Jump to ratings and reviews
Rate this book

সীমাবদ্ধ

Rate this book
Shyamalendu Chatterjee gives up a promising career in teaching to join a lucrative position in the world of commercial executives.There his rise is phenomenal but the last jump up the ladder of achievement needs a special effort which leaves him uncertain about whether his success has been such a triumph,after all.

Hardcover

First published January 1, 1962

6 people are currently reading
162 people want to read

About the author

Sankar

158 books179 followers
Shankar's real name is Mani Shankar Mukherjee. Sankar is a very popular writer in the Bengali language. He grew up in Howrah district of West Bengal, India.
Shankar's father died while Shankar was still a teenager, as a result of which Shankar became a clerk to the last British barrister of the Calcutta High Court, Noel Frederick Barwell. The experience of working under Mr. Barwell provided the material for his first book Koto Ojanare (কত অজানারে), translated as The Great Unknown.
During 1962, Shankar conceived the idea of writing the novel Chowringhee on a rainy day at the waterlogged crossing of Central Avenue and Dalhousie - a busy business district in the heart of Kolkata.
Many of Shankar's works have been made into films. Some notable ones are - Chowringhee, Jana Aranya (জন-অরণ্য, translated as The Middleman) and Seemabaddha (সীমাবদ্ধ, out of which the last two were directed by Satyajit Ray.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
29 (28%)
4 stars
57 (55%)
3 stars
14 (13%)
2 stars
2 (1%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 8 of 8 reviews
Profile Image for Tiyas.
449 reviews125 followers
May 3, 2025
আমার যে হারতে ইচ্ছে করে না, দোলন।

আপামর বাঙালি মাত্রেই 'কলকাতা ট্রিলজি'র সাদা-কালো রাস্তায় হিন্দুস্থান পিটার্সের চৌরঙ্গী আপিস হতে একবার ঘুরে এসেছেন হয়তো। তবে, সত্যজিতে ও শংকরে তফাৎ অনেক। দুই মিডিয়ামের পার্থক্য ওখানেই। সত্তরের দশকের টগবগে শংকরের কার্তুজ মাফিক লেখনী। সাথে চতুর সব সংলাপ। স্মার্ট কর্পোরেট প্রাচুর্য। মোহভঙ্গের লাবডুব নিনাদ। মধ্যিখানে দুমড়ে ওঠা নাগরিক ট্র্যাজেডি। মোরালিটি-ন্যস্ত এক পুরুষমানুষের কেজো পদস্খলন।

সময়টা অচেনা। তবু গল্পটা চেনা। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষে শিল্প-বিপ্লব ও নগরায়নের তটস্থ শাসন। মাঝখানে পিষে মরা বাঙালির দল। ঠিক যেন অঙ্কের খাতা। খাতার পাতায় তৈলাক্ত বাশ ও বদমাশ বাঁদরের চিরায়ত কাহিনী। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধের কঠিন ভাগশেষ। যদিও, উপন্যাসটি আমার অসম্ভব ভালো লাগেনি, তবুও এর সিনেমাটিক পোটেনশিয়াল নিয়ে দ্বিরুক্তি করা সাজে না। এখানে আমার 'ইনার আই'-কে দোষারোপ করাই যায়।

কে জানত, ব্যাটা, বাঁধাকপি-ফুলকপি ছেড়ে একেবারে বায়োস্কোপি নিয়ে পড়বে? 

সিনেমাটা দেখেছিলাম স্কুলে থাকতে। সে জিনিসের রেষ যে পুরোপুরি কাটেনি সেটা অনুভব করলাম লেখাটি পড়তে বসে। শংকরের গদ্য আমার বরাবরই প্রিয়। এখানাও দিব্যি গতিশীল, বলাই বাহুল্য। কোনরূপ জটিলতাকে প্রশয় না দিয়ে, গল্প এগোয় ঢেউ বরাবর। শ্যামলেন্দুর মনোলগে শেক্সপিয়রের সাথে কল্পিত বাকবিতণ্ডা বেজায় উপভোগ্য। ওদিকে, কর্পোরেট মইয়ের শতরঞ্জি-চাল ও অফিসের বুনো চিড়িয়াখানা স্বভাব, তুলে ধরে গল্পের ধোয়াটে প্রেক্ষাপট। ভালো লাগে শ্যালিকা ও জামাইবাবুর মজারু বাক্যালাপ। টুটুল-শ্যামল-দোলন ত্রয়ীর সহজ সেন্স অফ হিউমার!

