Jump to ratings and reviews
Rate this book

কেরী সাহেবের মুন্সী

Rate this book
বছর পনেরো আগে রােমরাম বসুর জীবন নিয়ে কিছু একটা লিখবার ইচ্ছা হয়, তখন ধারণা ছিল না যে তা ঠিক কি আকার ধারণ করবে। তার পরে বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করে বিস্মিত হয়ে গেলাম। রামরাম বসু প্রসঙ্গে উইলিয়াম কেরীকে পেলাম। বুঝলাম যে যে-সব মহাপ্ৰাণ ইংরেজ এদেশে এসেছেন, উইলিয়াম কেরী তাঁদের অগ্রগণ্য। কেরীর ধৰ্মজীবন, ধর্মপ্রচারে আগ্রহ, বাংলা গদ্য সৃষ্টিতে নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় অভিভূত করে দিল আমাকে । তখন ধীরে ধীরে কেরী ও রামরাম বসুকে অবলম্বন করে কাহিনীটি রূপ গ্ৰহণ করে উঠল। এই কাহিনীকে পাঠক ঐতিহাসিক উপন্যাস বলে গ্ৰহণ করবেন। কিনা জানি না, করলে আমার আপত্তির কারণ নেই। ১৭৯৩ থেকে ১৮১৩ সালের ইতিহাস এর কাঠামো। জ্ঞানত কোথাও ইতিহাসের সত্য থেকে বিচ্যুত হইনি। কেবল একটি বিষয়ে কিছু স্বাধীনতা নিয়েছি, দ্বারকানাথ ঠাকুরের বয়স কিছু বাড়িয়ে দিয়েছি! আর কিছুই নয়, রবীন্দ্রনাথের পিতামহকে কাহিনীর মধ্যে আনবার লোভ সম্বরণ করতে পারি নি। ইতিহাসের সত্য ও ইতিহাসের সম্ভাবনা ঐতিহাসিক উপন্যাসকারের উপাদান। ইতিহাসের সত্য অবিচল, তাকে বিকৃত করা চলে না। ইতিহাসের সম্ভাবনায় কিছু স্বাধীনতা আছে লেখকের। সত্যের অপব্যবহার করি নি, সম্ভাবনার যথাসাধ্য সদ্ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছি। দুই শ্রেণীর নরনারীর চরিত্র আছে উপন্যাসখানায়, ঐতিহাসিক আর ইতিহাসের সম্ভাবনা-সঞ্জাত। কেরী, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, টমাস, রামমোহন, রাধাকান্ত দেব প্রভৃতি ঐতিহাসিক চরিত্র। রেশমী, টুশকি, ফুলকি, জন স্মিথ, লিজা, মোতি রায় প্রভৃতি ইতিহাসের সম্ভাবনা-সঞ্জাত অর্থাৎ এসব নরনারী তৎকালে এইরকমটি হত বলে বিশ্বাস। এখানে যেমন কিছু স্বাধীনতা আছে, তেমনি ভুলের সম্ভাবনাও বর্তমান। ভুল না করে স্বাধীনতার সুযোগ গ্রহণে লেখকের ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ক্ষমতা কতটা প্ৰকাশ পেয়েছে জানি না | পাত্ৰপাত্রীর উক্তিকে লেখকের মন্তব্য বলে গ্ৰহণ করা উচিত নয়। সে-সব উক্তি পাত্রপাত্রীর চরিত্রের সীমানার মধ্যেই সত্য, তাদের সত্যের সাধারণ রূপ বলে গ্ৰহণ করলে লেখকের প্রতি অবিচার করা হয়। বলা বাহুল্য, কোন ধর্ম কোন সম্প্রদায় বা কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য এ গ্রন্থের নয়। তার চেয়ে উচ্চতর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে লেখক। একটা সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্বের কয়েকটি বিশেষ নরনারীর সুখদুঃখের লীলাকে অবলম্বন করে নির্বিশেষ মানবসমাজের সুখদুঃখের লীলাকে অঙ্কন লেখকের উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এমন দাবি করি নাকিন্তু উদ্দেশ্য ও ছাড়া আর কিছু নয়। আরও একটা কথা বুঝলাম বিষয়ে প্রবেশ করে আর কাহিনীটা লিখতে গিয়ে— কলকাতা শহরের প্রাচীন অংশের প্রত্যেক পথঘাট, অট্টালিকা, উদ্যান, প্রত্যেক ইষ্টকখণ্ড বিচিত্ৰ কাহিনীরসে অভিষিক্ত । এ শহরের একটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আছে যা ভারতের প্রাচীন শহরগুলোর ব্যক্তিত্ব থেকে স্বতন্ত্র। ভারতের প্রাচীন ও নবীন যুগের সীমান্তে অবস্থিত এই শহর। এর অনেক ক্রুটি সত্ত্বেও না ভালবেসে পারা যায় না। একে, কারণ এ আমার সমকালীন । সমকালীনতার দাবি এ শহরের সকলের প্রতি। “কেরী সাহেবের মুন্সী'রও ঐ দাবি-তদধিক কোন ঐশ্বর্য এর আছে মনে হয় না। অলমিতি—

337 pages, Hardcover

First published January 1, 1958

13 people are currently reading
245 people want to read

About the author

Pramathanath Bishi

29 books12 followers
Pramathanath Bishi (1901-1985), a writer and educationist, was born on 11 June 1901 at Joari in Rajshahi, the son of Nalininath Bishi and Sarojbasini Devi. He studied for seventeen years at Brahma Vidyalaya in santiniketan, where he became closely acquainted with rabindranath tagore. He passed the Matriculation (1919) from Santiniketan and took a break of several years before going on to complete the IA (1927) and BA with Honours in Englsih from rajshahi college (1929). He then took an MA in Bangla (1932) from Calcutta University, standing first class first. He carried on research on a ramtanu lahiri Research Fellowship (l933-36). He joined Ripon College (1936-46) and then Calcutta University (1950) as professor of Bangla. He was Rabindra Professor and Head of the Department of Bangla, Calcutta University (1963-66). He also worked as editor of the Santiniketan (1931) and assistant editor of the Anandabazar (1946-49). He retired in 1971. He was also a member of West Bengal Bidhan Sabha (1962).

Bishi was a prolific writer in several genres: poetry, satire, short story, novel, drama, essay and criticism He wrote under various pseudonyms, such as Pranabi, Kamalakanta, Haturi, Bishnu Sharma, Amit Ray, Madhabya, Scot Thomson. Among his published novels are Desher Shatru (1924), Padma (1935), Jodadighir Chaudhuri Paribar (1938), Keshabati (1941), Nilmanir Svarga (1954), Sindhudesher Prahari (1955), Carey Saheber Munsi (1958), Lal Kella (1963), Ashvatther Abhishap, Chalan Beel, etc. His books of short stories include Shrikanter Pancham Parba (1944), Galper Mato Galpa (1945), Gali O Galpa (1945), Dakini (1945), Brahmar Hasi (1948), Nilbarna Shrgal (1956), Alaukik (1957), Bichitra Sanglap (1955), Svanirbachita Galpa (1960), etc. His books of poems are Dewali (1923), Basanta Sena O Anyanya Kavita (1927), Bidyasundar (1935), Juktabeni (1948), Shakuntala O Anyanya Kavita (1946), Hangha Mithun (1950), Uttar Megh (1953), Kingshuk Bahni (1959), Shrestha Kavita (1961), etc. His dramas are Rnang Krtta (1935), Ghrtang Pibet (1941), Mauchake Dhil (1945), Government Inspector (1944), Permit (1956), etc. His essays are included in Banglar Lekhak (1950), Jawharlal Nehru- Byakti O Byaktitva (1951), Bangla Sahityer Nara Nari (1953), Kamala Kanter Asar (1955), Nana Rakam (1958), Rabindra Kavya Prabaha, Rabindra Kavya Nirjhar, Rabindranath O Santiniketan, Rabindra Natya Prabaha, Rabindra Bichitra, Rabindra Sarani, etc. He also edited Bhudev Rachana Sambhar, Vidyasagar Rachana Sambhar, etc.

