Sunil Gangopadhyay (Bengali: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) was a famous Indian poet and novelist. Born in Faridpur, Bangladesh, Gangopadhyay obtained his Master's degree in Bengali from the University of Calcutta, In 1953 he started a Bengali poetry magazine Krittibas. Later he wrote for many different publications.
Ganguly created the Bengali fictional character Kakababu and wrote a series of novels on this character which became significant in Indian children's literature. He received Sahitya Academy award in 1985 for his novel Those Days (সেই সময়). Gangopadhyay used the pen names Nil Lohit, Sanatan Pathak, and Nil Upadhyay.
Works: Author of well over 200 books, Sunil was a prolific writer who has excelled in different genres but declares poetry to be his "first love". His Nikhilesh and Neera series of poems (some of which have been translated as For You, Neera and Murmur in the Woods) have been extremely popular.
As in poetry, Sunil was known for his unique style in prose. His first novel was Atmaprakash (আত্মপ্রকাশ) and it was also the first writing from a new comer in literature published in the prestigious magazine- Desh (1965).The novel had inspiration from ' On the road' by Jack Kerouac. His historical fiction Sei Somoy (translated into English by Aruna Chakravorty as Those Days) received the Indian Sahitya Academy award in 1985. Shei Somoy continues to be a best seller more than two decade after its first publication. The same is true for Prothom Alo (প্রথম আলো, also translated recently by Aruna Chakravorty as First Light), another best selling historical fiction and Purbo-Paschim (পূর্ব-পশ্চিম, translated as East-West) a raw depiction of the partition and its aftermath seen through the eyes of three generations of Bengalis in West Bengal, Bangladesh and elsewhere. He is also the winner of the Bankim Puraskar (1982), and the Ananda Puraskar (twice, in 1972 and 1989).
Sunil wrote in many other genres including travelogues, children's fiction, short stories, features, and essays. Though he wrote all types of children's fiction, one character created by him that stands out above the rest, was Kakababu, the crippled adventurer, accompanied by his Teenager nephew Santu, and his friend Jojo. Since 1974, Sunil Gangopadhyay wrote over 35 novels of this wildly popular series.
Death: Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack. He was suffering from prostate cancer for some time and went to Mumbai for treatment. Gangopadhyay's body was cremated on 25 October at Keoratola crematorium, Kolkata.
Awards & Honours: He was honored with Ananda Award (1972, 1979) and Sahitya Academy Award (1984).
প্রতিদিনই সারা দেশ থেকে শয়ে শয়ে চিঠি পান রবীন্দ্রনাথ। যথাসম্ভব সেগুলির উত্তরও দেন তিনি। একদিন একটি চিঠি পেয়ে নিতান্তই কৌতুক অনুভব করলেন কবি। রাণু নামের বারো বছরের এক বালিকা বারাণসী থেকে লিখেছে। এই বয়সেই সে কবির অনেক লেখা পড়েছে। তিনিই তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বালিকার অনুযোগ, কবি ইদানিং এত কম গল্প লিখছেন কেন; কবি সেই বালিকার চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে সেই রাণুই হয়ে উঠলো কবির খেলার সঙ্গী, নব নব লেখার প্রেরণাদাত্রী। আর রাণুর কাছে কবি হয়ে উঠলেন তার প্রিয় ভানুদাদা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অসাধারণ গদ্যশক্তিতে যেন বইয়ের পাতা থেকে জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে লেখাগুলো।
‘রাণু ও ভানু’ উপন্যাসটি যখন প্রথম বার পূজাবার্ষিকী দেশে প্রকাশিত হয়, তখন সেটি আমি পড়িনি। তবে এটা মনে আছে যে সে সময়, উপন্যাসে ভানু ও রানুর প্রথম সাক্ষাৎ দৃশ্যের বর্ননা ঘিরে সুনীলের কিছু সমলোচনা হয়েছিল। আজ এতদিন বাদে তবে হঠাৎ কেন খুলে বসলেম এ বই? তার কারন এ’বছর শান্তিনিকেতন পৌষমেলা থেকে এক প্রিয়জনা আমাকে উপহার এনে দিচ্ছেন রানু-ভানুর পত্রগুচ্ছ। তারই প্রস্তুতি প্রকল্পে তাই দ্রুত পদ-সঞ্চারে অতিক্রম করে ফেললাম কবি-জীবনের এই খন্ডাংশ।
এ’বইয়ের চরিত্র তো শুধু রাণু ও তার ভানুদাদাই নন, স্বয়ং মহাকাল, অর্থাৎ সময়ও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সময়, সে এক আশ্চর্য সময়, সে প্রথম বিশ্বমহাযুদ্ধের বিষম সময়। সেই সময় যা রাণু ও ভানুর জীবনে ছাপ ফেলে যায় আরও অনেকের হাত ধরে। সে সময় ভারত রাজনৈতিক ভাবে উত্তাল, কি হবে ব্রিটিশ সরকারের সাথে দরাদরির সমীকরণ? গান্ধিজী তো চিরকালই ভারতের স্বরাজের দাবীকে নিজের কাম-কৌমার্যের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন, কংগ্রসের চরমপন্থী-নরমপন্থী নেতাদের মধ্যে কে ইতিহাস বইয়ে নিজের নাম তুলে যাবেন, তাই নিয়ে চলছে ঠান্ডা লড়াই! নেতারা, বিশেষত গান্ধী অসহযোগের নামে জনসাধারন কে একবার ঠেলে দিচ্ছেন পুলিসের রুলের সামনে, আবার জনগন মার খাওয়ার পর আন্দোলন থামিয়ে, হিংসার বিরুদ্ধে দু তিন-দিন অনশন প্রাকটিস করে নিচ্ছেন!
আর এসবেরই গুরুতর ছাপ পড়েছে কবির জীবনে। কি করবেন তিনি, মানুষের এই বিপ্লবে তিনি সাড়া দেবেন কিভাবে! এরই পাশাপাশি তিনি টাকা জোগাড়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন যাতে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী নামে এক নুতন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যায় যেখানে মিলন হবে পূবের সাথে পশ্চিমর। তিনি এত ব্যাস্ত তবু তিনি ব্যক্তিগত ভাবে হৃদয়ে মননে রিক্ত, কবিতার পংক্তি গানের সুর আর তাই আগের মত ধরা দেয় না। এখন প্রবন্ধই লেখা হয় বেশী।
কবির রাণুর আবির্ভাব বুঝি এই দুঃসময়ে বসন্ত বাতাসের মত, ভোরের নবীন সূর্যের মত। যেন প্রথম বরিষনের চঞ্চলা বারিধারার মত রাণু ছুটে এসে মুছিয়ে দিল কবির জীবনের সব মলিনতা; তার নিষ্পাপ আঁখিপাতে উছল হাসিতে বুঝি কবি আবারো খুঁজে পান সুরের আনাগোনা। আর আশ্চর্যভাবে রাণু তাকে মনে পড়িয়ে দেয় সে আরেক প্রমময়ী নারীকে, কাদম্বরী বোঠান কে! কবিতা সুর নাটকের হাত ধরে রাণু ও ভানুর মধ্যে সৃষ্টি হল এক অনুপম জগতের, যেখানে প্রেম আরো একবার তার সমস্ত মাধুর্য নিয়ে এসে দাঁড়ায় জীবনের চৌকাঠে। কিন্তু সত্যি কি চৌকাঠ পেরনো হয় কবির? সত্যি কি জীবনে একটি বার কোন নারী কে পান যাকে তিনি উৎসর্গ করতে পারেন নিজেকে নির্দ্বিধায় সম্পূর্নতায়? নাঃ, সে বুঝি হয় না। কবির জীবন আসলে অনবরত তাকে পরিহাস করে গেছে। তারই জীবন, তারই ‘বিসর্জন’ নাটকের অপর্ণার মত বারবার বলে ওঠে “...বসে আছি ভরা মনে, দিতে চাই নিতে কেহ নাই...”...তিনি যে ভালোবাসার খোঁজে জয়সিংহের মত ‘কাঙ্গালের চেয়েও কাঙাল!
