The truth is rarely simple. The common consensus is that Swami Vivekananda, as Sri Ramakrishna's chosen disciple, spread his master's message across the world. The fact, though, is that after Ramakrishna's death in 1886, Vivekananda not only shifted the devotional emphasis of the new monastic order from Kali to Shiva, he also embraced a world far removed from Ramakrishna's. Cosmic Love and Human Apathy is the story of this rupture. Integral to the tale is the issue of Hindu identity. The essays in this volume examine Vivekananda's formulation of Hinduism as religion: the most definitive restatement of Hinduism in modern history. Erudite yet accessible, consistently probing and sceptical of hoary traditions, controversial and thought-provoking, Cosmic Love and Human Apathy is an invaluable addition to the existing scholarship on one of India's greatest religious and social icons.
Jyotirmaya Sharma is professor of political science at the University of Hyderabad, India. In December 2010, the Swedish Collegium of Advanced Study at Uppsala elected him Fellow for the Spring Semester of 2012. The Lichtenberg-Kolleg at Goettingen has also elected him Fellow for the academic year 2012-13. His recent publications include, Hindutva: Exploring the Idea of Hindu Nationalism (Penguin/Viking, 2003; second edition published in december 2011; it has been translated into Marathi, Telugu and Malayalam) and Terrifying Vision: M.S. Golwalkar, the RSS and India (Penguin/Viking, 2007; translated into Malayalam). His critical examination of the ideas of Swami Vivekananda and 19th century restatements of Hinduism has now been published as Cosmic Love and Human Apathy: Swami Vivekananda's Restatement of Religion (HarperCollins, 2013). He is currently working on the thought of Gandhi. An edited volume titled Grounding Morality: Freedom, Knowledge and the Plurality of Cultures (co-edited with A. Raghuramaraju) was published by Routledge (2010). He has been a fellow of the Centre for the Study of Developing Societies and the Indian Institute of Advanced Study, and has lectured at the universities of Baroda, Hull, Oxford, and the St. Stephens College, Delhi. He was visiting professor in democratic theory at the South Asia Institute at Ruprecht-Karls University at Heidelberg in 2005. The International House, Japan, awarded him the Asia Leadership Fellow Programme fellowship for 2008. Sharma also held senior editorial positions at the Times of India and The Hindu between 1998-2006, and continues to write occasional columns for Mail Today, Hindustan Times and Outlook.
Book: Cosmic Love And Human Apathy: Swami Vivekananda's Restatement Of Religion Author: Jyotirmaya Sharma Publisher: HarperCollins (11 January 2013) Language: English Hardcover: 328 pages Item Weight: 352 g Dimensions: 20 x 14 x 4 cm Country of Origin: India Price: 400/-
বইটি এক কথায় অসাধারণ। লেখক ততধিক প্রতিভাসম্পন্ন।
বইটির মূল premise কী ?
বইটি হচ্ছে একটি - 'engaging portrait of Swami Vivekananda and his relationship with his guru, the legendary Ramakrishna. Sharma’s work focuses on Vivekananda’s reinterpretation and formulation of diverse Indian spiritual and mystical traditions and practices as “Hinduism” and how it served to create, distort, and justify a national self-image...'
যাই হোক। ৩২৯টি পৃষ্ঠা ব্যয় করে লেখক বুঝিয়েছেন মূলত দু'টি বস্তু :
১) শ্রীরামকৃষ্ণের 'তথাকথিত' অকপট সত্যানুরাগ, নিপীড়িত মানুষের প্রতি অকৃপণ প্রেম এবং যুক্তিবাদে আস্থা, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের যাবতীয় অসঙ্গতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের যোগ্য উত্তরসূরি বিবেকানন্দ নন ;
২) 'স্ববিরোধ' আকীর্ণ বিবেকানন্দই বর্তমান ভারতের হিন্দু জাগরণের হোতা।
লেখক পান্ডিত্যপূর্ণ , তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছেন যে ঠাকুরের কালীসাধনার ধারা তো স্বামীজী প্রত্যাখ্যান করেছিলেনই , উপরন্তু ঠাকুরের অপরিমেয়, নিয়ন্ত্রণমুক্ত, সীমাশূন্য কালী কালী আবেশ বিবেকানন্দকে যারপরনাই বিরক্ত করতো। ৩২৯ পাতার বইটিতে অন্তত সাতবার, কারণে অকারণে মহেন্দ্র সরকারের, ঠাকুরকে বলা 'সাঁওতাল Bi*ch' প্রসঙ্গটি এসেছে।
লেখক বলছেন: After Ramakrishna’s death in 1886, Vivekananda shifted the devotional emphasis of the newly founded monastic order to the worship of the more masculine Shiva, and, quietly but decisively, exiled Kali into obscurity and insignificance.
