Jump to ratings and reviews
Rate this book
Rate this book
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত পাঁচটি গ্রন্থের গল্পগুলো নিয়ে "আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র" এর প্রথম খন্ড।
ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
সমসময়ের একজন প্রধান কথাশিল্পী শওকত আলীর মতে “ আখতারুজ্জামানের রচনা পাঠ সাহিত্যামোদীর কাছে সততই আনন্দময় অভিজ্ঞতা।....... তাঁর লেখার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের জগৎটির মধ্যেই যে আরও নানান দেখবার ও বুঝবার দিক আছে আমরা তা নতুন করে আবিষ্কার করতে পারি।..... জীবন ও জগৎকে দেখবার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার কবি।” আমাদের বিশ্বাস আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পসমগ্র পাঠের অভিজ্ঞতা পাঠককে বারবার এই উপলদ্ধি ও আবিষ্কারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।নিজের সম্পর্কে ইলিয়াস বলতেন যে তিনি চব্বিশ ঘণ্টার লেখক।তিনি বেঁচেছেন, পথ চলেছেন, মানুষের সঙ্গে মিশেছেন এই লেখকের চোখ নিয়ে। জীবনকে তিনি দেখেছেন একজন লেখকের চোখে, তার সমগ্রতায়। উপন্যাসের মতো তাঁর গল্পগুলোতেও যে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশকিত, গভীর জীবনবোধ ও ধারালো হিউমাসের সাক্ষাৎ পাই তাতে সহজেই আমরা তাঁকে একজন বড় মাপের লেখক হিসেবে চিনে নিতে পারি।সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষের মুখের ভাষাও তাঁর লেখায় মর্যাদা পায়, এমনকি স্ল্যাং-ও হয়ে ওঠে আশ্চর্যরকম শিল্পিত। পাঠককে তিনি শুধু গল্প বলেন না, তাকে ভেতর থেকে নাড়া দেন, ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে রাখেন।সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে তাকে ভীষণ অস্বস্তির মধ্যেও ফেলেন। “মানুষের শাণিত স্পৃহা ও দমিত সংকল্পকে আবর্জনার ভেতর থেকে খুঁজে বের করে আনার” যে-দায়িত্বের কথা তিনি বলেছিলেন, কথাসাহিত্যিক হিসেবে আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেই সে-দায়িত্ব পালন করে গেছেন। উপন্যাসের খোলামেলা চত্ত্বরে ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীকে যেমন তাদের ত্রিকাল জুড়ে দর্শন ও অস্তিত্ববান করা যায়, ছোটগল্পে তেমন সুযোগ কম।ছোটগল্পের আঁট-সাঁট বন্ধনে স্থান, কাল ও ব্যক্তিকে যথাযথভাবে শিল্পায়িত করতে ইলিয়াস যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন।
সূচিপত্র
*নিরুদ্দেশ যাত্রা
*উৎসব
*প্রতিশোধ
*যোগাযোগ
*ফেরারী
*অন্য ঘরে অন্য স্বর
*খোঁয়াবি
*অসুখ-বিসুখ
*তারা বিবির মরদ পোলা
*পিতৃবিয়োগ
*মিলির হাতে স্টেনগান
*দুধভাতে উৎপাত
*পায়ের নিচে জল
*দখল
*কীটনাশকের কীর্তি
*যুগলবন্দি
*অপঘাত
*দোজখের ওম
*প্রেমের গপ্পো
*ফোঁড়া
*জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল
*কান্না
*রেইনকোট

