The sequel to the award-winning and critically-acclaimed Those Days, First Light is a magnificent novel set at the turn of the twentieth century in a Bengal where the old and young India are jostling for space. Prominent among its many characters are Rabindranath Tagore or Robi, the young, dreamy poet, torn between his art and the love for his beautiful, ethereal sister-in-law, Kadambari Devi, and the handsome, dynamic Naren Datta, later to become Swami Vivekananda, who abandons his Brahmo Samaj leanings and surrenders himself completely to his Guru, Sri Ramakrishna. The story also touches upon the lives of the men and women rising to the call of nationalism; the doctors and scientists determined to pull their land out of the morass of superstition and blind beliefs, and the growing theatre movement of Bengal, with its brilliant actors and actresses who leave behind the squalor of their lives every night to deliver lines breathtaking in their beauty. Through all this runs the story of Bharat and Bhumisuta - one an illegitimate prince, the other a slave who rises to become the finest actress of her age - who cling to their self-respect and love in a society which has little time for people like them. Grand in its scale and crackling with the energy of its prose, First Light is a rich and comprehensive portrait of Bengal, from its sleepy, slow-changing villages to the bustling city of Calcutta where the genteel and the grotesque live together. Equally, it is a chronicle of a whole nation waking up to a new, modern sensibility.
Sunil Gangopadhyay (Bengali: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) was a famous Indian poet and novelist. Born in Faridpur, Bangladesh, Gangopadhyay obtained his Master's degree in Bengali from the University of Calcutta, In 1953 he started a Bengali poetry magazine Krittibas. Later he wrote for many different publications.
Ganguly created the Bengali fictional character Kakababu and wrote a series of novels on this character which became significant in Indian children's literature. He received Sahitya Academy award in 1985 for his novel Those Days (সেই সময়). Gangopadhyay used the pen names Nil Lohit, Sanatan Pathak, and Nil Upadhyay.
Works: Author of well over 200 books, Sunil was a prolific writer who has excelled in different genres but declares poetry to be his "first love". His Nikhilesh and Neera series of poems (some of which have been translated as For You, Neera and Murmur in the Woods) have been extremely popular.
As in poetry, Sunil was known for his unique style in prose. His first novel was Atmaprakash (আত্মপ্রকাশ) and it was also the first writing from a new comer in literature published in the prestigious magazine- Desh (1965).The novel had inspiration from ' On the road' by Jack Kerouac. His historical fiction Sei Somoy (translated into English by Aruna Chakravorty as Those Days) received the Indian Sahitya Academy award in 1985. Shei Somoy continues to be a best seller more than two decade after its first publication. The same is true for Prothom Alo (প্রথম আলো, also translated recently by Aruna Chakravorty as First Light), another best selling historical fiction and Purbo-Paschim (পূর্ব-পশ্চিম, translated as East-West) a raw depiction of the partition and its aftermath seen through the eyes of three generations of Bengalis in West Bengal, Bangladesh and elsewhere. He is also the winner of the Bankim Puraskar (1982), and the Ananda Puraskar (twice, in 1972 and 1989).
Sunil wrote in many other genres including travelogues, children's fiction, short stories, features, and essays. Though he wrote all types of children's fiction, one character created by him that stands out above the rest, was Kakababu, the crippled adventurer, accompanied by his Teenager nephew Santu, and his friend Jojo. Since 1974, Sunil Gangopadhyay wrote over 35 novels of this wildly popular series.
Death: Sunil Gangopadhyay died at 2:05 AM on 23 October 2012 at his South Kolkata residence, following a heart attack. He was suffering from prostate cancer for some time and went to Mumbai for treatment. Gangopadhyay's body was cremated on 25 October at Keoratola crematorium, Kolkata.
Awards & Honours: He was honored with Ananda Award (1972, 1979) and Sahitya Academy Award (1984).
১১৩৫ পাতায় গুটি গুটি হরফে লেখা এই দীর্ঘ উপন্যাসটি আমি মোটমাট ৩ মাসেরও বেশি সময় নিয়ে পড়েছি। আজ যখন শেষ পাতাটা পড়ে বইটা বন্ধ করে খাটের পাশের টেবিলে তার এতদিনে পরিচিত হয়ে আসা জায়গার বদলে বুকশেলফে তুলে রাখতে গেলাম, কোন প্রিয় বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় যেমন বিচ্ছেদবেদনা বোধ হয় আমারও সেরকম হচ্ছিলো৷ সত্যিই তো, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃপায় গত ৩ মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামকৃষ্ণ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, সরলা ঘোষাল, ত্রিপুরার রাজপুরুষেরা, বাংলার থিয়েটার জগতের প্রবাদ পুরুষ গিরীশচন্দ্র, অর্ধেন্দুশেখর প্রমুখ, বিনোদিনী দাসী, ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু - এঁরা সবাই যেন ইতিহাসের পাতা ছেড়ে উঠে এসে আমার নিতান্তই কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। আর ইতিহাসের এসব স্রোতের সমান্তরালেই চলে গেছে ত্রিপুরার ভাগ্যবিড়ম্বিত এক ত্যাজ্য রাজপুত্র ও উড়িষ্যা থেকে আগত এক ক্রীতদাসী থেকে বাংলার রঙ্গমঞ্চের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রে পরিণত হওয়া এক নারীর গল্প। সত্যি বলতে উপন্যাসের টাইমলাইন বিবেচনা করে সেইখানে ভূমিসুতার মত শক্তিশালী নারী চরিত্র কল্পনাও করি নি, অথচ সুনীল যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য করেই গড়ে তুলেছেন তাকে। অবশ্য এটাও বলে রাখা প্রয়োজন সে-ই এই উপন্যাসের একমাত্র শক্তিশালী নারী চরিত্র নয়। তবু বহুকাল বাংলা সাহিত্যে এমন কোন নারীচরিত্র পাই নি যাকে কোনভাবে আমার এত ভালো লেগে গেছে।
চোখের সামনে আস্ত একটা যুগকে জীবন্ত হতে দেখার অনুভূতির সাথে কীসের তুলনা দেই৷ জুলাই ২০২০ থেকে অক্টোবর ২০২০ বাস্তব সময়ের মাঝে আমি ১৮৮৩ থেকে ১৯০৭ সালে বাস করে এলাম। এই ভ্রমণ কল্পনার চোখ দিয়ে হলেও আবারও মনে পড়ে গেলো পদার্থবিদরা টাইম মেশিন একদিন উদ্ভাবন করতে পারুন আর না পারুন সাহিত্যিকরা বহু আগেই তাদের টাইম মেশিন উদ্ভাবন করে রেখে গেছেন।
ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ এক কাজ। তবে উপন্যাস পড়তে গেলেও কি কিছুটা ঝুঁকি স্বীকার করে নিতে হয় না? আমার মত ইতিহাস বিষয়ে নিতান্তই গণ্ডমূর্খ পাঠক হলে তো আরো বিপদ, ইতিহাস ও তার বর্ণাঠ্য চরিত্রগুলো সম্বন্ধে নিজের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠার বদলে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গিকেই নিজের ভেবে আগাগোড়া হজম করে নেয়ার বিপদ। তবু আমি এই ঝুঁকি মেনে নিয়েই সুনীলের বই পড়তে গেছি। এ প্রসঙ্গে এই বইতেই উদ্ধৃত করা রবি ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না - (বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে ঐতিহাসিক যথার্থতা রক্ষার বিষয়ে অক্ষয়কুমার মৈত্রের সমালোচনার জবাবে) "যদি ইতিহাসকে মানবে না তবে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিবার প্রয়োজন কী? তাহার উত্তর এই যে, ইতিহাসের সংস্রবে উপন্যাসের একটি বিশেষ রসের সঞ্চার করে, ইতিহাসের সেই রসটুকুর প্রতি উপন্যাসিকের লোভ, তাহার সত্যের প্রতি তাঁহার কোনও খাতির নাই.....ইতিহাস-ভারতীর উদ্যানে চঞ্চলা কাব্য সরস্বতী পুষ্পচয়ন করিয়া বিচিত্র ইচ্ছানুসারে তাহার অপরূপ ব্যবহার করিয়া থাকেন....ইহাতে ইতিহাসের কোনও ক্ষতি হয় না, অথচ কাব্যের কিছু শ্রীবৃদ্ধি হয়।"
১২ বছর বয়সে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সেই সময়'(যাতে ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ সন বিবৃধ হয়েছে) পড়ে আমার চোখের সামনে নতুন এক জগত খুলে গেছিলো৷ আমার নিজের মানুষের, তার সংস্কৃতি ও সাহিত্যেরও যে এক অতীত আছে সেই প্রথম উপলব্ধি হলো। তারপর বেশ অনেকদিন পার হয়ে যাবার পর এ বছর আবার 'প্রথম আলো' পড়ার সুযোগ হলো। এই ধরনের বইগুলো না শুধু বই নয়, রীতিমতো এক একটি অভিজ্ঞতা। You don't only read them, you experience them. 'পূর্ব-পশ্চিম' এখনও ভবিষ্যত আমি'র জন্য সংরক্ষিত আছে ভেবেই খুশি লাগছে। তবে আপাতত কিছুদিন বোধহয় একবিংশ শতাব্দীতে ফিরে আসতেই কাটাতে হবে। করোনার লকডাউনে স্কুল-কলেজ সব বন্ধ, বাসার বাইরে কতদিন যাওয়া হয় না, পরিবারের বাইরের কারো সাথে কথাও হচ্ছে না - এইরকম সময়ই আসলে নিজেদের নিকট অতীতেরই অন্য এক যুগে হারিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ছিল। আবারও বলতে হচ্ছে, কী এক অভিজ্ঞতাই না হলো!