আমরা জানি যে এক কথায় স্বামী বিবেকানন্দ শিবসাধক, বৈদান্তিক সন্ন্যাসী। এ কথাও বহুবার বহুজন বলেছেন যে বীরেশ্বরকে সে ভাবে শক্তিসাধক শ্রীরামকৃষ্ণের যোগ্য উত্তরসাধক বলা যাবে না। বাস্তবিকে শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনার প্রতিনিধি নেই। তিনি অনন্য।
আমরা তাঁকে শক্তিসাধক বলি কেবল এই কারণে যে, তন্ত্রের সব বিভাগে তাঁকে সাধনা করতে হয়েছে, এমনকি মারণ, উচাটন, বিভূতি লাভ, সব হয়েছে। তিনি সে সবের প্রয়োগ করেননি। গুরু ভৈরবী ব্রাহ্মণীর প্রখর নির্দেশনায় কেবল তন্ত্রের মাধ্যমে চৈতন্যশক্তির জাগরণ হয়েছে। তাঁর কাছে তন্ত্র ও বেদান্তের সাধনার ফল একই।
অন্য দিকে, স্বামীজির উপাস্য উমানাথ, সর্বত্যাগী শঙ্কর, মন্ত্র ছিল ‘শিবোহম্’ আর লক্ষ্য ছিল পূর্ণ মনুষ্যত্ব ও তার পরে দেবত্বের স্ফুরণ।
আর ঠাকুরের কথা বলতে গেলে?
ঠাকুরের কাছে ধর্ম কখনওই আচারসর্বস্ব ছিল না। প্রচলিত গড়পড়তা ধর্মাচার্যদের সঙ্গে এখানেই তাঁর প্রভেদ। এ জন্যই বর্তমানের অস্থির প্রহরে দাঁড়িয়েও শ্রীরামকৃষ্ণচর্চায় মেলে মুক্তিপথের সন্ধান। এই কারণেই প্রতীচ্যের জ্ঞানীগুণীদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণ প্রতিভাত হয়েছেন ‘ফেনোমেনন’ হিসাবে। অলডাস হাক্সলি, ক্রিস্টোফার ইশারউড, আঁদ্রে জিদ, রোম্যঁা রলাঁ, আর্নল্ড টয়েনবিসকলেই বিমুগ্ধ শ্রীরামকৃষ্ণের ভাববিপ্লবে। এঁদের সকলের কাছেই রামকৃষ্ণদেব এক ‘অত্যাশ্চর্য আবির্ভাব’।
নরেন সম্পর্কে ঠাকুরের মনোভাব প্রসঙ্গে আলাদা করে লেখা অপ্রয়োজনীয়। বরঞ্চ স্পেকট্রামের অপর দিকটি দেখা যাক।
এই বইয়ের লেখক বহু জায়গায় [অন্তত উনিশটি ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে] প্রমাণ করতে উদ্যত যে বিবেকানন্দের যুক্তিসম্পন্ন মনীষার কশাঘাতে ঠাকুরের ভাববাদ খণ্ডিত হয়েছে এবং তাঁর গুরুর সদর্থক অনুসারী তাঁকে কোনওভাবেই বলা যায়না। ক্রমাগত প্রশ্ন তোলা হয়েছে ভক্ত বিবেকানন্দকে নিয়ে।
সামান্য কয়েকটি কথা বলতে চাইবো।
বীরেশ্বর ভক্ত। ভক্তির উচ্চতম ভাব তাঁর জীবনে অনেকবারই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, "শ্রীরামকৃষ্ণের বাইরে ছিল ভক্তি, কিন্তু অন্তরে তিনি জ্ঞানী ছিলেন ; আর আমি বাইরে জ্ঞানী, কিন্তু অন্তরে আমার ভক্তি।"
রোমের সেন্ট পিটার্স গির্জাতে একবার সন্তদের পটের উপর রাখা প্রতীকগুলি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে দেখছিলেন বিবেকানন্দ। যখন পাশ্চাত্য ভক্ত আলবার্টা প্রশ্ন করেছিলেন বেদান্ত-প্রচারক বিবেকানন্দকে, "স্বামীজী আপনি তো ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, এ সব জিনিসের প্রতি আপনার এত সম্মান প্রদর্শন কেন?" অন্তরের ভাব গোপন করে বিবেকানন্দ উত্তর দিয়েছিলেন, "আলবার্টা, যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করে থাক, নিশ্চয়ই তোমার শ্রেষ্ঠ জিনিসটি তাকে দেবে।"
