বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে বুরুন মাত্র তেরো পেলো। রাশভারী চিকিৎসক বাবা পড়াশোনায় বুরুনকে মনোযোগী করে তুলতে বেশ কড়া শাসন আরম্ভ করলেন। কিছুদিন যেতে-না-যেতেই বুরুনের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হয়ে উঠলো। ক্ষোভে-দুঃখে একদিন হাঁটতে হাঁটতে বুরুন ঢুকে পড়লো গোঁসাই ডাকাতের বাগান বা গোঁসাইবাগানের ভেতরে। ভেতরে ভয় পাবার মতো নাকি অনেককিছুই আছে, কিন্তু মন ভীষণ খারাপ থাকলে ভয়ডর কি আর থাকে?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।
তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
বুরুন বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে পেল মাত্তর ১৩। এই ১৩ যে কত টা লাকি বা আনলাকি তার জীবনে সেটা একটা দেখার বিষয় বটে। তো বদ্যি দাদা আর ডক্টর বাবার এই সুপুত্র বুরুন বাবুকে নিয়েই জমজমাট এই গল্পটি সাজানো। অঙ্কে ১৩ পাবার পর, বাবা রীতিমত ১৪৪ ধারা জারি করে ফেলেন, সব কাজ নিজেকে করতে হবে, এমনকি পাগলা মাস্টার মশাই করালী বাবুর বাড়ী গিয়েও পড়তে যেতে হবে, কিন্তু তার বাসা আড়াইমাইল দূরে। কিন্তু বুরুন বাবুকে যেতে-আসতে হবে হেঁটে।
রাগে দুঃখে বুরুন বাবু গোঁসাইবাগানে গিয়ে কুল গাছে বসে কুল খাওয়া শুরু করে। এদিকে ভূত নিধিরাম বুরুন কে ভয় দেখাতে ব্যস্ত, কিন্তু কোনভাবেই বুরুন ভয় পায়না, নিধিরামের চাকুরী টিকিয়ে রাখতে এই ভয় পাওয়া টা কিন্তু বেশ জরুরী।
এদিকে মাস্টার মশাই করালী বাবুর অবস্থা একেবারে লেজে-গোবরে, রুই মাছ না কাতল উনি চেনেন না, ভাত খান না অঙ্ক করেন সেটা উনি ছাড়া আর কেউ জানেনা। পায়েস কে দই না দই কে পায়েস বলেন সেটা উনি কখনোই টের পান না এমনকি খাওয়ার শেষে যদি জিজ্ঞেস করা হয়,'রুই মাছের মাথাটা কেমন ছিল?'। উনি তখন বলেন, অ্যাঁ? রুই মাছ ছিল না কি? শুধু তাই না বাজার করতে গিয়ে হিসাব মিলাতে পারেননা তিনি , শেষ ভরসা তার সেই দোকানী। উনি স্বপ্নে অঙ্ক পান ! সেই অঙ্কের সমাধান কি বুরুন পারবে করতে?
অন্যদিকে দিকে সবাই তটস্থ হাবুর ভয় এ, কে এই হাবু?
বুরুন কি শেষমেশ ভয় পাবে??? নিধিরামের চাকুরী কি বহাল থাকবে??? এরকম আরো অসংখ্য রহস্য আর মজার সাক্ষী হতে চাইলে ঝটপট পড়ে ফেলতে হবে বইটি। ছোট্ট বেলা পড়ে আসা এই বইটি ভীষণ প্রিয়। এখনো সময় পেলে পড়তে দুটি বার ভাবি না।
আচ্ছা, এই উপন্যাসেরও রিভিউ দিতে হয়? মানে, সিরিয়াসলি! আরে মশাই, এ হল দুপুরের ঘুম, খিদের পেটে বিরিয়ানি, আর গরমে চাঁপার গন্ধের মতো দেবভোগ্য জিনিস। এর আবার রিভিউ কী? তাও পেছনে লেগে আছেন? আচ্ছা ইয়ে লোক তো আপনি। এক্ষুনি গিয়ে লেখাটা পড়ুন আগে। নইলে কিন্তু সামনের পরীক্ষায় অংকে তেরো পাওয়ার হাত থেকে কেউ আপনাকে ঠেকাতে পারবে না। নিধিরামও না!
