Jump to ratings and reviews
Rate this book

শৈল্পীঃ আলোক কন্যার উত্থান

Rate this book
প্রাচীন মিশরীয় দেবতা রা'য়ের মন্দিরের পুরোহিত রাহোটেপ। সৎ আর একনিষ্ঠ এই পুরোহিত জড়িয়ে পড়লেন এক শয়তান যাজিকার প্রেমে। ফলে জন্ম হলো তীব্র এক অপশক্তির, যার কাছে মানুষ তো দূরের কথা, দেবতারাও দিশেহারা হয়ে পড়লেন। আর তখনই ভবিষ্যদ্বাণী এলো, সিংহদেবী সেখমেত জন্মাবেন মনুষ্যরূপে, বিনাশ করবেন সেই বাড়ন্ত অপশক্তিকে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! অপশক্তির গর্ভেই জন্মালেন সিংহদেবী। বিনাশও করলেন একসময় ন্যায়দণ্ড হাতে।

কিন্তু পাপের বিনাশ কি এতই সহজ? না, যুগে যুগে পাশাপাশি অবস্থান করা আলো এবং আঁধার আগেও ছিল আজো আছে, থাকবেও ভবিষ্যতে। যার ধ্বংস স্রেফ অসম্ভব। কিন্তু সমতা হয়তো সম্ভব।

আর এই সম্ভাবনাকেই সামনে রেখেই যুগে যুগে অভ্যুত্থান ঘটে সম্ভবামিদের। আলোক কন্যা এমনই এক সম্ভবামি! যার উত্থান ঘটতে চলেছে এই আধুনিক যুগে। বর্তমান মিশরের মাটিতে? নাহ, সে আবার এসেছে ফিরে আমাদের চিরচেনা আষাঢ়ে ভেজা সবুজ বাংলায়। সাথে থাকবে বৃষ্টি নামিয়ে আনতে পারার মতো এক বৃষ্টি যুবরাজ। আর ধর্মের লড়াই হবে অধর্মের বিরুদ্ধে। চেনা জানা অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নয়, নয় কোন বাহুশক্তিতেও। মনস্তাত্ত্বিকতাই এখানে মুখ্য অস্ত্র হয়ে দাঁড়াবে সবার।

কী মনে হয়, জয় হবে আলো অথবা আঁধারের? উহুঁ! এখানে জয় বা পরাজয়ের হিসেব নয়, থাকবে মনস্তাত্ত্বিকতার স্বার্থকতা আর প্রাচীন অপ্রাপ্তির ফিরিস্তি। ধর্ম অধর্ম দুপক্ষেরই। থাকবে অপূর্ণ থাকা কিছু গল্পের পূর্ণতা। জয় অথবা পরাজয়ের মধ্যমায়।

এই গল্প বিষণ্ণ চোখের এক আলোক কন্যার।

এই গল্প তীব্রদৃষ্টির অধিকারী বৃষ্টি যুবরাজের।

বিড়ালদেবী বাস্তেত, তীব্র ক্ষমতার সম্রাট-সম্রাজ্ঞী ওসাইরিস আর আইসিসেরও গল্প এটা।
আছে জীবনের সমস্ত সূত্র জানা পূজারিনি নেখতার, নিঃস্বার্থ এক যুবক প্রেমিকও।

শুভ্র-শৈল্পী সিরিজের প্রথম বই, "শৈল্পীঃ আলোক কন্যার উত্থান।"

প্রচ্ছদঃ শওকত শাওন
নামলিপিঃ লর্ড জুলিয়ান
ইলাস্ট্রেশনঃ ওয়াসিফ নূর এবং মোহাইমিন তূর্য

620 pages, Hardcover

Published May 30, 2023

19 people want to read

About the author

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
4 (22%)
4 stars
5 (27%)
3 stars
4 (22%)
2 stars
1 (5%)
1 star
4 (22%)
Displaying 1 - 12 of 12 reviews
Profile Image for Sakib A. Jami.
335 reviews36 followers
October 2, 2023
আলো আসছে,
আসছে অন্ধকারও।
প্রাচীন প্রাণেরা আসছে ফিরে,
যুদ্ধে অংশ নেবে তারাও!
বিশেষ এক জন্মতিথি,
দুটো রাশির মিলন বিন্দু,
সেই ক্ষণে জন্মাবে সে অন্ধকারের বিপরীতে!

আলো আর অন্ধকার একে অন্যের পরিপূরক। অন্ধকারের শক্তি অনেক বেশি। গ্রাস করে নেয় এই পৃথিবীকে। সবকিছু যেন হারিয়ে যায় গভীর অতলে। কোথাও কিছু দৃষ্টিগোচর হয় না। যেন কিছুই দৃষ্টিগোচর হয় না। এই শক্তিশালী অন্ধকারও একদিন খেই হারায়। যখন আলো আসে, সব অন্ধকার দূরীভূত হয়। এই পৃথিবীর প্রতিটি কোণে পৌঁছে যাওয়া আলোয় আলোকিত হয় সবকিছু। যত অশুভ শক্তি অন্ধকারের সাহায্যে নিজেকে শক্তিমান করে তোলে, ঠিক ততটাই কিংবা তারচেয়ে বেশি আলোতে শুভ শক্তি বিজয়ের গল্প লেখে। সাময়িকভাবে হয়তো অন্ধকারের রাজত্ব হয়, জিত হয় অশুভ কোনোকিছুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলো আসে। রাতের গভীর অন্ধকার দূর হয়ে ভোরের আলোয়, শুভ শক্তির ভিত্তি মজবুত হয়। সকল বিষাদ-বেদনা হারিয়ে যায়, নতুন কোনো দিনের সূচনায়। সেই দিন জীবনকে পূর্ণতা দেয়, পরিতৃপ্ত করে।

আচ্ছা, পুনর্জন্ম বলে কি কিছু আছে? এমন কি হতে পারে না, যে প্রাচীন কোনো অস্তিত্ব বর্তমান সময়ে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ দিচ্ছে। আমাদের জীবন একটা চক্রের মতো। এই চক্র কখনো পূরণ হয়, কখনো হয় না। মৃ ত্যু এসে বাঁধ সাধে এই চলমান প্রক্রিয়ায়। তবুও চলতে থাকে এই প্রক্রিয়া, মৃ ত্যুর পরও। একসময় শেষ হয় এই চক্র। তখন কি নতুন করে এই পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব হয়? হওয়া সম্ভব? প্রতিটি মানুষকে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় কোনো না কোনো দায়িত্ব দিয়ে। হয়তো সেই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়, কিংবা না। তখন চক্র শেষে নতুন করে আবার এই পৃথিবীতে আগমন! পুরোনো সে দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে। হয়তো নেখতার, হোরাস কিংবা হাথরের কেউ কেউ পুরোনো সে রুপ ভুলে নতুন যুগে এসে উপস্থিত হয়। কিংবা প্রত্যেকেই। যেখানে লড়াই হয় মা-মেয়ের, শুভ-অশুভের। প্রেয়সীর জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করা এক দেব প্রবেশ করে নরকের অভ্যন্তরে। অতীতের স্মৃতি মাথায় জ্বলজ্বলে! আর তাতে জানান দিচ্ছে মৃত্যু কখনো সমাপ্তি নয়, যেন শেষের শুরু! হয়তো এই জন্মে, অথবা প্রাচীন কোনো স্মৃতিতে, কিংবা দূরের ভবিষ্যতে…

▪️কাহিনি সংক্ষেপ :

এই জীবনে প্রেম আসে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু। শুভ্র আর শৈল্পীর প্রেম যেন এমনই কিছু একটা। ‘পারফেক্ট কাপল’ যাকে বলা হয়। মেডিকেল কলেজের সবচেয়ে ড্যাশিং ছেলেটা আর সুন্দরী মেয়েটা যখন প্রেম করে তখন সবাই ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। হিংসা মানুষকে নিষ্ঠুর করে তোলে। আর সেই নিষ্ঠুরতার বলি হয়তো প্রেমযুগল। শুভ্র আর শৈল্পীর জীবনে ঠিক যেন এমনই ঘটেছে। তাদের ভালোবাসায় আগমন ঘটেছে তৃতীয় কোনো পক্ষের। যার বা যাদের ঈর্ষার আগুনে ভস্ম হয়ে গিয়েছে তাদের ভালোবাসা। বিচ্ছেদ এখানে পরিণতি। তবে কি তাদের ভালোবাসা প্রকৃত ছিল না? না-কি কোনো খাদ মেশানো ছিল? সত্যিকারের ভালোবাসা বিশ্বাসের স্রোতে ভেসে যায়। আর যেখানে বিশ্বাসের অস্তিত্ব ঠুনকো হয়ে ওঠে, বিচ্ছেদ সেখানে অবধারিত।

রুবাইয়াত মেয়েটার ছোটবেলা ছিল রঙিন। মা, বাবা আর ছোট ভাইকে নিয়ে দারুণ কাটত। ছোটো ভাই যেন জীবনের একটা অংশ। এমন সুন্দর, সাজানো জীবন হুট করেই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। বদলে গেল সবকিছু। বড্ড অচেনা হয়ে উঠল রুবাইয়াতের বাবা। যার কাছে আলোক কন্যা আর বৃষ্টি যুবরাজের গল্প শুনত, সেই এখন ভয়ের কারণ। মা আর ভাইয়ের এমন পরিণতি যে মেনে নেওয়া যায় না! এভাবেই কি সবকিছুর শেষ? সাত বছরের একটা বাচ্চার যেখানে যেখানে বাবা-মায়ের আদরে বড়ো হওয়ার কথা, সেখানে ঠাঁই হলো অনাথ আশ্রমে। সেখানে বন্ধু যেমন মিলল, মিলল শত্রুও। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় মেয়েটা। অন্যরকম এই মেয়ে, যায় ভবিতব্য অন্যরকম! এই ভবিষ্যত একদিন চেপে ধরবে চারিপাশ থেকে। হেরে যাবে না তো? বদলে যাওয়ার শুরু এখান থেকেই। শুভ-অশুভর লড়াইয়ের শুরুটাও।

ইশতিয়াক ওরফে ইশতি, মেডিকেল কলেজের সবচেয়ে ড্যাশিং ছেলে। যার ইশারায় অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। চোখের দিকে তাকানোর সাহস কেউ পায় না। সেই ইশতিও বদলে গেল। কঠোরতার চাদরে মোড়া কোমলতা প্রস্ফুটিত হলো ভালোবাসার সংস্পর্শে। কিন্তু সবসময় তো সবদিন এক যায় না। তাই কোনো কোনো সময় সুপ্ত কঠোরতা বেরিয়ে আসে। ইশতির পেছনের অতীত একাকীত্বে ঘেরা। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছে সে। ফুপির কাছে মানুষ। কিন্তু নিজের অতীত সম্পর্কে খুব একটা বেশি কিছু জানে না সে। যদি জানত তাহলে সে অনুধাবন করত বিশেষ এক কাজ তার আছে। অকাল্ট সায়েন্সে গবেষণা করা বাবা-মায়ের শেষ কাজের দায়িত্ব তাকেও নিতে হবে। সে দায়িত্ব কতটা পালন করতে পারবে ইশতি? মনে পড়বে অতীতের সব কথা?