গুডরিডস নামক এই পড়ুয়াদের নেটওয়ার্কটিতে নিয়মিত হবার পর থেকে বই সম্পর্কে, বই পড়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ৮-১০টি বাক্য সহজাত ভাবেই হাতে আসতো। এই অভ্যাসটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছে অভ্যাসটা আমাকে ছেড়ে যাবার চেষ্টা করছে। ১১২৬ পাতা পড়বার পরও কিছু লিখতে হিমশিম খাচ্ছি আর যিনি ১১২৬ পাতা লিখে ফেলেছেন তার কাজের সমালোচনা করার ইচ্ছা নিয়ে গালে হাত দিয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। ব্যাপারটা বেঢপ তাতে সন্দেহ নেই। তাই যখন দুই এবং তিন তারার মাঝে দ্বিধা উপস্থিত হলো তখন ব্যাপারটাকে আরও বেঢপ না করে তিনটি তারাকেই বেছে নিলাম।
গুডরিডসে কিছু পাঠকপ্রিয় অথবা জনপ্রিয় বই নিয়ে আমার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে। কিছু প্রতিক্রিয়া এমন আছে যা নেতিবাচক না হলেও ঠিক ইতিবাচকও নয়। সেই সকল বইয়ের মন্ত্রমুগ্ধ পাঠকরা নিয়মিত আমাকে ভর্ৎসনা করেন। কেউ সরাসরি প্রতিক্রিয়ার মন্তব্য অংশে, কেউ ইনবক্সে, এমন কি ফেসবুকের ইনবক্সও বাদ যায় না। আমি নিজেও বেশ কিছু জনপ্রিয় বই নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি, সেসব অংশে অবশ্য মন্ত্রমুগ্ধ পাঠকেরা আমার সাথে জ্ঞাতিভাব ভাগাভাগি করে নিতে আসেন কদাচিৎই। ভিন্নমতে আমার আপত্তি না থাকলেও ব্যক্তিগত আক্রমণের ব্যাপারটা নিয়ে একসময় কিছুটা দাঁতের নিচে কাঁকড় পড়বার মত বিরক্তি কাজ করতো, এখনও করে না তা বলছি না তবে নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গির উদয় হয়েছে। কিছু বই আমার কাছে আহামরি নাও মনে হতে পারে কিন্তু কারও যদি সেই বইয়ের সাথে এটাচমেন্ট থাকে তাহলে সে বই নিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা তাকে আহত করতেই পারে। তাই মুগ্ধ পাঠককুলকে আহত করার অনিচ্ছা থেকে নেতিবাচক কথাবার্তা লেখার ব্যাপারেও ইদানীং বেশ আড়ষ্টবোধ করি। নানারকম আড়ষ্টতা নিয়েও দু-চার কথা লিখে ফেলা যাক।
১. বইটি একটি হিস্ট্রিকাল ফিকশন। যারা পড়েননি তাদের জন্য বইটির বিষয়বস্তুগুলো উল্লেখ করা যাক। বইটির কিছু মূল বিষয়বস্তু রয়েছে। প্রথমটি ত্রিপুরা রাজপরিবার, প্রথম খণ্ডে এটি মূল বিষয়গুলোর একটি হলেও রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় খণ্ডে এসে গুরুত্ব হারিয়েছে। দ্বিতীয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এবং তার জীবনের নানা পর্যায়; প্রথম খণ্ডে কাদম্বরী দেবীর সাথে তরুণ রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় খণ্ডে পরিণত রবীন্দ্রনাথের জীবনের নানা পর্যায় তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয়টি রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং তার শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ; প্রথম খণ্ডে রামকৃষ্ণ পরমহংসের তরুণ নরেনের (স্বামী বিবেকানন্দ) সাথে সম্পর্ক ও প্রভাব এবং রামকৃষ্ণের দেহত্যাগ, দ্বিতীয় খণ্ডে তরুণ সন্ন্যাসী নরেনের স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন, আশ্রম প্রতিষ্ঠা ও দেহত্যাগের কথা রয়েছে। চতুর্থটি হলো বাংলা থিয়েটারের জন্ম ও প্রথমদিককার বিবর্তন এবং সে পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিবর্গের ভুমিকা এবং চরিত্র। পঞ্চমটি কাল্পনিক দুটি চরিত্র ভরত এবং ভূমিসূতার বেড়ে ওঠা, প্রণয় এবং তাদের সম্পর্কের পরিণতি। লেখক নিজেই কাল্পনিক দুটো চরিত্রকে উপন্যাসের মূল চরিত্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যদিও বলেছেন রবীন্দ্রনাথকেই মূল পুরুষ চরিত্র করা অভিপ্রায় তার ছিল। এছাড়াও ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের বিজ্ঞানমনস্কতা, জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাদম্বরী দেবী সম্পর্কের টানাপড়েন ও তার কর্মযজ্ঞ এবং কাদম্বরীর মৃত্যুর পরে স্বেচ্ছা অবসর, জগদীশ চন্দ্র বসুর অর্জন এবং প্রতিকূলতা, সরলা দেবীর জীবন ও দর্শন, সিস্টার নিবেদিতা এবং তার উপর স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গের আদেশকর্তা লর্ড কার্জনের ব্যক্তিগত জীবন সহ আরও নানা বিষয় বইটিতে রয়েছে। কালেভদ্রে এসেছেন বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রথম চৌধুরী, বাল গঙ্গাধর তিলক ও গোপালকৃষ্ণ গোখলের মত কংগ্রেসের প্রথম দিককার নেতাগণ, মহাত্মা গান্ধী, ইংরেজ বিরোধী যুগান্তর দলের সদস্যগণ অরবিন্দ ঘোষ, হেমচন্দ্র কানুনগো ও দস্যি কিশোর ক্ষুদিরাম এবং আরও অনেকে।
প্রথম আলো শব্দটি খুব সম্ভবত রেনেসাঁ শব্দের সমভাবাপন্ন। উপন্যাসটির সময়কাল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে বিংশ শতাব্দীর শুরুরদিক পর্যন্ত। যেসময়টাতে বেঁচে ছিলেন এতজন গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিহাস-সংস্কৃতির চেহারা পরিবর্তন করা মানুষেরা তাকে হয়তো রেনেসাঁ বলাই যায়। তাঁদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কোনো অন্তত থাকার কথা নয়, যা দিয়ে হয়তো একটি গোটা এনসাইক্লোপিডিয়াই লেখা যায়। আমার দেয়া তিনটে তারা পুরো তিনটিরই প্রধান কারণ, ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সমুদ্র থেকে লেখকের পছন্দমত ঘটনাবলি বাছাই করে, তাদেরকে জুড়ে দিয়ে ১১২৬ পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস লেখা, যেখানে বড়সড় রকমের ঐতিহাসিক বিভ্রাট নেই (যদিও বেশ কিছু জায়গায় ঘটনাবলির উপস্থাপন এবং তার পিছে থাকা লেখকের চিন্তাভাবনা কিছু জায়গায় প্রশ্ন উদ্রেক করার মত ছিল)। এছাড়াও এত পৃষ্ঠার বইয়ের মুদ্রণ প্রমাদ এত অল্প যে হাতে গোনা যায়, তাই সম্পাদকীয়ও যত্ন চোখে পড়ার মত। এরপরে আমার গাদাখানেক অভিযোগ থাকলেও মনেহয় লেখক এবং সম্পাদকীয় পরিশ্রমকে এর চেয়ে কম রেট করা যায় না।
২. হিস্ট্রিকাল ফিকশন জনরার মধ্যে একটি ভাগ আছে যেখানে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে রক্তমাংসের মানুষ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। তাদেরকে ঘিরে ঘটে যাওয়া নানা ঐতিহাসিক ঘটনা গাঁথা হয় তাদের কাল্পনিক যাপিত জীবনের মাধ্যমে। আমাদের অধরা সেই মানুষগুলো, আমরা যাদের গুণমুগ্ধ, যাদের ভালবাসি তাদের কাজ হতে পাওয়া সুফলের জন্য অথবা যাদের ঘৃণা করি তাদের কৃত দুষ্কর্মের জন্য তারা এই ধরণের লেখাগুলোর মাধ্যমে আমাদের ধরাছোঁয়ার আওতায় এসে পড়েন। এই আওতায় এসে পড়া ব্যাপারটার এক ধরণের আকর্ষণ আছে, ভালোলাগা বোধ আছে (ঠিক একই কারণে এধরণের ব্যক্তি যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের গুণমুগ্ধ ভক্তরা তাদের ছুঁয়ে দিতে চান, অটোগ্রাফ নেন, ছবি তুলতে চেষ্টা করেন)। দুঃখজনক ভাবে মনেহয় আমি অকালে বুড়িয়ে যাওয়া সেই জনগোষ্ঠীর অংশ যাদের ক্ষেত্রে এটি কোনো আকর্ষণ হিসেবে কাজ করে না। বরং কিছুটা অস্বস্তিবোধ হয়। অস্বস্তিবোধটার উপর একটু আলো ফেলা যাক। এই ধরণের উপন্যাস ঐতিহাসিক চরিত্রদের যাপিত জীবনের একটি বড় অংশ ধরে জায়গা করে নেয় ঐতিহাসিক ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা। আবার চিন্তাভাবনার অনেকটুকুতে জায়গা করে নেয় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ঘটাবার পিছে যৌক্তিকতা এবং ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া। এই ধরণের চিন্তা বা আত্মকথনগুলো প্রায়শই পুরোপুরি কল্পিত হয়। তখন পাঠক সত্য একটি ঘটনাকে ঘিরে কাল্পনিক কার্যকারণ এবং প্রতিক্রিয়া দিয়ে তার মনে জগতে থাকা ঐতিহাসিক ব্যক্তির যে প্রতিবিম্ব তাকে মডিফাই করে নেন। আমি হয়তো সন্দেহবাতিক গ্রস্ত, তাই যখন প্রজন্মান্তরে কোনো লেখক কোনো ঐতিহাসিক চরিত্রের মনোজগৎ অংকন করেন আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারি না। শুধু যে বিশ্বাস করতে পারি না তাই নয়, অন্য কেউ বিশ্বাস করতে যাচ্ছে সেই আশংকা হয়। এসব নিয়ে আমার অস্বস্তিবোধের দরুণ আর লেখক এবং বইয়ের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে পারি না। আমার অস্বস্তিবোধ অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত সমস্যা তবে তা একদম অমূলক নয় কারণ মানুষ আসলে হিস্ট্রিকাল ফিকশনকে বিশ্বাস করে।
এই বইটি পড়বার সময় এই সমস্যায় আমি অসংখ্যবার পড়েছি। তবে দুটি ক্ষেত্রে আমাকে সবচেয়ে ভুগিয়েছে। প্রথম ক্ষেত্রটি রবীন্দ্রনাথের সাথে কাদম্বরী দেবীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে লেখা অংশগুলো। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মগত-দর্শনগত ট্রানজিশন নিয়ে লেখা অংশগুলো। বলা বাহুল্য যে কোনো ক্ষেত্রেই তাদের মনোজগতের যে দৃশ্যপট লেখক তুলে ধরেছেন তা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে লেখক নিজেকে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি না করেই মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে গেছেন আড়ষ্টতা ছাড়াই, উপস্থাপন বিশ্বাসযোগ্য। মানে পাত্রপাত্রী রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরী না হয়ে কাল্পনিক কোনো চরিত্র হলে লেখককে আমি বিশ্বাস করতাম, তবে পছন্দ করতাম কিনা নিশ্চিত নই। স্বামী বিবেকানন্দের ক্ষেত্রে হয়তো লেখক নিজেকেই প্রশ্নের মুখোমুখি করেছিলেন তাই আড়ষ্টতাও জায়গা করে নিয়েছে। উপস্থাপন একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। এমনকি স্বামী বিবেকানন্দ না হয়ে কাল্পনিক কোনো চরিত্র হলেও লেখকের তৈরি এই মানসিক প্রতিমূর্তিকে আমি কখনও বিশ্বাস করতাম না। দুঃখজনক ভাবে পাতার সংখ্যা হিসেব করলে খুব সম্ভবত স্বামী বিবেকানন্দই সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করেছেন।
৩. বইটির গাঁথুনি রক্ষা রক্ষা করতে হোক, কোনো চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিতে হোক কিংবা সমান্তরালে চলে আসা একাধিক অন্যান্য ঘটনাবলির সাথে সময়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হোক, কিছু কিছু ব্যাপার ছিল পুনরাবৃত্তিমূলক। যেমন ভূমিসূতা চরিত্রটির কথা বলা যাক। এই চরিত্রটি আমার বেশ পছন্দের। ভূমিসূতা এমন একজন মেয়ে জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেড়িয়ে কৈশোরে নিজেকে আবারও রাস্তায় আবিষ্কার করে, পরবর্তীতে যার জায়গা হয় থিয়েটারে। তখন থিয়েটারে নারী অভিনেত্রীদের মাঝে বারবনিতাদের আধিক্য ছিল। তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাবান পুরুষদের (থিয়েটারের ভিতরে বা বাহিরে) অভিনয় দেখা ছাড়াও অন্য আকাঙ্ক্ষা ছিল। বাড়তি আয়ের উপায় হিসেবে কিংবা উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে সে আকাঙ্ক্ষায় সাড়া দিতে অভিনেত্রীরা কুণ্ঠাবোধ করতো না। ভূমিসূতা ছিল ব্যতিক্রমী। উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডের পুরোটা সময়কাল থিয়েটারে অতিবাহিত করলেও সে তার প্রবল ব্যক্তিত্ব এবং নির্লোভ মানসিকতার সাহায্যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। ভূমিসূতা দ্বিতীয় খণ্ডে যতবার এসেছে তার অর্ধেকের বেশি সময় সে তার প্রবল ব্যক্তিত্ব এবং নির্লোভ মানসিকতা দিয়ে নিজের সতীত্ব রক্ষার কাজটি করছিল আর বাদবাকি সময় অন্যান্য কাজগুলো। এমনকি প্রথম খণ্ডেও তাকে একাজ অসংখ্যবার করতে হয়েছিল। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এই চরিত্রটির আরও সুব্যবহার করা সম্ভব হতো বারবার একই কাজ না করিয়ে। শুধু ভূমিসূতা নয় লেখক কম বেশি সব চরিত্রকেই সে চরিত্রের জন্য নির্ধারিত একই ধরণের অবস্থার মাঝে বারবার ফেলেছেনে। কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়েছে চরিত্রের যে গুণাবলীগুলো লেখক স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে চাইছেন সেগুলোকে জোরালো করার জন্য আনুষঙ্গিক গুণাবলী যুক্তকরার কাজটি করতে সফল না হয়েই এই পুনরাবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছেন।
১১২৬ পাতা পড়ার সময় যখন পাঠক দিচ্ছে, তার অবশ্যই বিচার করবার অধিকার আছে ১১২৬ পাতার পুরোটুকুই আসলেই দরকার ছিল কিনা। হয়তো আরেকটু যত্ন নিয়ে, লেখক আরও খানিকটা সফল ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা হলে পুনরাবৃত্তি দূর করে আয়তন কমানো সম্ভব হতো।
৪. এছাড়াও বেশ কিছু চরিত্র এবং ঘটনা উপস্থিত করা হয়েছে যারা আসলে এই উপন্যাসের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি করতে পারেনি। যেগুলো বাদ পড়লে বইটির আয়তন নির্দ্বিধায় কমিয়ে ফেলা সম্ভব হতো এবং যে চরিত্রগুলো এবং যে ঘটনাগুলো আসলেই উপন্যাসের ক্ষতিবৃদ্ধি করেছে তাদের আরও কিছুটা গুরুত্ব দেয়া যেত। এতটা পাতা পড়েও শেষদিকে এসে মনে হয়েছে সব কিছুর যেন ইতি টানতে লেখক হঠাৎ করেই ব্যস্ত হয়ে গেছেন। এমনকি যে পুরুষ চরিত্রটির পিছে সুনীল সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন সেই রবীন্দ্রনাথও ঠিকঠাক মত পরিণতি পাননি। পেলে হয়তো তিনিই উপন্যাসটির নায়ক হয়ে উঠতে পারতেন এবং লেখকের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো।
৫. প্রথম খণ্ড পড়ার পর সবচেয়ে বিরক্ত হয়েছিলাম যখন লেখক খণ্ডটি শেষ করেছিলেন ক্লিফ হ্যাঙ্গারে। সাধারণত চ্যাপ্টারগুলো ক্লিফ হ্যাঙ্গারে শেষ করছিলেন না, পুরো একখানা ৪২৩ পৃষ্ঠার খণ্ড ক্লিফ হ্যাঙ্গারে শেষ করাতে প্রচুর বিরক্তির উদ্রেক হয়েছিল। অখণ্ড সংস্করণে রিভিউ লিখছি বিধায় এটা হয়তো লেখা ঠিক হলো না, তবে পুরো উপন্যাস পাঠে সবচেয়ে বিরক্ত হয়েছিলাম এই সময়টাতে।
৬. সাধারণত বৃহৎ আকৃতির উপন্যাস কিছু সুবিধা পায়। যেমন পাঠক চরিত্রগুলোর জীবন যাপনের অংশ হয়ে যায় আবার চরিত্রগুলো পাঠকের জীবন যাপনের অংশ হয়ে যায়। সাধারণত এই ধরণের বড় উপন্যাসের সাথে পাঠকের গড়ে ওঠা সম্পর্ক নিবিড় হয় যে উপন্যাসের শেষে তা শেষ হয়ে গেল সে দুঃখেই পাঠক কাতর থাকে। এমন অনুভূতি হবার সৌভাগ্য আমারও বেশ কিছু বার হয়েছিল। কিন্তু এবার তা হয়নি বরং মনে হয়েছিল- আহ্ শেষ।
(আমার ধারণা কেউ যদি আমার এই ১৫০০ শব্দ দীর্ঘ পাঠ প্রতিক্রিয়াটি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তিনিও বলছেন 'আহ্ শেষ'।)
Magnum Opus. What a great book this was. One of the best drama genre book i have read. You don't need to read the first part of this duology. I was more interested in the story of Swami Vivekananda, Ramakrishna and Aurobindo but the book focuses more on Girish Ghosh, Theatre lifestyle, Tripura kingdom and Rabindranath Tagore. But overall great book. Loved every bit of it. Actually I am sad that this book is over.
