রাহে বেলায়াত-এর বিষয়বস্তু পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত ছিল। এবার নতুন দুটি অধ্যায় সংযোজন করে গ্রন্থটিকে সাত অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। সকল অধ্যায়েই কমবেশি পরিবর্তন, সংশোধন বা সংযোজন করা হয়েছে। বিশেষ করে “সালাত ও বেলায়াত” নামে নতুন একটি অধ্যায় তৃতীয় অধ্যায় হিসেবে সংযোজন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে সালাত বিষয়ক ‘রাহে বেলায়াতের’ পূর্ববর্তী সংস্করণের যিকর ও দু‘আ গুলোর সাথে আরো কিছু যিকর ও দু‘আ সংযোজন করা হয়েছে এবং সহীহ হাদীসের আলোকে সালাত আদায়ের মাসনূন পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। “রোগব্যাধি ও ঝাড়ফুঁক” শিরোনামের ষষ্ঠ অধ্যায়টি সম্পূর্ণ নতুন সংযোজন। রোগব্যাধি জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। দীর্ঘদিন যাবত অগণিত পাঠক বিভিন্নভাবে তাদের বিভিন্ন সমস্যা, রোগব্যাধি, বিপদাপদ ইত্যাদির জন্য সুন্নাতসম্মত দু‘আ যিকর ও চিকিৎসা পদ্ধতি জানতে চাচ্ছেন। কারণ তাবীয-কবয ইত্যাদির শিরক সম্পর্কে অনেক আলিমই কথা বলছেন। আমি আমার ‘ইসলামী আকীদা’ গ্রন্থেও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। পাঠকগণ তাবিয-কবয বর্জন করতে চান। কিন্তু বিকল্প সুন্নাত পদ্ধতি তো তাদের জানতে হবে। আর এজন্যই এ অধ্যায়টি সম্পূর্ণ নতুন সংযোজন করা হলো। মহান আল্লাহর কাছে আমরা সকাতরে দু‘আ করি, তিনি যেন এ সকল সুন্নাত-নির্দেশিত দু‘আ ও ঝাড়ফুঁকের ব্যবহারকারীদেরকে পরিপূর্ণ উপকার ও কল্যাণ প্রদান করেন।…বিস্তারিত জানতে বইটি পড়ুন।
ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর ছিলেন একাধারে ইসলামী চিন্তাবিদ, টিভি আলোচক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক আলেম, গবেষক ও লেখক ।
তিনি পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন ও এনটিভিসহ বিভিন্ন টিভিতে ইসলামের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। ফরেন টেলিভিশন চ্যানেল আইটিভি ইউএস-এর উপদেষ্টা ছিরেন তিনি । এছাড়াও তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সিম্পোজিয়াম, সেমিনার, মসজিদের খুতবায় ও টিভি আলোচনায় খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দেশের সহজ-সরল মুসলমানদের ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়গুলো আলোচনা করে জনসচেতনতা তৈরি করে আসছিলেন।
এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বের জন্ম হয় ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তার পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান ও মা বেগম লুৎফুন্নাহার।
তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন । এরপর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে ফাজিল ও ১৯৭৯ সালে হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করার উচ্চতর শিক্ষার জন্যে সৌদি আরব গমন করেন। রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৬ সালে অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রিয়াদে অধ্যয়নকালে তিনি বর্তমান সৌদি বাদশাহ ও তৎকালীন রিয়াদের গভর্নর সালমানের হাত থেকে পর পর দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ করেন। সৌদিতে তিনি শায়খ বিন বাজ বিন উসায়মিন, আল জিবরিন ও আল ফাউজান সহ বিশ্ববরেণ্য স্কলারদের সান্নিধ্যে থেকে ইসলাম প্রচারে বিশেষ দীক্ষা গ্রহণ করেন।
রিয়াদে অধ্যয়নকালে তিনি উত্তর রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে প্রায় তিন বছর কর্মরত ছিলেন।
লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৯৯ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইসলামি উন্নয়ন ও আরবি ভাষা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