নিজের সন্তানকে প্রতিটি বাবা-ই ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু ড. মুশতাক তানজিমের বিষয়টা অন্য। তিনি চান ক্ষমতা। এই পৃথিবীর অধীশ্বর হতে চান। আর এই চাওয়াতে যে-ই আসুক না কেন, সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। সে নিজের পরিবারই হোক না কেন! এ কারণেই তো নিজ স্ত্রীকেও হারাতে হলো, যাকে সে ভীষণভাবে ভালোবাসত। একই পরিণতি করে ছেলের ব্যাপারেও ঘটবে? তার লক্ষ্য যে বিশাল। নিশীথ যুবরাজ হয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে এগিয়ে যাওয়া। পৃথিবীতে কায়েম করা অন্ধকারে রাজত্ব। পিশাচদের দল যে প্রস্তুত। স্বয়ং শয়তানের বিরাগভাজন না হলে কেউ থামাতে পারবে না….

কীসের টানে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছে আরওয়াহ? স্বপ্নে কোনো এক বার্তা ছুটে যাচ্ছে তার কাছে। সেই টানেই বাংলাদেশে ছুটে আসা। খুঁজে বেড়ানো তার প্রিয় খনসমকে। খুঁজে কি পাবে সে? স্বপ্নে দেখা এক কণ্ঠকে খুঁজে বেড়ায় রুবাইয়াতও। সত্যি কি স্বপ্ন? না-কি বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব আছে? দুইজনই খুঁজছে দুইজনের স্বপ্নের ভিত। পাবে তো?

একটি ভাতৃসংঘ! প্রাচীনকাল থেকে এই পৃথিবীতে বিচরণ করছে। রক্ষা করছে ভারসাম্য। তাদের লক্ষ্য একটাই। এই পৃথিবী যেন শয়তান লুসিফারের আজ্ঞাবহ না হয়! নরকের পিশাচদের কাছ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা। ‘আখওয়াতুল কাহিনা’ বা ‘যাজিকার ভাতৃসংঘ’ নামের এই দলটিকে ‘দ্য আই’ হিসেবেও অবিহিত করা হয়। সবকিছু দেখেশুনে রাখার দায়িত্ব তাদের। পৃথিবীর সব জ্ঞান ধারণ করে। ধারণ করে পুনর্জন্মে বিশ্বাস। প্রকৃতির পাঁচটি উপাদান — মাটি, পানি, বায়ু, অগ্নি ও আত্মার ভারসাম্য রক্ষা করে। তাদের আছে যোদ্ধা। কালো জাদুর বিরুদ্ধে লড়াই করা-ই মূল ব্রত। এমন একটি দলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বিশ্বের ক্ষুদ্র ও অপ্রচলিত একটি দেশ, বাংলাদেশে। কিন্তু কেন?

প্রাচীন কালের এক শয়তান যাজিকা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান সময়ে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের। খুলে যাচ্ছে নরকের দুয়ার। একবার খুলে গেলে নরকের পিশাচেরা তলকুঠুরি থেকে উঠে আসবে এই সুন্দর পৃথিবীতে। তখন শুরু হবে ধ্বংসযজ্ঞ। থামাতে হবে এই কর্মযজ্ঞ। খোঁজ চলছে ‘দ্য গোল্ডেন ডিস্ক অভ লাইফ’-এর। কিছুতেই শয়তানের দোসরদের সফল হতে দেওয়া যাবে না। তৎপরতা শুরু হলো যাজিকার ভাতৃসংঘের। জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলছে লড়াই। কেউ হারিয়ে যায় অতলে, কেউবা ফিরে আসে নতুনের ক্ষণে। কিন্তু পিশাচবাহিনীর শক্তি সীমাহীন। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনা অসম্ভবের নামান্তর। তারপরও সীমিত শক্তি নিয়ে মনে বিশ্বাস আর অপার সাহসের সাথে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। পিছিয়ে আসা যাবে না, কিছুতেই না…..

▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :

“শৈল্পী — আলোক কন্যার উত্থান” বইটিকে কোন জনরায় ফেলা যায়? বইটির একটি বিশাল অংশ জুড়ে পৌরাণিক কল্পকাহিনি আছে। সাথে যেমন আছে ভৌতিক, পিশাচ, শয়তান লুসিফারের কেচ্ছা কাহিনি, তেমনই আছে যুদ্ধ, জাদু, রহস্যে ঘেরা বেশ কিছু উপাদান। এত এত উপাদানের সমন্বয় লেখিকা সুজানা আবেদীন সোনালী খুব দারুণভাবে করেছেন। এই জন্য লেখিকাকে সাধুবাদ দিতে হয়। বিশাল কলেবরের এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে এতকিছুর সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেদিকে লেখিকা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছেন।

উপন্যাসের এক অংশ জুড়ে রয়েছে মিথের উপস্থিতি। গুপ্তসংঘ, ইতিহাস, ভৌতিক কাহিনির সমন্বয় ঘটেছে বেশ ভালোভাবে। লেখিকা যেভাবে প্রাচীন মিথকে বর্তমানের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছেন, প্রশংসনীয়। সেই সাথে ধর্মতত্ত্বের সূক্ষ কিছু বিষয় উঠে এসেছে এখানে। মানুষ যে ধর্মের হোক না কেন, এই পৃথিবীটা সবার। সবাই এক হয়ে পৃথিবী রক্ষায় এগিয়ে আসে। এখানে কোনো ধর্মের বিভেদ নেই। যুগে যুগে যতবার অশুভ শক্তির উদয় হয়েছে, পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে— ততবারই ধর্মীয় দিক থেকে কেউ না কেউ এগিয়ে এসেছে, যাদের প্রেশাস বর্ন বা অমূল্য জন্ম বলা যেতে পারে। যেমন আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সময়ে মহানবী (স.) কিংবা ফিরাউনের যুগে মুসা (আ.)।

ক্ষমতা প্রাপ্তি মানুষকে পাষণ্ড করে তোলে। যতটা ক্ষমতা মানুষকে দেওয়া হয়, মানুষের চাই তারচেয়েও ক্ষমতা। ফলে মনের মধ্যে থাকা সুপ্ত নির্মমতা জেগে ওঠে। যা হয়তো নিজের পরিবারকেও ছাড়ে না। ক্ষমতা প্রাপ্তির পথে যে-ই বাঁধা হবে, তাকেই নির্মূল করা হবে। ঠিক এর বিপরীতে থাকে ভালোবাসা। ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজের জীবন কেউ কেউ নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে। যদি প্রয়োজন পড়ে, নরকের ভেতর প্রবেশ করতেও দ্বিধা করে না।

গল্পের শুরুটা শৈল্পী ও শুভ্রর প্রেম কাহিনি দিয়ে। আমার যেতে রোমান্টিক গল্প ভালো লাগে না, সেহেতু এই অংশটা কিছু হলেও বিরক্তির কারণ ছিল। উপন্যাসের সবচেয়ে দুর্বল দিক এটাই। গল্পের স্রোত এখানে কিছুটা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। মূল গল্পে প্রবেশেও অনেক সময় লেগেছে। দুইশ-এর অধিক পৃষ্ঠা থেকে মূল গল্পের শুরু। ফলে কিছুটা ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছিল। এমন ধৈর্য নিয়ে সবাই পড়তে পারবে কি না, এই প্রশ্ন করা যায় এখানে। তবে একবার গল্পে প্রবেশ করতে পারলে সেখান থেকে ফিরে আসার উপায় নেই। শুরুটা যতটাই মন্থর, শেষটা তার চেয়েও গতিশীল। কিছুক্ষণ পরপর দৃশ্যপটের পরিবর্তন আকর্ষণের মাত্র বাড়িয়ে দিয়েছিল।

আমার ভালো লেগেছে লেখিকার লেখনশৈলী। ছোটো ছোটো বাক্যে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি পৃষ্ঠায়, প্রতি মুহূর্তে আবেগ অনুভূতিগুলো অনুভবে ফুটিয়ে তোলা সহজ কোনো কাজ নয়। বর্ণনাশৈলী ভালো লেগেছে। যদিও কিছু অংশে মনে হয়েছে বর্ণনা সংক্ষিপ্ত করা যেত যেহেতু বিশাল কলেবরের বই। ভয়ের আবহগুলো বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছিল। উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল সংলাপ। সংলাপের ক্ষেত্রে যেভাবে লেখিকা শব্দচয়নের আশ্রয় নিয়েছেন, বেশ মনে ধরেছে। আবেগ, অনুভূতিগুলো মনে হয়েছিল যেন নিজের।

উপন্যাসে রচিত বাচনভঙ্গি, গল্প বলার ধরন ভালো লেগেছে। কখনো অতীত, কখনো বর্তমান, কখনো স্মৃতির পাতায় হাতড়ে বেড়ানো, পুরাণের সময়ে হারিয়ে যাওয়া— সবকিছুর উপদান ছিল ভালো মতোই। আর সেগুলো বর্তমানে এক সুতোয় বাঁধার কাজও সুনিপুণভাবে করা হয়েছে। ফলে শুরুর বিরক্তি কাটিয়ে উঠে গল্পের সাথে যাত্রাটা হয়ে উঠেছিল সুখকর। লেখিকার কল্পনা শক্তির তারিফ করতে হয় এখানে।

▪️চরিত্রায়ন :

বিশাল কলেবরের এই উপন্যাসে একের পর এক চরিত্র এসেছে। সবাই যেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। শৈল্পী ও শুভ্র এই উপন্যাসের চরিত্র হলেও ড. মুশতাক তানজিমকে ফেলে দেওয়া যাবে না। আশেপাশের চরিত্রগুলো যেন তাদের ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল। প্রতিটি চরিত্রের গঠন খুবই স্পষ্ট। বিশেষ করে শৈল্পী আর শুভ্রর। এই বিষয়টা বেশ ভালো লেগেছে।

প্রেমিক যুগল শৈল্পী-শুভ্রর ভালোবাসার গল্প যেমন এখানে আছে, তেমনই আছে তৃপ্তির মতো কেউ কেউ। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেখার মতো অসহ্য যন্ত্রণা বোধহয় কিছুতেই নেই। তখন কি নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে হয়, যেভাবে হয়ে উঠেছিল তৃপ্তি।

পিশাচ বাহিনী, এদের ভয়ংকর গল্প সব তো ছিল-ই। সেই সাথে আরিহা, রূপা, নীল, নিষাদ, রিভী এবং সবশেষে আঙ্কেল পল খুব গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সবগুলো চরিত্র মনে ধরার মতো, ভালো লাগার মতো। মিনহাজের শেষ পরিণতি মানতে কষ্ট হচ্ছিল, যদিও এমন কিছু হবে প্রত্যাশা করেছিলাম।

এই উপন্যাসে একজন সাংবাদিক ছিল, অবনী সুলতানা। প্রত্যাশা করেছিলাম সাংবাদিকতায় এই চরিত্রের খুব বড়ো ভূমিকা থাকবে। যদিও সস্তার কিছু জোক আর অশ্লীল কথাবার্তায় মেজাজ খারাপ হয়েছিল। লেখিকা হয়তো চেয়েছিলেন চরিত্রটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে, যেন পাঠক ঘৃনা করে। সেটা কাজেকর্মে হয়ে যেত। সে জন্য অশ্লীলতার আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। শেষের দিকে অবশ্য চরিত্রের যে রূপ সামনে এসেছে, সেটা একটা চমক ছিল।