404 pages, Hardcover

First published February 1, 1999

19 people are currently reading
141 people want to read

About the author

Akhteruzzaman Elias

27 books240 followers
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। তিনি মাত্র দুটি উপন্যাস রচনা করলেও সমালোচকরা তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঔপন্যাসিক হিসেবেই বিবেচনা করেন। এই দুটি উপন্যাসের বাইরে ইলিয়াস মাত্র তেইশটি ছোটগল্প এবং বাইশটি প্রবন্ধ লিখেছেন। ইলিয়াস সমাজ, রাষ্ট্র এবং জনগণের একজন একাগ্র পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি তাঁর লেখার চরিত্রগুলোকে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি এবং অবস্থানের প্রতীক হিসেবে সুদক্ষভাবে রূপায়ন করতেন। লেখার সময় তিনি চেষ্টা করতেন ঐতিহাসিকভাবে নির্ভুল থাকতে, ফলে তিনি পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে লেখার অন্তর্নিহিত গুরুত্বকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যুর ফলে তাঁর সৃজনশীল জীবন খুব দীর্ঘা‌য়িত হতে পারেনি, কিন্তু তাঁর লেখাগুলো বাংলা সাহিত্যে ধ্রুপদী সৃষ্টি হিসেবে স্থান পেয়েছে।

Akhteruzzaman Elias was a Bangladeshi novelist and short story writer. Despite the fact that he only wrote two novels, critics consider him to be one of the finest Bengali novelists. Besides these two books, Elias wrote only 23 short stories and 22 essays. Elias was a good observer of society, state, and people as he created his characters symbolising social classes and positions. He always strived to be historically accurate when writing, even if it meant pushing readers out of their comfort zones. His creative life was cut short by a premature death from cancer, but his writings are regarded as Bangla literature classics.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
60 (67%)
4 stars
25 (28%)
3 stars
2 (2%)
2 stars
2 (2%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 9 of 9 reviews
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
December 31, 2021
অন্য ঘরে অন্য স্বর
খোঁয়ারি
দুধভাতে উৎপাত
দোজখের ওম
জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল


পাঁচখানা গল্পগ্রন্থ, মোট তেইশখানা গল্প।
অত্যুক্তি করব না যে প্রতিটি গল্পই অসাধারণ লেগেছে কিংবা সমান ভালো লেগেছে। তবে গল্পগুলো পড়তে গিয়ে শুধুমাত্র গল্পই পড়ে যাইনি; নাড়া খেয়েছি ভেতর থেকে, জেগে উঠেছি বিরাট ধাক্কা খেয়ে, কখনো সখনো অস্বস্তিতে পড়তেও ভুলিনি।
খিস্তি-খেউড়'কেও যে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায় না ডুব দিলে হয়তো জানাই হতো না।

ইলিয়াস রচনাসমগ্র ১

চিলেকোঠার সেপাই পাঠ করার পর যে ইলিয়াস হয়ে উঠেছিলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় ঔপন্যাসিকদের একজন, ছোটগল্পের ক্ষুদ্র গন্ডির ভেতর স্থান, কাল ও ব্যক্তিকে নিপুণ কৌশলে আবদ্ধ করা সেই ইলিয়াসই এবার হয়ে উঠলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পকারদের একজন।
Profile Image for Raisul Sohan.
125 reviews20 followers
March 7, 2019
এই বইটি আসলে আখতারুজ্জামানের লেখা ২৮টি গল্পের সংকলন। আর সে গল্পগুলো কখনও অপার্থিব, কখনও চাবুকে পেটানো, কখনও স্নিগ্ধতায় মাখা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আসলে অনন্য। যে গল্প পড়ে রেগে উঠেছি, ঠিক তার পরের গল্পেই হয়তো বিষাদে ডুবে গিয়েছি, নয়তো চমকে গিয়েছি। আখতারুজ্জামান কি আবারও ফিরে আসবেন? মাত্র ২৮টি গল্প, আরও কিছু এমন গল্প কেউ কি লিখে দিবেন?
Profile Image for Uzzal Orpheus.
60 reviews6 followers
December 28, 2023
কিছু পড়লেই গুডরিডসে আজকাল কিছু লিখে রাখতে চেষ্টা করছি যাকে আর যাইহোক কোনভাবেই রিভিউ বলা যায়না, বড়জোর পার্সোনাল নোট বলা যেতে পারে। ইলিয়াসের গল্পগুলা ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত যখন পড়ছিলাম, তখন মন বিভোর হয়েছিল এক অমূল্য রত্নখনি খুজে পাওয়ার আনন্দে যাতে রত্নের সংখ্যা ছিল ২৩। কি একেক টা গল্প! কিছু লাইন পড়তে হয় লম্বা নিশ্বাস নিয়ে, কিছু লাইন পড়তে হয় নিশ্বাস বন্ধ করে। কি ডিটেইলস বর্ণনা সবকিছুর, কি কালো কালো একেক টা চরিত্র, আর পড়া শেষ করেও নিস্তার পাওয়া যাচ্ছিল না কোন ভাবেই সেসব গল্পের হাত থেকে! তাই আবার পড়া শুরু করলাম। একেক টা গল্প পড়ে এখানে মোটাদাগে দুই এক লাইন কাহিনী সংক্ষেপ লিখে রাখার ইচ্ছাও আছে।