Those who can read Bengali should read the original otherwise english is very well translated. Hope someone make TV show on this book.
কিছু কিছু বই এমন থাকে যেটার ক্ষেত্রে পারফেকশন কথাটা খাটে। সেইসব বই পড়ে আপনার মনে হবে কোন বিখ্যাত রাঁধুনীর হাতে রান্না করা এমন কোন খাবার যাতে ঝাল,নুন,তেল,লবন,মসলা সবকিছু ঠিক ঠিক হয়েছে একদম যেরকমটা দরকার। ভারতীয় লেখকরা গল্প বড় করেন এরকম অভিযোগ তাদের নামে প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু কিছু বই এমন থাকে হাজার হাজার পৃষ্ঠা হওয়া সত্ত্বেও একটা পৃষ্ঠাও অহেতুক বলে মনে হয় না। বরং শত বছরের পুরনো ইতিহাস তুলে ধরার জন্য হাজার পৃষ্ঠা কমই মনে হয়। প্রথম আলো! একটা বইয়ে লেখক যা দেখিয়েছেন অনেক লেখক হয়তো তাদের পুরো ক্যারিয়ারে যতগুলো বই লিখেছেন সবগুলো মিলেও এই বইয়ের সমান তথ্য দিতে পারেননি। কারণ এই বইটা লেখার আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে পরিমাণ স্টাডি করেছেন রসকষহীন ঐসব নন ফিকশন হয়তো আমি সারাজীবনেও অতগুলো পড়তে পারবো না।
প্রচ্ছদ দেখে বোঝা যায় গল্পের মুল ঐতিহাসিক তিন চরিত্র হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,স্বামী বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণ পরমহংস। বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এরা মুলত 'সেই সময়' উপন্যাসেই মুখ্য চরিত্র ছিল। এখানেও তাদের শেষ জীবনের খানিকটা কথা রয়ে গেছে। এছাড়াও ত্রিপুরার রাজপরিবার,মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য,যুবরাজ রাধাকিশোর,ভরত, ভূমিসুতা,শশীভূষন,দ্বারকানাথ,বসন্তমঞ্জুরি, যাদুগোপাল এই সব কাল্পনিক চরিত্রগুলো (নিশ্চিত না) গল্পে রস যোগানের কাজটা করেছে। তথ্যভারাক্রান্ত বই পড়ে যাদের অভ্যাস নেই তারাও নেহায়েৎ ভরত,ভূমিসুতার কারণেই বইটা শেষ না করে রাখতে পারবে না। ভরত ভূমিসুতা এরা দুজনেই যেন সত্যিকার প্রেমের এক আদর্শ উদাহরণ। ঠিক দেখা হলো,প্রেম হলো,বিয়ে হলো টাইপ জীবন এদের না। বাধাবিপত্তি ও চড়াই উতরাই পার হওয়া কাকে বলে সেটা এদের জীবন কাহিনী পড়লে বুঝবেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত না বাংলায় এমন মানুষ পাওয়া ভার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কল্যানে লেখক রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে আরো ভালো করে চিনলাম এই বইটার মাধ্যমে। তার স্বপ্রতিভ, মেধাবী ও পরিশ্রমী সত্ত্বাটা রীতিমতো অনুপ্রেরণা জোগাবে অনেকের। রবীন্দ্রনাথ-কাদম্বিনীর সম্পর্ক আর কাদম্বিনীর মৃত্যু নিয়ে আমাদের ভেতর এতকাল ধরে পুষে বড় করা ধারনাগুলো যে কতটা ভুলভাল সেটা প্রথম আলো না পড়লে জানা হতো না। কাদম্বিনীর মৃত্যুর জন্য রবীন্দ্রনাথ দায়ী কি দায়ী না সেটা পরের বিষয় কিন্তু আপনি কি জানতেন কাদম্বিনীর স্বামী জোতিরিন্দ্রনাথেরও দোষ ততটাই? তার চরিত্রও খুব একটা সুবিধার ছিল না। তবে তিনি প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন। কাদম্বিনীর মৃত্যু ও পরবর্তীতে জাহাজ ব্যবসায় বড় লস খেয়ে পাগলের মতো হয়ে না গেলে হয়তো তিনিও কবি হিসেবে বেশ নাম করতেন।
আমরা যেরকম আনমনে গুণগণ করে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গানের সুর ভাজি, রবীন্দ্রনাথ কি করতেন? তিনি কার সুর ভাজতেন? হ্যাঁ তারই। জায়গায় বসে নতুন গান তৈরি করে মুহুর্তে সুর বসিয়ে গেয়ে উঠতেন তিনি। জোতিরিন্দ্রনাথ পিয়ানো বাজাতেন,যে সুর তিনি তুলতেন সেই সুরেই কথা বসিয়ে দিতেন আমাদের এই প্রিয় কবিটি।
আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথের পরিশ্রমী সত্ত্বাটা। একজন লেখক,কবি,জমিদার, একজন স্বামী,কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা,পারিবারিক বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক,একজন সুবক্তা। সারাদিন শতেক কাজ,বাজারে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে,ব্যবসায়ে যুক্ত হয়ে,পারিবারিক মামলা মোকদ্দমা নিয়ে উকিলের কাছে ছোটাছুটি করে কিভাবে যে দিন থেকে রাত হতো তার ঠিক নেই। তারপরেও রাতটা রেখে দিতেন কাব্যচর্চার জন্য। সারাদিনে কিছু লিখতে না পারলে ছটফট করতেন তিনি। সাহিত্য পত্রিকায় লেখার জন্য তখন খুব বেশী লেখক,কবি পাওয়া যেতো না। রবীন্দ্রনাথ নিজেই দুহাতে কলম চালিয়ে পাতা ভরিয়ে ফেলতেন। তার এই যে এত এত লেখা এখন এই শতবর্ষ পরেও আমরা পাঠকেরা আগ্রহের সাথে পড়ছি সাহিত্য পত্রিকার এই ভার মাথার ওপর না থাকলে হয়তো সংখ্যাটা অর্ধেক হয়ে যেত। কাজের চাপে লেখাই হয়ে উঠতো না তার। কিন্তু এই যে সাহিত্য পাতা ভরাতে হবে এই প্রেশারেই তিনি সারাদিনে শতেক কাজের ভিড়েও এত লিখে ফেলতেন। লিখতে ভালোবাসতেন তিনি, লেখার মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতেন।
রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারীর ভূমিকা অন্যরকম। প্রথমে কাদম্বিনী,তারপর ইন্দিরা,কখনো রানু এরা তার লেখায় অন্যরকম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কাদম্বিনী বাদে কাউকেই তার প্রেয়সী বলা যাবে না। আসলে লেখকের লেখায় প্রানের ছোঁয়া লাগাতে নারী নামক কোমলতার প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না।
রবীন্দ্রনাথের অনেকগুলো নামের মধ্যে গুরুদেব একটা। অনেকেই তাকে গুরুদেব বলে ডাকেন। কারনটা খোলাসা হলো এই বইয়ে। রবীন্দ্রনাথ একটা স্কুল খুলেছিলেন,তাকে আশ্রমও বলা যায়। সেখানে ছেলেমেয়েদের তিনি ইংরেজ শিক্ষাপদ্ধতি থেকে দূরে নিয়ে প্রাচীন ভারতের পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষা দিতেন,তারা তাকে গুরুদেব ডাকতে ডাকতেই তিনি গুরুদেব হলেন। বলাই বাহুল্য রবীন্দ্রনাথ এমন কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন না যিনি কাগজ কলমের বাইরে দেশের কোন খবরই রাখতেন না। শতেক কাজের মাঝেও তিনি দেশকে ভালবাসতেন,ইংরেজদের কাছে দেশের মানুষের অপমানে তার রক্ত গরম হয়ে উঠতো।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতি এই উপন্যাসে সেরকমভাবে না থাকলেও এটা পরিস্কার করে দেয়া হয়েছে যে ঠাকুর পরিবারের সব খবরই সবসময় তিনি রাখতেন এবং দূর থেকে কলকাঠি নাড়তেন। ঠাকুর পরিবারে তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা এবং অন্যসকল পুত্রের থেকে রবীন্দ্রনাথের ওপরেই তার ভরসা ছিল বেশী। দেবেন্দ্রনাথের একটা জিনিস যেটা আমাকে মুগ্ধ করে সেটা হলো তার সাহিত্যমন। বাবা এরকম সাহিত্যমনা,পরিবারে প্রত্যক্ষভাবে সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক পরিবেশ এবং সবাই কোনো না কোনোভাবে সাহিত্যের সাথে জড়িত এরকম পরিবারে জন্ম নি���েই আসলে রবীন্দ্রনাথের মতো লেখক জন্মানো সম্ভব। রবীন্দ্রনাথ শুধু প্রতিভাবান ছিলেন না,তিনি পরিশ্রমী ছিলেন। প্রতিভার সাথে পরিশ্রমের সংমিশ্রণেই একজন লেখক অমর হয়ে থাকেন শত শত বছর।
রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নি সরলা নামের একটি শক্তিশালী মেয়ে এই ব্রাক্ষ পরিবারেই জন্ম নিয়েও তৎকালীন সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে সবার বক্রদৃষ্টি উপেক্ষা করে পঁচিশ বছর অব্দি বিয়ে না করে ছিলেন। তার আগ্রহের বিষয় ছিল স্বাধীনতা। তিনি চেয়েছিলেন তখনকার অল্পবয়সী পুরুষেরা প্রেমে পড়ে ছোঁকছোঁক করবার বদলে হাতিয়ার তুলে নিক,যুদ্ধ করুক ইংরেজদের বিরুদ্ধে।
ইন্দিরার সাথে প্রমথ চৌধুরীর বিয়ে নিয়েও অনেক অজানা তথ্য পাঠক জানবে এই উপন্যাসে। জানবে জগদীশচন্দ্র বসুর বিভিন্ন আবিস্কার এবং তার প্রতি ইংরেজদের হিংসাত্মক মনোভাবের কথা। অন্যতম শক্তিশালী একটি চরিত্র ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের কথা। আছে বাল গঙ্গাধর তিলক এবং কিছু পরিমানে গান্ধীজিও।
রামকৃষ্ণ পরমহংস,স্বামী বিবেকানন্দ- রামকৃষ্ণ আর বিবেকানন্দকে আলাদা করে বলা সম্ভব না। দুজন একে অপরের সাথে এমনই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিলেন। রামকৃষ্ণ ছিলেন কালীভক্ত আর প্রথম জীবনের নরেন রীতিমতো নাস্তিক। তবুও প্রথমবার নরেনকে দেখেই রামকৃষ্ণের কি যে হয়ে গেল বলা ভার! তারপর থেকেই নরেনকে তিনি কাছছাড়া করতে চাইতেন না। তার ভেতরে একটা বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গিয়েছিলো এই নরেনই তার ফেলে যাওয়া কাজ সম্পূর্ণ করবে এবং বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবে। রামকৃষ্ণের একটা কথা আমার খুবই মনে ধরেছে, "খালি পেটে ধর্ম হয় না।" আগে দেশের মানুষ পেটপুরে খেতে পাবে তারপর ধর্মের কথা।
নরেন থেকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার গল্প লম্বা গল্প। সেটা বই না পড়ে বুঝবেন না। তবে বিবেকানন্দ মানুষটা দারুন ছিলেন। কখনো শক্তিশালী এক বক্তা পরক্ষনেই মজাদার এক মানুষ,মায়ের কাছে গেলে তার সেই পূর্বের বিলে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মানবসেবার কথা ধর্মের প্রচারের থেকে বেশী প্রচার করেছেন। তার গুরু রামকৃষ্ণদেব যেরকমটা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। ঐক্য! ঐক্যই ছিল তার মুলমন্ত্র।