Bishi was awarded the Rabindra Puraskar (1960), Vidyasagar Smrti Puraskar (1882), Jagattarini Puraskar (1983). He died in Calcutta on 10 May 1985.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
30 (20%)
4 stars
57 (39%)
3 stars
42 (28%)
2 stars
14 (9%)
1 star
2 (1%)
Displaying 1 - 28 of 28 reviews
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
April 23, 2022
কেরী সাহেবের মুন্সী বইটা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিক থেকে শুরু করে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকের পটভূমিতে লেখা। সে সময়ে উইলিয়াম কেরী নামের এক পাদ্রী এবং সেই পাদ্রীর মুন্সী রামরাম বসুর নানা ঘটনাপ্রবাহ এই বইয়ের মূল উপজীব্য। যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বইটি লেখা হয়েছে তা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। তবে প্রথমদিকে মোটামুটি ভালো লাগলেও বইতে রেশমি চরিত্রটি আসার পরে প্রচুর মেলোড্রামা শুরু হয় যা একদমই নিতে পারলাম না। অভারঅল, সে সময়ের প্রেক্ষাপটে বইটাকে একেবারে খারাপও বলবো না আবার একেবারে অসাধারণও বলবো না আমি; মাঝামাঝি ঘরানার একটি বই বলা যায়।
Profile Image for Humaira Tihi.
79 reviews28 followers
July 13, 2023
এই বইটা পড়তে বলেছিলেন নাহার আপা। অন্তত বছর দুয়েক আগে তো হবেই। পড়তে শুরুও করেছিলাম বছরখানেক আগে। কেন জানি মন বসলো না। তারপর এই কিছুদিন আগে শুরু করে আজকে শেষ হলে পাঁচ খন্ডের এই জীবনগাঁথা!

সতের শতকের শেষ থেকে আঠারোর শুরুর দিকের সময়। ভারত বিশেষ করে কলকাতার প্রেক্ষাপটে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, পরিবর্তন আর সেই সাথে সমাজের চিরায়ত উপাদান গুটিকয় চিরন্তন মানুষ নিয়ে এই মহারচনা! ইতিহাসকে কেন্দ্র করে লেখা পড়তে রোমাঞ্চবোধটা আরো বাড়ে! চেনা রাস্তায় অচেনা এক মাত্রা যোগ হয়।

এক আইকনিক ক্যারেক্টার ছিল রেশমীবিবি। মেয়েটার ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট সত্যি ই অসাধারণ ছিল। তার কিশোরী বয়সে চিতার আগুন থেকে পালিয়ে দীর্ঘ এক রোমাঞ্চকর পথ পারি দিয়ে শেষে যে পরিণতি, সত্যি এই পুরো জার্নিটাই চমৎকার।

প্রথম খন্ডের সিংহভাগ যাবে একে তাকে চিনতে চিনতেই। তবে পঞ্চম খন্ডটা আর বিশেষ করে রাম বসুর পরিণতি টা হয়তো আরো একটু সময় পেতে পারত!উপমহাদেশে সতীদাহ প্রথার এক ঝলক এই বইতে পাওয়া যায়। শুরুটা উইলিয়াম কেরী কে দিয়ে হলেও শেষের দিকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের গোড়াপত্তন সাথে বিদ্যালঙ্কার আর রামমোহন রায়ের মত চরিত্রের আবির্ভাব আছে। ঘটনা আসলে একটা বলতে চাইলেও এখানে বলা হয়ে গেছে অনেক কিছু!

আমার কি ভাল লাগলো। এই যে পলাশীর আশপাশের সময়ের একটা খসরা মোটামুটি নিজ চোখে দেখা গেল। সবচেয়ে ভাল ব্যাপার, এর আগে এফ বি ব্রাডলীর বইতে সেই টাইমলাইনের বর্ণনা পড়েছি খুব বায়াসড টোনে। এরকম একটা লেখা থেকে পরিস্থিতি অনুমাণ করা মুশকীল। প্রমথনাথ বিশী বাঙালী হলেও এতটুকু স্বজনপ্রীতি পেলাম না বইতে। সে কারণেই ভরসা পেলাম।

বইয়ের নাম কেরী সাহেবের মুন্সী হলেও আমার কাছে মুন্সীকে প্রধাণ চরিত্র মনে হয়নি। অন্যতম প্রধাণ চরিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। বড়সর লেখার ভাল দিক হল, এর আনাচে-কানাচে প্রচুর ছোট ছোট গল্প থাকে। এখানে যেমন মুন্সীর বৌ অন্নদার এক টুকরো গল্প আছে, এমনিতে দেখলে কিছুই না। কিন্তু অন্নদার যাবতীয় কীর্তির পেছনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলে অনেক কিছু!

লম্বা সফরে নামতে চাইলে এই বই রিকমেন্ডেড। প্রমথনাথ বীশি আলোচিত লেখক। তার লেখার ব্যাপারে আমার বলা-কওয়ার কোন অবকাশ থাকে না। গল্পের গতির ওঠা নামা আছে অনেক। ডিসট্র‍্যাকশনের জায়গা আছে অনেক খানে। তবে, বই পড়ার ক্ষেত্রে তাড়া কীসের? কেও তো ডেডলাইন ধরিয়ে দিচ্ছে না, পরীক্ষার সিলেবাসেও থাকছে না।

নাহার আপাকে ধন্যবাদ এই বইটার সন্ধান দেয়ার জন্য!
Profile Image for Fahad Amin.
149 reviews9 followers
July 12, 2025
উপন্যাসটা কেবল উইলিয়াম কেরি বা তাঁর মুনশি রাম রাম বসুকে নিয়ে বললে ভুল হবে। সে সময়টার ঔপনিবেশিক শাসনামলের চিত্র উঠে এসেছে বইয়ে। উপন্যাসের প্রয়োজনে আরও অনেক চরিত্রের সম্মিলন ঘটেছে। লেখক প্রমথনাথ বিশীর সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায় রাম রাম বসুর কার্যকলাপের মাঝে। মোটের উপর অসাধারণ সুখপাঠ্য একটা বই।
Profile Image for Sanowar Hossain.
281 reviews25 followers
October 19, 2023
উইলিয়াম কেরীর নাম শুনেছেন? বাংলা ব্যাকরণ ও গদ্য সাহিত্যের উন্নতিকল্পে যে ক'জন অবাঙালি কাজ করেছেন উইলিয়াম কেরী অগ্রগণ্য বলে বিবেচিত। সপ্তদশ শতকের শেষদিকে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে ভারতবর্ষে আসেন। বাঙালিদের সাহচর্য ও ভাষা শিখতে রামরাম বসুকে মুন্সী নিযুক্ত করেন। রামরাম বসু ও উইলিয়াম কেরীকে কেন্দ্র করেই ঐতিহাসিক ঘটনার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক কল্পনার আশ্রয় নিয়ে উপন্যাসটি রচিত হয়েছে।

তৎকালীন কলকাতার ইংরেজ সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ইংরেজ পাড়ায় ইংরেজ ও তাদের কর্মচারীরা থাকতো এবং নেটিভ পাড়াগুলোতে বাঙালিরা বসবাস করতো। উইলিয়াম কেরী যখন কলকাতায় আসেন, তখন দোভাষী এবং সাহায্যকারী হিসেবে রামরাম বসুকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করেন। এতে বাঙালি সমাজে রামরাম বসুকে ছি ছি করলেও এসবকে পাশ কাটিয়ে দুই পক্ষের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ শুরু করেন। রামরাম বসু উইলিয়াম কেরীকে গাড়িতে করে কলকাতা ঘুরিয়ে দেখান এবং পাঠক লেখকের দৃষ্টিতে পুরনো কলকাতার দর্শন পেয়ে যান।

সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে জনের প্রিয়তমা কেটিকে দুবোয়া নামের এক ফরাসি হাত করে নেয়। জনও কম যায় না, পরে দেখে নেবে বলে চলে আসে নিজের আস্তানায়। তৎকালীন ইংরেজ সমাজে দুইজন ব্যক্তির মাঝে কোনো একটি বিষয় নিয়ে মীমাংসা করতে ডুয়েল বেশ প্রচলিত ছিল। কেটিকে নিয়ে যখন জন ও দুবোয়ার মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়; তখন তারাও বিষয়টির মীমাংসা করতে ডুয়েলে অবতীর্ণ হয়। সমাধান কি হয়েছিল?