(২৩) রেইনকোট
নূরুল হুদা, কেমেস্ট্রির লেকচারার। তার কলেজের দেয়ালের সাথেই লাগানো মিলিটারি ক্যাম্প, যেখানে গতরাতে হয়ে গেছে গেরিলা হামলা। এই কারণে অথবা অন্যকোণ অজানা কারণে তাকে কলেজে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি, গত কয়েকদিন ধরেই চলছে, সেই সুবাদে সে মন্টুর রেইনকোটটা পরে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মন্টু হল নুরুলহুদার শালা যে মুক্তিযুদ্ধে গেছে কিছুদিন আগেই। মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট পরে এক অভাবনীয় পরিবর্তন দেখা দেয় নুরুল হুদার মাঝে।

(২২) পিতৃবিয়োগ
পোষ্টমাস্টার বাবা মারা যাবার সংবাদে শহরের চাকরীরত যুবক পুত্র বাড়িতে আসে এবং এসে সে জানতে পারে সে তার বাবাকে গত ২০/২৫ বছরে যে ভাবে জেনেছে, যেভাবে দেখেছে তার সম্পূর্ন বিপরীত একটা চরিত্র তার বাবার ছিল যা প্রকাশ পেল বাবার মৃত্যুর পর।

(২১) কান্না
ইলিয়াসের প্রায় সব গল্পই এমন যে তা আসলে গল্পচ্ছলে কোণ ঘটনার মত করে বলে ফেলা যায় না। গল্পের সাথে একটু বসতে হয়, তাতে বসবাস করতে হয়। কান্না গল্পটাও এমন।যাইহোক, এই গল্পে, আফাজ আলী আজিমপুর কবরস্থানের মৌলবী। মূর্দার দাফন-কাফন, মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতের সময় দোয়া পড়েই তার রুটি রুজির ব্যবস্থা।ছেলের দাস্ত রোগে অসুস্থতার খবর পেয়ে বাড়ি গিয়ে সে দেখে ছেলের দাফন কাফন শেষ। আবার ঢাকা ফিরে এসে এক মূর্দার দোয়া করতে গিয়ে ঘটে এক করূণ ঘটনা।

(২০) ফোঁড়া
ইলিয়াসের গল্প অধিকাংশ সময় একটা ছোট্ট ঘটানাকে পুজি করে শুরু হলেও সেই সেই ছোট্ট ঘটনা দেখাতে দেখাতেই ইলিয়াস দেখিয়ে দেন সেই ঘটনার চারপাশের পরিবেশের একটা সমগ্রিক চালচিত্র। ফোঁড়া গল্পে দেখানো হয়েছে এক আঞ্চলিক লেভেলের বামপন্থী নেতা মামুন কে, যার উপর পার্টির আস্থা অবিচল। এই পার্টি বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের ডাক দেয় মালিক সমিতির বিপক্ষে। তো এই গল্পে মালিক সমিতি, শ্রমিক, বামদল, মিলিটারি নিয়ে একটা সামগ্রিক চিত্র ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। গল্পে মামুন ওঠে একটা রিক্সায়, যে রিক্সার চালক উরুর নিচের দিকে বিশাল ব্যাথাযুক্ত এক ফোঁড়া নিয়ে চালাচ্ছে রিক্সা, সেই রিক্সাওয়ালার সাথে মামুনের দীর্ঘ কথোপকথনের মধ্যেই পাঠক জানতে পারে আরো অনেক অন্ধকার গল্প।