নিবেদিতা ওরফে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। একজন আইরিশ মেয়ে স্বামী বিবেকানন্দের চরম ও পরম ভক্ত ছিলেন। তাকেই গুরু ও তাকেই রাজা মেনে তিনি আমৃত্যু বিবেকানন্দের পথে চলতে চেয়েছেন। বিবেকানন্দ প্রথম দিকে তাকে দীক্ষা দিলেও পরবর্তীতে তার মনের তরল ভাবের খবর পেয়ে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। তা সত্ত্বেও মার্গারেট সবসময়ই বিবেকানন্দের জন্য ব্যাকুল ছিলেন। বিবেকানন্দের কাছাকাছি থাকার জন্যই এই সারাজীবনেও বিয়ে থা না করা এই মেয়েটি ভারতবর্ষে চলে আসেন এবং একপর্যায়ে ভারতের শোষিত হীন অবস্থা দেখে নিজেই ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিজের জাতের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণের একজন হয়ে তাদেরকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিতে থাকেন। এরকম মানুষ সত্যিই মেলা ভার।
আর বরাবরের মতোই ইংরেজ শোষনের কথা আর কি বলবো! সংস্কৃতি,ব্যবসা বানিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সবসময় পায়ের তলে রাখা এবং রাজার জাতের দাসত্ব করার জন্য যেটুকু দরকার তার বেশী শিক্ষার সুযোগ না দেয়া। হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা বাঁধিয়ে সংহতি নষ্ট করাতেও তারা দক্ষ ছিল। সামান্য বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও সেটা সাথে সাথে নির্মূল করে দেয়া,প্লেগের সময় রোগের নামে ভারতবাসীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো। তবে এটাও ঠিক যে সব ইংরেজ এক না। এই ইংরেজ থেকেই তো ডিরোজিও,বেথুনদের মতো সাহেবরাও নিজেদের যোগ্যতা প্রমান করেছেন। আর লেখকের মতে ইউরোপ আমেরিকার উচ্চপদস্থ সাহেবরা তৎকালীন ভারতে যেসব ইংরেজ পাঠাতেন তারা খুবই নিচু জাতের এবং নিজেদের দেশে তাদের তেমন মূল্য নেই। রানী ভিক্টোরিয়া খবরও রাখতেন না ভারতবর্ষ কিভাবে শোষণ করে তারা দেশ চালাতেন। এতটুকু প্রতিবাদ কালাপানি পার হয়ে ওপারে যাবার আগেই প্রতিবাদকারীর জেল হয়ে যেত।
বই পড়তে ভালোবাসেন কিন্তু ফিকশন পছন্দ হয় না এরকম যেসব পাঠক আছেন, ইতিহাসের স্বাদ আচ্ছাদন করতে পড়তে পারেন সুনীলের এই টাইম ট্রিলজি। এত চমৎকারভাবে এত বেশী পরিমাণে ইতিহাস লেখক তার এই সিরিজে ফুটিয়ে তুলেছেন যে হাজার পৃষ্ঠা কম মনে হবে। লেখকের মেধা,বুদ্ধি,পরিশ্রমের ক্ষমতাকে প্রশংসা না করলে পাপ হবে।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ থেকে পড়া শুরু করেছিলাম, আজ মার্চ-এর শেষে এসে শেষ করলাম ' 'প্রথম আলো'। এ এক দীর্ঘ যাত্রা..... এর আগে কখনো এতো সময় নিয়ে একটা বই পড়িনি। একদম টানা পড়ে শেষ করতাম, তারপর অন্য বই তে হাত দিতাম। আর এই কালজয়ী উপন্যাসের প্রতিটি লাইন একদম ধরে ধরে পড়েছি, আর এই বই পড়ার মাঝে ৫ টা ছোটো উপন্যাস ও পড়ে ফেলেছি।😁 ধীরে সুস্থে অনেক সময় দিয়ে এই দীর্ঘ যাত্রাপথের আজ শেষ হলো, আমি একদম স্তব্ধ...... এই সুবৃহৎ ১১৩৪ পৃষ্ঠার উপন্যাস পড়তে খুব ই চোখের উপরে চাপ পড়েছে। এতো খুদে খুদে হরফে লেখা একটানা বেশিক্ষণ পড়াও যায় না। আর এতো মোটা একটা বই হাতে তুলে পড়াও যায় না।
এই উপন্যাস আঠারোশো তিরাশি থেকে উনিশশো সাত পর্যন্ত যে-সময়কাল বিস্তৃত। সত্যি বলতে কি বাংলা সাহিত্যের এমন কালজয়ী উপন্যাসের কোনো রিভিউ হয় না! যেই সমস্ত ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ চরিত্র গল্পের মধ্যে রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে উঠেছে তা সত্যিই অকল্পনীয়। উপন্যাসটিতে আছেন রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসু, ভগিনী নিবেদিতা, অবনীন্দ্রনাথ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অর্ধেন্দু মুস্তাফীর মতো খ্যাতনামা সব ঐতিহাসিক চরিত্র। তা সত্ত্বেও 'প্রথম আলো'র মূল নায়ক- সময়। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ধর্ম আন্দোলন, মহেন্দ্রলাল সরকারদের বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারা, পেশাদারি রঙ্গমঞ্চ ও প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের ভূমিকা, রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের নানা রূপান্তর, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে নবীনদের মতবিরোধ, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সূচনা, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা সৃষ্টি ইত্যাদি ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ অনুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে 'প্রথম আলো' উপন্যাসে। 'প্রথম আলো' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। দেশ পত্রিকায়..... আমি এতোটাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে গেছি যে এখন নিজের অভিজ্ঞতা আর কি লিখবো..... উপন্যাস শেষ করার পর থেকে শুধুই উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র গুলোর চিন্তা মাথার মধ্যে বার বার ফিরে আসছে..... জানিনা এর পর 'পূর্ব পশ্চিম' উপন্যাসে হাত দিতে পারবো কিনা...... 'প্রথম আলো'র ঘোর কাটলে হয়তো শুরু করবো!
আরও একটা কথা, আজ ২৭এ মার্চ বিশ্ব থিয়েটার দিবস। আর এই উপন্যাসেও রয়েছে একটা চরিত্র নাম স্টার থিয়েটারে সেই 'বিনোদিনী দাসী'। এই চরিত্রটিকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি সিনেমা ও হয়ে গেছে। সিনেমার নাম 'বিনোদিনী'! বাংলা সিনেমা.....
যে সমস্ত পাঠক এখনো পর্যন্ত এই প্রথম আলো পড়েননি আপনারা যে কি সাহিত্য রস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তা ভাবতেই পারবেন না! আর যেই সমস্ত পাঠকদের এতো ধৈর্য্য নেই বা এতো মোটা বই দেখলেই ভয় লাগে আপনারা Youtube এ Audio Story শুনে নিতে পারেন। আমার মনে হয় গল্প শোনার থেকে গল্প পড়া বেশি ভালো, কারণ নিজের মতো করে কল্পনা করা যায়। সুন্দর দৃশ্য গুলো কে একদম নিজের মতো করে সাজানো যায়.... বইটি আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান মূল্য ₹১১৫০
প্রথম আলো – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় . সুনীলকে একবার জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, কোন বই লেখার জন্য আপনাকে বেশি স্টাডি করতে হয়েছে? সুনীল বলেছিলেন প্রথম আলো। সত্যিই তো! এতগুলো ঐতিহাসিক চরিত্রের সমাবেশ, তাদের নিয়ে এমন বিস্তারিত লিখতে গেলে অকল্পনীয় পরিশ্রম করতেই হবে। . প্রথমে ক���হিনী শুরু ত্রিপুরার রাজপরিবার নিয়ে। রাজপরিবারের ভেতরের দ্বন্দ, ভালোবাসা প্রভৃতি সুনীল লিখেছেন। রাজার এক রক্ষিতার ছেলে ভরত, সেও এই উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র। ভরতের জীবন বেশ নাটকীয়, নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে তার জীবন চলতে থাকে। . সবচেয়ে বড় অংশটা জুড়ে আছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর তার পুরো পরিবার এখানকার জীবন্ত চরিত্র। সেইসাথে ঠাকুর পরিবারের অন্দর মহলের বিভিন্ন চিত্র, ইংরেজদের সাথে দ্বন্দ, সাহিত্য সংস্কৃতিতে তাদের ভূমিকা কিভাবে ছিল সেইসব তো আছেই। রবির সাথে কাদ্মবরী দেবির রহস্যময় সম্পর্ক, রবির বাকি জীবনটা এখানে আছে। তার সংস্পর্শে আসতে গিয়ে উঠে আসে আরও অনেক ঐতিহাসিক চরিত্র। মহাত্মা গান্ধী, জগদীশ চন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ এদের চরিত্রও বিশদভাবে ফুটে উঠেছে। . অতিদীর্ঘ এই উপন্যাস পড়ার উপকারিতা, এটা পড়লে অনেক কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। লেখক খুবই যত্নের সাথে এসব লোকের জীবন তুলে ধরেছেন কলমের ডগায়। বাংলা সাহিত্যের অসাধারণ একটা সৃষ্টি এই প্রথম আলো। পড়লে শুধু গল্পের মজাই পাওয়া যায়না, অনেক ইন্টারেস্টিং তথ্যও জানা যায়। হয়তো বেশিরভাগেরই পড়া। যারা এখনো পড়েননি তারা পড়ে ফেলুন। এই বই থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা ঠিক না। . . . একনজরে, প্রথম আলো, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স, রেটিং ১০/১০, হ্যাপি রিডিং
মনে পড়ে, বহু বছর আগে সুনীলের 'সেই সময় ' তন্ময় হয়ে রীতিমতো গোগ্রাসে গিলেছিলাম। তখন বয়স নিতান্তই অল্প.. জানতাম না 'সেই সময়' সুনীলের কালজয়ী ত্রয়ী উপন্যাসেরই অন্তর্গত... যখনই জানতে পেরেছি, তখনই বাকি দুটো উপন্যাস পড়ে ফেলতে মন চেয়েছে..
বলাবাহুল্য সুনীলের কালজয়ী ত্রয়ী উপন্যাস পড়ে শেষ করার শখ আমার বহুদিনের.. আর সেই শখ এতো দিন মনের গহীন কোণে এতো সুকৌশলে গুটিশুটি মেরে শুয়েছিল.. আর আমি শখের কথা দিব্যি ভুলে বসেছিলাম! এতোদিন পরে এই অনন্য বইটি শেষ করে ফেলার পর এর জন্য বেশ খানিকটা অপরাধবোধেও ভুগতে হচ্ছে।
'প্রথম আলো' যখন পড়ার জন্য হাতে নিয়ে বসেছিলাম, পৃষ্ঠাসংখ্যা দেখে খানিকটা ভয়ই পেয়েছিলাম। আদৌ শেষ করতে পারবো তো?
ওমা! প্রথম দশ- পনেরো পেজ পড়তে না পড়তেই সেই ভয় কই যেন উড়ে পালালো, আর তার পরিবর্তে মনে উড়ে এসে পড়ল ভালোলাগা, বিস্ময় আর মোহনীয় আবেশ। রীতিমতো তন্ময় হয়ে পড়ছিলাম একেকটা অধ্যায়...
কবিবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার, মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য, রাধাকিশোর, গিরিশচন্দ্র, অঅর্ধেন্দুশেখর, জ্যোতিন্দ্রনাথ, কাদম্বরী দেবী, ভরত, ভূমিসূতা সহ অসংখ্য অসাধারণ চরিত্রকে অসম্ভব সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন সুনীল.. বই শেষ করে উঠেই মনে হল, এদের সাথে আমি বহুকাল ধরে এক জন্ম কাটিয়ে দিয়ে এসেছি যেন! সম্ভবত এখানেই লেখক সার্থক।
এতোসব ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্বকে খুব সুন্দরভাবে জানা হল.. আর সাথে নিতান্তই গল্পের ছলে ইতিহাস ও জেনে ফেললাম.. 'প্রথম আলো' পড়ার সময় একটা সুন্দর এডভেঞ্চার এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম আর সেই এডভেঞ্জার শেষ করে ঘরে ফেরার পরেও এখনো তার ঘোর লেগে আছে..
