“হলেপ করে বলতে পারি, আমি দেখা দেব একটা বিশাল ধূমকেতুর মতো—” বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর এই আত্মঘোষণায় খাদ ছিল না। এ-চিঠিটি যখন লেখা, তখনই তিনি খ্যাতি-অখ্যাতির তুঙ্গে। বস্তুত, বাংলা সাহিত্যের আকাশে বিরল ও বিশাল এক ধূমকেতুর মতোই আবির্ভাব মাইকেল মধুসূদনের। চোখ-ধাঁধানো দীপ্তিতে ভাস্বর, ভিন্নতর গতিপ্রকৃতি, স্বতন্ত্র এক কক্ষপথ। নশ্বর দেহটি ধূমকেতুর মতোই দেখা দিয়ে অচিরে মিলিয়ে গেছে, কিন্তু রেখে গেছে এক চিরস্থায়ী ঔজ্জ্বল্য-কীর্তিতে, জীবনে। সৃষ্টির মতোই আশ্চর্য এক বর্ণময় জীবনও মাইকেল মধুসূদন দত্তের। প্রতিভা ও প্যাশনের, আকাঙক্ষা ও আকিঞ্চনের, বৈপরীত্য ও নাটকীয়তার অন্তহীন দ্বন্দ্বে দীর্ণ, বিধ্বস্ত, বিপন্ন। সজীব, স্বমহিম এবং সমকালকে ছাপিয়ে-ওঠা সেই জীবন নিয়ে কিন্তু আজও কোনও প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হয়নি। যত-না তথ্য, তার ঢের বেশি জনশ্রুতি ও অনুমান-নির্ভর এতকাল-লিখিত প্রায় প্রতিটি মাইকেল-জীবনী। সেই আক্ষেপ ঘোচাতেই এই গ্রন্থ। এই বিপুল পরিশ্রমসাধ্য প্রামাণ্য মাইকেল-জীবনী, সেইসঙ্গে জীবন ও সৃষ্টির লুপ্ত যোগসূত্রগুলির উজ্জ্বল উদ্ধার। বলা বাহুল্য, এ-কাজ সহজ ছিল না। মাইকেল-জীবনীর উপাদান ছড়িয়ে আছে নানান জায়গায়। যশোর থেকে কলকাতা, মাদ্রাজ থেকে লন্ডন, ভার্সাই থেকে এডিনবরায়। এমন প্রতিটি জায়গায় এতকাল পরে হানা দিয়ে, দুষ্প্রাপ্য নথিপত্রের ধূলিধূসর পৃষ্ঠা এবং হারিয়ে-যাওয়া, ছড়িয়ে-থাকা সমুদয় নথিপত্র ঘেঁটে দীর্ঘদিনের অক্লান্ত চেষ্টায় গোলাম মুরশিদ উপহার দিলেন এমন-এক গ্রন্থ, যা একাধারে মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম নির্ভরযোগ্য জীবনকথা এবং সেই জীবনের আলোয় মাইকেল মধুসূদনের রচনাবলিকেও নতুনতর দৃষ্টিতে মূল্যায়নের প্রয়াস। দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশকালেই সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবী-পাঠকমহলে আলোড়ন তুলেছে গোলাম মুরশিদের এই রচনা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৭২তম জন্মদিনে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত।
Ghulam Murshid (Bengali: গোলাম মুরশিদ) is a Bangladeshi author, scholar and journalist, based in London, England.