মাদ্রাজে এক জায়গায় হঠাৎ শ্রীরামকৃষ্ণের ছবি দেখে বিবেকানন্দ স্তব্ধ আবেগে অশ্রুসজল হয়ে কেবল বলতে পেরেছিলেন, "ইনিই আমার গুরু।" শিষ্যা ক্রিস্টিন লিখেছিলেন, "বিবেকানন্দের গুরুভক্তি ছিল অনবদ্য। ভক্তি, আনুগত্য, এ সব শব্দ তাঁর জীবনে নতুন বৈশিষ্ট্য লাভ করেছে।"
শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন বীরেশ্বরের অন্তরে-বাহিরে সদাজাগ্রত। অনন্ত করুণায় ও প্রেমে পরিপূর্ন ঈশ্বর যাঁকে তিনি বলতেন Love personified, অর্থাৎ মূর্তিমান প্রেম। আমেরিকায় তাঁর গুরুর উপর একমাত্র ভাষণ, 'মদীয় আচার্যদেব' শুনে নিবেদিতা লিখেছিলেন, "যে অতীন্দ্রিয় জগতের ছবি তিনি তুলে ধরেছিলেন তা আমাকে বিহ্বল করেছিল।"
অথচ বিবেকানন্দ সেই রাতে অনুতাপে কেঁদেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ, যিনি জগতের একটি প্রাণীর বিরুদ্ধেও কিছু চিন্তা করতে পারতেন না, তাঁকে বর্ণনা করতে গিয়ে বীরেশ্বর অন্যদের কঠোর সমালোচনা করে ফেলেছিলেন। হয়তো বা সে কারণেই গুরুভাইদের বহু অনুরোধ সত্ত্বেও বিবেকানন্দ শ্রী রামকৃষ্ণের জীবনী সাহস পাননি।
তাই একটিমাত্র শ্রেষ্ঠ শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীতে তাঁর হৃদয়ের সমস্ত জ্ঞান-ভক্তি-যোগ উজাড় করে দিয়েছিলেন। সেই মহাসংগীতটি আজ সহস্র কণ্ঠে আবিশ্ব সকল রামকৃষ্ণ-মন্দিরে গীত হয়। বীরেশ্বর লিখেছিলেন :
সুতরাং এই বইয়ের লেখক যখন নানাবিধ উদাহরণ পেশ করে গুরুর প্রতি, বিশেষত গুরুর ভাববাদের প্রতি বীরেশ্বরের আপাত ব্যাঙ্গার্থক মনোভাব সম্পর্কে পাঠককে সচেতন করতে উদ্যত হন , আমরা করুণামিশ্রিত আবেশে দেখি তাঁকে।
আর বীরেশ্বরের কালী-বিদ্বেষ?
তিনি যখন পাশ্চাত্যে বেদান্ত প্রচারে গিয়েছিলেন, ভগিনী নিবেদিতাকে একটি চিঠিতে লিখলেন, "মা আমায় রক্ষা করছেন এবং হৃদয়ের সমর্থন জোগাচ্ছেন"। বাংলার রক্তক্ষরা বিপ্লব ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হয়ে উঠলেন মহাকালী। বাংলার কালীসাধনার নতুন মহিমা প্রকাশ পেল। আদ্যাশক্তি মহামায়া বীর সন্তানের কাছেও ধরা দিলেন। বাংলার এই বীরভাবের সাধনার রূপটি বিবেকানন্দের কথায় ফুটে উঠেছে— “যাঁরা প্রকৃত মায়ের ভক্ত, তাঁরা পাথরের মত শক্ত, সিংহের মত নির্ভীক।
বললেন, "মাকে তোমার কথা শুনতে বাধ্য কর। তাঁর কাছে খোসামোদ কি? জবরদস্তি। তিনি সব করতে পারেন।”
বীরসাধনার পরিচয় ফুটে উঠল বিবেকানন্দের কবিতায়, -
“রে উন্মাদ, আপনা ভুলাও, ফিরে নাহি চাও, পাছে দেখ ভয়ঙ্করা। দুখ চাও, সুখ হবে বলে, ভক্তিপূজাছলে স্বার্থ-সিদ্ধি মনে ভরা। ছাগকণ্ঠ রুধিরের ধার, ভয়ের সঞ্চার দেখে তোর হিয়া কাঁপে কাপুরুষ! দয়ার আধার! ধন্য ব্যবহার মর্মকথা বলি কাকে”?