পুনশ্চঃ এই বই উপলক্ষে সূনীলের রচনা নিয়ে নুতন করে প্রশস্তি অর্থহীন কারন সে আসলে গঙ্গাজলে গঙ্গা তর্পন। তাই ও নিয়ে কিছু বলছি না। তবে এ বই পড়ে যে কারনে আর একবার খুব খেদ হল তা হল এই যে রবীন্দ্রনাথ যে বিশ্বভারতী গড়তে এত প্রাণপাত করলেন, তার বর্তমান অবস্থাটা কি এই হওয়ার ছিল! গরিষ্ঠ সংখ্যক অধ্যাপক ও ছাত্র-ছাত্রীর কোন ধারনাই নেই রবীন্দ্র আদর্শ সম্পর্কে। অধ্যাপক আসেন কেন্দ্রীয় সরকারের বেশী মাইনের লোভে, আধিকারিক নিযুক্ত হোন কাজ না করে চুরি করার লোভে আর ছাত্র-ছাত্রী আসে ব্যাগ ভর্তি নম্বরের লোভে! আর মহান জনগন তো আছেই, তারা শীত-বসন্তে নিয়মিত চড়ে বসে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে কারন তারা জেনে গেছে বর্তমান বাংলায় বিবিধ উপায়ে ফূর্তি করারই অপর নাম কালচারাল হওয়া! এখন অপামর বাঙ্গালী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে নান্দনিকতা মানে আসলে পড়ন্ত বিকেলে প্রমিকাকে জাপটে ধরে ফুচকা খাওয়া, নন্দন চত্বরে ।
২০১৬ সালে পড়া৷ স্মৃতি বড় ধোঁকাবাজ৷ তবুও লিখছি কারণ এই উপন্যাসের কিছু বিষয় এখনও স্মৃতিতে অমলিন৷
বয়স্ক কবি ভানু তথা রবিঠাকুরের সাথে কিশোরী রাণুর রসায়নই মশলা মেখে ঘুঘনি বানিয়ে বেচেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়৷ কবির গুণমুগ্ধ রাণু অধিকারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ঠিক কেমন ছিল তা নিয়ে তখনকার সমাজেও কানাঘুষা ছিল, এখনও কবির 'কেচ্ছা' বলিয়েরা কবির বৌঠানের পরপরই কিশোরী রাণুর নাম কবির সঙ্গে বলতে ভালোবাসেন৷ তবে সেই ভালোবাসা প্রায়শই বাঁধভাঙা মহব্বতে রূপ নেয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্যশক্তি অসাধারণ। 'সময়' ট্রিলজি যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করবেন অতীতকে কাগজের পাতায় আবদ্ধ করতে তার জুড়ি নেই৷ সেই সাথে ঘটনাকে চিত্রময়রূপ উপস্থাপন ভঙি পাঠককে খুব টানে। একেবারে চুম্বকের ন্যায়৷
রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ কিশোরী রাণু অধিকারীর সাথে কবির পরিচয়, পত্রালাপ এবং রাণুদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার ঘটনা সুনীলের বর্ণনায় এতটাই জীবন্ত মনে হয় যেন চোখের সম্মুখেই সব ঘটেছে। পাঠকের জন্য তা তো ভালোই৷ শক্তিমান গদ্যশিল্পীদেরই কেবল এই ক্ষমতা থাকে। কিন্তু পড়তে পড়তে হঠাৎই আমি আবিষ্কার করলাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাণু এবং তার ভানুদা'র সম্পর্ক নিয়ে কল্পনা করতে করতে একেবারে চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছেন৷ একপর্যায়ে তিনি লিখেছেন,
এই ঘটনা পড়ে বুঝলাম সুনীল আসলে রবীন্দ্রনাথকে অন্য অবস্থানে নিয়ে যেতে চান৷একটি চৌদ্দ-পনেরো বছরের কিশোরী মেয়ে নগ্ন অবস্থাতেই সিঁড়ি ভেঙে রাস্তায় চলে আসবে এমনটি খুবই অবিশ্বাস্য। আমি বিশ্বাস করি, উপন্যাস ইতিহাস শেখার জন্য নয়৷ কিন্তু এও মানি কোনো ঐতিহাসিক কিংবা বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়ে সাহিত্য রচনা করলে ন্যূনতম সততা বজায় রাখা উচিত। নতুবা মিথ্যা-সত্যের বুনন পাঠককে বিভ্রান্ত করে তুলবে। বিশেষত, আমাদের মতো দেশে যেখানে ইতিহাসচর্চা এবং অতীতকে পাঠের মতো গুণ কল্কে পায়নি৷ সেখানে উপন্যাস পড়েই আমার মতো দীনহীন পাঠকেরা ইতিহাসের ষোলআনা পাঠ বুঝে নিতে চান৷ তাই বলব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'রাণু ও ভানু' চমৎকার গদ্যশৈলীর নিদর্শন হলেও সততার কষ্টিপাথরে যাচাই করলে ভেজালই বেশি৷
Nice story about love and creativity. Its about a relation, that has much of spiritual demand at stake. Nobody knew what the poet lost, nobody care what Ranu lost, all they cared about was social rules to keep everything as necessary. Truly, I feel sorry for both of them. Love, as I know, is much painful. Many doesn't know how stupid society puts walls of restrictions and kills so many natural loves. I very much appreciate this story.
