Annada Shankar Ray was a Bengali poet and essayist.
He was born in 1904 at Dhenkanal, Orissa. He graduated in English from Ravenshaw College. His father had shifted base from their ancestral village of Rameswarpur near Dhamnagar in Bhadrak of Orissa, following a family feud. His family roots go back to the 'Ghosh Mahashayas' who migrated to Rameswarpur from Kotarang near Howrah as a part of Todarmal's contingent during Akbar's reign. He topped the list of Indian Civil Service examinees in 1927. He had failed to make the mark in the previous year being cut-off by one rank. It is said that he promised to his family and friends that if only one person was to be selected for ICS the next year, it would be himself, and he proved it. Incidentally he was the first ICS officer from the territory later forming the state of Orissa. After serving in various administrative posts, he sought voluntary retirement in 1951 to devote himself to literary pursuits. Ray was a Gandhian in politics and Rabindranath Tagore inspired his literature. A Bengali rendering of a short story by Tolstoy and an appraisal of Sarat Chandra Chattopadhyay’s essay Narir Mulya marked his debut on the literary scene at the age of 16. His first published book was Tarunya (1928), which gave him a footing as an essayist. His first two novels were Asamapika and Agun Niye Khela. As an essayist, he was urbane and sophisticated and combined in his craft two different styles of prose, represented by Tagore and Pramatha Choudhury. A significant breakthrough in his literary career came with the publication of Pathe Prabase, a brilliant diary of his Europe trip, in 1931. Ray also established himself as a short-story writer. His collections include Prakritir Parihas (1934), Man Pavan (1946), Kamini Kanchan (1954) and Katha. He received the Vidyasagar Smriti Award from the state government and the Padma Bhushan. He was made a fellow of the Sahitya Akademi in 1989. The Visva Bharati conferred on him the Desikottama and an honorary D.Litt. He also received the Rabindra Puraskar, the Ananda Puraskar twice and the prestigious Zaibunnisa Award of Bangladesh He was a bitter opponent of the partition of 1947 and wrote several Bengali poems criticising it. Most notable is "Teler shishi bhaanglo bole khukur pare raag karo". Among his many essays, the book "Banglar Reneissance" has an analytical history of the cultural and social revolution in Bengal. His married Leela Ray, an Indianized American lady with literary talent. Annada Shankar's most famous work is "Pathe Prabaase" - a diary of his Europe trip in 1931. From amongst his other great works in Oriya, the poetry "Sabita" finds place in higher studies of the language at College level, making him one of the rare poets to have the distinction of getting such acclaim from two different language speaking states of India. He died in Kolkata on 28 October 2002. He married an American pianist called Alice Virginia Orndorf. After marriage Alice Virginia took the name Leela Roy.
শুরুটা যেমন ছিল— রায়সায়েব হয়তো চাইছিলেন তিনি নাম বলে যাবেন আর পাঠকের করোটিমধ্যে জায়গাগুলোর দৃশ্য ফুলের মতন ফুটতে থাকবে একে একে... কিন্তু মায়ের শাড়ির খুঁটি আঁকড়ে বুড়ো হওয়া, নিতান্ত বেক্কল ন্যুব ট্যুরিস্ট আমি সেই গতিময় স্মৃতিচারিতার অংশ আর হতে পারলাম কই!
যাজ্ঞে। পরের দিকে লেখকের স্থিতি, আর পাঠকের স্বস্তি - দুইই এসেছে অবশ্য। গুজরাটী বম্বের আলাপ করে, ‘কলকাতার নাই-শিল্পের চেয়ে বম্বের কানা-শিল্প ভালো’-র মতন কিছু স্বরণীয় ডায়লগ ছেড়ে, নদীপথ ঘুরে অন্নদাশংকর পা রাখলেন লণ্ডনে। নতুন কিছু কি জানলাম? হ্যাঁ, টেমস আমাদের বুড়িগঙ্গার ইশকুলে-যাওয়া-দাঁত-মাজা-ভদ্দরনোক ভার্সন, লণ্ডনি আভাওয়া জঘন্য, এদের শতকপিপ্রবণ স্থাপত্যশিল্প জঘন্যতর। ততঃ কিম?
হ্যাঁ, লণ্ডনিরা চাপা স্বভাবের, 'কিউ' করতে ভালোবাসে, খাটে-খ্যালে-খায়, আর এই ত্রি-নীতি মেনে জীবনের আঁক কষে থাকে সবাই। ততঃ কিম?