জন্ম ১৯৪০, বরিশালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। পি এইচ ডি— ঐতিহাসিক ডেইভিড কফের তত্ত্বাবধানে। গবেষণার বিষয়, ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু সমাজ সংস্কার আন্দোলন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দু দশক ধরে অধ্যাপনা । মাঝখানে দু বছর কেটেছে মেলবোর্নে, শিবনারায়ণ রায়ের তত্ত্বাবধানে, পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা কর্মে। ১৯৮৪ সাল থেকে লন্ডন-প্রবাসী। | বেতার-সাংবাদিকতা এবং শিক্ষকতার অবসরে প্রধানত আঠারো শতকের বাংলা গদ্য এবং মাইকেল-জীবন নিয়ে গবেষণা। প্রধান নেশা গবেষণার— অতীতকে আবিষ্কারের । বারোটি গ্রন্থ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালার ওপর ভিত্তি করে রচিত গ্রন্থ: রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা (১৯৮১)। পিএইচ ডি. অভিসন্দর্ভের ওপর ভিত্তি করে লেখা সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক (১৯৮৫)। মহিলাদের নিয়ে লেখা Reluctant Debutante: Response of Bengali Women to Modernization (১৯৮৩) (বাংলা অনুবাদ: সংকোচের বিহ্বলতা [১৯৮৫]) এবং রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া : নারীপ্রগতির একশো বছর (১৯৯৩)। অন্য উল্লেখযোগ্য রচনা, কালান্তরে বাংলা গদ্য (১৯৯২), যখন পলাতক (১৯৯৩) এবং বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার আদি-পর্ব (১৯৮৬)। প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২)। আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বক্তৃতা দান (১৯৯১-৯২)। ছদ্মনাম হাসান মুরশিদ। এই নামে একটি উপন্যাসও লিখেছেন।
এতোটাদিন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে চিনতাম একভাবে। আজ সম্পূর্ণ নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। খারাপ লাগলো খুব, মায়াও লাগলো.. সাথে বই শেষে একটা আক্ষেপ মিশানো দীর্ঘশ্বাস। বেশ ক'দিন আগে নির্মলেন্দু গুণের 'এবং প্যারিস' বইয়ে সন্ধান পাই মধুকবির। সেই বইয়েই জানতে পারি গোলাম মুরশিদের লিখিত মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পূর্ণ আত্মজীবনীর কথা। বর্ণনামূলক ভাবে লেখা হলেও লেখার স্টাইল প্রাঞ্জল এবং ইন্টারেস্টিং। পড়া আটকায় না একটুও। তাছাড়া উনার (কবি মাইকেল) জীবন এতোটাই উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গেছে! যে অতি কটকটা ভাষা হলেও মনে হয় বই হিসেবে পার পেয়ে যেতো। আত্মজীবনীটার নাম 'আশার ছলনে ভুলি' সত্যিই তাই। কবি মাইকেল মধুসূদনের গোটা জীবনটাই যে এমন। কিসের এক মোহে বার বার নিজেকে ভেঙেছেন আবার গড়েছেন। ব্যক্তিজীবন হোক কিংবা কাব্যচর্চার সময়টুকু বা অন্য যে কোন কিছু.. চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন সব কিছুকেই। কখনও বা ভাগ্য অনুকূলে ছিল কখনও বা প্রতিকূলে। পড়ালেখার প্রতি ছিল দুর্নিবার আকর্ষণ। অতি সংকটে কিংবা অভাবকালীন সময়েও যখন যেভাবে পেরেছেন পড়েছেন, শেখার চেষ্টা করেছেন। ছিল একটা এডভেঞ্চারের নেশাও.. মানে সচরাচর বাঙ্গালীরা যা হয়, নিজস্ব বলয়ে আটকে থাকার যে অভ্যাস সেটা ছিল না তার কোন কালেই। যার প্রমাণ দেখতে পাই কবির জীবনের প্রায় প্রতিটা বাঁকে। বাবা-মায়ের চাপিয়ে দেয়া মেয়েকে বিয়ে করবেন না বা নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য পিতৃপুরুষের ধর্ম বিসর্জন দেয়া, শত বিপত্তির পরেও নিজের পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করা, বারে বারে ভাগ্য বদলের আশায় নিজের জীবন নিয়ে জুয়া