Jump to ratings and reviews
Rate this book

খেলারাম খেলে যা

Rate this book
সৈয়দ শামসুল হকের খেলারাম খেলে যা একটি অবিস্মরণীয় উপন্যাস। যৌনতা আর শরীরী সম্পর্কের বিস্তৃত বিবরণের জন্য প্রকাশের পরপরই এ উপন্যাস নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অশ্লীলতার অভিযোগে লেখককে প্রচুর নিন্দামন্দ শুনতে হয় এ জন্য। কিন্তু সাহিত্যের সব ধরনের পাঠক সাগ্রহ পাঠ করেছেন এই বই। বাবর আলী ব্যবসায়ী। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। চল্লিশের কোঠায় বয়স, অবিবাহিত। চেনা মুখ, স্মার্ট। কথা বলে মন জয় করতে পারঙ্গম। তরুণী যুবতীদের মধ্যেই তাঁর ভক্ত বেশি। এদের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক তৈরি হতে সময় লাগে না বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জাহেদা। তাকে নিয়ে বাবর আলী উত্তরবঙ্গ সফরে যায়। তার মাথায় তখন সম্ভোগ ছাড়া কিছু নেই। হয়ও তা-ই। ফেরার পথে ঢাকার কাছে তারা আক্রান্ত হয়। একদল দুবৃ‌র্ত্ত জাহেদাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তার তীব্র আর্তনাদ বাবর আলীর ভেতরে নিজের হারিয়ে যাওয়া বোন হাসনুকে জাগিয়ে তোলে। হাসনুকে সে আর হারাতে চায় না। তখন যে মেয়েটাকে রক্ষার জন্য ছুটছে বাবর আলী, সে জাহেদা না হাসনু সেটা আর মীমাংসা করা যায় না। এর মধ্য দিয়ে একটি রগরগে কাহিনি একটি উচ্চতর সাহিত্যকর্মের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে ওঠে।

232 pages, Hardcover

First published January 1, 1991

42 people are currently reading
509 people want to read

About the author

Syed Shamsul Haque

191 books98 followers
Syed Shamsul Haque (Bangla: সৈয়দ শামসুল হক) was a Bangladeshi poet and writer. Haq lived alternately in Dhaka and London. He wrote poetry, fiction, plays - mostly in verse and essays. He, the youngest writer to be honored with Bangla Academy Award, achieved it at the age of 29. He was honored with Ekushey Podok in 1984.

(সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মেছিলেন। বর্ণাঢ্য লেখকজীবনের অধিকারী সৈয়দ হক। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্রের গান – যা লিখেছেন সবকিছুতেই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, সাফল্য।

মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান সৈয়দ হক। এখন পর্যন্ত বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ লেখক তিনি।

সৈয়দ হকের লেখালেখির শুরু তাঁর শৈশবেই। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে লিখে ফেলেন দুই শতাধিক কবিতা। ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ‘উদয়াস্ত’ নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়। সেটাই তার প্রথম ছাপা হওয়া লেখা।

সেই বছরই বাড়ি থেকে পালিয়ে বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) চলে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ করেন পরিচালকের সহকারী হিসেবে। কয়েক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করেননি। পুরোপুরি মনোযোগ দেন লেখালেখিতে।

১৯৫০-এর দশকেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। এ সময় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন তিনি। তাঁর লেখা চিত্রনাট্যে নির্মিত হয় ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’। তাঁর উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।

সৈয়দ শামসুল হক চিত্রনাট্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’, ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’।

তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘একদা এক রাজ্যে’, ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’, ‘অপর পুরুষ’, ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’।

বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘বারো দিনের জীবন’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন’, ‘নির্বাসিতা’।

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরলদীনের সারা জীবন’ তাঁর বিখ্যাত কাব্যনাট্য। এ ছাড়া অসংখ্য অনুবাদ এবং শিশুসাহিত্যে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সৈয়দ হক।)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
56 (11%)
4 stars
154 (31%)
3 stars
174 (35%)
2 stars
66 (13%)
1 star
38 (7%)
Displaying 1 - 30 of 79 reviews
Profile Image for সা কিব.
58 reviews11 followers
May 27, 2016

বাবর আলী। সুন্দর নিপাট গোছানো মানুষ। কথার মায়াজাল বুনায় তার জুড়ি মেলা ভার। জীবন নিয়েও আপাত অর্থে তার কোনো টানাপোড়েন নেই। ব্যাবসার টাকায় বেশ আয়েশে, নিশ্চিন্তিতে দিন কাটে তার।

শিক্ষিত, সুদর্শন, অবিবাহিত, সুকথক, সমাজের অন্য দশজনের থেকে বিত্তবান, মাঝবয়সী এই বাবরের যেন কোনো দুঃখ নেই। পিছু টান নেই। মনে হয়, যেন নিজের শরীরের সুখের জন্যই, শিশ্নের ইচ্ছেকে চরিতার্থ করবার জন্যেই সে কেবল উদগ্রীব।
বাবর শরীর চায়। কিন্ত সম্পর্কের বন্ধন চায় না।শরীর চিন্তার বাইরেও বিয়ে নিয়ে বাবরের আলাদা আরো ভাবনা আছে। বিয়ের বন্ধন চায় না বাবর। নতুন আরেকটি জীবন তৈরি করে তার উত্তরাধিকারও রেখে যেতে চায় না। সে ভালোবাসে অবাধ যৌনাচার। কচিকচি মেয়েদের সাথে বিছানায় যাবার জন্যে সেব্যাকুল হয়ে থাকে। কিন্তু ধর্ষণ সে করে না। বহু বুদ্ধি খরচ করে, সময় খরচ করে, অর্থ খরচ করে কচি মেয়েদের মন জয় করে সে। কেননা বাবর জানে, মন জয় হলে শরীরটা জয় করা সহজ হয়; হয় আনন্দময়।

এমনি হীন, কামুক, লম্পট, দূরাচারী যে, তার কেন মাঝে মাঝে খুব একা একা লাগে?
কেন তার কান্না কান্না পায়?
কেন তার মনে হয় কী জানি কী নেই!
কী যেনো কী এক অদ্ভুত হাহাকার, শূন্যতা কেন তাকে আমূল গ্রাস করে নেয় বারবার?

আজ থেকে ৪০ বছর আগে, ১৯৭৩-এ হক তার সময়ের চেয়ে যতটা এগিয়ে ছিলেন, আজ ৪০ বছর পরেও আমরা বোধহয় এখনো সেই ৪০ বছর আগের হক-এর চিন্তার কাছাকাছি যেতে পারি নি। পারি নি বলেই রাজনৈতিক ও সমাজ-বাস্তবতার এই দলিলকে আমরা পর্নো বা চটিবই বলতেও দ্বিধা করি নি।

কেন করি নি?
বিশেষ সময়ে শরীরের বিশেষ অংশ “দপদপ” করে ওঠার বর্ণনা, বাবরের “তারাবাতি” জাহেদার হাতে ধরিয়ে দেবার বর্ণনা, “তারপর হঠাৎ সচল হয়ে দুই ঠোঁটে ব্যগ্রতার সঙ্গে সবুজ একটা অশ্বথ পাতার মতো স্তন মুখে তুলে” নেয়ার বর্ণনা, শিশ্নের মাথায় লাল লিপস্টিক মেখে দেয়ার বর্ননা পড়ে?

আচ্ছা বাবরের এই বর্ণনা কি বাবর নামের পারভার্ট লোকটির চরিত্রটিকে একেবারেই বাস্তব আর বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে নি পাঠকের কাছে?
তবে?
তবে আর আপত্তি কেন?



যৌনতার আশ্রয় নিয়ে লেখক শেষপর্যন্ত কোথায় নিয়ে গেছেন, কোথায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন সেটাই মুখ্য

সত্যি বলতে খেলারাম খেলে যা তো আসলে এক বাবরের আড়ালে দুই বাবরের গল্প। এক বাবর ইনোসেন্ট। আরেক বাবর কামকাতর। নারী তার কাছে প্রেমাষ্পদা নয়, শিশ্নের আনন্দের উৎসমাত্র।

পাঠককে মাঝে মাঝে কনফিউজড করে দেবে দুই বাবরের দু’জনেই বর্তমান বর্ণনা। আবার একজনও বর্তমান নয়।
খেলারাম খেলে যা উপন্যাসেও বাবরের মনের দু’টো পার্ট। ইনোসেন্ট ও ডার্ক। ডার্ক পার্টটির ক্ষমতা প্রসারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে ইনোসেন্ট পার্টটি ধীরে ধীরে আড়াল হতে-হতে বলতে গেলে একেবারে হারিয়েই গেছে বাবরের অস্তিত্ব থেকে। কিন্তু, মনোভ্রমনের মাধ্যমে লেখক সৈয়দ হক আমাদের দেখিয়েছেন যে, লম্পট, পারভার্ট এই বাবরের মাঝেও অন্য এক বাবর আছে— যে বর্ধমানের লেবু গাছটির কথা ভেবে বিষন্ন হয়, যে এলাকার কানা ফকিরটার কুশল জানতে চায়, যে অন্তহীনভাবে ডুবে আছে হারানোর বেদনায় ও হাহাকারে।
সমাজে থেকেও ট্রমার প্রভাবে কী করে একজন মানুষ হয়ে পড়ে সকল কিছুর প্রতি উদাসিন, অঙ্গিাকারহীন, বিচ্ছিন্ন — পরোক্ষে তারই এক সাইকো-অ্যানালাইসিস তুলে ধরেছেন হক। ঘটনার ঘাতে মানুষের মনোজগতের ভাঙচুর নিয়ে যে সাইকিক-জার্নি তিনি তৈরি করেছেন খেলারাম খেলে যা তে, তা হয়ে উঠেছে হৃদয়গ্রাহী।

আমার রেটিং ৫/৫
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
March 28, 2021
প্লেবয়ের বাংলা কি গো😪
-খেলারাম

আপাদমস্তক এক ভোগী পুরুষের ভোগ‍্য সামগ্ৰীরূপে তরুনী ভার্যা থেকে ভগ্নী সমান বয়সী রমনীদের মধে‍্য রমনীমোহন হয়ে রমনের যে রমনীয় রচনায় যৌনতাকে সস্তার মোড়কে না মুড়িয়ে পাঠকের কাছে গছানোর কাজটি সরস সুন্দর উপমা দিয়ে উপভোগ্য করে তোলার জন্য হক সাহেব আসলেই প্রশংসার হকদার।

ধাঁধার উপস্থাপকের মনস্তত্ত্ব কে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত পাঠকের মনের সাথে মনকষাকষি পর্যায়ে যাওয়ার আগেই এমন কিছু বাঁক এসেছে যে ঐ অভিযোগ করার ফাঁকটা কোন ফোকরে গলে গেছে টের পেতে পেতে গল্পটা শেষ হয়ে যায়।

সেসময়ের সুবিধাবাদী সাহিত্যের সরস চর্চার মাধ্যমে চর্চিত না হয়ে বরং এরকম সাহসী লেখনী শামসুল হকের শৌর্যেরই পরিচয় দেয়

এসময়ে লিখলে তো জাত গেলো রব তুলে জাতি তাকে যাঁতাকলে পৃষ্ট করে শেষ মেশ চরম সময়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পগার পার হতো রাত পোহানোর আগেই।ভাগি‍্যস সেকালে জন্মেছিলেন!

