Jump to ratings and reviews
Rate this book

কালো বরফ

Rate this book
Abdul Khaleq teaches in a crumbling old college in a village in newly independent Bangladesh. His life is mostly on an even keel until he sits down to chronicle his childhood - an endeavour that draws him inexorably into his memories and into an enchanting world somewhere in suburban Calcutta. He remembers the girl who spoke to fish and birds, the girl he first loved. He recalls the stream of visitors to his parents' door those days, some bearing want, some malice and others, generosity and wisdom. As those memories return him to a time when communal tension was gathering force in undivided Bengal and the trauma it brought to his younger self, Khaleq's remembrance stops being a pleasant retreat. He becomes desperately despondent.

Khaleq's relentless nostalgia enrages his wife Rekha, who resents his lack of ambition and aloofness. Prodded by the village physician, Doctor Narhari, the couple embark on a boat ride that forces them to confront their discord and desires, and plumb the roots of Abdul Khaleq's alienation.

First published in 1977 in Bengali, Black Ice draws on Mahmudul Haque's own experience of Partition to intimately probe the invisible scars bequeathed to the inheritors of Partition.

130 pages, Hardcover

First published April 1, 1992

30 people are currently reading
896 people want to read

About the author

Mahmudul Haque

20 books111 followers
Mahmudul Haque (Bangla: মাহমুদুল হক) was a contemporary novelist in Bangla literature. He was born in Barasat in West Bengal. His family moved to Dhaka after the partition in 1947. His novels deal with this pain of leaving one's home.

Mahmud gave up writing in 1982 after a number of acclaimed novels. Affectionately known as Botu Bhai and always seen as a lively figure in social gatherings, the rest of the time he was said to lead a solitary life.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
383 (52%)
4 stars
241 (32%)
3 stars
78 (10%)
2 stars
23 (3%)
1 star
9 (1%)
Displaying 1 - 30 of 180 reviews
Profile Image for Zunaed.
54 reviews119 followers
October 9, 2017
তখন চুইংগাম পাওয়া যেত একটাকায়। এখনও কি যায়? জানি না। অনেকদিন খাওয়া হয় না। সে যাক, সেই চুইংগামের মত দেখতে একরকম ইরেজার পাওয়া যেত। ক্লাসে দেখলাম কারো কাছে। আমার এক কাজিন থাকতো আমাদের সাথে। আপু কলেজে যেতো, পথে আমাকে স্কুলে দিয়ে যেতো। আমি বায়না ধরলাম, আমারও চাই। কিনলাম। ক্লাসে গিয়ে মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করলাম। এ যে খাওয়ার জিনিস নয়, মুখে না দিয়ে বুঝতে পারিনি। এমনই এক বয়স তখন আমার।

আব্বুর কলেজের কোয়ার্টারে থাকতাম, বাসার সামনে খালি জায়গা ছিল। সেখানে ফুলগাছ লাগিয়েছিলাম। হঠাৎ কোত্থেকে এক পেঁপেচারাকে দেখলাম সেখানে। ফুলগাছের সাথে সাথে সেও বড় হয়। কিন্তু কোনো পেঁপে হয় না। আব্বু বললেন, পুরুষ গাছ, পেঁপে হবে না। পুরুষ গাছ হলে কী হয়েছে? পেঁপে হবে না কেন? আমি আশায় রইলাম, হবে, একদিন ঠিকই হবে!

সেই পেঁপে গাছও একদিন মরে গেল। কোনো পেঁপে দেয়নি সে কোনোদিন। ঐ গাছের পেঁপে না খেতে পাওয়ার দুঃখ কি কোনোদিন ঘুচবে সেদিনের সেই বয়সের আমার? কিন্তু আজকের আমার কি সেই দুঃখ আছে? হয়ত নেই। তাহলে আমরা কি একই মানুষ? নাকি এক শরীরের খাঁচায় বন্দী আলাদা দুজন?

মাহমুদুল হক লোক ভালো না। ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় পড়েছিলাম জীবন আমার বোন। বাড়ি যাওয়ার আনন্দটাই মাটি করে দিয়েছিল সেই বই। ভৈরব ব্রিজ পার হওয়ার সময় আমি তাই মেঘনার জলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছায়া দেখতে পাইনি, বরং রঞ্জুমঞ্জুকে খুঁজছিলাম।

'কালো বরফ' গল্পটা দুজনের, তারা দুজন দুজগতের বাসিন্দা। পোকার আছে আমার মত শৈশব, আর আবদুল খালেকের আছে স্মৃতিকাতরতা। পোকার আছে মনিদাদা, মা, টিপুভাই, ছবিদি, তুলি পাখি, মাধুরী আর গিরিবালা, আবদুল খালেকের আছে, অথবা নেই, রেখা আর টুকু— রেখাটুকু।

পোকা লুকিয়ে রাখতো কাচের চুরির শেকল, বসে থাকতো তুলি পাখি আসবে বলে। মনিদাদা খেপাতো ছবিদিকে। গিরিবালা তার অকেজো চোখ নিয়ে বসে থাকতো তার বাড়িতে। টিপুভাই কলকাতার কলেজে পড়তে যেতো। মা ধরে রাখতো সারা সংসার। আর আবদুল খালেক? অদ্ভূত বিষণ্ণতায় তাকিয়ে থাকতো মাঠের দিকে, কী একটা খুঁজতো, কখনও খুঁজে পেতো না।
“সকলের ভেতরেই বোধহয় এইরকম আরো একটা আলাদা সংসার পাতা থাকে, সেখানে সে তার খেলার পুতুলের জন্য নিজের যথাসর্বস্ব দ্যায়, এক টুকরো ভাঙা কাচের জন্য বুক ভরে কাঁদে, নিছক কাগজের নৌকা ডুবে গেলে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়...”

তারপর? একদিন ছবিদি কাঁদে, মনিদা চিরদিনের মত হারিয়ে যায়। এরপর গোয়ালন্দ, ভাগ্যকূল, পদ্মা— পোকা একদিন আবদুল খালেক হয়ে যায়, আর সবাই রেখাটুকুতে বিলীন হয়ে যায়। একদিন সিফাত হয়ে যায় জোনায়েদ করিম, সেই চুইংগাম, পেঁপে রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের জন্মদিনে তোলা সেলফিতে বিলীন হয়।
“এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা...”
Profile Image for রিফাত সানজিদা.
174 reviews1,356 followers
November 19, 2016
সম্ভবত ২০১০এ, তারেক ভাইয়ের কোন এক লেখায়, মাহমুদুল হক এবং কালো বরফের নাম জানা।
অপরিচিত লেখক, খুব একটা আগ্রহ বোধ করিনি।
এর মাস কয় পর, 'বিশদ বাংলা'য় গিয়ে শেলফে চোখে পড়লো। কুচ্ছিত প্রচ্ছদ, তাও নিয়ে নিলাম। ভাগ্যিস কিনেছিলাম, ভাগ্যিস!

গত ক'বছরে আর কোন বইতে এতো মুগ্ধ হইনি, আর কোন লেখক আমাকে এতোটা মোহগ্রস্ত করতে পারেননি।

কালো বরফ উপন্যাস নয়, ছবি। যতবার পড়তে বসেছি, একেকজন চরিত্র সত্যি হয়ে উঠেছে চোখের সামনে। মণি ভাইজান, ছবিদি, গিরিবালা, মাধু, রেখা.. সবাই কেমন ভিখিরির মতো হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে আমাকে কোলে নাও। তারপাশা, গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাটে রাতের পর রাত বসিয়ে রেখেছে দেশভাগের বলি পোকার শেকড় ওপড়ানো যাত্রার সঙ্গী করে। বুকের ভেতর হু হু করে বেজেছে গুম গুম শব্দ, জামার পকেট থেকে হারিয়ে গেছে ফিতে, যে ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে বন্দি ছেলেটার সমস্ত ছেলেবেলা..
খোঁড়া গাংশালিক তুলিপাখির জন্য সারাটা দুপুর যা কিছু নি:শব্দ, যা কিছু শব্দময়, যা দৃশ্যগোচর, দৃশ্যতীত..স-বকিছু জড়ো করে, ঠিক পোকার মতোই অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে দিনের পর দিন।
একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায়, এও গেছে।

শুধু মুগ্ধতা কমেনি। কী যে অদ্ভুত এ বইটার একেকটা লাইন, কী যে মায়াময়!
মনে করিয়েছে অপুর কথা, নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে হরিহরদের অগস্ত্য যাত্রার গল্প।

পথের পাঁচালি আর অপরাজিত, আমার সারাজীবনের সবচেয়ে প্রিয় দুটো বই!
মাঝেরপাড়া রেলস্টেশনের হারিয়ে যাওয়া সিগন্যাল যিনি মনে করাতে পারেন, সে উপন্যাসের ঠিকঠাক রিভিউ লেখা যায় না।