এই উপন্যাসে বেলাল চরিত্রকে আমার খুব মজাদার লেগেছে। যার কথাতে হাসির উপলক্ষ্য পাওয়া যায়। তবে কিছু চরিত্র খুব একটা আলোতে আসেনি। যেমন, আমি মনে করেছিলাম আরওয়াহ চরিত্রটির খুব বড়ো ভূমিকা থাকবে। কিন্তু সেটা হয়নি। একইভাবে দুই জমজ বোনের ভূমিকাও আমাকে মুগ্ধ করতে পারেনি। শেষের দিকে ঈশিতা কেন হোরাসের নাম নিচ্ছিল, সেটাও ধোঁয়াশায় ছিল।

▪️কিছু প্রশ্ন ও যা ভালো লাগেনি : (স্পয়লার থাকতে পারে)

উপন্যাস থেকে কিছু প্রশ্ন জেগেছে, সেগুলো একে একে আলোচনা করছি। বড়ো ধরনের কোনো স্পয়লার না থাকলেও ছোটখাটো কিছু আছে। চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন।

• শৈল্পীর বাবার হুট করে হিংস্র হয়ে ওঠার কারণ আমার কাছে পরিষ্কার না। ঠিক কেন সে এমন হয়ে উঠল? কেন শৈল্পীর ছোটো ভাইকে সহ্য করতে পারত না? এই প্রশ্নের উত্তর পাইনি।

• শৈল্পীর মা ও ভাইকে যে পরিণতি বরণ করতে হলো, এর কারণ কী? কীভাবে এমন এক ঘটনা ঘটেছে? এই অংশটি যেন ধোঁয়াশায় থেকে গেল।

• উপন্যাসের শুরুটা এক অ প হ র ণ দিয়ে। এর কারণ কী? কে করল? সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। এটা ঠিক যে কিছুটা আভাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমি বিস্তারিত উত্তরের আশা করছিলাম।

• তৃপ্তিকে একটি কালো গাড়ি অনুসরণ করছিল। যাকে সে দেখেনি, সে খোঁড়া কীভাবে বুঝল? গাড়িতে করেই তো অনুসরণ করছিল, বাইরে বের হয়নি সেই ব্যক্তি। তাহলে তো তৃপ্তির জানার কথা না যে সে লাঠি নিয়ে ঠকঠক করে হাঁটে।

• গল্পের গতিপ্রকৃতি ভালো ছিল। তবে বেশ কিছু নাটুকে দৃশ্যের আবির্ভাব হয়েছিল। যা বেশ বিরক্ত দিয়েছে। নারী চরিত্রগুলো একটি নাটুকে ভাব আনবে স্বাভাবিক, তবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। একইভাবে অতিমাত্রায় প্রেম আর অশ্লীল কিছু সংলাপ পছন্দ হয়নি। এগুলো আরেকটু কমিয়ে দেখানো যেত।

• পিশাচশ্রেণী বা শয়তানের উপাসকদের আরেকটু গুরুত্ব দেওয়া যেত। তারা বেশ আড়ালে পড়ে গিয়েছে। ফলে শেষের দিকে তাদের আবির্ভাবে একটু হলেই খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম।

▪️বানান, সম্পাদনা ও অন্যান্য :

সম্পাদনা একেবারে টপ নচ হলেও বেশকিছু ছাপার ভুল ছিল। উ কিছু জায়গায় তি কেন হয়ে হয়েছিল বোধগম্য হয়নি। যেমন ইউনিক সবজায়গায় ইতিনিক হিসেবে লেখা ছিল। কোনো বানান যদি কোথাও ভুল থাকে তাহলে পুরো অধ্যায় সেই বনানী ভুল লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিশাল কলেবরের বইয়ে হয়তো এগুলো লক্ষ্য রাখা কঠিন হিয়ে যায়।

নালন্দার এই বইয়ে ফন্ট স্বাভাবিকের তুলনায় ছোটো, যদিও পড়তে অসুবিধা হয় না। ফন্ট ছোটো করার সুবাদে পৃষ্ঠা কমে গিয়েছে। নাহলে আরও হয়তো বেড়ে যেত। এটা ভালো দিক। ��কইভাবে পৃষ্ঠা কমানোর জন্যই কি না, কোনো অধ্যায় শেষ হলে নীচ থেকেই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ভালো লেগেছে বিষয়টা। নাহলে হয়তো হাতে ধরে পড়তে অসুবিধা হতো। যদিও খুব যে সুবিধা হয়েছে এমনও না। ৪০০ বা এর অধিক বইয়ের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ রাউন্ড বাইন্ডিং। এতে পড়তে সুবিধা হয়।

বইটির এত সুন্দর সুন্দর ডেমো প্রচ্ছদ দেখেছিলাম, মূল প্রচ্ছদ সেখানে বেশ সাদামাটা। কাহিনির কলেবর যেখানে বড়ো, সেখানে আরো আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ করা যেত। কোনোভাবেই মূল গল্পকে প্রচ্ছদ তুলে ধরতে পারেনি।

▪️পরিশেষে, ভালোবাসার মানুষের আপনি কতদূর যেতে পারবেন? কেউ কেউ হয়তো নরকের শেষ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। যমদূতের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে প্রিয়জনকে। যতই অশুভ হোক পরিবেশ, ভালোবাসার পবিত্রতার কাছে সবকিছু হার মানতে বাধ্য।

▪️বই : শৈল্পী — আলোক কন্যার উত্থান
▪️লেখক ; সুজানা আবেদীন সোনালী
▪️প্রকাশনী : নালন্দা
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬১৮
▪️মুদ্রিত মূল্য : ১২০০
▪️ ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.২/৫
Profile Image for Ibrahim Nirob.
26 reviews3 followers
June 18, 2024
#রিভিউ #শৈল্পী_আলোক_কন্যার_উত্থান #সুজানা_আবেদীন

●বিবরণ: ৫৭টি প্লটে বিভক্ত ৬২০ পৃষ্ঠার বিশাল একটি বইটির ঘটনার শুরু হয় প্রাচীন মিশরের কোনো এক মরুভূমিতে; যেখানে নিজের জন্মদাত্রী জননীর সাথে লড়াই করছে এক মেয়ে। রক্তের বিরুদ্ধে রক্তের লড়াইয়ের সমাপ্তিতে জয়ী হয় সত্য। কিন্তু বিজয়ী বদলে লাভ করে এক নিষ্ঠুর অভিশাপ— যা তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে জন্ম-জন্মান্তর।
কিছু পথভ্রষ্ট সাধক হাজার বছর যাবৎ একত্রিত হচ্ছে নরকের দরজা খোলার জন্য। যারা চায় পৃথিবীতে রাজত্ব হোক অন্ধকারের শয়তানের। ওদিকে আলোক কন্যার সহযোগী'রা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ডায়েরীটা রক্ষা করার, যার মধ্যে লুকানো আছে এক শক্তিশালী অস্ত্র কিন্তু একমাত্র রুবাইয়াত ছাড়া কেউ জানেনা কীভাবে বের করা যাবে অস্ত্রটা। এমনকি ডায়েরীটা যার কাছে থাকে সেও জানতে পারে না। এরমধ্যেই চলে উত্থান-পতনের কালচক্র, বিস্তৃত পেতে থাকে কাহিনী।
চট্টগ্রামে শুরু হয় আলোর সাথে অন্ধকারের ভয়ংকর যুদ্ধ, কিন্তু উভয়পক্ষের এক-এক সদস্য বেঈমানী করে বসে নিজেদের দলের সাথে। হঠাৎ তাদের এই পরিবর্তনে হতবুদ্ধিকর হয়ে যায় দলের একাংশ। কী মনে হয়, কে জিতবে এই ভয়ানক খেলায়?

●বিশ্লেষণ: গল্পের প্রথম অংশটা কিছুটা ধীরগতিতে এগিয়েছে, প্লট বিল্ডআপের জন্য এটা করতে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তারপর কাহিনী এত দ্রুত এগোবে যে আপনার নার্ভ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে উঠবে। মিথলজি, অকাল্ট সায়েন্স, ইতিহাস, হরর ও বাস্তবতা মিলিয়ে খুবই চমৎকার গল্প সাজানো হয়েছে। রয়েছে গুপ্তসংঘ— তাদের অদ্ভূত কার্যক্রম। শুভ্র-শৈল্পীর রোমান্টিকতা উপন্যাসে আলাদা মাধুর্য এনে দিয়েছে— যা কাহিনী শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আমার মনে হয় এই রোমান্টিকতাটুকু না থাকলে কাহিনীর খেই হারিয়ে যেত কারণ যুগে যুগে প্রেমর শক্তিই পেরেছে জগৎ টিকিয়ে রাখতে। এছাড়াও থিওলজিক্যাল কিছু ব্যাপার রয়েছে যা পড়ে অনেকেই অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে তুলকালাম বেঁধিয়ে ফেলতে পারেন। পুনর্জন্ম সম্পর্কে কোরানে অনেক আয়াত রয়েছে। তবে কোরানের একটা শব্দ যেটা পড়তেছেন সারাজীবন কিন্তু জানেনই না কী পড়তেছেন। সূরা ফাতিহার ৩য় আয়াতের 'ইয়াওমিদ্দিন' শব্দতেই পুনর্জন্ম সম্পর্কে ক্লারিফিকেশন আছে। আর বাকি বিষয়ে অন্যান্য ধর্মের মূলবাণী সম্পর্কে জানাশোনা এবং বইয়ের উপস্থাপনার দিকে লক্ষ্য করলেই কট্টরপন্থী ধারণা থেকে বের হওয়া যায়; যা মূলত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা বহন করে। কিছু স্ল্যাং, সেক্সুয়াল কথাবার্তা আছে কিন্তু খুবই অল্প পরিমাণে যা গল্পের প্রয়োজনে দরকার ছিল।

পড়ার সময় কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পাইনি, ফলে সেই অংশটা কয়েকবার করে পড়তে হয়েছে। প্রশ্নগুলো হচ্ছে—
•শৈল্পী'র ছোট ভাই কেন তার বাবার কাছে অসহ্যকর ছিল?
•শুভ্র'র চাচী'র মৃত্যুর কারণ কেন খোলাসা করা হয়নি?
•শুভ্র'র চাচাও কিছুটা ধোঁয়াশায় রয়ে যায়। স্ত্রী হত্যায় কি তিনিও দায়ী আছেন কি না সেটাও জানা যায়নি।
•আবিরকে কে নিশীথ যুবরাজের জন্য উৎসর্গ করেছে স্পষ্ট নয়।

এখন সিরিজের পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই, সেখানেই হয়তো বাকি বিষয়গুলো খোলাসা হবে। আশাবাদী যে খুব দ্রুতই পরবর্তী বইটা আসবে....

