Jump to ratings and reviews
Rate this book

গণদেবতা

Rate this book
গণদেবতা বাংলা ভাষার অন্যতম কথাসাহিত্যিক তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস । ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত মহাকাব্যিক পটভূমির এই উপন্যাসের বিষয়বন্তু বিভাগোত্তর ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থা এবং স্বাধীনতা আন্দোলন ও শিল্পায়নের পরিপ্রেক্ষিত গ্রামীণ সমাজের বিবর্তন। বিংশ শতাব্দীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাংলা উপন্যাসের একটি বলে বিবেচিত এই উপন্যাসটি বহুভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এই উপন্যাসটিকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তরুণ মজুমদার এই উপন্যাসের কাহিনী উপজীব্য করে গণদেবতা শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত পঞ্চগ্রাম উপন্যাসটিকে পরবর্তীকালে গণদেবতা'র অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

240 pages, Paperback

First published January 1, 1942

46 people are currently reading
975 people want to read

About the author

Tarashankar Bandyopadhyay

130 books286 followers
Tarashankar Bandyopadhyay (Bangla: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়) was born at his ancestral home at Labhpur village in Birbhum district, Bengal Province, British India (now West Bengal, India). He wrote 65 novels, 53 story-books, 12 plays, 4 essay-books, 4 autobiographies and 2 travel stories. For his novel Arogyaniketan, he received the Rabindra Puraskar in 1955 and the Sahitya Akademi Award in 1956. In 1966, he received the Jnanpith Award for his novel গণদেবতা. He was honoured with the Padma Shri in 1962 and the Padma Bhushan in 1969.

Tarasankar is one of those writers of the third decades of the twentieth centuries who broke the poetic tradition in novels but took to writing prose with the world around them adding romance to human relationship breaking the indifference of the so called conservative people of the society who dare to call a spade a spade. Tarasankar’s novels, so to say, do not look back to the realism in rejection, but accepted it in a new way allowing the reader to breathe the truth of human relationship restricted so far by the conservative and hypocrisy of the then society.

He learned to see the world from various angles. He seldom rose above the matter soil and his Birbhum exists only in time and place. He had never been a worshipper of eternity. Tarasankar’s chief contribution to Bengal literature is that he dared writing unbiased. He wrote what he believed. He wrote what he observed.

His novels are rich in material and potentials. He preferred sensation to thought. He was ceaselessly productive and his novels are long, seemed unending and characters belonged to the various classes of people from zaminder down to pauper. Tarasankar experimented in his novels with the relationships, even so called illegal, of either sexes. He proved that sexual relation between man and women sometimes dominate to such an extent that it can take an upperhand over the prevailing laws and instructions of society. His novel ‘Radha’ can be set for an example in this context.

His historical novel ‘Ganna Begum’ is an attempt worth mentioning for its traditional values. Tarasankar ventured into all walks of Bengali life and it’s experience with the happenings of socio-political milieu. Tarasankar will be remembered for his potential to work with the vast panorama of life where life is observed with care and the judgment is offered to the reader. and long ones, then any other author. He is a region novelist, his country being the same Birbhum. He mainly flourished during the war years, having produced in that period a large number of novels and short stories.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
279 (56%)
4 stars
172 (34%)
3 stars
40 (8%)
2 stars
4 (<1%)
1 star
2 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 59 reviews
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
October 7, 2020
রিভিউ লিখতে পারি না তো কি হইছে বই পড়ে মজা পাওয়াই তো আসল।
কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন কিছু বই পড়ি যেগুলা পড়ার পর খুব আফসোস হয় যে বইটা কত্তো কত্তো কত্তো ভালো তা আমি মানুষকে বুঝাইতে পারতেছি না।
পল্লিগ্রামের কাহিনী। আমি আগে ভাবতাম আমার শহরকেন্দ্রিক বই একটু বেশি ভালো লাগে।এই বই পড়ে বুঝলাম বই শহরের হোক বা গ্রামের ফ্যান্টাসি হোক থ্রিলার হোক ক্লাসিক হোক বা ননফিকশন ই হোক আসলে বইটার সবচেয়ে বড় শক্তি লেখকের লেখনী তে।
পল্লিগ্রামের কথা কি এরচেয়ে ভালো করে আর কেও লিখতে পারছে?এর আগে হাঁসুলি বাকের উপকথা পড়েই বোঝা উচিৎ ছিল এ কথা।
ছোট্ট গ্রাম সম্ভ্রান্ত দরিদ্র বিভিন্ন জাতের কিছু পরিবার নিয়ে গঠিত। সবাই সবাই কে চেনে।গ্রামের মোড়ল তার গ্রামের মুচিকেও চেনে। সবাই সবার খোজ খবর রাখে। সবাই সবার নাম জানে।একজনের বিপদে গ্রামের সকলের এগিয়ে আসা। কতো সুন্দর লাগে ভাবতেই।
গ্রামের বারো মাসে তের পার্বণ। শিক্ষার অভাব থাকলেও কি সুন্দর একটা সংস্কৃতির ছবি দেখলাম এই বইটিতে।

সবাই পড়ে দেখবেন অবশ্যই।
Profile Image for Maruf Hossain.
Author 37 books258 followers
October 25, 2016
তারাশঙ্কর-বিভূতি-মানিক ত্রয়ী আমার অত্যন্ত প্রিয় ঔপন্যাসিক। কেন?

বিভিন্ন ভাষার (ইংরেজি, রুশ ইত্যাদি) বিদেশী লেখকদের মধ্যে দেশ-কাল-ইতিহাসকে উপজীব্য করে বড় ক্যানভাসে মানুষের জীবনযাত্রা, সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলার যে সফল প্রচেষ্টা যে হারে লক্ষ্য করা যায়, দুঃখজনকভাবে আমাদের বাংলা সাহিত্যে সেই হারটা একেবারেই কম। আমাদের খুব কম সাহিত্যিকই বড় ক্যানভাসে কাজ করেছেন। সেই অল্প ক'জন সাহিত্যিকদের নাম করতে গেলে তারাশঙ্করের নামটা উপরের দিকেই থাকবে তাঁর মহাকাব্যিক সৃষ্টি "গনদেবতা"র কল্যাণে।

তারাশঙ্কর জন্মেছিলেন দুই শতাব্দীর মিলনস্থলে (১৮৯৮)—তখন এক শতক বিদায় নিয়ে নতুন শতাব্দী কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। তাঁর বেড়ে উঠা-ও অস্থির সময়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, উপমহাদেশে ব্রিটিশদের অরাজকতা—এসব নিজের চোখে দেখা তাঁর। একসময় রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন। ছিলেন অভিজাত পরিবারের ছেলে—রাজনীতি করার সময় নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করেন বাঙলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর (মুচি, ডোম) জীবনধারা। সেই পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে লেখেন "গণদেবতা" ও "পঞ্চগ্রাম"—তাঁর যুগল অমর সৃষ্টি।

গণদেবতার কাহিনির সময়কাল ১৯২৬ সাল থেকে শুরু হয়ে বিস্তৃত পরবর্তী প্রায় এক দশক পর্যন্ত। এক অস্থির সময় ছিল সেটা। প্রথম মহাযুদ্ধ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে জগত-সংসার-সমাজে। সে আগুনের আঁচ থেকে রেহাই পায়নি শহর, গ্রাম কোনোটাই। অভাব-ক্ষুধা চারপাশ থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে মানুষকে। গরীব আরও গরীব হচ্ছে, ধনী আরও ধনী হচ্ছে—উদ্ভব হচ্ছে অনেক নতুন ভুঁইফোঁড় ধনীর।
বাইরের দুনিয়ার অস্থিরতার ছোঁয়া থেকে মুক্ত নয় গ্রাম-গঞ্জও—তেমনই এক গ্রাম শিবকালিপুর। গ্রাম বাংলার নীরব নিভৃত এক গ্রাম শিবকালিপুর। কিন্তু যুগের ধাক্কায় টাল-মাতাল আজ সেই গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবন—নতুন আর পুরাতনের দ্বন্দ্বে দ্বিধাবিভক্ত আজ সেই গ্রাম। কারও মন টানে পুরাতন সংস্কার ধরে রাখতে, আবার কারও মন টানে নতুনের আহ্বানে পুরাতনকে বিসর্জন দিয়ে সামনে এগিয়ে চলতে।

অভাবের তাড়নাটা সবসময়ই প্রথম ধাক্কা মারে গরীবদের বুকে। গণদেবতায়-ও অভাবের প্রথম শিকার গরীবরাই—গরীব কামার অনিরুদ্ধ আর ছুতার গিরিশ অভাবের ধাক্কায় গ্রাম থেকে ব্যবসা একরকম গুটিয়ে ব্যবসা খোলে শহরে। এ নিয়ে গ্রামে তোলপাড়—সব গেল! সব গেল! রব। কিন্তু কেউ বুঝতে চাইল ওদের পেটের দায়!
সেই গ্রামে নতুন-পুরাতনের, অভাব-অনাহারের দ্বন্দ্বের ধাক্কা লাগল, সেই ধাক্কায় একে একে ভেঙে পড়তে গ্রমাএর প্রচলিত সংস্কার। সেই ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে গেল অনেকের জীবন।
অনেক নতুন কিছুর সাক্ষী হলো শিবকালিপুর। তারই ধারাবাহিকতায় উত্থান হলো গল্পের নায়ক দেবনাথ ওরফে দেবুর। আমূল পরিবর্তন এল দেবুর স্ত্রী বিলি, অনি কামার, পাতু, অনি কামারের বউ পদ্মর জীবনে।

যুদ্ধের সময়ে একদল সুযোগসন্ধানী লোকের আবির্ভাব ঘটেছিল—পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে, গরীবদের ঘাড়ে পা রেখে সমাজের এক স্তর থেকে আরেক স্তরে উঠে গিয়েছিল এই নব্য ধনীরা। ছিরু পাল থেকে শ্রীহরি ঘোষে পরিণত হওয়া চরিত্রটি সেই শ্রেণীর মানুষের প্রতিভূ।

যুদ্ধ আর অস্থির নতুন সময়টা আবার অনেক নতুন মানুষেরর জন্ম দিয়েছিল, যারা বুক ফুলিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক বন্দি যতী এ উপন্যাসে সেই নতুন যুগের মানুষদের প্রতিনিধি।

আরেক দল মানুষ ছিল যারা অতীতের সব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা নিয়ে মহীরুহের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকেন নতুন প্রজন্মের কাছে সসব হস্তান্তর করে নতুন-পুরাতনের মেলবন্ধন ঘটানোর জন্যে। ন্যায়রত্ন গণদেবতায় সেসব মহীরুহের প্রতিচ্ছবি।

