অবিশ্বাস্য উপন্যাসটি যে কোন বড় মাপের সৃষ্টিশীল কাজের মত বহুমাত্রিক। ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ উপন্যাসটিতে আদ্যন্ত। বুঝতে কিছুমাত্র অসুবিধা হবেনা, তুলনামূলক ধর্মতত্বের একজন প্রত্যয়নিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণ স্কলারের পক্ষেই এই ধরণের উপন্যাস পরিকল্পনা অনায়াসে সম্ভব। এক অর্থে এই উপন্যাসটির বিষয়ঃ নৈতিকতার সংকট ও উত্তরণের চেষ্টা। পাপবোধ ও আত্মগ্লানিকে বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং জীবন রসরসিকতার প্রেক্ষিতে নায়কের আত্মজিজ্ঞাসাকে সর্বজনীন অন্বেষণে উন্নীত করার প্রয়াস।
কাহিনীসংক্ষেপঃ ছোট্ট এক মহকুমা শহর মধুগঞ্জে অ্যাসিস্টেন্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ হয়ে আসলেন আইরিশম্যান ডেভিড ও-রেলি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এলাকার বাঙ্গালী আর অন্যান্য সাহেব, মেমদের মন জয় করে নিলেন সদাহাস্য এ তরুণ। কিছুদিন পর বিয়েও করলেন। কিন্তু বিয়ের আগের আর পরের ও-রেলীর মধ্যে এত পার্থক্য কেন?
Syed Mujtaba Ali (Bengali: সৈয়দ মুজতবা আলী) was a Bengali author, academician, scholar and linguist.
Syed Mujtaba Ali was born in Karimganj district (in present-day Assam, India). In 1919, he was inspired by Rabindranath Tagore and started writing to the poet. In 1921, Mujtaba joined the Indian freedom struggle and left his school in Sylhet. He went to Visva-Bharati University in Santiniketan and graduated in 1926. He was among the first graduates of the university. Later, he moved to Kabul to work in the education department (1927–1929). From 1929 to 1932 he studied at the universities in Berlin, London, Paris and Bonn. He earned Ph.D. degree from University of Bonn with a dissertation on comparative religious studies in Khojas in 1932. In 1934-1935 he studied at the Al-Azhar University in Cairo. Subsequently, he taught at colleges in Baroda (1936–1944) and Bogra (1949). After a brief stint at Calcutta University (1950), Mujtaba Ali became Secretary of the Indian Council for Cultural Relations and editor of its Arabic journal Thaqafatul Hind. From 1952 to 1956 he worked for All India Radio at New Delhi, Cuttack and Patna. He then joined the faculty of Visva-Bharati University (1956–1964).
মুজতবা আলীর অবিস্মরণীয় এক সৃষ্টি। মানুষের জীবন পাপ ও পুণ্যের অতি সূক্ষ্ম ব্যবধান দন্ডায়মান,কখন যে তার বিচ্যুতি ঘটে তা কেউ জানেনা। আর ঈশ্বর কিংবা নিয়তি যে মাঝে মাঝে মানুষকে নিয়ে নিষ্ঠুর পরিহাস করে তার এক জ্বলন্ত উদাহরন।