তবুও দীর্ঘশ্বাস ফেলি হঠাৎ। পড়তে বসে মনে পড়ে যায় ব্রেট ইস্টন এলিসের উপন্যাসের নাম। মনে পড়ে, সদা-বিতর্কিত 'আমেরিকান সাইকো'-র সেন্সলেস পুঁজিবাদের প্রতি গম্ভীর খিল্লি।

এই লেখাটি--প্রায় দুই দশক পূর্বে রচিত 'সীমাবদ্ধ'-এর পাতায়--একগুচ্ছ মিস্টার অমুক ও মিসেস তমুকের নামের সাথে একের পর এক হাল-ফ্যাশনের ব্র্যান্ড ও গ্যাজেটের লিস্টি পড়তে গিয়ে স্মৃতি উস্কে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মন জানে, এতসব নামধাম মনে না রাখলেও চলে। 'যাহাই ইহা তাহাই উহা'। দেখনদারির ইঁদুর-দৌড়ে, সবটাই অন্তঃসারশূন্য। এক ব্যাগ অশ্লীল ফ্যালাসি-মাত্র। দিনশেষে নাথিং রিয়েলী ম্যাটার্স... নাথিং বাট দা প্রাইজ ট্যাগ। (সাফল্যের মূল সুঘ্রাণ!)

অবশ্য, এসবের উর্দ্ধে বইতে সর্বেসর্বা শ্যামল। উপন্যাসটি তার নিজস্ব ক্যারেকটার-স্টাডি। ফলস্বরুপ, শ্যামলেন্দু বাদে কোনো চরিত্রই মনে আলাদা করে জায়গা করে নেয় না। বইয়ের নারী-চরিত্ররা মজাদার সব ডায়লগ পেলেও, লেখকের মর্জিতে বেকডেল পরীক্ষায় বসেও উত্তীর্ণ হতে চায় না যেন...

আমি আবার, ঠাকুর নামে দৃপ্ত! আলাদা করে টুটুল বা সুদর্শনাকে নিয়ে সামান্য আগ্রহী ছিলাম বলা যায়। দুঃখের বিষয়, এইখানেতে মানিকবাবুই উইনার। সিনেমার শেষপর্যায়ের সেই সূক্ষ্ম টেনশন, সেই আপেক্ষিক মূঢ়তা, আসল গল্পে অনেকটাই মিসিং। তুলনামূলকভাবে শংকর সাহেব আরেকটু সরল। সমব্যথী স্রষ্টারূপে, আরেকটু মেলোড্রামাটিক। সিন ড্রপ করেছেন নিজস্ব চালে। যা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমার খুব একটা দারুন লাগেনি। এই যা।

আমার ওই শেষ কথাটা একটু অসত্য বলতে পারেন। কিন্তু মিস্টার শেক্সপিয়র, মানুষের মনের কোনো রহস্য তো আপনার দুয়ে নয়, আপনি তো জানেন, চাকরিটা রক্ষা করবার জন্যে আমি তখন সব কিছু করতেই রাজি ছিলাম ৷ আর তাছাড়া আমি তখনও ভাবিনি আমি এমন হয়ে যাব—লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের দায়িত্বের মতো, আমি নিজেও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ব।