বর্ধমান থেকে বাংলাদেশ যাত্রার মাঝখানে বাবর পেয়েছে যা, তার চেয়ে হারিয়েছে বহু বেশি।একটা জিনিষ অবশ্য সে পেরেছে নিখুঁত ভাবে
আর তা হলো পাঠক মনের রঙ্গমঞ্চ রঙিন কিছু সময়ের শব্দে সাজিয়ে দিতে।

রেটিং 🌠🌠🌠.৯৫
Profile Image for Naziur Rahman.
Author 1 book68 followers
August 22, 2016
ছোটভাই Asif Hasan Zeshan এর রিভিউ পরে উৎসাহিত হয়ে বইমেলায় কিনেছিলাম সৈয়দ শামসুল হকের 'খেলারাম খেলে যা'। ৫-২ জমা দিয়ে অসীম সময়ের অধিকারী হয়ে এবেলা একদিনেই টানা পড়ে শেষ করে ফেললাম।

বইটা নিয়ে লিখতে গেলে দুটো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলা যায় (আসলে পুরো উপন্যাসটা নিয়ে লিখতে গেলেই নানা স্তরে সমান্তরাল ভাবে দুটো করে দৃষ্টিভঙ্গি মনের মধ্য ঘুর ঘুর করতে থাকে। আবার কোন স্তরের দৃষ্টিভঙ্গিই তার পূর্বস্তরের সাথে সরল রৈখিক থাকে না।)।
শুরুতেই যদি পুরো বইটা নিয়ে বলতে যাই তবে যে কথা মাথায় আসে তা হচ্ছে -
১ - কোনধরনের সময়কাল,পারিপার্শ্বিকতা,ঘটনাক্রম বিবেচনা না করে শুধুমাত্র উপন্যাস হিসেবে পড়ে যদি কেউ বিচার করতে চায় তবে বইটাকে একটা অশালীন আবর্জনা বলে চালিয়ে দেয়া যায়। যেই দৃষ্টিভঙ্গি বইটার প্রথম প্রকাশ (১৯৭৩) থেকে এখন পর্যন্ত বহুল আলোচিত।
২ - আর যদি সময়কাল,পারিপার্শ্বিকতা, ঘটনাক্রম,চরিত্র সবকিছু নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করার কারো ইচ্ছা থাকে তবে এত সহজে একে বাতিলের খাতায় ফেলা যায় না। কারন লেখক স্থুল বর্ণনার ভেতর দিয়ে বেশ কিছু সুক্ষবোধ উপন্যাসে দিয়ে দিয়েছেন। যা মানুষ হিসাবে নিজের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় যেন।

সরলরৈখিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপন্যাসটি এক মধ্যবয়স্ক, মাতাল, সেলিব্রেটি, লম্পটের কাহিনী। যে কিনা তার আধেক বয়েসী সব অবিবাহিতা যুবতী মেয়েদের পটিয়ে ভোগ করে বেড়ায়।

কিন্তু এখানটাতেই উপন্যাসটি পাঠকের মনে প্রশ্ন তৈরি করে দেয় যে, একজন মানুষকে কি এত সহজে বিচার করা সম্ভব?

সমাজ, সভ্যতা এসব অদৃশ্য সুতো মানুষের মনে অনেক অনেক সীমারেখা তৈরি করে দেয়। তাই কোন মানুষকে আমরা আমাদের তৈরিকরা সীমারেখার বাইরে দেখতে পারি না। যারাই এসব সীমারেখার বাইরে চলে যায় তারা আমাদের কাছে হয় দেবতা নয় অসুরে পরিণত হয়। খুব সহজে আমরা মানুষের শ্রেণীবিভাগ এবং সরলীকরণ করে ফেলতে পছন্দ করি। হয়তো বেচে থাকার দায়ে এবং শৃঙ্খলা রক্ষার দায়ে আমাদের এই সরলীকরণ করে নিতে হয় নাহয় তাতে সম্মতি দিতে হয়। কিন্তু জীবনতো এত ছোট না!

(উপন্যাসের গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করতে চাইলে আরো অনেক কথাবার্তাই চলে আসবে। কিন্তু আমি যেহেতু শুধুমাত্র উপন্যাসটা পড়ে আমার কি মনে হয়েছে সেটুকু জানাতেই আগ্রহী তাই এর বেশি কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। এটুকুই থাকুক।)
Profile Image for Tamanna Binte Rahman.
184 reviews140 followers
April 2, 2021
গল্পটা বাবরের, একজন নারী শিকারীর, একজন খেলারামের যাকে ইংরেজিতে আমরা বলি Playboy। সে একজন বহুগামী বা Polygamist। উপন্যাসের পুরো লেখাই বাবরের অনবরত নারীসঙ্গ বদল এবং তার শারীরিক চাহিদা চরিতার্থ করার বিভিন্ন উপায়, কলাকৌশল, যৌনতা কখোনো রগরগে বয়ান কখোনো শিল্পীর তুলির মত কখোনো কবিতার মাধ্যমে। নারীসঙ্গের ক্ষেত্রে যার পছন্দ সতের থেকে বিশ বছরের উঠতি বয়সী মেয়েদের যাদের সে তুখর কথাযাদুর মাধ্যমে পটিয়ে বিছানায় নিয়ে যেতে পারে। সে শারীরিক চাহিদা পূরণে বিয়ে করে বন্ধনে যেতে ইচ্ছুক নয়, জোরাজুড়ি করে ধর্ষণেও বিশ্বাসী নয়। তাই বলে সে গণিকালয়েও যায়না। সে সময় দিয়ে, প্লট সাজিয়ে, কথা বলে মেয়েদের শারীরিক সম্পর্কে যেতে সম্মত করে। তার জীবনের একমাত্র দর্শন- খেলারাম খেলে যাঃ। সে মানুষকে বিশ্বাস করাতে চায়-

"তোমার কাছে যেটা অস্বাভাবিক, আরেকজনের কাছে সেটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। তুমি যা বিশ্বাস করো, আরেকজন তা করেনা। তুমি যাতে বাঁচো আরেকজনের কাছে সেটাই মৃত্যু। আমি যেভাবে বাঁচতে চাই, আরেকজন সেভাবে চায়না। তুমি যা চাও, আরেকজন তা ফেলে দেয়। সবই সত্য। কারণ সত্য মাত্রই আপেক্ষিক, এই মৃত্যু ছাড়া।"

তার চরিত্রের মধ্যে প্রতিফলিত হয় একজন নারীলিপ্সু পুরুষ যার ভদ্রলোকের সমাজের প্রতি রয়েছে বিদ্রুপ, অন্যের বিনয়কে তার চারিত্রিক দূর্বলতা মনে হয়। মেয়েরা গাড়ি চালালে তাদের থেকে দূরে থাকাটা বুদ্ধিমত্তার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ বলে মনে করে সে। অনবরত নারীসঙ্গ বদল বা বহুগামিতা তার জীবনে কোনরকম অপরাধবোধ তৈরি করেনা। সে প্রেমকে ব্যখ্যা করে আবেগ বা অনুভূতি হিসেবে-

"মানুষের যত আবেগ আছে, যত অনুভূতি আছে, যত রকম প্রতিক্রিয়া আছে তা দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। একটা হচ্ছে রক্ত মাংসের অনুভূতি, জান্তব অনুভূতি, আর মৌলিক অনুভূতি, আবেগ। আর একটা তার অর্জিত অনুভূতি- যা সে শিক্ষা-দীক্ষা চিন্তা-ভাবনা সভ্যতার ফলে অর্জন করেছে। একটা ভেতরের, আরবকটা বাইরের।…… দৈহিক মিলন মৌলিক অনূভূতি আর প্রেম অর্জিত অনুভূতি।"

এর মাঝে ক্ষনে ক্ষনে আসে হাসনু; ভারতের বর্ধমানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বোন হাসনুকে মৃত্যুর মুখে ফেলে পালিয়ে গিয়ে পরাজিত মানুষ হিসেবে বেঁচে যাওয়ার স্মৃতি। উপন্যাসের শেষ পর্বে এসে এই নারীলিপ্সু বাবরের চিন্তা-ভাবনা, সমাজের নিয়মগুলোকে বৃধাঙ্গুলী দেখিয়ে ব্যখ্যা করা, কৈশোরের দুঃস্বহ স্মৃতির মানসিক টানাপোড়েন, তার দ্বৈত মানসিকতা হয়তো আমাদের কিছুটা নাড়িয়ে দেয়, দোদূল্যমান করে। যদিও উপন্যাসখানা আরেকটু আগেই যবনিকা টানলে ভাল করতেন মনে হয় লেখক। অন্তত আমার তাই মনে হল।