এই বইয়ের রিভিউ-টিভিউ হয় না। ইনফ্যাক্ট, এমন একটা গভীর অথচ সহজ, গম্ভীর অথচ সুরেলা উপন্যাস যে বাংলায় লেখা হয়েছে, তা ভাবলেই স্তম্ভিত হতে হয়। এখনও না পড়ে থাকলে অবিলম্বে ত্রুটি সংশোধন করুন, প্লিজ।
মুজতবা আলী'র বই নিয়ে ক্রিটিক্যাল কিছু লেখা আমার মতো চুনোপুঁটির পক্ষে সম্ভব না। বইটা পড়ে জীবন, ধর্ম, পাপ, পুণ্য, ন্যায়-অন্যায় নিয়ে চিন্তাগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। ডেভিড ও-রেলি'র প্রতি জীবনের নিষ্ঠুর রসিকতা কিংবা চ্যালেঞ্জের কারণ চিন্তা করে অকারণ হতাশায় অজান্তে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে - মানুষের জীবন কতটা খেলো সেকথ চিন্তা করে। আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি সূক্ষ্ম এক সুতোর উপর। একচুল গরমিলে সেই সুতো থেকে খসে পড়ার সম্ভাবনা।
জানিনা এই উপন্যাসটাকে কিভাবে বর্ণনা করা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে পূর্ব বাংলার মধুগঞ্জে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে পরিচয় হয় পাদ্রি টিলার মিশনারিদের সাথে, পুলিশের এসিসট্যান্ট সুপারিটেন্ডেন্ট ডেভিড ও' রাইলির সাথে, মেবলের আর সোমনাথের সাথে, মুরুব্বি রায়বাহাদুর কাশীশ্বর চক্রবর্তীর সাথে। আমাদের গল্প ঘিরে থাকে বিলিতি ক্লাব ঘর, যেটার আরেক নাম খানাসামারা দিয়েছিল 'আন্ডাঘর', তাকে ঘিরে।
জরথ্রুস্ত্র বলেন, "সৃষ্টির প্রথম থেকেই আলো-আঁধারের দ্বন্দ্ব"। তাই এই গল্প 'আহুর মজদা' বা ভগবানের এবং 'আহির মন' বা শয়তানের৷ এই গল্প ডক্টর জেকিল এবং মিস্টার হাইড এর। এই গল্প আমাদের..
সৈয়দ মুজতবা আলীকে আমি চিনতাম তার রম্য-উপন্যাস দিয়ে। রম্য-উপন্যাসের বাইরে এটি তার অসাধারণ সৃষ্টি। উপন্যাসটি ডেভিড ও-রেলি নামে এক আইরিশ ম্যানকে নিয়ে যে মধুগণ্জে আসে পুলিশের চাকরি নিয়ে। বিয়ের আগে ও পরের তার মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এবং নিয়তি যে মাঝে মাঝে মানুষকে নিয়ে কি নিষ্ঠুর পরিহাস করে তার এক জলন্ত উদাহরণ। এক অর্থে উপন্যাসটিতে ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট এর মতো psycho-analysis করেছেন। অপরাধ করে অপরাধীর পাপবোধ, নৈতিকতা, এবং অপরাধের পেছনের কারণ অনেক সুন্দর করে তোলে ধরা হয়েছে। এবং লেখক বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন তা প্রশংসনীয়।, যদিও উপন্যাসের শুরুটা অনেকটা slow, কিন্তু শেষটা অসাধারণ। বই এর শেষের কয়েটা লাইন, ""তাই আমার গোরের উপর নিচের দুটোর যে-কোনো একটা খোদাই করে দিতে পার : (For a Godly Man’s Tomb) Here lies a piece of Christ; a star in dust A vein of gold; a china dish that must Be used in Heaven, when God shall feast the just.""