খেলা, কখনও লক্ষ্মী কখনও বা সরস্বতী দেবীর আরাধনা.. নেহায়েত কথাচ্ছলে চ্যালেঞ্জ দিয়ে লিখে ফেলা একে একে মহৎ সব সাহিত্য আবার নিজের বাস্তবিক বোধ বুদ্ধির অভাবে সব খুইয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা-সত্যি! ভাবা যায় না। প্রচন্ড রকমের প্রতিভাবান হওয়া ছাড়াও কবি ছিলেন প্রচন্ড রকমের ভোগী, যশপ্রার্থী এবং কল্পনাবিলাসী। এবং বেশ কিছু পরিমাণে আত্ম-অহমিকায় অন্ধ। নিজেকে নিজেই বলেছেন ধূমকেতু। আসলেই তাই। আফসোস একটাই.. কবি একটু নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে হয়তো আরও অন্যরকম হতো.. কিংবা... ওই যে একটা গান আছে না... 'কি পেলে কি ভালো হতো, ভেবোনা.. যা পেয়েছো তাই বা কজন পায় বলোনা'।
অনেকের ভিড়ে থেকেও একা এই মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাথে পরিচয় স্কুলের পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে। রসাল ও স্বর্ণলতিকা পড়তে যেয়ে মূলভাবটা ভালো লাগলেও কবিতার অন্যান্য আজাইরা অংশ (কবিতা ঠাডা মুখস্ত করা, দাঁড়ি কমার যন্ত্রণা, বিরক্তিকর শব্দার্থ) সব কিছু মিলিয়ে খুবই যন্ত্রণা মনে হতো। এ ছাড়া পরবর্তীতে কপোতাক্ষ নদকে মনে করে অতি কঠিন বাংলায় কবির হা হুতাশ পড়তে পড়তে মনে হতো, ভাই ইংলিশে লিখছিলি সেটাই তো ভাল ছিল কি দরকার ছিল বাংলায় ব্যাক করার! :v এ তো গেল বাংলা প্রথম পত্রের কথা। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ভাবসম্প্রসারণেও আছেন তিনি। 'যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি...' লাইনটির ভাবসম্প্রসারণে অমিতব্যয়ী চরিত্রের অন্যতম উদাহরণ এই কবি। এছাড়াও আরও কত কীর্তির যে কাণ্ডারি এই কবি বলে শেষ করা যাবে না.. খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ক্যারেক্টার। ভদ্রলোক একাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এক ধাক্কায় এগিয়ে দিয়েছিলেন অনেক দূর। সমসাময়িকেরা নানান কারণে সে সময় মধুকবির সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারলেও আজ বাঙ্গালী ও বাংলা সাহিত্য জানে কবির মর্ম। 'মানুষ' মাইকেল মধুসূদন দত্তকে আবিষ্কার করবার জন্য অত্যন্ত পারফেক্ট একটা বই। রেকমেন্ডেড।
তথ্যের বোঝা মাঝেমধ্যেই অত্যন্ত ভারী ঠেকেছে। ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে বার কয়েক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা পাওয়া গেল বই থেকে তা অমূল্য। গোলাম মুরশিদের সীমাহীন মাইকেল-প্রীতি থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরাসক্ত ও নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছেন, এটাই এ বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক বলে মনে হলো। সাহিত্য রচনায় গ্রিক নাটকের নিয়তিবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন মাইকেল। বাস্তবজীবনেও দেখা যায় কবি বারবার নিয়তির কাছেই পরাভূত হয়েছেন। অবশ্য এজন্য নিজের দায়ও কোনো অংশে কম ছিল না। তাঁর অনেক কাজের তুলনা চলে পতঙ্গের আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে। পার্থক্য এই যে পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকার পরেও ঝাঁপ দেওয়া থেকে মাইকেল নিজেকে বিরত রাখেননি। আর্থিক অনটন আর তজ্জন্যে সৃষ্ট হতাশা থেকে কিছুটা নিস্তার পেতে অপরিমিত মদ্যপান করে মৃত্যুকে দ্রুত কাছে টানার সময়ে বলেছিলেন, ‘‘এ হলো আত্মহত্যার মন্থর কিন্তু নিশ্চিত একটি উপায়। তবে গলার কাটার মতো কষ্টের নয়।’’