অবাক বিষয় বহুগামিতা নিয়ে এমন একটা উপন্যাস লেখক লিখেছেন ৭০ এর দশকে। তারো থেকে অবাক লেগেছে উপন্যসের প্লট হিসেবে লেখক বেছে নিয়েছেন ৫০ এর দশক। আর বই প্রকাশিত হয়েছে ৯০ এর দশকে। আরো বিষ্মিত হই এই ভেবে লেখককে নিয়ে ‘বাবরের’ মত অভিযোগ ছিল লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ‘ক’ বইতে। তাই সব মিলে ৩ তারা।
Profile Image for Ranendu  Das.
156 reviews63 followers
June 17, 2020
সৈয়দ শামসুল হকের 'খেলারাম খেলে যা' উপন্যাসটি অবশেষে পড়ে ওঠা গেল। খেলারাম কোথাও বুকোয়স্কির 'ওম্যান' বা অন্য কোথাও কোথাও অন্য লেখকদেরও মনে করিয়ে দেয়। উপন্যাসের মূল চরিত্র বাবর টেলিভিশনের ধাঁধার অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, সেই সূত্রেই তিনি নারী মহলে বিশেষ পরিচিত। বাবর বিবাহ সম্পর্কে নয়, যৌনতায় বিশ্বাসী। উপন্যাসে বাবর তার বিশ্বাসের কারণ ও ব্যাক্ত করেছেন এবং তলিয়ে দেখলে বাবরের বিশ্বাস অযৌক্তিক নয়। জাহেদার বিশ্বাস অর্জন করতে গিয়ে বাবর যখন নিজের অভিনয়ে ক্লান্ত বোধ করে, তখন কি পাঠক কোথাও নিজের ক্লান্তি কে অনুভব করতে পারেন?

হুমায়ূন আজাদের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে এরকম একটি উপন্যাসে যৌনতার চিত্র আঁকা হয়েছে বলেই উপন্যাসটিকে নিন্দার ভাগীদার হতে হয়েছে। উপন্যাসে কথিত বক্তব্য কতটা সারবান, সে নিয়ে বোধহয় আলোচনা কমই হয়েছে। উপমহাদেশে এবং সর্বোপরি বাংলা ভাষায় এরকম একটি উপন্যাস যে রকম ভাবে, যে পরিণত দৃষ্টিকোণ থেকে সমাদৃত ও আলোচিত হওয়া উচিত ছিল, নিঃসন্দেহে সেটা হয়নি। (হয়তো হয়েছে, আমার জানা নেই।)

তবে, একটানা পড়ে, মাঝরাতে শেষ করার পরে, উপন্যাসের দুটো ঘটনা আমাকে দীর্ঘ ক্ষণ তাড়া করেছে। প্রথমত, বাবরের যাবতীয় যুক্তি যেন কোথাও এসে থমকে দাঁড়ায়ে যায় সন্ধ্যের অন্ধকারে পেছনে ফেলে আসা অসহায় হাসুর চিৎকারের সামনে। হাসনুর 'দা-দা!' বলে চিৎকার বারবার কানের কাছে অনুরণিত হতে থাকে; ঋত্বিকের 'মেঘে ঢাকা তারা'র নীতার আর্তনাদ যেন হাসনুর বাকি কথাটি পূরণ করে দেয়। 'দা-দা! আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম!' হাসুর আর্তচিৎকার সারা রাত দুঃসহ দুঃস্বপ্ন হয়ে ছেঁয়ে থাকে মন। নর ও নারীর সম্পর্কের বুনিয়াদটা আসলে কি? ভালোবাসা কি কেবলই মার্জিত সভ্যতার দান? যৌনতাকে ছাপিয়েও কি শেষপর্যন্ত কোথাও কিছু টান থেকে যায়, যা হাসু বা জাহেদার আর্তনাদের মতো ঘুরেফিরে হৃদয়ে বাজতে থাকে?

দ্বিতীয়ত, উপন্যাসে বাবর এবং জাহেদার পরিনতি প্রথমে আমার ট্রাজিক মনে হয়। যেন সেটা নিতান্ত বানিয়ে তোলা, মেলোড্রামাটিক, কোথাও যুক্তিগ্রাহ্য সমাপ্তিতে পৌঁছাতে না পারার দরুন একটা চট জলদি সমাধান খুঁজে বের করা। কিন্তু, পরে ভেবে দেখলাম গুন্টার গ্রাসের 'কল অফ দ্যা টোড' উপন্যাসের শেষটাও এমনিই। আকস্মিক! অতএব, মেনে নিতেই হয় যে ট্রাজেডি জিনিসটা মানুষের জীবনে নিতান্তই অসম্ভব নয়।

যাই হোক, উপন্যাসের শেষে বেশ কিছু প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়। ভালোবাসার স্বরূপ কি? ভালবাসায় যৌনতার ভূমিকা কতটুকু? যৌনতা পেরিয়ে যা পড়ে থাকে, সেটাই কি ভালবাসা? ভালোবাসা কি নির্ভরতা? তবে কি নির্ভার ভালোবাসা বলে কিছু হয় না?

এর উত্তর কি সত্যিই আছে?
Profile Image for আহনাফ তাহমিদ.
Author 36 books80 followers
December 23, 2021
খুব ভয়ে ভয়ে বইটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম। খেলারাম খেলে যা'র "খ্যাতি" সর্বজনবিদিত (যারা পড়েছেন আর কি)। বাবরের চরিত্র কিংবা তার কর্মকাণ্ড পড়তে শুরু করলে ঘৃণায় গা রি রি করে ওঠাই স্বাভাবিক। তবে আপনি যদি যৌনতাকে আড়ালে রেখে একজন মানুষের মনস্ত্বত্ত্ব কীভাবে কাজ করে তা পড়তে শুরু করেন, তাহলে অবাক হয়ে খেয়াল করবেন, খেলারাম খেলে যা বাংলা সাহিত্যের এক অসামান্য সংযোজন।

কেন?

বাবরের মতো চরিত্র যে লেখকের আকাশকুসুম কল্পনা, তা ভেবে থাকলে আপনি ভুল করবেন। এমন চরিত্র আমাদের সমাজে আছে। আশেপাশেই আছে। যদি না-ই থাকতো, তাহলে পত্রিকার পাতায় আমরা এত এত ধর্ষণ কিংবা পুরুষের অবদমিত কামনা-বাসনা চরিতার্থের হীন কর্মকাণ্ড পত্রিকার পাতায় দেখতে পেতাম না। বাবরের মতো চরিত্র সমাজে আছে। তারা থাকে লুকিয়ে, প্রকাশ্যে, মাথা নিচু করে, সদর্পে। খেয়াল করে দেখবেন, বাবরের মতো একজন চরিত্রকে কিন্তু লেখক সমাজের খুব নিচুস্তরের মানুষ হিসেবে আঁকেননি। তার ক্যারিশম্যাটিক চালচলন, কথার মায়াজাল সহজেই প্রলুব্ধ করে নারীকে। বাবর নিজের কৌশলগুলো নারীদের ওপর খাটাতে কোনো কসুর করে না।
লেখক একইসাথে প্যারালালি বাবরের চরিত্রের নানা দিক এঁকেছেন। হতরন সাহেবের অবস্থা সঙিন জেনেও মেয়ের বিয়েতে প্যাকেটে করে টাকা দিয়ে আসে। ব্যবসায়ের সঙ্গী যেন এই সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে, সেটি নিয়েও সতর্ক করে হতরন সাহেবকে। আবার এই হতরন সাহেবের মুখে যখন কৃতজ্ঞতার দুটো কথা আসে, তীব্র বিবমিষায় বাবরের মুখ তেতো হয়ে যায়। আবার মিসেস নফিস যখন ওকে রাস্কেল বলে গাল দেয়, বাবরের চরিত্রের হীন দিকটিই দেখতে পাই। মেয়েদের নিয়ে খেলতে ভালোবাসে বাবর, মেয়েদের প্রতি ওর চাহিদাটা যেন কেবলই শারীরিক। কিন্তু দিনশেষে তার মনের অন্তরালে হাসুনের "���াদা" "দাদা" ক্রন্দনটিই সবকিছু ছাপিয়ে শোনা যায়।

যৌনতার বর্ণনাগুলোও লেখক এঁকেছেন সুনিপুণ কালিতে। বাবরের চরিত্রের সাথে মিল রেখেই যেন এখানে ফুটে উঠেছে রগরগে যৌনাচার। এখানে প্রেমের কোনো স্থান নেই। তাই যৌনাচারের মাঝেও আপনার মনে প্রেমময় কোনো চিন্তাভাবনা দোলা দিয়ে যাবে না। বাবরের খেলারাম চরিত্র আর তার খেলা, সবকিছুই লেখক দ্বিধাহীনভাবে তুলে ধরেছেন।
Profile Image for Shafaat.
93 reviews113 followers
September 30, 2016
Many simply dismiss this book as a trivial erotica. In my opinion, this might be the first postmodern existential novel written in Bangali literature.
Profile Image for Neela.
83 reviews59 followers
March 17, 2016
বইটার এত নাম শুনলাম কিন্তু বইটা এমন কেন? কাহিনীর মধ্যে আহামরি কিছু খুঁজে পাইনি। কিন্তু পড়তে অতটা খারাপ ও লাগেনি। বইয়ের প্রধান চরিত্র বাবর আলী আমাদের সমাজেরই কিছু মানুষের প্রতিচ্ছবি, কিছু না আমি বলবো অনেক মানুষের প্রতিচ্ছবি। লোকে প্রেমকে পবিত্র আর কাম কে নিন্দিত বললেও কাম আর প্রেম কিন্তু অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একের পর এক কমবয়সী মেয়েদের প্রতি কামনা বাবর আলীকে আমাদের কাছে অপরাধী করে তুলেছে, কিন্তু মনে মনে এমন কামনা পোষণ করেনি এমন পুরুষ কি পাওয়া যাবে একজনও?
প্রেম ও কামনা নিয়ে বাবর আলীর দার্শনিকতা কে আমরা কেও প্রকাশ্যে মেনে নেই না, অথচ মনে মনে আমরা এরই অনুগামী! কি বিচিত্র!
Profile Image for Rehnuma.
447 reviews21 followers
Read
October 28, 2024
❛Sunday দিলাম শিলাকে, Monday দিলাম মোনাকে
Tuesday dating টিনাকে, Wednesday ঐন্দ্রিলাকে
Thursday দিলাম রিয়াকে, Friday দিলাম দিয়াকে
Saturday-টা প্রিয়াকে, দিল তো দিইনি কারওকে
আমি হলাম রোমিও, ladyki ller রোমিও
পাক্কা playboy রোমিও
আমি হলাম রোমিও, lad yk ill er রোমিও
পাক্কা playboy রোমিও
Flirting master রোমিও❜