Profile Image for বিমুক্তি(Vimukti).
156 reviews89 followers
October 23, 2020
এ বই নিয়ে লেখব? কিছু লেখার কি আছে? স্তব্ধ হয়ে গেছি, হ্যাঁ একদম স্তব্ধ। ফাকা, বিমূঢ় হয়ে বসে থাকব জানতাম। কিন্তু এরকম? “আমাদের চিঠিযুগ কুউ ঝিকঝিক”—এখানাকেই আবার এ বইয়ে ফিরে পেলাম। মানুষ কতোটা অসহায় হয়ে দাঁড়ায় সময়ের কাছে, পরিস্থিতির কাছে! আর প্রেম….যাকে প্রচন্ড গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় মস্তিষ্কে কিছু ক্যামিকেল রিয়েকশন ছাড়া আর কিছু মনে হয় না, সেটাও কতোটা ফাকা করে দেয়। আমি ঠোটের কোণে হালকা হাসি নিয়ে বসে আছি, ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা অসম্পূর্ণ। হাসি নিয়ে বসে আছি কারণ জীবনে অনেক অনুভূতির সাথে পরিচয় ঘটে নি এখনও, অনেক কিছুই জানি না। মানুষের সত্যিকার অনুভূতিগুলো কতো না অসহায়

দেশভাগের কারণে নিজ জন্মভূমি পিছনে ছেড়ে আসা এক পোকার গল্প, সেই পোকার মনি ভাইয়ের গল্প, মনি ভাইয়ের প্রেমিকা ছবিদির গল্প, আর আব্দুল খালেকের মনিদা-ছবিদির প্রেমের মতো অসংখ্য অপূর্ণ প্রেমের গল্প।

ছবিদি পড়ার ঘরে একা বসেছিল একটা বই নিয়ে। বললাম, মনি ভাই তোমাকে ডাকে ছবিদি, পেছনের বাগানে দাঁড়িয়ে। ছবিদি চোরের মতো পা টিপে টিপে মনি ভাইজানের সামনে এসে দাঁড়ালো। মনি ভাইজান, পুকুরে ডুবে যাওয়ার মতো হাঁসফাস করে বললে, ছবি, আমরা চলে যাচ্ছি। ছবি, আমরা আর এখানে আসবো না, আমাকে মাফ করে দাও। কোনো কথা না বলে মাটির ওপরে বসে পড়লো ছবিদি, ফুপিয়ে উঠলো। মনি ভাইজান আবার বললে, আমরা চলে যাচ্ছি ছবি। ছবিদি বললে, মনিদা কোনোদিন মন থেকে তোমাকে গাল দিই নি–। মনি ভাইজান বললে, আমাকে কিছু দাও ছবি, আমাকে কিছু দাও। উঠে দাঁড়িয়ে ছবিদি বললে, কি নেবে মনিদা, কি নেবে তুমি? মনি ভাইজান বললে, তোমার যা খুশি, যা দিতে পারো, হাতে সময় নেই, দেরি হয়ে যাচ্ছে, দাও। ফস করে মাথা থেকে ফিতে খুলে দিল ছবিদি। বললে, এটা নেবে? মনি ভাইজান ভিক্ষা নেওয়ার মতো দুহাত পেতে বললে, তোমার মাথার কাটা, ক্লিপ, যা পারো,সব দাও। ছবিদি দিলো। দিয়ে হু-হু করে কেঁদে উঠলো। বললে, মনিদা, আমি মরে যাবো, আমি মরে যাবো।


আর সেই মনি ভাই যখন অতীতকে বিদায় বলে উঠে পড়েছিল স্টিমারে…তখনকার কথা?

পাশে দাঁড়িয়ে মনি ভাইজান, মনি ভাইজানের জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় অনেক ছেলেবেলা…



আর সবচে' মজার বিষয়টা কি জানেন? বইটা জুড়ে এতো দর্শন ছিল, যেগুলো আমাকে চিন্তায় ফেলছিল….চিন্তাপ্রবণ মনকে লোভী করে তুলছিল। কিন্তু ��েষে গিয়ে সব মিথ্যে হয়ে গেলো, সব। সবকিছু ফাকা হয়ে গেলো, অর্থ হারিয়ে ফেললো।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
February 26, 2018
শৈশবের গল্পগুলো ভীষণ মিষ্টি হয়। দেশভাগের যাতনা কিংবা প্রিয়জন হারানোর বেদনাও শৈশবের মায়া মুছে দিতে পারেনা। হুট করে ভীষণ রকম বড় হয়ে যাওয়া আর সেই বড় হয়ে যাওয়া জীবনের নানা টানাপোড়নের একটুখানি স্বস্তি ফেলে আসা রূপকথার মতো দুরন্ত শৈশব।

লেখক নিজেই বলেছেন-
“আসলে জীবন মানেই শৈশব; জীবনভর মানুষ এই একটা ঐশ্বর্যই ভাঙ্গিয়ে খায়, আর কোনো পুঁজিপাট্টা নেই তার।”
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
March 29, 2024
❝হিসেব করে দেখলে বুঝতে পারবেন, কতো মানুষের চেয়ে আমরা ভালো আছি। কোনো না কোনোভাবে জীবন চলেই, কোথাও দাঁড়িয়ে থাকে না। যারা দশজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে চায়, তাদের কথা অবশ্য আলাদা। তার জীবনের ঘাটতি ছাড়া আর কিছুই দ্যাখে না, দেখতে পারে না।❞


গল্পের ভেতর গল্প গুলো যেন খুব বেশী জীবন্ত। পুকুরের গল্প, মাছের সাথে বন্ধু পাতানোর গল্প, গাছের সাথে বন্ধুত্বের গল্প, আর মা যে বোকাসোকা ধরনের ভালোবাসার এক অসীম উৎস তার গল্প!
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews287 followers
January 17, 2025
কিছু গল্প থাকে না, যেগুলো সময় থামিয়ে দেয়? ব্যথায় তোলপাড় করে তোলে বুকের ভেতরটা। কী চাই আমি? স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই... হয়তো কেবলই অতীত খুঁড়ে আত্মমগ্ন থাকতে ভালোবাসি নাকি আমি অতীত বদলাতে চাই? জানি না, জানি না... “স্বর্গে বাস করেই মানুষ স্বর্গের জন্যে কাঁদে, নরকে বাস করে অস্থির থাকে নরকের ভয়ে…”

লেখকের লেখা আমার কাছে কাঁচভাঙা বেদনার মতো। এই শীতের হিমে নয়, আমি জমে গেছি কুয়াশাচ্ছন্ন লেখন-বুননে।
Profile Image for Rifat.
501 reviews328 followers
December 22, 2020

এখন তো শীত চলে এসেছে। কিন্তু গরমের দিনে বাজারে পানীয় বিক্রির হার বেড়ে যায়। কত রকমের ফ্লেভারের পানীয়! কোকাকোলা, সেভেন-আপ, মাউন্টেন ডিও, পেপসি, মিরিন্ডা আরও কত কি। আর তার পাশে রাস্তার ধারের বরফ দেয়া লেবুর শরবত! রৌদ্র তপ্ত দিনে ক্লাস কিংবা প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ফেরার সময় বরফ দেয়া লেবুর শরবত প্রায়ই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ পানীয়ের একটা বলে মনে হয়! আর এই বই সেই রাস্তার ধারের পিপাসার্তের লেবুর শরবত কিংবা পথচলা তৃষিতের আজলা ভরে পান করা অতি স্বচ্ছ নির্মল পানি!