এরপরেই বইটার আসল চেহারা, আর রায়সায়েবের লেখার হাত - দুঃশাসনের হ্যাঁচকা টানে দ্রৌপদীর শাড়ির পাকের মতন — খুলতে শুরু করল। ইংলণ্ডের সরণি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি হঠাৎ ঢুকে পড়ছেন পারি বার্লিন লাইপৎসীগ ড্রেসডেন থুরিঙ্গিয়া প্রাগ নুর্নবার্গ হল্যাণ্ড বেলজিয়ম ইটালির গলি-কানাগলির ভেতর। রঁলার সাথে কখনো বসে ভাবছেন বাংলা সাহিত্য মূলতঃ ‘খন্ডিত রিরংসার ব্যবচ্ছেদাগার’, কখনো বার্লিন ইজ গ্রেটার দ্যান পারী ইজ গ্রেটার দ্যান লন্ডন ইজ গ্রেটার দ্যান কলকাতা — এই শুকনা তুলনাসমূহকে বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে উপমার নিক্তি নিয়ে বসছেন।
কখনো চলে যাচ্ছেন চার্চ আর স্টেট নিয়ে গুরুগম্ভীর থিওরি বিশ্লেষণে, য়ুরোপের ধর্মসন্ধিৎসু প্রবণতার বর্ণনায়; কিংবা কখনো বিচিত্রার পাঠকদের কাছে পাশের বাড়ির ভাবীর মতন আগ্রহ নিয়ে বর্ণনা করছেন বিলাতি নারী পুরুষের সামাজিক পারিবারিক সাংসারিক ডায়নামিক। নিজের রক্ষণশীলতার ব্যাস মাপছেন অজান্তেই, প্রভাবিত হচ্ছেন, বোঝা যায়। বলছেন, ‘নতুন দেশে নতুন আবহাওয়ায় নিঃশ্বাস নিয়ে গোটা মানুষটারই একটা অন্তঃপরিবর্তন ঘটে যায়।’
তা, ক্রমবিকাশমান সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটছিল, রচনাতেও। পড়তে পড়তে দেখি বাংলা শব্দের মাথায় বসছে আংরেজি টুপি; যুবক হয়ে যাচ্ছে ’গ্যালান্ট’, বসন্তকে ‘এক ফার্দ্দিং’ ফাঁকিও দেবেন না বলে পণ করছেন লেখক। ব্যাপারটা মজার।
আর... কিছু খটকা ছিল। যেমন ধরেন যুদ্ধের দিকে তার প্রায়-রোমাণ্টিক দৃষ্টি। মানব সভ্যতাকে উদ্দীপ্তকরণের জন্যে যুদ্ধের নগ্ন প্রয়োজনীয়তার খোঁড়া যুক্তি দেওয়া। এগুলো কখনো যুদ্ধে না যাওয়া, আজীবন প্রিভিলেজড, শেল্টারড লাইফ কাটানো মনোভাবের পরিচয় দেয়। এক জায়গায় সাম্যবাদ জুজুর ভয় দেখিয়েছেন পাঠককে। এই বদমাশ সাম্যবাদ এসে যেন সবাইরে সম-সাইজের বামন, উম্পা লুম্পা বানায়ে দিবে। আর তখন আবির্ভাব ঘটবে উইলি ওংকার, সবগুলারে সে তার নতুন চকোলেট ফ্যাক্টরিতে ফ্রি কামলা খাটানোর জন্য পিটায়া, বাইন্ধা নিয়া যাবে আরকি।
এক জায়গায় দেখলাম দক্ষিণ আর উত্তর য়ুরোপকে হিন্দু মুসলিম স্টেরিওটাইপ দিয়ে ভাগ করে বোঝাচ্ছেন। চোখে লাগল।
এগুলোকে মোটামুটি এড়ায়ে গেছি প্রায় একশো বছর আগেকার লেখা হওয়ার কারণে। ভিন্ন সময়ের প্রোডাক্ট হওয়ার কারণে। আর সত্যি বলতে; ভিন্ন, অস্থির সময়ের প্রোডাক্ট হবার জন্যেই এই বই গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজের বণিক, শাসক ও রণবৃত্তি নিয়ে খুঁটিনাটি কাটাকুটি ভালো লেগেছে, বিশেষ করে তাদের মহাপুরুষভীতি-সংক্রান্ত কথাটা যথাযথ। ওদের জাতিপ্রকৃতি খুব একটা পাল্টায়নি আজো।
তারপর এতো দেশ ঘুরে এসে শেষে রায়সাহেব দোমনা। এই দেখি দুই বছরের বিলাতবাস-রে নির্বাসন বলেন; আবার দেখি মুখ বেজার, বিলাতের জন্য নাকি মন কান্দে। টিপিক্যাল বঙ্গবাসী!