বাবর আলী খান। পেশায় ব্যবসায়ী, পাশাপাশি সেলিব্রেটি। টেলিভিশনে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে সে। বয়স চল্লিশের কোঠায় (৩৮-৪০ এর কোথাও)। বাইরের দুনিয়ার কাছে সে নিপাট ভদ্রলোক। কেউ বলে শিল্প সাহিত্যমনা, কেউ আবার দার্শনিক আখ্যা দেয়। বাবর আলী এসব বেশ উপভোগ করে।
তবে তার আরেকটা পরিচয় সে কামু ক। নারীর দেহ শি কা রী।
বিবাহে সে বিশ্বাসী না, নিয়মিত শয্যাসঙ্গী বদল করাই বাবর মিয়ার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। হালের ভাষায় তাকে আমরা playboy বলতে পারি। যদিও সে নিজেকে বলে ❛খেলারাম❜।
তার জীবনের উদ্দেশ্যই যেন শি শ্নে র আন্দোলনে নতুন নতুন নারীকে চেখে দেখা। তাই বলে সে নীতিবিরুদ্ধ কিছু করেনা। সোজা কথায় ধ র্ষ ণ করে না। কচি মেয়েদের পিছে সে সময় দেয়, অভিনয় করে স্বেচ্ছায় তাদের বিছানায় নেয়। আর কথার পটুতায় তার জুড়ি নেই। দেখতে স্মার্ট। সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণীরা তাতে মজেও যায়।
তাইতো এককালে লতিফার দেহের স্বাদ আস্বাদন করেছিল। এরপর ভেবেছিল বাবলির কথা। তাকেও খেলিয়ে খেলিয়ে বিছানার পথেই ডাকছিল সে।
বাবলির খেলার ফলাফল পাওয়ার আগেই ঊনিশ কুড়ির জাহেদাকে সে হাত করে ফেলে। হোস্টেলবাসী জাহেদাকে নিয়ে রংপুরে ডাকবাংলোয় আরেকটি খেলার আনজাম দিতে উদ্যোগ নেয় সে। বাবরের হেরে পেঁচি কথায় জড়িয়ে জাহেদাও রাজি হয়ে যায়। কৌশল খাটিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাবরের সঙ্গী হয়। বিশাল যাত্রা। আর বাবরের সুন্দর অভিনয় চলতে থাকে। শি শ্নে র উথাল পাতালকে বশ করতে জাহেদা নামক জরিবুটিই লাগবে।
এতকিছুর মাঝেও সে এক আদিম ডাক শুনে। যা তাকে বারবার নিজের অপারগতার অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বারবার সেই ❛দা - দা, দা- দা❜ ডাক তাকে বিহ্বল করে তোলে। তাকে ছাপিয়ে যায় তার কামুক চেতনা। কারণ কোনো এক অতীতে দেয়াল লিখনে দেখা ওই লাইনটাই সে দেবতার মতো পূজা করে,
❛খেলারাম খেলে যা❜
তবে রংপুরের পথের এই দীর্ঘযাত্রা তাকে কি পরিবর্তন করে দিয়েছিল? না হয় এত দার্শনিক ভাব কোথা থেকেই পেলো। ফিরতি পথে জাহেদার ওমন আচরণ এবং শেষের ঐ চিৎকার তাকে কি হাসনুর কথা মনে করিয়ে দিবে?


পাঠ প্রতিক্রিয়া:

❝খেলারাম খেলে যা❞ সৈয়দ শামসুল হকের নন্দিত নিন্দিত এক সৃষ্টি। উপন্যাসটি ৭৩ সালে প্রথম প্রকাশ পায়। যার প্রেক্ষাপট ৬০ এর দশকের একদম শেষদিক।
ঐ রকম একটা সময়ে এমন র গর গে ধাঁচের বই লেখা এবং তার প্রসার হওয়া বেশ বড়ো ব্যাপার।
উপন্যাসের প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে যৌ নতার খেলা। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে বাবর আলী খানকে মার্ভেল ভাষায় এমন করে বলতে কি পারি, ❛Genius, Billioniare, Playboy, Philanthropist❜? যদিও সেইরাম ধনী হিসেবে তাকে বলা যায় না।
যাক গে, বইটা পড়তে অনেক বেশি ধকল সইতে হয়েছে। পাতার পর পাতা দৈহিক মিলনের বর্ণনা, সঙ্গ মের সাথে বিভিন্ন জিনিসের তুলনা, নারী দেহকে শুধুমাত্র খেলার যন্ত্র হিসেবে উপমা বর্ণনায় আমি ত্যক্ত হয়ে গেছিলাম। খুব স্বাভাবিকভাবেই বাবর সাহেবকে আমার মোটে পছন্দ হয়নি। এক নারী থেকে আরেক নারীতে ঝাঁপ করে লাফ দেয়া, সর্বক্ষণ শুধু কা মুক চিন্তা পড়তে পড়তে বিব্রত হচ্ছিলাম। তবে, সেইসময় বা এই সময়ের বিচারে আদতে বাবর চরিত্রটা কি বাস্তবের থেকে নেয়া নয়?

আজ থেকে ৪৫-৫২ বছর আগেও সমাজের উঁচু জায়গাগুলো আধুনিক ছিল না? বাবরের মতো চরিত্র ছিল না?
এই হিসেবে বাবরকে বাস্তবের কোনো খেলারামের প্রতিনিধি ধরা যায়। যার কথার জাদুতে তরুণীরা বুদ হয়ে নিজেকে স্বেচ্ছায় সপে দেয়।
লেখকের এই বিষয়ে বর্ণনা করার ধরন আর বাবরের চিন্তাভাবনার মধ্যে স ঙ্গ মে র খেলাকে বইয়ে দেয়ার অবস্থা ছিল অবাক করার মতো। নিজের ❛তারাবাতি❜ তরুণীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার এমন উপমা পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। বাথরুমে তোয়ালেতে আরেক নারীর স্পর্শকে অনুভব করা কিংবা নিজের ❛তারাবাতিতে❜ লিপস্টিক লাগিয়ে দেয়ার এমন অদ্ভুত কর্মগুলো আমাকে আরো বেশি বিব্রত করেছিল। বাবর যে কিনা চোখের দর্শনেই নারীর দেহকে এফোঁড়-ওফোঁড় দেখে, পারলে কল্পনাতেই তাকে বিছানায় নিয়ে যায় তার মধ্যেও লেখক এমনসব দর্শন এনেছেন যা উপন্যাসকে অন্যভাবে ভাবতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
মোটাদাগে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি দ্বিধাহীনভাবে বলব খেলারামের এত খেলা আমার ভালো লাগেনি। সাহিত্যে যৌ নতা একটা বিষয়। তবে সে যৌ ন তার প্রয়োগও সীমার মধ্যে থাকলে সেটা সহ্য করার মতো হয়। এই বইতে সীমার কোনো লিমিট ছিল না বলাই বাহুল্য। সে যুগেও এই উপন্যাস সমালোচিত হয়েছে। লেখক ব্যাকল্যাশ ফেস করেছেন।
তবে পুরো উপন্যাসে ভাবিয়েছে বাবরের দ্বৈত চরিত্র। কখনো সে কা মু ক, নারীর দেহলোভী এক লোক। কখনো সে নিজের অপারগতা থেকে পালানো এক অসহায় ব্যক্তি। যে দেশভাগের সময় বিপদে পড়া বোনকে ফেলে পালিয়ে এসেছিল। যার মুখে হুটহাট এমন সব দর্শনের বাক্য বের হয় যা ভাবতে বাধ্য করে।
❛তোমার কাছে যেটা অস্বাভাবিক, আরেকজনের কাছে সেটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। তুমি যা বিশ্বাস করো, আরেকজন তা করেনা। তুমি যাতে বাঁচো আরেকজনের কাছে সেটাই মৃ ত্যু। আমি যেভাবে বাঁচতে চাই, আরেকজন সেভাবে চায়না। তুমি যা চাও, আরেকজন তা ফেলে দেয়। সবই সত্য। কারণ সত্য মাত্রই আপেক্ষিক, এই মৃ ত্যু ছাড়া।❜

উপন্যাসের দার্শনিক উক্তিগুলো ছাড়া বাকি কিছুই ভালো লাগেনি। আমি সাহিত্যে যৌ ন তা র রগরগে বর্ণনার পক্ষে না বিধায় আমার কাছে ভালো লাগেনি। বাবরকে শুধু যৌ নতা, নারীর স্বাদ অস্বাদনকারীর বাইরে একজন অসহায়, একাকী একজন মানুষ রূপে মেনে নেয়া যা��়না। তেমনই তাকে তার ভারী ভারী দার্শনিক আলাপেও পছন্দ করা যায়না। নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে কথার মা রপ্যাঁ চ দিয়ে যেসব যুক্তি এসেছে চাইলে সেগুলোকে খন্ডন করা যায় আরো অনেক যুক্তি দিয়ে।
আমার পড়া শেষ পাঁচটা বইয়ের তিনটাই সৈয়দ শামসুল হকের। তিনটাই মোটামুটি দৈহিক দিককেই প্রাধান্য দিয়ে নানা বিষয়ে লেখা।
শেষটা কেমন ছিল? নারীলোভী, বিছানা প্রেমী বাবর আর তরুণী জাহেদা যে মিথ্যে করুন দেখিয়ে হোস্টেল থেকে ছুটি নিয়ে এক নিষিদ্ধ সফরে যাত্রা করেছিল তাদের পরিণতি কী হয়েছিল? সমাপ্তিটাকে আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে।