শরবতের উপাদান আমাদের চেনা। আর পানি তো একদমই সাদামাটা! স্বচ্ছতার কারণে অপর পাশের দৃশ্যও দেখা যায়। তবুও পানি জটিল; একটা বন্ধনের মাধ্যমে এই তরলতা ধরে রেখেছে। কালো বরফ বইটাও এমন, অতি সাদামাটা গল্প যে! পানির মতোই এই সাদামাটা পর্দার আড়ালে আছে জীবনযাত্রার জটিলতা।একই মানব শরীরে পোকা আর আব্দুল খালেক নামের দুইটি সত্ত্বা বেঁচে থাকার গল্প। যে গল্পে ভালোবাসা ছিল, আছে কিন্তু কিছু একটা বদলে গেছে! আর একজন মনিদাদার গল্প যে ছবিদির শরীরের গন্ধকে পুঁজি করে বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু গন্ধ যে উবে যায়! স্মৃতিরাই থেকে যায় রূপকথার গল্পের মতো।
"মনি ভাইজান বললে, তোমার যা খুশি, যা দিতে পারো, হাতে সময় নেই, দেরি হয়ে যাচ্ছে, দাও। ফস করে মাথা থেকে ফিতে খুলে দিল ছবিদি। বললে, এটা নেবে? মনি ভাইজান ভিক্ষা নেওয়ার মতো দুহাত পেতে বললে, তোমার মাথার কাটা, ক্লিপ, যা পারো,সব দাও। ছবিদি দিলো। দিয়ে হু-হু করে কেঁদে উঠলো। বললে, মনিদা, আমি মরে যাবো, আমি মরে যাবো। "

পুঁটি যখন মনের খেয়ালে পিচ্চি ছেলে পোকাকে বিভিন্ন আজগুবি কথা বলছিল তখন বেশ মজা পাচ্ছিলাম। আরে কি সব মজার পাগল পাগলামি! পরক্ষণেই মনে পড়ল সেই বিজ্ঞের বাণী। আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি নি তখনও। আমার থেকে বছর কয়েকের বড় কয়েকজন আপু এসে বিজ্ঞের মতো পরামর্শ দিলো, "শুনো! যখন কুকুর দ্যাখবা তখন দৌড় মারবা না। আস্তে কইরা যাবা নইলে তোমারে চোর মনে করবো আর খামচা/কামড় দিবো।তখন তোমার প্যাট থিকা মেলা বাচ্চা বাইর হবো।" অতঃপর ভয়ে তটস্থ থাকা। সেই দিন চলে গেছে। রাস্তায় কুকুর দেখলে এখন ইঞ্জেকশনের ভয়ে তটস্থ হয়ে যাই। মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি লাগলে শিঙ গজায় না এখন! গ্রামে বেদেনি মহিলারা আর সেই পুঁতির মালা, স্নো, নেইল পালিশ, রঙিন ফিতা নিয়ে আসে না!
“এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়।
জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা..........”


কালো বরফ! অদ্ভুত নাকি!? বরফ আবার কালোও হয় নাকি!?
সম্পর্কের অতি পরিচিত কিন্তু অচেনা দিকগুলো যখন পরিচিত হয়ে ব্যাপিত হওয়ার বদলে শীতল হয়ে জমতে শুরু করে তখন এর রঙ হালকা না হয়ে গাঢ় হয়ে যায়; সাদা বরফ না হয়ে কালো বরফ হয়ে যায়।

~ ১৪ নভেম্বর, ২০২০
Profile Image for Ratul Ahmed.
43 reviews
June 10, 2021
মুগ্ধতার সাথে শেষ করলাম ভীষণ মায়াময় এই বইটা। 'আমাদের চিঠিযুগ' এর পর আবারও এমন কিছু পড়া হলো যেখানে পুরো বই জুড়েই বিষণ্ণতা, তবু অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
Profile Image for Chinmoy Biswas.
175 reviews65 followers
April 16, 2022
আঙ্গুল চুষে, মনি ভাইয়ের ধমক খেয়ে,চার পাশ দেখে বিস্মিত হতে হতে পোকা একদিন বড় হয়ে উঠে। বড় বেলায় সে হয় প্রফেসর। নাম হয় আবদুল খালেক। তার সাথে যুক্ত আরো দুইটা মানুষ, স্ত্রী রেখা আর তার সন্তান। আবদুল খালেক যে জায়গার প্রফেসর হয়,সেটা তার জন্মস্থান নয়! কারণ সে যখন ছোট তখন নিজের দেশ ছেড়ে চলে আসে।

পড়ে শেষ করলাম,লেখক মাহমুদুল হকের কালো বরফ। এর আগে লেখকের আরো একটা বই পড়েছি,নাম অনুর পাঠশালা। সে বই পড়েই এই লেখকের লেখার প্রেমে পড়া শুরু। এখন দ্বিতীয় বই পড়ে ফেললাম। সামনে আরো পড়ব। কালো বরফ বইয়ে লেখক এক সাথে অনেকগুলো গল্প বলেছেন। এখানে গল্পের নায়ক কখনো মনি ভাই,কখনো সময়,কখনো গল্প কথক আবদুল খালেক,কখনো বা রেখা। সবার গল্প মিলিয়ে একটা উপন্যাস। আমার ভালো লেগেছে। লেখকের লেখার ভক্ত আগে থেকে ই ছিলাম,এখন সেটা দ্বিগুণ হলো।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews33 followers
October 21, 2020
এক বুক শূন্যতা নিয়ে শেষ করলাম "কালো বরফ"। ঠিক শূন্যতাও নয়,সেখানে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশভাগ,আবদুল খালেক, মনি,রেখা,ছবিদের গল্প। আর আমি ঘুরপাক খাচ্ছি,মাহমুদুল হকের ঘোরলাগা লেখনীতে।
Profile Image for Taslima  Tonni.
15 reviews6 followers
March 8, 2021
"এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা... হারিয়ে যাওয়া এক ছেলেবেলার গল্প... স্মৃতিচারণ।"

প্রতিটি মানুষের জীবনের সুন্দরতম অধ্যায় হলো তার শৈশবকাল।শত স্মৃতিমোড়ানো থাকে সেখানে।ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলো অসাধারণ লাগে।থাকে না কিছু হারানোর ভয়।বৃষ্টির দিনে নৌকা বানিয়ে খেলা,নিজের আলাদা একটা জগৎ তৈরি করা,আর সে জগতের চারপাশ জুড়ে থাকে শুধু কাছের আর প্রিয় মানুষেরা।

সময়ের সাথে যখন বড় হতে থাকে,সব যেনো পাল্টে যায় নিমিষেই! কাছের মানুষেরা এমনকি, আপন ভাইবোনেরাও আর এক সাথে বসে সুখ দুঃখের স্বাদ নিতে পারে না। শৈশবের স্মৃতিগুলো ঢেকে যায় কালো চাদরে। সময় কিংবা জীবিকার তা��িদ এভাবেই আমাদের দূরে সরিয়ে দেয় প্রিয় মানুগুলোর কাছ থেকে।
কিন্তু,তাই বলে একেবারে ভুলে যেতে পারি না সেই মধুর স্মৃতিগুলো।কারণে অকারণে যখন মনে পরে তখন আবেগ আপ্লুত হয়ে পরি আমরা।
আবার কখনো দেখা যায়,খুব কাছের মানুষের কাছেও মনের দুঃখগুলো আমরা ভাগাভাগি করতে পারি না।তখন তৈরি হয় ভুল বোঝাবুঝি। কিংবা দুজনের মাঝে সৃষ্টি হয় দূরত্বের দেয়াল।

'কালোবরফ' দেশভাগের পেক্ষাপটে রচিত একজন স্মৃতিকাতর মানুষের স্মৃতি হাতড়ানোর গল্প।যিনি বর্তমানে থেকেও অতীতের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান।

যিনি শৈশবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন 'পোকা' নামে! বইটি মূলত পোকার শৈশব থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষক হবার গল্প।
যার শৈশব ঘিরে ছিলো মা,বাবা, ভাইবোন,প্রকৃতি ,পোষা প্রানী ও কাছের মানুষে।কিন্তু হঠাৎ একদিন শিকড় ছিড়ে পাড়ি জমাতে হয় দূর দেশে।সেই পোকা সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়।
কিন্তু,স্মৃতি! তাতো ক্ষনে ক্ষনে নিয়ে যায় অতীতে।বর্তমানে থেকেও যেনো নেই তিনি!খুঁজে পান না শান্তি।স্ত্রী জানতে চায় তার অস্বস্তির কারণ।যদিও কথায় আছে কষ্ট ভাগ করলে কমে।
কিন্তু, কিছু স্মৃতি, যন্ত্রণা একান্ত নিজের হয়।কাউকেই তা ভাগাভাগি করা যায় না।আজন্ম বয়ে বেড়াতে হয়! কিংবা সেগুলো স্থান পায় ডায়রির পাতায়।

বইটির শুরুটাই এতো মায়ামাখা যে পাঠক নিজেই হারিয়ে যাবে শৈশবে।
বাংলা সাহিত্যে লেখক চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে শুধু তার লেখার ধরন এর জন্য।সহজ সাবলীল ভাষায় নিখুঁত ছিলো প্রতিটি বর্ণনা।
Profile Image for Ishraque Aornob.
Author 29 books403 followers
July 10, 2023
“বুকের ওপর হাত জড়ো করে মার খাওয়া মানুষ যখন বলে মুঠোয় কি আছে দেখতে চেয়ো না, দোহাই তোমাদের, এ তোমাদের কোনো কাজে লাগবে না, সারাজীবনের সঞ্চয় শুধু এটুকুই, এ সামান্য স্বপ্নটুকুই, তখন ধরে নিতে হয় সে বেঁচে আছে কেবল স্মৃতির ভেতর। তার চেয়ে নির্বিষ, তার চেয়ে নিরাপদ জানোয়ার আর কে!”