●চরিত্রায়ন: চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে লেখক যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন, প্রতিটি দৃশ্যপটের আবহে আরও শক্তিশালীরূপে সংজ্ঞায়িত হয়। কাহিনীকে আরো আকর্ষণীয় করতে সময়ের আবর্তনে চরিত্রগুলো তাদের ব্যক্তিত্ব এবং সামগ্রিক প্লটে নির্বিঘ্নে মিশে গেছে। ফলে তারা সংযুক্তভাবে নিখুঁত খোদাই হয়েছে যেন সিরিজের শেষ অবধি প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ ভূমিকার জন্য ন্যায়সঙ্গত এবং অবশ্যই তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে গল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে চরিত্রের বিভিন্ন শেড উপস্থাপন করা হয়েছে। গল্পের নায়ক ও নায়িকার চরিত্রদের একপাশে রেখে দিলেও গল্পে আরও অনেক বড় এবং গৌণ চরিত্রের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে এটি একটি বা দুটি চরিত্রের গল্প নয়; শক্তিশালী ভূমিকা সহ চার বা পাঁচটি চরিত্র খুব দৃঢ়ভাবে সংজ্ঞায়িত রয়েছে, যা গল্পটিকে ক্ল্যাসিক মাত্রা দিয়েছে। ফলে পড়ার আনন্দ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

●সম্পাদনা: ২ লক্ষেরও বেশি শব্দের বই এটি, লিখতে হয়েছে এক যুগ সাধনা করে। তাই বইটা প্রায়োরিটিও ছিল উচ্চমাত্রার। পড়ার সময় মনে হবে ঝরঝরে পরিষ্কার বাংলায় লিখে দেওয়া হয়েছে প্রতিটি লাইন যার কারণে চেনা বানানও অচেনা লাগবে। এডিটোরিয়াল প্যানেল সম্ভবত নতুন বানানরীতি অনুসরণ করেছে যার কারণে আমার কাছে অনেক বানান ভুল লেগেছে। বাক্যগঠন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এলোমেলো লেগেছে। টাইপিং গোলমালের কারণে অনেক বানান ভুল এসেছে, যেমন: ক্ষামাতা, দ্বন্‌দ্ব, ইতিনিভার্সিটি, ইতিনিফর্ম, ইতিনিক ইত্যাদি। তবে লেখিকার লেখনশৈলী খুবই চমৎকার। ছোট ছোট বাক্যে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। এত বিশাল কলেবরের লেখায় প্রতি মুহূর্তের আবেগ অনুভূতিগুলো ফুটিয়ে তোলা সহজ কোনো কাজ নয়। একটা জিনিস আমার কাছে কনফিউজিং লেগেছে— 'বেলীফুলের গন্ধ' ফ্রেজের বদলে "বেলীফুলের ঘ্রাণ" ফ্রেজ ব্যবহার করলে ভালো হতো কারণ বাংলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গন্ধ বলতে দুর্গন্ধ বুঝায়।

●প্রচ্ছদ: মূলত প্রচ্ছদে মূল চরিত্রকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, বাকি যেসব বিষয় উহ্য রয়েছে সেগুলো থাকলে প্রচ্ছদটা গতানুগতিক ধারার হয়ে যেত।এক্ষেত্রে একটা কথা বলা যায়— 'সবাই যে পথে যায় সে পথে যেও না, আবিষ্কার করো ভিন্ন কিছু।' প্রচ্ছদটাও হয়েছে তাই— নীল শাড়ি পরিহিত "ওয়াডজেট" অংকিত তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে এক তরুণী। চোখটিকে কেউ আবার ইল্যুমিনাতি'র চোখ ভেবে গালাগালি কইরেন না। এটা আসলে প্রাচীন মিশরীয় সংকেত— 'আই অব হোরাস' নামেও পরিচিত যা জ্ঞান ও সুরক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। তরুণীটির মাথার বামপাশে রয়েছে বাজপাখি ও মধ্যখানে রত্নখচিত খোদাইকৃত রাজমুকুট। রত্নপাথরের চারদিকে হলুদ আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে— যেন অন্ধকার সরিয়ে ফিরিয়ে আনবে শান্তি। তরুণীটির চারপাশে ঘিরে থাকা কালচে লালাভা থেকে মনে হচ্ছে আগুন থেকে উঠে আসছে তরুণীটি— যা প্রতিনিধিত্ব করে নরকের ভয়ানক আগুন থেকে উঠে আসছে সে। চমৎকার এই প্রচ্ছদ এঁকেছেন শওকত শাওন। আর নামলিপিটা এঁকেছেন দ্য গ্রেট লর্ড জুলিয়ান। একটা জিনিস হচ্ছে সবার মতো আমিও বই প্রকাশের শুরু থেকেই ভেবে আসছি যে প্রচ্ছদে লেখিকা সুজানা আপুর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে এটা প্রচ্ছদকারই ভালো জানেন।

●প্রোডাকশন: নালন্দা থেকে প্রকাশিত প্রথম কোনো বই পড়লাম। তাদের প্রোডাকশন কোয়ালিটি সম্পর্কে তাই তেমন ধারণা নেই। তবে •শৈল্পী— নেড়েচেড়ে বুঝলাম খুবই উচ্চমানের প্রোডাকশন পেয়েছে বইটি। সম্ভবত বইটির হার্ডকভারে ২৫০ গ্রাম বোর্ড কাগজ এবং প্রতি পেজে ১০০ গ্রাম কাগজ ব্যবহার হয়েছে। বইটা সাঁটানো হয়েছ�� স্ট্রেইট বাইন্ডিং প্রক্রিয়ায়। সাধারণত এত মোটা বই আমি রাউন্ড বাইন্ডিংয়ে পড়েই অভ্যস্ত। ভেবেছিলাম স্ট্রেইট বাইন্ডিং এর জন্য পড়তে অসুবিধা হবে। তবে যতটা ভেবেছিলাম ততটা সমস্যা হয়নি। তাছাড়া এত নাড়াচাড়া করার পরেও বইটার কোনো অংশ তার স্থান থেকে বিচ্যুত হয়নি। অর্থাৎ বুঝা যায় বইয়ের বাইন্ডিংয়ে ব্যবহৃত আঠা খুবই মজবুত ও টেকসই।

●রিকমেন্ডেশন: বইটি সবাই-ই পড়তে পারবে বলে আমা��� মনে হচ্ছে। তবে যারা মিথলজি পড়তে আগ্রহী তাদের জন্য এটা চমৎকার বই হবে। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো পর্যন্ত সেরকম মিথলজিক্যাল ফিকশন কাজ হয়নি; আর মিশরীয় মিথলজির কথা বললে এই প্রথম কাজ হয়েছে।

●উপসংহার: ভালোবাসার জন্য মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক কাজটাও নিপুণ কৌশলে করে ফেলতে পারে। কিন্তু থাকতে হবে পবিত্রতা যা এনে দিবে অসীম সাহস।

▪️বই : শৈল্পী — আলোক কন্যার উত্থান
▪️লেখক : সুজানা আবেদীন সোনালী
▪️সম্পাদনা : নিশাত তামান্না
▪️প্রচ্ছদ : শওকত শাওন
▪️নামলিপি : Riajul Islam Xulian
▪️প্রকাশনী : Nalonda
▪️পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬১৮
▪️মুদ্রিত মূল্য : ১২০০
▪️রেটিং : ৪.৫/৫
Profile Image for Rehnuma.
445 reviews21 followers
Read
March 10, 2024
ভালোবাসা মানে না কোনো বাঁধা বন্ধন। তাইতো প্রাচীন মিশরের পুরোহিত মজেছিলেন এক শয় তান যাজিকার প্রেমে। প্রেমের ফলে জন্ম হয় এক অপশক্তির। যার বিনাশ করে দেয়ার ক্ষমতা ছিল ভাবনাতীত। কিন্তু প্রতিটা অন্ধকারের বিপরীতেই থাকে এক আলোক শক্তি। তাই দেবতারা ভবিষ্যদ্বাণী করলেন সিংহদেবী জন্মাবে মানুষরূপে এবং বিনাশ করবেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে অপশক্তির জঠরেই জন্ম হয়েছিল তার আর বাণী অনুযায়ী বিনাশও করেছিলেন।
কিন্তু মানবজীবন তো চক্রের মতো। এই চক্রের শুরু আছে শেষ নেই। চক্রের ঘুর্ণনেই অতীত বারবার ফিরে আসে। সে অতীতে সম্রাজ্ঞী আইসিস কিংবা সম্রাট ওসাইরিসের যেমন ঘটনা ছিল, তেমন ছিল অপশক্তির আধাঁর পূজারী নেখতার। র ক্ত যেখানে র ক্তের শোধ নিয়েছিল হাথরের মাধ্যমে। ভালোবাসা হোরাস আর ন্যায়ের জন্য যে আপন মাতার বিরুদ্ধে গিয়েছিল আর বয়ে বেরিয়েছে আজন্ম এক অভি শা প। ধর্মের সাথে অধর্মের ল ড়াই কখনোই থেমে ছিল না। অতীত পেরিয়ে চক্র আবার শুরু হয়েছে। যার কেন্দ্রস্থল সুজলা-সুফলা বৃষ্টি শ্যামলা ধানক্ষেতের বাংলাদেশ।

রুবাইয়াৎ বা শৈল্পী বিষন্ন চোখের এক আলোক কন্যা। চোখ ধাঁধানো সুন্দরী কী না কে জানে, তবে তাকে ঘিরে থাকে বেলী ফুলের মোহনীয় সুবাস আর যে কি না স্নিগ্ধতার প্রতীক। আর দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন সে-ও পেয়েছিল কিন্তু সেটা জন্মের কয়েক বছর স্থায়ী ছিল। রুবাই বলে যে বাবা জড়িয়ে ধরতো হাতে কিটক্যাট নিয়ে সে বদলে গেল। হারালো পরিবার। ঠাঁই হলো অরফানেজে। সেখানেও টিকে থাকার ল ড়াই। ছোটো থেকে অবচেতন মন কিংবা স্বপ্নেই দেখা সেই রি নামক একজনের সাথে কথা ভাগাভাগি করে নেয়া এই করেই জীবনের ১৮-১৯ বসন্ত পেরিয়ে গেছিলো।
তুখোড় মেধার অধিকারী শৈল্পী মেডিকেলে ভর্তি হলো। ভালোই কাটছিল দিন। একদিন সব থমকে গেল চশমাচোখা এক যুবককে দেখে। কল্পনার সাথে বাস্তবের এতো মিল! যে বৃষ্টি যুবরাজকে কল্পনা করে এসছে সেই কুট্টিকাল থেকে সে বাস্তবে আছে! শুরু হলো এক মোহনীয় যাত্রা চোখের নিচে অদ্ভুত সুন্দর তিলওয়ালা শুভ্রর সাথে।