ঋদ্ধ সমালোচকদের মতে, নতুন-পুরাতনের দ্বন্দ্বে ঝনঝনানি সবচেয়ে ভালো ফুটে তারাশঙ্করের কলমে; এ ব্যাপারে তাঁর সমতুল্য বাংলা সাহিত্যে আর কেউ নেই। গণদেবতা সমালোচকদের সেই বক্তব্যকে করেছে সুদৃঢ়। পুরানো যুগের রীতিনীতি, সংস্কৃতি আর নতুনের জোয়ারের দ্বন্দ্ব পুরো উপন্যাসের কাহিনিকে এগিয়ে নিয়েছে সুনিপুণভাবে, গণদেবতাকে করে তুলেছে সার্থক এক উপাখ্যানে।

আমার জন্ম গ্রামে, বেড়ে উঠাও গ্রামে। তারাশঙ্কর-মানিক-বিভূতি লিখেছেন গ্রামের কথা, গ্রামের মানুষের কথা। এ বইয়ে তারাশঙ্কর লিখেছেন গ্রামের মানুষের জীবনের হঠাৎ বাঁক বদলের কথা। এ গ্রাম আমার অতি পরিচিত, আমার নিজের গ্রাম। তারাশঙ্করের শিবকালিপুরের চরিত্রগুলো দেখে এসেছি আমার দেখা গ্রামেও—হয়তো একটু পরিবর্তিত রূপে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের সাথে, ববিয়ের চরিত্রগুলোর সাথে একাত্ম হয়ে গেছি মুহূর্তেই। পড়তে পড়তে চোখের সামনে একের পর এক ভেসে উঠেছে দৃশ্যপটগুলো। তাই গণদেবতা হয়ে উঠেছে আমার চোখে সার্থক এক বই, সার্থক এক মহাকাব্য।

সবশেষে গনদেবতা সম্পর্কে ব্লগার মোনেম অপু'র এই মন্তব্যটি আমার এমনই মনে ধরেছে যে কোট করার লোভ সামলাতে পারলাম নাঃ
" অর্থনৈতিক শ্রেণিবিভাজন, সাংস্কৃতিক বিভাজন, নিষ্ঠুর–দাম্ভিক অসাম্যভিত্তিক চিন্তা-তাড়িত সামাজিক মিথোস্ক্রিয়ার বিদ্যমানতা, একের অহমিকা ও অপরের বঞ্চনা ইত্যাদিকে জীবন-ভাবনায় বড় করে দেখা হলে একজন যেরকম উপন্যাস লিখতে চাইবেন ঠিক সেরকম একটি সফল ও শক্তিমান উপন্যাস হচ্ছে এই গণদেবতা। "
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews193 followers
November 24, 2020
বইটি পড়ার আগ্রহ অনেকদিন ধরেই ছিল। তবে ঋত্বিক ঘটক যখন বললেন, বাংলা সাহিত্যে আসলে উপন্যাস নাকি মাত্র ৪টি, আর তারমধ্যে একটি এই গণদেবতা, তখন আর দেরি করার ঝুঁকি নিতে পারলাম না।
তারাশঙ্কর এর কবি পড়েই বুঝেছিলাম চিরায়ত সাহিত্য আসলে কেমন হতে পারে। কীভাবে ছোট্ট একটা উপন্যাস মনের গহীনে দাগ কেটে যায় এবং দীর্ঘদিন ধরে এর প্রভাব বিস্তার করে রাখতে পারে। এরপর হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, চাঁপাডাঙার বই, রাইকমল সবকটাই একই মাপের না হলেও, খুব কমতিও ছিল না।
গণদেবতা, ধাত্রীদেবতা, পঞ্চগ্রাম এই ত্রয়ী পড়ার প্রথমটি শেষ করলাম। ধীরে ধীরে বাকি দুটিও পড়ব।

একটি গ্রাম কিংবা সব গ্রাম। সেই গ্রামের মানুষ, গ্রামীণ রাজনীতি, কুসংস্কার, অনড় গ্রাম্য সংস্কৃতিকে নিয়ে রচিত উপন্যাসটি একটা মহাকাব্��ের সমান। শুরুতেই চিরাচরিত পেশা ত্যাগ করার ইচ্ছে পোষণ করে গ্রামীণ মোড়লদের রোষের শিকার হয় অনিরুদ্ধ। দেবু, যার ভাবনার কথা অনেক বেশিই প্রতিফলিত হয়েছে উপন্যাসটি জুড়ে। আছে শ্রীহরির মতো ক্ষতিকর মানুষ। আবার আছেন ন্যায়রত্নের মতো জাগতিক মোহ কাটিয়ে ওপারের আসায় বাস করতে থাকা মানুষ।

দূর্গা, পদ্ম ইত্যাদি চরিত্রগুলো যেন প্রতিনিধিত্ব করে গ্রাম্য নারী সমাজের। সেই জাতপাত, উত্থান-পতন, আধুনিকতা আর প্রাচীনত্বের সংঘর্ষ নিয়ে এগুনো উপন্যাসটি যেন চিরায়ত গ্রামীণ সমাজের কথা বলে যায় এক নিমেষে। উন্নতির ছোঁয়া কি লাগে না গ্রামে? গ্রাম কি রয়ে যায় একই রকম? নাকি ধীরে ধীরে স্বকর্ম, স্বগোত্র ছেড়ে মানুষ ছুটে চলে শহরের পানে? আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে আসে গ্রাম?

তারাশঙ্করের ভাবনা এবং লেখনশৈলী নিয়ে আসলে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা এই উপন্যাসটি পড়তে পেরে মনে হচ্ছে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলাম।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
October 4, 2024
কালজয়ী সাহিত্য ঠিক কী কারণে কালজয়ী হয়, এতগুলো দশক পরেও কেন আবেদন হারায় না, সে প্রশ্নের প্রকৃষ্ট উত্তর হতে পারে তারাশঙ্করের এই অমর সৃষ্টি।
প্রায় শতবছর আগে লেখাটি আজও কতটা প্রাসঙ্গিক, প্রাণবন্ত।

আপাতদৃষ্টিতে গ্রামীণ জনপদের সহজ সরল জীবনধারার মধ্যেও যে সূক্ষ্ম ও জটিল রাজনীতি, রেষারেষি রয়েছে তার উৎকৃষ্ট দর্পণ গণদেবতা।
বর্ণনায় অতিরঞ্জন নেই, বীরত্ব গাঁথার আতিশয্য নেই, মন জুড়ানো সুখকর সমাপ্তি; সেটাও নেই। তবুও এ গল্পে এমনকিছু আছে যা অন্য কোথাও পাইনি, পাবো কি না সন্দেহ।

শেষ পৃষ্ঠা থেকে চোখ সরিয়ে গাঢ় দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ইচ্ছা করে। এমন দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্যেই হয়তো এতকাল ধরে পাঠকেরা ছুটে গেছে গণদেবতা'র চরণে। আসছে দিনগুলোতেও যাবে, সন্দেহ নেই।
Profile Image for সারস্বত .
237 reviews136 followers
August 15, 2020

১৯২৫ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গণদেবতা তৎকালীন গ্রামবাংলা তথা সমগ্র গ্রামীণ ভারতবর্ষের নিপীড়িত মানুষের দর্পণস্বরূপ। সেই সাথে লেখাটি শাসন এবং শোষণের সহস্র বছরের চলমান ধারার দলিল।

উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী উপন্যাসগুলি মাঝে অন্যতম। যার কারণে উপন্যাসটি বহুভাষায় অনূদিত হয়েছিলো। ১৯৭৯ সালের ২৯শে জুন পরিচালক তরুণ মজুমদার উপন্যাসটি নিয়ে একটি চলচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। পরে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৯৪৩ সালে লেখা পঞ্চগ্রাম উপন্যাসটি গণদেবতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

উপন্যাসের নামঃ গণদেবতা
লেখকের নামঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ঘরানাঃ সামাজিক উপন্যাস
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৬৬
প্রকাশনীঃ সালমা বুক ডিপো
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৪২ ( মতান্তরে ১৯৪০ )
প্রাপ্ত পুরস্কারঃ জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ( ১৯৬৬ )

নামকরণের স্বার্থকতাঃ

গণদেবতার বাংলা অভিধানের দুইটি অর্থ আছে, প্রথমটি হলো যে সমাজের গণই দেবতা অর্থাৎ ক্ষমতার অধিকারী। দ্বিতীয়টি হলো গণশক্তির অধিদেবতা। এই উপন্যাসটিতে দ্বিতীয় অর্থটি বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। সহস্র বছরের শাসন আর শোষণের রীতিকে যে রক্তচক্ষু দেখিয়ে যে মাথা তুলে দাঁড়ায়, হাজার মানুষের ঝুঁকে যাওয়া কপালের মাঝে যার কপালের শিরার রক্ত টগবগিয়ে ওঠে, যে সংসার, সম্মান, প্রাণ সবকিছু তুচ্ছ করে মানুষেরর জন্য নিজের সামর্থ্যে হাজার টুকরো করে ছড়িয়ে দেয় মানুষের মাঝে সেই গণদেবতা। আর এমন এক গণদেবতাকে নিয়েই লেখক উপন্যাসটি লিখেছেন।

বিশ্লেষণঃ

ভারতের গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে Sir Charles Matcalfe বলেছিলেন,
“They seem to last where nothing else last. Dynasty after dynasty tumbles down. Revolution succeeds revolutions! Hindu, Pathan, Moghul, Maratha, Sikh, English are masters in turn, but the village community remains the same.’