দেশ-এ ধারাবাহিক আকারে প্রকাশের সময় পড়া এই লেখাটির সবচেয়ে বড়ো শক্তি আর দুর্বলতা একটাই: লেখকের নির্মোহ লেখনী। এর ফলে তথ্যগুলো প্রায়ই শুষ্কং-কাষ্ঠং হয়ে উঠেছে। আবার কিংবদন্তির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মানুষটিকে বের করে আনতেও মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে এই লেখনী। তবু এই বইটাকে আমি তিন তারাই দিচ্ছি, কারণ মধুকবির মনোজগৎ নির্মাণে সমকাল ও তাঁর ক্লাসিক সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ কীভাবে যৌথ ভূমিকা পালন করেছিল, সেটার পরিচয় আমি এই বইয়ে তেমনভাবে পাইনি। হয় এই বইয়ের একটি পূর্ণতর রূপ, নয় একটি সম্পূর্ণ নতুন কাজেরই প্রয়োজন আছে এই সময়।
মাইকেল মধুসূদণ দত্ত আমার কাছে সবসময় একজন রহস্যময় চরিত্র। ছোটবেলায় পাঠ্যবইগুলোতে তার কবিতার সাথে লেখ পরিচিতিতে তার সম্পর্কে যা জানা যেত তা ছিল খুবই অপ্রতুল। সেই সময় একজন ধার্মিক হিন্দু পরিবারের ছেলে হয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন, পাশ্চাত্যের প্রতি মোহ এবং সবার শেষে আবার নিজ দেশেই আগমন। মধুসূদনের জীবন্টা কেটেছে নানারকম চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে। খুব বেশিদিনের জন্য সুখ তার কপালে সহ্য হয় নি। এর পিছনে অবশ্য তার নিজের নানারকম কাজকর্মই দায়ী। বিলাসিতাপ্রেমী এবং শৌখিন মধুর তাই শেষ জীবনটা কেটেছে বেশ কষ্টে! গোলাম মুরশিদ তার এই বইতে মাইকেলের প্রায় পুরো জীবনের একটা বর্ণনা দিয়েছেন। এবং এক্ষেত্রে তিনি যে বেশ গবেষণা করেছেন তা বইটি পড়লেই বুঝা যায়। একদম শুরু থেকে তার শেষ জীবনের একটি ব্যাখ্যাপূরণ বর্ণনা আমরা পাই এই বইতে।
প্রথম জীবনের মাইকেল ছিল সাহিত্যপ্রেমী। পাশ্চ্যাত্য সাহিত্যের প্রতি যার কাজ করতো অন্যরকম মোহ! প্রতিভাবান এই ব্যাক্তি নিজেও সাহিত্য রচনায় ছিলেন অসাধারন। যুবক বয়সে এক নীলনয়নার প্রেমে পড়বেন বলে মনস্থির করা মাইকেল তাই পিতার ঠিক করা সময়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে নারাজ! আর তা থেকে বাচতেই তিনি বেছে নেন খ্রিষ্টান হওয়া। সেখান থেকে যান মাদ্রাজ। মাদ্রাজে শুরু হয় তার আরেক জীবন। সেখানে তার তথাকথিত নীল নয়নার দেখা মিললেও সেই দাম্পত্য জীবন বেশিদিন টিকে নি। খ্রিষ্টান হলেও তিনি প্রায় সবক্ষেত্রেই হয়েছিলেন বর্ণবৈষম্যয়ের স্বীকার। তিনি আবার ফিরে আসেন ভারতবরষে। সং��ার পাতেন হেনরিয়েটাকে নিয়ে। এখানে তার কাব্যপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে পুরোদমে! গতানুগতিক ভারতীয় সাহিত্যের বাহিরে গিয়ে তিনি রচনা করেন তার কাব্য। অমিত্রাক্ষন ছন্দ, সনেটের সূচনা, মহাকাব্য রচনা! মাঝে মাঝে দেখা যেত একটি কাব্য রচনা করার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি হাত দিয়েছেন আরেকটিতে! একই সাথে হয়তো করছেন কোন অনুবাদের কাজ! সমসাময়িক সাহিত্যিকদের মধ্যে মাইকেল পান তার সারাজীবনের স্বপ্ন খ্যাতি। কিন্তু শেষ জীবনে এসে মাইকেল এই খ্যাতির চেয়েও বড় করে দেখতে গিয়েছে অর্থকে। আর তখনই ধরা দিতে হয়েছে জীবনের কাছে। কিছু মানুষের প্রতারণা আর নিজের বেহিসেবী বিলাসিতাপূরণ জীবনা যাপন যার পেছনে দায়ী! সারাজীবন তিনি যেই আত্বসম্মানকে বড় করে বেচেছিলেন, শেষ জীবনে এসে তাও ধূলোয় মিশিয়ে দিতে হয়েছিল। অসামান্য প্রতিভাধর এই কবির তাই শেষ জীবনটা খুব সুখকর হয় নি। এমনকি তার মৃত্যুর পরেও সেরকম সম্মান তিনি পান নি। তার গূনের চেয়ে তখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল তার খ্রিষ্টান হওয়া এবং বেহিসেবী জীবন যাপনের সমালোচনা। অধিক সুখের আশায় ছূটতে থাকা মাইকেল বার বার শুধু ছলনাই পেয়েছেন!