(১৯) ফেরারী
এই গল্পে আছে ইব্রাহীম ওস্তাগর যে যুবক বয়সে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে ঘোড়ার গাড়ি চালায়ে জীবিকা নির্বাহ করত। সুযোগ পেলেই লায়নে বায়োস্কোপ দেখতো, মাথায় টুপি থাকত সর্বক্ষণ, যেকোন ওয়াজ/কাওয়ালী প্রোগ্রামে তাকে পাওয়া যেত মাগার নামাজ কখনো সে পড়তো না, যার উপর ভর করেছিল ইবলিসের গোলাম মাহাক্কালের আছর। এই গল্পে আছে এক ভিক্টোরিয়া পার্ক, যেখানে সেই কোন আমলে সিপাহী দের ফাসি দেওয়া হয়েছিল বলে সেই দিল্লী, লক্নৌ আরও কত দূর দূর থেকে সিপাহীদের বউরা উড়ে এসে স্বামীদের এখনো খুজে বেড়ায় জ্যোৎস্না রাতে। এই গল্পেই ছিল এক নারী, রাজকন্যার মত চেহারা, যার পায়ের পাতায় জ্যোৎস্না ঢুকে আর বের হতে পারেনা কিছুতেই। আর ছিল ইব্রাহীম ওস্তাগরের ছেলে হানিফ যার পায়ে ভর করে আমরা গোটা পুরান ঢাকার অলি গলি ঘুরে ফেলি এক দৌড়ে, এক নিঃশ্বাসে!

(১৮) প্রতিশোধ
ওসমান, আনিস দুই ভাই। তাঁদের বোন রোকেয়ার বিবাহ হয়েছিল হাসেমেরর সাথে প্রেম করে। বিয়ের দু-এক বছরের মাথায় রোড অ্যাক্সিডেন্টে রোকেয়া মারা গেলে, হাসেম আবার বিবাহ করে রোকেয়ার এক বান্ধবীকে। ওসমান পরিবারের এমন একটা ধারণা হয় যে, রোকেয়ার আসলে অ্যাক্সিডেন্ট হয়নি বরং তাকে খুন করেছে হাসেম আরেকটা বিবাহ করার জন্যই। ওসমানের মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে কিভাবে হাসেম কে খুন করা যায়?

(১৭) প্রেমের গপ্পো
ইলিয়াসের এই গুল্পটা ঠিক অন্য গল্পগুলোর মত না। একটা সহজ সরল হালকা ধাচে গল্পটি চললেও মানুষের মনের এক সূক্ষ জটিল অনূভুতি নিয়ে গল্প বলার প্রয়াস পেয়েছেন লেখক। এই গল্পে, জাহাঙ্গীর আর বুলা নববিবাহিত স্বামী স্ত্রী। জাহাঙ্গীর নিয়মিত বুলার কাছে নানারকম চাপা মারে, অমুক মেয়ে তার জন্য পাগল ছিল, তমুক মেয়ে তাকে মন প্রাণ দিয়ে চাইত এসব। কিন্তু আসলে জাহাঙ্গীর কলেজে মস্তান বন্ধুদের পিছে পিছে ঘুরে মেয়েদের টিটকারী মারা ছেলেদের একজন ছাড়া আর কিছুই না। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর যাই বলত বুলা মন দিয়ে সব কথায় শুনত। বুলা শিল্পমনা, ছোটবেলায় গান শিখত। এর মধ্যে গল্পে প্রবেশ ঘটে বুলার ছেলেবেলার গান শেখার সাথী মুস্তাক এবং বুলার গানের শিক্ষক সুনীল সেনগুপ্তের।