“(For a Godly Man’s Tomb) Here lies a piece of Christ; a star in dust A vein of gold; a china dish that must Be used in Heaven, when God shall feast the just. কিংবা (For a Wicked Man’s Tomb) Here lies the carcasse of a cursed sinner, Doomed to be roasted for the Devil’s dinner
ডেভিড ও-রেলি। " উপন্যাসের শেষ পাতায় গল্পের মুল চরিত্র 'ডেভিস ও-রেলি' এর কবর ফলকের জন্য ও-রেলি নিজেই তার অধিনে কর্মরত সোম কে লেখা দীর্ঘ চিঠির শেষে উল্লেখ করেছে।
মুজতবা আলী সাহেবের বই পড়ার তিব্র আকর্ষণ কাজ করে যখন কোনো ধরনের ঘোলাটে মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, এমন সময়ে।হাতে গোনা কয়েকজন লেখকের বই এমনই অদ্ভুত অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমার পড়তে ভালো লাগে।কিছুটা হলেও মস্তিষ্ক ঝড় শান্ত হয়। বইটা শেষ করেছি মুলত ঠিক ঠিক ঘড়ির হিসেবে, ২৮ অক্টোবর রাত ১২.০১ মিনিটে। তবে শুরু করেছিলাম বেশ কিছু দিন আগে,নানা ব্যস্ততা, খারাপ লাগার কারণে বইটা শেষ করতে পারছিলাম না। তবে বইটা আমার কাছে বেশ লেগেছে। প্রথম খন্ড শেষ করে দ্বিতীয় খন্ডে অবশ্য মনে হতে পারে যেন ধীর এবং খাপছাড়া লেখা,যেন বেশি ইলাবোরেট করা হয়েছে ছোট - বড় সব ঘটনা।তবে মুজতবা সাহেব নিজের স্বভাব চরিতভাবেই উপন্যাসের প্লট দাঁড় করিয়েছেন যেমনটা তিনি তার একটু দীর্ঘ উপন্যাসের ক্ষেত্রে করে থাকেন। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর স্বভাব - চরিত্র তাদের নিত্য কিছু কাজের বর্ণনা লিখে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এসকলই ৩য় খন্ড থেকে ঘটনাগুলোর নিজস্ব কারণ দাঁড় করাতে থাকবে অবিশ্বাস্য ভাবে।একে একে সবগুলো ঘটনা,ও-রেলির করা বিভিন্ন সময়ের কাজকর্ম, সুঠাম দেহী ও-রেলির হঠাৎ নিজ টিলায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি সময় অবস্থান , ও-রেলির স্ত্রী সন্তানের ইংল্যান্ড পাড়ি এবং ও-রেলি পরিবার নিয়ে নানা গুজব রটনা - সকল কিছু সুতার প্যাচ খোলার মতো উন্মোচন হতে শুরু করবে। বইটার কোনো স্পয়লার দিতে চায় না। প্রথম দিকে পড়তে বোরিং লাগলেও ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে উপন্যাসের খন্ডগুলোতে ততকালীন ভারতবর্ষের বিদেশি এবং দেশীয় সাধারণ এবং উচ্চশ্রেণির মানুষের উভয়ের মধ্যাকার নানা সংঘাত এবং মিলের নানা দিক বেশ উপভোগ্য মনে হয়েছে আমার কাছে। মুজতবা সাহেব তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রম্য - রসনায় উপন্যাসটা এগিয়েছে এবং শেষে অবিশ্বাস্যই বটে, রহস্য সমাধান করেছেন। সময় পার করতে উপন্যাসটা তাই মন্দ নয়।।🌷🌷🌷
অবিশ্বাস্য দুর্দান্ত একটা উপন্যাস। উপন্যাস পড়া শেষ করে যেটা ভেবেছি সেটা হলো এখন এরকম থ্রিলার কাহিনী নিয়ে অহরহই মুভি সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। মুজতবা আলী আরও ৬৪ বছর আগেই এসব লিখে গেছেন। উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপ বলার চেয়ে আমি এখানে উপন্যাস পড়ার সময়টুকু যে জার্নি হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারি।