অপরূপ সুন্দর একটা বই, ভাষায় বা রেটিংয়ে প্রকাশ করার মত নয়। তাও দুটো কথা বলি। বইটার মূল বিষয়বস্তু দেশভাগ বলা হয়, কিন্তু কোথাওই প্রত্যক্ষভাবে দেশভাগ উঠে আসেনি। কলেজ মাস্টার আব্দুল খালেকের দুই জীবনের গল্প সমান্তরালে বলা হয়েছে। একটা ছোটবেলা, একটা বর্তমান জীবন। একটা জীবন ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর, অপরটি যেন নিজেকে হারিয়ে খোঁজা এক সাংসারিক সন্ন্যাসীর জীবন। বর্তমান আব্দুল খালেকের এই একসিস্টেনসিয়াল ক্রাইসিসের মূল কারণের ব্যবচ্ছেদই এই বই।

আহ মাহমুদুল হকের কি লেখনশৈলী আর ভাষা। যেন কোনো জাদুকর কলম দিয়ে জাদু করেছে লেখার মধ্যে। আর জীবনদর্শনও কত সহজেই ফুটিয়ে তুলেছেন, বাস্তবে থেকেও যেন জাদুবাস্তবতা ভর করেছিল পড়ার পুরোটা সময়।
আই বইয়ের শেষটা.... শেষটা অন্তরে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়... আব্দুল খালেকের অস্তিত্বসংকটের কারণ যেন দাগ কেটে দেয় আমাদের হৃদয়েও।
Profile Image for Salman Sakib Jishan.
273 reviews158 followers
August 24, 2021
শেষ কবে এরকম অসাধারণ বর্ণণামধুর বই পড়েছি বলতে পারবোনা। মাহমুদুল হকের সাথে আমার পরিচয় হলো এই প্রথম, 'কালো বরফ'-এর মাধ্যমে। বইটার বর্ণণা, লেখনি এতো চমৎকার, এতো সুমধুর ব্যঞ্জণাময়, আমি স্পষ্ট চোখ দিয়ে সব দেখতে পাচ্ছিলাম যেনো।
বইটা যতক্ষণ পড়েছি, শেষ হয়ে যাচ্ছে কেনো এই আক্ষেপ ছিলোই! শেষ করবার পর কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম।

এই গল্পে দুরন্ত ছেলেবেলার ঘ্রাণ ছিলো, কমবয়সী আবেগ ছিলো, হারিয়ে ফেলার দুঃখ ছিলো, বাস্তবতার কষ্ট ছিলো। দুটি সময়ের ভিন্ন চিত্রপট দেখিয়েছেন লেখক। ছেলেবেলার পোকা নামে ডাকা এক শিশুর শৈশব, আরেক চিত্রে আবদুল খালেক নামের একজন কলেজ শিক্ষকের স্ট্রাগল। দুজন কিন্তু একই মানুষ। সাথে ছিলো পোকার মা, মনিভাই, টিপুভাই, ছবিদি, রেখা, গিরিবালা সহ অনেকগুলো অসাধারণ চরিত্র। বইটা ১৯৭৭ সালে লেখা দেশভাগকে কেন্দ্র করে। বিভক্ত হয়ে যাওয়ার গভীর কষ্ট, শৈশবকে স্মৃতিতে রূপান্তরিত হতে দেখার সুক্ষ্ম দুঃখ লেখকের প্রগাঢ় বর্ণণার সাথে সাথে গেঁথে গেছে মনে।
“এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জীবনে সেই প্রথম, এক গভীর রাতে, তার কানে বেজে উঠেছিল-লৌহজং, লৌহজং। পাশে দাঁড়িয়ে মনি ভাইজান, মনিভাইজানের জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা..”
আবদুল খালেক বনে যাওয়া কিংবা মনির ভাগ্যের কাছে নিজেকে করুণভাবে সঁপে দেয়া ভাবিয়েছে আমাকে। অনেকদিন মনে থাকবে আমার বইটার কথা। পাশাপাশি মাহমুদুল হক নামের আমাদের দেশিয় এই রত্ন লেখককে খুঁজে দেবার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
এবার মাহমুদুল হকের দুই খন্ড সমগ্র আমি কিনছি বাংলা একাডেমি থেকে এটুক শিওর!!
Profile Image for Haseeb Mahmud.
6 reviews4 followers
December 31, 2013
ইওরোপিয় ভাষায় এই বইটা লেখা হলে এটা নোবেল পুরস্কার পেত।
Profile Image for Arnab Paul.
62 reviews119 followers
July 2, 2017
কবিতার পোস্টমর্টেম করতে যাওয়া কঠিন খুব, হারমোনি হারানোর ভয় থাকে।কালো বরফ নিয়ে লিখতে গেলে প্রিয় কবিতার মতো আলতো করে
ছুঁতে হয়।
ছোট আকৃতির উপন্যাস, অল্পকথায় এত বিস্তৃত পটভূমি মেলে ধরা জাত গল্প-বলিয়ে ছাড়া সম্ভব নয়। এককথায় কি এর আবেদন তুলে ধয়া যায়? দেশবিভাগ, শৈশব-স্মৃতি রোমন্থন নাকি মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন; কোন বিষয় বিভাগে ফেলার দরকার নেই। একটি সময়ের কথা, যেখানে পরতে পরতে জীবনের খোঁজ পড়ে আছে। ইতিহাসের অনিবার্য নিষ্ঠুরতায় জীবনযন্ত্রের যে তারগুলো ছিঁড়ে গেল, তাতে বিষাদবেহাগ ছাড়া আর কোন সুর বেজে ওঠেনা।জীবনের সাথে এই ডুয়েলে বেঁচে থাকার সবটাই শূন্য, The unbearable lightness of being. গল্প এগিয়ে যায়, আমরা আবদুল খালেকের দ্বন্দ্ব, হীনন্মন্যতা, স্মৃতিচারণ দেখতে পাই।শুরুর দিকের বর্ণনাও শৈশবিক এলেবেলে চিন্তার মতোই। পাঠকের শৈশবস্মৃতিকে উস্‌কে দিয়ে গল্পের চরিত্রগুলোতে প্রাণ এনে দেন লেখক।দৈনন্দিন আটপৌরে ঘরকন্না,বালকদৃষ্টির জগৎ-সংসারের বাইরে কিছু নয়; নিজের স্মৃতির সাথে মিলিয়ে গল্পের প্লটের সাথে কানেক্ট করল পাঠক, তারপর লেখক তাঁর আশ্চর্য ক্যালাইডোস্কোপে দেখালেন তাঁর গল্পকথা।কাহিনির উত্তাপ এসেছে সচেতন কোমল বক্তব্যে, ঘটনার নাটকীয়তাতে নয়।পুরো পথচলা ঘোরময়, নিশঃব্দ ডিঙিনৌকার মতো, ঢেউয়ের দোল এ লাগে কিন্তু ছন্দ হারায়না।
শুরুতে আত্মকথার ইশারা দিলেও, গল্পের স্রোতে ভাসে মধ্যবিত্ত ক্রাইসিস, দাম্পত্য অনিরাপত্তা,অনিশ্চয়তা, লিবিডোর লোর...
'কালো বরফ' অনুভব করে ওঠার জন্য একটা প্রস্তুতি চাই। জীবনের কিছু উত্তরহীন প্রশ্নের লুপে ভাবিত না হলে এর শীতল-কোমল স্বাদ পাওয়া কঠিন।
Profile Image for Amlan Hossain.
Author 1 book67 followers
December 11, 2014
আমার জগতে তখন সাদাকালোর কোন ঠাঁই ছিলনা, পুরোটাই ছিল ভীষণ রকম রংদার। স্কুলের ঘন্টা বাজত ঢংঢং, একছুটে চলে যেতাম লালচে ইটের স্কুলমাঠে, বিকেলের ফিকে আলোয় দেখতে পেতাম যেন রংধনুর সাত রঙ। বাড়��� ফেরার সময় চারপাশটা আগাপাশতলা চেখে ফেলত আমার নবিশ চোখ; টুংটুং করে বেল বাজানো রিকশাওয়ালা, স্টেশনারি দোকানের ক্লিশে সাইনবোর্ড, অদূরের প্যারেড ময়দান কাঁপিয়ে বেড়ানো ছোকরার দল, সবকিছুই দেদারসে আনন্দ বিলিয়ে যেত, আমার মনে তখন অবারিত আনন্দের ফল্গুধারা। বিকেলটা যেন টুপ করে কেটে যেত, আমার কেবলই মনে হত হতচ্ছাড়াকে যদি আচ্ছাসে পাকড়াও করে ধরে রাখা যেত ,তবে বেশ হত। আমাদের কলোনির সামনে ছিল পুরনো ইটের স্তুপ, সেই ইটের স্তুপে চলত লুকোচুরি খেলা। একসময় হলুদরঙ আলোটা মিইয়ে আসত, মুয়াজ্জিনের জলদগম্ভীর আযান শোনা যেত একটু পরেই, আমরা দমে যেতাম ভীষণভাবে, খেলা এই সাঙ্গ হয়ে এল বলে। সেই থুত্থুড়ে পুরনো কলোনির বাতাসটাকে আমার বেকায়দা রকম গুমোট মনে হত, আঁধার জেঁকে বসার সাথে সাথে সেই ভাবটাও আরো প্রকট হত।