(১৬) যুগলবন্দী
সারোয়ার বি কবীর কাস্টমস এর অসাধু কর্মকর্তা, বিলাসী জীবন, আছে একটা অ্যালসেয়ান নাম আরগস। তার মতে সুস্থ জীবনের মূলমন্ত্র হলো বাউয়েলস ক্লীয়ার হওয়া। তার স্ত্রী জেসমীন বি কবীর সারাক্ষণ মেতে আছে কিভাবে স্লিম ফিগার মেইনটেইন করা যায়। গল্পের প্রধাণ চরিত্র হলো আসগ��, যে সারোয়ার বি কবীরের দূর সম্পর্কের এক গরীব আত্মীয়। কবীর ই তাকে একটা ভালো চাকরী যোগাড় করে দিয়েছে জাহাজ কোম্পানীতে। কবীরের ক্ষমতা ব্যবহার করেই সে পোর্ট থেকে ব্ল্যাক এর মাল সরিয়ে ঘর ভরে। কবীরের মোসাহেবী করে, পায়ে তেল মাখিয়ে কাটে তার জীবন আর স্বপ্ন দেখে আরো সমৃদ্ধ জীবনের। একদিকে সে কবীরের পায়ে তেল মাখিয়ে চললেও অন্যদিকে নিজের মা-বাবার সাথে মনিব সুলভ ব্যবহার করে।

(১৫) দখল
কাজী মোয়াজ্জেম হোসেম, গ্রামের জোতদার। তার দুই ছেলে মোবারক ও মোতাহার। বাপ শোষক-জোতদার হলেও গোবরে পদ্মফুল হলো বড়পুত্র মোবারক। মোবারক কমুনিস্ট, গ্রামের শোষিত কিষাণ, জেলে, কলুদের সাথে তার খুব সখ্যতা। এই মোবারক যুবক বয়সে বিয়ের পর পর ই আট মাসের ছেলে ইকবাল কে রেখে মারা যায় জেলে। পরে মোতাহার সংসারের হাল ধরে, লীগের পদস্থ নেতা হয় সে পরবর্তীতে। রক্ষীবাহিনী-কমুনিস্ট দের সময় তখন। এমন সময় মোবারকের ছেলে ইকবাল আসে গ্রামে বাবার সম্পত্তির দাবীতে। কিন্তু দাদা মোয়াজ্জেম জানায়, শরীয়ত মতে কোন বাবার মৃত্যুর আগে যদি তার সন্তান মারা যায় তাহলে সেই মৃত সন্তানের পুত্র বাঁ কন্যা তাদের দাদার সম্পত্তির কোন অংশ পাবে না। অনেক বছর পর ইকবাল দাদার বাড়ি এসে দাদার কাছে বাবার গল্প শোনে। হাটতে হাটতে প্রায়ই সে চলে যায় গ্রামের পশ্চিমে কলুপাড়া, নিকিরি পাড়ার দিকে। সেখানে গিয়েও সে শোনে তার 'গোবরে পদ্মফুল' বাবার গল্প।

(১৪) অপঘাত
মোবারকের ছেলে বুলু যুদ্ধে যায় মার্চে। যাবার চার মাস পরে একটা অপারেশনে গিয়ে মিলিটারির গুলিতে শহীদ হয় এবং পড়ে থাকে বৌডোবা খালের জলে। অন্যদিকে বুলুর বন্ধু শাহজাহান গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে, ভাল ছাত্র, কোন ঝুটঝামেলায় ছিল না, সে মারা যায় অসুস্থ হয়ে। শেষ সময়ে শাহজাহান সুধু বুলুর নাম বলেছিল, বলেছিল বুলু কেন একা যুদ্ধে গেল, কেন তাকে নিয়ে গেল না। শাহজাহান মারা যাবার পর কার্ফিউ এর মধ্যে তার লাশ দাফন করতে গ্রামবাসীকে খুব বেগ পেতে হয়। এই লাশ দাফন নিয়ে যখন নানারকম ঝামেলা হচ্ছিল তখন পাশের গ্রামেই মুক্তিরা হামলা করছিল পাকিস্তানী ক্যাম্পে। যে বুলুর বাবা ভয়ে বুলুর মৃত্যুর কথা গোপন করে রেখেছিল ৪ মাস, গল্পের শেষে সেই বুলুর বাবা ই গ্রামের সবাই কে ডেকে ডেকে বুলুর দুঃসাহসিক মৃত্যুর কথা বলতে থাকে। বলতে থাকে, বুলু কিভাবে বৌডোবা খালে পড়ে মাছেদের মত ভেসে ভেসে এখন যমুনায় ঘুরে বেড়ায়!