❛আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়, ভালোবাসা শুধুই বিছানায় যাওয়ার ধান্দা, তথা দৈহিক খেল? সেখানে ভালোবাসা, মনের অনুভব বলতে কিছুই নেই?❜
Profile Image for Shakil Mahmud.
90 reviews41 followers
November 15, 2020
'৭০ এর দিকে রচিত হয়েও এটা অনেক বেশি আধুনিক,অনেকখানি উদ্ধত এবং আগাগোড়া সরস ঠেকলো আমার কাছে - যেই রস এমনকি বর্তমানের উত্তর-আধুনিক যুগের লেখকদের লিখাতেও পাওয়া দুস্কর । আমার পড়া প্রথম সৈয়দ শামসুল হকের বই এতটাই দুর্দান্ত লাগবে ভাবিনি । সৈয়দ শামসুল হক সাহেব - আপনাকে আমার লাল সেলাম !
Profile Image for Sharika.
358 reviews95 followers
September 28, 2020
Wanted to give a zero to be very honest... Sad it can't be done.
Profile Image for Prithvi Shams.
111 reviews106 followers
December 1, 2016
This book may appear raunchy to many. I saw the story of a libertine, haunted by the dying screams of his kid sister being hacked to death during the sectarian riots of pre-partition India, find his escape by consoling himself that he has not come to this world to be tied down by bonds - familial or romantic. He took countless women to bed, until his bad conscience morphed into delusion and gobbled him up in his last escapade.

Ergo, the ironic title - খেলারাম খেলে যা।
Profile Image for Md. Tahseen Quayum.
16 reviews17 followers
March 16, 2023
এন্ডিং বাজে। অনেক বাজে। পুরো অভিজ্ঞতাটা নষ্ট করে দেওয়ার মত বাজে। আমি অনেক আশা করে বইটা শুরু করেছিলাম। খুব ভলো লাগছিল। একে, লেখা ঝরঝরে। দুয়ে, টপিকটাও আনকমন। তিনে, যৌন সুড়সুড়ির ব্যাপারটা তো এই বয়সে ভালো লাগেই। উপরন্তু, বাংলা সাহিত্যে একটা sexual encounter-এর বর্ণনা যুতসইভাবে কেউ দিতেই পারে না। চটির ঠাপাঠাপি আর রাবীন্দ্রিক গীতলতা, এই দুই এক্ট্রিমের মাঝখানে কিছু নাই আর। ইংরেজি সাহিত্যের সাথে তুলনা করতে গেলে আমার লিখা শেষ হবে না। ছোট্ট করে বলা যায় এভাবে, বাংলা ভাষায় লালিত্যচর্চার আধিক্যে ভাষাটা কাব্যিক হয়ে গেছে, গদ্য-সন্দর্ভ ধারণ তার জন্য কঠিনই এখন। এইটা টপকে সৈয়দ হক আমাকে বেশ কিছু ভালো দৃশ্যের বর্ণনা দেন।

দিয়ে তিনি দিলেন লাস্টের দুই পেজে সব ভচকে। ফাইভ স্টার থেকে জিরো স্টারে নামানোর জোগাড়। তাও দুইটা তারা দিলাম, যতটুকু যা ভালো, তার মর্যাদায়।
Profile Image for Musharrat Zahin.
404 reviews489 followers
December 10, 2021
বইয়ের নামেই কাহিনি মোটামুটি আন্দাজ করা যায়। চল্লিশোর্ধ্ব টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক কাম ব্যবসায়ী কাম প্লেবয় বাবর আলী। বয়স বেশি হলেও কথাবার্তা দিয়ে লতিফা, বাবলি, মিসেস নফিস তরুণী-যুবতী সব বয়সীদের একদম কাত করে দেন। ব্যাপার হচ্ছে সম্পর্ক ওই পর্যন্ত নেওয়ার পর উনি তাদের দিকে কখনো ফিরে না তাকালেও সুতার টান ঠিকই আলগা করতে দেন না। এইটা তার কাছে একরকম খেলা। একের পর এক তরুণী-যুবতীর সঙ্গ পাল্টানোর পর তিনি পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জাহেদাকে। তো তাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে রংপুরে নিয়ে যায় বাবর আলী। সেখানে ওই একই যা হওয়ার তা হয়ে যাওয়ার পরে জাহেদাকেও তিনি মন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এদিক দিয়ে তিনজন লোক জাহেদাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু তার মনে জাহেদার প্রতি কোনো অনুতপ্তবোধ নেই। তার কেবল হাসুর কথা মনে পড়তে থাকে। কে এই হাসু?
.
.
.
বইটা পড়ার অভিজ্ঞতা একদমই সুখকর না। উনার লেখা ঠিক আছে, কিন্তু কাহিনি একেবারেই আমার পছন্দের সাথে মেলেনি। তবে লেখক নিজেই এটাকে 'বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে ভুল বোঝা বই' বলেছেন।

এখন কাহিনির গভীরতা তো পছন্দ না হলেও আঁচ করা যায়। যৌনতার উদাহরণগুলো আমার পছন্দ হয়নি, আমি সাধারণত এধরনের বর্ণনা এড়িয়ে চলি। কিন্তু উনি খুব সূক্ষ্মভাবে একজন মানুষের মনে ঠিক ওই সময়ে কী চিন্তা চলে তা তুলে ধরেছেন। তবে অন্তত আমার দিক থেকে এটাকে উচ্চমানের সাহিত্য এবং অবশ্যপাঠ্য বলতে পারছি না।

আচ্ছা, ছোটবেলার দুঃস্মৃতির ঢাকার জন্য বাবর তার জীবনের পরবর্তী সময়ে যা করছিল, তা কি ঠিক ছিল?
Profile Image for Monisha Mohtarema.
86 reviews2 followers
November 26, 2022
সৈয়দ শামসুল হক তার 'শ্রেষ্ঠ উপন্যাস' গ্রন্থের ভূমিকায় 'খেলারাম খেলে যা'কে 'এদেশের সবচেয়ে ভুল বোঝা উপন্যাস' হিসেবে অভিহিত করে লিখেছিলেন, 'রচনার প্রায় কুড়ি বছর পরও এর জন্যে আমাকে আমার অন্যান্য রচনার চেয়ে অনেক বেশি জবাবদিহি করতে হয়। আমি খুব কম পাঠককে জানি, যিনি উপন্যাসের একেবারে শেষ বাক্যটি লক্ষ্য করেছেন। আমার বিশ্বাস, এই শেষ বাক্যটিতে দাঁড়িয়ে কেউ এ উপন্যাসের জন্যে আমাকে তিরস্কার করতে পারবেন না।'


টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক বাবর আলী খান। আমরা তাকে আপাতদৃষ্টিতে লম্পট হিসেবেই দেখি। সে অবিবাহিত কিন্তু বয়স্ক পুরুষ। কিন্তু 'খেলারাম খেলে যা' কি অল্পবয়সী মেয়েদের সঙ্গে বাবরের শরীরিক সম্পর্কের ধারাবাহিক কাহিনী? লতিফা, মিসেস নাফিস, বাবলি, জাহেদার মতো নারীর কাছে বাবর আলী খান কেন যায়? কিসের জন্য যায়? শুধু কামনা? এ উপন্যাসে মূল স্রোতটিকে এতটা সার্থকভাবে সৈয়দ হক আড়ালে রেখেছেন যে অপরিণত পাঠকের কাছে সেটি ধরা পড়বে না।আমার কাছেও পড়েনি!আমি বুঝতে পারিনি আসলে এই উপন্যাসের মূল উদ্দেশ্য কি! আমার মতো আরো অনেকের কাছে 'খেলারাম খেলে যা' বইটির মানে বাবরের যৌন-অভিযান। আমি উপন্যাসটা পড়ার পর সমকাল পত্রিকার একটা আর্টিক্যাল পড়লাম তাতেই আমার কাছে পুরো বিষয়টা ধরা দিয়েছে!আর্টিক্যাল টা কিছুটা এমন ছিলো-

"ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে পালিয়ে আসে মানুষ। বাবর তাদেরই প্রতিনিধি। বাবর আমাদের স্বার্থসচেতনতার গভীরে থাকা 'পাশবিক আমি'র প্রতিনিধি, যার অন্য পিঠে আছে মানবিক মানুষ হতে না পারার আর্তি ও দহন, ক্ষয় ও ক্ষরণ। রাজনীতি, ইতিহাসের মার খাওয়া বাবরের পিঠ। এ পিঠ তার অতীতের পিঠ। তার ব্যর্থতা ও কাপুরুষতার পিঠ। সেই মারের দাগ তৈরি করেছে অমোচনীয় এক কালশিটে দাগ। দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িকতার গ্লানি, রক্তপাত কেবল সেই সময়টার ভেতরে সেঁ���িয়ে যায়নি, সময়ের সীমা ছেড়ে তা বেরিয়ে পড়েছে, জন্ম দিয়েছে দাঙ্গার মতো আরও কাপুরুষোচিত ঘটনার। নিজের বোনকে দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি বাবর। সেই স্মৃতি তার পিছু ছাড়ে না। উপন্যাসের শেষে ধর্ষণকারীদের হাত থেকে জাহেদাকে বাঁচাতে চেয়েছে বাবর। সেখানেই তার প্রকৃত পৌরুষের প্রথম ও শেষ পরিচয় পাওয়া যায়। টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক বাবর আলী খান। আমরা তাকে আপাতদৃষ্টিতে লম্পট হিসেবেই দেখি। সে অবিবাহিত কিন্তু বয়স্ক পুরুষ। 'খেলারাম খেলে যা' একটি অস্বস্তিকর উপন্যাস।"