আর হ্যাঁ, একটা উপন্যাস লিখতে বসে এতোগুলো চরিত্র সৃষ্টি করার পর সেইসব চরিত্রকে যথাযথ ক্লাইমেক্সের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পর তাদের পরিপূর্ণ রূপ দিয়ে তাদেরকে সমাপ্তির মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার কাজটা অনেক লেখকই পারেন না.... সুনীল পেরেছেন!
Let's talk about thick books..Do you love them?? I am a fan of thick books..Specially if it’s a Bengali book. Usually it takes me 4 or 5 days to finish a thick book(talking about up to 500 pages or more) but this book took me 15 good summer days to finish and though i kept forgetting so many things. I always thought historical fiction is not my thing..But i loved this book anyway... বই শুরু হয় ত্রিপুরার রাজপরিবারের কাহিনি দিয়ে।এটি মূলত অনেকগুলো বড়ো গল্প নিয়ে গঠিত উপন্যাস। মূল অংশগুলো হলো-রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের জীবন,রবীন্দ্রনাথের জীবনের নানা ঘটনা, কাদম্বরী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনের অংশ,রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তার শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের বিভিন্ন ঘটনা এবং তাদের উত্থান পতনের গল্প।এছাড়াও সময় বিশেষে উঠে এসেছে জগদীশ চন্দ্র বসুর অর্জন,সরলা দেবীর জীবন, সিস্টার নিবেদিতার বিবেকানন্দ ভক্তি,বঙ্কিমচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী এবং দস্যি ক্ষুদিরাম সহ আরো অনেকের জীবন। লেখক কতো পরিশ্রম করে এই বই লিখেছেন তা বইটি পড়লেই বুঝা যাবে।প্রতিটি চরিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে,পড়লে তাদের চেনা যাবে গভীরভাবে। আমি শুধু বুঝতে পারিনি মূল চরিত্র কার😑😑😑 মানে আবার পড়তে হবে🍂🤘
Though not as good as Those Day, it's still a very interesting book. The real-life characters having been given the fictional conversations, feel so life-like, as if they are just people like you and me... To create a narrative around and of them is a very tough challenge in itself and the author has managed to bring life into them and those around... For, for us they are historical figures who we can never imagine how they would behave or speak or what their daily life would be like...
Now, need to start Purab-Paschim......
Wish I had known Bengali... that would have brought out the nuances better...
শেষ করলাম সুনীলের টাইম ট্রিলজির দ্বিতীয় বইটি। এবং আগের বইয়ের মতই এবারও একটা মন খারাপ কাজ করছে। এত বড় বই শুরু করাটা একটা বিশাল কমিটমেন্টের ব্যাপার...আর পড়ার পুরো সময়ে বইটা অস্তিত্বের একটা অংশ হয়ে যায়। এখন নতুন বই পড়তে শুরু করবো, এই বইয়ের পাতাগুলোতে আর হাত বুলানো হবে না, ভেবেই খারাপ লাগছে। যাই হোক, এবার আসি বইটা পড়ে আমার কেমন লেগেছে, সেই বিষয়ে। শুরুতে আমার গল্পে মজে যেতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছিলো। ত্রিপুরার রাজার কাহিনী খুব ইন্টারেস্টিং ছিলো...কিন্তু রবীন্দ্রনাথের পার্টটুকু আসার পর অনেকটা দমে গিয়েছিলাম। কেন জানি তার চরিত্র আমাকে খুব বেশি টানে নি। ঠাকুর পরিবারের লোকজনকেও আমার বেশ দাম্ভিক মনে হয়েছিলো পড়ার সময়। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন (আমার কাছে) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কী অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্ব! মুগ্ধ না হয়ে পারি নি! কাকে রেখে আসলে কার কথা বলবো! থিয়েটারের স্বর্ণালী সময়, মহেন্দ্রলাল, বঙ্কিমচন্দ্র, রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসু...একেকটা চরিত্র বইয়ের পাতায় জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছিলো। মনে হচ্ছিলো, সবকিছু আমার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি! কী ক্ষমতাধর লেখনী হলে এমনটা হয়! যদিও স্বামী বিবেকানন্দের ওপর রাগ হয়েছিলো যখন দেখেছি উনি নিবেদিতার সাথে শুধু-শুধুই খারাপ ব্যবহার করতেন। "সেই সময়" বইটাতে মহিলারা আসলেই অবলা ছিলো। তাদের জীবনে দুঃখের শেষ ছিলো না। এই বইয়ে এসে প্রেক্ষাপট অনেকটা বদলে গেছে। বঙ্গভঙ্গের সময়কার যে জাগরণ, সেটা পড়তে খুব, খুব, খুব ভালো লেগেছে। ভালোলাগার জিনিসগুলো আসলে বলে শেষ করা যাবে না! ভূমিসুতা খুব পছন্দের একটা চরিত্র হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। ভরতকে মোটামুটি লেগেছে। আসলে, বই শেষ হয়ে যাওয়ার বিষণ্ণতা গ্রাস করেছে আমাকে। গুছিয়ে কিছু লিখতেও পারছি না। দেবাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাকে এই অসাধারণ বইটা উপহার দেয়ার জন্য। এই বছরের অর্ধেকটা না পেরোতেই বেশ কয়েকটা অসাধারণ বই পড়া হয়ে গেলো। কী সৌভাগ্য আমার!
This entire review has been hidden because of spoilers.
"সেই সময়" পড়ার পর থেকেই বাংলার পরবর্তী ইতিহাস জানার জন্যে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম. খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সুনীলের প্রথম আলো সেই সময়- এর পরের কথা বলে.
প্রথম আলোকে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বই বলা যায় না, ইতিহাসের বর্ননা দিতে গিয়ে লেখক অনেক কাল্পনিক চরিত্র ও ঘটনার অবতারণা করেছেন. ভরত ও ভূমিসুতা উল্লেখযোগ্য ও প্রধান কাল্পনিক চরিত্র. উপন্যাসের মূল নায়ক হিসেবে শেষে আবির্ভাব হয়েছে ভরতের। নয়নমনির চারিত্রিক দৃঢ়তা আসলেই মুগ্ধ করে. সবাই পড়ে দেখবেন।
Contains the renowned historical characters. Never knew about them deeply- Tagore's life, Bibekanando's life, Ram Krishno's life, Tripura State's kingdom etc. So much information but not boring at all. A very nice book to read......
উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমাংশ বাংলার ( এবং ভারতবর্ষের) ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। ধর্ম, নাটক-সাহিত্য এবং জাতীয়বাদী চেতনার জন্ম ও নবতর বিকাশ ঘটে এই সময়ে। ধর্ম সংস্কারে স্বামী বিবেকানন্দ, নাটকে গিরিশচন্দ্র ও অমরেন্দ্রনাথ, সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ এবং জাতীয়বাদী চেতনা বিকাশের দুই ধারা তথা কংগ্রেসের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ এবং তরুণদের নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক রণকৌশল – এতসব ঘটনার সম্মিলন ঘটে এই সময়ে। এসবের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা তথা ভারতবর্ষকে একটা দেশ হিসেবে ভাবার চিন্তা একদম নবতম ঘটনা যা পরবর্তীতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার প্রধান নিয়ামক। এসবকে নিয়েই প্রথম আলো – নতুন শুরু হওয়া আত্মচিন্তার কথা।
বইটা একটা ঐতিহাসিক উপন্যাস। তো স্বভাবতই এখানে স্থান পেয়েছে কিছু জলজ্যান্ত মানূষ যাদের বিভিন্ন অবদানের কথা আমরা জানি, যাদের নিয়ে বই লেখা হয়েছে বা তাঁরা নিজে লিখে গিয়েছেন। কিন্তু এখানে লেখকের অবদান হলো লেখক ইতিহাসের সেই চরিত্রগুলোর মুখে কিছু ঐতিহাসিক এবং কিছু বানানো সংলাপ এমনভাবে বসিয়ে দিয়েছেন যে তাদের আমাদের কাছের মানুষ মনে হয়। আর এর বিপরীত দিকে আছে কিছু এমন চরিত্র যা লেখক নিজে সৃষ্টি করেছেন উপন্যাসের সুবিধার্থে এবং তাদের ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর সাথে বারবার এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়েছেন যে তাদেরও বাস্তবের মানুষ বলেই মনে হয়। ফলে যা দাঁড়ায় তা হলো ঐতিহাসিক এবং ফিকশনাল চরিত্রের মধ্যকার ব্যবধান এত কমে আসে যে তাদের পৃথক করা ভীষণ কঠিন হয়।
বইয়ের ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকের মধ্যে স্থান পেয়েছে শ্রী রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, গিরিশচন্দ্র, অমরেন্দ্রনাথ, গান্ধী, ক্ষুদিরাম, জ্যোতিন্দ্রনাথ, বীরচন্দ্র, রাধাকিশোর, ইন্দিরা, সরলা, সিস্টার নিবেদিতা, জ্ঞানদানন্দিনী প্রমুখ। এদের মধ্যে প্রধান ফোকাস স্বামী বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ভীষণ ইন্টারেস্টিং। কলেজপড়ুয়া নাস্তিক থেকে হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারী নেতা হওয়ার পথটা প্রতি মুহুর্তে চমকপ্রদ। একই সাথে সন্ন্যাসী এবং সংসারী, গুরুগম্ভীর বক্তৃতাবাজ থেকে চটুল কৌতুককারী, ফাইভ স্টার হোটেল থেকে গাছতলায় রাত কাটানো ব্যক্তিটার জীবন চড়াই-উৎরাই আর বৈপরীত্যে ভরপুর। কখনো তিনি পায়ে পড়েছেন শ্রী রামকৃষ্ণের আবার কখনো তাঁর পায়ে এসেছে পড়েছেন সিস্টার নিবেদিতারা। আর ওদিকে পারিবারিক প্রেস থেকে কবিতা ছাপানো থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্যের কালপুরুষ হয়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথ তো আছেনই। কি কর্মবহুল ছিলই না তাঁর জীবন! একদিকে নতুন বউঠানে মুগ্ধ প্রেমিক, পাতার পর পাতা লিখে যাওয়া কবি আবার অন্যদিকেই ব্যস্ত জমিদার আর কন্যার বিয়ের সময় নিতান্তই এক সংসারী। এভাবে এই দুই পুরুষের সকলের আদর্শ হয়ে ওঠার ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যায় বইটিতে। সাথে প্রকৃত সাধু রামকৃষ্ণ, নাটকের জগতের প্রবাদপুরুষ গিরিশচন্দ্র, সাহিত্যানুরাগী রাজা বীরচন্দ্র, প্রতিবাদী সরলা, ভক্ত নিবেদিতারা উঠে এসেছে বইয়ের পাতায় পাতায়।
অন্যদিকে ফিকশনাল চরিত্রের তালিকায় আছে ভরত, ভূমিসুতা/ নয়নমনি, দ্বারিকানাথ, বসন্তমঞ্জরী প্রভৃতি। ফিকশনাল হিসেবে তো বটেই বইয়ের প্রধান চরিত্র ভরত আর ভূমিসুতা। বারবণিতার পুত্র বা হতভাগা রাজপুত্র থেকে বিচিত্র জীবন কাটানোর পর দেশ সেবায় ব্রতী হওয়া ভরতের জীবনটা যেন কাঁটায় বিছানো রাস্তা। প্রতি পদে পদে হোঁচট খেয়েছে সে কিন্তু আবার বারবারই উঠে দাঁড়িয়েছে। যাকেই আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে সেই যেন তাকে আরও বড় বিপদে ফেলে ভিন্ন রাস্তা ধরেছে। আর ভূমিসুতা যেন মাটির দেবী। ছোটবেলায় দাসী হিসেবে বিক্রি হলেও শেষটায় সে সবচেয়ে সফল – দর্শকদের মন মাতানো, চাঁদের মতো মায়াবী কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরের রমনী সে। সমস্ত প্রতিকূলতা সে জয় করেছে নিজের চরিত্রগুণে, নিজের আত্মবিশ্বাসে। একটা ইন্টারেস্টিং চরিত্র হলো বসন্তমঞ্জরী, গৃহে থেকেও সন্ন্যাসী যেন সে, ভবিষ্যৎ যেন তার কাছে মায়ার মতো ধরা দেয়।
বইয়ের প্রধান মুগ্ধতা হলো এর ধরে রাখার ক্ষমতা। সহস্রাধিক পৃষ্ঠার একটা বইয়ের পাঠক ধরে রাখতে হলে যা দরকার ছিল তার সবই আছে বইটাতে। তাইতো দিনের পর দিন বইটা পড়া যায়, শেষ পর্যন্ত মনোযোগ আকর্ষণ করে, ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোকে নতুনভাবে জানা যায়, তাঁরা আমাদের ঘরের মানুষ হয়ে দাঁড়ান, প্রতিটা চরিত্রকে আপন লাগে। বিবেকানন্দ – রামকৃষ্ণ কথোপকথন এবং রবীন্দ্রনাথের জীবনে বউঠান পর্ব বা তাঁর গান বা কবিতা রচনার পটভূমি বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। সাথে ইন্দিরা – রবীন্দ্রনাথের চিঠি পর্ব, সরলার জীবন, তরুণদের জেগে ওঠা এসবও মুগ্ধ করার মতো। আর ইতিহাসের অংশ হিসেবে মহেন্দ্রলাল – জগদীশ চন্দ্রের নেতৃত্বে বিজ্ঞানের জয়গান, গিরিশচন্দ্রের হাত ধরে বাংলা নাটকের বেড়ে ওঠা, বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলমান রাজনীতির জন্ম এসবও আকর্ষণীয়। ওদিকে দ্বারিকানাথ আর বসন্তমঞ্জুরীর বিয়ে, ভরত-ভূমিসুতা-শশীভূষণ দ্বন্দ্ব, ভরত-ভূমিসুতার পুনরায় দেখা হওয়ার অংশগুলোও ভালো লাগার মতো।
রবীন্দ্রনাথের ‘নায়ক’ হয়ে উঠতে না পারা বইয়ের উল্লেখযোগ্য একটা খুঁত। প্রথম খন্ডে সাবপ্লট কম থাকায় রবীন্দ্রনাথকে যেভাবে পাওয়া যায় দ্বিতীয় খন্ডে রবীন্দ্রনাথকে সেভাবে পাওয়া যায় না, তাঁকে পাশে ঠেলে যেন ভরত বারবার চলে আসে সন্মুখে। এদিকে দুই প্রধান চরিত্র ভরত আর ভূমিসুতা যেন দুই মেরুর দুই চরিত্র। ভরতকে এত বেশি বিপদ বা ভাঙ্গনের মুখোমুখি করেছেন লেখক যে তাকে বাস্তব চরিত্র বলে মনে হয় না আবার ভূমিসুতাকে এত বিশুদ্ধ এত নিখুঁত করেছেন যে সেটাও অবিশ্বাস্য মনে হয়। আর শেষদিকে তাদের পুনর্মিলনটাও ঠিক পছন্দ হয় নি, অসুস্থ ভরতকে সেবা করতে আসা সেবিকা ভূমিসুতাকে দিয়ে তাদের এক যুগের দূরে থাকার তেমন কোনো উত্তর পাওযা যায় না। এদিকে বসন্তমঞ্জুরী চরিত��রটাও এক পর্যায়ে বিরক্তির উদ্রেক করেছিল, এত বারবার ভবিষ্যদ্বাণী কি মানা যায়!