(১৩) জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল
লাল মিয়া আর ইমামুদ্দীন সেই শৈশব থেকেই একসাথে বড় হয়েছে। ইমামুদ্দীন যুদ্ধে গেল, যাবার আগে লাল মিয়াকেও তার সাথে যেতে বলে কিন্তু লাল মিয়া ভয়ে রাজী হলো না তার সাথে যেতে। তখন লাল মিয়া কাজ করতো রাজাকার নাজির আলীর দখল করা লন্ড্রির দোকানে। যুদ্ধের মাঝেই ইমামুদ্দিন গ্রামে ফিরে ট্রান্সফর্মার উড়িয়ে একটা মিলিটারিকে মেরে নিজেও মরে যায়। নাজির আলীর নেতৃত্বে মিলিটারি ইমামুদ্দীনের বাড়িতে হামলা করে। ইমামুদ্দিনের বাপকে মেরে বউ কে ধরে নিয়ে যায় মিলিটারি। ইমামুদ্দীনের ছেলে বুলেট থেকে যায় তার দাদীর কাছে। লালমিয়া স্বপ্নে উল্টো পা ওয়ালা শাহ-সাহেবকে দেখে, কিছুদিন পর দেখা যায় বুলেট ও একই স্বপ্ন দেখে। বুলেট বড় হতে থাকে। দেখা যায় যুদ্ধের শেষে সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়া রাজাকার নাজির আলী আবার ফিরে আসে এলাকায় এবং আস্তে আস্তে তার হারিয়ে যাওয়া সম্পত্তি পুনরদ্ধার করতে থাকে।