অর্থাৎ হাজার বছর ধরে ভারতবর্ষের মাটিতে হিন্দু, পাঠান, মুগল, ইংরেজ কত শাসক এলো আর মাটিতে মিশে গেল। কিন্তু গ্রামীণ ভারতবর্ষ হাজার বছর ধরে অকৃত্রিম। সেই মহাজনের শাসন, সুদের হিসাবের নামে শোষণ আবার দিনশেষের গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের চাতালে সবাই সমাবেত হয়ে একটু খানি আনন্দের অনুসন্ধান। সেই হাজার বছর অভিন্ন জীবনেরধারা।

এমন একটি গ্রামের প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত উপন্যাসটি। গ্রামের নাম শিবকালীপুর। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ময়ুরাক্ষী নদী। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্ন সম্প্রদায়ের বায়েন আর বাউড়ি। সাথে উচ্চ বর্ণের কয়েকটি ঘর। আর গ্রামের একজন মহাজন।
উপন্যাসটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের সংখ্যা অনেক। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মাঝে পন্ডিত দেবু ঘোষ, দেবুর স্ত্রী বিলু, মহাজন শ্রীহরি ঘোষ, অনুরুদ্ধ কামার, অনুরুদ্ধের স্ত্রী পদ্ম, যোগেন ডাক্তার, ব্রাক্ষ্ণন হরেন ঘোষাল, নজরবন্দী যতীন আর স্বৈরিনী দুর্গা।
এসকল চরিত্রের মাঝে পন্ডিত দেবু ঘোষ সবার থেকে আলাদা। এই নিস্তেজ, দরিদ্র আর ভয়সর্বস্ব মানুষের গ্রামে পন্ডিত দেবু ঘোষ প্রথম প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ জ্বালায়। সরকারী কানুগগোর অসম্মানের প্রতিবাদ করে যে নীরব কারা বরণ করে। যেখানে একটিবার মৌখিক ক্ষমা প্রার্থনায় দেবু ঘোষ দীর্ঘ ১৫ মাসে কারাগারের শাস্তি হতে মুক্তি হতে পারতো। দেবু ঘোষ ক্ষমা স্বীকার করেনি।

মহাজন শ্রীহরি ঘোষের যখন বার বার ঘুনে ধরা নিয়মকে হাতিয়ার করে দরিদ্র বায়েন আর বাউড়িদের বঞ্চনা করেছিলো, নিয়ে চলেছিল তাদের বেঁচে থাকার একটমাত্র অবলম্বন গবাদিপশুগুলো তখন মুখে অনেকে অনেক কিছু বললেও শুধু এগিয়ে এসেছিলো পন্ডিতে দেবু ঘোষ। আর গ্রামের অতিথি নজরবন্দী যতীন দেবু ঘোষের বুকে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবের আগুনকে উস্কের দিয়েছে বার বার।

যে বায়েন বাউড়িদের উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা কুকুরের থেকেও অধম চোখে দেখত। সেই মানুষগুলো জন্য কলেরায় আক্রান্ত হলো মৃত্যুঝুকি জেনেও এগিয়ে এসেছিলো পন্ডিত। সেজন্য পন্ডিত দেবু ঘোষকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ দিয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিলো। তবুও পন্ডিত দেবু ঘোষ থামেনি। যারা জন্মের পর ন্যায়ের সংজ্ঞা অনুসন্ধান করে তারা হয়তো থেমে যায় কিন্তু যারা ন্যায়কে বুকে ধারণ করে জন্মায় তারা থামে না। থামতে পারেনা।

আরেকটি চরিত্র সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। সে হলো বায়েন সম্প্রদায়ের দুর্গা। দুর্গার আগুন ও জল দুই আছে উক্তিটির ব্যপ্তিপুরো উপন্যাস জুড়ে। কখনো সে সমাজের নিয়মের তোয়াক্কা না করে সমাজের চোখে নিজেকে করেছে কলঙ্কিনী আবার কখনো পন্ডিত দেবু ঘোষ, বিলু, পদ্ম, যতীন, ভাই পাতু আশপাশের মানুষগুলো আগলে রেখেছে পরম মমমতায়।

ব্যক্তিগত অভিমতঃ
রবীন্দ্রনাথে কবিতা থেকে যতীন উপন্যাসে একবার আবৃত্তি করে,

তৃণে পুলকিত যে মাটির ধরা
লুটায় আমার সামনে —
সে আমায় ডাকে এমন করিয়া
কেন যে , কব তা কেমনে ।
মনে হয় যেন সে ধূলির তলে
যুগে যুগে আমি ছিনু তৃণে জলে...

পন্ডিত দেবু ঘোষের মত মানুষের হৃদয়কে বহুবছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঠ করে সম্ভবত এই লাইনগুলি লিখেছিলেন। যেখানে মানুষ তার মাটির কাছে, তার শস্যের কাছে, তার মানুষের কাছে দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারে না।

আপাত দৃষ্টিতে গণদেবতা একটি সামাজিক উপন্যাস হলে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা থেকে এমন কিছু লেখা সম্ভব নয়। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল গভীর জীবন দর্শন এবং গ্রামীণ অর্থ ও সম্পদের বন্টন ব্যবস্থার উপর গভীর জ্ঞান। ছিল গ্রাম ধর্মীয��� আচার অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহন কিংবা উপস্থিতি। উপন্যাসটি জুড়ে আছে কিছু ছোটগল্প। গল্পগুলিকে ঘিরেই লেখক উপন্যাসের মূলভাব আরও জোরালো করে উপস্থাপন করেছেন।

বিংশ শতাব্দীর সেরা ঔপন্যাসিকদের মাঝে নিঃসন্দেহে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একজন। এইকালের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন গুনমুগ্ধ পাঠক ছিলেন। বিখ্যাত চরিত্র হিমুর যে ব্যক্তিগত নদীটির নামকরণ করা হয়েছে সেটি সম্ভবত এই উপন্যাসের ময়ুরাক্ষী নদী থেকে। এছাড়াও উনার ম্যাজিক মুনশি বইটিতে আমরা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাইনী ছোটগল্পটি দেখতে পাই।

উপন্যাসে একটি উক্তি আমার সবথেকে ভাল লেগেছে, উক্তিটি হলো,
“ধর্মকে তুমি বন্দী করো কর্মের বন্ধনে।“
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,736 reviews355 followers
June 16, 2025
(একটি মহাকাব্যিক প্রতিকৃতি, একটি গ্রামের মুখর জনপদের আত্মজীবনী)

বাংলা সাহিত্যের মানচিত্রে যদি কিছু চিরকালীন স্তম্ভ থেকে যায়, গণদেবতা তার অন্যতম। এই উপন্যাস কেবল একটা গ্রামের গল্প নয়, এটা এক গোটা সভ্যতার পালাবদলের দলিল। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে ইতিহাস লিখেছেন, কালি দিয়ে নয়—মনুষ্যত্ব দিয়ে, অনুভূতি দিয়ে, মাটির গন্ধে ভেজা ভাষা দিয়ে।

পটভূমি: উপন্যাসটি আমাদের নিয়ে যায় এক প্রত্যন্ত গ্রামে—যেখানে শস্য ফলে, লোকগান বাজে, আবার মূর্খতা ও শোষণও গেঁথে আছে জড়ায়ু থেকে। হ্যাঁ, এখানে সব আছে: জাতিভেদ, কুসংস্কার, জমিদারি শোষণ, স্বাধীনতা আন্দোলনের গুঞ্জন আর গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রগাঢ় সৌন্দর্য।

তবে এই গল্প কেবল “গ্রাম” এর নয়—এটা মানুষ এর। গরীব মুচি থেকে ধনী জমিদার পর্যন্ত, প্রত্যেকে এই মহাকাব্যের অংশ। এই উপন্যাসে “নায়ক” একজন ব্যক্তি নয়—পুরো জনগোষ্ঠী।

মূল ভাবনা: তারাশঙ্কর দেখিয়েছেন—জ্ঞান, শিক্ষা, আর ন্যায়ের মাধ্যমে শৃঙ্খল ভাঙা যায়।

এখানে পণ্ডিত দেবু হলেন সেই আলোকবর্তিকা—যিনি গরীব, নিরক্ষর মানুষদের ভিতর আলোর দীপ্তি জাগাতে চান। কিন্তু তারপথ একদম সোজা নয়। প্রতিটি চরিত্র যেন সমাজের একেকটা মুখোশ:

ছিরু পাল – লড়াইয়ের প্রতীক

দূর্গা – নারীচেতনার এক অসম সাহসী রূপ

জগন ডাক্তার – প্রগতির প্রতীক

দ্বারকা চৌধুরী – প্রাচীন শোষণের অবিসংবাদী ছায়া

এই চরিত্রগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় যে, যেখানে শোষণ আছে, সেখানে প্রতিবাদও জন্ম নেয়।

ভাষা ও বর্ণনা: তারাশঙ্করের ভাষা যেন পল্লিগীতির মতো—সহজ অথচ সুরেলা। তিনি কখনো কবি, কখনো সমাজতাত্ত্বিক, কখনো দার্শনিক। গ্রামীণ বাংলার ছোটখাটো দৃষ্টান্ত, লোকপ্রথা, ঠাট্টা, উৎসব, দুঃখ—সব মিলিয়ে এতটা জীবন্ত করে তুলেছেন যে মনে হয়, আমরা সেখানে আছি, চায়ের দোকানের মোড়ে বসে গল্প শুনছি।

উপসংহার: গণদেবতা কেবল সাহিত্য নয়, এটি এক আত্ম-জাগরণের দলিল। শহরের মানুষকে শেখায় গ্রামের জীবন কত গভীর, আর গ্রামের মানুষকে শেখায় যে পরিবর্তন সম্ভব—শুধু চোখ খুলে দেখতে জানতে হয়।

একটা ভালো বই পড়ে শেষ হলে যেমন বুকের ভেতর হালকা ঝড় ওঠে—গণদেবতা পড়ে সেই ঝড় থেমে যায় না, বরং মন জুড়ে তার রেশ থেকে যায় অনেকদিন।