মাতৃবিদ্বেষ ? কালীবিদ্বেষ ?
রমেশ মজুমদারের উপরোক্ত কবিতা প্রসঙ্গে মত: মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি "যৌনতার আকর্ষণ" ও "প্রেমের মাদকতা" থেকে মুক্তির কথা বলা হয়েছে এই কবিতায়। বীরেশ্বর ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় এই কবিতাটির ইংরেজি নাম রেখেছিলেন And Let Shyama Dance There। এই কবিতাটি "সুভাষচন্দ্র বসুর মনে অজানার প্রতি আকর্ষণ জাগিয়ে তোলে এবং তিনি মাঝে মাঝেই এমনভাবে এই কবিতাটি পাঠ করতেন যে শুনে মনে হত যে তিনি নিজের আদর্শটি এই কবিতার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন।
সুভাষে�� বন্ধু দিলীপ কুমার রায় স্মৃতিচারণ করছেন “আমরণ ছিল সে শক্তিসাধক – কৈশোরেও গঙ্গাজলে নেমে আবৃত্তি করত স্বামী বিবেকানন্দের Kali the Mother থেকে :-
Who dares misery, loves And hugs the form of Death, Dances in Destruction’s dance, To him the Mother comes.
ষোড়শী রূপে উপাসনার মধ্য দিয়ে নারীশক্তির উদ্বোধন, অবহেলার বিপ্রতীপে সম্মানজ্ঞাপন, বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন ঠাকুর। ভৈরবীর কাছ থেকে তান্ত্রিক সাধনায় দীক্ষা, গৌরীমাকে নারীদের সংগঠিত করার প্রয়াস, নারীর অধিকারকেই সুচিহ্নিত করে। সে ধারার যোগ্যতম উত্তরসূরি বীরেশ্বর ব্যতীত কে ?
কালীবিদ্বেষ? বীরেশ্বরের ? করুণা করি লেখককে।
তিন অধ্যায়ে বিভক্ত বইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনুচ্ছেদের অধিকাংশই লেখক ব্যয় করেছেন বীরেশ্বরকে আজকের তথাকথিত হেঁদু সন্ত্রাসবাদের আকররূপে প্রমাণ করতে। আমরা এই অভিযোগ মনেপ্রাণে স্বীকার করি।
হিন্দুত্বের এক অর্থ তো অধ্যাত্মচেতনা। অধ্যাত্মচেতনার স্পর্শ ছাড়া কোনও সংস্কৃতি কেবল সদাচারকে আশ্রয় করে বাঁচতে পারে না। ভারতের অবসাদক্লিষ্ট মানুষ এই অধ্যাত্মভিত্তির জন্যই তো স্বামীজিকে চান।
তিনি শিবচেতনার, শক্তিমহিমার— দেবত্বের প্রচারক। তিনি বলেন: মানুষের অন্তর্নিহিত দেবত্বের বিকাশসাধনই তাঁর জীবনের লক্ষ্য। সব কাজের মাধ্যমে এই সুপ্ত দেবতার ক্রমবিকাশ ঘটবে। শুদ্ধ কাজ চাই, অলস চিন্তা নয়। তাঁর বেদান্ত অত্যন্ত সহজ, সরল। দেবতাকে থাকতে হলে এই জগতেই থাকতে হবে। বস্তুত তিনি জগতেই আছেন, প্রতিটি জীবে, প্রতিটি ধূলিকণায়— জীবই শিব।
এই ‘শিবত্ব’ই জগতের সব কিছুকে যুক্ত করেছে অচ্ছেদ্য বন্ধনে, বহুরূপে সম্মুখে তোমার, সেই দেবতাকে ছেড়ে অন্য কোথায় ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়াও! শিবের অন্বেষণ জীবের ভিতরেই করতে হবে। মানুষের জন্য যে কাজ, সে কাজ এই শিবত্ববোধে করলে কোনও জীবিকাই শাসন, শোষণ, বঞ্চনার মধ্যে সাধিত হতে পারে না। অদ্বৈত বেদান্ত এই ধর্মই শেখায়।