হাসার সুযোগ পেলে কখনোই সেই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। বেশ কিছু সিরিয়াস বইয়ের মাঝে এই বইটা কিছুটা হাসার সুযোগ করে দিয়েছে। বইয়ে ভূত আছে, পুলিশ-ডাকাতের দৌড় আছে, রোমাঞ্চ আছে আর আছে অনেকগুলো হেসে ওঠার উপকরণ। চরিত্রদের কাণ্ডকারখানা সত্যিই অদ্ভুত। এই অদ্ভুত চরিত্রগুলোর সাথে বেশ একটা সময় কাটল কিন্তু।
কেমন মনমরা লাগছিল, কিছু ভাল লাগছিল না বলে শীর্ষেন্দুর এই বইটা হাতে নি। তারপর কিছু পৃষ্ঠা পড়েই মনটা ভাল হয়ে আসে, খুব হাসতে থাকি গল্পটা পড়তে পড়তে। কারণ শীর্ষেন্দু এমনভাবে লেখেন যে আপনি উচ্চস্বরে না হাসলেও মনের ভেতরে ঠিকই হাসবেন। শীর্ষেন্দু হাসির সবরকম materials দিয়ে দিয়েছেন যেন বইটিতে, এখন আপনার শুধু একটাই কাজ সেটা হলো "হাসা" খুব হাসলাম, খুব আনন্দ পেলাম বইটি পড়ে! একটা মানুষের কাছে এসব বই ডিপ্রেশন কাটানোর ওষুধ হিসেবে কাজ করে....... তো এতটুকু বলতে পারি, এই বইটা ছোটদের যেমন আনন্দ দিবে, বড়দেরও সমান আনন্দ দিবে
গল্পটা হলো বুরুনের৷ বুরুন গণিতে ১৩ পাওয়ার পর তার বাবা সকল আরাম-আয়েশ কেড়ে নেই। ঘরের সব কাজ তাকে করতে হয়। তাকে কেউ সাহায্য করে না, সে যদি কাউকে কিছু করতে বলে তখনও শুনে না। তো এসব যন্ত্রণা সইতে না পেরে বরুন মনের দুঃখে একদিন "গোঁসাইবাগানে" চলে যায় এবং মন খারাপ করে বসে থাকে। তখন একটা ভূত তাকে ভয় দেখালে বরুন ভয় পাই না। তাতে ভূতটি বেশ অবাক হয়! তারপর থেকে বরুনের সব কাজ করে দিতে থাকে ভূতটি!! বরুন ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে, বার্ষিক ক্রীড়ার সব বিভাগে সে প্রথম হয়, তাকে যত কঠিন ম্যাথ দেওয়া হোক সে সেটা solve করে ফেলে, ইংরেজি ক্লাসেও তার জয়জয়কার অবস্থা। এসব দেখে স্যাররা খুব অবাক এবং খুশি!! এদিকে ভূত এতকিছু করে দেওয়ার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য, বরুন যেন ভূতটাকে ভয় পায়, নাইলে ভূতের সমাজে তার সম্মান থাকবে না 😐 এরপর কি হয় জানতে বইটি পড়তে হবে (পরে গিয়ে কিন্তু গল্পে ভালোই twist আছে)
What do you do if you get into a reading slump reading disappointing books after disappointing hyped books?
Naturally go search for hidden gems, underrated masterpieces, amazing books by local authors!
I am so lucky I got this book to read today and now I am back to enjoying books!
💫Book title: The Ghost of Gosain Bagan Author: Sirshendhu Mukhopadhyay Total pages: 98 Reading age: 8 years and above Genre: Paranormal/slice of life
💫 Some facts about this book: 👉 First published in 1977 👉 Originally published in Bengali 👉 First translated version published in 2008 👉 Illustrated by Debashish Deb 👉 available with Kindle Unlimited
You will find lots of cultural references and amazing classic illustrations in the book. The story is about Burun whose life changed for the worse when scored only thirteen in mathematics. The ever-busy strict father put lots of restrictions in almost all of the boy’s daily activities. Life changed drastically and Burun could no longer bear the injustice. Off he wandered away one fine day from home and he came across with a weirdly different ghost!