উপন্যাসের নাম “রাণু ও ভানু”। এই উপন্যাসটা কি নিয়ে হতে পারে তার আইডিয়া পেয়েছিলাম সুবিখ্যাত (!) রবীন্দ্রলেখক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের “রবি ও রাণুর আদরের দাগ” নামক মাস্টারপিসে। এর সাথে যুক্ত করা যেতে পারে “তিন নায়কের কলঙ্ক” নামক কোন এক বইয়ে রবীন্দ্র অধ্যায়টাও। যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে এই দুই বইয়ে সেটা দেখে এই বইটার ব্যাপারে আগ্রহী হতাম না, যদি না লেখকের নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হত।
সুনীলের “প্রথম আলো” নিয়ে বলার কিছুই নেই। এই বইয়ের প্রথম চরিত্র বীরচন্দ্র মাণিক্য থেকে শেষের ভূমিসূতা ও ভরত এখনও মনে জায়গা করে নিয়েছে। তাই সেরকম একটা ঐতিহাসিক নভেলের স্বাদ পেতেই সুনীলের বইটা পড়া শুরু করলাম।
কিন্তু এটাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস কোনভাবেই বলা যাবে না। লেখক যে এবার রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একেবারে প্রেমের উপন্যাস ফেঁদে বসেছেন। প্রেমিক এখানে সাতান্ন বছরের রবীন্দ্রনাথ, প্রেমিকা বার-তের বছরের রাণু।
সুনীল একদা বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের সাথে তাঁর বৌদির প্রেমের আখ্যান লেখা যেতে পারে কিন্তু ভাগ্নি ইন্দিরা দেবীকে নিয়ে লিখলে রবিভক্তরা তেড়ে আসতে পারে! তাই যদি হয় তাহলে এই উপন্যাসের ব্যাখ্যা কি? আমার পড়ালেখার দৌড় যতটুকু তাতে মনে হয়েছে এই উপন্যাস “প্রথম আলো” উপন্যাসটার সেই জাদুকরি অনুভূতিকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! সেখানে আজীবন বুড়ো মনে হওয়া লোকটা হুট করে তেইশ বছরের তরুণ রবি হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেখানে ওর অনুভূতি, ওর মুগ্ধতা, ওর কবিতায় এমন ডুবে গিয়েছিলাম যে একবারের জন্যও মনে হয় নি এটা একটা নভেল, চরিত্রগুলোর প্রতিটা সংলাপ এতটা প্রাণবন্ত ছিল যে মনে হচ্ছিল আমরা টাইম ট্রাভেল করে একশ-দেড়শ বছর আগের ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। “রাণু ও ভানু” উপন্যাস পড়ার সময় মনে হয়েছে, লেখক আমাদের সস্তা বিনোদন দিচ্ছেন।
এই লেখায় না রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে পেরেছি, না পেরেছি সেই সময়ের উত্তাল দিনগুলোতে মিশতে। শুধু প্রেমের উপন্যাস বানাতে গিয়ে লেখক যেন একটা স্বার্থপরতার দ্বার খুলে দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে এলোমেলোভাবে, চরিত্রগুলোও কিছুটা নিষ্প্রাণ। তাদের সংলাপই তাদের এ উপন্যাসে তাদের ভূমিকা বলে দিচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের রাজনীতির বিষয়গুলো এখানে এসেছে বটে কিন্তু তাও ঠিক পুরোপুরিভাবে আসে নি। এখানে রবীন্দ্রনাথকে তাঁর সাহিত্যের স্রষ্টা মনে হয় নি, মনে হয় নি দেশের জন্য ভীষণ চিন্তিত বড় স্টেপ নেওয়া কোন দার্শনিক; শুধু মনে হয়েছে মানসিকভাবে অসুস্থ নিঃসঙ্গ এক বুড়ো। বুড়োর নিত্যদিনের খাওয়া-দাওয়ার মতই বিষয় হচ্ছে তার লেখা, সেটার বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই। অবহেলার সাথে তাঁর রাজনীতিক দর্শন ফুটে এসেছে, অর্থাৎ লেখককে লিখতে লাগবে জন্য লেখক লিখেছেন, জোর দেন নি। এখানে মূখ্য হয়ে উঠেছে বার-তের বছরের একটা মেয়ের প্রতি তার অনুচ্চারিত ভাবনাটাই । লেখক কবিকে এখানে শুধুই প্রেমিক বানিয়ে রেখেছেন, সেটাই শুধু উজ্জ্বল; তার অন্যান্য ভূমিকাগুলো একদম ম্রিয়মাণ।
একটা অংশের কথা বলে রাখি, এটা আমি কোনভাবেই মানতে পাচ্ছি না। লেখার শেষে লেখক রেফারেন্স হিসেবে বেশ কিছু বই উল্লেখ করেছেন, যাতে হয়ত মনে হতে পারে ঘটনাগুলো সত্যিই। কিন্তু আমি কোনভাবেই মানতে পাচ্ছি না কবির মেয়ে বেলা মারা যাওয়ার পরপরই কবির রাণুর বাসায় অকস্মাৎ উপস্তিতি এবং নগ্নিকা দর্শন! ঘটনা যদি সত্যিই হয় তাহলে লেখককে খুবই সাবধানতার সাথে এ অংশের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটা তুলে ধরতে হত। এই অংশটায় রবীন্দ্রনাথকে কোনভাবেই আমি রাখতে পাচ্ছি না।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখতে হলে বেশ কিছু কো-রিলেটেড বিষয় সমান গুরুত্বের সাথে লিখতে হত। শুধু প্রেমিক রবীন্দ্রনাথকে জোর দেওয়ার কারণে অন্যান্য বিষয় সেগুলোর সাধারণ সত্তাটাও হারিয়ে ফেলেছে। এখানে রাণুকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে কবির ঠিক সমসাময়িক আরেক প্রেম ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এখানে অনুপস্থিত, তেমনি অনুপস্থিত কবির শিল্পী হওয়ার সত্তাটাও। অথচ এই বিষয়গুলো না আসার ফলে প্রকৃত রবীন্দ্রনাথকে আমরা পাই নি, অথচ এমনটা না যে আমরা তাঁকে পেতাম না। লেখক চাইলেই প্রথম আলোর মত আমাদের কবির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারতেন। লেখক বিদেশে বসে এক ধরণের তাড়াহুড়ো নিয়ে লেখাটা শেষ করেছেন।
আমার লেখা শেষ করার আগে উপন্যাসের চারটা তথ্য দিয়ে রাখি, আরও অনেক কিছুই লেখা যেত কিন্তু শুধু স্মৃতি থেকে লিখছি বলে সেগুলো যোগ করা সম্ভব হল না।
১) ভেঙে মোর ঘরের ‘চাবি’... গানের ‘চাবি’ শব্দটা ব্যবহারের ব্যাখা এখানে দেওয়া হয়েছে, যা আমার বেশ বিশ্বাসযোগ্যই লেগেছে।
২) রবীন্দ্রনাথকে হত্যার প্রয়াসটা আমি আশা করেছিলাম, এটা উল্লেখ করা হয়েছে ।
৩) মার্কিন ধনকুবের জন ডি লকফেলর কবিকে যে ভিক্ষা দিয়েছিলেন এই তথ্য আমার কাছে একেবারেই প্রথম। এটা কোথাও উল্লেখ করা দেখি নি।
৪) এখানে কবির নাইটহুড উপাধি ফেরতের ঘটনাটা বেশ ভালভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু... কবি রাণুকে লিখেছেন যে দেশের জন্য নয়, তিনি নাকি রাণুর জন্যই জালিওয়ানাবাগ হত্যার প্রতিবাদে উপাধি বর্জন করেছেন! এই ছেলে ভুলানোর চিঠির মর্মার্থ উদ্ধারে আমি ব্যর্থ হয়েছি। কোনভাবেই বুখতে পারি নি লেখক এখানে কি বলতে চাইছেন।
“রাণু ও ভানু” সুনীলের নিছকই একটা প্রেমের উপন্যাস যেখানে পাত্রপাত্রী হিসেবে কবি আর রাণুকে ব্যবহার করা হয়েছে। লেখক নিজেও এটা স্বীকার করেছেন। আর ঐতিহাসিক তথ্যগুলোও ক্রমানুসারে রক্ষিত হয় নি। তাই প্রথম আলোর মত করে এখানে যদি রবীন্দ্রনাথকে খুঁজতে যান, প্রচন্ডভাবে ধরা খাবেন। তবে “আদরের দাগ” নামক মাস্টারপিসের থেকে এটাকে কয়েকগুণে এগিয়ে রাখব, এটুকু শুধু বলতে পারি :)
This entire review has been hidden because of spoilers.