প্রায় ৪০ বছর ধরে 'খেলারাম খেলে যা' উপন্যাসটি পাঠকের আগ্রহ ধরে রেখেছে। এটি একটি বিশেষ ধরনের জনপ্রিয়তা। প্রায় ৪০ বছর আগে সৈয়দ হক তা লিখে গেছেন। কী আধুনিকতায়, কী আবেদনে তাঁর এ লেখা তাঁকে তথাকথিত জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে সত্যিকারের জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।


উপন্যাসটির কিছু কথা মনে গেঁথে গিয়েছে-

▪️‘যা ভাল লাগে তা ধরে রাখা বোকামি। মানুষ ধরে রাখতে চায় বলেই দুঃখ পায়। আসলে সব কিছুই একটা স্রোতের মতো। সুখ, ঐশ্বর্য, জীবন, আকাশ, বিশ্ব, মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, তারকাপুঞ্জ, সব কিছু। সমস্ত কিছু মিলে আমার কাছে প্রবল শুভ্র জ্বলন্ত এক মহাস্রোত মনে হয়। দুঃসহ কষ্ট হয় তখন। আমার জীবনে যদি একটা কোনো কষ্ট থেকে থাকে তাহলে তা এই। এই মহাস্রোতের সম্মুখে আমি অসহায় তুচ্ছ, আমার অপেক্ষা সে রাখে না। তুমি, আমি, এই শহর, মহানগর, সভ্যতা সব অর্থহীন বলে মনে হয়। আমি কি করলাম, তুমি কি করলে, ন্যায়-অন্যায় পাপ-পূণ্য, মনে হয় সবই এক, সব ঠিক আছে কারণ সবই কত ক্ষুদ্র।’

▪️'তোমার কাছে যেটা অস্বাভাবিক,আরেকজনের কাছে সেটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক।তুমি যা বিশ্বাস করো,আরেকজন তা করে না।তুমি যাতে বাঁচো আরেকজনের কাছে সেটাই মৃত্যু। আমি যেভাবে বাঁচতে চাই,আরেকজন সেভাবে চায় না।তুমি যা চাও আরেকজন তা ফেলে দেয়।সবই সত্য।কারন সত্যি মাত্রই আপেক্ষিক।'
3 reviews1 follower
September 12, 2021
সৈয়দ শামসুল হকের লেখা আলোচিত একটি উপন্যাস। এর আগে লেখকের কোন উপন্যাস পড়ি নি, এইটেই প্রথম। উপন্যাসের পরতে পরতে লেখকের অনবদ্য ভাষাগত শৈলীর পরিচয় পেয়েছি বারবার। কলমের ভাষাতে এমন সাবলীল ভঙ্গিতে লেখক সূক্ষ্মভাবে চরিত্র, ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতাকেও যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা এককথায় অসাধারণ। আর পুরো বই জুড়ে লেখকের যুৎসই সব উপমার ব্যবহার যেন কল্পনাকে জীবন্ত করে তুলেছে বারবার!

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবর আলী খান, নিজেকে যে ভাবে নির্বোধ এই পৃথিবীতে চতুর কোন জাদুকর। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের এই মানুষটি কথার জাদুতেই সম্মোহিত করে রাখতে বেশ পারঙ্গম! বিয়ে করেন নি অথচ বহু নারীর শয্যাসঙ্গী বাবর ধর্ষণে বিশ্বাসী নয়। প্রেমের মায়াজালে জৈবিক চাহিদা মেটাতে উন্মুখ কিন্তু ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে নারাজ! বাবরের ভাবনায় যা ভালো লাগে তা ধরে রাখাটা বোকামি। মানুষ ধরে রাখতে চায় বলেই দুঃখ পায়। যেই পাওয়া হয়ে যায় তখন যেন সেটা পেছনে পড়ে যায়। সমাজের প্রচলিত কানুনের বিচারে বাবর হয়তো লম্পট কিন্তু সে জানে আইন দুর্বল মানুষের সৃষ্টি ভিন্ন আর কিছুই নয়।

বাবরের চোখে, সভ্যতা হলো একধরণের অভিনয় আর অভিনয় মাত্রই তা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তাই দৈহিক মিলন তার কাছে মৌলিক অনুভূতি আর প্রেম অর্জিত অনুভূতি। মানুষ তার কামনাকে নিয়ে বিব্রত আর তাই ক্রমাগত সভ্যতার অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত মানুষ আর আত্মার কণ্ঠ শুনতে পায় না। কিন্তু বাবর চায় স্বভাবের প্রতিষ্ঠা। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে সে চায় বেঁচে থাকার আনন্দ কেননা বর্তমানে বিশ্বাসী বাবর জানে অসংখ্য বর্তমানের গ্রন্থনা আমাদের জীবন। কিন্তু বাবরের নিজের জীবনেও আছে পিছুটান, আছে অন্তর্দহন, আছে অতীতের দুঃসহ স্মৃতি। সেইসব স্মৃতি ধামাচাপা দিতেই হয়তো বাবরের বর্তমানকে আঁকড়ে রাখার অদম্য ইচ্ছা, নিজের সাথে নিজের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই! সেই যুদ্ধে জয়ী কে?

মানব মন বিচিত্র৷ উপন্যাসের বাবর চরিত্রটির মাধ্যমে লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন একই মানুষের বিভিন্ন রূপ। কিন্তু কেবলমাত্র বাবর নয়; মানুষের বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারা, আবেগ, অনুভূতিকে উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রেই সার্থকভাবে রূপায়িত করেছেন লেখক।

আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগে লেখা উপন্যাস কিন্তু রচনাশৈলী ও বিষয়বস্তুর বিবেচনায় কত আধুনিক! উপন্যাসের বিভিন্ন অংশে যৌনতার রগরগে বর্ণনা দিয়েছেন লেখক যা হয়তো কিছু পাঠকের অস্বস্তির কারণ হতে পারে কিন্তু এর মাধ্যমে যে গভীর বার্তা লেখক দিতে চেয়েছেন সে বিবেচনায় উপন্যাসের প্রতিটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। উপন্যাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বাবর ও অন্যান্য চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মানুষের জীবন, দর্শন, আবেগ, অনুভূতি ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ যা পাঠকের মনে চিন্তার উদ্রেক ঘটাতে বাধ্য।

সাইকো সেক্সুয়াল লেখা পছন্দ করেন এমন পাঠকদের জন্য বইটা নিঃসন্দেহে জ্যাকপট। সাহিত্যে যৌনতা যদি আপনার অস্বস্তির কারণ না হয় তবে প্রাপ্তবয়স্ক যেকোন পাঠকেরই বইটি পড়ে ভালো লাগার কথা।
9 reviews9 followers
March 12, 2015
শেষ পর্যন্ত পড়েই ফেললাম, সৈয়দ হকের বহুল আলোচিত উপন্যাস “খেলারাম খেলে যা”। রিসেন্ট দেখা মুভি “ফিফটি শেডস অফ গ্রে” এর কাছাকাছি বাংলা ভার্সন বলে মনে হলো। বিভিন্ন মেয়েদের প্রতি কামের আকুতি ছাড়াও বাবর আলীর কিছু দার্শনিক ভাবনা এই উপন্যাসে উঠে এসেছে। তার কিছু কিছু আমি নীচে উল্লেখ করলাম। কারো হাতে প্রচুর সময় থাকলে উপন্যাসটি পড়ে নিতে পারেন। সেরকম আহামরি কিছু নয়। যে সময় উপন্যাসটি লেখা হয়েছিলো, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এধরনের চরিত্র কম থাকলেও আজকের বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে এ ধরনের বাস্তব চরিত্র, বই, মুভি এতো আছে যে, না পড়লে খুব বিশেষ কিছু হারাবেন বলে আমার মনে হয় না। কারণ এ ধরনের কিছু কোথাও না কোথাও পড়েছেন কিংবা মুভিতে দেখেছেনই।


তুমি আছ অতীত ভবিষ্যত্যের মাঝখানে, আগেও যেখানে ছিলে, পরেও সেখানে থাকবে।

যা ভাল লাগে তা ধরে রাখা বোকামি। মানুষ ধরে রাখতে চায় বলেই দুঃখ পায়। আসলে সব কিছুই একটা স্রোতের মত। সুখ, ঐর্শ্বয, জীবন, আকাশ, বিশ্ব, মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, তারকাপুঞ্জ, সব কিছু। সমস্ত কিছু মিলে আমার কাছে প্রবল শুভ্র জ্বলন্ত একটা মহাস্রোত মনে হয়। দুঃসহ কষ্ট হয় তখন। আমার জীবনে যদি একটা কোন কষ্ট থাকে তাহলে তা এই। এই মহাস্রোতের সম্মুখে আমি অসহায় তুচ্ছ, আমার অপেক্ষা সে রাখেন না। তুমি আমি এই শহর, মহানগর, সভ্যতা সব অর্থহীন বলে মনে হয়। আমি কি করলাম, তুমি কি করলে, ন্যায়-অন্যায় পাপ-পূণ্য, মনে হয় সবই এক, সব ঠিক আছে – কারণ সবই কত ক্ষুদ্র।

কিছু এসে যায় না, কে একজন তার নাম সেক্সপীয়ার, সে হ্যামলেট লিখল কি না লিখল, তাও কিছু নয়। এই পৃথিবীর মত কত কোটি পৃথিবী আছে, কত কোটি হ্যামলেট লেখা হয়েছে, কত বিতোভন সোনাটা লিখেছে, কত বাস্তিলের পতন হয়েছে – কতটুকু জানি। এই পৃথিবী আদিতে ছিল উত্তপ্ত একটা পিন্ড, কোটি কোটি বছর পর একটা শীতল প্রাণহীন বস্তুপিন্ড হয়ে তা মহাশূণ্যে ঘুরতে থাকবে। তখন কোথায় তোমার বাবর আলী কোথায় জাহেদা, কোথায় সেক্সপীয়ারের হ্যামলেট আর জাপানের সামুরাই আকাশ ছোঁয়া দালান আর সমুদ্রে ভাসমান কুইন এলিজাবেথ।

মানুষ সেই জন্যেই বোধ হয় ঈশ্বরের কল্পনা করে। ঈশ্বরের ধারনা একটা সীমার আরোপ, একটা আকার প্রদানের প্রচেষ্টা মাত্র। এই অনন্তকে ধারন করতে পারি না বলেই নামে একটা ফ্রেম দিয়ে নিয়েছি।

মানুষ নিজেকে কতটা মানিয়ে নিতে পারে। তোমার কাছে যেটা অস্বাভাবিক, আরেক জনের কাছে সেটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। তুমি যা বিশ্বাস কর, আরেকজন তা করে না। তুমি যাতে বাঁচ, আরেকজনের কাছে সেটাই মৃত্যু। আমি যেভাবে বাঁচতে চাই, আরেকজন সেভাবে চায় না। তুমি যা নাও আরেকজন তা ফেলে দেয়। সবই সত্য। কারণ সত্য মাত্রই আপেক্ষিক, এই মৃত্যু ছাড়া।

সৈয়দ শামসুল হক

Profile Image for Nur Mohammad Khan.
46 reviews6 followers
October 5, 2021
শুধুমাত্র জীবনের একটি ঘটনাই বদলে দিতে পারে জীবনের অর্থ, মতাদর্শ।

বর্ধমান জেলায় চ���মান কোন দাঙ্গার কবলে পড়েছিল বাবর ও তার বোন হাসনু। সে দাঙ্গাবাজরা তার বোনকে ছিনিয়ে নেয় কিন্তু সে কোন প্রতিবাদ করতে পারে না ।বরং পালিয়ে আসে। অথচ অনুতাপ তাকে ছাড়েনি। বারবার তাকে কুড়কুড়ে খেয়েছে সেই যন্ত্রণা । তার ঐ অপারগতা তাকে তাড়া করে ফিরেছে।

এমন অবস্থা থেকেছে বাঁচার জন্য বেছে নেয় মৌলিক অনুভূতি গুলোর মধ্যে অন্যতম - কাম। কিন্তু সে তা জন্তুর ন্যায় শিকার করেনি বরং অর্জি��� অনুভূতির সহয়তায় তা আদায় করে নিয়েছে। তবে সে দায়িত্ব নিতে অপারগ। সে তা পারে না। সে একা থাকতে চায়,কোন মায়াজাল ছাড়া। তবে একাকীত্ব তাকে অস্থির করে দেয়। তাই নিত্যনতুন সঙ্গী বেছে নিয়ে একাকীত্ব ঘুঁচায়। রাস্তার এলেবেলে কোন কুকুর নয় সে, যে ছন্দিত মাংসের কম্পন দেখলেই কামড়ে দেবে। সে খেলারাম; কৌশলে তা অর্জন করে।আর এর মাধ্যমে ভুলে থাকতে চায় অতীত। জীবনের খেদ, অনুতাপ ,পরিতাপ। হৃদয়ের গভীরের চাপা আগুন নেভানোর চেষ্টা।

'খেলারাম খেলে যা' এই চিন্তায় সে তার একাকীত্ব ঘুচায়। বাবর কোন ধর্ষক না, সম্মতি অর্জন করা তার অপার পারদর্শিতা। তার কথাকে হাতিয়ার বানিয়ে কার্য হাসিল করেছে কিন্তু তবু সবকিছুর অবসরে তাকে হানা দিয়ে যায় তার সেই ভয়ার্ত অতীত।

হক সাহেব যে পারদর্শিতায় মানব মনের সূক্ষাতিসূক্ষ অনুভুতি গুলো গল্পের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার হকদার।
খেলারাম খেলে যা!!
Profile Image for Tanzina Afrin.
13 reviews13 followers
October 21, 2016
যাকে ঘিরে পুরো কাহিনী এগিয়েছে,সেই বাবরকে এক কথায় "লম্পট" বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সে গোপনে সহযোগিতা করে,আবার সাহায্য গ্রহণকারীর হীনমন্যতাকে ঘৃণা করে।শেষে জীবনের প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে একটা মেয়েকে বাঁচাবার শেষচেষ্টা করে।
মানুষের চরিত্রের কেবল একটা ট্রেইট দিয়ে পুরো মানুষটার পোর্ট্রেট দাঁড় করানো যায় না।বাবর চরিত্রটা বেশ রিয়েলিস্টিক।একে আমি কোন প্রোটোটাইপে ফেলতে পারিনি,তবে চরিত্রটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
Profile Image for Uday Jaman.
49 reviews6 followers
September 21, 2020
সত্যি করে বললে, বইটি আমার ভাল লাগেনি। হতে পারে, আমি এখনো বড় হইনি- তাই। বইটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা শোনার জন্য বইটি পড়েছিলাম। পড়ার পর মনে হয়েছিল, না পড়লেই ভাল হত।
Profile Image for Zillur  Rahman Shohag.
46 reviews3 followers
May 12, 2023
পাঠ অভিজ্ঞতা:

[খেলারাম খেলে যা- সৈয়দ শামসুল হক]

#
দূর্ঘটনাটা ঘটে যায় আচমকা, দুঃস্বপ্নের মতো। হাসনু-জাহেদা মিলেমিশে যায় একে অপরের নামের ভেতর। সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে ঢুকে পড়া রিফিউজির মতো বাবর আলীর গাড়িটা ব্রিজের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে নদীর জলে। মঞ্চের শেষ দৃশ্যের কার্টেন পড়ে যাবার পরও আমি হতবিহ্বল হয়ে বসে থাকি আসন আকড়ে ধরে। মনে মনে ভাবি মানুষকে ঘৃণা করা আসলেই কি সম্ভব, অন্তত তার সমূহ ইতিহাস বিবেচনায়? একারণেই হয়তো আপাত দৃষ্টিতে একজন কামুক-লম্পট কিংবা মনবৈকল্যে আক্রান্ত বাবর আলীর পরিণতিতে পাঠক হিসেবে আমার চোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে।
বাবর আলী কি শুধুই একজন প্রবৃত্তি তাড়িত মানুষ?
তবে সে জানে তার সামনে স্বেচ্ছায় উজাড় করে দেওয়া নৈবেদ্যে কোন জয়ের আনন্দ নেই। এই খেলাটা দীর্ঘ, ক্লান্তিকর তবুও তার জীবনে একের পর এক আসতে থাকা লতিফা, বাবলি, মিসেস নফিসদের মতো অনুঘটকদের সাথে সে মেতে ওঠে ক্রিড়ামোদী কিশোরের মতো সেই ক্লান্তিকর খেলায়। সে সবাইকে আদ্যোপান্ত সমর্পিত হতে বাধ্য করে তার শৈল্পিক কৌশলের কাছে।

বাবর আলীর মতে মানুষ আমৃত্যু দাঁড়িয়ে থাকে অতীত ও ভবিষ্যতের মাঝামাঝি এক ঘটমান বর্তমানে। ভবিষ্যতের ভাবনাটা স্রেফ একটা বিভ্রম। তাই সে খেলে যায় খেলারাম হয়ে।

কিন্তু একসময় বাবর আলীকেও দেখি ক্রমেই বর্তমান দৃশ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে। অতীতের কোথায় যেনো পুতে রাখা একটা খুটিতে বাঁধা সুতোয় টান পড়তেই তাকে দেখি হঠাৎ হঠাৎ অতীতের ভেতর অপসৃয়মান হতে। দৃশ্যমান হতে থাকে তার বুকের ভেতরকার এক গভীর ক্ষত। কোন কিছুতেই যার নিরাময় মেলে না। একটা গোপন আর্তচিৎকার সহসায় ভেঙ্গেচুরে বেরিয়ে আসে বেপরোয়া কামনা চরিতার্থের অভেদ্য পর্দা ছিড়ে। তাকে তখন সম্পূর্ণ অন্য মানুষরুপে দেখতে পাই।

বেশ দেরী করেই পড়া হলো সৈয়দ হকের এই মাস্টারপিস উপন্যাস "খেলারাম খেলে যা"।সৈয়দ হক নিঃসন্দেহে একজন গ্রান্ডমাস্টার। যাদুকরের জামার ভেতর থেকে বের করে আনা ডাহুকের মতো তিনি ইতিহাস ও মানুষের অন্তর্গত ক্ষত তুলে আনেন অসাধারণ নৈপূন্যে, করে তোলেন সার্বজনিন। এই উপন্যাস নিয়ে তথাকথিত পাঠক-ক্রিটিক মহলের যে দাবি উঠেছিলো অশ্লিলতার, এতো বছর পরও একজন পাঠক হিসেবে সেসবের তুমুল অযৌক্তিকতা খুঁজে পেতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয় না।

১২.৫.২০২৩, বর্ধনবাড়ি, মিরপুর
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
July 27, 2020
সৈয়দ শামসুল হক এই প্রথম পড়লাম। শেষটা সত্যি ভালো লেগেছে। তারপরও তিন তারা কেন দিলাম? বইটা আমাকে ভীষণ অবসন্ন আর বিষণ্ণ করে তুলেছে। উপন্যাসটি গত শতকের ষাটের দশকেই মূলত লেখা, পটভূমিও তখনকার পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবর একজন সফল ব্যবসায়ী, সুদর্শন, রমণীমোহন, স্মার্ট একজন টিভি উপস্থাপক। দেশভাগের পর বর্ধমান থেকে ঢাকায় আসা বাবর চল্লিশে এসেও অবিবাহিত। বিয়েতে সে আগ্রহী না হলেও তার জীবনে আছে বহু নারী। লতিফা, বাবলী, মিসেস নফিস, জাহেদা এদের সবাই বাবরের ঘনিষ্ঠ তবে বাবর এদের কাউকে ভালোবাসে না। বাবর শারীরিক সম্পর্ক করেছে বহু নারীর সাথে, ভালোবাসার অভিনয় ও করেছে তবু ভালোবাসেনি।

