সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত কমলকুমার মজুমদারের গল্প সংকলন। প্রকাশকের নিবেদন বলে যে কমলকুমারের সকল গল্প একত্র করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রন্থে
Kamal Kumar Majumdar (Bengali: কমলকুমার মজুমদার) (17 November 1914 – 9 February 1979) was a major fiction-writer of the Bengali language. The novel Antarjali Jatra is considered his most notable work.
সত্য হইলঃ এই লেখকের জীবনীশক্তিকে আমি শ্রদ্ধা করি । এক একটা গল্প একাধিকবার পড়ার মনোযোগ দাবি করে । আমি সবে তিনটা গল্প পড়ছি দুই বার করে আর দুইটা একবার করে । তাতে বেসিক স্টোরি লাইন কিছু ধরা গেছে । কমলকুমার মজুমদার বাংলা সাহিত্যের একজন টাফেস্ট লেখক । তার ভাষা ও শৈলীর উপর কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের একটা বই আছে, গুডরিডসে নাই । হয়ত অনেকদিন পর আবার পড়ে তার এই আবছা জগতের রেখা ধরতে পারব । তোলা থাকল...
কমলকুমার মজুমদারকে দুর্বোধ্য লেখক বললে বোধ হয় বেশি বলা হয় না। তাঁর 'গল্পসমগ্র'-তে গোটা তিরিশেক ছোটগল্প অর্থাৎ তাঁর লেখা সব গল্পই স্থান পেয়েছে; তিনি লিখেছেন খুব কম। আজ থেকে দিন দশেক আগে পড়া শুরু ক'রে মাঝপথে অর্থাৎ পনেরোটি গল্প প'ড়ে যারপরনাই ক্লান্ত লাগছে। সংকলনের প্রথম দিকের গল্পগুলো থেকে পরের দিকে তিনি যেন নিজেকে আরো দুর্বোধ্য ক'রে তোলায় মত্ত হয়েছিলেন। ক্রমেই আরো obscure হয়েছেন, চলিত থেকে সাধুর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, ক্রিয়াপদ্গুলো এক উদ্ভট বা অভিনব রূপ নিয়েছে, তা ছাড়া তাঁর বাক্যগঠন বরাবরই খেয়ালখুশিমত, সেখানে কোন প্রচলিত লেখকের 'ব্যাকরণ' মানেননি। তবে গল্পগুলোতে যথেষ্ঠ ধার আছে, মানুষের প্রতি মমত্ব আছে, গ্রামের মানুষের চরিত্রের উপর দারিদ্রের প্রভাব প্রস্ফুটিত হয়েছে। 'লাল জুতো' গল্পে যেমন যুবক-যুবতীর প্রেমের হাতছানি আছে, 'মল্লিকা বাহার' গল্পে একটা সমকামিত্বের (Lesbianism) আভাস আছে, তবে তা খুবই সন্তর্পণে। 'জল', 'তেইশ' ও 'নিম অন্নপূর্ণা' গল্পগুলোতে দারিদ্র্যের ট্রিট্মেন্ট ও উপস্থাপন হৃদয়ে আঘাত ক'রে যায়। 'তাহাদের কথা', 'রুক্মিণিকুমার' গল্পে স্বদেশী আন্দোলনে বিধ্বস্ত পরিবারের, মানুষের চমৎকার বর্ণনা পাই, 'কয়েদখানা'-য় পাই নব্যসামন্তের অত্যাচার ও গরীবের বিদ্রোহের ইংগিত। 'মতিলাল পাদরী' religious delusion এবং আশাভঙ্গের জটিলতাসম্বলিত একটা গল্প।
এখানে এসে আপাতত ক্ষান্ত। পরে আবার বইটা নিয়ে বসব হয়তো কোনোদিন, হয়তো না। কমলকুমার মজুমদারদেরই বোধ হয় বলে Writers' writer.
সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদারের সাহিত্যশৈলী সম্পর্কে সকলেরই জানা। যারা জানেন না, তাদের বিনীতভাবে জানাচ্ছি, বাংলা সাহিত্যে এই মানুষটি একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন। তার গল্প ঠিক গল্প বলা নয়; বরং ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতাকে একের পর এক আবিষ্কার করে চলা। খুব ছোটো ছোটো বিষয় বা আবেগ বা ঘটনা তার সাহিত্যের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে নির্দ্বিধায়। তাকে তিনি ফুটিয়ে তোলেন এমন এক আবহে, যা পাঠকের মনকে যতটা না জারিত করে, তার চেয়েও বেশি মস্তিষ্কের গ্রে সেলগুলোকে প্রভাবিত করে।
খুব বেশি যে লিখেছেন, তা নয়; গল্পসমগ্র বললে অন্য অনেক লেখকের যেমন কয়েকখণ্ড বইয়ের কথা আমাদের মনে হয়; তেমন নয়। এখনও অব্দি এই একটিই খণ্ড। যদিও ভূমিকাতে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, কারও কাছে কমলকুমার মজুমদারের অপ্রকাশিত গল্প থাকলে সেটা পাঠাতে; কিন্তু আজ অব্দি তেমন ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। ফলে এ গল্পসমগ্রকেই কমলকুমার মজুমদারের সকল গল্পের ডালি বলা যেতে পারে। মাত্র ২৯টি গল্প আছে এখানে।