সুনীলের লেখা সবসময়ই সুখপাঠ্য। তবে এই বইটার খোঁজ পেয়েছিলাম একটা সাক্ষাৎকারে। যেখানে ঋতুপর্ণ ঘোষ, সুনীলের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। জানতে পেলাম, ষাটোর্দ্ধ রবীন্দ্রনাথ কে-ও বইয়ের পাতায় এঁকেছিলেন সুনীল।
দ্বাদশী এক কণ্যার সাথে কবির বন্ধুত্ব এই বইয়ের বিষয়বস্তু। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বয়সের এতো তফাতে ভাবনার দেয়ালে তাঁদের বন্ধুত্ব বাধা পড়লো না কেন? এর কারণ বোধহয়, রবীন্দ্রনাথ এখানে রবি থেকে ভানু হয়ে উঠেছিলেন বলে। "ভানুসিংহের পদাবলী" নামে রবীন্দ্রনাথ তাঁর অল্প বয়সে বই লিখেছিলেন। তাঁর সেই ভানু সত্তাকেই তিনি রানুর মধ্যে দিয়ে আবার খুঁজে পেয়েছিলেন।
কবি তাঁর জীবনে বহুবার বিচ্ছেদের মুখোমুখি হয়েছেন। এটাতেও তাই। তবে আকর্ষণীয় দিক এটাই, বিচ্ছেদকে তাঁর ধারণ করবার ধরণ। নিজের অনুভূতিগুলোকে সুসংযত ভাবে তিনি যত্নকরে মনের মাঝে ধারণ করেন, সুখ আর দুঃখ বলে তাদের প্রতি পক্ষপাত করেন না। অসমবয়সী বন্ধুত্ব কে ছাপিয়েও আর যদি কিছু চোখে পড়ে সেটা এটাই। একটা মানুষ সমাজে থেকে অতো নরম মন নিয়ে কী করে বজ্রকঠিন হতে পারেন, এটাও একটা দেখবার মতোন দিক। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে যখন সকল রাজনৈতিক দল তথা মহাত্মাগান্ধী অব্দি ভবিষ্যতের হিসেব করে নিশ্চুপ থাকাটাকেও সম��ধান বলে ভেবেছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথের বজ্রকঠিন মনের প্রতি ভক্তি জমেছে। নাইট উপাধি ত্যাগ তিনি করেছিলেন সক্কলে জানি। কিন্তু এর কারণে আরো কতো বাধার সম্মুখীন তাকে হতে হয়েছিলো এই বই পড়ে খানিকটা জানলাম।
এই লেখাটা পড়ে মনে হতেই পারে, রবীন্দ্রনাথের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছি। এই দায় মাথা পেতেই মেনে নিলাম। রবি কে ভালোবাসি আর ভালোবাসায় পক্ষপাত থাকে। রানুর কথা রবির আলোয় ঝাপসা হয়ে গেলেও, রবির মধ্যে দিয়ে রানুর থেকে যাওয়াটা সেই দায় থেকে কিছুটা রেহাই দিয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস।
এবারের জন্মদিনে পাওয়া বইগুলোর মধ্যে প্রথম পড়ে শেষ করলাম এই বইটি। সুনীলের লেখনী আমার বরাবরই ভালো লাগে। কিন্তু এই গল্পটা পড়তে গিয়ে আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কেন এমনটা হলো, বুঝতে পারছিলাম না। ১৪০ পৃষ্ঠার একটা বই শেষ করতে আমার সময় লাগলো ৩ দিন, যেখানে এক বিকেল বা সন্ধ্যায়ই এটা শেষ করে ফেলা যায়। পরে আরেকজনের রিভিউ পড়ে দেখলাম, তারও এমন সময় লেগেছে। সম্ভবত লেখার ধাঁচটাতেই ঘাপলা। বইটি আমার ভালো লেগেছে। আমি আমার বোনের সাথে ক'দিন আগেই আলোচনা করছিলাম যে কবি-সাহিত্যিকদের একটা muse লাগে, নাহলে তাকে দিয়ে সাহিত্য হবে কি করে? তো আমার বোন বলছিলো, ওর মনে হয় কাদম্বরী দেবীকেও তেমন কবির মিউজ হিসেবে বিসর্জন দিয়েছিলো পরিবারের লোকেরা। আমারও অবশ্য তা-ই মনে হয় মাঝে মাঝে। এই বইটি পড়ে আমার আবারও তা মনে হয়েছে, এবং বেশ স্পষ্টভাবেই মনে হয়েছে। অবশ্য লক্ষ্য রাখা উচিত, এটা একটা উপন্যাস। তাই এটাকে পুরোপুরি আমি বিশ্বাস করি নি, লেখকের মতামতকে সম্মান জানিয়ে এটাকেও আমি উপন্যাস হিসেবেই নিয়েছি। তা-ও নিজের মতামত জানালাম, আর কি। শেষটুকুতে খুব মন খারাপ হয়েছে। সে অবশ্য যেকোনো বিচ্ছেদের বেদনায়ই আমার হয়ে থাকে। সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থাও এতে চলে এসেছে অনেকটা। অনেক কিছু নতুন করে জেনেছি। তবে যাই হোক, সুনীলের লেখা যেমন আমার অসম্ভব ভালো লাগে, অতটা তীব্রভাবে এটা ভাল লাগে নি। জাস্ট "ভালো" লেগেছে। ধন্যবাদ দেবাকে, এই সুন্দর বইটি আমাকে উপহার দেয়ার জন্য!
This entire review has been hidden because of spoilers.
তবে মাস দুয়েক ধরে পিডিএফে ধীরে ধীরে পড়া কেবল মাত্র দুইশ' পেইজের একটা বই - রিভিউ দেওয়াটাই এখন যেন সংগত মনে হচ্ছে।
ইতিহাসের অনেক কিছুই গল্পের আকারে চোখের সামনে চলে আসছিলো। বিশেষত জালিওয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটা ক্লিয়ারলি জানতে পারলাম। জানা যায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস সহ অনেকের কথা।
বইয়ের শেষে লেখক বলেছেন, এটি জীবনী বা ইতিহাস নয়, উপন্যাসই।
বইটিতে প্রথম দিকে রবিঠাকুর কীভাবে শান্তি নিকেতন গড়ে তুললেন, দেশ বিদেশে বক্তৃতা দিতে যাওয়ার সময়কার কথা, সেখানে তার প্রতি অন্যদের সম্মান, নাইটহুড যখন প্রত্যাহার করলেন তখন অন্যান্য দেশ কীভাবে তার অসম্মান করতে লাগলো এসব তুলে ধরা হয়েছে। এই ইতিহাস আশ্রিত ঘটনা গুলো সুনীলের লেখায় যেন একদম স্পষ্ট হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।
এছাড়া প্রথমদিকে কবিকন্যা মাধুরীলতার (যার অন্য নাম বেলা) চলে যাওয়া দুঃখ দেয় অনেক। তখনকার সময়ে কবি পণ প্রথার ঘোর বিরোধী হওয়া সত্বেও কন্যাকে পণ দিয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন এক কবির কাছে। ভেবেছিলেন ওই পরিবারে মেয়ের সাহিত্য-প্রতিভা বিকশিত হবে। তা তো হয়ই নি, উপরন্তু রোগে ধুঁকে মারা গেল মেয়েটি। মেয়েজামাই কবিকে সম্মান দিত না মোটেও, যেখানে সমগ্র দেশ তথা বিশ্বের কাছে কবি রবীন্দ্রনাথঠাকুর ছিলেন পরম শ্রদ্ধার! বেলা যখন অসুস্থ, কবি মেয়ের বাড়ি গেলে সেখানে কেও কবির সাথে সৌজন্যতা দেখিয়ে কথা পর্যন্ত বলত না। আমার বিশ্বাস হতে চায় না, এরকম একজন মানুষ, যাকে কিনা শ্রদ্ধা করে দেশের উপরের স্তরের ব্যক্তি থেকে সবাই, তিনি কেন মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেন নি! মেয়ে যখন অসুস্থ তখন তার সেরকম চিকিৎসাও করা হয়নি। কবির এহেন আচরণ আসলেই বোধগম্য হয়নি। নিজের সবচেয়ে প্রিয় কন্যাটির প্রতি এতটা অবিচার কেউ করতে পারে?