শেষ কথা: বইটা পড়ে আপনি “অসাধারণ” বলবেন না, বলবেন—“এই গল্পটা আমার!”
Profile Image for Neela.
83 reviews59 followers
August 13, 2016
কবি’ পড়ে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখার প্রেমে পড়েছিলাম। সেই সূত্রেই গণদেবতা পড়া। একজন লেখকের লেখা কতটা বৈচিত্র্যময় হতে পারে তারাশংকরের লেখা না পড়লে এটা বুঝতে পারতাম না। তারাশংকরের প্রতিটি উপন্যাসে গভীর জীবনদর্শন, তীব্র অন্তর্দৃষ্টি ও বিশাল মানববোধের এক অসামান্য চিত্র ফুঁটে উঠেছে। একটি দেশ ও একটি জাতির জীবনবোধের এক বিস্ময়কর আলেখ্য এই ‘গণদেবতা’ উপন্যাস।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতবর্ষের (১৯২০-১৯৩০) একটি ছোট গ্রামের মানুষদের দৈনন্দিন সমস্যার বিভিন্ন কাহিনী নিয়েই এই উপন্যাস। উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয় শিবকলিপুর গ্রামের অনিরুদ্ধ কর্মকার ও গিরীশ সূত্রধর নামের দুজন নিম্ন গোত্রের মানুষের প্রতি গ্রামের লোকের অসন্তোষ ও তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য আয়োজিত পঞ্চায়েত সালিশের ঘটনা দিয়ে। দুজনের অপরাধ হল তারা দু পয়সা বেশী লাভের আশায়, এই চাষের সময়ে গ্রামের লোকদের কাস্তে কোদাল বানানো বাদ দিয়ে নদীর ওপারে শহরে গিয়ে দোকান ফেঁদেছে। এদিকে কাস্তে কোদালের অভাবে গ্রামসুদ্ধ লোকের চাষবাস প্রায় বন্ধের যোগাড়। মজলিশসুদ্ধ লোকের ক্ষোভ তাই অনিরুদ্ধ ও গিরীশের উপর, কিন্তু অনিরুদ্ধ বা গিরীশ গ্রামের লোকের কথা শুনবে কেন? সারাবছর সবার ফাল পাঁজিয়ে, হাল লাগিয়ে, কাস্তে গড়ে ক’টাকাই বা পাওয়া যায়!
উপন্যাসের প্রথম দু পাতা পড়েই স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতবর্ষের ‘জজমানী’ প্রথার রুঢ় চিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সবার মতামত আগ্রাহ্য করে মজলিশ থেকে অনিরুদ্ধের চলে যাওয়ার মধ্যে এই প্রথার বিরুদ্ধে তার নীরব প্রতিবাদ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। সময়ের সাথে সাথে গ্রামীন অর্থনীতির তৎকালীন গঠনের ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পরা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের দিক পরিবর্তন, শ্রেণীপ্রথার বিলোপের সাথে সাথে সমাজে নতুন এক উন্মুক্ত পদমর্যাদা সম্পন্ন দলের উদ্ভব, এই সমস্ত কিছুই লেখক তার নিপুণ লিখনশৈলীর মাধ্যমে কল্পনা ও বাস্তবের মিশেলে এক অনন্যসাধারণ আখ্যানরুপে তুলে ধরেছেন।
এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র দেবু ঘোষ, একজন সাধারন শিক্ষক থেকে গ্রামের মানুষের কাছে হিরো হয়ে উঠা দেবু ঘোষ। হাজারো প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে ভেঙ্গে পড়া এই গ্রাম, এই সমাজ ব্যবস্থাকে টেনে তোলার তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা, আবার অন্য দিকে ছিরু পালের মত লোকদের শ্রীহরি ঘোষে রুপান্তরিত হওয়ার চলমান প্রক্রিয়ার শৈল্পিক বর্ণনা এই উপন্যাস কে একটি কালোত্তীর্ণ লেখার মর্যাদা দান করেছে। দূর্গার মত মেয়ে যে দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করার জন্য নিজের শরীর বিক্রি করে বেড়ায়, সেই দূর্গাই আবার গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসে দেবু ঘোষের পাশে এসে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার, শ্রেণীপ্রথা ও ধর্মান্ধতার ভীড়ে দূর্গার সাহস, দেবু ঘোষের সংগ্রাম, ছিরু পালের রুপান্তর, পদ্ম ও অনিরুদ্ধের নীরব ভালোবাসা এই ছোট ছোট কাহিনীগুলো যেন মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে।
সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য বই। যারা নতুন নতুন বই পড়া শুরু করেছেন তাদের কাছে প্রথমদিকে কিছুটা বোরিং লাগতে পারে। তবে পুরোটা পড়ার পর একটা ঘোরলাগা অনুভূতি কিছুক্ষনের জন্য হলেও আচ্ছন্ন করে রাখবে নিশ্চিত।
Profile Image for Sushant Jha.
21 reviews9 followers
December 21, 2013
A must read to know as to how Indian society was changing during last phase of its independence movement. A fine book to understand the cracks of "jajmani system"(an ancient system which assured serving castes an assured amount of food-grain per year in lieu of service provided by them). According to some surveys, this book was named as best novel of 20th century.
Profile Image for Protik Nag.
21 reviews4 followers
June 30, 2017
তারাশংকরের গণদেবতা এবং মানিকের পুতুলনাচের ইতিকথা একই ধাঁচের ২টি ভিন্ন বই । পুতুলনাচের ইতিকথা বইয়ের শশী ডাক্তার আর গণদেবতার দেবু ঘোষ যেন একই মানুষের আলাদা চরিত্র । গণদেবতার নাম পুতুলনাচের ইতিকথা এবং পুতুলনাচের ইতিকথার নাম গণদেবতা হলেও খুব একটা খারাপ লাগত না ।
Profile Image for Zihad Saem.
123 reviews7 followers
January 31, 2025
কি আশ্চর্য সুন্দর এক উপন্যাস। পড়ার আজ এতো এতো দিন পরও বইটার সঙ্গে যাপিত সময়টুকুর কথা মনে পড়লে এখনো ভীষণ ভালো লাগে।
Profile Image for Rashed.
127 reviews26 followers
May 10, 2021
আহ!!গাঁয়ের শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবন!! তোমারে পাইবার আশা রাখি,কিন্তু সাধ্যি হয় না....
Profile Image for Mehedi  Hasan Mahfuz.
171 reviews27 followers
September 25, 2025
❝ কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।❞
'গণদেবতা' যখন শেষ হয়ে যাচ্ছিলো তখন পশ্চিমে সূর্যও সমান্তরালে ডুবে ডুবে যেন রবীন্দ্রনাথের বিদায় কবিতার লাইনগুলো আওড়াচ্ছিল। ঠিক তখন ঠাহর হয় আহা সময় কত নিষ্ঠুর। সময়ের চক্র আর কালের গর্ভে ক্রমাগত হারিয়ে যায় দেশ, জাতী, সংসার, সমাজ, সভ্যতা আর আধুনিকতা।তাই বোধহয় জীবনানন্দ বলেছিলেন,
❝একে-একে ডুবে যায় দেশ জাতি সংসার সমাজ;
কার লাগি, হে সমাধি, তুমি একা ব’সে আছো আজ—❞
এখনো পর্যন্ত তারাশঙ্করকে যতটুকু এক্সপ্লোর করতে পেরেছি তাতে বুঝতে পেরেছি তিনি তাঁর উপন্যাসে পল্লীগ্রামের চিত্র এঁকেছেন, নিম্নজীবী মানুষদের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেনে সময়ের নিষ্ঠুর তুলিতে। তিনি জন্মেছেনও যুগ পরিবর্তনের এমন এক সন্ধিক্ষণে যখন উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের দোর্দণ্ড প্রতাপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আধুনিকতার কড়াল গ্রাসে শহর থেকে পল্লীগ্রামের বুকচিরে সাপের মতন বয়ে গেছে রেললাইন আর তার উপরে ঝিকঝিক করা ইঞ্জিনের আগুনের কল। সেই আঁচ পল্লীগ্রামের মানুষের মাঝে লেগেছে বটে কিন্তু তাদের চিরাচরিত আবর্তন তখনো থামেনি। নদী, ক্ষেত, ফসল, দ্বন্দ্ব, জরা, মহামারী আর উৎসব — এই ঘিরে তাদের আবর্তন। দুঃখ আর শোক তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তবুও বারো মাসে তেরো উৎসবের ঘটায় একটুও ভাটা পড়ে না।
'গণদেবতায়' নায়ক নায়িকা কিংবা প্রধান চরিত্রের কথা বললে অনেকেই হয়তো অনেক জনেত নাম নিবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় "গণদেবতার" নায়ক হচ্ছে সময়। অকস্মাৎ ফ্যাসাদের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া "গণদেবতা" শেষ হয় অপার শূন্যতায়। সময় কি আসলে এমনই সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়?
Profile Image for জি.এম.আব্দুল্যাহ.
64 reviews3 followers
December 3, 2025
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ সময়ের এক গ্রামীণ জনপদ থেকে ঘুরে আসা হলো। একটা গ্রাম দিয়ে একটা মাস্টারপিস লেখনী। শুনেছি এটার ট্রিওলজি আছে। ঠিক জানিনা। বাকিগুলোও পড়ব।
Profile Image for Nafia Tabassum.
26 reviews14 followers
January 16, 2021
এই শ্রীহরি পাল রা সব যুগেই থাকে, না?

"জীর্ণ ঘর, রিক্ত, অঙ্গন অভাবক্লিষ্ট মানুষের মুখ, মহামারী, ম্যালেরিয়া, ঋণভার" একই চিত্র কি এখনও ব্যাতিক্রম?
Profile Image for Anindita Halder.
10 reviews2 followers
May 8, 2023
আমি সত্যিই অভিভূত গণদেবতা পড়ে। এতো অসাধারণ ভাবে কবি গ্ৰামবাংলার সেই নিত্য জীবনের ছবি তুলে ধরেছেন যা বোধহয় একথায় বলা সম্ভব নয়, তাই জন্যই বোধহয় জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছিলেন।
Profile Image for Paromita.
162 reviews30 followers
November 29, 2024
এত দুঃখ, মন খারাপ হয়ে গেল। এবং কিছুই পরিবর্তন হয়নি, এখনও অসংখ্য মানুষের এই অবস্থা, এই জীবন। সেটি মহৎ সাহিত্যের লক্ষণ বটে কিন্ত ব্যক্তিগত ভাবে, পাঠক হিসেবে, আমি এই অন্তহীন নিরানন্দ নিতে পারি না। বিশেষভাবে আমার দেশের, আমার চারিদিকে যারা ধুঁকছেন তাদের কথা পড়ছি মনে হয় বলে বেশি খারাপ লাগে।

এই বইটিকে আমি সম্মান করব কিন্ত এটি আমার প্রিয় নয়।
Profile Image for Anjum Haz.
285 reviews69 followers
December 16, 2023


১৯৫০ এর দশকে তারাশঙ্কর গণদেবতা বইটি লেখেন। বইটির সময়কাল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দশক। শত বছরের পুরনো হয়ে যাওয়া গল্পটি পড়ছি আজ এসে। সেই শিবকালিপুর, পাশে ধনীদের গ্রাম কঙ্কনা, তাদের সীমানা কোথায় মিশে গেছে। কোথায় হারিয়ে গেছে চন্ডীমণ্ডপে জল দেওয়া, ইতুলক্ষ্মী পালনের আচার-আচরণ। হারিয়ে গেছে সেই মানুষদের বুলি। কতগুলো বাংলা শব্দের অর্থ আজকে আর বোঝার উপায় নেই, সে শব্দ ও সেই বস্তুগুলোর ব্যবহার হারিয়ে গেছে চিরতরে, তাদের জায়গা নিয়েছে যন্ত্রচালিত বস্তু, বিদেশী নামে। তারাশঙ্করের লিখিত সাধু ভাষারও আজ চল নেই। ১০০ বছর পরেও পাঠক বইটি পড়ছে কেন... বইটি আমাদের ইতিহাস। আর তার চেয়েও বড়, বইয়ে তারাশঙ্কর যে সত্যকে উপস্থাপন করেছেন তা এখনো অক্ষুন্ন রয়ে গেছে শত বছর পরেও। বাঙালি চরিত্র, বাঙালি সংস্কার, সমাজ-ব্যবস্থা সব কিছুর ভোল পাল্টে গেলেও ভিতরের ডিএনএটা একই রয়ে গেছে। তাই বইটি রিলেট করতে একটুও কষ্ট হয় না। দিস ইজ পিউর গোল্ড!