সব মিলায়ে ভালো লাগছে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
নাহ, 'পথে প্রবাসে' বইখানাকে ভ্রমণকাহিনী ভেবে পড়া শুরু করলে ভুলই করা হবে, ভ্রমণকাহিনী ইহা নয়। ইহাকে মোটের উপর একখানা বিশাল কলেবরের প্রবন্ধ বলা চলে (প্রবন্ধ যদিও নাতিদীর্ঘ হয়)।
প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধ নিয়ে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া দুইরকম। প্রথমার্ধ নিয়ে কথা বলতে গেলে বলতে হয়, আমাদের বাংলাদেশে, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক যে বাংলা সাহিত্যপাঠ বইগুলো রয়েছে, তাতে অনায়াসে এর অংশের পর অংশ রেখে দেয়া যায়। তবে, যোগ করা হবে কি না অথবা করতে দেয়া উচিত হবে কি না তা নিয়ে আমি সন্দিহান, কেননা নিজের দেশের নিন্দা ও অপর দেশের সুনাম (অবশ্যই যুক্তিযুক্ত হতে হবে), অথবা তুলনামূলক সমালোচনা আমাদের শভিনিজমের পাল্লায় পড়ে ঠিকমত মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ পাচ্ছে না এখনো। ফাঁকে তালে যা-ও বা কিছু ঢুকে পড়ছে, অচিরেই বাপ-বাপ করে পালাতে হচ্ছে তাদের। তাই বুঝতেই পারছেন, যে অংশগুলো শিক্ষা কমিশন দ্বারা যোগ হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তা স্রেফ বাঙালির জয়গানই গাইবে এবং বইয়ে আমাদের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েও যেভাবে যুক্তিযুক্তভাবে সমালোচনা করা হয়েছে, সেসব এড়িয়ে যাওয়া হবে। তাই আমাদের পাঠ্যক্রমে পক্ষপাতশূন্যভাবে 'পথে প্রবাসে'-এর বিভিন্ন খণ্ডাংশ যোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
এখন আসি দ্বিতীয়ার্ধের কথায়। এ পর্যায়ে এসে স্থানে স্থানে অন্নদাশঙ্কর বাবুকে ঠিক মুক্তমনা বলে মনে হয় না আর, তবে মানুষ বলা চলে অবশ্যই। দেড়পাতা জুড়ে গেয়ে ফেললেন পুঁজিবাদের জয়গান, সাথে কিছুক্ষণ ক্লাসিস্ট প্যাঁচাল, আবার বাইগ্যামী না মেনে নেওয়ায় 'ম্লেচ্ছ' নারীদের উদ্দেশ্য করে সভ্যতাকে 'ধিক ধিক' জানাতেও পিছপা হলেন না। নারীরা, শ্রমিকেরা সমান অধিকার চাওয়ায়, সমাজের সকলকে সমান চোখে দেখবার দাবি জানানোতে উনি বেশ ভারি-ভারিক্কিম কয়েকটা মেটাফোরের সাহায্যে "বাপু এরম করে কিন্তু সমাজের হারমনি নষ্ট হচ্ছে" বলে চোখ টাটালেন। আভিজাত্য-ইজম কে পুঁজি করে জানিয়ে দিলেন, কয়লার ফেরিওয়ালা পাছে Daily Mail পড়ে শিক্ষিত মানুষ হয়ে ওঠে আর ক্ষমতা গুটিকয়েকের থেকে বেহাত হয়ে যায়, এই ওনার একটু গা শিরশিরানি। আমাদের নাকি প্রয়োজন কোটিপতিদের জন্য ময়ূর সিংহাসন, জনসাধারণের জন্য লোহার বেঞ্চি মোটেও চোখের আরাম দেয় না। কি আর বলবো, ভাই! তখন মনে হচ্ছিলো, "ছেড়ে দে মা, এই বই শেষ হইলে বাঁচি।"
শেষ কথা হলো, বইখানা অবশ্যই পড়বার মতন। সবার সব মতামত সেন্ট পার্সেন্ট শুদ্ধ হয় না এবং আমি বইটিকে যেভাবে বিশ্লেষণ করেছি, তাতেও গলদ থাকার সম্ভাবনা ষোলো আনা। তবে বইয়ের কোন মতামতটি গ্রহণীয় ও কোনটি বর্জনীয়, তা নিয়ে পাঠকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা করা অবশ্য প্রয়োজনীয় এবং আমারো এই আহ্বানই থাকবে।