যাই হোক, এরপর এল কন্যাসম রাণুর কথা। লেখক প্রথমে দেখিয়েছেন, বেলা মারা যাওয়ার পর রাণুর মধ্যে কবি তাকে খুঁজে বেড়াতেন। রাণু কবির ছদ্মনাম ভানুসিংহ থেকে তাঁকে ডাকত ভানুদাদা বলে। মূলত এটিই বইটির নাম 'রাণু ও ভানু' হওয়ার কারণ। বইয়ের অনেক অংশেই দেখানো হয়েছে, রাণু তার ভানুদাদার গলা জড়িয়ে ধরে অনেক গল্প করছে। যেন ভানুদাদার উপর কেবল তার একান্ত অধিকার। এক জায়গায় কবিকন্যা মীরাকে পিসি বলেও ডাকছে রাণু। কবি এবং রাণুর নিষ্পাপ একটা সম্পর্ককে লেখক কখন যেন অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে কেমন একটু বানিয়ে ফেললেন! ঠিক তখন থেকেই মেজাজ খারাপ হওয়া শুরু করল।
কবি যখন চিঠিতে লিখলেন, 'তোমার অন্দরের দরজার অধিকার দাবি আমার তো চলবে না........আমি যা দিতে পারি, তুমি যদি তা চাইতে পারতে তবে সবচেয়ে বড় দরজাটাই খোলা ছিল। কোন মেয়েই আজ পর্যন্ত সেই সত্যকার আমাকে সত্য করে চায়নি.....কতকাল থেকে উৎসুক হয়ে আমি ইচ্ছা করেছি, কোন মেয়ে সম্পূর্ণ আমাকে প্রার্থনা করুক, খন্ডিত আমাকে নয় - আজও তা হল না।'
আমি ঠিক জানিনা এই চিঠিগুলো আদৌ কবি লিখেছিলেন কিনা, নাকি কেবল গল্পের খাতিরে এগুলো নিছক বানানো চিঠি। যদি এগুলো কেবল গল্পের খাতিরে হয়, তবে লেখক সুনীলও লেখক (অতি)রঞ্জন বন্দোপাধ্যায়ের চেয়ে কম যান না। আর যদি এগুলো সত্য হয়, তাহলে পাঠক কে কি মনে করবেন, নিজের মতো মনে করে নিন। ব্যাপারগুলো আবার একেকজনের দৃষ্টিতে একেক রকম।
এখন আসি উপন্যাসের লেখন শৈলী নিয়ে কিছু কথায়।যদিও লেখক বইয়ের শেষে বলেছেন এটি উপন্যাস। তবে প্রথম দিকে কবির দেশ বিদেশ ছুটাছুটি নিয়ে যে কথাগুলো, তার শান্তিনিকেতন গড়ে তোলার গল্প কিংবা উপমহাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা - এসব কিছুই তো সত্য। একেকবার রাণুর চিঠি, কবির চিঠি, কবির লেখা গান এগুলো এসবের মধ্যে বইটির অলংকারের মত কাজ করেছে। এছাড়া বাকিসব উপন্যাসের মতই মনে হয়েছে। সুনীলের লেখন শৈলী নিয়ে আসলেই কিছু বলার নেই। বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়েছি তা ঠিক। শিখেছি অনেক কিছু।
এখন বইটিকে কি ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা উচিত কিনা জানিনা।
লেখক বই শেষ করেছেন অবশ্য সুন্দরভাবে। যেকোন উপন্যাসে এ ধরণের সমাপ্তি উপন্যাসকে এক অন্যরকম সৌন্দর্য এনে দেয়।
শেষ করা মাত্রই ভাবছিলাম রেটিং ৪ দেব। এরপর রিভিউ লিখতে গিয়ে এখন মনে হচ্ছে এর রেটিং হওয়া উচিত ৩.৫, যদি উপন্যাসের লেখনশৈলীর দিক থেকে চিন্তা করি আরকি। লেখনী সুন্দর ছিল, ঝরঝরে ছিল বেশ, পর্যাপ্ত অলংকারাদি ছিল কিন্তু তা সত্যেও কোথায় যেন মন টানছে না ঠিক। একদম খাঁটি ইতিহাসের সাথে গল্পের খাতিরে গল্প জুড়ে দেওয়া - কিছুটা কেমন যেন লেগেছে।
★ সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন ★ প্রতিদিন সকালের ডাকে চিঠি আর পত্রিকা আসে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে। প্রত্যেকটা চিঠি তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়েন এবং যথাসম্ভব প্রতিটা চিঠির উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন। একটা চিঠি পড়ে কবি একটু অবাক। প্রিয় রবিবাবু সম্বোধন করে চিঠি লিখেছে কিন্তু চিঠির ভাষা এবং হাতের লেখা দেখে মনে হচ্ছে অল্প বয়সী কেউ। চিঠি লেখিকার নাম রানু। চিঠি লিখেছে বেনারস থেকে। কবির লেখা অনেক পড়েছে সে। কবির বেশ ভালো লাগে চিঠি পড়ে। উত্তর লিখে দেন চিঠির। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে এখন আর শুধু ভালো লাগার কাজ গুলো করলেই চলে না। শান্তিনিকেতনের ব্যয়ভার পুরোটাই তার উপর। সেটা নিয়ে ভাবতে হয়। ইচ্ছা না থাকলেও রাজনৈতিক ব্যাপারে মাথা দিতে হয়। তা নিয়ে আবার অন্য পক্ষের সমালোচনায় বিদ্ধ ও হতে হয়। অশান্ত কবির এত দুর্বিষহ পরিবেশে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস বয়ে আনে রানুর ছেলেমানুষী ভরা চিঠি। বড় ভালো লাগে কবির। চলতে থাকে দু'জনের চিঠি বিনিময়।
এর মাঝে কবির জৈষ্ঠ্য কন্যা মাধুরীলতা দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মারা গেলেন। শোকে মুহ্যমান কবি সেদিনই ভবানীপুরের একটা বাড়ির সামনে এসে ডাকলেন রানু! রানু! ( রানু আগেই তাকে চিঠিতে এবাড়ির ঠিকানা দিয়ে বলেছে তারা এখন কোলকাতায়)। প্রথম দেখা রানুর সাথে কবির। রানু কি নামে ডাকবে কবিকে? সবার মতো সে গুরুদেব বলবে না। রবিদাদা? সেওতো অনেকে ডাকে। কিছুই রানুর মনের মতো হয়না। রবির অনেক প্রতিশব্দ দিয়ে চলে নাম নির্বাচন। অবশেষে কবি প্রস্তাব দেন , তিনি একসময় ভানুসিংহ নামে লিখতেন।এ নামটা কেমন? পছন্দ করে রানু এ নাম। মিল ও দারুন ।রানু ও ভানু। কবি হয়ে যান রানুর ভানুদাদা। রানুর স্কুল ছুটি থাকলেই চলে আসে কবির কাছে। চলে দুজনের গল্প।আটান্ন বছরের কবি বার বছরের বালিকার সাথে মেশেন তার মতো করেই। দুজন ভালোবাসেন দুজনকে। সময় বয়ে যায়। রানু হয়ে ওঠে কালের অসাধারণ রুপবতী তরুণী। কবির নাটকে অভিনয় করে,ভালো এস্রাজ বাজায়। পড়াশোনায় দুর্দান্ত ভালো ।তার গুনমুগ্ধের অভাব নেই।বিয়ে না দিলেই না। রানুর পরিবার কবিকে পাত্র নির্বাচন করে দিতে অনুরোধ করে। কেঁপে ওঠেন কবি। তবে কি রানুকে হারানোর সময় হলো ? রানুকে কিভাবে কাছে রাখা যায়, তেমন ছেলে খুঁজতে থাকেন যে রানুকে তার সাথে যোগাযোগ করতে দেবে। কবি তখন চীন সফরে। রানুর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় বিখ্যাত ব্যাবসায়ী রাজেন মুখার্জীর ছেলে বিরেন মুখার্জীর সাথে। কবি বুঝলেন এখানে না করার কোনো সুযোগ নেই। এর থেকে ভালো বিয়ে রানুর হতে পারে না।