The story is about how they help each other and it’s rather heartfelt.
I love the grandfather. His part is small but has got lots to offer.
Do Burun get to get highest marks in the end? You guess!
Love the ending. Love the characters. Love the illustrations!
বলতে একটু একটু লজ্জা লাগছে, অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বেশি বই আসলে আমার পড়া হয়নাই। এক বন্ধু মোটামুটিভাবে বলা যায় কানে ধরে (পিডিএফ লিঙ্ক দিয়ে) পড়তে বললো। আগের মতো অনেক অনেক পড়ার সময় হয়না। কিন্তু যতক্ষণ পড়ছিলাম একদম বুঁদ হয়েছিলাম। ছোট্ট আম্মার জন্য একটু খারাপ লেগেছে ঐ সময়ে পড়তে পারলে নিশ্চয়ই আরো আনন্দ নিয়ে পড়া যেত! ভুট ভয়ঙ্কর না হয়ে বন্ধু হলে যে বেশ মজারু একটা ব্যাপার হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। হঠাত করে সাধারণ ছাত্র বরুণ ভূত বন্ধুর সাহায্য নিয়ে হিল্লী দিল্লী জয় কয়রে ফেললো জানতে হলে পড়তে হবেই এই বইটি! হ্যাপী রিডিং! ^_^
কি চমৎকার একটা সিরিজ লিখেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়! মূলত ছোটদের জন্য লেখা হলেও বড়রাও মজা পাবে। পড়ার সময় মাঝে মাঝেই ফিক করে হেসে ফেলেছি।অদ্ভুত সব ঘটনা আর অদ্ভুত কথাবার্তা মূহুর্তে যে-কারও মন ভালো করে দিতে পারে।দারুণ!
কয়েকদিন ধরে কোন বই ই মনে টানে নি। গোঁসাই বাগানের ভূত বইটা একদিকে যেমন মজার আবার খুবই ছোট। তাই এক বসায় পড়ে ফেললাম। আরো আগে পড়লে আরো ভাল্লাগতো নিশ্চয়ই।
ঝিলের ধারে বাড়ি, মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি এই দুইটা অদ্ভুতুরে সিরিজের আমার প্রিয় বই ছিল। আজকে আরেকটা যুক্ত হলো"গোঁসাইবাগানের ভূত"।
ভূত বিষয়টাকে একেবারে দুধভাত করে ছেড়ে দিলেন লেখক। চমৎকার একটা গল্প। বুরুনের জায়গায় নিজকে কল্পনা করছিলাম,কারণ আমি নিজেও অঙ্কে ভীষণ কাঁচা। আহা,আমারো যদি এমন নিধিদা থাকতো। কত সহজ হতো সব কিছু।
সার্বিকভাবে, এমন একটি মনোরম ও শিক্ষণীয় উপন্যাস, যা পাঠকদের হাস্যরসের মাধ্যমে জীবনের কিছু গভীরতম সত্য উপলব্ধি করতে সহায়তা করে, বাংলা সাহিত্যে বিরল। এই উপন্যাস স্রেফ এই কারণেই একটি উল্লেখযোগ্য রচনা, কারণ এটি মূলত শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা হলেও সব বয়সের পাঠকের মন জয় করেছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বুরুন, একজন স্কুলছাত্র, যে অঙ্কে বেশ দুর্বল। একদিন সে গোঁসাইবাগানে নিধিরাম নামের এক বন্ধুভাবাপন্ন ভূতের সাথে পরিচিত হয়। নিধিরাম বুরুনকে অঙ্ক শেখাতে সাহায্য করে এবং তাদের মধ্যে একটি মজার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। গল্পটি বুরুনের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হাস্যকর ও রোমাঞ্চকর ঘটনার মাধ্যমে এগিয়ে যায়। শীর্ষেন্দু বাবু অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাস্তব ও অতিপ্রাকৃত উপাদানগুলিকে মিশিয়ে একটি মনোমুগ্ধকর গল্প উপস্থাপন করেছেন। গল্পের চরিত্রগুলি যেমন বুরুন, করালী স্যার, রাম কোবরেজ, নিধিরাম ভূত প্রভৃতি অত্যন্ত জীবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। লেখার ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল, যা পাঠকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। পড়ুন। উদ্ভট আনন্দ পাবেন মশাই।
অদ্ভুতুড়ে সিরিজের প্রথম গল্প "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি" পড়তে গিয়ে টেবিল-বালিশে চাপড়াতে চাপড়াতে হেসেছিলাম অদ্ভুতুড়ে ২ পড়তে পড়তেও তাই ই হল। "গোঁসাইবাগানের ভূত" নামটা সুবিধার লাগছিল না। ভেবেছিলাম ছোটদের কোনো ভূতটুতের গল্প কি না। সাধে কি বলে "ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার"!
