেছে তা বুঝতে সময় লাগছিলো। তবে আমার মনে হয় যারা হুমায়ুন আজাদের বই পড়া শুরু করতে চান তাদের অবশ্যই হুমায়ুন আজাদের কিশোর উপন্যাস দিয়ে শুরু করায় ভাল।কেননা এ ধরনের বই পড়তে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে হয়তো হুমায়ুন আজাদকে নিকৃষ্ট লেখক উপাধিতে ভূষিত করবেন! আর যেসব পাঠক আজাদ স্যার এর ব্যবহৃত গালি নিয়ে মাতামাতি করতেসেন, তাদের কাছেই প্রশ্ন সামরিক শাসনের বর্বরতা কি এর চেয়ে কোনো অংশে কম নৃশংস ছিল?
আমি হুমায়ুন আজাদের অনেক বইয়েরই ভক্ত হলেও এটা পড়তে গিয়ে খুব বিরক্ত লাগলো, শেষ করতে পারি নি। বইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট থিম নেই, বাঙালি জাতির উপর সকল ক্ষোভ লেখক এখানে উগড়ে দিয়েছেন এলোমেলো ভাবে এবং প্রায় ক্ষেত্রেই খুবই আপত্তিকর ভাষায়। আমি লেখকের স্পষ্টবাদিতার ভক্ত, বাংলাদেশিদের তার মত করে চিনতে পেরছেন খুব কম মানুষই কিন্তু তাঁর কিছু কিছু ভাষা আমার হজম হয় না। (অথচ উনার লেখা ছোটোদের বইগুলো পড়লে বোঝা যায় বাংলা ভাষার উপর এত আশ্চর্য দখল আর কোনো লেখকের নেই, রূপকের ব্যবহারে তিনিই সেরা।)
আমার মতে,বাঙ্গালি জাতিকে সঠিকভাবে চিনতে পেরেছেন তিন জন সাহিত্যিক; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,আহমেদ ছফা আর হুমায়ুন আজাদ। বিশেষ করে পরের দুই জন চিনেছেন বাঙালি মুসলমানকে,একজন প্রবল যুক্তিতর্কে বিদ্ধ করেছেন আমাদের সমাজকে, আরেকজন প্রচণ্ড গালিবর্ষনে তার হতাশা উগড়ে দিয়েছেন। 'ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল' উপন্যাসে লেখক যে বার্ডস আই এ বাঙ্গালিকে দেখেছেন, তার বিশ্লেষণ ও আক্রমণাত্মক কথাগুলো সত্যিই চিন্তার খোরাক যোগায়।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অস্থির এক সময়ের একজন একাকি পথিক,যে সমাজের টানপোড়ন ,হিংস্রতা , মানুষের মনের নগ্নতা দেখে নিজের জীবনের প্রতি বীতঃশ্রদ্ধ হয়ে যায়।অতঃপর সে তুলে নেয় কলম,লিখতে থাকে ,যা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর জন্য চিন্তার কারন হয়ে যায়। রাশেদ কি পারবে ,তার ভবিষ্যত প্রজন্ম ,তার মৃদুর জন্য একটি সুন্দর পৃথিবি রেখে যেতে?