মুভি বা সিরিজ দেখার আগে কিছু মানুষের ইউটিউবে ঢুকে ট্রেইলার দেখে নিতে হয়, যেমন ধরা যাক, আমি। তেমনি বইয়ের ক্ষেত্রেও আগে হাতে নিয়ে দুই পাশের ফ্ল্যাপ পড়া, প্রথম প্রকাশ, কততম সংস্করণ, প্রচ্ছদ কে করেছেন, উৎসর্গ, ভূমিকা, এমনকি গায়ের দাম, সবই দেখতে হবে। যথারীতি ভূমিকা পড়তে গিয়েই বইটা ভালো লাগলো, অসম্ভব ভালো বলা যায়, এত সুন্দর ভূমিকা হলে বই না জানি কেমন (ভূমিকা লিখেছেন প্রমথ চৌধুরী)। লেখনী অসাধা���ণ, ভাবের গভীরতা আর হাস্যরস মিলেমিশে কখনোই এক ঘেয়েমি লাগবে না। তাতে আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে লেখা, লেখকের কোনো ভবিষ্যদ্বাণী যখন মিলে যাচ্ছে, যারপরনাই অবাক হচ্ছি দূরদৃষ্টি দেখে।
কিন্তু সবাইকে এই বই পড়তে বলবো না, কারণ আর কিছুই না, লেখক সুন্দর লেখার আড়ালে সমাজের কদর্য দিক গুলোকে সমর্থন করেছেন। অনেকটা নেটফ্লিক্স এর টপ রেটেড সিরিজ গুলো যেমন ভায়োলেন্স, নুডিটি, হোমোসেক্সুয়ালিটির মতো বিষয় গুলোকে নরমালাইজ করার চেষ্টা করছে।
লেখক - পাঠকে মতের অমিল থাকবেই, তবে সাহিত্যের নামে প্রপাগাণ্ডা মেনে নেওয়া যায় না।
ভ্রমণকাহিনির মধ্যে আঁতলামির পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হয়ে গিয়েছে। ১৯২৭-২৯ সালের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও শহরের মানুষ, প্রকৃতি, সৌন্দর্য, স্থাপত্য, বৈশিষ্ট্য, অর্থনীতি, ভাষা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, জীবন, রাজনীতি নিয়ে আলাপ একটু জমতে না জমতেই একগাদা তত্ত্বীয় প্যাঁচাল পেরে মজাটাই নষ্ট করে দিয়েছে।
আমার যা মনে হয়, একটা ভ্রমণ কাহিনী লিখতে হলে প্রচুর জ্ঞান থাকতে হয়। শুধু চোখ দিয়ে কি দেখলাম, সেটার বৃত্তান্ত লিখলেই শেষ হল না। চোখের দেখা থেকে কি শিখলাম, তার ভালো মন্দ দিক, তার কার্যকারণ উদঘাটন, পেছনের কোন ইতিহাস আনতে হলে তার যাচাই বাছাই, সবকিছুর একটা মিশেল থাকা উচিত। আরো যেটা থাকা উচিত, পরিমিতিবোধ। কোন ইনফর্মেশনটা কতটুকু দেয়া উচিত, কিভাবে প্রেজেন্ট করা উচিত, সবকিছুর একটা পাঠকবান্ধব মাপমতো লেখা। সৈয়দ মুজতবা আলী নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠতম ভ্রমণকাহিনী রচয়িতা। উনার লেখা বুঝতে সমস্যা হলে আরেকটু পড়াশোনা করে কয়েক বছর পর আবার ধরবেন, দেখবেন কত ডিটেইলস এ লিখেন উনি।
অন্নদাশঙ্কর রায় এর "পথে প্রবাসে" বাংলা সাহিত্যে একটা অনন্য সংযোজন। গত শতাব্দীর প্রথমার্ধে খুব একটা কেউ লিখেন নি এ ধরনের রচনা। উনি এই ধারার সূচনা লগ্নে থাকার দিক দিয়ে সুন্দর একটি বই উপহার দিয়েছেন।
প্রচুর চিন্তার খোরাক যোগাবে বইটি। প্রচলিত অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে উৎসাহ পাবেন। দৃষ্টিভঙ্গিতে একটু ঘষামাজা হবে। বইয়ের কিছু কিছু বর্ণনা সর্বজনীন ও সর্ব কালের জন্যে প্রযোজ্য। কিছু বর্ণনা একটা অন্যরকম ভালোলাগা এনে দিবে। তবে উনার কিছু গোঁড়ামি দেখে বিরক্ত হয়েছি। রায় সাহেবের কিছু মনোভাবে কিঞ্চিৎ মেজাজ চড়ে যেতে পারে। সেসব বর্জনীয়।
ভ্রমণকাহিনী বলতে একবাক্যে কে কি মনে করে জানি না, তবে আমার কাছে দীর্ঘদিন ধরে সেটা ছিল কোনো স্থানের রূপ বৈচিত্রের বর্ণনা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি। কিন্তু অন্নদাশঙ্কর রায় এই কয়েকটা জিনিসে আবদ্ধ থাকেন নি। ভ্রমণের পাশপাশি দর্শনকে সমান্তরালে স্থান দিয়ে আমার মত পাঠকের মুণ্ডপাত করেছেন, মুন্সিয়ানার কথা সুবিবেচক পাঠকের হাতে ন্যস্ত থাকলো।