(৩/৫ || ডিসেম্বর, ২০২৪)
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews193 followers
January 19, 2023
সীমাবদ্ধ-নামটা পড়ে এর কারণ সহজেই বোঝা যায় না। অদ্ভুত একটা নাম। লিমিটেড। কিন্তু এই নামের যে দুই রকম অর্থ আছে, সেটা বোঝার পরই উপন্যাসের নামকরণ এর কারণ বোঝা যায়৷ বড় বড় কোম্পানির পেছনে এই লিমিটেডটা থাকবেই। সেইটারই বাংলা অর্থ সীমাবদ্ধ, কিন্তু এই সীমাবদ্ধের অন্য অর্থও তো আছে।
সীমাবদ্ধ উপন্যাসটি রচিত হয়েছে একটা বিলিতি ফ্যান কোম্পানির হাই র‍্যাংকের উচ্চাভিলাষী অফিসার শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জিকে কেন্দ্র করে৷ পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে এম এ, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, শ্যামলেন্দুর মেধা এবং অ্যাম্বিশন কোনটারই কমতি ছিল না। ছিল না পরিশ্রমেরও। তাই কোম্পানিতে মাত্র ৩৩ বছর বয়েসেই তার অবস্থান ডিরেক্টরের ঠিক পরের পদটাই। একসময়ের শেক্সপীয়ার ধারণ করা শ্যামলেন্দু কর্পোরেট জগতে এসে কতটা পাল্টে গেল বা বলা ভালো পাল্টে যেতে বাধ্য হল, কর্পোরেট জগতের অন্ধ বিলিতি অনুকরণ, সেই জগতের উচ্চ পর্যায়ের মানুষের জীবনধারণ, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, মুখোশ এগুলোই গোটা উপন্যাসে চমৎকারভাবে চিত্রিত করেছেন শংকর।
আর এই ছবিগুলো একে একে সামনে আসতে থাকে যখন শ্যামলেন্দুর সুন্দরী তরুণী এবং সরল শ্যালিকা সুদর্শনা বেড়াতে আসে তার দিদি-জামাইবাবুর বাড়িতে।
শেক্সপীয়ার এর সাথে স্বপ্নে দেখা কথোপকথনটাই এই পুরো উপন্যাসের উপজীব্যকে চমৎকারভাবে ধারণ করেছে। দৌড়, দৌড়, নিরন্তর ছুটে চলা এক অলীক আশায়, উপরে উঠতে হবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব করতে হবে। উন্নতির, উচ্চপদের শিখরে আরোহণ করতে হবে। তাই সাহিত্যের ছাত্র হয়েও শ্যামলেন্দুর ইচ্ছে হয় না কোন বই আর পাঁচ পাতাও এগুতে। ইচ্ছে না করলেও যেতে হয় রেসের মাঠে, খেতে হয় হুইস্কি। এইসবই যে স্ট্যাটাস সিম্বল। উপরে উঠতে গেলে নিজেকেও যে অনেক অনুভূতি থেকে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। অপরদিকে সূক্ষ্ণ অনুভূতিগুলোও তাই গুটিয়ে নেয় নিজেদেরকে এক সীমার মধ্যে। অফিস, পার্টি, কাজ, খাওয়া, ঘুম-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সংকীর্ণ হয়ে পড়ে জীবন৷ সবাই কি আর কেরালার ক্ষুরধার মস্তিষ্কসম্পন্ন ডিরেক্টর মেনন হতে পারেন যিনি ম্যাকবেথ পড়ে ছেড়ে দেন উচ্চপদ? ডুব দেন একান্তই যা ইচ্ছে করে তাতে? বই, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র এর মতো সুকুমার কলার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য?
শ্যামলেন্দু, যে সৎ থাকতে চেয়েও সেই উচ্চাশার ফাঁদে পড়েই আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ কিন্তু আসলে মর্মান্তিক এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে আর শেষমেশ নিজেই জ্বলে যায় তুষের আগুনে।
সীমাবদ্ধ এক কৃত্রিম সমাজের কথা বলে যায়। কর্পোরেট কোম্পানির বাইরেও আমরা প্রতিনিয়ত দেখা পাই এইসব অনুভূতিহীন খণ্ডিত মানুষের, মাঝে মাঝে নিজেই প্রতিনিধিত্ব করি।
Profile Image for Antu Paul.
110 reviews80 followers
w
May 28, 2025
হারারির সেপিয়েন্স পড়ার সময় খেয়াল করেছিলাম কোম্পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে আলোচনায় একে বলেছিলেন Limited Liability Company অর্থাৎ সীমিত দায়বদ্ধতার কোম্পানি। তখন এক অর্থ বুঝেছিলাম; সীমাবদ্ধ পড়ার পর নতুন এক উপলব্ধি হলো।
Profile Image for Muhammad  Nayeem Ur Rahman Fahim.
43 reviews1 follower
Read
May 24, 2023
কারো বিবিএ করার পরিকল্পনা থাকলে এই বই পড়া মন্দ অভিজ্ঞতা হবে না। এক বিজনেস এক্সিকিউটিভ, কর���পোরেট জালের ভিতর দিয়ে কীভাবে কাজ করে যায় — তার একটা চিত্র পাঠিকা দেখবেন এখানে। কাহিনী যদিও বহু আগের, তবু দিন আর কই পালটায়। মানুষ আর মানু���ের জীবন ঐ একরকম। অন্তত সোশাল মিডিয়া যুগের আগ অবধি।