আসলে ,রাশেদ হল হুমায়ুন আজাদ এরই প্রতিমূর্তি, যিনি কলম হাতে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, রাশেদের মতই তার ভবিষ্যত পরিনতি সম্পর্কে আঁচ করেছিলেন , এটিই তাকে আরও প্রথাবিরোধি হতে সাহায্য করেছিল হয়ত।হুমায়ুন আজাদকে পড়ে বুঝা সহজ নয়, তার চিন্তাগুলো যুগের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। এর জন্যই প্রতিক্রিয়াশীল সমাজ সবসময় ভয় পেয়েছে হুমায়ুন আজাদকে,তাকে সরিয়ে দিয়েছে পৃথিবি থেকে।কিন্তু ��ুঃখের বিষয় ,হুমায়ুন আজাদের গুরুত্ব এখনো মূর্খ বাঙালি বুঝল না।
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তো কারো কাছে ক্ষমতা, কারো কাছে কোটি টাকা, ব্যাংক উপচে পড়া, গাড়ি, ব্যাংককে প্রমোদ, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা, আর হজ, ওমরা, মিলাদ।“ বইটা শেষ করলাম। আমার খুব প্রিয় জুনিয়র শ্রাবন্তী কুরী আমার জন্মদিনে যে দু’টি বই উপহার দিয়েছিলো, তার মধ্যে এটা হচ্ছে দ্বিতীয়। তখন বইটা পড়ে শেষ করতে পারি নি, কারণ হুমায়ুন আজাদের বই পড়তে আমার একটু কষ্ট হয় আসলে। প্রথম দিকে মনে হয় তিনি গন্তব্যহীনভাবে আগাচ্ছেন, একে-একে তাঁর সব ক্ষোভ প্রকাশ করছেন লেখনীর মাধ্যমে। কিন্তু গল্পটা আসলে কোনদিকে যাচ্ছে, তার কোনো দিশা খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মতামত, অন্যদের এমন নাও মনে হতে পারে। আমার আসলে ব্যক্তিগত মতামত দেয়াটাও বোধহয় ঠিক হচ্ছে না, কারণ আমি চাইলেও উনার মত লেখক হতে পারবো না। তবুও, রিভিউ লিখতে বসলাম। গল্পটা যুদ্ধপরবর্তী সামরিক শাসনামলের প্রেক্ষাপটে লেখা। আমি আসলে খুব টেক্সটবুক পড়ুয়া মানুষ, আর টেক্সটবুকে যুদ্ধপরবর্তী ব্যাপারস্যাপার খুব বেশি ছিলো না, তাই এ সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই কম। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার আফসোসও হয়। এই বইটা পড়ে শুরুতে নিজেকে একটু দিশেহারা মনে হলেও পরে ভালোই লেগেছে। একেবারে শেষের দিকে রাশেদ যখন ভাবছিলো, এই দেশটাকে সবাই কীভাবে নিঃশেষ করে ফেলছে…তখন আমার বুকের ভেতর থেকেও একটু দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছিলো। এখনো, খুব কি ভালো আছি আমরা? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দটা যে অলিতে-গলিতে, আকাশে-বাতাসে শোনা যায়, স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা বলি আমরা…কতখানি স্বাধীন আমরা? নিজের মত প্রকাশ করতে পারি কি মন খুলে এখনো? আমরা না স্বাধীন? গল্পটা আমাকে ভাবিয়েছে। অনেকদিন এভাবে ভাবি নি, হয়তো আর ভাবতে ইচ্ছে করে না দেখেই। আমিও সেই নষ্টদের দলের সাথেই জুড়ে গিয়েছি বোধহয়। যাই হোক, বইটির দুইটি নেতিবাচক দিক আমাকে একটু বিব্রত করেছে। একটা হলো, অশ্লীলতা। আমার মনে হয় না, এতখানি অশ্লীলতার দরকার ছিলো। রাশেদ ছেলেবেলায় কাকে কোন পুকুরে, কোন ক্ষেতে কীভাবে দেখেছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণীর আসলে কী প্রয়োজন ছিলো, আমি জানি না। সবকিছুকে মল, প্রস্রাবের সাথে তুলনা করাটাও আমার কাছে ভালো লাগে নি। বুঝতে পারি, তখনকার সময়টা হয়তো লেখকের কাছে ঠিক এতটাই পচে-গলে যাওয়া ছিলো, হয়তো এর