ইংরেজরা এদেশে আসার পর সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছিল সতীদাহ প্রথা দেখে। ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে তারাও হস্তক্ষেপ করতোনা। চণ্ডী বক্সী নামে গ্রামের এক মোড়ল এই সতীদাহ প্রথার ফায়দা তুলতে চেয়েছিল। গ্রামের মোক্ষদা বুড়ির নাতনী রেশমীই সকল সম্পত্তির মালিক। তাই তাকে ফাঁদে ফেলে এক বৃদ্ধের সাথে বিয়ে দেয় চণ্ডী বক্সীর দলবল। বৃদ্ধ মারা গেলে প্রথা অনুযায়ী রেশমীকেও চিতার আগুনে উঠানোর প্রস্তুতি চলতে থাকে। তখন রেশমী পালিয়ে উঠে যায় উইলিয়াম কেরীর নৌকায়। এদিকে খবর হয় যে ইংরেজরা হিন্দুদের প্রথাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সতী নারীকে হরণ করে নিয়েছে। কিন্তু সেখান হতেও রেশমী পালিয়ে টুশকির আশ্রয়ে যায়। এই টুশকিই আবার রামরাম বসুর অবসর যাপনের সঙ্গী। সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে তখনই চণ্ডী বক্সী মোতি রায়ের শরনাপন্ন হয়। কিন্তু মোতি রায় রেশমীর সৌন্দর্যের বর্ননা শুনেই তাকে নিজের করায়ত্ত করতে পুরস্কার ঘোষণা করে। রেশমীর সামনে তাহলে কী অপেক্ষা করছে?

বইটিকে উইলিয়াম কেরী ও রামরাম বসুর জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস ভাবলে হতাশ হতে হবে। বইটির শুরু ও শেষের অংশে ঐতিহাসিক চরিত্র ও তাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি থাকলেও একটি বিরাট অংশ জুড়ে জন, টুশকি, রেশমীসহ অন্যান্য অনৈতিহাসিক চরিত্রের সমাগম রয়েছে। শুরুর দিকে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে উপজীব্য করে উপন্যাসের কাহিনি প্রবাহিত হলেও রেশমীর প্রবেশ যেন উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অনেকটা সিনেমার কাহিনি ও থ্রিলারের মিশেলে রেশমীকে আবর্তিত হয়ে ঘটনাগুলো সংঘটিত হতে থাকে।

পুরনো কলকাতার প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাসগুলোতে সেই সময়ের কলকাতার আবহ পাওয়া যায��। এই উপন্যাসটিকে পুরোপুরি ঐতিহাসিক বলার চাইতে সেমি ঐতিহাসিক বলা চলে। রেশমীকে আবর্তিত করে ঘটনাগুলো পাঠককে আনন্দ দেবে। তবে এতটা হালকা গল্��ের দিকে লেখক না গেলেও পারতেন। হ্যাপি রিডিং।
Profile Image for Sadia Rahman.
9 reviews44 followers
June 19, 2019
ড. কেরী সপরিবারে ভারতবর্ষে আসেন খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। রাম বসু তার বেতনভুক্ত কর্মচারী অর্থাৎ মুন্সী হিসেবে নিযুক্ত হলেও চারিত্রিক দৃঢ়তা, বাকপটুতা, পাণ্ডিত্যের অনন্য মিশ্রণে কেরী সাহেবকেও ছাপিয়ে যান। গল্পে একে একে যুক্ত হয় জন স্মিথ, লিজা, কেটি, রোজ এলমার, রেশমী, চণ্ডীদাস, ন্যড়া, মোতি লাল, টুশকি থেকে শুরু করে রাজা রামমোহন রায় পর্যন্ত!

"কেরী সাহেবের মুন্সী" ঐতিহাসিক উপন্যাস ভেবেই পড়তে শুরু করেছিলাম। কাহিনী অবশ্যই ইতিহাস নিভর্র, ১৭৯৩ সালে যার শুরু। কিন্তু এটিকে আদপে রোমান্টিক উপন্যাস বলতে কোনো বাঁধা নেই। ট্রাজিক বললেও কিছুমাত্র ভুল হবে না। এবং ১৯৫৯ সালে প্রথম প্রকাশিত একটা উপন্যাসে এতবার কাহিনীর মোড় ঘুরতে পারে অর্ধেকটা পড়েও আশা করিনি। শেষ একশ পৃষ্ঠা রীতিমত থ্রিলার!
এই জন্যই হয়ত দিন শেষে (উপন্যাস শেষে পড়ুন) কেরী সাহেব বা তার মুন্সী রাম বসুর আগে রেশমীই মনে দাগ কেটে যায়। যাকে দ্রৌপদী বা হেলেন বা সীতার সাথে তুলনা করেও আশ মেটে না সেই স্বামীর চিতা থেকে পালানো রেশমী শেষে মতি রায়ের নাচঘরে নিজের দেওয়া আগুনে নিঃশেষ হয়। ঝলসে রেখে যায় বসুজা, জনের মত অনেকগুলো মন।
রেশমী টুশকিকে বলেছিল আমার কথা সব খুলে বলতে গেলে আস্ত রামায়ণ হয়ে যাবে বোন! উপন্যাসের ভূমিকায় এই রামায়ণের বিন্দুমাত্র আভাস না দিয়ে রাম বসুর পরিচয় বর্ণনা করা। আমি ভূমিকা আগে পড়িনি, বইয়ের শেষ পরিচ্ছেদে গিয়ে বসুজার ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য বুঝতে পেরে চমকে উঠেছি। সেটুকু চমক হিসেবেই থাক!

বেশ ক'বছর আগে প্রমথনাথ বিশীর লালকেল্লা পড়েছিলাম এবং একটুও ভাল লাগেনি। এখন বুঝতে পারছি আমি কাহিনীই বুঝিনি! প্রমথনাথ বিশীর লেখা অনেকখানি গভীর, অন্যরকম সুন্দর!
Profile Image for Mosharaf Hossain.
128 reviews99 followers
August 2, 2017
জীবনের এক অদ্ভুত সময়ে আমার হাতে এসে পড়ে শ্রী প্রমথনাথ বিশীর বই 'কেরী সাহেবের মুন্সী' নামক ঢাউস বই। যতই পড়ছিলাম ততই অনুভব করছিলাম, অভিনয় করে লাভ নাই- আমার কৈশোরের চঞ্চলতা এখনো হারায়নি। স্রেফ ক্ষুধার্ত বালকের মত গিলে ফেললাম পুরো বই।

সময়টা ১৭৯৩ সাল। এদেশের মাটিতে পা রাখেন ডাঃ কেরী নামক এক পাদ্রী, লক্ষ্য তার তৎকালীন ভারতবর্ষে খৃষ্টধর্মের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। আসার কদিনের মাথাই সে সহযোগী হিসেবে পেয়ে যায় এদেশী এক পন্ডিত ব্যক্তিকে নাম ‘বসুজা’। যাকে সে ডাকে 'মুন্সী' নামে। বসুজা একদিকে যেমন তার চাকরী রক্ষার খাতিরে নানা তাল করে যায় আবার অন্যদিকে নিজে খিরিস্তান ধর্ম গ্রহন করা থেকে কৌশলে বিরত থাকে !

ধর্ম প্রচারে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করতে করতে একদিন তাদের নৌকায় এসে হাজির হয় রেশমী নামক এক মেয়ে। উপন্যাসের এই মূল চরিত্রটি পালিয়ে আসে মৃত স্বামীর কারণে আগুনে পুড়ে মরার হাত থেকে বাঁচতে।

ডাঃ কেরী রেশমিকে বাঁচায় নিষ্ঠুর সতীদাহ প্রথার হাত থেকে। শুরু হয় ঘটনার নানা মোড়। অসাধারণ হিউমার আর নাটকীয়তায় ভরপুর পুরো উপন্যাস। মাঝেমধ্যেই আচমকা ঘটণার মোড় নিজের অজান্তেই চোখের পানি এনে দেয়। ওমা একটু পরেই আবার হাসানো শুরু করে।

অসাধারণ প্রতিটা চরিত্র। যাদের রয়েছে প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব একটা গল্প। আর লেখক শক্তিশালী রচনাশৈলীর মাধ্যমে যেন এক্কেবারে পাঠকের মগজ কাঁপিয়ে দিয়ে গেছেন। সে সময়ের সমাজ, ধর্ম, মানুষ, আহ এখনো কত্ত মিল।

বসুজার স্ত্রী যখন নিজের স্বামীর একটু ভালোবাসার পাওয়ার আশায় রীতিমত নিজের শরীরের উপর অত্যাচার শুরু করে, অন্যদিকে শত প্রতিকূলতার মাঝেও ধর্ম প্রচার আর ব্যকরণ সাথে বাইবেলের বাংলা অনুবাদ করতে গিয়ে নিজ সংসারের দুরাবস্থা দেখে আহ মন ছুয়ে যায়।

রেশমী আর জনের প্রেম যে কাউকেই নাড়িয়ে দিয়ে যায়। রেশমীর কারনেই পুরো উপন্যাস এত সহজে গিলে ফেলা যায়। উপন্যাস খানা হাতে নিয়েই মহুর্মুহু মুগ্ধতার চরম শেখরে পৌছে যাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যপার মাত্র ! তবে এধরনের উপন্যাসে একটু যা দরকার তা হলো একবার শুধু বাসটা চলা শুরু করা। এরপর পুরাই সত্যিকারের সিটিং সার্ভিস। শাঁই শাঁই করে চলে যায়।

আমার কাছে নারী চরিত্রের নতুন সংজ্ঞা রেশমী। প্রেমে পড়ে গিয়েছি মেয়েটার। মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সে বলে, "মানুষ মূলত ভালও নয়, মন্দও নয়, মূলত মানুষ বিচিত্র, অদ্ভুতভাবে অপ্রত্যাশিত তার প্রকৃতি।" এরপরেও এই মেয়েকে ভালো না বেসে উপায় আছে?