বইটি আমার কাছে থ্রিলারের মত লেগেছে। ঘটনার শুরু একটা গোলমাল দিয়ে। এবং ঘুরেফিরে এই গল্পে বারবার গ্রাম সমাজের বিভিন্ন বিপর্যয় উঠে এসেছে। একটা ক্রাইসিস সব সময় উপস্থিত ছিল। এই গল্পটা বিভিন্ন পেশার মানুষের টিকে থাকার লড়াই নিয়ে। কারো জন্য লড়াইটা সহজ, কারো জন্য খুব বেশি স্যাক্রিফাইসিং। শত বছরের পুরনো সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে যন্ত্রচালিত কল। মানুষের চাহিদা শুধু ধানের সময় ধান, আর কলাইয়ের সময় কলাইয়ে সীমাবদ্ধ নেই। বিংশ শতাব্দীতে আধুনিকতার শুরু, তার ছোঁয়াচ লেগেছে সর্বত্র। আর তাই জমিদারেরও চাই মাত্রাতিরিক্ত খাজনা। সব মিলিয়ে পিতৃপুরুষের পেশাটা ধরে রাখা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। তারা কলে ছুটে খাটতে। কলকারখানা যারা তৈরি করল তারা হয়তো চেয়েছিল স্বয়ংক্রিয় জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু কলে যারা চাকরি করতে ছুটল, তারা সবাই একটা সোনালী অতীতকে ইতি টেনে দিল অন্নের সংস্থানে। চাষবাস এদেশের মানুষের বহু শত বছরের পেশা। চাষকে ঘিরে জীবনের সমারোহ, উৎসব-পার্বণ, কিংবা শুভ দিনের গণনা। মাটিকে তারা বড় ভালোবাসে, মাটি মা, মাটি দেবী।
'চাষ আর বাস'। পল্লীর জীবনে দুইটা ভাগ। মাঠ আর ঘর–এই দুইটি ক্ষেত্রেই এখানে জীবনের সকল আয়োজন—সকল সাধনা। আষাঢ় হইতে ভাদ্র—এই তিন মাস পল্লীবাসীর দিন কাটে মাঠে—কৃষির লালন-পালনে। আশ্বিন হইতে পৌষ সেই ফসল কাটিয়া ঘরে তোলে—সঙ্গে সঙ্গে করে রবি ফসলের চাষ। এ সময়টাও পল্লীজীবনের বারো আনা অতিবাহিত হয় মাঠে। মাঘ হইতে চৈত্র পর্যন্ত তাহার ঘরের জীবন। ফসল ঝাড়িয়া, দেনা-পাওনা মিটাইয়া সঞ্চয় করে, আগামী চাষের আয়োজন করে; ঘরের ভিতর-বাহির গুছাইয়া লয়। প্রয়োজন থাকিলে নূতন ঘর তৈয়ারি করে, পুরানো ঘর ছাওয়ায়, মেরামত করে; সার কাটিয়া জল দেয়, শন পাকাইয়া দড়ি করে। গল্প-গান-মজলিস করে, চোখ বুজিয়া হরদম তামাক পোড়ায়, বর্ষার জন্য তামাক কাটিয়া গুড় মাখাইয়া হাঁড়ির মধ্যে পুরিয়া জলের ভিতর পুঁতিয়া পচাইতে দেয়। চাষীর পরিবারের যত বিবাহ সব এই সময়ে—মাঘ ও ফাল্গুনে। জের বড় জোর বৈশাখ পর্যন্ত যায়। হরিজনদের চৈত্র মাসেও বাধা নাই, পৌষ হইতে চৈত্রের মধ্যেই বিবাহ তাহারা শেষ করিয়া ফেলে।

এই অশিক্ষিত ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠী তাদের উপরে আসা পরিবর্তনকে কিভাবে মোকাবেলা করছে, তা বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন তারাশঙ্কর। চরিত্রগুলো বেশ লেগেছে—অনিরুদ্ধ কর্মকার, দেবু পণ্ডিত, দুর্গা, তাদের আমরা আজও দেখতে পাই। দেখতে পাই যতীনকে, জগন ডাক্তারকে।

শ্রীহরি ঘোষের চরিত্রটি দারুন। ক্লাসিক যাকে বলে। পড়তে পড়তে মনে হলো কত শ্রীহরি ঘোষ দেখলাম জীবনে। পরের আত্মসাৎ করে নিজের গণ্ডি বাড়ানো, তারপর সাধু বনে যাওয়া, মসজিদ বা মন্���ির প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের হক কেড়ে নিয়ে, তারপর পকেট থেকে দশটা টাকা বের করে দিয়ে খুব দরদী আত্মা হওয়ার চেষ্টা। শ্রীহরি ঘোষ আমাদের বড্ড চেনা। তিনি পুরাতন হলেন না এখনো।

কিন্তু আমজনতা ছিরু দাস কিংবা শ্রীহরি ঘোষকে অগ্রাহ্য করে কি করে। পয়সাই সব। তা তো ব্রতকথাতেই বলা আছে।
মা লক্ষ্মীর নাম শ্রী। শ্রী যার আছে—তারই শ্রী আছে; সে মনে বল; চেহারায় বল; প্রকৃতিতে বল।

ঝড়ের বেলা বাড়ি ফিরতে গিয়ে সেটা অনিরুদ্ধও উপলব্ধি করতে পারে—
সাপ কি অপর জানোয়ারকে সে ভয় করে না, ভয় তাহার মানুষকে। ছিরুকে আগে গ্রাহ্য করিত না। কিন্তু শ্রীহরি এখন আসল কালকেউটে।


আর তখনই মানুষ আকাঙ্ক্ষা করে এক দেবতার, যে কিনা সকলের জন্য ভাবে। সেই হলো গণদেবতা।

তারাশঙ্কর পরে বোরড হওয়ার কোন জায়গা নেই। এখনো রিলেট করা যায়, যাবে ততদিন—যতদিন টিকে থাকার লড়াই চলবে।

Profile Image for Jannatul Firdous.
89 reviews178 followers
October 15, 2021
গণদেবতা উপন্যাসটি পড়া শেষে নীরবে পাঁচটা তারা দিয়ে চলে গেলাম। শেষটা পড়ে এতটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে অনেকক্ষণ ভাষা খুঁজে পাইনি।
এই ব‌ইটা নিয়ে খুব বেশি রিভিউ চোখে পড়ে না। তার প্রধান কারণ সম্ভবত এটা পড়ার পর সে সম্পর্কে রিভিউ লেখার জন্য কেউ নিজেকে যোগ্য মনে করে না।
একদা হুমায়ূন আহমেদ আফসোস করে লিখেছিলেন, "তারাশঙ্করের এই উপন্যাসটি যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়নি এটা তারাশঙ্করের না,নোবেল কমিটির দুর্ভাগ্য।"
এত অসাধারন উপন্যাস‌ও মানুষ লেখে? কি নেই এই ব‌ইয়ে? মানুষের চরিত্রের বাস্তব সব দিক এতে তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন ছিরু পাল। খারাপ লোক সে, কিন্তু প্রতিটা কাজের পেছনে তার যুক্তি থাকে। খারাপ কাজগুলোও সে "জনগনের মঙ্গলের জন্য করছি" টাইপের ধারনা থেকে করে।

দেবু পন্ডিত,জগন ডাক্তার,যতীন।‌ নিজের আগে অন্যের কথা ভাবে এরা। অন্যের জন্য অকাতরে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয় এরা।

অনিরুদ্ধ,হরেন ঘোষাল। কখনো অতি ভালোমানুষ, ক্ষেত্রবিশেষে দুশ্চরিত্র।

দুর্গা। স্বৈরিনী সে। কিন্তু তার নিজের লোকেরাই তাকে তা বানিয়েছে। যখন মন মানসিকতার আলোচনা আসে তখন সে চমৎকার,সে দয়ালু,সে দাত্রী,সে সবার বিপদে ছুটে যায়।