চেয়ে accurate উপমা দেয়া সম্ভব হতো না। কিংবা হয়তো লেখকের লিখতে ভালো লেগেছিলো, কিন্তু আমার পড়তে একেবারেই ভালো লাগে নি। ঘেন্না লাগছিলো। আরেকটা নেগেটিভ পয়েন্ট হলো, রাশেদের atheism. বলছি না যে atheist বলে তাকে ভালো লাগে নি। কিন্তু বোরকা পরা টুপি পরা কাউকে দেখলেই তার মাথায় যেসব চিন্তা ঘুরতো সেগুলো একটু বিব্রতকর। সবাই তো আর খারাপ না, তাই না? আমার এই জেনারেলাইজেশনটা ভালো লাগে নি। এটাও অবশ্য একটা ব্যক্তিগত মতামত, আমি নিজে এই জেনারালাইজেশনটা পছন্দ করি না, সেটা মুসলমান হোক, হিন্দু হোক, অথবা atheist হোক, সবার ক্ষেত্রেই। এই কারণে আমার ভালো লাগে নি। বইয়ের শেষটাতে অনেক কষ্ট লেগেছে যদিও। রাশেদের জন্য কষ্ট লেগেছে। মমতাজের জন্য কষ্ট লেগেছে, মৃদুর জন্য কষ্ট লেগেছে। আর…এই দেশটার জন্য খুব কষ্ট হয়েছে।
হুমায়ুন আজাদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী, সত্যনিষ্ঠ্য এবং বহুমাত্রিক লেখক। তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কিশোর সাহিত্যিক। এতসব বিশেষণের সাথে আরেকটি অন্যতম বিশেষণ হুমায়ুন আজাদের রয়েছে তিনি “বিতর্কিত এবং সমালোচিত”।
হুমায়ুন আজাদের লেখা বইয়ের মধ্যে এটি আমার পড়া দ্বিতীয় বই। প্রথম পড়েছিলাম আব্বুকে মনে পড়ে। যারা পড়েছেন তারা জানেন এদুটো বইয়ের মধ্যে ছাপ্পান্নো হাজার মাইলেরও বেশি ব্যবধান। এই বইয়ের প্রেক্ষাপট সামরিক শাসন। বাংলাদেশ তার জন্মের পর প্রথম ১৯ বছরে অসংখ্যবার সামরিক শাসন দেখেছে, কখনো স্বল্পমেয়াদে কখনো দীর্ঘমেয়াদে। আমাদের গল্পের প্রধান চরিত্র রাশেদের বর্ণনাতেই এই উপন্যাসের এগিয়ে চলা। সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক শাসনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে পরে রাশেদ। রাশেদের মতো আরো অনেকের কাছে এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। ছোটবেলায় দেখেছে পাকিস্তানের সামরিক শাসন, দেখেছে পাকিস্তানী শাসকচক্রের তাঁবেদারি এদেশের জননেতা (!) দের ভ্রান্ত রাজনীতি। দেখেছে পাকিস্তানি শাসকরা কিভাবে দিনের পর দিন এদেশের মানুষের ঘামে ভেজা পয়সায় পশ্চিম পাকিস্তানে গড়েছে মনোরম শহর। দেখেছে দুষ্কৃতকারী নাম দিয়ে কি করে স্বাধীনতাকামী মানুষদের দাবিয়ে রাখা হতো। সেই ঘণ ঘোর অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা দেশের ক্ষমতা যখন আবার সামরিক শাসনে চলে যায় হঠাৎ হোঁচট খাওয়া, রাশেদ কেন সবার জন্যই স্বাভাবিক। রাশেদ উপলব্ধি করে পতাকার রং পাল্টেছে, সরকারি ভাষা পাল্টেছে, খাকি পোশাকের রঙ পাল্টেছে কিন্তু ক্ষমতার লোভ সেই একই রয়ে গেছে। যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে স্বাধীনতা এসেছিল সেই হায়ানাদের প্রেতাত্মারাই যেন চেপে বসেছে বাঙ্গালিদের উপর। তার সাথে উপরি পাওনা হিসেবে জুটে গেছে কিছু মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিবিদ ও ধর্ম ব্যবসায়ি।
এ অবস্থায় রাশেদের কি করা উচিত? প্রতিবাদ করা নাকি গা ভাসিয়ে দেয়া কালের স্রোতে। সেটা বোধহয় লেখকও ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি এই পুরো উপন্যাস জুড়ে।