কালো বরফ পড়তে পড়তে এইসব কথাই ঘুরেফিরে আমার করোটিতে পাক খেতে লাগল। আমার বয়সও তখন পোকার মতই, তবে পোকার মত আঙ্গুল চোষার বাতিক বোধহয় ছিলনা। তবে পোকাকে আমি হিংসে করি, একটু বেশি রকমই। পোকার মত আমার কল্পনার পালের হাওয়া কি এত ফুলেফেঁপে উঠত। কী জানি? তবে যে অদ্ভূত ইন্দ্রজাল মাহমুদুল হক সৃষ্টি করেছেন উপন্যাসের শুরুতেই, সে ঘোর থেকে চট করে বের হওয়া খুবই মুশকিল।শুরুতেই তার নিরাসক্ত কথন-

তখন আমার অভ্যেস ছিল বুড়ো আঙ্গুল চোষার। কখনো পুকুর-ঘাটে, কখনো বারান্দার সিঁড়িতে, কখনো- বা জানালায় একা একা বসে কেবল আঙ্গুল চুষতাম। আঙ্গুলের নোনতা স্বাদ যে খুব ভাল লাগতো, ঠিক সে রকম কোন ব্যাপার নয়। তখন ভাললাগা বা মন্দলাগা এসবের কোন ঝক্কি ছিল না, যতোটুকু মনে পড়ে; পৃথিবী যে গোল, একথা শুনে কানমাথা রীতিমতো ঝাঁ ঝাঁ করতো। সে একটা গোলমেলে বিষম ব্যাপার। ভাবতাম আমরা তাহলে কোথায় আছি, কমলালেবুর তলার দিকে না ওপরের দিকে; তলার দিকের মানুষজনের তো টুপটাপ ঝরে পড়ার কথা।

এইভাবে মাহমুদুল হক ভোজবাজির যে রমরমা পসরা সাজিয়ে বসেন, আমার সাধ্য কী এই কুহকের জাল ভেদ করা? আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে যেতে থাকি। মাঝে মাঝে আবছা আবছা মনে পড়ে, এরকম বিটকেলে ভাবনায় আমিও সময় সময় বুঁদ হয়ে থাকতাম। মা বলতেন, আমি নাকি প্রায়ই নানা প্রশ্নবাণে সবাইকে জেরবার করে ফেলতাম, জবাব না দেওয়া অবধি এসব উটকো সওয়াল থেকে রেহাই পাওয়ার সাধ্য নাকি কারও ছিলনা। কালো বরফ মন্থনকালে কত কথাই যে মনে আসে!এমন ভয়ঙ্কর সুন্দরভাবে কেউ কি লিখতে পারে-

হু হু বাতাসের গায়ে নকশা-তোলা ফুলের মতো অবিরল আকুলতা,পোকার বুকের ভেতরের ফাঁকা দালানকোঠা গুম গুম করে বাজে, পোকা তুই মর, পোকা তুই মর!

যা কিছু নিঃশব্দ, যা কিছু শব্দময়, যা কিছু দৃশ্যগোচর, দৃশ্যাতীত, সবকিছুই একজোট হয়ে হাত ধরাধরি করে ঘিরে ধরে; অদ্ভুত এক আব্জনার তালে তালে আস্ত একটি রাত মোমের মত গলে পড়ে, জিনজার-হিনজার জিঞ্জার-গিনজার, জিনজার-হিনজার পোকা শুনে, শুনতে পায়। পোকা পোকা হয়ে যায়।

তবে অচিরেই ভাবালুতায় চুর হয়ে আমাকে এক লহমায় মাটিতে নামিয়ে আনেন লেখক, আবদুল খালেককে সাক্ষী রেখে দাঁড় করিয়ে দেন বাস্তবতার কর্কশ জমিনে। বৈষয়িকতার সাথে ক্রমাগত যুঝতে থাকা খালেককে আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে মেলাতে যায়, শৈশবে ফিরে যেতে খাবি খেতে হয়না আমাকে। এদিকে উপন্যাস এগোতে থাকে তরতর করে, আর আবদুল খালেক ওরফে পোকার দ্বৈত বয়ান আমাকে ধন্দে ফেলে দেয়। দুজনকে মেলাতে পারি তখন, যখন শৈশবের গিরিবালার ঝুপ করে নেমে আসে আবদুল খালেকের ভাষ্যে-

"বাইরে আকাশ বলে একটা কিছু আছে, তা জান তো ! সেখানে একটা চাঁদ আছে, গোল চাঁদ। ঐ চাঁদের ভেতর হাঁটুমুড়ে কতোকাল বসে আছে। চরকায় সুতো কাটছে বসে বসে। "

পোকা ও আবদুল খালেকের এই আজব যুগলবন্দি চলতে থাকে মেলাক্ষণ। বাবা ,মা ,মনি ভাইজান, টিপু ভাইজান, রানিবুবু,পুঁটি, কেনারাম কাকা, ছবিদিরা পোকাকে অহর্নিশ সুখস্বপ্ন দেখিয়ে যায়, তার ছোট্ট জগতে তারা একেকজন অধীশ্বর হয়ে ওঠে, নিজেদের অজান্তেই। ওদিকে আবদুল খালেকও কী প[আরে নিজের ভাবালুতাকে বেনোজলে ভাসিয়ে দিতে? স্ত্রী, শিশুসন্তান নিয়ে তার ছোট্ট সংসার, তারপরও নগ্ন বৈষয়িকতার রক্তচক্ষুর সামনে সন্ত্রস্ত থাকতে হয়। এতকিছুর পরেও তার ভেতরের পোকা মাঝেসাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। স্ত্রীকে সে ভালোবাসে, কিন্তু সেই ভালবাসায় আটপৌরে সমস্যা সূঁচ হয়ে ঢোকে, আর ফাল হয়ে বেরুবার প্রাণপাত চেষ্টা করে। এই টানাপোড়েনে সে বিচলিত হয়, তার ভেতরটা পুড়ে খাক হতে থাকে, কিন্তু আর দশটা মানুষের মত সবদিক সামলে সুমলে চলার ব্যাপারে সে আনাড়িই থেকে যায়। রেখা ও আবদুল খালেকের এইসব ছোটখাট মান- অভিমানের ভেতর দিয়ে আবদুল খালেকের কল্পনাবিলাসী মন পাঠকের কাছে আরও গভীরভাবে ধরা দিতে থাকে এইভাবে-

রেখা আর টুকু, এই দুজনের জন্যে তার ভাবনা। নিজেকে সে বাদ দেয়; নিজেকে নিয়ে তার কোন সমস্যা নেই, কোনো না কোনোভাবে তার চলে যাবে।

এটাও একটা বাতুল চিন্তা, ফালতু ধারণা। আবদুল খালেক শুধরে নেয় নিজেকে, তার ভাবনা -চিন্তায় ওদের ভূমিকা যেন নিছক বোঝার। এর ভেতরে আচ্ছন্নভাবে তার একটা অহমিকা আছে, সে চালাচ্ছে ওদের। কে কাদের চালায়, আসলে তো যে যার নিজের জীবনকে নিজেই চালায়। চালানো মানে জিবনটাকে কোনমতে টেনে বেড়ানো। চেয়ে-চিন্তে, মেরে-কেটে, যেভাবেই হোক।


উপন্যাসের দ্বিতীয়াংশ শুরু হয় অনেকটা আচমকা, "আলো ছায়ায় যুগলবন্দি" শিরোনামে। রেখা ও খালেকের টানাপোড়েন এখানে অনেকটা থিতিয়ে পড়ে, তারা সহসা আবিষ্কার করে, তাদের সম্পর্কের গাঁথুনি পলকা নয় মোটেই। কিন্তু চমকে উঠতে হয়, যখন হঠাৎ পাঠক আবিষ্কার করে, দেশভাগের সময় পোকার ঘরছাড়ার সেই স্মৃতি আবদুল খালেককে আজতক ফেরারি হয়ে তাড়া করে, আর কোন এক আলটপকা মুহুর্তে ছাইচাপা আগুনের মত বেমক্কা জ্বলে ওঠে। পাঠক ধাক্কা খায়, যখন মনিভাইজান ছবিদির কাছ থেকে বিদায় নেয়। আর সেই যে সুর কেটে যায়, আর আবদুল খালেকের সারাটা জীবন বেসুরো হয়ে যায়; পোকা হয়ে সেই হারানো সুরের হদিস ঝুঁজে ফেরে সে,জনমভর।

Profile Image for Sharika.
358 reviews95 followers
May 20, 2020
-- Book 19 Of May --

জীবনের রঙিন অংশটা ছিল কেবল শৈশবে বিস্তৃত৷ তারপর সবকিছু হয়ে উঠতে থাকলো সাদাকালো, সাদাকালো। ছেলেটির নাম ছিল পোকা, সারাদিন সেই পোকার বুড়ো আঙ্গুলটি মুখে পুরে কি বিস্তর চিন্তা! পৃথিবী যদি কমলালেবুর মতো গোল হয়ে থাকে, তবে তলার মানুষগুলো টুপটাপ ঝরে পড়ছে না কেন!