অসাধারণ পাঠ্য আর ঘুরে আসলাম সেই ব্রিটিশ ভারত থেকে।
Profile Image for Ivey Rashid.
42 reviews29 followers
February 3, 2017
সবই ভালো, সহমরণ প্রথা প্রসঙ্গে হয়তো রেশমীকে কাহিনীতে আনা দরকার ছিল, কিন্তু চুইংগামের মত তার ঘটনা না টানলেও চলত, ঐ অংশটা খুবই বিরক্তিকর।
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,740 reviews355 followers
July 13, 2025
প্রমথনাথ বিশীর 'কেরী সাহেবের মুন্সী' নিছক একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়। এটি বাংলা গদ্যের সূচনাকাল, উপনিবেশিক আধুনিকতার টালমাটাল শৈশব, খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারের নেপথ্য কূটনীতি, এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে একজন বাঙালি 'মুন্সী'-র আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম—এইসব কিছুর এক গভীর, বহুস্তরীয় প্রতিচিত্র।

১৭৯৩ থেকে ১৮১৩ সালের কলকাতা এখানে শুধু এক নাট্যপট নয়, বরং এক পূর্ণাঙ্গ চরিত্র—যার অলিগলি, ঘাট, অট্টালিকা, এমনকি বাতাসও যেন জমে ওঠে ইতিহাসের ঘনত্বে।

উপন্যাসের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র—উইলিয়াম কেরী ও রামরাম বসু। একজন খ্রিস্টান মিশনারি, যিনি ধর্মপ্রচারে আসেন অথচ পরিণত হন বাংলা ভাষার এক নিঃশব্দ কারিগরে। অন্যজন ভারতীয় দোভাষী, যিনি সাহেব মনিবের চোখে প্রিয়তম হয়েও, নিজের ধর্ম ও আত্মমর্যাদা ধরে রাখেন অসাধারণ কৌশলে।

কেরী সাহেবের আগমন, তাঁর বাংলা ভাষা শেখার আগ্রহ, 'গসপেল মেসেঞ্জার'-এর বাংলা সংস্করণ 'হরকরা', এবং শ্রীরামপুর মিশনের প্রতিষ্ঠার পেছনে রামরামের অগ্রণী ভূমিকা এক ঐতিহাসিক সত্য, যাকে বিশী সাহেব রূপ দেন সাহিত্যের প্রাণস্পন্দনে।

রামরাম বসু বাংলা গদ্যের ইতিহাসে এক অনন্য চরিত্র। তাঁর লেখা 'রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত' (১৮০১) কে ধরা হয় আধুনিক বাংলা গদ্যের সূচনা বিন্দু। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে তাঁর সহকারী মুনশি হিসেবে নিয়োগ, 'লিপিমালা'র মতো ব্যবহারিক চিঠিপত্রভিত্তিক বাংলা লেখালেখির সূচনা, এমনকি খ্রিস্টীয় সংগীত রচনার কৌশল—সবই তাঁকে তুলে ধরে একজন 'পেশাদার মনীষী'র প্রতীক হিসেবে। তিনি সাহেবের মন জয় করলেও নিজের ধর্ম রক্ষা করেন, "কে আর তরিতে পারে/ লর্ড জিজছ ক্রাইস্ট বিনা গো"—এই গানের লেখক হয়েও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেননি। তাঁর কৌশল ছিল জটিল নয়, বরং প্রাজ্ঞ।

সাহেবদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হলেও রামরাম বসুর আত্মসম্মানের অভাব ছিল না, এ কথা কেরী সাহেব নিজেই লিখে গেছেন। এমনিতে 'সরল' ও 'মধুর' প্রকৃতির মানুষ হলেও, কেউ দুর্ব্যবহার করলে তিনি তা মেনে নিতেন না। কেরীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও একরঙা ছিল না।

তাঁর সহায়তায় ভরসা করেই বাইবেলের বাংলা অনুবাদে হাত দিয়েছিলেন ���েরী।

আবার, এক বিধবা মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার অভিযোগে এক সময় রামরামের উপর বিরক্ত হয়ে তাঁকে মুনশির কাজ থেকে বরখাস্তও করেছিলেন তিনি। এই সম্ভাবনার আলোতেই বোধহয় প্রমথনাথ তাঁর উপন্যাসে 'টুশকি' চরিত্রটির পরিকল্পনা করেছিলেন। সংসারে অশান্তির জ্বালায় বিরক্ত বসুজা টুশকির কাছে মানসিক শান্তি খোঁজেন, তার ঘরে বসেই লেখালেখি করেন।

নারীচরিত্র নির্মাণে প্রমথনাথ বিশী ছিলেন অ���বদ্য। রেশমী, যিনি সতীদাহ থেকে পালিয়ে এসে কেরীর আশ্রয়ে আত্মমর্যাদা খুঁজে পান—তিনি শুধুমাত্র একজন পালানো নারী নন, বরং এক প্রতিবাদী অস্তিত্ব। টুশকি, টমাস স্মিথের স্ত্রীর ঘরের শান্তি না-পেয়ে যে মানসিক প্রশ্রয় দেয় বসুজাকে, তিনিও এক layered চরিত্র। অন্নদা—ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের শরীর-মনকে যন্ত্রণার মধ্যে ফেলতেও দ্বিধা করেন না। প্রতিটি নারী চরিত্র এই উপন্যাসে এক একখানি প্রতীক, যা ঐতিহাসিক সময়ের বাঁকে দাঁড়িয়ে আধুনিকতার চোরাস্রোতকে ছুঁয়ে যায়।

'কেরী সাহেবের মুন্সী' পড়তে পড়তে মনে হয়, কেউ যেন আপনাকে এক হাতে কলকাতার প্রাচীন মানচিত্র ধরিয়ে দেন, আর অন্য হাতে রামরাম বসুর অন্তর্দ্বন্দ্ব। এই উপন্যাস একাধারে ইতিহাস, আত্মপরিচয়ের খোঁজ, নারীমুক্তি, গদ্যভাষার উৎসসন্ধান এবং ধর্মীয় সহাবস্থানের দলিল। এটি এক ঐতিহাসিক উপন্যাসেরও বেশি—এটি সাহিত্যে সঙ্গীতময় ইতিহাসের প্রতিফলন।

উপন্যাসে উঠে এসেছে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, শ্রীরামপুর মিশন, রাইটার্স বিল্ডিং, পার্ক স্ট্রিটের পুরনো নাম, সতীদাহ প্রথার প্রাক-সংস্কার ইতিহাস—সবকিছুকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন পাঠক অনায়াসে ঢুকে পড়েন ১৮ শতকের শেষ এবং ১৯ শতকের গোড়ার কলকাতার রাজনীতি, সমাজনীতি ও চিন্তাজগতে। এমনকি উপন্যাসের পটভূমিতে দ্বারকানাথ ঠাকুরের বয়স সামান্য বাড়িয়ে দিয়ে বিশী রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক ছায়াকেও আনেন কাহিনিতে।

বিশীর ভাষা নিপুণ, অথচ আত্মম্ভরী নয়। তিনি নিজেই বলেন: "ইতিহাসের সত্য অবিচল, তাকে বিকৃত করা চলে না। ইতিহাসের সম্ভাবনায় কিছু স্বাধীনতা আছে লেখকের।" এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই গড়ে ওঠে এক উপন্যাস, যা ইতিহাসকে না চাটে, না চেতনাবর্জিত করে তোলে।

তিনি জানতেন—“কলকাতা শহরের প্রাচীন অংশের প্রত্যেক পথঘাট, অট্টালিকা, উদ্যান, প্রত্যেক ইষ্টকখণ্ড বিচিত্ৰ কাহিনীরসে অভিষিক্ত।” কেরী সাহেবের মুন্সী সেই কাহিনীরসে ভিজে থাকা এক মহাগ্রন্থ।