আমার বড় লেখকদের বই পড়তে গেলে কেমন একটা চাপ লাগে। যেনো মনে হয় এই বই ভালো লাগাতেই হবে। নিয়ম করে বই পড়ার আগে আমি যেকোনো লেখক এবং তার বইয়ের ব্যাপারে মতামত ইন্টারনেট ঘেটে নেই। এই বইয়ের ব্যাপারে যখন ঘাটতে গেলাম দেখি মাঝে মাঝে কিছু নেই। যাদের ভাল লেগেছে তাদের অনেক ভালো লেগেছে আবার যাদের খারাপ লেগেছে তাদের অনেক খারাপ লেগেছে।এই বই পড়ে আমার মনে হয়েছে এটা সহজ সরল ভাষায় লেখা একটু দুর্বোধ্য বই। মাঝে মাঝে হয়না আমরা প্রচন্ড রাগে অনেক কথা বলি তাৎক্ষনিক ভাবে তার মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু পরে যখন ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে বসি তখন অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠে ওই মাথামুণ্ডু না বোঝা কথাগুলো। অহেতুক রাগের মাথায় বলা কথাগুলো পরে হয়তো বুকের পাজর ভেঙে দেয় কষ্টে তখন আর অহেতুক মনে হয় না হয়তো। কিসের এত রাগ রাশেদের নাকি বলা উচিত হুমায়ুন আজাদের। জন্ম তার ১৯৪৭ সনে মৃত্যু ২০০৭ সনে। দেশভাগ পরবর্তী পাকিস্তান দেখেছেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ দেখেছেন, সামরিক শাসন দেখেছেন, স্বৈরশাসন দেখেছেন , স্বৈরশাসনের পতন দেখেছেন। ১৯৪৭-১৯৯৪ দীর্ঘ সময় দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরে সুশাসন তো দেখেননি। আশার বুলি শুনিয়ে শুধু রঙ্গমঞ্চে নতুন নতুন নায়ক এসেছেন দিন দিন তারা নিজেদের রঙ্গীন করেছেন আর সবুজ দেশটাকে করেছেন রংহীন বর্ণহীন। তারপরও যদি মনে হয় এত কিসের রাগ ছিল হুমায়ুন আজাদের তার উত্তর আমার কাছে নেই। আমার বরং প্রশ্ন আছে "আমাদের কেন রাগ হয় না??"। কেনো ক্ষোভে আমরা ফেটে পড়িনা?? আমাদের অনূভুতি কি এতই দৈন্য যে হুমায়ুন আজাদের ভাষার ব্যবহারে সেটা ব্যথিত হয় কিন্তু জাতীয় দৈন্যতার স্বরূপ দেখেও আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হইনা।
শুরুতেই বলেছিলাম এই বই পড়া নিয়ে অনেক আশংকায় ছিলাম। তারপরও যখন শুরু করলাম প্রথম পাতা শেষ করার আগেই আমি বুঝে গেছি এই বই পড়তেই হবে। সকলের বিবেচনার জন্য তুলে দিলামঃ
“মা ওর পাশে সারাক্ষণ বসে ছিলো, যদি আগুন তাদের বাড়ির দিকেও জিভ বাড়িয়ে দেয়, তাহলে রাশেদকে কোলে করে যাতে উত্তরের পুকুরের পানি ভেঙ্গে মাঠের দিকে যেতে পারে। মা রাশেদের ঘুম ভাঙায়নি বরং সুখ পাচ্ছিলো এ কথা ভেবে যে তার শিশু পুত্র আগুনের খুব কাছাকাছি থেকেও অনেক দূরে থাকতে পারে।"
আমাদের ঘুম ভাঙবে কবে?? আদৌও কি ভাঙবে?? আগুন থেকে আম���াও তো খুব বেশী দূর নই!!!
এই বইটা পড়ে খুবই মিশ্র এক অনুভূতি হয়। যেন প্রতিবার স্বর্গে পৌছাতে পৌছাতে নরকে পৌছে যাই... অসাধারণ লেখনী, অশ্রাব্য ভাষা, সুন্দর আর কুৎসিত এর অপূর্ব সমন্বয়। এই বইটা সে সময়ের কথা বলে যখন সামরিক শাসনের মাঝে পড়ে দেশে নতুন চেতনার উদ্ভব হচ্ছে, নতুন নতুন মানবদরদীর পদচারণায় জীবনে আশংকা-আনন্দের উদ্বেল। বাঙালির এক ঐতিহাসিক গৌরবগাঁথা। গত ১০০ বছরের ধ্রুবক বাঙালি। হুমায়ুন আজাদ, আপনি জেনে খুশি হবেন, আপনার মৃত্যুর পরেও আপনার ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের দেশটা একটুও বদলায়নি।
হুমায়ুন আজাদ, আপনিও হয়তো আমারই মতন স্বর্গ ঘুরতে ঘুরতে নরক দেখে ফেলেছেন বেশ কিছুদিন হল। Take my bow.
