Rabindranath Tagore (father of the author) represented in his long life the richest legacy of the 19th century and the best hopes of the 20th century. Through his work in creative and cultural spheres (as remembered by his son in this reminiscence) he became a true link between East and West.
রবীন্দ্রনাথের একমাত্র জীবিত পুত্র রথীন্দ্রনাথ পরিণত বয়সে "On The Edges Of Time" নামে স্মৃতিকথা লিখেছিলেন। রথিঠাকুরের স্মৃতিচারণার কেন্দ্র নিজে ছিলেন না, ছিল তার বিশ্বখ্যাত পিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবির চান্দ বাংলায় সেই স্মৃতিকথার নাম দেন "আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ"। ভদ্রলোকের অনুবাদের হাত অসম্ভব ভালো। মুহূর্তের জন্য অনুভব করিনি অনুবাদ পড়ছি।
সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ বাইরেও একজন রবিঠাকুরের অস্তিত্ব ছিল। সেই রবিঠাকুরকে জীবদ্দশায় একেরপরএক প্রিয়জন হারানোর শোক সইতে হয়েছিল। বিরাট জমিদারির ভার দেখাশোনা করতেন। তবু ধনবান ছিলেন না। মাসিক বরাদ্দ মাত্র তিনশ' টাকা। মানুষটির প্রথাগত পড়াশোনায় ঘোর আপত্তি ছিল। তাই গড়ে তুলেছিলেন শান্তিনিকেতন। এই শান্তিনিকেতন চালাতে অনুদান জোগাড় করতে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেরিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের জন্য স্ত্রীর গহনা বিক্রি করেছেন। রথিঠাকুরের বয়ানে কবির সেইসব দিনগুলির কথা পড়তে স্বস্তি হয়না।
কবি হিসেবে বিশ্বের যেখানেই গিয়েছেন, সম্মান আর ভালোবাসায় মানুষ তাঁকে বরণ করে নিয়েছে। কিন্তু স্বদেশে যাঁদেরকে কবি আপন ভাবতেন, তাঁরা সোৎসাহে তাঁর বিরোধিতা করেছে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং চিত্তরঞ্জন দাশের কথা বিশেষভাবে রথীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন। এই মানুষদের দেওয়া আঘাত কবিকে বড় বেশি সুখ দেয়নি তা স্পষ্ট।
ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ, গৃহী রবীন্দ্রনাথ, পিতা রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ এবং সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ লীন হয়েছে পুত্র রথীন্দ্রনাথের লেখায়। অনালোকিত, অনালোকিত রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া যাবে রথীন্দ্রনাথের স্মৃতিকথা " আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ" গ্রন্থে।
রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার হাত খুব সুন্দর। দারুণ ছন্দময় তাঁর গদ্য। একটানা পড়া যায়। কেন এই মানুষটি কলম ধরতে তা অস্পষ্ট নয়। পুরো বই পড়লে এটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, খ্যাতিমান পিতার ব্যক্তিত্বের গণ্ডি থেকে বের হতে পারেননি রথীন্দ্রনাথ। তাঁকে নিয়ে এমন মন্তব্য রম্যাঁ রল্যাঁও করেছেন। পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন রথীন্দ্রনাথ। ব্যক্তি জীবনে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিচ্ছিরি কেলেঙ্কারির সাথে, বিদায় নিয়ে হয়েছিল শান্তিনিকেতন থেকে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানেও তাঁর যোগ দেওয়া হয়নি!