এটি সেই ধরনের বই, যা পড়ার পরও রেশ থেকে যায় বহুদিন। এটি সেই ধরনের চরিত্র, যাঁরা প্রচারের আলোর বাইরে থেকে, ইতিহাসকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। যারা সাহিত্যে স্থান না পেলেও, সময় তাদের বয়ে বেড়ায় মনের ভিতর।

যারা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে যায়: “কে লিখল প্রথম আধুনিক বাংলা বাক্যটি?” আর সেই প্রশ্নের উত্তর যেন নীরবে বলে ওঠে—“হয়তো কেরী নন, যিনি চুপ করে তার পাশে হেঁটেছিলেন, সেই রামরাম বসু।”

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
December 9, 2021
নামে আর কাজে মিল কম! রেশমীর কাহিনীই বই জুড়ে। রেশমী চরিত্রখানাও তেমন আহামরি কোন চরিত্র নয়৷ বিরক্তিই লেগেছে বেশি। অযথা ন্যাকামি আর খামখেয়ালীর মিশ্রণ ছাড়া কিছুই লাগল না৷
ইতিহাসের মিশেলটুকুই যা উপভোগ্য। কিছুটা মেলোড্রামাটিক লাগলেও সুখপাঠ্য৷
Profile Image for Ashkin Ayub.
464 reviews228 followers
November 3, 2021



ভারতবর্ষে কলোনিয়াল শাসনব্যবস্থা দীর্ঘায়ু করার পেছনে শাসকবর্গের হেজিমনি মনোভাব বেশ উল্লেখযোগ্য। ফরাসি চিন্তাবিদ লুই আলথুসার আলোচনাকালে তাঁর বিভিন্ন লেখায় রেজিমের দুই ধরনের শোষণ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। একটি হচ্ছে নিপীড়নমূলক শাসন এবং অন্যটি হচ্ছে মতাদর্শিক শাসন প্রক্রিয়া অর্থাৎ বাদামী বর্ণের 'নেটিভ' এর ধর্ম-আচার-অনুশাসনকে আঘাত করো। তৎকালীন সময়ের যে শাসনব্যবস্থা এবং তার মতাদর্শ খুব সুচারুভাবে এমন এক উপরিকাঠামো বা পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে, যাতে সেই মতাদর্শের অনুকূলে থাকতে চাওয়া কিছু কাঙ্ক্ষিত মানুষ তৈরি হয়। একদল মানুষের চেতনার স্তরে ক্রমে ক্রমে কোনও এক মতাদর্শের অনুকূলে থাকার যে ব্যবস্থা প্রোথিত হয়ে যায় সেটাকেই বলা হয় সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ববাদ বা চিন্তার আধিপত্যবাদ বা কালচারাল হেজিমনি।

আমাদের এই বইয়ের দুই প্রধান চরিত্র - পাদ্রী উইলিয়াম কেরী এবং তার মুন্সী রামরাম বসু। এই উপন্যাসের শুরু পাদ্রী উইলিয়াম কেরীর চাঁদপাল ঘাটে নামার মূহুর্তে, সময় ১৭৯৩ সালের ১১ই নভেম্বর। এইখান থেকে, যা চলেছে পরবর্তী কুড়ি বছর ধরে, ১৮১৩ সাল অবধি। উপন্যাসটি মূলত ঐতিহাসিক পটভূমির উপর ও ঐতিহাসিক চরিত্রদের কেন্দ্র সৃষ্টি হলেও এখানে মোটাদাগে কোনো ইতিহাস বা ঐতিহাসিক চরিত্রের কোনো নতুন ইতিহাস পাওয়া যাবেনা।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের দিকে তাকালে আক্ষরিক অর্থে কেরী, রামরাম বসু বেশ গুরুত্বপূর্ণ বটে। শ্রীরামপুরের মিশনারি প্রেস, প্রথম গদ্য বই, খ্রিস্টের মহিমা রচনা, ফোরট উইলিয়াম কলেজ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই উপন্যাসের শিরোনাম ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ হলে এই দুই চরিত্রে তেমন একটা যথার্থ মর্যাদা হয়নি বললেই চলে। বলা যায়, এই আসল কেরী সাহেব বা মুন্সীর সাথে কিতাবের চরিত্রের বিস্তর তফাৎ রয়েছে।

অস্বীকার করবো না, কাহিনীর শুরুর দিকটা আমার বেশ লেগেছে, ঠিক রেশমী আসার আগ পর্যন্ত। রেশমী আর রেশমী, না রইলো কেরী সাহেব, না রইল মুন্সী।। গল্পের স্বার্থে রেশমী একটি কাল্পনিক চরিত্র কিন্তু এইভাবে জি-বাংলা সিরিয়ালের স্টাইলে ত্রিভুজের নকশা করার কতোটা যুক্তিপূর্ণ ছিলো, সেটা অন্যান্য পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম। অবশ্য শেষের দিকে এসে লাগাম ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন লেখক। কিন্তু খুব একটা সফল হননি বলা যায়।
Profile Image for Abdul Ahad.
58 reviews4 followers
October 21, 2023
আপনার কাছে ভালো বই মানে যদি হয় ঝরঝরে আরামদায়ক গদ্য, সুন্দর সাজানো গোছানো পরিপাটি একটা গল্প, একের পর এক পাতা উলটানোর নেশা— তাহলে নিঃসন্দেহে এটা শুধু একটা ভালো বই না, চমৎকার বইও বটে। এই বইটা পড়া চলাকালীন আপনার বিরক্তি ধরাবে না, বরং একটানা পড়ে যাবার পর হুট করে বইটা যখন শেষ হয়ে যাবে তখন আপনার মনে হবে, 'এই সাইজের কোনো বই হয়তো এত কম সময়ে এর আগে কখনো আপনি শেষ করেননি।'
বইটার প্রচ্ছদ সুন্দর, ঘি রঙা পৃষ্ঠাগুলো পুরু; গদ্যভাষা ঝকঝকে-তকতকে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গতিশীল। গল্পের মধ্যে কাহিনির মারপ্যাঁচ লাগিয়ে, মাঝে মধ্যে সূক্ষ্ম হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে প্রমথনাথ বিশী উপন্যাসটা এগিয়ে নিয়েছেন দারুণভবে। একে তো ঝরঝরে লেখা এবং কাহিনির বুননের শৈল্পিক দক্ষতা আর তারসাথে প্রত্যেক খণ্ড ছোটো ছোটো পরিচ্ছেদে ভাগ করার কারণে পড়ার গতি বেশ দ্রুত বেগে এগোতে থাকে।

সে হিশেবে এই বইটি বেশ ভালো বই। ঝরঝরে সুন্দর কাহিনি, বর্ণনা এবং লিখনশৈলী।

উপন্যাসের শুরু ১৭৯৩ সালে চাঁদপাল ঘাটে উইলিয়াম কেরী ও তাঁর পরিবারের আগমনের মধ্যদিয়ে। আর উপন্যাসের শেষ ১৮১৩ সালের ৭ অগাস্ট রামরাম বসুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এখন আসা যাক মূল কথায়। লেখক বলেছেন, রামরাম বসুর জীবনীকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস লেখার ইচ্ছে যখন হলো, তখন রামরাম বসুর সাথে কেরীর সংযোগ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন৷ এই নিয়ে বিস্তর ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে লেখতে বসেছিলেন উপন্যাস৷ যদিও আমার কাছে উপন্যাসটা আহমরি কিছু মনে হয়নি। উপন্যাসটি মূলত ঐতিহাসিক পটভূমির উপর ও ঐতিহাসিক চরিত্রদের কেন্দ্র করে সৃষ্টি হলেও এখানে মোটাদাগে কোনো ইতিহাস বা ঐতিহাসিক চরিত্রের নতুন কোনো ইতিহাস পাওয়া যাবে না। মোটাদাগে সেই সময়ের কোনো চিত্রও বেশ চোখে ধরা পড়বে না। বরং রামরাম বসু��� জীবনী কেন্দ্র করে এই উপন্যাস লেখা হলেও ঔপন্যাসিক এখানে রামরাম বসুকে নিয়ে লেখতে বসেননি; লেখকের যথেষ্ট কল্পনা বিস্তারের সু্যোগ থাকলেও, অতিবিস্তারের কারণে রেশমীর পাল্লায় পড়ে উপন্যাসটা শেষ অব্দি আর আলাদা করে 'নতুন কোনো কিছু' হয়ে ওঠেনি।