One of the best book written by Humayun Azad! Whatta book! He described the worst side of martial law in Bangladesh!! give it a read.. you'll love it, for sure! <3
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল, এমনিতে তো আমাদের দেশের আয়তন। কিন্তু এই একই নামেই আবার আছে হুমায়ুন আজাদের গোটা একটা উপন্যাস। কবিতা দিয়ে শুরু হওয়া উপন্যাসটির মূল পটভূমি হচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক শাসনের সময়কাল। সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে বইয়ের চরিত্রগুলো সম্বন্ধে বলা যাক।
পুরো উপন্যাসটি বলতে গেলে একটি মাত্র চরিত্রকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে- রাশেদ! রাশেদ মূলত সামরিক শাসনের সময়কালের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। রাশেদের মাধ্যমেই লেখক সামরিক শাসনের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তবে সেই বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি যে শুধু সামরিক শাসনের সময়েই আবদ্ধ থেকেছেন তাও নয়, তিনি পাঠককে ঘুরিয়ে এনেছেন রাশেদের ছেলেবেলা, মুক্তিযুদ্ধের টুকরো স্মৃতির সময়কালেও। তবে রাশেদের মাধ্যমে ঘটনা বর্ণনার চাইতেও দুর্দান্ত যে ব্যাপারে উপন্যাসটি ভারী হয়ে উঠেছে, সেটা হল উপন্যাসটির অনেকাংশ জুড়ে আছে রাশেদের ভাবনা। সাধারণত উপন্যাসগুলিতে যে চরিত্রের ঘটনা বর্ণনা দেখা যায়, এখানে চরিত্রের জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্তিই উপন্যাসটিকে অন্য সব উপন্যাস থেকে আলাদা করতে বাধ্য। ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ তাই যতটা সামরিক শাসনের সময়ের ঘটনা , তার চাইতেও বেশি ঐ সময় নিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ভাবনা। তবে, আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মত রাশেদের মাধ্যমে আসলে লেখক সেই সময়কার নিজেকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন।
রাশেদ ছাড়াও এই উপন্যাসে আরো যেসব চরিত্র আছে তাঁদের মধ্যে আছে রাশেদের মেয়ে মৃদু, রাশেদের স্ত্রী মমতাজ এবং আরো অনেকে। তবে তাঁরা উপন্যাসে খুব একটা প্রভাব রেখেছে এমনটা বলা যাবেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এই উপন্যাসে বাস্তব বেশ কিছু চরিত্র এবং ঘটনারও অবলোকন করা হয়েছে, তবে সেসব জানতে হলে পাঠককে সামান্য পূর্বজ্ঞান রাখতে হবে। কারণ সেসব বাস্তব চরিত্র আর ঘটনা এখানে উপস্থাপিত হয়েছে মেটাফোরিকভাবে।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের পটভূমির কথা বলছিলাম শুরুতেই। সামরিক শাসন জারি করার সকালের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এই উপন্যাস আমাদের ঘুরিয়ে আনবে সেই সময়ের নানা বাঁকবদলের ঘটনাতে। তবে , এই উপন্যাসে যৌনতার অন্তর্ভুক্তি এবং কিছু ভিন্নমতের সমাবেশ বেশ ভালভবেই আছে বলে স্পর্শকাতর পাঠকের একটু সাবধান থাকা সমীচিন হবে। পাঠককে তাই বইটি পড়তে হবে ব্যাক্তিগত ভাবনাকে একপাশে সরিয়ে রেখেই।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল পড়ার সময় বেশ মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। যেন প্রতিবার স্বর্গে পৌছাতে পৌছাতে নরকে পৌছে যাই। অসাধারণ লেখনী , প্রচলিত মতে ‘অশ্রাব্য’ ভাষা আর সুন্দর আর কুৎসিততম সুন্দরের মিশেল ঘটিয়ে লেখা এই বইটিতে পাতার পর পাতা উলটে যেতে হয়। তবে সবচাইতে বেশি যে ব্যাপারটা দৃষ্টি কাড়ে, সেটি হল হুমায়ুন আজাদের লেখার পদ্ধতি। একেবারে ইউনিক আর নির্দিষ্ট ঢঙে লেখা এই বই পড়ার সময়ই পাঠকের মনে চিন্তার খোরাক যোগাবে। সব মিলিয়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভ্রমণ দুর্দান্ত কিছুই হবার কথা।
কোনো বিষয়ের কদর্যতা লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা শিল্প হলে হুমায়ুন আজাদ সেই শিল্পের প্রথম কাতারের একজন শিল্পী। প্রথাগত উপন্যাসকে তিনি এতোটা অপছন্দ করতেন যে সারা উপন্যাসে একটাও সংলাপ রাখেননি। সবটাই মূল চরিত্র রাশেদের দৃষ্টিতে তুলে ধরা হয়েছে। বাঙালি মুসলমানের রাজনীতি চিন্তা, ধর্মচিন্তা, সামরিক শাসন,খুন, ধর্ষণ, নারী, মদ ইত্যাদি বিষয়ের মধ্যকার কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে লেখক আশ্রয় নিয়েছেন পরাবাস্তব জগতের। উপন্যাসের ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কদর্যতার ভাগাড়ে ফোঁটা একমাত্র কোমল নির্মল ফুল হয়তো রাশেদের পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে মৃদু।