প্রিজম কাঁচের মতো পৃথিবীকে সাতটি রঙে যেন দেখা যেত তখন! পুকুরঘাটে কাঁসার থালা-বাসন ধুতে বসা পুঁটির সকাল সকাল মাছের সাথে আলাপ খুব স্বাভাবিক মনে হতো। ঝুমধরা দুপুরবেলায় চওড়া রাস্তা ধরে ডালপুরিবুড়োর হাঁক ছেড়ে যাওয়া গলা, শনপাপড়িওয়ালা, কুলপি মালাইওয়ালা, চিনেবাদামওয়ালা সবার চেহারা গেঁথে গিয়েছিল মনে। তারই মধ্যে একদিন হড়বড় ইংরেজি বকে হিরো বনে গেল পানু। কেনারাম কাকা ঘুরতে নিয়ে যেতেন হাতিপুকুরে, সেখানে ছিল রাজ্যের গাছ, জিপসী মেয়েদের তাঁবু - যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করতো পুঁতির মালা, নানান রঙের পাথর। কিনতে না চাইলে ভয় দেখাতো।

জীবন যেন থম মেরে আটকে গিয়েছে সেই শৈশবে। "যা কিছু নিঃশব্দ, যা কিছু শব্দময়, যা কিছু দৃষ্টিগোচর, দৃশ্যাতীত, সবকিছুই একজোট হয়ে হাত ধরাধরি করে ঘিরে ধরে; অদ্ভুত এক বাজনার তালে তালে আস্ত একটি রাত মোমের মতো গলে পড়ে, জিনজার-হিনজার জিনজার-গিনজার, জিনজার-হিনজার পোকা শোনে, শুনতে পায়। পোকা পোকা হয়ে যায়।"

দেশভাগের আগের সেই ছোট্ট পোকা কালে কালে হয়ে উঠলো আবদুল ��ালেক - মধ্যবয়সী কলেজ প্রফেসর আবদুল খালেক। স্ত্রী রেখা এবং ছেলে টুকুকে নিয়ে টানাটানির সংসারে তার মন বসে না যেন। স্মৃতিগুলো বারবার তাড়িয়ে নিয়ে যায় অতীতে, পেছন ফিরতে ফিরতেই পার হয়ে যায় দিন।

পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ

মাহমুদুল হকের লেখা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা চোখে পড়ে না, অথচ মানুষটা খুব চমৎকার কিছু সাহিত্য রচনা করে গিয়েছেন। প্রায় তিন বছর আগে তার "জীবন আমার বোন" বইটা পড়া হয়েছিল, মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তার লেখার ধরণে। তারপর "খেলাঘর" পড়া হয়েছে, এই বইটা পড়বো পড়বো করেও রেখে দেয়া ছিল এতোদিন।

"কালো বরফ" যেন নিজেরই শৈশবের একটুকরো প্রতিচ্ছবি। বাক্যগুলো বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো সেই দিনগুলো যখন দুপুর না গড়াতেই আস্তে ঘরের দরজাটা খুলে বেরিয়ে পড়তাম বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খেলতে। সবকিছু নিয়ে ছিল অদম্য কৌতূহল, হাজারো প্রশ্ন। ছেলেমানুষী আড্ডার বিষয় ছিল ভূতের আর রূপকথার গল্প, তাতেই কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাতে সিঁটিয়ে থাকতাম কোথাও সামান্য শব্দ পেলেই, কল্পনার দত্যিদানো পিছে পিছে ঘুরতো সবসময়।

কিছু বই সারাজীবনই নতুন থেকে যায়, মনে হয় এই বুঝি গতকাল লেখা হয়েছে নয়তো এতো অনুভূতি মিলে যায় কিভাবে! এতো কাছের কিছু মনে হয় কিভাবে! স্মৃতিকাতর করে দিয়েছে লেখাগুলো। খুব সাধারণ বিষয় অথচ আর অনবদ্য উপস্থাপনের কারণে পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো পৌঁছে গিয়েছি শেষ পাতা পর্যন্ত।
Profile Image for Eshaan Kabir.
46 reviews21 followers
October 10, 2016
একজন বই পড়ুয়া হিসেবে 'মাহমুদুল হক' নামের বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম না জানা সত্যিই লজ্জাজনক। এক কারণে লজ্জা এবং আক্ষেপ দুটোই অনুভব করেছি। যাই হোক, দেরিতে হলেও গুডরিডস এর কল্যাণে অসাধারণ এই লেখকের সাথে পরিচয়। প্রথমত ভাল লাগা তার বইয়ের নামের প্রতি। 'কালো বরফ' নামটা শুনের পড়ার ইচ্ছে জেগেছিল। গুডরিডস এ রিভিউ পড়ে শুরু করলাম পড়া। শুরুতে পোকার বুড়ো আংগুল চোষার কাহিনী পড়েই বইটির প্রতি ভাল লাগা শুরু হল। আগাতে থাকলাম। এক অসাধারণ মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে যেতে থাকলাম। পোকার শৈশব যেন আমারই শৈশব। আব্দুল খালেক যেন আমাদের পাশের বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক। ভালই চলছিল। কিন্তু সমস্যা বাধলো বইয়ের শেষ চ্যাপ্টারে এসে। "আলো ছায়ায় যুগলবন্দি"তে। এই চ্যাপ্টারের প্রতিটা অক্ষর যেন বুকের মাঝে এসে আঘাত করছিল। একদম শেষে এসে এই আঘাত যেন হাজার গুণ বেড়ে গেল। বইয়ের একদম শেষ লাইনটা পড়ে একদম স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ। আর এই কিছুক্ষণ শুধু চোখ দিয়ে টপাটপ করে পানি পড়ছিল। অনেক কষ্টেও সংবরণ করতে পারিনি নিজেকে। পড়ার শেষ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাথা থেকে সরাতে পারিনি মনি ভাইজান, পোকা, ছবিদি দের। অসাধারণ, অসাধারণ এবং অসাধারণ।
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
October 22, 2016
বইঃ কালো বরফ
লেখকঃ মাহমুদুল হক
দামঃ ২৫০৳
প্রকাশনাঃ সাহিত্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৩০

এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়।
জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা...

হারিয়ে যাওয়া এক ছেলেবেলার গল্প... স্মৃতিচারণ। সময়ের খামখেয়ালীতে চলে যাওয়া কিছু মুহূর্তকে পুনরায় চাওয়ার আকূলতা... দেশ বিভাগ নিয়ে এক বাচ্চামনের চাপা কষ্ট, তার আশেপাশের মানুষের কাজকর্ম, সব মিলিয়ে ছবির মতোন একটা বই। ভাল লাগার মতোন একটা বই।
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book131 followers
February 14, 2016
অসম্ভব সুন্দর একটা বই! পুরোটা জুড়ে মুগ্ধ আর নস্টালজিক হয়ে ছিলাম। এতদিন কেন তেমন নাম শুনিনি বইটার বা পড়িনি সেটাই বুঝতে পারছিনা শেষে এসে। পড়তে গিয়ে বইয়ের সাথে সাথে আমিও নিজের অজস্র স্মৃতি আর চিন্তায় ডুবে ছিলাম, তারপরেও বইটার ছবি চোখের সামনে থেকে সরে যায়নি- দুটোই ছিল একসাথে কোনোভাবে। যত দ্রুত সম্ভব লেখকের বাকি বইগুলো পড়ে ফেলতে চাই :)
Profile Image for Akhi Asma.
230 reviews464 followers
January 9, 2017
এইভাবে সবকিছু একদিন গলপ হয়ে যায়।
জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গনধ, যে গনধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা...