উপন্যাসের শুরুটা খুবই নিস্তরঙ্গ। সেই ব্রিটিশ আমলে প্রতিদিনকার জীবন যাপনের স্বাভাবিকতা হাসি আনন্দ দারুণ তুলির আঁচড় কেটে লিখেছেন মুজতবা আলী। পড়তে পড়তে কখন যে উপন্যাসের আবহটা গুমোট হয়ে উঠবে বুঝতে পারবেন না। এরপর আপনাকে টুইস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন কীনা টের পাওয়ার আগেই শুরু হয়ে যাবে সাইকোলজিক্যাল টর্চার। আপনার চিন্তায়, দর্শনে প্রতিনিয়ত ধাক্কা দিয়ে লেখা উপন্যাসের বাকী অর্ধেক।
আটপৌরে দিনপঞ্জির মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসাধারণতম ঘটনা নিয়ে এই কাহিনি। অথচ তাতে লীন নিত্যকার জীবনের পাপ-তাপ, হৃদয়ের অনির্বচনীয় আত্মদ্বন্দ্ব ,নৈতিক সংকট ও তা থেকে উত্তরণসম্পর্কিত ধর্মতত্ত্ব।অন্য দশটা কাহিনির মতো সরল গল্প বলে যাওয়া নয়।কারণ লেখক যে সৈয়দ মুজতবা আলী। গল্পের ভূত ভবিষ্যৎ, দর্শন-ভূগোল সম্পর্কে পাঠককে জানাতে সদা অকৃপণ সৈয়দ মুজতবা আলী।
ব্রিটিশ ভারতীয় পুলিশকর্তা ডেভিড ও- রেলি, যিনি কি না হাসি গল্প আর মধুর স্বভাবে মাতিয়ে রাখছে মধুগঞ্জের সকলকে। সবাই খুব পছন্দ করেন এই আইরিশ যুবককে। একদিন ও রেলি সাহেব চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে বিলাত গেলেন। ফিরলেন প্রিয়তমাকে পত্নীরুপে বরণ করে। মধুগঞ্জে সুখের ঘর বাঁধলেন। কিন্তু সুখ তো মরীচিকাসম।আদৌ সুখের নাগাল কি সকলে পায়? ও রেলি কি পেয়েছিলেন সেই সুখ নামক মরীচিকার সন্ধান? না, পেলেন না। অধরাই থেকে গেল এ জন্মে। বরং একদা মজলিশি মানুষ ও-রেলি ক্লাবে আসা বন্ধ করে দিলেন। সঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন নিঃসঙ্গতাকে। কেন ও রেলি এরকম করছেন, কিসের কষ্ট তাঁর সে অনুসন্ধানে নেমে পড়ে তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী।আর এই অনুসন্ধান শেষ হয় এক অবিশ্বাস্য ঘটনার মাধ্যমে।ও-রেলির বাংলোর লিচু গাছের নীচে পাওয়া যায় তিনটি কঙ্কাল। কারা এরা? কীভাবে আর কেনইবা এখানে এলো জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন মুজতবা আলীর এই নাতিদীর্ঘ উপন্যাসটি।
শয়তান আমাদের পাপ করতে পরিপূর্ণ সাহস, আত্মপ্রত্যয় দেয়, উপায় ও বাতলে দেয়। কিন্তু সেটা করবার পর সে করে ছলনা বা বিশ্বাসঘাতকতা। অর্থাৎ আর আগের মতো পাশে থাকে না। প্রথম যেমন আমাদের কনভিন্স করায় নেয় এটা পাপ নয় ; এটাই উচিৎ, উত্তম। আচমকা এই শয়তানিতে শায় দিয়ে ও'রেলি পরাজিত হয় তার আহির মনের কাছে, অথচ এই আহির মন-ই এই কাজটি তাকে করায়।
বিয়ের আগে ও পরে তার বিরাট মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনে তার ডানায় মেলে দেওয়া জীবনটা হঠাৎ ঝড়ে ধসে যায়। what is fair and what is unfair এই দ্বন্দে ও'রেলির উত্তরণের চেষ্টা বুঝি আমাদের বড় কোনো একটা --------- দিয়ে যায়