গল্পের কথক আর রুনু স্যান্যাল, দুজনে পিটার ফ্যান লিমিটেডে কাজ করে ( যতটুকু মনে পড়ে, স্মৃতি থেকে নামোদ্ধার করছি)। দুজনের ডেজিগনেশন একই। কথকের নাম শ্যামলেন্দু। শ্যামলেন্দুর বাসায় তার শ্যালিকা বেড়াতে আসে। শ্যামলেন্দুর স্ত্রী নিজ বোনকে তাদের আবাসস্থল দেখায়, আমরা শ্যামলেন্দুর শ্যালিকার চোখ দিয়ে দেখি ওদের জীবনযাত্রা কীরকম। ঘটনা এইরকম সুখী সুখী মুখ করে এগোতে পারতো, তবে তা হয় না। সংকট দেখা দেয় শ্যামলেন্দুর জীবনে। সেই সংকটে আমাদের কাছে বড় কিছু সত্য প্রকাশ করে দেয়।

শ্যামলেন্দু ইংরেজি সাহিত্য পড়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর কোথাকার জল কোথায় গড়ালো, সে গিয়ে হইলো এক্সিকিউটিভ অফিসার। বইয়ে তাকে নিয়মতি শেক্সপিয়রকে বকাঝকা করতে দেখা যায় (আক্ষরিক অর্থে নয়), জ্ঞান দিতে দেখা যায়। জীবনের প্রথম আয় দিয়ে সে কিনেছিল শেক্সপিয়রের রচনাবলি।
Profile Image for Bubun Saha.
193 reviews6 followers
December 25, 2023
সীমাবদ্ধ
শংকর
দে'জ পাবলিশিং
মূল্য: (বহু পুরোনো সংস্করণ, বর্তমান দাম জানা নেই))

হিন্দুস্তান পিটার্স কোম্পানি লিমিটেড। পাটনার সুশিক্ষিত শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জী নিজের দক্ষতায় কোম্পানির ফ্যান ডিপার্টমেন্ট এর ম্যানেজার। তার পাখির চোখ ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে।

পাটনা থেকে আগত একমাত্র শ্যালিকা টুটুলকে তার দিদি দোলন তাদের কলকাতার বহুতল ফ্ল্যাটের সুযোগ- সুবিধার কথা বলে। বহুতল বাড়ি, ককটেল পার্টি, সাহেব-মেমদের আনাগোনা সবকিছু টুটুলের কাছে অবাস্তব বলে মনে হয়। সুদক্ষ চোখে দেখতে গেলে শ্যামলেন্দু আর দোলনের চিন্তা-ভাবনা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখনকার কর্পোরেট সমাজেও যা খুবই প্রযোজ্য।

সীমাবদ্ধতা শুধু কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সামাজিক আর আর্থিক দায় অবদি , কিন্তু কোম্পানিকে সম্ভবত বিরাট ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে অমানবিকতার সীমাবদ্ধতা নেই, তাতে দুর্ঘটনাবশত একজন বুড়ো সিকিউরিটি গার্ডের জীবন গেলেও।