(১২) দোযখের ওম
কামাল উদ্দিন খুনখুনে বুড়ো, যার বড় ছেলের বয়স ৬০-৬৫, শরীরের অর্ধেক অচল হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। যৌবনকালে সে দর্জির কাজ করতো। শরীর অর্ধেক প্যারালাইজ হবার ২ বছর পরে তার বউ মারা যায়, সে প্রায় তিন বছর আগের কথা। তো গত ৫ বছর সে এভাবেই কাঁটে কামাল উদ্দিনের জীবন, হাগা-মোতা সবই বিছানায়, তাকে সাহায্য করার জন্য তার নাতি ১৫ বছর বয়সী আবুবকর তার ঘরেই ঘুমায়। কামালউদ্দিনের স্বপ্নে প্রায়ই তার বউ আসে, এসে বলে 'চলো যাইগা?', কিন্তু হায়াত-মউত তো কামাল উদ্দিনের হাতে নাই। এই জীবনেই কত মৃত্যু দেখে ফেলল সে! তার ছোট ছেলে সোবহান মারা গেলে মুক্তিযুদ্ধে, মেয়ে নুরুন্নাহার মারা গেল বাচ্চা হতে গিয়ে, এক নাতি মারা গেল ছাঁদ থেকে পড়ে গিয়ে, বউটাও মারা গেল কিছু দিন আগে, রয়ে গেলে শুধু সে। এখন এই পৃথিবীটায় তার কাছে দোযখের আগুন মনে হয়। মনে মনে কামালউদ্দিন ভাবে কোন দোষে আল্লাহ তাকে এমন শাস্তি দিচ্ছেন? খুব বড় রকমের তেমন কোন দোষের কথাও তার মনে পড়ে না। আবার ভাবে, তার ভালো কাজগুলার বিনিময়ে হলেও যেন আল্লাহ যেন তাকে এই দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দেন। পরক্ষণেই যখন সে তার কৃত ভালো কাজ গুলা খুঁজে দেখতে যায়, তেমন কোন ভালো কাজ ও সে খুঁজে পায় না। কত কথা, কত স্মৃতি তার মনে পড়ে। তার বাবা ছিল এক পীরের মুরিদ। সেই পীর রমজান মাসের শুরুতে একটা কবরে শুয়ে পড়তো। পীরের মুরিদ রা জীবন্ত পীরকেই মাটি দিয়ে কবর দিত। কবরের উপর থেকে একটা কাঠের নল সেট করা থাকতো কবরের নীচে পীরের মুখে। সেই নল দিয়ে প্রতিদিন পীরকে এক পেয়াল দুধ খাইয়ে তার ইফতার-সেহেরীর ব্যবস্থা সারা হত। রমজান মাসের শেষে কবর নড়ে উঠত এবং পীর উঠে আসতো কবর থেকে।
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
December 3, 2018
বাংলা ছোটগল্পের বিভিন্ন বাঁক বদল সহজে লক্ষণীয় । কারণ ছোটগল্পের ক্যানভাস হতে পারে বিচিত্রময় । তেমনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কিছু ছোটগল্প কাব্যিক, কিছু চারিত্রিক মনোবিশ্লেষক, কিছু রয়েছে বক্তব্য ও চিত্রপ্রধান এবং কিছু সরাসরি ঘটনাবহুল । ইলিয়াসের একেকটা ছোটগল্প পড়ে তাই জিহ্বার তলে, নিউরনের উদ্দীপক কোষে, বুকের খাঁচায় ধৃত মনে একেক রকম স্বাদ অনুভুত হয় । ঘটনার সুত্র ধরে রাস্তা থেকে ঘরে, ঘর থেকে মনে, মন থেকে ব্যক্তির অবলোকনে ও বিনির্মাণে অবলীলায় ঢুকে পড়েন লেখক । নিরন্তর ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে কল্পনার মহাকাশে নিত্য-নতুন চিন্তাবস্তু ও শূন্যস্থান আবিষ্কার করতে নিপুন এক কথাকার ইলিয়াস । আর তাই সংখ্যায় নয়, গুনে-মানে অনন্য স্বল্পপ্রজ এই বিরল লেখক বারবার ফিরে আসেন ।
Profile Image for Kamrul Hossain Shuvo.
15 reviews26 followers
June 22, 2020
'শামুক তোলা' বলে একটা ব্যাপার ছিল গ্রামে। খোঁয়াড়ে হাঁসগুলো যেদিন আটকে রাখা হতে সেদিনের কথা ভেবে বাড়ির, পাশের বাড়ির বাচ্চা-কাচ্চাদের পাঠিয়ে দেয়া হতো বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধানক্ষেতে। 'শামুক অভিযান'-এ যাওয়া কিশোর-কিশোরীদের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা, উত্তেজনা সবসময়ই বিরাজমান থাকে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পে ঠিক যেন এমন একটা উত্তেজনার রেশ পাওয়া যায়। মাটির গন্ধ পাওয়া যায় গল্পগুলতে। করোনার এই দুঃসময়ে বসে যখন মনে হচ্ছে ধণী-গরিবদের দুঃখ কষ্ট সবই আদতে এক, ঠিক এই সময়ে ছোটগল্পগুলো পড়ে মনে হছে আসলে ধণী-গরিবের ফারাকটা বিস্তর ই। বাইরের কাছে যিনি অনন্যসাধারণ যেই তিনিও নিজ গৃহে কিন্তু খুবই সাধারণ। এই আপাত-সাধারণ জীবনেই ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলোকে ই পেছন ফিরে তাকালে অনন্যসাধারণ মনে হয়ে। খুব ই সাধারণ গল্পের কাহিনিগুলোই অনন্যসাধারণ হয়ে বের হয়ে এসেছে লেখকের কলমের ডগা দিয়ে।

শুভ
৮ আষাঢ়, ১৪২৭
Profile Image for Dilrahba Nabila.
25 reviews2 followers
December 7, 2024
জুলাই বিপ্লবের সময় যখন ইন্টারনেট নিজ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই সময় আমার পড়া দারুণ একটি বই। কমবেশি সবার পড়া উচিত। যেসব গল্প , উপন্যাসের নাম বাংলা বইয়ে দেখতাম - সেই মূলত গল্প গুলোর সংকলন এই বইটি।
Profile Image for Rajon  Das.
21 reviews4 followers
April 12, 2022
Ilias was a great story teller! And a great prose writer indeed. Mesmerized!
Profile Image for Ishtiaq Akbar.
3 reviews2 followers
October 20, 2015
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখার রিভিউ লিখবো আমি? :-/
Displaying 1 - 9 of 9 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.