২০০৯ সালে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।
ঝিনাইদহ শহরের গোবিন্দপুরে আল ফারুক একাডেমি ও আস সুন্নাহ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন বরেণ্য এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। সেখানে ছেলেমেয়েদের হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব হিসেবে কাজ করেছেন শিক্ষা ও ঝিনাইদহের চ্যারিটি ফাউন্ডেশনে, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইনস্টিটিউটের।
এছাড়াও তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস হিসেবে সহীহ বুখারীর ক্লাস নিতেন। তিনি ওয়াজ মাহফিলের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন আলোচক ছিলেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে তিনি মানুষকে শোনাতেন শাশ্বত ইসলামের বিশুদ্ধ বাণী।
বাংলা ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সমাজ সংস্কার, গবেষণা ও শিক্ষামূলক প্রায় পঞ্চাশের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- এহয়াউস সুনান, তরিকে বেলায়েত, হাদিসের নামে জালিয়াতি, ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ইত্যাদি।
ফুরফুরা শরীফের পীর আবদুল কাহহার সিদ্দীকির মেয়ে ফাতেমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
রাহে বেলায়েত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একটা অবশ্যই পড়ার মত একটা বই। জাহাঙ্গীর স্যার পুরো বই জুড়ে একজন সাধারণ মুসলমান তার প্রতিটি ইবাদাত কিভাবে করবেন কত টুকু করা উচিত, কতটুকু ছাড়া উচিত, সুন্নাহ মানা কেন এত গুরুত্বপূর্ন সব মিলে একটা প্যাকেজ। পুরো বইটি অসাধারণ ভাবে সাজানো হইছে। সুন্দর ফন্ট, ৬ বারের বেশি সংস্কার , সুন্দর পেজ। একটা পাঠকের আরামে বই পড়ার জন্য আর কি লাগে !!
বইটা পড়ছি ২০২১ সাল থেকে। এখনও পুরো শেষ করতে পারিনি, তবুও আমার অন্যতম পছন্দের কাতারে থাকবে এই বই। এটা গল্প-উপন্যাসের মতো শুধু হরহর করে পড়ে গেলে চলবে না। বুঝে শুনে সময় নিয়ে পড়তে হবে। উদাহরণ দেওয়াটা ঠিক হবে না কিন্তু বুঝানোর জন্য বলি। কুরআন শুধু পড়ে গেলে যেমন কুরআনের আসল উদ্দেশ্য হাসিল হবে না, এটা ঠিক তাই। পড়বেন, বুঝবেন এবং সে অনুযায়ী আমল করবেন। তখন আপনি বইয়ের তাৎপর্য বুঝতে পারবেন। লেখকের উদ্দেশ্য ও তখন হবে সফল।
●কেন পড়বেন রাহে বেলায়াত?
আমি ব্যক্তিগত ভাবে ইবাদাত বিষয়টাকে বেশী গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি। এটাই অন্যান্য সকল দিক ঠিক করে ফেলবে। আপনি পাপ থেকে বেঁচে থাকলেন, সেটাও একটা ইবাদাত। এটাই তাকওয়া। ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। আমি এখন এসব লিখতে আসিনি। আসল কথায় যাই।
আমরা ইবাদাত করি কেন? এক কথায় উত্তর হবে, জান্নাত লাভের আশায়।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। সূরা আল ওয়াক্বিয়া যারা পড়ছেন বা তাফসীর পড়ছেন তারা এই বিষয়ে জানেন। যদি না পড়ে থাকেন, পড়ে নেবেন। এখানের কিছু আয়াত নিয়ে একেবারে সংক্ষেপে কথা বলবো। ভালোভাবে বুঝতে হলে তাফসীর পড়বেন। আমি স্বল্পজ্ঞানী একজন মানুষ, বিস্তারিত বলতে গেলে গোলমাল বাঁধবে।