দীর্ঘ এক যাত্রা ছিল। চরিত্রগুলো যেন আপন হয়ে গিয়েছিল, অনেকদিন মনে থাকবে ভরত-ভূমিসুতারা।
Where do I even begin to write about this book? I’m simply overwhelmed — but let me try. Pratham Alo (First Light) is the longest novel I’ve ever read (1134 pages — truly what you'd call a “chonker”), yet not once did I feel bored or consider putting it down.
Sunil Gangopadhyay masterfully weaves together the lives of multiple historical and fictional characters, covering the transformative period between 1880 and 1910 in British-ruled India. Through his vivid storytelling, we witness glimpses into the lives of figures like Rabindranath Tagore, Swami Vivekananda, Sri Ramakrishna, and even the internal struggles of the royal family of the independent princely state of Tripura.
The novel beautifully captures the golden age of Bengali theatre, the cultural renaissance, and the early stirrings of nationalism among ordinary people. Even Mahatma Gandhi makes a brief appearance. The way Sunil Gangopadhyay evokes the spirit and texture of that era is simply masterful.
At the heart of this historical tapestry are two fictional protagonists — characters through whom the various narratives often intersect. While some dialogue and scenes naturally bear the imaginative touch of historical fiction, the timeline of events and the portrayal of key figures are grounded in historical accuracy.
This is an ambitious, immersive, and significant work of historical fiction — one that deserves to be read, both for its literary merit and for the incredible research and craft behind it. Highly recommended to anyone looking for a novel that is rich in both history and storytelling.
Quite an experience though I am not quite sure if it were a great one entirely. While it sure is historical fiction, I cannot not wonder how undeserving some people are of the respect that is so easily bestowed on them. But, I keep forgetting that India was still in its dawning stage and hence it is wrong of me to except modernism from those days. I guess everything needs a start, and we must feel gratitude for at least having that start.
সুনিলের প্রথম আলো পড়লাম। গতবছরে পড়েছিলাম সেই সময়। সেই সময়ের রিভিউ না লেখাতে বেশ কিছু চরিত্র ভুলে গেছি। রিভিউ লেখাটা সময়ের ব্যাপার। একটা রিভিউ লিখতে যতক্ষন লাগে, সেসময়ে ১০০ পেজের একটা বই শেষ করা যায়।
প্রথম আলোর সময়কাল লেখক ১৮৮৩ সাল থেকে শুরু করেছেন। ৩০ বছরের একটা সময় কাল। সেই সময়েরও একই সময় অর্থাৎ ৩০ বছর। যদিও সেই সময়ের পরের খন্ড প্রথম আলো নয়, তবুও তার গুরুত্ব রয়েছে এবং একটা ধারা রয়েছে। উপন্যাস মাত্রই উপন্যাস, লেখকের কল্পনা বাস্তবের সংমিশ্রনে একটি অধ্যায়। সত্য-মিথ্যে। ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসে একটা বিষয় উল্লেখ্য যে চরিত্র গুলো বাস্তব, কিছু কথাও চরিত্রের কথা, তারপর সব লেখকের!
প্রথম আলো উপন্যাসের শুরু হয়েছে ত্রিপুরাতে। ত্রিপুরা স্বাধীন রাজ্য, যা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রীত ছিলনা। এবং পরবর্তিতেও একটা চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সাথে মিলিত হয়েছে। এখানকার রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য। এই রাজা কবিতা লিখতেন, ছবি আঁকতেন, শিকার করতেন। এমনকি ভারত থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন একটি রাজ্যের রাজা সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তেন। সুদূর কলকাতাতেও রবীন্দ্রনাথের কাছে উপহার পাঠাতে দেরি করেন নাই। এই পর্বেই আছে রাধাকিশোর, যিনি পরবর্তী ত্রিপুরার রাজা। এখানে আরেকটা চরিত্র সৃষ্টি করেছেন লেখক, ভরত নামে।
সুনিল বলেছেন এই চরিত্রটা বেশিদূর নেওয়ার পরিকল্পনা তার ছিলনা। তবুও চরিত্রটি এগিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত একটি অন্যতম প্রধান চরিত্রের ভুমিকা করেছে। ভরত চরিত্রটি একটি গরিব চরিত্র। কাপুরুষতার কাপড়ে জড়ানো ভিতু একটি জন্তু। তার কর্মগুলোও সেরকম, একপ্রকার বুদ্ধিহীন ব্যাক্তি। কিন্তু লেখক তার দেশবোধের মাধ্যমে মহান করে তুলেছেন। এখানে শশীচরন, এবং ভুমিসূতাকে পাওয়া যায়।
ভুমিসূতা চরিত্রটাও কাল্পনিক। উড়িষ্যায় এক মেয়ে নিঁখোঁজের সংবাদ পড়ে সুনিল এই চরিত্র সৃষ্টি করেন। উপন্যাসে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র, এবং আকর্ষনীয় চরিত্র। উপন্যাসে খুব শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে লেখক ভুমিসূতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
উপন্যাসে সুনিল চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে নায়ক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। পারেন নাই। এটা সুনিলের ব্যর্থতা নাকি রবি ঠাকুরের তা ভাববার বিষয়। রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে বড় মাপের লেখক। তবে তিনি বড় মাপের মানুষ হতে পেরেছিলেন কিনা সেটা প্রশ্ন! ২য় খণ্ডের উৎস্বর্গ পত্রে রবি ঠাকুরের নাম। তা বড় লেখকদের হিরো হিসেবে দেখতে অনেকেই অভ্যাস্ত। সমস্যা হলো হিরোদের আদর্শ, দর্শন, সংস্কৃতি অনেকেই নিজের মধ্যে ধারণ করেন। সেক্ষেত্রে তার ভুলগুলোকে মিথ্যে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় তৎপর! কিংবা কিছু সত্য উপেক্ষিত থাকে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগরকে সেই সময়ে আমরা যেভাবে দেখি, তার নায়কসুলভ কর্মকান্ড, আচার-আচরন। তা প্রথম আলোতে রবীন্দ্রনাথের কাছে এসে অনেকটা মিয়্রমান হয়ে গেছে।
উপন্যাসটা এমন একসময় কাল নিয়ে গড়ে উঠেছে। যখন বাংলা সমাজ শিক্ষা দিক্ষায় উন্নত হচ্ছে। বাংলা বলতে কলকাতা। মুসলিমরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে বরাবরই দুরে থেকেছে। তারা ইংরেজ শাসনকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে নাই। এসময় কলকাতায় নাট্য যুগের স্বর্ণযুগ চলছিল। গিরিশচন্দ্রের হাত ধরে তা ছড়িয়ে পড়ে। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল। যিনি হিন্দুদের দেবী কালীকে বলতেন - সাঁওতালি মাগী। স্বয়ং নমরামবৃষ্ণের সামনে। রামকৃষ্ণ চরিত্রটি দাগ কাটার মতন। একজন মহান মানুষ। শ্রদ্ধেয়।
উপন্যাসে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, অর্থাৎ ঠাকুরবাড়ির গোটা পরিবার। গোটা পরিবারের বেশ বিবরন রয়েছে। কদম্বরী দেবীর মৃত্যু, জিতেন্দ্রনাথের অসহায় হয়ে যাওয়া, জ্ঞাননন্দীনির ইংরেজ শিক্ষা। স্বর্ণকুমারি দেবির সাহিত্য সমাজ সংস্কার। ভবতারিনী দেবি, তার ছেলেমেয়ে। তাদের বিবাহ। এবং সর্বপরি সরলা দেবীর কাজকর্ম। এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা করা যায়। দেবেন্দ্রনাথ তো আছেনই।
সুনিলের "সেই সময়" বইটাতে দ্বারকানাথ ঠাকুরকে মহাঋষি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তার নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে কিছু লেখেননি। তিনি নীলকরদের প্রশংসা করেছেন, প্রজাদের নীলচাষে বাধ্য করেছেন। এমনকি তাঁর পঁচিশের অধিক নীল ফ্যাক্টরি ছিলো। ছিলো ৩০ এর অধিক পতিতালয় এবং অাফিম এর বিজনেস। এসবের কিছুই উল্লেখ নাই। তবে সেই সময়ে আকর্ষনীয় চরিত্র হিসেবে বিদ্যাসাগর এবং মধুসূদন যথেষ্ট ফুটে উঠেছে!
অতি রবি বিদ্বেষী কেউ কেউ দুটি নারীর মৃত্যুর জন্য দোষারোপ করেন তাকে। নিজের বউঠান এবং স্ত্রী। ভবতারিণীকে বিয়ের ৪ মাস পর আত্মহত্যা করলেন কাদম্বরী। এদিকে ভবতারিণীর প্রতি রবি ঠাকুরের উপেক্ষা ছিল অন্যতম। এবং ডাক্তারের কাছে না নিয়ে নিজেই চিকিৎসা করা। অবহেলা!!
জগদিশ চন্দ্র বসু। জগদীশ চন্দ্রবসুকে ত্রিপুরার মাহারাজ রাধাকিশোর প্রচুর অর্থ দিয়ে তার গবেষনার সাহায্য করেছেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেও করেছেন। জগদীশ একটি পরিচ্ছন্ন চরিত্র। আছে নরেন্দ্র অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি পাশ্চাত্যে জনপ্রিয়তা পান এবং দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
উপন্যাসকে যদি উপন্যাসের মতো করে দেখি তাহলে তা পড়া পর্যন্তই শেষ। কিন্তু তা থেকে যদি, শিক্ষা, সংস্কার, ঐতিহ্য, লেখকের প্রকৃত চিন্তা-চেতনা সহ নানান জিনিস নিতে গেলে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যায়। এই উপন্যাস নিয়েও নানান আলোচনা করা যায়! এই উপন্যাসটা অত্যান্ত চমৎকার নিঃসন্দেহে। ইওরোপের মডার্নিজমের পরশ হলো এই জাতীয় উপন্যাস। রোমান্টিক অতীত খুঁজে ফের��। তাকে গ্লোরিফাই করা। সুনীল স্বার্থক এই কাজে।
Gangopadhyay is a king of Historical fiction. I never thought I would like this genre so much, but First Light is an immense piece of work. This is as good as (if not better) than its predecessor Those Days. Grand! Magnum opus!