হুমায়ুন আজাদের লেখা আমি নতুন পড়ছি না তবুও এতো এতো কদর্যতার কদর্য বর্ণনা পড়ে মাঝেমধ্যে হয় ভ্রু কপালে উঠে যাচ্ছিলো নয়তো কুঁচকে যাচ্ছিলো। পুরোটা শেষ করতে আমার যথেষ্ট কষ্ট হয়েছে। মনে হচ্ছিলো একটা সুররিয়ালিস্টিক জগতে আটকা পড়েছি। যে জগতে আপাদমস্তক পঁচে যাওয়া প্রাণীদের শাসন করছে একপাল শুয়োর। তবে যতোই অবাস্তব আর নোংরা মনে হোক, এই গল্প আমাদের ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলেরই গল্প। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এদেশের রাজনীতি বা আমজনতার চিন্তাধারায় খুব একটা ভালো কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং দিন দিন তা যেনো আরও ঘৃণ্য রূপ ধারণ করছে। তাই বর্ণনাভঙ্গি যতো বাজেই লাগুক এই উপন্যাস যে আমাদের বর্তমান সময়ের জন্যও প্রাসঙ্গিক এবং ভবিষ্যতেও (অনির্দিষ্টকালের জন্য) প্রাসঙ্গিক থাকবে তা আফসোসের সাথে স্বীকার করতেই হচ্ছে।
কারফিউ জারি হয়েছে, রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনী ঘুরছে, ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেয়া; টিভিতে হরদম সরকারের গীত গাওয়া হচ্ছে। আন্দোলনে নামার উপায় নেই এখন, প্রতিদিনই শুনছি মিসক্রিয়েন্টদের শনাক্ত করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে; বুকের মাঝে এক চাপা ভয়। স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাসায় আটকা অবস্থায় ফাঁপা বুলি বলে মনে হচ্ছিলো। ভবিষ্যতের গণতন্ত্র বর্তমানের স্বৈরাচার, এরচে' বড় প্রহসন আর কি?
আজাদের 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের' সময়-পাত্র-কাল সব ভিন্ন কিন্তু মনে হচ্ছিলো বর্তমানকে, আমাকে, আমাদেরকে উনি খোলা বইয়ের মতোন পড়ে ফেলছেন। সত্যি বলতে, আমরা এখন আজাদের সেই ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলে বাস করছি। আপনি যা বলতে চান আপনি বলতে পারবেন না, টিভিতে খালি দেশের উন্নয়ন দেখাবে, দেখাবে কতিপয় ভাঁড়দের যারা কোনো এক ফ্যাকরা বাধিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটবে। এই চেতনা, সেই চেতনা, এগুলো আলাদা করতে পারবেন না। আপনি এই নরক ছেড়ে পালাতে চাইবেন কিন্তু নরক আপনাকে ঠিকই খুঁজে নেবে।
কিন্তু এর মাঝেই আপনি সত্যকে বেছে নেবেন যদি আপনার সেই হ্যাডম থেকে থাকে।
Read about 50 pages, then gave up. Can't rate it zero so gave it one star. Gratuitous use of vulgarity, no organization whatsoever in the plot (if any). Skepticism does not mean that subtlety has to be renounced totally. I hope, the next book I read of this author will not disappoint me. This one proved to be a total dud!
ধর্মীয় টানাপোড়নে দেশের যে নাজেহাল অবস্থা সাম্প্রতিককালে তাতে এই বইটি আরোও বেশী অর্থবহ হয়ে উঠেছে। অনেকেই হয়তো অসংলগ্ন কথাবার্তার দিকে আঙ্গুল তুলবেন। স্পষ্টতই ধর্মীয় অসারতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে এবং তা যথার্থ যুক্তিযুক্ত। কারও ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত হানার প্রয়াস বলবো না একে, বরং পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের নোংরা দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
শুরুতে নৈরাশ্যবাদিতার দায়ে দুষ্ট হলেও শেষের দিকে কিঞ্চিৎ আশার আলো ও তিনি দেখিয়েছেন।
দুই যুগ পার হয়ে গেলেও কিছুই বদলায়নি আসলে। সবকিছু আগের মতোই ধুকে ধুকে চলছে, শুধু তিনি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেছেন।
I read it at a time when I was still quite religious and somewhat still conservative surrounding religion. But I did always have an open mind. I loved the book even though it was really hard to digest sometimes due to my weakness for Islam at that time.
হুমায়ুন আজাদ আসলে হুমায়ুন আজাদই।উনি যে বাংলাদেশে ওয়ান পিস এইটা বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বইয়ের মাধ্যমে।তার লেখনী ও কাব্যিক উপমার দ্বারা এই বইটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।