স্মৃতিচারণা হিসেবে দারুণ। সত্যাসত্যের প্রশ্ন আসলে বলব, এক পিতৃভক্তের জবানিতে পিতার বর্ণনা। যে পিতৃভক্ত কখনোই পিতার ব্যক্তিত্বের ঘোর থেকে বের হতে পারেনি।
"আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ " -- রথীন্দ্ররনাথ ঠাকুর ধরনঃ স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ
বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি, প্রথম এশীয় নোবেল বিজয়ী ইত্যাদি কতশত, হাজারো বিশেষণে বিশেষায়িত করা হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথ'কে জানার আগ্রহ বাঙ্গালী পাঠকের কখনো ফুরাবে না। কিন্তু সেই জানা যদি হয় তারই পুত্রেরর জবানীতে তাহলে তো কোন কথাই নেই। ৭৩ বছর জীবনে যার ৫৩ বছরই কেটেছে কবির সাথে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়ে, সঙ্গ দিয়ে। শেষ বয়সে পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি রচনা করেন On the edge of time নামক গ্রন্থ। তারই বাংলা রূপ এই বইটি। বইটি হাতে পেয়ে একটুও তাড়াহুড়ো করিনি। একটু একটু করে সময় নিয়ে পড়েছি। পাছে কোন তথ্য বাদ পরে যায় সে ভয়টা ছিল। তবুও কি সবটা মনে রাখতে পেরেছি? মোটেই না। পারিনি। তবে যেটুকু পড়েছি, বুঝেছি, তাতেই মুগ্ধ হয়েছি। এত পরিশ্রমী, এত প্রতিভাধরও হয় মানুষ। যার সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তি নেই, জড়তা নেই, সীমা নেই। আচ্ছা রবীন্দ্রনাথের পথটা কি এতই মসৃণ ছিল? উত্তর হবে, কখনোই না। জীবনভর একের পর এক বিয়োগব্যথা সয়ে গেছেন কবি। পুত্রশোক, কণ্যাশোক, স্ত্রীশোক কবির হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে অবিরত। তবু থামেনি কলম, থামেনি সৃষ্টির আনন্দ। রচনা করে গেছেন কালজয়ী সব সাহিত্যকর্ম। কি নেই বইটিতে? শান্তিনিকেতনের শুরুর দিনগুলো, পদ্মার বুকে ভেসে চলা, জমিদারি পরিচালনা, খাজনা আদায়, ব্যবসায় ধরা খাওয়া, মঞ্চনাটক, গান, আড্ডা, ইয়োরোপ কথা, বিখ্যাত লোকদের সান্নিধ্য, নোবেল জয়ের কাহিনী ইত্যাদি সব পাওয়া যাবে এক মলাটে। আরো পাওয়া যাবে জগদ্বিখ্যাত এক কবি পুত্রের নিজেকে হারানোর হাহাকার। On the edge of time- পিতৃস্মৃতি।
"আপনাকে জানা আমার ফুরোবে না"- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি, প্রথম এশীয় নোবেল বিজয়ী, ইত্যাদি কতশত হাজারো বিশেষণে বিশেষায়িত করা হোক না কেন, রবীন্দ্রনাথকে জানার আগ্রহ বাঙ্গালী পাঠকের কখনো ফুরাবে না। কিন্তু সেই জানা যদি হয় তারই পুত্রের জবানীতে তাহলে তো কোন কথাই নেই। ৭৩ বছর জীবনে যার ৫৩ বছরই কেটেছে কবির সাথে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়ে, সঙ্গ দিয়ে। শেষ বয়সে পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি রচনা করেন On the edge of time নামক গ্রন্থ। (তুহিন কলিমুল্লাহ) বইটির দুষ্প্রাপ্যতা এবং মূল্যের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য বইটি ‘আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ’ নাম দিয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক 'কবির চান্দ'। ঠাকুর পরিবারে নতুন শিশু থেকে বাবাকে যেমন দেখেছি পর্যন্ত মোট ৪২টি অনুচ্ছেদ, যার বেশীরভাগ জুড়ে শুধু নিজের বাবাকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ হিসেবে আবিস্কার করে চলেছেন রথীঠাকুর। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ, পিতা রবীন্দ্রনাথ, গৃহী রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ এবং সবকিছুকে ছাপিয়ে সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ যিনি সারাজীবন মৃত্যুর পর মৃত্যুর ঘা সইয়েছেন, শোকে পাথর হয়ে নিজের নামের পূর্বে শ্রী কেটে দিয়েছিলেন তবুও কবি কেমন করে স্থির থাকলেন, কিভাবেই বা এতো বিপুল রচনা রেখে যেতে পারলেন, এমন জানা অজানা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র জীবিত পুত্র ‘রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর’। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মূল ভাষায় যার লেখা অনুবাদিত হয়েছে,আমৃত্যু কুড়িয়েছেন চাষাভুষা থেকে রাজা মহারাজা সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সারা বিশ্বে আজও প্রতিনিয়ত রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চলছে কৌতুহলের আসর, চলছে বিস্তর গবেষণা তবুও রথীঠাকুর এই বলে শেষ করেছেন-যত পরিশ্রম করেই জীবনী লেখা হোক না কেন, তা বাবার মতো একজন মানুষের পরিপূর্ণ চিত্র আঁকতে পারবে না। বাবার রচনাবলীই তার জীবনী এবং বাবা যে জীবন যাপন করেছেন, সেটাই তার সবচেয়ে মহান কবিতা। বইয়ের নামঃ আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ মূল বইঃ On the edge of time লেখকঃ রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূল বইয়ের প্রথম অনুবাদকঃ রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শ্রী ক্ষিতীশ রায় বাংলাদেশে অনুবাদকঃ কবির চান্দ প্���কাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৬