অঙ্কে ১৩ পাওয়া বরুণের কষ্টে সমব্যথিনী হওয়ার মত ডার্ক পাস্ট আমারো আছে 😂 ক্লাস ফাইভের সেকেন্ড মডেল টেস্টে পেয়েছিলাম ৫০ এ ৬! মনে পড়ে কি যেন হয়েছিল সেদিন আমার! মাথার তার হয়ত সত্যিই কাটা পড়েছিল। সে খাতা নিয়ে বাসায় ঢুকার চেয়ে শীতলক্ষ্যায় ঝাপ দেয়া সহজ ঠেকছিল, পানিতে পা ডুবাতেও ভয় পেতাম বলে পিঠে লাঠি ভাঙার অপশন বেছে নিয়ে মায়ের হাত ধরে বাসার পথ ধরেছিলাম। তারপরের কাহিনী কি হল তা নিয়ে না হয় কোনো এক সময় মজার গল্প ফেঁদে ফেলা যাবে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লোকটার প্রতি বাহবা দিচ্ছিলাম অবিরাম পড়তে পড়তে। হিউমর সমৃদ্ধ মানুষজন আমার পছন্দের মানুষের লিস্টে অবলীলায় ঢুকে পড়েন। যেমনটা যুক্ত হয়ে গেলেন তিনিও।
কিশোর গল্প বা উপন্যাস রচনায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিঃসন্দেহে বেশ পারদর্শিতা রয়েছে।
লেখায় বায়াসড বা মিসলিডিং দিক নির্দেশনা থাকে না, গা জ্বালা করা অতিনাটকীয়তাও নাই, কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা, সংলাপে অতিরিক্ত ভনীতা- এইসবই অনুপস্থিত।
কিশোর বয়সী বুরুন ও তার আশেপাশের মানুষ, গণিত-বিজ্ঞান, সমাজের আকাঙ্ক্ষা, ন্যায়-অন্যায়ের ইঙ্গিত, আধিভৌতিক কার্যকলাপ- সব মিলিয়ে মজাদার এক গল্প!
As usual, Shirshendu Mukhopadhay delights with this book. A robber lives in the Goshaipur forest where he practices black magic and terrorizes, only to find a 10yr old protagonist
Actual rating- 2.5/5 'অদ্ভুতুড়ে' নামটার সাথেই কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত ভাব বিরাজ করে । এখানে সবই অদ্ভুত। মানুষও অদ্ভুত, ভূতও অদ্ভুত। বুরুন ভূতকে ভয় না পাওয়ায় ভূতের সে কি খাটুনি !