লেখক ১৯২৭-২৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপে অবস্থান করেন। দক্ষিণ ভারত ঘুরে কটক, কটক থেকে বম্বে এবং ফাইনালি বম্বে থেকে জাহাজে করে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা। লন্ডন থেকে একে একে ঘুরেছেন সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সের পারী(প্যারিস), অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, জার্মানি, হল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, ইতালি। লন্ডনে বেশিরভাগ সময় অবস্থান করেছেন বলে স্বভাবতই ইংল্যান্ডের কথা বেশি এসেছে বইয়ে। ইংল্যান্ডের শিল্প সাহিত্য, মানুষ, আবহাওয়া, প্রকৃতি, শাসন ব্যবস্থা, ধর্ম কিছুই বাদ যায়নি। পারীর লোভনীয় বর্ণনা পড়ে যেকোনো পাঠক বিংশ শতাব্দীর পারীতে ভ্রমণ করে আসবে এক মূহুর্তে। তাছাড়াও অন্যান্য শহরের বর্ণনার পাশাপাশি সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, শিল্প, সংগীত নিয়ে গুরুভার দার্শনিক আলাপ কপচিয়েছেন। ফলে এই বইকে নিরেট ভ্রমণসাহিত্য বললে খুবই অন্যায্যতা হয়। তবে সাধারণ পাঠক ইউরোপকে এক নতুন চোখে আবিষ্কার করবে বলে আমার ধারণা।
১৯২৭-১৯২৯ সালের ইউরোপ ভ্রমণ নিয়ে লেখা হয়ে বইটি। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া সহ আরো বেশ কিছু দেশের বর্ণনা তুলে ধরেছেন লেখক। তাঁর সময়কার ইউরোপের পরিবেশ, পরিস্থিতি, মানুষের আচার-আচরণ, রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সামাজিক অবস্থা নিয়ে শুধু লিখেই যাননি সাথে তুলনা করেছেন ভারতবর্ষের সাথে। ভারতবর্ষের প্রচলিত প্রথা ও ধর্মের কঠিন সমালোচনা করেছেন। নিজের মতামত তুলে ধরেছেন প্রতিটি বিষয়ে। শেষ দিকে ইউরোপের নির্বাচন ও ধর্ম নিয়েও বেশকিছু বিশ্লেষণ ও মন্তব্য দিয়েছেন। সাথে ছিলো তার বিদায় বেলার দুখি মনের আত্মবিশ্লেষণ।
বই থেকে কিছু উক্তিঃ
১. দেশ দেখতে ভালো লাগে না, যদি দেশের মানুষকে ভালো না লাগে।
২. অবস্থার ব্যবধান মানুষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে ভালোবাসে।
৩. মাটি যে আমাদের কত বড় আশ্রয়স্থল, সমুদ্রের উপর অসহায়ভাবে ভাসমান না হলে হৃদয়ঙ্গম হয় না
৪. অস্তিত্বের মূল্য দেবার জন্য ধনী না হলে চলে না।
৫. সব জিনিস যে সকলকে জানতেই হবে, পেতেই হবে, করতেই হবে এইটে আমাদের যুগের কুসংস্কার।
৬. একালের কুমারীদের অনেক দুঃখ থেকে অব্যাহতি মিলেছে, সেই জন্য তারা বিবাহের জন্য কেঁদে মরছে না। এবং একালের বিবাহিতরাও অনেক সুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেই জন্য তারা সৌভাগ্যগর্বে বাড়াবাড়ি করছে না।
৭. লোভ করলে থামতে হয়, আর পথে থামাই পথিকের মৃত্যু।
৮. গতিশীল সভ্যতা যে জীবনের আনন্দ বাড়িয়েছে এমন তো মনে হয় না, বাড়িয়েছে কেবল জীবনের উত্তেজনা।
৯. স্বদেশকে চিনে বলেই ওরা বিশ্বকে চিনে।
১০. ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাস তার ক্যাফেগুলোতেই তৈরি, ইংল্যান্ডের ইতিহাস যেমন তৈরি হয়েছে তাদের স্কুল গুলির প্লে গ্রাউন্ডে
১১. সাহিত্য যদি অসুস্থমনা হয়ে থাকে তবে তার রচনাকে সাহিত্য নাম দিয়ে সাহিত্যকে সাজা দেয়া সাজে না।
১২. টাকার জন্য আর যাই হোক বই লিখবেন না। (রলাঁর উক্তি)
পড়ে শেষ করলাম অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা “পথে প্রবাসে” বইটি। বইটি মূলত লেখকের ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। এটি একটি ভ্রমণ কাহিনী বিষয়ক বই হলেও সাধারণ ভ্রমণ কাহিনী থেকে একটু ব্যতিক্রম মনে হল। লেখক এখানে ইউরেপের নানান দেশ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, অষ্ট্রিয়া ইত্যাদি দেশ সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সে সব দেশের ধর্ম,বর্ণ, মানুষের জীবন-যাপন, প্রকৃতি, আচার-অনুষ্ঠান এবং তার সাথে ভারতবর্ষের তফাৎ অত্যন্ত সুন্দর ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।