এ সূরায় তিন শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে। এটি কেয়ামত পরবর্তী ঘটনা। তখন তিন দলে বিভক্ত হবে মানুষ। একদল مَيْمَنَةِ বা ডানদিকের দল। কুরআনে তাদের ভাগ্যবান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেক দল مَشْـَٔـمَةِ বা বামদিকের দল। কুরআনে তাদের বলা হয়েছে হতভাগ্য। অন্য আরেক দল আছে, যারা স্পেশাল পর্যায়ের। তারা سٰبِقُوْن বা অগ্রবর্তী। এসব লোকদের ব্যাপারে এভাবে বলা আছে, "বহু সংখ্যক হইবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হইতে; এবং অল্পসংখ্যক হইবে পরবর্তীদের মধ্য হইতে।" সময়ের সাথে সাবেকুন বা এই বিশেষ পর্যায়ের লোক কম হতে থাকবে। এর পেছনে কারণ হচ্ছে, আমাদের ঈমান সাহাবীদের পর্যায়ের না। দিনদিন আমরা ঈমান হারা হচ্ছি। ঈমানের শক্তি কমে যাচ্ছে। মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীতেও অনেকসময় ধরে মূর্তি পূজা চলতো তৎকালীন আরবে। তারা কি আল্লাহকে এক মানতো না? মানতো। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত করা যাবে না সেটাও জানতো এবং বিশ্বাস করতো। তবুও তারা ছিলো কাফের। কিভাবে? ওরা ভাবতো আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হলে মাধ্যমের প্রয়োজন আছে। ওরা বিভিন্ন পাপ করে, সুতারাং আল্লাহ ওদের কথা শুনে না। তাই ভালো মানুষ যারা মৃত্যু বরণ করছে, তাদের মূর্তি বানিয়ে তাদের মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছে চাইতো। ধারণা ছিলো এমন, এনারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহর কাছেই এরা আছেন। তাই তাদের বললে, আল্লাহকে বলে তারা চাহিদা পূরণ করে দেবেন। আমাদের বাঙ্গালি মুসলমানদের সাথে কি মিল পেলেন কিছু? সময়ের সাথে ঈমান হ্রাস পাচ্ছে আমাদের। তাই সাবেকুন পর্যায়ে পরবর্তীদের মধ্য থেকে লোকসংখ্যা হবে কম।
আমাদের চেষ্টা করতে হবে সাবেকুনদের দলে থাকার। এজন্য প্রয়োজন বেশি বেশি ইবাদাত করা। আমরা ফরজ আমল তো করবোই, পাশাপাশি নফল, সুন্নাহ যেটুকু পারি চেষ্টা করতে হবে। তবেই ইনশাআল্লাহ আমরা সাবেকুনদের কাতারে থাকতে পারবো।
●শেখার মতো কী আছে এ বইয়ে?
আমরা ব্যস্ত মানুষ। ফরজ ইবাদাত করার সময়টাই ঠিকমতো হয়ে উঠে না। নফল বা সুন্নাহ তো বহুদূর। এই ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে অনেক সওয়াবের কাজই করা যায়। সেটাই লেখা আছে বইয়ে। কাজের পাশাপাশি এসব যিকর করে দিনে বহু সওয়াব আয় করা সম্ভব। তাছাড়া আপনি এসব আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবেন। অযথা কথা বলে পরনিন্দা, গীবতের মতো ভয়ংকর রকমের পাপ থেকে বাঁচতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন দোয়া শেখানো আছে। সেগুলো পাঠ করে যেকোনো কাজকে সুন্নাতে রুপান্তর করা সম্ভব। সবসময় আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন, আল্লাহর সাথে কথা বলছেন, ভাবতেই তো দারুণ লাগে। এভাবে অন্যান্য পাপাচার থেকেও দূরে থাকা সহজ হয়ে যাবে।
এই বইয়ের বিশেষ দিকটা হলো এর পদটিকা। প্রত্যেকেটা হাদিসের দলিল দেওয়া আছে। কোনটা সহিহ, কোনটা হাসান, দূর্বল কিংবা কম গ্রহণযোগ্য কোনগুলো সব নিয়ে আলোচনা করা আছে। এ বিষয়টা দারুণ। পাঠক কোন পর্যায়ের হাদিসে আমল করছে সেটা বুঝতে পারবে। মনে কোনও খুত থাকবে না হাদিসের মান সম্পর্কে।
অন্যান্য মাসে না পড়লেও রমজান মাসে অনেকে ইসলামি বই পড়েন। এই বইটিতে চোখ বুলিয়ে দেখতে পারেন। রকমারি থেকে সূচিপত্র দেখেন, কিছু পৃষ্ঠা পড়েন। ইচ্ছা জাগলে তখন নেবেন। বইটা প্রত্যেক মুসলমানের পড়া দরকার বলেই আমার মনে হয়। যিকর নিয়ে আমাদের সমাজে কত মিথ্যাচার যে প্রচলিত আছে। সেগুলো থেকে অন্তত বেঁচে থাকতে পারবেন।
বই : রাহে বেলায়াত লেখক : খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) মুদ্রিত মূল্য : ৪৬০ টাকা প্রকাশনী : আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন
বইটা বেশ বড়। তাই একটু সময় নিয়েই পড়লাম। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই সর্বদা তাঁকে স্মরণ করতে হবে। প্রত্যহ সকালে ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি কাজ যদি যথাযথভাবে মন-মগজে আল্লাহকে স্মরণ রেখে সম্পন্ন করতে পারি তাহলেই তো আমরা আখিরাতে কামিয়াবদের সাথে থাকতে পারব। সারাদিনের ফরজ ইবাদত ছাড়াও ইখলাসের সহিত কিছু যিকির, মাসনূন দুআ ইত্যাদির আমল করতে পারলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করা যায়। এটাই তো ইবাদত, আল্লাহ তো আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ইবাদত তো যেনতেনভাবে করলে হবে না। ইবাদত করতে হবে ঠিক সেইভাবে- যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সাহাবীগণ (রাযিআল্লাহু আনহুম) অনুসরণ করেছেন।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহি.) তাঁর রাহে বেলায়েত বইটিতে সহিহ হাদিসের আলোকে প্রাত্যহিক জীবনে আমল করা যায় এরকম অসংখ্য করণীয়-বর্জনীয়, ইবাদতের আদব, পদ্ধতি, মাসনূন দুআ, যিকির ইত্যাদি সংকলন করেছেন। এগুলো সংগ্রহে রাখতে এবং যথাসম্ভব শিখতে পেরে ভালোই লাগছে। প্র���াণিত হাদিসসমূহের সূত্রে এত পরিমাণ মাসনূন দুআ ও যিকির এসেছে যে সারাদিন এগুলাই আমল করে শেষ করা যাবে না। সেখানে আমি অবাক হই যে বিদাতিরা কোন যুক্তিতে নতুন নতুন যিকির-আযকার উদ্ভাবন করে যেগুলা রাসূল (সা.) ও সাহাবীগণ আমল করেছেন বলে সঠিক কোনো প্রমাণ নেই!!!
রাহে বেলায়াত' শব্দের অর্থ হল 'আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভের পথ'।
বইটিতে মূলত যিকর এবং দোয়া এর প্রকারভেদ, গুরুত্ব বা ফজিলত, কোন সময়ে কোন ধরনের যিকর বা দোয়া মহান আল্লাহর কাছে প্রিয়— ইত্যাদি কোরআন, হাদিস, বিভিন্ন সাহাবী এবং আলেমদের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তাছাড়া বর্তমান সমাজে প্রচলিত মতবিশ্বাসের এবং কুসংস্কার এর সাথে ইসলামের সম্পর্ক, এবং ফরজ কাজের তুলনায় সুন্নত বা নফল কাজ গুলোকে অতিরঞ্জিত করা, যদিও সেগুলো প্রয়োজন ইত্যাদি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বইটির সহজ-সরল লেখা এবং যুক্তি-তর্কের উপস্থাপন খুব সাবলীল ছিল। সবার পড়ার মতো একটা বই।
রাহে বেলায়াত মানে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ। বইটির লেখক বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ আলিমদের মধ্যে একজন। কিভাবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়, কিভাবে বিদআতমুক্ত ইবাদাত পালন করা যায়, এগুলো নিয়ে সাবলীল এবং সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে বইটি তিনি রচনা করেছেন।
শুধু তাই নয়, এখানে স্থান পেয়েছে অনেক মাসনূন দু'আ, যিকর, মুনাজাত— যার কোনোটিই কুরআন-সুন্নাহর বাইরে নয়। প্রতিদিনের ফরয নামাযের সাথে আরও কিছু ফযিলতপূর্ণ নফল নামাযের কথা আমরা অনেকেই জানি। সেগুলো কিভাবে, কখন পালন করতে হবে, পালন করলে কী সাওয়াব, এসব বিস্তারিতভাবে পেয়ে যাবেন এই বইতে।
বইটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়টি। লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ আল্লাহর খুব প্রিয় বান্দাতে পরিণত হতে পারে৷ ওয়ালী বা পিরদের কাছে বায়াত নেয়ার যে ঘটনা আমাদের আশেপাশে হরহামেশাই আমরা দেখতে পাই, তার প্রয়োজনীয়তা নেই ব'লেও তিনি বিভিন্নভাবে তার লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে যারা ইসলাম সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান অর্জনের জন্য সহিহ আকিদার আলিমদের সাহচর্য দরকার। মূলত, একজন মানুষ সচেতন হয়ে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন ক'রে নিজেই যাতে বেলায়াত অর্জন করতে পারে, সেই দিকে তিনি জোর তাগিদ দিয়েছেন।
ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার স্কুল-জীবনের প্রিয় ইংরেজি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশীদ স্যারকে, যিনি আমাকে সুন্দর এই বইটি উপহার দিয়েছিলেন।