সেই সময়, একা এবং কয়েকজন এসমস্ত বই গপগপিয়ে পড়লেও ১১৩৪ পৃষ্ঠার এই বৃহৎ কলেবরের উপন্যাস এত সহজে পড়া সম্ভব হয়নি কারণ হিস্টরিক্যালি বইটি বেশ এনরিচড।যেমন বৃহৎ প্রথম আলোর পরিসর ঠিক তেমনি কাহিনি চরিত্রায়ন সময় সবকিছু মিলিয়ে একটি মহাকাব্য ই সুনীল লিখেছে। ঐতিহাসিক এই উপন্যাসের ৯০ শতাংশ চরিত্ররা এসেছে ইতিহাস থেকে। প্রথম আলো উপন্যাস রচনার পটভূমি ১৮৮৩ থেকে ১৯০৭ সাল। সময়ের হিসাবে বলতে গেলে প্রায় দুই যুগ,আর ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের অন্ধকার অধ্যায়কে স্তিমিত করতে প্রদীপের প্রথম আলো জ্বেলেছিল সেই সময়ের নবজাগরণের নায়কেরা। প্রথম আলোর যাত্রা শুরু হয় পরাধীনতার শেকল পরা সমগ্র ভারতবর্ষের একমাত্র স্বাধীন রাজ্য ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্র মানিক্যের হাত ধরে। ত্রিপুরা রাজ্যের সূত্র ধরে গল্পের বিশেষ চরিত্র রাজা বীরচন্দ্রের অবৈধ পুত্র ভরত। রাজা বীরচন্দ্র ছিলেন অতিশয় সৌখিন, সাহিত্য - কাব্য অনুরাগী।শশীভূষণ ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের একজন নগণ্য শিক্ষক। ত্রিপুরা থেকে গল্প এগিয়ে চলে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সন্তান রবীন্দ্রনাথের কাছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সুনীল উপন্যাসের বিশেষ থেকে বিশেষ আসনে স্থান দিয়েছেন;দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন, সাহিত্যজীবন ও কর্মজীবন। উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ যখন কাঁচা হাতে লেখালেখি করতেন ঠিক তখন থেকে লেখায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠা, তাঁর মনস্তত্ত্ব, তাঁর দাম্পত্য জীবন, তাঁর ভাবানুভূতি, পছন্দ অপছন্দ, উপন্যাস-গান-কবিতা সবমিলিয়ে সার্বিক রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাঙ্গ জীবনটাই যেন সাবধানে সংক্ষিপ্ত আকারে সুনীল লিখেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথ তখনকার সময় থেকে মনস্তত্ত্বের দিক থেকে বেশ আধুনিক ছিলেন সেই সাথে বনেদি ঠাকুর পরিবারের ঔজ্জ্বল্য তাঁকে অনন্য একটি উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। প্রথম আলো পড়লে শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ নয় বরং ঠাকুরবাড়ির বেশ খুঁটিনাটি অবধি জানার সুযোগ মেলে। মহাকাব্যে রবীন্দ্রনাথ, জ্যোতিন্দ্রনাথ, কাদম্বরী দেবী, মৃণালিনী দেবী, জ্ঞানদানন্দিনী, দ্বারকানাথ, দেবেন্দ্রনাথ, ইন্দিরা, সরলা সহ আরো বহু পরিচিত নামের সাথে আরও পরিচয় বাড়িয়ে দেবে। উপন্যাসে স্থান পেয়েছে বিশিষ্ট হিন্দু যোগসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস। উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে তাঁর জীবন, আধ্যাত্মবাদ আর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি। রামকৃষ্ণ পরমহংসের তীব্র ভালোবাসার ফলে নগণ্য এক গরীব যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার দৃশ্যপট তুলে এনেছেন সুনীল। পরবর্তীতে বিবেকানন্দের প্রবাস জীবন, তাঁর মতাদর্শ, চিন্তা, যুক্তিবাদ ও আধ্যাত্মবাদ নিয়ে সময় গড়িয়ে চলে। বিবেকানন্দের ভারত প্রত্যাবর্তনের পর আইরিশ তরুণী নিবেদিতা স্বামীজির দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং রামকৃষ্ণমিশন স্থাপনের উদ্যোগ নেন। উপন্যাসে স্থান পেয়েছে তৎকালীন সমাজের থিয়েটারের নাট্যকার ও কলাকুশলীদের। বিখ্যাত গিরীশ ঘোষ,অমরনাথ,বিনোদিনী দাসী, অর্ধেন্দু শেখর,অমরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ অনেকেই তাদের মঞ্চ নাটক দিয়ে মাতিয়ে রাখতো সমাজকে। ইংরেজদের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে বলগঙ্গাধর তিলক, হেমচন্দ্র বসু ,সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, জানকীনাথ ঘোষাল, সরলা ঘোষাল, বারিন্দ্রকুমার ঘোষ প্রমুখ প্রতিবাদের সলতেতে আগুন ধরিয়েছিলেন। উপন্যাসে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ টগবগে কিশোর ক্ষুদিরামের উপস্থিতিও দেখা যায়।প্রতিবাদের এ ভাষা পরবর্তীতে যোগ সূত্রতা স্থাপন করে মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে। কংগ্রেসের অধিবেশন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে নানান ঘটনার মাধ্যমে।ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি লাভের আশায় যারা প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল সেই সমস্ত ইতিহাসের উঁচু আসনে স্থান পাওয়া নেতাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছেন লেখক। দেশ ও জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গে স্বাধীনতাকামী মানুষের একেরপর এক ভূমিকা রাখতে দেখিয়েছেন তিনি। প্রদীপে প্রথম আগুন জ্বালিয়ে মানুষের মাঝে স্বাধীনতার স্বপ্নের বীজ বুনেছিল যারা তাদের যেন ইতিহাস থেকে বাস্তবে তুলে এনেছেন লেখক। উপন্যাসের আরেকটি বিশেষ দিক ধর্ম এবং বিজ্ঞান। তৎকালীন হিন্দু সমাজের ভ্রান্ত ধারনা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন নানাদিক লেখক তুলে এনেছেন। মানুষের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণাকে বদলাতে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম চরিত্র ডাক্তার মহেন্দ্রলাল। এছাড়াও উপন্যাসে বিজ্ঞানমনস্ক গবেষক জগদীশ চন্দ্র বসুর বিজ্ঞানচর্চা , বিদেশে গবেষণা উপস্থাপন ও বাঙলার মানুষের বিজ্ঞান চর্চার প্রতি অনিহা, বিজ্ঞানীকে প্রাপ্য সম্মান দিতেও তারা প্রায়শই ব্যার্থ এই দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। উপন্যাস যখন নতুন শতাব্দীতে পা দেয় তখন বিজ্ঞানের যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ভারতবর্ষকে আচ্ছন্ন করে। বিজ্ঞানের দরুন মোটরগাড়ি, বিদ্যুতের ঝলকানি যেন ভারতের মানুষের কাছে এক অলৌকিক ঘটনা। উগ্র হিন্দুত্ববাদ, মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি ইত্যাদি ধর্মভিত্তিক সমস্যার ফলশ্রুতিতে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়শই দাঙ্গা লাগতে শুরু করে উপন্যাসের শেষের দিকে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বাঙালির শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বঙ্গভঙ্গের প্রশ্ন উত্থাপিত করা হয়।বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে যখন বাংলার মানুষের ধর্মের ভিত্তিতে একই প্রশ্নে দুই রকম উত্তর আসে তখন বড়লাট divide & rule পলিসি গ্রহণ করে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করে। এরই পরিপ্রক্ষিতে শুরু হয় বঙ্গভঙ্গরদ আন্দোলন। ভারতবর্ষ হয়ে পড়ে অস্থিতিশীল। গল্পের বিশেষ কল্পিত নারী চরিত্র ভূমিসুতা। ভূমিসুতার জীবন যেন শুধু দুঃখ দিয়ে ভরা। একদম ছোট বয়স থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে অসংখ্য পথ পাড়ি দেয় সে, যাত্রাপথের মাঝে ভরতের সাথে পরিচয়, আশ্রয় এবং দিনশেষে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক গাঢ় হয়ে ওঠে। কল্পিত ভরত ভূমিসুতা এই দুই নরনারীর চরিত্র দুটি গল্পের গতি বাড়িয়ে দেয়। উপন্যাসের রাজনৈতিক শিল্প সাহিত্য ছাড়াও সেই সময়টায় ঘটে যাওয়া অসংখ্য দুর্ঘটনায় কবলিত হয় ভারতবর্ষ। ইংরেজ আগ্রাসনের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প ও সংঘাত বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য একেরপর এক কাজ করে যাওয়া যেন খুব কঠিন একটি কাজ কেননা বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভ্যাসকে আঁকড়ে ধরে কোনমতে বাঁচতে চাওয়া। পরিবর্তনের প্রতি ভয়, নৈরাশ্যবাদ ও ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়া মানসিকতা, কর্মস্পৃহার অভাব ইত্যাদি বিষয়াদি আমার মনে হয়েছে সেই ভারতবর্ষ থেকে এখন অবধি চলমান। বাঙ্গালীর মনস্তত্ত্ব নিয়ে একটি এক্সিলেন্ট কোট : "ভরত বলল, বাঙালিরা কি রকম জাত তুমি শোনো তাহলে। বাঙালিরা ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে ধর্মসংস্কারের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে গেলেই গেল গেল রব তোলে , কিন্তু এ বাঙালিরাই ব্যক্তিজীবনে ধর্মের প্রায় কোনই নির্দেশ মানে না। সততা, পবিত্রতা, সেবা এইসব ব্যাপারে তারা প্রায় অধার্মিক। বাঙালিরা খুব পরের সমালোচনা করে, পরনিন্দা করে কিন্তু আত্ম সমালোচনা করে না। বাইরে খুব উদার মত প্রচার করে কিন্তু নিজের পরিবারের মধ্যে অতিরক্ষণশীল। খবরের কাগজে তর্জন গর্জন দেখলে মনে হবে খুব সাহসী আসলে অত্যন্ত ভীরু। নিজের মা বোন স্ত্রীকে যদি কোন দস্যু চোখের সামনে ধর্ষণ করে যায় তাহলেও বাধা দিতে সাহস করবে না। বাঙ্গালীদের কিছু কিছু গান-বাজনা সত্যি ভালো বটে কিন্তু কত রকম বিকট শব্দকে যে এই সমাজ প্রশ্রয় দেয় তা ঠিক নেই। তুমি তো এখন মাঝরাতে বল হরি হরি বোল রব শোনোনি হরির নাম শুনলে ভয়ে পেলে চমকে ওঠে। মোট কথা হল বাঙালিরা বাইরে যতই উদাস শিক্ষাভিমানী রুচিশীল ভাব দেখাক আসলে তারা ভেতরে ভেতরে ভন্ড। মুখে যা বলে নিজে তা বিশ্বাস করে না এমন ভন্ড তুমি আর কোথায় পাবে!" Personal Observation: ব্যক্তিগতভাবে উপন্যাসটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। প্রতিটি ঐতিহাসিক চরিত্রদের এভাবে পাশাপাশি রেখে ইতিহাসের আদলে উপন্যাস নির্মাণ আসলেও অনবদ্য একটি কাজ। সুনীলের লেখা সবসময় গপগপিয়ে পড়া যায় ভেবেছিলাম তবে সত্যি বলতে প্রায় ১২০০ পেজের বই টা পড়তে আমার বেশ সময় লেগেছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রত্যেকটি চরিত্রকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লিখেছেন বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ এবং স্বামী বিবেকানন্দ। আলাদা করে বলতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দ র জীবনধারা, আর থিয়েটারের বিষয়াদি কিছু ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় বিস্তৃত হওয়ায় এটি বিরক্তিকর লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এত বৃহৎ পরিসর মনে হয় না হলেই ভালো হত।এদিকটা একটু সংক্ষেপ করে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার অংশটুকুকে আরেকটু বেশি প্রাধান্য দেয়া যেত। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করলাম সেই সময় উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের জন্ম এরপর প্রথম আলো এত বড় উপন্যাসে সমস্ত চরিত্ররা রবীন্দ্রনাথ কে ঘিরে আছে অথচ একটি বারও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মায়ের নাম গন্ধ কিছুই পেলাম না। এটি আমার অদ্ভুত লেগেছে ( নাকি আমি ই মিস করে গেছি বুঝলাম না)। কাল্পনিক দুই চরিত্র ভরত- ভূমিসুতার প্রণয় বিচ্ছেদের গল্প পাঠককে গল্পের শেষ অবধি পর্যন্ত ধরে রাখতে বাধ্য । তবে ভরতের দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মানো জিনিসটা গল্পের সাথে খাপ খেয়ে গেছে কিন্তু ভুমিসুতার বেলায় লেখক যেন একটু বেশিই biased হয়ে পড়েছিলেন, ক্ষেত্রবিশেষে বাস্তবতা বিবর্জিত লাগছিল। আর বেসিক্যালি সেই সময়ের পর প্রথম আলোতে ও তেমন করে বাঙ্গালী সমাজে নবজাগরণ বা রেনেসাঁর দেখা পেলাম বলে মনে হলো না। শিল্প সাহিত্য আধুনিকতা ও প্রযুক্তির যেটুকু ছটা ভারতবর্ষ ছুঁয়েছিল তা শুধুমাত্র ছিল উচ্চবিত্ত জমিদার বা রাজা কিংবা ইংরেজদের গন্ডির ভেতর। তাঁদের আরাম আয়েশ সুযোগ সুবিধা ইত্যাদির দেখভাল করা ছিল দরিদ্র শ্রেণী পেশার মানুষের কাজ। দেশের খেটে খাওয়া মজুর, কৃষক বা দরিদ্র শ্রেণীর জীবনে কোনো revolution দেখা যেত না। ইংরেজদের দুশো বছরের শাসনকালের অন্ধকার অধ্যায়ের চিরনির্বাপন করতে মুক্তির পথ দেখানোতে প্রথম আলোক প্রজ্জ্বলন করেছিল স্বাধীনতাকামী মানুষেরা। সেই সূত্রে উপন্যাসের নামকরণ শতভাগ সার্থক। এত বিশাল বইয়ের অসংখ্য চরিত্র আর ঘটনাবলীর মধ্যে আমার কাছে ত্রিপুরা রাজ্যের সৌন্দর্য্য, রাজার ত্রিপুরা রাজ্যের প্রতি ব্যাকুলতা এসমস্ত ব্যাপার গুলো বেশ ভালো লেগেছে। এত বড় উপন্যাসের সবকিছু নিয়ে লিখে শেষ করা সম্ভব না। একজন বলেছিল সুনীলের তিনখান বই না পড়লে ষোলআনা বাঙালিয়ানা ঠিকঠাক হয়ে ওঠে না। কথা টা মনে হয় সত্যিই! ভারতবর্ষের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে শুরু করে কলকাতা হয়ে ধারাবাহিকভাবে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়া জাতীয়তা ও জাতিসত্ত্বাবোধকে জাগিয়ে তুলে, বাঙ্গালী সাহিত্য - সংস্কৃতির কর্ণধারদের নিয়ে বাঙালির ভালো লাগার মতই বেগবান ঐতিহাসিক মহাকাব্য প্রথম আলো। ইচ্ছা ধৈর্য্য আর শক্তি( বইয়ের ওজন অনেক) থাকলে অবশ্যই পড়বেন।