গুডরিডস-এ এই লাইনগুলো পড়েই আমার কালো বরফ পড়ার ইচ্ছে হয়েছিল।কেন যে কেউ আমাকে মাহমুদুল হক পড়ার কথা বলেনি! গুডরিডস এ না থাকলে তো কালো বরফ এর মতো এমন সুন্দর একটা বই পড়াই হতো না।
লেখকের অন্য বইগুলোও পড়ার ইচ্ছা আছে।
Profile Image for Anupoma Sharmin Anonya.
72 reviews1 follower
May 21, 2025
ও পোকা, তুমি কাঁদো কেন? এবার বাড়ি গিয়ে ঈদে ভাতিজিকে এমন কত আবোলতাবোল বলেছি। বেচারির চোখে পানি দেখলে দুঃখে আমার বুক ফেটে যেত। ছোট্ট ছোট্ট মোলায়েম গাল বেয়ে পানি পড়ার আগেই মুছে দিতাম। কিন্তু পোকা, কাঁদে কেন?

দুই তিনদিন ধরে ভীষণ স্যাঁতস্যাঁতে বৃষ্টি হচ্ছে। মাথায় বিষম গোলমাল। কোন এক দূরাগত মানুষের লিস্ট থেকে ধার করা । পড়লাম। থরথর করে হাত কাঁপছিল। ঢিমেতালে লিখা- অক্ষয় মালবেরির ধাঁচে। রাতের বৈরী যুদ্ধে সহজ নিষ্কলুষ ছোটবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছিল। সবকিছু ছিল থিতানো। কোথাও কোনো কোলাহল নেই, উপদ্রব নেই; থাকলেও সব বোঝার মতো বয়েস হয়নি তখনও। নির্ঘুম রাতের গভীরতায় কে যেন আমাকে ডাকে- আমি মশারির বাইরে হাতড়ে তাকে খুঁজে পাইনা। অশরীরীর মতন সে ডাকতেই থাকে।

পোকার স্মৃতিগুলো বারোয়ারী। দেশভাগের সুতীব্র যন্ত্রণাকে ছাপিয়ে গেছে স্মৃতির ঘোরে আচ্ছন্নতা। জাগরণে তারে না দেখিতে পাই, থাকি স্বপনের আশে, ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়, বাঁধিব স্বপন পাশে। উপন্যাসের প্লটে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পার্শ্বচরিত্রের যেমন ভূমিকা ফুরিয়ে যায়, তেমনি জীবনের একেকটা ফেইজ থেকে মানুষও কুয়াশায় মিলিয়ে যায়। রাতে জানলা খুলে দিলে ওরা এসে ভর করে বুকের উপর। কখনো খোঁজ করিনি কেন ওদের; তাই শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলতে চায়।

সেসব কতো কথা। ইচ্ছে করলেও এখন আর সব মনে পড়ে না। কতো কথা, কতো চার ভঁজ-করা ছবি, তেশিরা কাচ, লালকুঁচ, কতো সকাল-দুপুর-বিকেল বোকার মতো হারিয়ে ফেলেছে পোকা! কখনো মনে হয় নি, একদিন সবকিছুরই আবার খোঁজ পড়বে নতুন করে। বড় অবহেলা ছিল পোকার, বড় অবহেলা। অযত্ন আর হেলাফেলায় কতো কিছুই যে সে হারিয়ে ফেলেছে! জিনজার এখন গানের মতো বাজে, হিনজার এখন বুকের ভেতরে নিরবচ্ছিন্ন শব্দ তোলে। হু হু বাতাসের গায়ে নকশা-ভোলা ফুলের মতো অবিরল আকুলতা, পোকার বুকের ভেতরের ফাঁকা দালানকোঠা গুম গুম করে বাজে, পোকা তুই মর, পোকা তুই মর।

একদিন ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি, কিছুর সাথেই নিজেকে জড়াতে পারছিনা। নিজের সব বন্ধন টুটে ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে। নাড়ি ছিঁড়ে যেমন শিশু জন্মায়, নিজের প্রবল শক্তিমত্তা নিয়ে জীয়ন্ত হয় জগতে- ঠিক তেমনি নাড়ির টান ছিঁড়ে গেলে কিছু এলেবেলে গড়নের মানুষ মরে যায়। আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমিয়ে যায়, কিংবা অনিদ্রায় আর মর্মান্তিক অবসাদে ডুবে যায়, ঠিক ঐ পঞ্চমীর চাঁদের মতন।

খেয়াল করে দেখলো, গাছের গোড়াটা একেবারে ভোঁতা, শেকড়-বাকড় নেই। ক্ষয়া, পোকা খাওয়া। এই ভেবে কিছুটা অবাকও হলো, এতোদিন তাহলে গাছটা খাড়া দাড়িয়ে ছিল কিভাবেনিছক অভ্যাসবশত? না কি কোনো কিছুর অপেক্ষায়? এ পথে যতোবারই এসেছে, চোখে পড়েছে গাছটা; কেমন যেন ছন্নছাড়া চেহারা ছিল। মনমরা মনমরা। অনেক আগেই তার দিন শেষ হয়ে এসেছিল, এখন বুঝতে পারে, অনেক আগেই।

দেশকালভেদে সবার শৈশবেরই একটা সাধারণত্ব আছে। একই রকম খেলা, খেলনাপাতি, বুলি, ছড়া, ভয়, আনন্দ-প্রায় সব শিশুরই এক। জটিল আর কৃত্রিম স্বকীয়তার বিপরীতে human universality চিত্রায়ন- এই বিশেষত্ব এই ছোট্ট বইটাকে একটা মারাত্নক ডাইমেনশনে নিয়ে গেছে। মানব সন্তান, মানবীয় আবেগজনিত জটিলতা। ঘুণপোকাই একসময় কাটতে কাটতে নিজে যে আসবাবে থাকে, সেই আসবাবে ধস নামায়। নিজের ভারে নিজেকেই বিপন্ন করে।

সকলের ভেতরেই বোধহয় এই রকম আরো একটা আলাদা সংসার পাতা থাকে, সেখানে সে তার খেলার পুতুলের জন্য নিজের যথাসর্বস্ব দ্যায়, এক টুকরো ভাঙা কাচের জন্য বুক ভরে কাঁদে, নিছক কাগজের নৌকো ডুবে গেলে একেবারে সর্বস্বান্তু হয়ে যায়–

স্মৃতি-বিস্মৃতির খেলায় সবাই বড় হয়ে যায়। কেউ অন্যের কাছ থেকে, কেউ নিজের কাছ থেকে। আর কিছু কিছু বেহিসাবি সবার কাছ থেকেই সরে যায় অনেক অনেক দূরে। সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা ভীষণ কঠিন। ভীষণ!

"এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জীবনে সেই প্রথম, এক গভীর রাতে, তার কানে বেজে উঠেছিল–লৌহজং, লৌহজং। পাশে দাঁড়িয়ে মনি ভাইজান, মনি ভাইজানের জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় অনেক ছেলেবেলা…।
এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জীবনে সেই প্রথম, এক অন্ধকার রাতে তার কানে বেজে উঠেছিল—তারপাশা তারপাশা! পাশে দাঁড়িয়ে মনি ভাইজান, মনি ভাইজানের হাতে একটা লোহার ক্লিপ। মনি ভাইজান বিড়বিড় করে হাওয়ার কানে কানে বললে, আমরা যি কোথায় যাচ্ছি!
কে জানে, কে কোথায় যায়!"


মাহমুদুল হক ভয়ঙ্কর কারিগর। অসামান্য একটা বই। চাঁদের বুড়ির চড়কা কাটা, হিনজার জিনজার এসবের ফাঁদে পড়ে গেলাম। এই ভোররাতে পাখি ডাকা শুরু করেছে। খুঁড়ো শালিকটা নাকি?

"ফড়িঙের ডানাতেও এ জীবন দেয় ডাক
বেঁচে থাক সব্বাই, হাতে হাত রাখা থাক
সাড়া দাও…
সাড়া দাও, সাড়া দাও
সাড়া দাও, সাড়া দাও
উদাসীন থেকো না, সাড়া দাও।"
Profile Image for Ummea Salma.
126 reviews122 followers
November 15, 2022
বিষন্ন, তবুও কি অদ্ভুত রকমের সুন্দর। বইয়ের শুরুটা কি মায়ামাখা!
"এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জীবনে সেই প্রথম, এক গভীর রাতে, তার কানে বেজে উঠেছিলো-লৌহজং, লৌহজং। পাশে দাঁড়িয়ে মনিভাইজান। মনি ভাইজানের জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় অনেক ছেলেবেলা..."
Profile Image for Mosharaf Hossain.
128 reviews99 followers
December 9, 2017
"এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়।
জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা..."