উপন্যাসের প্রথম খণ্ডে গল্পটা গড়ে উঠতে উঠতেই শেষ হয়ে যায়; উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডে আসেন চিতার আগুন থেকে পালানো রূপকথার রাজ্যের পরীর মতো সুন্দরী নায়িকা। যিনি রেশমী নামে পরিচিত হন এবং পরবর্তীতে আমাদের উপন্যাসের বড় ট্রাজেডির কারণ (ব্যাপারখানা আমার কাছে হাস্যকর লেগেছে) হয়ে দাঁড়ান। উপন্যাস তাও যাচ্ছিল বেশ। তৃতীয় খণ্ডেও গল্পের রেশে শেষ করে ফেলা যায়। কিন্তু— চতুর্থ খণ্ডে এসে লেখক যে দক্ষতার সাথে বাংলা সিনেমার রোমান্টিক আর ট্রাজেডি ভরা করুণরসে পরিপূর্ণ সিনেমাটি ক্যামরা না দিয়ে কলমদ্বারা ফুটিয়ে তুললেন তা নিঃসন্দেহে ৬০ বছর পূর্বে একটা বিরল ঘটনার স্বাক্ষর রাখলেও, এই সময়ের মাত্রায় দাঁডিয়ে তার মূল্যমান একেবারে শূণ্য ।

উপন্যাসটা শেষ করার পর মনে হলো, রামরাম বসু এবং পারিপার্শ্বিক চরিত্র ফটকা, আর রেশমীই হয়ে উঠেছে মূখ্য। রেশমী, রেশমী, আর রেশমী— উপন্যাসটা রেশমীতে রেশমীময়ী হয়ে উঠল।
প্রমথনাথ বিশী, রেশমীকে কেন্দ্র করে কাহিনি চুইঙ্গামের মতো টেনে লম্বা না করে; আরো প্রচুর উপাদান মজুদ ছিল উপন্যাসটিতে, যেগুলো দিকে নজর দিলে একটা অনবদ্য উপন্যাস লেখতে পারতেন তিনি। লেখক ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা ও চরিত্রের উপর ভর করে মূলত রেশমীর জীবনী লিখেছেন। আর তা বেশ আরামদায়ক ভাবে পঠনীয় এবং সিনেমাটিক হলেও উপভোগ্য।

উপন্যাসের কিছু কথা খুব ভালো লেগেছে, সেগুলো উল্লেখ করা যেতে পারেঃ

''যৌবনে হাসির ঢেউ অকারণে আসে, অযাচিতভাবে আসে, বার্ধক্যে এক-আধটা ঢেউ এরও দেখা মেলে না কেন? যৌবন বহুমুখী, বার্ধক্য অর্ন্তমুখী— তাই কি?''

''জীবে আছে পৃথিবীর প্রাণ; জাদুতে স্বর্গের আভাস; জীবে রূপ, জাদুতে সৌন্দর্য ; রূপ রক্তমাংসের সৃষ্টি, সৌন্দর্য কল্পনার।"

"শান্তিকামী লোক দুই পক্ষের লাঠির লক্ষ্য।"

"কামের মধ্যে প্রেম না থাকতে পারে, কিন্তু প্রেমে কাম থাকবেই। হয়তো অগোচরে থাকে, কিন্তু না থেকে যায় না।"

"যে দেশে ধর্মের কল নাড়াবার ভার বাতাসের উপর অর্পণ করে নিশ্চিন্ত থাকে, সে দেশে দুঃখের অন্ত থাকে না।"

"বন্দুকের গুলি আর গিন্নির বচন দুই ই মর্মভেদী।"

"প্রেম যদি অন্ধ হয়, ভক্তি অবুঝ।"

"চতুর মানুষের বিপদ এই যে, একবার বোকা প্রতিপন্ন হয়ে গেলে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারে না।"
Profile Image for Tanusree Das.
33 reviews2 followers
March 22, 2016
A near perfct combination of all shades of literature..comedy,tragedy almost at its best..শুধু ঐই রেশমী কান্ড তথা অধ্যায়টি বড় বেশী একঘেয়ে ও বিরক্তিকর !
Profile Image for Susmita Basak.
93 reviews13 followers
September 23, 2024
১৭৯৩ থেকে ১৮১৩ সালের ঘটনাপ্রবাহ বয়ে চলেছে এই উপন্যাসে। ফুটে উঠেছে সেই সময়ের শহর কলকাতার রূপ। আর ঠিক এই সময়তে দাঁড়িয়েই কলকাতায় পৌঁছান সপরিবারে কেরী সাহেব, অর্থাৎ উইলিয়াম কেরী। এই উইলিয়াম কেরীকেই বাংলা গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক বলা যেতে পারে।

কেরী কলকাতায় আসেন খ্রীষ্ট ধর্মকে হিন্দুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আর এখানে এসে তাঁর পরিচয় ঘটে রামরাম বসু বা রাম বসুর সাথে, যিনি বাংলা গদ্য সাহিত্যের আদি লেখকদের একজন ছিলেন। মাত্র কুড়ি টাকা মাইনায় রাম বসু, কেরী সাহেবের মুন্সী পদ গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় এক নতুন কাহিনীর রচনা। যেই উইলিয়াম কেরী কলকাতায় আসেনই খ্রীষ্ট ধর্মকে প্রচার করার জন্য, অথচ এখানে এসে বাংলা ভাষার প্রতি টান, তাঁকে অন্য মানুষে পরিণত করে। অবশ্য শুধু কেরী সাহেব নন, রাম বসুরও জীবন বয়ে চলে এক অন্য ধারায়। আর সেই ধারায় তাঁর সাথে বয়ে চলে রেশমী, টুশকি, টমাস, জনের মতো মানুষেরাও।

উইলিয়াম কেরীর শ্যালিকা কেটির প্রেমে মজে ওঠে জন। কিন্তু তার প্রাণ ভ্রোমরাকে ছিনিয়ে নেয় দুবোয়া নামের এক ফরাসি যুবক। এরপর শুরু হয় দুজনের মধ্যে ডুয়েল। তৎকালীন ইংরেজ সমাজে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে মীমাংসা না হলে তারা ডুয়েলে অবতীর্ণ হতো। ইংরেজ সমাজে বেশ প্রচলিত ছিল এটি। তাই কেটিকে নিয়ে যখন জন ও দুবোয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তখন তারাও বিষয়টির মীমাংসা করতে ডুয়েলে অবতীর্ণ হয়। শেষে কী সমাধান হয়েছিল এর?

এবার আসি রেশমীর কথায়, যার কথা না বললে আলোচনাই অসমাপ্ত থেকে যাবে। এ এক অসম্ভব সাহসী নারী চরিত্র। বৃদ্ধ মৃত স্বামীর সাথে সহমরণে না গিয়ে, চিতা থেকে পালিয়ে আসার মতো সাহস, সে যুগে খুব কম মেয়েদেরই ছিল। রেশমী সেই সাহসিকতার পরিচয় দেখাতে পেরেছিল। চিতা থেকে পালিয়ে সে উঠে যায় উইলিয়াম কেরীর নৌকায়। তাঁর আশ্রয়েই চলতে থাকে রেশমীর শিক্ষাদান। কিন্তু এদিকে খবর রটে যায় যে ইংরেজরা হিন্দুদের প্রথাকে অবমাননা করে সতী নারীকে হরণ করে নিয়েছে। ফলে আবার পালানো। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ সে পালাবে? কতক্ষণই বা খেলবে লুকোচুরি খেলা?
অন্যদিকে এই লুকোচুরি খেলতে খেলতেই তার জীবনে দেখা দেয় একফালি প্রেমের ছায়া। কিন্তু নিয়তি যে তার জন্য এক অন্য পরিণতি লিখে রেখেছে। পরতে কি পারে সে শেষ অবধি প্রেমের মালা, নাকি বিজয়ের কন্টক মিশ্রিত হারই জোটে তার কপালে? ভীষণ ছুঁয়ে যায় এই নারী চরিত্রটি।

রেশমীর মতো আরেক মন ছুঁয়ে যাওয়া নারী চরিত্র হলো অন্নদা। শুধুমাত্র স্বামীর একটু ভালোবাসা পাওয়ার আশায় সে দিনের পর দিন নিজের শরীরের উপর অত্যাচার চালাতে থাকে। হায় রে নারী, এক ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সত্যিই কতো দূরই না সে যেতে পারে! কিন্তু ভালোবাসা কি আর মেলে?