প্রায় ১২০০ পৃষ্ঠার বিশাল উপন্যাস ‘প্রথম আলো'। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর ঐতিহাসিক উপন্যাস গুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস এটি। ইতিহাস ও কল্পনার এক অসাধারণ মিশেলে তৈরি হয়েছে এই মাস্টারপিসটি। দীর্ঘ প্রবাহিত এই উপন্যাসটির কাহিনী শুরু হয় ত্রিপুরার রাজা বীর চন্দ্র মাণিক্যের গল্প দিয়ে। ধীরেধীরে উপন্যাসের কাহিনী যত এগুতে থাকে ততই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশ চন্দ্র বোস, নটী বিনোদিনী, গিরিশচন্দ্র, স্বামী বিবেকান্দের মত ইতিহাস বিখ্যাত চরিত্র গুলো বইয়ের পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠে।উপন্যাসে উঠে আসে নিজ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য লর্ড কার্জনের নোংরা রাজনীতি । সম্পূর্ণ উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয় দুটি কাল্পনিক চরিত্র ভরত ও ভূমিসুতার মাধ্যমে। এই দুটি চরিত্রকে লেখক এতটাই জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন যে একটা সময় আমার বারবার মনে হচ্ছিলো যেনো তাদের দুজনের একটা সুন্দর পরিনতি হয়, কেননা, এ উপন্যাসের কোনো চরিত্রই যে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারেননি সেটা চরিত্রগুলোর নাম শুনলেই বুঝতে পারা যায়, অন্তত যারা নিয়মিত লেখাপড়া করেন তারা অবশ্যই জানতে পারবেন। বইটি পড়ার পর আমার ভিতর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করা শুরু করে। এতদিন তার সম্পর্কে যা শুনে এসেছি বা জেনেছি তার অনেকাংশই ভুল প্রমাণিত হয়। যদিও লেখক এখানে সরাসরি কিছুই বলেননি, এটা সম্পূর্ণ পাঠককে অনুধাবন করতে হয়। তবে এতটুকু বলতে পারি, রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি আমার একটা ভালোলাগা কাজ করা শুরু হয় এই বইটি পড়ার পর থেকেই। বইটির দ্বিতীয় খন্ডটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই উৎসর্গ করা হয়েছে। গান্ধী, বলরাম বসু প্রমুখের মত ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কেও এই উপন্যাসে বর্ণনা করা হয়েছে। পরিশেষে, এত বিরাট উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করাটা খুবই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এই উপন্যাসটা পড়ে বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে পাঠক গল্পের ছলে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। আর উপন্যাসের তথ্য সম্পর্কে লেখক উপন্যাসের শেষে কিছু বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছেন, তাই তথ্যগুলোর সত্যতা নিয়ে খুব একটা সন্দেহ থাকার যৌক্তিকতা আছে বলে আমার মনে হয় না। HAPPY READING
এই বইটি এক কথায় অনবদ্য। আমি সাধারণতঃ খুব কম বইকেই ৫ তারা দিয়ে থাকি। কিন্তু এই বইটিকে ৫ তারার কম দিলে অত্যন্ত অবিচার করা হবে. আমার এই ক্ষুদ্র ৩০ বছরের জীবনে কোনোদিন এই রকম উপন্যাস পড়েছি বলে মনে হয়না। খুব সম্ভবত এটি আমার পড়া সব চেয়ে দীর্ঘায়তন উপন্যাস। প্রথম যেদিন বইটি দেখেছিলাম সেদিন দেখে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম যে এত মোটা বই পড়ার ক্ষমতা বা ধৈর্য আমার আদৌ আছে কিনা। ভয়ে ভয়ে পড়তে শুরু করে দেখলাম অদ্ভুত একটা ছন্দ আছে এই উপন্যাসের প্রতি ছত্রে। নিজের অজান্তেই হুড়মুড় করে দেখলাম ২০ পাতা পরে ফেলেছি। তার চেয়েও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে বইটি পড়তে শুরু করলে মাঝ পথে বই বন্ধ করে রেখে দেওয়া খুবই কঠিন। সুনীলবাবুর বলীয়ান লেখনীতে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র গুলি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গেছে ঐতিহাসিক চরিত্রগুলির সাথে। সুনীলবাবুর গল্প বলার মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক পটভূমি যেন কালোত্তীর্ণ হয়ে ব���্তমান সময়ের প্রবাহের সাথে মিশে গেছে। বইটি পড়ে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস নিয়ে প্রচুর আগ্রহ এবং উদ্দীপনা তৈরী হয়। আমার চিরকালের একটি অসম্ভব প্রিয় উপন্যাস হয়ে থাকবে প্রথম আলো। একজন মহান সাহিত্যিকের চরণে আমার শ্রদ্ধার্ঘ জ্ঞাপন করে আমার খাপছাড়া রিভিউটি পোস্ট করলাম।
বাঙলার নবজাগরণ বা উনিশ-কুড়ি শতকের বাঙালির ভাবনা-বোধের এক প্রশস্ত ক্যানভাস বলা যেতে পারে ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসটিকে। চরিত্র হিশেবে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো আমাদের কাছে আজকাল উপন্যাসের চরিত্রের মতোই অধরা হয়ে গেছেন আজকাল। তাঁদের দর্শন বা চিন্তার সুনীল আকাশের কথা না হয় বাদই দিলাম। সেই হিশেবে এই উপন্যাসটি আমার প্রিয়, কেননা এখানে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়, যাঁরা আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় কিন্তু আমরা নিজেদের মুদ্রাদোষে যাঁদের স্মরণ করতে পারি না।
মনে রাখার মতো অসাধারণ বই যার প্রথম দেড়শ পাতা বাদ দিয়ে দিলে কোনই ক্ষতি নেই। লেখক হয়তো দেড়শ পাতা পর্যন্ত লিখে ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে ফেলার পর লেখার প্লট বদলাতে মনস্থ করেছিলেন, কিন্তু ততদিনে অতোগুলো পাতা লিখে ফেলার কষ্ট মাথায় রেখে বই আকারে প্রকাশের আর সেটুকু বাদ দেন নি।
জীবনে বইয়ের একটা নারী চরিত্রের প্রেমেই আমি পড়েছি। এ বইয়ের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র ভূমিসুতা।
গঙ্গার ঘাটের সমাপ্তিটা গোঁজামিল। লেখক নিজের তৈরি চরিত্র দুটোর প্রতি মায়া পরবশ হয়েই এমন সমাপ্তি টেনেছেন।
মনে হচ্ছিলো অনন্তকাল ধরে পড়েই যাচ্ছি, পড়েই যাচ্ছি। শেষ করার পর মনে হলো যেনো একটা আস্ত জীবন পার করে আসলাম। সুনীল খুব নিপুণ হাতে ইতিহাসের ফাঁক-ফোঁকড়ে নিজ চরিত্রগুলোকে বিন্যস্ত করেছেন। রবি থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ে উঠার গল্প, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মব্রত, ইংরেজদের শাসন-শোষণ, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, দেশভাগ, রাজনীতি, বিপ্লব- সবকিছু ছাড়িয়ে তবু প্রথম আলোকে ভরত আর ভূমিসুতার প্রেমের উপন্যাস বলা যায়
Finally, I take the audacity to write a synopsis of this magnificent novel! I ended the book during lockdown period. 'First Light' is the English translation of Sunil Ganguly's remarkable narrative 'Prothom Alo' (প্রথম আলো). 'Prothom Alo' is a Bengali novel & the writer of this book Sunil Ganguly was one of the most important personalities in Bengali literature of his time. This book is translated into English by Aruna Chakravarty in 2001 known as 'First Light.' I read 'Prothom Alo' during the pandemic time and at that time I found that it is also translated into English. I've a dream that I'd read the translated version one day. This book will always be close to my heart.
The book 'First Light' encompasses the society of Bengal in the later part of the nineteenth century. This period is often referred to as the period of the 'Bengal Renaissance'. This period saw several great personalities in action in this region of pre-independence India. The story of the novel centers on many historical figures including Rabindranath Tagore, Swami Vivekananda, Ramakrishna, Bankim Chandra Chattopadhyay, Sister Nivedita, the first female doctor Kadombini Ganguly, George Curzon, Sir Jagadish Chandra Bose, the famous play writer Girish Ghosh, the notable theatrical artist Binodini Dasi, Biharilal Chakrobarty etc.
Vivekananda & Rabindranath are mere characters. Sunil Ganguly has mixed the truth with the imagination of his writings in this book. Even a well-known event has given a new perspective in this book. Various historical events of the second half of the nineteenth century have been published in this book in a very beautiful and simple way. However, the lion's share of pages are dedicated to the Ramakrishna-Vivekananda movement and the Tagore family. Another interesting aspect of the novel is the description of the independent state-Tripura at that time, the lifestyle of Raja Birchandra Manikya of Tripura and his successors, and their interest in art and literature. This novel starts with this royal family of Tripura.
The saint Ramakrishna and his disciple Swami Vivekananda are presented in a very beautiful way where we have found many myths. To me, the description of these two extraordinary persons was the most impressive. Later, I was also impressed by Sister Nivedita (Margaret Noble), whose journey from her Irish roots to India is a story in itself.
Rabindranath Tagore is presented in a humane form too, rather than a divine presence which is his more commonly found avatar in the Bengali and Indian psyche. He comes with his magnetic personality, his occasional frailties, and of course, with his superhuman genius. The episodes of Rabindranath with his scientist friend Jagadish Chandra Bose present us with another less-discussed aspect of this great poet's character. 'First Light' also acquaints us with Rabi, the younger brother; Rabindranath, the husband of Mrinalini Devi and the father of their children.
This splendid novel also highlights the life struggle of the 'Flower of the Native Stage'- Binodini Dasi/Nati Binodini, who spent her entire belongings to establish a theatre in Bengal. But later she was betrayed by the patriarchal society of that era and ever by her mentor Girish Chandra Ghosh, the 'Father of Bengali Theatre'. Ups and Downs of her life and her connection with Tagore Family are portrayed wonderfully in this book. This paperback shows the contribution of Girish Ghosh as well. He is popularly known as the 'Garrick of Bengal', who rose from alcoholic intoxication to divine intoxication.
Although the novel is fictional, it introduces us to all the famous people of the late 19th and early 20th centuries. Besides, it gives an idea about the education system, business, drama-literature, revolution, and position of women in the society of that time. It also gives an idea about the progress of women's education and women's rights in society at that time. It clearly expresses patriotism and love of Bengalis in Bengali literature.
Mostly, 'First Light' is a riveting read. Sunil Ganguly weaves a story around history. I just wonder how a book of this vividness and liveliness can be written by a man! Probably, this is the toughest book because of the volume and number of plots. It is an excellent book covering a time when Bengal was at its peak. All the characters are already known to all.
Most of us think that History is a boring subject. But if delivered well, anyone will fall in love with history and learn from it. This book made me fall in love with History again. All the characters are alive, I've known them, studied about them, and memorized their contribution to society. In the end, I just want to say that 'First Light' is the first full-fledged novel to organize the revision and retrial of our country's past.