ইশতি যে কি না মেডিকেলের ত্রাস, নির্মম চরিত্রের এক ব্যক্তি। ধনীর দুলাল হলেও শৈশবে বাবা মা হারানো ছেলেটা মানুষ ফুপুর কাছে। একরোখা আর জেদী স্বভাব নিয়েই বড়ো হয়েছে সে। প্রেম আবেগ মানুষকে বদলে দেয়। এজন্যই সিনেমার গান ছিল, ❛আমি পাথরে ফুল ফোঁটাবো শুরু ভালোবাসা দিয়ে❜। ইশতির নির্মম সাগরের ঢেউ থেমে গিয়েছিলো স্নিগ্ধ বেলী ফুলের সুবাসযুক্ত তরুণীকে দেখে। ক্যাম্পাসের সেলিব্রেটি কাপল হিসেবে তকমা পাওয়া এই যুগলের প্রেম চলছিল মেট্রোরেলের গতিতে। কিন্তু ভালোতে যেমন লোকের শুভেচ্ছা থাকে তেমন কুনজর থাকে। সেই নজরই লেগেছিল তাদের। একটু বিশ্বাস আর ভরসার অভাব যেন আগুনে ঘি ঢেলেছিল। ফলাফল সম্পর্কে ভাঙন। কিন্তু চোখের আড়াল কি মনের আড়াল? দু’জনের কেউই কি মন থেকে মুছে ফেলেছিল দু’জনকে? এ তো অনেক জন্মের বন্ধন।
শুভ্রকে হারিয়ে শৈল্পী যেন নিজের আলো হারিয়ে ফেলেছিল। ক্রমেই নিজেকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ভালোবাসা হারিয়ে যায়না। মনের কোণে থাকে। তিক্ত অনুভূতিও সে আবেগকে শেষ করতে পারে না। এদিকে শুভ্র তথা ইশতিও নিজের জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলো মনের কোণে বেলী ফুলের সুবাস ওয়ালা মেয়েটাকে আগলে।
কিন্তু এখানেই কি শেষ? দু’জন তো জন্ম জন্মান্তরের জন্য নিজেদের ভালোবাসায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এক বিশেষ কাজ সম্পন্ন করতে দুজনের আগমন এই পৃথিবীতে।
পুনর্জন্মে এই যুগে এসে অবিশ্বাস থাকলেও প্রকৃতির খেল তো কেউ জানে না। নিয়তি কেউ বদলাতে পারে না। তাইতো আলোক কন্যা আর বৃষ্টি যুবরাজের পুনোরাগমন। এক তাদের হতে হবে।
নাহার নিরাময় হাসপাতালে ঘটে গেছে অদ্ভুত সব ঘটনা। যেখানে ঘটনা সেখানে গন্ধ শুঁকে আগমন হয় সাংবাদিকের। আর এমনই এক সাংবাদিক বা সাংঘা তিক অবনী সুলতানা। হট কেক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। তাইতো জোঁকের মতো লেগে আছে হাসপাতালে ঘটা ব্যাখ্যাতীত ঘটনাগুলোর কেন্দ্রে পৌঁছাতে। সুন্দর মুখশ্রীর আড়ালে কুৎসিত একটা রূপ আছে। যেন সাক্ষাৎ অশুভ সত্তা।

কখনো বাংলাদেশে না আসা আরওয়াহ ছুটে এসেছে বাংলাদেশে এক অমোঘ টানে। যে টান সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে মনের গভীরে থেকে এসেছে। তাকে দেখে অনেকেই কেন স্তব্ধ হয়ে গেছিলো?
জেগে উঠেছে প্রাচীন মিশরের আমলে তৈরি করা এক ভ্রাতৃসংঘ ❛আখওয়াতুল কাহিনা❜ বা, ❛যাজিকার সংঘ❜ কিংবা ইংরেজীতে যাকে বলে ❛দ্য আই❜। যাদের সদস্যরা বিভিন্ন পদ আর দায়িত্বে রক্ষা করে আসছে প্রাচীন চক্র। শয় তানের পূজারীদের সাথে আবার এক সংঘর্ষে লিপ্ত হতে যাচ্ছে। সময় খুব কঠিন কিন্তু মনোবল হারানো যাবে না।

হাজার বছরের অশুভ শক্তি জেগে উঠেছে। নেখতার কি আবার ফিরেছে? আবার চক্র শুরু হবে বা পূরণ হবে? আলো আর আধাঁরের নতুন যুদ্ধ শুরু হবে। এবার কে জয়ী হবে? গুপ্ত সংঘের সদস্যরা জেগে উঠেছে। ধর্ম-অধর্ম দুইদিকেই চলছে তোড়জোড়। সবাই বিজয়ী হতে চায়। কেউ সোজা পথে আর কেউ স্রষ্টার সাথে বেইমানি করে। যেখানে আপন সন্তানও বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

কঠিন পথ সাথে অজানা কিছু প্রশ্ন। একটা ছোট্ট কালো ডায়েরির কী এমন বিশেষত্ব যার জন্য এতো হিংস্র আচরণ? ❛গোল্ডেন ডিস্ক অব লাইভ❜ যেটা কিনা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি তার গুরুত্বই বা কী এই প্রযুক্তির দুনিয়ায়?
দেখাই যাক শেষ বাজিতে কে জিতে। আলোর জয় তো সবসময়েই হয় কিন্তু এর মূল্য চুকাতে হয় চড়া। প্রাচীন মিশরের চক্রের আধুনিক সংস্করণ কতোটা ভালো বয়ে আনে কে বলতে পারে।


পাঠ প্রতিক্রিয়া:

❝শৈল্পী- আলোক কন্যার উত্থান❞ প্রাচীন মিশরীয় পুরাণ, জাদু, অতিপ্রাকৃত আর রহস্যের মিশেলে তৈরি এক উপন্যাস। যা পুরাণের উপজীব্য ফিকশন হিসেবেই পরিচিত।
জানামতে লেখিকার তৃতীয় উপন্যাস এটি। ৬১৭ পৃষ্ঠার বিশাল আকারের উপন্যাসে লেখিকা অতীত ইতিহাস, পুরাণসহ জাদুবিদ্যা, কালাজাদু, জ্যোতিষবিদ্যা সবকিছু তুলে ধরেছেন। সাথে দেশীয় প্রেক্ষাপট জুড়ে দিয়েছেন যা উপন্যাসকে আপন আপন অনুভূতি দিয়েছে।
বিশাল কলেবরের বই এবং পরবর্তী পর্ব আসবে এই হিসেবে এই বইকে একটা স্টার্টার প্যাক বলা যায়। সে হিসেবে উপন্যাসের সূচনা এবং গল্পবুনন ধীর গতির হবে সেটাই আশা করা যায়। এবং উপন্যাসের ২৫০ পৃষ্ঠা সে মান রেখেই কচ্ছপের গতিতে এগিয়েছে। মূল চরিত্রদ্বয়ের সূচনা এবং তাদের দেখা পরিণয় সব মিলে অনেকটা গল্প এগিয়ে গেছে। শুরুতে শৈল্পী অর শুভ্রের প্রেম পিরিতি আর আবেগ দিয়ে হয়তো তাদের অতীত রোমন্থনে জাগিয়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু অতি প্রেম পিরিতি আমার আবার একটু কম পছন্দ হওয়ায় উপন্যাসের এক-তৃতীয়াংশ আমার কাছে নির্যা তন মনে হয়েছে।
এরপর থেকে লেখিকা দ্বিগুণ গতিতে গ��্প এগিয়ে নিয়ে গেছেন আর গল্প বলেছেন দারুণভাবে যা একেবারে শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছে। এরমধ্যে এসেছে অতীত ইতিহাস, স্মৃতিচারণ, কিছু প্রশ্নের উত্তর আবার নতুন কোনো রহস্যের সূচনা। সবমিলিয়ে উপভোগ্য একটা যাত্রা ছিল। বিশাল কলেবরের লেখায় অনেক সময় লেখার খেই হারিয়ে যায়। বিরক্তি আসে। এক্ষেত্রে লেখিকা শুরুর দিকের বিরক্তিকে পরে ভালো লাগায় পরিণত করতে পেরেছেন।
উপন্যাসের বর্ণনার ধরন বেশ ��পভোগ্য। অতীত আর বর্তমানের ভাষার ধরন, কথার বা উক্তির ব্যবহার, দর্শনের প্রয়োগ ছিল পরিমিত এবং পর্যাপ্ত। বাংলাদেশের বৃষ্টিখ্যাত পরিবেশে হুট করে মরুভূমির মতো কল্পনা এনেছেন যা ঘটনার কল্পনাকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আবার ভয়ানক ভীতিকর যে আবহের বর্ণনা করেছেন সেগুলো বেশ শীতল করা অনুভূতি জাগিয়েছে মনে। এমনকি রিভিউ লেখার সময়েও পড়ার সময়ের কথা ভেবে একটু একটু ভয় পাচ্ছি। কারণ রাত জেগে রিভিউ লিখছি আর বাড়ির পাশে শিয়াল ডাকছে। যথেষ্ঠ ভয়ানক বটে!
বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে সবথেকে আলোচিত পুরাণের চরিত্রের সাথে যে ব্লেন্ড হয়েছে সেটা সত্যিই দারুণ। জানা অজানা আর গল্পের মাঝে এদিক সেদিক হাতড়ে যাচ্ছিলাম। শেষটাও লেখিকা দারুণ নিপুণতার মাধ্যমে করেছেন। জাগিয়েছেন অনেক প্রশ্ন যার জন্য পরের পর্বের অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।

চরিত্র:

উপন্যাসে অনেক অনেক চরিত্র ছিল। শুভ্র, শৈল্পী মূল হলেও তাদেরকে আলোকিত করতে এবং আধাঁরের মুখোমুখি করতে বহু চরিত্রের উদয় হয়েছে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উপন্যাসের ভীত ছিল। রুপু, রিভী, আরিহা, মৃত্তিকা, নীল, নিষাদ, আবীর এই চরিত্রগুলো উপন্যাসে প্রাণের সঞ্চার করেছে। কারো গম্ভীর ব্যক্তিত্ব, কারো ঢিলেঢালা ব্যবহার সব মিলিয়ে রিনরিনে একটা পরিবেশ বিস্তার করেছে উপন্যাস জুড়ে।
আবার সুন্দর অনুভূতিকে নষ্ট করতে ডক্টর মুশতাক তানজীম, অবনী কিংবা সবুজ পাথরের আংটিওয়ালা আলখেল্লা ওয়ালীর মতো চরিত্রের উপস্থিতি ছিল। ভালো আর মন্দের ভারসাম্য ছিল। অবনীকে দেখলেই বন চ টকেনা দিয়ে দিবো জাতীয় অনুভূতি হওয়ার পিছনে লেখিকার তাকে গা জ্বা লা ধরানো ভাবে উপস্থাপন করার নিপুণতা ছিল। তবে অবনীর আগমনের কিছু পরে থেকেই তার অতীত নিয়ে আমি যেমন সন্দেহ করছিলাম তেমন মিলে গেছিল শেষে।
মূল চরিত্র বাদে আমার কাছে নোয়াখাইল্লা বেলালকে বেশ মনে ধরেছে। তবে কিছুক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্র ভুলে করা কিছু ভাঁড়ামি বিরক্ত লেগেছে।
আরিহাকে আমার অতিমাত্রায় ন্যাকা ষষ্ঠী লেগেছে। যদিও অতীত হিসেবে সে এমন এক ক্ষমতার ধারক যার বাহক একটু তারছেড়া স্বভাবের। তবুও তাকে একটু বেশিই বিরক্ত লেগেছে।
নেখতার নামক চরিত্রের পরিচয় আর তাকে নিয়ে আশাকরি সামনের পর্বে অনেক কিছু জানা যাবে।
রুবাইয়াৎ আর রাহনুমা নামের দুটো চরিত্রের নাম আমার নামের একেবারে কাছাকাছি বিধায় একটু বেশি ভাল্লাগছে।