অতীতের কিছু বেদনা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হারিয়ে যাওয়া বোন হাসুর স্মৃতি তাকে এখনো তাড়া করে ফেরে, তবু বাবর বর্তমানে বাঁচে। অতীত নিয়ে, বন্ধন নিয়ে মাথা খোড়াখুড়ি তার অভ্যাস নেই। বাবর এক খেলোয়াড় যে জীবন নাট্যে কেবলই খেলে যাচ্ছে, ধরা দিচ্ছে না কোথাও। সেই খেলার অংশ হিসেবে জাহেদা কে নিয়ে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে যায় বাবর। উদ্দেশ্য কেবলই জাহেদা কে শারীরিক ভাবে পাওয়া আর কিছু না। তবু হয়তো এমন কিছু ঘটে যায় যা আপাত নিষ্ঠুর বাবরের মধ্যেকার মানবিক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। উপন্যাসে যৌনতার বর্ণনা আছে প্রচুর তাই হয়তো এই বই এতো পাঠকপ্রিয়। যৌনতার উল্লেখ কাহিনীর প্রয়োজনে বারবারই ছিল এতে কিছু বলার নেই, তবে রগরগে বর্ণনাটা পাঠক টানার কৌশল বা আরোপিত মনে হয়েছে। তবে সেই সময়টা অর্থাৎ গত শতকের ষাটের দশকের বাংলার কিছুটা পরিচয় উপন্যাসে আছে, মানুষগুলো ও বেশ আধুনিক ছিল হয়তো। সেই সময়টাকে তো জানতে পারলাম সেই সময়ের আয়না��় এটাই বা কম কিসের।
Profile Image for Fahima Farabi.
7 reviews27 followers
February 7, 2017
Written in the 1960s, the book is stylistically contemporary, in an awe-inspiring fashion. The writer succeeds in maintaining the charm that lures the reader to the finish, with a poise that invokes admiration and is reminiscent of Nabokov.
Profile Image for Mohammad Kamrul Hasan.
351 reviews15 followers
June 20, 2021
লেখকের লেখা সুন্দর। কিন্তু আমি আসলে সেভাবে নিতে পারিনি।
তবে বলতেই হবে, লেখক একটা মানুষের, বলা ভালো মুখোশের আড়ালের মানুষের এক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন।
Profile Image for Enamul Reza.
Author 5 books174 followers
February 6, 2017
একজন নারীলিপ্সু পুরুষ, যে পছন্দ করে কেবল উঠতি বয়সি তরুণীদের। প্রেম বলতে যে বোঝে শুধুই শরীর--এজন্য সে নিত্যই একটা বদলের চেইনে দিন পার করে। এক নারী থেকে আরেক নারীতে ভ্রমণটাকে তার মনে হয় প্রকৃত জীবন। মোটাদাগে এই হল সৈয়দ শামসুল হকের খেলারাম খেলে যা'র কাহিনী। কিন্তু উপন্যাসের যে খেলাটা, এ কি মোটা দাগের? বিশ্বসাহিত্যের সার্থক উপন্যাসগুলো সব সময় গল্পের আড়ালে গল্প বলে, বক্তব্যের আড়ালে থাকে আবিষ্কার করতে পারা যাবে এমন অনেক বক্তব্য।
উপন্যাসটির মূল চরিত্র বাবরের মনোজগত নিয়ে ভাবতে শুরু করলে সমাজের জান্তব একটা দিকের বর্ণনা মিলে যায়, অনেকের মাঝে একের সুষমা যেন বাবর। তার দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের প্রতি বিদ্রূপাত্মক, মধ্যবিত্তের পোশাকি ভদ্দরলোকির পানে সে সব সময় আঙুল দেগে রাখে, অনবরত নারীসঙ্গ বদল তার জীবনে কোনরকম অপরাধবোধ তৈরি করেনা। সে আত্মপ্রসংশা পছন্দ করে কিন্তু একইসঙ্গে কেউ আত্মপ্রচার করলে ওতে বিরক্ত হয়, কারও উপকার সে করলে অন্যপক্ষের বিনয়টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। নারীর ক্ষেত্রে তার আকর্ষণ একেবারে চাঁছাছোলা শারিরীক হলেও নিজেকে সে মনে করে প্রেমিক--ভাড়া করা নারীতে তার আগ্রহ রয়না, নারী তার কাছে শিকার করবার বস্তু। পাশাপাশি অতীতের এক সুগভীর পাপের তাড়না বাবরের মজ্জাগত; বারংবার সে এই ট্রমা থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা করে নাকি এ ট্রমাই একজন পরাজিত মানুষ হিসেবে তার প্রকৃত চিহ্ন যা উপন্যাসের শেষে তাকে একজন যোদ্ধায় পরিণত করে?
এবং আঙ্গিক; শাখা প্রশাখা বিস্তারের চে' উপন্যাসটির দীর্ঘ দেহ শুধু যেন মূল চরিত্র বাবরের প্রতিই বিশ্বস্ত ছিল। এ আখ্যানটির নারীগণ কি আমাদের পরিচিত? উঠতি বয়সি তরুণীদের ভাবালুতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বাঁক বদলের দিকগুলো বড় সুস্থির মগ্নতায় ফুটে উঠেছে। একই সঙ্গে ষাটের দশকের টিভিপাড়ার টুকরো ছবি কিংবা ঢাকা মহানগর। শুধুমাত্র একজন পুরুষের যৌন অভিজ্ঞতার গল্প নয়, এখানে যৌনতা স্রেফ একটা টুলস, বাবরের অভিজ্ঞতার গহনে যে বক্তব্য, মানব সমাজের প্রতি তা আমাদের এক ভিন্ন দৃষ্টি ফেলতে আহ্বান জানায়।
পাঠান্তে খেলারাম খেলে যা পাঠককে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে, ভাবিয়ে তুলতে পারে, শেষ করবার পরেও মগজের পর্দায় দুলতে পারে বাবরের বিচিত্র জীবনের রেশ, এ বড় গহীন ক্ষমতা যে কোন বইয়ের পক্ষে। খেলারাম মাস্টারপিস।
92 reviews6 followers
October 9, 2024
অতীতের কোনো একটা ঘটনা, একটা ভালো বা খারাপ স্মৃতি, কিছু মুহুর্তের অনুভূতি আমাদের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় ; প্রতিটি মানুষকেই।

বাবর আলী। তিনি একাধারে ব্যবসায়ী এবং টিভি শোর পরিচিত মুখ। তার ভক্ত সব বয়সের, সব পেশার মানুষই। তবে তরুণীদের মধ্যে তার আলাদা একটা খ্যাতি আছে। বিশেষ করে কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া তরুণীদের মধ্যে তার ভক্তদের সংখ্যা আকাশচুম্বী। আর এটারই সুযোগ নেন বাবর আলী।

কোনো সামাজিক বন্ধনে তিনি বাঁধা পড়তে চান না। তবে প্রকৃতির বিধি যে অলঙ্ঘনীয়! তাকে লঙ্ঘন করার সাধ্য কার? তাই তো প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে গা ভাসিয়ে দেন বাবর আলী, বার বার ছুটে যান অল্প বয়সী তরুণী ভক্তদের কাছে, জয় করে নেন তাদের মন।একপর্যায়ে স্বেচ্ছায় তাদের মিলন ঘটে। কিন্তু কোথাও যেন সুতো ছিঁড়ে গেছে,অনেক আগে। শান্তি নেই, শান্তি নেই, কোথাও যে বাবর আলীর শান্তি নেই। কোথায় গেলে তিনি শান্তি পাবেন, তা তিনি জানেন না। তার অতীত যে পিছনে তাকে তাড়া করে বেড়ায় সারাক্ষণ!!

কিন্তু কী সেই ভয়াবহ অতীত, যা বাবর আলীকে শান্তি দেয় না?

❝ হঠাৎ তার গাড়ি পুলের শেষ থামে ধাক্কা খেয়ে ডান দিকে ঘুরে যায় একবার। তারপর সেই নক্ষত্র প্রতিফলিত নদীতে গড়িয়ে পড়ে জাহেদকে নিয়ে, বাবরকে নিয়ে। আরো একজন ছিল,সে হাসনু!! ❞
লেখকের কৃতিত্ব হয়তো উপন্যাসের এই শেষ লাইনটিতে। যে ভীতু, জীবনকে উপভোগ করতে জানে না, ভালোবাসতে জানে না, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে জানে না ; তাকে দিয়েও যে প্রকৃতিতে ভালোবাসার, দায়িত্ববোধের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা যায় এক লহমায়, এক ঝলক দেখিয়েছেন লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

অনুভূতি :-
প্রথম দিকে একটা বর্বর, যৌনধর্মী,বিরক্তিকর উপন্যাস মনে হয়েছিল। কিন্তু যখন এটার রিভিউ পড়লাম তখন কেমন করে আস্তে আস্তে কচ্ছপ গতিতে শেষ হয়ে গেলো যেন। শেষটা এত সুন্দর হবে ভাবতেও পারিনি। সব মিলিয়ে ১০ এ ৮.৯ দেওয়ার মতো উপন্যাস।

পছন্দের উক্তি :-
১) আসলে স্বপ্ন হচ্ছে ভবিষ্যৎ। কিন্তু ভবিষ্যৎ আসলে বর্তমানেরই সম্প্রসারণ।
( অন্যগুলো মনে নেই 🥲🥲🥲)
Displaying 1 - 30 of 79 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.