একটু বলে রাখি আত্নজীবনী কিংবা ইতিহাসভিত্তিক কোনকিছু পড়লে নিজ সময় ভুলে আমি অতীতের সেই সময়টাতে অবচেতনভাবেই চলে যায়। বইয়ের লেখাগুলো ঘুমের মধ্যেও ছবির মধ্যে ভেসে বেড়ায়। সে হিসাবে বলতে গেলে মাইকেল মধুসূদন দত্ত’এর এই জীবনী পড়ে আমি হতাশ (!!) নিজ অবস্থান পরিষ্কার করি। বাঙ্গালী মধুসূদন কিংবা খৃষ্টান মাইকেল অথবা সাহিত্যিক মাইকেল মধুসূদন দত্ত হিসাবে নয়, এসবকিছুর সম্মিলিতসুরে এবং সর্বোপরি শতাব্দীর আঁধারে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’কে তুলে আনতে লেখকের যে প্রচেষ্টা সেটা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। আত্নজীবনীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মাধ্যমে সে সময়টাকে আরো স্পষ্টভাবে দেখা, সেটা ভালোভাবেই সম্ভব হয়েছে লেখকের কল্যাণে।
অনেক দিন যাবত উইশ লিস্টে ছিল 'আশার ছলনে ভুলি'। পড়তেও শুরু করেছিলাম বেশ কিছুদিন হয় কিন্তু বইয়ের ভাষা এতো সাবলিল এবং বিশ্লেষণ এতো গভীর যে পাঠক শেষপর্যন্ত যেতে বাধ্য বয়। একটা চমৎকার বই পড়ে শেষ করার পরের যে স্বভাবগত শূন্যতা কাজ করে পাঠকের মাঝে সেটা এইমুহুর্তে আমার মাঝে কাজ করছে। মনে হচ্ছে যেন একজন সঙ্গী হারালাম।
মাইকেলের বহিমিয়ান জীবনের খানিকটা স্বাদ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। লেখককে অনেক ধন্যবাদ মহাকবিকে একজন রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থিত করানোর জন্য।
'সেকালের দেশীয় সমাজে তাঁর চারদিকে যাঁরা বাস করতেন, তাঁদের তুলনায় তিনি ছিলেন অনেক প্রতিভাবান। জনারণ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে তাঁকে চোখে পড়ার মতো গুণাবলী তিনি প্রচুর পরিমাণে আয়ত্ত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যকে তিনি একা যতোটা এগিয়ে দিয়েছিলেন, পরবর্তী কালে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া অন্য কেউ তা করেননি। বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব হিশেবেও তিনি জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দুতিন বছরে তিনি ঈর্ষার অযোগ্য যে- করুণ পরিণতি লাভ করেছিলেন এবং তাঁকে সমাধিস্থ করার ঘটনা নিয়ে যে- কুৎসিত নোংরামি দেখা দিয়েছিলো, তা থেকে তাঁর নিঃসঙ্গতার অভ্রান্ত প্রমাণ যাওয়া যায়। আগেই বলেছি, নিজের সমাজ থেকে নিজেকে তিনি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। তাঁর অসামান্য প্রতিভা এবংআকাশচুম্বী আত্মবিশ্বাস তাঁকে যে- সীমাহীন অহঙ্কার দিয়েছিলো, তাও তাঁর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। বিত্ত দিয়ে গত শতাব্দীতে অনেকেই জাতে উঠেছেন এবং সামাজিক মর্যাদা লাভ করেছেন। যতোদিন মাইকেল সচ্ছল ছিলেন, ভোজ দিতেন, মদ্যপান করাতেন, বিনে পয়সায় মামলা করে দিতেন, ততোদিন দেশীয় সমাজে তাঁকে খাতির করার লোকের অভাব হয়নি। কিন্তু তিনি যখন নিঃস্ব রিক্ত হয়ে মৃত্যুর দিন গুনেছেন, তখন খুব কম লোকই তাঁর খবর নিযেছেন। তিনি যদি অনেক সঞ্চিত অর্থ বেখে মারা যেতেন, তা হলে সমাধিস্থ করার ব্যাপারে সম্ভবত এতোটা বিরোধিতা দেখা দিতো না।' -আশার ছলনে ভুলি