একটু খারাপ লাগা দিক:

১. শুরুর ২৫০ পেইজের মতো আগেই বলেছি জুতের লাগেনি।
২. এছাড়াও প্রতিটা জুয়ান (২০-২৯ বছরের মাঝামাঝি) চরিত্রের মাঝে যে অসীম ন্যাকামি ছিল সেটা আমার ভালো লাগেনি। নারী পুরুষ নির্বিশেষে গাল ফুলিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা বেমানান লেগেছে।
৩. শৈল্পীর ছোটকালে তার মায়ের সাথে কথোপকথনে পচানি দিবো, দিচ্ছে জাতীয় শব্দের প্রয়োগ আমার ভালো লাগেনি তেমন।
৪. মিনহাজের বোন সমর্পিতা দশম শ্রেণীর ছাত্রী সে ভাইয়ের কোলে ঝুলে পড়ছে (এমনই ছিল দৃশ্যটা হয়তো! সঠিক খেয়াল নেই) ব্যাপারটা কেরাম কেরাম লেগেছে। এখানেও যথেষ্ঠ ন্যাকা ব্যাপার ছিল।

যেসব প্রশ্ন মনে জেগেছে:

এনে স্পয়লার থাকতে পারে। চোখ বুজিয়া থাকেন।

১. পাঁচ বছর বয়সে শৈল্পী উবার কোথায় পেল? কোন সালের ঘটনা?
২. এমবিবিএস করে ইন্টার্ন শেষে হাসপাতাল সামলানো শুরু করে বয়স ছাব্বিশ কী করে হয়? (পরে আটাশ হয়েছিল)
৩. নন্দিতার ভাই ভাবীর চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে কী করে সারাক্ষণ কথা হচ্ছিল। কোন সাল? তখন হাতে হাতে মুঠোফোন ছিল?
৪. নীল ভাইয়া কে এক বা দুই জায়গায় নিলয় নামে সম্বোধন।
৫. জন্মের সময় অপহরণ আর পরে আরেক ঘরে কেমনে পালিত হয় সেটার জন্য ব্যাখ্যা নেই।
৬. শফিক সাহেবের অদ্ভুত আচরণের পিছে অবশ্যই কোনো বাজে সত্তা ছিল কিন্তু সেটার জবাব নেই। পরের বইতে থাকবে আশা করি।
৭. শফিক সাহেবের পরের স্ত্রীকে দেখে শৈল্পীর কাছে আপন কেন মনে হচ্ছিলো? তার পরিচয় প্রকাশ হয়নি। রাবেয়ার ঘটনাও পরিষ্কার নয়।
৮. শুভ্রের চাচীর মৃ ত্যু নিয়ে ধোঁয়াশার কোনো উত্তর ছিল না।
৯. তৃপ্তিকে যে ফলো করতো গাড়ির ভেতর থেকে তাকে দেখে তার শারীরিক ত্রুটি নির্ণয় কীভাবে সম্ভব ছিল?
১০. সেদ্ধ ডিমের ভেতর টিকটিকি তো এমনেই দেখা যাওয়ার কথা অন্ধের মতো না খাইলে। সেটা না দেখে কেমনে গিলে ফেললো?
১১. এটা উপন্যাসের প্লটের সাথে সম্পর্কযুক্ত না যদিও। কয়েক জায়গায় ❛ইতিনিক❜ শব্দের প্রয়োগ ছিল। সেটার মানে কী? ইউনিক না এথনিক?


প্রচ্ছদ:

ডেমোটা আমার বেশ পছন্দের ছিল। হালকা নেভি ব্লু রংয়ের যেটা ছিল। এই প্রচ্ছদটা হয়তো মূল চরিত্র আর থিমের সাথে মিলে গেছে কিন্তু আমার বেশ একটা ভালো লাগেনি।

আশা করি পরের পর্বে মনে আসা প্রশ্নের জবাব মিলবে এবং আলোক কন্যার উত্থানের সূচনা আলো ছড়িয়ে যাবে পাঠকের মনে।
শুভ আর আলোর জয় হোক। পঁচারা সব বিনাশ হোক।
Profile Image for Ridwanul Haq.
3 reviews1 follower
June 18, 2023
ফ্যান্টাসি সাহিত্য নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে প্রচুর কাজ থাকলেও বাংলা সাহিত্যে মৌলিক রচনা কেবল হাতে গোণা কিছু। যতই অস্বীকার করা হোক না কেন, সাহিত্য অবশ্যই দেশ কাল পাত্রের কথা বলে এবং এরাই দিনশেষে মৌলিকত্বের বিরাট অংশ সামনে আনে। আসন্ন ‘ শৈল্পী : আলোক কন্যার উত্থান ’ বইটির আলোচনা, সমালোচনা তাই এদিক থেকে বাংলা ধারার স্বার্থেই পাঠকদের সামনে আনার দরকার মনে করি।
আমরা জানি, ফ্যান্টাসি ধারা আমাদের অনেকেরই পড়তে তেমন আগ্রহ কাজ না। যদিও এ ধারার ভিত্তিতে তৈরি পর্দার কাজগুলি বেশিরভাগ দর্শকেরই অবসরের প্রশান্তি দেয়। হ্যারি পটার, গেম অব থ্রোন্স, উইচার কিংবা লর্ড অব দ্য রিংসের মত ফ্যান্টাসি সিরিজগুলো কিন্তু বিশ্বব্যাপী দর্শক কুড়োনোর আগে অজস্র পাঠকের মন জয় করে এসেছে। বহু আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, হচ্ছে। এখানেই যেই ব্যাপারগুলো আসে, পরিচিত এই পশ্চিমা কাজগুলো তাদের জগৎগুলো কাল্পনিক হলেও ভিত্তিটা নিজস্ব কৃষ্টি থেকেই নিয়েছে। কোন সাহিত্যের স্বার্থকতা সঠিক কোথায় তার রায় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না, কিন্তু মৌলিকত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পূর্বোক্ত এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে আলাদা জোর দেওয়া যায় নিঃসন্দেহে।
শৈল্পীর গল্পে আপনারা পাবেন আমাদের অতি পরিচিত চারপাশের জগৎ, কাল্পনিক বা পর্দায় দেখা না, একদম আপনাদের নিত্যদিনের জীবন।
আর যেহেতু ফ্যান্টাসি, যার জনরা মোটামুটি মিথোলজিকাল অকাল্ট হরর আর থ্রিলার হিসেবেও দেখা যায়, এদিক থেকে আরো কিছু কথা বলবার দরকার আছে।
প্রথমত, মিথোলজিকাল যেহেতু, মূলত মিশরীয় পৌরাণিক চরিত্র নিয়ে এখানে কাহিনী বাঁধা হয়েছে। আর আগেই যেমন বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ আমাদের চারপাশের প্রেক্ষাপটে লেখা, কাজেই বিভিন্ন ধর্মের স্পর্শ এখানে অনিবার্যভাবেই থাকবে।
অনেকেই এই কারণে অস্বস্তিতে পড়তে পারেন, শুরুতে ক্ষুব্ধও হতে পারেন ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে। সেক্ষেত্রে কেবল নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কেই আরেকটু বিশদ জানাশোনা এবং বইয়ের উপস্থাপনার দিকে লক্ষ্য করলেই এমন ধারণা থেকে বের হওয়া যায়। এমনিতেও আমরা যখন সুপারহিরো মুভি-সিরিজ দেখি বা কমিক পড়ি তখন কিন্তু এরকম অনুভূতি কাজ করে না, যদিও বা এই দুই ক্ষেত্রেই একই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান। এখানে প্রোটাগনিস্ট / অ্যান্টাগনিস্ট, মূল চরিত্র, পার্শ্ব চরিত্র যা-ই বলুন না কেন আপনার প্রতিদিনকার দেখা জীবন। এই যাত্রায় আপনি নিজ আসনে বসে থেকে একটা অভিজ্ঞতা পাবেন যার ভিত্তি আপনার বিশ্বাসের উপর না বরং সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা জগতের নিয়মে। এবং যার মূল প্রোথিত মিশরীয় মিথোলজিতে।
বইটির ভাষা বর্ণনা, শব্দচয়নের ক্ষেত্রে বলা যায় এখানে বাংলার উপস্থাপন এমনভাবেই করা হয়েছে যে প্রাথমিকভাবে অনুবাদের মত মনে হতে পারে। সেই রেশ কাটার পর মনে হতে পারে অতি ব্যাকরণ বা শব্দ ব্যবহার। এমনকি সংলাপগুলোও প্রচলিত ও পরিচিত প্রকারের বাইরে, অনাকাঙ্ক্ষিত লাগতে পারে। এখানে মূলত লেখিকার সৃষ্টিশীলতারই প্রতিফলন, নিজস্ব রচনাশৈলী। এমনকি পড়তে পড়তে অজস্র ‘ নতুন বাংলা শব্দই ’ আপনি আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন, যা আপনি জানেন না অথচ বাংলায় সবসময়ই ছিল।
গল্পের নায়ক শুভ্র, নায়িকা এবং মূল চরিত্র শৈল্পী, আন্দাজ করতে পারেন যে কিনা অন্ধকারের বিপরীত শক্তির বরকন্যা। অবশ্যই থাকবে মন্দলোক, গল্পের ভিলেন। পাবেন অনাকাঙ্ক্ষিত চমক। অকাল্ট যেহেতু, পাবেন গুপ্তসংঘ, তাদের আচার, প্রথা। পাবেন বিভিন্ন সংকেট, চিহ্ন, ধাঁধা। পাবেন পাবেন প্রাচীন দৈববাণী, পাবেন শুভ আর অশুভের লড়াই। তবে তাদের রূপ হবে আপনার আমার মতই একদম সাধারণ কিন্তু গোপন কোনো উদ্দেশ্য, ক্ষমতাসহ মানুষেরই বেশে।
লেখিকাকে শুভকামনা তাঁর এই বিশাল কলেবরের বইটির জন্য। এত বিরাট কাহিনী সাজাতে কী পরিমাণ ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা অনুমানও কষ্টসাধ্য। এই পরিশ্রম, কষ্ট আর সময় স্বার্থক হবে পাঠকের কাছে তাঁর গল্পের তৃষ্ণা মেটাতে পারলেই। শুভ্র
শৈল্পীর যাত্রায় আপনাকে স্বাগতম।
Profile Image for Eva Mojumder.
73 reviews1 follower
February 23, 2024
আলো বলে, ‘অন্ধকার, তুমি বড় কালো।’
অন্ধকার বলে, ‘ভাই, তাই তুমি আলো।’

একটা সময় পরীক্ষার খাতায় লিখার জন্য এই ভাব-সম্প্রসারনটা পড়লেও কখনো এসব নিয়ে ভাবা হয়নি। জানা হয়নি ছোট্ট দুটি লাইনে লুকিয়ে থাকা অন্তর্নিহিত সেসকল অর্থ। কিন্তু আজ ‘শৈল্পী’ বইটা পড়ার পর চট করে সর্বপ্রথম এই দুটো বাক্যই মাথায় এলো। যে দুটো বাক্যকে অনেকগুলো বছর পূর্বে স্কুলের গন্ডিতেই আটকে রেখে এসেছিলাম।

পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই পাশাপাশি দুটো অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি। সে শুভ বা অশুভই হোক কিংবা আলো ও আধার অথবা ভালো ও মন্দ বা পবিত্র ও অপবিত্র। সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থিত হয়েও একই সুতোয় গাঁথা রয়েছে যেন সেইসকল শক্তি! দুটোর কোনো একটারও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হওয়া কোনোকালেই সম্ভব নয়। সম্ভব নয় শুভ কিংবা অশুভের সম্পূর্ণ বিনাশ। আমাদের এই পৃথিবী একটা ভারসাম্যের উপর টিকে আছে। যুগে যুগে সে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছে অনেক অনেক মহান ব্যক্তিরাও। কালের গর্ভে তারা আবার হারিয়েও গিয়েছে। তবু শুভ ও অশুভ টিকে রয়েছে আজো, অনন্তকাল। সৃষ্টির শুরু থেকে ধ্বং'স পর্যন্ত...