হারিয়ে যাওয়া একটা ছেলেবেলার গল্প। যখন সবকিছু সুন্দর ছিল, নিষ্পাপ ছিল। পবিত্র ছিল। মাহমুদুল হকের 'কালো বরফের' প্রতিটা শব্দ জুড়েই ছিল দেশ বিভাগ নিয়ে এক বাচ্চামনের চাপা কষ্ট, তার আশেপাশের মানুষের কাজকর্ম, সব মিলিয়ে ছবির মতোন একটা বই।

হতে পারতো এটা আমার সবথেকে অপ্রিয় বইগুলোর একটা। ভেবেছিলাম তাই হবে। গল্পের প্লট এতটাই শক্তিশালী ছিল, আমাকে বারবার ফিরতে হচ্ছিল পেছনে। একটু মনোযোগ হারালেই মনে হচ্ছিল খেই হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু না! লেখায় জাদু-টাদুর কথা শুনেছি অনেক। কালো বরফের প্রতিটা পাতায় আমি মনে হলো সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। আরো একবার।

১৯৪৭ সালে ধর্মের মুকুট মাথায় দিয়ে ভাগ হয়ে যায় দেশ। দেশভাগ সুনামির মত তছনছ করে দেয় মানুষের জীবন। এরমধ্যেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় লেখকের পরিবার। ১৯৫১ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসে তারা সপরিবারে। কিন্তু তখন থেকেই শুরু বিড়ম্বনায় ভরা এক জীবনের। নিজের ছিন্ন অতীত, শূন্যে ঝুলে থাকার যন্ত্রণা, বেগ-আবেগ সঞ্চয় করে মাহমুদুল হক লেখেন কালো বরফ উপন্যাস।

লেখক তাঁর একটা জীবনেরই দুটি সময়ের কথা পরপর অথবা পাশাপাশি বলে যাওয়া, অবলীলায়। এরকমটা অবশ্য অনেক দেখেছি। আবেগে ভরপুর রঙ্গিন ছেলেবেলা আর বাস্তবতার আঘাতে বিপর্যস্ত বড়বেলার গল্প। যে দুটো জীবন স্বদেশভাগ-প্রেম-কান্না-রোদনময়তা যেমন দেখে, আবার শুনতে পায় শৈশবের আকুতি।

২২ বছরে এই বই পড়ে আমার শৈশবের জন্য আমার মন হুহু করে কেঁদে উঠেছে। আরেকবার পড়ব ৩৫ বছর হলে, আরেকবার পড়বার শেষবয়সে এসে। তখন ঠিক কীভাবে আমার শৈশব আমাকে নাড়া দিবে সেই চিন্তাই করছি।
Profile Image for Sourav Atik.
26 reviews8 followers
May 1, 2021
মাহমুদুল হকের 'কালো বরফ' পড়লাম। কী সুন্দর, কী সাবলীল, অথচ অদ্ভুত মায়ায় মোড়ানো।

আমার আশেপাশের মানুষ মাহমুদুল হক পড়ে অদ্ভুত আচ্ছন্নতায়। কারো 'জীবন আমার বোন' পছন্দ, কারো 'নিরাপদ তন্দ্রা' আর কারো বা 'কালো বরফ'। মুকিত আমাকে বলেছিল- তার যেহেতু বর্ডার বিহীন পৃথিবী ভাল লাগে। তাই এই বই বিশেষ কিছু।

আমি পড়তে শুরু করলাম। মাহমুদুল হকের বই পড়লে মনে হয় বই না, জীবন পড়ছি।

আব্দুল খালেক কলেজ শিক্ষক। অথচ চাকরি পার্মানেন্ট না। বউ এর সাথে ঝগড়া হয় নিয়মিত। কেন সে অ্যাম্বিশাস না, কেন সে একটু কর্মঠ না। এসকেপিস্ট, ভীতু কেন। আব্দুল খালেক অতীতে বাস করে, নস্টালজিয়ায় ভুগে। তার মা ভাই বোন দের সে মনে করে। মাঝে মাঝে আড়ালে কাঁদে। আর এভাবেই গল্প এগিয়ে যেতে থাকে।

দাঙ্গা, হত্যা, খুন ছাড়াও একটা হৃদয় বিদারক শেকড় ছেড়ে আসার একটা করুণ গল্প যে হয়। মাহমুদুল হক তা লিখে গেছেন। প্রেম,বিচ্ছেদ,কান্না,মায়ার এক অদ্ভুত গল্প। শৈশবের গল্প, পরিবারের গল্প, স্বামী স্ত্রীর গল্প।

এই বই আমার প্রিয় বই এর তালিকায় ঢুকে গেল অবলীলায়।
Profile Image for Aohona .
16 reviews13 followers
February 19, 2023
“এইভাবে সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায়। জীবনে সেই প্রথম, এক গভীর রাতে, তার কানে বেজে উঠেছিল-লৌহজং, লৌহজং। পাশে দাঁড়িয়ে মনি ভাইজান, মনিভাইজানের জামার পকেটে একটা ফিতে, ফিতেয় চুলের গন্ধ, যে গন্ধে অনেক দুঃখ, যে দুঃখে অনেক ভালবাসা, যে ভালবাসায় অনেক ছেলেবেলা..”

সবকিছু একদিন গল্প হয়ে যায় ঠিকই,কিন্তু এই গল্পগুলো স্মৃতি হয়ে থেকে যায় আজীবন। দেশভাগের যাতনা কিংবা প্রিয়জন হারানোর বেদনাও এই স্মৃতি মুছে দিতে পারে না।
অতীত ও বর্তমান এই দুই সময়ের ভিন্ন চিত্রপট দেখিয়েছেন লেখক। একদিকে পোকা নামের এক শিশুর শৈশব, অন্যদিকে আব্দুল খালেক নামের এক কলেজ শিক্ষকের স্ট্রাগল।

পুরো বই জুড়ে এত মায়া,এত আবেগ! পড়ছিলাম আর ভয় হচ্ছিল কখন যেন শেষ হয়ে যায়। "আমাদের চিঠিযুগ" এর পর আবারও এমন 'বিষন্ন সুন্দর' কিছু পড়া হলো।
Profile Image for Nabila Tabassum Chowdhury.
373 reviews274 followers
March 30, 2015
"ওরে আমার দুনিয়া
ওরেহ আমার দুনিয়া
তোর সাথে কিসের মায়া মমতা??

তুমি এতো ভেল্কি জানো,
আগে যদি জানিতাম!!
তাহলে কি মানুষ হয়ে এই
দুনিয়ায় আসিতাম?

তোর সাথে কিসের মায়া মমতা..."


কিছু বই পড়ার পর নিজে আর কিছু বলার ক্ষমতা থাকে না। বইটা থেকে কিছু তুলে দেবার সময় মনে হয়, না থাক, বইটার অখণ্ডতা বজায় থাক। তাই বাউল সুবহান থেকে ধার করতে হল...
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
August 7, 2020
যে বই পড়ে মরে যাইতে ইচ্ছা করে কিংবা বাঁচতে ইচ্ছা করে খুব করে
Profile Image for Sukanta Bhattacharjee .
52 reviews11 followers
September 28, 2022
মাহমুদুল হক তার লেখনীকে এত ক্ষমতা দিয়েছেন যে, যাই লেখেন যেন সোনা ফলে। সাধারণ চরিত্র, সাধারণ প্লট। শুধু তাঁর মাথা থেকে বের হয়েছে, আর তাঁর হাত দিয়েই লেখা হয়েছে বলেই কি অসাধারণ হয়ে গেল। চরিত্রগুলো শুধু বইয়ের পাতায়ই জীবন্ত নয়, গল্প শেষ হওয়ার পরও স্মৃতিতে বেচে থাকে আরো কিছুদিন। কিছু কিছু লাইন যেন দাড়ি মানতে চায় না, তবুও মাথায় (নাকি মনে?) অন্যরকম এক পুলক লাগে। বাক্যটা শেষ না হোক, গল্পটা শেষ না হোক, এমন একটা রেশ রয়ে যায়। অসাধারণ। ⭐
Profile Image for Rony Rahman.
71 reviews7 followers
May 26, 2024
বুক ভারী হয়ে আসে মুগ্ধতায় ও গল্পের আবেশে। এত সুন্দর করে কেউ কীভাবে ভাবতে পারে!
লেখকের প্রতিটা গল্পই যেন ভিন্ন জগত, ভিন্ন ভিন্ন স্মৃতি মজুত তাতে।
আরো বেশি বেশি আলোচনায় আসুক এমন চিন্তাজগতের স্রষ্টা।
Displaying 1 - 30 of 180 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.