তবে কি এখানেই কবির সাথে রানুর সম্পর্কে ইতি ঘটে? নাকি তার ভানুদাদার সাথে আজীবন থাকে হৃদয়ের সুশীতল সম্পর্ক? জানতে হলে এখনই পড়তে হবে রানু ও ভানু।
★★আমার অনুভব★★ এ উপন্যাস কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের পড়ন্ত বেলায় আগমনকন্যা রানুকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও সেই সাথে উঠে এসেছে মহাকালের ঐতিহাসিক সময়। নানা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাইট উপাধি বর্জন এবং তা কেন্দ্র করে কবির জীবনের নানা টানাপড়েন বিস্তারিত ভাবে উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। নানা বেদনায় ভারাক্রান্ত কবি শুধু রানুর কাছেই অন্য রকম শান্তি পান। সরলা এ বালিকা মেয়েটি কবিকে তার বয়সি করে তোলে। বয়স কমানোর এ খেলা বড় ভালো লাগে কবির। তরুণী রানুর মাঝে খুঁজে পায় অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া নতুন বৌঠানকে। বহুদিন পর কবির লেখনী ঝলসে ওঠে প্রেমের কবিতায়। রানু ও মুগ্ধ কবি সান্নিধ্যে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন এ উপন্যাস লিখেছেন তখন লেডি রানু মুখার্জি জীবিত। উনার অনুমতি নিয়ে এ উপন্যাস লেখা হয়েছে। লেখক সেকথা বলতে ভোলেননি। (ও আচ্ছা নেটে লেডি রানু মুখার্জি সার্চ দিলে উনার ছবি দেখতে পাওয়া যায়!!) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিংবদন্তি চরিত্র নিয়ে লেখার তো আসলে কোনো তুলনা হয়না। তথ্যের সাথে ও ওনার কোনও আপোষ নেই। অসাধারণ এ উপন্যাসটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। কেমন যেন একটা ঘোর তৈরি হয়। রানু ও ভানুর ছায়ায়, আমি চলি মায়ায়!!!!!
অনেক আগে পুরোনো দেশ পত্রিকা উল্টাতে গিয়ে চোখ আটকেছিল, "রানু তখন পরী" শিরোনামে। সুনীলের ব্যবচ্ছেদ চলছিল তখন , রবিঠাকুরকে অপমানের অভিযোগে। কেন সম্ভ্রান্ত বংশীয় একটি ভারতীয় মেয়ে নগ্ন হয়ে দরজা খুলবে? কেন রবীন্দ্রনাথের সাথে নগ্নতাকে জুড়ে দেওয়ার মিছেমিছি মিথ্যা চেষ্টা? এসবের সদুত্তর না পেয়ে শেষ অব্দি এই বলে সে লেখা শেষ হয়েছিল যে, এ কেবল সম্ভব যদি রানু পরী হয়ে থাকে তো। বার বার এমন অসম্ভব শকুন্তলার মতন রূপ বলে তাই কি বোঝাতে চেয়েছিলেন লেখক? জানিনা।
কিন্তু, অবশেষে নিজে পড়বার সুযোগ হল যখন, আগে থেকে সেই সমালোচনাটুকু না পড়া থাকলে এই অংশ আমার হয়ত চোখেই পড়ত না। যাহোক, বরাবরের মত আর রবীন্দ্রচরন ধন্যাদের মতই রানুর জন্যেও পড়া শেষে ভীষন কষ্ট লেগেছে। রবি ঠাকুরের মত উদার আকাশকে জানবার পরও যাদের জীবন সেই আটপৌড়ে সংসারের চৌহদ্দিতে জীবন বাধা পড়ে কাটাতে হয়েছে তাদের দীর্ঘশ্বাস না জানি কী গভীর ছিল।
ফিরে আসি সেই দরজার সামনে, যেখানে প্রথম বারের মত সদ্য কন্যাহারা রবীন্দ্রনাথ এসে দাড়িয়েছেন, রানু নামের এক অপরিচিতার সাথে দেখা করতে। কবির শোকার্ত মন তখন, আজ আমার কোথাও যাবার নেই জেনে এসে দাড়িয়েছে সে দরজায়। ছোট্ট দুরান্ত রানু তখন ছুটে এসে দরজা খুলতেই, কবি যেন কেবল হারানো তার মেয়েটিকেই আবার দেখতে পেলেন। রানুর নগ্নতাই যেন স্বাভাবিক, কত বার তার মেয়েটাও কি এমনি নগ্নিকা ছুটে আসেনি তার কাছে? যদি লেখকের কথাই সত্য় ধরি, তো এই দেখা হওয়ায়তেই লেখা হয়েছিল রক্ত করবী। যেন মহাকাল সেই প্রথম পরিচয়টাকেই শুরু থেকে বুনে চলেছিল। তাই রানুর ছুটে আসা সুন্দর হতে রানুকে পরী হতে হয়না, চিরচেনা ছোট্ট মেয়েটি হলেই চলে।
ঠাকুর বাড়ি আনন্দে মাতোয়ারা, কবি আবার প্রেমের কবিতা লিখছেন দীর্ঘদিন পর।আর কবির প্রেরনা এক মুঠো মেঘ এর মতো প্রাণচঞ্চল এক কিশোরী, রাণু। প্রথম আলাপ পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে। কিন্তু আর পাঁচ টা চিঠি থেকে রানুর চিঠি সম্পূর্ণ আলাদা। কই আর কেউ তো কবি কে রবি বাবু বলে সম্বোধন করে না, চিঠির অগ্রে বা অন্তে প্রনাম জানাবারও কোন বালাই নেই। আরও নানা মৌলিকতার জন্য রাণু কবির জীবনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে নেয় ধীরেধীরে। রাণু কবিকে মনে করিয়ে দেয় নতুন বৌঠানের স্মৃতি। কাদম্বরী বৌঠানের কথা আজও মনে পরে কবির্ রাণুর ছায়ায়... " তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥"
কবি কে ঘিরে রাণুর শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণের নানা ঘটনার সমাবেশ এবং তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনীতির দস্তাবেজর মহামিলন সম্ভব হয়েছে সুনীল বাবুর হাত ধরে।কবিগুরুকে নিয়ে নানা তথ্যে গাঁথা উপন্যাস।সাধুবাদ জানাতে হয় লেখকের research work কে।
এই মহাজীবনে সবশেষে থাকে শুধুই স্মৃতি, কিছু সুখের, কিছু দুঃখের আর থাকে দুখজাগানিয়া। তাই......
" তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাকো ওগো দুখজাগানিয়া ॥"
নীল উপাধ্যায় এমনিতেই মানুষের হৃদয়ের অবস্থা খারাপ করে দিতে পারদর্শী, আর এই বইয়ে তিনি আবারো ছিনি��িনি খেলেছেন, রাণু মেয়েটা যে কারো মাথা খারাপ করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট ! গতকাল রাতে আমার স্বপ্নের অর্ধেক সময় কেটেছে রবীন্দ্রনাথের ওপর রাণুর অনুভূতির কথা মনে করে। আজকে রাতে তা অন্য কিছুতে রুপ নিবে। জীবনে একটা রানূ না থাকলে সেই জীবনকে বৃথা বলা যাবে কি না, সেই দায়িত্ব পাঠকের।
দেহ,শরীরটা না। অন্য সবকিছু, এবং এর থেকেও বেশী কিছু। কবির দুখ জাগানিয়া শব্দ যা ইঙ্গিত দিয়ে থাকুক না কেন, পড়ার মত পড়া হলে, উপন্যাস শেষে, শেষ পৃষ্ঠার প্রতিটি শব্দ কথা বলবে তোমার অনুভূতির সাথে!
'.... কুঞ্জে তাহার গান যা ছিল কোথায় গেল ভাসি। এবার তাহার শূন্য হিয়ায় বাজাও তোমার বাঁশি। ...'
রাণু! ভানু!! আমি!!!
রাণু, তোমাকে লেখা।
'যাবে তুমি আপন পথে আমায় পিছে রেখে, দুঃখের ডেরায় হাসবো আমি তোমার স্মৃতি মেখে। বেদনখানি রেখে দিব বোতলবন্দি করে, তবু আমি ভানু হব রাণু, তোমার মনকুটিরে। '
পুনশ্চ: শ্রীমতি রাণু মুখোপাধ্যায়ের ছেলে বা মেয়ের বংশ তালিকা দরকার ;)। আর, শান্তিনিকেতনে যেতে চাই, যেভাবেই হোক।"
"একটু পরে মুখ ফিরিয়ে প্রশান্তচন্দ্রকে দেখে কবি অন্যমনস্ক ভাবে বললেন, এসেছ? বসো। আবার লিখতে লাগলেন। লেখার সময় অন্য কারুর উপস্থিতি তিনি পছন্দ করেন না, প্রশান্তচন্দ্রের এখন কী করা উচিত বুঝতে পারছে না, অন্য ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করাই হয়তো উচিত, কিন্তু কবি যে বসতে বললেন! খানিক পরেই কবি বলে উঠলেন, থাক, এই যথেষ্ট হয়েছে। নাও, প্রশান্ত পড়ে দেখো! প্রশান্তচন্দ্র কাগজগুলি হাতে নিয়ে দেখল। সেটা একটা ইংরেজিতে লেখা চিঠি, ভারতের বড়লাটকে সম্বোধন করে লেখা। ক্লান্ত ভাবে চেয়ারে মাথা হেলান দিলেন কবি। দু’চোখের কোণে কালি, কিন্তু ওষ্ঠে তৃপ্তির রেখা। তিনি বললেন, সারা রাত বিছানায় যাইনি। সারা গা জ্বলছিল। পঞ্জাবের ঘটনার কেউ কোনও প্রতিবাদ করবে না, এ আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। গান্ধী আমার প্রস্তাবে রাজি হলেন না, চিত্তকে গিয়ে বললাম, কিছু একটা করো, সেও দেখি গা বাঁচিয়ে থাকতে চায়। আমাকেই যদি সব দায়িত্ব নিতে হয়, তা হলে আর সভা ডেকে লোক জড়ো করার দরকার কী, নিজের কথা লিখেই জানাব। ইংরেজ সরকার আমাকে খাতির করে নাইটহুড দিয়েছিল। যে- সরকার আমার দেশের মানুষের ওপর এমন নৃশংস অত্যাচার করে, সেই সরকারের দেওয়া খেতাবে আমার দরকার নেই। জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রতিবাদে আমি নাইটহুড ফিরিয়ে দিচ্ছি। এর মধ্যে ভোরের আলো পুরোপুরি ফুটেছে, নিভিয়ে দিতে হল ঘরের আলো। স্বয়ং ব্রিটিশ সম্রাট প্রদত্ত খেতাব পরিত্যাগ করা রাজদ্রোহের প্রায় সমতুল্য। এ চিঠি প্রচারিত হলে সম্রাটকেই অপমান করা হবে। প্রশান্তচন্দ্র কম্পিত বক্ষে চিঠিখানি পড়তে লাগল। অনেক কাটাকুটি করে লেখা হয়েছে, কী জ্বলন্ত ভাষা, The time has come when badges of honour make our shame glaring in their incongru- ous content of humiliation, and I for my part wish to stand, shorn of all special distinctions, by the side of my country- men… তখুনি ডেকে পাঠানো হল অ্যান্ড্রুজকে। কবি বললেন, দেখো সাহেব, ঠিক আছে কি না। অ্যান্ড্রুজ পড়তে পড়তে বললেন, হ্যাঁ, প্রতিবাদ হিসেবে এটা উচিত কাজই হয়েছে, কিন্তু, কিন্তু, গুরুদেব, ভাষা একটু নরম করে দিলে হয় না? কবি এর উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে রইলেন অ্যান্ড্রজের দিকে। প্রায় কেঁপে উঠলেন অ্যান্ড্রুজ। কবির এমন হিম- শীতল দৃষ্টি তিনি আগে কখনও দেখেননি। তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, না, না, ঠিক আছে, এ ভাষা বদল করার দরকার নেই।"
সুনীলের লেখা আমার সব সময়েই ভাল লাগে। 'রাণু ও ভানু' ও বাদ দেওয়ার নয়।
প্রথম আলোতে যে ভাবে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরেছিলেন। সেই ধারা এখানেও চলছে। বলা যেতেই পারে, প্রথম আলোর যৌবনের রবীন্দ্রনাথ এর পর থেকে ষাট ঊর্ধ্ব ভানুদাদার জীবনের একটা অংশ এই বইতে রয়েছে।
আর কি অসাধারণ ভাবে গান গুলিকে পরিস্তিতির সঙ্গে মিলিয়ে এনেছেন। একবার ও ম্নে হবে এখানে লেখার প্রসংশা করার থেকেও বেশি লেখকের হয়ে যাবে।
কবি কয়েক হাজার চিঠি পান সারা বিশ্ব থেকে, কিন্তু একটা চিঠি ওনার মনে ধরে যায়। একটি ছোট মেয়ের চিঠি। মেয়েটির নাম রাণু। ......... বাকিটা উপন্যাস থেকে পরতেই হবে।
কিন্তু আশ্চর্য এই যে রাণু কি করে এতটা কবিগুরুর মনের এতটা জায়গা নিতে পারল। আর বড় হয়েও কবিকে অনুপ্রানিত করে গেল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ধরনে বোঝাতে চেয়েছেন কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ অনুমান ও হতে পারে। আবার সম্পর্কটা যে একদমই স্নেহু ভালোবাসার ছিলনা সেটা জানা যায়ে এই লেখার বাইরেও অনেক লেখা থেকে।
বইটির বিষয়বস্তু কবিগুরু আর তার এক ছোট্ট ভক্তের বন্ধুত্ব। উপন্যাস ভেবে পড়া শুরু করেছিলাম বইটা। কিন্তু বইয়ের প্রথম অংশে খালি কবি এখানে গেলেন, ওখানে বক্তৃতা দিলেন এসবের মধ্যে মাঝে মাঝে রাণু স্থান পেয়েছে। আমার পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যেন লেখক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না এটি উপন্যাস না দিনলিপি নাকি ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা। বাকি অংশে অবশ্য রাণু আর কবিই প্রধান এবং পড়ার সময় ও উপন্যাস পড়ছি বলে মনে হয়। রবীন্দ্র জীবনী সম্পর্কে আগ্রহী হলে বইটা পড়তে পারেন। কিন্তু শুধু উপন্যাস হিসেবে পড়লে হতাশ হবার সম্ভাবনা আছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার খুব প্রিয় বাঙালি লেখকদের মধ্যে একজন। ওনার লেখার মধ্যে একটা অদ্ভুত রকমের আপনার ছোয়া আছে৷ রাণু ও ভানু যদিও কিছু কিছু জায়গায় আমাকে অসাধারণ ভাবে আবেগপ্রবণ করেছে, অনেক জায়গা মনে হয়েছে যেন ঠিক খাপ খাচ্ছে না। আসলে ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা যে কত কঠিন আমি আন্দাজ করতে পারি। আর মূল চরিত্র গুলো যখন কাল্পনিক হয় না, যেমন প্রথম আলো তে ছিল, তখন আরো বেশি অসুবিধার মধ্যে পরতে হয়। তবে এই রাণু ও ভানুর সম্পর্কের গোটা cycle টা খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। শুরু, বেড়ে ওঠা, ক্ষয়, ও শেষ - সবই সুনীল বাবু তার কলমের জোরে ফুটিয়ে তুলেছেন আদরে। পড়লে যে কারুরই ভালো লাগবে৷