৫০ বছর আগে ইঁদুরদৌড়ে সবচেয়ে ওপরে ওঠার জন্য কর্পোরেট রেষারেষি, unethical পলিসি, তার এখনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। মানুষের দায়বদ্ধতা সীমিত , সংকীর্ণ।

কোম্পানিকে প্রভূত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শ্যামলেন্দু ডিরেক্টর পদে উত্তীর্ণ হলো, একটা অপরাধবোধ তার মধ্যে কাজ করলো। কিন্তু নিজের স্টেটাস, দোলনের স্টেটাস, নিজেদের উচ্চাকাঙ্খা, rival রুনু সান্যালের কাছে নিজের জিতে যাওয়া, বিলাসিতায় অভ্যস্ত শ্যামলেন্দুর বিবেক সীমাবদ্ধ।
Profile Image for Shahriar Rahman.
84 reviews13 followers
February 1, 2023
নিজের বিচার বিবেচনার উপর আমার আত্মবিশ্বাস বরাবরই কম। আমার ধারণা যাকে আমি পছন্দ করি, তার মন্দ দিকটা কিছুতেই চোখে পড়ে না, শুধু ভালোটাই দেখি। শংকর-প্রেমে মজেছি বেশ কিছুদিন হল, এই লোকের যা পড়ি তাতেই মুগ্ধ হই। তাই "সীমাবদ্ধ" পড়েও যখন দেখি মুগ্ধ হয়ে বসে আছি, কিঞ্চিৎ সন্দিহান হলাম নিজের বিশ্বাসের উপর। পরমুহূর্তেই যে সন্দেহ কর্পূরের মত উবে গেল, যখন মনে পড়ল স্বয়ং সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসকে পর্দায় ধারণ করে গিয়েছেন সেই ৭১ সালে। আমার পছন্দ নিয়ে দ্বিধা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের?

শংকর নিয়ে ইদানীং কিছু লিখতে গেলেই মাথায় একজোড়া শব্দ ভাসে - মাস্টার স্টোরিটেলার! তা উনি গল্পও বলেছেন এই উপন্যাসে! কর্পোরেট দুনিয়ার মারপ্যাচের গল্পটাই হয়ত সবার চোখে পড়বে, সেটাই যে মূলগল্প। কিন্তু এর সাথে থাকা ইংরেজি সাহিত্যের তুখোর এক ছাত্রের ক্রমশ লিমিটেড কোম্পানীর কেরানি (অফিসার) হয়ে উঠার গল্প, বৃটিশ বলয় থেকে সদ্য স্বাধীন তৎকালীন সমাজে সাদা চামড়ার মানুষদের রেখে যাওয়া “আলগা ফুটানি” বজায় রাখবার জন্য বাদামী চামড়ার মানুষগুলোর প্রাণান্তকর, নগ্ন, কুৎসিত চেষ্টার গল্প, কোম্পানিকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের স্বত্বাকে হত্যা করে “লিগ্যালি” রাইট কিন্তু “মোর‍্যালি” জঘন্য উপায়ের আশ্রয় নেয়ার গল্পগুলোই হয়ত একে সত্যিকারের সাহিত্য করে তোলে। বিশেষ করে একসময় শিরোধার্য শেক্সপিয়রকে মাতাল হয়ে আবল-তাবল বলার গল্প তো পুরো শংকর ক্ল্যাসিক! শেক্সপিয়র ছিল যার প্রাণ, গীতাপাঠের মত শেক্সপিয়ার পড়ত যে মানুষটা, সে- নেশার ঘোরে বলে উঠে -
“শেক্সপিয়র লোকে মন দিয়ে পড়ে কেন? শেক্সপিয়র ভাঙিয়ে যুগ যুগ ধরে ছাত্ররা পরীক্ষায় ভালো করেছে। শেক্সপিয়রকে বার বার পড়া মানে তাকে জানা, আর জানা মানে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া, আর ভালো নম্বর পাওয়া মানে ভালো চাকরি পাওয়ার সুবিধা। তারপর শেক্সপিয়র শেষ। তারপর আমার জন্য বাড়ি, গাড়ি, বউ, ক্লাব, ককটেল, কন্ট্রাক্ট ব্রিজ, ডিনার, ডান্স, পেরিমেসন এবং টাইম ম্যাগাজিন। সিন্ধুপারের বিশ্বকবি, আপনি মাথায় থাকুন। আপনাকে যে বাড়ির শোভাবৃদ্ধির জন্য ফার্নিচার হিসেবে রেখেছি, জঞ্জাল কমাবার জন্য বাইরে ফেলে দিতে বলিনি, এই যথেষ্ট। মোর দ্যান এনাফ! ”