���থে প্রবাসের রচনাকাল ১৯২৭-১৯২৯। ইণ্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হয়ে শিক্ষানবিশির জন্য তখন তাঁর এই দুবছরের বিলাতবাস। বয়স তখন তাঁর তেইশ-চব্বিশ। ছুটির সময়ে লণ্ডনের বাইরের ইংলণ্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ ঘুরে দেখেছেন; তাঁর ভাষায় 'আমার চোখজোড়া অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ভূপ্রদক্ষিণে বেরিয়েছে।' অন্নদাশঙ্কর দেখেছেন চোখ চেয়ে, অনুভব করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন আর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ কর��ছেন। প্রমথ চৌধুরী লিখছেন : 'তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত যথার্থ সাহিত্য হয়েছে। ... আর এ লেখকের মতামতের পিছনে যে একটি সজীব মনের স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়, সে বিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ নেই।'
বইটি লেখার সময়কার ইউরোপ আর বর্তমান ইউরোপের মাঝে হয়ত অনেক তফাৎ রয়েছে তবে ইউরোপ সম্পর্কে জানতে কিছুটা হলেও এই বই আপনাকে সাহায্য করবে।
অন্নদা শংকর রায় এর পথে প্রবাসে যতটা না ভ্রমণ এর তার থেকে বেশী দর্শণের বই। তবে উল্টোটাও প্রযোজ্য। যতটুকু বলেছেন ভাবনার রসদ যুগিয়েছেন তার থেকে বেশি । নারী -পুরুষের দ্বন্দের মাঝে হারিয়ে গিয়েছেন ; সুইজারল্যান্ড এর সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়েছেন। প্যারিস দেখে হয়েছেন আবেগতাড়িত। পুরো ইয়োরোপ ঘুরেছেন। ইয়োরোপকে দেখেছেন একজন ইতিহাসবিদ এর চোখে আর বিশ্লেষণ করেছেন একজন দার্শ ণিক এর মতো। এ যেন দর্শণের রোলার কোস্টারে চড়ে বিদেশ ভ্রমণ।
"...আমি তো জানি আমি সেই আমি নই। দুটি বছরে প্রত্যেক মানুষের জীবন এক থেকে আরেক হয়ে ওঠে, প্রতিদিন দেখি বলে কোনোদিন লক্ষ করিনে। আমার সম্বন্ধে ওদের এবং ওদের সম্বন্ধে আমার ওই প্রতিদিন দেখাটুকু ঘটেনি বলে অন্তরে অন্তরে আমরা পর হয়ে পড়েছি। দুটো মহাদেশের ব্যবধান সেই বিচ্ছেদকে ঘোরালো করেছে। দু-বছর চোখের আড়ালে বেড়েছি, এইটে প্রধান। দু-বছর বিলেতে থেকেছি, এটা অপ্রধান।"
বইয়ের প্রান্তিকে লেখকের এই উক্তির সাথে মিশে আছে দীর্ঘশ্বাস, কেবল বেড়ানোর নিমিত্তে প্রবাস এলে এই শ্বাসের অন্তরালের অব্যক্ত ব্যথা বোঝা অসম্ভব। মহাকালের ব্যাপ্তিতে দুই বছর হয়তো কিছুই নয়, কিন্তু নাতিদীর্ঘ মানবজীবনে এই দুই বছরের ব্যাপ্তি বিশাল- ভিন আচারে, ভিন মানুষের সংস্পর্শে তখন নিছক ভ্রমণবৃত্তান্ত লেখা অযৌক্তিক এবং অসমীচীন; দর্শনাচার সেখানে না এসে পারেই না! ভ্রমণকাহিনীরূপে এই বইকে তাই পড়া যাবে না, একে পড়তে হবে 'শ বছর আগের ইউরোপের সমাজ বোঝার জন্যে, আল্ট্রা-মডার্নিজমের সূত্রপাত জানার জন্যে, একযুদ্ধ শেষ না হতেই ইউরোপে কেন আরেক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো সেটা উপলব্ধি করার জন্যে।