পদ্ম। নিঃসন্তান এক নারী। সন্তানের জন্য সর্বদা আকুল সে।

বিলু। দেবু পন্ডিতের যোগ্য সহধর্মিণী।

ন্যায়রত্ন। তার আবির্ভাব শান্তি শান্তি ভাব এনে দেয় পাঠকের মনে।

আরো আছে অনেক চরিত্র। গল্পটা শুদ্রের গ্রামের। সেখানে সব‌ই চলে। বারো মাসে তের পার্বন লেগেই থাকে। সেখানে জমিদারের রাজত্বে ‌প্রজাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। সুদ দিতে দিতে,খাজনা দিতে দিতে তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাদের জন্য ভাবে দেবু, তাদের জন্য ভাবে জগন,যতীন‌ও। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে শ্রীহরীও তাদের জন্য ভাবে।
সবমিলিয়ে উপন্যাসটা একটা পারফেকশন। হাইলি রেকমেন্ডেড যারা পড়েননি তাদের জন্য।
Profile Image for Prabhat  sharma.
1,549 reviews23 followers
October 7, 2019
Ganadevta by Tara Shankar Bandopadhyay has been published in Hindi by Bharatiya Gyanpeeth Prakashan. I have read it in Hindi. It is a rural story in two parts- Chandi mandap and Panch Gram. I have read autobiographies of Maharashtra- Shantabai Kamble- Majya Jalmachi Chittarkatha, The Weave Of My Life: A Dalit Woman’s Memoir- Urmila Pawar, rural workers of 32 low castes - carpenters, basket weavers, blacksmiths, barber who get a small part of the crop which is insufficient for the survival of their families. Therefore, these classes have left the villages and shifted to cities where there are more opportunities of survival as labour in factories and families as domestic help. Similar is the position in Bengal villages. In the first part, the barber, blacksmith, carpenter refuse to work because the compensation paid is insufficient. The matter is planned to be resolved at Chandi Mandap by the elder villagers. During the finding of a solution, Shiv Hari the negative person tries to bring the village men towards him burning crops and by the help of police puts them in jail. While the hero Debu and Durga endeavor to help the people. The main problems- illiteracy, superstition, poverty and resultant starvation has been shown. Characters go out and get converted to Christianity. Over all it is interesting book of read.
Profile Image for Nuzat.
15 reviews
July 26, 2022
১৯২৫ সালে বাংলার গ্রামীণ সমাজের প্রেক্ষাপটে রচিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর গণদেবতা। জমিদারের শাসন, গোমস্তার অত্যাচার, খাজনা বৃদ্ধির জন্য দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কষ্ট যে সমাজের চিরচেনা রীতি।
গণদেবতার প্রধান চরিত্র দেবু, উপন্যাসের শুরুতে দেবুর বেশি প্রাধান্য না থাকলেও শেষের দিকে আমরা দেখতে পাই তার উপর মানুষের অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা। দরিদ্র কবলিত, অর্ধশিক্ষিত এ যুবকটি গ্রামের পাঠশালার পণ্ডিত, পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে না পারলেও জ্ঞানচর্চায় আগ্রহ রয়েছে। গ্রামের আর সবার চেয়ে একটু ভিন্ন ধরণের, একটু স্বতন্ত্র তার চিন্তাধারা। গ্রামের মানুষের স্বার্থপরতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা তাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু এই গ্রামের মানুষগুলোর উন্নয়নের জন্য, তাদের বিপদে সাহায্যের জন্য দেবু সাধ্যমতো, কখন সাধ্যের অতিরিক্ত করেছে। অন্যায় নিয়ম-শৃঙখলার বিরুদ্ধে সোচ্চার দেবু সরকারি কর্মচারীদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে জেলে যেতেও ভয় পায়নি।
দেবুর পর যে চরিত্রটি আমার পছন্দ সে হলো স্বৈরিণী দুর্গা। দুর্গার জীবিকা নির্বাহের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি থাকলেও তার উদার মনোভাব পাঠকদের মনে জায়গা করে নেবে। আশেপাশের মানুষের বিপদে আর্থিকভাবে তাদের পাশে থেকেও সে সাহায্য করেছে। যাদের কাছে সে বারবার তিরষ্কৃত হয়েছে তাদের বিপদেও দুর্গা পাশে থেকেছে। উপন্যাসটির আরও উল্লেখযোগ্য চরিত্র জগন ডাক্তার, নজরবন্দি যতীন, অনিরুদ্ধ কর্মকার, পদ্ম, বিলু, দ্বারকা চৌধুরী এবং শ্রীহরি ঘোষ। দেবুর প্রতিবাদে সবসময় পাশে ছিল জগন। কিছুটা খিটমিটে ও অহংকারী হলেও জগনও চিন্তা করত মানুষের কল্যানের জন্য, দেবুর বুকে লুকিয়া থাকা বিপ্লবের আগুন উস্কে দেওয়া যতীন। দেবুর স্ত্রী বিলুকে আমার মনে হয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী একজন মানুষ। বৃদ্ধ দ্বারকা চৌধুরী উপন্যাসের একটি স্বতন্ত্র চরিত্র, যার মাঝে শুভ্রতা আছে, বিচারবুদ্ধি আছে। তাঁর উপদেশ দেবুকে প্রভাবিত করে।
উপন্যাসে অত্যাচারী গোমস্তা ছিরু পাল ওরফে শ্রীহরি ঘোষ। প্রথমে শ্রীহরি ছিল একজন অশিক্ষিত, ধনী মহাজন। বিত্তের জন্য তাকে সবাই খাতির করলেও মানুষের সম্মান সে পেত না। পরবর্তীতে শ্রীহরির অনেক পরিবর্তন হয়। গ্রামের মানুষের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা, গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপ পাকা করা ইত্যাদি কাজ করে সে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করে। এরপর হয়ে যায় গ্রামের গোমস্তা, তারপর জমিদার। শ্রীহরির আচরণ এরপরেও অন্যায় ফুটে উঠেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষদের জন্য যে সে ভাবেনি তা নয়।
উপন্যাসের শেষে দেবুর পরিণতি দুঃখজনক।

গণদেবতা গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে লেখা উপন্যাস হলেও এখানে পাওয়া গেছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন দর্শন ও গ্রাম্য সমাজব্যবস্থা সম্বন্ধে গভীর জ্ঞানের নিদর্শন।
7 reviews38 followers
May 14, 2024
One more narrative by Tarashankar of a transitional phase in the ever evolving socio-economic-political arrangement of our rural sphere. Gonodebota - a book emphasizing the power of people - tries to shed some light on the impact of Industrial Revolution on Bengal’s rural society by portraying the instability and tumult in the people’s life owing to the changeover from craft-based to industry-based living system. The mechanized production system created work for the amateur civilians but at the expense of craftsmen’s generations-long skills and their magnificent crafts. The need to adjust to the changing times and survive, the duty towards one’s family, the unyielding dedication and passion for one’s own art, the conscientious drive to abide by one’s principles and ethics, the innate yen for giving back to the society, the desire to hold on to the disappearing values and traditions - dilemma and conflict among these becomes so dire at times that not only does it cause the destruction of an entire family, but the art of craft along with the assiduously acquired skill is lost as well.

Fenced in by the unjust loan and crippling taxes the rural society was suffocated and taking the last few breaths under the occupation of evil. Immorality, disease, poverty, disorder, corruption, malfeasance crept into the community hiding behind the darkness of illiteracy, ignorance, and nescience. The grey-haired rural society has been gasping for air for so long that it is difficult to find the root of its distress now. Yet in the tendency among the common people to cooperate in others’ need, in the utterance of a few kind words of courtesy despite having differences, in the politeness towards the elders and the affection towards the children, in the festivals and celebration of social and religious rituals, in the coming-together of people of all levels during the time of malady, in the recognition and appreciation of the virtuoso and worthy, in the raised voices against the tyranny and injustice we still see the glimpses of healthy, able, steady, calm, kind, wise, truthful and beautiful rural society from the forgotten times.

These little traces are disappearing today. Industrialization probably aided human race to survive in the over-populated disease-ridden sickly earth but challenged and eventually caused the death of human's expertise in crafts and wisdom. However, the ones not giving in to such despairing times are eventually guided by the Almighty and shown the destined path no matter how heartbreaking and sad that path is. This was explained beautifully through a story narrated by a wise elderly inside the story and left a faint hope amid the overwhelming hopelessness.

This book was a difficult read in the present time when we are witnessing the dwindling human prowess in language, art, science as mankind’s general intelligence is being challenged by the advent of artificial intelligence. It seems human race survives by losing a human part of itself.
Profile Image for অলকানন্দা .
109 reviews5 followers
March 17, 2021
পাঠ প্রতিক্রিয়া
বইয়ের নামঃ গণদেবতা
লেখকঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
ধরনঃ সামাজিক-আঞ্চলিক উপন্যাস
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৪২
প্রকাশনীঃ মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ (ভারত)
মোট পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২৬৭

আভিধানিক ও পৌরাণিক অর্থ অনুযায়ী, “গণদেবতা” শব্দের নানাবিধ অর্থ রয়েছে। কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর “গণদেবতা” উপন্যাসে “গণদেবতা” শব্দটির এক নতুন অর্থ তুলে এনেছেন, আর তা হল “গণজাগরণের শক্তি হতে সৃষ্ট দেবতা” বা “জনশক্তি”! এ দেবতা পুরাণ থেকে আসা কোন অলৌকিক শক্তিধারী দেবতা নয়; এ দেবতা রক্তমাংসের দেবতা, যাদের প্রতিটি রক্তকণিকায় প্রবাহিত হচ্ছে অন্যায়-শোষণ-বঞ্চনার প্রতি তীব্র প্রতিবাদ।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনীতে কি জাদু আছে জানিনা, কিন্তু তিনি অকপটে বইটির প্রতিটি পরতে পরতে যেমন তুলে ধরেছেন বাংলা ও বাঙালির হাজারো বছরের পুরনো সেই আদি-অকৃত্রিম সামাজিকতাকে, তেমনি তুলে ধরেছেন তাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের দৈনন্দিন সুখ দুঃখ, হাসি কান্নাকেও। এত সাবলীলতার সাথে তিনি প্রাচীন ভারতবর্ষের আঞ্চলিক ভূখণ্ডের মাটির কোলঘেঁষা সরল সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন যে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গিয়েছি বারবার।

এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে ১৯২৫ সালের গ্রামবাংলাকে কেন্দ্র করে; আর এমনই একটি গ্রামের নাম শিবকালীপুর। পার্শ্ববর্তী গ্রাম কঙ্কনা অর্থনৈতিক দিক থেকে যতখানি সমৃদ্ধ, শিবকালীপুর ঠিক ততখানিই যেন পিছিয়ে রয়েছে। আরো গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত এই গ্রামের নিম্নশ্রেণীর মানুষগুলোর উপরেই যত শোষণ ও অবিচারের পাহাড়!

এমনই দুজন মানুষ হচ্ছে অনিরুদ্ধ কর্মকার এবং গিরীশ সূত্রধর, যারা শিবকালীপুরের নিম্নগোত্রীয় খেটে খাওয়া মানবশ্রেণীর প্রতিভূ। নিজেদের অধিকার বা পাওনা বুঝে না পেয়ে দুটো পয়সা বেশি উপার্জনের তাগিদে গ্রামের বাইরে দোকান দেয় তারা—আর এই তাদের অপরাধ। এ উপলক্ষ্যে পঞ্চায়েত-সালিশ সরগরম—তাদের বিচারের আশায়।

তবে নীরবতাও যে অনেকসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ হয়ে থাকে, তারই পরিচয় দেয় এই নিপীড়িত দ্বয়ী, সালিশ ত্যাগ করে বিচার না মানার মাধ্যমে। কিন্তু তাদের এই আচরণকে আস্পর্ধা হিসেবে ধরে নেয় এই বিচার-শালিশের মধ্যমণি এবং গ্রামের মহাজন শ্রীহরি পাল ওরফে ছিরু পাল।

অনিরুদ্ধ-গিরীশ দুজন যদি নিপীড়িত হয়ে থাকে, তবে শ্রীহরি সেই নিপীড়নের হোতা। গাঁয়ের মানুষ যমের মত ভয় করে চলে এই শ্রীহরিকে, আর সেটিই যেন তার মাঝে থাকা অত্যাচারের আকাঙ্ক্ষাকে উস্কে দেয় বারবার। আর তাইতো পাতু বায়েনের পুরো পাড়াটিকে জ্বালিয়ে দিতে তার হাত কাঁপেনি। অর্থের প্রাচূর্যে বসবাস করা ছিরু পালের শ্রীহরি ঘোষ নামকরণের মাধ্যমে গোত্রান্তর পুরো গ্রামটিতে এই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যে, ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে অন্যায়কারী যথেচ্ছ আচরণ করতে পারে সমাজের প্রতি।