বইটা পড়ার পর জানতে পারলাম প্রকাশকালে এটি নাকি সমালোচিত হয়েছিল। তবে লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়ের একটি স্বীকারোক্তি আমার মনোযোগ কেড়েছে- এটা জীবনী বা ইতিহাস নয়, উপন্যাসই। সত্যিই তো- এটাকে যদি একটা উপন্যাস হিসেবে দেখা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে এটি চমৎকার উপন্যাস। তবে উপন্যাস হিসেবে দেখলেও একটা জায়গায় একটু খটকা থেকেই যায়- রানুর সাথে ভানুর প্রথম দেখার মুহূর্তটা। যেকোন সময়ে প্রায় ১৪ বছরের একটি বালিকা নগ্ন অবস্থায় বাইরের একজন মানুষের সামনে হাজির হওয়ার বিষয়টা যেকোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর।
The story here was a 5-star story, but the translation was terrible. Generally speaking, it's hard to find good translations of Bengali literature, but this one was particularly bad.
শরীর আর বয়স বাড়লেও মনের বয়স বাড়ে নাহ। কথা টা আসলেই সত্যি। রানু পারলেও পারল না। রবি ঠাকুর । ভানু কে বাঁচাতে। যেভাবে ছোট্ট রানু মারা গেলো । সেভাবে ভানু ও নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলল।
গানের লাইনগুলো গানের মতো হলেই ভালো হতো..তথ্য যাচাই করবার মতো পান্ডিত্য না থাকায় আর কিছু বলবার সাহস পাচ্ছি না..পড়তে খুব একটা খারাপ লাগে নি এটুকু বলতে পারি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা যে কটি উপন্যাস আমি পড়েছি তার মধ্যে যে উপন্যাসটি মনে দারুণ দাগ কাটে তার নাম 'রাণু ও ভানু'। কি চমৎকারভাবে তিনি দশ বছর বয়েসী ছোট্ট রাণুর সাথে আটান্ন বছরের প্রৌঢ় রবীন্দ্রনাথের প্রেম, নির্ভরতা ও অন্যান্য সম্পর্কের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন! এছাড়াও এ উপন্যাসটিতে নানা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রবীন্দ্রনাথের নাইটহুড উপাধি বর্জন এবং কবির জীবনের নানা টানাপোড়েন বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।নানা বেদনায় ভারাক্রান্ত কবি শুধু সরলা বালিকা রাণুর কাছেই যেন অন্যরকম এক প্রশান্তি পান। তরুণী রাণুর মাঝে কবি খুঁজে পান অনেকদিন আগে হারিয়ে যাওয়া নতুন বৌঠানকে। বহুদিন পর কবির লেখায় ঝলসে উঠে প্রেমের কবিতা। রাণুর জীবনে কবি যেন ছিলেন একটি শুকতারা!
রবীন্দ্রনাথের জীবনের ক্ষুদ্র পরিসর নিয়ে লিখা সুনীলের ‘রানু ও ভানু’।বার বছরের এক কিশোরীর উচ্ছাসমাখা চিঠি দিয়ে গল্পের সূত্রপাত যা রবির মত প্রাজ্ঞ কবিকেও চঞ্চল করে তুলেছিল।অতঃপর পরিচয়,ভাললাগা এবং প্রিয় বৌঠানের স্থানে সে কিশোরীকে অধিষ্ঠিত করা।কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে তৈরি এই গল্প সুনীলের হাতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে যা পড়লেই পাঠক উপলব্ধি করতে পারবে। রবিকে ভালোভাবে চেনা ও ভাললাগার জন্য সুনীলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।‘প্রথম আলো’তে কবির নায়িকা ছিল কাদম্বরী দেবী,কিন্তু এই গল্পে সে স্থান রানুর।গল্পে সে সময়কার ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা,কবির নাইটহুড ফেরত দেওয়ার মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও উঠে এসেছে।তবে প্রথম আলোর রবির সাথে এই গল্পের রবির খানিকটা তফাত খুঁজে পেয়েছি। কবির অধিকাংশ কবিতা,গান তাঁর প্রিয় মানুষদের ছায়া অবলম্বনে লেখা।তাই কবিকে ভালোভাবে না জানলে সেসবের অর্থ যেমন বোঝা যাবে না,গভীরে প্রবেশ করাও সম্ভব হবে না;পাঠ্যপুস্তকের কবিতা মুখস্ত করার মতই অবস্থা হবে।
কবির কবিসত্ত্বাকে আর কেউ কি এমন অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে দেখতে পেরেছে? অর্থ বিত্তের কাছে মনন কি সবসময় হেরেছে? সাহিত্য কি তাতে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? রানু ও ভানু পড়ে সেই প্রশ্ন গুলোই মাথায় ঘুরছে।
The style of narration is typical of a fourth grade English textbook. The idealisation of Tagore only accentuates the insipidness of the words and the story-line. The book kept me wondering if the beauty of the narration was lost in translation, which is a distinct possibility. It is also possible that I wasn't able to relate to the values and conduct that was characteristic of pre-independent India. It has ended up worsening my NAP(Neo-authoro-phobia - Fear of reading works of authors you haven't read before).
Ranu and Bhanu is an account of bondage and affection between the great poet Tagore and his pen friend, who is of 12 years old at the begining of story.A relation which starts with the exchange of letters between two shifts into a more intimate one.The Serene and tranquil atmosphere of Santinikatan and the efforts taken by the poet to carryout the smooth functioning of it is also explained in a lofty manner. Overall this book is a good read...
টান শুধু কি শরীরের? যৌবনের ? নাকি মনের? উত্তরপত্রের নাম রাণু ও ভাণু। ঐতিহাসিকদের কাগজের পাতায় প্রাণ দেয়ারমত শক্তিশালী লেখকের লেখনীতে উঠে এসেছে উত্তরগুলো। পাতায় থাকা শব্দগুলোকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন।