Jump to ratings and reviews
Rate this book

ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প

Rate this book
শহীদুল জহিরের ৭ টি গল্পের সংকলন এই বইটি।

সংকলিত গল্পের তালিকা:
* কোথায় পাব তারে
* আমাদের বকুল
* মহল্লায় বান্দর, আবদুল হালিমের মা এবং আমরা
* ইন্দুর-বিলাই খেলা
* প্রথম বয়ান
* ডলু নদীর হাওয়া
* আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস

132 pages, Hardcover

First published February 1, 2004

28 people are currently reading
351 people want to read

About the author

Shahidul Jahir

18 books174 followers
Shahidul Jahir (also spelled Zahir) was a Bangladeshi novelist and short story writer. He was reputed for extraordinary prose style and diciton and considered a genuine founder of post-modern fiction in Bangla literature.

Born in Dhaka, Bangladesh in 1953 as Shahidul Huq, he joined the Bangladesh Civil Service in the Administrative cadre in 1981. In 2008, he was appointed as a Secretary in Charge of Ministry of CHT affairs to the Government of Bangladesh. A confirmed bachelor, he lived a quiet and a very simple life. Hardly he agreed for a formal interview for publication.

Shahidul Jahir was one of the most important contemporary writers in Bangladesh. He became interested in magic realism after reading Marquez's works. He was known to some people as the Márquez of Bangladesh, carrying on the legacy of magic-realism with strokes of his own unique surrealist style, deeply imbibing the politics, history and culture of Bangladesh, his own country home in Sirajganj and his place of birth. However, his style also reminds of Syed Waliullah, a modern Bangla fiction author of Western lineage. But he had his own style of labyrinthine narration that would lead his readers to a maze. He relied more on narration than dialogue between characters. His diction was symbolic and mystified. He resorted to colloquialism in order to infuse reality into the context and story-line. The name of his last published story was, "Miracle of Life". Here is an excerpt (translated from Bangla) from his swan song:

"An adolescent girl, or a young girl, or who is just a gal...whatever, what do we do with her? She can have a name, since she is a human being, and human beings do have names, so her name could be Pari, Banu, or Ayesha... ...If she stands at the edge of the dirty drains, standing inside her home, as broke as the ragged nest of a magpie (babui), her mother runs around...her mother goes around cooking for others, she cooks rice, she cooks curries,she makes chapatis, there are people who swallow them, or maybe they rebuke her, What the hell have you cooked,woman!... ...Perhaps at that moment, Pari or Pari Banu, is standing at the rail ways of Dayaganj or Shamibag, holding the hands of her little sister or brother, and their father runs around, he too goes to places, maybe he does things, pulls someone else's rickshaw, pushes someone else's cart, or maybe he does nothing, he just lies down on his bed and suffers from piles. Then, what do we do with this Pari? The leader, or the official of this republic, the officers, or the civil society - none of them know...We have no idea what to do with her..."


In his writing career spreading over more than two decades, Jahir published only three novels and three collections of short stories. Two collections of his selected novels and short stories were published in 2007.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
156 (46%)
4 stars
136 (40%)
3 stars
28 (8%)
2 stars
10 (3%)
1 star
2 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 49 reviews
Profile Image for Biswajit Chakraborty.
25 reviews45 followers
April 26, 2016
অতঃপর আমি বা আমরা শহীদুল জহিরের 'ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প' বইটা পড়ি এবং আমরা এক ধরনের সমস্যা বা অস্বস্তির মধ্যে পড়ি; যে ধরনের সমস্যায় ভূতের গলি বা দক্ষিণ মৈশুন্দির লোকেরা প্রায়ই পড়ে এবং নারিন্দা, জোড়পুল বা পদ্মনিধি লেনের মানুষেরাও এর কথা জানতে পারে । কিন্তু আমাদের সেই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে যখন আমরা এর থেকে বের হয়ে আসার পথ পাই না কিংবা আমরা হয়ত সমস্যাটা কি তাই ভাল করে বুঝে উঠতে পারিনা । এই কারণে হয়ত আমরা এক রকম ধাঁধার মধ্যে পড়ে যাই কিংবা ইন্দুর-বিলাই খেলায় ক্রমাগত ইন্দুর হয়ে বিলাইয়ের হাতে মার খেয়ে যাই; কিন্তু তবু আমরা এর থেকে বের হতে পারিনা । তখন আমরা শাহবাগ বা পলাশীতে চা খেতে খেতে আড্ডা দেই আর এই সমস্যা বা অস্বস্তির ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি এবং আমরা বুঝতে পারি যে শহীদুল জহিরের লেখনী বা গল্পের অদ্ভুত সব কাঠামোর কারণেই হয়ত এইরকম ধাঁধার সৃষ্টি হয়, অথবা আমরা হয়ত কিছুই বুঝতে পারি না । এর ফলে আমরা আবার সেই সমস্যার মধ্যেই পড়ে যাই, আবার আমরা এর থেকে বের হতে পারিনা, আবার আমরা আড্ডা দেই...
Profile Image for Saiful Sourav.
103 reviews72 followers
May 9, 2021
শহীদুল জহিরের গল্প নিয়ে বলার চেয়ে গল্পটাই বলার মধ্যে অধিক আনন্দ। আর সে জন্যই জহির সার্থক গল্পকার। উপন্যাসে ভাষাশৈলীর উপস্থাপনে এক আধবার মূলগল্পকে বিচ্যুত মনে হলেও ভাষার জাদুতে মোহাবিষ্ট করে লেখক ধরে রাখেন পাঠককে। কিন্তু ছোটগল্পে লেখক যে ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেন তা বিচিত্র আর অভিনব।


কোথায় পাবো তারেতে গল্পের নায়ক আবদুল করিম তার বন্ধুস্হানীয় একজনকে বলে- ল দুলাইল্যা, মমিসিং যাই । কেন মমিসিং যাবে এ প্রশ্ন করলে সে উত্তরে বলে- শেফালীর সাথে দেখা করতে । শেফালীর বাড়ি কই জিজ্ঞেস করলে বলে- মমিসিং বাস স্ট্যান্ড থেকে তিন কিলো দূরে ফুলবাড়ি বাজার, সেখান থেকে দক্ষিনে হেঁটে গেলে দুইটা নারিকেল গাছ । সেই গাছের তলা থেকে যেদিকে পা বাড়ালে পায়ের নিচে আরাম পাওয়া যায় সেদিকে শেফালীদের বাড়ি । দুলাইল্যা তখন বিব্রত ও বিরক্ত হয় আর জিজ্ঞেস করে সত্যি সে শেফালীকে চেনে কিনা । আবদুল করিম বলে শেফালীকে সে একবারই দেখেছে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে, শেফালী তাকে জিজ্ঞেস করে মমিসিং যাওয়ার বাস কোনদিকে । গল্পের শেষে লোকটা দুলাল মিঞাকে নিয়ে মমিসিং যায় এবং কোন দিক দিশা না পেয়ে আবার মহল্লায় ফিরে আসে । শেফালী এক কাল্পনিক প্রেমিকা চরিত্র হয়ে মহল্লার বাতাসে ঘুরতে থাকে । পাঠক জিজ্ঞেস করতে পারেন, মানে কি? হতে পারে লোকটা শেফালী নামের কাউকে ভালোবাসত অথবা শেফালী তার হারিয়ে যাওয়া অথবা কখনো না পাওয়া এক কল্পনা ।

'মহল্লায় বান্দর, আবদুল হালিমের মা এবং আমরা' গল্পে মহল্লায় বান্দরের উৎপাতে সবাই অতিষ্ট । শিশু আবদুল হালিমের ব্যস্ত মা তাকে সময় দিতে না পারলে বান্দরেরা আবদুল হালিমকে দুধ খাওয়ায় । বড় হলে আবদুল হালিমকে মহল্লার সবাই বান্দরের পুত বলে জ্ঞান করে । অথবা এটা শহীদুল জহিরের ম্যাজিক । পিতাহীন আবদুল হালিম যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করার পর মহল্লার মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ।

'ইন্দুর-বিলাই খেলা' গল্পে চিত্র এঁকে দেখান কিভাবে পাকিস্তানিরা ভূতের গলির পদ্মনিধি লেনে এলে মুক্তিযোদ্ধারা উদাও হয়ে যায় এবং চলে গেলে তারা উদয় হয় । 'ভূতের গলির ডাইল পুরিত ডাইল নাইক্কা ক্যালা' এ প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে ভাঙ্গাচোরা পুরির দোকানে এবং মহল্লায় খবর ছড়িয়ে যায় জলপাই জীপ আসছে ।

'আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস' গল্পে দক্ষিণ মৈশুন্দির মানুষ তরমুজ সম্পর্কে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয় । 'আমরা তরমুজওয়ালার কাছে যাই এবং বলি তরমুজের বিচি হয় ক্যালা! তখন মহল্লায় লেদ মেশিনের শব্দ থেমে যায় আর আমরা বিষণ্ন হয়ে পড়ি' । গল্প পড়ার পদে পদে মনে হয় কি হচ্ছে, কি হচ্ছে । কিন্তু একবার তরমুজ, লেদ মেশিন আর দক্ষিণ মৈশুন্দির লাইফ সাইকেলে ঘুরপাক খেলে বুঝা যায় এই কুটির মানুষের দৈনন্দিন বাঁচার শিল্প ।

শহীদুল জহিরের গল্পে যে গল্পটা বলা হয় তার একটা মানে থাকে যা পাঠকরা ভেবে বার করতে পারেন । কখনো পুরো গল্পটাই হয় একটা উপমা, অথবা কখনো উপমাটা হয় গল্প ।
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
August 3, 2025
শহীদুল জহিরের লেখায় কয়েকটা ভাগ থাকে: অরৈখিক সময়ের দৃষ্টিকোণ, পুনরাবৃত্তি, যার ফলে আসে বিভ্রান্তি। শহীদুল জহির একটু পরপর ভিন্ন ভিন্ন টাইম ফ্রেম টেনে একই ঘটনা বারবার বলে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করেন। উনার গল্প কিংবা উপন্যাসে গ্রামের লোকেরা সবাই একসাথে বিভ্রান্তিতে পড়েন, সাথে পাঠকও।
এই গল্পগ্রন্থে আছে:
১। কোথায় পাব তারে- ৪.৫/৫
২। আমাদের বকুল- ৪/৫
৩। মহল্লায় বান্দর, আবদুল হালিমের মা এবং আমরা- ৩.৫/৫
৪। ইন্দুর-বিলাই খেলা- ৫/৫
৫। প্রথম বয়ান- ৩.৫/৫
৬। ডলু নদীর হাওয়া- ৪/৫
৭। আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস- ৩/৫

প্রথমেই বলি প্রথম গল্প কোথায় পাব তারের কথা। গল্পের শুরুতেই দক্ষিণ মৈশুন্দির ভূতের গলির লোকেরা একটা জটিলতায় পড়ে। জটিলতার মূল নায়ক যুবক আব্দুল করিম এবং তার হুট করে ময়মনসিংহ যাওয়ার বাসনা। গলির ভেতরে এই খবর ঘুরতে থাকলে আব্দুল আজিজ ব্যাপারির কানেও তা ঢুকে পড়ে, আর এসবের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আব্দুল করিমকে আব্দুল আজিজ ডাইলপুরি খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়। ডাইলপুরি খাইতে গিয়া আঃকঃ দেখে হালারা ডাইলের বদলে আলু দিয়া ডাইলপুরি বানায়। ডাইলের দাম বাইড়া যাইতেছে দেখে আঃকঃ আঃআঃব্যাপারিকে বলে আপনার লাইগা মৈমনসিংথন ডাইল আনমুনে। আঃআঃব্যাপারি যারপরনাই জিজ্ঞেস করার সুযোগ পান যুবক আঃকঃ কেন সেখানে যাইতে চায়। আর এরপরে আমরা জানতে পারি আঃকঃ আসলে এমনি এমনি সেইখানে যাইতে চায় না, বন্দুর লগে দেখা করতে যাইবার চায়। তারপর আঃআঃব্যাপারি আরও অনেকবার ডাইলপুরির দাওয়াত দেয় যুবক আঃকরিমকে আর আমরা জানতে পারি শেপালি বেগমের কথা আর তার দেয়া ঠিকানার কথা। যেই ঠিকানা দেখলে আমরা জটিলতার জালে আটকা পড়ে হাঁসফাঁস করি আর মনে মনে উচ্চস্বরে বলি-
বক্ষ হইতে বাহির হইয়া আপন বাসনা মম
ফিরে মরীচিকা সম।
বাহু মেলি তারে বক্ষে লইতে বক্ষে ফিরিয়া পাই না।
যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না ॥

আমাদের বকুল , ডলু নদীর হাওয়া গল্পও ভালো লেগেছে। এই বইয়ের সবচেয়ে চমৎকার লেখা, ম্যাগনাম ওপাস , ইন্দুর-বিলাই খেলা । ইন্দুর-বিলাই খেলা এমন একটা খেলা যার শুরু আছে কিন্তু কোনো শেষ নাই। একটা আগস্ট গিয়ে আরেক আগস্টের আগমন আর এক বছরের হিসেব-নিকেশ বুঝিয়ে দেয় ইন্দুর-বিলাই খেলার ম্যাপ কখনও মুছে যায় না।

৩ আগস্ট, ২০২৫
Profile Image for সন্ধ্যাশশী বন্ধু .
368 reviews12 followers
May 7, 2023
শহীদুল জহিরের গল্পগুলো একেকটা চক্রব্যুহ। পাঠক অভিমন্যু। ব্যুহে প্রবেশ করলে,বের হওয়ার পথ ভুলে যায়। ব্যুহ লেখক বানায় বাক্য দিয়ে। এমন সব বাক্য বা কথা যা পাঠককে নিয়ে যায় অন্য একটা জগতে,ফলে সৃষ্টি হয় ঘোর,তাতেই আটকে যায় পাঠক। লেখার এই কিম্ভুত ভঙ্গি দিয়েই মূলত পাঠক ধরে রাখেন শহীদুল জহির। শুধু এই বলার ���া লেখার ভঙ্গি এখনো অব্দি আমার কাছে অতুলনীয়।
 
ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প, কিনেছিলাম অনেক আগে। এতদিনে পড়লাম। সবগুলো গল্প আমার ভালো লাগে নি কিংবা আমি বুঝতে সক্ষম হইনি। আমার প্রিয় গল্প "ইন্দুর বিলাই খেলা,ডলু নদীর হাওয়া"। শহীদুল জহিরের মাত্র দুইটা বই পড়েছি এবং আমি আমার সবচে প্রিয় আরেকটা লেখক পেয়ে গেলাম,য়াঁর লেখা পড়তে পারলেই আমি স্বস্তি পাব।
Profile Image for Rocky Rahman.
106 reviews10 followers
April 23, 2024
শহীদুল জহির তার লেখনিতে যে অভিনব ধারা সৃষ্টি করেছিলেন সেটাকে বলা হয়ে থাকে " শহীদুল জহির ধারা"। ওনার লেখনী অদ্ভুত কিন্তু আকর্ষণীয়, এমন লেখনী আপনি খুবই কম পাবেন। কোনো কিছুর বর্ণনাই আপনি তার থেকে নিখুঁতভাবে পাবেন না, বারবার উনি 'অথবা' 'কিংবা' 'হয়তো' শব্দগুলোর ব্যবহার ঘটিয়ে আপনাকে ধাঁধায় ফেলে দিবে, রেখে দিবে কুয়াশার চাদরে।
.
বইটিতে মোট ৭টি গল্প রয়েছে, কিন্তু আপনি গল্পের মাঝেও আরও অনেক ছোট গল্প খুঁজে পাবেন। বারবার উনি আপনাকে দক্ষিণ মৈশুন্দিতে এবং ভূতের গলিতে নিয়ে যাবে। আপনার মনে হবে আপনি এক পরাবাস্তবের দুনিয়াতে পা দিয়েছেন, কারন অনেক গল্পেই জায়গা এবং চরিত্রের নাম একরকম হলেও গল্পগুলো দেখবেন আলাদা। তখন আপনার মনে হবে আপনি বুঝি এক অন্য ডাইমনেশনে চলে এসেছেন, আর সাথে উনার অদ্ভূত বর্ণনাশৈলী তো আছেই।
.
'কোথায় পাবে তারে ' নামক প্রথম গল্পে আপনি দেখবেন আব্দুল করিম ডালপুরি খেতে খেতে ময়মনসিংহ যেতে চায় শেফালির কাছে। কিন্তু শেফালিকে খুঁজতে এখানে যে সকল অদ্ভুত বর্ণনা দেয়া হলো তা পড়ে হয়তো ভাবতে পারেন হয়তো আব্দুল করিমের মাথা খারাপ নয়তো লেখক আমাদের গোলকধাঁধায় ফেলতেই এভাবে লিখেছেন।
'ডলু নদীর হাওয়া' নামক গল্পে দেখবেন বিয়ে করার অনেক বছর পর তারা যখন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে বার্ধক্যজনিত কারনে, তখনও স্ত্রী বাসর রাতে করা শর্ত অনুযায়ী আজও স্বামীকে এক গ্লাসে বিষ অন্য গ্লাসে পানি দেয়। তখন হয়তো ভাবতে পারেন আসলেই কি বিষ দেন উনি পানিতে? নাকি অযথাই!
'ইন্দুর-বিলাই খেলা' নামক গল্প পড়ে মনে হবে আসলেই আমরা দুনিয়ার সকল মানুষই এই ইন্দুর বিলাই খেলায় জড়িত।
আবার 'আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস' নামক গল্পও পাবেন যেখানে ব্যবহার করা হয়নি একটি দাড়ি চিহ্ন, এবং গল্প পড়া শেষ করে আপনিও ভাবতে বসবেন তরমুজ নিয়ে।
.
সময় এবং আগ্রহ থাকলে এই অদ্ভুত কিন্তু অসম্ভব সুন্দর লেখনীর বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
August 20, 2022
বইঃ ৪.২১/৫

১। কোথায় পাব তারেঃ ৪/৫
২। আমাদের বকুলঃ ৪/৫
৩। মহল্লায় বান্দর, আবদুল হালিমের মা এবং আমরাঃ ৩.৫/৫
৪। ইন্দুর-বিলাই খেলাঃ ৫.৫/৫
এই গল্পটা পড়ার পর আমি প্রায় আধা ঘন্টা তব্দা খায়া আছিলাম। গল্পটার গভীর তাৎপর্য আমাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছে। মানুষ মানুষে এই যে ইন্দুর-বিলাই খেলার কথা শহীদুল জহির তুলে ধরেছেন, এই খেলা আমি নিজে কৈশোরে দেখেছি, দেখেছি মানুষরূপী ইন্দুর আর মানুষরূপী বিলাই, কীভাবে ইন্দুর আজীবন ইন্দুর থেকে যায় এবং বিলাই রূপ বদলায়, তারা মানুষ খায়, টাকা খায়, নারী খায়। গল্পটা পড়ার পর মনে হয়েছিলো বইটার নাম দেওয়া উচিত ছিলো ইন্দুর-বিলাই খেলা ও অন্যান্য গল্প
৫। প্রথম বয়ানঃ ৪/৫
৬। ডলু নদীর হাওয়াঃ ৪.৫/৫
৭। আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাসঃ ৪/৫

ভেবেছিলাম কিছু একটা লিখবো, কিন্তু কী যে লিখবো তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শহীদুল জহিরের গল্পে কাহিনী যতটা উপভোগ্য লেখনী তারচেয়ে বেশি উপভোগ্য। যেহেতু কাহিনী তেমন কিছু নেই সুতরাং এ নিয়ে আলোচনাও তেমন কিছু করা যাচ্ছে না। আর উনার লেখনী যারা পড়েছেন তারা ইতিমধ্যে জানেন উনার লেখা কেমন মোহনীয় বা আসক্তিকর বা ধোয়াটে অথবা অস্পষ্ট কিন্তু সম্পুর্ণ।
রিভিউ পড়তে গিয়ে দেখলাম সাইফুল সৌরভ ভাই চমৎকার রিভিউ লিখে রেখেছেন। কেউ এই বইয়ের ভালো রিভিউ পড়তে চাইলে উনার রিভিউ টা দেখে আসতে পারেন।
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
December 16, 2016
বেশ আগেই শেষ করেছি, গুডরিডসে দেখলাম এখনো কারেন্টলি রিডিং দিয়ে রেখেছি!
বইয়ের বেশ কয়েকটা গল্প মনের উপর বেশ চাপ ফেলেছিল এটুকু মনে আছে।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
April 18, 2024
শহীদুল জহিরের তিনটা গল্পগ্রন্থ শেষ করার পর মনে হলো এই বইয়ের "ইন্দুর বিলাই খেলা" গল্পটা তার সবচেয়ে দারুণ লিখা। তিনি যেভাবে গল্প বলতে চান এবং যেসব উপাদান দিয়ে গল্পকে সাজাতে চান তা পুরোপুরি আনতে পেরেছেন এই গল্পটায়।
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
November 6, 2022
গল্প গুলোর প্রতিটা লাইনে মনে হবে পড়তে গিয়ে ভালো লাগছে না, অথবা মনে হতে পারে ভালো লাগছে ঠিকই সেটা উপলব্ধি করতে পারছিনা। আবার এমনও হতে পারে গল্প গুলো ভালো খারাপ কোনোটাই লাগছে না। তবুও আমাদের পড়তে হচ্ছে, আমরা জানি এই লেখকের গল্প একবার পড়া শুরু করলে হয় আমরা বই ছুড়ে ফেলব, অথবা ঘোরের মধ্যে চলে যাব। পড়তে গিয়ে আমরা বই ছুড়ে ফেলব কি না বা ঘোরে চলে যাব কি না। তা আমরা এই মূহুর্তে জানিনা, আমরা জানি আমাদের গল্প গুলো পড়তে হবে।
Profile Image for Sourav Das.
42 reviews76 followers
June 26, 2016
আমরা যখন এই লেখকের বই পড়তে থাকব আমরা অবাক হব।এই ভেবে যে, আমি ঠিক কি পড়ছি?এরকম ভাবেও গল্প বলা যায় নাকি? এতোদিন কেন পড়িনি? কিংবা যদি আমরা না পড়ি তাহলে আমরা জানবও না আমরা আসলে কি পড়লাম না। জীবনের বহুমাত্রিক বিচিত্রতা ও গল্পে তার অভিনব উপস্থাপন পড়ে চমকাব। অথবা ভাবতে চেষ্টা করব এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেই অস্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে যখন আমাদের মন কিংবা আমাদের মাথা আমাদের সায় দেবে না, তখন হয়তোবা আমাদের মনে হবে, এ আবার কি করে সম্ভব, এও বাস্তবে ঘটে নাকি? তখন ‘জাদুবাস্তবতা’ নামের এক বিশেষণের আশ্রয় নিয়ে আমরা স্বস্তি পাব। কিন্তু তারপরও হয়তোবা আমাদের মনের ভিতর খচখচ করতে থাকবে। হতেও তো পারে এই ভাবনা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগব। শেপালী বেগমকে খোঁজার গোলকধাঁধায় নিজের অজান্তেই আমরা হারাব, ভবিষ্যতে তরমুজ খেতে গেলে তার লাল রঙ নিয়ে সন্দেহে পড়ব, নিজেদের ব্যর্থতায় ভাগ্যকে বিলাই বলে নিজেকে ইন্দুর ডিক্লিয়ার দিয়ে স্বান্তনা পাবার চেষ্টা করব। হয়তো কথার আসরে বন্ধুদের সাথে শহীদুল জহিরের ঘোরলাগা লেখা নিয়ে গল্প পাড়ব, কিন্তু বলে বুঝাতে না পেরে নিজের অক্ষমতাকে মুগ্ধতা বলে চালাবার চেষ্টা করব। শেষমেশ হয়তোবা ধুর ছাই বলে রেহাই পাব কিংবা পাবার চেষ্টা করব অথবা আর রেহাই পাবই না। এবং তারপরও আবার তাঁর লেখা পড়বার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকব। সুযোগ পেলে আবার আমরা যখন এই লেখকের বই পড়তে থাকব তখন আমরা আবার অবাক হব।এই ভেবে যে আমি ঠিক কি পড়ছি? এ��কম ভাবেও গল্প বলা যায় নাকি???


Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
October 15, 2022
কেউ কেউ কদর্য থেকে সৌন্দর্য খুঁড়ে আনেন, তো কারো কারো দিগন্তবিস্তৃত সৌন্দর্যসমেত বাঁশঝাড় এর মধ্য থেকে আসা বিষ্ঠার গন্ধটাও নজরে পড়ে। আর কোনটাই মিথ্যে নয়৷ দুটোই প্রয়োজনীয়। পরেরটা লেখা কষ্ট, জাদুবাস্তবতার আড়ালে অতি বাস্তবতাই আমাদের দেখান শহীদুল জহির।
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
September 5, 2022
সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সবচে সাহসী লেখক শহীদুল জহির। ক্রমাগত গদ্যে-- একটানে লেখেন তিনি। শ্বাস নেবার জায়গা রাখেন না। তো, পাঠক চাইলে এই বই না-পড়ে ছুঁড়েও ফেলতে পারেন। কিন্তু তাতে লেখক থোড়াই পরোয়া করেন! দিব্যি লেখেন তিনি, মন যা লিখতে চায়। প্রধান গল্পকে আড়াল করেন দারুণ সাবধানে। নানান সুরঙ্গ কাটেন যা কেবলই গৌণ গল্পের কাছে নিয়ে যায়। অন্তরালে অধরাই থেকে যায় যা জানার, যা নিয়ে ভাবার কথা।
তাঁর ভূতের গলি বা দক্ষিণ মৈশুন্দি কেবল একটা এলাকাই নয়। বরং পুরো দেশ বা জনগোষ্ঠীরই প্রতিনিধি। এবং এই প্রতিনিধির বয়ানই যেন আমরা শুনতে পাই তাঁর লেখায়। ফলত, যেমনটা মনে হয়, শোনা কথা লিখতে গিয়ে তিনি কিছুটা অনিশ্চিত থাকেন। এবং তা বর্ণনা করতে গিয়ে ক্রমাগত হয়ত, অথবা, যেহেতু-সেহেতু, যখন-তখন, কারণ, কিন্তু, এবং, তবু ব্যবহার করেন। এবং এর ফলে মূল আখ্যানের সঙ্গে বিনামূল্যে পাই সুদীর্ঘ আখ্যান। যা পাঠককে একটা ধাঁধার ভেতরে ফেলে দেয়। একঘেয়ে ঘোরগ্রস্ত সুরে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যায়।
নয়তো একজন মানুষের ময়মনসিং যাবার অনিশ্চিত ঘটনার সাথে কি করে আলু দিয়ে ডালপুরি বানাবার ঘটনা বর্ণিত হতে পারে? বা একজন মানুষ হারিয়ে গেলে তার বেঁচে থাকার বিষয়টি কি করে নিশ্চিত করতে পারে একটি বিচিকলা গাছ? বা কি করে যুদ্ধের সময়কালের সঙ্গে মহল্লায় বানরের উপদ্রব প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে?
এসব নিয়েই ব্যস্ত হতে হয় আমাদের; ঘটনার ভিন্ন দিকে নজরও পড়ে না!
যেমন বানরের হাতে বন্দুক দেখা থেকে শুরু করে হারিয়ে যাওয়া গৃহবধূর সঙ্গে এলাকার পলাতক প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পর্ক নিয়ে ভাবিনা আমরা। ভাবনার সে সুযোগ নেই। শুধু সুযোগ রয়েছে অবাক হবার। অবাক হয়ে লেখকের সাহস লক্ষ্য করবার। লক্ষ্য করবার যে কী করে শুধুমাত্র গল্পের বয়ানের সুবিধার্থে এক উদ্ভট খেলার জন্ম দেন তিনি। একটা কমার উপর ভর করে লিখে ওঠেন সম্পূর্ণ গল্প!
Profile Image for Rubell.
188 reviews23 followers
April 13, 2023
শহীদুল জহিরের গল্প বলার ধরণ আমার ভাল লাগে নি, হয়তো তাঁর বাক্য গঠনের স্টাইলের জন্য গল্পে আমার মনোযোগ নষ্ট হয়েছে, হয়তো একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার পড়তে পড়তে আমি চূড়ান্ত রকমের বিরক্ত হয়েছি, হয়তো পুরান ঢাকার ভূতের গলির অথবা সম্পূর্ণ পুরান ঢাকার মানুষের কুশ্রী অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার কাহিনী আমাকে আগ্রহী করে তুলতে পারেনি। হয়তো গল্পগুলির তাৎপর্য আমার বোধগম্য হয়নি, অথবা গল্পগুলি নিছক বলার জন্যই বলা, কোন তাৎপর্য নেই। হয়তো জাদু বাস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়ালিজম আমার কাছে 'হুদাই' লেগেছে। হয়তো এটা 'আহো ভাতিজা কিসু সময় নষ্ট করি' টাইপ জিনিস।
Profile Image for Farhad Naeem.
36 reviews11 followers
September 6, 2019
একটা লেখকের চিন্তাভাবনা এতো ডাইমেনশন ছুঁইতে পারবে, সেটা আমি শহীদুল জহিরের লিখা না পড়লে বুঝতাম না! আপনি লিটারেলি, ইন্দুর-বিলাই খেলা গল্পের শুরুতে ছককাটা বাঘবন্দী খেলার আঁকিবুঁকি দেখবেন! শহীদুল জহির নামক ভদ্রলোকটি, পেশায় একজন সরকারী সচিব ছিলেন। এই নিরীহ, কিন্তু খুবই উচ্চ শিক্ষিত সরকারী কর্মচারী মানুষটা খুবই কম কথা বলতেন এবং অন্তর্মুখী ছিলেন! কিন্তু ভাই বিশ্বাস করেন, তার গল্গুগুলা খুব সুন্দর করে কথা বলে!
আপনি যখন তার গল্পগুলা পড়ার মতো করে শুনতে থাকবেন, তখন দেখবেন যে এই জাদুবাস্তবতার কারিগর আপনাকে অথবা আমাকে কিংবা আমাকেও না একই সাথে বাস্তব, অতিবাস্তব ও অবাস্তবের দোলাচলে ফেলে দিবেন!
জাদুবাস্তবতার ধারণা আয়ত্ত করা প্রসঙ্গে, তিনি নিজেই কয়েকটি সাক্ষাৎকারে কলম্বিয়ান নোবেলবিজয়ী কথাসাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ঋণ স্বীকার করেছেন। গার্সিয়া থেকে অনুপ্রাণিত হলেও, শহীদুল জহির তার এই কথাসাহিত্যের জাদুবাস্তবতায় যে গ্রাম, নগর, পাড়া-মহল্লা গড়ে তুলেন, তা শুধুই এদেশীয় আমজনতার প্রতিদিনের ও শিকড়ঘেঁষা জীবনের স্বাদ, ভাষা, আবহ, গন্ধ ও সৌন্দর্যকে ধারণ করে বিচিত্র কিন্তু সুন্দর গল্পকথা, আখ্যান, গুজব ও কিংবদন্তিযোগে।
আমি খুব সময় নিয়ে গল্পগুলা পড়ছি, তাড়াহুড়া করি নাই! আপনিও গল্পগুলা পড়েন, সময় নিয়ে পড়েন! আমার কাছে ওর পুরা সমগ্র নামানো আছে, চাওয়া মাত্র আপনাকে ইনবক্স করে দিবো!
Profile Image for হাবিবুর রুহিন.
32 reviews4 followers
March 2, 2021
দুই বাংলা মিলে তার মতো আর কেউ এমন বর্ণনাভঙ্গিতে লিখেননি৷ গল্পের ঢোকার আগেই আপনি বর্ণনায় মজে যাবেন৷ কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে গল্পে কী বলতে চায় সেটা বুঝতে না পেরে৷ একটা লাইন বা একটা প্যারা বোঝার জন্য মাঝেমাঝে আপনাকে অন্য প্যারার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে আবার দেখা যেতে পারে গল্প পড়া শেষ করে এরপর বুঝলেন। ঠিক তখন আপনার ভিতরে একটা খচখচানি উঠবে৷ ‘কোন লাইন, কোন শব্দটা কম জোর দিয়ে পড়লাম। ওইখানে কী বলতে চাইছিল?’ তখন আবারও আপনার গল্পটার দ্বিতীয়পাঠে যাইতে হইতে পারে৷
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
December 16, 2017
একই কথার বারংবার বলে যাওয়া ... কিছুটা অদ্ভুত, কিছুটা কেমন কেমন জানি ... শহীদুল জহির পড়ার বয়স হয় নি এখনো, বুঝতে পারলাম।
1 review16 followers
April 4, 2014
কিছুদিন হল শহীদুল জহিরকে আবিষ্কার করেছি।কলমের জাদুতে তিনি আমায় মুগ্ধ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই অন্যরকম।মনের ক্যানভাসে শুধু কোমল আঁচড় দেওয়া শহীদুল জহিরের উদ্দেশ্য ছিল না তা বোঝা যায় স্পষ্টভাবেই।তার গল্পগুলো যেন হৃদয়ের গভীরের চেনা-অচেনা অনুভূতিগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে তোলে।
এই বইয়ের ৭ টি গল্পই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ও বিষয় বৈচিত্র্যে অনন্য।তবে আমার ভাললাগায় প্রথমেই থাকবে,'কোথায় পাব তারে'।সাম্প্রতিক সময়ে পড়া গল্পগুলোর মধ্যে এত বেশি আচ্ছন্ন করতে পারেনি আর কোন গল্প।এর পরই 'ইন্দুর-বিলাই খেলা' গল্পটির কথা বলতে হয়।গল্পের গঠন দেখে শুরুতে একটু বিভ্রান্ত হলেও গল্প যত এগিয়ে যায় গল্পটির নামের স্বার্থকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাঠকের কাছে।আর এই গল্পটি পরে আরও একবার শহীদুল জহির সম্পর্কে আমার ধারণা জোরালো হল যে,'শহীদুল জহির তার লেখায় তার সময়ের কথা বলেছেন,খুব স্পষ্ট করেই।'লেখকের দায় বোধহয় একেই বলে।এখানেই শহীদুল জহির স্বতন্ত্র,অনন্য তার সময়ের অন্য লেখকদের চেয়ে।
Profile Image for Abdul Ahad.
58 reviews4 followers
October 21, 2023
শহীদুল জহির এখনো বহুলাংশে অপঠিত লেখকদের তালিকা��় রয়ে গেছেন বলা চলে। পাঠক তার সমন্ধে জানে কম, আবার যারা জানে তারা সাবাই যে সমানভাবে তাঁকে গ্রহণ করতে পারে তাও না। অবশ্য তাতে বাংলা সাহিত্যে শহীদুল জহিরের স্থান একটুও পরিবর্তন হয় না। শহীদুল জহিরের তুলনা শহীদুল জহির নিজেই, ওনার নিজের লেখাকেই প্রতিনিয়ত অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা ছিল সবসময়— 'ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প' বইটা পড়লে বিষয়টা খুব সহজেই বুঝতে পারা যায়।
গল্পগ্রন্থটিতে মোট সাতটি গল্পের সমাহার। একেকটি গল্প অন্যটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার। গল্পগ্রন্থটির আরেকটি সুন্দর দিক হচ্ছে পুরাণ ঢাকা আর চাঁটগাইয়া ভাষার ব্যবহার।

'ইন্দুর-বিলাই খেলা' গল্পটার মধ্যে যে সূক্ষ্ম বাস্তবতা ঘিরে অতিবাস্তব বা পরবাস্তব কিংবা জাদুবাস্তবতা আবহের তৈরি হয়, তাতে 'ভূতের গলি' নামক স্থানটাও যেন ঢাকার মধ্যে থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবীতে দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে দুলতে থাকে। শহীদুল জহির তার গল্পে– অতিবাস্তবতা, পরবাস্তবতা কিংবা জাদুবাস্তবতা–যেটাই তৈরি করেন না কেন কখনোই বাস্তবতা থেকে তার গল্পগুলো সম্পূর্ণ সরে যায় না। বরং এগুলোর মধ্যেও যেন একেবারে দীপ্তিহীন সূক্ষ্ম বাস্তবতা হীরকখণ্ডের ন্যায় ঔজ্জ্বল্য ছড়ায়। তাকে ধরতে বা চিনতে কষ্ট হয় না। 'ইন্দুর-বিলাই খেলা' গল্পটাও তাই সবকিছুর মধ্যে একটা রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা মনস্তাত্ত্বিক রূপকের বয়ান হয়ে ওঠে।

গল্পগ্রন্থটিতে নাম শিরোনামে 'ডলু নদীর হাওয়া'র এলাচিং বা সমর্ত বানু; কিংবা 'কোথায় পাবো তারে' গল্পের আবদুল করিম; অথবা 'মহল্লার বান্দর, আবদুল হালিমের মা এবং আমরা' গল্পটির আবদুল হালিম; — একেকটা চরিত্রকে যেন শহীদুল জহির একেকটি বাস্তবতার চিহ্নস্বরূপ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। ফলে সমর্ত বানু বা এলাচিং হয়ে ওঠে সামাজের অন্যায় আর বৈষম্যের প্রতি এক প্রতিশোধের প্রতীক; আবদুল করিম হয়ে উঠে আমাদের দৈনন্দিন আবগের বহিঃপ্রকাশ; এবং আবদুল হালিম আর তার মা হয়ে উঠেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অগণিত নাম না জানা মানুষদের একজন।
এসব চরিত্রকে ঘিরে যেসব ঘটনা, অনুঘটনা ঘটতে থাকে শহীদুল জহির তার বর্ণনা দেন এক মোহময় শব্দগুচ্ছে সমৃদ্ধ দীর্ঘ বাক্যের পরিক্রমায়। তাতে গল্পে পুনরাবৃত্তি বাড়ে, অগোছালো লাগে, কখন কি ঘটছে, কেন ঘটছে তা বুঝতে পারা যায় না। কিন্তু বিরক্ত লাগে না, বরং কোনো এক ঐন্দ্রজালিক জাদুতে একটানা গল্পের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হয়।

গল্পে পুনরাবৃত্তি কীভাবে আবার আরেকটা গল্প হয়ে উঠতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শহীদুল জহির। হঠাৎ মনে হতেই পারে তাঁর গল্পে কোনো গল্প নেই, পুনরাবৃত্তির পর আবার পুনরাবৃত্তি। আর এটাই হয়ে উঠে শহীদুল জহিরের নিজস্ব শৈলী বা বাচনভঙ্গি। আর পাঠককে তাতে কোনো এক গোলকধাঁধায় আঁটকে পড়ার মতোই আঁটকে যেতে হয়।

এই বইয়ের সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, 'আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস' গল্পটি। আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস কীভাবে তরমুজের ইতিহাস বা তরমুজ সঙ্কটে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে তা না পড়লে বোঝার উপায় নেই। পাঠককে মাঝেমধ্যে নিজের মাথা চুলকাতে হবে এই ভেবে যে, আসলে হচ্ছেটা কী! এই গল্পগ্রন্থের সবচেয়ে জটিল গল্প সম্ভবত এটা। একটি মাত্র অনুচ্ছেদে রচিত, অন্তিমে পূর্ণচ্ছেদবিহীন খোলা বাক্যে সমাপ্তি টানা— বাংলা সাহিত্যে এরকম গল্পের উদাহরণ সম্ভবত আর নেই। ( এরকম কমলকুমার মজুমদারের একটা উপন্যাস আছে বলে জানি। তবে সেটা উপন্যাস, গল্প নয়। এছাড়া এমন গল্প হয়ত থাকতে পারে, আমার জানা নেই। বাংলা সাহিত্যের ক্ষুদ্র পরিসরেই আমার বিচরণ। তার পুরোটা খোলে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।)
'আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস' গল্পটি শহীদুল জহির নিজে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। শহিদুল জহীর সমগ্রতে গল্পটার ইংরেজি অনুবাদটা আছে। সেটাও এক জবরদস্ত কাজ।

তো শহীদুল জহির এখনো যারা পড়েননি, তারা একটু সময় করে: ডালপুরির ভেতর আলু থাকা সত্ত্বেও এটার নাম আলুপুরি কেন হয় না, কিংবা সুহাসীনির গ্রামের আকলুর স্ত্রী কেন বাড়ির পিছনে কলাগাছ হয়ে মহল্লায় বেঁচে থাকে, অথবা মানুষ এবং তরমুজ উভয়ই কেন পচনশীল—ইত্যাদি জটিল ও রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।
Profile Image for Md Shariful Islam.
258 reviews84 followers
March 4, 2021
ছোটগল্পের মজাটাই হলো ছোটগল্প কোনো একটা ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হয। চরিত্রের বিন্যাস বা সংলাপের ঘনঘটা না, এতে প্রাধান্য পায় লেখকের বর্ণনাভঙ্গি। আবার উপন্যাসের মতো অনেক তথ্য আর চরিত্র মনে রাখতে হয় না বলে রস আহরণ করাও যায় সহজে। শহীদুল জহিরের গল্পগুলোও কোনো একটা ঘটনা নিয়েও গঠিত কিন্তু লেখকের ব্যতিক্রমী লেখনী, নিজস্ব বর্ণনাভঙ্গি, আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার আর বাস্তবতাকে নিয়ে খেলার দরুণ গল্পগুলো হয়ে ওঠে আরও দারুণ।

সাতটি ছোটগল্পের সংকলন ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প বইটা। আকৃতিতে বেশিরভাগ গল্পই মোটামুটি বেশ বড়, একটা গল্প তো প্রায় ২৫ পৃষ্ঠাও আছে। এক প্রেমিকের তার কল্পনার প্রেয়সীকে খোঁজা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ক্ষমতার রাজনীতি, হারানো অতীতকে খোঁজা, অদ্ভুত এক দম্পতির কথা, গ্রাম্যজীবনের নানাবিধ সমস্যা, প্রযুক্তির প্রভাব ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছে গল্পগুলোতে।

সাতটি গল্প মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য একটা বই হলেও সংকলনের ‘ ইন্দুর-বিলাই খেলা ‘ এবং নামগল্প ‘ ডলু নদীর হাওয়া ‘ সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ‘ ইন্দুর-বিলাই খেলা ‘ গল্পটা আমার পড়া অন্যতম ব্যতিক্রমী আঙ্গিকের একটা গল্প। শোষক আর শোষিতের মধ্যকার সম্পর্ককে যেভাবে ইঁদুর আর বিড়ালের মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন তাতে অবাক হতে হয়। চিত্র আর উদাহরণের মাধ্যমে লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন ইন্দুররূপী সাধারণ মানুষকে নিয়ে বারবার খেলা করে ক্ষমতাবানরা ; কখনো সেটা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আবার কখনও তা পাশের বাড়ির হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতা। এ খেলায় ইঁদুরের পাওয়ার কিছু নেই, খেলার নিয়মকানুন সম্পর্কে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই কিন্তু বিড়ালের মর্জিমতো তাকে বাধ্য হয়েই খেলতে হয় খেলাটা।

নামগল্প ‘ ডলু নদীর হাওয়া ‘ আরেকটা ব্যতিক্রমী গল্প। বছরের পর বছর ঘর করে আর ১২ সন্তানের জন্ম দিয়েও একে অপরকে বুঝতে না পারা এক দম্পতির গল্প এটা। এ যেন তেল আর জলের কথা, চিরদিন একসাথে থাকলেও যারা মিশতে পারে না। ‘ আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস' গল্পে লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে আমাদের সমাজ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। গল্পটা দীর্ঘ ১৬ পৃষ্ঠার হলেও লেখক এতে কোনো পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করেন নি এমনকি কোনো এক সংস্করণে শেষের কমাটা দাঁড়ি হওয়ায় তিনি নতুন করে বইটা প্রিন্ট করান!

লেখকের ভাষারীতি যে ভিন্ন সেটা আগেই উল্লেখ করেছি। চরিত্রগুলোর মুখ গিয়ে সিরাজগঞ্জ, পুরান ঢাকা বা চট্টগ্রামের ভাষা তো বলিয়েছেন-ই এমনকি বর্ণনার অংশগুলোতেও লেখক সবসময় প্রমিত ভাষা ব্যবহার করেন নি। কমা, সেমিকোলন আর ড্যাসের ব্যবহার এত বেশি যে কোনো কোনো পৃষ্ঠায় দাঁড়ি খুঁজেই পাওয়া যায় না! ফলে বাক্যগুলো হয়ে পড়ে অনেক বড়, আর তাইতো অনেকসময়ই একটা বাক্যই পড়তে হয় একাধিকবার। হয়তো আর অথবা, এটা নয় ওটা ইত্যাদি শব্দগুলোর পুনঃপুন ব্যবহার লক্ষণীয় যা অনেকসময় বিরক্তির সৃষ্টি করেছে। যেন লেখক কোনো কিছু সম্পর্কেই নিশ্চিত না, প্রতিটা ঘটনার আছে অনেকগুলো সম্ভাবনা। এছাড়া চরিত্রের বয়ানে তো বটেই নিজের বর্ণনাতেও এমন কতগুলো শব্দ বারবার ব্যবহার করেছেন যা সচরাচর করা হয় না বা সেগুলো বোঝাতে অন্যধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়।

আরেকটা লক্ষণীয় ব্যাপার হলো প্রায় প্রতিটা গল্পেই ‘ এলাকাবাসী' বা ‘ মহল্লাবাসী’ একটা সক্রিয় চরিত্র। লেখকের দৃষ্টিতে বা কোনো চরিত্রের দৃষ্টিতে না, বেশিরভাগ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এলাকাবাসীর মুখ থেকে। মহল্লাবাসীর মনে হলো যে, মহল্লাবাসী দেখল যে বা মহল্লাবাসী বুঝল যে – এমন বাক্যাংশে ভরপুর পুরো বইটা।

মোটের উপর বলতে গেলে অদ্ভুত একটা বই। বাস্তব আর অবাস্তবের এমন এক করে ফেলা বা এত সম্ভাবনার কথা যে অদ্ভুত মনে হবে তা তো বলাই যায়।
Profile Image for Nazrul Islam.
Author 8 books228 followers
October 25, 2021
ভূতের গলি, দক্ষিণ মৈশুন্দি, নারিন্দা, জোড়পুল বা পদ্মনিধি লেনের মানুষেরা কেন সবসময় বিহারির দোকানের নিমপাকরা আর আলুপুরি খেতে খেতে তাদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান খোঁজে সেটা আমাদের বুঝে আসে না,কিংবা আসে। কিন্তু আমাদের জীবনের যাবতীয় সমস্যার সাথে ভূতের গলি, দক্ষিণ মৈশুন্দি, নারিন্দা, জোড়পুল কিংবা পদ্মনিধি লেনের মানুষের সমস্যার মিল থাকায় আমরা কিছু মনে করি না, কিংবা করি। কিংবা করতে চাই না। কারণ আমরা ইদুর-বিলাই খেলার সাথে খুব বেশি পরিচিত। তাই আমাদের ভয় হয় আমরা যে প্রতিনিয়ত ইঁদুর হই সেটা প্রকাশ হয়ে যাবে, কিংবা হবে হয় না। কারণ ২০২১ সালে এসে এই দেশের মানুষ নিরানব্বই শতাংশই ইঁদুর আর বাকি এক শতাংশ বিলাই। তাই আমাদের ভয় খাওয়ার কোন কারণ নাই। কারণ আমরা সবাই ইন্দুর। আমরা বরং টংয়ের দোকানে বসে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বিশ্বকাপ দেখি আর গালি দেই,“হালারা খেলা পারে না।” আমরা কিংবা আমি বরং বাস্তবতা থেকে পালানোর জন্য হাতে গল্পের বই নিয়ে বসি আর শহীদুল জহির পড়ে বিস্মিত হই। জহিরের সাথে আমরা ভূতের গলি, দক্ষিণ মৈশুন্দি, নারিন্দা, জোড়পুল বা পদ্মনিধি লেনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঘুরে ঘুরে দেখি আর নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে সেগুলো মেলানোর চেষ্টা করি অথবা করি না। কারণ আমরা জানি এগুলা নিছক দুই মিনিটের অনুভূতি ছাড়া কিছুই না কিংবা আমি অথবা আমরা কিছু মনে করি কারণ আমরা অথবা আমি জানি এগুলো নিছক অর্থহীন চিন্তা ছাড়া কিছুই না। কারণ আমাদের হাতে আসলে করার কিছুই থাকে না কিংবা থাকে আমরা ভয় পাই বলে নিজেদের গুঁটিয়ে রাখি। তারচেয়ে বরং আমরা বইয়ের পর বই পড়ে যাই, মুভির পর মুভি দেখে যাই, ইস্যুর পর ইস্যু দেখে যাই। কারণ আমরা জানি ইস্যুর কোন শেষ নাই কিংবা আছে তবে আমরা চাই না ইস্যু শেষ হোক। কারণ তাহলে আমাদের ভন্ডামি প্রকাশিত হয়ে যাবে। আমরা বরং ভূতের গলি, দক্ষিণ মৈশুন্দি, নারিন্দা, জোড়পুল বা পদ্মনিধি লেনের মানুষের আলু দিয়া ডাইল পুরি খাওয়া দেখে অবাক হয়ে যাই আর বলি, “হালারা বলদ।”
Profile Image for Saffat.
93 reviews67 followers
November 27, 2020
পরাবাস্তবতার জগতে দেশীয় সাহিত্যকদের কয়জনে পেরেছেন বিচরণ করতে? কোথায় পাব তারে সেই প্রশ্নের উওর কি ফিসফিসানি সুরে ভেসে বেড়ায় ডলু নদীর হাওয়ায়? ইন্দুর বিলাই খেলা খেলতে হয়তো একসময় সবাই বিরক্ত হয়ে তারপরও তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। মহল্লার বান্দর কিংবা আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস কতটুকু বিস্ময় জাগায়?
সবচে অভিভূত হয়েছি আমাদের বকুল পড়ে।
Profile Image for Arup.
13 reviews13 followers
October 28, 2017
আমরা আসলে কোনদিনই জানতে পারি না,কে শেফালি।যেমন জানতে পারিনা আব্দুল করিমদের কেন নদীর কাছে পৌঁছে মনে হয় কোথাও একটা পৌঁছালাম,মানুষ যে জলেরই সন্তান তা হয়তো আব্দুল করিমদের মনে আসে না।এরকম সময়ে দুলাল মিঞার বিরক্ত লাগে,কারণ শেফালির বাড়ি কেমন একটা মায়ার মত কাগজের আঁকাবাঁকা অক্ষরে দুপুরের মত পইড়া থাকে,তখন ধাঁধার মত অনুভূতি হইলেও, দুলাল মিঞা বিরক্ত হয়।সেখানে পায়ের তলায় যেদিকে হাঁটলে আরাম লাগে সেইদিকে হাঁটার নিশানা দেয়া থাকলেও,আমরা নিশ্চিত হতে পারি না,আমাদের পায়ের তলায় আরাম লাগে কিনা।ভরদুপুরে যখন তাদের ছেওয়া শরীরের নিচেই পোষা কুকুরের মত পইড়া থাকে,তখনই হয়তো তাদের নিয়তি নির্ধারিত হয়া যায়।আমরা দেখি,এইসময়ই জুতা খুলতে যায়া আব্দুল করিম বিষগেরো দিয়া ফেলে।এবং সেই গেরোর পেছনে তার শরীর ঝুঁকায়া গিট্টু খোলার চেষ্টায় যখন আসলে কিছুতেই কিছু হওয়ার থাকে না,তখন দুলাল মিঞা এবং আমরা আবদুল করিমের কথা শুনে বিভ্রান্ত বোধ করি,'ল দুলাইলা,যাই গা'।তারপর কোনভাবেই আর আব্দুল করিমকে শেফালির কথায় ভুলানো যায় না।সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমি/আমরা অথবা দুলাল মিঞাকে বাধ্য হয়া ফেরার বাস ধরতে হয়,যেন আসলে কিছুই হয় নাই,যেন দুলাল মিঞারা ঢাকা থেকে ফুলবাড়িতে দুইবার বাসবদল করে আসে নাই,এরকম একটা ঘটনাহীন ঘটনার স্থিরচিত্রে আমরা এবং দুলাল মিঞারা আটকায়া যাই।

শেফালি থাকা এবং না থাকার সম্ভাব্যতায় আমাদের দিনকাল ঘোরের মধ্যে কাটে।হয়তো শেফালি তাদের দুই নাইরকল অলা গাছের মধ্যে দিয়া তাকায়াছিল,আবদুল করিমের অপেক্ষায়,হয়তো তাদের গাছের ডালিমও পাড়া হইছিল আব্দুল করিমের জন্যে,আমাদের এইরকমই মনে করতে ইচ্ছা হয়।অথবা আসলে,শেফালি বলে কেউ নাই,কিছু নাই।হয়তো সবকিছুই 'উইশ ইউ অয়ার হিয়ার'এর মত কোন মায়ার মনের মানুষ।কিন্তু এইরকম একটা ছবি,এইরকম একটা গান শেফালির মত আমাদের তাড়া করে সারাদিন,সারাজীবনই হয়তো।আমি/আমরা তখন সারাদিন একা বাসায়,জলের মত ঘুরে ঘুরে গান গাই,

'হারায়ে সেই মানুষে/তার উদ্দেশে/আমি দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে
কোথায় পাব তারে...... ।'
Profile Image for Nishat Monsur.
191 reviews18 followers
June 27, 2021
পরাবাস্তবতা বা জাদুবাস্তবতা কাকে বলে এই সম্পর্কে আমার বিশেষ ধারণা নাই, শুধু এই দুই শব্দই না, সাহিত্যের বেশিরভাগ জার্গেনের সঙ্গে আমার বিস্তারিত পরিচয় নাই, কেননা আমার এই চব্বিশ বছরের জীবনে আমি সাহিত্যকে দেখেছি শুধুই আনন্দের চোখ দিয়ে, বিশাল রাশভারী শব্দ কিংবা সংজ্ঞা বা টীকা জুড়ে দিয়ে সাহিত্যের আনন্দকে জ্ঞানে পরিণত করার মতো বাস্তববুদ্ধি আমার কোনোকালেই ছিল না। তবু বারংবার শহীদুল জহিরের লেখা সম্পর্কে এই দুই শব্দের ব্যবহার দেখে মনে হয় বুঝি শহীদুল জহিরের লেখাকেই পরাবাস্তববাদী বা জাদুবাস্তববাদী লেখা বলা হয় কিংবা এই দুই প্রকারের লেখা শহীদুল জহিরের লেখার মতো হয়ে থাকে। শহীদুল জহিরের লেখার মধ্যে যে তাঁর সৃষ্ট একটি বিশেষ প্রকারের ঘোর থাকে তাকে হয়তো বিদগ্ধ পাঠকেরা জাদুবাস্তবতা বা পরাবাস্তবতা নাম দিয়ে থাকবেন- আমি নিশ্চিত না।

তবে আমার ধারণা সঠিক হয়ে থাকলে আমার পড়া তার তৃতীয় বই ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য-তে এই শব্দদ্বয় সবচাইতে বেশি খাটে- গল্পে গল্পে কথ্য ভাষাভঙ্গীর প্রভাবে নয়, মূলত গল্প বলার ভঙ্গী ও বিষয়বস্তুর জন্য। একটি গল্প বাদে প্রায় প্রতিটি গল্পের ঘটনাস্থল ভুতের গলি, যেটা সম্ভবত ঢাকার বর্তমান ভুতের গলি নয়, অথবা পুরান ঢাকায় এখনো ভুতের গলি বলে কোনো জায়গা আছে যা আমার জানা নাই- প্রত্যেকটিতেই এমন একটা উদাসীন সংকটের ছায়া পড়ে থাকে, সেই ছায়া পার হয়ে মনের মধ্যে শুধু জেগে থাকে পদ্মনিধি লেন, জোড়পুল, নারিন্দা এইসব জায়গার নাম। এই বইখানার রিভিউ লেখা সম্ভব না, অ���শ্য আমি রিভিউ লেখিও না- পড়ার অব্যবহিত পরে কেমন লাগলো তাই লেখি। সেইদিক দিয়ে যদি আপনার আমার এই অল্প পরিসরের লেখাকে এলোমেলো মনে হয়ে থাকে তার মানে আমার মাথার ভেতরে এই বইয়ের দ্বারা সৃষ্ট চিন্তাকে শব্দ বা বাক্যে পরিণত করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত নাই।