উপন্যাসে উঠে এসেছে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণ সহ রাইটার্স বিল্ডিংয়ের নামকরণের ইতিহাস, সতীদাহ প্রথা রদ হওয়ার পূর্বেকার ইতিহাস, রামমোহনের সতীদাহ নিয়ে কাজ করার পূর্বের ইতিহাস। সাথে জানা যায় পার্ক স্ট্রিট সহ কলকাতার বিভিন্ন এলাকার পুরাতন নামকরণের ইতিহাস। ঐতিহাসিক কাহিনীর প্রেক্ষাপটে রচিত এটি এক অনন্য সামাজিক উপন্যাস। সপ্তদশ- অস্টাদশ শতাব্দীর কলকাতার বিভিন্ন ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে গদ্যকারে লেখা বাংলা সাহিত্যের এই বই এক অনন্য সম্পদ।

মোট পাঁচটি খন্ড রয়েছে বইতে। কলকাতার রাস্তাঘাট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হওয়ায়, প্রথমদিকে একটু হোঁচট খেলেও, কাহিনীর সাবলীলতায় তা গড়গড় করে পড়ে, চরম মুগ্ধতায় পৌঁছে গেলাম এক সময়ে। শেষ করার পরও যেন এর রেশ কাটছে না। সর্বক্ষণ মাথায় ঘুরে চলেছে চরিত্রগুলো। পুরুষ চরিত্রগুলো ভালো লেগেছে, তবে নারী চরিত্রগুলো মনে দা গ কেটে গেলো। নাহ্, এর রেশ সত্যিই সহজে কাটবে না। আসলে কিছু কিছু বই এমনই থাকে, যা পড়ার পরও, রেশ থেকে যায় বহুদিন, এই বইও ঠিক তাই।

সবশেষে, পাঠকেরা একবার পড়ে দেখতে পারেন বইটি। আশা করি ভালো লাগবে। পাঠে থাকুন।
Profile Image for Nahida Parvin.
15 reviews
January 7, 2022
গল্পের অন্যতম চরিত্র রামরাম বসু বাংলা সাহিত্যের আদি লেখকদের একজন। তার রচিত "রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত" নাকি বাংলা সাহিত্যের প্রথম গদ্যগ্রন্থ ও ছাপাখানায় মুদ্রিত বই। তবে উপন্যাসে রামরাম বসু ��রফে বসুজা কে উপস্থাপন করা হয়েছে তৎকালীন আর দশটা শিক্ষিত হিন্দুর মতই। ক্লাইভের জয় ও সিরাজউদ্দৌলার হারের পর ইংরেজ বসতি একরকম পাকাপাকি ভাবেই কলকাতায় স্থায়ী হয়। বাংলা বিজয়ের পর ইংরেজ লাটদের প্রধান চিন্তা কি কিরে ভারতবর্ষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু লোকগুলোকে খ্রিস্টান বানানো যায়। জেসাসের খোয়াড়ে মেষ ঢোকানোর জন্য তাই দরকার পড়ে রাম বসুর মত লোকদের। যারা বাবুদের কথাটি সুন্দরভাবে তরজমা করে নেংটি পরা বাঙালিদের শোনাবে। তবে বসুজা তার ধারেকাছেও নেই। কেরী সাহেব পাদ্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কলকাতায় আসার পর বসুজা তার পিছে লেগে ছিল বেশ কিছুকাল। এর মধ্য দিয়ে আগমন ঘটে জন স্মিথ, টমাস, মিসেস কেরী, কেটি প্ল্যাকেট, লিজা স্মিথ, রেশমী, টুশকি, চন্ডী বক্সী সহ আরো অনেকের। এমন কি শেষ অধ্যায়ে রামমোহন রায় ও ছিলেন, তবে খানিকক্ষণের জন্য।
উপন্যাসের এক বিরাট অংশ জুড়ে ছিল রেশমী আর জনের প্রেম কাহিনী। রেশমী সহমরণের চিতা থেকে পালানো এক বিধবা। ভাগ্যের ফেরে রেশমী পড়ে বসুজার হাতে, এরপর সে চলে যায় রোজ এলমারের মেইড অব অনার হয়ে। সেখানে পরিচয় হয় জনের সাথে। তবে প্রেমভাবের সূচনা হয় আরো পরে।
এবার আসি পাঠ প্রতিক্রিয়ায়। সত্যি বলতে পুরনো দিনের সমাজের চালচিত্র কে ফুটিয়ে তোলে এমন যেকোনো বইই আমার প্রিয়। সে হিসেবে "কেরী সাহেবের মুন্সী" ও ভাল লেগেছে। তবে যখনই ওই রেশমী চরিত্রের কাহিনী এসেছে (যেটা উপন্যাসের প্রায় বৃহৎ অংশ জুড়ে ছিল), বিরক্ত লেগেছে। বসুজা, জন দুজনই রেশমীর প্রেমে মশগুল। এদিকে রেশমীকে আমার কাছে প্রগলভা, চপলা নারী ছাড়া আর কিছু মনে হয় নি যার প্রেমে পড়া যায়। এদিকে শ্বেতাঙ্গ একজন বাবু ভারতীয় নারীর জন্য যুদ্ধ পর্যন্ত করছেন এটা কল্পনা করতে খুব কষ্ট হয়েছে, তৎকালীন ইংরেজ শাসন সম্পর্কে কিছু কিছু জানি কিনা তাই। তবে বলতে হবে, জন স্মিথ প্রেমিক পুরুষ বটে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
8 reviews1 follower
May 4, 2022

লেখকঃ প্রমথনাথ বিশী (১৯০১-১৯৮৫)
বইঃ কেরী সাহেবের মুন্সী (বইটি লেখা হয় ১৯৪৫ সালে)
ভৌগলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রেক্ষাপটঃ এই বইটির সময়কাল ১৭৫৭ থেকে ১৮১৩ - ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজুদ্দৌলা পলাসির প্রান্তরে পরিজিত এবং মৃত। কলকাতায় তখন কোম্পানির শাসন শুরু হয়েছে। তবে পুরো ভারত তখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে আসেনি। ভারত দখল করতে ব্রিটিশদের রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে যুদ্ধ করতে হয়। মিশনারি উইলিয়াম কেরী আর তাঁর মুন্সী (দেশীয় সহযোগী) রামরাম বসু - এই দুজন ঐতিহাসিক বাস্তব চরিত্র এবং তাদের ঘিরে কিছু কাল্পনিক চরিত্রের সম্বনয়ে ১৮৯০ দশকের কোলকাতা ও আশপাশের গ্রামের সামাজিক জীবন তুলে ধরা হয়েছে। একদিকে অভিবাসী ব্রিটিশদের গড়ে তুলেছে কয়েক স্তরের এলিট ক্লাস আর দেশী বাবুদের চলছে বাবু কালচার। তখনও চলছে সতীদাহ প্রথা। সেসময় একটি মেয়ে যদি পুরুষ অভিবাবকহীন হয়ে পরে এবং সে সামাজিকভাবে দুর্বলও তখন তার সামনে দুটো পথ খোলা থাকেঃ গৃহকর্মী কাজ নয়তো কোন বাবুর রক্ষিতা। রামরাম বসু কেরী সাহেবের সাথে কাজ করলেও নিজের ধর্ম বজায় রেখেছিলেন। ধর্মের ব্যাপারে এই বাংলা অঞ্চলের মানুষ খুব রক্ষণশীল ছিল - তাই সহজেই কেরী সাহেব তাঁর মিশনারি কাজে সফল করতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় উনি বাংলা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করতে শুরু করেন। এটি করতে গিয়ে প্রথমেই উনি বাংলা ভাষায় গদ্য রচনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যকরণ রীতির বই রচনা করেন। পরবর্তীতে স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা আর বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা এবং বিজ্ঞান অনুবাদের পেছনে উনার অনেক অবদান আছে। আগেকার সমাজ ব্যবস্থা একদমই নারীবান্ধব ছিল না। রেশমী আর টুসকি - এ দুজনের মাধ্যমে লেখক নারীদের নিরাপত্তাহীন জীবন চিত্রায়ন করেছেন।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো ভারতবর্ষ সেসময় অনেক উন্নত ছিল। ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ভারতবর্ষ আর ব্রিটেনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য ছিল না। কিন্তু এ ব্রিটিশরাই পরে এ ভারত উপমহাদের শাসন করে ২০০ বছর ধরে।
Profile Image for Rupayan Dhruba.
13 reviews5 followers
March 25, 2024
জাত লেখকের পরিচয় পাওয়া যায় তার লেখনির দক্ষতায়। এ যুগের বেশিরভাগ লেখকের লেখায় যা অনেকাংশেই বিরল। যুগের প্রতিভূ লেখককূল যে লেখনিতে ভাষার উৎকর্ষতা আনার প্রচেষ্টা চালান না ঠিক তেমনটা নয়। তাদের লেখনির 'জুড়ে দেয়া উৎকর্ষতা' অনেকটা চাপিয়ে দেয়ার মত শোনায় যা ব্যাকরণিক পারংগমতা(*) প্রদর্শণ করলেও হৃদয় স্পর্শ করে না। এখানেই ' প্রমথনাথ বিশী' অনন্য। অষ্টাদশ শতকের পটভূমিতে রামরাম বসু ও উইলিয়াম কেরিকে কেন্দ্র করে ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস হলেও বইটি ইতিহাসের রসকষহীন পাঠ্যপুস্তকে পরিণত হয় না। ঘটনার পরম্পরতা পাঠককে একবারো বই থেকে মনোযোগ হারাতে দেয় নি। আরেকজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। 'রেশমি' যাকে উপন্যাসের নায়িকা বলা চলে। তার জীবনের ব্যক্তিগত টানাপোড়েন উপন্যাসে যে গতিশীলতা দিয়েছে তা তৎকালীন সমাজ বাস্তবতার দিকেই নির্দেশ করে। সার্বিকভাবে বলা যায়, রবীন্দ্রত্তোর ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজস্বতায় কৃতকার্য অসাধারণ একজন উপন্যাসিক ' প্রমথনাথ বিশী।'
Profile Image for Fahad Ahammed.
386 reviews44 followers
January 19, 2021
শ্রী প্রমথনাথ বিশী'র রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত ঐতিহাসিক উপন্যাস "কেরী সাহেবের মুন্সী"। সাইজের বিচারে বিশাল আকারের বই, ব্রিটিশ ভারতে উইলিয়াম কেরী ও তাঁর পরিবারের আগমন, ধর্ম প্রচারের চেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উপন্যাস।