❝দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি,
সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?❞

সত্য সত্যই! হাজার চেঁচিয়েও সত্যকে মিথ্যে প্রমাণিত করা যায় না। আর সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবি। সত্যকে কখনো দূরেও সরিয়ে রাখা যায় না। পুরো পৃথিবীর কাছে সত্যকে মিথ্যে প্রমাণিত করা গেলেও আমরা নিজের বিবেকের কাছে এসে হেরে যাই। হেরে যাই আমাদের অনুতপ্ত সত্তার কাছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ বোধহয় ড. মুশতাক তানজীম ও তৃপ্তি নামক মেয়েটি। আর অন্যভাবে দেখতে গেলে প্রাচীন সেই সত্তাগুলোও। হাজার চেষ্টার পরেও সত্যের সামনে ধরা দিতে হলো তাদের। অন্তত নিজেদের অপূর্ণ কাজের পূর্ণতার জন্য হলেও!

‘শৈল্পী’— আলোক কন্যা, প্রাচীনতম প্রাণ, হোরাসের হাথর, দূষিত র'ক্তের বিশুদ্ধ উত্তরাধিকারী। এ গল্প শুধুমাত্র শৈল্পী কিংবা শুভ্রর নয়, এ গল্পে রয়েছে প্রতিটি চরিত্রের আলাদা আলাদা অবস্থান, আছে তাদের নিজস্ব অতীত। প্রথমেই শৈল্পীর কাছে ফেরা যাক। অদ্ভুত এক বিষন্ন চোখের মেয়ে। হাসি-খুশি মুখের মেয়েটির চোখের দিকে তাকালেই যেন নিমিষেই বিষন্নতা গ্রাস করে নেয় অন্যদিকের মানুষটিকে। কিন্তু কিসের এতো কষ্ট তার, এতো যন্ত্রণাই বা কিসের? কোন গোপন রহস্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটি? এ রহস্যের শেষ কোথায়?

শৈল্পীর শুধু বিষন্ন দুটি চোখই ছিল না, সে নিজেও ছিল পুরোপুরি অদ্ভুত ধাঁচের, অন্যরকম। ছোটবেলা থেকেই অদ্ভুত সব ঘটনা, কষ্ট, হাহাকার সইতে সইতে মেয়েটি একটু একটু করে তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু কিসের জন্য? জানা নেই তার। শুধু জানে তার পিছুটান আছে। কিছু একটা প্রতিনিয়ত হাহাকার করে বেরায় বুকের মাঝে। অজানা এক কষ্ট বয়ে চলেছে সে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে। শুধুমাত্র চিরচেনা অদ্ভুত একটি গল্প বাদে। আলোক কন্যা ও তার বৃষ্টি যুবরাজের গল্প। গল্পের শেষে মেয়েটি কি তার বৃষ্টি যুবরাজের দেখা পায়? প্রতি জন্মের মতো এবারও তাকে হারিয়ে ফেলে না তো? গল্পের সমাপ্তি কি তবে একই রয়ে যাচ্ছে এবারও? নাকি প্রতিবারই?

‘শৈল্পী...শুভ্র’, ‘শুভ্র আর শৈল্পী’, ‘শুভ্র-শৈল্পী’— নামটা ভিন্ন, কিন্তু ইতিহাস বহু পুরনো। একে অন্যের জন্য জন্ম নেওয়া অবিচ্ছিন্ন দুটি সত্তা তারা। কিন্তু প্রতিবারই নিয়তির কাছে হারতে হয় তাদের আর অবর্ণনীয় এক কষ্ট নিয়ে অবিচ্ছিন্ন দুটি সত্তার বিচ্ছেদ ঘটে যায়। বহু বছর পর আবারও তাদের দেখা। আর এরপর প্রণয়। তারপর? তারপর পূর্বের মতোই সীমাহীন দূরত্ব সে প্রণয়ে। এবারও কি তবে বিচ্ছেদই তাদের গল্পের সমাপ্তি? কিন্তু এখনো যে অনেকগুলো রহস্যের সমাধান বাকি। বাকি অনেকগুলো অপূর্ণ কাজ। যার কারনে চক্র পূরণ করে পুরনো প্রাণদের পুনরায় ফিরে আসা!

শুভ্র ও শৈল্পী বাদেও এ গল্পের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো ড. মুশতাক তানজীম। আগাগোড়া রহস্যে মোড়া এ চরিত্রটিই শুভ্র ও শৈল্পীর মধ্যকার দূরত্বের প্রধান কারণ। কারণ আরো অনেক অশুভ ঘটনার। শৈল্পীর ভেতরকার আলোকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নেওয়া অন্ধকারের পেছনেও রয়েছে এই অশুভ আত্মা। শয়তানের দোসর সে, প্রার্থনা করে লুসিফারের কাছে।

এখানেই শেষ নয়। আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক ছায়ামানব রয়েছে এ গল্পে। বহুবছর পূর্বের গল্পেও যার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল। নেখতার! আলোক কন্যা হাথরের সেই কলঙ্কিত মা। বহু বছর পূর্বে তার সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকলেও এ গল্পে খুব বেশি ভূমিকা পাওয়া যায়নি নেখতারের। তবে আমি নিশ্চিত তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী এই মহিলা চুপচাপ বসে নেই। বরং সকল কিছুর পেছনে কলকাঠি সেই নাড়ছে। যা হয়তো আমরা সিরিজের পরবর্তী বইয়ে দেখতে পারি।

এছাড়াও এই গল্পে রয়েছে চরিত্রের ছড়াছড়ি। আর বেশিরভাগ চরিত্রগুলোই গল্পের জন্য খুব বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। আরিহা, এ মেয়েটিকে একটু বেশিই ভালো লেগেছে আমার আর আছে তার বাচ্চামো স্বভাব। আরেকটা চরিত্রও আমার প্রিয়-এর তালিকায় রয়েছে। আবির! বিশুদ্ধ ভালোবাসার উদাহরণ দিয়ে গিয়েছে ছেলেটি। চাওয়া পাওয়ার উর্ধে গিয়ে কেবল ভালোই বেসেছে। বিনিময়ে শুধুই ভালো চেয়েছে ভালোবাসার। আরো আছে রুপু, নিষাদ, নীল, রিভী, মিনহাজ, নিয়াজ, তৃপ্তি, আঙ্কেল পল, আরওয়াহ, শৈল্পীর রহস্যময় বাবা, নন্দিতা। এরা বাদেও স্বল্প গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রও ছিল। তবে যে চরিত্রটির কথা না বললেই নয়। সে হলো অবনী সুলতানা, দেশকথকের সাংবাদিক। এই চরিত্রটিতে খানিকটা অশ্লীলতার ছোঁয়া রয়েছে, রয়েছে সস্তা জোকের ঝুলি। তবে শেষের টুইস্টে এসে অনেকটাই চরিত্রের সাথে মানিয়ে গিয়েছে ভদ্রমহিলা।

এবার বইটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক নিয়ে কথা ���লা দরকার। আমরা সকলেই জানি বইটি ফ্যান্টাসি জনরার। তাই কল্পনার মিশেলে আমরা পাবো নতুন মাত্রার সকল ঘটনা, এটা তো জানা কথাই। কিন্তু অতীতের ঘটনা, পৌরাণিক ঘটনাগুলো নিজের মতো করে লেখক যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এছাড়াও গা শিরশিরে অনুভূতি তৈরি করতে লেখক একশভাগ সফল হয়েছেন। আমার মিথলজিবিষয়ক জ্ঞান একেবারেই শূন্যের কোটায়। তাই এসকল বিষয়কগুলো ক্যাচ করতে খানিকটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল অবশ্য। এছাড়াও কোন তথ্যটা লেখকের কল্পনা আর কোনটা লোকমুখে সত্যিই প্রচলিত এসব বুঝতেও ধকল গেছে। যেমন একটা গুপ্তসংঘের অনেকটাই ভূমিকা আছে এই বইয়ে। কিন্তু এই সংঘের সত্যিই কোনো অস্তিত্ব কখনো ছিল কিনা জানা নেই আমার।

আমার যতদূর মনে হয় মেডিকেলের স্টুডেন্টরা খানিকটা হলেও বেশি রিলেট করতে পারবে বইটির সাথে। কারণ বইটির বেশ অনেকটা জুড়েই মেডিকেল লাইফের ঘটনা উঠে এসেছে। এছাড়াও বন্ধুত্বের টান, ভালোবাসা, এমনকি পাগলাটে ভালোবাসার ছোঁয়াও রয়েছে। বাস্তবিক আরো কিছু ব্যাপারও আমি ধরতে পেরেছি, জানি না অন্যদের কাছে সেসব ধরা পড়েছে কিনা। অনেককিছু ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন মনেও পড়ছে না কিছু। বইয়ের মাঝে এমনভাবে ঢুকে গিয়েছিলাম যে নোটপ্যাডে টুকে রাখতেও মনে ছিল না।

‘শৈল্পী’ বইয়ের একটা কথোপকথন কেন যেন একটু বেশিই বিষন্ন ও হৃদয়বিদারক মনে হয়েছে আমার।

‘ম্'ত্যু কেমন?‘
‘গল্পের সমাপ্তির মতো। গল্পটা যেমনই হোক, সমাপ্তিতে হাহাকার থাকে।’

যেন এক টুকরো বাস্তবতা বইটির পাতায় এসে উঁকি দিয়েছে। আমি দেখেছি বেঁচে থাকতে অবহেলিত মানুষটার জন্যেও মৃ'ত্যুর পর অসংখ্য মানুষ কেঁদেছে। আবার, বেঁচে থাকতে সবার ঘৃণিত ব্যক্তিটিও মৃ'ত্যুর পর কিভাবে যেন অনেকের প্রিয় হয়ে যায়। অনেকগুলো আবেগ ও কষ্টের বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে যেন ছোট্ট এই বাক্যটিতে।

আগেই বলেছি মিথলজি নিয়ে খুব বেশি জ্ঞান নেই আমার। তাই বইটা পড়ার সময়ও খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে অনেকগুলো প্রশ্নের। এখন সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর বইয়ে আছে কিনা, আমিই এড়িয়ে গিয়েছি কিনা বুঝতে পারছি না। এছাড়াও অনেকগুলো চরিত্র ও অনেকগুলো ঘটনা প্রবাহ একইসাথে হওয়ায় বুঝতেও সমস্যা হচ্ছিল। তাই এড়িয়ে যাওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