শিশু-কিশোরদের উপন্যাস হলেও খুব আনন্দ পেলাম বইটা পড়ে,বেচারা বরূনের অবস্থাটা খুব ভালভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছি, অংকে তেরো পাবার বিষয়টা এক্কেবারে ছোটবেলায় নিয়ে গেলো।
সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি ১৩ সংখ্যাটা বড্ড অলক্ষুণে। করালী মাস্টারের ধারণা কিন্তু একদম উলটো। তার মতে ১৩ সংখ্যা টা খুব লাকি নাম্বার, প্রত্যেক ছাত্রের জীবনে একবার না একবার ১৩ পাওয়া উচিৎ। তবে এর পেছনে অবশ্য একটা গল্প আছে। সেই ১৩'র গল্প নিয়েই শীর্ষেন্দুর গোঁসাইবাগানের ভূত। নাহ, ঠিক ১৩'র না, গল্পটা বুরুনের। অঙ্কে ১৩ পেয়ে ভারি মন খারাপ তার। একরকম ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে তার ওপর। বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নিজের কাজ এখন থেকে নিজেকেই করতে হবে। আড়াইমাইল হেঁটে পড়তে যেতে হবে করালি মাস্টারের বাড়ি। সেই করালী মাস্টারও আবার যেনতেন শিক্ষক না। তাকে দেখলে সব ছাত্রদের রক্ত পানি হয়ে যায়। অঙ্ক ছাড়া তিনি কিছুই ভাবতে পারেন না। এমনকি স্বপ্নেও তিনি নিত্য-নতুন অঙ্কের সন্ধান পান। এইসব ঘটনায় বড্ড মন খারাপ বুরুনের। রাগে-দুঃখে গোঁসাইবাগানে গিয়ে কূল খাওয়া শুরু করল সে। সেখানেই তার সাথে দেখা নিধিরামের। তার বয়স ২০০, জাতিতে ভুত। কি ভাবছেন এটা ভুতের ভয়ঙ্কর গল্প। আসলে এখানেই শীর্ষেন্দু অনন্য, অসাধারণ। তার গল্পে ভূত থাকলেই সেই গল্প ভৌতিক হয়ে যায় না। বুরুন কিন্তু নিধিরামকে দেখে একদম ভয় পায় না, কিন্তু একথা শুনলে যে নিধিরামের ভূতসমাজে মাথা কাটা যাবে। তাই নিধিরাম বলে বরুন কে যে সে বুরুনকে সব কাজে সাহায্য করবে, বিনিময়ে তাকে ভয় পেতে হবে। এরপর নিধিরামের সাহায্য নিয়ে করালীবাবুর বাঘা বাঘা অঙ্ক সে করে ফেলে চোখের নিমেষে, ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় ১০০ মিটার দৌড়ায় ৮ সেকেন্ডে, লঙ্গজাম্পে পার হয় ২৫ ফুট, ডাবল সেঞ্চুরি করে ৩৪ বলে। কিন্তু হঠাৎ করে বাধে বিপত্তি, জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে হাবু সর্দার। তার পরিচয় আর দিচ্ছি না, সেটা বললে তো বইটার সারসংক্ষেপ ই হয়ে যাবে, পড়ার আগ্রহ নষ্ট হতে পারে। যারা নিজেদের ছোটবেলায় শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বই পড়েছে,আমার বিশ্বাস তাদের শৈশব অনেক সুন্দর এবং আনন্দময়। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ৫-৬ টা পড়ার। সেই শৈশবকে আবার একটু ফিরে পেরে আবার পড়া শুরু করলাম বইগুলো। আচ্ছা, একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করেছেন, ভূতেরা 'রাম' শুনলে দৌড়ে পালায়, তাহলে ভূতের নাম নিধি'রাম' হয় কীভাবে, বলতে পারেন?
সারাদিনে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা অনলাইন ক্লাসের প্যারাময় দিন কাটিয়ে হাতে নিয়েছিলাম অদ্ভুতুড়ে সিরিজের দ্বিতীয় বইটি। বুরুন নামের এক ছেলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে পেয়েছে তেরো।সেই নিয়েই শুরু এক মজার গল্প।বইটি পড়ে আর কিছু না হোক অন্তত কিছুক্ষণের জন্যে নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়,মুখে হাসি আসে আর সময়টা কাটে দারুন!
হাতের কাছে থাকলেও অদ্ভুতুড়ে সিরিজ কেন যে শুরু করতে এত দেরি করলাম কে জানে! দারুণ ইনজয় করলাম গল্পটা। মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি গল্পে সংলাপের একটু দুর্বলতা মনে হয়েছিল। এটায় সে দিকটায় ইমপ্রুভ হয়েছে অনেক। বলতেই হয় চমৎকার রসালো ও সাবলীল সংলাপ আর পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই কমেডি যে কাউকে হাসতে বাধ্য করবে। আরও দীর্ঘজীবী হোক আমাদের ভালো ভূতের জনক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।