আমরা তা বুঝতে না পেরে তাকে মিথ্যা, জীবনবিমুখ বলে প্রত্যাখ্যান করেছি। ব্রহ্মই চৈতন্য, আর তা সত্য, সেই সত্যে জগৎ প্রতিষ্ঠিত।
হিন্দুত্বের এক অর্থ যদি দেশপ্রেম জারিত ইতিহাসবোধ হয়ে থাকে, তাহলে তো নিঃসন্দেহেই ভারতের ইতিহাসে স্বামীজির গভীর প্রভাব। তিলকের মতো মহারাষ্ট্রীয় চিৎপাবন ব্রাহ্মণ দরাজ হৃদয়ে বলছেন, স্বামীজি হলেন দ্বিতীয় শঙ্করাচার্য।
শ্রীঅরবিন্দ বলছেন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের প্রভাব ছিল বলেই জাতীয় আন্দোলন সম্ভবপর হয়েছিল।
হরিজন আন্দোলনের উপর স্বামীজির প্রভাবের কথা গান্ধীর প্রায় সকল জীবনীকার অকুন্ঠে স্বীকার করেছেন। সর্বশিক্ষা ও শূদ্র জাগরণ প্রসঙ্গে স্বামীজি শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, ‘...এরাই হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড— সব দেশে। একদিন মেথররা কলিকাতায় কাজ বন্ধ করলে হা-হুতাশ লেগে যায়, ...শ্রমজীবীরা কাজ বন্ধ করলে তোদের অন্নবস্ত্র জোটে না... আমি দিব্য চোখে দেখছি, এদের ও আমার ভেতর একই ব্রহ্ম— একই শক্তি রয়েছেন, কেবল বিকাশের তারতম্য। সর্বাঙ্গে রক্তসঞ্চার না হলে কোন দেশ কোন কালে কোথাও উঠেছে দেখেছিস?... তোরা এই mass-এর ভেতর বিদ্যার উন্মেষ যাতে হয়, তাতে লেগে যা।’ এই লক্ষ্য নিয়েই গান্ধীর ‘সর্বোদয়’-এর ভাবনা।
সুভাষচন্দ্র কৈশোর থেকে স্বামীজির প্রভাবে জীবন গঠন করেছেন। উদাত্ত কণ্ঠে সুভাষ ঘোষণা করেছেন, "আমি স্বামী বিবেকানন্দকেই বহন করছি।” হিন্দুত্ব অর্থাৎ দেশপ্রেম ও ঐক্য হলে স্বামীজিই সেই আদর্শের পূর্ণতম উদাহরণ।
এই বইয়ের লেখক অতীব চমৎকার ইংরেজি লিখেছেন। নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। ইংরেজি মোটের উপর মন্দ লিখতুম না। ইতিহাসের উত্তর লিখতে গিয়ে বিশেষ তথ্য না জানলেই ইংরেজি ভাষার চক্রব্যূহে শিক্ষককে চমৎকৃত করতে যেতুম ও ধরা পড়তুম।
এই লেখকের উদ্দেশ্যও কতকটা সেরকমই।
তবু তাঁকে অভিনন্দন জানাতে বাধ্য হচ্ছি বইটির প্রচ্ছদ, অলংকরণ, নির্ভুল ব্যাকরণের জন্য।
এবং যে অগাধ, অসীম, বিশ্রব্ধ, অন্তর্নিহিত, ও সারপূর্ণ মিথ্যার মায়াজাল রচনা করেছেন তিনি , তার জন্যও অভিনন্দন জানাই।
অজ্ঞান-অচেতন মানুষের চৈতন্য হোক, পূর্ণমাত্রায় সচেতনা আসুক— এই ছিল ঠাকুরের কাঙ্ক্ষিত। লেখক মহাশয়েরও চৈতন্য হোক, ঠাকুরের কাছে এই প্রার্থনা করি।