শংকরের লেখার সবচাইতে উপভোগ্য হল ঝরঝরে বর্ণনা। ভালো পাঠক হলে এক বসায় পড়ে ফেলা যেতো, আমার লাগলো দুই রাত। পড়তে শুরু করার আগে প্রচ্ছদে এই সুন্দরীর ছবি কেন তা ভেবে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম, সে আসলে কে তা জেনে চোয়াল ঝুলে পড়ল (আমি যে ভার্সনটা পড়েছি সেটার প্রচ্ছদে শর্মিলা ঠাকুরের ছবি ছিল, সত্যজিত রায়ের চলচ্চিত্র থেকে নেয়া। এই ভার্সনটা গুডরিডসে নেই। নতুন নিয়মের কড়াকড়ির কারণে অ্যাডও করা যাচ্ছে না আমার পক্ষে)। যেমনটা পড়েছিল বইটা শেষ করে।
আরেকটা জিনিসও বেশ উপভোগ্য, জন-অরণ্য শেষে দেখেছিলাম, এটাতেও দেখলাম, উপন্যাস শেষ হবার পর কয়েক পাতাজুড়ে এই উপন্যাসের পেছনের কথা, কীভাবে এই প্লট মাথায় আসলো, কতদিন ধরে লিখেছেন, কোথা থেকে আইডিয়া, ইন্সপিরেশন পেয়েছেন, কীভাবে লেখা প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের চক্ষুশূল হয়েছেন, সেসবের সুন্দর বর্ণনা। একদম শেষের কয়েকটা লাইন এরকম -
“...আর একজন মধ্যবয়সী ম্যানেজারের কথা মনে পড়ছে। নিজের অফিসে শ্রমিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় সীমাবদ্ধ প্রসঙ্গ বেশ শ্লেষের সঙ্গে উত্থাপিত হওয়ায় তিনি বিশেষ দূঃখিত হন এবং এক পত্রযোগে তাঁর ব্যক্তিগত অভিযোগ নিবেদন করেনঃ ‘দেশের সমস্ত প্রতিভাবান উচ্চাভিলাষী পুরুষই কী নীতিহীনতা ও নির্লজ্জ বিলাসিতার কৃত্রিম পৃথিবীতে বাস করছে? যারা সীমাবদ্ধ তাদের কথা তো বিশ্ববাসীকে নিবেদন করলেন, কিন্তু সকলের অলক্ষ্যে কলে-কারখানায় যারা নীরবে নতুন ভারতবর্ষ সৃষ্টির সাধনায় মগ্ন রয়েছে, ইতিহাস ও পরিবেশের নানা বিপত্তি সত্ত্বেও যারা সীমানামুক্ত হবার স্বপ্ন দেখছে, তাদের কথা কে লিখবে?’
অপরিচিত ভদ্রলোকের এই চিঠিখানি আমাকে গভীরভাগে নাড়া দেয়। “আশা-আকাঙ্ক্ষা” উপন্যাসের কথা তখনই ভাবতে আরম্ভ করি…”

সীমাবদ্ধ শেষ করে মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই দেখি বুকশেলফ থেকে আশা-আকাঙ্ক্ষা আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আহ, জীবন কতই না সুন্দর!
Displaying 1 - 8 of 8 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.