কিছু মেসেজ ধরতে পারি নাই, সেটার দায় হয়তো লেখকের চেয়ে আমার পাঠকসত্তার ঘাড়ে চাপানোই অধিক সঙ্গত হবে। তবু আমরা নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাইতে অধিকতর সাচ্ছন্দ্য বোধ করি বলেই নিজের ব্যর্থতাকে বইয়ের ঘাড়ে চাপাইয়া বইয়ের থেকে এক তারা কেটে রাখলাম। আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো তো শহীদুল জহিরের পক্ষে এখন আর সম্ভবপর হয়ে উঠবে না!
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
October 3, 2024
পাঠকেরা শহীদুল জহিরের লেখা পড়ে আর ভাবে যে এই হালায় এমন করে লেখে ক্যান। এ কি ইচ্ছা করেই এমন লেখা নাকি অনিচ্ছাতেই এইরকম করে লেখা হয়ে গেছে। তাদের কাছে কোনো উত্তর থাকে না। তারা জানে না কেন এভাবে গল্পগুলো ভিন্নরকমে লেখা হয়। তারা বলতে পারে না, লেখক কি নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা দেখাতে চান নাকি এই গল্পগুলোর জন্ম হয়েছিল এভাবে গ্রন্থিত হওয়ার জন্য। তারা শহীদুল জহিরের ভূতের গলির বাসায় তার কাছে বিষয়টা জানতে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখে শহীদুল জহিরের মরে যাওয়ার অনেক দিন হয়ে গেছে। এই গল্পগুলোর রহস্য জানতে না পেরে তারা দু:খ পায় বা হয়তো পায় না। তারা ফিরে আসে আর সবাই মিলে পাঁচ তারা দেয় বা কেউ কেউ চার তারাও দেয়। তারা সবাইকে এই গল্পগুলো পড়তে বলে৷ এসব দেখে কেউ কেউ এসব গল্প পড়ে ফেলে কোনো এক সন্ধ্যায় বা সকালে বা হয়তো বিকালে। তারা আবার দৌড়ে এসে পাঁচ তারা দিয়ে যায়। আবার কেউ কেউ গালি দেয়। বলে যে, এই হালার লেখা পড়ার মতো না। তারা গজগজ করে আর যারা পাঁচ তারা দেয় তাদের প্রতি গালি নিক্ষেপ করে। কিন্তু শেষমেশ তারা দেখতে পায় যে শহীদুল জহিরের এই গল্পগুলো এখনো টিকে আছে।
Profile Image for Imtiaz Emu.
60 reviews33 followers
May 4, 2019
২০১৯ এর আমার সেরা আবিষ্কার সতিনাথ ভাদুড়ী এবং শহিদুল জহির। শহিদুল জহিরের মাত্র এই একটাই সংকলন আমি পড়েছি, বলা ভালো মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। আপাতদৃষ্টিতে গল্পগুলোতে কোন আকর্ষণ নেই, আবার আছে। একটা ছোটগল্প সংকলেন সবকয়টাই ভালো হবে তা খুব কদাচিৎ পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে শাহাদুজ্জামান ছোটগল্প খুব চমৎকার লিখেন, কিন্তু শহিদুল জহির এই ছোটগল্প সংকলনে কাউকে ধারেকাছে ঘেষতে দেন নি! বাচনভঙ্গি এবং গল্প বলার ভঙ্গিতে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার চোখের সামনেই ঘটনা ঘটছে।
অনেকগুলো ক্যারেক্টার একটা ছোটগল্পে, এক জনের কথা থেকে আরেকজনের কথায় চলে যাচ্ছে লেখক অচিরেই। ছোটগল্প, তাই গল্পের বিবেচনায় এত ক্যারেক্টার পরিচিতির কোন প্রয়োজনই তিনি মনে করেননি।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মেটাফরিক্যাল "ইন্দুর-বিলাই খেলা" এ সংকলনের সেরা। সম্পূর্ণ নিজস্ব স্বকীয়তায় লেখা গল্পটির ধারা অন্য কোন লেখকের ধারার সাথে মিলবে না। আমাদের বকুল গল্পটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে বকুলের কি হলো শেষমেষ? এ কি পোকায় কাটা সমাজের ক্রুর হাসি আমার পানে? কোথায় পাবো তারে একটা ডার্ক কমেডি। শেফালি কি আদৌ ছিল?
পুরানো ঢাকার কথার ফ্লেভারে গল্পগুলো অনেক জীবিত এবং ক্যারেক্টার গুলো নিজের মহল্লার মনে হয়। আমাদের কুটির শিল্প গল্পটি একটি শুদ্ধ গল্প যা পূর্ণচ্ছেদব্যতীত।
একটা জিনিস একই সাথে হতেও পারে নাও হতে পারে এ ধরণের প্রবালিস্টিক চিন্তাভাবনা অধিকাংশ গল্পের মূল উপজীব্য যা আমি আর কোন গল্পে পাইনি। লাইটের খাম্বায় কাউয়ার গু নাকি চুন তা বিবেচনা করতে করতে বাল্যকালের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিচারণ বোধহয় অলস মস্তিষ্কে এভাবেই নাড়া দেয়, ঠিক যেভাবে তরমুজের আসল- ভেজাল জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে মূখ্য হয়ে উঠে।
Profile Image for পীয়্যান নবী.
52 reviews87 followers
July 20, 2016
এই গত কয়েকমাস ধরে লেখকের একটা বই পড়ব পড়ব করেও হচ্ছিল না। শেষে কি মনে করে একেবারে স্বভাববিরুদ্ধ পিডিএফ নামিয়েই পড়ে ফেললাম। আমি খুব একটা আফসোস করছি না, কেন এতদিনেও লেখকের কোন বই পড়ি নাই। বরং এ ভেবে খানিকটা শান্তি হচ্ছে যে, সব লেখা পড়ে ফেলা যাবে। যতদূর জানি খুব বেশি লেখা নাই তার... আফসোস হলে এইটা হইতে পারে। অথবা হয়ত কোন আফসোস করবারই দরকার নাই।

লেখার ধরণটা নতুন ছিল আমার কাছে, সবার কাছেই শুরুতে থাকে বলে জানি। প্রমিত বাংলার বাইরে যেয়ে প্রতিটা গল্প জুড়েই মানুষের মুখের ভাষার যে ব্যবহার ভদ্রলোক কলমে দেখিয়েছেন, তাতে আমি মুগ্ধ। আমি মুগ্ধ 'ইন্দুর-বিলাই খেলা' অথবা 'আমাদের কুটির শিল্পের ইতিহাস' অথবা 'মহল্লায় বান্দর, আব্দুল হালিমের মা এবং আমরা' অথবা বাকি চারটা গল্পেও... আমি মুগ্ধ 'লৌড়ালৌড়ি'র মতন একটা শব্দেও।

আমি শহীদুল জহির নিয়ে কিছুটা পড়ার চেষ্টা করেছিলাম ইন্টারনেটে। দেখলাম জাদুবাস্তবতা এবং এই ধরণের অনেক কঠিন শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে তার লেখার ব্যাপারে। সেইসব আমি খুব একটা যে বুঝি বা ধারণ করতে পারি তা না। আমি বিনা শ্রান্তিতে গল্পগুলো পড়ে যেতে পেরেছি, এইটাই আমার মুগ্ধতার আসল কারণ। দক্ষিন মৈশুন্দি, ভূতের গলি অথবা জিঞ্জিরা অথবা বাঘওয়ালা বাড়ি নামগুলির বারবার ফিরে আসাতেও আমার একঘেয়ে লাগেনি। এই তো...

এই বইটা পাঁচ পাবে... যদি আরও এক দুই দেয়া যেত তবে তাও দিতে আমার খুব একটা আপত্তি থাকত না... কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেয়া হয় নাই... আমরা পাঁচ দিয়েই সন্তুষ্ট থাকব!
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
March 7, 2016
বইটা পড়েছি আর অবাক হয়েছি। এমন ভাবে একজন কিভাবে লেখে। শহিদুল জহিরের লেখনীর ভঙ্গি দারুণ। অনেকটা পেচিয়ে ধরে। গল্পের ভেতরে ঢুকতে হলে একটু কষ্ট করতে হয়। হয়তো, অথবা ও কিন্তুর এমন দারুণ ব্যাবহার আমি আগে কখনো দেখিনি। ভালো লেগেছে।
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
August 12, 2025
একদম অন্য ধরনের লেখার ধরন। বেশ ভালো।
Profile Image for Tatinee.
15 reviews12 followers
November 17, 2016
আমি মুগ্ধ।
আফসোস হচ্ছে এতদিন কেন ওনার লেখা পড়ি নি।
এত অসাধারণ কেন তাঁর সৃষ্টি?
প্রতিটা লেখাই পড়ার সময় নিউরণে অনুরণন ঘটে গেছে,কোন এক নিশ্ছিদ্র ঘোরে বিভোর হয়ে থেকেছি...
আমার প্রিয় বইগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিল এ বইটি...
নেশা চেপে গেছে,তাঁর সব রচনা,সব সৃষ্টিকর্মের স্বাদ নেবার....

ভালোবাসি শ্রদ্ধেয় লেখকমশাই! :-)
Displaying 1 - 30 of 49 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.