১৮১৩ সালের ৭ আগস্ট রামরাম বসু (মুন্সী) র মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ১৭৯৩ সালে চাঁদপাল ঘাটে উইলিয়াম কেরীর আগমনের মাধ্যমে শুরু হওয়া উপন্যাসটির পরিসমাপ্তি ঘটে।

উপন্যাসের দ্বিতীয় খন্ডে চিতার আগুন থেকে পালানো সুন্দরী নারীর আর্বিভাব পরবর্তী তে উপন্যাসটিকে ট্রাজেডি'র রূপ দেয়।

ধর্ম, দেশ, শাসন, সমাজ আর নারীর দূর্দশা চিত্রায়িত করে এগিয়ে চলা গল্পে মুন্সীর মুখে শুনা কথা গুলো ফিলোসোফিক, হাস্য রসাত্ত্বক এবং সত্য বচন। সম্পূর্ণ গল্প টা যেমনই হোক এর বর্ণনা ও ভাষা শৈলী মুগ্ধ করবেই করবে।
Profile Image for Sweta Bose.
84 reviews3 followers
March 22, 2021
এখন অনেকদিন আর অন্য কোনো বই পড়তে পারবো না।
Profile Image for Shom Biswas.
Author 1 book49 followers
Want to read
June 2, 2021
শুরু করেছিলাম, দারুন ভালো। কিন্তু শেষ করার মেজাজ ছিল না।
সময় করে পরে শেষ করবো।
Profile Image for Gain Manik.
335 reviews4 followers
July 15, 2024
রামরাম বসু সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম বা ঐ সময়কার অ���স্থা জানতে পারলাম। এই জন্যই এ ব‌ই আমার কাছে অমূল্য
Profile Image for Mohammad Tanviruzzaman.
21 reviews1 follower
August 19, 2025
first ~100 pages are excruciatingly boring, almost gave up then the story started... It is like prequel to Sunil's Sei Somoy.
Profile Image for Kamrul Hossain Shuvo.
15 reviews26 followers
August 3, 2020
বাংলা সাহিত্যে কেরী সাহেবের মুন্সী অন্যতম স্থান দখল করে আছে রামরাম বসু জন্য। সবাই জানে উইলিয়ান কেরী মুন্সী রামরাম বসুকে নিয়েই এই ঐতিহাসিক উপন্যাস। একে শুধু রামরাম বসুর গল্প বললে লেখকের প্রতি অবিচার করা হয়। লেখক নিজের স্বীকার করেছেন ইতিহাসে পাতা ঠিক রেখে নিজের মাধুরীও মিশিয়ে দিয়েছেন। রেশমী, টুশকি, জন স্মিথ আর লিজাকে কোনভাবেই এখানে বাদ দেয়ার উপায় নেই। উপরন্তু রেশমীর কাহিনির মাধ্যমে উপন্যাস যে ক্লাইমেক্সে পৌঁছায় তা চুম্বকের মত টেনে ধরবে পাঠককে। এটি শ্রীপ্রমথনাথ বিশীর লেখনির ধার! চমৎকার ভাবে তিনি ইতিহাসে পাতায় রোমান্স নিয়ে এসেছেন। তাছাড়া বাংলা ভাষার আধুনিক যুগের সূচনকালে কেরী তথা ইংরেজদের অবদান বা সেই প্রয়াসের পেছেন বড়লাটের উদ্দেশ্যগুলো ফুটে উথেছে। বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য সে��� জানাটা বাহুল্য তো নয়ই বরং অবশ্য বলে মনে হয়। খ্রিস্টধর্মে রুপান্তর আর সতীহাদ প্রথার ব্যাপারটি নিয়েই যেন পুরো উপন্যাসে চলে টানা পোড়ন। নায়িকা রেশমীর ছুটে চলা আর থেমে যাওয়া যেন সেই প্রথার কদর্য রূপ আবার চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দেয়! দিন শেষে এটি যত না ঐতিহাসিক উপন্যাস তার চেয়েও বেশি রোমান্টিক উপন্যাস!
Profile Image for Oscar  Shuvo.
4 reviews5 followers
April 14, 2018
চতুর্থ খন্ডটা পড়তে গিয়ে হিমালয় থেকে ঠাস করে মাটিতে পড়লাম যেন। অনন্য এই বইটার গায়ে গতরে অবাঞ্চিত মেদ জমেছে ৪র্থ খন্ডে। ৪র্থ খন্ডের ছাচের উপর শতাধিক বাংলা সিনেমা ইতমধ্যেই হয়ে যাওয়ায় বিরক্তি সহ্যসীমা অতিক্রম করে গেছে। নেওয়াই যাচ্ছিলনা একদম। কোনমতে শেষ করে ৫ম খন্ডে এসে আবারো প্রমথনাথ বিশী নিজেকে খুঁজে পেলেন।
বিশ্রী অংশটা বাদেও বইটা স্বয়ংসম্পন্ন। সে বিবেচনায় রেটিং ৫/৫।
বাংলাভাষী সকলের জন্য বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য বই এটা।
Profile Image for Anupam Sengupta.
15 reviews1 follower
April 19, 2018
উইলিয়াম কেরীর মুন্সী রামরাম বসুকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাস সুপাঠ্য হলেও কাল্পনিক চরিত্র রেশমি বরং বেশি পৃষ্ঠাজুড়ে রয়েছে। এমনিতে সুপাঠ্য। কলকাতা শহরের পত্তনের প্রেক্ষাপটে রচিত হওয়ায় পুরোনো কলকাতার একটি প্রাঞ্জল বর্ণনা পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের ছাত্র এবং ভাবশিষ্য এই লেখক রচনারীতিতে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবমুক্ত হতে পারেননি। রেশমির চেয়ে রামরাম বসু বেশি আলোচিত হলে, বাংলা গদ্যরচনাকে সামনে রেখে রামরাম বসুর জীবন আলোচিত হলে উপন্যাসটি আরো ভাল হত বলে মনে হয়।
Profile Image for Rhidi Joyee .
56 reviews11 followers
February 11, 2014
অসসসসসাধারন একটি বই যতক্ষন পড়ছিলাম যেন পুরপুরি ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম, খুব বেশি সুন্দর চরিত্রগুলো,ওই সময় ধর্মের ব্যাপার বা ব্যাখাগুল আসলেই খুব সুন্দর লেগেছিল। সব মিলে অতুলনীয়...
Profile Image for Emtiaj.
237 reviews86 followers
August 25, 2015
বইটা যখন পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো, কি অসাধারণ না একটা বই পড়ছি। কিন্তু রেশমি রেশমি ব্যপারটা আমার কাছে এতোটা বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছিলো যে, শেষের দিকে কয়েক পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে বইটা শেষ করেছিলাম।
Displaying 1 - 28 of 28 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.