শিবকালীপুরে বায়েন-বাউড়িদের মত কিছু নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষের আধিক্য হলেও শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিও কম নেই। পণ্ডিত দেবু ঘোষ তাদেরই মাঝে একজন, যার রয়েছে সকল অন্যায়-অবিচার-শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। অকারণ অসম্মান এবং অবহেলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় কারাদণ্ড ভোগ করতেও পিছপা হননি দেবু, বরং সজোরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গিয়েছেন, চণ্ডীমন্ডপের প্রতিটি মিটিংয়ে দৃপ্তচিত্তে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন সাবলীলতার সাথে।

ন্যায়কে বুকে করে, ন্যায়কে খুঁজতে এই ন্যায়েরই পথে যে চলে, তার রাস্তাটা সহজ হয়না মোটেও। আর দেবু ঘোষ তারই উজ্জ্বল প্রমাণ। দেবুর এই লড়াইয়ের পথে তাঁকে প্রতিটি মুহূর্তে অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী বিন্ধ্যবাসিনী ওরফে বিলু, জগন ডাক্তার, এমনকি পাতু বায়েনের স্বৈরিণী বোন দূর্গাও। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, স্বার্থপরতা কিংবা বঞ্ছনার মত প্রতিকূলতা বা রাহুগুলো যখন শিবকালীপুরকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো, এসবের ভীড়ে তখনই আগমন ঘটে রহস্যময় নজরবন্দী যুবক যতীনের।

নিজের মাটি ও মানুষের সাথে হওয়া প্রতিটি অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে দেবু যখন ক্ষণিকের জন্য অসহায় এবং অন্যমনস্ক বোধ করছিলো, ঠিক তখনই তার বুকে আশার আলো জাগিয়ে তোলে এই নজরবন্দী যতীন।
ও হ্যাঁ, উপন্যাসের আরো একটি চরিত্র আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে, আর তিনি হলেন বৃদ্ধ দ্বারকা চৌধুরী। তাঁর নীরবতা ও সাবলীল কোমলতার মাঝেও ছিল এক দৃপ্ত প্রতিবাদী চেতনা, যে চেতনা প্রতিটি মুহূর্তে অনুপ্রাণিত করেছে দেবু, জগনের মত চরিত্রদের।

উপন্যাসজুড়ে অনিরুদ্ধ-পদ্মের দাম্পত্যজীবনের খণ্ড খণ্ড চিত্র পড়বার সময় পদ্মের অভিমানী অথচ মমতাময়ী সেই চারিত্রিক আভাসগুলোই চোখের সামনে ভেসে আসছিলো বারবার। নিঃসন্তান পদ্মের জীবনে কষ্ট কম নয় বৈকি, তবু তা সত্ত্বেও নিজ সংসার এবং কাছের মানুষগুলোর প্রতি তার দায়িত্বজ্ঞান বেশ মুগ্ধ করেছে আমাকে।

উপন্যাসে যেমন ফুটে উঠেছে গ্রামীণ সামাজিক, অর্থনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের দিক পরিবর্তন, তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর ফলে সামাজিক শ্রেণীভেদে কিছু মানুষের দুঃসহ যাতনার এক বাস্তব চিত্র। এর মাঝেও গ্রামে পালন করে আসা পূজা-পার্বণ, চণ্ডীমণ্ডপের জমায়েত, পালাগানের অনুষ্ঠানের বর্ণনাগুলো আমার পঠনস্মৃতিতে ভাস্বর।
রেটিংঃ ৪/৫ 🌼
8 reviews
January 31, 2021
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
‘ ভয় নাই, ওরে ভয় নাই —
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই । '

কাহিনীর একেবারে শেষের দিক , আর হয়ত গোটা দশেক লাইনের পরেই সমাপ্তি টেনেছেন লেখক তখন ' নজরবন্দি বাবু ' অর্থাৎ যতীন আবৃত্তি করে ওঠে 'পূরবী' থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখাটি । আমার কাছে এখানেই শেষ হয় উপন্যাসটি , তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ' গণদেবতা ' । গনদেবতা ���ামের সাথে পরিচয় সাহিত্যিক অনেক আগেই ঘটিয়ে দিলেও এই স্থানে না আসলে ঠিক সম্পৃক্ত হতে পারেনা গণদেবতার যাত্রা । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধিমে আঁচে পুড়তে থাকা ভারতবর্ষের কোন এক অজ গাঁ শিবকালিপুরের গল্প হল “গণদেবতা” । ময়ূরাক্ষীর তীরে এই গ্রামটিতে অধিকাংশ মানুষ নিম্ন সম্প্রদায়ের বায়েন ও বাউরি আর হাতগোনা কয়েকটা উচ্চ জাতের বাস ।

ভারতের গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে Sir Charles Matcalfe বলেছিলেন,

“They seem to last where nothing else last. Dynasty after dynasty tumbles down. Revolution succeeds revolutions! Hindu, Pathan, Moghul, Maratha, Sikh, English are masters in turn, but the village community remains the same.”

অর্থাৎ হাজার হাজার বছর ধরে ভারতবর্ষের মাটিতে হিন্দু, পাঠান, মুগল, ইংরেজ কত শাসক এলো গেল । কিন্তু গ্রামীণ ভারতবর্ষ হাজার বছর ধরে অকৃত্রিম,অপরিবর্তিত । সেই মহাজনের শাসন, সুদের হিসাবের নামে শোষণ আবার দিনশেষের গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের চাতালে সবাই সমাবেত হয়ে বাঁচার রসদ হিসেবে আনন্দের অনুসন্ধান । অভিন্ন জীবনেরধারা ।

শিবকালিপুর গ্রামটিও সেই একই । কিন্তু সময় বদলায় সাথে বদলায় রীতিনীতি , সংস্কার । নতুনেরা অভিনবত্বে মাততে চায় , প্রবীণেরা চায় চিরাচরিতকে আঁকড়ে বাঁচতে । শিবকালিপুর গ্রামের একমাত্র কামার অনিরুদ্ধ এবং ছুতোর গিরিশ গ্রামের কাজ ফেলে শহরে গিয়ে দোকান খোলে দুটো নগদ উপার্জনের আশায় এবং ‘এই সামান্য কারনেই গ্রামে একটা বিপর্যয় ঘটে’ যায় । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিনিময়ের সংস্কারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কিছু নগদ উপার্জনের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে যেন অনিরুদ্ধের মাধ্যমে পরিবর্তনের একটা ঢেউ আসে গ্রামে । যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরে নাপিত , বায়েন ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মধ্যেও । এই পরিবর্তনের ঢেউ মশাল হয়ে জ্বলে ওঠে গ্রামের পাঠশালার পণ্ডিত দেবু ঘোষের হাত ধরে ।

উপন্যাসটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অনেক, প্রতিটি চরিত্রের মাহাত্ব উপলব্ধি করা যায় নিবিড় ভাবে । আভিধানিক ভাবে “গণদেবতা” –র একটি অর্থ হল গণশক্তির অধিদেবতা অর্থাৎ সরল দৃষ্টিতে এই উপন্যাসের “দেবু ঘোষ” । দীর্ঘদিনের শোষণের সংস্কারের বিরুদ্ধে যে মাথা তুলে দাঁড়ায় , নিজের সর্বস্ব হারিয়েও শেষ সামর্থ্যটুকুকেও ছড়িয়ে দেয় মানুষের মাঝে , সেই “ গণদেবতা” । আবার এক সময় দেবু ঘোষের মনে হয় – ‘ না, কাজ কি এসব পরের ঝঞ্ঝাটে গিয়া ? তাহার মনে পরে ন্যায়রত্নের গল্প । ধর্ম জীবন যাপন করিবার ইচ্ছে হয়’ । এখানেই দেবতা আর গণদেবতার অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে । এখানেই এই লেখাটা শেষ করা যেত কিন্তু সেটা সঠিক সমাপ্তি হয়তো হত না । আর এই উচাটনের কারন উপন্যাসের আরেকটি অবহেলিত হতে থাকা চরিত্র “দুর্গা” । ‘দুর্গা স্বৈরিণী নাকি বিপ্লবী ?’ - প্রশ্নটি পাঠক হৃদয়ে বঁড়শির মত বিঁধে থাকে পুরো উপন্যাস জুড়ে , এমনকি পাঠশেষেও যেটা নির্মূল ভাবে উপড়ে ফেলা যায় না ।

“সে দুরন্ত স্বেচ্ছাচারিণী ; ঊর্ধ্ব বা অধঃলোকের কোন সীমাকেই অতিক্রম করতে তার দ্বিধা নাই । নিশীথের রাত্রে কঙ্কনার জমিদারের প্রমোদভবনে যায় , ... নিজের কলঙ্ক সে গোপন করে না”। গ্রামের সেটেলমেন্ট কাণ্ডে দেবু ঘোষের জেল হলে দুর্গা সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকারদের বলে তাকে জামিনের চেষ্টা করে সেখানে সে তার একমাত্র অস্ত্র , শরীরটাকেই কাজে লাগায় কারন পেশকাররা ‘দুর্গা শ্রেনির নারির প্রতি অনুগ্রহ করিয়া থাকে’। এই দুর্গাই নিজের সাপে কামরের নাটক করে পুলিশ কে বিভ্রান্ত করে যাতে প্রজা সমতি করার অপরাধে যতিন , অনিরুদ্ধ আর দেবু ঘোষকে হাজতে যেতে না হয় । আদপে এই উপন্যাসে ‘দুর্গা’ নামক চরিত্রটি কোন ভুবনমোহিনী নারী রুপে ধরা দেয় না, ধরা দেয় অস্বস্তির কারন হিসেবে, যা সমাজের বাস্তব নগ্নতাকে ফুটিয়ে তোলে ।

https://faltufilosofar.blogspot.com/2...
Profile Image for Arnab Basu.
2 reviews1 follower
December 25, 2017
I read this book in it's original language ie Bengali. I will classify this belonging to the genre Society fiction. Tarashankar Bandyopadhyay's adept pen depicts the life of rural Bengal. The venue of the novel is Shivkalipur, situated in the banks of Mayurakshi. The central character is Debu or Debnath who is the teacher in the local school and has an ambition for being an important person. The main antagonist is Srihari paul aka chhiru paul aka Srihari Ghosh who is a comparatively rich farmer of the locality. Srihari too has the ambition of being an important person but he wants to achieve so by sheer power. The problem is that due to the excellent depiction by the author, none of the characters seem completely villainous neither they are completely heroic. The story revolves around the life of some very mundane people who has both parts of good and parts of evil in their life and the pen the the author has made them as is animate. The books (first part: Chandimandap and second part: Panchagram) narrates the lifestyle and never ending problems of pre-independence rural Bengal and draws out the little bits of joy,sorrow and overall harmony of a constant system which seems to be facing the early signs of decay. Definitely worth a read if not more.
Profile Image for Sohan.
274 reviews74 followers
December 30, 2020
ঋত্বিক ঘটকের কথা কানে নেই নাই। সেরা চারটি বা পাঁচটি বই বলে কিছু হয়না।
Profile Image for Pradipta Bandyopadhyay.
6 reviews1 follower
June 1, 2025
উপন্যাস : গণদেবতা
লেখক : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
যে_বইয়ের_অন্তর্ভুক্ত : তারাশঙ্কর রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড)
প্রকাশনী : মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স
প্রকাশকাল : অগস্ট, ২০২২
মুদ্রিত মূল্য : ৫০০/-