Reading 'Ashar Cholone Bhuli' was like entering the world of Michele Madhusudan Datta as if he were recounting his life story himself. The book skillfully weaves together the threads of his remarkable journey in a way that's accessible and engaging, much like Madhusudan's own narrative style. With each turn of the page, I felt as if I were sitting beside him, listening to his captivating tales. If you're eager to delve into the extraordinary life of this literary genius, this book offers a warm and inviting pathway. It beckons readers with the charm of a timeless story, much like Madhusudan's own poetry, creating a truly delightful literary experience.
A really informative book on life of one of the greatest poet the bangla literature ever had.
It sheds light on the poet's aspirations, struggles, and tragedies faced in his day to day life.
Thoughout this book one would get a new perspective on the life and works of Michael Madhusudan Dutta that hadn’t been mentioned elsewhere like this book.
মধুসূদনের ব্যক্তি জীবন, সাহিত্যজীবন এবং সমকালীন ইতিহাসের দলিল। মুরশেদ একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক। দু বাংলাতেই তাঁর লেখার সমান কদর। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির পরে আমার মনে হয় এটিই তাঁর মহাকাব্যিক রচনা।
আত্নজীবনী কিংবা ইতিহাসভিত্তিক কোনকিছু পড়লে নিজ সময় ভুলে আমি অতীতের সেই সময়টাতে অবচেতনভাবেই চলে যায়। বইয়ের লেখাগুলো ঘুমের মধ্যেও ছবির মধ্যে ভেসে বেড়ায়। সে হিসাবে বলতে গেলে মাইকেল মধুসূদন দত্ত’এর এই জীবনী পড়ে আমি হতাশ (!!) নিজ অবস্থান পরিষ্কার করি। বাঙ্গালী মধুসূদন কিংবা খৃষ্টান মাইকেল অথবা সাহিত্যিক মাইকেল মধুসূদন দত্ত হিসাবে নয়, এসবকিছুর সম্মিলিতসুরে এবং সর্বোপরি শতাব্দীর আঁধারে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি মাইকেল মধুসূদন দত্ত’কে তুলে আনতে লেখকের যে প্রচেষ্টা সেটা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। আত্নজীবনীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর মাধ্যমে সে সময়টাকে আরো স্পষ্টভ���বে দেখা, সেটা ভালোভাবেই সম্ভব হয়েছে লেখকের কল্যাণে।
I enjoyed reading this book. Usually biography of any Bengali / Indian written by any Bengali / Indian author is unbalanced. Only the good side of that personality is shown and sometimes the biographer draws a picture of God rather than a human being. This book is very balanced & without unnecessary emotion and at the same time it is written with much care & with a soft heart to give the readers a fair view of this great poet’s life.
মাইকেল মধুসুদন সম্পর্কে এতো ডিটেলস এর আগে পড়িনি। সাধারণত কারও জীবনী পড়তে গেলে কিছুটা বোরিং লাগে। কিন্তু মধুসুদনের জীবনে এতো বেশি উত্থান পতন ছিলো যে বোরিং লাগেনি এতোটুকু।