লেখক যে চোখ দিয়ে ইউরোপ দেখেছেন সে চোখের ততকালীন বয়সটাকেও মাথায় রাখতে হবে। চব্বিশ/পঁচিশ বছরের যুবার চোখে নতুন মাত্রই আকর্ষণীয় লাগবার কথা- ভারতবর্ষের সাথে ক্রমাগত তুলনা বিরক্তির উদ্রেক ঘটালেও আমার কাছে মনে হয়েছে তা অভিজ্ঞতার অভাবমাত্র। হয়তো চল্লিশের দোরগোরায় এসে লেখক একইভাবে ইউরোপ দর্শন করলে অনেককিছুই একইভাবে লিখতেন না। যৌবনের গান বইটাতে প্রচুর, ভারতবর্ষের জড়তার তিরস্কার অবাঞ্ছিতভাবে একারণেই হয়তো বেশি। 'লেখক একদম বিলাত গিয়ে বিলাতী সেজেছেন'- এমন যথেচ্ছ রায় দেয়া একদমই তাই উচিৎ হবে না।
আবার তরুণ বলেই হয়তো লেখনী অনেকখানি সাহসী, ব্যক্তিগত অনেক মতবাদ বলে দিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্যে- আপাত পরিণাম বিবেচনা করেন নি। বেশকিছু মতবাদ অপরিপক্ক থেকে গিয়েছে, ঈষৎ জ্ঞান দিয়েও বোধহয় মন্তব্য করে ফেলেছেন প্রচুর। ভাগে ভাগে অনুচ্ছেদ লিখেছেন বলেই কিনা- শেষেরদিকে কিছু বক্তব্য যেন প্রথমদিকের দৃষ্টিভঙ্গিকেই অবমূল্যায়ন করেছে। বইয়ের সবচাইতে কুৎসিত অংশ যুদ্ধ নিয়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি; ধ্বংসযজ্ঞকে গৌরবান্বিত করার কোন যুক্তি আমি খুঁজে পাইনি- "যুদ্ধ যদি উঠে যায় তবে যুদ্ধেরই মতো কঠিন কিছু উদ্ভাবন করতে হবে। নতুবা মৃত্যুসংখ্যা কমাবার জন্যেই যদি যুদ্ধ তুলে দিতে হয় তবে বৃদ্ধের সংখ্যা বেড়ে যাবে; সমগ্র পৃথিবীটাই একটা ভারতবর্ষ হয়ে উঠবে, যেখানে যযাতির রাজত্ব হাজার কয়েক বছর থেকে চলে আসছে।... ... আধুনিক যুদ্ধে যত মানুষ প্রাণে মরে তার বেশি মানুষ আত্মায় মরে; এইখানেই অধর্ম—যুদ্ধে অধর্ম নেই।"
"ভারতবর্ষের মাটির ওপর থেকে শেষবারের মতো পা তুলে নিলুম আর সদ্যোজাত শিশুর মতো মায়ের সঙ্গে আমার যোগসূত্র এক মুহূর্তে ছিন্ন হয়ে গেল।"- বলার অপেক্ষা রাখে না ভীষণ পরিচিত এই লাইনটিই প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় ও তাঁর 'পথে প্রবাসে' শীর্ষক ভ্রমণোপন্যাসকে সাহিত্য পাঠকমহলে পরিচিতি দান করেছে। জাহাজে করে ঔপন্যাসিকের বিলেত যাত্রাকালে যাত্রাপথের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বর্ণনার আকর গ্রন্থ এটি। বোম্বে (অধুনা মুম্বাই) জাহাজে করে আরব সাগর হয়ে লোহিত সাগর, সুয়েজ ক্যানেল, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে মরুদেশ, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি সাগর ও দেশের রমণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তাঁর অসাধারণ বর্ণনা রীতি, যন্ত্রণাময় যাত্রাপথকে সরস করে বর্ণনা পাঠককে আদ্যোপান্ত আকৃষ্ট করে রাখে এবং ক্লান্তিহীন পাঠে নিবিষ্ট করে। সেকালে মন্হর গতিসম্পন্ন জাহাজে বিলেত যাত্রার অবর্ণনীয় কষ্ট তুলে ধরার পাশাপাশি যাত্রাপথে অতিক্রান্ত ভূখণ্ডগুলির তুলে ধরা প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক চিত্রের বর্ণনা বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যে প্রশংসার দাবিদার লেখক ও তাঁর রচনাটি। যদি না পড়ে থাকেন, অন্তত একবার পড়ুন। ভালো লাগবে নিঃসন্দেহেই।
"যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান" এই লাইনের জন্যই অন্নদাশংকর বিখ্যাত বেশিরভাগ বাঙালির কাছে। তবে তিনি যে এরকম সুন্দর একটা ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন তা জানতাম না। প্রথম লাইনটা ভাল লেগেছে খুব। লেখক তার ইংল্যান্ড, ফ্রান্স,অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ইতালিতে ভ্রমনের কথা বলেছেন, সেইসাথে লেখকের নিজস্ব দর্শন, ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ খুবই ভালো লেগেছে!
আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ইউরোপ ভ্রমণ নিয়ে লেখা এই স্বল্পায়তন বই এখন পড়তে বসলে পুরো মজে যেতে হয়। সাধারণ ভ্রমণকাহিনীর মধ্যেই এই সাহিত্যকর্ম সীমাবদ্ধ নয়। ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সুইজারল্যাণ্ড, অস্ট্রিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া ইত্যাদি দেশের ভৌগোলিক বিবরণ দেবার পাশাপাশি লেখক আরেকটা যে কাজ করেছেন সেটা হল সেই দেশের মানুষের মানসিক আবহ, মেজাজ, তাদের জীবনদর্শন বর্ণনা। অন্য দেশে ঘুরতে গিয়ে সেই দেশকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ যে মুষ্টিমেয় পর্যটক করেন, তাঁদের মধ্যে লেখক একজন। লেখকের নিরপেক্ষ মন্তব্য, তাঁর নিজস্ব ভাষ্য বইটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। তাই নিছক ভ্রমণকাহিনী হিসেবে বইটিকে দেখল�� ভুল হবে। আশা করা যায়, বেশিরভাগ পাঠকই বইটির কদর করবে।
ভ্রমণকাহিনী ভেবে পড়তে বসেছিলাম। অর্ধেক পর্যন্ত ভ্রমণকাহিনীই ছিল। এরপর থেকে হাইক্লাস কথাবার্তা! য়্যুরোপের সমাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি, নর-নারীর সম্পর্�� ইত্যাদি বিষয়ে ক্যাঁচাল লাগিয়ে দিয়েছেন লেখক। এসব বিষয়ে অত আগ্রহ নেই তাই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারলাম না। ভ্রমণকাহিনী হিসেবে পড়তে চাইলে হতাশ হবেন। একটা ব্যাপার খুব খারাপ লেগেছে। অধিকাংশের মত লেখকও যেন ওদেশে গিয়ে, কিছুদিন থেকে এসে সব যেন বিকিয়ে দিয়েছেন। ওদেশের সব ভাল, এদেশের সব খারাপ এরকম একটা অনুভূতি হল পড়ে। তবে শেষদিকে একটা উক্তি ভাল লাগল- "কালোহ্যয়ন নিরবধিঃ"; আজো যা আসেনি কোনও একদিন তা আসবে বলেই আজ আসেনি।
সূক্ষ্মভাবে বিচার করতে গেলে চার তারা দিতে হবে।এক তারা কম,বইয়ের মাঝের দিকের বড় অংশ জুড়ে ইউরোপের রাজনীতি,যুদ্ধ,সামাজিক রীতি কিংবা বৈষম্য নিয়ে লেখকের নিজস্ব দর্শন ফুটে উঠেছে যেটা ভ্রমণকাহিনী হিসেবে পড়তে বসলে অনেকের কাছে বিরক্তিকর,একঘেয়ে মনে হতে পারে।এমনিতে লেখকের লেখার হাত সাবলীল,চারপাশকে পর্যবেক্ষণ করার শক্তি প্রশংসার যোগ্য।যারা একটু আধটু হলেও ভ্রমণ করেছে,তারা বইয়ের একদম শেষের অতি সাধারণ বাক্য দুটি হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারবে।
পুরোপুরি ভ্রমণ কাহিনী নয়,বরং ইউরোপ ভ্রমণের উপর প্রবন্ধ টাইপ লেখা। ইউরোপের কয়েকটি দেশ- ইংল্যান্ড,ফ্রান্স,জার্মানি প্রভৃতি দেশগুলোর নবজাগরণের সময়কালের চিত্র ফ্রেমবন্দি করা হয়েছে বইটিতে। এতে বার বার আলোচিত হয়েছে তৎকালীন ইউরোপের সংস্কৃতি, জীবনযাপন, ঐতিহ্য ও দর্শন। তবে বইটিতে বারংবার ভারতবর্ষের সাথে ইংল্যান্ডের একটি সূক্ষ্ম তুলনা চলে এসেছে। ফ্রান্স নিয়ে আলোচিত লেখাটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। মোটের উপর খুব সহজ-সরল ভাষায় লেখা কোনো বই নয় এটি।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের এই বইটিকে পুরোপুরী ভ্রমণ কাহিনী বলা যায় না। লেখক তাঁর দুই বছর ইউরোপ যাপনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন বইটিতে। তবে ট্রাভেলগ এর মত নয়,অনেকটা আত্মিক উপলব্ধিও বর্ণনা করেছেন প্রায় প্রতি পাতাতেই। লেখকের প্রথম রচনা এটি। যদিও ভাষার প্রয়োগ একটু কঠিন, অর্থাৎ গড়গড় করে পড়তে কষ্ট হয়,তবুও ইউরোপের অনেকাংশেরই বর্ণনা পাই বইটি থেকে।
অসাধারণ বই। লেখনীতে পুরনো ভাবধারা থাকলেও মোটামুটি পুরোটাই সহজবোধ্যভাবে লেখা। প্রায় ১০০ বছর আগের ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ বিষয়ক অবজারভেশনে ভরপুর বইটি । ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ, জার্মানদের জীবন দর্শনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দিকগুলো খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন লেখক।