'গণদেবতা' উপন্যাসটি লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রাম্য পটভূমির উপর রচিত একটি সামাজিক উপন্যাস।

🔰️ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৯৮ সালে বীরভূমের লাভপুর গ্রামে। ১৯৭২ সালে তিনি পরলোক গমন করেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি লিখেছেন ষাট-টিরও বেশি উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণ-কাহিনী, নাটক ইত্যাদি। তার উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু উপন্যাসের মধ্যে 'গণদেবতা' অন্যতম। ১৯৬৭ সালে গণদেবতা উপন্যাসের জন্য তারাশঙ্করবাবু ভারতীয় সাহিত্য বিষয়ক সর্বোচ্চ সন্মান 'জ্ঞানপীঠ পুরস্কার'-এ ভূষিত হন।

🔸 ️'গণদেবতা' উপন্যাসটি ১৯৪২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। অভিধান খুঁজলে 'গণদেবতা' অর্থ হিসাবে পাওয়া যায় 'গণশক্তির অধিদেবতা' কিংবা 'গণই হল দেবতা স্বরূপ' এরকম। গ্রাম্য পরিবেশের উপর ভিত্তি করে লেখা এই উপন্যাসটি তুলে ধরেছে সেই 'গণ'-এরই কথা। মানুষের অভাব, ভালো-মন্দ, সমস্যা, প্রতিকার এই সবকিছুই হল এই উপন্যাসের ভিক্তি। লেখক জনসেবাকে তুলে ধরেছেন ভিন্ন রকমের আঙ্গিকে।স্বার্থ আর নিঃস্বার্থের প্রভেদ দেখিয়েছেন, আর শেষে সেই জনগণকেই তুলে ধরেছেন সর্বোচ্চ স্থানে।

🔰 গল্পের কাহিনী শুরু হয় অনিরুদ্ধকে নিয়ে। গ্রামের কামার অনিরুদ্ধ নাকি এখন আর গ্রামের মানুষদের কোনও কাজই করে দিচ্ছে না। গ্রামের থেকে অন্য জায়গায় জংশনে গিয়ে সে এখন নিজের ব্যবসা শুরু করেছে। এই নিয়েই গ্রামের মানুষদের সাথে কথা কাটাকাটি। কেউ কেউ তার কথা শুনে বুঝে সু-পরামর্শ দিতে প্রস্তুত; আবার কেউ বিরোধিতা করতেই উদ্যত। এখান থেকেই উঠে আসে এক চরিত্র ছিরু পাল ওরফে শ্রীহরি পাল (ঘোষ)।

🔹️ শ্রীহরি নেগেটিভ চরিত্র, পয়সাওয়ালা লোক। গ্রামের মাতব্বর। আবার গ্রামের ভালোর জন্য কিছু ব্যবস্থা করারও ইচ্ছা যে একেবারেই নেই তাও বলা যাবে না। হয়তো নিজের স্বার্থ আছে, হয়তো বা নেই। এগুলো সবটাই নিজস্ব উপলব্ধি।

🔸️ অনিরুদ্ধ বনাম শ্রীহরি তথা গ্রাম এই নিয়ে গল্প শুরু হলেও মন থেকে চিন্তা-ভাবনার লোক হিসাবে ধীরে ধীরে আসতে থাকে দ্বারকা চৌধুরী, জগন ডাক্তার, হরেন ঘোষাল কিংবা দেবু পণ্ডিতের নাম। আসে পদ্ম, দুর্গা, পাতু, বিলু প্রমুখের কথা। দেখতে দেখতেই গল্পের ছন্দ সুন্দরভাবে বদলে যায়। দেবু পণ্ডিতের মাহাত্ম্য বনাম শ্রীহরি ঘোষের আধি���ত্য এই স্রোতেই এগিয়ে চলে গল্প।

⚜️ লেখক গ্রামের মানুষদের অভাবের মধ্যেও বেঁচে থাকার, লড়াই করার প্রবৃত্তিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের নিজের অভাব থাকা সত্ত্বেও অন্যকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্তও দেখিয়েছেন। অভাবকে স্বভাব না বানিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাও তিনি তুলে ধরেছেন। তেমনই প্রতিবাদী চরিত্রকে স্বজন হারানোর মতো বেদনারও ভাগীও হতে হয়েছে তার লেখার মধ্য দিয়ে। এ যেন জলজ্যান্ত বাস্তবকেই লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন!

🔹️ উপন্যাসটি যখন শুরু করেছিলাম, বেশিদূর পড়তে পারিনি। কিছুটা পড়তাম, খেই হারিয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎই অল্প অল্প পড়তে পড়তে এমন একটা আকর্ষণ চলে এল যে বাকিটা শেষ করার তর সইছিল না। হয়তো গল্পের মতোই আমারও পড়ার উদ্যম বাড়িয়ে দিয়েছেন যতীনবাবুই।

✨️ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালের ঘটনা। বেশ কিছু বিপ্লবীকে, কিংবা প্রতিবাদী চরিত্রদের পুলিশের নজরে রাখার জন্য কারও গৃহে বন্দি বা কোনও গ্রামে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হত। যতীনবাবু সেরকমই এক চরিত্র আর তিনি এসেই যেন এক দমকা বাতাস বয়ে গেল গ্রামের উপর দিয়ে। তিনি এসেছিলেন, উদ্যমের জোগান দিয়েছিলেন আর তাই যাওয়ার আগেও উদ্যমতাকে চাগিয়ে দিয়ে বলে গিয়েছিলেন,

"উদয়ের পথে শুনি কার বাণী -
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান -
ক্ষয় নাই ওরে ক্ষয় নাই"

👉 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূরবী কাব্যগ্রন্থের 'সুপ্রভাত' কাব্যের এই কয়েকটি ছত্র বিপ্লবীদের কাছে ছিল অমোঘ বাণী। সেই প্রতিবাদী চিন্তাধারাই যেন ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন লেখক তার এই গণদেবতা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে....

❗️বি.দ্র. - কোলাজে গণদেবতা বইয়ের প্রচ্ছদের যে ছবিটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।

৩১.০৫.২০২৫
Profile Image for Yasir Arafat.
96 reviews
January 28, 2025
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’

১৯৬৭ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারপ্রাপ্ত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় উপন্যাস ‘গণদেবতা’। শিবকালীপুর গ্রামের একটি চণ্ডীমণ্ডপকে কেন্দ্র করে বাংলার গ্রামীণ রাজনীতির একটি রূপ এই উপন্যাসে বেশ সূক্ষভাবে ও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলের দুর্ভিক্ষ, সামন্তবাদের প্রভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্য আর তার সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন- এই সবগুলো বিষয়কে এই উপন্যাসে সন্নিবেশিত করেছেন তারাশঙ্কর। এর পাশাপাশি মানুষ কীভাবে নিজেদের পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে কীভাবে শহুরে জীবনযাত্রায় আগ্রহী হয় বা বলা ভালো শহরে যেতে বাধ্য হয়- সেই দিকেও লেখক আলো ফেলেছেন।

বস্তুত, এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু ‘মানুষ।’ তাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টিতে দেবতা পুরাণের কোনো পাথুরে মূর্তি নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেই দেবতা বা অসুর নিহিত।

“মানুষ সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে অঙ্কশাস্ত্রের অতিরিক্ত রহস্য পৃথিবীর সমুদ্রতটের বালুকারাশির মধ্যে একটি বালুকণার মতই ব্রহ্মাণ্ড-ব্যপ্তির অভ্যন্তরে এই পৃথিবী, তাহার মধ্যে যে জীবনরহস্য, সে রহস্য ব্রহ্মাণ্ডের গ্রহ-উপগ্রহের রহস্যের ব্যতিক্রম- এক কণা পরিমাণ জীবন, প্রকৃতির প্রতিকূলতা, মৃত্যুর অমোঘ শক্তি- সমস্তকে অতিক্রম করিয়া শত ধারায়, সহস্র ধারায়, লক্ষ ধারায়, কোটি কোটি ধারায় কালে কালে তালে তালে উচ্ছ্বসিত হইয়া মহাপ্রবাহে পরিণত হইয়া বহিয়া চলিয়াছে। সে সকল বাধাকেই অতিক্রম করিবে। আনন্দময়ী প্রাণবতী সৃষ্টি, অফুরন্ত তাহার শক্তি- সে তাহার জীবন-বিকাশের সকল প্রতিকূল শক্তিকে ধ্বংস করিবে, তাহাতে তাহার সংশয় নাই আজ।”
Profile Image for Masudur Tipu.
125 reviews2 followers
May 8, 2024
বই : গণদেবতা
লেখক : তারাশঙ্কর
ভূবনপুরের হাট দিয়ে উনার প্রথম লিখা পড়া! এরপরে একে একে রাইকমল,কবি,চাপাডাঙার বউ
তারপর হাসুলি বাকের উপকথা পড়ে উনার চরম ভক্ত হয়ে গেছি। লিখায় বুদ হয়ে থাকতে হয়, এর সাথে সাথে আমার সবচেয়ে পছন্দের ক্লাসিক লেখক বিভূতি, শরতের সাথে উনিও হয়ে যান।
তারাশঙ্কর আমার কাছে অনেক বেশি আন্ডাররেটেড মনে হয়। বিভূতিভূষণের এর থেকে কোন অংশে কম নন তারাশঙ্কর!

আজকের উনার মোটা বই " গণদেবতা " পড়ে শেষ করলাম আর স্তব্ধ হয়ে রইলাম। কি শেষ করলাম!

হাসুলি বাকের উপকথার মতোই বুদ হয়ে রইলাম এই বই পড়েও!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এক নিভৃত গ্রাম শিবকালিপুর এর নানা দিক নিয়ে এই বই লিখা। ক্লাসিক মাস্টারপিস যাকে বলা যায় 🤍।
ক্লাসিক লাভারদের জন্য মাস্টরিড বইটি 😊
এখনো আমাদের সমাজে এই শ্রী হরিরা আছেন আর গিলছেন আমাদের!
Displaying 1 - 30 of 59 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.