একটা লেখা কখন পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়? আমি কোন সাহিত্য সমালোচক নই, কাজেই শুধু নিজের মতামতটাই দিতে পারি। যখন লেখক কোন বিষয়কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রাখেন আর সেটা সুচারু শব্দচয়নে আমাদের সামনে তুলে ধরেন। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় এই দুটো ব্যাপারের কোন কমতি নেই। অবশ্য তাঁর নিয়মিত পাঠকদের কাছে এটা কোন নতুন তথ্য নয় হয়তো। আমি পাঠ্যবইয়ের বাইরে তাঁর লেখা এই প্রথম পড়লাম। অনুভূতি? এই ছোট ৮০-৯০ পাতার উপন্যাসটি যতক্ষণ পড়েছি, এতেই বুদ হয়ে ছিলাম। জগতের অন্য সবকিছুর থেকে ক্ষণিকের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিলাম।
"অবিশ্বাস্য" উপন্যাসের মুলগল্পটি বেশ ছোট। দৈনন্দিন জীবন থেকে একটু বাঁকা পথে চলে যাওয়া একটা কাহিনী, কিন্তু খুব অচেনাও না। মোটামুটি মাঝপথে এসে বুঝে যাওয়া যায় যে ব্যাপারটা কী ঘটেছে। সেখানে পাঠকের জন্য কোন চমক নেই। চমক রয়েছে অন্য কোথাও, যেমন- মূলগল্পের সাথে সাথে ঘটে যাওয়া আনুষঙ্গিক ঘটনাগুলোতে। চমক রয়েছে কিছু নিঃস্বার্থ সম্পর্কের বর্ণনায়। নিঃস্বার্থ মানে কিন্তু আসলেই নিঃস্বার্থ। না বন্ধু, না শত্রু, তবুও দুর্দিনে পাশে কে আছে খোঁজ করলে তাদেরকে পাওয়া যায়, এমন সম্পর্ক। আর সবচেয়ে বড় চমক রয়েছে মানুষের মনে, তাদের চিন্তাভাবনায়, তাদের জীবনবোধের তত্ত্বে।
আইরিশম্যান ডেভিড ওরেলি পুববঙ্গের নৈসর্গিক শহর মধুগঞ্জে এলেন এএসপি হয়ে। অল্প সময়েই শহরের নেটিভ-সাহেব সবার মন দখল করে নিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল-বকবকানি প্রবণ এই তরুণ। নেটিভদের নৌকা বাইচ থেকে সাহেব-সুবার ক্লাব সর্বত্রই তার গুনমুগ্ধজনের মুখে তার সুনাম। শহরের বেবাক কিশোরি-তরুণির আরাধ্য ওরেলি ইংলান্ড থেকে তার বাগদত্তা মেবল কে বিয়ে করে মধুগঞ্জে ফেরার পরই সবকিছু কেমন বদলে গেল। ও-রেলি দম্পত্তি কেমন যেন সামাজিক সংপর্শ এড়িয়ে চলে। তাদের নিয়ে নানান কানাঘুষা শোনা গেল কিছু। সৃষ্টির শুরু থেকে ভালো-মন্দের, আহুরা মাজদা-আহুরা মনের যে দ্বন্দ্ব আর এই দ্বন্দ্বে দ্বিধান্বিত মানব মনের টানাপোড়নের উপাখ্যান সৈয়দ মুজতবা আলীর 'অবিশ্বাস্য' উপন্যাস। নানান জাতি-ধর্ম বিষয়ে সুপণ্ডিত আলী সাহেব তার মানব মনের গহীন অজানা থেকে আবেগ-অনুভূতিকে নিপূনভাবে ছেঁকে তোলার পারদর্শীতায় মানব মনের অন্তর্দ্বন্দ্বকে শব্দে ধরেছেন অসামান্য দক্ষতায়। উপন্যাসের শেষে ওরেলি তার এপিটাফে খোদাই করে দেবার জন্য সহকর্মী সোমকে যে দুটি কবিতা থেকে একটি বেছে নিতে বলেছেন -তার কোনটি বেছে নেবেন সে বিষয়ে পাঠকমাত্রই দ্বিধান্বিত হবেন নিশ্চিত। 'অবিশ্বাস্য' আদতেই অবিশ্বাস্য!
❝অবিশ্বাস্য❞ উপন্যাসটি যে কোন বড় মাপের সৃষ্টিশীল কাজের মত বহুমাত্রিক। ধর্ম ও ধর্মীয় অনুষঙ্গ উপন্যাসটিতে আদ্যন্ত। বুঝতে কিছুমাত্র অসুবিধা হবেনা, তুলনামূলক ধর্মতত্বের একজন প্রত্যয়নিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণ স্কলারের পক্ষেই এই ধরণের উপন্যাস পরিকল্পনা অনায়াসে সম্ভব। এক অর্থে এই উপন্যাসটির বিষয়ঃ নৈতিকতার সংকট ও উত্তরণের চেষ্টা। পাপবোধ ও আত্মগ্লানিকে বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং জীবন রসরসিকতার প্রেক্ষিতে নায়কের আত্মজিজ্ঞাসাকে সর্বজনীন অন্বেষণে উন্নীত করার প্রয়াস।