অনেক প্রশ্ন মাথায় ও মনে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। জানি এটাই সিরিজের প্রথম বই। তাই সকল প্রশ্নের উত্তর এখানে আশা করাটাও বোকামি। তবে লেখিকার প্রতি একটা অভিযোগ রয়েছে আমার। গল্পের শেষটা নিয়ে। এতোটা তাড়াহুড়ো করার কি খুব দরকার ছিল? শেষদিকে এসে মনে হয়েছে সবটা এতোই সহজ? শুরুর আগেই শেষ। যেই নরক নিয়ে এতো ঘটনা, সেখানেই শুভ্ররা নির্বিঘ্নে নিজেদের কাজ করে ফেললো? তবে কি সবচেয়ে কঠিন কাজটাই ছিল চক্র পূরণ? যেটা শুভ্রর মাধ্যমে হয়েছে? কেননা বেশিরভাগ কাহিনি ডায়েরিটাকে ঘিরেই ঘটেছে। কিন্তু শুভ্র তার পূর্বের সত্তা ফিরে পাওয়ার পর সবটা একটু বেশিই সোজা মনে হলো। শুরুটা যত ধীর ছিল, শেষটা ছিল ততই দ্রুত।

বই- শৈল্পী: আলোক কন্যার উত্থান
লেখক- সুজানা আবেদীন সোনালী
প্রকাশনী- নালন্দা
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৬১৮
মুদ্রিত মূল্য- ১২০০ টাকা
Profile Image for Md Abdul Kayem.
183 reviews3 followers
October 11, 2023
শৈল্পী আলোক কন্যার উত্থান মিশরীয় মিথলজিকে ভিত্তি করে বাংলার বুকে ঘটে চলা চমৎকার এক অ্যাখান। যেখানে একদিকে যেমন উঠে এসেছে শৈল্পী শুভ্রের ভালোবাসার গল্প ঠিক পাশাপাশি এগিয়ে গেছে মিশরীয় মিথলজি থেকে উঠে আসা কিছু চরিত্র নিয়ে রোমাঞ্চকর এক অভিযানের গল্প। যেখানে একদিকে যেমন ক্ষমতার লালসায় মেতে উঠেছিলো চরিত্র গুলো, আরেকদিকে জমে উঠেছিলো আলো আঁধারের লড়াই।

মিশরীয় মিথলজি, গুপ্তসংঘ আর ভৌতিক আবহে  শৈল্পী দারুণ উপভোগ করেছি। যেখানে প্রথমে গল্প শুরু হয় অতি সাদামাটা কমন প্রেমের উপন্যাস দিয়ে, শৈল্পী শুভ্রের প্রেমের অধ্যায় দিয়েই লেখক গল্পের সূচনা করলেও গল্প এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন দ্রুত গতিতে, যার ফলে খুব দ্রুতই গল্প প্রেম থেকে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। তারপরও প্রথম প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠার গল্প খুবই মনন্তর,  এই পর্যায়ে লেখক গল্প সাজিয়েছেন তৈরি করেছেন একের পর এক রহস্য। যে রহস্যের সুতো গুলো ছেড়েছেন পরবর্তী পৃষ্ঠা গুলোতে। তাও বেশ রয়েসয়ে।

প্রথম আড়াইশো পৃষ্ঠার কাহিনি মনন্তর হলেও এর পরের গল্প বেশ গতিশীল, শেষদিকের কাহিনি গুলোতে গোগ্রাসে পড়ে গেছি। তারপরও মাঝে মাঝে নারী চরিত্রগুলোর অতি ছেলেমানুষী আচরণ খুব বেশি নাটকীয় লেগেছে,  বিশেষ করে সিরিয়াস মূহুর্তে বা বিপদের সময় মজা করার বিষয়গুলো প্রচন্ড দৃষ্টিকটু ছিলো। সবথেকে মনে বাজে খারাপ প্রভাব ফেলেছে অবনী চরিত্রটা বিশেষ করে গল্পে সাংবাদিক হিসেবে তার আচরণের বর্ণনা, অশ্লীল রসবোধ। অবশ্য শেষদিকে এসে যখন গল্প মোড় নেয় তখন তাকে আর তেমন খারাপ লাগেনি, গল্পের সাথে দারুণ মানিয়ে গেছে।

গল্পের শুভ্রর ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তৈরি করা রহস্য গুলোর ভালো সমাধান হলেও, শৈল্পীর ব্যাকগ্রাউন্ডের বেশ অনেকগুলো নিয়ে বরাবরই ধোঁয়াশাই রয়ে গেছি অবশ্য যেহেতু শৈল্পীর গল্প সবে শুরু বলা যায় তাতে আশাকরি লেখক পরের খন্ডে সেসব ক্লিয়ার করবেন। এক্ষেত্রে নেখতারও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে গল্পে বর্ণিত হলেও গল্পে এই চরিত্রের ভূমিকাটা আমার খুব কমই চোখে পড়েছে, অথচ ভেবেছিলাম এই চরিত্র নিয়েও কিছু গল্প হবে। শুধু তাই না আরওয়াহ, জমজ দুই বোন চরিত্রদুটোর গুরুত্বও ঠিকভাবে বর্ণনায় ফুটে উঠেনি। এছাড়াও নরক ভ্রমণের এবং হায়দার ম্যানশনের সমাপ্তির গল্প আরে বিস্তারিত হলে ভালো হতো, খুব দ্রুতই যেনো গল্পের সমাপ্তি হয়ে গেলো। এছাড়াও হাসপাতালের একের পর এক খুন নিয়ে সাংবাদিকদের গল্পে ভালো প্রভাব থাকলেও গল্পে পুলিশের অনুপস্থিতি ভালো লাগেনি।

লেখিকার ভৌতিক আবহ তৈরি এবং লেখনশৈলী দুটোই আমাকে মুগ্ধ করেছে, বিশেষ করে এতোটা পরিপক্ব লেখনশৈলী আমি আশা করিনি। এছাড়াও মাঝেমাঝে মিথলজিক্যাল চরিত্রগুলোর কথোপকথনে যে দার্শনিক একটা ভাব ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেছেন, শব্দ নিয়ে খেলতে চেয়েছেন তা খুবই ভালো লেগেছে। তবে ভৌতিক আবহ বেশ ভালো ভাবে তৈরি করলেও দানব পিচাশগুলোর বর্ণনা আরো বিস্তারিত হলে ভালো হতো, এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে বর্ণনা দিতে লেখক বড়ো বেশিই কৃপণতা করেছেন।

গল্পটার প্রেক্ষাপট এই বাংলার বুকে আবর্তিত হয়েছে, গল্পের প্রয়োজনে এসেছে অনেকগুলো চরিত্র, এতো পরিমাণ চরিত্র গল্পে ছিলো যে গল্পটা প্রেক্ষাপট যদি বাংলার না হতো নামগুলো যদি বিদেশি হতো আমি নির্গাত চরিত্রগুলো নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তাম। তবুও বলবো শৈল্পী মিথলজিক্যাল ফিকশন হিসেবে দারুণ গল্প, একেবারে মুগ্ধ হয়েছি।

এতো বড়ো বইয়ের স্ট্রেইট বাইন্ডিং দেখে খারাপ লেগেছিলো দুটে কারণে একটা হলো পড়তে অসুবিধা আর দ্বিতীয়ত বাইন্ডিং না দূর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু পড়া শেষে স্ট্রেইট বাইন্ডিং বড়ো বইয়ের ক্ষেত্রে আমার বরাবরই অপছন্দের হলেও নালন্দার প্রোডাকশন বরাবরই চমৎকার হয়েছে, বাইন্ডিংও মজবুত রয়ে গেছে। আর বানান ভুল নেই বললেই চলে, দু'চারটা অবশ্য টাইপিং মিস্টেক চোখে পড়েছিলো তাও খুব বেশি গণনায় ধরার মতো নয়। সাথে বইটার প্রচ্ছদটা কিন্তু দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।
1 review
December 1, 2025
শৈল্পি আমার পড়া অন অফ দ্যা বেস্ট ফ্যান্টাসি থ্রিলার।
এটাকে অনেক দিক দিয়ে ভাগ করা যায়
এক দিক দিয়ে এটা যেমন প্যারাসাইকোলজিক্যাল থ্রিলার তেমনি অনেকটা মিথিক্যাল থ্রিলার বটে।
আমার প্রথমে ভরসা হচ্ছিল না এত মোটা বই পড়া সম্ভব ?
কিন্তু প্রচ্ছদটা দেখে লোভ সামলাতে পারিনি🙂
বুকসপে অনেকবার বলেছি যে এই বইটা চেঞ্জ করে অন্য বই দিলে ভালো হয় কারণ বাংলাদেশের স্টুডেন্ট হয়ে এত গুলো টাকা অযথা খরচ করা খুবই কষ্টের বিষয়।
কিন্তু ভাই বারবার বললেন একবার অন্তত পড়ে দেখতে....
তাই নিয়ে নিলাম।
এখন বলতেই হয় আমি লস করিনি।
আমার বুকশেলফ এর একটা তাক থাকে আমার সবথেকে প্রিয় বই গুলোকে রাখার জন্য।
ক্লাসে মাঝেমাঝে যেমন ব্যাকবেঞ্চার হঠাৎ ফার্স্ট হয়ে যায়
এই বইটাও আমার সেই পছন্দের বই এর তাকে জায়গা করে নিয়েছে।
এই বইটা পড়ার পরই জুলিয়ান স্যার এর আশিয়ানী শেষ করার ইচ্ছা জেগেছিল(যেটা অর্ধেক পড়ে ১ বছর আর ধরার সাহস হয়নি পরে ৩ দিনে বাকি অর্ধেক শেষ করেছি)
লেখিকার লেখনী অনেক সুন্দর।বেশি কঠিন শব্দ ব্যবহার করেননি।বোরিং হওয়ার হওয়ার জায়গা খুব কম ছিল।।
শুধু একটা বিষয়....
ভিতরের চিত্র গুলো আর একটু সুন্দর হলে ভালো হতো।।।

দ্বিতীয় খন্ডের ঘোষণা বই এর শেষে দেয়া থাকলেও...
লেখিকা হয়তো ভুলে গেছেন🤧🤧

দ্বিতীয় খন্ডের অপেক্ষায়
Profile Image for Mahir Shahriar.
33 reviews8 followers
December 7, 2024
একটা বইয়ের বিল্ডআপ, লেখার স্টাইল, একশন সিকোয়েন্সের বর্ণনা সবই কিভাবে এতটা বাজে হয়? সম্পাদক বললেন এই বইয়ের জন্য তিনি হায়ারোগ্লিফিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। হায়ারোগ্লিফিক্সের ছিঁটেফোঁটা পেলাম না বইয়ের মধ্যে। জোর করে পড়া লাগল একটা বই।
Profile Image for ChestnutMan.
2 reviews
June 25, 2023
It was a bad experience I would suggest anyone not to read it.
Displaying 1 - 12 of 12 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.